Announcement

Collapse
No announcement yet.

যুদ্ধের কৌশল অনুধাবন ।। ৩য় পর্ব ।। আঞ্চলিক শক্তির মানচিত্র (মধ্যপ্রাচ্য)

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • যুদ্ধের কৌশল অনুধাবন ।। ৩য় পর্ব ।। আঞ্চলিক শক্তির মানচিত্র (মধ্যপ্রাচ্য)

    বৈশ্বিক নেতৃত্বে আঞ্চলিক শক্তির রাষ্ট্রসমূহ
    (মধ্যপ্রাচ্য)




    ইসরাইল


    কয়েকটি কারণে ইহুদিদেরকে মধ্যপ্রাচ্যের সবচেয়ে বড় শক্তি মনে করা হয়ঃ

    - এই রাষ্ট্রটি মধ্যপ্রাচ্যে মুসলিম জাতির প্রতিরোধে আন্তর্জাতিক কুফুরী শক্তির সামরিক প্রতিরক্ষা দেয়াল হিসেবে কাজ করে। যার ফলে পশ্চিমারা সহ রাশিয়া, চীন, হিন্দুস্তান অর্থাৎ পুরা বিশ্ব তাকে টিকে রাখা এবং নিরাপত্তার দেয়ার ব্যাপারে একমত।
    - ইসলামী বিশ্ব ও আরবের মধ্যভাগে কৌশলগত গুরুত্বপূর্ন স্থানে অবস্থিত। যা তাকে ইসলামী বিশ্বের মাশরিক ও মাগরিব অর্থাৎ পূর্ব-পশ্চিমের মাঝে পার্থক্যকারী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করেছে। এভাবেই ইসরায়েল মুসলিমদের ঐতিহাসিক শক্তিকে ফিরিয়ে আনার জন্যে তাদের মাঝে ভৌগলিক ঐক্যকে বাধা সৃষ্টি করছে।
    - ইহা মধ্যপ্রাচ্যে একমাত্র পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্র। মুসলিম প্রধান রাষ্ট্র সমূহের মধ্যে পাকিস্তান ছাড়া কেহই পারমাণবিক শক্তির অধিকারী নয়, কিন্তু তাও এখান থেকে হাজার কিলোমিটার দূরে এবং তার শাষক পশ্চিমা বিরোধী নয়।
    - এই রাষ্ট্রের রয়েছে সর্বোচ্চ শক্তিশালী বাহিনী। যদিও মধ্যপ্রাচ্যের কিছু দেশের বড় সামরিক বাহিনী রয়েছে। কিন্তু এই রাষ্ট্র গোয়েন্দা, উন্নত প্রশিক্ষণ, আক্রমণ ও প্রতিরক্ষার সর্বোত্তম অস্ত্রের অধিকারী।
    - সীমানার দিক থেকে এই রাষ্ট্রটি ছোট হওয়া সত্ত্বেও পুরো বিশ্ব থেকে বিভিন্ন ধরনের সাপোর্ট পেয়ে থাকে। যা তাকে নিরাপত্তা, অস্ত্র ও কৃষি ইত্যাদি ক্ষেত্রে টেকনোলজির দিক থেকে উন্নত করে তুলেছে। এর মাধ্যমেই তারা পূরা বিশ্বে বিশেষ করে এশিয়া, আফ্রিকা ও ইউরোপের সাথে সম্পর্ক তৈরি করছে।
    - আন্তর্জাতিক ইয়াহুদী লবী বিশাল সম্পদ ও অর্থনৈতিক শক্তির অধিকারী। যা তাকে ভিন্ন ভাবে সাপোর্ট দেয়। এবং ইহার প্রভাব ছড়িয়ে আছে যুক্তরাষ্ট্র সহ পুরো বিশ্বের অর্থনীতিতেই।
    - মধ্যপ্রচ্যের প্রায় সব সরকারের সাথেই তাদের রয়েছে শক্তিশালী রাজনৈতিক বন্ধন। যদি তা অনেক ক্ষেত্রে জনগণের রোষ থেকে বাঁচার জন্য গোপন রাখা হয়, কিন্তু প্রয়োজনের সময় ঠিকই সাহায্যে এগিয়ে আসে। যেমনটা তুরষ্কের ক্ষেত্রে বারবারই দেখা গেছে।

