গ্রন্থের নাম: ইতিহাসের মৃত্যুঞ্জয়ী মহাবীর শহীদ টিপু সুলতান
মূল: মুহাম্মদ ইলইয়াস নদভী
অনুবাদ: আব্দুল্লাহ আল ফারুক
গ্রন্থটি শহীদ টিপু সুলতান রহ. এর জীবনীর উপর একটি অনবদ্য গ্রন্থ। একটি মিষ্ট ফল। কিন্তু বিষ মিশ্রিত। আমার কাছে এমনই মনে হল। অন্যদের কাছে অন্য রকম মনে হতে পারে।
বিষ মিশ্রিত হওয়ার কারণ অনেক হতে পারে। এর মধ্যে এটাও একটা হতে পারে যে, লেখক একজন ভারতীয় লোক। তাই টিপু সুলতানকে একজন হিন্দুপ্রেমী সুলতান হিসেবে প্রমাণ করতে না পারলে ভারত সরকারের কাছে তিনি অচ্যুত/অস্পৃশ্য গণ্য হতে পারেন। তখন তার নিজে সহ আরো অনেক মুসলমানের উপর অনাকাঙ্খিক নিপীড়ন আপতিত হতে পারে। তাই লেখক এমনভাবেই গ্রন্থটি লিখেছেন- যাতে ঈমান, তাওহীদ ও সুন্নাহ্ বিসর্জন দিয়ে হলেও টিপু সুলতানকে হিন্দু সম্প্রীতির একজন আদর্শ পুরুষ হিসেবে উপস্থাপন করা যায়।
লেখক যে কারণেই যা করে থাকুক- আমরা তো আর চুপ থাকতে পারি না। কারণ, উম্মাহর কাছে যখন লেখকের লেখাটি পৌঁছবে, তখন তারা তো লেখকের উপর অদৃশ্য কোনো তরবারি যে কোষমুক্ত করে ধরে রাখা ছিল বা আর কি উজরের কারণে, না’কি তার আকিদার বিকৃতির কারণে এমনটা লিখেছেন- সেটা তো আর তাদের কাছে ধরা পড়বে না। উম্মাহ তো এখান থেকে হিন্দুপ্রীতিই শিখবে। আরো যেসব বিকৃতি তিনি ঘটিয়েছেন, উম্মাহ তো সেগুলোকে হক ও ইসলামের শিক্ষা-উদারতা হিসেবেই নেবে। এমতাবস্থায় আমরা চুপ করে থাকতে পারি না। লেখক যে ইচ্ছাতেই লিখে থাকুক, আমাদের দায়িত্ব- উম্মাহকে সতর্ক করা।
মূল কথায় যাওয়ার আগে আমাদের জেনে নেয়া দরকার যে, টিপু সুলতান রহ. এর হাতে রাজত্ব এলো কিভাবে? এ বিষয়টা না বুঝলে অনেক বিষয়ই না বুঝা থেকে যাবে। তাই আমি প্রথমে সংক্ষেপে কথাটা একটু বলে নিই।
টিপু সুলতান রহ. এর পিতা হায়দার আলী। তার পূর্বপুরুষ কুরাইশ বংশের মানুষ। মক্কা মুকাররামায় তাদের বসবাস ছিল। সেখান থেকে তারা হিজরত করে হিন্দুস্তানে চলে আসেন। এখানেই হায়দার আলীর জন্ম। হায়দার আলী প্রথমে এক হিন্দু রাজার অধীনে একটি ছোট্ট ফৌজের কমান্ডাররূপে কর্মজীবন শুরু করেন। যোগ্যতাবলে তিনি হিন্দু রাজার সেনাবাহিনীর সেনাপ্রধানে পদোন্নতি করেন। তার ক্রম উন্নতি দেখে অন্যান্য হিন্দুরা ষড়যন্ত্রের জাল বিছায়। তারা রাজাকে কুমন্ত্রণা দেয় যে, হায়দার আলী আপনার রাজত্ব দখল করতে চাইছে। আগে বাগে তাকে দমন করুন। নতুবা পরে বিপদ হবে। রাজা তাদের কথায় কান দেয়। হায়দার আলীকে সুযোগ বুঝে হত্যার ষড়যন্ত্র করে। কিন্তু আল্লাহর মহিমায় হায়দার আলী ষড়যন্ত্রের ব্যাপারে অবগত হন। তিনি বসে না থেকে তৎক্ষণাৎ ব্যবস্থা নেন। তার অধীস্ত বিশ্বস্ত সৈন্যদের নিয়ে আগে বাগেই রাজধানীতে হামলা করেন। দখল করে ফেলেন রাজধানী। এভাবে হিন্দু রাজার রাজত্ব হায়দার আলীর হাতে এসে পড়ে।
