লা ইলাহা বাক্যটির ইলাহ শব্দটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই ইলাহ শব্দটির সঠিক অর্থ না জানার কারণে অনেকেই কালেমার সত্যিকার মর্ম বুঝতে ব্যর্থ হোন। তাছাড়া কুরআনের বহু স্থানে ইলাহ শব্দটি এসেছে। তাই এর অর্থ ও মর্ম যদি আমরা না বুঝি, তাহলে যে কোন সময় আমরা এই শিরকের ফিতনায় আক্রান্ত হয়ে যেতে পারি। যা আমাদের ঈমানের ভয়াবহ জন্য হুমকিস্বরূপ।
তাই ঈমান বাঁচাতে ইলাহ বলতে কি বুঝায় তা জানা ও মানা আমদের প্রত্যেকের উপরই অত্যন্ত জরুরী,অত্যাবশ্যকীয় কাজ।
ইলাহ মানে কি?
ইলাহ শব্দটি ব্যাপক অর্থ বহন করে। বাংলায় এর অর্থ উপাস্য বা মা'বুদ বলা হলেও অধিকাংশ মানুষই এর মানেও বুঝে না। অনেকে আবার এর দ্বারা শুধুমাত্র মূর্তি বা দেব দেবীকেই বুঝে থাকে। আর মনে করে আমরা তো কোন মূর্তি বা দেব-দেবীর পূজা,উপাসনা করি না। এই ধারণা একান্তই তাদের অজ্ঞতার ফসল।
ইলাহ বলতে ইবাদাতের যোগ্য বা ইবাদাত লাভ করার যোগ্য এরূপ সত্তাকেও বুঝানো হয়। এই অর্থও যারা জানে তাদের অনেকেই আবার ইবাদাত বলতে নামাজ, রোজা, হজ্ব, যাকাতকেই মনে করে। সেই সাথে ইবাদাতকে তারা প্রচলিত কিছু আনুষ্ঠানিকতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখে। যেমন : বিয়ে-শাদি,জানাযা,জুমআ,ঈদ,খতমে কুরআন ইত্যাদি। অর্থাৎ এগুলোকেই তারা ইবাদাত বলে মনে করে থাকে।
আর ভাবতে থাকে আমরা তো আল্লাহরই ইবাদাত করছি!! অথচ কুরআন-সুন্নাহ ও নবী রসূলদের সিরাহ থেকে স্পষ্ট যে, ইবাদাতের অর্থ তা নয় যা তারা মনে করছে।
এই ধারণার খন্ডন তখনই সম্ভব যখন আপনি ইলাহ শব্দের সঠিক অর্থ জানবেন। আর ইলাহকে ভালভাবে বুঝতে হলে ইবাদাত শব্দটির উপর গুরুত্ব আরোপ করতে হবে। ইবাদাত কি তা জানার মাধ্যমেই ইলাহ শব্দের বাস্তবতা বুঝে আসবে। কারণ ইলাহ মানে যদি ইবাদাতের যোগ্য সত্তা হয়। তাহলে ইবাদাত শব্দের অর্থ জানার মাধ্যমেই আপনি বুঝতে পারবেন কে আসলেই ইবাদাতের যোগ্য এবং কোন কোন কাজকে ইবাদাত বলা হয়।
ফলে ইবাদাতের ধারণা স্পষ্ট হলে ইলাহ নিয়ে আর কোন সংশয় থাকবে না ইনশা আল্লাহ।
ইবাদাত কি ?
শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রহঃ) তার আল ঊবুদিয়্যাহ গ্রন্থে ইবাদাতের শারঈ বা বিধিগত অর্থ সম্পর্কে বলেন, ইলাহ মানে ঐ সত্বা যার প্রতি মানুষ তার হৃদয়মন পূর্ণ একাগ্রতা,ঐকান্তিকতা,ভালবাসা,সম্মানবোধ,ভয়,আশা,ভরসা, সবর,শোকর,নৈকট্য ও তাওয়াক্কুলের গভীর আবেগানুভূতির দিয়ে ঝুঁকে পড়ে।
তিনি (রহঃ) আরো বলেন, ইবাদাত একটি ব্যাপক অর্থবোধক শব্দ এর মধ্যে আল্লাহর পছন্দনীয় ও তার সন্তুষ্টি হাসিলের সব যাহেরী (প্রকাশ্য) ও বাতেনী (অপ্রকাশ্য) কথা এবং কাজ অন্তর্ভূক্ত। সলাত,জিহাদ,সত্যকথা,আমানতদারিতা,প্রতিবেশীর হক,মাতাপিতার সহিত সদাচরণ, ওয়াদা পালন,আমর বিল মা'রূফ ওয়া নাহি আনিল মুনকার,জিকির,তিলাওয়াত সহ সকল ভাল কাজই ইবাদাতের অন্তর্ভক্ত।
(এমনকি) আল্লাহ ও তার রসূলকে ভালবাসা, আল্লাহর রহমতের আশা, শাস্তির ভয়, বিনয়,ইখলাস,সবর,শোকর,তাওয়াক্কুল ইত্যাদি সকল ভাল কাজ ইবাদাতের অন্তর্ভূক্ত।
ইমাম ইবনু কাসীর (রহঃ) সূরা ফাতিহার ৪ নং আয়াতের তাফসীরে বলেন, ইবাদাত শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে সার্বিক অপমান ও নীচতা। শারঈ পরিভাষায় ভালবাসা,বিনয়,নম্রতা এবং ভীতির সমষ্টির নাম ইবাদাত। (তাফসীর ইবনু কাসীর)।
