বক্তব্য-৩:
“‘আল-মুসায়ারাহ্’তে (ইবনুল হুমাম রহ.) বলেন, {ঈমান শুদ্ধ হওয়ার জন্য তাসদীক বিল-ক্বলব তথা আন্তরিক বিশ্বাস কিংবা আন্তরিক বিশ্বাস এবং মৌখিক স্বীকারোক্তির সাথে আরো কতিপয় বিষয়কে মিলানো হয়েছে, যেগুলোর কোন একটাতে ত্রুটি করা সর্বসম্মতিক্রমে ঈমান বিনষ্ট করণ বলে ধর্তব্য। যেমন- মূর্তিকে সাজদা না করা, কোন নবীকে হত্যা বা তাঁর শানের অবমাননা না করা, কুরআনে কারীম বা কা’বা শরীফের শানের অবমাননা না করা। তদ্রূপ মুজমা’ আলাইহি-সর্বসম্মতিক্রমে প্রতিষ্ঠিত কোন বিষয়ের বিরোধিতা বা অস্বীকারও ঈমান বিধ্বংসী। কেননা, এসব বিষয় আন্তরিক বিশ্বাস না থাকার দলীল।} অত:পর তিনি বিশ্লেষণ করে প্রমাণ করেছেন যে, এসব বিষয়ে কোনরূপ ত্রুটি না করা ঈমানের একটি মৌলিক অংশ। [যেমন আন্তরিক বিশ্বাস ও মৌখিক স্বীকারোক্তি ঈমানের মৌলিক অংশ।] অতএব, ঈমান হচ্ছে [তিন জিনিসের সমষ্টির নাম। যথা:] তাসদীক-আন্তরিক বিশ্বাস ও সত্যায়ন, মৌখিক স্বীকারোক্তি এবং পূর্বোল্লিখিত বিষয়গুলোতে কোনরূপ ত্রুটি না করা। [অর্থাৎমূর্তিকে সাজদা না করা, কোন নবীকে হত্যা বা তাঁর শানের অবমাননা না করা, কুরআনে কারীম বা কা’বা শরীফের শানের অবমাননা না করা। তদ্রূপ মুজমা’ আলাইহি-সর্বসম্মতিক্রমে প্রতিষ্ঠিত কোন বিষয়ের বিরোধিতা বা অস্বীকার না করা।] এর দলীল- আন্তরিক বিশ্বাস ও সত্যায়ন এবং মৌখিক স্বীকারোক্তি সত্ত্বেও এসব বিষয়ের কোন কোনটা পাওয়া যায়। [অর্থাৎ আন্তরিক বিশ্বাস ও সত্যায়ন এবং মৌখিক স্বীকারোক্তি সত্ত্বেও কেউ মূর্তিকে সাজদা করতে পারে, কোন নবীকে হত্যা বা তাঁর শানের অবমাননা করতে পারে, কুরআনে কারীম বা কা’বা শরীফের শানের অবমাননা করতে পারে। আর এসব বিষয় কুফর হওয়ার ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। তাহলে দেখা গেল, আন্তরিক বিশ্বাস ও সত্যায়ন এবং মৌখিক স্বীকারোক্তি সত্ত্বেও কাফের হয়ে যাচ্ছে। আর তা এসব বিষয়ের কোন একটাতে লিপ্ত হওয়ার কারণে। কাজেই বুঝা গেল, শুধু আন্তরিক বিশ্বাস ও সত্যায়ন এবং মৌখিক স্বীকারোক্তি ঈমানের জন্য যথেষ্ট নয়। এগুলোর সাথে সাথে এসব বিষয়ের কোন একটাতে লিপ্ত না হওয়াও অত্যাবশ্যক। অতএব, আন্তরিক বিশ্বাস ও সত্যায়ন এবং মৌখিক স্বীকারোক্তি যেমন ঈমানের মৌলিক অংশ, এসব ঈমান বিধ্বংসী বিষয় থেকে বেঁচে থাকাও ঈমানের মৌলিক অংশ।]