সুস্পষ্ট যে, হায়দার আলীর হাতে যে রাজত্বটি এলো সেটি কোন ইসলামী রাজত্ব নয়। সেখানকার সেনাবাহিনিও মুসলমান সেনাবাহিনি নয়। হিন্দু, মুসলিম ও অন্যান্য জাতি-গোষ্ঠী মিলিয়ে তা গঠিত। কাজেই, এ বাহিনি যারা হায়দার আলীর পক্ষ হয়ে যুদ্ধ করেছে তারা ইসলামের জন্য যুদ্ধ করেনি। পদবী ও রাজত্বের লোভে যুদ্ধ করেছে বললে, কিংবা স্বাভাবিক গতানুগতিক যুদ্ধের মতো যুদ্ধ করেছে বললে বাড়াবাড়ি হবে না। অতএব, হায়দার আলীর রাষ্ট্র কোন ইসলামী রাষ্ট্র নয়। মুসলমানদের সেখানে একচ্ছত্র ক্ষমতাও ছিল না যে, তারা ইচ্ছা করলে সেটাকে ইসলাম অনুযায়ী পরিচালনা করতে পারেন।
অধিকন্তু হায়দার আলী ছিলেন নিরক্ষর মানুষ। সামরিক প্রতিভা এবং রাষ্ট্র পরিচালনার যোগ্যতা তার পর্যাপ্ত থাকলেও ইসলাম ধর্মের বিধি বিধান সম্পর্কে তার জানাশুনা ছিল না। আর তখনকার অন্ধকার যুগে সাধারণ মুসলমানদের দ্বীনি অবস্থাও কোন ভাল পর্যায়ে ছিল না। বিধর্মীদের সাথে থাকতে থাকতে নিজ ধর্মের নামটা ছাড়া আর তেমন কিছু তাদের বাকি নেই। অধিকন্তু ছিল শীয়াদের দাপট। বিধায় ইসলামের প্রকৃত রূপ তখনকার সমাজ থেকে যোজন যোজন দূরে ছিল। বর্তমান সময়ে দ্বীনে ইসলামের যে চর্চা ও প্রসার তার হাজার ভাগের এক ভাগও হয়তো তখন ছিল না।
তবে হায়দার আলী মুসলমান ছিলেন। ইসলাম ও মুসলমানদের ভালবাসতেন। তাই তিনি যতদূর পেরেছেন ধর্মের কাজ করার চেষ্টা করেছেন। এমতাবস্থায় আমরা তাকে খুব একটা দোষারূপ করতে পারি না যে, কেন তার রাষ্ট্র জাহিলী রাষ্ট্রের ন্যায় পরিচালিত হতো।
হায়দার আলীর রাজত্বলাভ হিন্দুদের সন্তুষ্ট করেনি। মারাঠাদেরও করেনি। তাই তারা বরাবরই তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে আসছিল। তিনি সেগুলো দমন করে আসছিলেন। আর ইংরেজরা তখন ভারতবর্ষ গিলে খাওয়ার পায়তারা করছে। তাদের সামনে হায়দার আলী একটা বড় বাধা ছিল। তাই তারা তার বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। তিনিও তাদের মোকাবেলায় এগিয়ে আসেন। হায়দার আলী এগিয়েই চলছিলেন। কিন্তু ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত অবস্থায় হঠাৎ তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। কিছু দিন পরই ইন্তেকাল করেন। ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ তখনও চলছে।
পিতার মৃত্যুর পর রাজত্বের ভার এসে পড়ে তার সন্তান টিপু সুলতানের হাতে। তিনি রাজত্বের ভার গ্রহণ করেন। তখন তার বয়স ৩৩ বৎসরের মতো।
হায়দার আলী নিরক্ষর হলেও শিক্ষানুরাগী ছিলেন। তাই তিনি তার সন্তান টিপু সুলতানকে দ্বীন ও দুনিয়া উভয় শিক্ষায়ই শিক্ষিত করে গড়ে তোলেন। এ সুবাধে টিপু সুলতান রহ. একজন আলেম ছিলেন।
তবে আমরা দেখেছি, হায়দার আলীর রাষ্ট্র কোন ইসলামী রাষ্ট্র ছিল না। এখন পিতার মৃত্যুর পর টিপু সুলতান যে রাষ্ট্রের সুলতান হয়েছেন, সেটাও কোন ইসলামী রাষ্ট্র না। তবে তিনি যথাসম্ভব ইসলাম বাস্তবায়নের চেষ্টা করেছেন। কিন্তু পরিপূর্ণ ইসলাম কায়েমের পরিবেশ তখনও ছিল না। কারণ, তার সেনাবাহিনি কোন ইসলামী সেনাবাহিনি নয়। তাছাড়া জনগণও দ্বীনদার নয়।
