Announcement

Collapse
No announcement yet.

শবে বারাআত কি আসলেই বিদআত!!!

Collapse
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • শবে বারাআত কি আসলেই বিদআত!!!

    ভূমিকা

    এই বিষয়টা সম্পর্কে কলম ধরার কোন ইচ্ছে ছিলনা। নফল ইবাদত নিয়ে অযথা বিতর্ক করা ঠিক নয়। যেখানে এদেশের নামের মুসলমানরা ফরয ছেড়ে দিচ্ছে অহরহ। হাজারো মুসলমান নাস্তিক হচ্ছে ধর্ম সম্পর্কে চূড়ান্ত অজ্ঞতার কারণে। হাজারো মুসলমান কুরআনের আক্ষরিক জ্ঞান থেকে বঞ্চিত। কেন একজন মুসলমান অন্য ধর্মাবলম্বী থেকে আলাদা তা’ই জানেনা কোটি মুসলমান। তারপরও যখন কতিপয় শ্রদ্ধেয় সালাফি ভাইগণ বিষয়টি অন্যরকম ভাবে জাতির সামনে পেশ করেন এবং নবীজী সাঃ থেকে প্রমাণিত একটি নফল আমলকে অস্বিকার করে বিদআত নামে নামকরণ করেনন ।আর অপরদিকে রাজারবাগী, দেওয়ানবাগী, কুতুববাগী, আর আটরশী, চন্দ্রপুরী ও মাইজভান্ডারীসহ বেদআতের ধ্বজাধারী নামধারী আহলে সুন্নত ওয়াল জামাতসহ অসংখ্য মাজার -কবর এবং পীরপূজারীরা পবিত্র শবে বরাতের নামে হালুয়া রুটি আর সম্মিলিত ইবাদতের মত চূড়ান্ত পর্যায়ের হীন বেদআতি কার্যকলাপ চালিয়ে যায়।তখন বিষয়টির বাস্তব রুপ জাতির সামনে তুলে ধরা আবশ্যক হয়ে দাড়ায়।

    শবে বারাআত কি?

    “শব” শব্দটা ফার্সি। যার অর্থ হল-রাত। আর বরাআত এটি আরবী শব্দ। মূলত হল-براءت যার অর্থ হল “মুক্তি” তথা জাহান্নাম থেকে মুক্তির রাত হল শবে বারাআত। বরাত বলাটা ভুল। কারণ শবে বরাত (برات) মানে হল বিয়ের রাত। সুতরাং আমরা বলব-শবে বারাআত( شب براءت)
    শবে বারাআতকে হাদিসের পরিভাষায় বলা হয়েছে “লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান”(ليلة النصف من شعبان) তথা শাবানের অর্ধ মাসের রাত। কেউ কেউ “শবে বরাআত” নামে হাদিসে শব্দ না থাকায় এ রাতকে অস্বিকার করার মত যুক্তি দিয়ে থাকেন। তাদেরকে আমি বলি-আমরা পাঁচ ওয়াক্ত নামায পড়া আবশ্যক বলি কুরআন হাদিসে বর্ণিত নির্দেশের কারণে। কিন্তু কুরআন হাদিসের কোথাও কি নামায শব্দ আছে? তাওহীদ কে আমরা ঈমানের শর্ত বলি। কিন্তু কুরআন হাদীসের কোথাও তাওহীদ শব্দ নেই। তাই বলে কি তাওহীদ কুরআন হাদীস দিয়ে প্রমাণিত নয়? আমরা যাকে নামায বলি সেই অর্থবোধক কুরআন হাদিসের উদ্ধৃত শব্দ “সালাত”ই হল নামায। আমরা যাকে তাওহীদ বলি কুরআন হাদীসের একত্ববাদ প্রকাশক সকল শব্দই হল এ তওহীদ। তেমনি আমরা যাকে “শবে বারাআত” বলি তথা শাবানের পনের তারিখের রাত বলে থাকি এই অর্থবোধক শব্দ হাদিসে পাওয়া গেলে তা’ই হবে শবে বারাআত। আর এই অর্থবোধক হাদীসে বর্ণিত শব্দ হল “লাইলাতুন নিসফি মিন শাবান”। সুতরাং তাই হল শবে বারাআত।

    হাদিসে শবে বারাআত

    কুরআনে শবে বারাআতের কোন উল্লেখ নাই। কুরআনে কেবল “লাইলাতুল কদর” তথা “শবে কদর” এর কথা উল্লেখ আছে। পবিত্র কুরআনের পঁচিশ নাম্বার পাড়ার সূরায়ে দুখানের ২ ও ৩ নং আয়াতে বর্ণিত মুবারক রজনী দ্বারা লাইলাতুল কদর তথা শবে কদর উদ্দেশ্য। শবে বারাআত নয়। এটাই বিশুদ্ধ বলেছেন গ্রহণযোগ্য মুফাসসিরীনে কেরাম। যার পক্ষে যুক্তিও শক্তিশালী। বিস্তারিত জানতে দেখুন-
    ১ আদ দুররুল মানসুর-৭/৪০১-৪০৭
    ২ তাফসীরে কাশশাফ-৪/২৭২
    ৩ তাফসীরে ইবনে কাসীর-৭/২৪৬
    ৪ তাফসীরে বাগাভী-৭/২২৭-২২৮

    বিভিন্ন হাদিসে শবে বারাআতের বর্ণনা এসেছে। যেমন-

    عن علي بن أبي طالب قال قال رسول الله صلى الله عليه و سلم ( إذا كانت ليلة النصف من شعبان فقوموا ليلها وصوموا نهارها . فإن الله ينزل فيها لغروب الشمس إلى سماء الدنيا . فيقول ألا من مستغفر لي فأغفر له ألا من مسترزق فأرزقه ألا مبتلى فأعافيه ألا كذا ألا كذا حتى يطلع الفجر )

    হযরত আলী বিন আবু তালীব রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-যখন শাবান মাসের অর্ধেকের রজনী আসে [শবে বরাত] তখন তোমরা রাতে নামায পড়, আর দিনের বেলা রোযা রাখ। নিশ্চয় আল্লাহ এ রাতে সূর্য ডুবার সাথে সাথে পৃথিবীর আসমানে এসে বলেন-কোন গোনাহ ক্ষমাপ্রার্থী আছে কি আমার কাছে? আমি তাকে ক্ষমা করে দিব। কোন রিজিকপ্রার্থী আছে কি? আমি তাকে রিজিক দিব। কোন বিপদগ্রস্থ মুক্তি পেতে চায় কি? আমি তাকে বিপদমুক্ত করে দিব। আছে কি এমন, আছে কি তেমন? এমন বলতে থাকেন ফযর পর্যন্ত। {সূনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-১৩৮৮, শুয়াবুল ঈমান, হাদীস নং-৩৮২২}