    ভিন্ন দিকে ইসরায়েলের রয়েছে অনেকগুলো কৌশলগত দুর্বলতাঃ

    - এ রাষ্ট্রটি ভূমধ্যসাগর ছাড়া বাকি সমস্ত দিক দিয়ে এমন জাতির দ্বারা পরিবেষ্টিত যারা তার বিরোধী। যদিও তাদের শাসকদের সাথে রয়েছে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক।
    - জনগণের স্বল্পতা ও ভূমির সীমাবদ্ধতা তার দেশীয় অর্থনীতিকে সংকুচিত করে দিয়েছে। ফলে তারা দেশীয় ভাবে অর্থনীতির তুলনায় টেকনোলজির দিকে উন্নতি করছে যেমটা তাদের অবস্থার ক্ষেত্রে উপযুক্ত।
    - তাদের রাষ্ট্রীয় অর্থনীতির বিশাল অংশ ব্যবসায়িক আমদানি রপ্তানির ওপর নির্ভর। যার অধিকাংশটাই হয়ে থাকে ভূমধ্যসাগরের উপর দিয়ে। সুতরাং স্বাভাবিকভাবেই নিরাপত্তার উপর যে কোনো ধরনের আঘাত এবং দেশের খারাপ পরিস্থিতি সরাসরি অর্থনীতির উপর প্রভাব সৃষ্টি করে।
    - এই দেশের সেনাবাহিনীর পক্ষে ব্যাপক কোন যুদ্ধে 40 দিনের বেশি টিকে থাকা সম্ভব নয়। কেননা তাদের জনসাধারনের 25% হচ্ছে সেনাবাহিনীর। যার ফলে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পরে তাদের জীবনের বিভিন্ন দিকের প্রবাহ বন্ধ হয়ে যাবে এবং এই সল্প সময়ের বহিরাগত কোন সাহায্য আসার সম্ভবনাও কম।
    - তাদের প্রতিষ্ঠাতাদের বড় অংশের মৃত্যুর পর ইহুদি জনসাধারনকে কঠিনভাবে প্রশিক্ষিত করার কাজ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে অতীতের যুদ্ধবিদ্যায় পারদর্শী জাতি এবং বর্তমান নতুন প্রজন্মের মধ্যে তৈরি হয়েছে বিশাল ব্যবধান। যা তাদেরকে দুর্বলতার দিকে নিয়ে গেছে যেমনটা পূর্বে ছিল না।

    এই সমস্ত কারণ ইসরাইলের সক্ষমতাকে সীমাবদ্ধ করে ফেলেছে। তার সমস্ত শক্তি এই ছোট স্থানের ভিতর সীমাবদ্ধ হয়ে পড়েছে। যারা সর্বদা উপযুক্ত সময় ও সাহায্যের অপেক্ষা করে যা তাদেরকে উন্নতিতে সাহায্য করবে।

    মধ্যপ্রাচ্যে ইহুদিদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে অন্যান্য রাষ্ট্রের রাজনৈতিক পদক্ষেপঃ

