জিহাদ কি আমলের উপলক্ষ মাত্র? কিতাল কি ছোট জিহাদ!!?
হারুন বুখারী প্রণীত কিতাবের ১৯৮ নং পৃষ্ঠায় "কিতাল (যুদ্ধ) ছাড়াও যে জিহাদ হয় তার প্রমাণ" অধ্যায়ে লিখেন,
"রাসুল (সা) কোনো এক জিহাদ থেকে ফিরে আসার পর বলেছেন -
رجعنا من جهاد الاصغر الي جهاد الاكبر
(আমরা ছোট জিহাদ থেকে প্রত্যাবর্তন করে বড় জিহাদের প্রতি ধাবিত হলাম)
এ হাদিসে কিতাল বা যুদ্ধকে ছোট জিহাদ আর ইলম শিক্ষা ও আমল করা অর্থাৎ নফসের জিহাদকে বড় জিহাদ আখ্যা দেয়া হয়েছে। ইলম ও আমল হলো আসল লক্ষ্য এজন্য এটা বড় জিহাদ, আর কিতাল বা যুদ্ধ হলো তার উপলক্ষ তাই এটা ছোট জিহাদ।"
- তাবলীগ জামাতের বিরোধিতা কেন ও কার স্বার্থে, পৃষ্ঠা ১৯৮
رجعنا من جهاد الاصغر الي جهاد الاكبر
(আমরা ছোট জিহাদ থেকে প্রত্যাবর্তন করে বড় জিহাদের প্রতি ধাবিত হলাম)
এ হাদিসে কিতাল বা যুদ্ধকে ছোট জিহাদ আর ইলম শিক্ষা ও আমল করা অর্থাৎ নফসের জিহাদকে বড় জিহাদ আখ্যা দেয়া হয়েছে। ইলম ও আমল হলো আসল লক্ষ্য এজন্য এটা বড় জিহাদ, আর কিতাল বা যুদ্ধ হলো তার উপলক্ষ তাই এটা ছোট জিহাদ।"
- তাবলীগ জামাতের বিরোধিতা কেন ও কার স্বার্থে, পৃষ্ঠা ১৯৮
.
.
ক) উনি একটা অদ্ভুত কথা বলেছেন যে, কিতালের আসল উদ্দেশ্য/লক্ষ্য ইলম ও আমল!!! এটা উনি কোথায় পেলেন বুঝলাম না!!
নিঃসন্দেহে এটী মস্তিস্কপ্রসুত বাতিল একটি বক্তব্য!
.
.
আল্লাহ'র রাস্তায় কিতাল স্বয়ং একটি আমল... !
হযরত আবু যর (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন
“আমি বললাম হে আল্লাহর রাসুল! সর্বোত্তম আমল কোনটি? তিনি বললেন “আল্লাহর উপর ঈমান আনা এবং আল্লাহর পথে জিহাদ করা।”
(বুখারী, মুসলিম)
.
.
.
প্রকৃতপক্ষে কিতাল ফি সাবিলিল্লাহ'র উদ্দেশ্য হচ্ছে ইলায়ে কালিমাতুল্লাহ অর্থাৎ- আল্লাহর দ্বীনকে বুলন্দ করা তথা, ইসলামের বিপরীতে আসা বাঁধাকে অপসারণ করা। (দেখুনঃ আল আহকামুস্ সুলতানিয়া, মা'আরিফুল কুরআন).
.
.
.
খ) উনার উদ্ধৃত হাদিসটি একটি জাল হাদিস। যা ঘরে বসে থাকা ব্যক্তিদের হট ফেভারিট...
.
ভ্রস্ট শিরকি পীরেরা খানকায় বসে, জিহাদের সকল ফজিলত স্বীয় মুরিদদের উদ্দেশ্যে বয়ানের উদ্দেশ্যে এই হাদিসটি ব্যবহার করে থাকে।
.
তাবলীগের মুরুব্বিরাও এমনটা শুরু করেছে জানা ছিল না।
.
.
.
