মুরজিয়া ও কুফর’-শায়খ সুলাইমান আল-উলওয়ান
‘
আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ এ ব্যপারে একমত যে কুফর হতে পারে কথার মাধ্যমে, যেমন দ্বীনের কোন বিষয়কে স্পষ্ট উপহাস (ইস্তিহযা) করা। এবং কুফর হতে পারে কোন কর্মের মাধ্যমে, যেমন কোন মূর্তি অথবা চন্দ্র-সূর্য ইত্যাদির জন্য সিজদায় অবনত হওয়া, অথবা আল্লাহ ব্যতিত অন্য কারো নামে পশু জবাই করা।
কোন ব্যক্তি থেকে কুফর এর কিছু সংঘটিত হওয়ার কুফর হবার ব্যাপারে কিতাবুল্লাহ ও সুন্নাহ থেকে প্রমাণসমূহ খুবই স্পষ্ট। এই কুফর কেবলমাত্র কোন কথা অথবা কোন কর্মের মাধ্যমে হতে পারে, এর সাথে ইচ্ছাকৃত অস্বীকার (জুহদ) অথবা হালাল করা (ইস্তিহলাল) যুক্ত হওয়া ব্যাতীতই। কথা ও কর্মের কুফরকে শুধুমাত্র ইচ্ছাকৃত অস্বীকার (জুহদ) অথবা হালাল করা (ইস্তিহলাল) এর সাথে সীমাবদ্ধ করে দেয়া সহীহ নয়। কেননা সাহাবায়ে কিরাম রাদিয়াল্লাহু আনহুম, তাবেয়ীন আজমাঈনগ অথবা ইমামগণের কেউ এমন বলেননি।
আল্লাহ বলেনঃ
আর যদি আপনি তাদের কাছে জিজ্ঞেস করেন, তবে তারা বলবে, আমরা তো কথার কথা বলছিলাম এবং কৌতুক করছিলাম। আপনি বলুন, তোমরা কি আল্লাহর সাথে, তাঁর হুকুম-আহকামের সাথে এবং তাঁর রাসুলের সাথে ঠাট্টা করছিলে? ছলনা করো না, তোমরা যে কাফের হয়ে গেছ ঈমান প্রকাশ করার পর। তোমাদের মধ্যে কোন কোন লোককে যদি আমি ক্ষমা করে দেইও, তবে কিছু লোককে আযাবও দেবো। কারণ, তারা ছিল গুনাহগার। (অবিশ্বাসী কাফির, মুশরিক, পাপী, অপরাধী ইত্যাদি) (-সূরা আত তাওবাহঃ ৬৫)
এবং এখানে কুফরের কারণ ছিলো ‘কথা’ যা তারা শুধু উচ্চারণ করেছিলো।
আর আল্লাহ বলেনঃ
তারা আল্লাহর নামে কসম খেয়ে বলে যে, আমরা (কোন খারাপ কিছু) বলিনি, অথচ নিঃসন্দেহে তারা কুফরী বাক্য বলেছে এবং মুসলমান হবার পর কাফির হয়েছে। তারা কামনা করছিলো এমন বস্তুর যা তারা প্রাপ্ত হয়নি। আর এসব তারই পরিণতি ছিল যে, আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল তাদেরকে সম্পদশালী করে দিয়েছিলেন নিজের অনুগ্রহের মাধ্যমে। বস্তুতঃ এরা যদি তাওবা করে নেয়, তবে তাদের জন্য মঙ্গল, আর যদি তা না মানে, তবে তাদেরকে আল্লাহ তাআলা দুনিয়াতে ও আখেরাতে বেদনাদায়ক আযাব দিবেন। অতএব বিশ্বচরাচরে তাদের জন্য কোন সাহায্যকারী-সমর্থক নেই। (সূরা আত তাওবাহঃ ৭৪)
কাজেই, চুড়ান্ত কথা হল, যে কেউ পরিস্কারভাবে এমন কিছু বলে, বা এমন কাজ করে যা কুফর, সে কুফরী করেছে। যদি না তাকফিরের কোন প্রতিবন্ধক যেমন বাধ্য-বাধকতা (ইকরাহ), ব্যখ্যা (তাবীল), দুর্ঘটনাজনিত ভুল (খাত্বা) যেমন জিহ্বার স্খলন অথবা অজ্ঞতার কারনে ভুল বলে ফেলা ইত্যাদির মতো বিবেচনাযোগ্য কোন বিষয় তার মাঝে পাওয়া যায়।