ইবনুল কাইয়্যুম (রহ.) বলেন, "হৃদয়,মন,অন্তর এবং শরীর দ্বারা (সবচেয়ে বেশী) ভালবাসা,বিনয়ের একত্ববাদকেই ইবাদাত বলে। ভালবাসা হল আল্লাহর পছন্দ (সন্তুষ্ট,খুশী,প্রিয়,ভালবাসা) কে পছন্দ করা, তার অপছন্দ(ক্রোধ,ঘৃণা,অসন্তোষ) কে ঘৃণা,অপছন্দ করা। (মাজমু আতুল তাওহীদ)।
সালাফদের বক্তব্য থেকে এ কথা স্পষ্ট যে, ইবাদাত শুধু বাহ্যিক আনুষ্ঠানিকতা পালন করার নাম নয়। এর সাথে জড়িয়ে আছে অন্তরের একাগ্রতা,ভালবাসা,আশা,ভয়-ভীতি,বিনয় ও নম্রতা।
জাহেলী যুগে ইলাহের ধারণা
এখন প্রশ্ন হল মক্কা-মদিনার কাফের মুশরেকরা ইলাহ বলতে কি বুঝতো?? উলুহিয়্যাত সম্পর্কে তাদের ধারণাটা কি ছিল?? এর উত্তর জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এর মাধ্যমেই ইলাহ শব্দটির প্রকৃত মর্ম উপলব্ধি করা সম্ভব হবে। আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহ রব্বুল 'আলামীন এই প্রশ্নের উত্তর পবিত্র কুরআনের বহু আয়াতের মাধ্যমে আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন যাতে করে ইলাহ এর ধারণা আমাদের নিকট স্পষ্ট হয়। এবং আমরা যাতে করে উলুহিয়্যাতের সেইসব গুণ গুলো আল্লাহকে ছাড়া অপর কাউকে বা কোন কিছুকে প্রদান করে সেটাকেই আমাদের ইলাহ হিসেবে গ্রহণ না করে বসি।
নিম্নের আয়াতগুলো থেকে জানা যায় কীভাবে তারা গায়রুল্লাহকে ইলাহ বানিয়েছিল?? আর ইলাহ বলতে তারা আসলে কি বুঝতো?
ইলাহের প্রথম অর্থ :
আল্লাহ তা আলা বলেন,
তারা আল্লাহর পরিবর্তে অন্য ইলাহদেরকে গ্রহণ করেছে যাতে তারা (এসব ইলাহগুলি) তাদের (উপাসক,ইবাদাতকারীদের জন্য) সহায়ক,সাহায্যকারী,পৃষ্ঠপোষক হয়ে যায়। (সূরা মারয়াম ১৯ : ৮১)।
আল্লাহর পরিবর্তে তারা যেসমস্ত ইলাহদেরকে আহ্বান করতো যখন (হে নবী) তোমার রবের নির্দেশ এসে পৌছল (তখন তাদের কেউই তাদের কোন কাজে আসলো না বরং) তারা (ইলাহগুলোর উপাসনাই) তাদের (এসব উপাসকদের) ধ্বংসকে বাড়িয়ে দিল। (হুদ ১১:১০১)।
আল্লাহর পরিবর্তে তারা যাকে ডাকে, তারা তো কোন কিছুই সৃষ্টি করে নাই বরং তারা নিজেরাই তো সৃষ্ট। তারা মৃত। এবং কবে উত্থিত হবে তাও বুঝতে পারে না। তাদের ইলাহই হচ্ছেন একমাত্র ইলাহ। (নাহাল ১৬ : ২০-২২)।
আর আল্লাহর সাথে অপর কোন ইলাহকে ডেকো না। তিনি ব্যতীত আর কোন ইলাহ নেই। (কাসাস ২৮ : ৮৮)।
যারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্য শরীকদের ডাকছে, তারা নিছক কল্পনা ব্যতীত আর কিছুরই অনুসরণ করছে না। তারা কেবল ধারনা-কল্পনার অনুসরণ করে কল্পনার পেছনেই ছুটে চলে। (ইউনুসঃ ৬৬)।
উপরের আয়াতগুলো থেকে কয়েকটি বিষয় স্পষ্ট
১) জাহেলী যুগের লোকেরা যাকে ইলাহ বলতো, অসুবিধা দূরীকরণ এবং অভাব পূরণের জন্যে তারা তাকে ডাকতো। অন্য কথায়, তারা তার নিকট দোয়া করতো।
২) জ্বিন, ফেরেশতা বা দেবতা ও মৃত ব্যক্তিদেরকেও তারা ইলাহ হিসেবে গ্রহণ করেছিলো।
যেমনটা সূরা নাহলের ২০-২২ নং আয়াতে বর্ণিত হয়েছে।
