16/7/3018
লেখক মিযান হারুনের টাইমলাইন থেকে
_____😹______😹_______😹
মাওলানা ইসহাক খানের গ্রেফতার নিয়ে কিছু কথা
দিন কয়েক আগে গ্রেফতার হয়েছে লেখক ও প্রকাশক মাওলানা মুহাম্মাদ ইসহাক খান। জঘন্যকণ্ঠে তাকে ‘জঙ্গী তৈরির কারিগর’ উল্লেখ করা হয়েছে। আমার জানামতে তিনি জিহাদ-কিতাল নিয়ে লেখালেখি করতেন। ময়দানের মুজাহিদদের কথা বলতেন। গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে সংযুক্তির চরম বিরোধিতা করতেন।
এমন লোকের সংখ্যা আমাদের মহলে কম নয়। আমার বন্ধুতালিকাতেও এমন অনেক ভাই আছেন যারা শ্রদ্ধেয় ইসহাক খানের সমমনা। বরং তার চেয়েও অধিকতর স্পষ্টভাষী, দুঃসাহসী ও অকপট। তারা সরকারকে ত্বাগুত বলেন। যারা ইসলামী গণতন্ত্র করেন, হোক সেটা বাংলাদেশ কিংবা পাকিস্তান, তাদের কঠোর সমালোচনা করেন, উপহাসও করেন। খোল্লাম-খোলা জিহাদের কথা বলেন। ময়দানে জিহাদরত উলামায়ে কিরামের আদর্শ ও বাণী সর্বান্তকরণে ধারণ, গ্রহণ ও প্রচার করেন।
অনলাইনে এসব প্রচারণা কতটুকু নিরাপদ সেটা এই গ্রেফতারের ঘটনা আবারও আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিলো। জিহাদ ও কিতাল নিয়ে লেখালেখিকে অনেক সময় আমরা ‘কম্বল জিহাদ’ বলে আখ্যা দিলেও বাস্তবে দেখা যাচ্ছে এটা নিছক কম্বলের নয়; সমাজেও এর একটা প্রভাব আছে। এতে একটা জনবল তৈরি হয়, আওয়াজ ওঠে, যেটা সরকারের পছন্দ হয় না। এমনকি ইসলামী মহলেরও অনেকের পছন্দ হয় না। ফলে ভাই ভাইয়ের পিঠে ছুরি বসাতেও দ্বিধা করে না। এসব কারণেই জঙ্গীবাদের ধোঁয়া তুলে আলেমদের গ্রেফতারের ঘটনা ঘটে।
কিন্তু কথা হচ্ছে ফলাফল কী? এর আগেও বিভিন্ন সময়ে জঙ্গীবাদের অভিযোগে অনেক সম্ভাবনাময় আলেম প্রতিভাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বছরের পর বছর অন্ধকারে তারা তাদের জীবন শেষ করেছেন। ফলাফল? কিছু না। আমার মনে হয়েছে, অনলাইনে এ প্রচারণার বাস্তবমুখী প্রয়োগ নেই। আমি কয়েকজন নাম-না-জানা আইডির সঙ্গে কথা বলেছি। বাস্তবে এদেশে তাদের কোনো রোডম্যাপ নেই। উনারা আফগানের কথা বলেন, আরাকানের কথা বলেন, কাশ্মীরের কথা বলেন, সর্বোপরি গাযওয়ায়ে হিন্দের কথা বলেন, কিন্তু নিজের দেশে কোনো কাজ নেই। কোনো পরিকল্পনা নেই। একজন আমাকে বলেছিলেন, আগে ওদিকের কাজ শেষ হোক, এরপর এখানে শুরু হবে। মানহাজ গ্লোবাল, কিন্তু সে গ্লোবে নিজের দেশ নাই।
নাম-না-জানা আইডি আর ওয়ার্ডপ্রেসে ফ্রি একাউন্ট খুলে এই মানহাজের কাজ আর ক’দিন? তিন দশক আগের আফগানের কথা বলে আর কতকাল? কুরআন ও সুন্নাহর আবেগময়ী ভাষণ, বারমুডা ট্রায়াঙ্গাল, কানা দাজ্জাল, খোরাসানের কালো পতাকা, গাযওয়ায়ে হিন্দ- এগুলোতে সাময়িক উচ্ছ্বাস তৈরি হয়, শা-শা করে ফলোয়ার বাড়ে, কিন্তু কাজের কাজ কতটুকু হয়? বছরের পর বছর জঙ্গীবাদের অভিযোগে যেসব ভাইয়েরা গ্রেফতার হয়েছেন তাদের বের করে আনার জন্য কী কী করা হয়েছে? তাদের পরিবারের হাল কে ধরেছে? জালিমের জেলখানা যদি জান্নাত হয়, তবে তাদের গ্রেফতারের পর আলেমদের নীরবতার প্রতি আক্রোশ দেখানোর মানে কী?
