“মানহাজের ব্যাপারে নির্দেশনা”
আলোচনায়ঃ শাইখ উসামাহ্* ইব্*ন লাদিন (রহিমাহুল্লাহ্*)
আনসারুল্লাহ বাংলা টীম
পরম করুণাময় এবং অসীম দয়ালু আল্লাহ্*র নামে শুরু করছি ।
সকল প্রশংসা শুধুমাত্র আল্লাহ্*র জন্য, যিনি জগৎসমূহের প্রতিপালক, আর, সলাত ও সালাম বর্ষিত হোক মুহাম্মাদ, তাঁর পরিবার এবং তাঁর সাহাবীগণের প্রতি ।
এরপর,
মুসলিম উম্মাহ্* বর্তমান যে দিনগুলোর মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, আর আমেরিকান এবং ইসরায়েলী শক্তিসমূহের দখলদারি ও অত্যাচার ও আগ্রাসন থেকে যা কিছু এই উম্মাহ্*র উপর সংঘটিত হয়েছে, আর পৃথিবীর বুক থেকে ইসলামের সুশীতল ছায়া যেভাবে ক্রমশঃ কমে যাচ্ছে, আমরা যখন এসব নিয়ে কথা বলি, তখন এই দ্বীন ইসলাম প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে মুহাম্মাদ ( ) -এর দেখানো পথনির্দেশনার অনুসন্ধান করা আমাদের জন্য একান্ত জরুরী হয়ে পড়ে, সেই দিনটি থেকে, যেদিন এটি একটি অচেনা বিষয় হিসেবে ইসলামের সূচনালগ্নে আবির্ভূত হয়েছিল ।
সুতরাং নিশ্চিতভাবে, যে পর্যবেক্ষণ করে, সে পর্যবেক্ষণ করে দেখেছে যে, মুহাম্মাদ ( ) যখন বিভিন্ন গোত্রের কাছে দা’ওয়াহ্*-এর জন্য কথা বলেছেন এবং ইসলামের দা’ওয়াহ্* উপস্থাপন করেছেন, তখন তিনি খুব সচেতন ছিলেন। আর যখন আমরা সেই মূল বিষয়গুলোকে পর্যবেক্ষণ করি, যেগুলোর প্রতি তিনি ( ) বিভিন্ন গোত্রকে আহবান করেছিলেন, তখন আমরা দেখতে পাই যে, সেগুলো খুবই স্পষ্টঃ
১। তিনি ( ) তাদেরকে তাওহীদের সাক্ষ্য প্রদানের জন্য আহবান করেছিলেন, যা হল, আল্লাহ্* ব্যতীত ‘ইবাদাত পাবার যোগ্য কোন ইলাহ নেই, এবং মুহাম্মাদ আল্লাহ্*র রসূল।
২। আর এরপর তিনি ( ) তাদেরকে আহবান করেছিলেন, যেন তারা তাকে ( ) নিরাপত্তা প্রদান করে এবং সাহায্য করে ।
আর তিনি ( ) যখন আমীর সা’সা‘আহ্*-এর বংশধরদের প্রতি দা’ওয়াহ্* দিয়েছিলেন, তখন এটি পরিষ্কারভাবে প্রকাশিত হয়েছিল । কারণ যখন তারা তাকে ( ) জিজ্ঞেস করেছিলঃ “ও ‘আরব ভাইজান, আপনি কিসের প্রতি আমাদেরকে আহবান করছেন?” তিনি ( ) বলেছিলেনঃ “আমি আপনাদেরকে সেই সাক্ষ্য প্রদানের দিকে আহবান করছি যে, আল্লাহ্* ব্যতীত ‘ইবাদাত পাবার যোগ্য কোন ইলাহ নেই, এবং আমি আল্লাহ্*র রসূল, এবং যে, আপনারা আমাকে নিরাপত্তা দিবেন এবং সাহায্য করবেন ।”
সুতরাং, এখানে একটি পরিষ্কার স্মরণীয় শিক্ষা দেখা যাচ্ছে যে, এই দা’ওয়াহ্* আর এই কালিমার অবশ্যই একটি ভূখন্ডের প্রয়োজন, আর এই পবিত্র বৃক্ষের প্রয়োজন একটি ভূমির, যার উপর এটি বেড়ে উঠবে। সুতরাং, এই ভূখন্ডটি হবে এই দা’ওয়াহ্*কে নিরাপত্তা প্রদান ও সাহায্য করার মাধ্যম। আর এ থেকেই তিনি ( ) এই ভূখন্ডের সন্ধান করছিলেন, আর সেই সাথে মক্কাতে দা’ওয়াহ্* দিচ্ছিলেন, আর এ অবস্থায় তিনি ( ) রইলেন ১৩ বছর ।
আর আমাদের যত ‘ইল্*ম রয়েছে, তা তাঁর ( ) ইলমের অতি ক্ষুদ্র একটি অংশ, আর তিনি ছিলেন ‘আরবদের মধ্য থেকে সবচেয়ে সাবলীলভাষী, যাকে জাওয়ামি’উল-কালাম (সবচাইতে সংক্ষিপ্ত শব্দের দ্বারা ব্যাপক অর্থের প্রকাশ) দেওয়া হয়েছিল, তিনি ছিলেন সেই ব্যক্তি যাকে সপ্ত আকাশের ওপর থেকে ওহীর মাধ্যমে সাহায্য করা হয়েছিল। আর এই সবকিছুর পরে, অল্পকিছু মহৎপ্রাণ সাহাবী (রাযিআল্লাহু আনহু) ছাড়া আর কেউই তাঁর ( ) উপর ঈমান আনেনি ।
আর এখানে এই বিষয়টিও স্বচ্ছ হয়ে উঠে যে, এই কালিমাটি, এটির শক্তিশালী হওয়া সত্ত্বেও, এটির সুশীতল ছায়ার দ্বারা এই পৃথিবীকে ছায়াবৃত করার জন্য আরও কিছু প্রভাবক প্রয়োজন । আর তাই তিনি ( ) সেই অবস্থায় (মক্কাতে দা’ওয়াহ্*রত অবস্থায়) রইলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত না আল্লাহ সুবহানাহু তা‘আলা আল-মাদীনাহ্* আল-মুনাওয়্যারাহ্*-এর দ্বার খুলে দিলেন, আর আনসারগণের (রাযিআল্লাহু আনহু) [আল-আওস এবং আল-খাযরাজ ] দ্বারা এর সংরক্ষণ করলেন। আর যখন তারা [আনসার(রাযিআল্লাহু আনহু)] দা’ওয়াহ্*-কে সাহায্য করা শুরু করলেন, তখন দ্বীন ইসলাম ছড়িয়ে পড়লো, আর কয়েক বছরের মাঝেই ‘আরব উপদ্বীপের হাজার হাজার মানুষ ইসলাম গ্রহণ করলো, আর মানুষেরা ইসলামের মাঝে দলে দলে ভিড় জমালো ।
সুতরাং, এখানে একটি স্মরণীয় শিক্ষা দেখা যাচ্ছে, যা আমি উল্লেখ করেছি যে, শক্তি ছাড়া দা’ওয়াহ্* দুর্বলই রয়ে যাবে, আর এই শক্তির সন্ধান করার জন্য, একটি ভূখন্ড, একটি পরিবেশ থাকা খুবই জরুরী ।
ইসলামিক ভূমিসমূহ ও ইসলামিক খিলাফাহ্*-এর অপসারণ এবং আল্লাহ্* যা নাযিল করেছেন তা ব্যতীত অপর কিছু দিয়ে শাসন করে এমনসব শাসনব্যবস্থাসমূহের প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই বাস্তবতাটি এখন খুবই স্বচ্ছ হয়ে পড়েছে । এ সকল শাসনব্যবস্থাসমূহ প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ্*র আইনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত রয়েছে, যদিও এগুলোর শাসনাধীন ভূখন্ডসমূহে প্রচুর পরিমাণে ইসলামিক ইউনিভার্সিটি ও স্কুল দেখা যায়, প্রচুর কিতাবাদি দেখা যায়, আর দেখা যায় প্রচুর দা’য়ী, ইমাম, মাসজিদ এবং ক্বুরআনের হাফিয । আর এ সবকিছুর পরেও এ সকল স্থানে ইসলাম ধীরে ধীরে মুছে যাচ্ছে, এর কারণ হল, এ সকল স্থানের মানুষেরা মুহাম্মাদ ( )-এর মানহাজ অনুসারে চলছে না ।
সুতরাং, এই মানহাজ, যা আমাদের সামনে সুবাহের ন্যায় স্বচ্ছ, তা কিছু সুনির্দিষ্ট গুণাবলীকে অন্তর্ভুক্ত করে, যা শারী‘আহ্*-এর দালীলে পাওয়া যায়। আল্লাহ্* সুবহানাহু তা‘আলা বলেছেনঃ “হে ঈমানদারগণ! তোমাদের থেকে যে কেউই তাদের দ্বীন পরিত্যাগ করে, তবে আল্লাহ্* অপর এক ক্বওম নিয়ে আসবেন, যাদেরকে আল্লাহ্* ভালোবাসবেন, এবং যারা আল্লাহ্*কে ভালোবাসবে, তারা ঈমানদারদের প্রতি সহানুভূতিশীল এবং কুফ্*ফারদের প্রতি অতি কঠোর, তারা আল্লাহ্*র রাস্তায় জিহাদ করে, এবং নিন্দুকের নিন্দার পরোয়া করে না। এটা আল্লাহ্*র অনুগ্রহ, যা তিনি যাকে ইচ্ছা দান করেন, আর আল্লাহ্* প্রাচুর্যদানকারী, সর্বজ্ঞ।” [আল-মাইদাহঃ৫৪]
সুতরাং, এই আয়াতটি আমরা যে অবস্থার মধ্যে আছি সেই সম্পর্কে বলছেঃ “হে ঈমানদারগণ! তোমাদের থেকে যে কেউই তাদের দ্বীন পরিত্যাগ করে,...”
যখন রিদ্দাহ্*/দ্বীন-ত্যাগ সংঘটিত হয়, তখন মানুষকে দ্বীন ইসলামে ফিরিয়ে আনার জন্য কি কি গুণাবলীর প্রয়োজন? তো এখানে ৬টি গুণের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, আল্লাহ্* সুবহানাহু তা‘আলার কথা থেকে শুরু করেঃ “...যাদেরকে আল্লাহ্* ভালোবাসবেন, এবং যারা আল্লাহ্*কে ভালোবাসবে, তারা ঈমানদারদের প্রতি সহানুভূতিশীল এবং কুফ্*ফারদের প্রতি অতি কঠোর,...”। সুতরাং, এই গুণাবলী অর্জন করা আমাদের জন্য খুবই জরুরীঃ
[১] আল্লাহ্* সুবহানাহু তা‘আলার প্রতি একান্ত ভালোবাসা
[২] ঈমানদারদের প্রতি বিনয় ও সহানুভূতি
[৩] কল্যাণের সাথে সাহায্য করা এবং তা করা সর্বোত্তম পদ্ধতিতে
[৪] কুফ্*ফারদের প্রতি কঠোরতা, আর এটা ইসলামের সবচাইতে শক্তিশালী বন্ধনঃ আল-ওয়ালা’ ওয়াল-বারা’ (আনুগত্য এবং সম্পর্কচ্ছেদ)-এর মাধ্যমে প্রকাশিত হয়, আমরা ঈমানদারদের সাথে আনুগত্য ও কর্তব্যপরায়ণতার সম্পর্ক স্থাপন করি, এবং আমরা কুফ্*ফারদের প্রতি শত্রুতা পোষণ করি, আর তাদের সাথে খুব কঠোর আচরণ করি ।
[৫,৬] এরপর ৫ম এবং ৬ষ্ঠ গুণাবলী হলঃ “...তারা আল্লাহ্*র রাস্তায় জিহাদ করে, এবং নিন্দুকের নিন্দার পরোয়া করে না...”।
আর, মানুষদেরকে দ্বীনে ফিরিয়ে আনার জন্য, আল্লাহ্*র রাস্তায় জিহাদ করা, এবং নিন্দুকের নিন্দার পরোয়া না করা - এ বৈশিষ্ট্য দু’টির গুরুত্ব অত্যাধিক।
সুতরাং, যারা এমন মনে করে যে, মানুষকে দ্বীনে ফিরিয়ে আনা সম্ভব (এই গুণাবলী অর্জন ব্যতীত) এবং একটি ইসলামিক ভূমি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব, যখন কিনা ইসলামের ছায়া পৃথিবীর বুক থেকে অপসারিত হয়েছে, তবে এমন মানুষেরা প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ্* সুবহানাহু তা‘আলার মানহাজ উপলদ্ধি করতে পারেন নি । কারণ এই আয়াতটি সম্পূর্নরূপে স্বচ্ছ এবং স্পষ্টত প্রতীয়মান একটি আয়াত ।
সুতরাং, মানুষের উপর কর্তৃত্বশীল হবার জন্য ঈমানদারদের মাঝে ভালোবাসা এবং আনুগত্যের সম্পর্কস্থাপন করা একটি অতি প্রয়োজনীয় বিষয়, আর সেই সাথে কর্তৃত্বশীল হবার জন্য অত্যাবশ্যক হল, কুফ্*ফারদের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করা, আর আল্লাহ্*র রাস্তায় জিহাদ করা [যেমনটি তিনি সুবহানাহু তা‘আলা বলেছেনঃ “...নিন্দুকের নিন্দার পরোয়া করে না...”]। সুতরাং, এটি সকল প্রকারের সাহায্য-সহযোগিতা এবং সকল প্রকারের সৎকাজের আদেশকে অন্তর্ভুক্ত করে ।
সুতরাং, যখন আমরা এ সকল গুণাবলী অর্জন করতে সফল হব, এবং এমন সাহায্যকারী গঠন করতে পারব যারা এ সকল গুণাবলী ধারন করে, তবে আমরা একটি শক্তিশালী ভিত্তি পাব, যার দ্বারা বড় পরিবর্তন সম্ভব হয়ে উঠবে, আর সত্যকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য আল্লাহ্*র রাস্তায় জিহাদ করা সম্ভব হয়ে উঠবে ।
আর এই বাস্তবতার সাথে সম্পর্কিত অন্যান্য দালীলসমূহের দিকে তাকালে আমরা আমাদের রসূলুল্লাহ্*র ( ) সেই হাদীসটি দেখতে পাই যা, আল-হারিস আল-আশ‘আরীর (রাযিআল্লাহু আনহু) দ্বারা বর্ণিত হয়েছে, যাতে তিনি ( ) বলেছেনঃ “নিশ্চয়ই আল্লাহ্* ইয়াহ্*ইয়া ইব্*ন যাকারিয়্যাহ্*কে পাঁচটি বিষয়ের হুক্*ম দিয়েছিলেন, যেগুলোর উপর তাকে ‘আমল করার জন্য এবং তিনি যেন এগুলোর উপর ‘আমল করার জন্য বনু ইসরঈলকে আদেশ দেন, সেই আদেশ দেওয়া হয়েছিল । কিন্তু তিনি তা করা থেকে বিরত থেকেছিলেন, তাই ‘ঈসা বললেনঃ ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ্* আপনাকে পাঁচটি বিষয়ের হুক্*ম দিয়েছেন, যেগুলোর উপর আপনাকে ‘আমল করার জন্য এবং আপনি যেন বনু ইসরঈলকে এগুলোর উপর ‘আমল করার আদেশ দেন, সেই আদেশ দেওয়া হয়েছে। সুতরাং, হয় আপনি তাদের আদেশ করুন, অথবা আমি তাদের আদেশ করব।’”
সুতরাং, এখানে এই দ্বীনের একটি পরম বাস্তবতা দেখা যাচ্ছে, আর তা হল, আল্লাহ সুবহানাহু তা‘আলা প্রশংসনীয় এবং সকল প্রকারের নির্ভরশীলতা থেকে মুক্ত, আর আল-ইসতিবদাল (আল্লাহ্*র একদল মানুষকে অপর একদল মানুষের দ্বারা প্রতিস্থাপন) সুন্নাহ্*টি কারোও ক্ষেত্রেই ব্যতিক্রম নয় । কারণ এখানে দেখা যাচ্ছে যে, একজন আল্লাহ্*র নাবী আল্লাহ্* যে দায়িত্ব বহন করার আদেশ দিয়েছেন, তাতে কিছুমাত্র পিছবা হয়েছেন, আর তাই আল্লাহ্* সুবহানাহু তা‘আলা অপর এক নাবীকে জানালেন, “হয় তিনি [ইয়াহ্*ইয়া (আঃ)] তাদেরকে আদেশ করবেন, নতুবা আপনি তাদেরকে আদেশ করেন ।” সুতরাং, আল্লাহ্* ও তার রসূলের ( ) আদেশ পালনের ক্ষেত্রে পিছে পরে থাকার ক্ষেত্রে আমরা কে? সুতরাং, যদি আমরা পিছবা হই, তবে আল-ইসতিবদাল সুন্নাহ্*টি আমাদের উপরও প্রযোজ্য হয়ে পড়বে।
ফলে ‘ঈসা (আঃ) তখন ইয়াহ্*ইয়াকে (আঃ) বললেনঃ “নিশ্চয়ই আল্লাহ্* আপনাকে পাঁচটি বিষয়ের হুক্*ম দিয়েছেন, যেগুলোর উপর আপনাকে ‘আমল করার জন্য এবং আপনি যেন বনু ইসরঈলকে এগুলোর উপর ‘আমল করার আদেশ দেন, সেই আদেশ দেওয়া হয়েছে। সুতরাং, হয় আপনি তাদের আদেশ করুন, অথবা আমি তাদের আদেশ করব।” ফলে ইয়াহ্*ইয়া বললেন, “আমি ভয় করছি যে, আপনি যদি এগুলোতে আমার অগ্রগামী হন, তাহলে আমি পৃথিবীর দ্বারা গ্রাসকৃত হব অথবা শাস্তিপ্রাপ্ত হব।” ফলে, তিনি মানুষদেরকে বাইতুল-মাক্বদীসে একত্র করলেন, যার ফলে সমগ্র মাসজীদ মানুষদের দ্বারা ভরে গেল, আর তারা দাঁড়িয়েছিলেন ছাদের উপরে, এবং তিনি বললেনঃ
“নিশ্চয়ই আল্লাহ্* আমাকে পাঁচটি বিষয়ের হুক্*ম দিয়েছেন, যেগুলোর উপর আমাকে ‘আমল করার জন্য এবং আমি যেন তোমাদেরকে এগুলোর উপর 'আমল করার আদেশ দেই, সেই আদেশ দেওয়া হয়েছে”
প্রথমটি হল, তোমরা আল্লাহ্*র ‘ইবাদাত করবে এবং তার সাথে কোন শরীক সাব্যস্ত করবে না । কারণ, যে ব্যক্তি আল্লাহ্*র সাথে কাউকে শরীক করে, তার উদাহরণ হল সেই দাসের উদাহরণের ন্যায়, যাকে এক ব্যক্তি তার সর্বোত্তম স্বর্ণ ও রৌপ্য সম্পদের দ্বারা ক্রয় করেছে এবং বলেছেঃ ‘এই হল আমার ঘর এবং আমার জীবিকার উপকরণ, সুতরাং কাজ কর এবং আমার কাছে এর মজুরি নিয়ে এসো ।’ সুতরাং, সে কাজ করতে গেল আর এর থেকে অর্জিত মজুরি তার মালিক ব্যতীত অপর এক ব্যক্তিকে দিয়ে দিল। সুতরাং, তোমাদের মধ্য থেকে কে তার দাসের এরূপ আচরণ মেনে নিবে ?
