আলহামদুলিল্লাহ বিগত পর্বগুলোতে আমরা কালেমাতুত তাওহীদ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এর সুস্পষ্ট অর্থ জেনেছি। আজকে আমরা জানবো-
লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এর শর্তসমূহ কি কি?
তবে তার আগে আমাদেরকে জানতে হবে কালেমার এই শর্তগুলি কেন আদায় করতে হবে??
একবার হাসান বসরীহ (রহঃ) কে জিজ্ঞেস করা হল, কিছু লোক বলে, যে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। জবাবে হাসান বসরীহ (রহঃ) বললেন, "হা (এ হাদীস ঠিকাছে তবে এর ব্যাখ্যা হল) যে ব্যক্তি এই লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এর হকসমূহ ও ফরজসমূহকে আদায় করবে সে জান্নাতে যাবে"।
আর লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এর হক হচ্ছে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এর শর্তসমূহকে আদায় করা।
ইমাম বুখারী (রহঃ) বলেন, একদা প্রসিদ্ধ তাবেঈ ওয়াহাব বিন মুনাব্বিহ (রহঃ) কে জিজ্ঞেস করা হল লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ কি জান্নাতের চাবি নয়? তিনি বললেন, "অবশ্যই (এটি জান্নাতের চাবি)। প্রত্যেকটি চাবিরই দাত থাকে, সুতরাং তুমি যদি দাতবিশিষ্ট চাবি নিয়ে আস তোমার তালা খুলবে। অন্যথায় তালা খুলবে না। আর জান্নাতের চাবির দাত হল লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এর শর্তসমূহ"।
অর্থাৎ দাত ছাড়া চাবি দিয়ে যেমন তালা খুলবে না, ঠিক তেমনি কেউ যদি কালেমাতুত তাওহীদের শর্তসমূহ আদায় না করে জান্নাতে যাওয়ার ইচ্ছা করে তাহলে সে কখনো জান্নাতে যেতে পারবে না।
এজন্যেই লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এর শর্তসমূহ আদায় করতে হবে। যদি কেউ এর শর্তসমূহ আদায় করে তাহলে তার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ নামক চাবিটি দিয়ে জান্নাতের দরজা খুলবে। অন্যথায় খুলবে না।
কালেমাতুত তাওহীদ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এর শর্তসমূহ :
উলামায়ে কেরাম কালেমাতুত তাওহীদ লা ইলাহা ইল্লল্লাহ এর শর্তগুলিকে দুইটি ভাগে ভাগ করেছেন। যথা :
এক. পার্থিব জীবনে নিরাপত্তা লাভের জন্য কালেমার শর্তসমূহ,
দুই. আখিরাতে জাহান্নামের চিরস্থায়ী আযাব থেকে বাচার জন্য কালেমার শর্তসমূহ।
এক. পার্থিব জীবনে নিরাপত্তা লাভের জন্য ২ টি শর্ত :
ক) লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ মুখে উচ্চারণ করা, এর স্বীকৃতি প্রদান করা এবং এর স্বাক্ষ্য দেওয়া :
ইবনু উমার (রা.) থেকে বর্ণিত রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আমাকে আদেশ করা হয়েছে আমি যেন লোকদের বিরুদ্ধে ততোক্ষণ পর্যন্ত যুদ্ধ করি যতক্ষণ না তারা এ কথার স্বাক্ষ্য প্রদান করে যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই এবং মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহর রসূল এবং নামাজ আদায় করে ও যাকাত আদায় করে। সুতরাং যখন তারা এগুলো পালন করবে তারা আমাদের থেকে তাদের জান-মাল হেফাজত করে নিবে। তবে ন্যায়সঙ্গতভাবে। আর তাদের হিসাব আল্লাহর হাতে। (সহীহ বুখারী)।
শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যা (রহঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি শাহাদাতাইন পাঠ করবে না, সে মুসমানের সর্বসম্মতিক্রমে কাফের। সে উম্মাহর সালফে সালেহীন, আইম্মায়ে মুজতাহিদীন এবং অধিকাংশ আলেমদের মতে বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণভাবে কাফের। (মাজমু উল ফাতাওয়া, ইবনু তাইমিয়্যাহ, ৭৮৭/৬০৯)।
খ) নাওয়াকিযুত তাওহীদ/ঈমান অর্থাৎ তাওহীদ/ঈমান বিনষ্টকারী কোন কিছু প্রকাশ না পাওয়া,
কালেমাতুত তাওহীদের স্বাক্ষ্য দেওয়ার পর যদি কোন ব্যক্তি থেকে ঈমান বিধ্বংসী কোন কিছু প্রকাশ পায় তাহলে তার জান ও মাল নিরাপত্তা লাভ করবে না।
রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যে ব্যক্তি তার দ্বীন পরিবর্তন করে (অর্থাৎ যার থেকে ঈমান বিধ্বংসী কোন কিছু) প্রকাশ পায় তাকে হত্যা কর।
অর্থাৎ পার্থিব জীবনে নিরাপত্তা লাভের দ্বিতীয় শর্ত হল কালেমাতুত তাওহীদের স্বাক্ষ্য দেওয়ার পর তার থেকে নাওয়াকিযুত তাওহীদ প্রকাশ না পাওয়া। যদি তার থেকে তাওহীদ ও ঈমান বিনষ্টকারী কোন কিছু প্রকাশ পায়, তাহলে তার জান ও মাল নিরাপত্তা লাভ করবে না।
দুই. আখিরাতে জাহান্নামের চিরস্থায়ী আযাব থেকে বাচার জন্য কালেমাতুত তাওহীদের শর্ত ৭টি :
১) আল ইলম (জ্ঞান) : লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এর অর্থ জানা,বুঝা। এর জ্ঞান অর্জন করা।
আল্লাহ তা আলা বলেন,
জেনে রাখ! যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই। (মুহাম্মদ ১৯)।
উসমান (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যে ব্যক্তি এ কথা জানা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করবে যে আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (সহীহ মুসলিম, ৫৫ পৃষ্ঠা, হাদীস নং ২৬)।
২) আল ইয়াকীন (দৃঢ় বিশ্বাস) : কোন ধরণের সন্দেহ-সংশয় ব্যতীত এই কালেমার উপর দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করা।
আল্লাহ তা আলা বলেন,
নিশ্চই সত্যিকার (পূর্ণাঙ্গ) মুমিন তারাই যারা আল্লাহ ও তার রসূলের উপর ঈমান আনে। অত:পর কখনো সন্দেহ প্রকাশ করেনি..। (হুজরাত ১৫)।
রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, "যে ব্যক্তি কোন সংশয় ছাড়া এই কালেমা নিয়ে আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (সহীহ মুসলিম, ১ম খন্ড, ৫৫ পৃষ্ঠা, হাদীস নং ২৭)।
৩) আল কবুল (গ্রহণ) : এই কালেমা পাঠ করার মাধ্যমে একমাত্র আল্লাহর ইবাদাতকে অন্তর থেকে গ্রহণ করা এবং সকল গায়রুল্লাহকে অন্তর থেকে বর্জন করা। এটা হল আমালুল ক্বলব। অন্তরের কর্ম। তাই যে এক আল্লাহর ইবাদাতকে কবুল করবে না সে ঐ ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে যাদের ব্যাপারে আল্লাহ বলেছেন,