    عن عائشة : قالت فقدت رسول الله صلى الله عليه و سلم ليلة فخرجت فإذا هو بالبقيع فقال أكنت تخافين أن يحيف الله عليك ورسوله ؟ قلت يا رسول الله إني ظننت أنك أتيت بعض نساءك فقال إن الله عز و جل ينزل ليلة النصف من شعبان إلى السماء الدنيا فيفغر لأكثر من عدد شعر غنم كلب

    অনুবাদ-হযরত আয়শা রাঃ বলেন-এক রাতে রাসূল সাঃ কে না পেয়ে খুজতে বের হলাম। খুঁজতে খুঁজতে জান্নাতুল বাকীতে [মদীনার কবরস্থান] গিয়ে আমি তাঁকে দেখতে পেলাম। তিনি বললেন-কি ব্যাপার আয়শা? [তুমি যে তালাশে বের হলে?] তোমার কি মনে হয় আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল তোমার উপর কোন অবিচার করবেন? [তোমার পাওনা রাতে অন্য কোন বিবির ঘরে গিয়ে রাত্রিযাপন করবেন?] হযরত আয়শা রাঃ বললেন- আমার ধারণা হয়েছিল আপনি অন্য কোন বিবির ঘরে গিয়েছেন। রাসূল সাঃ তখন বললেন-যখন শাবান মাসের ১৫ই রাত আসে অর্থাৎ যখন শবে বরাত হয়, তখন আল্লাহ পাক এ রাতে প্রথম আসমানে নেমে আসেন। তারপর বনু কালব গোত্রের বকরীর পশমের চেয়ে বেশী সংখ্যক বান্দাদেরকে ক্ষমা করে দেন। {সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং-৭৩৯, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-২৬০২৮, মুসনাদে আব্দ বিন হুমাইদ, হাদীস নং-১৫০৯}

    যেহেতু গায়রে মুকাল্লিদ ভাইয়েরা এই রাতের ফযীলতকে অস্বিকার করে থাকেন। তাই তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য এবং মান্যবর ব্যক্তিত্ব আহলে হাদিস জামাতের সম্মানিত ইমাম শায়েখ নাসীরুদ্দীন আলবানী রহঃ তার প্রসিদ্ধ গ্রন্থ “আস সিলসিলাতুস সাহিহাহ আল মুজাল্লাদাতুল কামিলাহ” গ্রন্থে ৩ নং খন্ডে ১১৪৪ নং অধ্যায়ে ২১৮ নাম্বার পৃষ্ঠায় শবে বারাআত সম্পর্কে হাদিস এনে যে দীর্ঘ আলোচনা করে যে মত ব্যক্ত করেছেন তা তোলে ধরা হল-

    عن معاذ بن جبل عن النبي صلى الله عليه و سلم قال : ( يطلع الله إلى خلقه في ليلة النصف من شعبان فيغفر لجميع خلقه إلا لمشرك أو مشاحن )

    অনুবাদ-হযরত মুয়াজ বিন জাবাল রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-অর্ধ শাবানের রাতে [শবে বরাতে]আল্লাহ তাআলা তাঁর সমস্ত মাখলুকের প্রতি মনযোগ আরোপ করেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ ভাবাপন্ন ব্যক্তি ছাড়া সকলকে ক্ষমা করে দেন। {সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৫৬৬৫, মুসনাদুল বাজ্জার, হাদীস নং-২৭৫৪, মুসনাদে ইসহাক বিন রাহওয়াই, হাদীস নং-১৭০২, আল মুজামুল আওসাত, হাদীস নং-৬৭৭৬, আল মুজামুল কাবীর, হাদীস নং-২১৫, সুনানে ইবনে মাজা, হাদীস নং-১৩৯০, মুসনাদুশ শামীন, হাদীস নং-২০৩, মুসন্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-৩০৪৭৯, শুয়াবুল ঈমান, হাদীস নং-৬২০৪}

    আলবানী তার সিলসিলাতুস সাহিহাহর ৩ নং খন্ডের ১৩৫ নং পৃষ্ঠায় বলেন। “এই হাদিসটি সহীহ” এটি সাহাবাদের এক জামাত বর্ণনা করেছেন বিভিন্ন সূত্রে যার একটি অন্যটিকে শক্তিশালী করেছে। তাদের মাঝে রয়েছেন # মুয়াজ বিন জাবাল রাঃ # আবু সা’লাবা রাঃ # আব্দুল্লাহ বিন আমর রাঃ # আবু মুসা আশয়ারী রাঃ # আবু হুরায়রা রাঃ # আবু বকর সিদ্দীক রাঃ # আউফ বিন মালিক রাঃ # আয়েশা রাঃ প্রমুখ সাহাবাগণ।
    উপরে বর্ণিত সবক’টি বর্ণনাকারীর হাদিস তিনি তার কিতাবে আনার মাধ্যমে সুদীর্ঘ আলোচনার পর শেষে তিনি বলেন-

    و جملة القول أن الحديث بمجموع هذه الطرق صحيح بلا ريب و الصحة تثبت بأقل منها
    عددا ما دامت سالمة من الضعف الشديد كما هو الشأن في هذا الحديث ، فما نقله
    الشيخ القاسمي رحمه الله تعالى في ” إصلاح المساجد ” ( ص ১০৭ ) عن أهل التعديل
    و التجريح أنه ليس في فضل ليلة النصف من شعبان حديث صحيح ، فليس مما ينبغي
    الاعتماد عليه ، و لئن كان أحد منهم أطلق مثل هذا القول فإنما أوتي من قبل
    التسرع و عدم وسع الجهد لتتبع الطرق على هذا النحو الذي بين يديك . و الله تعالى هو الموفق

    অর্থাৎ “সারকথা হল এই যে, নিশ্চয় এই হাদিসটি এই সকল সূত্র পরম্পরা দ্বারা সহীহ, এতে কোন সন্দেহ নেই। আর সহীহ হওয়া এর থেকে কম সংখ্যক বর্ণনার প্রমাণিত হয়ে যায়, যতক্ষণ না মারাত্মক কোন দুর্বলতা থেকে বেঁচে যায়, যেমন এই হাদিসটি হয়েছে। আর যা বর্ণিত শায়েখ কাসেমী থেকে তার প্রণিত “ইসলাহুল মাসাজিদ” গ্রন্থের ১০৭ নং পৃষ্ঠায় জারাহ তা’দীল ইমামদের থেকে যে, “শাবানের অর্ধ মাসের রাতের কোন ফযীলত সম্পর্কে কোন হাদিস নেই মর্মে” সেই বক্তব্যের উপর নির্ভর করা যাবেনা। আর যদি কেউ তা মেনে নেয় সে হবে ঝাঁপিয়ে পড়া স্বভাবের, আর তার ব্যখ্যা-বিশ্লেষণ ও গবেষণা-উদ্ভাবনের কোন যোগ্যতাই নেই এরকমভাবে যেমন আমি করলাম”।
    শায়েখ আলবানী রহঃ এর বিশ্লেষণ থেকে একথা নির্ধিদ্ধায় আমরা বলতে পারি হাদিস দ্বারা শবে বারাআত প্রমাণিত