৩) এ সকল ইলাহ সম্পর্কে তারা ধারণা করতো যে, এসব মিথ্যা ইলাহগুলি) তাদের দোয়া (আহবান) শুনছে এবং তারা বিশ্বাস করতো এসব মিথ্যা ইলাহগুলি গায়েবি ও আধ্যাত্মিকভাবে সর্বাবস্থায় তাদের সাহায্যে হাজির হতে সক্ষম। তারা এগুলোকে হাজির-নাজির ও গায়েবিভাবে মদদ দানকারী মনে করতো। ফলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে তারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে এদের (এসব মিথ্যা ইলাহদের) নিকট দুআ করতো। নানা রকমের বিপদাপদ, কষ্ট,মুসিবতে নজর, মান্নত, ভয়-ভীতি ইত্যাদিতে তারা এসব মিথ্যা ইলাহদের নিকট সাহায্য ও আশ্রয় কামনা করতো।
তবে অবস্থা খুব বেশী বেগতিক দেখলে তারা একনিষ্ঠ চিত্তে কেবলই আল্লাহকে ডাকা শুরু করতো। কিন্তু বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়ার পর তারা পুনঃরায় তাদের শিরকি কাজে লিপ্ত হতো।
ইলাহের দ্বিতীয় অর্থ
আল্লাহ তা আলা বলছেন,
আল্লাহকে ত্যাগ করে তারা যাদেরকে নৈকট্য লাভের মাধ্যমে মনে করে ইলাহ বানিয়ে নিয়েছিলো, তারা কেন তাদের সাহায়্য করে নি? সাহায্য করা তো দূরে থাক, বরং তারা তাদেরকে ছেড়ে উধাও হয়ে গিয়েছিলো। তাদের মিথ্যা মনগড়া আচরণের এটাই ছিলো স্বরূপ। (আহকাফ ৪৬ : ২৭-২৮)।
যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন, আমি কেন তাঁর ইবাদাত করবো না, যাঁর দিকে তোমাদের সকলকে ফিরে যেতে হবে? তাঁকে ত্যাগ করে আমি কি ওদেরকে ইলাহ বানাবো, যাদের অবস্থা হচ্ছে এই যে, রহমান যদি আমার কোন ক্ষতি করার ইচ্ছা করেন, তখন তাদের সুপারিশ আমার কোন কাজেই আসবে না, পারবে না তারা আমাকে মুক্ত করতে? (ইয়াছিন ৩৬ : ২২-২৩)।
তারা আল্লাহ ছাড়া এমন শক্তিরও ইবাদাত করছে, যারা তাদের উপকার- অপকার কোনটাই করতে পারে না। তারা বলেঃ এরা আল্লাহ্ র কাছে আমাদের জন্য সুপারিশ করবে। (ইউনুস ১০ : ১৮)।
এসকল আয়াতগুলোতে ইলাহ বলতে এমন সত্তাকে বুঝানো হয়েছে যিনি সার্বিক লাভ-ক্ষতি,কল্যাণ-অকল্যাণের মালিক। যিনি সর্বাবস্থায় সব রকমের বিপদাপদ থেকে উদ্ধার করতে সক্ষম।
আর তোমরা একাধিক ইলাহ গ্রহণ করো না। তিনিই তো একমাত্র ইলাহ। সুতরাং (এসব বাতিল ইলাহদেরকে ভয় না করে) তোমরা কেবল আমাকেই ভয় করো। (নাহল ১৬ : ৫১)।
ইব্রাহীম বলেন), তোমারা যাদেরকে আল্লাহর শরীক করছো আমি তাদেরকে আদৌ ভয় করি না। অবশ্য আমার রব যদি কিছু চান তবে তা অবশ্যই হতে পারে। (আনআম ৬ : ৮০)।
(হুদ -এর জাতির লোকেরা তাঁকে বললো) আমরা বলবো, আমাদের কোনও এক ইলাহ তোমাকে আভিশাপ করেছে। (হুদঃ ৫৪)।
মূলত জাহেলী যুগের লোকেরা তাদের ইলাহ সম্পর্কে আশংকা করতো যে, আমারা যদি তাদেরকে কোনভাবে নারাজ করি বা আমরা যদি তাদের শুভ দৃষ্টি থেকে বঞ্ঝিত হেয়ে পড়ি তাহলে আমাদের উপর রোগ-শোক, অভাব -অনটন, জান-মালের ক্ষয়-ক্ষতি এবং নানা রকমের বিপদ আপতিত হবে।
ইলাহ এর তৃতীয় অর্থ
"তারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে তাদের পন্ডিত পুরোহিতদেরকে নিজেদের রব হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছে মসীহ ইবনে মরিয়ামকেও রব বনিয়েছে। অথচ তাদেরকে কেবল এক ইলাহর ইবাদাতের নির্দেশ দেয়া হয়েছিলো, তিনি ভিন্ন আর কোন ইলাহ নেই।(সূরা তওবা ৯ : ৩১)।
তুমি কি তাকে দেখেছ? যে তার কামনা-বাসনা (প্রবৃত্তি) কে ইলাহ হিসেবে গ্রহণ করেছে। তুমি কি এরূপ ব্যক্তিকে সঠিকপথে নিয়ে আসার দ্বায়িত্ব নিতে পার? (ফুরকান ২৫ : ৪৩)।
এমনি করে অনেক মুশরেকদের জন্যে তাদের মনগড়া শরীকরা (অর্থাৎ ইলুহিয়াতের ব্যাপারে অংশীদাররা) নিজেদের সন্তান হত্যার কাজকে কতই না সুন্দর করে সাজিয়ে দিয়েছে। (আনআম ৬ : ১৩৭)।