যখন তাদেরকে বলা হত লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ (কোন ইলাহ নেই, আল্লাহ ছাড়া) তখন তারা অহংকার করতো আর বলতো আমরা কি এক পাগল কবির কথায় আমাদের ইলাহদেরকে বর্জন করবো? (সফফাত ৩৫-৩৬)।
৪) আল ইনক্বিয়াত (আত্মসমর্পন) : এই কালেমার মাধ্যমে কালেমাতুত তাওহীদের (মিথ্যা ইলাহগুলিকে বর্জন করে এক সত্য ইলাহ আল্লাহর একত্ববাদের) সামনে বাহ্যিক অংগ প্রত্যংগের দ্বারা আত্মসমর্পণ করা। এটা হল আমালুল জাওয়ারেহ। অর্থাৎ বাহ্যিক অঙ্গপ্রত্যঙ্গের আমল।
আল্লাহ তা আলা বলেন,
যে সৎকর্মপরায়ণ হয়ে আল্লাহর সামনে আত্মসমর্পণ করলো, সে যেন মজবুত হাতল আঁকড়ে ধরলো। (লুকমান ২২)।
৫) আস সিদক (সত্যবাদিতা) : অন্তরের মাধ্যমে একে সত্যায়ন করা,সত্য বলে বিশ্বাস করা। সত্য দিলে, সত্য মন নিয়ে, অন্তর থেকে সত্যায়ন করে এই কালেমাতুত তাওহীদের স্বাক্ষ্য দেওয়া।
আল্লাহ বলেন,
যখন মুনাফিকরা আপনার নিকট আসে তখন তারা বলে আমরা স্বাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নিশ্চই আপনি আল্লাহর রসূল। নি:সন্দেহে আল্লাহ তো জানেনই যে আপনি তার রসূল। তবে আল্লাহ স্বাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, অবশ্যই মুনাফিকরা মিথ্যা। (মুনাফিকুন : ১)।
রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যে ব্যক্তি সত্য দিলে একথার স্বাক্ষ্য দিবে যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই, এবং মুহাম্মাদ আল্লাহর রসূল আল্লাহ তার জন্য জাহান্নামকে হারাম করে দিবেন। (সহীহ বুখারী ১ম খন্ড, ৫৯ পৃষ্ঠা, হাদীস নং ১২৮)।
৬) আল ইখলাস (আন্তরিকভাবে) : একনিষ্ঠভাবে শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে এই কালেমা পাঠ করা, অন্য কোন উদ্দেশ্যে নয়।
আল্লাহ বলেন,
আল্লাহকে ডাক তার আনুগত্যে একনিষ্ঠ হয়ে যদিও কাফেররা তা অপছন্দ করে। (মুমিন : ১৪)।
রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আল্লাহ তা আলা ঐ ব্যক্তির উপর জাহান্নামকে হারাম করে দিয়েছেন যে আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ স্বীকার করে নিয়েছে। (বুখারী,মুসলিম)।
৭) আল মুহাব্বাত (ভালবাসা) : এই কালেমার মর্ম ও এই কালেমা অবলম্বনকারীদের প্রতি মহব্বত পোষণ করা।
আল্লাহ তা আলা বলেন,
আর মানুষের মধ্যে (এমন লোকও) আছে যারা আল্লাহকে ছাড়া অন্যকে তার সমকক্ষ হিসেবে গ্রহণ করে, তারা তাদেরকে আল্লাহর মত করে ভালবাসে। আর যারা ঈমান আনে তারা আল্লাহকে সবচেয়ে বেশী ভালবাসে...। (সূরা বাকারাহ ২ : ১৬৫)।
রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তিনটি গুণ এমন রয়েছে যে কোন ব্যক্তির মাঝে যদি গুণগুলো বিদ্যমান থাকে তাহলে অবশ্যই সে ঈমানের স্বাদ আস্বাদন করবে। (গুণগুলো হল
তার নিকট আল্লাহ ও তার রসূল সবকিছুর চেয়ে বেশী প্রিয় হওয়া, কাউকে ভালবাসলে আল্লাহর জন্যই ভালবাসা এবং সে কুফরিতে ফিরে যাওয়াকে এমনভাবে ঘৃণা, অপছন্দ করবে যেমনটা সে আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়াকে অপছন্দ করে। (বুখারি,মুসলিম)।
লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এর শর্তসমূহ কি কি?
