তাকফিরের ব্যাপারে কিছু উপদেশ শায়খ ওসামা বিন লাদেন (রহঃ)
(লেখাটি ইংরেজি থেকে বাংলা করা হয়েছে। () ব্রাকেটের কিছু কথা অনুবাদক বুঝার সুবিধার্থে যুক্ত করেছেন। অনুবাদে যে কোন ভুল অনুবাদকদের নিজেদের ও শয়তানের পক্ষ থেকে)
আমি আমার ভাইদের বলি যে, আহলুস সুন্নাহর পদ্ধতি হল যদি কেউ নিশ্চিতভাবে ইসলামে প্রবেশ করে তবে সে নিশ্চয়তা ব্যতীত ইসলাম ত্যাগ করবে না। সুতরাং মুসলিমদের মূল হচ্ছে তারা মুসলিম, একারনে তাদেরকে তাকফীর করার অনুমতি লোকদের নেই। বরং এটা খাওয়ারিজদের বিশ্বাস। আর, আল্লাহ্ ছাড়া কোন শক্তি বা ক্ষমতা নেই।
সহীহ হাদীসে আমাদের রাসূল সল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, "যদি একজন লোক তার ভাইকে বলে ‘হে কাফির’ তখন তাদের একজনের দিকে ইহা ফিরে আসবে।"
যদি কোন ব্যাক্তিকে কাফির বলা হয়, সে যদি কাফির হয় তখন ইহা ঠিক আছে যে সে কাফির, কিন্তু সে যদি কাফির না হয় তাহলে যে বলেছে, তার দিকে এটা (তাকফীর) ফিরে আসবে। সুতরাং ইহা অনেক অনেক অনেক বড় সতর্কতা ঐসকল বিষয়ে পতিত হওয়ার ব্যাপারে এবং বিশেষ করে নির্দিষ্ট কোন ব্যক্তিকে তাকফীর করার বিষয়ে।
সুতরাং আল্লাহ্ কে ভয় কর এবং জান যে, আল্লাহর পক্ষ থেকে যে বিজয়ের জন্য আমরা অপেক্ষা করছি তাতে আল্লাহ কে ‘আমাদের ধৈর্য্য এবং তাকওয়া’ দেখাতে হবে। যদি তোমার ধৈর্য্য এবং আল্লাহ ভীতি থাকে তাহলে তাদের চক্রান্ত তোমার ক্ষুদ্রতম ক্ষতিও করতে পারবে না।
সুতরাং সতর্ক হও এবং আবারও সতর্ক হও কারন লোকজনের উপর তাকফীর করা খুব বিপদজনক মহাপাপ সমুহের অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং তোমার জিহবাকে সংযত কর।
সহীহ হাদীসে আমাদের রাসুল সল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “আল্লাহ তোমার কাছ থেকে তিনটি বিষয়ের উপর খুশী হন, তুমি তার ইবাদাত করবে এবং তার ইবাদাতে কাউকে শরীক করবে না, এবং তোমরা আল্লাহর রজ্জুকে শক্ত করে ধরবে এবং পরষ্পর বিচ্ছিন্ন হবে না।”
সুতরাং এই ভিত্তি ছাড়া প্রথম বুনিয়াদ প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়। আর, এই ভিত্তি কি? দলবদ্ধ ভাবে একত্রিত থাকাই হল এই ভিত্তি, “তোমরা আল্লাহর রশিকে শক্ত করে ধরবে এবং পরষ্পর বিচ্ছিন্ন হবে না।”
শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহিমাহুল্লাহ বলেন যে, ইসলামের অপরিহার্য বিষয়গুলোর উপলব্ধি হচ্ছে এই হাদীসঃ
“তুমি তার ইবাদাত করবে এবং তার ইবাদাতে কাউকে শরীক করবে না। আল্লাহর রজ্জুকে শক্ত করে ধরবে এবং পরষ্পর বিচ্ছিন্ন হবে না। এবং তোমাদের উপর আল্লাহ যাদেরকে কর্তৃত্ব দিয়েছেন তাদেরকে উপদেশ দিবে।”
সুতরাং, তোমাকে, তোমাদের নিজেদের মধ্যে এবং তোমাদের আমিরদেরকে উপদেশ দিতে হবে।
“এবং তিনি (আল্লাহ) তিনটি জিনিস ঘৃনা করেন, কীলা ওয়া ক্বলা (অমুক অমুক ব্যক্তি বলেছেন) এবং খুব বেশি প্রশ্ন করা এবং সম্পদ অপচয় করা।”
সুতরাং এই তিনটি ভাল জিনিস এবং ঐ তিনটি খারাপ জিনিসের উপর ভালভাবে মনোনিবেশ করতে হবে। কারন প্রথম তিনটি হল দীনের অত্যাবশ্যকীয় জিনিসগুলোর মধ্যে থেকে এবং অপর তিনটি হল দীন ধ্বংসকারী জিনিসগুলোর মধ্যে থেকে। সুতরাং অমুক অমুক ব্যক্তি বলেছেন, অধিক প্রশ্ন করা এবং সম্পদের অপচয় হতে দূরে থাক।
যখন আমরা কথা বলছি এবং ইলমের অধিকারীদের মধ্য থেকে যিনি তাকফীর করার মাপকাঠি জানেন তিনি বলছেন, তার কথা বলাতে এবং তার ভাইদের নিকট ব্যাখ্যা দেওয়াতে তার কোন দোষ নাই।
কিন্তু যারা তাকফীর বিষয়টাকে উপেক্ষা করছেন, উদাহরন স্বরূপ এমনকি শাষকবর্গ যারা দিনে চল্লিশবার কুফরি করে, তারা তাদের উপর তাকফীর করা হতে বিরত থাকে এবং বলে কেউ তাদেরকে তাকফীর করতে পারবে না- এটা হল অপর চরম পন্থা...
