ভারত-পাকিস্থানের মধ্যকার যেকোন ধরনের উত্তেজনাকর পরিস্থিতি বা সম্ভাব্য যুদ্ধ (যদিও এদের পশ্চিমা প্রভূরা কখনোই এমনটি হতে দেবে না) সম্পর্কিত বিশ্লেষণের আড়ালে সূক্ষ্মভাবে যে বিষয়টি সবসময়ই চাপা পড়ে যায় তা হচ্ছে, ভারতের দিক থেকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার হুমকি ও উপমহাদেশীয় মুসলিমদের জন্য হিন্দুত্ববাদের নগ্ন ষড়যন্ত্র এবং পাকিস্থানী শাসকগোষ্ঠির স্পষ্ট শরীয়াহ বিরোধী অবস্থান। কারণ, ভারতের উচ্চ রাজনৈতিক পর্যায় থেকে যখন অখন্ড ভারত গঠনের ঘোষণা আসে এবং পাকিস্থানে লাল মসজিদ সহ শত শত নারী-পুরুষ তলবে ঈলমদের নির্বিচারে শহীদ করে দেয়ার মতো ঘটনা ঘটে তখন উপমহাদেশের জন্য চিহ্নিত হুমকি চরম ইসলামবিদ্বেষী রাষ্ট্র ভারত ও নির্লজ্জ ডেমোক্র্যাটিক পাকিস্থানের বিষয়ে বিশ্লেষণ স্বাভাবিকভাবেই ভিন্ন আঙ্গিকে হওয়ার দাবি রাখে।
যখন কোন রাষ্ট্র আমার দেশের স্বাধীনতা রক্ষার জন্য হুমকিস্বরুপ পাশাপাশি ভারতীয় মুসলিম এবং উপমহাদেশীয় মুসলিমদের জন্য যে রাষ্ট্র প্রকাশ্যে শত্রুতা পোষণ করার সাথে সাথে নিজেদের অধীনে থাকা মুসলিমদের উপর নৃশংস হত্যাযজ্ঞ চাপিয়ে দেয় তখন সে দেশের অর্থনৈতিক, জাতীয় বা সামরিক যেকোন খাতে বড় বড় ধরনের ক্ষতি তাদের জন্য উপকারী যারা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে এবং যারা ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার আশঙ্কা করে। একারণে, বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে একই সাথে একজন মুসলিম এবং একজন বাংলাদেশী হিসেবে যে কারোর জন্য ভারতের যেকোন ধরনের জাতীয়, রাজনৈতিক অথবা আন্তর্জাতিক ক্ষতি আত্মিক প্রশান্তির বিষয়। একই সাথে পাকিস্থানের তাগুতী রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনা ভেঙ্গে পড়া বা ক্ষতিগ্রস্থ হওয়াও একজন মুসলিমের জন্য আত্মিক প্রশান্তির কারণ যখন কি না মুজাহিদদের বিরুদ্ধে (খাস করে উপজাতীয় মুসলিমদের বিরুদ্ধে) পাকিস্থান সরকারের হত্যাযজ্ঞ, লুটপাটের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। পাশাপাশি কাশ্মীর ইস্যুতেও পাকিস্থান প্রসঙ্গে বাংলাদেশের অনেকেই প্রতারণামূলক স্বপ্ন লালন করে থাকে যে, পাকিস্থান কাশ্মীরকে রক্ষা করবে, মুক্ত করবে। কিন্তু কাশ্মীরি মুসলিমদের নিয়ে যে পাকিস্থান সরকারের কোন ধর্মীয় ভাবাবেগ নেই এবং কাশ্মীরকে নিয়ে এ তাগুত সরকারের অবস্থান স্রেফ রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল তা ধর্মপ্রাণ প্রত্যেক মুসলিমের কাছে প্রকাশ্য দিবালোকের ন্যায় উন্মোচিত হয়েছে।