দিনশেষে আমরা সকলেই মানুষ। এবং এই যুগের মানুষ। আমাদের জীবন আছে। পরিবার আছে। বাবা-মা ও সন্তান আছে। ভবিষ্যতের চিন্তা আছে। জানটা যদি আল্লাহর পথে যায়, দীনের কল্যাণের পথে ব্যয় হয় তবে আফসোস নেই। কিন্তু কোনো হঠকারী পদক্ষেপ বা সারশূন্য আবেগী দাওয়াতের খেসারত হিসেবে যদি শুধুশুধুই জেলখানায় কুড়ে কুড়ে মরতে হয়, তবে এ জিহাদের কোনো মানে নেই। আপনি ইসলামী রাজনীতকদের চৌদ্দগোষ্ঠী উদ্ধার করবেন, আর গ্রেফতার হলে তাদের সহানুভূতির আশা করবেন- এটা ডাবল স্ট্যান্ডার্ড। এমন কিতালের কোনো ভবিষ্যৎ নেই। একটা বাস্তব ঠিকানা নেই, বিপদে মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই, একটা ভার্চুয়াল নিজস্ব সাইট নেই, বাস্তব শরীরী নেতৃত্ব নেই- এমন আন্দোলনের সাফল্য আসবে কীভাবে?
এজন্যই এসব ভালো লাগে না। মাঝে মাঝে মনে চায় প্রোফাইলে বটগাছ কিংবা হাতপাখার ছবি টাঙিয়ে ফেলি।
😹😹😹........😹😹😹😹😹😹...
ফেসবুকে জিহাদ নিয়ে লেখালেখি করেন এমন একজন ভাইয়ের টাইমলাইন থেকে.........
চলে গেলেন মাওলানা ইসহাক, রেখে গেলেন হেকমতিয়ারদের জন্য হাজারো অজুহাত
তিনি চলে গেছেন হাজতে। রেখে গেছেন হেকমতিয়ারদের জন্য হাজারো অজুহাত। এখন তারা আরও জোর গলায় বলতে পারছে, দেখেছ, আমরা বলেছিলাম না, এ যুগে এসব কথা বলতে নেই। না অনলাইনে আর না অফলাইনে। এসব কথা বললে পরিণতি শুভ হবে না। দেখেছ, আজ তা-ই হলো। রাসুলের যুগের মুনাফিকরা যেমন বলেছিল, আমাদের কোনো কথা যদি শোনা হতো তাহলে আজ আমাদের জাতি এভাবে মারা পড়ত না।
কারও কারও কথা শুনে মনে হয়, মাওলানা ইসহাক বোধ হয় এতটাই নির্বোধ ছিলেন যে, তিনি বাস্তবতা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল ছিলেন না। অথচ এ পথের কোন পথিক এমন, যে বাস্তবতা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নয়! তিনি অবশ্যই জানতেন, তার ওপর কী নির্মম পরিস্থিতি নেমে আসতে পারে। হাঁ, কিছু বিষয়ে তার ওভার কনফিডেন্স ছিল, তা ভিন্ন বিষয়।
তিনি যে এসব করে গেলেন, এতে উপকার কী হলো? উপকার কী হয়েছে, তা বোঝার জন্য আপনার দৃষ্টিকে প্রথমে ইহলৌকিকতা থেকে বের করে পারলৌকিকতার মধ্যে প্রবেশ করাতে হবে। কারণ, ইহলৌকিক দৃষ্টি দিয়ে এর উপকারিতা ঠাহর করা অনেকটাই দুরূহ ব্যাপার। নজরুল বড় সুন্দর বলেছেন :
উহারা চাহুক দাসের জীবন, আমরা শহীদি দরজা চাই;
নিত্য মৃত্যু-ভীত ওরা, মোরা মৃত্যু কোথায় খুঁজে বেড়াই!
যারা চায় দুনিয়ার সুখ এবং সমৃদ্ধি; যাদের কাছে পৃথিবীর সুখ ঠিক রেখে এবং মনোরম জীবনের গতিধারাকে ব্যাহত না করে কোনোরকম দীনের কাজ করতে পারাই মুক্তির উপায় কিংবা পরাক্রমশালী প্রতিপালকের সামনে উপস্থাপনযোগ্য অজুহাত, তাদের থেকে এমন মন্তব্য পাওয়াটা স্বাভাবিক, খুবই স্বাভাবিক। আমি এতে মোটেও অবাক হই না।
শরিয়াহর যেসব কথা বললে পিঠের চামড়া যাবার ভয় নেই, সেসব কথা তো সবাই বলে। এক আপনি না বললে কিছুই হবে না। আর এ জন্য আপনার পেছনে এই লাখ লাখ টাকা ঢেলে, বড় বড় প্রতিষ্ঠান-বিদ্যালয়ে পড়িয়ে আপনাকে এমন বড়সড় জ্ঞানীগুণী বানানোর প্রয়োজনও ছিল না। ওসব কথা মানুষের এখন এতটাই মুখস্থ যে, বাংলা তো বাদই, আরবি না পারা সত্ত্বেও ইমাম সাহেবের খুতবা শেষ হওয়ার মিনিট খানেক আগেই সবাই নামাজের জন্য ঠায় দাঁড়িয়ে যায়। কারণ, ইমাম সাহেবের চর্বিতচর্বণ খুতবা সকলেরই আত্মস্থপ্রায়। বাংলা আলোচনার কথা আর কীই-বা বলার আছে। ভূমিকা তো সর্বদা একই। আর বাকিটা হলো মৌসুমি বয়ান। মৌসুম তো সর্বদা একেকটা লেগেই থাকে। শৈশব থেলে বার্ধক্য - একই আলোচনা শুনতে শুনতে মানুষের কানও এখন অতিষ্ঠ। আর এ কারণেই আপনাদের শত বারণ সত্ত্বেও মানুষ এখন ড. জাকির নায়েক প্রমুখদের দিকে অভিমুখী।
এটা বললে অত্যুক্তি হবে না যে, জ্ঞানীদের বড় একটা অংশই ইসলামের মাজলুম বিধানগুলো সম্পর্কে ন্যূনতম জ্ঞান রাখে না। আচ্ছা, যারা কিছুটা হলেও জ্ঞান রাখে, তারাও বা কেন বলে না?