    একটি প্রশ্ন ও জবাব

    অনেক গায়রে মুকাল্লিদ ভাই প্রশ্ন করে থাকেন যে, এ রাত ফযীলতপূর্ণ একথা ঠিক আছে। কিন্তু এ রাতে আমল করতে হবে একথাতো কোথাও নেই। তাই আমল করা জায়েজ হবে না। বেদআত হবে।

    জবাব

    বড়ই আশ্চর্য কথা বলে থাকেন তারা। যে সময় ফযীলতপূর্ণ, সে সময় ইবাদত করা নিষিদ্ধ। তাহলে সে সময় ফযীলতপূর্ণ হয়ে লাভ কি? আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বিভিন্ন সময়ের ফযীলতের কথা কেন বলেছেন? সে সময় ঘুমিয়ে থাকার জন্য? না ইবাদত করে আল্লাহর সন্তুষ্টি হাসিল করার জন্য?
    শবে কদরের ফযীলত কেন বলা হয়েছে? ঘুমানোর জন্য? তাহলেতো একথাও বলা যায় যে, শবে কদরের ফযীলত আছে। কিন্তু সে রাতে ইবাদত করা বিদআত। কারণ কোন নির্ধারিত ইবাদতের কথা এ রাতের ব্যাপারে বর্ণিত হয়নি। এমন কথা বলাটি কি বোকামী হবে না?
    ফযীলত বলা মানেই হল এ সময় ঘুমিয়ে না থেকে ইবাদতে নিমগ্ন হওয়ার তাকীদ দিচ্ছেন আল্লাহ রাব্বুল আলামীন। ঘুমিয়ে থাকলে ফযীলত অর্জিত হবে কিভাবে?

    এ রাতে করণীয়

    এ মহামান্বিত রাতে করার মত নির্দিষ্ট কোন আমল নেই। সবাই কোথাও একত্র হয়ে সম্মিলিত কোন আমলও নেই। উল্লেখিত হাদীসের আলোকে এ রাতের আমল হল-
    ১-ইস্তিগফার তথা আল্লাহর কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করা।
    ২-আড়ম্বরপূর্ণভাবে নয় স্বাভাবিকভাবে হলে কবর যিয়ারত করা।
    ৩-অনির্ধারিতভাবে নফল ইবাদত করা।
    ৪-পরদিন রোযা রাখা।

    এ রাতে বর্জনীয়

    ১ হালুয়া রুটির মত আনন্দ উল্লাসের আয়োজন। আল্লাহর কাছ থেকে মাফ পেতে হলে তার ইবাদত করতে হবে, খাওয়া দাওয়ার মধ্য দিয়ে ফুর্তি করার মাধ্যমে নয়
    ২ আতশবাজি করা, রং ছিটানো।
    ৩ সম্মিলিত কোন আমলকে এই রাতে আবশ্যকীয় মনে করা সুষ্পষ্ট বিদআত।
    হে আল্লাহ! তুমি আমাদের সত্যকে সত্য হিসেবে উপস্থাপন করে দাও, যেন তা পালন করতে পারি, আর মিথ্যাকে মিথ্যা হিসেবে উপস্থাপিত করে দাও, যেন এ থেকে বিরত থাকতে পারি।

    (সংগ্রহিত)
    Last edited by banglar omor; 05-11-2017, 06:40 PM.
    শামের জন্য কাঁদো.....

  • #2

    শবে বরাতঃ সীমালঙ্ঘণ ও সীমা সংকোচনমুক্ত মানসিকতা রাখা উচিত
    আল্লামা আব্দুল মালিক দা.বা.

    এতদিন পর্যন্ত শবে বরাতকে কেন্দ্র করে এক শ্রেণীর মানুষ বাড়াবাড়িতে লিপ্ত ছিল। তারা এ রাতটি উপলক্ষে নানা অনুচিত কাজকর্ম এবং রসম-রেওয়াজের অনুগামী হচ্ছিল। উলামায়ে কেরাম সবসময়ই সবের প্রতিবাদ করেছেন এবং এখনো করছেন। ইদানিং আবার এক শ্রেণীর মানুষের মধ্যে ছাড়াছাড়ির প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। তাদের দাবী হল ইসলামে শবে বরাতের কোন ধারণা নেই। এ ব্যাপারে যত রেওয়ায়েত আছে সব মওযু বা যয়ীফ। এসব অনুযায়ী আমল করা এবং শবে বরাতকে বিশেষ কোন ফযীলতপূর্ণ রাত মনে করা শরীয়তের দৃষ্টিতে জায়েয নয়। তারা এসব বক্তব্য সম্বলিত ছোটখাট পুস্তিকা ও লিফলেট তৈরী করে মানুষের মধ্যে বিলি করে।

    বাস্তব কথা হল, আগেকার সেই বাড়াবাড়ির পথটিও যেমন সঠিক ছিল না, এখনকার এই ছাড়াছাড়ির মতটিও শুদ্ধ নয়। ইসলাম ভারসাম্যতার দ্বীনএবং এর সকল শিক্ষাই প্রান্তকতা মুক্ত সরল পথের পথ নির্দেশ করে। শবে বরাতের ব্যপারে সঠিক ও ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান হল, এ রাতের ফযীলত সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। সম্মিলিত কোর রূপ না দিয়ে এবং এই রাত উদযাপনের বিশেষ কোন পন্থা উদ্ভাবন না করে বেশি ইবাদত করাও নির্ভরযোগ্য রেওয়াত দ্বারা প্রমাণিত। এই রাতকে অন্য সব সাধারণ রাতের মতো মনে করা এবং এই রাতের ফযীলতের ব্যাপারে যত হাদীস এসেছে, তার সবগুলোকে মওযু বা যয়ীফ মনে করা ভুল যেমন অনুরূপ এ রাতকে শবে কদরের মত বা তার চেয়েও বেশি ফযীলতপূর্ণ মনে করাও ভিত্তিহীন ধারণা।

    এখানে শবে বরাতের (পনের শাবানের রাত) ফযীলত ও করণীয় বিষয়ক কিছু হাদীস যথাযথ উদ্ধৃতি ও সনদের নির্ভরযোগ্যতার বিবরণ সহ উল্লেখ করা হল।
    ১ম হাদীসঃ

