বৈশ্বিক নেতৃত্বের অংশীদার রাষ্ট্রসমূহ
রাশিয়া
বর্তমান রাশিয়াকে সোভিয়েত ইউনিয়নের উত্তরাধিকার মনে করা হয়। কমিউনিজমকে উন্নত অবস্থায় ফিরিয়ে আনার জন্য মিখাইল গর্বাচেভ এর “পেরেস্ত্রোইকা” আন্দোলন বিফলের পর সেভিয়েত ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত থাকা অধিকাংশ রাষ্ট্র স্বাধীনতা ঘোষণা করে, যার ফলে তাদের শক্তিশালী ভিত্তি ধ্বংস হয়ে যায়। অবস্থা এত নাজুক পর্যায়ে পৌঁছায় যে, তাদের স্ট্রেটেজিক ও পরমাণু বোমার কারখানা এবং সংরক্ষণাগার গুলোতে আমেরিকান গুপ্তচর বিচরন করতে শুরু করে। বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন “১৯৯১ সালের পরমাণু বোমা নিয়ন্ত্রণ চুক্তি”। রাশিয়া
তখন রাশিয়া আস্তে আস্তে অনেক দুর্বল হয়ে যায় এবং প্রথম শীশানের যুদ্ধে পরাজয়ের পর তার দুরবস্থা অবস্থা আরো শোচনীয় হয়। দেশের ভিতরে বিদ্রোহ শুরু হতে থাকে। যা হঠাৎ করেই বিশাল একটি রাষ্ট্রকে দ্রুত ধ্বংস দিকে নিয়ে যায়। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পুতিন ক্ষমতা গ্রহন করার পর দ্বিতীয় শীশানের যুদ্ধে জনগণের সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করে এবং তাতে সফল হয়ে 2000 সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয় লাভ করে।
পুতিন ক্ষমতায় বসার কিছু দিনের মধ্যে দ্বিতীয় শীশানের যুদ্ধের মাধ্যমে রাশিয়া তার অধিকাংশ উদ্দেশ্য অর্জনে সফল হয়। ক্ষমতা গ্রহনের প্রথম দিকে পুতিন আমেরিকান নিকটবর্তী হওয়ার চেষ্টা করে, এই ধারনা করে যে রাশিয়া ইউরোপের একটি অংশ। তাই তারা ন্যাটো ও ইউরোপীয় ইউনিয়নে মিলিত হতে পারবে। কিন্তু আমেরিকানদের পক্ষ থেকে ধোকা ও ইউরোপিয়ানদের বিরোধিতার কারণে শেষ পর্যন্ত মিশতে পারে নি। যার ফলে সে নিজের দেশে ফিরে আসে এবং রুশী অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার চেষ্টা করে।
2001 সাল থেকে আফগানিস্থানে এবং 2003 সাল থেকে ইরাক যুদ্ধ শুরু হয়ে যায়। তখন আমেরিকা ও ন্যাটো বাহিনী আফগান ও ইরাক যুদ্ধে গভীরভাবে জড়িয়ে পড়ে। ফলে 2008 সালে রাশিয়া ও জর্জিয়ার মধ্যকার 'অস্ট্রিয়া যুদ্ধ' সময় ব্যতিত পূরা বিশ্ব রাশিয়ার দিকে তেমন ভালভাবে খেয়াল করার সুযোগ পায়নি। এবং তখনও আমেরিকা যুদ্ধে ব্যস্ত থাকায় ও জর্জিয়ার ভৌগলিক অবস্থা কৌশলগত গুরুত্বপূর্ন না হওয়ায় এতটা পাত্তা দেয় নি। রাশিয়ার সীমানা বৃদ্ধির মাধ্যমে যুদ্ধ বন্ধ করেই সবাই ক্ষান্ত হয়ে গেছে।
ইউক্রেনের ঘটনা ও আমেরিকার চাপ
