[ ভূমিকা : আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহর অশেষ মেহেরবানি, ফযল ও করমে যখন পৃথিবীর দেশে দেশে আজ ইসলাম বিদ্বেষী নাস্তিক-ব্লগারচক্র একদল জানবাজ নবীপ্রেমিক মুজাহিদীনের সুন্নতি অভিযান-অপারেশনের কারণে ভয়ে আতঙ্কে দেশ থেকে দেশে পালিয়ে বেড়াচ্ছে, ঠিক এমন পরিস্থিতিতে নাস্তিকদের ব্যাপারে উদারপন্থী, কতিপয় নামধারী মুসলিম তাদের পক্ষে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে রাসূল সা. এর সীরাত থেকে মনমত বিভিন্ন খণ্ডিত অংশ ব্যবহার করে ইসলাম ও শাআয়েরে ইসলাম নিয়ে উপহাসকারি, কটুক্তিকারি নাস্তিক-মুরতাদদের একমাত্র শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধানের বিরুদ্ধে নানা বিভ্রান্তিকর অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। যার ফলে সরলমনা অনেক মুসলমান তাদের এসব অপপ্রচারে বিভ্রান্ত হচ্ছে। সম্প্রতি সেইসব অপপ্রচারের মধ্য থেকে একটি লেখা আমাদের দৃষ্টিগোচর হলে সর্বসাধারণ মুসলমানদের ঈমানী সচেতনতার লক্ষ্যে সেইসব বিভ্রান্তি খণ্ডন করে আমরা শরয়ী দলিল-প্রমাণভিত্তিক কিছু জবাব দেয়ার প্রয়াস পাই। নিম্নে পাঠকের উদ্দেশ্যে তা প্রকাশ করা হল। ]
.
বিভ্রান্তি : যেই লোক এক ওয়াক্ত নামাজও ঠিক মতন পড়েনা,
যেই লোক পার্সোনাল কম্পিউটারের একদম
গহীনে কিছু ভিডিও ফাইল গোপন করে রাখে
নির্জনে দেখবে বলে, যে লোক
ইন্টারনেটের চটি পেজগুলোতে নিয়মিত যাতায়াত
করে - সেই লোকই কোন নাস্তিকের নাম
শুনলে কিছু না পড়েই টাকলা ভাষায় লিখবে Nastec ar
pusy cae. যাহা বাংলায় ডিক্রিপ্ট করলে দাঁড়ায়
"নাস্তিকের ফাঁসি চাই।"
.
জবাব : এখানে এমন এক বিশেষ শ্রেণীর মুসলমানের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যাদের মধ্যে মৌলিকভাবে দু'ধরনের অপরাধ পাওয়া যায়। এক. নিয়মিত নামাজ না পড়া। দুই. গোপনে ফাহেশা ও অশ্লীল জিনিষ দেখা। প্রথমোক্ত কারণে লোকটিকে বড়জোর ফাসেক বলা যেতে পারে। কাফের বা মুরতাদ মোটেই না। আর দ্বিতীয় কারণে লোকটিকে ফাসেক বলারও সুযোগ নেই। কারণ লোকটি উল্লেখিত গোনাহের কাজ করছে একান্ত গোপনে, ব্যক্তিগতভাবে। যেকারণে কাউকে ফাসেক হিসেবে অভিহিত করা যায়না। উপরন্তু তার গোপনীয়তার ধরন দেখে আঁচ করা যায়, লোকটির নিজের গোনাহের ব্যাপারে যথেষ্ট লজ্জা, অনুতাপ ও অনুশোচনা আছে। কিন্তু সেই সাথে লোকটির মনের গভীরে ঈমানের অনুভূতি ও চেতনা আছে। আর এমন শ্রেনীর মুসলিমের সংখ্যা খুব বেশী তা নয়। এছাড়াও তার মাঝে কুফরের ব্যাপারে, ইসলামবিদ্বেষের ব্যাপারে প্রচণ্ড ঘৃণাবোধ আছে। যা মূলত একজন মুসলমানের এক মৌলিক বৈশিষ্ট্য।
(এই বিভ্রান্তকারী লেখকের লেখার একটি বৈশিষ্ট্য নাস্তিক-মুরতাদ ও এদের সমর্থকদের লেখার বৈশিষ্ট্যের সাথে স্পষ্ট মিলে যায়| যেমন সে এখানে ব্যঙ্গাত্মক ভাবে লিখেছে "Nastec ar pusy cae". সে লিখতে পারত "nastikder fashi chai". সে এটা না লিখে এখানে জঘন্য ভাষা ব্যবহার করল। যেমননাকি রাজিব ওরফে থাবা বাবার লেখাগুলোতেও এরকম শাব্দিক সামান্য উচ্চারণগত পার্থক্য করে ব্যঙ্গাত্মক ভাবে লিখা পাওয়া যায়। যেমন: আবু বকর (রা কে “আবু বকরি” ইত্যাদি।)
.......
বিভ্রান্তি : বাংলাদেশের একটা বিরাট অংশের মানুষের বিশ্বাস
নাস্তিকদের একটাই শাস্তি, মৃত্যুদন্ড। যে কারনে
যখন কোন নাস্তিককে হত্যা করা হয়, তাঁরা কেউই টু
শব্দটা পর্যন্ত করেননা। এর মানে তাঁরা মনে মনে
এর সমর্থন করেন। এবং কেউ কেউ মুখ ফুটে
বলেও ফেলেন, "আলহামদুলিল্লাহ!"
আমি কারও কারও সাথে এই নিয়ে কথা বলেছি। তাঁরা
আমাকে বোঝানোর চেষ্টা করেন, "যেহেতু
তারা মুসলিম পরিবারে জন্মে নিজ ধর্ম ত্যাগ করে
মুরতাদ হয়েছে - কাজেই তাদের শাস্তি মৃত্যুদন্ড।"
.
জবাব : জ্বি, এটাই মূলত সুপ্ত ঈমানী চেতনা ও ইসলামী স্বভাব-বৈশিষ্ট্যের বহিঃপ্রকাশ। এটাই সঠিক ধর্মবিশ্বাস বা সহীহ আকীদার পরিচায়ক। কারণ এটি এমন এক সুপ্রমাণিত ও অকাট্য আকীদাগত বিধান, যে বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সা. এর সোনালি যুগ থেকে নিয়ে আজ সাড়ে চোদ্দশ' বছর পর পর্যন্ত মুসলিম উম্মাহর উলামাগণের মাঝে কখনোই কোন মতভেদ বা দ্বিমত দেখা যায়নি। যার ফলে কোন মুসলিম এর বিপরীত মত পোষণ করাকে সুস্পষ্ট কুফর ও ঈমান-পরিপন্থী বলে বিশ্বাস করেন। তাই তারা এ ব্যাপারে টু শব্দটি পর্যন্ত করতে রাজি নন। আর ধর্ম ত্যাগের একমাত্র শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হওয়ার ব্যাপারটি তো অন্যান্য ধর্মের মাঝেও লক্ষ্য করা যায়। এমনকি এ বিষয়টি তো আজকাল আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থার মাঝেও বিদ্যমান। তাই রাষ্ট্রের কোন নাগরিক যদি রাষ্ট্রের সংবিধান অমান্য করে বা তা প্রত্যাখ্যান করে তাহলে তার এই আচরণকে রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধ গণ্য করে তাকে রাষ্ট্রদ্রোহী হিসেবে তার জন্য সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করা হয়। তো রাষ্ট্রদ্রোহের শাস্তি হিসেবে যদি মৃত্যুদণ্ড পেতে হয়, তবে আল্লাহর যমীনে আল্লাহ-দ্রোহিতার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড ছাড়া আর কি হতে পারে??
............