{(ইবনুল হুমাম রহ.) এরপর বলেন, ঈমান সহীহ হওয়ার জন্য তা’জীমকে শর্ত করার কারণে যেটি অবমাননার বিপরীত, হানাফিরা তা’জীম বিনষ্টকারীদের থেকে প্রকাশিত অনেক কথা ও কাজের দ্বারা তাকফীর করে থাকেন। কেননা, সেগুলো দ্বীনের অবমাননা বুঝায়। যেমন, ইচ্ছাকৃত অযু ছাড়া নামায পড়া ; … কিংবা কোন সুন্নতকে অপছন্দ করা; যেমন- কেউ তার পাগড়ির একাংশ গলার নিচে রাখে আর অন্য একজন তা অপছন্দ করলো, কিংবা কারো গোফ খাটো রাখাকে কেউ অপছন্দ করলো।} ‘আল-মুসায়ারাহ্’র বক্তব্য এখানে সমাপ্ত হল।
আমি বলি [অর্থাৎ আল্লামা শামী রহ. বলেন], উপরোক্ত বক্তব্য থেকে পরিষ্কার, যা কিছুই [দ্বীনের] অবমাননা বুঝায় তার দ্বারাই তাকফীর করা হবে, যদিও অবমাননা করা তার উদ্দেশ্য না হয়। কেননা, অবমাননা উদ্দেশ্য নেয়ার উপর যদি তাকফীর মাওকূফ থাকতো তবে [ঈমানের মৌলিক অংশ হিসেবে] পূর্বালোচিত বিষয়গুলোর কোনটাতে লিপ্ত না হওয়াকে বৃদ্ধি করার প্রয়োজন পড়তো না। কেননা, অবমাননার ইচ্ছা করা তো সরাসরি আন্তরিক বিশ্বাস বিরোধি কাজ।” (ফাতাওয়া শামী: ৬/৩৫৬)
অর্থাৎ মূর্তিকে সাজদা করা, কোন নবীকে হত্যা বা তাঁর শানের অবমাননা করা, কুরআনে কারীম বা কা’বা শরীফের শানের অবমাননা করা … ইত্যাদী দ্বীনের অবমাননাকর যাবতীয় কাজ স্বয়ং নিজেরাই কুফর। এগুলোতে যে লিপ্ত হবে সে কাফের, চাই সে তা দ্বীনের অবমাননার উদ্দেশ্যে করুক বা অন্যকোন উদ্দেশ্যে করুক। অবমাননা উদ্দেশ্য নিয়েছে কি নেয়নি সেটা দেখার বিষয় নয়। কারণ, দ্বীনের অবমাননাকর এসব কাজ থেকে বেঁচে থাকা ঈমানের একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ মৌলিক অংশ, যেমন আন্তরিক বিশ্বাস একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ মৌলিক অংশ। এগুলো থেকে বিরত থেকে আন্তরিক বিশ্বাস পোষণ না করলে যেমন ঈমানদার হয় না, আন্তরিক বিশ্বাস পোষণ করার পর এগুলো থেকে বিরত না থাকলে তেমনি ঈমানদার হবে না। কেননা, ঈমানের জন্য উভয়টাই অত্যাবশ্যক। কাজেই যে ব্যক্তি দ্বীনের অবমাননাকর কোন কাজে লিপ্ত হবে সে কাফের হওয়ার জন্য তার এ লিপ্ত হওয়াই যথেষ্ট। লিপ্ত হওয়ার সাথে সাথে আবার দ্বীনের অবমাননা করার ইচ্ছা থাকাও শর্ত নয়।
বিষয়টাকে আরেকটু ব্যাখ্যা করে বলি। এখানে দু’টো বিষয়:
১. দ্বীনের অবমাননার ইচ্ছা করা।
২. দ্বীনের অবমাননা বুঝায় মতো কোন কাজে লিপ্ত হওয়া।
দ্বীনের অবমাননার ইচ্ছা করা সরাসরি আন্তরিক বিশ্বাস বিরোধি একটা কুফরী কাজ। এটি পাওয়া গেলে তার কাফের হওয়ার জন্য আর কিছু লাগবে না। সে যদি অবমাননার ইচ্ছা করার পর অবমাননাকর কোন কাজে লিপ্ত নাও হয় তবুও কাফের।
আর দ্বীনের অবমাননা বুঝায় মতো কোন কাজে লিপ্ত হওয়া দুই কারণে হতে পারে:
১. দ্বীনের অবমাননার উদ্দেশ্যে।
এটা কুফর হওয়ার ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। বরং এখানে দু’টা কুফর পাওয়া গেল: এক. অবমাননার ইচ্ছা। দুই. অবমাননাকর কাজ।