'অস্ট্রিয়া যুদ্ধ' ছিল রাশিয়ার উন্নতির শুরু, অতঃপর ইউক্রেনের ঘটনা ঘটে। যেখানে রাশিয়ার সমর্থনপুষ্ট দল সফল ভাবে নির্বাচনে জয় লাভ করে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়। আর তখনই আমেরিকা শক্তিশালী ভাবে এ ঘটনায় প্রবেশ করে। “জন মাকীন” এর অধীনে একটি প্রতিনিধি দল আমেরিকা থেকে ইউক্রেন যায়। পশ্চিমা বিশ্ব ও ইউরোপের সমস্ত মিত্ররা গোপনে জনগনের মাঝে বিদ্রোহের ইন্দন যোগাতে থাকে। ফলে অনেকটা সামরিক অভ্যুত্থানের মত ঘটনা ঘটে এবং পূনরায় নির্বাচন হয়ে রাশিয়ার বিজয় নষ্ট হয়ে যায়।কিন্তু পুতিন অনেক নিপুণতার সাথে ইহার মোকাবেলা করে। সে কূটনৈতিক ভাবে ও সামরিক শক্তি দিয়ে পূর্ব ইউরোপের Crimea উপদ্বীপ দখল করে নেয় এবং ক্রিমিয়ার রাজধানী Sevastopol এ রাশিয়ান সামরিক ঘাঁটি তৈরি করে ফেলে। ফলশ্রুতিতে পশ্চিমা বিশ্ব রাশিয়ার উপর চাপ প্রয়োগ করে ও রাশিয়ার ওপর অর্থনৈতিক অবরোধ আরোপ করে।
অন্যদিকে ইউক্রেন ছিল রাশিয়ার অর্থনীতির জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু পশ্চিমাদের চাপের ফলে রাশিয়া ইউক্রেনের সাথে লজিস্টিক এবং বিনিয়োগ কেন্দ্রিক সমস্ত ধরনের সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন করে। এরপর রাশিয়ার সাথে চীনের একক ব্যবসায়িক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যাতে তারা দুই দেশের মাঝে সম্পদ আমদানি-রপ্তানির অঙ্গীকার করে। যার ফলে রাশিয়া প্রাকৃতিক পেট্রোল ও গ্যাসের সবচেয়ে বড় রপ্তানিকারক ও চীন তাদের আমদানিকারক হয়ে উঠে।
এভাবেই জর্জিয়ার যুদ্ধ, ইউক্রেনীয়ার ঘটনা অতঃপর চীনের সাথে ব্যবসায়িক চুক্তি সবগুলোই রাশিয়াকে অংশীদার নেতৃত্বে পর্যায়ে উঠিয়ে নিয়ে আসে। যারা কখনো অনুগত অথবা অনুমতি অপেক্ষায় থাকা দেশের মতো হবে না। (যেমনটা তুরষ্কের সাথে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ঘটেছে)।
পশ্চিমা বিশ্বের চাপ ও অর্থনৈতিক অবরোধ, ন্যাটোর অন্তর্ভুক্ত দেশগুলো রাশিয়ার সীমান্তে সেনা ছড়িয়ে দেয়া, সেই সাথে রাশিয়ার নিকটবর্তি ইউরোপের সীমান্তে তাদের বিমান ও ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরোধী অস্ত্র ও রাডার স্থাপনের ফলে রাশিয়া অনেকটাই কোণঠাসা হয়ে পরে। এই চাপ থেকে বেড়িয়ে আসার জন্যে তারা তখন ভিন্ন দিকে আধিপত্য বিস্তারের জায়গা খুজা শুরু করে। এবং ইউরোপের সীমানা থেকে দূরে যাওয়ার চেষ্টা করতে থাকে। কেননা পশ্চিমাদের পক্ষ থেকে চাপের ফলে রুশীরা কোন উন্নতি করতে পারছিল না। তখন তারা রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক তৈরির চেষ্টায় মধ্যপ্রাচ্যের দিকে এগিয়ে আসে এবং চীন ও উত্তর কোরিয়ার দিকে অগ্রসর হয়।