বিভ্রান্তি : তাহলে কয়েকটা ঘটনা শুনাই।
উবায়দুল্লাহ ইবনে জাশের নাম শুনেছেন? একদম
প্রথম দিকে ইসলাম গ্রহণ করা গুটি কয়েক মানুষের
একজন তিনি। তার স্ত্রীর নাম রামলা বিন্তে আবু
সুফিয়ান। বিখ্যাত কুরাইশ নেতা আবু সুফিয়ানের
মেয়ে।
মুসলিমদের উপর কুরাইশদের অত্যাচারের পরিমান
বাড়তে থাকলে নবীজি (সঃ) সবাইকে হিজরতের
পরামর্শ দেন। মানে দেশ ত্যাগ করে আবিসিনিয়ায়
চলে যাওয়া।
খুবই কঠিন সিদ্ধান্ত। নিজের বাড়িঘর সব ছেড়ে
একদম শুন্য হাতে ভিন্ন দেশে চলে যেতে
কেমন লাগে সেটা দেশত্যাগী মাত্রই বলতে
পারবেন। উবায়দুল্লাহও তাঁর পরিবার নিয়ে আবিসিনিয়ায়
চলে গেলেন। এবং তার জীবনের সবচেয়ে
বড় ট্র্যাজেডি হচ্ছে, সেখানে গিয়ে তিনি খ্রিষ্টান
হয়ে গেলেন। জ্বী, ইসলামের প্রথম
মুরতাদের নাম উবায়দুল্লাহ ইবনে জাশ। কুইজে
আসতে পারে। জেনে নিন।
তার শাস্তি কী হয়েছিল? কিছুই না। সে নিজের
বিছানায় শুয়ে মরেছিল। কেন? কারন সে কোন
ইসলামী রাষ্ট্রে বাস করতো না। আবিসিনিয়া তখন
একটি খ্রিষ্টান রাষ্ট্র ছিল। এই পয়েন্ট মনে রাখুন,
পরে আবার আসছি।
তুলায়্হা আল আজদির নাম অনেকেই জেনে
থাকতে পারেন। এ এক আচানক ক্যারেক্টার। প্রথম
জীবনে কারও দাওয়াত ছাড়াই ইসলাম গ্রহণ করে
ফেলে। তারপর ভন্ডামি শুরু করে একদিন নিজেই
নিজেকে নবী প্রচার করতে থাকে। একদম
আমাদের বাংলাদেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে
ছিটিয়ে থাকা লাখো পীরের মতন। এরা শুধু
প্রকাশ্যে বলে না যে তারা নবী, কিন্তু অলৌকিক
ক্ষমতার দাবি করে, যা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ওদের এই
ক্যাটাগরিতেই ফেলে।
যাই হোক, কোন পীরেরই মুরিদের অভাব হয়না।
তুলায়্হারও হয়নি। এরা হজরত আবু বকরের বিরুদ্ধে
যুদ্ধ পর্যন্ত করেছিল। এবং যুদ্ধে পরাজিত হয়ে
তুলায়হা পালিয়ে যায়। এবং যে কারনে তাঁকে আচানক
ক্যারেক্টার বললাম তা হচ্ছে পালিয়ে গিয়ে তিনি
আবারও ইসলাম গ্রহণ করেন - এবং ফিরে এসে
উমরাহও করেন। তুলায়হা কিন্তু মুরতাদ হয়েও
ফিরেছেন। তাঁকে "দেখিবামাত্র কোপানো" হয়নি।
ফিরে আসার সুযোগ পর্যন্ত দেয়া হয়েছে।
আনসারদের মধ্যে এক ব্যক্তি একবার মুসলিম হয়ে
গিয়েছিলেন। তারপর তিনি আবারও নিজের ধর্মে
ফেরত যান। কিছুদিন পর আবারও মুসলিম হতে চাইলে
আল্লাহ তাঁর উদ্দেশ্যেই কয়েকটা আয়াত নাজেল
করেন। সুরাহ আল ইমরানের ৮৬ থেকে ৮৯
পর্যন্ত আয়াতগুলো তাঁকে উদ্দেশ্য করেই
নাজেল হওয়া। সংক্ষেপে যার মর্মার্থ হচ্ছে, যে
সত্যের অনুসন্ধান পেয়েও বিপথে চালিত হয় তাঁর
জন্য আর কিই বা করা যেতে পারে! যদি সে ফিরে
না আসে, তবে আখিরাতে আল্লাহ তাঁর জন্য
কঠিনতম শাস্তি রেখেছেন। এবং যদি ফিরে আসে,
তবে অবশ্যই তাঁকে ক্ষমা করা হবে।
আনসার ব্যক্তিটিকে অবশ্যই ক্ষমা করা হয়েছিল ও
মুসলিম ভাই হিসেবে জড়িয়ে ধরা হয়েছিল।
নবীজির (সঃ) সময়ের সাধারন মুরতাদদের কাহিনী
বললাম।
.
জবাব : জ্বি, এটাই ইসলামের বিধান। সাধারণ মুরতাদকে অবশ্যই ফিরে আসার সুযোগ দেয়ার কথা ফিক্বহের কিতাবাদিতে পরিষ্কার লেখা আছে। এ ব্যাপারে তো কারো কোন দ্বিমত নেই। তাকে 'দেখিবামাত্র কোপানো'র কথাও তো কোথাও লেখা নেই। কিন্তু এখানে বোধ হয় শাতিম ( ইসলাম ও শা'আয়েরে ইসলাম নিয়ে কটুক্তিকারি, তাচ্ছিল্যকারি, উপহাসকারি ) মুরতাদের বিধান ও সাধারণ মুরতাদের বিধানকে একাকার করে গুলিয়ে ফেলে পানি ঘোলা করার অপচেষ্টা করা হচ্ছে। আসলে ইসলামের বিধানাবলি বিকৃতকারিরা তাদের জঘন্য অপব্যাখ্যার মাধ্যমে সাধারণ মুসলমানদের বিভ্রান্ত করার হীন উদ্দেশ্যে সবসময় এই ধরনের গোঁজামিল ও পানিঘোলা করার আশ্রয় নিয়ে থাকে। এটা তাদের নতুন কৌশল নয়।
..............
বিভ্রান্তি : এখন প্রশ্ন উঠতে পারে তাহলে মুরতাদদের
মৃত্যুদন্ডের বিধান কোত্থেকে আসলো?
এই প্রশ্ন করার আগে আরেকটু পড়াশোনা
করলেই কিন্তু এই প্রশ্ন মনে আসতো না।
তখনকার সময়ে কুরাইশরা ইসলামবিরোধী যে
কাউকে নিজেদের দলে ভিড়িয়ে মুসলিমদের
ধুলিস্যাত করতে চাইতো। আমরা খন্দকের যুদ্ধে
এটাই দেখতে পাই। পুরো আরব সমাজ একত্র হয়ে
এসেছিল মদিনা গুড়িয়ে দিতে। মদিনার স্ত্রী পুরুষ
শিশু সব মিলিয়ে যত জনসংখ্যা হয়, তার চেয়েও বেশি
ছিল শত্রু সেনার সংখ্যা।
এমন বৈরী অবস্থায় কেউ যদি ইসলাম ত্যাগ করে
শত্রু শিবিরে নাম লেখায়, তার শাস্তি কী হওয়া উচিৎ?
আরেকটু সহজ ব্যাখ্যা করি। মুক্তিযুদ্ধের সময়ে
পাক হানাদার বাহিনী শিকারী কুকুরের মতন আমাদের
মারতে শুরু করলো। স্বাধীন বাংলা বেতার থেকে
বিশ্ববাসীর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা হলো। এবং
দেশবাসীর কাছে আহ্বান জানানো হলো
"মরিচের গুড়া নিয়ে হলেও যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ুন।"
এই অবস্থায় কিছু বাঙালি তাদের বাঙালিত্ব ত্যাগ করে
হানাদারদের দলে নাম লেখালো। আবার
একদলতো খোদ হানাদার সেনা হয়েই স্বজাতিকে
হত্যা করলো। আপনারা ফ্রিডম অফ চয়েজ বলতে
পারেন। এবং এর ফল আমরা দেখেছি। কেউ
মন্ত্রী হয়েছে, কেউ শিল্পপতি। ইসলাম এই ভুল
করেনা। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সময় থাকতেই
করতে হয়, এইটা ইসলামের বিধান।
.
জবাব : এই অংশটুকুর ব্যাপারে কোন দ্বিমত নেই। কিন্তু এরপরের অংশেই একটি মারাত্মক বিভ্রান্তি ছড়ানোর অপচেষ্টা করা হয়েছে।
.
বিভ্রান্তি : যাই হোক, এখন আমাদের কোন যুদ্ধ চলছে না।
কাজেই কারও (কোন মুরতাদের) শত্রু সেনায় নাম
লেখানোর প্রশ্নই উঠেনা।
.