আর আল্লাহ্* তোমাদেরকে সলাত আদায় করার আদেশ দিয়েছেন । সুতরাং, যখন তোমরা সলাতে নিমজ্জিত থাকো, তখন তোমরা তোমাদের মুখমন্ডলী ঘুরিয়ে নিও না, কারণ নিশ্চয়ই বান্দা যতক্ষণ সলাতে নিমজ্জিত থাকে, এবং মুখমন্ডলী না ঘুরিয়ে একনিষ্ঠ মনে সলাতে অবস্থান করে, ততক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহ্*ও তার মুখমন্ডলী তার বান্দার দিক করে রাখেন।
এবং তিনি তোমাদেরকে সিয়াম পালনের আদেশ দিয়েছেন, কারণ এর উদাহরণ হল সেই ব্যক্তির উদাহরণের ন্যায়, যে কোমরবন্ধনী (অর্থাৎ বেল্ট) পরিহিত, আর এর সাথে আটকানো রয়েছে একটি থলে যাতে রয়েছে কস্তুরি, আর সকল মানুষেরা (অথবা সে নিজেই) এর সুগন্ধে বিস্ময় বোধ করছে । কারণ, নিশ্চয়ই সিয়ামপালনকারী ব্যক্তির মুখ থেকে আসা গন্ধ আল্লাহ্*র কাছে কস্তুরির সুগন্ধ অপেক্ষাও অধিক প্রিয়।
এবং তিনি তোমাদেরকে যাকাত প্রদানের আদেশ করেছেন, কারণ এর উদাহরণ হল সেই ব্যক্তির উদাহরণের ন্যায়, যাকে তার শত্রুপক্ষ বন্দী করেছে, তার হাতদু’টি ঘাড়ের সাথে বেঁধেছে এবং তার শিরচ্ছেদের জন্য তাকে প্রস্তুত করা হয়েছে, আর এমন সময় সে বলেছেঃ ‘আমি অল্প কিংবা বেশী পরিমাণ মুক্তিপণের বিনিময়ে আমাকে তোমাদের থেকে মুক্ত করব’, সুতরাং সে নিজেকে তাদের থেকে মুক্ত করল ।
আর আল্লাহ্* তোমাদেরকে তার যিক্*র/স্মরণ করার জন্য আদেশ করেছেন, কারণ এর উদাহরণ হল সেই ব্যক্তির উদাহরণের ন্যায়, যাকে তার শত্রু ধাওয়া করছে এবং দ্রুততার সাথে তার নিকটবর্তী হচ্ছে, আর তখন সে একটি সংরক্ষিত দুর্গের নিকট পৌছলো, আর এভাবে সে তাদের থেকে নিজেকে রক্ষা করল । আর একইভাবে বান্দার জন্য আল্লাহ্*র যিক্*র/স্মরণ হল সংরক্ষিত দুর্গের ন্যায়, যেটি ব্যতীত সে নিজেকে শাইতন থেকে রক্ষা করতে পারে না।”
আর এরপর আল্লাহ্*র রসূল ( ) বললেনঃ “আর আমি তোমাদেরকে পাঁচটি বিষয়ের আদেশ করছি, যা আল্লাহ্* আমাকে আদেশ করেছেন, আর তা হলঃ শ্রবন, আনুগত্য, জিহাদ, হিজরাহ্* এবং জামা‘আহ্*।”
[ইমাম আহ্*মাদ ও ইমাম আত্*-তিরমিযির দ্বারা বর্ণিত]
সুতরাং, এখানে বিষয়টি হল, প্রথম পাঁচটি বিষয় যা হল ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভ, এগুলোকে অপর পাঁচটি বিষয় ব্যতীত মানবজাতির জন্য একটি শাসনব্যবস্থা বা কর্মপদ্ধতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয় । একইভাবে একজন ব্যক্তির পক্ষে কমপক্ষে এবং অন্তরের দিক দিয়ে মুসলিম হওয়া সম্ভব নয়, যখন সে মানবরচিত বিধানের দ্বারা শাসন করে এবং পৃথিবীতে ইসলামের কর্তৃত্ব থাকে না । আর যে ইসলাম মুহাম্মাদ ( ) -এর কাছে পাঠানো হয়েছিল এবং যেটিকে তিনি মানুষের কাছে পৌছে দেওয়ার জন্য আদিষ্ট হয়েছিলেন, সেটি পাঠানোর কারণ হল, এটি যেন সমগ্র পৃথিবীকে শাসন করে, সকল প্রকারের বিচার-আচার যেন এটির দিকেই ঘুরিয়ে নেয় এবং নিছক কিছু আনুষ্ঠিকতার রূপ যেন না নেয়। সুতরাং, এই পাঁচটি বিষয় অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আর আমরা যদি এই পাঁচটি বিষয়কে মনযোগ দিয়ে দেখি, তাহলে আমরা দেখতে পাই যে, বিভিন্ন গোত্রের প্রতি রসূল ( ) -এর দা’ওয়াহ্*-এর বাস্তবতার সাথে এই পাঁচটি বিষয় সম্পূর্নরূপে সঙ্গতিপূর্ণ এবং দৃঢ়সমর্থকঃ
[১] “...সেই সাক্ষ্য প্রদানের দিকে আহবান করছি যে, আল্লাহ্* ব্যতীত ‘ইবাদাত পাবার অধিকারী কোন ইলাহ নেই, এবং আমি আল্লাহ্*র রসূল,...” এবং এই সাক্ষ্য প্রদানের সাথে জড়িত সকল শর্তাবলি ও করণীয় বিষয়ের বাস্তব প্রয়োগ।
[২] “...এবং যে, আপনারা আমাকে নিরাপত্তা দিবেন এবং সাহায্য করবেন।”
সুতরাং, নিরাপত্তা প্রদান ও সাহায্য করা - এ দু’টি বিষয় ঐ পাঁচটি বিষয়ের উপর নির্ভরশীল। কারণ নিরাপত্তা প্রদান ও সাহায্য প্রদানের জন্য প্রয়োজন একটি জামা‘আহ্*, আর তাদের প্রয়োজন শোনা ও আনুগত্য করা, এবং তাদের প্রয়োজন জিহাদ করার এবং প্রয়োজন হিজরাহ্* করার। আর আমরা যখন আল্লাহ্*র কিতাব এবং আল্লাহ্*র রসূলের ( ) সুন্নাহ্*র অনুসরণের চেষ্টা করি, তখন আমরা স্পষ্ট দেখতে পাই যে, ইসলামিক স্টেইটের প্রতিষ্ঠা এবং দ্বীনের সম্প্রসারণের পদ্ধতি হিসেবে এগুলোর কথা জোর দিয়ে বলা হচ্ছেঃ
[১] একটি জামা‘আহ্*
[২] আদেশ শোনা
[৩] আনুগত্য করা
[৪] হিজরাহ্* করা
[৫] জিহাদ করা
সুতরাং, যারা হিজরাহ্* করার এবং আল্লাহ্*র রাস্তায় জিহাদ করার ত্যাগ স্বীকার ব্যতীত ইসলামের জন্য কোন কিছু প্রতিষ্ঠা করতে চায়, তবে এরূপ মানুষেরা মুহাম্মাদের ( ) মানহাজ উপলদ্ধি করতে পারেনি। আর যদি তারা বুঝে থাকে, তবে তারা এর উপর ‘আমল করেনি, বরং তারা অন্যান্য ধরনের আনুগত্য ও ‘ইবাদাতের দ্বারা নিজেদেরকে ব্যস্ত রাখছে। সুতরাং, এরূপ মানুষেরা এ সকল বড় ‘ইবাদাতসমূহের ভারী ফলাফল থেকে পলায়ন করছে, কারণ নিশ্চয়ই জিহাদ একটি কষ্টকর ‘আমল, যা আল্লাহ্* সুবহানাহু তা‘আলা তার কিতাবে উল্লেখ করেছেন। সুতরাং, এখন পর্যন্ত যা বলা হয়েছে, তা থেকে এটা পরিষ্কারভাবে ফুটে উঠেছে যে, জামা‘আহ্* ও জিহাদের গুরুত্ব অত্যাধিক।
আর আমরা এখন এমন একটি পরিস্থিতির মধ্যে আছি যে, আমাদের এমন কোন ভূমি নেই যেখানে আমরা হিজরাহ্* করতে পারি। এই সুযোগটি একটি অল্প সময়ের জন্য ছিল, আর এটি ছিল একটি বিরল সুযোগ, কারণ খিলাফাহ্*-এর পতনের পর থেকে ইসলামের অকৃত্রিম মানুষদের জন্য একটি ইসলামিক ভূমি প্রতিষ্ঠা করা অসম্ভব করে তুলার জন্য ক্রুসেডাররা কঠোর পরিশ্রম করেছে। আর এরপর আল্লাহ্* সুবহানাহু তা‘আলার পূর্বনির্ধারিত হুক্*ম অনুসারে আফগানিস্তানের ঘটনাপ্রবাহ চলতে থাকলো আর সোভিয়েত ইউনিয়ন পরাজিত হল। ক্রুসেডাররা সোভিয়েত ইউনিয়নের ভয় ও আতংকে মুসলিমদের কার্যকলাপের প্রতি তাদের প্রহরা ও উদ্বেগের কথা ভুলে গিয়েছিল, আর সোভিয়েত ইউনিয়নকে প্রতিহত করার সম্ভাব্য যেকোন উপায় তারা প্রয়োগ করতে রাজী ছিল, এমনকি যদি এর মানে দাঁড়ায় মুজাহিদ্বীনদের বিরুদ্ধে না যাওয়া। সুতরাং, সেই দরজাটি খোলা ছিল, আর এরপর ১০ বছর হয়ে গেছে।
যাহোক, খুবই দুর্ভাগ্যবশত মুসলিম উম্মাহ্* তার এই অবশ্যপালনীয় কর্তব্যের দায়িত্ব বহনের জন্য উঠে দাঁড়ায়নি, বিশেষকরে যারা ‘উলামা, যারা দ্বীনের দিকে আহবানকারী, যারা বিভিন্ন ইসলামিক গোষ্ঠীর সাথে সংশ্লিষ্ট, তাদের কথা বলছি। আর যারা জিহাদের ভূমিতে এসেছিল, তারা ছিল মুসলিম উম্মাহ্*র খুবই স্বল্প সংখ্যক যুবক মুসলিম, আর এসেছিল কিছু ব্যবসায়ীদের থেকে আসা অর্থনৈতিক সাহায্য, কিন্তু একটি শক্তিশালী ইসলামিক ভূমি প্রতিষ্ঠার জন্য এটি যথেষ্ট ছিল না।
আর তখন একটা ইসলামিক ভূমি প্রতিষ্ঠার ভালো সম্ভাবনা ছিল যা হত অঞ্চলভিত্তিক বা গোত্রভিত্তিক বা জাতীয়তাভিত্তিক আনুগত্য থেকে সম্পূর্ন মুক্ত ইসলামিক সংজ্ঞানুযায়ী একটি ভূমি, যখন আফগান ভাইয়েরা একটা অসাধারণ সহজ-উপযোগী পরিবেশ ও সমর্থন উপভোগ করছিল।
তবুও দুর্ভাগ্যবশত, সহজ-উপযোগী পরিবেশের উপস্থিতি, এই পরিস্থিতির সুযোগ গ্রহন করার জন্য বিভিন্ন ইসলামিক গোষ্ঠী, ‘উলামা এবং চিন্তাবীদদের প্রতি বিশেষ করে শাইখ ‘আব্দুল্লাহ্* ‘আযযাম (রহিঃ) এবং অন্যান্য ভাইদের করা বার বার আহবান, উৎসাহ, অনুপ্রেরণা ইত্যাদি সত্ত্বেও বেশীরভাগেরই প্রতিউত্তর ছিলঃ
“তার মাঝে দেখছি না কোন প্রাণ,
যে বিষয়ের করছো তুমি আহবান”
[কবিতা]।
মানুষেরা ভৌগলিক এবং আঞ্চলিক প্রীতি নিয়ে ছিল উদ্বিগ্ন ও ব্যস্ত, আর প্রত্যেকেই চাচ্ছিল তার নিজস্ব ইসলামিক ভূমি, প্রত্যেক গোষ্ঠী তার নিজস্ব জন্মাঞ্চলে একটি নিজস্ব ইসলামিক ভূমি প্রতিষ্ঠা করতে চাচ্ছিল, সবাই যেন এ সকল অ-ইসলামিক মানসিকতার জালে বন্দী হয়ে গিয়েছিল।
সুতরাং, ১০ বছর ধরে এই সুযোগটি ছিল, এরপরেও মানুষেরা এর থেকে সুযোগ গ্রহন করার জন্য নড়ে নি। আর আমি এই কথাগুলো বলছি এটা বুঝানোর জন্য যে, বিষয়টা খুব সহজ ছিল না, আর বর্তমান পরিস্থিতি বিষয়টিকে আরও কঠিন করে তুলেছে।
এরপর আল্লাহ্* সুবহানাহু তা‘আলা সেই সময় এবং এই সময়ের মাঝে তালিবানদের জাগরণ এবং তাদের প্রসার এবং একটি ভূমি প্রতিষ্ঠার এবং এরপর থেকে চলতে থাকে বর্তমান দ্বন্দ্ব ও যুদ্ধের অনুমতি দিলেন যা আনুমানিক ছয় বছর বা তার চেয়েও দীর্ঘ সময়ব্যাপি চলছে। আর মানুষ থেকেছে নিজের ইচ্ছা-আকাঙ্ক্ষার জালেই বন্দী হয়ে, আর সেই সাথে আন্তর্জাতিক মিডিয়ার জালেও হয়েছে বন্দী যা তালিবানদের খ্যাতি ধ্বংস করার জন্য তাদের নির্দয় প্রচারাভিযান চালিয়েছে। মানুষকে ভুল দিকে প্রভাবিত করার জন্য হয়ত আন্তর্জাতিক মিডিয়ার নিন্দা করা যায়, কিন্তু যা মেনে নেওয়া খুব কঠিন তা হল, যাদেরকে মানুষ ইসলামের সমর্থনকারী, সাহায্যকারী, আহবানকারী হিসেবে জানতো, তারা বলেছেঃ “আমরা আন্তর্জাতিক মিডিয়ার দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলাম!” আফগানিস্তান ‘আরব উপদ্বীপসমূহ থেকে কিংবা মুসলিম বিশ্বের অন্যান্য যেকোন অংশ থেকে কয়েক ঘন্টার দূরত্বে অবস্থিত।
সুতরাং, সাহায্য পাঠানোর ক্ষেত্রে তাদের দেরী করে ফেলা, এমনকি যদিও এই ভূমিটির নাম ছিল তালিবানদের ভূমি – ‘ইল্*মের ছাত্রদের ভূমি – এটি বাহ্যিকভাবে তাদের বুঝ এবং তাদের সত্যবাদিতার এক অস্বাভাবিক শূণ্যতাকেই আমাদের সামনে প্রকাশ করে দেয়, আর আল্লাহ্* ছাড়া কোন শক্তি বা ক্ষমতা নেই, আর এ ব্যাপারে আল্লাহ্*ই ভালো জানেন। সুতরাং, এই ভূমিটি এখন আর নেই, আর তারা একটি আংগুলও নাড়ায়নি।