ওয়াজের ময়দানে হক কথা বললে আগামী বছর দাওয়াত পাওয়া যাবে না। তাছাড়া আয়োজক কমিটিও ভালোই বিপদে পড়বে। মসজিদে এসব বিষয়ে আলোচনা করলে আর চাকরি থাকবে না। তাবলিগ জামাত বা খানকাহেও এ নিয়ে আলোচনা হবে না, যেহেতু তাদের ভাষ্যানুসারে এগুলো তাদের কাজ নয়। যেহেতু পৃথিবী থেকে এ বিষয়গুলো অনেকটাই না-ই হয়ে গেছে কিংবা যেহেতু এ বিষয়গুলো অন্যান্য বিষয়ের তুলনায় ততটা প্রয়োজনীয় নয় (!), তাই মাদরাসার নেসাবেও আর এগুলোকে রাখা হয়নি। কুরআনের অনুবাদ আর হাদিসের গ্রন্থাদি থেকে যদিও এগুলোকে বাদ দেওয়া যায়নি, কিন্তু হাদিসের এসকল অধ্যায়কে রাখা হয়েছে আলোচনার বাইরের অংশে আর কুরআনেও বেশি কথা বলার সুযোগ নেই; অন্যথায় প্রতিষ্ঠান বাঁচানোর দোহাই দিয়ে বেচারা আলোচকের চাকরি নিয়েই টানাহেঁচড়া দেখা দেবে।
পরিস্থিতি যখন এ-ই, তখনও যদি কিছু জানবাজ লোক মুখ না খুলে নিজেকে বাঁচানোর যুক্তিতে মুখে কুলুপ এঁটে রাখে তাহলে কি আল্লাহ এবং তার ফেরেশতারা জমিনে নেমে এসে মানুষের সামনে সত্যকে তুলে ধরবেন? (নাউজুবিল্লাহ) কিছু মানুষ যদি নিজেদের ঝুঁকির মধ্যে না ফেলে, নিজেদের প্রাণের ওপর ইসলামকে প্রাধান্য না দেয় তাহলে কি গোটা জ্ঞানীসমাজ 'কিতমান'-এর ভয়াবহ গুনাহে আক্রান্ত হবে না আর তার পরিণতিতে সকলের ওপর আল্লাহর পাকড়াও নেমে আসবে না? এই দু-চারজন লোক, যারা প্রাণের ওপর দীনকে প্রাধান্য দিয়ে ইসলামের বাণীকে নিঃসঙ্কোচে তুলে ধরছে, তারা তো আমাদের ভর্ৎসনা নয়; বরং সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য ছিল। কারণ তারা আমাদের জাতিগত অপরাধকে কিছুটা হলেও লঘু করেছে।
প্রাণের মায়ায় যারা সত্যকে গোপন করতে চায়, তাদের জন্য আসহাবুল উখদুদের ঘটনায় পর্যাপ্ত শিক্ষা রয়েছে। অনেক সাহাবির ঘটনায় এমন পাওয়া যাবে, ইসলামগ্রহণের পর রাসুলের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও তারা প্রকাশ্যে ইসলামের ঘোষণা দিয়েছেন আর পরিণামে কুফফারের হাতে নির্দয়ভাবে নির্যাতিত হয়েছেন। আচ্ছা, কারও কি এই দুঃসাহস আছে যে, এবার সেসকল সাহাবিকে আবেগী, অপরিণামদর্শী, হিকমাহশূন্য অভিধায় অভিহিত করবে?
নজরুল বড় সুন্দর বলেছিলেন :
'আমরা যদি না জাগি মা কেমনে সকাল হবে?
তোমার ছেলে জাগলে গো মা রাত পোহাবে তবে!'