    عن مالك من يخامر , عن معاذ بن جبل, عن النبى (, قال : يطلع الله الى خلقه فى ليلة النصف من شعبان, فيغفر لجميع خلقه إلا لمشرك أو مشاحن ]رواه ابن حبان وغيره, ورجاله ثقات, وإسناده متصل غلى مذهب مسلم الذى هو مذهب الحمهورفى المعنعن, ولم يحزم الذهبى بأن مكحولالم يلق مالك بن يخامر كما زعم, وإنما قاله على سبيل الحسان, راجع ,سبر أعلام النبلاء [

    মুআয ইবনে জাবাল বলেন, নবী করীম স. ইরশাদ করেছেন, আল্লাহ তাআলা অর্ধ-শাবানের রাতে (শাবানের চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাতে) সৃষ্টির দিকে (রহমতের) দৃষ্টি দেন এবং মুশরিক ও বিদ্বেষ পোষণকারী ব্যতীত আর সবাইকে ক্ষমা করে দেন।

    এই হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হচ্ছে যে, এ রাতে আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে রহমত ও মাগফেরাতের দ্বারা ব্যপকভাবে উন্মুক্ত হয়। কিন্তু শিরকি কাজ-কর্মে লিপ্ত ব্যক্তি এবং অন্যের ব্যাপারে হিংসা-বিদ্বেষ পোষণকারী মানুষ এই ব্যপক রহমত ও সাধারণ ক্ষমা থেকেও বঞ্চিত থাকে। যখন কোন বিশেষ সময়ের ব্যাপারে আল্লাহ তাঞ্চআলার পক্ষ থেকে রহমত ও মাগফেরাত ঘোষণা হয়, তখন তার অর্থ এই হয় যে, এই সময় এমন সব নেক আমলের ব্যাপারে যত্নবান হতে হবে যার মাধ্যমে আল্লাহর রহমত ও মাগফেরাতের উপযুক্ত হওয়া যায় এবং ঐ সব গুণাহ থেকে বিরত থাকতে হবে। এ কারণে আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে রহমত ও মাগফেরাত থেকে বঞ্চিত হয়।

    যেহেতু উপরোক্ত হাদীস এবং অন্যান্য হাদীসে অর্ধ-শাবানের রাতে ব্যাপক মাগফেরাতের গোষণা এসেছে, তাই এ রাতটি অনেক পূর্ব থেকেই শবে বরাত তথা মুক্তির রজনী নামে প্রসিদ্ধ হয়েছে। কেননা, এ রাতে গুনাহসমূহ থেকে মুক্তি লাভ হয় এবং পাপের অশুভ পরিণাম থেকে রেহাই পাওয়া যায়।

    যদি শবে বরাতের ফযীলতের ব্যাপারে দ্বিতীয় কোন হাদীস না থাকত, তবে এই হাদীসটিই এ রাতের ফযীলত সাব্যস্ত হওয়ার জন্য এবং এ রাতে মাগফেরাতের উপযোগী নেক আমলের গুরুত্ব প্রমাণিত হওয়ার জন্য যথেষ্ট হত। অথচ হাদীসের কিতাবসমূহে নির্ভরযোগ্য সনদে এ বিষয়ক আরো একাধিক হাদীস বর্ণিত হয়েছে।

    হাদীসটির সনদ বিষয়ক আলোচনা

    উপরোক্ত হাদীসটি অনেক নির্ভরযোগ্য হাদীসের কিতাবেই নির্ভরযোগ্য সনদের মাধ্যমে বর্ণিত হয়েছে। ইমাম মুহাম্মাদ ইবনে হিব্বান তার জ্ঞকিতাবুস সহীহঞ্চ এ (যা সহীহ ইবনে হিব্বান নামেই সমধিক প্রসিদ্ধ, ১৩/৪৮১ এ) এই হাদীসটি উদ্ধৃত করেছেন। এটি এই কিতাবের ৫৬৬৫ নং হাদীস। এ ছাড়া ইমাম বাইহাকী (রহঃ) জ্ঞশুআবুল ঈমানঞ্চ এ (৩/৩৮২, হাদীস ৩৮৩৩); ইমাম তাবরানী জ্ঞআলজ্ঞমুজামুল কাবীরঞ্চ ও জ্ঞআলজ্ঞমুজামুল আওসাতঞ্চ এ বর্ণনা করেছেন। এ ছাড়াও আরো বহু হাদীসের ইমাম তাদের নিজ নিজ কিতাবে হাদীসটি উল্লেখ করেছেন।

    হাদীসটির সনদ সহীহ। এজন্যই ইমাম ইবনে হিব্বান একে জ্ঞকিতাবুস সহীহঞ্চ এ বর্ণনা করেছেন। কেউ কেউ হাদীসটিকে পারিভাষিক দৃষ্টিকোণ থেকে হাসান বলেছেন; কিন্তু হাসান হাদীন সহীহ তথা নির্ভরযোগ্য হাদীসেরই একটি প্রকার।

    ইমাম মনযিরী, ইবনে রজব, নূরুদ্দীন হাইসামী, কাস্*তাল্লানী, যুরকানী এবং অন্যান্য হাদীস বিশারদ এই হাদীসটিকে আমলযোগ্য বলেছেন। দেখুন আততারগীব ওয়াততারহীব ২/১৮৮; ৩/৪৫৯. লাতায়েফুল মাআরিফ ১৫১; মাজমাউয যাওয়ায়েদ ৮/৬৫; শারহুল মাওয়াহিবিল লাদুন্নিয়্যা ১০/৫৬১।

    বর্তমান সময়ের প্রসিদ্ধ শায়খ নাসিরুদ্দিন আলবানী (রহঃ) সিলসিলাতুল আহাদসিস্* সাহীহা ৩/১৩৫-১৩৯ এ এই হাদীসের সমর্থনে আরো আটটি হাদীস উল্লেখ করার পর লেখেনঃ

    وجملة القول أن الحديث بمجموع هذه الطرق صحيح بلاريب. والصحة تثبت بأقل منها عددا، مادامت سالمة من الضعف الشديد، كماهو الشأن فى هذاالحديث .

