কাফিরদের বিরুদ্ধে হামলার ব্যাপারে শারীয়াহর বিধান সম্পর্কে আল্লামা হামুদ বিন উক্বলা আস-শু’আইবি রাহিমাহুল্লাহ-র বক্তব্য।
.
.
সমমাত্রায় প্রতিশোধ গ্রহণের বৈধতা সম্পর্কে আহলুল ‘ইলমের বক্তব্য থেকে আমরা জানতে পারি যেভাবে কুফফার আমাদের বিরুদ্ধে আচরণ করেছে সেইভাবে তার জবাব দেয়া জায়েজ। যারা বারবার “নির্দোষ" শব্দটি আওড়াতে থাকেন তাঁদের কথার জবাব দ্বীনে আছে, কারণ আল্লাহ্* সুবহানাহু ওয়া তা’আলা আমাদের [মুসলিম] জন্য তা [সমমাত্রায় প্রতিশোধ গ্রহণের ] জায়েজ করেছেন। আল্লাহ্* আযযা ওয়াজাল বলেন -
.
“বস্তুতঃ যারা তোমাদের উপর সীমালঙ্ঘন করেছে, তোমরা তাদের উপর সীমালঙ্ঘন কর, যেমন সীমালঙ্ঘন তারা করেছে তোমাদের উপর। [আল বাক্বারা, ১৯৪]
.
.
এবং আল্লাহ্ আযযা ওয়া জাল বলেছেনঃ
.
.
যারা আক্রান্ত হলে প্রতিশোধ গ্রহণ করে। আর মন্দের প্রতিফল তো অনুরূপ মন্দই। যে ক্ষমা করে ও আপোষ করে তার পুরস্কার আল্লাহর কাছে রয়েছে; নিশ্চয় তিনি অত্যাচারীদেরকে পছন্দ করেন নাই। নিশ্চয় যে অত্যাচারিত হওয়ার পর প্রতিশোধ গ্রহণ করে, তাদের বিরুদ্ধেও কোন অভিযোগ নেই। অভিযোগ কেবল তাদের বিরুদ্ধে, যারা মানুষের উপর অত্যাচার চালায় এবং পৃথিবীতে অন্যায়ভাবে বিদ্রোহ করে বেড়ায়। তাদের জন্যে রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। [আস শূরা, ৩৯-৪২]
.
.
এবং কাফিরদের তাদের আঘাত ও সীমালঙ্ঘনের পরিবর্তে সমপরিমাণে সমুচিত জবাব দেওয়া এবং প্রতিশোধ নেয়া জায়েজ হওয়া সম্পর্কে, আহলুল ‘ইলমের বক্তব্যের মধ্যে আছে শায়হুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ রাহিমাহুল্লাহ-র এই কথাঃ
.
.
“নিশ্চয় সমপরিমাণে সীমালঙ্ঘনের প্রতিউত্তর দেয়া তাঁদের [মুসলিম /মুজাহিদ] অধিকার। এরকম পাল্টা আঘাত করা তাঁদের জন্য জায়েজ, তাঁদের আত্ববিশ্বাস ফিরিয়ে আনা এবং প্রতিশোধ গ্রহনের জন্য। তবে তাঁরা চাইলে এরকম পালটা জবাব দেয়া থেকে বিরত থাকতে পারেন, যখন ধৈর্যশীল হওয়া অধিক পছন্দনীয়। তবে এটি [বিরত থাকা] শুধু মাত্র সেইসব ক্ষেত্রে প্রযোজ্য যখন পাল্টা আঘাত করা জিহাদের ক্ষেত্রে কোন আগ্রগতি আনবে না, কিম্বা কাফিরদের মনে ত্রাস বৃদ্ধি করবে না (যা তাদের পুনরায় মুসলিমদের উপর সীমালঙ্ঘন থেকে বিরত করবে)। কিন্তু ঢালাও ও ব্যাপকভাবে (সমপরিমাণে)প্রতিশোধ গ্রহণ ও পাল্টা আঘাত করা যদি কাফিরদের জন্য ঈমানের প্রতি দাওয়াহ হিসেবে কাজ করে, এবং তাদের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করে, তাহলে এরকম পাল্টা আঘাত ও প্রতিশোধ এক অর্থে হুদুদ পালনের অংশ হয়ে পড়ে, এবং শারীয়াহ-সম্মত জিহাদ হিসেবে সাব্যস্ত হবে।“ [ইবন মুফলিহ রাহিমাহুল্লাহ কতৃক আল ফুরু (৬/২১৮)তে বর্ণিত। এছাড়াও পাবেন শায়খুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ রাহিমাহুল্লাহ রচিত “আল-ইখতিয়ারাত,(৫/৫২১)।]
.