আর আমি বলিঃ আমার নিশ্চিত বিশ্বাস রয়েছে যে, আল্লাহ্* সুবহানাহু তা‘আলার রহমতে, একটি ইসলামিক ভূমি আর ইসলামিক খিলাফাহ্* প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজনীয় যথেষ্ট উপাদান ও সক্ষমতা এই উম্মাহ্*র রয়েছে, কিন্তু, আমাদেরকে এ সকল উপাদান ও সক্ষমতাসমূহকে জানাতে হবে যে, এরূপ করাটা তাদের জন্য ফার্*দ বিষয়ে পরিণত হয়েছে। আর সেই সাথে যারা এ সকল উপাদান ও সক্ষমতাসমূহের প্রয়োগকে তাদের ভুল উক্তিসমূহের দ্বারা সীমিত ও সীমাবদ্ধ করছে, তাদেরকে আমাদের জানাতে হবে যে, তারা এর দ্বারা গুণাহ অর্জন করছে। সুতরাং, যদি যুবকেরা এবং ব্যবসায়িকেরা তাদের ফার্*দ কর্তব্য উপলদ্ধি করতে পারত, তাহলে আমাদের পক্ষে এই কাজটি করা সম্ভব হত, যার ফলে উম্মাহ্*র বাকী অংশ থেকে কর্তব্য অবহেলার গুণাহ্* সরানো যেত, যেহেতু তখন আমাদের উপর আপতিত যন্ত্রনা ও দুর্দশা দূরীভূত করা হত।
আমরা এখানে সে সকল মানুষদের কথা বলছি যারা বলে যেঃ “জিহাদের জন্য সমগ্র উম্মাহ্*র প্রয়োজন নেই।” যদিও এই উক্তিটি সত্য, কিন্তু সত্যের প্রসারের উদ্দেশ্যে এটি উচ্চারিত হয়নি। কারণ আজকের জিহাদের পক্ষে সমগ্র উম্মাহ্*কে আবাসিত করা এক অসম্ভব বিষয়, আর যারা আগ্রাসী শত্রুবাহিনীকে প্রতিহত করার কাজে নিয়োজিত, তারা সমগ্র উম্মাহ্*র একটি অতি ক্ষুদ্র অংশ। এটা সত্য। কিন্তু আরেকটি বিধি রয়েছে যে, জিহাদ একটি ফার্*দ ‘আইন (ব্যক্তিগতভাবেও অবশ্যপালনীয় কর্তব্য), আর তারা এই বিধির প্রয়োগের ব্যাপারে আমাদের সাথে ভিন্নতা পোষণ করে। তারা বলেঃ “আমরা তোমাদের কাছে কয়েক হাজার সাহায্যকারী সৈন্য পাঠালাম, আর তোমরা তাদের আবাসিত করতে পারছ না?” আর তারা বলেঃ “আমাদের প্রত্যেকেরই কর্মক্ষেত্রের প্রতিটি ময়দান পরিত্যাগ করা এবং আমাদের সবার জিহাদে যোগদান করা একটি অযৌক্তিক বিষয়!” আর এখানে এই যুগের দূষণ পরিষ্কারভাবে ফুটে উঠে, বস্তুবাদের দূষণ, বুদ্ধিবৃত্তির দূষণ এবং এগুলোর প্রসার। কারণ এগুলো হল এমনসব বিধি যেগুলো এই উম্মাহ্*র সালাফদের (পূর্ববর্তীদের) থেকে ন্যায়পরায়ণ ফুক্বাহাদের ঐকমত্য থেকে এসেছে, আল্লাহ্* যেন তাদের উপর রহম করেন, আর আজকাল কিছু নতুন ফুক্বাহা দেখা যাচ্ছে যারা উম্মাহ্*র ঐকমত্যর বিরুদ্ধে যাচ্ছে! যখন জিহাদ ফার্*দ ‘আইনে পরিণত হয়, তখন এটার গুরুত্ব সর্বাধিক হয়ে উঠে, যা শাইখ উল-ইসলাম [ইব্*ন তাইমিয়্যাহ্* (রহিঃ)] উল্লেখ করেছেনঃ “স্বয়ং ঈমান আনার পরে আগ্রাসী শত্রু পক্ষের সৈন্যদেরকে প্রতিহত করার চাইতে গুরুত্বপূর্ণ কোন ফার্*দ নেই, যারা দ্বীন ও মুসলিমদের জীবনকে হুমকি দেয়।”
সুতরাং, আপনার এখানে এ কথা বলার কোন সুযোগ নেই যে, যদি তারা সকলে বেড়িয়ে পড়ে তবে জিহাদের পক্ষে তাদের আবাসন সম্ভব নয়। এরূপ কথা আসলে একজনের বুঝ-এ অস্বাভাবিক রকমের শূণ্যতা এবং পৃথিবীর প্রতি অস্বাভাবিকভাবে আসক্তি থাকার ফলেই হয়ে থাকে। ফার্*দ ‘আইন বিষয়টি তখনই ফার্*দ কিফায়াতে পরিণত হয়, যখন যথেষ্ট পরিমাণের মুসলিম মুজাহিদ আগ্রাসী শত্রুবাহিনীকে প্রতিহত করার জন্য অগ্রসর হয়। সুতরাং, এই অগ্রসর হওয়ার পদ্ধতিটির মাধ্যমেই এই ফার্*দ ‘আইন সকলের উপর থেকে অপসারিত হয়, আর বাকিরা থেকে যায়, যারা পিছনে পড়ে ছিল, তাদের বিভিন্ন কাজের ময়দানে।
আর দুর্ভাগ্যবশত, এটা ইসলামের পুনর্জাগরণের ক্ষেত্রে বাঁধাগুলোর মধ্যে একটা অন্যতম প্রধান কারণ, আর এটা তাদের লিখাসমূহ, তাদের বার্তাসমূহ এবং তাদের মিটিংসমূহে প্রকাশ পায়। তারা বলেঃ “জিহাদ একটি অনেক বড় ‘ইবাদাত, কিন্তু আরও অনেক ধরনের ‘ইবাদাতও আছে।”
এসব মানুষেরা মুহাম্মাদের ( ) মানহাজ উপলদ্ধি করতে পারেনি। আর আমি কা’ব ইব্*ন মালিকের (রাযিআল্লাহু আনহু) কাহিনীটি বর্ণনা করেছিলাম, যে তিনি যখন মাদীনাহ্*-এ ছিলেন, তখন তিনি বিভিন্ন প্রকারের ‘ইবাদাতে লিপ্ত থাকতেন, আর তিনি ছিলেন আল্লাহ্*র রসূলের ( ) শহরে অবস্থিত। আর নাবী মুহাম্মাদ ( ) -এর একটি হাদীসে এটি বর্ণিত আছে যে, তার ( ) মাসজীদে ‘ইল্*ম অর্জন করা হল আল্লাহ্*র রাস্তায় জিহাদ করার ন্যায়। আর এসবকিছু থাকা সত্ত্বেও, আর তার সবচাইতে পূর্বে ইসলামগ্রহনকারী সাহাবীদের মাঝে অন্যতম হওয়া সত্ত্বেও, তিনি ছিলেন তাদের মধ্যেও অন্যতম যারা বাই‘আতুল ‘আক্বাবাহ্*-এ অংশগ্রহন করেছিলেন। এর থেকে বাই‘আতুল ‘আক্বাবাহ্*-এর গুরুত্ব উপলদ্ধি করা যায়, যা সংগঠিত হয়েছিল একটি মুসলিম ভূমি প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে, আর এটি সংঘটিত হবার সময় কা’ব ইব্*ন মালিকের (রাযিআল্লাহু আনহু) অপর কোন গুণাবলীর কথা উল্লিখিত হয়নি, কারণ জিহাদ যখন ফার্*দ ‘আইন হয়ে পড়ে, তখন অন্যান্য ধরনের ‘ইবাদাতের কথা উল্লেখ করার কোন সুযোগ নেই, আর যখন কেউ এতে যোগদান না করে বসে থাকে, তখন তাকে অগ্রাহ্য করা ও নিন্দা করা ছাড়া আর কোন কিছুই উল্লেখ করার সুযোগ নেই। তাই তার (রাযিআল্লাহু আনহু) ক্ষেত্রে এরূপ বলা হয়নি যেঃ “আল্লাহ্* যেন তাকে (রাযিআল্লাহু আনহু) পুরস্কৃত করেন, কারণ সে রয়েছে মাদীনাহ্*-এ, হারাম শরীফে সলাত আদায় করতে পেরে তিনি কতই না সৌভাগ্যবান!” অথবাঃ “তিনি শিক্ষাপ্রদান করছেন!” - এরূপ বলা হয়নি, ক্বুরআনের নিম্নোক্ত আয়াতের কারণেঃ
“বলুনঃ যদি তোমাদের পিতৃবর্গ, তোমাদের পুত্রগণ, তোমাদের ভ্রাতাগণ, তোমাদের স্ত্রীগণ, তোমাদের স্বগোত্র, আর ঐসব ধন-সম্পদ যা তোমরা অর্জন করেছ, আর ঐ ব্যবসা যাতে মন্দা পড়বার আশংকা তোমরা করছো, আর ঐ গৃহসমূহ যা তোমরা পছন্দ করছো, তোমাদের কাছে আল্লাহ্* ও তার রসূল ও তার রাস্তায় জিহাদের চাইতেও অধিক প্রিয় হয়, তবে তোমরা আল্লাহ্* নির্দেশের (‘আযাবের হুক্*ম ) জন্য অপেক্ষা কর, আর আল্লাহ্* ফাসিক্ব সম্প্রদায়কে হিদায়াত করেন না।” [আত্*-তাওবাহঃ২৪]
একইভাবে, আমরা যদি তাদের দিকে তাকাই যারা তাবুকের যুদ্ধে না গিয়ে ঘরেই অবস্থান করছিল, তখন আমরা দেখি যে, আল্লাহ্* সুবহানাহু তা‘আলা তাদের জন্য ‘ফিসক্ব’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন।
আজ, এই দ্বীনের প্রতিরক্ষার জন্য গৃহীত ব্যবস্থা এবং এই দ্বীনকে সাহায্য করার জন্য মজুদ শক্তি ও উপাদানের প্রয়োগের পদ্ধতিতে অনেক ঘাটতি রয়েছে। এখন, যে ব্যক্তি দ্বীনের সাহায্যার্থে কাজ না করে নীরব বসে থাকে, সে এটাই জানে না যে সে গুণাহ্* অর্জন করছে, বরং প্রকৃতপক্ষে সে মনে করে যে, সে আল্লাহ্* সুবহানাহু তা‘আলার আনুগত্যের অধীনেই আছে! আর সে এই গুণাহ্*র লজ্জা সম্পর্কে থাকে সম্পূর্ন অজ্ঞ হয়ে, অথচ এ ব্যাপারে (আল্লাহ্*র রাস্তায় জিহাদ) সতর্কতা, হুঁশিয়ারি এবং উৎসাহসূচক প্রচুর আয়াত রয়েছে, আর যারা এই ফার্*দ পালন না করে বসে থাকে এবং পার্থিব জীবনের দিকে ঝুঁকে থাকে, তাদেরকে নিন্দা ও তিরস্কার করে প্রচুর আয়াত রয়েছে। আর তখন কাদেরকে সতর্ক করা হয়েছিল এসব আয়াতের দ্বারা? তারা হলেন আল্লাহ্*র রসূলের ( ) সাহাবীগণ (রাযিআল্লাহু আনহুম)! একের পর এক সতর্কবাণী। “ও হে ঈমানদারগণ! তোমাদের কি হল যে, যখন তোমাদেরকে বলা হয় – আল্লাহ্*র রাস্তায় (জিহাদের জন্য) বেড়িয়ে পড়, তখন তোমরা জমিনকে আকড়ে ধর! তবে কি তোমরা পরকালের বদলে পার্থিব জীবন নিয়েই পরিতুষ্ট হয়ে পড়লে? অথচ পার্থিব জীবনের ভোগবিলাস পরকালের তুলনায় অতি সামান্য! [সূরাহ্* আত্*-তাওবাহঃ৩৮]
আমাদের কারোও কি তার পিতা কিংবা তার চাচা অথবা তার শাইখকে একথা বলার সাহস আছে যেঃ “আপনারা পার্থিব জীবন নিয়ে সন্তুষ্ট! ফিলিস্তিনের দুর্দশা চলছে আশি বছর ধরে, আপনি একটি বুলেটও ফায়ার করেন নি! আর আপনি একদিনের জন্যও আপনার পায়ে ধুলো লাগতে দেন নি! সুতরাং, আপনি তাদের মধ্যে একজন, যারা পার্থিব জীবন নিয়ে পরিতুষ্ট হয়ে পড়েছে।” আমাদের কেউই একথা বলতে সক্ষম হবে না। দ্বীনকে কিভাবে প্রতিরক্ষা প্রদান করতে হবে, তার মাধ্যম ও কর্মপদ্ধতি কি - এসম্পর্কে আমাদের বুঝ-এ প্রচুর ঘাটতি রয়েছে। আর এ ব্যাপারে অনুসন্ধান করলে প্রচুর আয়াত মিলবে, যা আমি পূর্বে উল্লেখ করেছি।
যে সকল যুবকেরা দ্বীনের কাজে নিজেদেরকে বিলিয়ে দিতে সক্ষম, এবং দ্বীনের জন্য নিজেদেরকে কুরবানি করতে সক্ষম, তারা অতি দূর্ভাগ্যবশত একটি ভুলধারণা দ্বারা ভুলদিকে চালিত হচ্ছে, যেটা হল, তারা ইসলামের সেসকল ‘উলামাদের কথা শুনছে ও আনুগত্য করছে যারা জিহাদ থেকে নিজেদেরকে পৃথক করে রেখেছে। কারণ, যে জিহাদে অংশগ্রহণ না করে বসে থাকে, তার কথা শুনা অথবা তার আনুগত্য করা উচিত নয়। আর এর ফলে দ্বীনের এই সম্পদেরা ব্যক্তিগতভাবে যা পালন করা ফার্*দ তা থেকে মুখ ফিরিয়ে যা সমষ্টিগতভাবে পালন করা ফার্*দ তাতে মনযোগ দিয়েছে, যেমনঃ ‘ইল্*ম অর্জন করা। অথচ এমনকি যদি সকল মানুষও ‘উলামায় পরিণত হয়ে যায়, তাহলেও দ্বীন প্রতিষ্ঠিত হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না - জামা‘আহ্*, শোনা, আনুগত্য করা, সাহায্য করা এবং জিহাদ করা – এগুলোর সমন্বয় ঘটছে।
সুতরাং এখান থেকে, আমাদের যুবকদেরকে এ ব্যাপারে সতর্ক করা উচিত যে, তাদের ‘ইল্*মসম্পন্ন নেতৃত্ব আজ পার্থিব জীবন নিয়ে পরিতুষ্ট হয়ে পড়েছে। এটি (এই নেতৃত্ব) সেই গুরুত্বপূর্ণ ফার্*দ থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছে যেটিকে সামান্য অবহেলা করার কারণে আল্লাহ্*র রসূলের ( ) কিছু সাহাবীকেও (রাযিআল্লাহু আনহুম) নিন্দা করা হয়েছিল। আর আল্লাহ্* সুবহানাহু তা‘আলা নিম্নোক্ত আয়াতের মাধ্যমে তার এই কথাকে স্পষ্ট করে দিয়েছেনঃ
