বিসমিল্লাহ
সমস্ত প্রশংসা একমাত্র আল্লাহ’র, চিরদিনের জন্য (সুবহানাহু ওয়াতাআলা)। যে আল্লাহ আমাদের কল্যাণার্থে তাঁর দ্বীনকে পরিপূর্ণ করে দিয়েছেন। এবং দান করেছেন একটি পূর্ণাঙ্গ কিতাব যা বিধানসমূহ বর্ণনা করে।দরুদ ও সালাম বর্ষিত হোক রহমতের নাবী, মালাহীমের নাবী’র উপর (সল্লাল্লাহু আলাইহিওয়াসাল্লাম)। শান্তি বর্ষিত হোক নাবী পরিবার ও সাহাবীদের উপর (রদিয়াল্লহু আনহুম)। এবং শান্তি বর্ষিত হোক তাদের উপর যারা কিয়ামত পর্যন্ত সত্য দ্বীনের উপর অটল থাকবে।
আল্লাহ আজ্জাওয়াজাল বলেন
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُواْ كُتِبَ عَلَيْكُمُ الْقِصَاصُ فِي الْقَتْلَى الْحُرُّ بِالْحُرِّ وَالْعَبْدُ بِالْعَبْدِ وَالأُنثَى بِالأُنثَى فَمَنْ عُفِيَ لَهُ مِنْ أَخِيهِ شَيْءٌ فَاتِّبَاعٌ بِالْمَعْرُوفِ وَأَدَاء إِلَيْهِ بِإِحْسَانٍ ذَلِكَ تَخْفِيفٌ مِّن رَّبِّكُمْ وَرَحْمَةٌ فَمَنِ اعْتَدَى بَعْدَ ذَلِكَ فَلَهُ عَذَابٌ أَلِيمٌ
“হে ঈমানদারগণ! তোমাদের প্রতি হত্যার ক্ষেত্রে প্রতিশোধের বিধান দেয়া হয়েছে। স্বাধীন ব্যক্তির উপরে স্বাধীন ব্যক্তির ক্ষেত্রে, আর দাসের উপরে দাসের ক্ষেত্রে, আর নারীর উপরে নারীর ক্ষেত্রে। তবে যাকে কিছুটা রেহাই দেয়া হয় তার ভাইয়ের তরফ হতে, তাহলে বিচার হবে ন্যায্যভাবে, আর তার প্রতি ক্ষতিপূরণ দিতে হবে উদারভাবে । এটি তোমাদের প্রভুর কাছ থেকে লঘু-ব্যবস্থা ও করুণা । কাজেই এরপরে যে সীমালঙ্ঘন করবে তার জন্য রয়েছে ব্যথাদায়ক শাস্তি”
وَلَكُمْ فِي الْقِصَاصِ حَيَاةٌ يَاْ أُولِيْ الأَلْبَابِ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ
“আর তোমাদের জন্য প্রতিশোধের বিধানে রয়েছে জীবন, হে জ্ঞানবান ব্যক্তিগণ! যাতে তোমরা ধর্মপরায়ণতা অবলন্বন করো”
সূরা বাক্বারাঃ আয়াত (১৭৮-১৭৯)
অর্থাৎ আল্লাহ তা’আলা বলেন- ‘হে ঈমানদারগণ! প্রতিশোধ গ্রহণের সময় ন্যায়পন্থা অবলম্বন করবে । স্বাধীন ব্যক্তির পরিবর্তে স্বাধীন ব্যক্তি, দাসের পরিবর্তে দাস এবং নারীর পরিবর্তে নারীকে হত্যা করবে । এই ব্যাপারে সীমালঙ্ঘন করবে না । যেমন সীমা লঙ্ঘন করেছিলো তোমাদের পূর্ববর্তী লোকেরা । তারা আল্লাহর নির্দেশ পরিবর্তন করে ফেলেছিলো ।
ইমাম আবু হাতিমের (রঃ) বর্ণনায় এই আয়াতের শান-ই-নুযূল এই পর্যন্ত করা হয়েছে যে, আরবের দুটি গোত্রের মধ্যে যুদ্ধ হয়েছিলো । ইসলাম গ্রহণের পর তারা পরস্পর প্রতিশোধ গ্রহণের দাবীদার হয় এবং বলেঃ ‘আমাদের দাসের পরিবর্তে তাদের স্বাধীন ব্যক্তিকে হত্যা করা হোক এবং আমাদের নারীর পরিবর্তে তাদের পুরুষকে হত্যা করা হোক । তাদের এই দাবী খন্ডনে এই আয়াতটি অবতীর্ণ হয় । এই হুকুমটিও মানসূখ ।
কুরআন মাজীদ ঘোষণা করেঃ النّفس بالنّس অর্থাৎ “প্রাণের বদলে প্রাণ” । সুতরাং, প্রত্যেক হত্যাকারীকে নিহত ব্যক্তির পরিবর্তে হত্যা করা হবে । স্বাধীন দাসকে হত্যা করুক বা এর বিপরীত, পুরুষ নারীকে হত্যা করুক বা এর বিপরীত । সর্বাবস্থায় এই বিধানই চালু থাকবে । সুতরাং, স্বাধীন লোক সবাই সমান । প্রাণের বদলে প্রাণ নেয়া হবে ।