এবং সুস্পষ্ট কুফর এর মধ্যে একটি হল সম্পূর্ণভাবে আমাল এর শ্রেণীকে (জিনস আল-আমাল) পরিত্যাগ করা। অন্তরের আমলের সাথে যুক্ত করা ব্যাতীতই এটি সুস্পষ্ট কুফর। কারণ সম্পূর্ণভাবে আমলের শ্রেণী পরিত্যাগ করা নিজেই বড় কুফর (কুফর আকবর)। আর যা আবশ্যিক তার অনুপস্থিতিকে আমরা অন্তরের অবস্থার উপর প্রয়োজনীয় প্রমাণ হিসাবে ব্যবহার করি, তবে হুকুম লাগানোর জন্য অন্তরের অবস্থাকে শর্ত করা ব্যতীত। আর এটি কিতাবুল্লাহ ও সুন্নাহ দ্বারা সুস্পষ্ট যে, বাহ্যিক আমলের উপরই হুকুম লাগানো হবে, তাঁর অন্তরে কী লুকায়িত রয়েছে এটার উপর নয়, কারণ এটি (অন্তরের অবস্থা) একমাত্র গায়েবের মালিক আল্লাহ তা’আলাই জানেন, অন্য কেউ নয়।
হাফিয ইবনু রজব আল হাম্বলী রহ. ফতহুল বারী ১/২৩ তে সুফিয়ান ইবনু উয়াইনা থেকে বর্ণনা করেনঃ তিনি বলেছেন,
“মুরজিয়ারা বলে ফরযগুলোক বর্জন করা হল নিষিদ্ধ কাজে লিপ্ত হওয়ার মত গুনাহ। কিন্তু এ দুটি এক রকম নয়, কেননা, হারাম কাজকে হারাম মনে করে (অর্থাৎ ইস্তিহলাল না করে) ইচ্ছাকৃতভাবে তাতে লিপ্ত হওয়া একটি অবাধ্যতা। কিন্তু কোন অজুহাত ও অজ্ঞতা ব্যতিত ফরযগুলোকে বর্জন করা কুফর”।
আর এর প্রমান হল হযরত আদম (আ.) ও ইবলিশ এর ঘটনা এবং ইয়াহুদী আলিমদের এই বিষয়টি যে, নবীজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর ব্যাপারে তারা মুখে স্বীকার করতো যে এখন নবীকে প্রেরণ করা হয়েছে, কিন্তু তারা নবীর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর আনীত বিধান ও শরীয়াহ অনুযায়ী আমল করতো না।
হারব বর্ণনা করেছেন ইসহাক থেকে, তিনি বলেছেনঃ
“মুরজিয়ারা অব্যাহতভাবে চরম পর্যায়ে যেতে থাকলো এবং এক পর্যায়ে বললো, ‘যে ব্যক্তি নির্ধারিত সালাত, রমযানের রোযা, যাকাত এবং হজ্ব এবং অন্যান্য সকল ফরজকে অস্বীকার (জুহদ) করা ব্যতিত ছেড়ে দেয়, আমরা তাদেরকে তাকফীর করিনা। তাঁর হিসাব আল্লাহর কাছে, কারণ সে ঐসব ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত যারা এগুলোর ফরজ হওয়াকে স্বীকার করেছে।’। সুতরাং এরা সন্দেহাতীতভাবে তারাই; অর্থাৎ মুরজিয়া”।
আল-খাল্লাল ‘আস সুন্নাহ’ ৩/৫৮৬ এ ‘উবাইদুল্লাহ ইবনু হাম্বল থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন,
“আবি হাম্বল ইবনে ইসহাক ইবনে হাম্বল আমার কাছে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, ‘আল-হুমাইদী বলেন, ‘আমাকে এটা জানানো হয়েছে যে, এমন অনেক মানুষ রয়েছে যারা বলে, ‘যে ব্যক্তি সালাত, যাকাত এবং সিয়াম, হজ্ব এগুলোকে স্বীকার করে নেয় কিন্তু এগুলোর কোনটা মৃত্যু পর্যন্ত পালন করে না, অথবা পেছন ফিরে, ঠেস দিয়ে কেবলার বিপরীত দিক হয়ে মৃত্যু পর্যন্ত সালাত আদায় করে, সে একজন মুমিন বলে বিবেচিত হবে, যতক্ষণ পর্যন্ত সে এসবের ফরজ হওয়াকে অস্বীকার করবে…। সুতরাং আমি বলি “এটা আল্লাহ, তাঁর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সুন্নাহ এবং মুসলিমদের আমলকে সুস্পষ্ট অস্বীকার করা”।