জবাব : "এখন আমাদের কোন যুদ্ধ চলছেনা, কাজেই কারো শত্রুসেনায় নাম লেখানোর প্রশ্নই আসেনা" একথাটাই হল তাদের সকল উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার ও চক্রান্তমূলক প্রোপাগান্ডার গোড়ার কথা। মূলত এ কথা বলেই তারা বর্তমানে সারা বিশ্বব্যাপী মুসলিমদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক কাফের-মুশরিক চক্রের পরিচালিত সর্বাত্মক, সর্বব্যাপী যুদ্ধকে আড়াল করতে চায়। যা বিভিন্ন কলাকৌশলে শত-সহস্রবার আড়াল করার চেষ্টা করেও কোনভাবে তা আড়াল করা যায়নি। তাদের এ সকল ব্যর্থ চেষ্টার অন্যতম হল, সারা বিশ্বের মুসলমানদের মনমানসিকতায় তথাকথিত জাতীয়তাবাদী চেতনার নামে আধুনিক জাতিরাষ্ট্রের ধারনা বদ্ধমূল করে দেয়া। যার দাবি হল, কাফেরদের এঁকে দেয়া মানচিত্রে সীমাবদ্ধ নিজের দেশ ছাড়া বিশ্বের যেকোনো দেশের, যেকোনো অঞ্চলের এমনকি পার্শ্ববর্তী মুসলিম দেশের মুসলমানরাও যদি তাদের ঈমান-ইসলামের কারণে কোন কুফরি শক্তির জুলুম-শোষণ এবং নিপীড়ন-নিষ্পেষণের স্বীকার হয় তাহলে ইসলামী ভ্রাতৃত্ববোধের দাবিতে পাশ্বের দেশের হয়েও তাদের সহায়তায় কোনরকম সামরিক হস্তক্ষেপ করতে পারবেনা। যেহেতু তারা তাদের স্বদেশের নয়! যদিও পৃথিবীর অন্যান্য কুফরি ধর্মাবলম্বীরা আন্তর্জাতিকভাবে নিজেদের ব্যাপারে সম্পূর্ণ বিপরীত আচরণ করে। আসলে এ জাতীয় দাবি করে তারা আমাদের একথা ভুলিয়ে দিতে চায় যে, ইসলাম আদৌ কখনো এ জাতীয় জাহেলী জাতীয়তাবাদী জাতিরাষ্ট্রের ধারনাকে স্বীকার করেনা। সমর্থন করেনা। বরং ইসলামের দৃষ্টিতে সারা দুনিয়ার সমস্ত মুসলমান -চাই আরব হোক বা অনারব, শ্বেতাঙ্গ হোক বা কৃষ্ণাঙ্গ- সবাই এক জাতিভুক্ত। এক দলভুক্ত। সুতরাং পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তের যেকোনো অঞ্চলের মুসলমানদের উপর কাফেরদের যেকোনো ধরনের আক্রমণ-আগ্রাসনের অর্থই হল, একযোগে সমগ্র বিশ্বের মুসলমানদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য যুদ্ধ ঘোষণা করা।
আজ সারা মুসলিমবিশ্বে যেহেতু আন্তর্জাতিক কুফরি শক্তির সর্বাত্মক দখলদারিত্ব চলছে, যে দখলদারিত্ব কখনো প্রত্যক্ষভাবে আবার কখনো নিজেদের ভারাটে দালালদের মাধ্যমে পরোক্ষভাবে পরিচালিত হচ্ছে, কোথাও অর্থনৈতিক, কোথাও রাজনৈতিক, কোথাও শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক আবার কোথাও সরাসরি সামরিক আগ্রাসন চলছে তাই নির্দ্বিধায় একথা বলা যায় যে, বর্তমানে আন্তর্জাতিকভাবে মুসলমানরা তাদের বিরুদ্ধে বিশ্ব কুফফারগোষ্ঠীর পরিচালিত এক চলমান যুদ্ধের মুকাবেলা করে চলছে। কাজেই এহেন পরিস্থিতিতে এমন কথা বলা বড়ই হাস্যকর বরং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত যে, "এখন আমাদের কোন যুদ্ধ চলছেনা"। আর যুদ্ধ যখন চলছেই সুতরাং ঘরের লোক শত্রুসেনায় নাম লেখানোর প্রক্রিয়াও চলছে। আমরা বরাবরই দেখে আসছি, কোন মুসলিম দেশে যখনই কেউ ইসলাম ত্যাগ করে মুরতাদ হয়ে ইসলাম ও শাআয়েরে ইসলামের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়, লেখালেখি ও বক্তব্যের মাধ্যমে ইসলাম নিয়ে নানা কটুক্তি ও উপহাস করে দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের ক্ষেপিয়ে তুলে, ঠিক তখনই তার নিরাপত্তা দেয়ার নামে কোন কাফের রাষ্ট্র তাকে নিজ দেশের ভিসা দিয়ে নাগরিক হিসেবে বরণ করে নেয়। এবার সে ওই কাফের রাষ্ট্রে অবস্থান করে নিশ্চিন্তে, নির্বিঘ্নে সেখানে বসে বসে আরো উৎসাহে ইসলাম নিয়ে জঘন্য অপপ্রচার চালিয়ে যেতে থাকে। এটা কি প্রকাশ্যে শত্রুসেনায় নাম লেখানোর নামান্তর নয়??
.............
বিভ্রান্তি : বাংলাদেশ কোন ইসলামপ্রজাতন্ত্রী রাষ্ট্র নয়।
আমাদের প্রধানমন্ত্রী ইসলামী বিশ্বের খলিফাও
নন। কাজেই কোন কন্ডিশনই এপ্লাইড হচ্ছেনা।
.
জবাব : আসলে এক্ষেত্রে এই ধরনের কথা ও যুক্তি তুলে ধরাটাও ওই জাহেলী জাতীয়তাবাদী চেতনা-প্রসূত জাতিরাষ্ট্রের ধারনা থেকে এসেছে। কারণ এক সময় সারা পৃথিবীর মুসলিমদের কেন্দ্রীয় খেলাফতের অধীনে এক সূতোয় গাঁথা মুসলিম অধ্যুষিত সুবিশাল ভূখণ্ডকে কাফেরদের কর্তৃক ষড়যন্ত্রমূলকভাবে একে একে সাতান্নটা টুকরো করার পর এখন সেই কাফেরদেরই এঁকে দেয়া ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মানচিত্র হাতে ধরিয়ে দিয়ে প্রত্যেকটি ভূখণ্ডের ব্যাপারে এ কথা বলা যে, "এটা কোন ইসলামপ্রজাতন্ত্রী রাষ্ট্র নয়, এখানের রাষ্ট্রপ্রধান ইসলামী বিশ্বের খলীফাও নন, অতএব এখানে ইসলামী কোন দণ্ডবিধি কার্যকর করা চলবেনা।" এসব নিছক ইসলাম-পরিপন্থী নিকৃষ্ট জাতীয়তাবাদী চেতনার বহিঃপ্রকাশ। তাছাড়া এতাদঞ্চলের অধিবাসী হিসেবে আমরা যে ভূখণ্ডে বসবাস করছি, এখানে কোন শরয়ী দণ্ডবিধি কার্যকর করতে হলে যে ঠিক এ অঞ্চল, এ ভূখণ্ড পরিপূর্ণ ইসলামী শরীয়াহর শাসনাধীন হতে হবে এমনটাও জরুরী নয়। কারণ মুসলিমরা পৃথিবীর যে ভূখণ্ডেই বসবাস করুক, সেখানেই তারা পূর্ণ ইসলামী শরীয়াহর অনুশাসন অনুযায়ী চলতে বাধ্য। হ্যাঁ, দরকার হল এ প্রশাসনিক ও বিচারিক কার্যক্রম সমূহ সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার স্বার্থে মুসলমানদের একজন আমীর বা শাসনকর্তার এবং সেই অঞ্চলে তার প্রতিনিধি নিযুক্ত থাকার। ব্যস, এতটুকু হলেই যথেষ্ট।
উল্লেখ্য, শরীয়াহ আইন ব্যতীত অন্য যেকোনো আইন কুফর। সুতরাং সেই কুফরি আইন অনুযায়ী বিচার করা, শাসনকার্য পরিচালনা করাও কুফর এবং জেনেবুঝে স্বেচ্ছায় সেই আইন ও শাসনের আনুগত্য করা কুফর। তাই কুফরি আইন শাসিত কোন ভূখণ্ডে বসবাসকারী মুসলমানদের জন্য কখনোই সেই আইন ও সে আইনের শাসকের আনুগত্য করা জায়েয নয়। ইসলামে এর কোনই সুযোগ নেই। অতএব, এক্ষেত্রে এমন ভূখণ্ডের মুসলমানগণ সে অঞ্চলের কুফরি আইনের শাসকের বিধিনিষেধের পরোয়া করতে বাধ্য নন। কারণ আল্লাহ বলেন- "আল্লাহ কিছুতেই মুমিনদের উপর কাফেরদের কোন কর্তৃত্বের অধিকার দেন নি।"
..........
বিভ্রান্তি : উবায়দুল্লাহ ইবনে জাশের মতন ওকেও শাস্তি দেয়া
যাবেনা। এইটা মুহাম্মদ (সঃ) এর শিক্ষা।
.
জবাব : এর বিস্তারিত জবাব পূর্বে আলোচনা করা হয়েছে।
..........
