উপরোক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় হাফেয ইবনে কাসীর রহ. বলেন,
(إِنَّمَا النَّسِيءُ زِيَادَةٌ فِي الْكُفْر) (নিশ্চয় কোন মাসকে পিছিয়ে দেয়া কুফর বৃদ্ধি করে)- এই আয়াতের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে আলী ইবনে আবু ত্বলহা রহ. হযরত ইবনে আব্বাস রাদি. থেকে বর্ণনা করেন যে, জুনাদাহ্ ইবনে আউফ ইবনে উমাইয়া আল-কিনানী, যার উপনাম ছিল আবু ছুমামাহ্, সে হজ্বের মৌসুমে ঘোষণা দিত, ‘শোনো ওহে লোক সকল! আবু ছুমামাহ্’র কোন অন্যায়ও নেই কোন দোষও নেই। শোনো! এবারের বছরের প্রথম সফর মাস হালাল।’ এভাবে সে একে লোকজনের জন্য হালাল বানিয়ে দিত। এক বছর সফর মাসকে হারাম ধরত অন্য বছর মুহাররাম মাসকে হারাম ধরত। আল্লাহ তাআলার বাণী- (إِنَّمَا النَّسِيءُ زِيَادَةٌ فِي الْكُفْر) (নিশ্চয় কোন মাসকে পিছিয়ে দেয়া কুফর বৃদ্ধি করে) এর দ্বারা এটাই উদ্দেশ্য।” (তাফসীরে ইবনে কাসীর: ৪/১৫০-১৫১)
ইবনে কাসীর রহ. আরোও বলেন,
وقد تكلم الإمام محمد بن إسحاق على هذا في كتاب "السيرة" كلاما جيدا ومفيدا حسنا، فقال: كان أول من نسأ الشهور على العرب، فأحل منها ما حرم الله، وحرم منها ما أحل الله، عز وجل، "القلمس"... ثم قام بعده على ذلك ابنه عباد ثم من بعد عباد ابنه قلع بن عباد، ثم ابنه أمية بن قلع، ثم ابنه عوف بن أمية، ثم ابنه أبو ثمامة جنادة بن عوف، وكان آخرهم، وعليه قام الإسلام. فكانت العرب إذا فرغت من حجها اجتمعت إليه، فقام فيهم خطيبا، فحرم رجبا، وذا القعدة، وذا الحجة، ويحل المحرم عاما، ويجعل مكانه صفر، ويحرمه عاما ليواطئ عدة ما حرم الله، فيحل ما حرم الله، يعني: ويحرم ما أحل الله.اهـ
“মুহাম্মাদ ইবনে ইসহাক রহ. তার সীরাতের কিতাবে এ ব্যাপারে সুন্দর ও উপকারী আলোচনা করেছেন। তিনি বলেন, আল্লাহ তাআলার হারাম মাসকে হালাল আর হালাল মাসকে হারাম করে আরবদের মাঝে মাস পিছিয়ে দেয়ার কাজটা সর্ব প্রথম করেছিল ‘ক্বালাম্মাস’। তার মৃত্যুর পর এর দায়িত্ব নেয় তার পুত্র আব্বাদ। আব্বাদের পর তার পুত্র কাল’ ইবনে আব্বাদ। তারপর তার পুত্র উমাইয়া ইবনে কাল’। তারপর