“যেরূপে আপনার প্রতিপালক আপনাকে আপনার ঘর থেকে সত্যের সাথে বের করলেন, আর মুসলিমদের একটি দল এটিকে অপছন্দ করছিল।” [সূরাহ্* আল-আনফালঃ০৫]
বদরের দিনে যখন সাহাবী (রাযিআল্লাহু আনহুম)-গণ বের হলেন, তখন তারা ভাবছিলেন যে, তারা সেদিন বানিজ্যের কাফেলা আয়ত্ত করবেন। সুতরাং, যখন তারা (রাযিআল্লাহু আনহুম) শুনলেন যে, হাজারখানেক কুরাইশ বেড়িয়ে এসেছে, তারা এটা অপছন্দ করলেন। সুতরাং, [আবূ আইয়্যুব বর্ণনা করেছেন] আল্লাহ্*র রসূল ( ) বললেনঃ “ওহে মানুষেরা, তোমাদের পরামর্শ দাও।” ফলে আবূ আইয়্যুব বললেনঃ “আমরা শত্রুর সম্মুক্ষীণ হবার ব্যাপারে আমাদের অনিচ্ছা প্রকাশ করলাম, এবং আমরা বললামঃ “হে আল্লাহ্*র রসূল, আমরা শত্রুর সাথে যুদ্ধের উদ্দেশ্যে বেড় হইনি, আর তাদের মোকাবিলা করার মত সামর্থ্য আমাদের নেই। আমরা শুধুমাত্র কাফেলাটির জন্যই বেড় হয়েছি।” ফলে তিনি ( ) বললেনঃ “ওহে মানুষেরা, তোমাদের পরামর্শ দাও।” ফলে আমরা আমাদের পূর্বের কথাই তাকে আবার শোনালাম। ফলে তিনি বললেনঃ “ওহে মানুষেরা, তোমাদের পরামর্শ দাও।” এরপর আল-মিক্বদাদ ইব্*ন ‘আম্*র (রাযিআল্লাহু আনহু) কথা বললেন, আর তিনি বললেনঃ “হে আল্লাহ্*র রসূল! এক্ষেত্রে আমরা আপনাকে সেই কথা বলব না যা বনু ইসরঈল মূসা (আঃ)-কে বলেছিলঃ ‘সুতরাং আপনি এবং আপনার রব যান এবং যুদ্ধ করেন! আমরা তো এখানেই বসে থাকব।’ [আল-মাইদাহঃ২৪]
বরং আমরা আপনাকে বলিঃ আপনি এবং আপনার রব এগিয়ে যান এবং যুদ্ধ করুন, আর আমরা আপনাদের সাথেই যুদ্ধ করব! আল্লাহ্*র কসম, আমরা আপনার ডানদিক থেকে, আপনার বামদিক থেক, আপনার সামনের থেকে এবং আপনার পিছন থেকে যুদ্ধ করব।”
এটা হল সাহাবীদের (রাযিআল্লাহু আনহুম) কথা, যারা একটি যুদ্ধ ও জিহাদসমৃদ্ধ পরিবেশে ছিলেন, আল-আওস এবং আল-খাজরাযের মধ্যে চলতে থাকা যুদ্ধ তাদের দুই গোত্রের অসংখ্যজনের মৃত্যুর কারণ হয়েছিল, আর এটি স্থায়ী হয়েছিল ১০ বছরের জন্য, আর তারা যখন এমন অসীম যুদ্ধের মাঝে দিশেহারা হয়ে পড়েছিল, তখন আল-ইসলাম তাদের কাছে এসেছিল, আর জাহিলিয়্যাহ্*-এর সময় আল-আওস এবং আল-খাজরাযের অনেকেই যুদ্ধের সাথে পরিচিত ছিল, আর এসবকিছুর পরে আল-ইসলাম তাদের কাছে আসলো এবং তাদেরকে জিহাদের জন্য উৎসাহ-অনুপ্রেরণা দিল – তাহলে আজকের দিনে আমরা কোথায়? অন্তরগুলো আজ কেবলই দোদুল্যমান এবং যাদের উপর আল্লাহ্* দয়া করেছেন তারা ব্যতীত সকলেই আল্লাহ্*র দ্বীনকে সাহায্য করার বদলে বসে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যুবকদের বুঝতে হবে যে, জিহাদের সাথে সম্পর্কহীন নেতৃত্বে বড় আকারের ঘাটতি রয়েছে, আর আমাদের এরূপ মানুষদের কথাকে সেভাবেই উল্লেখ করতে হবে যেভাবে আল্লাহ সুবহানাহু তা‘আলা উল্লেখ করেছেন।
এমন প্রত্যেক ব্যক্তি যে কোন গ্রহনযোগ্য কারণ ব্যতীত জিহাদ না করে বসে রয়েছে, তবে তার অবস্থার বর্ণনা কুরআনে খুবই পরিষ্কার এবং অবশ্যম্ভাবীঃ আর তা হল “ফিস্*ক্ব”। “আর যদি তারা বেড় হবার ইচ্ছা পোষণ করতো, তবে কিছু সরঞ্জাম তো প্রস্তুত করতো, কিন্তু আল্লাহ্* তাদের বেড় হওয়াকে অপছন্দ করলেন, আর তাই তাদেরকে বলা হলঃ ‘বসে থাকো তোমরা, যারা বসে থাকে তদের সাথে।’” [সূরাহ্* আত্*-তাওবাহঃ৪৬] যারা মহিলাদের সাথে বসে থেকে পরিতুষ্ট তারা বুঝে না, এমনকি যদিও তাদের শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শ্রেষ্ঠ ডিগ্রী থাকে। আর তারা জানে না, এমনকি যদিও ফাত্*ওয়ার জন্য তাদের দিকেই সমস্ত প্রশ্ন করা হয়। কারণ এটা আল্লাহ্*র কিতাবে পরিষ্কার করে বলে দেওয়া আছেঃ “তারা ঘরে বসে থাকা (মহিলাদের) সাথে অবস্থান করে পরিতুষ্ট ছিল” - এমন যে কেউ যার অন্তর আছে বা যাকে আল্লাহ্* শোনার ক্ষমতা দিয়েছেন, সে জানে যে এই আয়াতের বর্ণনার সাথে কারোও অবস্থার মিলে যাওয়াটা একটা ব্যাপক নিন্দনীয় ব্যাপারঃ “তারা ঘরে বসে থাকা মহিলাদের সাথে অবস্থান করে পরিতুষ্ট ছিল, আর তাদের অন্তরসমূহে মোহর মেরে দেওয়া হয়েছিল, তাই তারা বুঝে না।” [সূরাহ্* আত্*-তাওবাহঃ৮৭]
তাই জিহাদের সাথে সম্পর্কহীন মুফতি যদি অনেক কিতাবাদি, প্রবন্ধ এবং ভলিউমের লেখকও হয়ে থাকেন, তবুও তিনি বুঝেন না, কারণ ‘ইল্*মের সারাংশ হল আল্লাহ্* সুবহানাহু তা‘আলার প্রতি ভয়। উম্মে সুফিয়ান (আল্লাহ্* যেন তার উপর রহম করেন) নামক এক মহিলা বলেছিলেনঃ “ও ‘আলিম!” আর তিনি বললেনঃ “‘আলিম হল শুধু সেই ব্যক্তি যে আল্লাহ্*কে ভয় করে চলে।” সুতরাং, ‘ইল্*ম মানে ব্যাপক বর্ণনার সমষ্টি নয়, বরং ‘ইল্*ম হল আল্লাহ্* যা নাযিল করেছেন সে অনুসারে আল্লাহ্*র ‘ইবাদাত করা, আর তাকে ভয় করা এবং তার দেওয়া দায়িত্ব পালন করা।
আর তাই আল্লাহ্* সুবহানাহু তা‘আলা বলেছেন যে, তারা বুঝে না। কারণ, যদি তারা সত্যিই বুঝতো, এবং যদি তাদের অন্তরে এই ঈমান দৃঢ় ভাবে থাকতো যে, আল্লাহ্*র সাথে যা আছে তা এই দুনিয়া অপেক্ষা অনেক উত্তম, তবে তারা আল্লাহ্*র সন্তুষ্টি এবং তার থেকে পুরস্কার লাভের আশায় প্রতিযোগিতা করতো, আপোষে ভরা হীন জীবনকে পছন্দ করতো না।
তাই আমি বলিঃ যুবকদেরকে এ সকল বাস্তবতা ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে দেওয়া উচিত, যাতে তারা কৃত্রিমতার শিকলের বন্ধন থেকে মুক্তি পায়, যে বন্ধন তাদেরকে সঠিক কাজ করা থেকে বিরত রাখে।
আর এই হল (‘আব্দুল ‘আযিয আল-‘উমারি, নিউইয়র্ক এবং ওয়াশিংটনে হামলাকারী অন্যতম মুজাহিদ) ‘আবুল ‘আব্বাসঃ এক অমূল্য সম্পদ – যার ন্যায় সম্পদ আমাদের ভূখন্ডে এবং মুসলিম ভূখন্ডসমূহে আরোও আছে, কিন্তু তাদেরকে সীমাবদ্ধ করা হয়েছে – যার দ্বারা আল্লাহ্* সুবহানাহু তা‘আলা অনেক কল্যাণ সাধন করেছেন। সে এসকল শিকল থেকে নিজেকে মুক্ত করেছিল, ফলে যখন সে এখানে (আফগানিস্তানে) আসলো, তখন সে বাস্তবতার স্বরূপকে দেখলো এবং অসচেতন মানুষকে সচেতন করার জন্য তার শেষ বক্তব্য উপস্থাপন করলো যা ছিল অতি স্বচ্ছ এবং হৃদয়স্পর্শী। সে বললঃ “তোমরা যে ‘ইল্*ম অর্জন করছো তা অতি উত্তম ‘আমল এবং এতে অনেক কল্যাণ রয়েছে, এবং আল্লাহ্* যেন তোমাদেরকে এর জন্য পুরস্কৃত করেন। কিন্তু, যখন জিহাদের প্রসঙ্গ আসে, তখন না এবং আবারও না। যখন জিহাদ ফার্*দ হয়ে পড়ে, তখন কোন কিছুই এর পথে আসতে পারে না।
আলোচনায়ঃ শাইখ উসামাহ্* ইব্*ন লাদিন (রহিমাহুল্লাহ্*)
আনসারুল্লাহ বাংলা টীম
পরম করুণাময় এবং অসীম দয়ালু আল্লাহ্*র নামে শুরু করছি ।
সকল প্রশংসা শুধুমাত্র আল্লাহ্*র জন্য, যিনি জগৎসমূহের প্রতিপালক, আর, সলাত ও সালাম বর্ষিত হোক মুহাম্মাদ, তাঁর পরিবার এবং তাঁর সাহাবীগণের প্রতি ।
এরপর,
মুসলিম উম্মাহ্* বর্তমান যে দিনগুলোর মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, আর আমেরিকান এবং ইসরায়েলী শক্তিসমূহের দখলদারি ও অত্যাচার ও আগ্রাসন থেকে যা কিছু এই উম্মাহ্*র উপর সংঘটিত হয়েছে, আর পৃথিবীর বুক থেকে ইসলামের সুশীতল ছায়া যেভাবে ক্রমশঃ কমে যাচ্ছে, আমরা যখন এসব নিয়ে কথা বলি, তখন এই দ্বীন ইসলাম প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে মুহাম্মাদ ( ) -এর দেখানো পথনির্দেশনার অনুসন্ধান করা আমাদের জন্য একান্ত জরুরী হয়ে পড়ে, সেই দিনটি থেকে, যেদিন এটি একটি অচেনা বিষয় হিসেবে ইসলামের সূচনালগ্নে আবির্ভূত হয়েছিল ।
সুতরাং নিশ্চিতভাবে, যে পর্যবেক্ষণ করে, সে পর্যবেক্ষণ করে দেখেছে যে, মুহাম্মাদ ( ) যখন বিভিন্ন গোত্রের কাছে দা’ওয়াহ্*-এর জন্য কথা বলেছেন এবং ইসলামের দা’ওয়াহ্* উপস্থাপন করেছেন, তখন তিনি খুব সচেতন ছিলেন। আর যখন আমরা সেই মূল বিষয়গুলোকে পর্যবেক্ষণ করি, যেগুলোর প্রতি তিনি ( ) বিভিন্ন গোত্রকে আহবান করেছিলেন, তখন আমরা দেখতে পাই যে, সেগুলো খুবই স্পষ্টঃ
১। তিনি ( ) তাদেরকে তাওহীদের সাক্ষ্য প্রদানের জন্য আহবান করেছিলেন, যা হল, আল্লাহ্* ব্যতীত ‘ইবাদাত পাবার যোগ্য কোন ইলাহ নেই, এবং মুহাম্মাদ আল্লাহ্*র রসূল।
২। আর এরপর তিনি ( ) তাদেরকে আহবান করেছিলেন, যেন তারা তাকে ( ) নিরাপত্তা প্রদান করে এবং সাহায্য করে ।
আর তিনি ( ) যখন আমীর সা’সা‘আহ্*-এর বংশধরদের প্রতি দা’ওয়াহ্* দিয়েছিলেন, তখন এটি পরিষ্কারভাবে প্রকাশিত হয়েছিল । কারণ যখন তারা তাকে ( ) জিজ্ঞেস করেছিলঃ “ও ‘আরব ভাইজান, আপনি কিসের প্রতি আমাদেরকে আহবান করছেন?” তিনি ( ) বলেছিলেনঃ “আমি আপনাদেরকে সেই সাক্ষ্য প্রদানের দিকে আহবান করছি যে, আল্লাহ্* ব্যতীত ‘ইবাদাত পাবার যোগ্য কোন ইলাহ নেই, এবং আমি আল্লাহ্*র রসূল, এবং যে, আপনারা আমাকে নিরাপত্তা দিবেন এবং সাহায্য করবেন ।”
সুতরাং, এখানে একটি পরিষ্কার স্মরণীয় শিক্ষা দেখা যাচ্ছে যে, এই দা’ওয়াহ্* আর এই কালিমার অবশ্যই একটি ভূখন্ডের প্রয়োজন, আর এই পবিত্র বৃক্ষের প্রয়োজন একটি ভূমির, যার উপর এটি বেড়ে উঠবে। সুতরাং, এই ভূখন্ডটি হবে এই দা’ওয়াহ্*কে নিরাপত্তা প্রদান ও সাহায্য করার মাধ্যম। আর এ থেকেই তিনি ( ) এই ভূখন্ডের সন্ধান করছিলেন, আর সেই সাথে মক্কাতে দা’ওয়াহ্* দিচ্ছিলেন, আর এ অবস্থায় তিনি ( ) রইলেন ১৩ বছর ।