আমরা জানি যে, হিন্দুস্তানে হাদিসের চর্চা শুরু হয়েছে শাহ ওলী উল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলবী রহ. এর মাধ্যমে। তাই তখন হিন্দুস্তানে কুরআন-হাদিসের তেমন কোন ইলম ছিল না। হানাফি ফিকহের কিতাবাদি কিছু ছিল। সে অনুযায়ী কিছুটা চেষ্টা করা হয়েছে ইসলাম কায়েমের। অধিকন্তু টিপু সুলতান রহ. যখন রাজত্ব হাতে নেন, তখন ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চলমান। আর হায়দার আলীর মৃত্যুর সুযোগে রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলের রাজারা বিদ্রোহ করে বসেছে টিপু সুলতানের বিরুদ্ধে। কাজেই তিনি উভয় দিক থেকে যুদ্ধের সম্মুখীন। তখন থেকে নিয়ে শাহাদাতের আগ পর্যন্ত তিনি শুধু যুদ্ধেই লিপ্ত ছিলেন। একটি মাসও শান্তিতে বসে থাকতে পারেননি।
অতএব, টিপু সুলতানের রাজ্য ইসলামী রাজ্য না হওয়ার কয়েকটি কারণ পেলাম:
- তিনি যে রাষ্ট্রের সুলতান হয়েছেন, সেটা অন্যান্য জাহিলী রাষ্ট্রের মতো গতানুগতিক একটা রাষ্ট্র ছিল। কোন ইসলামী রাষ্ট্র ছিল না।
- রাষ্ট্রের সেনাবাহিনি মুসলিম সেনাবাহিনি ছিল না। প্রশাসনিক পদগুলো একচ্ছত্রভাবে মুসলমানদের হাতে ছিল না। বরং সকলের হাতে সম্মিলিতভাবে ছিল। রাষ্ট্রীয় বড় বড় পদ ইসলাম ও মুসলমানদের দুশমন হিন্দু, মারাঠা, শীয়া ও অন্যান্য বিধর্মীদের হাতে ছিল।
- ইসলামী ইলমের তেমন কোন প্রচার-প্রসার ছিল না। তাই লোকজন ধর্ম সম্পর্কে খুব কমই জানতো।
- সাধারণ মুসলমানরা হাজারো রকমের শিরিক, কুফর ও বিদআতে লিপ্ত ছিল। এমতাবস্থায় তাদের উপর দ্বীন কায়েম করা অতিশয় কঠিন ছিল।
- বিভিন্ন দিক থেকে উপর্যুপরি বিদ্রোহ হচ্ছিল। সুলতান তাদের দমনে ব্যস্ত ছিলেন।
- ইংরেজদের সাথে যুদ্ধ চলমান ছিল।
টিপু সুলতান রহ. ইংরেজদের ইসলামের শত্রু মনে করতেন। তাই তিনি তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছেন। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ তিনি কাদের নিয়ে করেছেন? কোন ইসলামী বাহিনি নিয়ে? না, বরং এমন এক বাহিনি নিয়ে যারা শুধু দুনিয়ার জন্য যুদ্ধ করে। ইসলামের স্বার্থে নয়। অধিকন্তু অন্য সকল রাজ-রাজারা সুলতানের বিরুদ্ধে ইংরেজদের একনিষ্ট সহযোগী ছিল। এই চতুর্মুখী বিশাল শত্রু বাহিনির বিরুদ্ধে সুলতানকে একা লড়তে হয়েছে। তাই, তার সেনাবাহিনিতে যে সকল বিধর্মী সৈন্য ছিল, তাদের বাদ দিয়ে একচ্ছত্রভাবে মুসলমানদের নিয়ে জিহাদ করা কখনোও সম্ভব ছিল না।
যেহেতু টিপু সুলতানের সেনাবাহিনি ও প্রশাসন ইসলামী ছিল না, তাই তারা ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের সময় নিজেদের স্বার্থ বিবেচনা করেছে। অনেকে গোপনে ইংরেজদের সাথে আঁতাত করে নিয়েছে- বিশেষ করে শীয়ারা, আবার অনেকে পলায়ন করেছে, কিংবা স্বয়ং নিজেরাই সুলতানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে। তাই সুলতানের সেনাবাহিনি একটি সুসজ্জতিত ও উন্নত সেনাবাহিনি হওয়া সত্বেও সুলতানকে পরাজয় বরণ করতে হয়েছে। তবে তার মনে ইসলাম প্রতিষ্ঠার বাসনা ছিল। কিন্তু সে সুযোগ তখন তেমন একটা ছিল না। অধিকন্তু প্রচলিত শিরিক-কুফর ও বিদআতের একটা ছাপ যে স্বয়ং সুলতানের উপর পড়েনি, তাও কিন্তু না। তবে তিনি ইসলাম চাইতেন, ইসলামের জন্যই জীবন দিয়েছেন। তাই তিনি শহীদ।
এ কথাগুলো বললাম, সামনের বিষয়গুলো বুঝানোর জন্য:
১.
