বক্তব্য-৪:
‘জরুরী বিষয়’ ও ‘অকাট্য বিষয়’- এর ব্যবধান:
জরুরী বিষয় বলতে পূর্বে যা বলা হয়েছে যে, এমন সব বিষয় যেগুলো এতই সুস্পষ্ট-সর্বজন বিদিত যে, তার আর দলীল প্রমাণের প্রয়োজন হয় না। যেমন- নামায, রোযা, হজ্ব, যাকাত, মদ, যিনা…ইত্যাদী যেগুলো শিক্ষিত-অশিক্ষিত সকল দ্বীনদার মুসলমানেরই জানা থাকে। আর যেসব বিষয় অকাট্য দলীল প্রমাণ দ্বারা সাব্যস্ত তবে নামায রোযার মত এত সুস্পষ্ট নয়, সেগুলোকে ‘জরুরী বিষয়’ বলে না বরং ‘অকাট্য বিষয়’ বলে। অতএব, সব জরুরী বিষয়ই অকাট্য বিষয়, কিন্তু সব অকাট্য বিষয়ই জরুরী বিষয় নয়।
কোন জরুরী বিষয়কে অস্বীকার করলে সাথে সাথে কাফের হয়ে গেছে বলে হুকুম লাগানো হবে। আর কোন অকাট্য বিষয়কে অস্বীকার করলে সাথে সাথেই কাফের হয়ে গেছে বলে হুকুম লাগানো হবে না। দেখতে হবে, বিষয়টা যে অকাট্য তা সে জানে কি’না। যদি জানা শুনা থাকা সত্ত্বেও অস্বীকার করে তাহলে কাফের হয়ে গেছে বলে হুকুম লাগানো হবে। আর যদি জানা না থাকে তাহলে সাথে সাথে কুফরের হুকুম লাগানো হবে না। প্রথমে উলামায়ে কেরাম তাকে জানাবে যে, বিষয়টা শরীয়তের অকাট্য দলীল দ্বারা প্রমাণিত। এরপরও যদি অস্বীকারের উপরই বহাল থাকে তাহলে কাফের হয়ে গেছে বলে হুকুম লাগানো হবে। (দেখুন: ফাতাওয়া শামী, ৬: ৩৫৭)
ফায়েদা:
উপরোক্ত বক্তব্য থেকে জানা গেল,
১. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করলে কাফের হয়ে যায়। মিথ্যা প্রতিপন্ন বলতে তিনি নবীই নন বা তাঁর আনীত ধর্ম সত্য নয় … ইত্যাদী বলা আবশ্যক নয়। তাঁর আনীত যেকোন একটা বিষয়কে অস্বীকার করাই তাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করার শামিল। কারণ, তাঁর আনীত কোন বিষয়কে অস্বীকার করার অর্থ একথা বলা যে, উক্ত বিষয়ে তিনি মিথ্যা বলেছেন। এতটুকুই কাফের হওয়ার জন্য যথেষ্ট। মুখে সরাসরি তাঁকে মিথ্যাবাদি বলা আবশ্যক নয়।
২. দ্বীনের কোন জরুরী বিষয়কে অস্বীকার করলে যেমন কাফের হয়ে যায়, কোন অকাট্য বিষয়কে অস্বীকার করলেও কাফের হয়ে যায়। তবে এ দু’টোর মাঝে কিছুটা পার্থক্য আছে যেমনটা উপরে বলা হয়েছে।
৩. দ্বীনের অবমাননাকর কোন কথা বা কাজ কুফর।
( قوله تكذيبه صلى الله عليه وسلم إلخ ) المراد بالتكذيب عدم التصديق الذي مر أي عدم الإذعان والقبول ، لما علم مجيئه به صلى الله عليه وسلم ضرورة ، أي علما ضروريا لا يتوقف على نظر واستدلال ، وليس المراد التصريح بأنه كاذب في كذا لأن مجرد نسبة الكذب إليه صلى الله عليه وسلم كفر وظاهر كلامه تخصيص الكفر بجحد الضروري فقط ، مع أن الشرط عندنا ثبوته على وجه القطع وإن لم يكن ضروريا ، بل قد يكون استخفافا من قول أو فعل كما مر ا هـ