তার পুত্র আউফ ইবনে উমাইয়া। তারপর তার পুত্র আবু ছুমামাহ্ জুনাদাহ ইবনে আউফ। সেই ছিল সর্বশেষ। এর সময়ই ইসলামের আবির্ভাব হয়। আরবরা তাদের হজ্ব শেষে তার নিকট সমবেত হত। সে দাঁড়িয়ে তাদের মাঝে ভাষণ দিত। রজব, যিলকদ এবং যিলহজ্ব মাসকে হারাম ঘোষণা দিত এবং মুহাররাম মাসকে হালাল ঘোষণা দিত আর সফর মাসকে এর বদলীমাসরূপে ধরত। অন্য বছর মুহাররামকে হারাম ধরত। তা এ জন্য করত যেন আল্লাহ তাআলা যা হারাম করেছেন তার সংখ্যা ঠিক রাখতে পারে। এভাবে আল্লাহর হারামকে হালাল এবং হালালকে হারাম করত।” (তাফসীরে ইবনে কাসীর: ৪/১৫৩)
বি.দ্র:
আরবরা জানত আল্লাহ তাআলা মুহাররাম মাসকে হারাম আর সফর মাসকে হালাল করেছেন। কিন্তু তারা তাদের স্বার্থের কারণে হারাম মাসকে হালাল আর হালাল মাসকে হারাম করেছে। তারা এ কথা বলেনি যে, আল্লাহ তাআলাই তাদের জন্য হারাম মাসকে হালাল আর হালাল মাসকে হারাম করে দিয়েছেন। তারা যে পরিবর্তন করেছে তাকে আল্লাহ তাআলা বা তার শরীয়তের নামে চালায়নি। বরং শরীয়তের বিধান যে এর বিপরীত তারা তা জেনে শুনেই এ পরিবর্তন করত। আল্লাহ তাআলা তাদের এ কাজকেই কুফর সাব্যস্ত করেছেন। আয়াতে কোন ইশারাও নেই যে, তারা তাদের এ পরিবর্তনকে আল্লাহ বা তার শরীয়তের নামে চালাত। অতএব, সুস্পষ্ট যে, আল্লাহ তাআলার বিধানে কোনরূপ পরিবর্তন করাই কুফর, যদিও একে আল্লাহ বা তার শরীয়তের নামে চালানো না হয়। মোটকথা, আল্লাহ তাআলার শরীয়ত বিরোধি আইন প্রণয়ই কুফর। এরপর আর আকীদা বিশ্বাসের দিকে তাকানোর প্রয়োজন নেই। সামনে ইবনে হাজম রহ. এর বক্তব্যে তা আরোও পরিষ্কার হবে ইনশাআল্লাহ!
هذا مما ذم الله تعالى به المشركين من تصرفهم في شرع الله بآرائهم الفاسدة، وتغييرهم أحكام الله بأهوائهم الباردة، وتحليلهم ما حرم الله وتحريمهم ما أحل الله، فإنهم كان فيهم من القوة الغضبية والشهامة والحمية ما استطالوا به مدة الأشهر الثلاثة في التحريم المانع لهم من قضاء أوطارهم من قتال أعدائهم، فكانوا قد أحدثوا قبل الإسلام بمدة تحليل المحرم وتأخيره إلى صفر، فيحلون الشهر الحرام، ويحرمون الشهر الحلال، ليواطئوا عدة الأشهر...
