﷽
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি আমাদেরকে ক্ষুদ্র প্রচেষ্টার মাধ্যমে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু ইলম অর্জন করার তৌফিক দান করেছেন।
আজকে আমরা জানবো এই কালেমাতুত তাওহীদের হক আদায় করলে তা আমাদেরকে কি বিনিময় দেবে।
গত পর্বে কালেমাতুত তাওহীদের শর্তাবলী আলোচনা করতে গিয়ে আমরা এর বেশ কিছু ফযীলত জেনেছি। তবে আজকে আমরা কালেমাতুত তাওহীদের বিস্তারিত ফযীলত নিয়ে আলোচনা করবো। যাতে করে আমাদের অন্তরে এর প্রতি আরো বেশী আগ্রহ পয়দা হয়।
১) সফলতা ও বিজয় অর্জন : মক্কার মুশরিকদেরকে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন প্রকাশ্যে সাফা পাহাড়ের উপর থেকে দ্বীনের দ্বাওয়াহ দিয়েছিলেন, তখন তিনি বলেছিলেন "যদি তোমরা একটি কথা (একটি কালেমা) মানতে পার, তাহলে তোমরা সমগ্র আরবের মালিক হয়ে যাবে। আর আনারব বিশ্ব তোমাদের দ্বীন গ্রহণ করবে। অথবা যারা তোমাদের দ্বীন গ্রহণ করবে না তারা তোমাদেরকে জিযিয়া (কর) দিয়ে থাকবে।
সবার মনে একই প্রশ্ন কি সেই কথা যেটা মানলে গোটা আরব আমাদের হাতে চলে আসবে, অনারব বিশ্ব আমাদের দ্বীন গ্রহণ করবে অথবা জিযিয়া দিয়ে থাকবে। সেই মহামূল্যবান কথাটা কি? সকলেই তখন পাগলের মত উৎসুক হয়ে সেই কথা (কালেমা) মানার জন্য একমত হয়ে গেল।
রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তখন বলে উঠলেন, "ওহে লোক সকল তোমরা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বল, তাহলেই তোমরা সফল (বিজয়ী) হতে পারবে। তোমরা শুধুমাত্র এক আল্লাহর ইবাদাত করো, আর আল্লাহ ছাড়া তোমরা যা কিছুর ইবাদাত কর সে সমস্ত কিছুকে বর্জন কর"।
২) আল ক্বওলুছ ছাবিত (শ্বাশ্বত/সুদৃঢ় বাণী) :
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা আলা বলেন,
يثبّت الله الذين أٓمنوا بلقول الثابت في الحياة الدنيا وفي الاخرة ويضلّ الله الظّالمين ويفعل الله ما شاء
"যারা ঈমান আনে তাদেরকে আল্লাহ সুদৃঢ় রাখবেন 'ক্বওলুছ ছাবিত' (শ্বাশ্বত ও সুপ্রতিষ্ঠিত বাণী)র মাধ্যমে দুনিয়া ও আখিরাতের মাধ্যমে এবং জালিমদের গোমরাহীতে রাখবেন। আর আল্লাহ যা ইচ্ছা তাই করতে সক্ষম"। (ইব্রাহীম : ২৭)।
ইমাম বাগভী (রহঃ) বলেন, هي قول لا إله إلا الله অর্থাৎ আল ক্বওলুছ ছাবিত (শ্বাশ্বত ও সুপ্রতিষ্ঠিত বাণী) হল লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ।
৩) কালিমাতুত তাক্বওয়া :
فأنزل الله سکينته وألزمهم کلمت التقوی وکانو أحقّ بها وأهلها وکان الله بکلّ شيء عليما
অত:পর আল্লাহ তার রসূলের উপর ও মুমিনের উপর স্বীয় প্রশান্তি (সাকীনাহ) নাযিল করলেন এবং তাদের জন্য কালিমাতুত তাক্বওয়া (তাকওয়ার বাণী) অপরিহার্য করে দিলেন। আর তারাই ছিল এর সর্বাধিক উপযুক্ত ও যোগ্য উত্তরাধিকারী। আর আল্লাহ সব বিষয়ে সম্যক অবগত। (ফাতহ : ২৬)।
আল্লামা ইমাম শাওকানী (রহঃ) এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, وهي لا إله إلا الله کذا قال الجمهور কালিমাতুত তাওহীদ হল লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ। (ফাতহুল ক্বাদীর ৫ম খন্ড, ৭৮ পৃষ্ঠা)।
৪) জান্নাতে প্রবেশ :
عن عثمنان قال قال رسول الله صلّی الله عليه وسلّم من مات وهو يعلم أنّه لا إله إلا الله دخل الجنّه
উসমান (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যে ব্যক্তি এ কথা জানা অবস্থায় মারা যাবে যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।"। (সহীহ মুসলিম হাদীস নং ৩৮)।
عن معاذبن جبل قال قال رسول الله صلّ الله عليه وسلّم من کان أٓخر کلامه لا إله إلله دخل الجنّه
মুয়ায ইবনু জাবাল (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, "যার সর্বশেষ বাণী হবে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ সে জান্নাতে প্রবেশ করবে"। আবু দাঊদ হাদীস নং ২৭০৯, মুস্তাদরক লিল হাকীম ১ম খন্ড, ৫০৩ পৃষ্ঠা, তিনি হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। ইমাম যাহাবী একে সমর্থন করেছেন)।
৫) গুনাহ মাফের কারণ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নেক আমল :
عن أبی ذر قال قلت يا رسول الله أوصني قال إذا عملت سيئة فأتبعها حسنة تمحها قال قلت يا رسول الله أمن الحسنات
لا إله إلا الله؟ قال هي أفض الحسنات
আবু যর গিফারী (রহঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমাকে উপদেশ দিন। রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, যখনই তুমি কোন বদ আমল করবে, তখনই একটি নেক আমল করো। তাহলে তা তোমার বদ আমলকে মুছে দিবে।
আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ কি নেক আমলের অন্তর্ভূক্ত?
রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তা হল সর্বশ্রেষ্ঠ নেক আমল। (মুসনাদে আহমাদ হাদীস নং ২১৪৮৭)।
৬) সর্বশ্রেষ্ঠ জিকির :
عن جابر بن عبد الله يقول سمعت رسول الله صلّی الله عليه وسلّم يقول أفضل أذّکر لا إله إلا ألله وأفضل الدعاءالحمد لله
জাবির বিন আব্দুল্লাহ থেকে বর্ণিত আমি রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছি সর্বশ্রেষ্ঠ জিকির লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এবং সর্বশ্রেষ্ঠ দুআ আলহামদুলিল্লাহ। (তিরমিযী হাদীস নং ৩৩০৫, ইবনু মাজাহ হাদীস নং ৩৭৯১, ইবনু হিব্বান হাদীস নং ৭৪৬)।
ওয়াস সালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারকাতুহ।
চলবে.... ইনশা আল্লাহ....
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি আমাদেরকে ক্ষুদ্র প্রচেষ্টার মাধ্যমে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বিষয়ে বিস্তারিত কিছু ইলম অর্জন করার তৌফিক দান করেছেন।
আজকে আমরা জানবো এই কালেমাতুত তাওহীদের হক আদায় করলে তা আমাদেরকে কি বিনিময় দেবে।
গত পর্বে কালেমাতুত তাওহীদের শর্তাবলী আলোচনা করতে গিয়ে আমরা এর বেশ কিছু ফযীলত জেনেছি। তবে আজকে আমরা কালেমাতুত তাওহীদের বিস্তারিত ফযীলত নিয়ে আলোচনা করবো। যাতে করে আমাদের অন্তরে এর প্রতি আরো বেশী আগ্রহ পয়দা হয়।
১) সফলতা ও বিজয় অর্জন : মক্কার মুশরিকদেরকে রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন প্রকাশ্যে সাফা পাহাড়ের উপর থেকে দ্বীনের দ্বাওয়াহ দিয়েছিলেন, তখন তিনি বলেছিলেন "যদি তোমরা একটি কথা (একটি কালেমা) মানতে পার, তাহলে তোমরা সমগ্র আরবের মালিক হয়ে যাবে। আর আনারব বিশ্ব তোমাদের দ্বীন গ্রহণ করবে। অথবা যারা তোমাদের দ্বীন গ্রহণ করবে না তারা তোমাদেরকে জিযিয়া (কর) দিয়ে থাকবে।
সবার মনে একই প্রশ্ন কি সেই কথা যেটা মানলে গোটা আরব আমাদের হাতে চলে আসবে, অনারব বিশ্ব আমাদের দ্বীন গ্রহণ করবে অথবা জিযিয়া দিয়ে থাকবে। সেই মহামূল্যবান কথাটা কি? সকলেই তখন পাগলের মত উৎসুক হয়ে সেই কথা (কালেমা) মানার জন্য একমত হয়ে গেল।
রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তখন বলে উঠলেন, "ওহে লোক সকল তোমরা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ বল, তাহলেই তোমরা সফল (বিজয়ী) হতে পারবে। তোমরা শুধুমাত্র এক আল্লাহর ইবাদাত করো, আর আল্লাহ ছাড়া তোমরা যা কিছুর ইবাদাত কর সে সমস্ত কিছুকে বর্জন কর"।
২) আল ক্বওলুছ ছাবিত (শ্বাশ্বত/সুদৃঢ় বাণী) :
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা আলা বলেন,
يثبّت الله الذين أٓمنوا بلقول الثابت في الحياة الدنيا وفي الاخرة ويضلّ الله الظّالمين ويفعل الله ما شاء
"যারা ঈমান আনে তাদেরকে আল্লাহ সুদৃঢ় রাখবেন 'ক্বওলুছ ছাবিত' (শ্বাশ্বত ও সুপ্রতিষ্ঠিত বাণী)র মাধ্যমে দুনিয়া ও আখিরাতের মাধ্যমে এবং জালিমদের গোমরাহীতে রাখবেন। আর আল্লাহ যা ইচ্ছা তাই করতে সক্ষম"। (ইব্রাহীম : ২৭)।
ইমাম বাগভী (রহঃ) বলেন, هي قول لا إله إلا الله অর্থাৎ আল ক্বওলুছ ছাবিত (শ্বাশ্বত ও সুপ্রতিষ্ঠিত বাণী) হল লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ।