“কুফর হচ্ছে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করা। মিথ্যা প্রতিপন্ন করা দ্বারা উদ্দেশ্য তাসদীক-সত্যায়ন না করা যেটির আলোচনা পূর্বে অতিবাহিত হয়েছে। অর্থাৎ এমন কোন বিষয়কে মেনে না নেয়া এবং কবুল না করা যা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিয়ে এসেছেন বলে এতই সুস্পষ্ট-সর্বজন বিদিত যে, তার আর দলীল প্রমাণের প্রয়োজন হয় না। মিথ্যা প্রতিপন্ন করা দ্বারা এটা উদ্দেশ্য নয় যে, সুস্পষ্টভাবে বলবে, তিনি অমুক বিষয়ে মিথ্যাবাদি। কেননা, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দিকে কোনরূপ মিথ্যার সম্পর্ক করাটাই কুফর। [অর্থাৎ যে বলবে, ‘রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মিথ্যাবাদি’- সে এতটুকুর দ্বারাই কাফের হয়ে যাবে, যদিও সে শরীয়তের কোন বিষয়কে অস্বীকার না করে এবং যদিও অন্যকোন কুফর তার মাঝে না পাওয়া যায়।] বাহ্যিকভাবে তাঁর [অর্থাৎ হাছকাফী রহ. এর] বক্তব্য থেকে বুঝে আসে, কুফর শুধু জরুরী বিষয়কে অস্বীকার করার মাঝেই সীমবদ্ধ। কিন্তু [বাস্তবে বিষয়টা এমন নয়] আমাদের [হানাফিদের] নিকট শুধু অকাট্যভাবে প্রমাণিত হওয়া শর্ত, যদিও তা জরুরী বিষয় না হয়। বরং অনেক সময় শুধু অবমাননাকর কথা বা কাজই কুফর হয়, যেমনটা পূর্বে আলোচিত হয়েছে। “ (ফাতাওয়া শামী: ৬/৩৫৬-৩৫৭)‘জরুরী বিষয়’ ও ‘অকাট্য বিষয়’- এর ব্যবধান:
জরুরী বিষয় বলতে পূর্বে যা বলা হয়েছে যে, এমন সব বিষয় যেগুলো এতই সুস্পষ্ট-সর্বজন বিদিত যে, তার আর দলীল প্রমাণের প্রয়োজন হয় না। যেমন- নামায, রোযা, হজ্ব, যাকাত, মদ, যিনা…ইত্যাদী যেগুলো শিক্ষিত-অশিক্ষিত সকল দ্বীনদার মুসলমানেরই জানা থাকে। আর যেসব বিষয় অকাট্য দলীল প্রমাণ দ্বারা সাব্যস্ত তবে নামায রোযার মত এত সুস্পষ্ট নয়, সেগুলোকে ‘জরুরী বিষয়’ বলে না বরং ‘অকাট্য বিষয়’ বলে। অতএব, সব জরুরী বিষয়ই অকাট্য বিষয়, কিন্তু সব অকাট্য বিষয়ই জরুরী বিষয় নয়।
কোন জরুরী বিষয়কে অস্বীকার করলে সাথে সাথে কাফের হয়ে গেছে বলে হুকুম লাগানো হবে। আর কোন অকাট্য বিষয়কে অস্বীকার করলে সাথে সাথেই কাফের হয়ে গেছে বলে হুকুম লাগানো হবে না। দেখতে হবে, বিষয়টা যে অকাট্য তা সে জানে কি’না। যদি জানা শুনা থাকা সত্ত্বেও অস্বীকার করে তাহলে কাফের হয়ে গেছে বলে হুকুম লাগানো হবে। আর যদি জানা না থাকে তাহলে সাথে সাথে কুফরের হুকুম লাগানো হবে না। প্রথমে উলামায়ে কেরাম তাকে জানাবে যে, বিষয়টা শরীয়তের অকাট্য দলীল দ্বারা প্রমাণিত। এরপরও যদি অস্বীকারের উপরই বহাল থাকে তাহলে কাফের হয়ে গেছে বলে হুকুম লাগানো হবে। (দেখুন: ফাতাওয়া শামী, ৬: ৩৫৭)