قال علي بن أبي طلحة عن ابن عباس في قوله: { إنما النسيء زيادة في الكفر } قال: النسيء أن جنادة بن عوف بن أمية الكناني، كان يوافي الموسم في كل عام، وكان يكنى "أبا ثمامة"، فينادي: ألا إن أبا ثمامة لا يحاب ولا يعاب، ألا وإن صفر العام الأول حلال. فيحله للناس، فيحرم صفرا عاما، ويحرم المحرم عاما، فذلك قول الله: { إنما النسيء زيادة في الكفر ...اهـ
“মুশরিকরা তাদের নিজেদের ফাসেদ বুদ্ধি ও মতামতের দ্বারা আল্লাহ তাআলার শরীয়তের উপর হস্তক্ষেপ করত। নিতান্ত খাহেশাত ও কুপ্রবৃত্তির অনুসরণে আল্লাহ তাআলার বিধান পরিবর্তন করত। আল্লাহ তাআলা যা হারাম করেছেন তা হালাল এবং আল্লাহ তাআলা যা হালাল করেছেন তা হারাম করত। আল্লাহ তাআলা এ আয়াতে তাদের উক্ত কৃতকর্মের নিন্দা ও সমালোচনা করেছেন। মুশরিকদের এ ঘৃণ্য কর্মের কারণ হচ্ছে, তাদের মাঝে প্রচন্ড যুদ্ধাঙ্গী মনোভাব এবং আত্নগরীমা ছিল। সুনাম সুখ্যাতির লাভের উদ্দেশ্যে অসাধ্য সাধনের প্রবণতা ছিল। যে কারণে তিন মাস সময় তাদের কাছে দীর্ঘ মনে হল। শত্রুদের সাথে যুদ্ধ করে মনোবঞ্চা পূরণের পথে বাধা মনে হল। ফলে তারা মুহাররাম মাসকে হালাল (যুদ্ধের অনুমোদিত মাস) বানিয়ে নিল এবং একে (অর্থাৎ এর নিষিদ্ধতাকে) পিছিয়ে সফর মাসে নিয়ে গেল। ইসলামের আবির্ভাবের এক দীর্ঘকাল পূর্বেই তারা এর প্রচলন ঘটিয়েছিল। এভাবে তারা হারাম মাসকে হালাল করত এবং হালাল মাসকে হারাম করত। তারা এমনটা করত যেন আশহুরে হুরুম তথা সম্মানিত ও নিষিদ্ধ মাসগুলোর সংখ্যা ঠিক রাখতে পারে। … قال علي بن أبي طلحة عن ابن عباس في قوله: { إنما النسيء زيادة في الكفر } قال: النسيء أن جنادة بن عوف بن أمية الكناني، كان يوافي الموسم في كل عام، وكان يكنى "أبا ثمامة"، فينادي: ألا إن أبا ثمامة لا يحاب ولا يعاب، ألا وإن صفر العام الأول حلال. فيحله للناس، فيحرم صفرا عاما، ويحرم المحرم عاما، فذلك قول الله: { إنما النسيء زيادة في الكفر ...اهـ
(إِنَّمَا النَّسِيءُ زِيَادَةٌ فِي الْكُفْر) (নিশ্চয় কোন মাসকে পিছিয়ে দেয়া কুফর বৃদ্ধি করে)- এই আয়াতের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে আলী ইবনে আবু ত্বলহা রহ. হযরত ইবনে আব্বাস রাদি. থেকে বর্ণনা করেন যে, জুনাদাহ্ ইবনে আউফ ইবনে উমাইয়া আল-কিনানী, যার উপনাম ছিল আবু ছুমামাহ্, সে হজ্বের মৌসুমে ঘোষণা দিত, ‘শোনো ওহে লোক সকল! আবু ছুমামাহ্’র কোন অন্যায়ও নেই কোন দোষও নেই। শোনো! এবারের বছরের প্রথম সফর মাস হালাল।’ এভাবে সে একে লোকজনের জন্য হালাল বানিয়ে দিত। এক বছর সফর মাসকে হারাম ধরত অন্য বছর মুহাররাম মাসকে হারাম ধরত। আল্লাহ তাআলার বাণী- (إِنَّمَا النَّسِيءُ زِيَادَةٌ فِي الْكُفْر) (নিশ্চয় কোন মাসকে পিছিয়ে দেয়া কুফর বৃদ্ধি করে) এর দ্বারা এটাই উদ্দেশ্য।” (তাফসীরে ইবনে কাসীর: ৪/১৫০-১৫১)