তাদের কি এমন শরিক (অর্থাৎ উলুহিয়াতের ব্যাপারে অংশীদার) রয়েছে, যারা তাদের জন্যে এমন শরীয়ত নির্ধারণ করেছে, যার আল্লাহ অনুমতি দেন নি। (আশ-শুরা ৪২ : ২১)।
এসকল আয়াতে ইলাহের যে অর্থ করা হয়েছে তা পূর্ববর্তী ইলাহের চেয়ে ভিন্ন। এখানে ইলাহ বলতে এমন সত্তাকে বুঝানো হয়েছে যিনি হালাল হারাম, বৈধ-অবৈধ নির্ধারণের চূড়ান্ত মালিক। অত্র আয়াতগুলোতে গায়রুল্লাহকে আইন বিধান রচনা, হালাল-হারাম নির্ধারণের ক্ষমতা প্রদান করেছিল। অথচ আইন, বিধান রচিত হতে হবে, হালাল-হারাম, বৈধ-অবৈধ নির্ধারণ করতে হবে কেবলই আল্লাহর বিধান তথা শরী'আর আলোকে। শরীআহ ব্যতীত প্রবৃত্তি,গুরু,সংসদ,গণতন্ত্র,ব্যক্তিমত ইত্যাদিকে শরীআর উপর প্রাধান্য দিলে তা অবশ্যই উলুহিয়্যাতে শিরক হবে। কিন্তু বর্তমানে মূর্তি,কবর,মাজার পূজাকে শিরক বলা হলেও। ইলাহের এই অর্থকে নানাভাবে লুকিয়ে রাখা হয়েছে। ফলে অধিকাংশ মানুষ আজ এই প্রকারের শিরকের ফিতনায় আক্রান্ত। তারা এসকল ইলাহদেরকে ইলাহ হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছে। অথচ এটি হচ্ছে সেই শিরক যার অধীনে অন্যান্য শিরকগুলি তাদের আগাগোড়া, ডালপালা সমস্ত কিছু বিস্তার লাভ করার সুযোগ-সুবিধা,বৈধতা পায়।
আমাদের দেশের এত কবর,মাজার,ভণ্ড পীর পূজার কারণ কি শুধুই অজ্ঞতা?? বরং প্রকৃত বাস্তবতা হল প্রশাসনই তাওহীদের উপর নেই। তারা গণতন্ত্রের পূজায় লিপ্ত। তাদেরই ছত্র ছায়ায় এসব শিরকের আখড়াগুলি বন্ধ হওয়ার বদলে আরো বেশী গড়ে উঠছে।
মোদ্দাকথা এই যে ইলাহ হল সেই সত্তা যিনি প্রকাশ্য অপ্রকাশ্য সমস্ত প্রকার ইবাদাত পাওয়ার যোগ্য। কিন্তু মিথ্যা ইলাহ ইবাদাত পাওয়ার যোগ্য নয়। কারণ মিথ্যা ইলাহের মাঝে সত্যিকার উলুহিয়্যাতের গুণ নেই। সে না কল্যাণ অকল্যাণের মালিক, আর না সর্বাবস্থায় সর্বপ্রকার বিপদ থেকে উদ্ধারে সক্ষম। আর না সে শরীয়ত ব্যতীত নিজ থেকে হালাল-হারাম নির্ধারণের অধিকার রাখে। বরং এসবই একমাত্র আল্লাহর ক্ষমতার অধীন। তিনি সৃষ্টি করেছেন। অতএব বিধানও তিনিই দিবেন।
জেনে রাখ সৃষ্টি যার বিধান চলবে তার।
আমরা যখন কালেমার এই অর্থগুলোকে আমাদের সামনে রেখে একে (উঁচু, বিজয়ী,বুলন্দ) প্রতিষ্ঠা করার জন্য জিহাদ ফী সাবিলিল্লায় অংশ নেবো। তখনই আমাদের জিহাদ হবে সত্যিকার আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ। তখনই সেটা হবে দ্বীন কায়েম তথা তাওহীদ কায়েমের পথ।
যেমনটা হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, সত্যিকারের মুজাহিদ সেই ব্যক্তি যে আল্লাহর কালেমাকে উঁচু, বিজয়ী, বুলন্দ করার জন্য জিহাদ করে।
যারা কালেমার জিহাদকে অস্বীকার করছে তারা কালেমার মর্মই বুঝতে পারেনি। তারা ইলাহকে চিনতে পারেনি। ইলাহকে চিনতে পারলেই। অথবা তারা কালেমার ইলম গোপনকারী। আল্লাহ আমাদের এর থেকে রক্ষা করুক।
ইলাহের মর্ম বুঝার মাধ্যমেই আমরা কালেমার মূল স্বাদ আস্বাদন করতে পারবো। সেই সাথে এসমস্ত মিথ্যা ইলাহগুলিকে জেনে-বুঝে অস্বীকার করতে পারবো। আল্লাহ আমাদেরকে সেই তৌফিক দান করুক। আমীন।
ওমা 'আলাইনা ইল্লাল বালাগ।
চলবে... ইনশা আল্লাহ।
তাই ঈমান বাঁচাতে ইলাহ বলতে কি বুঝায় তা জানা ও মানা আমদের প্রত্যেকের উপরই অত্যন্ত জরুরী,অত্যাবশ্যকীয় কাজ।
ইলাহ মানে কি?