২. অবমাননার ইচ্ছা ছাড়াই শুধু খাহেশাত বা স্বার্থের কারণে।
এটিও স্বয়ংসম্পূর্ণ কুফর। এর সাথে যদি অবমাননার ইচ্ছাকে শর্ত করে দেয়া হয়, তাহলে ‘অবমাননাকর কাজ থেকে বিরত থাকা’টা আর ঈমানের স্বয়ংসম্পূর্ণ মৌলিক অংশ থাকছে না। কারণ, কোন বস্তুর মৌলিক অংশ বলতে তাকেই বুঝায় যা না পাওয়া গেলে ঐ বস্তু অস্তিত্বেই আসবে না। ‘ সব ধরণের অবমাননাকর কাজ থেকে বিরত থাকা’ যেহেতু ঈমানের একটা মৌলিক অংশ কাজেই সেটা না পাওয়া গেলে আর ঈমানের অস্তিত্ব সম্ভব নয়। আর অবমাননাকর কাজে লিপ্ত হওয়াকে কুফর সাব্যস্ত না করে যদি তার সাথে অবমাননার ইচ্ছাকেও শর্ত হিসেবে যোগ করা হয়, তাহলে ‘অবমাননাকর কাজ থেকে বিরত থাকা’টা ঈমানের মৌলিক অংশ হিসেবে থাকছে না। কারণ অবমাননার ইচ্ছাকেও শর্ত করার অর্থ- অবমাননাকর কাজে লিপ্ত ব্যক্তি যদি তাতে লিপ্ত হওয়ার দ্বারা অবমাননার ইচ্ছা না করে তাহলে সে মুসলমানই থেকে যাবে। কাফের হবে না। তাহলে তখন অবমাননাকর কাজে লিপ্ত হওয়ার পরও ঈমান যাবে না। যদি ‘অবমাননাকর কাজ থেকে বিরত থাকা’টা ঈমানের মৌলিক অংশ হয় তাহলে অবমাননাকর কাজে লিপ্ত হওয়ার পর আর ঈমান বাকি থাকবে না। যেহেতু ‘অবমাননাকর কাজ থেকে বিরত থাকা’ ঈমানের মৌলিক অংশ হিসেবে আইম্মায়ে কেরামের নিকট স্বীকৃত কাজেই কোন একটা অবমাননাকর কাজে লিপ্ত হওয়াই ঈমান বিধ্বংসী ও কুফর। তার সাথে অবমাননার ইচ্ছা থাকা শর্ত নয়। অতএব, অবমাননাকর কাজে লিপ্ত হওয়াই স্বয়ংসম্পূর্ণ কুফর, চাই সাথে অবমাননার ইচ্ছা থাকুক বা না থাকুক।
একটা জরুরী ব্যাখ্যা: আন্তরিক বিশ্বাস ও সত্যায়নের পাশাপাশি মৌখিক স্বীকারোক্তিও ঈমানের মৌলিক অংশ কি’না সে ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে। কারো মতে মৌলিক অংশ, কারো মতে মৌলিক অংশ নয় বরং শর্ত। তবে এ উভয় শ্রেণীই একমত যে, ‘দ্বীনের অবমাননাকর সব ধরণের কাজ থেকে বিরত থাকা’ ঈমানের জন্য অত্যাবশ্যক। বক্তব্যের শুরুতে মুসায়ারাহ্’র বক্তব্যে এ দিকেই ঈঙ্গিত করা হয়েছে।
ফায়েদা: উপরোক্ত বক্তব্য থেকে বুঝা গেল,
১. শুধু আন্তরিক বিশ্বাস ও সত্যায়নকেই ঈমান বলা হয় না। ঈমানের জন্য আন্তরিক বিশ্বাস ও সত্যায়নের পাশাপাশি আরো দু’টো বিষয় আবশ্যক।
এক. উক্ত বিশ্বাস ও সত্যায়নের মৌখিক স্বীকারোক্তি।
দু্ই. উক্ত বিশ্বাস ও সত্যায়ন বিরোধি কোন কথা বা কাজ না পাওয়া যাওয়া। এর দ্বারা উদ্দেশ্য এমন কোন কথা বা কাজ না পাওয়া যাওয়া যা দ্বীনের জন্য অবমাননাকর।
অতএব, ঈমান তিন জিনিসের সমষ্টির নাম:
এক. আন্তরিক বিশ্বাস ও সত্যায়ন।
