আমাদের হানাফি মাযহাব মতে জুমআর নামায আদায়ের জন্য স্বয়ং ইমামুল মুসলিমীন বা তার নায়েব বা তার নিয়োগকৃত বা অনুমোদিত ইমাম শর্ত। ইমামুল মুসলিমীনের অনুমতি ছাড়া কেউ জুমআ পড়ালে জুমআ সহী হবে না। এ বিধানটি হানাফি মাযহাবে একটি অতি প্রসিদ্ধ বিধান। তবে আমাদের আইম্মায়ে কেরাম বলেন, যদি কোন মুসলিম ভূমি কাফেররা দখল করে নেয়, তাহলে সেখানেও জুমআ কায়েম করতে হবে। মুসলমানরা নিজেরা একজন খতীব নির্বাচন করে নেবে, যিনি তাদের নিয়ে জুমআ আদায় করবেন। ইমামুল মুসলিমীন না থাকার অজুহাতে জুমআ ছাড়া যাবে না। তদ্রূপ কোন এলাকার পরিস্থিতি যদি এমন দাঁড়ায় যে, সেখানে ইমামুল মুসলিমীন বা তার নিয়োগকৃত কেউ জুমআ পড়াতে সক্ষম নন, তাহলে সেখানকার অধিবাসীরা একজনকে জুমআর ইমাম হিসেবে নির্ধারণ করে নিয়ে তার পিছনে জুমআ আদায় করবে।
আল্লামা কাসানী রহ. (৫৮৭হি.) বলেন,
আল্লামা ইবনে আবেদীন শামী রহ. (১২৫২হি.) বলেন,
বুঝা গেল, জুমআর জন্য যদিও ইমামুল মুসলিমীন বা বা তার নিয়োগকৃত ইমাম শর্ত, কিন্তু তা হলো- যখন যখন ইমাম থাকেন এবং তার সামর্থ্য থাকে। পক্ষান্তরে যদি ইমামই না থাকে (যেমন- দারুল হরবে) কিংবা ইমাম থাকা সত্ত্বেও তার সামর্থ্য না থাকে (যেমন- মুসলমানদের নিজেদের পরস্পর দাঙ্গা-হাঙ্গামার সময়) তাহলে আর ইমাম শর্ত নয়। তখন লোকজনকে নিজেদের জুমআ নিজেদেরকেই আদায় করে নিতে হবে। কারণ, ইমামের শর্ত মূলত শৃঙ্খলার জন্য। যদি ইমাম না থাকে বা ইমামের সামর্থ্য না থাকে, তাহলে যেভাবে সম্ভব সেভাবেই জুমআ আদায় করে নিতে হবে।
এ কারণেই, ইমাম থাকা অবস্থায় যদি ইমাম জুমআ কায়েম না করে কিংবা কায়েম করতে নিষেধ করে- তাহলে লোকজন নিজেরাই জুমআ আদায় করে নেবে। ইমামের আশায় বসে থাকবে না, কিংবা ইমামের নিষেধের কোন পরোয়া করবে না।
ফাতাওয়া হিন্দিয়াতে বলা হয়েছে,
প্রিয় পাঠক, দেখা গেল- জুমআর নামাযে ইমাম শর্ত হওয়া সত্ত্বেও যখন ইমাম না থাকবে কিংবা ইমামের সামর্থ্য না থাকবে কিংবা ইমাম জুমআ কায়েম না করবে বা কায়েম করতে বাধা দেবে: তখন লোকজনকে নিজেদের দায়িত্ব নিজেদেরকেই পালন করতে হবে। কোন বাহানায় জুমআ তরক করা যাবে না।
প্রিয় পাঠক, এবার আমরা জিহাদের বিষয়ে আসি। জুমআর নামাযে ইমাম শর্ত হওয়ার কথা হানাফি মাযহাবের সব কিতাবেই আছে, কিন্তু জিহাদের জন্য ইমাম শর্ত এমন কথা কিতাবাদিতে নেই। এতদসত্ত্বে কিভাবে যে সমাজে ছড়িয়ে গেল- জিহাদের জন্য ইমাম শর্ত; বুঝে আসে না। অধিকন্ত আমরা দেখেছি, ইমাম না থাকলেও জুমআ আদায় করতে হয়। যেখানে ইমাম শর্ত করা হয়েছে, সেখানেও যদি ইমাম না থাকে বা না করে, তাহলে লোকজনকে নিজেদের দায়িত্ব নিজেদেরকে পালন করতে হয়: তাহলে যেখানে জিহাদের জন্য ইমাম শর্ত বলে কোন কথাই নেই, সেখানে কিভাবে ইমাম শর্ত হয়ে গেল? সেখানে কিভাবে ইমাম না থাকলে জিহাদ নিষিদ্ধ হয়ে গেল? বড়ই আশ্চর্যের বিষয়!