ফায়েদা:
উপরোক্ত বক্তব্য থেকে জানা গেল,
১. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করলে কাফের হয়ে যায়। মিথ্যা প্রতিপন্ন বলতে তিনি নবীই নন বা তাঁর আনীত ধর্ম সত্য নয় … ইত্যাদী বলা আবশ্যক নয়। তাঁর আনীত যেকোন একটা বিষয়কে অস্বীকার করাই তাকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করার শামিল। কারণ, তাঁর আনীত কোন বিষয়কে অস্বীকার করার অর্থ একথা বলা যে, উক্ত বিষয়ে তিনি মিথ্যা বলেছেন। এতটুকুই কাফের হওয়ার জন্য যথেষ্ট। মুখে সরাসরি তাঁকে মিথ্যাবাদি বলা আবশ্যক নয়।
২. দ্বীনের কোন জরুরী বিষয়কে অস্বীকার করলে যেমন কাফের হয়ে যায়, কোন অকাট্য বিষয়কে অস্বীকার করলেও কাফের হয়ে যায়। তবে এ দু’টোর মাঝে কিছুটা পার্থক্য আছে যেমনটা উপরে বলা হয়েছে।
৩. দ্বীনের অবমাননাকর কোন কথা বা কাজ কুফর।
----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
ফাতাওয়া শামীর উল্লেখিত বক্তব্যসমূহ থেকে আশাকরি আর অস্পষ্ট নেই যে, কুফর শুধু আকীদা বিশ্বাসের মাঝেই সীমাবদ্ধ নয়। পূর্ণ আন্তরিক বিশ্বাস বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও এবং সকল বিষয়ের মৌখিক স্বীকারোক্তি প্রদান সত্ত্বেও কুফরে আমলী তথা কুফরী কথা ও কাজের কারণে মুরতাদ হযে যেতে পারে। কাজেই ‘কুফরে আমলী ছোট কুফর, কুফরে আমলী দ্বারা মুরতাদ হয় না’ বলে যে আকীদা বিশ্বাস আমাদের সমাজে প্রচলিত আছে তা একান্তই বানোয়াট ও ভিত্তিহীন হওয়ার ব্যাপারে কোনই সন্দেহ নেই। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে বুঝার তাওফীক দান করুন। আমাদের ঈমান আমল হেফাজত করুন। আমীন!!
----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
ফাতাওয়া শামীর উল্লেখিত বক্তব্যসমূহ থেকে আশাকরি আর অস্পষ্ট নেই যে, কুফর শুধু আকীদা বিশ্বাসের মাঝেই সীমাবদ্ধ নয়। পূর্ণ আন্তরিক বিশ্বাস বিদ্যমান থাকা সত্ত্বেও এবং সকল বিষয়ের মৌখিক স্বীকারোক্তি প্রদান সত্ত্বেও কুফরে আমলী তথা কুফরী কথা ও কাজের কারণে মুরতাদ হযে যেতে পারে। কাজেই ‘কুফরে আমলী ছোট কুফর, কুফরে আমলী দ্বারা মুরতাদ হয় না’ বলে যে আকীদা বিশ্বাস আমাদের সমাজে প্রচলিত আছে তা একান্তই বানোয়াট ও ভিত্তিহীন হওয়ার ব্যাপারে কোনই সন্দেহ নেই। আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে বুঝার তাওফীক দান করুন। আমাদের ঈমান আমল হেফাজত করুন। আমীন!!
----------------------------------------------------------------------------------------------------------------
Comment