সুতরাং যাদের উপর কোরআন এবং সুন্নাহ তাকফীর করেছে, যদি ঐ সকল নিয়ম তাদের উপর প্রযোজ্য হয় তবে আমরা তাদের তাকফীর করি। কিন্তু কোরআন এবং সুন্নাহ যাদের নাম উল্লেখ করে তাকফীর করেছে যেমন ফেরাউন এবং আবু জাহল, তাদেরকে কেউ তাকফীর না করলে তারা ইমানদার বলে গন্য হবে না।
কিন্তু অপর লোকদের বিষয়টি হল যদি তারা ইসলাম বিনষ্টকারী বিষয় সম্পাদন করে, তবে এটা একটা সুক্ষ সংবেদনশীল বিষয়। একজন লোক কখনও কখনও একটা কুফরি কাজ করতে পারে এবং (এরপরও) কাফির হয় না অজ্ঞতার কারনে অথবা বল প্রয়োগে বাধ্য হবার কারনে। এগুলি অত্যন্ত সুক্ষ সংবেদনশীল বিষয় যা সব ভাইয়েরা শিখতে এবং বিশেষজ্ঞ হতে সক্ষম নন।
কিন্তু এখন আমরা সাধারন বিষয়গুলো সম্পর্কে বলছি, (যেগুলোর ব্যাপারে) ঐ সরকারগুলো দায়ী, তারা ইসলাম বিনষ্টকারী বিষয় সমুহ সম্পাদন করেছে এবং পুনঃপুন এটা তাদের নিকট স্পষ্ট করা হয়েছে, কিন্তু তারা এর উপরেই জিদ ধরে থেকেছে এবং আল্লাহ ও তার রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে।
একারনে আমরা ঐ সকল শাষন ব্যবস্থা সমন্ধে বলি যে, তারা আল্লাহর দীন থেকে খারিজ হয়ে গেছে। কিন্তু কিছু ভাই এরচেয়ে আগবাড়িয়ে যায় এবং বলে "এরকম সেরকম ...... তাদের প্রসংসা করতে থাকে"। কিছু লোক অজ্ঞ, একারনে আপনি হঠাৎ করে তাদের উপর হুকুম বাস্তবায়ন করে ফেলতে পারেন না।
মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল ওয়াহহাব এর সময় তিনি কিছু এলাকার লিডারদেরকে তাকফীর করতেন কারন তারা আল্লাহ যা অবতীর্ন করেছেন তা ব্যতীত শাষন করত এবং কিছু লোক ছিল যাদের ব্যাপারে দাবী করা হত যে তারা ইলমের অধিকারী, তারা এসব লিডারদের ডিফেন্ড করত। এসত্বেও তাদেরকে তিনি সবচেয়ে বড় যে জবাব দিয়েছিলেন তা ছিল যে, তারা (অর্থাৎ আল্লাহ যা অবতীর্ন করেছেন তা ব্যতীত শাষনকারী লিডারদের সমর্থক ও রক্ষকরা) ফাসিক।
এবং আল্লাহ দ্রোহীতা এবং কুফরের মধ্যে বড় পার্থক্য বয়েছে, সুতরাং আল্লাহ কে ভয় কর এবং এ থেকে বিরত থাক এবং অধিক যিকর ও দোয়ায় তোমার সময় ব্যয় কর এবং (আল্লাহর) অনুগ্রহ সমুহ উপলব্ধি কর এবং এই অনুগ্রহ সমুহের জন্য আল্লাহর শুকরিয়া আদায় কর যাতে আমরা আল্লাহর সাথে সাক্ষাত করি এমন অবস্থায় যে তিনি আমাদের উপর সন্তুষ্ট।
কথা বলার পূর্বে চিন্তা করবে যে তুমি যা বলবে তার দ্বারা কি অর্জিত হবে। তোমার সর্বাত্বক চেষ্টা করতে হবে আল্লাহর আনুগত্য সহকারে এবং আল্লাহর রাস্তায় জিহাদের মাধ্যমে। এবং যেসব বিষয়ে তোমার জ্ঞান নাই, সেসব বিষয়ে তোমার আল্লাহ কে ভয় করা উচিৎ। এবং তাকওয়ার অন্তর্ভুক্ত হল এলোপাথাড়িভাবে ফতোয়া না দেওয়া এবং আল্লাহ ছাড়া কোন শক্তি ও ক্ষমতা নাই।
---শায়খ ওসামা বিন লাদেন (রহঃ)
Comment