আল্লাহ বলেছেনঃ “হুনাফা; আর তারা সালাত আদায় করে যাকাত দেয় এবং এটাই সত্যিকারের দ্বীন”
এবং হাম্বল বলেছেন “আমি আবু আব্দুল্লাহকে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি এমন বলে সে আল্লাহর উপর কুফর করেছে, তাঁর আদেশ অস্বীকার করেছে এবং অস্বীকার করেছে যা সহ তাঁর রাসূল প্রেরিত হয়েছেন।
আর ইমাম ইবনে বাত্তাহ বলেছেন, “সুতরাং যে কেউ যা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা তাঁর কিতাবে আদেশ দিয়েছেন অথবা তাঁর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সুন্নাহতে আদেশ দিয়েছেন এমন বাধ্যতামূলক কাজকে (আল ফারাইয) ছেড়ে দেবে, ইচ্ছাকৃতভ অস্বীকার (জুহুদ) অথবা অন্তর থেকে অবিশ্বাস (তাকসিব) –এর কারণে, তাহলে সে স্পষ্টতই একজন অবিশ্বাসী (কাফির)। আল্লাহ এবং শেষ দিবসে বিশ্বাস রাখে এমন কোন বুদ্ধিমান ব্যক্তিই এতে সন্দেহ করতে পারেনা। আর যে ব্যক্তি এগুলোকে বিশ্বাস করে এবং মুখে এর স্বীকৃতি দেয় কিন্তু সম্পূর্ণভাবে এগুলো ছেড়ে দেয়, অবহেলাভরে, খেলাচ্ছলে অথবা মুরজিয়াদের মত মাযহাবে বিশ্বাসী হয়ে, তাহলে সে একজন ঈমান ত্যাগকারী। স্বল্প কিংবা বেশি, ঈমানের কোন অংশই তাঁর অন্তরে বিদ্যমান নেই। এবং সে ঐরকম মুনাফিকদের অন্তর্ভুক্ত, যারা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে নিফাকীতে লিপ্ত হয়েছিল। কাজেই কুরআন তাদের বিবরণ এবং তাদের জন্য যা জমা করা হয়েছে তা প্রকাশ করে দিয়েছে এবং এটাও বলে দিয়েছে যে তাদের স্থান হবে জাহান্নামের সর্ব নিম্ন স্তরে। আমরা আল্লাহর কাছে এ সকল মুরজিয়াদের চিন্তাধারা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করি”। [আল-ইবানাহ-২/৭৬৪]
পূর্ববর্তী ইমামগণ মুরজিয়াদের সম্পর্কে সতর্ক করে গিয়েছেন এবং তাদের বক্তব্যের ত্রুটি-বিচ্যুতি, তাদের বিদ’আতের বিপদ সম্পর্কে স্পষ্ট করে গিয়েছেন।
ইমাম আয যুহরী বলেন, “ইসলামের মধ্যে এর (ইরজার) চেয়ে বেশি ক্ষতিকর আর কোন বিদ’আতই প্রকাশ পায়নি, অর্থাৎ ‘ইরজা’”। [আল-ইবানাহ-২/৮৮৫]
এবং ইমাম আওযায়ী বলেন, “ইয়াহয়া এবং ক্বাতাদাহ বলতেন, “খাহেশাতের মধ্যে উম্মাহর উপর আর কোনকিছু তাদের কাছে ইরজার চেয়ে অধিক ভীতিকর ছিল না।” [আল-ইবানাহ ২/৮৮৫-৮৮৬]
আর শুরাইক বলেন, “তারা মানুষের মধ্যে নিকৃষ্ট। চরমপন্থীরা শীয়া’রা (রা’ওয়াফিয) মন্দে যথেষ্ট, কিন্তু মুরজিয়ার মিথ্যারোপ করে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা সম্পর্কে”। [আস-সুন্নাহ ১/৩১২]
শাইখ সুলাইমান বিন নাসির আল-উলওয়ানের
‘নিঃসন্দেহে আল্লাহর বিজয় আসন্ন’ (আলা ইন্না নাসরুল্লাহি কারিব) বই থেকে নেয়া ।