আর আমাদের যত ‘ইল্*ম রয়েছে, তা তাঁর ( ) ইলমের অতি ক্ষুদ্র একটি অংশ, আর তিনি ছিলেন ‘আরবদের মধ্য থেকে সবচেয়ে সাবলীলভাষী, যাকে জাওয়ামি’উল-কালাম (সবচাইতে সংক্ষিপ্ত শব্দের দ্বারা ব্যাপক অর্থের প্রকাশ) দেওয়া হয়েছিল, তিনি ছিলেন সেই ব্যক্তি যাকে সপ্ত আকাশের ওপর থেকে ওহীর মাধ্যমে সাহায্য করা হয়েছিল। আর এই সবকিছুর পরে, অল্পকিছু মহৎপ্রাণ সাহাবী (রাযিআল্লাহু আনহু) ছাড়া আর কেউই তাঁর ( ) উপর ঈমান আনেনি ।
আর এখানে এই বিষয়টিও স্বচ্ছ হয়ে উঠে যে, এই কালিমাটি, এটির শক্তিশালী হওয়া সত্ত্বেও, এটির সুশীতল ছায়ার দ্বারা এই পৃথিবীকে ছায়াবৃত করার জন্য আরও কিছু প্রভাবক প্রয়োজন । আর তাই তিনি ( ) সেই অবস্থায় (মক্কাতে দা’ওয়াহ্*রত অবস্থায়) রইলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত না আল্লাহ সুবহানাহু তা‘আলা আল-মাদীনাহ্* আল-মুনাওয়্যারাহ্*-এর দ্বার খুলে দিলেন, আর আনসারগণের (রাযিআল্লাহু আনহু) [আল-আওস এবং আল-খাযরাজ ] দ্বারা এর সংরক্ষণ করলেন। আর যখন তারা [আনসার(রাযিআল্লাহু আনহু)] দা’ওয়াহ্*-কে সাহায্য করা শুরু করলেন, তখন দ্বীন ইসলাম ছড়িয়ে পড়লো, আর কয়েক বছরের মাঝেই ‘আরব উপদ্বীপের হাজার হাজার মানুষ ইসলাম গ্রহণ করলো, আর মানুষেরা ইসলামের মাঝে দলে দলে ভিড় জমালো ।
সুতরাং, এখানে একটি স্মরণীয় শিক্ষা দেখা যাচ্ছে, যা আমি উল্লেখ করেছি যে, শক্তি ছাড়া দা’ওয়াহ্* দুর্বলই রয়ে যাবে, আর এই শক্তির সন্ধান করার জন্য, একটি ভূখন্ড, একটি পরিবেশ থাকা খুবই জরুরী ।
ইসলামিক ভূমিসমূহ ও ইসলামিক খিলাফাহ্*-এর অপসারণ এবং আল্লাহ্* যা নাযিল করেছেন তা ব্যতীত অপর কিছু দিয়ে শাসন করে এমনসব শাসনব্যবস্থাসমূহের প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই বাস্তবতাটি এখন খুবই স্বচ্ছ হয়ে পড়েছে । এ সকল শাসনব্যবস্থাসমূহ প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ্*র আইনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত রয়েছে, যদিও এগুলোর শাসনাধীন ভূখন্ডসমূহে প্রচুর পরিমাণে ইসলামিক ইউনিভার্সিটি ও স্কুল দেখা যায়, প্রচুর কিতাবাদি দেখা যায়, আর দেখা যায় প্রচুর দা’য়ী, ইমাম, মাসজিদ এবং ক্বুরআনের হাফিয । আর এ সবকিছুর পরেও এ সকল স্থানে ইসলাম ধীরে ধীরে মুছে যাচ্ছে, এর কারণ হল, এ সকল স্থানের মানুষেরা মুহাম্মাদ ( )-এর মানহাজ অনুসারে চলছে না ।
সুতরাং, এই মানহাজ, যা আমাদের সামনে সুবাহের ন্যায় স্বচ্ছ, তা কিছু সুনির্দিষ্ট গুণাবলীকে অন্তর্ভুক্ত করে, যা শারী‘আহ্*-এর দালীলে পাওয়া যায়। আল্লাহ্* সুবহানাহু তা‘আলা বলেছেনঃ “হে ঈমানদারগণ! তোমাদের থেকে যে কেউই তাদের দ্বীন পরিত্যাগ করে, তবে আল্লাহ্* অপর এক ক্বওম নিয়ে আসবেন, যাদেরকে আল্লাহ্* ভালোবাসবেন, এবং যারা আল্লাহ্*কে ভালোবাসবে, তারা ঈমানদারদের প্রতি সহানুভূতিশীল এবং কুফ্*ফারদের প্রতি অতি কঠোর, তারা আল্লাহ্*র রাস্তায় জিহাদ করে, এবং নিন্দুকের নিন্দার পরোয়া করে না। এটা আল্লাহ্*র অনুগ্রহ, যা তিনি যাকে ইচ্ছা দান করেন, আর আল্লাহ্* প্রাচুর্যদানকারী, সর্বজ্ঞ।” [আল-মাইদাহঃ৫৪]
সুতরাং, এই আয়াতটি আমরা যে অবস্থার মধ্যে আছি সেই সম্পর্কে বলছেঃ “হে ঈমানদারগণ! তোমাদের থেকে যে কেউই তাদের দ্বীন পরিত্যাগ করে,...”
যখন রিদ্দাহ্*/দ্বীন-ত্যাগ সংঘটিত হয়, তখন মানুষকে দ্বীন ইসলামে ফিরিয়ে আনার জন্য কি কি গুণাবলীর প্রয়োজন? তো এখানে ৬টি গুণের কথা উল্লেখ করা হয়েছে, আল্লাহ্* সুবহানাহু তা‘আলার কথা থেকে শুরু করেঃ “...যাদেরকে আল্লাহ্* ভালোবাসবেন, এবং যারা আল্লাহ্*কে ভালোবাসবে, তারা ঈমানদারদের প্রতি সহানুভূতিশীল এবং কুফ্*ফারদের প্রতি অতি কঠোর,...”। সুতরাং, এই গুণাবলী অর্জন করা আমাদের জন্য খুবই জরুরীঃ
[১] আল্লাহ্* সুবহানাহু তা‘আলার প্রতি একান্ত ভালোবাসা
[২] ঈমানদারদের প্রতি বিনয় ও সহানুভূতি
[৩] কল্যাণের সাথে সাহায্য করা এবং তা করা সর্বোত্তম পদ্ধতিতে
[৪] কুফ্*ফারদের প্রতি কঠোরতা, আর এটা ইসলামের সবচাইতে শক্তিশালী বন্ধনঃ আল-ওয়ালা’ ওয়াল-বারা’ (আনুগত্য এবং সম্পর্কচ্ছেদ)-এর মাধ্যমে প্রকাশিত হয়, আমরা ঈমানদারদের সাথে আনুগত্য ও কর্তব্যপরায়ণতার সম্পর্ক স্থাপন করি, এবং আমরা কুফ্*ফারদের প্রতি শত্রুতা পোষণ করি, আর তাদের সাথে খুব কঠোর আচরণ করি ।
[৫,৬] এরপর ৫ম এবং ৬ষ্ঠ গুণাবলী হলঃ “...তারা আল্লাহ্*র রাস্তায় জিহাদ করে, এবং নিন্দুকের নিন্দার পরোয়া করে না...”।
আর, মানুষদেরকে দ্বীনে ফিরিয়ে আনার জন্য, আল্লাহ্*র রাস্তায় জিহাদ করা, এবং নিন্দুকের নিন্দার পরোয়া না করা - এ বৈশিষ্ট্য দু’টির গুরুত্ব অত্যাধিক।
সুতরাং, যারা এমন মনে করে যে, মানুষকে দ্বীনে ফিরিয়ে আনা সম্ভব (এই গুণাবলী অর্জন ব্যতীত) এবং একটি ইসলামিক ভূমি প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব, যখন কিনা ইসলামের ছায়া পৃথিবীর বুক থেকে অপসারিত হয়েছে, তবে এমন মানুষেরা প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ্* সুবহানাহু তা‘আলার মানহাজ উপলদ্ধি করতে পারেন নি । কারণ এই আয়াতটি সম্পূর্নরূপে স্বচ্ছ এবং স্পষ্টত প্রতীয়মান একটি আয়াত ।
সুতরাং, মানুষের উপর কর্তৃত্বশীল হবার জন্য ঈমানদারদের মাঝে ভালোবাসা এবং আনুগত্যের সম্পর্কস্থাপন করা একটি অতি প্রয়োজনীয় বিষয়, আর সেই সাথে কর্তৃত্বশীল হবার জন্য অত্যাবশ্যক হল, কুফ্*ফারদের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করা, আর আল্লাহ্*র রাস্তায় জিহাদ করা [যেমনটি তিনি সুবহানাহু তা‘আলা বলেছেনঃ “...নিন্দুকের নিন্দার পরোয়া করে না...”]। সুতরাং, এটি সকল প্রকারের সাহায্য-সহযোগিতা এবং সকল প্রকারের সৎকাজের আদেশকে অন্তর্ভুক্ত করে ।
সুতরাং, যখন আমরা এ সকল গুণাবলী অর্জন করতে সফল হব, এবং এমন সাহায্যকারী গঠন করতে পারব যারা এ সকল গুণাবলী ধারন করে, তবে আমরা একটি শক্তিশালী ভিত্তি পাব, যার দ্বারা বড় পরিবর্তন সম্ভব হয়ে উঠবে, আর সত্যকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য আল্লাহ্*র রাস্তায় জিহাদ করা সম্ভব হয়ে উঠবে ।
আর এই বাস্তবতার সাথে সম্পর্কিত অন্যান্য দালীলসমূহের দিকে তাকালে আমরা আমাদের রসূলুল্লাহ্*র ( ) সেই হাদীসটি দেখতে পাই যা, আল-হারিস আল-আশ‘আরীর (রাযিআল্লাহু আনহু) দ্বারা বর্ণিত হয়েছে, যাতে তিনি ( ) বলেছেনঃ “নিশ্চয়ই আল্লাহ্* ইয়াহ্*ইয়া ইব্*ন যাকারিয়্যাহ্*কে পাঁচটি বিষয়ের হুক্*ম দিয়েছিলেন, যেগুলোর উপর তাকে ‘আমল করার জন্য এবং তিনি যেন এগুলোর উপর ‘আমল করার জন্য বনু ইসরঈলকে আদেশ দেন, সেই আদেশ দেওয়া হয়েছিল । কিন্তু তিনি তা করা থেকে বিরত থেকেছিলেন, তাই ‘ঈসা বললেনঃ ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ্* আপনাকে পাঁচটি বিষয়ের হুক্*ম দিয়েছেন, যেগুলোর উপর আপনাকে ‘আমল করার জন্য এবং আপনি যেন বনু ইসরঈলকে এগুলোর উপর ‘আমল করার আদেশ দেন, সেই আদেশ দেওয়া হয়েছে। সুতরাং, হয় আপনি তাদের আদেশ করুন, অথবা আমি তাদের আদেশ করব।’”
সুতরাং, এখানে এই দ্বীনের একটি পরম বাস্তবতা দেখা যাচ্ছে, আর তা হল, আল্লাহ সুবহানাহু তা‘আলা প্রশংসনীয় এবং সকল প্রকারের নির্ভরশীলতা থেকে মুক্ত, আর আল-ইসতিবদাল (আল্লাহ্*র একদল মানুষকে অপর একদল মানুষের দ্বারা প্রতিস্থাপন) সুন্নাহ্*টি কারোও ক্ষেত্রেই ব্যতিক্রম নয় । কারণ এখানে দেখা যাচ্ছে যে, একজন আল্লাহ্*র নাবী আল্লাহ্* যে দায়িত্ব বহন করার আদেশ দিয়েছেন, তাতে কিছুমাত্র পিছবা হয়েছেন, আর তাই আল্লাহ্* সুবহানাহু তা‘আলা অপর এক নাবীকে জানালেন, “হয় তিনি [ইয়াহ্*ইয়া (আঃ)] তাদেরকে আদেশ করবেন, নতুবা আপনি তাদেরকে আদেশ করেন ।” সুতরাং, আল্লাহ্* ও তার রসূলের ( ) আদেশ পালনের ক্ষেত্রে পিছে পরে থাকার ক্ষেত্রে আমরা কে? সুতরাং, যদি আমরা পিছবা হই, তবে আল-ইসতিবদাল সুন্নাহ্*টি আমাদের উপরও প্রযোজ্য হয়ে পড়বে।
ফলে ‘ঈসা (আঃ) তখন ইয়াহ্*ইয়াকে (আঃ) বললেনঃ “নিশ্চয়ই আল্লাহ্* আপনাকে পাঁচটি বিষয়ের হুক্*ম দিয়েছেন, যেগুলোর উপর আপনাকে ‘আমল করার জন্য এবং আপনি যেন বনু ইসরঈলকে এগুলোর উপর ‘আমল করার আদেশ দেন, সেই আদেশ দেওয়া হয়েছে। সুতরাং, হয় আপনি তাদের আদেশ করুন, অথবা আমি তাদের আদেশ করব।” ফলে ইয়াহ্*ইয়া বললেন, “আমি ভয় করছি যে, আপনি যদি এগুলোতে আমার অগ্রগামী হন, তাহলে আমি পৃথিবীর দ্বারা গ্রাসকৃত হব অথবা শাস্তিপ্রাপ্ত হব।” ফলে, তিনি মানুষদেরকে বাইতুল-মাক্বদীসে একত্র করলেন, যার ফলে সমগ্র মাসজীদ মানুষদের দ্বারা ভরে গেল, আর তারা দাঁড়িয়েছিলেন ছাদের উপরে, এবং তিনি বললেনঃ
“নিশ্চয়ই আল্লাহ্* আমাকে পাঁচটি বিষয়ের হুক্*ম দিয়েছেন, যেগুলোর উপর আমাকে ‘আমল করার জন্য এবং আমি যেন তোমাদেরকে এগুলোর উপর 'আমল করার আদেশ দেই, সেই আদেশ দেওয়া হয়েছে”
প্রথমটি হল, তোমরা আল্লাহ্*র ‘ইবাদাত করবে এবং তার সাথে কোন শরীক সাব্যস্ত করবে না । কারণ, যে ব্যক্তি আল্লাহ্*র সাথে কাউকে শরীক করে, তার উদাহরণ হল সেই দাসের উদাহরণের ন্যায়, যাকে এক ব্যক্তি তার সর্বোত্তম স্বর্ণ ও রৌপ্য সম্পদের দ্বারা ক্রয় করেছে এবং বলেছেঃ ‘এই হল আমার ঘর এবং আমার জীবিকার উপকরণ, সুতরাং কাজ কর এবং আমার কাছে এর মজুরি নিয়ে এসো ।’ সুতরাং, সে কাজ করতে গেল আর এর থেকে অর্জিত মজুরি তার মালিক ব্যতীত অপর এক ব্যক্তিকে দিয়ে দিল। সুতরাং, তোমাদের মধ্য থেকে কে তার দাসের এরূপ আচরণ মেনে নিবে ?
