Announcement

Collapse
No announcement yet.

আলকায়েদা ও তালেবানের মানহাজগত পার্থক্য : প্রোপাগান্ডা ও বিশ্লেষণ

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • আলকায়েদা ও তালেবানের মানহাজগত পার্থক্য : প্রোপাগান্ডা ও বিশ্লেষণ

    _____________________________________
    ইদানিং ফেসবুকে কিছু ভাই প্রচার করে বেড়াচ্ছে যে, আলকায়েদা ও তালেবানের মানহাজ ভিন্ন। নিঃসন্দেহে এসব কথাবার্তা বিভ্রান্তিকর, অযৌক্তিক ও নিতান্তই অজ্ঞতাপ্রসূত।
    আমি লক্ষ্য করছি, কিছু দ্বীনী ভাই- যাদেরকে আমি আলকায়েদার সমর্থক মনে করি- তাদের এসব অযৌক্তিক ও অনভিজ্ঞ অথচ চটকদার কথাবার্তার মায়াজালে বিভ্রান্তিতে পতিত হচ্ছেন বা অস্বস্তিকর অবস্থায় পড়ছেন। তাদের জন্যই এই লেখাটি।
    আমি আমার সংক্ষিপ্ত জানাশোনা ও অনভিজ্ঞ কলমের মাধ্যমে একথা বুঝানোর চেষ্টা করবো যে, যেই বিষয়গুলোর মাধ্যমে তানযীম আলকায়েদা ও ইমারতে ইসলামিয়া আফগানিস্তানের মানহাজগত পার্থক্য ফুটে উঠে, তার বাস্তবতা আসলে কী?
    আশা করি, এই লিখাটি পাঠ করে আমরা একথাও বুঝে উঠতে সক্ষম হবো, যেই ভাইয়েরা এসব কথা ছড়াচ্ছে, তাদের উদ্দেশ্য হয়তো মুজাহিদিন ও তাদের সমর্থকদের মাঝে বিভ্রান্তি ও ফাটল সৃষ্টি করে ইসলামের বিজয়কে বিলম্বিত করা, নয়তো তারা ইসলামের সমরনীতি, সমকালীন বিভিন্ন যুদ্ধকৌশল এবং আক্রমণাত্মক ও আত্মরক্ষামূলক যুদ্ধের মধ্যকার মৌলিক ও নীতিগত পার্থক্যগুলোর ব্যাপারে চরম অজ্ঞ।
    আসুন, শুরু করা যাক।
    অত্যন্ত ধৈর্য্যের সাথে সবাই কে শেষ পর্যন্ত সাথে থাকার অনুরোধ করছি।
    আমি এই প্রবন্ধের সূচনাতেই এর সর্বশেষ ফলাফলটি ঘোষণা করে দিচ্ছি, যেন প্রতিটি ছত্র এগিয়ে যাবার সাথে সাথে এই ফলাফলের যথার্থতা ও বাস্তবতা পাঠকের হৃদয়ঙ্গম হতে থাকে। আর তা হলো- "আলকায়েদা ও তালিবানের মাঝে পার্থক্য কখনোই মানহাজগত নয়, বরং যুদ্ধকৌশল ও সমরনীতিগত।"
    এই কথাটি মনে রেখে আমরা সামনের দিকে অগ্রসর হতে থাকবো।
    প্রথমে আমাদের তিনটি বিষয় খুব ভালো করে বুঝতে হবে, যেই তিনটি বিষয়ের অজ্ঞতার কথা আমি উপরে উল্লেখ করেছি।
    তা হলো-
    এক. সমকালীন যুদ্ধনীতি।
    দুই. আক্রমণাত্মক ও আত্মরক্ষামূলক যুদ্ধের মাঝে কিছু কৌশলগত পার্থক্য।
    তিন. ইসলামী সমরনীতির একটি বিশেষ দিক।
    .
    >> সমকালীন পশ্চিমা যুদ্ধনীতি
    __________________________
    ১৯৮৯ সালে কয়েকজন প্রথম সারির অ্যামেরিকান সামরিক বিশেষজ্ঞ মতপ্রকাশ করেন, “ভবিষ্যৎ যুদ্ধগুলোর ক্ষেত্রে সামরিক ক্ষেত্রে একটি মৌলিক পরিবর্তন সংঘটিত হবে।”