৩) কালিমাতুত তাক্বওয়া :
فأنزل الله سکينته وألزمهم کلمت التقوی وکانو أحقّ بها وأهلها وکان الله بکلّ شيء عليما
অত:পর আল্লাহ তার রসূলের উপর ও মুমিনের উপর স্বীয় প্রশান্তি (সাকীনাহ) নাযিল করলেন এবং তাদের জন্য কালিমাতুত তাক্বওয়া (তাকওয়ার বাণী) অপরিহার্য করে দিলেন। আর তারাই ছিল এর সর্বাধিক উপযুক্ত ও যোগ্য উত্তরাধিকারী। আর আল্লাহ সব বিষয়ে সম্যক অবগত। (ফাতহ : ২৬)।
আল্লামা ইমাম শাওকানী (রহঃ) এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, وهي لا إله إلا الله کذا قال الجمهور কালিমাতুত তাওহীদ হল লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ। (ফাতহুল ক্বাদীর ৫ম খন্ড, ৭৮ পৃষ্ঠা)।
৪) জান্নাতে প্রবেশ :
عن عثمنان قال قال رسول الله صلّی الله عليه وسلّم من مات وهو يعلم أنّه لا إله إلا الله دخل الجنّه
উসমান (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যে ব্যক্তি এ কথা জানা অবস্থায় মারা যাবে যে, আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।"। (সহীহ মুসলিম হাদীস নং ৩৮)।
عن معاذبن جبل قال قال رسول الله صلّ الله عليه وسلّم من کان أٓخر کلامه لا إله إلله دخل الجنّه
মুয়ায ইবনু জাবাল (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, "যার সর্বশেষ বাণী হবে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ সে জান্নাতে প্রবেশ করবে"। আবু দাঊদ হাদীস নং ২৭০৯, মুস্তাদরক লিল হাকীম ১ম খন্ড, ৫০৩ পৃষ্ঠা, তিনি হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন। ইমাম যাহাবী একে সমর্থন করেছেন)।
৫) গুনাহ মাফের কারণ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নেক আমল :
عن أبی ذر قال قلت يا رسول الله أوصني قال إذا عملت سيئة فأتبعها حسنة تمحها قال قلت يا رسول الله أمن الحسنات
لا إله إلا الله؟ قال هي أفض الحسنات
আবু যর গিফারী (রহঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! আমাকে উপদেশ দিন। রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেন, যখনই তুমি কোন বদ আমল করবে, তখনই একটি নেক আমল করো। তাহলে তা তোমার বদ আমলকে মুছে দিবে।
আমি বললাম, হে আল্লাহর রসূল! লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ কি নেক আমলের অন্তর্ভূক্ত?
রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, তা হল সর্বশ্রেষ্ঠ নেক আমল। (মুসনাদে আহমাদ হাদীস নং ২১৪৮৭)।
৬) সর্বশ্রেষ্ঠ জিকির :
عن جابر بن عبد الله يقول سمعت رسول الله صلّی الله عليه وسلّم يقول أفضل أذّکر لا إله إلا ألله وأفضل الدعاءالحمد لله
জাবির বিন আব্দুল্লাহ থেকে বর্ণিত আমি রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলতে শুনেছি সর্বশ্রেষ্ঠ জিকির লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এবং সর্বশ্রেষ্ঠ দুআ আলহামদুলিল্লাহ। (তিরমিযী হাদীস নং ৩৩০৫, ইবনু মাজাহ হাদীস নং ৩৭৯১, ইবনু হিব্বান হাদীস নং ৭৪৬)।
ওয়াস সালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারকাতুহ।
চলবে.... ইনশা আল্লাহ....