তাহকিক
১) হানাফী মাযহাবের প্রসিদ্ধ ফিকাহর কিতাব হিদায়াহ’র প্রখ্যাত আরবী ভাষ্যকার ‘নসবুর রায়াহ’র লেখক ইমাম জামালুদ্দিন ঝাই’লায়ী আল হানাফী (রহঃ) তাখরীজু আহাদীসিল কাশশাফ কিতাবে লিখেছেন,
“আমার মতে হাদিসটি নিতান্ত গরীব এবং মুহাদ্দিসীনদের নিকট অপরিচিত।”
[ তথ্য : তাখরীজু আহাদীসিল কাশশাফ ২য় খণ্ড, ৩৯৫ পৃষ্ঠা, আদ্দুরারুল মুন্তাছিরাঃ ১/১১]
২) ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (রহঃ) সরাসরি এটিকে জাল ও বানোয়াট বলে আখ্যায়িত করেছেন। তিনি এ হাদীসের ব্যাপারে ‘তাসদীদুল ক্বাওস’ ( ﺗﺴﺪﻳﺪ ﺍﻟﻘﻮﺱ ﻣﺨﺘﺼﺮ ﻣﺴﻨﺪ ﺍﻟﻔﺮﺩﻭﺱ ) কিতাবে বলেন:
ﻗﺎﻝ ﺍﻟﺤﺎﻓﻆ ﺍﺑﻦ ﺣﺠﺮ ﻓﻲ ﺗﺴﺪﻳﺪ ﺍﻟﻘﻮﺱ ﻫﻮ ﻣﺸﻬﻮﺭ ﻋﻠﻰ ﺍﻷﻟﺴﻨﺔ ﻭﻫﻮ ﻣﻦ ﻛﻼﻡ ﺇﺑﺮﺍﻫﻴﻢ ﺑﻦ ﺃﺑﻲ ﻋﺒﻠﺔ (
“এটা লোক মুখে প্রসিদ্ধ, যা ইবরাহীম ইবনে আবী আবলাহ নামীয় ব্যক্তির উক্তি। (এটি নবীজির হাদিস নয়।)”
৩) ইমাম বাইহাকী (রহঃ) স্বীয় “আয যুহদুল কাবীর” কিতাবে এটি উল্লেখ করে লিখেছেন- ﻗﺎﻝ ﺍﻟﺒﻴﻬﻘﻲ ﻫﺬﺍ ﺇﺳﻨﺎﺩ ﻓﻴﻪ ﺿﻌﻒ এটি দুর্বল সনদে বর্ণিত।”
[ তথ্য, আয যুহদুল কাবীর ১ম খণ্ড, ৩৮৮ পৃষ্ঠা, হাদিস নং ৩৮৪]
৪) ইবনে আররাক (রহ) তাখরীজুল ইহইয়া কিতাবে একে দ্বয়িফ বা দুর্বল বলেছেন।
[ তথ্য: তাখরীজুল ইহইয়া ]
৫) ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রহঃ) বলেছেন-
ﻗﺎﻝ ﺷﻴﺦ ﺍﻹﺳﻼﻡ ﺍﺑﻦ ﺗﻴﻤﻴﺔ ﻓﻲ ” ﻣﺠﻤﻮﻉ ﺍﻟﻔﺘﺎﻭﻱ ” ( 11/197 ) : ” ﻻ ﺃﺻﻞ ﻟﻪ ، ﻭﻟﻢ ﻳﺮﻭﻩ ﺃﺣﺪ ﻣﻦ ﺃﻫﻞ ﺍﻟﻤﻌﺮﻓﺔ ﺑﺄﻗﻮﺍﻝ ﺍﻟﻨﺒﻲ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻭﺃﻓﻌﺎﻟﻪ ، ﻭﺟﻬﺎﺩ ﺍﻟﻜﻔﺎﺭ ﻣﻦ ﺃﻋﻈﻢ ﺍﻷﻋﻤﺎﻝ ، ﺑﻞ ﻫﻮ ﺃﻓﻀﻞ ﻣﺎ ﺗﻄﻮﻉ ﺑﻪ ﺍﻹﻧﺴﺎﻥ ..
"হাদিসটির কোন ভিত্তি নেই। যারা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর কথা ও কাজ অর্থাৎ হাদীস সম্পর্কে জ্ঞান রাখেন তারা কেউ এ হাদিসটি বর্ণনা করেন নি।
কুফফারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করাই সবচেয়ে বড় আমল বরং মানুষ যত ইবাদত করে তার মধ্যে সবচেয়ে উত্তম হচ্ছে জিহাদ।”
[ তথ্য: মাজমূ’উল ফাতাওয়া ১১ খণ্ড, ১৯৭ পৃষ্ঠা]
৬) আল্লামা আজলূনী (রহ) তিনিও একে দ্বয়িফ বলেছেন।
[ সূত্র— কাশফুল খিফা ১/৪২৪]
৭) ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী আল-হানাফি (রহ) আল আসরারুল মারফূয়াহ কিতাবে একে মওদ্বূ বা বানোয়াট বলে আখ্যায়িত করেছেন ।
---------------
সুতরাং এটাই সাব্যস্ত যে, এটি একটি জাল হাদিস।
হারুন বুখারী সাহেবের উক্ত বক্তব্যের দুটি ভ্রান্তির জবাবে ইমাম ইবনে তাইমিয়া রহঃ'র একটি বক্তব্যই এখানে যথার্থ...
"হাদিসটির কোন ভিত্তি নেই। যারা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) এর কথা ও কাজ অর্থাৎ হাদীস সম্পর্কে জ্ঞান রাখেন তারা কেউ এ হাদিসটি বর্ণনা করেন নি।
কুফফারদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করাই সবচেয়ে বড় আমল বরং মানুষ যত ইবাদত করে তার মধ্যে সবচেয়ে উত্তম হচ্ছে জিহাদ।”
------
তাই তাবলীগ বিরোধিতা কেন?
উত্তরঃ
ক) মস্তিষ্কপ্রসুত বিদ'আতি ব্যাখ্যা থেকে সাধারণ মানুষকে বাচিয়ে রাখা।
খ) জাল হাদিস থেকে হুকুম সাব্যস্ত করার বিপদ থেকে মানুষকে সতর্ক করা।
এবং আল্লাহ্* তা'আলাই সবচেয়ে ভালো জানেন!
তাবলীগ বিরোধিতা কেন? ২
Comment