.
যারা কোন সীমা নির্ধারণ এবং নির্দিষ্টকরণ ছাড়াই, ঢালাওভাবে শুধু “নির্দোষ মানুষ হত্যা”-র বিষয়টি নিয়ে শোরগোল তোলে, প্রকৃতপক্ষে তাঁরা রাসূলুল্লাহ ﷺ, সাহাবা রাঃ এবং তাঁদের পরবর্তী প্রজন্মকে [তাঁদের ভাষায়] “নির্দোষ মানুষ হত্যা”-র অপবাদ দিচ্ছে। কারণ রাসূলুল্লাহ ﷺ তায়েফ অবরোধের সময় মানজানিক [Catapult] ব্যবহার করেছিলেন। আর মানজানিকের ধর্ম হল, এটা আঘাত করার সময় কোন পার্থক্য [দোষী আর নির্দোষ ব্যক্তির মধ্যে] করে না। এবং রাসূলুল্লাহ ﷺ বানু কুরাইদ্বার সকল বালেগ পুরুষকে হত্যা করেছিলেন।
.
“...সেইদিন বানু কুরাইদ্বার বয়ঃপ্রাপ্ত সকল পুরুষকে হত্যা করা হয়েছিল”.
ইবন হাযম, “আল মুহাল্লাহ”-তে এই হাদিসটি সম্পর্কে বলেছেনঃ
.
“রাসূলুল্লাহ ﷺ সেইদিন আ’ম ভাবে বানু কুরাইদ্বার কোন নেতা, চাষি, ব্যবসায়ী, এমনকি বৃদ্ধ ব্যক্তিকে জীবিত ছেড়ে দেননি। এবং এই ব্যাপারে ইজমা আছে।“ [আল মুহাল্লাহ, ৭/২৯৯]
.
.
ইবন আল-ক্বায়্যিম রাহিমাহুল্লাহ, যাদ আল মা’আদে বলেছেনঃ“যখন তিনি ﷺ কোন গোত্র বা জনপদের অধিবাসীর সাথে চুক্তি করতেন, বা অঙ্গীকারবদ্ধ হতেন, এবং তারপর যদি সেই গোত্র বা জনপদের অধিবাসীরা বা তাদের মধ্যে থেকে কিছু লোক যদি সেই চুক্তি ভঙ্গ করতো, এবং বাকিরা সেটা সমর্থন করতো এবং এই ব্যাপারে [চুক্তিভঙ্গের ব্যাপারে] সন্তুষ্ট থাকতো, তবে তিনি ﷺ তাদের সকলের বিরুদ্ধেই যুদ্ধ করতেন, তাদের সকলকেই চুক্তিভঙ্গকারী এবং বিশ্বাসভঙ্গকারী গণ্য করে। যেরকম তিনি ﷺ করেছিলেন বানু কুরাইদ্বা, বানু নাযীর এবং বানু কায়নুকার বিরুদ্ধে। যেরকম তিনি করেছিলেন মক্কার অধিবাসীদের বিরুদ্ধে [বানু বাকরের সীমালঙ্ঘনের কারনে]। এবং তাঁর ﷺ এরকম আচরণ ছিল, তাঁকে ﷺ যে হেদায়েত ও নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল তার অন্তর্ভুক্ত [অর্থাৎ আল্লাহ-র পক্ষ থেকে]। সুতরাং এটা হল চুক্তি ভঙ্গকারী ও বিশ্বাসঘাতকদের সাথে কিরূপ ব্যবহার করার সুন্নাহ।“
.
ইবন আল-ক্বায়্যিম আরো বলেনঃ
.