‘
আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাআহ এ ব্যপারে একমত যে কুফর হতে পারে কথার মাধ্যমে, যেমন দ্বীনের কোন বিষয়কে স্পষ্ট উপহাস (ইস্তিহযা) করা। এবং কুফর হতে পারে কোন কর্মের মাধ্যমে, যেমন কোন মূর্তি অথবা চন্দ্র-সূর্য ইত্যাদির জন্য সিজদায় অবনত হওয়া, অথবা আল্লাহ ব্যতিত অন্য কারো নামে পশু জবাই করা।
কোন ব্যক্তি থেকে কুফর এর কিছু সংঘটিত হওয়ার কুফর হবার ব্যাপারে কিতাবুল্লাহ ও সুন্নাহ থেকে প্রমাণসমূহ খুবই স্পষ্ট। এই কুফর কেবলমাত্র কোন কথা অথবা কোন কর্মের মাধ্যমে হতে পারে, এর সাথে ইচ্ছাকৃত অস্বীকার (জুহদ) অথবা হালাল করা (ইস্তিহলাল) যুক্ত হওয়া ব্যাতীতই। কথা ও কর্মের কুফরকে শুধুমাত্র ইচ্ছাকৃত অস্বীকার (জুহদ) অথবা হালাল করা (ইস্তিহলাল) এর সাথে সীমাবদ্ধ করে দেয়া সহীহ নয়। কেননা সাহাবায়ে কিরাম রাদিয়াল্লাহু আনহুম, তাবেয়ীন আজমাঈনগ অথবা ইমামগণের কেউ এমন বলেননি।
আল্লাহ বলেনঃ
আর যদি আপনি তাদের কাছে জিজ্ঞেস করেন, তবে তারা বলবে, আমরা তো কথার কথা বলছিলাম এবং কৌতুক করছিলাম। আপনি বলুন, তোমরা কি আল্লাহর সাথে, তাঁর হুকুম-আহকামের সাথে এবং তাঁর রাসুলের সাথে ঠাট্টা করছিলে? ছলনা করো না, তোমরা যে কাফের হয়ে গেছ ঈমান প্রকাশ করার পর। তোমাদের মধ্যে কোন কোন লোককে যদি আমি ক্ষমা করে দেইও, তবে কিছু লোককে আযাবও দেবো। কারণ, তারা ছিল গুনাহগার। (অবিশ্বাসী কাফির, মুশরিক, পাপী, অপরাধী ইত্যাদি) (-সূরা আত তাওবাহঃ ৬৫)
এবং এখানে কুফরের কারণ ছিলো ‘কথা’ যা তারা শুধু উচ্চারণ করেছিলো।
আর আল্লাহ বলেনঃ
তারা আল্লাহর নামে কসম খেয়ে বলে যে, আমরা (কোন খারাপ কিছু) বলিনি, অথচ নিঃসন্দেহে তারা কুফরী বাক্য বলেছে এবং মুসলমান হবার পর কাফির হয়েছে। তারা কামনা করছিলো এমন বস্তুর যা তারা প্রাপ্ত হয়নি। আর এসব তারই পরিণতি ছিল যে, আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল তাদেরকে সম্পদশালী করে দিয়েছিলেন নিজের অনুগ্রহের মাধ্যমে। বস্তুতঃ এরা যদি তাওবা করে নেয়, তবে তাদের জন্য মঙ্গল, আর যদি তা না মানে, তবে তাদেরকে আল্লাহ তাআলা দুনিয়াতে ও আখেরাতে বেদনাদায়ক আযাব দিবেন। অতএব বিশ্বচরাচরে তাদের জন্য কোন সাহায্যকারী-সমর্থক নেই। (সূরা আত তাওবাহঃ ৭৪)
কাজেই, চুড়ান্ত কথা হল, যে কেউ পরিস্কারভাবে এমন কিছু বলে, বা এমন কাজ করে যা কুফর, সে কুফরী করেছে। যদি না তাকফিরের কোন প্রতিবন্ধক যেমন বাধ্য-বাধকতা (ইকরাহ), ব্যখ্যা (তাবীল), দুর্ঘটনাজনিত ভুল (খাত্বা) যেমন জিহ্বার স্খলন অথবা অজ্ঞতার কারনে ভুল বলে ফেলা ইত্যাদির মতো বিবেচনাযোগ্য কোন বিষয় তার মাঝে পাওয়া যায়।