দুই. উক্ত বিশ্বাস ও সত্যায়নের মৌখিক স্বীকারোক্তি।
তিন. ‘দ্বীনের অবমাননাকর সব ধরণের কাজ থেকে বিরত থাকা’
২. কাফের হওয়ার জন্য আকীদা বিশ্বাসে কুফর পোষণ করা বা মুখে তার স্বীকারোক্তি দেয়া জরুরী নয়। বিশ্বাস ও স্বীকারোক্তি সহীহ সালেম থাকার পরও শুধু বাহ্যিক আমলের কারণে কাফের হতে পারে। যেমন- মূর্তিকে সাজদা করলে, কোন নবীকে হত্যা বা তাঁর শানের অবমাননা করলে, কুরআনে কারীম বা কা’বা শরীফের শানের অবমাননা করলে কিংবা এ জাতীয় অন্যকোন দ্বীনের অবমাননাকর কাজ করলে মুরতাদ হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে আকীদা বিশ্বাস বা মৌখিক স্বীকারোক্তির দিকে বা তার অন্যান্য নেক আমলের দিকে কোনরূপ ভ্রুক্ষেপ করা হবে না।
৩. অকাট্যভাবে প্রমাণিত কোন সুন্নতকে অপছন্দ করলে কাফের হয়ে যাবে।
قال في المسايرة : وبالجملة فقد ضم إلى التصديق بالقلب ، أو بالقلب واللسان في تحقيق الإيمان أمور الإخلال بها إخلال بالإيمان اتفاقا ، كترك السجود لصنم ، وقتل نبي والاستخفاف به ، وبالمصحف والكعبة . وكذا مخالفة أو إنكار ما أجمع عليه بعد العلم به لأن ذلك دليل على أن التصديق مفقود ، ثم حقق أن عدم الإخلال بهذه الأمور أحد أجزاء مفهوم الإيمان فهو حينئذ التصديق والإقرار وعدم الإخلال بما ذكر بدليل أن بعض هذه الأمور ، تكون مع تحقق التصديق والإقرار ، ثم قال ولاعتبار التعظيم المنافي للاستخفاف كفر الحنفية بألفاظ كثيرة ، وأفعال تصدر من المنتهكين لدلالتها على الاستخفاف بالدين كالصلاة بلا وضوء عمدا …أو استقباحها كمن استقبح من آخر جعل بعض العمامة تحت حلقه أو إحفاء شاربه ا هـ . قلت : ويظهر من هذا أن ما كان دليل الاستخفاف يكفر به ، وإن لم يقصد الاستخفاف لأنه لو توقف على قصده لما احتاج إلى زيادة عدم الإخلال بما مر لأن قصد الاستخفاف مناف للتصديق.اهـ
“‘আল-মুসায়ারাহ্’তে (ইবনুল হুমাম রহ.) বলেন, {ঈমান শুদ্ধ হওয়ার জন্য তাসদীক বিল-ক্বলব তথা আন্তরিক বিশ্বাস কিংবা আন্তরিক বিশ্বাস এবং মৌখিক স্বীকারোক্তির সাথে আরো কতিপয় বিষয়কে মিলানো হয়েছে, যেগুলোর কোন একটাতে ত্রুটি করা সর্বসম্মতিক্রমে ঈমান বিনষ্ট করণ বলে ধর্তব্য। যেমন- মূর্তিকে সাজদা না করা, কোন নবীকে হত্যা বা তাঁর শানের অবমাননা না করা, কুরআনে কারীম বা কা’বা শরীফের শানের অবমাননা না করা। তদ্রূপ মুজমা’ আলাইহি-সর্বসম্মতিক্রমে প্রতিষ্ঠিত কোন বিষয়ের বিরোধিতা বা অস্বীকারও ঈমান বিধ্বংসী। কেননা, এসব বিষয় আন্তরিক বিশ্বাস না থাকার দলীল।