বিভ্রান্তি : আরেকটা ঘটনা দিয়ে শেষ করি। নবীজির (সঃ)
জীবনী আলোচনা করতে আমার দারুন লাগে।
কত কিছু যে শিখার আছে।
ফাজিল পোলাপান তাঁর আমলেও ছিল, এবং আরও
বেশিই ছিল। তাঁকে জ্বালানোর জন্য একদিন তাঁর
বাড়িতে গিয়ে ওরা বলল, "আসসামু আলাইকুম।"
আমার আরবি জ্ঞান শুন্য, তবু এর মানে হচ্ছে
"তোমার মৃত্যু ঘটুক" অথবা এইরকমই কিছু।
নবীজির (সঃ) সাথে তাঁর স্ত্রী হজরত আয়েশা (রাঃ)
ছিলেন। তিনি নিজের রাগ ধরে রাখতে না পেরে
বললেন, "তোরা আর তোদের গুষ্ঠী ধ্বংস
হোক।"
নবীজি নিজের স্ত্রীকে শান্ত করলেন। সহজ
ভাষায় বললে তিনি বলেছেন, "রিল্যাক্স আয়েশা।
চিন্তিত হবার কিছু নেই। টেক ইট ইজি।"
তারপর তিনি উত্তরে বললেন, "ওয়ালাইকুম।"
মানে তোমাদের উপরেও। সহজ ভাষায় প্রতিবাদ।
তুমি আমাকে গালি দিচ্ছ? যা দিচ্ছ সেটাই তোমাকে
ফিরিয়ে দিলাম, এবং নিজেও মুখ পর্যন্ত খারাপ করলাম
না।
ফিলদি কথাবার্তা লিখে কেউ অ্যাটেনশন পাবার চেষ্টা
করছে? প্রথম কথা, আপনি পড়বেন না। এবং যদি
পড়েও ফেলেন, মনে মনে শুধু বলুন, ওয়ালাইকুম,
অ্যান্ড মুভ অন। রিল্যাক্স। চিল।
যদি নবীজিকে (সঃ) গালাগালি করার শাস্তি হিসেবে
কাউকে হত্যার বিধান তিনি দিতে চাইতেন একবার শুধু
আওয়াজ দিলেই উমার (রাঃ), আলী (রাঃ), খালিদ ইবনে
ওয়ালিদ (রাঃ), সা'দ ইবনে আবু ওয়াক্কাস(রাঃ) ছুটে
আসতেন। তাঁদের সামনে দাঁড়াবার ক্ষমতা কখনই
কারও ছিল না।
জবাব : উল্লেখিত ঘটনার মাধ্যমে অপব্যাখ্যাকারি যে বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করেছে তা হল, সে গালমন্দ- কটুক্তি ও বদদোয়াকে একাকার করে ফেলার ব্যর্থ চেষ্টা করেছে। অথচ আমরা এ কথা সহজেই বুঝি যে, গালমন্দ, ঠাট্টা-বিদ্রুপ ও বদদোয়ার হুকুম কখনো এক নয়। তাও এখানে আমরা দেখতে পাচ্ছি, ইহুদী লোকটা সরাসরি নয় বরং খুব কৌশলে সালামের ছলে নবীজিকে বদদোয়া করেছে। নবীজি সা.ও কৌশলে তার প্রত্যুত্তর দিয়ে দিয়েছেন। এখানে এতটুকুই যথেষ্ট ছিল। আর বদদোয়ার ব্যাপারে হাদীসে বলা হয়েছে- যার বিরুদ্ধে বদদোয়া করা হয়, সে যদি এর উপযুক্ত না হয়ে থাকে তাহলে বদদোয়ার কুফল স্বয়ং বদদোয়াকারির উপরই আপতিত হয়।
........
বিভ্রান্তি : এখন নবীজির শিক্ষা জানতে হলে কী করতে
হবে? পড়াশোনা করতে হবে।
.
জবাব : জ্বি, নবীজী সা. এর শিক্ষার ব্যাপারে দিনরাত ব্যাপক পড়াশোনা করেই আমরা যা জানতে পেরেছি তার কিঞ্চিৎ পেশ করা হল-
হযরত আলী রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন- যে ব্যক্তি নবীকে গালি দেয়, তাকে হত্যা কর। আর যে সাহাবীকে গালি দেয়, তাকে প্রহার কর। {জামেউল আহাদীস, হাদীস নং-২২৩৬৬, জমউল জাওয়ামে, হাদীস নং-৫০৯৭, দায়লামী, ৩/৫৪১, হাদীস নং-৫৬৮৮, আস সারেমুল মাসলূল-৯২}
হযরত আয়শা রাঃ থেকে বর্ণিত। ওহুদ যুদ্ধে এক মহিলা মুরতাদ হয়ে যায়, তখন রাসূল সাঃ ইরশাদ করেন, তাকে তওবা করানো হোক, আর যদি তওবা না করে, তাহলে তাকে হত্যা করা হবে। {সুনানে দারা কুতনী, হাদীস নং-১২১, সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-১৬৬৪৫, মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাদীস নং-১৮৭২৫, মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-২৯৬০৭}
হযরত ইকরিমা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত আলী রাঃ এর কাছে ধর্মত্যাগীদের উপস্থিত করা হল, তখন তিনি তাদের পুড়িয়ে ফেললেন, এ সংবাদ হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ এর কাছে পৌঁছল, তখন তিনি বললেন, যদি আমি হতাম, তাহলে আমি তাদের পুড়িয়ে ফেলতাম না রাসূল সাঃ এর এ নিষেধাজ্ঞা কারণে যে, “তোমরা আল্লাহর শাস্তি দিয়ে শাস্তি দিওনা”। বরং আমি তাদের হত্যা করতাম। কারণ আল্লাহর নবী সাঃ বলেছেন-“যে ব্যক্তি ধর্ম পাল্টায় তাকে হত্যা কর”। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৬৫২১, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৫৬০৬, সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৪৩৫৩}
হযরত আনাস রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ যখন মক্কা বিজয়ের বছর মক্কায় প্রবেশ করেন,তখন রাসূল সাঃ এর মাথায় ছিল শিরস্ত্রাণ। তিনি মাথা থেকে তা খুললেন। সেসময় একজন এসে বললেন যে, ইবনে খাতাল কাবার গিলাফ ধরে বসে আছে। রাসূল সাঃ বললেন-তাকে হত্যা কর। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-১৭৪৯}
ইবনে খাতালকে কেন কাবার গিলাফ ধরা অবস্থায়ও রাসূল সাঃ হত্যার নির্দেশ দিলেন? আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী রহঃ বুখারীর ব্যাখ্যাগ্রন্থ ফাতহুল বারীতে বিস্তারিত ঘটনা উল্লেখ করে বলেন যে, লোকটি রাসূল সাঃ কে গালাগাল করত। {ফাতহুল বারী-২/২৪৮,আস সারেমুল মাসলূল-১৩৫}
হযরত বারা ইবনে আজেব রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাঃ একদা আব্দুল্লাহ বিন আতিক রাঃ কে আমীর বানিয়ে আবু রাফে ইহুদীকে হত্যা করতে পাঠালেন। আবু রাফে রাসূল সাঃ কে কষ্ট দিত এবং অন্যদের কষ্ট দিতে সাহায্য করত। আব্দুল্লাহ বিন আতিক বলেন, আমি তাকে প্রচন্ড আঘাত করলাম। কিন্তু হত্যা করতে পারিনি, তারপর তরবারীর ধারালো ডগা তার পেটে ঢুকিয়ে দিলাম এমনকি তা তার পিঠ ফুরে বেরিয়ে যায়। তখন আমি বুঝলাম যে, আমি তাকে হত্যা করতে সক্ষম হয়েছি। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৩৮১৩}
এ হাদীস দ্বারা বুঝা যায় যে, কতিপয় লোক একাজে নিয়োগ রাখা দরকার। যারা রাসূল সাঃ কে যারাই গালাগাল করবে, অশ্লিল মন্তব্য করবে তাদের হত্যা করবে।
......
বিভ্রান্তি : দুই চার পাতা আম পারা
সিপারা পড়ে Nastec ar pusy cae মার্কা মুসলিম হলে
আপনার নিজেরতো ক্ষতি হবেই, সমাজেরও কী
ক্ষতি হবে সেটা আমরা সবাই দেখতে পাচ্ছি।"
.
জবাব : সমাজের ক্ষতি নয়, বরং উপকারিতার ব্যাপারে আমরা ইতিমধ্যে যা জানতে পেরেছি তার কিছু উল্লেখ করা গেল-
নিউইয়র্ক টাইমসের রিপোর্টে কাউন্টার টেরোরিজম চীফ মনিরুল ইসলাম বাংলাদেশে বেশ কয়েকজন ইসলামবিদ্বেষী নাস্তিক ব্লগার হত্যার ঘটনাপ্রবাহের প্রতিক্রিয়া বিশ্লেষণে বলেন— "তারা ( জঙ্গিরা) সতর্কতার সাথে তাদের টার্গেট নির্ধারনের চেষ্টা করেছে যাতে করে জনসমর্থন আদায় করা যায়। এবং তারা এতে সফলও হয়েছে। ধর্মনিরপেক্ষতাকে জনসাধারনের চোখে প্রশ্নবিদ্ধ করার ক্ষেত্রে তারা বিস্ময়কর সফলতা অর্জন করেছে। (৩বার পড়ুন) সাধারনভাবে অধিকাংশ মানুষ এখন মনে করছে জঙ্গিরা ঠিক কাজই করেছে। এবং ব্লগার, সমকামী এবং অন্যান্য ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীদের হত্যা করা অযৌক্তিক কিছু না। এছাড়া তারা সেক্যুলার সরকারকে রক্ষণাত্বক অবস্থায় ফেলে দিয়েছে।"
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক শান্তি ও সঙ্ঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের নির্বাহী পরিচালক আবদুর রশীদ বলেন– "জঙ্গিদের কারণে দেশের রাজনীতি ধর্মনিরপেক্ষ বনাম ইসলামপন্থীতে পরিণত হয়েছে।"
.