    তাদের ধারণা ছিল, একবিংশ শতাব্দীতে এক নতুন ধরনের যুদ্ধকৌশলের উদ্ভব ঘটবে এবং পুরনো কৌশলগুলোকে হটিয়ে নতুন এ যুদ্ধকৌশলই যুদ্ধের ময়দান নিয়ন্ত্রন করবে । তারা এর নাম দেন “চতুর্থ প্রজন্মের যুদ্ধ” [Fourth Generation War]। অনেকে একে Assymmetric War বা "শক্তির ভারসাম্যহীনতার যুদ্ধ বলেও অভিহিত করেন।
    সামরিক ইতিহাসবিদদের মত অনুযায়ী ইউরোপের শিল্পবিপ্লবের পর সামরিক কৌশল ও যুদ্ধের ধরন তিনটি মূল পর্যায়ের মধ্য দিয়ে অগ্রসর হয়েছে।
    প্রথম পর্যায় ছিল সারিবদ্ধ ভাবে প্রাথমিক যুগের রাইফেল হাতে বিপুল সংখ্যক সেনা শত্রুর বিপরীতে মুখোমুখি যুদ্ধে লিপ্ত হওয়া।
    দ্বিতীয় পর্যায়ের যুদ্ধের উদাহরণ হল অ্যামেরিকার গৃহযুদ্ধ এবং প্রথম বিশ্বযুদ্ধ। এ যুদ্ধের বৈশিষ্ট্য ছিল প্রবল গুলিবর্ষণের মাধ্যমে যথাসম্ভব শত্রুর সেনা ও শত্রুর সম্পদের ক্ষতি করার চেষ্টা করা।
    তৃতীয় প্রজন্মের যুদ্ধে আগের পর্যায়গুলোর তুলনায় কিছু মৌলিক পরিবর্তন দেখা দেয়। এ প্রজন্মের যুদ্ধের বৈশিষ্ট্য ছিল ট্যাংক ও বিমানের দ্বারা বিভিন্ন সামরিক বিন্যাস [formation] ব্যবহারের মাধ্যমে, শত্রুকে ঘিরে ফেলা।
    বিশেষজ্ঞদের মতে, "চতুর্থ পর্যায়ের যুদ্ধ একটি নতুন ধরনের যুদ্ধ। এতে যুদ্ধ হবে মূলত ছড়িয়ে ছিটিয়ে। কোন নির্দিষ্ট স্থানে যুদ্ধ সীমাবদ্ধ থাকবে না।
    বিশেষজ্ঞরা আরো বলেন, চতুর্থ প্রজন্মের যুদ্ধের ক্ষেত্রে যুদ্ধ ও শান্তির মাঝের পার্থক্যগুলো ক্রমশ মুছে একপর্যায়ে বিলীন হয়ে যাবার অবস্থা হবে। অর্থাৎ যুদ্ধাবস্থা এবং শান্তিকালীন অবস্থার মাঝে যে পার্থক্য আগের পর্যায়গুলোতে ছিল, সেটা চতুর্থ প্রজন্মের যুদ্ধে মুছে যাবে। এক অর্থে বলা যায়, যুদ্ধের চূড়ান্ত ফায়সালার আগে উভয় পক্ষই অবিরাম যুদ্ধে [Perpetual War] লিপ্ত থাকবে।
    আর এ যুদ্ধের প্রতিপক্ষ হবে ভূতের মতো। যার আবির্ভাব ঘটবে হঠাৎ, আবার হঠাৎ করেই সে মিলিয়ে যাবে। একই সময় একাধিক জায়গায় উদয় হবে আবার তাকে ধাওয়া করতে গেলে কিছু বুঝে ওঠার আগেই হারিয়ে যাবে।"
    ১৯৮৯ সালে পশ্চিমা সমরবিদরা এই নতুন ধরনের যুদ্ধের আবির্ভাব নিয়ে আলোচনা করার সময় এ পুর্বাভাসও করেছিলেন যে "চতুর্থ প্রজন্মের যুদ্ধ পশ্চিমা সামরিক শক্তির জন্য বেশ কিছু জটিলতার সৃষ্টি করবে। আর তাই এ যুদ্ধে বিজয়ী হবার জন্য পশ্চিমা সামরিক বাহিনীগুলোকেও মৌলিক ভাবে নিজেদের পরিবর্তন করতে হবে। দর্শন ও বাস্তবায়ন [Ideology & Operation] উভয় ক্ষেত্রে।"(শেষ)