আর আল্লাহ্* তোমাদেরকে সলাত আদায় করার আদেশ দিয়েছেন । সুতরাং, যখন তোমরা সলাতে নিমজ্জিত থাকো, তখন তোমরা তোমাদের মুখমন্ডলী ঘুরিয়ে নিও না, কারণ নিশ্চয়ই বান্দা যতক্ষণ সলাতে নিমজ্জিত থাকে, এবং মুখমন্ডলী না ঘুরিয়ে একনিষ্ঠ মনে সলাতে অবস্থান করে, ততক্ষণ পর্যন্ত আল্লাহ্*ও তার মুখমন্ডলী তার বান্দার দিক করে রাখেন।
এবং তিনি তোমাদেরকে সিয়াম পালনের আদেশ দিয়েছেন, কারণ এর উদাহরণ হল সেই ব্যক্তির উদাহরণের ন্যায়, যে কোমরবন্ধনী (অর্থাৎ বেল্ট) পরিহিত, আর এর সাথে আটকানো রয়েছে একটি থলে যাতে রয়েছে কস্তুরি, আর সকল মানুষেরা (অথবা সে নিজেই) এর সুগন্ধে বিস্ময় বোধ করছে । কারণ, নিশ্চয়ই সিয়ামপালনকারী ব্যক্তির মুখ থেকে আসা গন্ধ আল্লাহ্*র কাছে কস্তুরির সুগন্ধ অপেক্ষাও অধিক প্রিয়।
এবং তিনি তোমাদেরকে যাকাত প্রদানের আদেশ করেছেন, কারণ এর উদাহরণ হল সেই ব্যক্তির উদাহরণের ন্যায়, যাকে তার শত্রুপক্ষ বন্দী করেছে, তার হাতদু’টি ঘাড়ের সাথে বেঁধেছে এবং তার শিরচ্ছেদের জন্য তাকে প্রস্তুত করা হয়েছে, আর এমন সময় সে বলেছেঃ ‘আমি অল্প কিংবা বেশী পরিমাণ মুক্তিপণের বিনিময়ে আমাকে তোমাদের থেকে মুক্ত করব’, সুতরাং সে নিজেকে তাদের থেকে মুক্ত করল ।
আর আল্লাহ্* তোমাদেরকে তার যিক্*র/স্মরণ করার জন্য আদেশ করেছেন, কারণ এর উদাহরণ হল সেই ব্যক্তির উদাহরণের ন্যায়, যাকে তার শত্রু ধাওয়া করছে এবং দ্রুততার সাথে তার নিকটবর্তী হচ্ছে, আর তখন সে একটি সংরক্ষিত দুর্গের নিকট পৌছলো, আর এভাবে সে তাদের থেকে নিজেকে রক্ষা করল । আর একইভাবে বান্দার জন্য আল্লাহ্*র যিক্*র/স্মরণ হল সংরক্ষিত দুর্গের ন্যায়, যেটি ব্যতীত সে নিজেকে শাইতন থেকে রক্ষা করতে পারে না।”
আর এরপর আল্লাহ্*র রসূল ( ) বললেনঃ “আর আমি তোমাদেরকে পাঁচটি বিষয়ের আদেশ করছি, যা আল্লাহ্* আমাকে আদেশ করেছেন, আর তা হলঃ শ্রবন, আনুগত্য, জিহাদ, হিজরাহ্* এবং জামা‘আহ্*।”
[ইমাম আহ্*মাদ ও ইমাম আত্*-তিরমিযির দ্বারা বর্ণিত]
সুতরাং, এখানে বিষয়টি হল, প্রথম পাঁচটি বিষয় যা হল ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভ, এগুলোকে অপর পাঁচটি বিষয় ব্যতীত মানবজাতির জন্য একটি শাসনব্যবস্থা বা কর্মপদ্ধতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয় । একইভাবে একজন ব্যক্তির পক্ষে কমপক্ষে এবং অন্তরের দিক দিয়ে মুসলিম হওয়া সম্ভব নয়, যখন সে মানবরচিত বিধানের দ্বারা শাসন করে এবং পৃথিবীতে ইসলামের কর্তৃত্ব থাকে না । আর যে ইসলাম মুহাম্মাদ ( ) -এর কাছে পাঠানো হয়েছিল এবং যেটিকে তিনি মানুষের কাছে পৌছে দেওয়ার জন্য আদিষ্ট হয়েছিলেন, সেটি পাঠানোর কারণ হল, এটি যেন সমগ্র পৃথিবীকে শাসন করে, সকল প্রকারের বিচার-আচার যেন এটির দিকেই ঘুরিয়ে নেয় এবং নিছক কিছু আনুষ্ঠিকতার রূপ যেন না নেয়। সুতরাং, এই পাঁচটি বিষয় অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আর আমরা যদি এই পাঁচটি বিষয়কে মনযোগ দিয়ে দেখি, তাহলে আমরা দেখতে পাই যে, বিভিন্ন গোত্রের প্রতি রসূল ( ) -এর দা’ওয়াহ্*-এর বাস্তবতার সাথে এই পাঁচটি বিষয় সম্পূর্নরূপে সঙ্গতিপূর্ণ এবং দৃঢ়সমর্থকঃ
[১] “...সেই সাক্ষ্য প্রদানের দিকে আহবান করছি যে, আল্লাহ্* ব্যতীত ‘ইবাদাত পাবার অধিকারী কোন ইলাহ নেই, এবং আমি আল্লাহ্*র রসূল,...” এবং এই সাক্ষ্য প্রদানের সাথে জড়িত সকল শর্তাবলি ও করণীয় বিষয়ের বাস্তব প্রয়োগ।
[২] “...এবং যে, আপনারা আমাকে নিরাপত্তা দিবেন এবং সাহায্য করবেন।”
সুতরাং, নিরাপত্তা প্রদান ও সাহায্য করা - এ দু’টি বিষয় ঐ পাঁচটি বিষয়ের উপর নির্ভরশীল। কারণ নিরাপত্তা প্রদান ও সাহায্য প্রদানের জন্য প্রয়োজন একটি জামা‘আহ্*, আর তাদের প্রয়োজন শোনা ও আনুগত্য করা, এবং তাদের প্রয়োজন জিহাদ করার এবং প্রয়োজন হিজরাহ্* করার। আর আমরা যখন আল্লাহ্*র কিতাব এবং আল্লাহ্*র রসূলের ( ) সুন্নাহ্*র অনুসরণের চেষ্টা করি, তখন আমরা স্পষ্ট দেখতে পাই যে, ইসলামিক স্টেইটের প্রতিষ্ঠা এবং দ্বীনের সম্প্রসারণের পদ্ধতি হিসেবে এগুলোর কথা জোর দিয়ে বলা হচ্ছেঃ
[১] একটি জামা‘আহ্*
[২] আদেশ শোনা
[৩] আনুগত্য করা
[৪] হিজরাহ্* করা
[৫] জিহাদ করা
সুতরাং, যারা হিজরাহ্* করার এবং আল্লাহ্*র রাস্তায় জিহাদ করার ত্যাগ স্বীকার ব্যতীত ইসলামের জন্য কোন কিছু প্রতিষ্ঠা করতে চায়, তবে এরূপ মানুষেরা মুহাম্মাদের ( ) মানহাজ উপলদ্ধি করতে পারেনি। আর যদি তারা বুঝে থাকে, তবে তারা এর উপর ‘আমল করেনি, বরং তারা অন্যান্য ধরনের আনুগত্য ও ‘ইবাদাতের দ্বারা নিজেদেরকে ব্যস্ত রাখছে। সুতরাং, এরূপ মানুষেরা এ সকল বড় ‘ইবাদাতসমূহের ভারী ফলাফল থেকে পলায়ন করছে, কারণ নিশ্চয়ই জিহাদ একটি কষ্টকর ‘আমল, যা আল্লাহ্* সুবহানাহু তা‘আলা তার কিতাবে উল্লেখ করেছেন। সুতরাং, এখন পর্যন্ত যা বলা হয়েছে, তা থেকে এটা পরিষ্কারভাবে ফুটে উঠেছে যে, জামা‘আহ্* ও জিহাদের গুরুত্ব অত্যাধিক।
আর আমরা এখন এমন একটি পরিস্থিতির মধ্যে আছি যে, আমাদের এমন কোন ভূমি নেই যেখানে আমরা হিজরাহ্* করতে পারি। এই সুযোগটি একটি অল্প সময়ের জন্য ছিল, আর এটি ছিল একটি বিরল সুযোগ, কারণ খিলাফাহ্*-এর পতনের পর থেকে ইসলামের অকৃত্রিম মানুষদের জন্য একটি ইসলামিক ভূমি প্রতিষ্ঠা করা অসম্ভব করে তুলার জন্য ক্রুসেডাররা কঠোর পরিশ্রম করেছে। আর এরপর আল্লাহ্* সুবহানাহু তা‘আলার পূর্বনির্ধারিত হুক্*ম অনুসারে আফগানিস্তানের ঘটনাপ্রবাহ চলতে থাকলো আর সোভিয়েত ইউনিয়ন পরাজিত হল। ক্রুসেডাররা সোভিয়েত ইউনিয়নের ভয় ও আতংকে মুসলিমদের কার্যকলাপের প্রতি তাদের প্রহরা ও উদ্বেগের কথা ভুলে গিয়েছিল, আর সোভিয়েত ইউনিয়নকে প্রতিহত করার সম্ভাব্য যেকোন উপায় তারা প্রয়োগ করতে রাজী ছিল, এমনকি যদি এর মানে দাঁড়ায় মুজাহিদ্বীনদের বিরুদ্ধে না যাওয়া। সুতরাং, সেই দরজাটি খোলা ছিল, আর এরপর ১০ বছর হয়ে গেছে।
যাহোক, খুবই দুর্ভাগ্যবশত মুসলিম উম্মাহ্* তার এই অবশ্যপালনীয় কর্তব্যের দায়িত্ব বহনের জন্য উঠে দাঁড়ায়নি, বিশেষকরে যারা ‘উলামা, যারা দ্বীনের দিকে আহবানকারী, যারা বিভিন্ন ইসলামিক গোষ্ঠীর সাথে সংশ্লিষ্ট, তাদের কথা বলছি। আর যারা জিহাদের ভূমিতে এসেছিল, তারা ছিল মুসলিম উম্মাহ্*র খুবই স্বল্প সংখ্যক যুবক মুসলিম, আর এসেছিল কিছু ব্যবসায়ীদের থেকে আসা অর্থনৈতিক সাহায্য, কিন্তু একটি শক্তিশালী ইসলামিক ভূমি প্রতিষ্ঠার জন্য এটি যথেষ্ট ছিল না।
আর তখন একটা ইসলামিক ভূমি প্রতিষ্ঠার ভালো সম্ভাবনা ছিল যা হত অঞ্চলভিত্তিক বা গোত্রভিত্তিক বা জাতীয়তাভিত্তিক আনুগত্য থেকে সম্পূর্ন মুক্ত ইসলামিক সংজ্ঞানুযায়ী একটি ভূমি, যখন আফগান ভাইয়েরা একটা অসাধারণ সহজ-উপযোগী পরিবেশ ও সমর্থন উপভোগ করছিল।
তবুও দুর্ভাগ্যবশত, সহজ-উপযোগী পরিবেশের উপস্থিতি, এই পরিস্থিতির সুযোগ গ্রহন করার জন্য বিভিন্ন ইসলামিক গোষ্ঠী, ‘উলামা এবং চিন্তাবীদদের প্রতি বিশেষ করে শাইখ ‘আব্দুল্লাহ্* ‘আযযাম (রহিঃ) এবং অন্যান্য ভাইদের করা বার বার আহবান, উৎসাহ, অনুপ্রেরণা ইত্যাদি সত্ত্বেও বেশীরভাগেরই প্রতিউত্তর ছিলঃ
“তার মাঝে দেখছি না কোন প্রাণ,
যে বিষয়ের করছো তুমি আহবান”
[কবিতা]।
মানুষেরা ভৌগলিক এবং আঞ্চলিক প্রীতি নিয়ে ছিল উদ্বিগ্ন ও ব্যস্ত, আর প্রত্যেকেই চাচ্ছিল তার নিজস্ব ইসলামিক ভূমি, প্রত্যেক গোষ্ঠী তার নিজস্ব জন্মাঞ্চলে একটি নিজস্ব ইসলামিক ভূমি প্রতিষ্ঠা করতে চাচ্ছিল, সবাই যেন এ সকল অ-ইসলামিক মানসিকতার জালে বন্দী হয়ে গিয়েছিল।
সুতরাং, ১০ বছর ধরে এই সুযোগটি ছিল, এরপরেও মানুষেরা এর থেকে সুযোগ গ্রহন করার জন্য নড়ে নি। আর আমি এই কথাগুলো বলছি এটা বুঝানোর জন্য যে, বিষয়টা খুব সহজ ছিল না, আর বর্তমান পরিস্থিতি বিষয়টিকে আরও কঠিন করে তুলেছে।