তবে, এমন চিন্তাধারা বা বিশ্লেষণ অনুভূতিহীন অজ্ঞদের জন্য নয় যারা কিনা সাইকস-পিকোট কাঁটাতার দিয়ে ঘেরা জাতীয়তাবাদের গোলকধাঁধাঁ থেকে বের হতে পারে না, যারা কিনা মালাউনদের ক্রিকেট উন্মোত্ততায় নিজের বোধশক্তি হারিয়ে ফেলেছে, যারা কিনা বলিউডের রঙ্গিন অন্ধকারকে তাদের জীবনের অংশ করে নিয়েছে, যারা কিনা ১৯৭১ এর জন্য পাকিস্থানী সাধারণ মুসলিমদেরকে এবং অন্য ভূমির হওয়ার কারণে কাশ্মীরিদেরকে নিজের ভাই ভাবতে পারে না।
তাই, গোমূত্র ধারণকারীরা যাদের বন্ধু প্রতীম প্রতিবেশী অথবা শরঈ মাপকাঠিতে যারা কোন রাষ্ট্রকে বিচার করতে পারে না (সেটা হোক ভারত বা পাকিস্থান) তাদের জন্য কিছু চিন্তার খোরাক দেয়ার চেষ্টা করলামঃ
প্রথমত, আমরা খুব ভালো করেই জানি বর্তমানে আমাদের জন্মভূমি বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রধান শত্রু হচ্ছে ভারত। ২০১৯ সালে এসে এমন সাধারণ বিবেচনার বাঙ্গালী খুঁজে পাওয়া দুষ্কর হবে যে কিনা বাংলাদেশের প্রতি ভারতের চরম বন্ধুত্বের (!) নমুনাগুলো সম্পর্কে জানে না। তারপরও চিন্তার খোরাক হিসেবে নিচের সামান্য নমুনাটি উপস্থাপন করা হলোঃ
https://www.youtube.com/watch?v=JeDAT0uEA4U
দ্বিতীয়ত, হিন্দুত্ববাদের কাপুরুষোচিত নগ্ন উত্থান। কোন সচেতন মুসলিম বাবরি মসজিদ ধ্বংস, গুজরাট রায়টের মতো বিভীষিকাময় ঘটনাগুলোর কথা কোনভাবেই ভূলে যেতে পারে না। আর একটি রাষ্ট্রের স্বরুপ, অবস্থান, লাভ-ক্ষতি ইত্যাদির বিশ্লেষণে এই ঘটনাগুলো উল্লেখযোগ্য তথ্য-উপাত্ত হিসেবেই আলোচনায় চলে আসবে। এ বিষয়ে দু'টি নমুনা উপস্থাপন যৌক্তিক মনে করছি -
http://www.mediafire.com/…/Rise-Of-S...C%7C+Yo…
http://www.mediafire.com/…/Destructi...se+of+S…
তৃতীয়ত, কাশ্মীর ইস্যু কোনভাবেই ভারত বা পাকিস্থানের উপর ছেড়ে দেয়ার সুযোগ নেই। কাশ্মীরিরা দেরিতে হলেও বুঝে গেছে যে, পাকিস্থান তাদের অভিভাবক নয়। বরং নিজেদের আযাদী নিজেদেরকেই অর্জন করতে হবে। কাশ্মীর ইস্যুতে ভারত হচ্ছে ইসরাইলীদের মতো দখলদার একটি রাষ্ট্র। আর পাকিস্থান হচ্ছে নির্লজ্জ ডেমোক্রেটিক। কারণ, কাশ্মীরকে মুক্ত করা এবং নিরাপত্তায় রাখার ক্ষেত্রে পাকিস্থান কখনোই বাস্তবধর্মী কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি, যদিও এ সামর্থ পাকিস্থানের ছিলো এবং আছে। বরং রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের জন্য যতটুকু করা দরকার ততটুকুই পাকিস্থান করে এসেছে সবসময়। অথচ যুগের পর যুগ ধরে কাশ্মীরি জনতা পাকিস্থানের প্রতি এমন আকুতি নিয়েই বেঁচে ছিলো যেমনটি ক্ষুধার্ত সন্তান তার বাবার পথ চেয়ে বসে থাকে।