“যখন পূর্বদিকের খ্রিষ্টানরা, ইসলাম ও মুসলিমদের শত্রুদের অর্থায়ন ও অস্ত্র সরবরাহের মাধ্যমে মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে সাহায্য করেছিল, তখন ইবন তাইমিয়্যাহ তাদের [পূর্বদিকের খ্রিষ্টান] বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার ফাতাওয়া দেন। যদিও তারা আমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে নি, আমাদের আক্রমন করে নি। কিন্তু ইবন তাইমিয়্যাহ অনুধাবন করেছিলেন, এই খ্রিষ্টানরা চুক্তিভঙ্গকারী ছিল যেরকম কুরাইশ রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাথে করা তাদের চুক্তিভঙ্গ করেছিল, বানু বাকর ইবন ওয়া’লি কে ওইসব লোকেদের বিরুদ্ধে সাহায্য করে যাদেরকে মুসলিমরা নিরাপত্তা দিয়েছিল [বানু খুযা’আ] কৃত চুক্তি অনুযায়ী।“
[গাযওয়াতুল ম্যানহাটান সম্পর্কে শাইখের ফাতাওয়া,থেকে গৃহীত।]
.
.
_____________________________
.
.
সংক্ষেপে শাইখের পরিচয় এবং শিক্ষাগত যোগ্যতার বিবরনঃ
.
আল্লামা হামুদ বিন উক্বলা আস-শু’আইবি রাহিমাহুল্লাহ।
.
জন্ম ১৩৪৬ হিজরীতে, বুরাইদা প্রদেশের আশ-শাক্কাহ শহরে। বানু খালিদ গোত্রের সন্তান। সাত বছর বয়সে দৃস্টিশক্তি হারান, স্মল পক্সের কারণে। ১৩ বছর বয়সে সম্পূর্ণ কুর’আন হিফয করেন। ১৩৬৭ হিজরিতে ‘ইলম শিক্ষার জন্য রিয়াদে আসেন। রিয়াদে তিনি পরথমে শাইখ আবদুল লাতিফ বিন ইব্রাহিম আল-আশ শাইখের অধীনে অধ্যায়ন করেন। এসময় তিনি ‘আল-আজরুমিয়্যাহ, “উসুল আত-সালাসা”, রাহবিয়াতফিল ফারাইদ্ব এবং ক্বাওয়াইদ আল আর’বাআ মুখস্থ করেন এবং শিক্ষা করেন।
.
.
১৩৬৮ হিজরি থেকে তিনি শাইখ মুহাম্মাদ বিন ইব্রাহিম আল আশ-শাইখের তত্ত্বাবধানে “যাআদ আল মুস্তাক্বানি”, কিতাব আত-তাওহীদ”, কাশফ উশ শুবহাত”, শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহর আল ওয়াসতিয়্যাহ, আল আরবাআইন আন নাওয়াউয়ীয়্যাহ, আলফিয়াতু ইবন মালিক, বুলুগ আল মারাম অন্যান্য ছাত্রদের সাথে অধ্যায়ন করেন। এছাড়া তিনি শাইখ মুহাম্মাদের কাছে আলাদা ভাবে আত তাহাউয়ীয়্যাহ, আস-সাফরানির আদ দুররাহ আল মুদাইয়ীনাহ, এবং ইবন তাইমিয়্যাহর আল হামাউয়ীয়াহ পড়া সমাপ্ত করেন। উল্লেখিত সব গুলো কিতাব শিখ হামুদ ঠিক ঐভাবে মুখস্থ করেন, যেভাবে তিনি সূরা ফাতিহা মুখস্থ করেছিলেন।
.
.
শাইখ হামুদের আরও কয়েকজন শিক্ষকের নামঃ
.
শাইখ আবদুল আযীন বিন বাযের অধীনে তাওহীদ ও হাদীস অধ্যায়ন করেন
শাইখ মুহাম্মাদ আল আমিন আশ শিনকতি
শাইখ আবদুর রাহমান আল আফ্রিকি
আবদুল আযীয বিন রাশীদ, তাঁকে ফিকহ শিক্ষা দেন
শাইখ আবদুল আযিয আল খুলাইফি
সাহিখ হামাদ আল যাসির
মিশরের শাইখ ইউসুফ উমার হাসনাইন, আবদুল লাতিফ সারহান এবং ইউসুফ আদ দাবা
শাইখ সাউদ বিন রাশুদ
শাইখ ইব্রাহিম বিন সুলাইমান
.