সুলতানের বাহিনি ও প্রশাসন যে সব ধর্মের সৈন্য নিয়ে গঠিত, সেটা মূলত ধর্মীয় সম্প্রীতি নয়, বরং উজরের কারণে। আর যদি ধরা হয় যে, সুলতানের সামর্থ্য থাকা সত্ত্বে তিনি বিধর্মীদের নিয়ে স্বীয় প্রশাসন গঠন করেছেন, তাহলে সেটা গর্বের কিছু নয়। এটা বরং সুস্পষ্ট ইসলামের বিধান লঙ্গন। অতএব, এটাকে আদর্শ হিসেবে পেশ না করে বরং মুসলমানদের কলঙ্ক হিসেবে পেশ করতে হবে।
২.
সুলতানের রাষ্ট্রে যে একচ্ছত্র ইসলাম প্রতিষ্ঠিত ছিল না, সেটাও কোন গর্বের কথা নয়। যদি সুলতান অক্ষমতার কারণে তেমনটা করে থাকেন, তাহলে তিনি মা’জুর। আর যদি ইসলাম কায়েমে সক্ষম হওয়া সত্বেও সকল ক্ষেত্রে ইসলাম কায়েম না করে থাকেন, সকল বিধান ইসলাম অনুযায়ী পরিচালনা না করে থাকেন, তাহলে সেটাও কোন গর্বের কথা নয় বরং লজ্জার কথা। কাজেই সেটাকে আদর্শ হিসেবে কিংবা ধর্মীয় উদারতা হিসেবে পেশ করার কিছু নেই।
প্রিয় পাঠক, এতক্ষণ যা বললাম, সেটাই বাস্তবতা। কিন্তু গ্রন্থকার এসব বিষয়কে ধর্মীয় সম্প্রীতি, ধর্মীয় উদারতা, ইসলামের মহানুভবতা, ইসলামের আদর্শ- ইত্যাদি হিসেবে পেশ করেছেন।
সুলতানের মহানুভবতা ও ধর্মীয় সম্প্রীতির প্রমাণরূপে গ্রন্থকার এক জায়গায় গর্ব করে বলেন,
“সুলতানের প্রশাসন বা সেনাবাহিনিতে ধর্ম বা বংশের ভিত্তিতে কোটা ছিলো না। ব্যক্তিগত যোগ্যতা ও সক্ষমতাই চাকরিতে নিয়োগ ও উন্নতির একক মাপকাঠি বিবেচিত হতো।” পৃ. ৪৮৪
অন্যত্র বলেন,
“ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে তিনি সব ধর্মের সব অনুসারিদের ভালবাসতেন। সবার প্রতি তার আস্থা ছিল বলেই তিনি প্রশাসনের অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ পদে হিন্দুদের নিয়োগ দিয়েছিলেন। সব বিধর্মীকে তিনি পূর্ণ উদারতার সঙ্গে নিজস্ব ধর্ম পালনের পূর্ণ স্বাধিনতা দিয়েছিলেন।” পৃ. ৪০৭
সামনে গিয়ে লিখেন,
“সুলতান আন্তরিকভাবে হিন্দুদের মন্দির ও সেগুলোর রক্ষণাবেক্ষণরত স্বামীদের শ্রদ্ধা করতেন।” পৃ. ৪০৭
প্রিয় পাঠক, এখানে আমি সমূদ্র থেকে একটা ফোঁটা মাত্র তুলে ধরলাম। নতুবা সারা কিতাবই এমন সব শিরিক, কুফর আর বিদআতে পরিপূর্ণ।
এবার আপনারাই বলুন, এ কিতাব পড়ে কি কেউ তাহওহিদের শিক্ষা পাবে? ওলা-বারার শিক্ষা পাবে? না’কি নাস্তিকতা পাবে?
এ জন্য আমি একে বিষ মিশ্রিত মিষ্ট ফল মনে করি। সাধারণ মুসলমানদের জন্য এ কিতাব পড়া আমি জায়েয মনে করি না। যারা হক-বাতিল সুস্পষ্ট বুঝেন, তারাই কেবল এ কিতাব পড়তে পারেন।
আরোও দুঃজনক যে, এ কিতাবকে আবুল হাসান আলী নদভী রহ. এর সাথে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। বলা হয়েছে, অনেকটা তাঁর তত্ত্বাবধানেই এ কিতাব রচিত হয়েছে। আমার মনে হয় না আলী মিয়া নদভী রহ. এমন সব শিরিক কুফরকে ইসলামের গৌরব বলে প্রচারের অনুমোদন দিয়েছেন। ওয়াল্লাহু তাআলা আ’লাম! ওমা আলাইনা ইল্লাল বালাগ!