মাওলানা ইসহাক খানদের ওপর আমরা কৃতজ্ঞ। কারণ, যখন হাদিসের ঘোষণা অনুসারে বনি ইসরাইলের আলিমদের মতো এই উম্মাহর জ্ঞানীরাও ভয়ে লেজ গুটিয়ে রেখেছে; বরং গুইসাপের গর্তে ঢুকে পড়েছে, তখন তারা নিঃসঙ্কোচে নির্ভয়ে বজ্রদীপ্ত কণ্ঠে সত্যের বাণী তুলে ধরেছেন। নিঃসঙ্গ এ যাত্রায় হাজারো বাধা, তাগুতি প্রশাসনের বাধার চাইতে মুসলিমদের জ্ঞানীসমাজের বাধাই ছিল বেশি, মাড়িয়ে এতকাল টিকে ছিলেন - এ তো তাদের অসীম সাহসিকতার নমুনা। পরবর্তীদের জন্য এর মধ্যে তাদের আদর্শ রেখে গেছেন।
মাওলানা ইসহাক খান। একদিন যে তাকে নবি ইউসুফের পাঠশালায় যেতে হবে, এটা তার ভালো করেই জানা ছিল। জেনেবুঝেই সব করেছেন। আল্লাহর শুকরিয়া যে, মাঝের সময়টা বেশ দীর্ঘই ছিল। আসহাবুল উখদুদের ছেলেটার মতো ক্ষণকাল সময় নয়; বরং ফল পাঁকা পর্যন্ত তিনি কাজ করে গেছেন তার মতো করে। তার কাজগুলোর মূল্যায়ন এখানে উল্লেখ করছি না। আর এখন তার সময়ও নয়। তবে তিনি যা করে গেছেন, সকল ত্রুটিবিচ্যুতির পরও তা তাকে সুদীর্ঘকাল অমর রাখবে ইন শা আল্লাহ।
আচ্ছা, সত্যের বাণী তুলে ধরার দ্বারা কী হয়েছে? হয়েছে, অনেক কিছুই হয়েছে। আলিম নামের সার্থকতা কিছুটা হলেও এসেছে। কিতমানের গুনাহ থেকে মুক্তি পাওয়া গেছে। আর আপনার-আমার মতো শৃগাল নয়; উম্মাহর কিছু সিংহশাবক জেগেছে, যাদের কারও হাত ধরে হয়তো পরিবর্তিত হবে উম্মাহর ভাগ্য এবং চরম লাঞ্ছনার পর আসবে সোনালি সুদিন।
সর্বোপরি এটা কোনো অনর্থক কাজ নয়; বরং এটা তো এক গুরুত্বপূর্ণ ফারিজা। করতে পারলে ভালো, না করলেও সমস্যা নেই ক্যাটাগরির কোনো বিষয় তো এটা নয়। শেয়ালের মতো হাজার বছর বাঁচার থেকে সিংহের মতো একদিন বাঁচাই উত্তম। কী হবে এত মেধা এবং প্রতিভা দিয়ে, যদি ইসলাম নিক্ষিপ্ত থাকে আস্তাকুঁড়ে! বড় সৌভাগ্যবান তো সেই ব্যক্তি, আল্লাহ যার মেধা এবং প্রতিভাকে দীনের পুনরুজ্জীবনের খেদমতে লাগিয়েছেন; যদিও তা সামান্য সময়ের জন্য হয়। কী হবে দীর্ঘ জীবন দিয়ে! মানজিলে মাকসুদ তো রেজায়ে মাওলা। এত হিকমাহ বুঝে কী লাভ! আল্লাহ এবং তার রাসুলের নির্দেশ ও নির্দেশনার বাইরে কোনো হিকমাহ থাকতে পারে না। বাহ্যত সেগুলোকে হিকমাহ মনে হলেও আদতে সব মরীচিকা।
রাসুলুল্লাহ সা. বলেন,
'সর্বোত্তম জিহাদ হলো জালিম শাসকের সামনে সত্যের বাণী তুলে ধরা।'
তাগুতের ভূমিতে বসে, তাগুতের পর্যবেক্ষণের মধ্যে থেকে একটা হক কথা বলতে পারাও বিরাট সৌভাগ্যের ব্যাপার, যেই সৌভাগ্য আল্লাহ সবাইকে দেন না।
আর হে 'জলদবাজি'তে আক্রান্ত ফলাফল প্রত্যাশীরা, বীজ তো কেবল রোপিত হয়েছে। ফলাফলের জন্য কিছুকাল তো অপেক্ষা করো। আল্লাহর কসম, শহিদানের রক্ত এবং মাজলুমানের অশ্রু বৃথা যাবে না; যেতে পারে না। আর আমি তোমাদের আল্লাহর ঘোষণা শুনিয়ে দিই, 'সুতরাং পারলে তোমরা নিজেদের থেকে মৃত্যুকে প্রতিরোধ করো দেখি!' আরে, প্রত্যেক প্রাণী মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করবে। তা একমিনিট আগাবেও না, কয়েক সেকেন্ড পেছাবেও না। আপন জায়গায় স্থির। মৃত্যু তার যথাসময়ে তোমাকে স্পর্শ করবে; যদিও তুমি কোনো সুরক্ষিত প্রাসাদেও আশ্রয় নাও। আর জেনে রাখো, ইসলাম নামক বৃক্ষের গোড়ায় পানি নয়, বরং রক্ত ঢালতে হয়। কারণ, ইসলাম জিন্দা হোতা হ্যায় হ্যর কারবালা কে বা'দ।
ولست أبالي حين أقتل مسلما ـــــ على أي شق كان لله مصرعي
وذلك في ذات الإله وإن يشأ ـــــ يبارك على أوصال شلو ممزع.