ইবনে কাসীর রহ. আরোও বলেন,
وقد تكلم الإمام محمد بن إسحاق على هذا في كتاب "السيرة" كلاما جيدا ومفيدا حسنا، فقال: كان أول من نسأ الشهور على العرب، فأحل منها ما حرم الله، وحرم منها ما أحل الله، عز وجل، "القلمس"... ثم قام بعده على ذلك ابنه عباد ثم من بعد عباد ابنه قلع بن عباد، ثم ابنه أمية بن قلع، ثم ابنه عوف بن أمية، ثم ابنه أبو ثمامة جنادة بن عوف، وكان آخرهم، وعليه قام الإسلام. فكانت العرب إذا فرغت من حجها اجتمعت إليه، فقام فيهم خطيبا، فحرم رجبا، وذا القعدة، وذا الحجة، ويحل المحرم عاما، ويجعل مكانه صفر، ويحرمه عاما ليواطئ عدة ما حرم الله، فيحل ما حرم الله، يعني: ويحرم ما أحل الله.اهـ
“মুহাম্মাদ ইবনে ইসহাক রহ. তার সীরাতের কিতাবে এ ব্যাপারে সুন্দর ও উপকারী আলোচনা করেছেন। তিনি বলেন, আল্লাহ তাআলার হারাম মাসকে হালাল আর হালাল মাসকে হারাম করে আরবদের মাঝে মাস পিছিয়ে দেয়ার কাজটা সর্ব প্রথম করেছিল ‘ক্বালাম্মাস’। তার মৃত্যুর পর এর দায়িত্ব নেয় তার পুত্র আব্বাদ। আব্বাদের পর তার পুত্র কাল’ ইবনে আব্বাদ। তারপর তার পুত্র উমাইয়া ইবনে কাল’। তারপর তার পুত্র আউফ ইবনে উমাইয়া। তারপর তার পুত্র আবু ছুমামাহ্ জুনাদাহ ইবনে আউফ। সেই ছিল সর্বশেষ। এর সময়ই ইসলামের আবির্ভাব হয়। আরবরা তাদের হজ্ব শেষে তার নিকট সমবেত হত। সে দাঁড়িয়ে তাদের মাঝে ভাষণ দিত। রজব, যিলকদ এবং যিলহজ্ব মাসকে হারাম ঘোষণা দিত এবং মুহাররাম মাসকে হালাল ঘোষণা দিত আর সফর মাসকে এর বদলীমাসরূপে ধরত। অন্য বছর মুহাররামকে হারাম ধরত। তা এ জন্য করত যেন আল্লাহ তাআলা যা হারাম করেছেন তার সংখ্যা ঠিক রাখতে পারে। এভাবে আল্লাহর হারামকে হালাল এবং হালালকে হারাম করত।” (তাফসীরে ইবনে কাসীর: ৪/১৫৩)
বি.দ্র:
আরবরা জানত আল্লাহ তাআলা মুহাররাম মাসকে হারাম আর সফর মাসকে হালাল করেছেন। কিন্তু তারা তাদের স্বার্থের কারণে হারাম মাসকে হালাল আর হালাল মাসকে হারাম করেছে। তারা এ কথা বলেনি যে, আল্লাহ তাআলাই তাদের জন্য হারাম মাসকে হালাল আর হালাল মাসকে হারাম করে দিয়েছেন। তারা যে পরিবর্তন করেছে তাকে আল্লাহ তাআলা বা তার শরীয়তের নামে চালায়নি। বরং শরীয়তের বিধান যে এর বিপরীত তারা তা জেনে শুনেই এ পরিবর্তন করত। আল্লাহ তাআলা তাদের এ কাজকেই কুফর সাব্যস্ত করেছেন। আয়াতে কোন ইশারাও নেই যে, তারা তাদের এ পরিবর্তনকে আল্লাহ বা তার শরীয়তের নামে চালাত। অতএব, সুস্পষ্ট যে, আল্লাহ তাআলার বিধানে কোনরূপ পরিবর্তন করাই কুফর, যদিও একে আল্লাহ বা তার শরীয়তের নামে চালানো না হয়। মোটকথা, আল্লাহ তাআলার শরীয়ত বিরোধি আইন প্রণয়ই কুফর। এরপর আর আকীদা বিশ্বাসের দিকে তাকানোর প্রয়োজন নেই। সামনে ইবনে হাজম রহ. এর বক্তব্যে তা আরোও পরিষ্কার হবে ইনশাআল্লাহ!
Comment