} অত:পর তিনি বিশ্লেষণ করে প্রমাণ করেছেন যে, এসব বিষয়ে কোনরূপ ত্রুটি না করা ঈমানের একটি মৌলিক অংশ। [যেমন আন্তরিক বিশ্বাস ও মৌখিক স্বীকারোক্তি ঈমানের মৌলিক অংশ।] অতএব, ঈমান হচ্ছে [তিন জিনিসের সমষ্টির নাম। যথা:] তাসদীক-আন্তরিক বিশ্বাস ও সত্যায়ন, মৌখিক স্বীকারোক্তি এবং পূর্বোল্লিখিত বিষয়গুলোতে কোনরূপ ত্রুটি না করা। [অর্থাৎমূর্তিকে সাজদা না করা, কোন নবীকে হত্যা বা তাঁর শানের অবমাননা না করা, কুরআনে কারীম বা কা’বা শরীফের শানের অবমাননা না করা। তদ্রূপ মুজমা’ আলাইহি-সর্বসম্মতিক্রমে প্রতিষ্ঠিত কোন বিষয়ের বিরোধিতা বা অস্বীকার না করা।] এর দলীল- আন্তরিক বিশ্বাস ও সত্যায়ন এবং মৌখিক স্বীকারোক্তি সত্ত্বেও এসব বিষয়ের কোন কোনটা পাওয়া যায়। [অর্থাৎ আন্তরিক বিশ্বাস ও সত্যায়ন এবং মৌখিক স্বীকারোক্তি সত্ত্বেও কেউ মূর্তিকে সাজদা করতে পারে, কোন নবীকে হত্যা বা তাঁর শানের অবমাননা করতে পারে, কুরআনে কারীম বা কা’বা শরীফের শানের অবমাননা করতে পারে। আর এসব বিষয় কুফর হওয়ার ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। তাহলে দেখা গেল, আন্তরিক বিশ্বাস ও সত্যায়ন এবং মৌখিক স্বীকারোক্তি সত্ত্বেও কাফের হয়ে যাচ্ছে। আর তা এসব বিষয়ের কোন একটাতে লিপ্ত হওয়ার কারণে। কাজেই বুঝা গেল, শুধু আন্তরিক বিশ্বাস ও সত্যায়ন এবং মৌখিক স্বীকারোক্তি ঈমানের জন্য যথেষ্ট নয়। এগুলোর সাথে সাথে এসব বিষয়ের কোন একটাতে লিপ্ত না হওয়াও অত্যাবশ্যক। অতএব, আন্তরিক বিশ্বাস ও সত্যায়ন এবং মৌখিক স্বীকারোক্তি যেমন ঈমানের মৌলিক অংশ, এসব ঈমান বিধ্বংসী বিষয় থেকে বেঁচে থাকাও ঈমানের মৌলিক অংশ।]
{(ইবনুল হুমাম রহ.) এরপর বলেন, ঈমান সহীহ হওয়ার জন্য তা’জীমকে শর্ত করার কারণে যেটি অবমাননার বিপরীত, হানাফিরা তা’জীম বিনষ্টকারীদের থেকে প্রকাশিত অনেক কথা ও কাজের দ্বারা তাকফীর করে থাকেন। কেননা, সেগুলো দ্বীনের অবমাননা বুঝায়। যেমন, ইচ্ছাকৃত অযু ছাড়া নামায পড়া ; … কিংবা কোন সুন্নতকে অপছন্দ করা; যেমন- কেউ তার পাগড়ির একাংশ গলার নিচে রাখে আর অন্য একজন তা অপছন্দ করলো, কিংবা কারো গোফ খাটো রাখাকে কেউ অপছন্দ করলো।} ‘আল-মুসায়ারাহ্’র বক্তব্য এখানে সমাপ্ত হল।
আমি বলি [অর্থাৎ আল্লামা শামী রহ. বলেন], উপরোক্ত বক্তব্য থেকে পরিষ্কার, যা কিছুই [দ্বীনের] অবমাননা বুঝায় তার দ্বারাই তাকফীর করা হবে, যদিও অবমাননা করা তার উদ্দেশ্য না হয়। কেননা, অবমাননা উদ্দেশ্য নেয়ার উপর যদি তাকফীর মাওকূফ থাকতো তবে [ঈমানের মৌলিক অংশ হিসেবে] পূর্বালোচিত বিষয়গুলোর কোনটাতে লিপ্ত না হওয়াকে বৃদ্ধি করার প্রয়োজন পড়তো না। কেননা, অবমাননার ইচ্ছা করা তো সরাসরি আন্তরিক বিশ্বাস বিরোধি কাজ।” (ফাতাওয়া শামী: ৬/৩৫৬)