    এখানে লক্ষ্যনীয় যে, যারা আমেরিকা ও তার দোসরদের সাথে 4G স্টাইলে যুদ্ধ করবে, অর্থাৎ যে যুদ্ধে আমেরিকার প্রতিপক্ষ হবে ভূতের মতো, যার আবির্ভাব ঘটবে হঠাৎ, আবার হঠাৎ করেই সে মিলিয়ে যাবে, একই সময় একাধিক জায়গায় উদয় হবে আবার তাকে ধাওয়া করতে গেলে কিছু বুঝে ওঠার আগেই হারিয়ে যাবে- তাদের ক্ষেত্রে আমেরিকার যুদ্ধকৌশল ভিন্ন হবে। আর যারা একটি নির্দিষ্ট ভুখণ্ডে থেকে আমেরিকার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে, তাদের ক্ষেত্রে আমেরিকার যুদ্ধকৌশল ভিন্ন ধরনের হবে।
    মোটকথা, উভয় রকম প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে আমেরিকান 'ওয়ারপলিসি' যেমন ভিন্ন হবে, তেমনি উভয় প্রতিপক্ষের জন্য আমেরিকার বিরুদ্ধে ভিন্ন ভিন্ন যুদ্ধকৌশল ও সমরনীতি গ্রহণ করতে হবে।
    .
    >> আক্রমণাত্মক ও আত্মরক্ষামূলক যুদ্ধের মাঝে মৌলিক কিছু পার্থক্য
    _______________________________
    এটি একটি সাধারণ বিষয় যে, আক্রমণাত্মক ও আত্মরক্ষামূলক যুদ্ধের মাঝে কৌশলগত কিছু ভিন্নতা থাকবে। যেমন আক্রমণকারী দলের যুদ্ধনীতি হয় আগ্রাসী ও আপোসহীন। আক্রমণকারী তার শত্রুকে সুস্পষ্টভাবে শত্রু হিসেবে ঘোষণা করে এবং উপর্যুপরি আক্রমণের মাধ্যমে প্রতিপক্ষকে দুর্বল করে ফেলে।
    অপরদিকে আক্রমণকারীর তুলনায় আত্মরক্ষাকারী যেহেতু স্বাভাবিকভাবেই কিছুটা দুর্বল হয়ে থাকে, সেক্ষেত্রে আত্মরক্ষাকারী তার আঞ্চলিক ও অন্যান্য আদর্শিক শত্রুদের সাথে বিরোধ মিটিয়ে ফেলতে এবং আন্তর্জাতিক জনমতকে পক্ষে নিতে সচেষ্ট হয়, তাদের সহায়তা নেয়ার চেষ্টা করে। এবং এমন সকল বিষয়কে এড়িয়ে চলে, যা তার আঞ্চলিক ও আদর্শিক শত্রুকে তার বিরুদ্ধে নতুন করে উস্কে দেয়, এবং আন্তর্জাতিক জনমতকে তার বিরুদ্ধে নিয়ে যায়।
    .
    >> ইসলামের একটি বিশেষ যুদ্ধনীতি
    ________________________________
    ইসলামী যুদ্ধনীতির একটি বিশেষ দিক হচ্ছে শত্রুদের ধোকার মধ্যে রাখা। রাসূল সা. এর সীরাতে এর অনেক উদাহরণ আছে। গাযওয়ায়ে খন্দকে নুয়াইম বিন মাসউদ ও কা'ব বিন আশরাফকে হত্যার ক্ষেত্রে মুহাম্মাদ বিন মাসলামা রাযি. এর ঘটনা যার মধ্যে অন্যতম।
    সহীহ বুখারী হাদীসে এসেছে রাসূল সা. বলেছেন- " ﺍﻟﺤﺮﺏ ﺧﺪﻋﺔ " যুদ্ধ মানেই ধোকা। ইবনে হাজার রহ. এই হাদীসের ব্যাখ্যায় ফাতহুল বারী তে উল্লেখ করেছেন যে, 'খুদআ' অর্থাৎ ধোকার অর্থ হল, মৌখিকভাবে এমন কথা প্রকাশ করা যা অন্তরের বিপরীত। ইমাম নববী রহ. এর ব্যাখ্যায় লিখেন, সমস্ত ওলামায়ে কেরাম এ ব্যাপারে একমত যে, যুদ্ধের সময় চুক্তি ও আমান ভঙ্গ ছাড়া যে কোনো পদ্ধতিতে ধোকা দেয়া বৈধ। বরং অনেক ফুক্বাহা একে মুস্তাহাবও বলেছেন।