    এ সব রেওয়াতের মাধ্যমে সমষ্টিগত ভাবে এই হাদীসটি নিঃসন্দেহে সহীহ প্রমাণিত হয়।ঞ্চ তারপর আলবানী (রহঃ) ওই সব লোকের বক্তব্য খন্ডন করেন যারা কোন ধরণের খোঁজখবর ছাড়াই বলে দেন যে, শবে বরাতের ব্যাপারে কোন সহীহ হাদীস নেই।

    ইদানিং আমাদের কতক সালাফী বা গাইরে মুকাল্লিদ; বন্ধুকে দেখা যায়, তারা নানা ধরণের লিফলেট বিলি করেন। তাতে লেখা থাকে যে, শবে বরাত (লাইলাতুল নিস্*ফি মিন শাবান) এর কোন ফযীলতই হাদীস শরীফে প্রমাণিত নেই। ওই সব বন্ধুরা শায়খ আলবানী (রহঃ) এর গবেষণা ও সিদ্ধান্ত থেকে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারেন। কেননা, তাদেরকে আলবানী (রহঃ) এর বড় ভক্ত মনে হয় এবং তার কিতাবাদি অনুবাদ করে প্রচার করতে দেখা যায়। আমি ওই সব ভাইদের কাছে বিনীতভাবে আরজ করতে চাই যে, আপনারা যদি শায়খ ইবনে বাযের অনুসরণে বা নিজেদের তাহ্*কীক মতো এই রাতের ফযীলতকে অস্বীকার করতে পারেন তাহলে যারা উপরোক্ত মুহাদ্দিস ও ফকীহগণের অনুসরণে উল্লেখিত হাদীসটির ভিত্তিতে এই রাতের ফযীলতের বিশ্বাস পোষণ করেন এবং সব ধরণের বেদআত রসম-রেওয়াজ পরিহার করে নেক আমলে মগ্ন থাকার চেষ্টা করেন তারাই এমন কি অপরাধ করে বসলেন যে, আপনাদেরকে তাদের পেছনে লেগে থাকতে হবে? এবং এখানকার উলামায়ে কেরামের দলীলভিত্তিক সিদ্ধান্তের বিপরীতে অন্য একটি মত যা ভুলের সম্ভাবনার উর্ধ্বে নয়, তা সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রচার করে তাদেরকে আলেম-উলামার সিদ্ধান্তের ব্যাপারে আস্থাহীন করা এবং বাতিলপন্থিদের মিশন সফল করতে সহায়তা দেওয়া কি সত্যিকার অর্থেই খুব বেশি প্রয়োজন? এতে তো কোন সন্দেহ নেই যে, আপনারা আপনাদের মতটিকে খুব বেশি হলে একটি ইজতেহাদী ভুল-ভ্রান্তির সম্ভাবনাযুক্তই মনে করেন এবং নিশ্চয়ই আপনারা আপনাদের মতটিকে একেবারে ওহীর মতো মনে করেন না। একটু ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করুন, এরপর আপনাদের এই অবস্থানের যৌক্তিক কোন ব্যাখ্যা আর থাকে কি না?

    আপনাদের প্রতি আমার সর্বশেষ অনুরোধ এই যে, দয়া করে এ রাতের ফযীলত ও আমল সম্পর্কে শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া (রহঃ) [মৃ. ৭২৮ হিঃ] এর ইক্*তিযাউস সিরাতিল মুস্তাকিম/৬৩১-৬৪১ এবং ইমাম যায়নুদ্দীন ইবনে রজব (রহঃ) [মৃ. ৭৯৫] এর লাতায়েফুল মাআরেফ ১৫১-১৫৭ পড়ুন এবং ভেবে দেখুন যে, তাদের এই দলীলনির্ভর তাহকীক অনুসরণযোগ্য, না শায়খ ইবনে বায (রহঃ) এর একটি আবেগপ্রসূত মতামত? যা হয়ত তিনি শবে বরাত নিয়ে জাহেল লোকদের বাড়াবাড়ির প্রতিকার হিসেবেই ব্যক্ত করেছেন। কিন্তু এ কথা স্পষ্ট যে, বাড়াবাড়ির প্রতিকার কোন বাস্তব সত্য অস্বীকার করে নয়; বরং সত্য বিষয়টির যথাযথ উপস্থাপনের মাধ্যমেই হয়ে থাকে।

    এই রাতের আমল

    উল্লেখিত হাদীস শরীফে এ রাতের কী কী আমলের নির্দেশনা-ইঙ্গিত পাওয়া যায়, তা আমি ইতিপূর্বে উল্লেখ করেছি। নিম্নে এ বিষয়ে আরেকটি হাদীস পেশ করছি।

    হযরত আলা ইবনুল হারিস (রহঃ) থেকে বর্ণিত, হযরত আয়েশা (রা.) বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ (ক্ষ) রাতে নামাযে দাঁড়ান এবং এত দীর্ঘ সেজদা করেন যে, আমার ধারণা হল তিনি হয়ত মৃত্যুবরণ করেছেন। আমি তখন উঠে তার বৃদ্ধাঙ্গুলি নাড়া দিলাম। তার বৃদ্ধাঙ্গুলি নড়ল। যখন তিনি সেজদা থেকে উঠলেন এবং নামায শেষ করলেন তখন আমাকে লক্ষ্য করে বললেন, জ্ঞহে আয়েশাঞ্চ অথবা বলেছেন, জ্ঞও হুমাইরা, তোমার কি এই আশংকা হয়েছে যে, আল্লাহর রাসূল তোমার হক নষ্ট করবেন?ঞ্চ আমি উত্তরে বললাম, জ্ঞনা, ইয়া রাসূলুল্লাহ। আপনার দীর্ঘ সেজদা থেকে আমার এই আশংকা হয়েছিল, আপনি মৃত্যুবরণ করেছেন কিনা।ঞ্চ নবীজী জিঞ্চেস করলেন, জ্ঞতুমি কি জান এটা কোন রাত?ঞ্চ আমি বললাম, জ্ঞআল্লাহ ও তার রাসূলই ভাল জানেন।ঞ্চ রাসূলুল্লাহ (ক্ষ) তখন ইরশাদ করলেন,

    هذه ليلة النصف من شعبان ان الله عزو جل يطلع على
    عباده فى ليلة النصف من شعبان فيغفر للمستغفرين
    ويرحم المشترحمين ويؤخر اهل الحقد كماهم

    ‘এটা হল অর্ধ শাবানের রাত (শাবানের চৌদ্দ তারিখের দিবাগত রাত)। আল্লাহ তাআলা অর্ধ-শাবানের রাতে তার বান্দার প্রতি মনযোগ দেন এবং ক্ষমাপ্রার্থনাকারীদের ক্ষমা করেন এবং অনুগ্রহ প্রার্থীদের অনুগ্রহ করেন আর বিদ্বেষ পোষণকারীদের ছেড়ে দেন তাদের অবস্থাতেই।‘ [শুআবুল ঈমান, বাইহাকী ৩/৩৮২-৩৬৮]