.
শাইখ হামুদ ১৯৫৬ থেকে ১৯৮৫ পর্যন্ত কিং সাউদ ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষকতা করেন। তিনি এই সুদীর্ঘ সময়ে তাওহীদ, ফিকহ, ফারাইদ্ব, হাদিস, উসুল, ব্যাকরণ সহ অন্যান্য আরও বিষয়ের উপর ক্লাস নেন। এছারা তিনি মাস্টার্স এবং ডক্টরেট ছাত্রদের কাজের তত্ত্বাবধান করতেন।
.
.
শাইখ হামুদ বিন উক্বলার কয়েকজন উল্লেখযোগ্য ছাত্রের নামঃ
.
মুফতি আবদুল আযীয [বর্তমান গ্র্যান্ড মুফতি]
ডঃ আব্দুল্লাহ বিন আবদুল মুহসীন আত-তুর্কি
ডঃ আবদুল্লাহ বিন মুহাম্মাদ বিন ইব্রাহিম
ডঃ সালিহ আল ফাওযান
শাইখ গাইহাব আল গাইহাব
শাইখ আবদূর রাহমান বিন সালিহ আল জাবর
শাইখ আবদর রাহমাণ বিন গাইথ
ডঃ আব্দুল্লাহ আল গুনাইমান
শাইখ সালমান আল আওদাহ
হামুদ আল খালদি
শাইখ আলি বিন খুদাইর
শাইখ নাসির আল ফাহাদ
শাইখ সুলাইমান বিন উলওয়ানসহ আরো অনেকে।
.
.
শাইখ নিম্নোক্ত উলেমার ডক্টরেট থিসিস রিভিউ করেছিলেনঃ
.
আবদুল ক্বাদির সাহাইবা আল হামাদ
আবু বাকর জাযাইরি
মুহাম্মাদ আমান আলা জামি আস সোমালি
রাবি বিন হাদি আল মাদখালি
মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল উথাইমিন
লিখেছেন একজন ভাই, আল্লাহ উনাকে উত্তম প্রতিদান দিন আমিন ।
.
.
সমমাত্রায় প্রতিশোধ গ্রহণের বৈধতা সম্পর্কে আহলুল ‘ইলমের বক্তব্য থেকে আমরা জানতে পারি যেভাবে কুফফার আমাদের বিরুদ্ধে আচরণ করেছে সেইভাবে তার জবাব দেয়া জায়েজ। যারা বারবার “নির্দোষ" শব্দটি আওড়াতে থাকেন তাঁদের কথার জবাব দ্বীনে আছে, কারণ আল্লাহ্* সুবহানাহু ওয়া তা’আলা আমাদের [মুসলিম] জন্য তা [সমমাত্রায় প্রতিশোধ গ্রহণের ] জায়েজ করেছেন। আল্লাহ্* আযযা ওয়াজাল বলেন -
.
“বস্তুতঃ যারা তোমাদের উপর সীমালঙ্ঘন করেছে, তোমরা তাদের উপর সীমালঙ্ঘন কর, যেমন সীমালঙ্ঘন তারা করেছে তোমাদের উপর। [আল বাক্বারা, ১৯৪]
.
.
এবং আল্লাহ্ আযযা ওয়া জাল বলেছেনঃ
.
.
যারা আক্রান্ত হলে প্রতিশোধ গ্রহণ করে। আর মন্দের প্রতিফল তো অনুরূপ মন্দই। যে ক্ষমা করে ও আপোষ করে তার পুরস্কার আল্লাহর কাছে রয়েছে; নিশ্চয় তিনি অত্যাচারীদেরকে পছন্দ করেন নাই। নিশ্চয় যে অত্যাচারিত হওয়ার পর প্রতিশোধ গ্রহণ করে, তাদের বিরুদ্ধেও কোন অভিযোগ নেই। অভিযোগ কেবল তাদের বিরুদ্ধে, যারা মানুষের উপর অত্যাচার চালায় এবং পৃথিবীতে অন্যায়ভাবে বিদ্রোহ করে বেড়ায়। তাদের জন্যে রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। [আস শূরা, ৩৯-৪২]
.