এবং সুস্পষ্ট কুফর এর মধ্যে একটি হল সম্পূর্ণভাবে আমাল এর শ্রেণীকে (জিনস আল-আমাল) পরিত্যাগ করা। অন্তরের আমলের সাথে যুক্ত করা ব্যাতীতই এটি সুস্পষ্ট কুফর। কারণ সম্পূর্ণভাবে আমলের শ্রেণী পরিত্যাগ করা নিজেই বড় কুফর (কুফর আকবর)। আর যা আবশ্যিক তার অনুপস্থিতিকে আমরা অন্তরের অবস্থার উপর প্রয়োজনীয় প্রমাণ হিসাবে ব্যবহার করি, তবে হুকুম লাগানোর জন্য অন্তরের অবস্থাকে শর্ত করা ব্যতীত। আর এটি কিতাবুল্লাহ ও সুন্নাহ দ্বারা সুস্পষ্ট যে, বাহ্যিক আমলের উপরই হুকুম লাগানো হবে, তাঁর অন্তরে কী লুকায়িত রয়েছে এটার উপর নয়, কারণ এটি (অন্তরের অবস্থা) একমাত্র গায়েবের মালিক আল্লাহ তা’আলাই জানেন, অন্য কেউ নয়।
হাফিয ইবনু রজব আল হাম্বলী রহ. ফতহুল বারী ১/২৩ তে সুফিয়ান ইবনু উয়াইনা থেকে বর্ণনা করেনঃ তিনি বলেছেন,
“মুরজিয়ারা বলে ফরযগুলোক বর্জন করা হল নিষিদ্ধ কাজে লিপ্ত হওয়ার মত গুনাহ। কিন্তু এ দুটি এক রকম নয়, কেননা, হারাম কাজকে হারাম মনে করে (অর্থাৎ ইস্তিহলাল না করে) ইচ্ছাকৃতভাবে তাতে লিপ্ত হওয়া একটি অবাধ্যতা। কিন্তু কোন অজুহাত ও অজ্ঞতা ব্যতিত ফরযগুলোকে বর্জন করা কুফর”।
আর এর প্রমান হল হযরত আদম (আ.) ও ইবলিশ এর ঘটনা এবং ইয়াহুদী আলিমদের এই বিষয়টি যে, নবীজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর ব্যাপারে তারা মুখে স্বীকার করতো যে এখন নবীকে প্রেরণ করা হয়েছে, কিন্তু তারা নবীর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর আনীত বিধান ও শরীয়াহ অনুযায়ী আমল করতো না।
হারব বর্ণনা করেছেন ইসহাক থেকে, তিনি বলেছেনঃ
“মুরজিয়ারা অব্যাহতভাবে চরম পর্যায়ে যেতে থাকলো এবং এক পর্যায়ে বললো, ‘যে ব্যক্তি নির্ধারিত সালাত, রমযানের রোযা, যাকাত এবং হজ্ব এবং অন্যান্য সকল ফরজকে অস্বীকার (জুহদ) করা ব্যতিত ছেড়ে দেয়, আমরা তাদেরকে তাকফীর করিনা। তাঁর হিসাব আল্লাহর কাছে, কারণ সে ঐসব ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত যারা এগুলোর ফরজ হওয়াকে স্বীকার করেছে।’। সুতরাং এরা সন্দেহাতীতভাবে তারাই; অর্থাৎ মুরজিয়া”।
আল-খাল্লাল ‘আস সুন্নাহ’ ৩/৫৮৬ এ ‘উবাইদুল্লাহ ইবনু হাম্বল থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেছেন,
“আবি হাম্বল ইবনে ইসহাক ইবনে হাম্বল আমার কাছে বর্ণনা করেছেন, তিনি বলেন, ‘আল-হুমাইদী বলেন, ‘আমাকে এটা জানানো হয়েছে যে, এমন অনেক মানুষ রয়েছে যারা বলে, ‘যে ব্যক্তি সালাত, যাকাত এবং সিয়াম, হজ্ব এগুলোকে স্বীকার করে নেয় কিন্তু এগুলোর কোনটা মৃত্যু পর্যন্ত পালন করে না, অথবা পেছন ফিরে, ঠেস দিয়ে কেবলার বিপরীত দিক হয়ে মৃত্যু পর্যন্ত সালাত আদায় করে, সে একজন মুমিন বলে বিবেচিত হবে, যতক্ষণ পর্যন্ত সে এসবের ফরজ হওয়াকে অস্বীকার করবে…। সুতরাং আমি বলি “এটা আল্লাহ, তাঁর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর সুন্নাহ এবং মুসলিমদের আমলকে সুস্পষ্ট অস্বীকার করা”।