এরপর আল্লাহ্* সুবহানাহু তা‘আলা সেই সময় এবং এই সময়ের মাঝে তালিবানদের জাগরণ এবং তাদের প্রসার এবং একটি ভূমি প্রতিষ্ঠার এবং এরপর থেকে চলতে থাকে বর্তমান দ্বন্দ্ব ও যুদ্ধের অনুমতি দিলেন যা আনুমানিক ছয় বছর বা তার চেয়েও দীর্ঘ সময়ব্যাপি চলছে। আর মানুষ থেকেছে নিজের ইচ্ছা-আকাঙ্ক্ষার জালেই বন্দী হয়ে, আর সেই সাথে আন্তর্জাতিক মিডিয়ার জালেও হয়েছে বন্দী যা তালিবানদের খ্যাতি ধ্বংস করার জন্য তাদের নির্দয় প্রচারাভিযান চালিয়েছে। মানুষকে ভুল দিকে প্রভাবিত করার জন্য হয়ত আন্তর্জাতিক মিডিয়ার নিন্দা করা যায়, কিন্তু যা মেনে নেওয়া খুব কঠিন তা হল, যাদেরকে মানুষ ইসলামের সমর্থনকারী, সাহায্যকারী, আহবানকারী হিসেবে জানতো, তারা বলেছেঃ “আমরা আন্তর্জাতিক মিডিয়ার দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলাম!” আফগানিস্তান ‘আরব উপদ্বীপসমূহ থেকে কিংবা মুসলিম বিশ্বের অন্যান্য যেকোন অংশ থেকে কয়েক ঘন্টার দূরত্বে অবস্থিত।
সুতরাং, সাহায্য পাঠানোর ক্ষেত্রে তাদের দেরী করে ফেলা, এমনকি যদিও এই ভূমিটির নাম ছিল তালিবানদের ভূমি – ‘ইল্*মের ছাত্রদের ভূমি – এটি বাহ্যিকভাবে তাদের বুঝ এবং তাদের সত্যবাদিতার এক অস্বাভাবিক শূণ্যতাকেই আমাদের সামনে প্রকাশ করে দেয়, আর আল্লাহ্* ছাড়া কোন শক্তি বা ক্ষমতা নেই, আর এ ব্যাপারে আল্লাহ্*ই ভালো জানেন। সুতরাং, এই ভূমিটি এখন আর নেই, আর তারা একটি আংগুলও নাড়ায়নি।
আর আমি বলিঃ আমার নিশ্চিত বিশ্বাস রয়েছে যে, আল্লাহ্* সুবহানাহু তা‘আলার রহমতে, একটি ইসলামিক ভূমি আর ইসলামিক খিলাফাহ্* প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজনীয় যথেষ্ট উপাদান ও সক্ষমতা এই উম্মাহ্*র রয়েছে, কিন্তু, আমাদেরকে এ সকল উপাদান ও সক্ষমতাসমূহকে জানাতে হবে যে, এরূপ করাটা তাদের জন্য ফার্*দ বিষয়ে পরিণত হয়েছে। আর সেই সাথে যারা এ সকল উপাদান ও সক্ষমতাসমূহের প্রয়োগকে তাদের ভুল উক্তিসমূহের দ্বারা সীমিত ও সীমাবদ্ধ করছে, তাদেরকে আমাদের জানাতে হবে যে, তারা এর দ্বারা গুণাহ অর্জন করছে। সুতরাং, যদি যুবকেরা এবং ব্যবসায়িকেরা তাদের ফার্*দ কর্তব্য উপলদ্ধি করতে পারত, তাহলে আমাদের পক্ষে এই কাজটি করা সম্ভব হত, যার ফলে উম্মাহ্*র বাকী অংশ থেকে কর্তব্য অবহেলার গুণাহ্* সরানো যেত, যেহেতু তখন আমাদের উপর আপতিত যন্ত্রনা ও দুর্দশা দূরীভূত করা হত।
আমরা এখানে সে সকল মানুষদের কথা বলছি যারা বলে যেঃ “জিহাদের জন্য সমগ্র উম্মাহ্*র প্রয়োজন নেই।” যদিও এই উক্তিটি সত্য, কিন্তু সত্যের প্রসারের উদ্দেশ্যে এটি উচ্চারিত হয়নি। কারণ আজকের জিহাদের পক্ষে সমগ্র উম্মাহ্*কে আবাসিত করা এক অসম্ভব বিষয়, আর যারা আগ্রাসী শত্রুবাহিনীকে প্রতিহত করার কাজে নিয়োজিত, তারা সমগ্র উম্মাহ্*র একটি অতি ক্ষুদ্র অংশ। এটা সত্য। কিন্তু আরেকটি বিধি রয়েছে যে, জিহাদ একটি ফার্*দ ‘আইন (ব্যক্তিগতভাবেও অবশ্যপালনীয় কর্তব্য), আর তারা এই বিধির প্রয়োগের ব্যাপারে আমাদের সাথে ভিন্নতা পোষণ করে। তারা বলেঃ “আমরা তোমাদের কাছে কয়েক হাজার সাহায্যকারী সৈন্য পাঠালাম, আর তোমরা তাদের আবাসিত করতে পারছ না?” আর তারা বলেঃ “আমাদের প্রত্যেকেরই কর্মক্ষেত্রের প্রতিটি ময়দান পরিত্যাগ করা এবং আমাদের সবার জিহাদে যোগদান করা একটি অযৌক্তিক বিষয়!” আর এখানে এই যুগের দূষণ পরিষ্কারভাবে ফুটে উঠে, বস্তুবাদের দূষণ, বুদ্ধিবৃত্তির দূষণ এবং এগুলোর প্রসার। কারণ এগুলো হল এমনসব বিধি যেগুলো এই উম্মাহ্*র সালাফদের (পূর্ববর্তীদের) থেকে ন্যায়পরায়ণ ফুক্বাহাদের ঐকমত্য থেকে এসেছে, আল্লাহ্* যেন তাদের উপর রহম করেন, আর আজকাল কিছু নতুন ফুক্বাহা দেখা যাচ্ছে যারা উম্মাহ্*র ঐকমত্যর বিরুদ্ধে যাচ্ছে! যখন জিহাদ ফার্*দ ‘আইনে পরিণত হয়, তখন এটার গুরুত্ব সর্বাধিক হয়ে উঠে, যা শাইখ উল-ইসলাম [ইব্*ন তাইমিয়্যাহ্* (রহিঃ)] উল্লেখ করেছেনঃ “স্বয়ং ঈমান আনার পরে আগ্রাসী শত্রু পক্ষের সৈন্যদেরকে প্রতিহত করার চাইতে গুরুত্বপূর্ণ কোন ফার্*দ নেই, যারা দ্বীন ও মুসলিমদের জীবনকে হুমকি দেয়।”
সুতরাং, আপনার এখানে এ কথা বলার কোন সুযোগ নেই যে, যদি তারা সকলে বেড়িয়ে পড়ে তবে জিহাদের পক্ষে তাদের আবাসন সম্ভব নয়। এরূপ কথা আসলে একজনের বুঝ-এ অস্বাভাবিক রকমের শূণ্যতা এবং পৃথিবীর প্রতি অস্বাভাবিকভাবে আসক্তি থাকার ফলেই হয়ে থাকে। ফার্*দ ‘আইন বিষয়টি তখনই ফার্*দ কিফায়াতে পরিণত হয়, যখন যথেষ্ট পরিমাণের মুসলিম মুজাহিদ আগ্রাসী শত্রুবাহিনীকে প্রতিহত করার জন্য অগ্রসর হয়। সুতরাং, এই অগ্রসর হওয়ার পদ্ধতিটির মাধ্যমেই এই ফার্*দ ‘আইন সকলের উপর থেকে অপসারিত হয়, আর বাকিরা থেকে যায়, যারা পিছনে পড়ে ছিল, তাদের বিভিন্ন কাজের ময়দানে।
আর দুর্ভাগ্যবশত, এটা ইসলামের পুনর্জাগরণের ক্ষেত্রে বাঁধাগুলোর মধ্যে একটা অন্যতম প্রধান কারণ, আর এটা তাদের লিখাসমূহ, তাদের বার্তাসমূহ এবং তাদের মিটিংসমূহে প্রকাশ পায়। তারা বলেঃ “জিহাদ একটি অনেক বড় ‘ইবাদাত, কিন্তু আরও অনেক ধরনের ‘ইবাদাতও আছে।”
এসব মানুষেরা মুহাম্মাদের ( ) মানহাজ উপলদ্ধি করতে পারেনি। আর আমি কা’ব ইব্*ন মালিকের (রাযিআল্লাহু আনহু) কাহিনীটি বর্ণনা করেছিলাম, যে তিনি যখন মাদীনাহ্*-এ ছিলেন, তখন তিনি বিভিন্ন প্রকারের ‘ইবাদাতে লিপ্ত থাকতেন, আর তিনি ছিলেন আল্লাহ্*র রসূলের ( ) শহরে অবস্থিত। আর নাবী মুহাম্মাদ ( ) -এর একটি হাদীসে এটি বর্ণিত আছে যে, তার ( ) মাসজীদে ‘ইল্*ম অর্জন করা হল আল্লাহ্*র রাস্তায় জিহাদ করার ন্যায়। আর এসবকিছু থাকা সত্ত্বেও, আর তার সবচাইতে পূর্বে ইসলামগ্রহনকারী সাহাবীদের মাঝে অন্যতম হওয়া সত্ত্বেও, তিনি ছিলেন তাদের মধ্যেও অন্যতম যারা বাই‘আতুল ‘আক্বাবাহ্*-এ অংশগ্রহন করেছিলেন। এর থেকে বাই‘আতুল ‘আক্বাবাহ্*-এর গুরুত্ব উপলদ্ধি করা যায়, যা সংগঠিত হয়েছিল একটি মুসলিম ভূমি প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে, আর এটি সংঘটিত হবার সময় কা’ব ইব্*ন মালিকের (রাযিআল্লাহু আনহু) অপর কোন গুণাবলীর কথা উল্লিখিত হয়নি, কারণ জিহাদ যখন ফার্*দ ‘আইন হয়ে পড়ে, তখন অন্যান্য ধরনের ‘ইবাদাতের কথা উল্লেখ করার কোন সুযোগ নেই, আর যখন কেউ এতে যোগদান না করে বসে থাকে, তখন তাকে অগ্রাহ্য করা ও নিন্দা করা ছাড়া আর কোন কিছুই উল্লেখ করার সুযোগ নেই। তাই তার (রাযিআল্লাহু আনহু) ক্ষেত্রে এরূপ বলা হয়নি যেঃ “আল্লাহ্* যেন তাকে (রাযিআল্লাহু আনহু) পুরস্কৃত করেন, কারণ সে রয়েছে মাদীনাহ্*-এ, হারাম শরীফে সলাত আদায় করতে পেরে তিনি কতই না সৌভাগ্যবান!” অথবাঃ “তিনি শিক্ষাপ্রদান করছেন!” - এরূপ বলা হয়নি, ক্বুরআনের নিম্নোক্ত আয়াতের কারণেঃ
“বলুনঃ যদি তোমাদের পিতৃবর্গ, তোমাদের পুত্রগণ, তোমাদের ভ্রাতাগণ, তোমাদের স্ত্রীগণ, তোমাদের স্বগোত্র, আর ঐসব ধন-সম্পদ যা তোমরা অর্জন করেছ, আর ঐ ব্যবসা যাতে মন্দা পড়বার আশংকা তোমরা করছো, আর ঐ গৃহসমূহ যা তোমরা পছন্দ করছো, তোমাদের কাছে আল্লাহ্* ও তার রসূল ও তার রাস্তায় জিহাদের চাইতেও অধিক প্রিয় হয়, তবে তোমরা আল্লাহ্* নির্দেশের (‘আযাবের হুক্*ম ) জন্য অপেক্ষা কর, আর আল্লাহ্* ফাসিক্ব সম্প্রদায়কে হিদায়াত করেন না।” [আত্*-তাওবাহঃ২৪]
একইভাবে, আমরা যদি তাদের দিকে তাকাই যারা তাবুকের যুদ্ধে না গিয়ে ঘরেই অবস্থান করছিল, তখন আমরা দেখি যে, আল্লাহ্* সুবহানাহু তা‘আলা তাদের জন্য ‘ফিসক্ব’ শব্দটি ব্যবহার করেছেন।
আজ, এই দ্বীনের প্রতিরক্ষার জন্য গৃহীত ব্যবস্থা এবং এই দ্বীনকে সাহায্য করার জন্য মজুদ শক্তি ও উপাদানের প্রয়োগের পদ্ধতিতে অনেক ঘাটতি রয়েছে। এখন, যে ব্যক্তি দ্বীনের সাহায্যার্থে কাজ না করে নীরব বসে থাকে, সে এটাই জানে না যে সে গুণাহ্* অর্জন করছে, বরং প্রকৃতপক্ষে সে মনে করে যে, সে আল্লাহ্* সুবহানাহু তা‘আলার আনুগত্যের অধীনেই আছে! আর সে এই গুণাহ্*র লজ্জা সম্পর্কে থাকে সম্পূর্ন অজ্ঞ হয়ে, অথচ এ ব্যাপারে (আল্লাহ্*র রাস্তায় জিহাদ) সতর্কতা, হুঁশিয়ারি এবং উৎসাহসূচক প্রচুর আয়াত রয়েছে, আর যারা এই ফার্*দ পালন না করে বসে থাকে এবং পার্থিব জীবনের দিকে ঝুঁকে থাকে, তাদেরকে নিন্দা ও তিরস্কার করে প্রচুর আয়াত রয়েছে। আর তখন কাদেরকে সতর্ক করা হয়েছিল এসব আয়াতের দ্বারা? তারা হলেন আল্লাহ্*র রসূলের ( ) সাহাবীগণ (রাযিআল্লাহু আনহুম)! একের পর এক সতর্কবাণী। “ও হে ঈমানদারগণ! তোমাদের কি হল যে, যখন তোমাদেরকে বলা হয় – আল্লাহ্*র রাস্তায় (জিহাদের জন্য) বেড়িয়ে পড়, তখন তোমরা জমিনকে আকড়ে ধর! তবে কি তোমরা পরকালের বদলে পার্থিব জীবন নিয়েই পরিতুষ্ট হয়ে পড়লে? অথচ পার্থিব জীবনের ভোগবিলাস পরকালের তুলনায় অতি সামান্য! [সূরাহ্* আত্*-তাওবাহঃ৩৮]