বিভ্রান্তি : যেই লোক এক ওয়াক্ত নামাজও ঠিক মতন পড়েনা,
যেই লোক পার্সোনাল কম্পিউটারের একদম
গহীনে কিছু ভিডিও ফাইল গোপন করে রাখে
নির্জনে দেখবে বলে, যে লোক
ইন্টারনেটের চটি পেজগুলোতে নিয়মিত যাতায়াত
করে - সেই লোকই কোন নাস্তিকের নাম
শুনলে কিছু না পড়েই টাকলা ভাষায় লিখবে Nastec ar
pusy cae. যাহা বাংলায় ডিক্রিপ্ট করলে দাঁড়ায়
"নাস্তিকের ফাঁসি চাই।"
.
জবাব : এখানে এমন এক বিশেষ শ্রেণীর মুসলমানের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, যাদের মধ্যে মৌলিকভাবে দু'ধরনের অপরাধ পাওয়া যায়। এক. নিয়মিত নামাজ না পড়া। দুই. গোপনে ফাহেশা ও অশ্লীল জিনিষ দেখা। প্রথমোক্ত কারণে লোকটিকে বড়জোর ফাসেক বলা যেতে পারে। কাফের বা মুরতাদ মোটেই না। আর দ্বিতীয় কারণে লোকটিকে ফাসেক বলারও সুযোগ নেই। কারণ লোকটি উল্লেখিত গোনাহের কাজ করছে একান্ত গোপনে, ব্যক্তিগতভাবে। যেকারণে কাউকে ফাসেক হিসেবে অভিহিত করা যায়না। উপরন্তু তার গোপনীয়তার ধরন দেখে আঁচ করা যায়, লোকটির নিজের গোনাহের ব্যাপারে যথেষ্ট লজ্জা, অনুতাপ ও অনুশোচনা আছে। কিন্তু সেই সাথে লোকটির মনের গভীরে ঈমানের অনুভূতি ও চেতনা আছে। আর এমন শ্রেনীর মুসলিমের সংখ্যা খুব বেশী তা নয়। এছাড়াও তার মাঝে কুফরের ব্যাপারে, ইসলামবিদ্বেষের ব্যাপারে প্রচণ্ড ঘৃণাবোধ আছে। যা মূলত একজন মুসলমানের এক মৌলিক বৈশিষ্ট্য।
(এই বিভ্রান্তকারী লেখকের লেখার একটি বৈশিষ্ট্য নাস্তিক-মুরতাদ ও এদের সমর্থকদের লেখার বৈশিষ্ট্যের সাথে স্পষ্ট মিলে যায়| যেমন সে এখানে ব্যঙ্গাত্মক ভাবে লিখেছে "Nastec ar pusy cae". সে লিখতে পারত "nastikder fashi chai". সে এটা না লিখে এখানে জঘন্য ভাষা ব্যবহার করল। যেমননাকি রাজিব ওরফে থাবা বাবার লেখাগুলোতেও এরকম শাব্দিক সামান্য উচ্চারণগত পার্থক্য করে ব্যঙ্গাত্মক ভাবে লিখা পাওয়া যায়। যেমন: আবু বকর (রা কে “আবু বকরি” ইত্যাদি।)
.......
বিভ্রান্তি : বাংলাদেশের একটা বিরাট অংশের মানুষের বিশ্বাস
নাস্তিকদের একটাই শাস্তি, মৃত্যুদন্ড। যে কারনে
যখন কোন নাস্তিককে হত্যা করা হয়, তাঁরা কেউই টু
শব্দটা পর্যন্ত করেননা। এর মানে তাঁরা মনে মনে
এর সমর্থন করেন। এবং কেউ কেউ মুখ ফুটে
বলেও ফেলেন, "আলহামদুলিল্লাহ!"
আমি কারও কারও সাথে এই নিয়ে কথা বলেছি। তাঁরা
আমাকে বোঝানোর চেষ্টা করেন, "যেহেতু
তারা মুসলিম পরিবারে জন্মে নিজ ধর্ম ত্যাগ করে
মুরতাদ হয়েছে - কাজেই তাদের শাস্তি মৃত্যুদন্ড।"
.
জবাব : জ্বি, এটাই মূলত সুপ্ত ঈমানী চেতনা ও ইসলামী স্বভাব-বৈশিষ্ট্যের বহিঃপ্রকাশ। এটাই সঠিক ধর্মবিশ্বাস বা সহীহ আকীদার পরিচায়ক। কারণ এটি এমন এক সুপ্রমাণিত ও অকাট্য আকীদাগত বিধান, যে বিষয়ে রাসূলুল্লাহ সা. এর সোনালি যুগ থেকে নিয়ে আজ সাড়ে চোদ্দশ' বছর পর পর্যন্ত মুসলিম উম্মাহর উলামাগণের মাঝে কখনোই কোন মতভেদ বা দ্বিমত দেখা যায়নি। যার ফলে কোন মুসলিম এর বিপরীত মত পোষণ করাকে সুস্পষ্ট কুফর ও ঈমান-পরিপন্থী বলে বিশ্বাস করেন। তাই তারা এ ব্যাপারে টু শব্দটি পর্যন্ত করতে রাজি নন। আর ধর্ম ত্যাগের একমাত্র শাস্তি মৃত্যুদণ্ড হওয়ার ব্যাপারটি তো অন্যান্য ধর্মের মাঝেও লক্ষ্য করা যায়। এমনকি এ বিষয়টি তো আজকাল আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থার মাঝেও বিদ্যমান। তাই রাষ্ট্রের কোন নাগরিক যদি রাষ্ট্রের সংবিধান অমান্য করে বা তা প্রত্যাখ্যান করে তাহলে তার এই আচরণকে রাষ্ট্রদ্রোহের অপরাধ গণ্য করে তাকে রাষ্ট্রদ্রোহী হিসেবে তার জন্য সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করা হয়। তো রাষ্ট্রদ্রোহের শাস্তি হিসেবে যদি মৃত্যুদণ্ড পেতে হয়, তবে আল্লাহর যমীনে আল্লাহ-দ্রোহিতার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড ছাড়া আর কি হতে পারে??
............