    আশা করি, একজন মনোযোগী পাঠক হিসেবে ইতিমধ্যেই আপনি উপলব্ধি করতে পেরেছেন, কেন আলকায়েদা ও তালেবানের যুদ্ধকৌশলের মাঝে একটি মোটা দাগের পার্থক্য থেকে যাবে, এবং কিভাবে এই রণকৌশলগত পার্থক্যই কখনো উভয় দলের মানহাজগত পার্থক্যের রূপ পরিগ্রহ করতে পারে।
    তবে যারা এখনও স্পষ্টভাবে বোঝেন নি এবং ধৈর্য্যও হারান নি, তাদের কে অনুরোধ করবো আরও কিছুক্ষণ সাথে থাকুন, এবারে আমরা আমাদের মূল আলোচনায় যাবো।
    .
    আসলে যারা জামাত কায়েদাতুল জিহাদ ও ইমারতে ইসলামিয়া আফগানিস্তানের মাঝে মানহাজগত পার্থক্যের দাবি করে থাকে, তাদের এই অসার দাবির ভিত্তি হল ইমারতে ইসলামিয়ার অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে প্রকাশিত বিভিন্ন সময়ের কিছু বার্তা ও বিবৃতি, যেগুলোর মাঝে কৌশলগত কারণে এমন কিছু বিষয় প্রকাশ করা হয়েছে, যাতে বাহ্যিকভাবে আলকায়েদা ও তালেবানের মানহাজগত পার্থক্য ও নীতিগত সাংঘর্ষিকতা ফুটে উঠে।
    এর কিছু উদাহরন হল- আলকায়েদা যেমন মুসলিমদের বিরুদ্ধে আমেরিকাকে সাহায্যকারী সৌদি সহ সকল মুসলিম রাষ্ট্রের শাসকবর্গকে এবং আল্লাহর শরীয়াহ পরিবর্তনকারী মুসলিম দাবিদার রাষ্ট্রপ্রধান ও তাদের সেনাবাহিনীকে তাগূত আখ্যা দেয় এবং তাকফীর করে, ইমারতে ইসলামিয়া সরাসরি এমন ঘোষণা দেয় না। বরং কখনো এজাতীয় নামধারী মুসলিম শাসকদের (বিভিন্ন বার্তা বিবৃতিতে) ভাই হিসেবে সম্বোধন করে।
    এছাড়াও আছে- ইমারতে ইসলামিয়া কর্তৃক আলকায়েদার সবচেয়ে সফল অপারেশন 9/11 এর বরকতময় হামলার সঙ্গে যেকোনো ধরণের সংশ্লিষ্টতা অস্বীকার করা। যেমন ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৭ তে তালেবানের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক বার্তায় উল্লেখ করা হয়-
    "২০০১ এর ৯/১১ এর ঘটনার পর ষোল বছর পেরিয়ে গেছে, অথচ এখনো পর্যন্ত এই ঘটনার প্রকৃত হোতাদের উন্মোচন করতে না কোনো নিরপেক্ষ আন্তর্জাতিক তদন্ত করা হয়েছে, আর না করতে দেয়া হয়েছে। একইভাবে এই শিরোনামের অধীনে গণহত্যা চালানো, দেশ দখল করা বিশ্বে এখনো বন্ধ হয় নি। ইমারতে ইসলামিয়া একেবারে শুরু থেকে এই ঘটনায় যেকোন প্রকারের সংশ্লিষ্টতা অস্বীকার করে এসেছে এবং এই ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছে।