তবে তার আগে আমাদেরকে জানতে হবে কালেমার এই শর্তগুলি কেন আদায় করতে হবে??
একবার হাসান বসরীহ (রহঃ) কে জিজ্ঞেস করা হল, কিছু লোক বলে, যে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বলবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। জবাবে হাসান বসরীহ (রহঃ) বললেন, "হা (এ হাদীস ঠিকাছে তবে এর ব্যাখ্যা হল) যে ব্যক্তি এই লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এর হকসমূহ ও ফরজসমূহকে আদায় করবে সে জান্নাতে যাবে"।
আর লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এর হক হচ্ছে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এর শর্তসমূহকে আদায় করা।
ইমাম বুখারী (রহঃ) বলেন, একদা প্রসিদ্ধ তাবেঈ ওয়াহাব বিন মুনাব্বিহ (রহঃ) কে জিজ্ঞেস করা হল লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ কি জান্নাতের চাবি নয়? তিনি বললেন, "অবশ্যই (এটি জান্নাতের চাবি)। প্রত্যেকটি চাবিরই দাত থাকে, সুতরাং তুমি যদি দাতবিশিষ্ট চাবি নিয়ে আস তোমার তালা খুলবে। অন্যথায় তালা খুলবে না। আর জান্নাতের চাবির দাত হল লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এর শর্তসমূহ"।
অর্থাৎ দাত ছাড়া চাবি দিয়ে যেমন তালা খুলবে না, ঠিক তেমনি কেউ যদি কালেমাতুত তাওহীদের শর্তসমূহ আদায় না করে জান্নাতে যাওয়ার ইচ্ছা করে তাহলে সে কখনো জান্নাতে যেতে পারবে না।
এজন্যেই লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এর শর্তসমূহ আদায় করতে হবে। যদি কেউ এর শর্তসমূহ আদায় করে তাহলে তার লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ নামক চাবিটি দিয়ে জান্নাতের দরজা খুলবে। অন্যথায় খুলবে না।
কালেমাতুত তাওহীদ লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এর শর্তসমূহ :
উলামায়ে কেরাম কালেমাতুত তাওহীদ লা ইলাহা ইল্লল্লাহ এর শর্তগুলিকে দুইটি ভাগে ভাগ করেছেন। যথা :
এক. পার্থিব জীবনে নিরাপত্তা লাভের জন্য কালেমার শর্তসমূহ,
দুই. আখিরাতে জাহান্নামের চিরস্থায়ী আযাব থেকে বাচার জন্য কালেমার শর্তসমূহ।
এক. পার্থিব জীবনে নিরাপত্তা লাভের জন্য ২ টি শর্ত :
ক) লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ মুখে উচ্চারণ করা, এর স্বীকৃতি প্রদান করা এবং এর স্বাক্ষ্য দেওয়া :
ইবনু উমার (রা.) থেকে বর্ণিত রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, আমাকে আদেশ করা হয়েছে আমি যেন লোকদের বিরুদ্ধে ততোক্ষণ পর্যন্ত যুদ্ধ করি যতক্ষণ না তারা এ কথার স্বাক্ষ্য প্রদান করে যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই এবং মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আল্লাহর রসূল এবং নামাজ আদায় করে ও যাকাত আদায় করে। সুতরাং যখন তারা এগুলো পালন করবে তারা আমাদের থেকে তাদের জান-মাল হেফাজত করে নিবে। তবে ন্যায়সঙ্গতভাবে। আর তাদের হিসাব আল্লাহর হাতে। (সহীহ বুখারী)।