বিভ্রান্তি : তাহলে কয়েকটা ঘটনা শুনাই।
উবায়দুল্লাহ ইবনে জাশের নাম শুনেছেন? একদম
প্রথম দিকে ইসলাম গ্রহণ করা গুটি কয়েক মানুষের
একজন তিনি। তার স্ত্রীর নাম রামলা বিন্তে আবু
সুফিয়ান। বিখ্যাত কুরাইশ নেতা আবু সুফিয়ানের
মেয়ে।
মুসলিমদের উপর কুরাইশদের অত্যাচারের পরিমান
বাড়তে থাকলে নবীজি (সঃ) সবাইকে হিজরতের
পরামর্শ দেন। মানে দেশ ত্যাগ করে আবিসিনিয়ায়
চলে যাওয়া।
খুবই কঠিন সিদ্ধান্ত। নিজের বাড়িঘর সব ছেড়ে
একদম শুন্য হাতে ভিন্ন দেশে চলে যেতে
কেমন লাগে সেটা দেশত্যাগী মাত্রই বলতে
পারবেন। উবায়দুল্লাহও তাঁর পরিবার নিয়ে আবিসিনিয়ায়
চলে গেলেন। এবং তার জীবনের সবচেয়ে
বড় ট্র্যাজেডি হচ্ছে, সেখানে গিয়ে তিনি খ্রিষ্টান
হয়ে গেলেন। জ্বী, ইসলামের প্রথম
মুরতাদের নাম উবায়দুল্লাহ ইবনে জাশ। কুইজে
আসতে পারে। জেনে নিন।
তার শাস্তি কী হয়েছিল? কিছুই না। সে নিজের
বিছানায় শুয়ে মরেছিল। কেন? কারন সে কোন
ইসলামী রাষ্ট্রে বাস করতো না। আবিসিনিয়া তখন
একটি খ্রিষ্টান রাষ্ট্র ছিল। এই পয়েন্ট মনে রাখুন,
পরে আবার আসছি।
তুলায়্হা আল আজদির নাম অনেকেই জেনে
থাকতে পারেন। এ এক আচানক ক্যারেক্টার। প্রথম
জীবনে কারও দাওয়াত ছাড়াই ইসলাম গ্রহণ করে
ফেলে। তারপর ভন্ডামি শুরু করে একদিন নিজেই
নিজেকে নবী প্রচার করতে থাকে। একদম
আমাদের বাংলাদেশের আনাচে কানাচে ছড়িয়ে
ছিটিয়ে থাকা লাখো পীরের মতন। এরা শুধু
প্রকাশ্যে বলে না যে তারা নবী, কিন্তু অলৌকিক
ক্ষমতার দাবি করে, যা ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ওদের এই
ক্যাটাগরিতেই ফেলে।
যাই হোক, কোন পীরেরই মুরিদের অভাব হয়না।
তুলায়্হারও হয়নি। এরা হজরত আবু বকরের বিরুদ্ধে
যুদ্ধ পর্যন্ত করেছিল। এবং যুদ্ধে পরাজিত হয়ে
তুলায়হা পালিয়ে যায়। এবং যে কারনে তাঁকে আচানক
ক্যারেক্টার বললাম তা হচ্ছে পালিয়ে গিয়ে তিনি
আবারও ইসলাম গ্রহণ করেন - এবং ফিরে এসে
উমরাহও করেন। তুলায়হা কিন্তু মুরতাদ হয়েও
ফিরেছেন। তাঁকে "দেখিবামাত্র কোপানো" হয়নি।
ফিরে আসার সুযোগ পর্যন্ত দেয়া হয়েছে।
আনসারদের মধ্যে এক ব্যক্তি একবার মুসলিম হয়ে
গিয়েছিলেন। তারপর তিনি আবারও নিজের ধর্মে
ফেরত যান। কিছুদিন পর আবারও মুসলিম হতে চাইলে
আল্লাহ তাঁর উদ্দেশ্যেই কয়েকটা আয়াত নাজেল
করেন। সুরাহ আল ইমরানের ৮৬ থেকে ৮৯
পর্যন্ত আয়াতগুলো তাঁকে উদ্দেশ্য করেই
নাজেল হওয়া। সংক্ষেপে যার মর্মার্থ হচ্ছে, যে
সত্যের অনুসন্ধান পেয়েও বিপথে চালিত হয় তাঁর
জন্য আর কিই বা করা যেতে পারে! যদি সে ফিরে
না আসে, তবে আখিরাতে আল্লাহ তাঁর জন্য
কঠিনতম শাস্তি রেখেছেন। এবং যদি ফিরে আসে,
তবে অবশ্যই তাঁকে ক্ষমা করা হবে।
আনসার ব্যক্তিটিকে অবশ্যই ক্ষমা করা হয়েছিল ও
মুসলিম ভাই হিসেবে জড়িয়ে ধরা হয়েছিল।
নবীজির (সঃ) সময়ের সাধারন মুরতাদদের কাহিনী
বললাম।
.
জবাব : জ্বি, এটাই ইসলামের বিধান। সাধারণ মুরতাদকে অবশ্যই ফিরে আসার সুযোগ দেয়ার কথা ফিক্বহের কিতাবাদিতে পরিষ্কার লেখা আছে। এ ব্যাপারে তো কারো কোন দ্বিমত নেই। তাকে 'দেখিবামাত্র কোপানো'র কথাও তো কোথাও লেখা নেই। কিন্তু এখানে বোধ হয় শাতিম ( ইসলাম ও শা'আয়েরে ইসলাম নিয়ে কটুক্তিকারি, তাচ্ছিল্যকারি, উপহাসকারি ) মুরতাদের বিধান ও সাধারণ মুরতাদের বিধানকে একাকার করে গুলিয়ে ফেলে পানি ঘোলা করার অপচেষ্টা করা হচ্ছে। আসলে ইসলামের বিধানাবলি বিকৃতকারিরা তাদের জঘন্য অপব্যাখ্যার মাধ্যমে সাধারণ মুসলমানদের বিভ্রান্ত করার হীন উদ্দেশ্যে সবসময় এই ধরনের গোঁজামিল ও পানিঘোলা করার আশ্রয় নিয়ে থাকে। এটা তাদের নতুন কৌশল নয়।
..............
বিভ্রান্তি : এখন প্রশ্ন উঠতে পারে তাহলে মুরতাদদের
মৃত্যুদন্ডের বিধান কোত্থেকে আসলো?
এই প্রশ্ন করার আগে আরেকটু পড়াশোনা
করলেই কিন্তু এই প্রশ্ন মনে আসতো না।
তখনকার সময়ে কুরাইশরা ইসলামবিরোধী যে
কাউকে নিজেদের দলে ভিড়িয়ে মুসলিমদের
ধুলিস্যাত করতে চাইতো। আমরা খন্দকের যুদ্ধে
এটাই দেখতে পাই। পুরো আরব সমাজ একত্র হয়ে
এসেছিল মদিনা গুড়িয়ে দিতে। মদিনার স্ত্রী পুরুষ
শিশু সব মিলিয়ে যত জনসংখ্যা হয়, তার চেয়েও বেশি
ছিল শত্রু সেনার সংখ্যা।
এমন বৈরী অবস্থায় কেউ যদি ইসলাম ত্যাগ করে
শত্রু শিবিরে নাম লেখায়, তার শাস্তি কী হওয়া উচিৎ?
আরেকটু সহজ ব্যাখ্যা করি। মুক্তিযুদ্ধের সময়ে
পাক হানাদার বাহিনী শিকারী কুকুরের মতন আমাদের
মারতে শুরু করলো। স্বাধীন বাংলা বেতার থেকে
বিশ্ববাসীর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করা হলো। এবং
দেশবাসীর কাছে আহ্বান জানানো হলো
"মরিচের গুড়া নিয়ে হলেও যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ুন।"
এই অবস্থায় কিছু বাঙালি তাদের বাঙালিত্ব ত্যাগ করে
হানাদারদের দলে নাম লেখালো। আবার
একদলতো খোদ হানাদার সেনা হয়েই স্বজাতিকে
হত্যা করলো। আপনারা ফ্রিডম অফ চয়েজ বলতে
পারেন। এবং এর ফল আমরা দেখেছি। কেউ
মন্ত্রী হয়েছে, কেউ শিল্পপতি। ইসলাম এই ভুল
করেনা। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার সময় থাকতেই
করতে হয়, এইটা ইসলামের বিধান।
.
জবাব : এই অংশটুকুর ব্যাপারে কোন দ্বিমত নেই। কিন্তু এরপরের অংশেই একটি মারাত্মক বিভ্রান্তি ছড়ানোর অপচেষ্টা করা হয়েছে।
.
বিভ্রান্তি : যাই হোক, এখন আমাদের কোন যুদ্ধ চলছে না।
কাজেই কারও (কোন মুরতাদের) শত্রু সেনায় নাম
লেখানোর প্রশ্নই উঠেনা।
.