অর্থাৎ মূর্তিকে সাজদা করা, কোন নবীকে হত্যা বা তাঁর শানের অবমাননা করা, কুরআনে কারীম বা কা’বা শরীফের শানের অবমাননা করা … ইত্যাদী দ্বীনের অবমাননাকর যাবতীয় কাজ স্বয়ং নিজেরাই কুফর। এগুলোতে যে লিপ্ত হবে সে কাফের, চাই সে তা দ্বীনের অবমাননার উদ্দেশ্যে করুক বা অন্যকোন উদ্দেশ্যে করুক। অবমাননা উদ্দেশ্য নিয়েছে কি নেয়নি সেটা দেখার বিষয় নয়। কারণ, দ্বীনের অবমাননাকর এসব কাজ থেকে বেঁচে থাকা ঈমানের একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ মৌলিক অংশ, যেমন আন্তরিক বিশ্বাস একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ মৌলিক অংশ। এগুলো থেকে বিরত থেকে আন্তরিক বিশ্বাস পোষণ না করলে যেমন ঈমানদার হয় না, আন্তরিক বিশ্বাস পোষণ করার পর এগুলো থেকে বিরত না থাকলে তেমনি ঈমানদার হবে না। কেননা, ঈমানের জন্য উভয়টাই অত্যাবশ্যক। কাজেই যে ব্যক্তি দ্বীনের অবমাননাকর কোন কাজে লিপ্ত হবে সে কাফের হওয়ার জন্য তার এ লিপ্ত হওয়াই যথেষ্ট। লিপ্ত হওয়ার সাথে সাথে আবার দ্বীনের অবমাননা করার ইচ্ছা থাকাও শর্ত নয়।
বিষয়টাকে আরেকটু ব্যাখ্যা করে বলি। এখানে দু’টো বিষয়:
১. দ্বীনের অবমাননার ইচ্ছা করা।
২. দ্বীনের অবমাননা বুঝায় মতো কোন কাজে লিপ্ত হওয়া।
দ্বীনের অবমাননার ইচ্ছা করা সরাসরি আন্তরিক বিশ্বাস বিরোধি একটা কুফরী কাজ। এটি পাওয়া গেলে তার কাফের হওয়ার জন্য আর কিছু লাগবে না। সে যদি অবমাননার ইচ্ছা করার পর অবমাননাকর কোন কাজে লিপ্ত নাও হয় তবুও কাফের।
আর দ্বীনের অবমাননা বুঝায় মতো কোন কাজে লিপ্ত হওয়া দুই কারণে হতে পারে:
১. দ্বীনের অবমাননার উদ্দেশ্যে।
এটা কুফর হওয়ার ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। বরং এখানে দু’টা কুফর পাওয়া গেল: এক. অবমাননার ইচ্ছা। দুই. অবমাননাকর কাজ।
২. অবমাননার ইচ্ছা ছাড়াই শুধু খাহেশাত বা স্বার্থের কারণে।
এটিও স্বয়ংসম্পূর্ণ কুফর। এর সাথে যদি অবমাননার ইচ্ছাকে শর্ত করে দেয়া হয়, তাহলে ‘অবমাননাকর কাজ থেকে বিরত থাকা’টা আর ঈমানের স্বয়ংসম্পূর্ণ মৌলিক অংশ থাকছে না। কারণ, কোন বস্তুর মৌলিক অংশ বলতে তাকেই বুঝায় যা না পাওয়া গেলে ঐ বস্তু অস্তিত্বেই আসবে না। ‘ সব ধরণের অবমাননাকর কাজ থেকে বিরত থাকা’ যেহেতু ঈমানের একটা মৌলিক অংশ কাজেই সেটা না পাওয়া গেলে আর ঈমানের অস্তিত্ব সম্ভব নয়। আর অবমাননাকর কাজে লিপ্ত হওয়াকে কুফর সাব্যস্ত না করে যদি তার সাথে অবমাননার ইচ্ছাকেও শর্ত হিসেবে যোগ করা হয়, তাহলে ‘অবমাননাকর কাজ থেকে