এক কথায়- শরীয়তের কোন বিধানের জন্যই ইমাম শর্ত নয়। ইমাম শুধু শৃঙ্খলার জন্য। ইমাম না থাকলে বা না করলে নিজেদের দায়িত্ব নিজেদেরকেই পালন করতে হবে। হুদুদ-কেসাসসহ অন্যান্য বিধানেরও একই বিধান। তবে যেখানে ফিতনার আশঙ্খা আছে, সেখানে পর্যাপ্ত সামর্থ্য থাকা আবশ্যক। পূর্ণ সামর্থ্য না থাকলে যতটুকু সামর্থ্যে আছে আদায় করবে, বাকিটুকুর জন্য চেষ্টা করবে। আল্লাহ তাআলা আমাদের সহী বুঝ দান করুন। আমীন!
আল্লামা কাসানী রহ. (৫৮৭হি.) বলেন,
وأما السلطان فشرط أداء الجمعة عندنا حتى لا يجوز إقامتها بدون حضرته أو حضرة نائبه، وقال الشافعي السلطان ليس بشرط؛ ... فأما إذا لم يكن إماما بسبب الفتنة أو بسبب الموت ولم يحضر وال آخر بعد حتى حضرت الجمعة ذكر الكرخي أنه لا بأس أن يجمع الناس على رجل حتى يصلي بهم الجمعة، وهكذا روي عن محمد ذكره في العيون؛ لما روي عن عثمان - رضي الله عنه - أنه لما حوصر قدم الناس عليا - رضي الله عنه - فصلى بهم الجمعة. اهـ
“আমাদের নিকট জুমআ আদায় করার জন্য সুলতান শর্ত। সুলতান বা তার নায়েবের উপস্থিতি ছাড়া জুমআ কায়েম করা জায়েয হবে না। ইমাম শাফেয়ী বলেন, সুলতান শর্ত নয়। ... হাঁ, ফেতনা কিংবা মৃত্যুর কারণে যদি সুলতান না থাকেন এবং আরেকজন ওয়ালী বা শসনকর্তা এখনো উপস্থিত না হন, এমতাবস্থায় জুমআর সময় হয়ে যায়- ইমাম কারখী বলেন, জুমআ আদায়ের জন্য লোকজন একমত হয়ে কাউকে নির্ধারণ করে নিতে কোন অসুবিধা নেই। ইমাম মুহাম্মাদ রহ. থেকে এমনটিই বর্ণিত রয়েছে। ‘আলউয়ূন’ কিতাবে এমনটিই উল্লেখ করেছেন। কেননা, হযরত উসমান রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত যে, তিনি যখন গৃহবন্দী হয়ে পড়েছিলেন, তখন হযরত আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুকে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। তখন তিনি তাদের নিয়ে জুমআ পড়িয়েছেন।” (বাদায়েউস সানায়ে ১/৫৮৮)আল্লামা ইবনে আবেদীন শামী রহ. (১২৫২হি.) বলেন,
ولذا لو مات الوالي أو لم يحضر لفتنة ولم يوجد أحد ممن له حق إقامة الجمعة نصب العامة لهم خطيبا للضرورة كما سيأتي مع أنه لا أمير ولا قاضي ثمة أصلا وبهذا ظهر جهل من يقول لا تصح الجمعة في أيام الفتنة مع أنها تصح في البلاد التي استولى عليها الكفار كما سنذكره فتأمل. اهـ
“এজন্যই যদি শাসনকর্তা মৃত্যুবরণ করেন অথবা ফিতনার কারণে উপস্থিত না হতে পারেন এবং এমন কাউকে না পাওয়া যায়, যার জুমআ কায়েমের অধিকার রয়েছে তাহলে জরূরতের কারণে সাধারণ মানুষ নিজেদের জন্য একজন খতীব নির্ধারণ করে নেবে, যেমনটি সামনে এ বিষয়ে আলোচনা আসছে। অথচ এখানে আমীর কিংবা কাযী কেউ-ই নেই। আমাদের এ বক্তব্য থেকে ঐ ব্যক্তির অজ্ঞতা স্পষ্ট হয়ে গেছে যারা বলে, ফেতনার দিনগুলোতে জুমআ সহীহ হবে না, অথচ ঐ সমস্ত শহরেও জুমআ সহীহ, যেগুলো কাফেররা দখল করে