আমাদের কারোও কি তার পিতা কিংবা তার চাচা অথবা তার শাইখকে একথা বলার সাহস আছে যেঃ “আপনারা পার্থিব জীবন নিয়ে সন্তুষ্ট! ফিলিস্তিনের দুর্দশা চলছে আশি বছর ধরে, আপনি একটি বুলেটও ফায়ার করেন নি! আর আপনি একদিনের জন্যও আপনার পায়ে ধুলো লাগতে দেন নি! সুতরাং, আপনি তাদের মধ্যে একজন, যারা পার্থিব জীবন নিয়ে পরিতুষ্ট হয়ে পড়েছে।” আমাদের কেউই একথা বলতে সক্ষম হবে না। দ্বীনকে কিভাবে প্রতিরক্ষা প্রদান করতে হবে, তার মাধ্যম ও কর্মপদ্ধতি কি - এসম্পর্কে আমাদের বুঝ-এ প্রচুর ঘাটতি রয়েছে। আর এ ব্যাপারে অনুসন্ধান করলে প্রচুর আয়াত মিলবে, যা আমি পূর্বে উল্লেখ করেছি।
যে সকল যুবকেরা দ্বীনের কাজে নিজেদেরকে বিলিয়ে দিতে সক্ষম, এবং দ্বীনের জন্য নিজেদেরকে কুরবানি করতে সক্ষম, তারা অতি দূর্ভাগ্যবশত একটি ভুলধারণা দ্বারা ভুলদিকে চালিত হচ্ছে, যেটা হল, তারা ইসলামের সেসকল ‘উলামাদের কথা শুনছে ও আনুগত্য করছে যারা জিহাদ থেকে নিজেদেরকে পৃথক করে রেখেছে। কারণ, যে জিহাদে অংশগ্রহণ না করে বসে থাকে, তার কথা শুনা অথবা তার আনুগত্য করা উচিত নয়। আর এর ফলে দ্বীনের এই সম্পদেরা ব্যক্তিগতভাবে যা পালন করা ফার্*দ তা থেকে মুখ ফিরিয়ে যা সমষ্টিগতভাবে পালন করা ফার্*দ তাতে মনযোগ দিয়েছে, যেমনঃ ‘ইল্*ম অর্জন করা। অথচ এমনকি যদি সকল মানুষও ‘উলামায় পরিণত হয়ে যায়, তাহলেও দ্বীন প্রতিষ্ঠিত হবে না, যতক্ষণ পর্যন্ত না - জামা‘আহ্*, শোনা, আনুগত্য করা, সাহায্য করা এবং জিহাদ করা – এগুলোর সমন্বয় ঘটছে।
সুতরাং এখান থেকে, আমাদের যুবকদেরকে এ ব্যাপারে সতর্ক করা উচিত যে, তাদের ‘ইল্*মসম্পন্ন নেতৃত্ব আজ পার্থিব জীবন নিয়ে পরিতুষ্ট হয়ে পড়েছে। এটি (এই নেতৃত্ব) সেই গুরুত্বপূর্ণ ফার্*দ থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছে যেটিকে সামান্য অবহেলা করার কারণে আল্লাহ্*র রসূলের ( ) কিছু সাহাবীকেও (রাযিআল্লাহু আনহুম) নিন্দা করা হয়েছিল। আর আল্লাহ্* সুবহানাহু তা‘আলা নিম্নোক্ত আয়াতের মাধ্যমে তার এই কথাকে স্পষ্ট করে দিয়েছেনঃ
“যেরূপে আপনার প্রতিপালক আপনাকে আপনার ঘর থেকে সত্যের সাথে বের করলেন, আর মুসলিমদের একটি দল এটিকে অপছন্দ করছিল।” [সূরাহ্* আল-আনফালঃ০৫]
বদরের দিনে যখন সাহাবী (রাযিআল্লাহু আনহুম)-গণ বের হলেন, তখন তারা ভাবছিলেন যে, তারা সেদিন বানিজ্যের কাফেলা আয়ত্ত করবেন। সুতরাং, যখন তারা (রাযিআল্লাহু আনহুম) শুনলেন যে, হাজারখানেক কুরাইশ বেড়িয়ে এসেছে, তারা এটা অপছন্দ করলেন। সুতরাং, [আবূ আইয়্যুব বর্ণনা করেছেন] আল্লাহ্*র রসূল ( ) বললেনঃ “ওহে মানুষেরা, তোমাদের পরামর্শ দাও।” ফলে আবূ আইয়্যুব বললেনঃ “আমরা শত্রুর সম্মুক্ষীণ হবার ব্যাপারে আমাদের অনিচ্ছা প্রকাশ করলাম, এবং আমরা বললামঃ “হে আল্লাহ্*র রসূল, আমরা শত্রুর সাথে যুদ্ধের উদ্দেশ্যে বেড় হইনি, আর তাদের মোকাবিলা করার মত সামর্থ্য আমাদের নেই। আমরা শুধুমাত্র কাফেলাটির জন্যই বেড় হয়েছি।” ফলে তিনি ( ) বললেনঃ “ওহে মানুষেরা, তোমাদের পরামর্শ দাও।” ফলে আমরা আমাদের পূর্বের কথাই তাকে আবার শোনালাম। ফলে তিনি বললেনঃ “ওহে মানুষেরা, তোমাদের পরামর্শ দাও।” এরপর আল-মিক্বদাদ ইব্*ন ‘আম্*র (রাযিআল্লাহু আনহু) কথা বললেন, আর তিনি বললেনঃ “হে আল্লাহ্*র রসূল! এক্ষেত্রে আমরা আপনাকে সেই কথা বলব না যা বনু ইসরঈল মূসা (আঃ)-কে বলেছিলঃ ‘সুতরাং আপনি এবং আপনার রব যান এবং যুদ্ধ করেন! আমরা তো এখানেই বসে থাকব।’ [আল-মাইদাহঃ২৪]
বরং আমরা আপনাকে বলিঃ আপনি এবং আপনার রব এগিয়ে যান এবং যুদ্ধ করুন, আর আমরা আপনাদের সাথেই যুদ্ধ করব! আল্লাহ্*র কসম, আমরা আপনার ডানদিক থেকে, আপনার বামদিক থেক, আপনার সামনের থেকে এবং আপনার পিছন থেকে যুদ্ধ করব।”
এটা হল সাহাবীদের (রাযিআল্লাহু আনহুম) কথা, যারা একটি যুদ্ধ ও জিহাদসমৃদ্ধ পরিবেশে ছিলেন, আল-আওস এবং আল-খাজরাযের মধ্যে চলতে থাকা যুদ্ধ তাদের দুই গোত্রের অসংখ্যজনের মৃত্যুর কারণ হয়েছিল, আর এটি স্থায়ী হয়েছিল ১০ বছরের জন্য, আর তারা যখন এমন অসীম যুদ্ধের মাঝে দিশেহারা হয়ে পড়েছিল, তখন আল-ইসলাম তাদের কাছে এসেছিল, আর জাহিলিয়্যাহ্*-এর সময় আল-আওস এবং আল-খাজরাযের অনেকেই যুদ্ধের সাথে পরিচিত ছিল, আর এসবকিছুর পরে আল-ইসলাম তাদের কাছে আসলো এবং তাদেরকে জিহাদের জন্য উৎসাহ-অনুপ্রেরণা দিল – তাহলে আজকের দিনে আমরা কোথায়? অন্তরগুলো আজ কেবলই দোদুল্যমান এবং যাদের উপর আল্লাহ্* দয়া করেছেন তারা ব্যতীত সকলেই আল্লাহ্*র দ্বীনকে সাহায্য করার বদলে বসে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। যুবকদের বুঝতে হবে যে, জিহাদের সাথে সম্পর্কহীন নেতৃত্বে বড় আকারের ঘাটতি রয়েছে, আর আমাদের এরূপ মানুষদের কথাকে সেভাবেই উল্লেখ করতে হবে যেভাবে আল্লাহ সুবহানাহু তা‘আলা উল্লেখ করেছেন।
এমন প্রত্যেক ব্যক্তি যে কোন গ্রহনযোগ্য কারণ ব্যতীত জিহাদ না করে বসে রয়েছে, তবে তার অবস্থার বর্ণনা কুরআনে খুবই পরিষ্কার এবং অবশ্যম্ভাবীঃ আর তা হল “ফিস্*ক্ব”। “আর যদি তারা বেড় হবার ইচ্ছা পোষণ করতো, তবে কিছু সরঞ্জাম তো প্রস্তুত করতো, কিন্তু আল্লাহ্* তাদের বেড় হওয়াকে অপছন্দ করলেন, আর তাই তাদেরকে বলা হলঃ ‘বসে থাকো তোমরা, যারা বসে থাকে তদের সাথে।’” [সূরাহ্* আত্*-তাওবাহঃ৪৬] যারা মহিলাদের সাথে বসে থেকে পরিতুষ্ট তারা বুঝে না, এমনকি যদিও তাদের শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর শ্রেষ্ঠ ডিগ্রী থাকে। আর তারা জানে না, এমনকি যদিও ফাত্*ওয়ার জন্য তাদের দিকেই সমস্ত প্রশ্ন করা হয়। কারণ এটা আল্লাহ্*র কিতাবে পরিষ্কার করে বলে দেওয়া আছেঃ “তারা ঘরে বসে থাকা (মহিলাদের) সাথে অবস্থান করে পরিতুষ্ট ছিল” - এমন যে কেউ যার অন্তর আছে বা যাকে আল্লাহ্* শোনার ক্ষমতা দিয়েছেন, সে জানে যে এই আয়াতের বর্ণনার সাথে কারোও অবস্থার মিলে যাওয়াটা একটা ব্যাপক নিন্দনীয় ব্যাপারঃ “তারা ঘরে বসে থাকা মহিলাদের সাথে অবস্থান করে পরিতুষ্ট ছিল, আর তাদের অন্তরসমূহে মোহর মেরে দেওয়া হয়েছিল, তাই তারা বুঝে না।” [সূরাহ্* আত্*-তাওবাহঃ৮৭]
তাই জিহাদের সাথে সম্পর্কহীন মুফতি যদি অনেক কিতাবাদি, প্রবন্ধ এবং ভলিউমের লেখকও হয়ে থাকেন, তবুও তিনি বুঝেন না, কারণ ‘ইল্*মের সারাংশ হল আল্লাহ্* সুবহানাহু তা‘আলার প্রতি ভয়। উম্মে সুফিয়ান (আল্লাহ্* যেন তার উপর রহম করেন) নামক এক মহিলা বলেছিলেনঃ “ও ‘আলিম!” আর তিনি বললেনঃ “‘আলিম হল শুধু সেই ব্যক্তি যে আল্লাহ্*কে ভয় করে চলে।” সুতরাং, ‘ইল্*ম মানে ব্যাপক বর্ণনার সমষ্টি নয়, বরং ‘ইল্*ম হল আল্লাহ্* যা নাযিল করেছেন সে অনুসারে আল্লাহ্*র ‘ইবাদাত করা, আর তাকে ভয় করা এবং তার দেওয়া দায়িত্ব পালন করা।
আর তাই আল্লাহ্* সুবহানাহু তা‘আলা বলেছেন যে, তারা বুঝে না। কারণ, যদি তারা সত্যিই বুঝতো, এবং যদি তাদের অন্তরে এই ঈমান দৃঢ় ভাবে থাকতো যে, আল্লাহ্*র সাথে যা আছে তা এই দুনিয়া অপেক্ষা অনেক উত্তম, তবে তারা আল্লাহ্*র সন্তুষ্টি এবং তার থেকে পুরস্কার লাভের আশায় প্রতিযোগিতা করতো, আপোষে ভরা হীন জীবনকে পছন্দ করতো না।
তাই আমি বলিঃ যুবকদেরকে এ সকল বাস্তবতা ব্যাখ্যা করে বুঝিয়ে দেওয়া উচিত, যাতে তারা কৃত্রিমতার শিকলের বন্ধন থেকে মুক্তি পায়, যে বন্ধন তাদেরকে সঠিক কাজ করা থেকে বিরত রাখে।
আর এই হল (‘আব্দুল ‘আযিয আল-‘উমারি, নিউইয়র্ক এবং ওয়াশিংটনে হামলাকারী অন্যতম মুজাহিদ) ‘আবুল ‘আব্বাসঃ এক অমূল্য সম্পদ – যার ন্যায় সম্পদ আমাদের ভূখন্ডে এবং মুসলিম ভূখন্ডসমূহে আরোও আছে, কিন্তু তাদেরকে সীমাবদ্ধ করা হয়েছে – যার দ্বারা আল্লাহ্* সুবহানাহু তা‘আলা অনেক কল্যাণ সাধন করেছেন। সে এসকল শিকল থেকে নিজেকে মুক্ত করেছিল, ফলে যখন সে এখানে (আফগানিস্তানে) আসলো, তখন সে বাস্তবতার স্বরূপকে দেখলো এবং অসচেতন মানুষকে সচেতন করার জন্য তার শেষ বক্তব্য উপস্থাপন করলো যা ছিল অতি স্বচ্ছ এবং হৃদয়স্পর্শী। সে বললঃ “তোমরা যে ‘ইল্*ম অর্জন করছো তা অতি উত্তম ‘আমল এবং এতে অনেক কল্যাণ রয়েছে, এবং আল্লাহ্* যেন তোমাদেরকে এর জন্য পুরস্কৃত করেন। কিন্তু, যখন জিহাদের প্রসঙ্গ আসে, তখন না এবং আবারও না। যখন জিহাদ ফার্*দ হয়ে পড়ে, তখন কোন কিছুই এর পথে আসতে পারে না।
Comment