ইলাহ শব্দটি ব্যাপক অর্থ বহন করে। বাংলায় এর অর্থ উপাস্য বা মা'বুদ বলা হলেও অধিকাংশ মানুষই এর মানেও বুঝে না। অনেকে আবার এর দ্বারা শুধুমাত্র মূর্তি বা দেব দেবীকেই বুঝে থাকে। আর মনে করে আমরা তো কোন মূর্তি বা দেব-দেবীর পূজা,উপাসনা করি না। এই ধারণা একান্তই তাদের অজ্ঞতার ফসল।
ইলাহ বলতে ইবাদাতের যোগ্য বা ইবাদাত লাভ করার যোগ্য এরূপ সত্তাকেও বুঝানো হয়। এই অর্থও যারা জানে তাদের অনেকেই আবার ইবাদাত বলতে নামাজ, রোজা, হজ্ব, যাকাতকেই মনে করে। সেই সাথে ইবাদাতকে তারা প্রচলিত কিছু আনুষ্ঠানিকতার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখে। যেমন : বিয়ে-শাদি,জানাযা,জুমআ,ঈদ,খতমে কুরআন ইত্যাদি। অর্থাৎ এগুলোকেই তারা ইবাদাত বলে মনে করে থাকে।
আর ভাবতে থাকে আমরা তো আল্লাহরই ইবাদাত করছি!! অথচ কুরআন-সুন্নাহ ও নবী রসূলদের সিরাহ থেকে স্পষ্ট যে, ইবাদাতের অর্থ তা নয় যা তারা মনে করছে।
এই ধারণার খন্ডন তখনই সম্ভব যখন আপনি ইলাহ শব্দের সঠিক অর্থ জানবেন। আর ইলাহকে ভালভাবে বুঝতে হলে ইবাদাত শব্দটির উপর গুরুত্ব আরোপ করতে হবে। ইবাদাত কি তা জানার মাধ্যমেই ইলাহ শব্দের বাস্তবতা বুঝে আসবে। কারণ ইলাহ মানে যদি ইবাদাতের যোগ্য সত্তা হয়। তাহলে ইবাদাত শব্দের অর্থ জানার মাধ্যমেই আপনি বুঝতে পারবেন কে আসলেই ইবাদাতের যোগ্য এবং কোন কোন কাজকে ইবাদাত বলা হয়।
ফলে ইবাদাতের ধারণা স্পষ্ট হলে ইলাহ নিয়ে আর কোন সংশয় থাকবে না ইনশা আল্লাহ।
ইবাদাত কি ?
শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যাহ (রহঃ) তার আল ঊবুদিয়্যাহ গ্রন্থে ইবাদাতের শারঈ বা বিধিগত অর্থ সম্পর্কে বলেন, ইলাহ মানে ঐ সত্বা যার প্রতি মানুষ তার হৃদয়মন পূর্ণ একাগ্রতা,ঐকান্তিকতা,ভালবাসা,সম্মানবোধ,ভয়,আশা,ভরসা, সবর,শোকর,নৈকট্য ও তাওয়াক্কুলের গভীর আবেগানুভূতির দিয়ে ঝুঁকে পড়ে।
তিনি (রহঃ) আরো বলেন, ইবাদাত একটি ব্যাপক অর্থবোধক শব্দ এর মধ্যে আল্লাহর পছন্দনীয় ও তার সন্তুষ্টি হাসিলের সব যাহেরী (প্রকাশ্য) ও বাতেনী (অপ্রকাশ্য) কথা এবং কাজ অন্তর্ভূক্ত। সলাত,জিহাদ,সত্যকথা,আমানতদারিতা,প্রতিবেশীর হক,মাতাপিতার সহিত সদাচরণ, ওয়াদা পালন,আমর বিল মা'রূফ ওয়া নাহি আনিল মুনকার,জিকির,তিলাওয়াত সহ সকল ভাল কাজই ইবাদাতের অন্তর্ভক্ত।
(এমনকি) আল্লাহ ও তার রসূলকে ভালবাসা, আল্লাহর রহমতের আশা, শাস্তির ভয়, বিনয়,ইখলাস,সবর,শোকর,তাওয়াক্কুল ইত্যাদি সকল ভাল কাজ ইবাদাতের অন্তর্ভূক্ত।
ইমাম ইবনু কাসীর (রহঃ) সূরা ফাতিহার ৪ নং আয়াতের তাফসীরে বলেন, ইবাদাত শব্দের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে সার্বিক অপমান ও নীচতা। শারঈ পরিভাষায় ভালবাসা,বিনয়,নম্রতা এবং ভীতির সমষ্টির নাম ইবাদাত। (তাফসীর ইবনু কাসীর)।
ইবনুল কাইয়্যুম (রহ.) বলেন, "হৃদয়,মন,অন্তর এবং শরীর দ্বারা (সবচেয়ে বেশী) ভালবাসা,বিনয়ের একত্ববাদকেই ইবাদাত বলে। ভালবাসা হল আল্লাহর পছন্দ (সন্তুষ্ট,খুশী,প্রিয়,ভালবাসা) কে পছন্দ করা, তার অপছন্দ(ক্রোধ,ঘৃণা,অসন্তোষ) কে ঘৃণা,অপছন্দ করা। (মাজমু আতুল তাওহীদ)।