নিয়েছে, যেমনটি আমরা সামনে উল্লেখ করব।” (রদ্দুল মুহতার: ৩/৬)বুঝা গেল, জুমআর জন্য যদিও ইমামুল মুসলিমীন বা বা তার নিয়োগকৃত ইমাম শর্ত, কিন্তু তা হলো- যখন যখন ইমাম থাকেন এবং তার সামর্থ্য থাকে। পক্ষান্তরে যদি ইমামই না থাকে (যেমন- দারুল হরবে) কিংবা ইমাম থাকা সত্ত্বেও তার সামর্থ্য না থাকে (যেমন- মুসলমানদের নিজেদের পরস্পর দাঙ্গা-হাঙ্গামার সময়) তাহলে আর ইমাম শর্ত নয়। তখন লোকজনকে নিজেদের জুমআ নিজেদেরকেই আদায় করে নিতে হবে। কারণ, ইমামের শর্ত মূলত শৃঙ্খলার জন্য। যদি ইমাম না থাকে বা ইমামের সামর্থ্য না থাকে, তাহলে যেভাবে সম্ভব সেভাবেই জুমআ আদায় করে নিতে হবে।
এ কারণেই, ইমাম থাকা অবস্থায় যদি ইমাম জুমআ কায়েম না করে কিংবা কায়েম করতে নিষেধ করে- তাহলে লোকজন নিজেরাই জুমআ আদায় করে নেবে। ইমামের আশায় বসে থাকবে না, কিংবা ইমামের নিষেধের কোন পরোয়া করবে না।
ফাতাওয়া হিন্দিয়াতে বলা হয়েছে,
إذا نهاهم متعنتا أو ضرارا بهم فلهم أن يجتمعوا على رجل يصلي بهم الجمعة، كذا في الظهيرية. اهـ
“ইমাম যদি একগুঁয়েমি বশত কিংবা ক্ষতির উদ্দেশ্যে লোকজনকে জুমআ আদায় করতে নিষেধ করে, তাহলে তারা একমত হয়ে একজনকে নির্ধারণ করে নিতে পারবে, যিনি তাদেরকে নিয়ে জুমআ পড়াবেন। ফাতাওয়া জহিরিয়্যাতে এমনই আছে।” (আলফাতাওয়াল হিন্দিয়া: ১/১৪৬)প্রিয় পাঠক, দেখা গেল- জুমআর নামাযে ইমাম শর্ত হওয়া সত্ত্বেও যখন ইমাম না থাকবে কিংবা ইমামের সামর্থ্য না থাকবে কিংবা ইমাম জুমআ কায়েম না করবে বা কায়েম করতে বাধা দেবে: তখন লোকজনকে নিজেদের দায়িত্ব নিজেদেরকেই পালন করতে হবে। কোন বাহানায় জুমআ তরক করা যাবে না।
প্রিয় পাঠক, এবার আমরা জিহাদের বিষয়ে আসি। জুমআর নামাযে ইমাম শর্ত হওয়ার কথা হানাফি মাযহাবের সব কিতাবেই আছে, কিন্তু জিহাদের জন্য ইমাম শর্ত এমন কথা কিতাবাদিতে নেই। এতদসত্ত্বে কিভাবে যে সমাজে ছড়িয়ে গেল- জিহাদের জন্য ইমাম শর্ত; বুঝে আসে না। অধিকন্ত আমরা দেখেছি, ইমাম না থাকলেও জুমআ আদায় করতে হয়। যেখানে ইমাম শর্ত করা হয়েছে, সেখানেও যদি ইমাম না থাকে বা না করে, তাহলে লোকজনকে নিজেদের দায়িত্ব নিজেদেরকে পালন করতে হয়: তাহলে যেখানে জিহাদের জন্য ইমাম শর্ত বলে কোন কথাই নেই, সেখানে কিভাবে ইমাম শর্ত হয়ে গেল? সেখানে কিভাবে ইমাম না থাকলে জিহাদ নিষিদ্ধ হয়ে গেল? বড়ই আশ্চর্যের বিষয়!
এক কথায়- শরীয়তের কোন বিধানের জন্যই ইমাম শর্ত নয়। ইমাম শুধু শৃঙ্খলার জন্য। ইমাম না থাকলে বা না করলে নিজেদের দায়িত্ব নিজেদেরকেই পালন করতে হবে। হুদুদ-কেসাসসহ অন্যান্য বিধানেরও একই বিধান। তবে যেখানে ফিতনার আশঙ্খা আছে, সেখানে পর্যাপ্ত সামর্থ্য থাকা আবশ্যক। পূর্ণ সামর্থ্য না থাকলে যতটুকু সামর্থ্যে আছে আদায় করবে, বাকিটুকুর জন্য চেষ্টা করবে। আল্লাহ তাআলা আমাদের সহী বুঝ দান করুন। আমীন!
Comment