    - মধ্যপ্রাচ্যে শক্তির ভারসাম্যকে ধরে রাখার জন্য একমাত্র পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্রকে টিকিয়ে রাখা।
    - পার্শ্ববর্তী শক্তির তুলনার অস্ত্রের শক্তির দিক থেকে তাদেরকে সর্বোচ্চ রাখা।
    - পূরা মধ্যপ্রাচ্যকে তাদের উপর বড় ধরনের আক্রমণ করতে সক্ষম সকল অস্ত্র থেকে মুক্ত করা। যেমন দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র বা রাসায়নিক ও জীবাণু অস্ত্র অথবা বিশেষ কিছু অস্ত্রের টেকনোলজি, যেমনঃ আকাশ সীমার আক্রমণকে প্রতিরক্ষার অস্ত্র। কেননা তাতে ইয়াহুদীদের আক্রমনের সক্ষমতা কমে যাবে।
    - মধ্যপ্রাচ্যের সমস্ত শাষকদের সাথে তাদের সম্পর্ক টিকিয়ে রাখা বিশেষ করে পার্শবর্তী রাষ্ট্রসমূহ। এমন কোন রাষ্ট্র না রাখা যারা বাস্তবিক অর্থে ইহুদি জাতির শত্রু।
    - এই রাষ্ট্রটির রয়েছে ইরানের সাথে গভীর রাজনৈতিক সম্পর্ক। যার শুরুটা হয়েছিল প্রথম উপসাগরীয় যুদ্ধের সময় আমেরিকার বোমা হামলা সময় থেকে, তখন ইসরায়েল অন্যান্য আরব রাষ্ট্রগুলো সাথে নিয়ে তাদেরকে প্রথম উপসাগরীয় যুদ্ধের অস্ত্র সরবরাহ করে। সাদ্দাম হোসেনের বিপরীতেও ইরানকে তারা সাহায্য করেছে। পরবর্তীতে যদিও তাদের মাঝে বাহ্যিক বিবাদ প্রকাশ পেয়েছে, কিন্তু ইহুদি বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের সাথে রয়েছে ইরানের বিশাল ব্যবসায়িক সম্পর্ক। ইরানে বসবাসকারী ইহুদি জাতির রয়েছে সব ধরনের অধিকার। যা অনেকটাই ইরানের মধ্যেই ভিন্ন একটা দেশের মত।
    - ইসরাইলের কৌশলগত ভাবে অপরিবর্তনীয় শত্রু হচ্ছে সঠিক দ্বীনের ধারক মুসলিম জাতি। কেননা তারাই হচ্ছে তাদের মূল শত্রু যাকে তারা কখনোই পরিবর্তন করতে পারবে না। এ ছাড়া বাকি সমস্ত শক্তির সাথে তাদের সমসাময়িক বিভিন্ন স্বার্থ মিশ্রিত, চাই সে শক্তি বড় হোক বা ছোট।


    ইরান

    ইরান গত কয়েক বছর ধরে বিশেষ করে উপসাগরীয় যুদ্ধ, সাদ্দামের পরাজয় এবং আরব বসন্তের পর আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে প্রকাশিত হয়েছে। ইহার কারণ অনেকগুলো, এর মধ্যে কিছু হচ্ছেঃ

    - দূর পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের অধিকারী হওয়া যা তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্র।
    - বিশ্বের গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়িক পন্য চলাচলের রোড হরমুজ প্রণালীতে তার সামুদ্রিক শক্তি বৃদ্ধি করা।
    - বিভিন্ন পারমাণবিক কেন্দ্র গড়ে তুলেছে যা তাকে পরমানবিক অস্ত্রের অধিকারী বানিয়ে দিতে সক্ষম।
    - ইরানের বিপ্লব সফলতা ও জনসাধারণের উপর প্রভাব সৃষ্টি হওয়া। এটাকে পুঁজি করে বিভিন্ন রাষ্ট্রে শিয়া জনগোষ্ঠীকে প্রভাবিত করে তাদেরকে একত্রিত করা এবং রাজনৈতিক ও সামরিক ভাবে প্রশিক্ষণ দেয়া। শীয়া ইমামদের আনুগত্যের দৃষ্টিভঙ্গি ব্যাপক করে দেওয়া ও তাদের সবাইকে ফরাসি রাষ্ট্রের অনুগত শক্তি হিসেবে তৈরি করা। অতঃপর এই সমস্ত রাষ্ট্রের মধ্যে সামরিক ও রাজনৈতিক বিদ্রোহ সৃষ্টি করা।