যেকেউ প্রাণ নাশের ইচ্ছায় অন্যকে হত্যা করবে, প্রতিশোধ রুপে তাকেও হত্যা করা হবে । হত্যা ছাড়া জখম বা কোন অঙ্গ হানির ক্ষেত্রেও একই বিধান ।
জিজ্ঞাস্যঃ চার ইমাম এবং জমহূর বিদ্বানগণের মাযহাব এই যে, কয়েকজন মিলে একজন মুসলিমকে হত্যা করলে তার পরিবর্তে তাদের সকলকেই হত্যা করা হবে । উমার (রাঃ) এর যুগে সাতজন মিলে একজন লোককে হত্যা করে । তিনি সাতজনকেই হত্যা করে দেন এবং বলেন- যদি ‘সুনআ’ গোত্রের সমস্ত লোক এই হত্যায় অংশগ্রহণ করতো তবে আমি প্রতিশোধ রুপে তদের সকলকেই হত্যা করতাম । কোন সাহাবীই তাঁর যুগে এই ঘোষণার উল্টো করেননি । সুতরাং, এই কথার উপর ইজমা (ঐক্যমত) প্রতিষ্ঠিত হয়ে গেছে ।
তথ্যসূত্রঃ তাফসীর ইবনু কাসীর, তাফসীর মাআরেফুল কুরআন
ভ্রান্তি নিরসণঃ
১. জয়নিস্ট ইহুদীদের মৌন সম্মতিতে ফিলিস্তীনে যদি একজন মুসলিমও মারা যেয়ে থাকে তাহলে তাদের রক্ত মুসলিমদের জন্য হালাল হয়ে গেছে ১৯৪৮ সালের আরব-ইজরায়েল যুদ্ধের পরেই যখন ফিলিস্তীনের মুসলিমরা ইজরায়েল চক্রান্তে তাদের জন্মভূমি থেকে বিতারিত হয়েছিলো ।
২. যদি বার্মার বৌদ্ধ জনগোষ্ঠির মদদে একজন মুসলিমও মৃত্যুবরণ করে থাকে তাহলে এই ন্যাড়া বৌদ্ধজাতিকে উড়িয়ে দেয়ার বিধান জারি হয়ে গেছে আজ থেকে কয়েক যুগ আগেই ।
৩. কাশ্মীর বা ভারতে যদি একজন মুসলিমও হিন্দুদের বর্বরতার শিকার হয়ে থাকে তাহলে হিন্দ প্রদেশ মুসলিমদের জন্য হালাল হয়ে গেছে মুহাম্মাদ বিন কাসিমের জামানাতেই।
৪. কুফ্ফার রাষ্ট্রগুলোর বেসামরিক জনগনের রক্তও মুমিনদের জন্য হালাল হয়ে গেছে যখন কিনা তারা ভোট দিয়ে এমন শাসক নির্বাচন করে যে শাসক তার সন্ত্রাসী বাহিনী দ্বারা মুসলিম জনপদগুলো রক্তে রঞ্জিত করে, যখন কিনা তাদের দেয়া ট্যাক্সের টাকায় মুসলিমদের বিরুদ্ধে তথাকথিত “সন্ত্রাসের বিরুদ্ধ যুদ্ধ” নামক প্রহসনে ইসলামকে পৃথিবী থেকে নিঃশ্চিহ্ন করে দেয়ার পায়তারা চলছে।
আজ তথাকথিত যে আলেম, যে মুসলিম, যে দাওয়াতের মেহেনতকারী ভাই নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে জুমার মুসুল্লিদের উপর দখলদার ক্রসেডারদের উত্তরসূরী’র দ্বারা সংগঠিত ঠান্ডা মাথার ঘৃণিত হত্যাযজ্ঞের পরও লেখনীকে জিহাদের সাথে তুলনা করে, বক্তৃতাকে জিহাদের সাথে তুলনা করে, জিহাদ ফী সাবিলিল্লাহ/ ক্বীতাল ফী সাবিলিল্লাহ- এর বিরুদ্ধে কথা বলে, ফরদুল আঈন জিহাদের ফরযিয়াত থেকে নিজেকে মুক্ত রাখার চেষ্টা করে, মুজাহিদীনদেরকে সন্ত্রাসী হিসেবে আখ্যায়িত করে নিজের মুসলমানিত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করছেন, তারা কি ভূলে গেছেন কিসাসের বিধান ? যা কিয়ামত পর্যন্ত কার্যকর থাকবে ! আপনারা অপেক্ষা করুন, অপেক্ষা আমরাও করি। মহা পরাক্রমশালী আল্লাহ মুমিনদের হাতেই বাতিলের বাক রুদ্ধ করে দেবেন, মুমিনদের দ্বারাই উম্মাহ’র অন্তরকে প্রশান্ত করবেন ইনশাআল্লাহ। এটাই আল্লাহ’র ওয়াদা। আর ওয়াদা পালনে আল্লাহ’র চেয়ে সত্যবাদী আর কেউ নেই।
সর্বশেষ ও সর্বোত্তম কথা হচ্ছে, “প্রশংসা একমাত্র আল্লাহ’র জন্যই”
ওয়ামা আ’লাইনা ইল্লাল বালাগ।
Comment