.
এবং কাফিরদের তাদের আঘাত ও সীমালঙ্ঘনের পরিবর্তে সমপরিমাণে সমুচিত জবাব দেওয়া এবং প্রতিশোধ নেয়া জায়েজ হওয়া সম্পর্কে, আহলুল ‘ইলমের বক্তব্যের মধ্যে আছে শায়হুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ রাহিমাহুল্লাহ-র এই কথাঃ
.
.
“নিশ্চয় সমপরিমাণে সীমালঙ্ঘনের প্রতিউত্তর দেয়া তাঁদের [মুসলিম /মুজাহিদ] অধিকার। এরকম পাল্টা আঘাত করা তাঁদের জন্য জায়েজ, তাঁদের আত্ববিশ্বাস ফিরিয়ে আনা এবং প্রতিশোধ গ্রহনের জন্য। তবে তাঁরা চাইলে এরকম পালটা জবাব দেয়া থেকে বিরত থাকতে পারেন, যখন ধৈর্যশীল হওয়া অধিক পছন্দনীয়। তবে এটি [বিরত থাকা] শুধু মাত্র সেইসব ক্ষেত্রে প্রযোজ্য যখন পাল্টা আঘাত করা জিহাদের ক্ষেত্রে কোন আগ্রগতি আনবে না, কিম্বা কাফিরদের মনে ত্রাস বৃদ্ধি করবে না (যা তাদের পুনরায় মুসলিমদের উপর সীমালঙ্ঘন থেকে বিরত করবে)। কিন্তু ঢালাও ও ব্যাপকভাবে (সমপরিমাণে)প্রতিশোধ গ্রহণ ও পাল্টা আঘাত করা যদি কাফিরদের জন্য ঈমানের প্রতি দাওয়াহ হিসেবে কাজ করে, এবং তাদের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করে, তাহলে এরকম পাল্টা আঘাত ও প্রতিশোধ এক অর্থে হুদুদ পালনের অংশ হয়ে পড়ে, এবং শারীয়াহ-সম্মত জিহাদ হিসেবে সাব্যস্ত হবে।“ [ইবন মুফলিহ রাহিমাহুল্লাহ কতৃক আল ফুরু (৬/২১৮)তে বর্ণিত। এছাড়াও পাবেন শায়খুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ রাহিমাহুল্লাহ রচিত “আল-ইখতিয়ারাত,(৫/৫২১)।]
.
.
যারা কোন সীমা নির্ধারণ এবং নির্দিষ্টকরণ ছাড়াই, ঢালাওভাবে শুধু “নির্দোষ মানুষ হত্যা”-র বিষয়টি নিয়ে শোরগোল তোলে, প্রকৃতপক্ষে তাঁরা রাসূলুল্লাহ ﷺ, সাহাবা রাঃ এবং তাঁদের পরবর্তী প্রজন্মকে [তাঁদের ভাষায়] “নির্দোষ মানুষ হত্যা”-র অপবাদ দিচ্ছে। কারণ রাসূলুল্লাহ ﷺ তায়েফ অবরোধের সময় মানজানিক [Catapult] ব্যবহার করেছিলেন। আর মানজানিকের ধর্ম হল, এটা আঘাত করার সময় কোন পার্থক্য [দোষী আর নির্দোষ ব্যক্তির মধ্যে] করে না। এবং রাসূলুল্লাহ ﷺ বানু কুরাইদ্বার সকল বালেগ পুরুষকে হত্যা করেছিলেন।
.
“...সেইদিন বানু কুরাইদ্বার বয়ঃপ্রাপ্ত সকল পুরুষকে হত্যা করা হয়েছিল”.
ইবন হাযম, “আল মুহাল্লাহ”-তে এই হাদিসটি সম্পর্কে বলেছেনঃ
.
“রাসূলুল্লাহ ﷺ সেইদিন আ’ম ভাবে বানু কুরাইদ্বার কোন নেতা, চাষি, ব্যবসায়ী, এমনকি বৃদ্ধ ব্যক্তিকে জীবিত ছেড়ে দেননি। এবং এই ব্যাপারে ইজমা আছে।“ [আল মুহাল্লাহ, ৭/২৯৯]
.
.