শাইখুল ইসলাম ইমাম ইবনু তাইমিয়্যা (রহঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি শাহাদাতাইন পাঠ করবে না, সে মুসমানের সর্বসম্মতিক্রমে কাফের। সে উম্মাহর সালফে সালেহীন, আইম্মায়ে মুজতাহিদীন এবং অধিকাংশ আলেমদের মতে বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণভাবে কাফের। (মাজমু উল ফাতাওয়া, ইবনু তাইমিয়্যাহ, ৭৮৭/৬০৯)।
খ) নাওয়াকিযুত তাওহীদ/ঈমান অর্থাৎ তাওহীদ/ঈমান বিনষ্টকারী কোন কিছু প্রকাশ না পাওয়া,
কালেমাতুত তাওহীদের স্বাক্ষ্য দেওয়ার পর যদি কোন ব্যক্তি থেকে ঈমান বিধ্বংসী কোন কিছু প্রকাশ পায় তাহলে তার জান ও মাল নিরাপত্তা লাভ করবে না।
রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যে ব্যক্তি তার দ্বীন পরিবর্তন করে (অর্থাৎ যার থেকে ঈমান বিধ্বংসী কোন কিছু) প্রকাশ পায় তাকে হত্যা কর।
অর্থাৎ পার্থিব জীবনে নিরাপত্তা লাভের দ্বিতীয় শর্ত হল কালেমাতুত তাওহীদের স্বাক্ষ্য দেওয়ার পর তার থেকে নাওয়াকিযুত তাওহীদ প্রকাশ না পাওয়া। যদি তার থেকে তাওহীদ ও ঈমান বিনষ্টকারী কোন কিছু প্রকাশ পায়, তাহলে তার জান ও মাল নিরাপত্তা লাভ করবে না।
দুই. আখিরাতে জাহান্নামের চিরস্থায়ী আযাব থেকে বাচার জন্য কালেমাতুত তাওহীদের শর্ত ৭টি :
১) আল ইলম (জ্ঞান) : লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এর অর্থ জানা,বুঝা। এর জ্ঞান অর্জন করা।
আল্লাহ তা আলা বলেন,
জেনে রাখ! যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই। (মুহাম্মদ ১৯)।
উসমান (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যে ব্যক্তি এ কথা জানা অবস্থায় মৃত্যুবরণ করবে যে আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (সহীহ মুসলিম, ৫৫ পৃষ্ঠা, হাদীস নং ২৬)।
২) আল ইয়াকীন (দৃঢ় বিশ্বাস) : কোন ধরণের সন্দেহ-সংশয় ব্যতীত এই কালেমার উপর দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করা।
আল্লাহ তা আলা বলেন,
নিশ্চই সত্যিকার (পূর্ণাঙ্গ) মুমিন তারাই যারা আল্লাহ ও তার রসূলের উপর ঈমান আনে। অত:পর কখনো সন্দেহ প্রকাশ করেনি..। (হুজরাত ১৫)।
রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, "যে ব্যক্তি কোন সংশয় ছাড়া এই কালেমা নিয়ে আল্লাহর সাথে সাক্ষাৎ করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে। (সহীহ মুসলিম, ১ম খন্ড, ৫৫ পৃষ্ঠা, হাদীস নং ২৭)।
৩) আল কবুল (গ্রহণ) : এই কালেমা পাঠ করার মাধ্যমে একমাত্র আল্লাহর ইবাদাতকে অন্তর থেকে গ্রহণ করা এবং সকল গায়রুল্লাহকে অন্তর থেকে বর্জন করা। এটা হল আমালুল ক্বলব। অন্তরের কর্ম। তাই যে এক আল্লাহর ইবাদাতকে কবুল করবে না সে ঐ ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে যাদের ব্যাপারে আল্লাহ বলেছেন,
যখন তাদেরকে বলা হত লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ (কোন ইলাহ নেই, আল্লাহ ছাড়া) তখন তারা অহংকার করতো আর বলতো আমরা কি এক পাগল কবির কথায় আমাদের ইলাহদেরকে বর্জন করবো? (সফফাত ৩৫-৩৬)।