অর্থ : মুসলিম অবস্থায় যদি নিহত হই তবে আর কোনো পরোয়া নেই, যে পার্শ্বদেশেই হোক না কেন, আল্লাহর জন্যই আমার এ ভূমিশয্যা।
এ তো শুধু মাবুদের সন্তুষ্টির জন্য, তিনি যদি চান তবে আমার ছিন্নভিন্ন প্রতিটি অঙ্গে তিনি বরকত দান করবেন।
লেখক মিযান হারুনের টাইমলাইন থেকে
_____😹______😹_______😹
মাওলানা ইসহাক খানের গ্রেফতার নিয়ে কিছু কথা
দিন কয়েক আগে গ্রেফতার হয়েছে লেখক ও প্রকাশক মাওলানা মুহাম্মাদ ইসহাক খান। জঘন্যকণ্ঠে তাকে ‘জঙ্গী তৈরির কারিগর’ উল্লেখ করা হয়েছে। আমার জানামতে তিনি জিহাদ-কিতাল নিয়ে লেখালেখি করতেন। ময়দানের মুজাহিদদের কথা বলতেন। গণতন্ত্র ও গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে সংযুক্তির চরম বিরোধিতা করতেন।
এমন লোকের সংখ্যা আমাদের মহলে কম নয়। আমার বন্ধুতালিকাতেও এমন অনেক ভাই আছেন যারা শ্রদ্ধেয় ইসহাক খানের সমমনা। বরং তার চেয়েও অধিকতর স্পষ্টভাষী, দুঃসাহসী ও অকপট। তারা সরকারকে ত্বাগুত বলেন। যারা ইসলামী গণতন্ত্র করেন, হোক সেটা বাংলাদেশ কিংবা পাকিস্তান, তাদের কঠোর সমালোচনা করেন, উপহাসও করেন। খোল্লাম-খোলা জিহাদের কথা বলেন। ময়দানে জিহাদরত উলামায়ে কিরামের আদর্শ ও বাণী সর্বান্তকরণে ধারণ, গ্রহণ ও প্রচার করেন।
অনলাইনে এসব প্রচারণা কতটুকু নিরাপদ সেটা এই গ্রেফতারের ঘটনা আবারও আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিলো। জিহাদ ও কিতাল নিয়ে লেখালেখিকে অনেক সময় আমরা ‘কম্বল জিহাদ’ বলে আখ্যা দিলেও বাস্তবে দেখা যাচ্ছে এটা নিছক কম্বলের নয়; সমাজেও এর একটা প্রভাব আছে। এতে একটা জনবল তৈরি হয়, আওয়াজ ওঠে, যেটা সরকারের পছন্দ হয় না। এমনকি ইসলামী মহলেরও অনেকের পছন্দ হয় না। ফলে ভাই ভাইয়ের পিঠে ছুরি বসাতেও দ্বিধা করে না। এসব কারণেই জঙ্গীবাদের ধোঁয়া তুলে আলেমদের গ্রেফতারের ঘটনা ঘটে।
কিন্তু কথা হচ্ছে ফলাফল কী? এর আগেও বিভিন্ন সময়ে জঙ্গীবাদের অভিযোগে অনেক সম্ভাবনাময় আলেম প্রতিভাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বছরের পর বছর অন্ধকারে তারা তাদের জীবন শেষ করেছেন। ফলাফল? কিছু না। আমার মনে হয়েছে, অনলাইনে এ প্রচারণার বাস্তবমুখী প্রয়োগ নেই। আমি কয়েকজন নাম-না-জানা আইডির সঙ্গে কথা বলেছি। বাস্তবে এদেশে তাদের কোনো রোডম্যাপ নেই। উনারা আফগানের কথা বলেন, আরাকানের কথা বলেন, কাশ্মীরের কথা বলেন, সর্বোপরি গাযওয়ায়ে হিন্দের কথা বলেন, কিন্তু নিজের দেশে কোনো কাজ নেই। কোনো পরিকল্পনা নেই। একজন আমাকে বলেছিলেন, আগে ওদিকের কাজ শেষ হোক, এরপর এখানে শুরু হবে। মানহাজ গ্লোবাল, কিন্তু সে গ্লোবে নিজের দেশ নাই।
নাম-না-জানা আইডি আর ওয়ার্ডপ্রেসে ফ্রি একাউন্ট খুলে এই মানহাজের কাজ আর ক’দিন? তিন দশক আগের আফগানের কথা বলে আর কতকাল? কুরআন ও সুন্নাহর আবেগময়ী ভাষণ, বারমুডা ট্রায়াঙ্গাল, কানা দাজ্জাল, খোরাসানের কালো পতাকা, গাযওয়ায়ে হিন্দ- এগুলোতে সাময়িক উচ্ছ্বাস তৈরি হয়, শা-শা করে ফলোয়ার বাড়ে, কিন্তু কাজের কাজ কতটুকু হয়? বছরের পর বছর জঙ্গীবাদের অভিযোগে যেসব ভাইয়েরা গ্রেফতার হয়েছেন তাদের বের করে আনার জন্য কী কী করা হয়েছে? তাদের পরিবারের হাল কে ধরেছে? জালিমের জেলখানা যদি জান্নাত হয়, তবে তাদের গ্রেফতারের পর আলেমদের নীরবতার প্রতি আক্রোশ দেখানোর মানে কী?