    - তাদের এই কৌশল দীর্ঘ সময় ধরে প্রয়োগের মাধ্যমে বিভিন্ন রাষ্ট্রে তাদের বেশ কিছু অনুগত বাহিনী তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে, যেমনঃ-
    ১- লেবাননে হিজবুল্লাহ যা তাদের জন্য একটি উত্তম উদাহরণ।
    ২- ইরাকে বিভিন্ন শিয়া মিলিশিয়া বাহিনী।
    ৩- ইয়ামানের হুথি বাহিনী।
    ৪- সিরিয়ার নুসাইরী বাহিনী।
    ৫- বাহরাইন, কুয়েত ও সৌদি আরবে ছোট দল গঠন।
    ৬- পাকিস্তান এবং আফগানিস্তানের শিয়া দলগুলোকে একত্র করা। তবে এদের কাজ এখনও ইরানেই রয়ে গেছে। তাদেরকে বিভিন্নভাবে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। সম্ভবত তাদেরকে ভবিষ্যতে বড় কোন কাজে ব্যবহার করবে।

    ভিন্ন দিক থেকে ইরানের রয়েছে কৌশলগত বিশাল দুর্বল পয়েন্ট যাকে সমাধান করা তার জন্য কঠিন। এই জন্য তারা শুরু থেকেই ধীরে ধীরে অগ্রসর হওয়ার নীতি গ্রহণ করেছে এবং উপযুক্ত সময় অপেক্ষায় রয়েছে।

    - ইরানের জনগণ শুধু ফরাসিরাই নয় বরং আরবের অনেক জাতি সেখানে পাওয়া যায় বিশেষ করে বেদুইন। সেখানে রয়েছে কুর্দি জাতি যারা তুর্কি এবং ইরাকের কুর্দিদের সাথে একাত্বতা করে চলে। বেলুচিস্তানে বেলুচ কাবীলাগুলো সহ আরো অনেক উপজাতি।

    - দেশের বিশাল অঞ্চল জুড়ে রয়েছে দুর্গম এলাকা এবং এমন অনেক শহর যা ভূমিকম্প প্রবণ। এই সমস্ত ঝামেলা তাদেরকে সর্বদা নিরাপদ অঞ্চলে সরে যাওয়ার দিকে বাধ্য করে।

    - অর্থনৈতিক অবরোধ ও যুদ্ধের কারনে ইরানের অর্থনীতি দুর্বল হয়ে পড়েছে। যা তাকে আধিপত্য বিস্তারে বাধা দিচ্ছে। তাদের জনসাধারনের বিশাল অংশ দারিদ্র্যসীমার নিচে অবস্থান করছে।


    - তার দখলদারিত্ব ও জুলুমের চেহারা প্রকাশ পাওয়ার পর জনগণের বিরোধিতা বাড়ছে যা তাদের সাম্রাজ্যবাদী সক্ষমতাকে দুর্বল করে দিচ্ছে।