সিরিয়ার ঘটনা
সিরিয়ার যুদ্ধ রাশিয়ার জন্যে নতুন প্রাণের সঞ্চার করে। কারণ সিরিয়ান সরকারের পতনের মাধ্যমে আঞ্চলিক শক্তি ইরান ও মিলিশিয়াদের পতন নিকটবর্তী হচ্ছিল। একদিকে ইরান থেকে বিশাল শক্তিশালী দল প্রবেশ করার কারণে শত প্রয়োজন থাকা সত্ত্বেও আমেরিকার সরাসরি ও এককভাবে সেই ভূখণ্ডে প্রবেশ করতে পারছিল না। অন্যদিকে মুক্তিকামী যোদ্ধাদের হাতে সিরিয়া বিজয় ঠেকানো আবশ্যক হয়ে গিয়েছিল। কারণ তাতে সে ভূখণ্ডের শক্তির ভারসাম্য উল্টে যাবে, ইসরাইল ও অন্যান্য মিত্রদের নিরাপত্তা ঝুকির মুখে পড়বে। আর এই সব সমস্যার তাৎক্ষনিক সমাধান হিসেবে বাধ্য হয়ে রাশিয়াকে সিরিয়াতে প্রবেশের রাস্তা খুলে দেওয়া হয়, যা ছিল রাশিয়ার জন্যে বিশাল সুযোগ। এটাই হয়ে ওঠে তার সম্মান ফিরিয়ে আনা শুরু এবং ইউক্রেন ঘটনা পর থেকে রাশিয়ার ওপর থেকে বৈশ্বিক অবরোধ উঠিয়ে নেওয়ার মাধ্যম।এটা ছিল গুরুত্বপূর্ণ মাইলস্টোন যার মাধ্যমে রাশিয়া তার শক্তি ও ক্ষমতাকে বিশ্বের সামনে প্রকাশ করা শুরু করে। কিন্তু রাশিয়া যদিও অনেক দ্রুত উন্নতি করেছে কিন্তু এখনও পর্যন্ত তাকে বৈশ্বিক শক্তি হিসেবে গণ্য করা পর্যায়ে পৌঁছেনি। এমনকি নিকটবর্তী সময়ে আমেরিকার সমপর্যায়ে পৌঁছার সম্ভাবনাও দেখা যায় না। কিন্তু তা সত্ত্বেও রাশিয়ার রাজনৈতিক অভিলাষ, কঠিন সময়ে অর্জিত সফলতা এবং বিপদের মুহূর্তে দ্রুত উন্নতি করা শক্তি তাকে অনেক উপরে উঠিয়ে দিতে পারে।
এগুলো থেকেও বড় কারণ হচ্ছে, আমেরিকার আধিপত্যের সীমা কমে আসা, বিভিন্ন স্থানে দুর্বল হয়ে পড়া এবং আমেরিকার তার সামরিক ও ভৌগলিক গুরুত্বপূর্ণ উপনিবেশ গুলোকে পূনরায় শক্তিশালী নিয়ন্ত্রণ আনতে সক্ষম না হওয়া। তবে এটা নিশ্চিত আমেরিকা যে সমস্ত স্থানে দুর্বল হয়ে পড়েছে সেখানে শুধু রাশিয়া নয়, আরো অনেক রাষ্ট্র তা থেকে ফায়দা নেওয়ার চেষ্টা করবে। উপনিবেশ বানানোর চেষ্টা করবে। তাই গ্লোবাল জিহাদের ক্ষেত্রে এই বিষয়টা মাথায় রাখা জরুরী।
একথা স্বীকৃত, আনুগত বা অংশীদার হওয়া ছাড়াই রাশিয়া নিজেকে নেতৃত্বের পর্যায়ে নিয়ে আসার চেষ্টা করছে। কিন্তু তার ভবিষ্যৎ সফলতা অনেকগুলো কাজের উপর নির্ভরশীল। তার মধ্যে রয়েছে অর্থনৈতিক সক্ষমতার বিশাল উন্নতি, পুতিনের দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় টিকে থাকা, রাষ্ট্রের অগ্রগতির অনুকুল পরিবেশ এবং এমন সামরিক যুদ্ধে জড়িয়ে না পড়া যা তাদের উন্নতির পথে বাধা হয়ে দাঁড়াবে, যেমনটা পূর্বের আফগান যুদ্ধে পরাজয়ের ফলে হয়েছিল।
চীন