৪) আল ইনক্বিয়াত (আত্মসমর্পন) : এই কালেমার মাধ্যমে কালেমাতুত তাওহীদের (মিথ্যা ইলাহগুলিকে বর্জন করে এক সত্য ইলাহ আল্লাহর একত্ববাদের) সামনে বাহ্যিক অংগ প্রত্যংগের দ্বারা আত্মসমর্পণ করা। এটা হল আমালুল জাওয়ারেহ। অর্থাৎ বাহ্যিক অঙ্গপ্রত্যঙ্গের আমল।
আল্লাহ তা আলা বলেন,
যে সৎকর্মপরায়ণ হয়ে আল্লাহর সামনে আত্মসমর্পণ করলো, সে যেন মজবুত হাতল আঁকড়ে ধরলো। (লুকমান ২২)।
৫) আস সিদক (সত্যবাদিতা) : অন্তরের মাধ্যমে একে সত্যায়ন করা,সত্য বলে বিশ্বাস করা। সত্য দিলে, সত্য মন নিয়ে, অন্তর থেকে সত্যায়ন করে এই কালেমাতুত তাওহীদের স্বাক্ষ্য দেওয়া।
আল্লাহ বলেন,
যখন মুনাফিকরা আপনার নিকট আসে তখন তারা বলে আমরা স্বাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নিশ্চই আপনি আল্লাহর রসূল। নি:সন্দেহে আল্লাহ তো জানেনই যে আপনি তার রসূল। তবে আল্লাহ স্বাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, অবশ্যই মুনাফিকরা মিথ্যা। (মুনাফিকুন : ১)।
রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যে ব্যক্তি সত্য দিলে একথার স্বাক্ষ্য দিবে যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই, এবং মুহাম্মাদ আল্লাহর রসূল আল্লাহ তার জন্য জাহান্নামকে হারাম করে দিবেন। (সহীহ বুখারী ১ম খন্ড, ৫৯ পৃষ্ঠা, হাদীস নং ১২৮)।
৬) আল ইখলাস (আন্তরিকভাবে) : একনিষ্ঠভাবে শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে এই কালেমা পাঠ করা, অন্য কোন উদ্দেশ্যে নয়।
আল্লাহ বলেন,
আল্লাহকে ডাক তার আনুগত্যে একনিষ্ঠ হয়ে যদিও কাফেররা তা অপছন্দ করে। (মুমিন : ১৪)।
রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আল্লাহ তা আলা ঐ ব্যক্তির উপর জাহান্নামকে হারাম করে দিয়েছেন যে আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ স্বীকার করে নিয়েছে। (বুখারী,মুসলিম)।
৭) আল মুহাব্বাত (ভালবাসা) : এই কালেমার মর্ম ও এই কালেমা অবলম্বনকারীদের প্রতি মহব্বত পোষণ করা।
আল্লাহ তা আলা বলেন,
আর মানুষের মধ্যে (এমন লোকও) আছে যারা আল্লাহকে ছাড়া অন্যকে তার সমকক্ষ হিসেবে গ্রহণ করে, তারা তাদেরকে আল্লাহর মত করে ভালবাসে। আর যারা ঈমান আনে তারা আল্লাহকে সবচেয়ে বেশী ভালবাসে...। (সূরা বাকারাহ ২ : ১৬৫)।
রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তিনটি গুণ এমন রয়েছে যে কোন ব্যক্তির মাঝে যদি গুণগুলো বিদ্যমান থাকে তাহলে অবশ্যই সে ঈমানের স্বাদ আস্বাদন করবে। (গুণগুলো হল
তার নিকট আল্লাহ ও তার রসূল সবকিছুর চেয়ে বেশী প্রিয় হওয়া, কাউকে ভালবাসলে আল্লাহর জন্যই ভালবাসা এবং সে কুফরিতে ফিরে যাওয়াকে এমনভাবে ঘৃণা, অপছন্দ করবে যেমনটা সে আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়াকে অপছন্দ করে। (বুখারি,মুসলিম)।
Comment