সালাফদের বক্তব্য থেকে এ কথা স্পষ্ট যে, ইবাদাত শুধু বাহ্যিক আনুষ্ঠানিকতা পালন করার নাম নয়। এর সাথে জড়িয়ে আছে অন্তরের একাগ্রতা,ভালবাসা,আশা,ভয়-ভীতি,বিনয় ও নম্রতা।
জাহেলী যুগে ইলাহের ধারণা
এখন প্রশ্ন হল মক্কা-মদিনার কাফের মুশরেকরা ইলাহ বলতে কি বুঝতো?? উলুহিয়্যাত সম্পর্কে তাদের ধারণাটা কি ছিল?? এর উত্তর জানা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এর মাধ্যমেই ইলাহ শব্দটির প্রকৃত মর্ম উপলব্ধি করা সম্ভব হবে। আলহামদুলিল্লাহ আল্লাহ রব্বুল 'আলামীন এই প্রশ্নের উত্তর পবিত্র কুরআনের বহু আয়াতের মাধ্যমে আমাদের কাছে বর্ণনা করেছেন যাতে করে ইলাহ এর ধারণা আমাদের নিকট স্পষ্ট হয়। এবং আমরা যাতে করে উলুহিয়্যাতের সেইসব গুণ গুলো আল্লাহকে ছাড়া অপর কাউকে বা কোন কিছুকে প্রদান করে সেটাকেই আমাদের ইলাহ হিসেবে গ্রহণ না করে বসি।
নিম্নের আয়াতগুলো থেকে জানা যায় কীভাবে তারা গায়রুল্লাহকে ইলাহ বানিয়েছিল?? আর ইলাহ বলতে তারা আসলে কি বুঝতো?
ইলাহের প্রথম অর্থ :
আল্লাহ তা আলা বলেন,
তারা আল্লাহর পরিবর্তে অন্য ইলাহদেরকে গ্রহণ করেছে যাতে তারা (এসব ইলাহগুলি) তাদের (উপাসক,ইবাদাতকারীদের জন্য) সহায়ক,সাহায্যকারী,পৃষ্ঠপোষক হয়ে যায়। (সূরা মারয়াম ১৯ : ৮১)।
আল্লাহর পরিবর্তে তারা যেসমস্ত ইলাহদেরকে আহ্বান করতো যখন (হে নবী) তোমার রবের নির্দেশ এসে পৌছল (তখন তাদের কেউই তাদের কোন কাজে আসলো না বরং) তারা (ইলাহগুলোর উপাসনাই) তাদের (এসব উপাসকদের) ধ্বংসকে বাড়িয়ে দিল। (হুদ ১১:১০১)।
আল্লাহর পরিবর্তে তারা যাকে ডাকে, তারা তো কোন কিছুই সৃষ্টি করে নাই বরং তারা নিজেরাই তো সৃষ্ট। তারা মৃত। এবং কবে উত্থিত হবে তাও বুঝতে পারে না। তাদের ইলাহই হচ্ছেন একমাত্র ইলাহ। (নাহাল ১৬ : ২০-২২)।
আর আল্লাহর সাথে অপর কোন ইলাহকে ডেকো না। তিনি ব্যতীত আর কোন ইলাহ নেই। (কাসাস ২৮ : ৮৮)।
যারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্য শরীকদের ডাকছে, তারা নিছক কল্পনা ব্যতীত আর কিছুরই অনুসরণ করছে না। তারা কেবল ধারনা-কল্পনার অনুসরণ করে কল্পনার পেছনেই ছুটে চলে। (ইউনুসঃ ৬৬)।
উপরের আয়াতগুলো থেকে কয়েকটি বিষয় স্পষ্ট
১) জাহেলী যুগের লোকেরা যাকে ইলাহ বলতো, অসুবিধা দূরীকরণ এবং অভাব পূরণের জন্যে তারা তাকে ডাকতো। অন্য কথায়, তারা তার নিকট দোয়া করতো।
২) জ্বিন, ফেরেশতা বা দেবতা ও মৃত ব্যক্তিদেরকেও তারা ইলাহ হিসেবে গ্রহণ করেছিলো।
যেমনটা সূরা নাহলের ২০-২২ নং আয়াতে বর্ণিত হয়েছে।
৩) এ সকল ইলাহ সম্পর্কে তারা ধারণা করতো যে, এসব মিথ্যা ইলাহগুলি) তাদের দোয়া (আহবান) শুনছে এবং তারা বিশ্বাস করতো এসব মিথ্যা ইলাহগুলি গায়েবি ও আধ্যাত্মিকভাবে সর্বাবস্থায় তাদের সাহায্যে হাজির হতে সক্ষম। তারা এগুলোকে হাজির-নাজির ও গায়েবিভাবে মদদ দানকারী মনে করতো। ফলে বিভিন্ন ক্ষেত্রে তারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে এদের (এসব মিথ্যা ইলাহদের) নিকট দুআ করতো। নানা রকমের বিপদাপদ, কষ্ট,মুসিবতে নজর, মান্নত, ভয়-ভীতি ইত্যাদিতে তারা এসব মিথ্যা ইলাহদের নিকট সাহায্য ও আশ্রয় কামনা করতো।