মূল: মুহাম্মদ ইলইয়াস নদভী
অনুবাদ: আব্দুল্লাহ আল ফারুক
গ্রন্থটি শহীদ টিপু সুলতান রহ. এর জীবনীর উপর একটি অনবদ্য গ্রন্থ। একটি মিষ্ট ফল। কিন্তু বিষ মিশ্রিত। আমার কাছে এমনই মনে হল। অন্যদের কাছে অন্য রকম মনে হতে পারে।
বিষ মিশ্রিত হওয়ার কারণ অনেক হতে পারে। এর মধ্যে এটাও একটা হতে পারে যে, লেখক একজন ভারতীয় লোক। তাই টিপু সুলতানকে একজন হিন্দুপ্রেমী সুলতান হিসেবে প্রমাণ করতে না পারলে ভারত সরকারের কাছে তিনি অচ্যুত/অস্পৃশ্য গণ্য হতে পারেন। তখন তার নিজে সহ আরো অনেক মুসলমানের উপর অনাকাঙ্খিক নিপীড়ন আপতিত হতে পারে। তাই লেখক এমনভাবেই গ্রন্থটি লিখেছেন- যাতে ঈমান, তাওহীদ ও সুন্নাহ্ বিসর্জন দিয়ে হলেও টিপু সুলতানকে হিন্দু সম্প্রীতির একজন আদর্শ পুরুষ হিসেবে উপস্থাপন করা যায়।
লেখক যে কারণেই যা করে থাকুক- আমরা তো আর চুপ থাকতে পারি না। কারণ, উম্মাহর কাছে যখন লেখকের লেখাটি পৌঁছবে, তখন তারা তো লেখকের উপর অদৃশ্য কোনো তরবারি যে কোষমুক্ত করে ধরে রাখা ছিল বা আর কি উজরের কারণে, না’কি তার আকিদার বিকৃতির কারণে এমনটা লিখেছেন- সেটা তো আর তাদের কাছে ধরা পড়বে না। উম্মাহ তো এখান থেকে হিন্দুপ্রীতিই শিখবে। আরো যেসব বিকৃতি তিনি ঘটিয়েছেন, উম্মাহ তো সেগুলোকে হক ও ইসলামের শিক্ষা-উদারতা হিসেবেই নেবে। এমতাবস্থায় আমরা চুপ করে থাকতে পারি না। লেখক যে ইচ্ছাতেই লিখে থাকুক, আমাদের দায়িত্ব- উম্মাহকে সতর্ক করা।
মূল কথায় যাওয়ার আগে আমাদের জেনে নেয়া দরকার যে, টিপু সুলতান রহ. এর হাতে রাজত্ব এলো কিভাবে? এ বিষয়টা না বুঝলে অনেক বিষয়ই না বুঝা থেকে যাবে। তাই আমি প্রথমে সংক্ষেপে কথাটা একটু বলে নিই।
টিপু সুলতান রহ. এর পিতা হায়দার আলী। তার পূর্বপুরুষ কুরাইশ বংশের মানুষ। মক্কা মুকাররামায় তাদের বসবাস ছিল। সেখান থেকে তারা হিজরত করে হিন্দুস্তানে চলে আসেন। এখানেই হায়দার আলীর জন্ম। হায়দার আলী প্রথমে এক হিন্দু রাজার অধীনে একটি ছোট্ট ফৌজের কমান্ডাররূপে কর্মজীবন শুরু করেন। যোগ্যতাবলে তিনি হিন্দু রাজার সেনাবাহিনীর সেনাপ্রধানে পদোন্নতি করেন। তার ক্রম উন্নতি দেখে অন্যান্য হিন্দুরা ষড়যন্ত্রের জাল বিছায়। তারা রাজাকে কুমন্ত্রণা দেয় যে, হায়দার আলী আপনার রাজত্ব দখল করতে চাইছে। আগে বাগে তাকে দমন করুন। নতুবা পরে বিপদ হবে। রাজা তাদের কথায় কান দেয়। হায়দার আলীকে সুযোগ বুঝে হত্যার ষড়যন্ত্র করে। কিন্তু আল্লাহর মহিমায় হায়দার আলী ষড়যন্ত্রের ব্যাপারে অবগত হন। তিনি বসে না থেকে তৎক্ষণাৎ ব্যবস্থা নেন। তার অধীস্ত বিশ্বস্ত সৈন্যদের নিয়ে আগে বাগেই রাজধানীতে হামলা করেন। দখল করে ফেলেন রাজধানী। এভাবে হিন্দু রাজার রাজত্ব হায়দার আলীর হাতে এসে পড়ে।