    কিন্তু এসত্ত্বেও আফগান জাতিকে এই ঘটনার কারণে অন্য যেকারো চাইতে বেশি ভোগান্তির শিকার হতে হয়েছে। এই সকল ইঙ্গিত থেকে একটি প্রশ্নই জাগ্রত হয় যে, এটি কি আসলেই পূর্বপরিকল্পিত ষড়যন্ত্র ছিল যার মাধ্যমে ইসলামী ব্যবস্থা এবং ইসলামী পুনর্জাগরণ বিশ্বে রুখে দেয়া যেতে পারে? কারণ এর নাম নিয়ে আমেরিকা ও তার মিত্ররা ইসলামী ব্যবস্থার পতন ঘটিয়েছে, আফগান জাতির স্বাধীনতা হরণ করেছে এবং গোত্রীয় ও সাম্প্রদায়িক রেষারেষি সৃষ্টি করেছে। তারা আমাদের প্রাকৃতিক সম্পদ লুটপাট করেছে একদিকে, অন্যদিকে দেশে বন্দীখানা বানিয়ে মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে।"(শেষ)
    ( এই বক্তব্যের উদ্দেশ্য যে আমেরিকার আগ্রাসীনীতি আর নিরীহ আফগানদের মজলুমিয়্যাত বিশ্ব বিবেকের সামনে তুলে ধরা, তা বুঝতে খুব বেশি বুদ্ধির প্রয়োজন হয় না।)
    যদিও এর বিপরীত তালেবানের অন্যান্য একাধিক বার্তা ও বিবৃতিতে পরক্ষ ও প্রত্যক্ষভাবে উভয় দলের হৃদ্যতা, একতা, তালেবান কর্তৃক আলকায়েদার বাইআহ গ্ৰহণ, 9/11 এর ঘটনার প্রশংসা এবং ইমারতের পক্ষ থেকে আলকায়েদাকে তার সকল কর্মকাণ্ডের জন্য 'ইযনে আম' প্রদান ইত্যাদি বিষয় উঠে এসেছে।
    তবে কুরআনের নীতি অনুযায়ী - যাদের অন্তর বক্র, তারা তো কেবল ধোয়াশাপূর্ণ বিষয়ের পেছনেই লেগে থাকে ফিতনা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে।
    যাই হোক, তবুও আমরা উপরোল্লিখিত আমাদের তিন নীতিমালার ভিত্তিতে এজাতীয় বার্তা ও বিবৃতির কৌশলগত দিকগুলো বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করবো।
    .
    আমরা উপরে জেনে এসেছি 4G warfare তথা চতুর্থ প্রজন্মের যুদ্ধনীতির কথা। এটি এমন এক রণকৌশল, যত বড় সুপার পাওয়ার, অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ও সমরাস্ত্র সমূহের অধিকারীই হোক না কেন, এই কৌশলকে দমন করতে ব্যর্থ। স্বয়ং অ্যামেরিকার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাবেক কর্মকর্তা মাইকেল ভিকারস এই কৌশল সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেছিলেন যে, "আমাদের অস্ত্র-সরঞ্জাম, প্রযুক্তি ও যুদ্ধকৌশল এ ধরনের যুদ্ধের (4th Generation Warfare) জন্য উপযুক্ত না।“
    আলকায়েদা নেতৃবৃন্দের সবচেয়ে সফল আবিষ্কার হলো- এই 4G Warfare যা বিশ্ব ইতিহাসের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে। আমেরিকার সকল স্বপ্নকে ধূলিসাৎ করে দিয়েছে এবং সকল ক্রুসেডার ও যায়নিস্টদের শান্তি-ঘুম কেড়ে নিয়েছে।
    আলকায়েদার উদ্ভাবিত এই ভিন্নধর্মী যুদ্ধকৌশল শক্তি ও সরঞ্জামের সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও তাদের হাতে এমন কিছু বাড়তি সুবিধা এনে দিয়েছে, যা অন্যকোনো ক্ষেত্রে সম্ভব নয়।