    ইরানের রাজনীতি বেশ কিছু দিক দিয়ে ভিন্নঃ

    - তারা মৌলিকভাবে ফরাসী শীয়াদের উপর নির্ভর করে এবং এরাই নেতৃত্ব করে থাকে। অন্য দিকে আরবী শীয়াদের সাথে দ্বিতীয় শ্রেনীর আচরন করে, যারা শুধু তাদের কমান্ডারদের আদেশের অপেক্ষায় থাকে।
    - আহলে সুন্নাহর মুসলিমদের সাথে তাদের রয়েছে কঠিন শত্রুতা। সেই সাথে আরব জাতির সাথে রয়েছে জাতিগত শত্রুতা, তারা তাদেরকে নিম্নপর্যায়ের জাতি এবং ফরাসীদের অনুগত হওয়া আবশ্যক মনে করে। এছাড়া তারা অন্য কোনো দেশ বা জাতির সাথে শত্রুতা পোষণ করে না। অন্য রাষ্ট্রের সাথে তাদের সম্পর্কটা রাজনৈতিক স্বার্থের ভিত্তিতে হয়ে থাকে। যেমন আমেরিকার সাথেও তাদের মৌলিক কোন বিরোধ নেই।
    - তার স্ট্রেটেজিক সম্প্রসারণের ভিত্তি হচ্ছে দীর্ঘ প্লান, ধৈর্য এবং ছোট ছোট পরিকল্পনার উপর। বিভিন্ন দেশে তাদের অনুগত বাহিনী ও সামরিক বাহিনী গেরিলাযুদ্ধকে প্রাধান্য দেয়। সরাসরি স্থায়ী যুদ্ধকে তারা এড়িয়ে চলে কেননা সে সমস্ত ময়দানে তাদের শক্তি সীমাবদ্ধ।
    - বহির্বিশ্বের রাজনীতিতে তারা অনেক বুদ্ধিমত্তা ও ধৈর্যের সাথে কাজ করে। ধীরে ধীরে প্রভাব সৃষ্টি করা এবং সুযোগ কাজে লাগানোর পথ অবলম্বন করে।
    তাদের রাজনীতির বর্তমান ও ভবিষ্যৎ অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। যেমন আমেরিকা ও ইউরোপের রাষ্ট্রসমূহ এর সাথে তাদের সম্পর্কের ধরন, রাশিয়া, তুরস্ক ও ইসরাইলের সাথে সম্পর্কের প্রকৃতি, উপসাগরীয় দেশগুলোর সাথে সম্পর্কের অবস্থা এবং বর্তমান পরিস্থিতিতে তাদের ভূমি সম্প্রসারণের সুযোগ কেমন রয়েছে; এই সবকিছুই ইরানের ভবিষ্যতের গতিপথ এবং অবস্থান নির্ধারণ করে দেবে।


    প্রভাবশালী আরব রাষ্ট্রসমূহ


    সৌদি-ইমারাত-মিশর

    এ রাষ্ট্রগুলোকে আরবের সর্বশেষ আঞ্চলিক প্রভাবশালী সরকার মনে করা হয়।
    এ রাষ্ট্রগুলো পশ্চিমা বিশ্ব ও যুক্তরাষ্ট্রের অনুগত। সৌদি ও আরব আমিরাত তাদের প্রতিষ্ঠা থেকেই গোলামী করছে। প্রথমে ব্রিটেনের অনুগত ছিল অতপর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে আমেরিকার অনুগত। আর মিশর বৃটেন থেকে স্বাধীনতা লাভের পর সামরিক সরকার আসার পর থেকে আনুগত্য করছে।

    আমরা যখন এই সমস্ত রাষ্ট্রের ব্যাপারে কথা বলব তখন তাদের সরকার ব্যবস্থাকে নিয়ে কথা বলবো। তাদের জনগণের কোন আলোচনা থাকবে না। কেননা তাদের সিদ্ধান্ত নেওয়া বা তাতে প্রভাব সৃষ্টি করার শক্তি নেই। বরং তারা লোহা ও আগুনের মাধ্যমে পরিচালিত হয়।


    আরব-বসন্তের সময় তাদের সরকার সমূহ অনেক বড় ধাক্কা সম্মুখীন হয়েছিল। এর ফলে তাদের এই ধ্বংষণ্মুখ শাসন ব্যবস্থা আরো দুর্বল হয়ে পড়েছে এবং তাদের আয়ুষ্কাল অনেক কমে গেছে।
    এই দেশসমূহের রাষ্ট্রীয় একমাত্র স্বার্থ হচ্ছে শাসন ক্ষমতায় টিকে থাকা। এই উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের লক্ষে যারা তাদেরকে শাসন ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতে সাহায্য করবে, তাদেরকে যে কোনো ধরনের সম্পদ বিলিয়ে দিতে কুন্ঠা বোধ করে না।