চীন সর্বদা নিজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। অন্য ভূখণ্ডে সীমান্ত বৃদ্ধি অথবা সাম্রাজ্যবাদী চিন্তা করে না। অনন্য বড় দেশ সমূহের মত সামুদ্রিক সীমা বৃদ্ধির চেষ্টা করে না। রাশিয়া ও হিন্দুস্তান মত বড় প্রতিবেশী চীনের দুই পাশে বেষ্টন করে রেখেছে। তেমনি আমেরিকাও বেষ্টন করে রেখেছে জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলো এবং দক্ষিণ চীন সাগরে অবস্থিত ঘাটি ও মিত্রদের মাধ্যমে।
চীনের সামরিক ও কূটনৈতিক শক্তি তার সীমানার বাইরে অনেক অল্প
চীনের কমিউনিস্ট চিন্তা-ধারা রাশিয়া অথবা লাতিন আমেরিকানদের কমিউনিস্ট বাদীদের চিন্তা ধারা থেকে ভিন্ন। তারা ভিন্ন দেশে বা শহরে নয় বরং নিজ দেশ সংস্কারের পদ্ধতি অনুসরণ করে। অনেক পূর্ব কাল থেকেই চীন বারবার বিভিন্ন দেশ ও জাতির পক্ষ থেকে দখলদারিত্বের শিকার হয়েছে। ইসলাম আসার পূর্বে ও পরে তাতার এবং মঙ্গোলিয়ান জাতি এবং সর্বশেষ জাপানিরা তাদেরকে দখল করেছিল। তাই চীনের শাসকদের স্ট্রাটেজি সর্বদা আত্মরক্ষামূলক হয়ে থাকে। যার উদ্দেশ্য থাকে চীনের মূল ভূখণ্ডকে রক্ষা করা। অভ্যন্তরীণ ও বহিরাগত আক্রমণ প্রতিরোধ করা।
নিজের খোলস থেকে বেরিয়ে জাতীয় অথবা আন্তর্জাতিক বড় কোন ঘটনায় চীনের অংশগ্রহণ ও প্রভাব বিস্তার একেবারেই নগণ্য। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ থেকে শুরু করে জাপান থেকে স্বাধীনতা অর্জন করা পর্যন্ত সময়টাতে এশিয়ার আঞ্চলিক ঘটনাতেও তার উপস্থিতি দেখা যায় না। তবে কোরিয়া উপদ্বীপের ক্ষেত্রে ভিন্ন।
উত্তর কোরিয়ার সমস্যা অন্যান্য দেশ এমনকি আমেরিকা তুলনায় চীনের জন্য বেশি মাথা ব্যথার কারন। কেননা কোরিয়া উপদ্বীপের যেকোনো অভ্যুত্থান, যুদ্ধ বা বিদ্রোহ চীনের উপর বিশাল প্রভাব সৃষ্টি করবে।
সারমর্ম হচ্ছে, চীন কখনোই তার বর্তমান সক্ষমতা নিয়ে আমেরিকার সমকক্ষ হওয়ার সম্ভাবনা নেই। যদিও তার অর্থনৈতিক ও সামরিক বিশাল শক্তি রয়েছে। তার পক্ষে এতটুকু সম্ভব যে, রাশিয়া অথবা অন্য কোন রাষ্ট্রের সাথে চুক্তিতে আবদ্ধ হবে। তবে তা আমেরিকার সাথে সামরিক যুদ্ধের দিকে নিয়ে যাবে না বা আমেরিকার শক্তির ভারসাম্যে আঘাত করবে না। এই চুক্তি তাকে কোরিয়া উপদ্বীপকে শান্ত রাখতে সাহায্য করবে। এখানে ভিন্ন একটি সম্ভাবনা হচ্ছে, ভবিষ্যতে যখন বিভিন্ন পরিবেশ-পরিস্থিতির কারণে আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী সীমা কমে যাবে। বিভিন্ন দেশের উপর থেকে তাঁর কতৃত্ব শেষ হয়ে যাবে। তখন সে দক্ষিণ এশিয়া ও নিকটবর্তী ছোট ছোট দেশ সমূহতে তার মিত্র তৈরি করবে। (যা বর্তমানে আমরা প্রত্যক্ষ করছি)।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন
(ব্রিটেন-ফ্রান্স-জার্মানি)
(ব্রিটেন-ফ্রান্স-জার্মানি)
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের অনেকগুলো বড় ফলাফলের মধ্যে একটি হচ্ছে, সাম্রাজ্যবাদী দেশগুলোর উপনিবেশিক কার্যক্রম করে যাওয়া। ইহার মূল কারণ হলঃ
- ইউরোপের রাষ্ট্রসমূহ সমুদ্র পাড়ি দিয়ে এশিয়া, আমেরিকা, আফ্রিকা ও অনন্য ভূখন্ড সমূহে দখল করা উপনিবেশিক কলোনিগুলো হস্তচ্যুত হওয়া। যা ছিল তাদের শক্তি ও অর্থের মূল উৎস।
- বিশাল সামরিক শক্তি ধ্বংস হওয়া। সেই সাথে লজিস্টিক ও সংখ্যার দিক থেকে তা পুনরায় গড়ে তোলা কঠিন হওয়া। বিশেষ করে উপনিবেশ গুলো হস্তচ্যুত হওয়ার পর। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরাজয় জার্মানির সামরিক শক্তিকে একেবারে ধ্বংস করে দিয়েছিল। তেমনি ভাবে ফ্রান্সের একই অবস্থা হয়েছিল। অন্যদিকে বৃটেনের সামরিক শক্তি অধিকাংশটাই নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। এই তিনটা দেশ সামরিক ক্ষেত্রে পূর্বের উন্নতিতে ফিরে যাওয়ার সক্ষমতা হারিয়ে ফেলেছিল।
- ইউরোপের অর্থনীতি অনেকটা তাদের পূর্ববর্তীদের কর্মের ভিত্তিতে চলমান। অর্থাৎ পূর্ববর্তীদের ভিবিন্ন দেশ থেকে লুন্ঠিত সম্পদের মাধ্যমেই চলছে।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর রাশিয়া ও আমেরিকা পুরা বিশ্বে ইউরোপের উপনিবেশগুলো দখল করার প্রতিযোগিতায় নামে। এবং দুইটা আন্তর্জাতিক ব্লক হিসেবে পূর্ব ও পশ্চিমের সামরিক বাহিনীতে ভাগ করতে থাকে। এই ক্ষেত্রে ইউরোপের রাষ্ট্রসমূহ স্বাভাবিকভাবেই আমেরিকার অধীনে ছিল। প্রথম দিকে ইউরোপ তার শক্তিকে সংহত করার চেষ্টা করে। কিন্তু ব্রিটেন বাদে বাকি সবগুলোই ছিল পরাজিত রাষ্ট্র। তাই তাদের একক চেষ্টা হতাশায় পরিণত হয়। ফলে তারা সোভিয়েত ইউনিয়নের সাম্রাজ্যবাদী আক্রমন ও বিপদ প্রতিরোধে আমেরিকান ব্লক এর সাথে মিলে যাওয়াকেই বেছে নেয়। 1956 সালের “সুইস যুদ্ধ” ছিল এই দেশ সমূহের জন্য মৃত্যু সনদ। যখন আমেরিকা এবং সেভিয়েত ইউনিয়ন ব্রিটেন ও ফ্রান্সকে মিশর থেকে পরিপূর্ণভাবে চলে যাওয়ার জন্য বাধ্য করেছিল।
এককভাবে ব্রিটেনের অথবা ফ্রান্স কখনোই আন্তর্জাতিক বড় কোনো ঘটনায় সংযুক্ত হয়নি। এমনকি ছোট কোন ঘটনাতেও যুক্ত হয় নি যা তাদের গ্রহণযোগ্য শক্তি-সামর্থের প্রমাণ। তবে ব্যতিক্রম ছিল ব্রিটেন ও আজারবাইজানের মাঝে “ফকল্যান্ড যুদ্ধ” এবং উনিশ শতকে আল-জাযায়েরের জিহাদকে ধ্বংস করার জন্য ফ্রান্সের সেনা সাহায্য। কিন্তু তারপরে বলকান যুদ্ধ, দ্বিতীয় ও তৃতীয় উপসাগরীয় যুদ্ধ, আফগানিস্তানের যুদ্ধ - যেকে বলা হয় আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসের বিরোদ্ধে যুদ্ধ; সবগুলোতেই আমেরিকার তত্ত্বাবধানে এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে তাদের কমান্ডিংয়ে অংশগ্রহন করেছিল। আরব বসন্তের পর ইউরোপের কয়েকটা রাষ্ট্র মিলে লিবিয়াতে যুদ্ধের জড়িয়ে পড়ে, তখন তারা গাদ্দাফিকে পতনের জন্য বিমান হামলা করেছিল।