সুস্পষ্ট যে, হায়দার আলীর হাতে যে রাজত্বটি এলো সেটি কোন ইসলামী রাজত্ব নয়। সেখানকার সেনাবাহিনিও মুসলমান সেনাবাহিনি নয়। হিন্দু, মুসলিম ও অন্যান্য জাতি-গোষ্ঠী মিলিয়ে তা গঠিত। কাজেই, এ বাহিনি যারা হায়দার আলীর পক্ষ হয়ে যুদ্ধ করেছে তারা ইসলামের জন্য যুদ্ধ করেনি। পদবী ও রাজত্বের লোভে যুদ্ধ করেছে বললে, কিংবা স্বাভাবিক গতানুগতিক যুদ্ধের মতো যুদ্ধ করেছে বললে বাড়াবাড়ি হবে না। অতএব, হায়দার আলীর রাষ্ট্র কোন ইসলামী রাষ্ট্র নয়। মুসলমানদের সেখানে একচ্ছত্র ক্ষমতাও ছিল না যে, তারা ইচ্ছা করলে সেটাকে ইসলাম অনুযায়ী পরিচালনা করতে পারেন।
অধিকন্তু হায়দার আলী ছিলেন নিরক্ষর মানুষ। সামরিক প্রতিভা এবং রাষ্ট্র পরিচালনার যোগ্যতা তার পর্যাপ্ত থাকলেও ইসলাম ধর্মের বিধি বিধান সম্পর্কে তার জানাশুনা ছিল না। আর তখনকার অন্ধকার যুগে সাধারণ মুসলমানদের দ্বীনি অবস্থাও কোন ভাল পর্যায়ে ছিল না। বিধর্মীদের সাথে থাকতে থাকতে নিজ ধর্মের নামটা ছাড়া আর তেমন কিছু তাদের বাকি নেই। অধিকন্তু ছিল শীয়াদের দাপট। বিধায় ইসলামের প্রকৃত রূপ তখনকার সমাজ থেকে যোজন যোজন দূরে ছিল। বর্তমান সময়ে দ্বীনে ইসলামের যে চর্চা ও প্রসার তার হাজার ভাগের এক ভাগও হয়তো তখন ছিল না।
তবে হায়দার আলী মুসলমান ছিলেন। ইসলাম ও মুসলমানদের ভালবাসতেন। তাই তিনি যতদূর পেরেছেন ধর্মের কাজ করার চেষ্টা করেছেন। এমতাবস্থায় আমরা তাকে খুব একটা দোষারূপ করতে পারি না যে, কেন তার রাষ্ট্র জাহিলী রাষ্ট্রের ন্যায় পরিচালিত হতো।
হায়দার আলীর রাজত্বলাভ হিন্দুদের সন্তুষ্ট করেনি। মারাঠাদেরও করেনি। তাই তারা বরাবরই তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে আসছিল। তিনি সেগুলো দমন করে আসছিলেন। আর ইংরেজরা তখন ভারতবর্ষ গিলে খাওয়ার পায়তারা করছে। তাদের সামনে হায়দার আলী একটা বড় বাধা ছিল। তাই তারা তার বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। তিনিও তাদের মোকাবেলায় এগিয়ে আসেন। হায়দার আলী এগিয়েই চলছিলেন। কিন্তু ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত অবস্থায় হঠাৎ তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন। কিছু দিন পরই ইন্তেকাল করেন। ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ তখনও চলছে।
পিতার মৃত্যুর পর রাজত্বের ভার এসে পড়ে তার সন্তান টিপু সুলতানের হাতে। তিনি রাজত্বের ভার গ্রহণ করেন। তখন তার বয়স ৩৩ বৎসরের মতো।
হায়দার আলী নিরক্ষর হলেও শিক্ষানুরাগী ছিলেন। তাই তিনি তার সন্তান টিপু সুলতানকে দ্বীন ও দুনিয়া উভয় শিক্ষায়ই শিক্ষিত করে গড়ে তোলেন। এ সুবাধে টিপু সুলতান রহ. একজন আলেম ছিলেন।
তবে আমরা দেখেছি, হায়দার আলীর রাষ্ট্র কোন ইসলামী রাষ্ট্র ছিল না। এখন পিতার মৃত্যুর পর টিপু সুলতান যে রাষ্ট্রের সুলতান হয়েছেন, সেটাও কোন ইসলামী রাষ্ট্র না। তবে তিনি যথাসম্ভব ইসলাম বাস্তবায়নের চেষ্টা করেছেন। কিন্তু পরিপূর্ণ ইসলাম কায়েমের পরিবেশ তখনও ছিল না। কারণ, তার সেনাবাহিনি কোন ইসলামী সেনাবাহিনি নয়। তাছাড়া জনগণও দ্বীনদার নয়।