    সৌদি আরব জনসাধারনের উপর তার অবস্থান টিকিয়ে রাখার জন্য সেখানে অবস্থিত সম্মানিত স্থানগুলোকে ব্যবহার করে। যার ফলে তারা শরীয়তের ইলেম প্রচারণার মারকাজ হিসেবে পরিগণিত হয়। কিন্তু ক্রমবর্ধমান ধর্মনিরপেক্ষতা ও অশ্লীলতার দিকে এগিয়ে যাওয়ার ফলে তাদের এই অবস্থা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। তাদের আরেকটা শক্তি হচ্ছে পেট্রোল থেকে প্রাপ্ত সম্পদ।

    আরব আমিরাত তাদের তেল সম্পদের পাশাপাশি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ব্যবসায়িক আমদানি-রপ্তানির মাধ্যম হিসেবে পরিগণিত। এবং লন্ডনের মতো সে নিজেকে অর্থনৈতিক অঞ্চল হিসেবে তৈরিতে আগ্রহী। সর্বদাই তারা তাদের সম্পদকে পশ্চিমা রাষ্ট্রসমূহের সাথে সম্পর্ক বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ব্যবহার করে।


    মিশরের শাসন ক্ষমতা মধ্যপ্রাচ্যের জন্যে অনেক গুরুত্বপূর্ণ; কারণ ইসরায়েলের দক্ষিণ সীমানা তার সাথে মিলিত। সেই সাথে তারা ইসলামী রাজনৈতিক আন্দোলন দমনের শক্তিশালী নমুনা প্রদর্শন করেছে। মুজাহিদদের বিরুদ্ধে কথিত নিরাপত্তা ও শান্তি রক্ষার লড়াইয়ে অংশগ্রহণ করেছে। শক্তির দুর্বলতা সত্বেও তদের সামরিক বাহিনী সংখ্যার দিক থেকে সৌদি আরব ও আমিরাত থেকে বেশি। তবে এটাকে মিশরের সীমার বাইরে ব্যবহার করতে পারবে কিনা সেটা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে।


    এদের সবাই তাদের শাসন ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার ক্ষেত্রে প্রচন্ড রকম চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। এটা হয়তো
    - ইরানের আগ্রাসী মনোভাবের কারণে
    - আরব-বসন্তের পর নিজস্ব জাতির ক্ষোভের কারণে
    - আমেরিকা ও পশ্চিমা বিশ্ব তাদের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি বদলে যাওয়ার সম্ভাবনা থেকে
    - জিহাদী দলগুলো তাদের দেশ সমূহে শক্তি বৃদ্ধির আশঙ্কা থেকে।


    তারা নিজেদের ক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখার জন্য চেষ্টা করে এবং ইসরাইল ও পশ্চিমা বিশ্বকে বিপদের মুহূর্তে সাহায্য করে তাদেরকে নিশ্চিন্ত রাখার চেষ্টা করে। সেই সাথে তারা সর্বদা অনেক পেরেশান অবস্থায় থাকে, যদি আমেরিকান প্রভুরা ইরানের স্বার্থে অথবা ভিতরগত কোন স্বার্থে তাদের বিপরীতে চলে যায় তখন তারা কোথায় যাবে!!! এখনও তারা ঘুরপাক খাচ্ছে এবং নির্দিষ্ট কোনো সমাধান বের করতে পারেনি।



    তুরস্ক

    এরদোগান ক্ষমতায় আসার পর থেকে তুরস্ক মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থান করছে। সেখানে তারা পশ্চিমাদের আনুগত্য থেকে বের হয়ে নিজেদেরকে একক শক্তি হিসেবে উপস্থাপনের চেষ্টা করছে। যাদের বিভিন্ন অবস্থান ও চুক্তিতে নিজস্ব প্রভাব থাকবে। কিন্তু তার সামনে রয়েছে বিভিন্ন বিপদ ও চ্যালেঞ্জ, যেমনঃ