তবে অবস্থা খুব বেশী বেগতিক দেখলে তারা একনিষ্ঠ চিত্তে কেবলই আল্লাহকে ডাকা শুরু করতো। কিন্তু বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়ার পর তারা পুনঃরায় তাদের শিরকি কাজে লিপ্ত হতো।
ইলাহের দ্বিতীয় অর্থ
আল্লাহ তা আলা বলছেন,
আল্লাহকে ত্যাগ করে তারা যাদেরকে নৈকট্য লাভের মাধ্যমে মনে করে ইলাহ বানিয়ে নিয়েছিলো, তারা কেন তাদের সাহায়্য করে নি? সাহায্য করা তো দূরে থাক, বরং তারা তাদেরকে ছেড়ে উধাও হয়ে গিয়েছিলো। তাদের মিথ্যা মনগড়া আচরণের এটাই ছিলো স্বরূপ। (আহকাফ ৪৬ : ২৭-২৮)।
যিনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন, আমি কেন তাঁর ইবাদাত করবো না, যাঁর দিকে তোমাদের সকলকে ফিরে যেতে হবে? তাঁকে ত্যাগ করে আমি কি ওদেরকে ইলাহ বানাবো, যাদের অবস্থা হচ্ছে এই যে, রহমান যদি আমার কোন ক্ষতি করার ইচ্ছা করেন, তখন তাদের সুপারিশ আমার কোন কাজেই আসবে না, পারবে না তারা আমাকে মুক্ত করতে? (ইয়াছিন ৩৬ : ২২-২৩)।
তারা আল্লাহ ছাড়া এমন শক্তিরও ইবাদাত করছে, যারা তাদের উপকার- অপকার কোনটাই করতে পারে না। তারা বলেঃ এরা আল্লাহ্ র কাছে আমাদের জন্য সুপারিশ করবে। (ইউনুস ১০ : ১৮)।
এসকল আয়াতগুলোতে ইলাহ বলতে এমন সত্তাকে বুঝানো হয়েছে যিনি সার্বিক লাভ-ক্ষতি,কল্যাণ-অকল্যাণের মালিক। যিনি সর্বাবস্থায় সব রকমের বিপদাপদ থেকে উদ্ধার করতে সক্ষম।
আর তোমরা একাধিক ইলাহ গ্রহণ করো না। তিনিই তো একমাত্র ইলাহ। সুতরাং (এসব বাতিল ইলাহদেরকে ভয় না করে) তোমরা কেবল আমাকেই ভয় করো। (নাহল ১৬ : ৫১)।
ইব্রাহীম বলেন), তোমারা যাদেরকে আল্লাহর শরীক করছো আমি তাদেরকে আদৌ ভয় করি না। অবশ্য আমার রব যদি কিছু চান তবে তা অবশ্যই হতে পারে। (আনআম ৬ : ৮০)।
(হুদ -এর জাতির লোকেরা তাঁকে বললো) আমরা বলবো, আমাদের কোনও এক ইলাহ তোমাকে আভিশাপ করেছে। (হুদঃ ৫৪)।
মূলত জাহেলী যুগের লোকেরা তাদের ইলাহ সম্পর্কে আশংকা করতো যে, আমারা যদি তাদেরকে কোনভাবে নারাজ করি বা আমরা যদি তাদের শুভ দৃষ্টি থেকে বঞ্ঝিত হেয়ে পড়ি তাহলে আমাদের উপর রোগ-শোক, অভাব -অনটন, জান-মালের ক্ষয়-ক্ষতি এবং নানা রকমের বিপদ আপতিত হবে।
ইলাহ এর তৃতীয় অর্থ
"তারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে তাদের পন্ডিত পুরোহিতদেরকে নিজেদের রব হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছে মসীহ ইবনে মরিয়ামকেও রব বনিয়েছে। অথচ তাদেরকে কেবল এক ইলাহর ইবাদাতের নির্দেশ দেয়া হয়েছিলো, তিনি ভিন্ন আর কোন ইলাহ নেই।(সূরা তওবা ৯ : ৩১)।
তুমি কি তাকে দেখেছ? যে তার কামনা-বাসনা (প্রবৃত্তি) কে ইলাহ হিসেবে গ্রহণ করেছে। তুমি কি এরূপ ব্যক্তিকে সঠিকপথে নিয়ে আসার দ্বায়িত্ব নিতে পার? (ফুরকান ২৫ : ৪৩)।
এমনি করে অনেক মুশরেকদের জন্যে তাদের মনগড়া শরীকরা (অর্থাৎ ইলুহিয়াতের ব্যাপারে অংশীদাররা) নিজেদের সন্তান হত্যার কাজকে কতই না সুন্দর করে সাজিয়ে দিয়েছে। (আনআম ৬ : ১৩৭)।