চতুর্থত, পারমাণবিক শক্তির অধিকারী হলেও পাকিস্থান উপমহাদেশীয় মুসলিমদের অভিভাবক নয় এটা সবার ভালো ভাবে বুঝা উচিত। কারণ, পাকিস্থান বরাবরই তার জিহাদপন্থী মুসলিম নাগরিকদের সাথে একপেষে আচরণ করে এসেছে। মূলত এ্যামেরিকা যেভাবে চেয়েছে সেভাবেই ইসলাম ও মুসলিমদের সাথে পাকিস্থান আচরণ করে এসেছে। নিজ নাগরিকদের প্রতি যে রাষ্ট্রের আচরণ "লাল মসজিদ ধ্বংস" এর মতো জঘণ্য ঘটনার জন্ম দিতে পারে তাদের লাল মসিজদ ধ্বংস আর ভারতের বাবরি মসজিদ ধ্বংস আলাদাভাবে দেখার কিছু নেই। একারণে, অতীতে কোন সময় উপমহাদেশীয় মুসলিমরা পাকিস্থানকে তাদের অভিভাবক ভাবলেও তা ছিলো মরুভূমির মরিচীকার ন্যায়। আর আদতে পাকিস্থানের রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনা কখনোই শরীয়াহ ভিত্তিক ছিলো না, এখনো নেই। তাই, বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে আজ এটাও প্রমাণিত হয়ে গেছে যে স্বয়ং পাকিস্থানের রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনাও ইসলামের জন্য ক্ষতিকর।
উল্লেখ্য, উপমহাদেশের জিহাদী তাঞ্জীমগুলো পাকিস্থানের সাথে কৌশলগত অবস্থান গ্রহণ করলেও ভারতের প্রতি এমন স্বদিচ্ছা তাদের নেই। তবে, মুজাহিদীনগণ রাষ্ট্র পাকিস্তানের শরীয়াহ লঙ্ঘনের বিষয়গুলোর প্রতি কখনোই শৈথিল্য প্রদর্শন করেনি। খোদ পাকিস্থানের শাসকবর্গও এটা খুব ভালোভাবেই জানে।
সারকথা, একজন মুসলিম হিসেবে ভারতের বিরুদ্ধে আমি সবসময়ই পাকিস্থানকে সমর্থন করি এবং করবো। আর যদি সেটা হয় ভারত-পাকিস্থান যুদ্ধকে কেন্দ্র করে তাহলে তো কথাই নেই। ঠিক একইভাবে ভারতীয় সেনাবহরের উপর কাশ্মীরিসহ যেকোন মুসলিমের হামলাকেও আমি সমর্থন করি এবং করবো। কারণ, যার ভূমি দখল করা হয়েছে, যার মা-বোনকে ধর্ষণ করা হয়েছে, যার বাবা-ভাই-সন্তানকে চোখের সামনে হত্যা করা হয়েছে তার ব্যথা কোন অনুভূতিহীনদেরকে স্পর্শ না করলেও নূন্যতম বোধশক্তি সম্পন্ন অনেককেই স্পর্শ করে। আর একারণে আজ অনেকেই চায়, ভারত এবং পাকিস্থান এই উভয় দেশ নিজেদের আভ্যন্তরীণ তথা জাতীয় পর্যায়ে এমন ক্ষতির সম্মুখীন হোক যেন ভারত তার আভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়েই ব্যস্ত থাকতে বাধ্য হয় ফলে বাংলাদেশকে নিয়ে এ রাষ্ট্র কোন ষড়যন্ত্র করার ফুসরত না পায় এবং পাকিস্থানও উপজাতীয় মুসলিম তথা মুজাহিদদের নিয়ে ভাবার সুযোগ না পায়।
মূলত, উপমহাদেশীয় মুসলিমরা যেদিন তাদের হারানো মর্যাদা ফিরিয়ে আনার বিষয়ে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ হবে সেদিনই এই উপমহাদেশকে নিয়ে আন্তর্জাতিক রাজনীতির সমস্ত দরজা বন্ধ হয়ে যাবে বিইযনিল্লাহ। কারণ, এ্যামেরিকা বা রাশিয়া যার কথাই বলা হোক না কেন এরা খুব ভালো করেই জানে যে সাত সমুদ্র তেরো নদী পেরিয়ে ভারতীয় উপমহাদেশে দখলদারিত্ব করতে গেলে লজ্জা নিবারণের জন্য যে অন্তর্বাসটুকু তাদের অবশিষ্ট আছে তাও শরীর থেকে খুলে যাবে। অন্যকোন ভাবে এই বোধোদয় তাদের না হলেও অন্তত পৃথিবীর দুই পরাশক্তির অহঙ্কারকে ধূলোয় মিটিয়ে দেয়া আফগানিদের মাধ্যমে হয়েছে।
Comment