বর্তমানে তাদের অবস্থা হুবহু একই রয়েছে। বিশেষ করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন একক শক্তি হিসেবে গঠিত হওয়ার চেষ্টা ধ্বংসের পর, যা তাদেরকে আন্তর্জাতিক শক্তি হিসেবে দাঁড় করাতে পারত। সেই সাথে বৃটেনের ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বের হওয়া, ইউরোপের রাষ্ট্র সমূহের মধ্যে ঐক্য তৈরি না হওয়া এবং আভ্যন্তরীণ বিভিন্ন সমস্যা ন্যাট্টোকে ইউরোপের ভূমিতে একক প্রভাবশালী শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে। যার কার্যক্রম পূর্নভাবে পরিচালিত হয় আমেরিকা থেকে।
ইদানীংকালে কিছু কাজের মাধ্যমে ধারণা হচ্ছে, ফ্রান্স তার পূর্বের উপনিবেশগুলোকে ফিরে পেতে চায়। বিশেষ করে আফ্রিকা মহাদেশে, কিন্তু তা সীমিত পরিসরে ও আমরিকার স্বার্থের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ ভাবে। অন্যদিকে জার্মানি যদিও ইউরোপের সবচেয়ে শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ, কিন্তু তারা এখনো পর্যন্ত তাদের পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসতে সক্ষম নয়। তার শক্তির উৎস হচ্ছে শিক্ষাগত উন্নতি, কিন্তু তা শিক্ষাগত শক্তিকে বৃদ্ধি ছাড়া আর কিছুই করতে পারবে না। ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায় তাদের সামরিক উন্নতির সর্বোত্তম সময়েও তারা প্রতিবেশীদের উপর নির্ভরশীল ছিল।
ইউরোপীয় ইউনিয়ন এখন কয়েকটি কাজ গুরুত্বের সাথে আঞ্জাম দিচ্ছেঃ
- আমেরিকার নেতৃত্বে জিহাদি দলগুলোকে ধ্বংস করা।
- মধ্যপ্রাচ্যের আরব বসন্তের পরে সৃষ্ট রাজনৈতিক অস্থিরতাকে শান্ত করা। কেননা এই দেশগুলো স্ট্রেটেজিক ভাবে আমেরিকার তুলনায় তাদের জন্য বেশি গুরুত্বপূর্ণ। সীমিত শক্তির অধিকারী হওয়ার ফলে আমেরিকার তত্ত্বাবধানে থেকেই পূর্বের কিছু সম্পর্ককে মজবুত করার চেষ্টা করছে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত তেমন কোনো গ্রহণযোগ্য ঘটনা প্রকাশ পায়নি যা তাদের সয়ং সম্পূর্ন শক্তির প্রমাণ বহন করে।
- রাশিয়ার সম্প্রসারণশীল শক্তি ও উপনিবেশের মোকাবেলা করা।
আর এই সব কাজই আঞ্জাম দেয়া হচ্ছে আমেরিকার নেতৃত্বে ও নেট্যোর অন্তর্ভুক্ত হয়ে।
- খালেদ মূসা, তিবয়ান
চলবে ইনশাআল্লাহ ...
Comment