দিনশেষে আমরা সকলেই মানুষ। এবং এই যুগের মানুষ। আমাদের জীবন আছে। পরিবার আছে। বাবা-মা ও সন্তান আছে। ভবিষ্যতের চিন্তা আছে। জানটা যদি আল্লাহর পথে যায়, দীনের কল্যাণের পথে ব্যয় হয় তবে আফসোস নেই। কিন্তু কোনো হঠকারী পদক্ষেপ বা সারশূন্য আবেগী দাওয়াতের খেসারত হিসেবে যদি শুধুশুধুই জেলখানায় কুড়ে কুড়ে মরতে হয়, তবে এ জিহাদের কোনো মানে নেই। আপনি ইসলামী রাজনীতকদের চৌদ্দগোষ্ঠী উদ্ধার করবেন, আর গ্রেফতার হলে তাদের সহানুভূতির আশা করবেন- এটা ডাবল স্ট্যান্ডার্ড। এমন কিতালের কোনো ভবিষ্যৎ নেই। একটা বাস্তব ঠিকানা নেই, বিপদে মাথা গোঁজার ঠাঁই নেই, একটা ভার্চুয়াল নিজস্ব সাইট নেই, বাস্তব শরীরী নেতৃত্ব নেই- এমন আন্দোলনের সাফল্য আসবে কীভাবে?
এজন্যই এসব ভালো লাগে না। মাঝে মাঝে মনে চায় প্রোফাইলে বটগাছ কিংবা হাতপাখার ছবি টাঙিয়ে ফেলি।
😹😹😹........😹😹😹😹😹😹...
ফেসবুকে জিহাদ নিয়ে লেখালেখি করেন এমন একজন ভাইয়ের টাইমলাইন থেকে.........
চলে গেলেন মাওলানা ইসহাক, রেখে গেলেন হেকমতিয়ারদের জন্য হাজারো অজুহাত
তিনি চলে গেছেন হাজতে। রেখে গেছেন হেকমতিয়ারদের জন্য হাজারো অজুহাত। এখন তারা আরও জোর গলায় বলতে পারছে, দেখেছ, আমরা বলেছিলাম না, এ যুগে এসব কথা বলতে নেই। না অনলাইনে আর না অফলাইনে। এসব কথা বললে পরিণতি শুভ হবে না। দেখেছ, আজ তা-ই হলো। রাসুলের যুগের মুনাফিকরা যেমন বলেছিল, আমাদের কোনো কথা যদি শোনা হতো তাহলে আজ আমাদের জাতি এভাবে মারা পড়ত না।
কারও কারও কথা শুনে মনে হয়, মাওলানা ইসহাক বোধ হয় এতটাই নির্বোধ ছিলেন যে, তিনি বাস্তবতা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল ছিলেন না। অথচ এ পথের কোন পথিক এমন, যে বাস্তবতা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নয়! তিনি অবশ্যই জানতেন, তার ওপর কী নির্মম পরিস্থিতি নেমে আসতে পারে। হাঁ, কিছু বিষয়ে তার ওভার কনফিডেন্স ছিল, তা ভিন্ন বিষয়।
তিনি যে এসব করে গেলেন, এতে উপকার কী হলো? উপকার কী হয়েছে, তা বোঝার জন্য আপনার দৃষ্টিকে প্রথমে ইহলৌকিকতা থেকে বের করে পারলৌকিকতার মধ্যে প্রবেশ করাতে হবে। কারণ, ইহলৌকিক দৃষ্টি দিয়ে এর উপকারিতা ঠাহর করা অনেকটাই দুরূহ ব্যাপার। নজরুল বড় সুন্দর বলেছেন :
উহারা চাহুক দাসের জীবন, আমরা শহীদি দরজা চাই;
নিত্য মৃত্যু-ভীত ওরা, মোরা মৃত্যু কোথায় খুঁজে বেড়াই!
যারা চায় দুনিয়ার সুখ এবং সমৃদ্ধি; যাদের কাছে পৃথিবীর সুখ ঠিক রেখে এবং মনোরম জীবনের গতিধারাকে ব্যাহত না করে কোনোরকম দীনের কাজ করতে পারাই মুক্তির উপায় কিংবা পরাক্রমশালী প্রতিপালকের সামনে উপস্থাপনযোগ্য অজুহাত, তাদের থেকে এমন মন্তব্য পাওয়াটা স্বাভাবিক, খুবই স্বাভাবিক। আমি এতে মোটেও অবাক হই না।
শরিয়াহর যেসব কথা বললে পিঠের চামড়া যাবার ভয় নেই, সেসব কথা তো সবাই বলে। এক আপনি না বললে কিছুই হবে না। আর এ জন্য আপনার পেছনে এই লাখ লাখ টাকা ঢেলে, বড় বড় প্রতিষ্ঠান-বিদ্যালয়ে পড়িয়ে আপনাকে এমন বড়সড় জ্ঞানীগুণী বানানোর প্রয়োজনও ছিল না। ওসব কথা মানুষের এখন এতটাই মুখস্থ যে, বাংলা তো বাদই, আরবি না পারা সত্ত্বেও ইমাম সাহেবের খুতবা শেষ হওয়ার মিনিট খানেক আগেই সবাই নামাজের জন্য ঠায় দাঁড়িয়ে যায়। কারণ, ইমাম সাহেবের চর্বিতচর্বণ খুতবা সকলেরই আত্মস্থপ্রায়। বাংলা আলোচনার কথা আর কীই-বা বলার আছে। ভূমিকা তো সর্বদা একই। আর বাকিটা হলো মৌসুমি বয়ান। মৌসুম তো সর্বদা একেকটা লেগেই থাকে। শৈশব থেলে বার্ধক্য - একই আলোচনা শুনতে শুনতে মানুষের কানও এখন অতিষ্ঠ। আর এ কারণেই আপনাদের শত বারণ সত্ত্বেও মানুষ এখন ড. জাকির নায়েক প্রমুখদের দিকে অভিমুখী।
এটা বললে অত্যুক্তি হবে না যে, জ্ঞানীদের বড় একটা অংশই ইসলামের মাজলুম বিধানগুলো সম্পর্কে ন্যূনতম জ্ঞান রাখে না। আচ্ছা, যারা কিছুটা হলেও জ্ঞান রাখে, তারাও বা কেন বলে না?