বিরত থাকা’টা ঈমানের মৌলিক অংশ হিসেবে থাকছে না। কারণ অবমাননার ইচ্ছাকেও শর্ত করার অর্থ- অবমাননাকর কাজে লিপ্ত ব্যক্তি যদি তাতে লিপ্ত হওয়ার দ্বারা অবমাননার ইচ্ছা না করে তাহলে সে মুসলমানই থেকে যাবে। কাফের হবে না। তাহলে তখন অবমাননাকর কাজে লিপ্ত হওয়ার পরও ঈমান যাবে না। যদি ‘অবমাননাকর কাজ থেকে বিরত থাকা’টা ঈমানের মৌলিক অংশ হয় তাহলে অবমাননাকর কাজে লিপ্ত হওয়ার পর আর ঈমান বাকি থাকবে না। যেহেতু ‘অবমাননাকর কাজ থেকে বিরত থাকা’ ঈমানের মৌলিক অংশ হিসেবে আইম্মায়ে কেরামের নিকট স্বীকৃত কাজেই কোন একটা অবমাননাকর কাজে লিপ্ত হওয়াই ঈমান বিধ্বংসী ও কুফর। তার সাথে অবমাননার ইচ্ছা থাকা শর্ত নয়। অতএব, অবমাননাকর কাজে লিপ্ত হওয়াই স্বয়ংসম্পূর্ণ কুফর, চাই সাথে অবমাননার ইচ্ছা থাকুক বা না থাকুক।
একটা জরুরী ব্যাখ্যা: আন্তরিক বিশ্বাস ও সত্যায়নের পাশাপাশি মৌখিক স্বীকারোক্তিও ঈমানের মৌলিক অংশ কি’না সে ব্যাপারে মতভেদ রয়েছে। কারো মতে মৌলিক অংশ, কারো মতে মৌলিক অংশ নয় বরং শর্ত। তবে এ উভয় শ্রেণীই একমত যে, ‘দ্বীনের অবমাননাকর সব ধরণের কাজ থেকে বিরত থাকা’ ঈমানের জন্য অত্যাবশ্যক। বক্তব্যের শুরুতে মুসায়ারাহ্’র বক্তব্যে এ দিকেই ঈঙ্গিত করা হয়েছে।
ফায়েদা: উপরোক্ত বক্তব্য থেকে বুঝা গেল,
১. শুধু আন্তরিক বিশ্বাস ও সত্যায়নকেই ঈমান বলা হয় না। ঈমানের জন্য আন্তরিক বিশ্বাস ও সত্যায়নের পাশাপাশি আরো দু’টো বিষয় আবশ্যক।
এক. উক্ত বিশ্বাস ও সত্যায়নের মৌখিক স্বীকারোক্তি।
দু্ই. উক্ত বিশ্বাস ও সত্যায়ন বিরোধি কোন কথা বা কাজ না পাওয়া যাওয়া। এর দ্বারা উদ্দেশ্য এমন কোন কথা বা কাজ না পাওয়া যাওয়া যা দ্বীনের জন্য অবমাননাকর।
অতএব, ঈমান তিন জিনিসের সমষ্টির নাম:
এক. আন্তরিক বিশ্বাস ও সত্যায়ন।
দুই. উক্ত বিশ্বাস ও সত্যায়নের মৌখিক স্বীকারোক্তি।
তিন. ‘দ্বীনের অবমাননাকর সব ধরণের কাজ থেকে বিরত থাকা’
২. কাফের হওয়ার জন্য আকীদা বিশ্বাসে কুফর পোষণ করা বা মুখে তার স্বীকারোক্তি দেয়া জরুরী নয়। বিশ্বাস ও স্বীকারোক্তি সহীহ সালেম থাকার পরও শুধু বাহ্যিক আমলের কারণে কাফের হতে পারে। যেমন- মূর্তিকে সাজদা করলে, কোন নবীকে হত্যা বা তাঁর শানের অবমাননা করলে, কুরআনে কারীম বা কা’বা শরীফের শানের অবমাননা করলে কিংবা এ জাতীয় অন্যকোন দ্বীনের অবমাননাকর কাজ করলে মুরতাদ হয়ে যাবে। এক্ষেত্রে আকীদা বিশ্বাস বা মৌখিক স্বীকারোক্তির দিকে বা তার অন্যান্য নেক আমলের দিকে কোনরূপ ভ্রুক্ষেপ করা হবে না।
৩. অকাট্যভাবে প্রমাণিত কোন সুন্নতকে অপছন্দ করলে কাফের হয়ে যাবে।
Comment