ইবন আল-ক্বায়্যিম রাহিমাহুল্লাহ, যাদ আল মা’আদে বলেছেনঃ“যখন তিনি ﷺ কোন গোত্র বা জনপদের অধিবাসীর সাথে চুক্তি করতেন, বা অঙ্গীকারবদ্ধ হতেন, এবং তারপর যদি সেই গোত্র বা জনপদের অধিবাসীরা বা তাদের মধ্যে থেকে কিছু লোক যদি সেই চুক্তি ভঙ্গ করতো, এবং বাকিরা সেটা সমর্থন করতো এবং এই ব্যাপারে [চুক্তিভঙ্গের ব্যাপারে] সন্তুষ্ট থাকতো, তবে তিনি ﷺ তাদের সকলের বিরুদ্ধেই যুদ্ধ করতেন, তাদের সকলকেই চুক্তিভঙ্গকারী এবং বিশ্বাসভঙ্গকারী গণ্য করে। যেরকম তিনি ﷺ করেছিলেন বানু কুরাইদ্বা, বানু নাযীর এবং বানু কায়নুকার বিরুদ্ধে। যেরকম তিনি করেছিলেন মক্কার অধিবাসীদের বিরুদ্ধে [বানু বাকরের সীমালঙ্ঘনের কারনে]। এবং তাঁর ﷺ এরকম আচরণ ছিল, তাঁকে ﷺ যে হেদায়েত ও নির্দেশনা দেয়া হয়েছিল তার অন্তর্ভুক্ত [অর্থাৎ আল্লাহ-র পক্ষ থেকে]। সুতরাং এটা হল চুক্তি ভঙ্গকারী ও বিশ্বাসঘাতকদের সাথে কিরূপ ব্যবহার করার সুন্নাহ।“
.
ইবন আল-ক্বায়্যিম আরো বলেনঃ
.
“যখন পূর্বদিকের খ্রিষ্টানরা, ইসলাম ও মুসলিমদের শত্রুদের অর্থায়ন ও অস্ত্র সরবরাহের মাধ্যমে মুসলিমদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে সাহায্য করেছিল, তখন ইবন তাইমিয়্যাহ তাদের [পূর্বদিকের খ্রিষ্টান] বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার ফাতাওয়া দেন। যদিও তারা আমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে নি, আমাদের আক্রমন করে নি। কিন্তু ইবন তাইমিয়্যাহ অনুধাবন করেছিলেন, এই খ্রিষ্টানরা চুক্তিভঙ্গকারী ছিল যেরকম কুরাইশ রাসূলুল্লাহ ﷺ এর সাথে করা তাদের চুক্তিভঙ্গ করেছিল, বানু বাকর ইবন ওয়া’লি কে ওইসব লোকেদের বিরুদ্ধে সাহায্য করে যাদেরকে মুসলিমরা নিরাপত্তা দিয়েছিল [বানু খুযা’আ] কৃত চুক্তি অনুযায়ী।“
[গাযওয়াতুল ম্যানহাটান সম্পর্কে শাইখের ফাতাওয়া,থেকে গৃহীত।]
.
.
_____________________________
.
.
সংক্ষেপে শাইখের পরিচয় এবং শিক্ষাগত যোগ্যতার বিবরনঃ
.
আল্লামা হামুদ বিন উক্বলা আস-শু’আইবি রাহিমাহুল্লাহ।
.
জন্ম ১৩৪৬ হিজরীতে, বুরাইদা প্রদেশের আশ-শাক্কাহ শহরে। বানু খালিদ গোত্রের সন্তান। সাত বছর বয়সে দৃস্টিশক্তি হারান, স্মল পক্সের কারণে। ১৩ বছর বয়সে সম্পূর্ণ কুর’আন হিফয করেন। ১৩৬৭ হিজরিতে ‘ইলম শিক্ষার জন্য রিয়াদে আসেন। রিয়াদে তিনি পরথমে শাইখ আবদুল লাতিফ বিন ইব্রাহিম আল-আশ শাইখের অধীনে অধ্যায়ন করেন। এসময় তিনি ‘আল-আজরুমিয়্যাহ, “উসুল আত-সালাসা”, রাহবিয়াতফিল ফারাইদ্ব এবং ক্বাওয়াইদ আল আর’বাআ মুখস্থ করেন এবং শিক্ষা করেন।
.