    ইমাম বাইহাকী (রহঃ) এই হাদীসটি বর্ণনার পর এর সনদের ব্যাপারে বলেছেন,

    هذا مرسل جيد

    এই হাদীস দ্বারা প্রমাণিত হয়, এ রাতে দীর্ঘ নফল পড়া, যাতে সেজদাও দীর্ঘ হবে, শরীয়তের দৃষ্টিতে কাম্য। তবে মনে রাখতে হবে যে, অনেক অনির্ভরযোগ্য ওয়ীফার বই-পুস্তকে নামাযের যে নির্দিষ্ট নিয়ম-কানুন লেখা আছে অর্থাৎ এত রাকআত হতে হবে, প্রতি রাকআতে এই সূরা এতবার পড়তে হবে – এগুলো ঠিক নয়। হাদীস শরীফে এসব নেই। এগুলো মানুষের মনগড়া পন্থা। সঠিক পদ্ধতি হল, নফল নামাযের সাধারণ নিয়ম অনুযায়ী দুই রাকআত করে যত রাকআত সম্ভব হয় পড়তে থাকা। কুরআন কারীম তেলওয়াত করা। দরূদ শরীফ পড়া। ইস্*তেগফার করা। দুআ করা এবং কিছুটা ঘুমের প্রয়োজন হলে ঘুমানো। এমন যেন না হয় যে, সারা রাতের দীর্ঘ ইবাদতের ক্লান্তিতে ফজরের নামায জামাআতের সাথে পড়া সম্ভব হল না।

    পরদিন রোযা রাখা

    সুনানে ইবনে মাজায় বর্ণিত হয়েছে ঃ

    عن على بن ابى طالب رضى الله عنه قال : قال رسول الله (() : إذا كانت ليلة النصف من شعبان فقوموا ليلها وصوموا نهارها, فإن الله ينزل فيهالغروب الشمس الى سماء الدنيا, فيقول : ألا من مستغفر فاغفر له على مستزرق فأرزقه, ألا مبتلى فأعافيه , ألا كذا, ألا كذا, حتى يطلع الفجر

    হযরত আলী ইবনে আবু তালেব (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (স.) বলেছেন, জ্ঞপনের শাবানের রাত (চৌদ্দ তারিখ দিবাগত রাত) যখন আসে তখন তোমরা এ রাতটি ইবাদত-বন্দেগীতে কাটাও এবং দিনের বেলা রোযা রাখ। কেননা, এ রাতে সূর্যাস্তের পর আল্লাহ তাআলা প্রথম আসমানে আসেন এবং বলেন, কোন ক্ষমাপ্রার্থী আছে কি? আমি তাকে ক্ষমা করব। আছে কি কোন রিযিক প্রার্থী? আমি তাকে রিযিক দেব। এভাবে সুব্*হে সাদিক পর্যন্ত আল্লাহ তাঞ্চআলা মানুষের প্রয়োজনের কথা বলে তাদের ডাকতে থাকেন।ঞ্চ [সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ১৩৮৪]

    এই বর্ণনাটির সনদ যয়ীফ। কিন্তু মহাদ্দিসীন কেরামের সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত হল, ফাযায়েলের ক্ষেত্রে যয়ীফ হাদীস গ্রহণযোগ্য। তাছাড়া শাবান মাসে বেশি বেশি নফল রোযা রাখার কথা সহীহ হাদীসে এসেছে এবং আইয়ামে বীয অর্থাৎ প্রতি চন্দ্র মাসের ১৩, ১৪ ও ১৫ তারিখে রোযা রাখার বিষয়টিও সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত।

    এলা বাহুল্য, পনের শাবানের দিনটি শাবান মাসেরই একটি দিন এবং তা আয়্যামে বীযের অন্তর্ভূক্ত। এজন্য ফিক্*হের একাধিক কিতাবেই এদিনে রোযাকে মুস্তাহাব বা মাসনূন লেখা হয়েছে। আবার অনেকে বিশেষভাবে এ দিনের রোযাকে মুস্তাহাব বা মাসনুন বলতে অস্বীকার করেছেন। এ প্রসঙ্গে হযরত মাওলানা মুহাম্মাদ ত্বাকী উসমানী (দাঃবাঃ) তার ইসলাহী খুতুবাতে বলেন, ‘আরো একটি বিষয় হচ্ছে শবে বরাতের পরবর্তী দিনে অর্থাৎ শাবানের পনের তারিখে রোযা রাখা। গভীরভাবে বিষয়টি উপলব্ধি করা প্রয়োজন। হাদীসে রাসুলের বিশাল ভান্ডার হতে একটি মাত্র হাদীস এর সমর্থনে পাওয়া যায়। তাতে বলা হয়েছে, জ্ঞশবে বরাতের পরবর্তী দিনটিতে রোযা রাখ।‘ সনদ বর্ণনার সূত্রের দিক থেকে হাদীসটি দুর্বল। তাই এ দিনের রোযাকে এই একটি মাত্র দুর্বল হাদীসের দিকে তাকিয়ে সুন্নাত বা মুস্তাহাব বলে দেওয়া অনেক আলেমের দৃষ্টিতে অনুচিত।’

    তবে হ্যাঁ, শাবানের গোটা মাসে রোযা রাখার কথা বহু হাদীসে পাওয়া যায়। অর্থাৎ ১ শাবান থেকে ২৭ শাবান পর্যন্ত রোযা রাখার যথেষ্ট ফযীলত রয়েছে। কিন্তু ২৮ ও ২৯ তারিখে রোযা রাখতে রাসূলুল্লাহ (() নিজেই বারণ করেছেন। ইরশাদ করেন, জ্ঞরমযানের দুঞ্চএকদিন পূর্বে রোযা রেখো না।ঞ্চ যাতে রমযানের পূর্ণ স্বস্তির সাথে স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রস্তুতি নেওয়া যায়। কিন্তু ২৭ তারিখ পর্যন্ত প্রতিদিনের রোযাই অত্যন্ত বরকতপূর্ণ।