আমরা জানি যে, হিন্দুস্তানে হাদিসের চর্চা শুরু হয়েছে শাহ ওলী উল্লাহ মুহাদ্দিসে দেহলবী রহ. এর মাধ্যমে। তাই তখন হিন্দুস্তানে কুরআন-হাদিসের তেমন কোন ইলম ছিল না। হানাফি ফিকহের কিতাবাদি কিছু ছিল। সে অনুযায়ী কিছুটা চেষ্টা করা হয়েছে ইসলাম কায়েমের। অধিকন্তু টিপু সুলতান রহ. যখন রাজত্ব হাতে নেন, তখন ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চলমান। আর হায়দার আলীর মৃত্যুর সুযোগে রাজ্যের বিভিন্ন অঞ্চলের রাজারা বিদ্রোহ করে বসেছে টিপু সুলতানের বিরুদ্ধে। কাজেই তিনি উভয় দিক থেকে যুদ্ধের সম্মুখীন। তখন থেকে নিয়ে শাহাদাতের আগ পর্যন্ত তিনি শুধু যুদ্ধেই লিপ্ত ছিলেন। একটি মাসও শান্তিতে বসে থাকতে পারেননি।
অতএব, টিপু সুলতানের রাজ্য ইসলামী রাজ্য না হওয়ার কয়েকটি কারণ পেলাম:
- তিনি যে রাষ্ট্রের সুলতান হয়েছেন, সেটা অন্যান্য জাহিলী রাষ্ট্রের মতো গতানুগতিক একটা রাষ্ট্র ছিল। কোন ইসলামী রাষ্ট্র ছিল না।
- রাষ্ট্রের সেনাবাহিনি মুসলিম সেনাবাহিনি ছিল না। প্রশাসনিক পদগুলো একচ্ছত্রভাবে মুসলমানদের হাতে ছিল না। বরং সকলের হাতে সম্মিলিতভাবে ছিল। রাষ্ট্রীয় বড় বড় পদ ইসলাম ও মুসলমানদের দুশমন হিন্দু, মারাঠা, শীয়া ও অন্যান্য বিধর্মীদের হাতে ছিল।
- ইসলামী ইলমের তেমন কোন প্রচার-প্রসার ছিল না। তাই লোকজন ধর্ম সম্পর্কে খুব কমই জানতো।
- সাধারণ মুসলমানরা হাজারো রকমের শিরিক, কুফর ও বিদআতে লিপ্ত ছিল। এমতাবস্থায় তাদের উপর দ্বীন কায়েম করা অতিশয় কঠিন ছিল।
- বিভিন্ন দিক থেকে উপর্যুপরি বিদ্রোহ হচ্ছিল। সুলতান তাদের দমনে ব্যস্ত ছিলেন।
- ইংরেজদের সাথে যুদ্ধ চলমান ছিল।
টিপু সুলতান রহ. ইংরেজদের ইসলামের শত্রু মনে করতেন। তাই তিনি তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছেন। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ তিনি কাদের নিয়ে করেছেন? কোন ইসলামী বাহিনি নিয়ে? না, বরং এমন এক বাহিনি নিয়ে যারা শুধু দুনিয়ার জন্য যুদ্ধ করে। ইসলামের স্বার্থে নয়। অধিকন্তু অন্য সকল রাজ-রাজারা সুলতানের বিরুদ্ধে ইংরেজদের একনিষ্ট সহযোগী ছিল। এই চতুর্মুখী বিশাল শত্রু বাহিনির বিরুদ্ধে সুলতানকে একা লড়তে হয়েছে। তাই, তার সেনাবাহিনিতে যে সকল বিধর্মী সৈন্য ছিল, তাদের বাদ দিয়ে একচ্ছত্রভাবে মুসলমানদের নিয়ে জিহাদ করা কখনোও সম্ভব ছিল না।
যেহেতু টিপু সুলতানের সেনাবাহিনি ও প্রশাসন ইসলামী ছিল না, তাই তারা ইংরেজদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের সময় নিজেদের স্বার্থ বিবেচনা করেছে। অনেকে গোপনে ইংরেজদের সাথে আঁতাত করে নিয়েছে- বিশেষ করে শীয়ারা, আবার অনেকে পলায়ন করেছে, কিংবা স্বয়ং নিজেরাই সুলতানের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে। তাই সুলতানের সেনাবাহিনি একটি সুসজ্জতিত ও উন্নত সেনাবাহিনি হওয়া সত্বেও সুলতানকে পরাজয় বরণ করতে হয়েছে। তবে তার মনে ইসলাম প্রতিষ্ঠার বাসনা ছিল। কিন্তু সে সুযোগ তখন তেমন একটা ছিল না। অধিকন্তু প্রচলিত শিরিক-কুফর ও বিদআতের একটা ছাপ যে স্বয়ং সুলতানের উপর পড়েনি, তাও কিন্তু না। তবে তিনি ইসলাম চাইতেন, ইসলামের জন্যই জীবন দিয়েছেন। তাই তিনি শহীদ।
এ কথাগুলো বললাম, সামনের বিষয়গুলো বুঝানোর জন্য:
১.