জবাব : "এখন আমাদের কোন যুদ্ধ চলছেনা, কাজেই কারো শত্রুসেনায় নাম লেখানোর প্রশ্নই আসেনা" একথাটাই হল তাদের সকল উদ্দেশ্যপ্রণোদিত অপপ্রচার ও চক্রান্তমূলক প্রোপাগান্ডার গোড়ার কথা। মূলত এ কথা বলেই তারা বর্তমানে সারা বিশ্বব্যাপী মুসলিমদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক কাফের-মুশরিক চক্রের পরিচালিত সর্বাত্মক, সর্বব্যাপী যুদ্ধকে আড়াল করতে চায়। যা বিভিন্ন কলাকৌশলে শত-সহস্রবার আড়াল করার চেষ্টা করেও কোনভাবে তা আড়াল করা যায়নি। তাদের এ সকল ব্যর্থ চেষ্টার অন্যতম হল, সারা বিশ্বের মুসলমানদের মনমানসিকতায় তথাকথিত জাতীয়তাবাদী চেতনার নামে আধুনিক জাতিরাষ্ট্রের ধারনা বদ্ধমূল করে দেয়া। যার দাবি হল, কাফেরদের এঁকে দেয়া মানচিত্রে সীমাবদ্ধ নিজের দেশ ছাড়া বিশ্বের যেকোনো দেশের, যেকোনো অঞ্চলের এমনকি পার্শ্ববর্তী মুসলিম দেশের মুসলমানরাও যদি তাদের ঈমান-ইসলামের কারণে কোন কুফরি শক্তির জুলুম-শোষণ এবং নিপীড়ন-নিষ্পেষণের স্বীকার হয় তাহলে ইসলামী ভ্রাতৃত্ববোধের দাবিতে পাশ্বের দেশের হয়েও তাদের সহায়তায় কোনরকম সামরিক হস্তক্ষেপ করতে পারবেনা। যেহেতু তারা তাদের স্বদেশের নয়! যদিও পৃথিবীর অন্যান্য কুফরি ধর্মাবলম্বীরা আন্তর্জাতিকভাবে নিজেদের ব্যাপারে সম্পূর্ণ বিপরীত আচরণ করে। আসলে এ জাতীয় দাবি করে তারা আমাদের একথা ভুলিয়ে দিতে চায় যে, ইসলাম আদৌ কখনো এ জাতীয় জাহেলী জাতীয়তাবাদী জাতিরাষ্ট্রের ধারনাকে স্বীকার করেনা। সমর্থন করেনা। বরং ইসলামের দৃষ্টিতে সারা দুনিয়ার সমস্ত মুসলমান -চাই আরব হোক বা অনারব, শ্বেতাঙ্গ হোক বা কৃষ্ণাঙ্গ- সবাই এক জাতিভুক্ত। এক দলভুক্ত। সুতরাং পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তের যেকোনো অঞ্চলের মুসলমানদের উপর কাফেরদের যেকোনো ধরনের আক্রমণ-আগ্রাসনের অর্থই হল, একযোগে সমগ্র বিশ্বের মুসলমানদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য যুদ্ধ ঘোষণা করা।
আজ সারা মুসলিমবিশ্বে যেহেতু আন্তর্জাতিক কুফরি শক্তির সর্বাত্মক দখলদারিত্ব চলছে, যে দখলদারিত্ব কখনো প্রত্যক্ষভাবে আবার কখনো নিজেদের ভারাটে দালালদের মাধ্যমে পরোক্ষভাবে পরিচালিত হচ্ছে, কোথাও অর্থনৈতিক, কোথাও রাজনৈতিক, কোথাও শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক আবার কোথাও সরাসরি সামরিক আগ্রাসন চলছে তাই নির্দ্বিধায় একথা বলা যায় যে, বর্তমানে আন্তর্জাতিকভাবে মুসলমানরা তাদের বিরুদ্ধে বিশ্ব কুফফারগোষ্ঠীর পরিচালিত এক চলমান যুদ্ধের মুকাবেলা করে চলছে। কাজেই এহেন পরিস্থিতিতে এমন কথা বলা বড়ই হাস্যকর বরং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত যে, "এখন আমাদের কোন যুদ্ধ চলছেনা"। আর যুদ্ধ যখন চলছেই সুতরাং ঘরের লোক শত্রুসেনায় নাম লেখানোর প্রক্রিয়াও চলছে। আমরা বরাবরই দেখে আসছি, কোন মুসলিম দেশে যখনই কেউ ইসলাম ত্যাগ করে মুরতাদ হয়ে ইসলাম ও শাআয়েরে ইসলামের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়, লেখালেখি ও বক্তব্যের মাধ্যমে ইসলাম নিয়ে নানা কটুক্তি ও উপহাস করে দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের ক্ষেপিয়ে তুলে, ঠিক তখনই তার নিরাপত্তা দেয়ার নামে কোন কাফের রাষ্ট্র তাকে নিজ দেশের ভিসা দিয়ে নাগরিক হিসেবে বরণ করে নেয়। এবার সে ওই কাফের রাষ্ট্রে অবস্থান করে নিশ্চিন্তে, নির্বিঘ্নে সেখানে বসে বসে আরো উৎসাহে ইসলাম নিয়ে জঘন্য অপপ্রচার চালিয়ে যেতে থাকে। এটা কি প্রকাশ্যে শত্রুসেনায় নাম লেখানোর নামান্তর নয়??
.............
বিভ্রান্তি : বাংলাদেশ কোন ইসলামপ্রজাতন্ত্রী রাষ্ট্র নয়।
আমাদের প্রধানমন্ত্রী ইসলামী বিশ্বের খলিফাও
নন। কাজেই কোন কন্ডিশনই এপ্লাইড হচ্ছেনা।
.
জবাব : আসলে এক্ষেত্রে এই ধরনের কথা ও যুক্তি তুলে ধরাটাও ওই জাহেলী জাতীয়তাবাদী চেতনা-প্রসূত জাতিরাষ্ট্রের ধারনা থেকে এসেছে। কারণ এক সময় সারা পৃথিবীর মুসলিমদের কেন্দ্রীয় খেলাফতের অধীনে এক সূতোয় গাঁথা মুসলিম অধ্যুষিত সুবিশাল ভূখণ্ডকে কাফেরদের কর্তৃক ষড়যন্ত্রমূলকভাবে একে একে সাতান্নটা টুকরো করার পর এখন সেই কাফেরদেরই এঁকে দেয়া ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মানচিত্র হাতে ধরিয়ে দিয়ে প্রত্যেকটি ভূখণ্ডের ব্যাপারে এ কথা বলা যে, "এটা কোন ইসলামপ্রজাতন্ত্রী রাষ্ট্র নয়, এখানের রাষ্ট্রপ্রধান ইসলামী বিশ্বের খলীফাও নন, অতএব এখানে ইসলামী কোন দণ্ডবিধি কার্যকর করা চলবেনা।" এসব নিছক ইসলাম-পরিপন্থী নিকৃষ্ট জাতীয়তাবাদী চেতনার বহিঃপ্রকাশ। তাছাড়া এতাদঞ্চলের অধিবাসী হিসেবে আমরা যে ভূখণ্ডে বসবাস করছি, এখানে কোন শরয়ী দণ্ডবিধি কার্যকর করতে হলে যে ঠিক এ অঞ্চল, এ ভূখণ্ড পরিপূর্ণ ইসলামী শরীয়াহর শাসনাধীন হতে হবে এমনটাও জরুরী নয়। কারণ মুসলিমরা পৃথিবীর যে ভূখণ্ডেই বসবাস করুক, সেখানেই তারা পূর্ণ ইসলামী শরীয়াহর অনুশাসন অনুযায়ী চলতে বাধ্য। হ্যাঁ, দরকার হল এ প্রশাসনিক ও বিচারিক কার্যক্রম সমূহ সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার স্বার্থে মুসলমানদের একজন আমীর বা শাসনকর্তার এবং সেই অঞ্চলে তার প্রতিনিধি নিযুক্ত থাকার। ব্যস, এতটুকু হলেই যথেষ্ট।
উল্লেখ্য, শরীয়াহ আইন ব্যতীত অন্য যেকোনো আইন কুফর। সুতরাং সেই কুফরি আইন অনুযায়ী বিচার করা, শাসনকার্য পরিচালনা করাও কুফর এবং জেনেবুঝে স্বেচ্ছায় সেই আইন ও শাসনের আনুগত্য করা কুফর। তাই কুফরি আইন শাসিত কোন ভূখণ্ডে বসবাসকারী মুসলমানদের জন্য কখনোই সেই আইন ও সে আইনের শাসকের আনুগত্য করা জায়েয নয়। ইসলামে এর কোনই সুযোগ নেই। অতএব, এক্ষেত্রে এমন ভূখণ্ডের মুসলমানগণ সে অঞ্চলের কুফরি আইনের শাসকের বিধিনিষেধের পরোয়া করতে বাধ্য নন। কারণ আল্লাহ বলেন- "আল্লাহ কিছুতেই মুমিনদের উপর কাফেরদের কোন কর্তৃত্বের অধিকার দেন নি।"
..........
বিভ্রান্তি : উবায়দুল্লাহ ইবনে জাশের মতন ওকেও শাস্তি দেয়া
যাবেনা। এইটা মুহাম্মদ (সঃ) এর শিক্ষা।
.
জবাব : এর বিস্তারিত জবাব পূর্বে আলোচনা করা হয়েছে।
..........