আল্লাহ বলেছেনঃ “হুনাফা; আর তারা সালাত আদায় করে যাকাত দেয় এবং এটাই সত্যিকারের দ্বীন”
এবং হাম্বল বলেছেন “আমি আবু আব্দুল্লাহকে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি এমন বলে সে আল্লাহর উপর কুফর করেছে, তাঁর আদেশ অস্বীকার করেছে এবং অস্বীকার করেছে যা সহ তাঁর রাসূল প্রেরিত হয়েছেন।
আর ইমাম ইবনে বাত্তাহ বলেছেন, “সুতরাং যে কেউ যা আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা তাঁর কিতাবে আদেশ দিয়েছেন অথবা তাঁর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) সুন্নাহতে আদেশ দিয়েছেন এমন বাধ্যতামূলক কাজকে (আল ফারাইয) ছেড়ে দেবে, ইচ্ছাকৃতভ অস্বীকার (জুহুদ) অথবা অন্তর থেকে অবিশ্বাস (তাকসিব) –এর কারণে, তাহলে সে স্পষ্টতই একজন অবিশ্বাসী (কাফির)। আল্লাহ এবং শেষ দিবসে বিশ্বাস রাখে এমন কোন বুদ্ধিমান ব্যক্তিই এতে সন্দেহ করতে পারেনা। আর যে ব্যক্তি এগুলোকে বিশ্বাস করে এবং মুখে এর স্বীকৃতি দেয় কিন্তু সম্পূর্ণভাবে এগুলো ছেড়ে দেয়, অবহেলাভরে, খেলাচ্ছলে অথবা মুরজিয়াদের মত মাযহাবে বিশ্বাসী হয়ে, তাহলে সে একজন ঈমান ত্যাগকারী। স্বল্প কিংবা বেশি, ঈমানের কোন অংশই তাঁর অন্তরে বিদ্যমান নেই। এবং সে ঐরকম মুনাফিকদের অন্তর্ভুক্ত, যারা রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর সাথে নিফাকীতে লিপ্ত হয়েছিল। কাজেই কুরআন তাদের বিবরণ এবং তাদের জন্য যা জমা করা হয়েছে তা প্রকাশ করে দিয়েছে এবং এটাও বলে দিয়েছে যে তাদের স্থান হবে জাহান্নামের সর্ব নিম্ন স্তরে। আমরা আল্লাহর কাছে এ সকল মুরজিয়াদের চিন্তাধারা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করি”। [আল-ইবানাহ-২/৭৬৪]
পূর্ববর্তী ইমামগণ মুরজিয়াদের সম্পর্কে সতর্ক করে গিয়েছেন এবং তাদের বক্তব্যের ত্রুটি-বিচ্যুতি, তাদের বিদ’আতের বিপদ সম্পর্কে স্পষ্ট করে গিয়েছেন।
ইমাম আয যুহরী বলেন, “ইসলামের মধ্যে এর (ইরজার) চেয়ে বেশি ক্ষতিকর আর কোন বিদ’আতই প্রকাশ পায়নি, অর্থাৎ ‘ইরজা’”। [আল-ইবানাহ-২/৮৮৫]
এবং ইমাম আওযায়ী বলেন, “ইয়াহয়া এবং ক্বাতাদাহ বলতেন, “খাহেশাতের মধ্যে উম্মাহর উপর আর কোনকিছু তাদের কাছে ইরজার চেয়ে অধিক ভীতিকর ছিল না।” [আল-ইবানাহ ২/৮৮৫-৮৮৬]
আর শুরাইক বলেন, “তারা মানুষের মধ্যে নিকৃষ্ট। চরমপন্থীরা শীয়া’রা (রা’ওয়াফিয) মন্দে যথেষ্ট, কিন্তু মুরজিয়ার মিথ্যারোপ করে আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা সম্পর্কে”। [আস-সুন্নাহ ১/৩১২]
শাইখ সুলাইমান বিন নাসির আল-উলওয়ানের
‘নিঃসন্দেহে আল্লাহর বিজয় আসন্ন’ (আলা ইন্না নাসরুল্লাহি কারিব) বই থেকে নেয়া ।
Comment