    যেহেতু আলকায়েদার নির্দিষ্ট কোনো ভূখণ্ড নেই আবার পৃথিবীর সকল ভূখণ্ডই তাদের ভূখণ্ড, এবং যেহেতু তারা সবরকম ধরাছোঁয়ার বাইরে, হঠাৎ উদয় হয়ে সহসা হারিয়ে যাওয়া অতিপ্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যের অধিকারী, তাই আলকায়েদা মুসলিমদের চিরশত্রু সকল ক্রুসেডার, যায়নিস্ট ও মুসলিম নামধারী তাদের দোসরদের একক ও সম্মিলিত শত্রু হিসেবে ঘোষণা করে একই সাথে তাদের সকলের বিরুদ্ধে এক অমিমাংসিত যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে। এটি সম্ভব হয়েছে কেবল সেই অভূতপূর্ব যুদ্ধকৌশলটি গ্রহণের কারণে।
    এর বিপরীতে তালেবানের অবস্থা ও অবস্থান একদমই ভিন্ন। তারা নির্দিষ্ট একটি ভূখণ্ডে থেকে আমেরিকার বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষামূলক যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে। এই অবস্থায় যদি তারা পুরো পৃথিবীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে, তাহলে কি হিতে বিপরীত না হয়ে উপায় আছে?
    আলকায়েদা পৃথিবীর সকল কুফ্ফার ও তাদের দোসরদের জন্য এক মূর্তমান আতঙ্ক। এক জীবন্ত ত্রাস। শত্রুরা মরিয়া হয়ে তাদের সকল প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে আপ্রাণ চেষ্টা করে যাচ্ছে আলকায়েদার সামান্য চিহ্ন খুঁজে বের করার জন্য। কিন্তু তারা বারবার হতাশ হচ্ছে।
    এমতাবস্থায় 3G নীতিতে যুদ্ধকারী কোনো দলের জন্য কি বুদ্ধিমানের কাজ হবে ঢাকঢোল পিটিয়ে নিজেদেরকে আলকায়েদার সহযোগী ও সহযোদ্ধা হিসেবে ঘোষণা করা?
    তালেবানের অবস্থান যেহেতু নির্দিষ্ট, এই নির্দিষ্ট অবস্থানের উপর পুরো পৃথিবী যদি একযোগে আক্রমণ করে বসে, তাহলে কি আফগানের আর এক ইঞ্চি ভূমিরও অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাবে?
    এই বিষয়টি উপলদ্ধি করেই তো শামে আলকায়েদার শক্তিশালী সমর্থক জাবহাতুন নুসরার আমীর শাইখ জাউলানী হাফি. আলকায়েদার নেতৃবৃন্দের পরামর্শক্রমে আলকায়েদার সাথে নিজেদের সম্পর্ক ত্যাগের ঘোষণা দিয়েছিলেন।
    অতএব আবস্থার চাহিদা অনুযায়ী তো ইমারতে ইসলামিয়ার যুদ্ধকৌশল কিছুটা আপোসমূলক হওয়ারই দাবি করে। যেখানে সে তার শত্রু সংখ্যা কমিয়ে আনবে। শত্রুকে শান্তি আলোচনার আহ্বান জানাবে। এবং কখনও আন্তর্জাতিক জনমতকে পক্ষে টানার জন্য সুকৌশলে আলকায়েদার কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা অস্বীকার করবে।