ওয়াজের ময়দানে হক কথা বললে আগামী বছর দাওয়াত পাওয়া যাবে না। তাছাড়া আয়োজক কমিটিও ভালোই বিপদে পড়বে। মসজিদে এসব বিষয়ে আলোচনা করলে আর চাকরি থাকবে না। তাবলিগ জামাত বা খানকাহেও এ নিয়ে আলোচনা হবে না, যেহেতু তাদের ভাষ্যানুসারে এগুলো তাদের কাজ নয়। যেহেতু পৃথিবী থেকে এ বিষয়গুলো অনেকটাই না-ই হয়ে গেছে কিংবা যেহেতু এ বিষয়গুলো অন্যান্য বিষয়ের তুলনায় ততটা প্রয়োজনীয় নয় (!), তাই মাদরাসার নেসাবেও আর এগুলোকে রাখা হয়নি। কুরআনের অনুবাদ আর হাদিসের গ্রন্থাদি থেকে যদিও এগুলোকে বাদ দেওয়া যায়নি, কিন্তু হাদিসের এসকল অধ্যায়কে রাখা হয়েছে আলোচনার বাইরের অংশে আর কুরআনেও বেশি কথা বলার সুযোগ নেই; অন্যথায় প্রতিষ্ঠান বাঁচানোর দোহাই দিয়ে বেচারা আলোচকের চাকরি নিয়েই টানাহেঁচড়া দেখা দেবে।
পরিস্থিতি যখন এ-ই, তখনও যদি কিছু জানবাজ লোক মুখ না খুলে নিজেকে বাঁচানোর যুক্তিতে মুখে কুলুপ এঁটে রাখে তাহলে কি আল্লাহ এবং তার ফেরেশতারা জমিনে নেমে এসে মানুষের সামনে সত্যকে তুলে ধরবেন? (নাউজুবিল্লাহ) কিছু মানুষ যদি নিজেদের ঝুঁকির মধ্যে না ফেলে, নিজেদের প্রাণের ওপর ইসলামকে প্রাধান্য না দেয় তাহলে কি গোটা জ্ঞানীসমাজ 'কিতমান'-এর ভয়াবহ গুনাহে আক্রান্ত হবে না আর তার পরিণতিতে সকলের ওপর আল্লাহর পাকড়াও নেমে আসবে না? এই দু-চারজন লোক, যারা প্রাণের ওপর দীনকে প্রাধান্য দিয়ে ইসলামের বাণীকে নিঃসঙ্কোচে তুলে ধরছে, তারা তো আমাদের ভর্ৎসনা নয়; বরং সাধুবাদ পাওয়ার যোগ্য ছিল। কারণ তারা আমাদের জাতিগত অপরাধকে কিছুটা হলেও লঘু করেছে।
প্রাণের মায়ায় যারা সত্যকে গোপন করতে চায়, তাদের জন্য আসহাবুল উখদুদের ঘটনায় পর্যাপ্ত শিক্ষা রয়েছে। অনেক সাহাবির ঘটনায় এমন পাওয়া যাবে, ইসলামগ্রহণের পর রাসুলের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও তারা প্রকাশ্যে ইসলামের ঘোষণা দিয়েছেন আর পরিণামে কুফফারের হাতে নির্দয়ভাবে নির্যাতিত হয়েছেন। আচ্ছা, কারও কি এই দুঃসাহস আছে যে, এবার সেসকল সাহাবিকে আবেগী, অপরিণামদর্শী, হিকমাহশূন্য অভিধায় অভিহিত করবে?
নজরুল বড় সুন্দর বলেছিলেন :
'আমরা যদি না জাগি মা কেমনে সকাল হবে?
তোমার ছেলে জাগলে গো মা রাত পোহাবে তবে!'