.
১৩৬৮ হিজরি থেকে তিনি শাইখ মুহাম্মাদ বিন ইব্রাহিম আল আশ-শাইখের তত্ত্বাবধানে “যাআদ আল মুস্তাক্বানি”, কিতাব আত-তাওহীদ”, কাশফ উশ শুবহাত”, শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহর আল ওয়াসতিয়্যাহ, আল আরবাআইন আন নাওয়াউয়ীয়্যাহ, আলফিয়াতু ইবন মালিক, বুলুগ আল মারাম অন্যান্য ছাত্রদের সাথে অধ্যায়ন করেন। এছাড়া তিনি শাইখ মুহাম্মাদের কাছে আলাদা ভাবে আত তাহাউয়ীয়্যাহ, আস-সাফরানির আদ দুররাহ আল মুদাইয়ীনাহ, এবং ইবন তাইমিয়্যাহর আল হামাউয়ীয়াহ পড়া সমাপ্ত করেন। উল্লেখিত সব গুলো কিতাব শিখ হামুদ ঠিক ঐভাবে মুখস্থ করেন, যেভাবে তিনি সূরা ফাতিহা মুখস্থ করেছিলেন।
.
.
শাইখ হামুদের আরও কয়েকজন শিক্ষকের নামঃ
.
শাইখ আবদুল আযীন বিন বাযের অধীনে তাওহীদ ও হাদীস অধ্যায়ন করেন
শাইখ মুহাম্মাদ আল আমিন আশ শিনকতি
শাইখ আবদুর রাহমান আল আফ্রিকি
আবদুল আযীয বিন রাশীদ, তাঁকে ফিকহ শিক্ষা দেন
শাইখ আবদুল আযিয আল খুলাইফি
সাহিখ হামাদ আল যাসির
মিশরের শাইখ ইউসুফ উমার হাসনাইন, আবদুল লাতিফ সারহান এবং ইউসুফ আদ দাবা
শাইখ সাউদ বিন রাশুদ
শাইখ ইব্রাহিম বিন সুলাইমান
.
.
শাইখ হামুদ ১৯৫৬ থেকে ১৯৮৫ পর্যন্ত কিং সাউদ ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষকতা করেন। তিনি এই সুদীর্ঘ সময়ে তাওহীদ, ফিকহ, ফারাইদ্ব, হাদিস, উসুল, ব্যাকরণ সহ অন্যান্য আরও বিষয়ের উপর ক্লাস নেন। এছারা তিনি মাস্টার্স এবং ডক্টরেট ছাত্রদের কাজের তত্ত্বাবধান করতেন।
.
.
শাইখ হামুদ বিন উক্বলার কয়েকজন উল্লেখযোগ্য ছাত্রের নামঃ
.
মুফতি আবদুল আযীয [বর্তমান গ্র্যান্ড মুফতি]
ডঃ আব্দুল্লাহ বিন আবদুল মুহসীন আত-তুর্কি
ডঃ আবদুল্লাহ বিন মুহাম্মাদ বিন ইব্রাহিম
ডঃ সালিহ আল ফাওযান
শাইখ গাইহাব আল গাইহাব
শাইখ আবদূর রাহমান বিন সালিহ আল জাবর
শাইখ আবদর রাহমাণ বিন গাইথ
ডঃ আব্দুল্লাহ আল গুনাইমান
শাইখ সালমান আল আওদাহ
হামুদ আল খালদি
শাইখ আলি বিন খুদাইর
শাইখ নাসির আল ফাহাদ
শাইখ সুলাইমান বিন উলওয়ানসহ আরো অনেকে।
.
.
শাইখ নিম্নোক্ত উলেমার ডক্টরেট থিসিস রিভিউ করেছিলেনঃ
.
আবদুল ক্বাদির সাহাইবা আল হামাদ
আবু বাকর জাযাইরি
মুহাম্মাদ আমান আলা জামি আস সোমালি
রাবি বিন হাদি আল মাদখালি
মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল উথাইমিন
লিখেছেন একজন ভাই, আল্লাহ উনাকে উত্তম প্রতিদান দিন আমিন ।
Comment