    আর হচ্ছেও এমনটাই। তাই বলে কি একে মানহাজগত পার্থক্য বলা যাবে? এটা তো স্রেফ কৌশলগত পার্থক্য। যা কিনা কেবল কিছু রাজনৈতিক বার্তা বিবৃতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ।
    এছাড়াও আত্মরক্ষামূলক যুদ্ধের কৌশলগত দাবিও তো এই যে, অন্যান্য আঞ্চলিক শত্রুদের সাথে সমঝোতা করে মূল শত্রুর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা।
    অবশ্যই আলকায়েদার যারা শত্রু, তারা তালেবানেরও শত্রু। বরং পুরো মুসলিম বিশ্বেরই তারা শত্রু। কিন্তু এই প্রেক্ষাপটে কি তালেবানের জন্য সকলকে একইসাথে শত্রু ঘোষণা করাটা সমীচীন হবে?
    এজন্যই দেখা যায়, বর্তমান আলে সৌদের তাগূত শাসকবর্গকে, যারা আসলেই ইসলাম ও মুসলিমদের চরম শত্রু, যারা নববী ভূখণ্ডের পবিত্রতা নষ্টকারী, আমাদের প্রথম কিবলা বাইতুল মাকদিসের বিক্রেতা, কখনও ইমারতে ইসলামিয়ার অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে তাদেরকে ভাই হিসেবে সম্বোধন করে। এটি তো স্রেফ একটি রাজনৈতিক বক্তব্য, যার উদ্দেশ্য হতে পারে মুসলিমদের রক্ত হালালকারী আমেরিকার প্রধান মিত্র সৌদি শাসকদের রক্তচক্ষু থেকে আফগানকে পবিত্র রাখা।
    আর ইসলামের অন্যতম যুদ্ধনীতি- " ﺍﻟﺤﺮﺏ ﺧﺪﻋﺔ " এর দাবি অনুযায়ী তো এজাতীয় ধোকা ও প্রতারণামূলক বক্তব্য তো শুধু বৈধই না বরং মুস্তাহাব বিষয়।
    বস্তুত বিরোধপূর্ণ এসব বক্তব্য এই নীতির আলোকেই দেয়া হয়। অন্যান্য শত্রুদের দমিয়ে রেখে, সীমিত শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করে, একক শত্রুর মোকাবেলায় প্রতিরোধ যুদ্ধকে জোরদার করার জন্য।
    আর এজাতীয় যুদ্ধ-কৌশলগত পার্থক্যকেই কেউ কেউ মানহাজগত পার্থক্য ভেবে ধোকা খায় কিংবা পার্থক্য ধরে নিয়ে অন্যদের ধোকা দেয়। এরা হয়তো অন্ধ, অজ্ঞ কিংবা ফিতনা সৃষ্টিকারী। এরা কি দেখেনি ইমারাতে ইসলামিয়ার পর পর তিনজন আমীর আলকায়েদার বাইআহ গ্ৰহণ করেছেন?
    প্রিয় ভাইয়েরা! আশা করি আপনারা বুঝতে পেরেছেন, যেই বিষয়গুলোকে জামাত কায়েদাতুল জিহাদ ও ইমারাতে ইসলামিয়া আফগানিস্তানের মাঝে মানহাজগত পার্থক্য হিসেবে প্রচার করা হয় তা মূলত মানহাজগত পার্থক্য না, বরং যুদ্ধ-কৌশলগত পার্থক্য।
    আক্রমণাত্মক যুদ্ধ ও আত্মরক্ষামূলক যুদ্ধের মাঝে কৌশলগত কিছু পার্থক্য থাকাই কি স্বাভাবিক নয়? কৌশলগত পার্থক্য আর মানহাজগত পার্থক্য কি একই জিনিস?
    .
    (কায়েদাতুল জিহাদের আরবী ম্যাগাজিন “আল-আনসার”-এর দ্বিতীয় সংখ্যায় প্রকাশিত প্রবন্ধ “Fourth-Generation Wars” ও অন্যান্য সূত্র অবলম্বনে)
    আমরা হয়তো বাঁচি, নয়তো শহীদ হই!