বিভ্রান্তি : আরেকটা ঘটনা দিয়ে শেষ করি। নবীজির (সঃ)
জীবনী আলোচনা করতে আমার দারুন লাগে।
কত কিছু যে শিখার আছে।
ফাজিল পোলাপান তাঁর আমলেও ছিল, এবং আরও
বেশিই ছিল। তাঁকে জ্বালানোর জন্য একদিন তাঁর
বাড়িতে গিয়ে ওরা বলল, "আসসামু আলাইকুম।"
আমার আরবি জ্ঞান শুন্য, তবু এর মানে হচ্ছে
"তোমার মৃত্যু ঘটুক" অথবা এইরকমই কিছু।
নবীজির (সঃ) সাথে তাঁর স্ত্রী হজরত আয়েশা (রাঃ)
ছিলেন। তিনি নিজের রাগ ধরে রাখতে না পেরে
বললেন, "তোরা আর তোদের গুষ্ঠী ধ্বংস
হোক।"
নবীজি নিজের স্ত্রীকে শান্ত করলেন। সহজ
ভাষায় বললে তিনি বলেছেন, "রিল্যাক্স আয়েশা।
চিন্তিত হবার কিছু নেই। টেক ইট ইজি।"
তারপর তিনি উত্তরে বললেন, "ওয়ালাইকুম।"
মানে তোমাদের উপরেও। সহজ ভাষায় প্রতিবাদ।
তুমি আমাকে গালি দিচ্ছ? যা দিচ্ছ সেটাই তোমাকে
ফিরিয়ে দিলাম, এবং নিজেও মুখ পর্যন্ত খারাপ করলাম
না।
ফিলদি কথাবার্তা লিখে কেউ অ্যাটেনশন পাবার চেষ্টা
করছে? প্রথম কথা, আপনি পড়বেন না। এবং যদি
পড়েও ফেলেন, মনে মনে শুধু বলুন, ওয়ালাইকুম,
অ্যান্ড মুভ অন। রিল্যাক্স। চিল।
যদি নবীজিকে (সঃ) গালাগালি করার শাস্তি হিসেবে
কাউকে হত্যার বিধান তিনি দিতে চাইতেন একবার শুধু
আওয়াজ দিলেই উমার (রাঃ), আলী (রাঃ), খালিদ ইবনে
ওয়ালিদ (রাঃ), সা'দ ইবনে আবু ওয়াক্কাস(রাঃ) ছুটে
আসতেন। তাঁদের সামনে দাঁড়াবার ক্ষমতা কখনই
কারও ছিল না।
জবাব : উল্লেখিত ঘটনার মাধ্যমে অপব্যাখ্যাকারি যে বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করেছে তা হল, সে গালমন্দ- কটুক্তি ও বদদোয়াকে একাকার করে ফেলার ব্যর্থ চেষ্টা করেছে। অথচ আমরা এ কথা সহজেই বুঝি যে, গালমন্দ, ঠাট্টা-বিদ্রুপ ও বদদোয়ার হুকুম কখনো এক নয়। তাও এখানে আমরা দেখতে পাচ্ছি, ইহুদী লোকটা সরাসরি নয় বরং খুব কৌশলে সালামের ছলে নবীজিকে বদদোয়া করেছে। নবীজি সা.ও কৌশলে তার প্রত্যুত্তর দিয়ে দিয়েছেন। এখানে এতটুকুই যথেষ্ট ছিল। আর বদদোয়ার ব্যাপারে হাদীসে বলা হয়েছে- যার বিরুদ্ধে বদদোয়া করা হয়, সে যদি এর উপযুক্ত না হয়ে থাকে তাহলে বদদোয়ার কুফল স্বয়ং বদদোয়াকারির উপরই আপতিত হয়।
........
বিভ্রান্তি : এখন নবীজির শিক্ষা জানতে হলে কী করতে
হবে? পড়াশোনা করতে হবে।
.
জবাব : জ্বি, নবীজী সা. এর শিক্ষার ব্যাপারে দিনরাত ব্যাপক পড়াশোনা করেই আমরা যা জানতে পেরেছি তার কিঞ্চিৎ পেশ করা হল-
হযরত আলী রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন- যে ব্যক্তি নবীকে গালি দেয়, তাকে হত্যা কর। আর যে সাহাবীকে গালি দেয়, তাকে প্রহার কর। {জামেউল আহাদীস, হাদীস নং-২২৩৬৬, জমউল জাওয়ামে, হাদীস নং-৫০৯৭, দায়লামী, ৩/৫৪১, হাদীস নং-৫৬৮৮, আস সারেমুল মাসলূল-৯২}
হযরত আয়শা রাঃ থেকে বর্ণিত। ওহুদ যুদ্ধে এক মহিলা মুরতাদ হয়ে যায়, তখন রাসূল সাঃ ইরশাদ করেন, তাকে তওবা করানো হোক, আর যদি তওবা না করে, তাহলে তাকে হত্যা করা হবে। {সুনানে দারা কুতনী, হাদীস নং-১২১, সুনানে বায়হাকী কুবরা, হাদীস নং-১৬৬৪৫, মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাদীস নং-১৮৭২৫, মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-২৯৬০৭}
হযরত ইকরিমা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, হযরত আলী রাঃ এর কাছে ধর্মত্যাগীদের উপস্থিত করা হল, তখন তিনি তাদের পুড়িয়ে ফেললেন, এ সংবাদ হযরত ইবনে আব্বাস রাঃ এর কাছে পৌঁছল, তখন তিনি বললেন, যদি আমি হতাম, তাহলে আমি তাদের পুড়িয়ে ফেলতাম না রাসূল সাঃ এর এ নিষেধাজ্ঞা কারণে যে, “তোমরা আল্লাহর শাস্তি দিয়ে শাস্তি দিওনা”। বরং আমি তাদের হত্যা করতাম। কারণ আল্লাহর নবী সাঃ বলেছেন-“যে ব্যক্তি ধর্ম পাল্টায় তাকে হত্যা কর”। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৬৫২১, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদীস নং-৫৬০৬, সুনানে আবু দাউদ, হাদীস নং-৪৩৫৩}
হযরত আনাস রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ যখন মক্কা বিজয়ের বছর মক্কায় প্রবেশ করেন,তখন রাসূল সাঃ এর মাথায় ছিল শিরস্ত্রাণ। তিনি মাথা থেকে তা খুললেন। সেসময় একজন এসে বললেন যে, ইবনে খাতাল কাবার গিলাফ ধরে বসে আছে। রাসূল সাঃ বললেন-তাকে হত্যা কর। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-১৭৪৯}
ইবনে খাতালকে কেন কাবার গিলাফ ধরা অবস্থায়ও রাসূল সাঃ হত্যার নির্দেশ দিলেন? আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী রহঃ বুখারীর ব্যাখ্যাগ্রন্থ ফাতহুল বারীতে বিস্তারিত ঘটনা উল্লেখ করে বলেন যে, লোকটি রাসূল সাঃ কে গালাগাল করত। {ফাতহুল বারী-২/২৪৮,আস সারেমুল মাসলূল-১৩৫}
হযরত বারা ইবনে আজেব রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল সাঃ একদা আব্দুল্লাহ বিন আতিক রাঃ কে আমীর বানিয়ে আবু রাফে ইহুদীকে হত্যা করতে পাঠালেন। আবু রাফে রাসূল সাঃ কে কষ্ট দিত এবং অন্যদের কষ্ট দিতে সাহায্য করত। আব্দুল্লাহ বিন আতিক বলেন, আমি তাকে প্রচন্ড আঘাত করলাম। কিন্তু হত্যা করতে পারিনি, তারপর তরবারীর ধারালো ডগা তার পেটে ঢুকিয়ে দিলাম এমনকি তা তার পিঠ ফুরে বেরিয়ে যায়। তখন আমি বুঝলাম যে, আমি তাকে হত্যা করতে সক্ষম হয়েছি। {সহীহ বুখারী, হাদীস নং-৩৮১৩}
এ হাদীস দ্বারা বুঝা যায় যে, কতিপয় লোক একাজে নিয়োগ রাখা দরকার। যারা রাসূল সাঃ কে যারাই গালাগাল করবে, অশ্লিল মন্তব্য করবে তাদের হত্যা করবে।
......
বিভ্রান্তি : দুই চার পাতা আম পারা
সিপারা পড়ে Nastec ar pusy cae মার্কা মুসলিম হলে
আপনার নিজেরতো ক্ষতি হবেই, সমাজেরও কী
ক্ষতি হবে সেটা আমরা সবাই দেখতে পাচ্ছি।"
.
জবাব : সমাজের ক্ষতি নয়, বরং উপকারিতার ব্যাপারে আমরা ইতিমধ্যে যা জানতে পেরেছি তার কিছু উল্লেখ করা গেল-
নিউইয়র্ক টাইমসের রিপোর্টে কাউন্টার টেরোরিজম চীফ মনিরুল ইসলাম বাংলাদেশে বেশ কয়েকজন ইসলামবিদ্বেষী নাস্তিক ব্লগার হত্যার ঘটনাপ্রবাহের প্রতিক্রিয়া বিশ্লেষণে বলেন— "তারা ( জঙ্গিরা) সতর্কতার সাথে তাদের টার্গেট নির্ধারনের চেষ্টা করেছে যাতে করে জনসমর্থন আদায় করা যায়। এবং তারা এতে সফলও হয়েছে। ধর্মনিরপেক্ষতাকে জনসাধারনের চোখে প্রশ্নবিদ্ধ করার ক্ষেত্রে তারা বিস্ময়কর সফলতা অর্জন করেছে। (৩বার পড়ুন) সাধারনভাবে অধিকাংশ মানুষ এখন মনে করছে জঙ্গিরা ঠিক কাজই করেছে। এবং ব্লগার, সমকামী এবং অন্যান্য ধর্মনিরপেক্ষতাবাদীদের হত্যা করা অযৌক্তিক কিছু না। এছাড়া তারা সেক্যুলার সরকারকে রক্ষণাত্বক অবস্থায় ফেলে দিয়েছে।"
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক শান্তি ও সঙ্ঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগের নির্বাহী পরিচালক আবদুর রশীদ বলেন– "জঙ্গিদের কারণে দেশের রাজনীতি ধর্মনিরপেক্ষ বনাম ইসলামপন্থীতে পরিণত হয়েছে।"
Comment