মাওলানা ইসহাক খানদের ওপর আমরা কৃতজ্ঞ। কারণ, যখন হাদিসের ঘোষণা অনুসারে বনি ইসরাইলের আলিমদের মতো এই উম্মাহর জ্ঞানীরাও ভয়ে লেজ গুটিয়ে রেখেছে; বরং গুইসাপের গর্তে ঢুকে পড়েছে, তখন তারা নিঃসঙ্কোচে নির্ভয়ে বজ্রদীপ্ত কণ্ঠে সত্যের বাণী তুলে ধরেছেন। নিঃসঙ্গ এ যাত্রায় হাজারো বাধা, তাগুতি প্রশাসনের বাধার চাইতে মুসলিমদের জ্ঞানীসমাজের বাধাই ছিল বেশি, মাড়িয়ে এতকাল টিকে ছিলেন - এ তো তাদের অসীম সাহসিকতার নমুনা। পরবর্তীদের জন্য এর মধ্যে তাদের আদর্শ রেখে গেছেন।
মাওলানা ইসহাক খান। একদিন যে তাকে নবি ইউসুফের পাঠশালায় যেতে হবে, এটা তার ভালো করেই জানা ছিল। জেনেবুঝেই সব করেছেন। আল্লাহর শুকরিয়া যে, মাঝের সময়টা বেশ দীর্ঘই ছিল। আসহাবুল উখদুদের ছেলেটার মতো ক্ষণকাল সময় নয়; বরং ফল পাঁকা পর্যন্ত তিনি কাজ করে গেছেন তার মতো করে। তার কাজগুলোর মূল্যায়ন এখানে উল্লেখ করছি না। আর এখন তার সময়ও নয়। তবে তিনি যা করে গেছেন, সকল ত্রুটিবিচ্যুতির পরও তা তাকে সুদীর্ঘকাল অমর রাখবে ইন শা আল্লাহ।
আচ্ছা, সত্যের বাণী তুলে ধরার দ্বারা কী হয়েছে? হয়েছে, অনেক কিছুই হয়েছে। আলিম নামের সার্থকতা কিছুটা হলেও এসেছে। কিতমানের গুনাহ থেকে মুক্তি পাওয়া গেছে। আর আপনার-আমার মতো শৃগাল নয়; উম্মাহর কিছু সিংহশাবক জেগেছে, যাদের কারও হাত ধরে হয়তো পরিবর্তিত হবে উম্মাহর ভাগ্য এবং চরম লাঞ্ছনার পর আসবে সোনালি সুদিন।
সর্বোপরি এটা কোনো অনর্থক কাজ নয়; বরং এটা তো এক গুরুত্বপূর্ণ ফারিজা। করতে পারলে ভালো, না করলেও সমস্যা নেই ক্যাটাগরির কোনো বিষয় তো এটা নয়। শেয়ালের মতো হাজার বছর বাঁচার থেকে সিংহের মতো একদিন বাঁচাই উত্তম। কী হবে এত মেধা এবং প্রতিভা দিয়ে, যদি ইসলাম নিক্ষিপ্ত থাকে আস্তাকুঁড়ে! বড় সৌভাগ্যবান তো সেই ব্যক্তি, আল্লাহ যার মেধা এবং প্রতিভাকে দীনের পুনরুজ্জীবনের খেদমতে লাগিয়েছেন; যদিও তা সামান্য সময়ের জন্য হয়। কী হবে দীর্ঘ জীবন দিয়ে! মানজিলে মাকসুদ তো রেজায়ে মাওলা। এত হিকমাহ বুঝে কী লাভ! আল্লাহ এবং তার রাসুলের নির্দেশ ও নির্দেশনার বাইরে কোনো হিকমাহ থাকতে পারে না। বাহ্যত সেগুলোকে হিকমাহ মনে হলেও আদতে সব মরীচিকা।
রাসুলুল্লাহ সা. বলেন,
'সর্বোত্তম জিহাদ হলো জালিম শাসকের সামনে সত্যের বাণী তুলে ধরা।'
তাগুতের ভূমিতে বসে, তাগুতের পর্যবেক্ষণের মধ্যে থেকে একটা হক কথা বলতে পারাও বিরাট সৌভাগ্যের ব্যাপার, যেই সৌভাগ্য আল্লাহ সবাইকে দেন না।
আর হে 'জলদবাজি'তে আক্রান্ত ফলাফল প্রত্যাশীরা, বীজ তো কেবল রোপিত হয়েছে। ফলাফলের জন্য কিছুকাল তো অপেক্ষা করো। আল্লাহর কসম, শহিদানের রক্ত এবং মাজলুমানের অশ্রু বৃথা যাবে না; যেতে পারে না। আর আমি তোমাদের আল্লাহর ঘোষণা শুনিয়ে দিই, 'সুতরাং পারলে তোমরা নিজেদের থেকে মৃত্যুকে প্রতিরোধ করো দেখি!' আরে, প্রত্যেক প্রাণী মৃত্যুর স্বাদ আস্বাদন করবে। তা একমিনিট আগাবেও না, কয়েক সেকেন্ড পেছাবেও না। আপন জায়গায় স্থির। মৃত্যু তার যথাসময়ে তোমাকে স্পর্শ করবে; যদিও তুমি কোনো সুরক্ষিত প্রাসাদেও আশ্রয় নাও। আর জেনে রাখো, ইসলাম নামক বৃক্ষের গোড়ায় পানি নয়, বরং রক্ত ঢালতে হয়। কারণ, ইসলাম জিন্দা হোতা হ্যায় হ্যর কারবালা কে বা'দ।
ولست أبالي حين أقتل مسلما ـــــ على أي شق كان لله مصرعي
وذلك في ذات الإله وإن يشأ ـــــ يبارك على أوصال شلو ممزع.
অর্থ : মুসলিম অবস্থায় যদি নিহত হই তবে আর কোনো পরোয়া নেই, যে পার্শ্বদেশেই হোক না কেন, আল্লাহর জন্যই আমার এ ভূমিশয্যা।
এ তো শুধু মাবুদের সন্তুষ্টির জন্য, তিনি যদি চান তবে আমার ছিন্নভিন্ন প্রতিটি অঙ্গে তিনি বরকত দান করবেন।
Comment