তাদের কি এমন শরিক (অর্থাৎ উলুহিয়াতের ব্যাপারে অংশীদার) রয়েছে, যারা তাদের জন্যে এমন শরীয়ত নির্ধারণ করেছে, যার আল্লাহ অনুমতি দেন নি। (আশ-শুরা ৪২ : ২১)।
এসকল আয়াতে ইলাহের যে অর্থ করা হয়েছে তা পূর্ববর্তী ইলাহের চেয়ে ভিন্ন। এখানে ইলাহ বলতে এমন সত্তাকে বুঝানো হয়েছে যিনি হালাল হারাম, বৈধ-অবৈধ নির্ধারণের চূড়ান্ত মালিক। অত্র আয়াতগুলোতে গায়রুল্লাহকে আইন বিধান রচনা, হালাল-হারাম নির্ধারণের ক্ষমতা প্রদান করেছিল। অথচ আইন, বিধান রচিত হতে হবে, হালাল-হারাম, বৈধ-অবৈধ নির্ধারণ করতে হবে কেবলই আল্লাহর বিধান তথা শরী'আর আলোকে। শরীআহ ব্যতীত প্রবৃত্তি,গুরু,সংসদ,গণতন্ত্র,ব্যক্তিমত ইত্যাদিকে শরীআর উপর প্রাধান্য দিলে তা অবশ্যই উলুহিয়্যাতে শিরক হবে। কিন্তু বর্তমানে মূর্তি,কবর,মাজার পূজাকে শিরক বলা হলেও। ইলাহের এই অর্থকে নানাভাবে লুকিয়ে রাখা হয়েছে। ফলে অধিকাংশ মানুষ আজ এই প্রকারের শিরকের ফিতনায় আক্রান্ত। তারা এসকল ইলাহদেরকে ইলাহ হিসেবে গ্রহণ করে নিয়েছে। অথচ এটি হচ্ছে সেই শিরক যার অধীনে অন্যান্য শিরকগুলি তাদের আগাগোড়া, ডালপালা সমস্ত কিছু বিস্তার লাভ করার সুযোগ-সুবিধা,বৈধতা পায়।
আমাদের দেশের এত কবর,মাজার,ভণ্ড পীর পূজার কারণ কি শুধুই অজ্ঞতা?? বরং প্রকৃত বাস্তবতা হল প্রশাসনই তাওহীদের উপর নেই। তারা গণতন্ত্রের পূজায় লিপ্ত। তাদেরই ছত্র ছায়ায় এসব শিরকের আখড়াগুলি বন্ধ হওয়ার বদলে আরো বেশী গড়ে উঠছে।
মোদ্দাকথা এই যে ইলাহ হল সেই সত্তা যিনি প্রকাশ্য অপ্রকাশ্য সমস্ত প্রকার ইবাদাত পাওয়ার যোগ্য। কিন্তু মিথ্যা ইলাহ ইবাদাত পাওয়ার যোগ্য নয়। কারণ মিথ্যা ইলাহের মাঝে সত্যিকার উলুহিয়্যাতের গুণ নেই। সে না কল্যাণ অকল্যাণের মালিক, আর না সর্বাবস্থায় সর্বপ্রকার বিপদ থেকে উদ্ধারে সক্ষম। আর না সে শরীয়ত ব্যতীত নিজ থেকে হালাল-হারাম নির্ধারণের অধিকার রাখে। বরং এসবই একমাত্র আল্লাহর ক্ষমতার অধীন। তিনি সৃষ্টি করেছেন। অতএব বিধানও তিনিই দিবেন।
জেনে রাখ সৃষ্টি যার বিধান চলবে তার।
আমরা যখন কালেমার এই অর্থগুলোকে আমাদের সামনে রেখে একে (উঁচু, বিজয়ী,বুলন্দ) প্রতিষ্ঠা করার জন্য জিহাদ ফী সাবিলিল্লায় অংশ নেবো। তখনই আমাদের জিহাদ হবে সত্যিকার আল্লাহর রাস্তায় জিহাদ। তখনই সেটা হবে দ্বীন কায়েম তথা তাওহীদ কায়েমের পথ।
যেমনটা হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, সত্যিকারের মুজাহিদ সেই ব্যক্তি যে আল্লাহর কালেমাকে উঁচু, বিজয়ী, বুলন্দ করার জন্য জিহাদ করে।
যারা কালেমার জিহাদকে অস্বীকার করছে তারা কালেমার মর্মই বুঝতে পারেনি। তারা ইলাহকে চিনতে পারেনি। ইলাহকে চিনতে পারলেই। অথবা তারা কালেমার ইলম গোপনকারী। আল্লাহ আমাদের এর থেকে রক্ষা করুক।
ইলাহের মর্ম বুঝার মাধ্যমেই আমরা কালেমার মূল স্বাদ আস্বাদন করতে পারবো। সেই সাথে এসমস্ত মিথ্যা ইলাহগুলিকে জেনে-বুঝে অস্বীকার করতে পারবো। আল্লাহ আমাদেরকে সেই তৌফিক দান করুক। আমীন।
ওমা 'আলাইনা ইল্লাল বালাগ।
চলবে... ইনশা আল্লাহ।
Comment