যুদ্ধ কৌশল অনুধাবন
১ম পর্ব
বৈশ্বিক ক্ষমতা ও রাজনীতির গঠন প্রণালী
১ম পর্ব
বৈশ্বিক ক্ষমতা ও রাজনীতির গঠন প্রণালী
বিগত শতাব্দীর শেষ থেকে বিশেষ করে সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর নতুন একটি বৈশ্বিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, যার শুরুটা হয় দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকেই। যাকে One World Order বা 'একক বিশ্ব-ব্যবস্থা' নামে অবিহিত করা হয়। অর্থাৎ এই নতুন বিশ্ব-ব্যবস্থায় আমেরিকা এককভাবে আন্তর্জাতিক ক্ষমতা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে পূরা বিশ্বকে পরিচালনা করবে।
এই বাস্তবতাকে বুঝার জন্য আমাদেরকে আন্তর্জাতিক রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার গঠন প্রক্রিয়া, তাদের স্তর ও সীমাগুলো জানতে হবে। প্রত্যেকটা রাষ্ট্রেরই রয়েছে ভৌগলিক ও কার্যক্ষমতার সীমারেখা, যা সেই সমস্ত রাষ্ট্রের সীমানা ও শক্তির সক্ষমতার ভিত্তিতেই নির্ধারিত হয়। অর্থাৎ যে রাষ্ট্রের শক্তি বা ভৌগলিক সীমানা বেশি হবে, তাদের রাষ্ট্রীয় স্বার্থ অর্জনে পরিধিও বেশি হয়ে থাকে।
বৈশ্বিক রাষ্ট্রীয় গঠনের স্তরসমূহঃ
প্রথমতঃ নেতৃত্ব
দ্বিতিয়তঃ অংশীদার
বৈশ্বিক রাষ্ট্র-ব্যবস্থায় এই স্তরের রাষ্ট্রগুলোর নিজস্ব শক্তি-স্বার্থ অর্জন ও উন্নতির জন্য একক সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার রয়েছে। তবে একটি বড় শর্তে, তা হল আমেরিকার অধীনে থাকা আঞ্চলিক অথবা আন্তর্জাতিক শক্তির ভারসাম্য কখনই নষ্ট করা যাবে না এবং আমেরিকার কূটনীতিক স্বার্থে কোন ধরনের আঘাত হানা যাবে না। এই রাষ্ট্রগুলো তাদের সামরিক শক্তি ও ভৌগলিক প্রভাব অনুযায়ী আন্তর্জাতিক বা আঞ্চলিক পর্যায়ে বৈশ্বিক নেতৃত্বে আমরিকার অংশীদার হয়ে থাকে। এই স্তরের কিছু উদাহরণ হচ্ছেঃ - ইসরাইলঃ আরব বিশ্বে অর্থাৎ মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকার বৈশ্বিক নেতৃত্বের আঞ্চলিক অংশিদার
- চীনঃ দক্ষিণ ও পূর্ব এশিয়ায় আমেরিকার বৈশ্বিক নেতৃত্বের আঞ্চলিক অংশীদার
- রাশিয়াঃ সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়ার পর পুতিনের সময়কালে এসে রাশিয়ার অবস্থা উন্নতি হয়েছে। তাই তারা এখন আন্তর্জাতিক অংশীদার হিসেবে আত্মপ্রকাশের চেষ্টা করছে।
তৃতীয়তঃ মিত্রশক্তি
- ইউরোপীয় ইউনিয়নঃ জার্মান, ফ্রান্স, ইংল্যান্ড ইউরোপ ও ভূমধ্যসাগরে আমেরিকার আঞ্চলিক মিত্রশক্তি।
- কানাডাঃ উত্তর আমেরিকায় আঞ্চলিক মিত্র।
- ইরানঃ মধ্যপ্রাচ্যে আঞ্চলিক মিত্র। মিডিয়ার মিথ্যাচার ও প্রপাগান্ডা স্বত্ত্বেও অনেক ক্ষেত্রে আঞ্চলিক মিত্র হিসেবে কাজ করে আসছে।
- ভারতঃ এশিয়াতে আমেরিকার আঞ্চলিক মিত্র
চতুর্থতঃ অনুগত্যকারী
স্তর বিন্যাসের লক্ষণীয় বিষয়
- এখানে এমন একটি রাষ্ট্র রয়েছে যা এই গঠন প্রণালীর অন্তর্ভুক্ত নয়, তা হচ্ছে তালেবানদের সময়ের আফগানিস্তান এবং তাদের মতো ভবিষ্যত মুজাহিদদের ইমারাসমূহ। তাদের অবস্থা হচ্ছে যতদিন পর্যন্ত আন্তর্জাতিক শক্তি বিদ্যমান থাকবে ততদিন যুদ্ধ চালিয়ে যাবে।
- একই স্তরে হওয়ার পরেও সব রাষ্ট্রের সক্ষমতা সমান থাকে না। যেমন কিছু রাষ্ট্র শক্তিশালী মিত্র ও কিছু রাষ্ট্র দূর্বল মিত্র। কিছু রাষ্ট্র শক্তিশালী অংশিদার, অন্যদের তুলনায় যাদের প্রভাব বেশি হয়ে থাকে। কিন্তু একই স্তরে থাকার কারণ হচ্ছে পূর্বে বর্নিত মাপকাঠি। তবে মধ্যবর্তী কিছু রাষ্ট্র রয়েছে যারা অনুগত ও মিত্রের মাঝামাঝি অথবা মিত্র ও অংশীদারের মাঝামাঝি।
- অনেক ক্ষেত্রে এক স্তরের বা ভিন্ন স্তরের কয়েক রাষ্ট্রের মধ্যে সম্পর্ক থাকে। হয়তো সেটা কোন চুক্তি, যৌথ স্বার্থ বা সন্ধি। এই সমস্ত ক্ষেত্রে আমেরিকা তার ক্ষমতার মাধ্যমে সরাসরি বা পরোক্ষ ভাবে এই সম্পর্কগুলো নিয়ন্ত্রণ করে। এভাবেই আমেরিকা নিজেদের কৌশলগত স্বার্থ সংরক্ষণ এবং আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক শক্তির ভারসাম্য রক্ষা করে।
- বৈশ্বিক রাষ্ট্রসমূহের এই স্তর বিন্যাস তাদের বর্তমান অবস্থান, পরিবর্তন ও ঘটনার ওপর ভিত্তিতে নির্ধারিত হয়েছে। কিন্তু আগামী বছরগুলোর সম্ভাব্য পরিস্থিতিতে তার অবস্থানের পরিবর্তন ঘটবে। বিশেষ করে ভিবিন্ন স্থানে ধারাবাহিক ভাবে ও ধীর গতিতে আমেরিকার কতৃত্ব নষ্ট হওয়া ও শুন্য স্থানে ভিন্ন শক্তির দখলের মাধ্যমে। কিন্তু এই ঘঠন প্রনালীতে মৌলিক কতৃত্বের পরিবর্তন অর্থাৎ আমেরিকার পতন; বিশ্বযুদ্ধ বা সোভিয়েত ইউনিয়ন ধ্বংসের মত বড় কোন ঘটনা সংঘটিত হওয়া ছাড়া সম্ভব নয়।
মূল লেখকঃ খালেদ মূসা - তিবয়ান
চলবে ইনশাআল্লাহ ...
Comment