    একটি লক্ষ্যণীয় ব্যাপার হচ্ছে যে, শাবানের এই ১৫ তারিখটি তো ‘আইয়ামে বীয’ এর অন্তর্ভূক্ত। আর নবীজী প্রতি মাসের জ্ঞআইয়ামে বীযঞ্চ এ রোযা রাখতেন। সুতরাং যদি কোন ব্যক্তি এই দুটি কারণকে সামনে রেখে শাবানের ১৫ তারিখের দিনে রোযা রাখে যা জ্ঞআইয়ামে বীযঞ্চ এর অন্তর্ভূক্ত, পাশাপাশি শাবানেরও একটি তাৎপর্যপূর্ণ দিন, তবে ইনশাআল্লাহ নিশ্চয়ই সে প্রতিদান লাভ করবে। তবে শুধু ১৫ মাবানের কারণে এ রোযাকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়ে সুন্নাত বলে দেওয়া অনেক আলেমের মতেই সঠিক নয়। আর সে কারণেই অধিকাংশ ফুকাহায়ে কেরাম মুস্তাহাব রোযার তালিকায় মুহাররমের ১০ তারিখ ও আইয়ামে আরাফা (যিলহজ্জের ৯ তারিখ) এর কথা উল্লেখ করেছেন অথচ শাবানের ১৫ তারিখের কথা পৃথকভাবে কেউই উল্লেখ করেননি। বরং তারা বলেছেন, শাবানের যে কোন দিনই রোযা রাখা উত্তম। সুতরাং এ সকল বিষয়ের দিকে দৃষ্টি রেখে যদি কেউ রোযা রাখে তরে ইনশাআল্লাহ সে সওয়াব পাবে। তবে মনে রাখতে হবে যে, এ মাসের নির্দিষ্ট কোন দিনের পৃথক কোন বৈশিষ্ট নেই।

    এ রাতের নফল আমলসমূহ সম্মিলিত নয়, ব্যক্তিগত

    এ বিষয়টিও মনে রাখতে হবে যে, এ রাতের নফল আমলসমূহ, বিশুদ্ধ মতানুসারে একাকীভাবে করণীয়। ফরয নামাযতো অবশ্যই মসজিদে আদায় করতে হবে। এরপর যা কিছু নফল পড়ার তা নিজ নিজ ঘরে একাকী পড়বে। এসব নফল আমলের জন্য দলে দলে মসজিদে এসে সমবেত হওয়ার কোন প্রমাণ হাদীস শরীফেও নেই আর সাহাবায়ে কেরামরে যুগেও এর রেওয়াজ ছিল না। [ইক্*তিযাউস সিরাতিল মুসতাকীম ২/৬৩১-৬৪১; মারাকিল ফালাহ ২১৯]

    অবে কোন আহবান ও ঘোষণা ছাড়া এমনিই কিছু লোক যদি মসজিদে এসে যায়, তাহলে প্রত্যেকে নিজ নিজ আমলে মশগুল থাকবে, একে অন্যের আমলের ব্যাঘাত সৃষ্টির কারণ হবে না।

    কোন কোন জায়গায় এই ওেয়াজ আছে যে, এ রাতে মাগরিব বা ইশার পর থেকেই ওয়াজ-নসীহত আরম্ভ হয়। আবার কোথাও ওয়াজের পর মিলাদ-মাহফিলের অনুষ্ঠান হয়। কোথাও তো সারা রাত খতমে-শবীনা হতে থাকে। উপরন্তু এসব কিছুই করা হয় মাইকে এবং বাইরের মাইকও ছেড়ে দেওয়া হয়।

    মনে রাখতে হবে, এসব কিছুই ভুল রেওযাজ। শবে বরাতের ফাযায়েল ও মাসায়েল আগেই আলোচনা করা যায়। এ রাতে মাইক ছেড়ে দিয়ে বক্তৃতা-ওয়াজের আয়োজন করা ঠিক না। এতে না ইবাদতে আগ্রহী মানুষের পক্ষে ঘরে বসে একাগ্রতার সাথে ইবাদত করা সম্ভব হয়, আর না মসজিদে। অসুস্থ ব্যক্তিদের প্রয়োজনীয় আরামেরও মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটে। আল্লাহ আমাদের এসব ভুল কাজকর্ম পরিহার করার তাওফীক দিন।

    এতদিন পর্যন্ত শবে বরাতকে কেন্দ্র করে এক শ্রেণীর মানুষ বাড়াবাড়িতে লিপ্ত ছিল। তারা এ রাতটি উপলক্ষে নানা অনুচিত কাজকর্ম এবং রসম-রেওয়াজের অনুগামী হচ্ছিল। উলামায়ে কেরাম সবসময়ই সবের প্রতিবাদ করেছেন এবং এখনো করছেন। ইদানিং আবার এক শ্রেণীর মানুষের মধ্যে ছাড়াছাড়ির প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। তাদের দাবী হল ইসলামে শবে বরাতের কোন ধারণা নেই। এ ব্যাপারে যত রেওয়ায়েত আছে সব মওযু বা যয়ীফ। এসব অনুযায়ী আমল করা এবং শবে বরাতকে বিশেষ কোন ফযীলতপূর্ণ রাত মনে করা শরীয়তের দৃষ্টিতে জায়েয নয়। তারা এসব বক্তব্য সম্বলিত ছোটখাট পুস্তিকা ও লিফলেট তৈরী করে মানুষের মধ্যে বিলি করে।

    বাস্তব কথা হল, আগেকার সেই বাড়াবাড়ির পথটিও যেমন সঠিক ছিল না, এখনকার এই ছাড়াছাড়ির মতটিও শুদ্ধ নয়। ইসলাম ভারসাম্যতার দ্বীনএবং এর সকল শিক্ষাই প্রান্তকতা মুক্ত সরল পথের পথ নির্দেশ করে। শবে বরাতের ব্যপারে সঠিক ও ভারসাম্যপূর্ণ অবস্থান হল, এ রাতের ফযীলত সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। সম্মিলিত কোর রূপ না দিয়ে এবং এই রাত উদযাপনের বিশেষ কোন পন্থা উদ্ভাবন না করে বেশি ইবাদত করাও নির্ভরযোগ্য রেওয়াত দ্বারা প্রমাণিত। এই রাতকে অন্য সব সাধারণ রাতের মতো মনে করা এবং এই রাতের ফযীলতের ব্যাপারে যত হাদীস এসেছে, তার সবগুলোকে মওযু বা যয়ীফ মনে করা ভুল যেমন অনুরূপ এ রাতকে শবে কদরের মত বা তার চেয়েও বেশি ফযীলতপূর্ণ মনে করাও ভিত্তিহীন ধারণা।

    আল্লাহ তাআলা আমাদের সঠিকভাবে যথাযথ মর্যাদায় প্রতিটি দিবসের আমল করার তৌফিক দান করুন। আমীন।
    Last edited by banglar omor; 05-11-2017, 11:55 AM.
    শামের জন্য কাঁদো.....