    - এরদোগানের পূর্বের ক্ষমতা ফিরে আসা, হয়ত সামরিক অভ্যুত্থান বা আভ্যন্তরীণ বিদ্রোহের মাধ্যমে।
    - দেশের ভিতরেই কুর্দি জাতির সাথে গৃহযুদ্ধ বেধে যাওয়া আশংকা।
    - ইরানের আগ্রাসী মনোভাব তার ওপর প্রভাব সৃষ্টি করা।
    - এখনো পর্যন্ত কোনো জোটের সাথে শক্তিশালীভাবে মিশতে না পারা। যেমন রাশিয়া, ইরান অথবা আরব রাষ্ট্রগুলো। এমনকি আমেরিকা ও পশ্চিমাদেরকে তার সামরিক সাহায্য দ্বারা সন্তুষ্ট করতে না পারা। এবং তাকে এক শক্তি হিসেবে ছাড় দেওয়ার জন্যে রাজি না হওয়া।
    - আরব বিশ্বে ইসলামী রাজনীতির পথ বন্ধ হয়ে যাওয়া, যার মাধ্যমে তুরস্কের পক্ষে সম্ভব ছিল সেই দেশসমূহের অভন্তরে তার অনুগত বাহিনী তৈরি করা।
    - তুরস্ক এখনো পর্যন্ত ইরাক বা সিরিয়ার যুদ্ধ থেকে কোন গ্রহণযোগ্য ফলাফল অর্জন করতে সক্ষম হয়নি। এরদোগানের এই সমস্ত যুদ্ধ থেকে ইচ্ছা ছিল আঞ্চলিক শক্তি অর্জন অথবা কুর্দিদের শক্তি প্রতিষ্ঠা বন্ধ হওয়া। যারা প্রকাশ্যে তার শাসনের বিরুদ্ধে শত্রুতা করে। কিন্তু তার চেষ্টা শুধুমাত্র কুর্দিদেরকে বিশাল পরিসরে শক্তিশালী হওয়া থেকে বাধা দেয়া ছাড়া আর কিছুই হয় নি। আমেরিকা কুর্দিদের ব্যাপারে তুরস্ককে সর্বদাই অপদস্ত করে আসছে।

    তুরস্কের অর্থনীতি সুন্দর ভাবে উন্নতি করছে। তুরস্কের সামরিক উন্নতিও অনেক দ্রুত ও শক্তিশালী হচ্ছে। অন্যান্য যে সমস্ত দেশগুলো নিজেদেরকে একক সামরিক শক্তির অধিকারী হিসেবে উপস্থাপন করতে চাচ্ছে যেমন হিন্দুস্থান ও ইরান, তাদের থেকেও দ্রুত উন্নতি করেছে।


    ইউরোপীয় ইউনিয়নে অন্তর্ভুক্তি সম্পূর্ণ ভাবে অস্বীকার করার পর ইউরোপের সাথে তার সম্পর্ক ভালো নয়। তুরস্ক শরণার্থীদের ব্যবহার করে ইউরোপে ঢুকতে চাচ্ছে। তার দেশ থেকে তাদেরকে ইউরোপে যাওয়া থেকে বাধা দিচ্ছে। উদ্দেশ্য হচ্ছে তাদের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নতি করবে অথবা ইউরুপের সাথে দ্বিপাক্ষিক অর্থনৈতিক চুক্তি করবে। কিন্তু এখন পর্যন্ত এই ক্ষেত্রে কোন সফলতা দেখা যায়নি।