সুলতানের বাহিনি ও প্রশাসন যে সব ধর্মের সৈন্য নিয়ে গঠিত, সেটা মূলত ধর্মীয় সম্প্রীতি নয়, বরং উজরের কারণে। আর যদি ধরা হয় যে, সুলতানের সামর্থ্য থাকা সত্ত্বে তিনি বিধর্মীদের নিয়ে স্বীয় প্রশাসন গঠন করেছেন, তাহলে সেটা গর্বের কিছু নয়। এটা বরং সুস্পষ্ট ইসলামের বিধান লঙ্গন। অতএব, এটাকে আদর্শ হিসেবে পেশ না করে বরং মুসলমানদের কলঙ্ক হিসেবে পেশ করতে হবে।
২.
সুলতানের রাষ্ট্রে যে একচ্ছত্র ইসলাম প্রতিষ্ঠিত ছিল না, সেটাও কোন গর্বের কথা নয়। যদি সুলতান অক্ষমতার কারণে তেমনটা করে থাকেন, তাহলে তিনি মা’জুর। আর যদি ইসলাম কায়েমে সক্ষম হওয়া সত্বেও সকল ক্ষেত্রে ইসলাম কায়েম না করে থাকেন, সকল বিধান ইসলাম অনুযায়ী পরিচালনা না করে থাকেন, তাহলে সেটাও কোন গর্বের কথা নয় বরং লজ্জার কথা। কাজেই সেটাকে আদর্শ হিসেবে কিংবা ধর্মীয় উদারতা হিসেবে পেশ করার কিছু নেই।
প্রিয় পাঠক, এতক্ষণ যা বললাম, সেটাই বাস্তবতা। কিন্তু গ্রন্থকার এসব বিষয়কে ধর্মীয় সম্প্রীতি, ধর্মীয় উদারতা, ইসলামের মহানুভবতা, ইসলামের আদর্শ- ইত্যাদি হিসেবে পেশ করেছেন।
সুলতানের মহানুভবতা ও ধর্মীয় সম্প্রীতির প্রমাণরূপে গ্রন্থকার এক জায়গায় গর্ব করে বলেন,
“সুলতানের প্রশাসন বা সেনাবাহিনিতে ধর্ম বা বংশের ভিত্তিতে কোটা ছিলো না। ব্যক্তিগত যোগ্যতা ও সক্ষমতাই চাকরিতে নিয়োগ ও উন্নতির একক মাপকাঠি বিবেচিত হতো।” পৃ. ৪৮৪
অন্যত্র বলেন,
“ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে তিনি সব ধর্মের সব অনুসারিদের ভালবাসতেন। সবার প্রতি তার আস্থা ছিল বলেই তিনি প্রশাসনের অনেকগুলো গুরুত্বপূর্ণ পদে হিন্দুদের নিয়োগ দিয়েছিলেন। সব বিধর্মীকে তিনি পূর্ণ উদারতার সঙ্গে নিজস্ব ধর্ম পালনের পূর্ণ স্বাধিনতা দিয়েছিলেন।” পৃ. ৪০৭
সামনে গিয়ে লিখেন,
“সুলতান আন্তরিকভাবে হিন্দুদের মন্দির ও সেগুলোর রক্ষণাবেক্ষণরত স্বামীদের শ্রদ্ধা করতেন।” পৃ. ৪০৭
প্রিয় পাঠক, এখানে আমি সমূদ্র থেকে একটা ফোঁটা মাত্র তুলে ধরলাম। নতুবা সারা কিতাবই এমন সব শিরিক, কুফর আর বিদআতে পরিপূর্ণ।
এবার আপনারাই বলুন, এ কিতাব পড়ে কি কেউ তাহওহিদের শিক্ষা পাবে? ওলা-বারার শিক্ষা পাবে? না’কি নাস্তিকতা পাবে?
এ জন্য আমি একে বিষ মিশ্রিত মিষ্ট ফল মনে করি। সাধারণ মুসলমানদের জন্য এ কিতাব পড়া আমি জায়েয মনে করি না। যারা হক-বাতিল সুস্পষ্ট বুঝেন, তারাই কেবল এ কিতাব পড়তে পারেন।
আরোও দুঃজনক যে, এ কিতাবকে আবুল হাসান আলী নদভী রহ. এর সাথে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। বলা হয়েছে, অনেকটা তাঁর তত্ত্বাবধানেই এ কিতাব রচিত হয়েছে। আমার মনে হয় না আলী মিয়া নদভী রহ. এমন সব শিরিক কুফরকে ইসলামের গৌরব বলে প্রচারের অনুমোদন দিয়েছেন। ওয়াল্লাহু তাআলা আ’লাম! ওমা আলাইনা ইল্লাল বালাগ!
Comment