    Comment


    • #3
      সম্মানিত বাংলার উমর ভাই আপনার আলোচনার সাথে একমত । যদিও কিছু কিছু কথার সাথে একমত হতে পারলাম না । এটা নিয়ে আর আলোচনার তেমন প্রয়োজন মনে করছি না এবং সময়ও পাচ্ছি না । কিন্তু আপনার পোষ্ট থেকে যে দুইতা হাদীস আমি উল্লেখ করে দিয়েছি সে দুইটা হাদীস ভাল করে দেখে নেয়ার আবদার রইল ।
      ====

      عن علي بن أبي طالب قال قال رسول الله صلى الله عليه و سلم ( إذا كانت ليلة النصف من شعبان فقوموا ليلها وصوموا نهارها . فإن الله ينزل فيها لغروب الشمس إلى سماء الدنيا . فيقول ألا من مستغفر لي فأغفر له ألا من مسترزق فأرزقه ألا مبتلى فأعافيه ألا كذا ألا كذا حتى يطلع الفجر )

      হযরত আলী বিন আবু তালীব রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-যখন শাবান মাসের অর্ধেকের রজনী আসে [শবে বরাত] তখন তোমরা রাতে নামায পড়, আর দিনের বেলা রোযা রাখ। নিশ্চয় আল্লাহ এ রাতে সূর্য ডুবার সাথে সাথে পৃথিবীর আসমানে এসে বলেন-কোন গোনাহ ক্ষমাপ্রার্থী আছে কি আমার কাছে? আমি তাকে ক্ষমা করে দিব। কোন রিজিকপ্রার্থী আছে কি? আমি তাকে রিজিক দিব। কোন বিপদগ্রস্থ মুক্তি পেতে চায় কি? আমি তাকে বিপদমুক্ত করে দিব। আছে কি এমন, আছে কি তেমন? এমন বলতে থাকেন ফযর পর্যন্ত। {সূনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস নং-১৩৮৮, শুয়াবুল ঈমান, হাদীস নং-৩৮২২}
      ====
      আপনার উল্লেখিত হাদীস বর্ণনাকারী মাঝে একজন দুর্বল রাবী আছে । নাম হল আবু বকর ইবনে আব্দুল্লাহ বিন আবু সুবরাহ , ইমাম বুখারী তাকে দুর্বল হিসেবে চিহ্নিত করেছেন । তার সম্পর্কে ইমাম আহমদ বিন হাম্বল এবং ইবনে মুইন বলেন , এ লোক মিথ্যা হাদীস রাটাতেন। ইমাম নাসাঈ বলেছেন , এ লোক প্রত্যাখ্যান যোগ্য । ( দেখুন মিযানুল ই’তিদাল ৪/৫০৩-৫০৪ )
      তাই হাদীস বিশারদগণের মতে হাদিসটি দুর্বল । দ্বিতীয়ত ; হাদীসটি সহীহ হাদীসের পরিপন্থী । এ হাদীসের বক্তব্য হচ্ছে , মধ্য শাবান রজনীতে ( শবে বরাতে ) আল্লাহ পৃথিবীর আকাশে অবতরণ করেন । অথচ সহীহ হাদীসে বলা হয়েছে , রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন , আমাদের মহান রব প্রতি রাতের শেষ তৃতীয়াংশ বাকী থাকতেই পৃথিবীর আকাশে অবতরণ করে বলেন ... । ( বুখারী ১১৪৫ ; মুসলিম ১৮০৮ ; তিরমিজি ৩৪৯৮; আবু দাউদ ১৩১৭ ) এ হাদিসটি মুহাদ্দীসগণের সর্বসম্মতিক্রমে সহীহ ।
      এ হাদীসে বলা হয়েছে , প্রতি রাতে শেষ তৃতীয়াংশ বাকী থাকতেই আল্লাহ সুবঃ পৃথিবীর আকাশে অবতরণ করেন অথচ ইবনে মাজাই বর্ণিত হাদীসে বলা হয়েছে , শাবানের মধ্য রজনীতে (বা শবে বরাত) আল্লাহ সুবঃ প্রথম আকাশে নেমে আসেন । একদিকে হাদিসটি দুর্বল অপরদিকে সহীহ হাদীসের পরিপন্থী । আল্লাহই ভাল জানেন ।

      ===
      আপনার উল্লেখিত আরেকটি হাদীস ,
      عن عائشة : قالت فقدت رسول الله صلى الله عليه و سلم ليلة فخرجت فإذا هو بالبقيع فقال أكنت تخافين أن يحيف الله عليك ورسوله ؟ قلت يا رسول الله إني ظننت أنك أتيت بعض نساءك فقال إن الله عز و جل ينزل ليلة النصف من شعبان إلى السماء الدنيا فيفغر لأكثر من عدد شعر غنم كلب

      অনুবাদ-হযরত আয়শা রাঃ বলেন-এক রাতে রাসূল সাঃ কে না পেয়ে খুজতে বের হলাম। খুঁজতে খুঁজতে জান্নাতুল বাকীতে [মদীনার কবরস্থান] গিয়ে আমি তাঁকে দেখতে পেলাম। তিনি বললেন-কি ব্যাপার আয়শা? [তুমি যে তালাশে বের হলে?] তোমার কি মনে হয় আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল তোমার উপর কোন অবিচার করবেন? [তোমার পাওনা রাতে অন্য কোন বিবির ঘরে গিয়ে রাত্রিযাপন করবেন?] হযরত আয়শা রাঃ বললেন- আমার ধারণা হয়েছিল আপনি অন্য কোন বিবির ঘরে গিয়েছেন। রাসূল সাঃ তখন বললেন-যখন শাবান মাসের ১৫ই রাত আসে অর্থাৎ যখন শবে বরাত হয়, তখন আল্লাহ পাক এ রাতে প্রথম আসমানে নেমে আসেন। তারপর বনু কালব গোত্রের বকরীর পশমের চেয়ে বেশী সংখ্যক বান্দাদেরকে ক্ষমা করে দেন। {সুনানে তিরমিযী, হাদীস নং-৭৩৯, মুসনাদে আহমাদ, হাদীস নং-২৬০২৮, মুসনাদে আব্দ বিন হুমাইদ, হাদীস নং-১৫০৯}
      ====

      এই হাদীসটি সম্পর্কে ইমাম তিরমিজিই বলেছেন ,
      এই হাদীসটি এই সনদ ব্যতীত অন্য কোন সনদে আমার জানা নেই । আমি ইমাম বুখারীকে এই হাদীসটি দুর্বল হিসেবে চিহ্নিত করতে শুনেছি এবং তিনি বলেছেন এই হাদীসে বর্ণনাকারী ইয়াহইয়া ইবনে আবি কাছির তার উস্তাদ উরওয়া থেকে শুনেনি এবং হাজ্জাজ ইবনে আরতা তার উস্তাদ ইয়াহইয়া ইবনে আবি কাছির থেকে শুনেননি । (তিরমিজি ৭৯৩ ) ।

      Comment


      • #4
        মুফতি আব্দুল মালেক সাহের যে আলোচনা করেছেন তার দলিল দিলে ভালহত ।
        জাযাকাল্লাহ ...

        Comment

        Working...
        X