    সারমর্ম হচ্ছে, তুরস্ক নিজেকে একক রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চাচ্ছে। এমন কিছু শক্তি অর্জন করতে চাচ্ছে, যা তাকে আমেরিকার অবরোধের মুকাবেলা ও নিজেকে একক শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত রাখতে সাহায্য করবে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত তেমন কোন নিদর্শন পাওয়া যায়নি যা এই ক্ষেত্রে তার সফলতা প্রমান করে। বরং সামরিক অভ্যুত্থানের চেষ্টা, সিরিয়ায় যুদ্ধ তুরস্ককে দুর্বল করা, ইরাকে তার সম্পূর্ণ কার্যক্রম বন্ধ করে দেওয়া, রাজনৈতিক ইসলামী দলগুলোকে সাহায্যের ফলে আরবের সাথে তার সম্পর্ক নষ্ট হওয়া এবং আরব বসন্ত; এই সবগুলোর তার পরজয়ের দিকে ইংগিত করে।

    তাই সে এখন ইরান-রাশিয়ার সাথে জোট বেঁধে শক্তিশালী হতে চাচ্ছে। কিন্তু এখানেও তাদের মাঝে কিছু বিষয় রয়েছে যা তাদের এই জোটকে ভেঙ্গে দিবে। বিশেষ করে আমেরিকার পক্ষ থেকে তাকে আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠার স্বীকৃতি না দেওয়া, ইসলামিক রাজনৈতিক দলগুলোর পরাজয় ও তার পার্শ্ববর্তী আরব উপদ্বীপে তার কোনো শক্তিশালী সমর্থক বা প্রভাবিত জনগোষ্ঠী না থাকা।

    - খালেদ মূসা

    চলবে ...

  • #2
    জাযাকাল্লাহ
    আল্লাহ আমাদের কে তাওফিক দান করুন।আমিন

    Comment


    • #3
      গুরুত্বপূর্ণ পর্যালোচনা, আখি, আশাকরি সামনে চালিয়ে যাবেন।
      والیتلطف ولا یشعرن بکم احدا٠انهم ان یظهروا علیکم یرجموکم او یعیدو کم فی ملتهم ولن تفلحو اذا ابدا

      Comment


      • #4
        আখি, গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা।আপনার পোস্টের দ্বারা অনেক উপকৃত হয়েছি,আলহামদুলিল্লাহ। আল্লাহ আপনার মেহনত কবুল কতুন, আমিন।
        আল্লাহ আমাদের মুজাহিদ হিসেবে কবুল করে নিন আমীন।

        Comment


        • #5
          জাযাকাল্লাহ। অত্যন্ত উপকারী পোস্ট। এধরনের জিওপলিটিক্স সম্পর্কিত বেশি বেশি পোস্ট দেওয়ার জন্য মুহতারাম ভাইদের কাছে আবদার করব।
          মুহতারাম, এখানে "ফরাসি" শব্দটার দিকে খেয়াল করলে ভালো হবে।
          মুহতারাম হয়তো এটা দিয়ে ইরানি জাতিকে বুঝাতে চেয়েছেন।
          কিন্তু সাধারণত এটা দিয়ে ফ্রান্সের বাসিন্দাদের বুঝানো হয়।
          Last edited by হারুন; 06-14-2021, 01:10 PM.

          Comment


          • #6
            চলবে ...
            এই পোস্টের পরবতী পর্বের লিংক কোন ভাই দিতে পারেন?
            ‘যার গুনাহ অনেক বেশি তার সর্বোত্তম চিকিৎসা হল জিহাদ’-শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ.

            Comment


            • #7
              Originally posted by abu ahmad View Post
              এই পোস্টের পরবতী পর্বের লিংক কোন ভাই দিতে পারেন?
              পোস্টদাতার আইডিতে ক্লিক করে view forum posts এ ক্লিক করুন এতে সব পোস্ট পাবেন।

              Comment


              • #8
                Originally posted by হারুন View Post
                পোস্টদাতার আইডিতে ক্লিক করে view forum posts এ ক্লিক করুন এতে সব পোস্ট পাবেন।
                অনেক অনেক শুকরিয়া ভাইজান। জাযাকাল্লাহ
                পেয়েছি, আলহামদুলিল্লাহ

                ‘যার গুনাহ অনেক বেশি তার সর্বোত্তম চিকিৎসা হল জিহাদ’-শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ.

                Comment

                Working...
                X