  • #2
    একদমই সত্য কথাগুলো লিখলেন ভাই ।
    আল্লাহয় আপনাকে ক্ববুল করেন । আমিন।
    জাজাকাল্লাহ।ভাই

    Comment


    • #3
      mashaallah.
      খুবই চমৎকার লেখা।
      আল্লাহ কবুল করুন। আমীন

      Comment


      • #4
        ফেসবুকে যে ভাইয়েরা আছেন এই পোষ্টটি ছড়িয়ে দেওার অনুরোধ।

        Comment


        • #5
          আলহামদুলিল্লাহ যেন পানি দুধ পরিষ্কার ভাবে পৃথক হয়ে পড়েছে অতঃপর সংশয় ও বিভ্রান্তির আর কোন অবকাশ থাকেনা। আল্লাহ তায়ালা তাওফীক বাড়িয়ে দিন।

          Comment


          • #6
            জঙ্গিরা কোন লেভেলে কথা-বার্তা বলে! মুরতাদ গোয়েন্দাদের ঘুম হারাম হয়ে যাওয়া উচিত!!!
            "যতদিন পৃথিবীতে ফিতনা আছে, ততদিন জিহাদ প্রাসংগিক।
            আর যুগে যুগে কিছু মানুষের ফিতরাতই হচ্ছে ফিতনার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো, তাঁদের কোন যুক্তির প্রয়োজন পড়ে না
            "

            Comment


            • #7
              জাযাকাল্লাহু খাইরান। ভাই অনেকদিন সংশয়ের মধ্যে ছিলাম। আজ ১০০% পরিষ্কার হলাম।
              ভাই আল-আনসার ম্যাগাজিনের লিংক দিলে খুবই উপকার হবে। জাযাকুমুল্লাহ।

              Comment


              • #8
                আল্লাহ তায়ালা সত্যকে উম্নোচিত করে দিন। ফেতনা অন্ধকার রাতের আধারের ন্য্য ধেয়ে আসছে...পানাহ আল্লাহর।

                Comment


                • #9
                  অনেক কিছুই ক্লিয়ার হলো। জাযাকাল্লাহ আখি

                  Comment


                  • #10
                    جزاك الله أخي

                    Comment


                    • #11
                      جزاك الله يا اخي كتبت فاحسنت، بينت حتي تبين بين الظلمات و النور و بين الليل و النهار فبقاك الله اثرك لشفاء القلوب العليل

                      Comment


                      • #12
                        তালিবান আল কায়দা যে, একই সুতোই গাথা আল কায়দার লোকদের আফগানে অবাধে বিচরণ করা দেখলেই বুঝা যায়।
                        ولو ارادوا الخروج لاعدواله عدةولکن کره الله انبعاثهم فثبطهم وقیل اقعدوا مع القعدین.

                        Comment

                        Working...
                        X