কেন আমি আল কায়েদায় অংশগ্রহণ করলাম
মূল
শায়খ আবু মুসআব মুহাম্মদ উমায়ের আল কালাবী আল আওলাকী রহ.
ভাষান্তর
আবু হামযা আল হিন্দী
৪. কারণ তারা গুরাবা; ইসলামের অজ্ঞাত অপরিচিতি রক্ষক
আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
এই হাদীসটি বর্ণনা করছে যে, আহলে হক্ব বা সত্যপন্থীরা অপরিচিত থাকবে। এই বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই যে, যে ব্যক্তি নিজ আকীদা ও জিহাদের কারণে মৃত্যুভয়ে জীবন কাটায় সে-ই প্রকৃত অপরিচিত অবস্থায় জীবনাতিপাত করে। সে-ই অপরিচিত অবস্থায় জীবনাতিপাত করে, কারণ মানুষ তাকে অপবাদ দেয় যে, তার আকীদা সংশয়পূর্ণ। সে অপরিচিত থাকে, কারণ সে সাহায্যকারীর স্বল্পতার কালেও সত্যের উপর থাকতে চায়; সে-ই প্রকৃত গরীব তথা অপরিচিত। সে জীবন যাপন করে শংকিত অবস্থায়, তার মোবাইল ফোনটিও গোয়েন্দার মতো তার যাবতীয় অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে। সে তার গাড়ি মাইন বোমার দ্বারা বিস্ফোরিত হওয়ার শংকায় থাকে। সে স্বাধীনভাবে শহরের বিভিন্ন স্থানে যেতে পারে না, কারণ প্রশাসন তার জন্য ওত পেতে থাকে। নিজ গোত্রের অধিকাংশই তার শত্রু হয়ে যায়, বরং তার পরিবার থেকেও কখনো শত্রুতার রোষানল নিক্ষিপ্ত হয় তার প্রতি। তার প্রতি অপবাদ আরোপ করা হয় যে, তার আকীদা সত্য থেকে বিচ্যুত বা সে শান্তি বিনষ্টকারী এবং অনিষ্টের দ্বার উন্মোচনকারী; কিংবা বলা হয় যে, সে পরিকল্পনাহীন কর্মে লিপ্ত। এজাতীয় আরো কত নিন্দাবাক্য তেড়ে আসে তার প্রতি তার ইয়ত্তা নেই! এ ব্যক্তিকেই যে ‘অপরিচিত বা গরীব’ বলা যায় এব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু যে ব্যক্তি ইহুদী, খ্রিস্টান ও তাগুতদের জুলুমের ব্যাপারে মৌনতা অবলম্বন করে তাগুতদের সম্বন্ধে বলে, ‘এরা আমাদের শরীয়ত কর্তৃক নির্ধারিত আমীর বা ‘ওলাতুল উমূর’ যাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা হারাম।’ এবং কোনদিন সে আল্লাহর রাস্তায় কাটায় নি, তাগুতদের অনিষ্ট থেকে সে সম্পূর্ণ নিরাপদে থাকে; যেথায় ইচ্ছে স্বাচ্ছন্দ্যে ঘুরে বেড়ায় এবং কখনো অর্থনৈতিক সংকটেও পড়েও না- এমন ব্যক্তির ক্ষেত্রে কখনো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নির্দেশিত ‘গরীব বা অপরিচিত’ গুণটি প্রযোজ্য হবে না। কিভাবে আমরা এমন ব্যক্তিকে ‘অপরিচিত’ বলতে পারি, অথচ সে ‘অপরিচিতি’র কোন স্তরই অতিক্রম করে নি; বরং সে কখনো তাগুত কর্তৃক সম্মনিত হয় এবং তার জন্য এমন কিছু বিষয় খুব সহজেই প্রস্তুত থাকে যা অন্যদের জন্য থাকে না। কতিপয় দায়ীর অবস্থা এমন যে, তার জীবন যাপনের যাবতীয় উপকরণ তার জন্য সদা প্রস্তুত থাকে, তার জন্য উত্তম গাড়ির ব্যবস্থা থাকে; তাকে কোন কষ্টের শিকার হতে হয় না, তার জেলে যাওয়ার ভয় থাকে না, গোয়েন্দার নজরে পড়ার আশংকা থাকে না। অথচ একই সময়ে অন্যরা এসকল ভোগসমগ্রী থেকে বঞ্চিত, মাতাপিতা, স্ত্রী-সন্তান, স্বদেশভূমি ও স্বাচ্ছন্দময় জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন শুধু এই ইসলামের কারণেই। সুতরাং কত পার্থক্য এ দুই ব্যক্তির মাঝে! কত ব্যবধান এ দুই ব্যক্তির ইসলাম অনুসরণের মাঝে!
এটা কোন বাড়াবাড়ি বা উগ্রতা নয়, বরং আমরা বলতে চাচ্ছি আমরা এমন যামানায় আছি যখন ইহুদী ও খ্রিস্টানেরা ইসলামী দেশগুলোর উপর আক্রমণ করছে আর তাগুতরা পেট্রোল, খাদ্যদ্রব্য, গোয়েন্দা বিভাগ দিয়ে তাদের সহযোগিতা করছে, তাদের জন্য আকাশপথ, স্থলপথ ও সমুদ্রপথ খুলে দিয়েছে এবং মুজাহিদদেরকে তাদের সাথে যুদ্ধ করতে বাঁধা দিচ্ছে। আমরা এমন এক যামানায় আছি যখন তারা আল্লাহর শরীয়তকে মানবরচিত কুফরী আইন দ্বারা পরিবর্তন করে ফেলেছে। সুতরাং যে ব্যক্তি এসব বিষয়কে প্রত্যাখ্যান করে তাগুতের বিরোধিতা করবে সে-ই অপরিচিতির জীবন যাপন করবে। আর যে কাফেরদের সঙ্গ দিয়ে তাদের স্বার্থ রক্ষার জন্য কাজ করবে কিংবা মৌনতা অবলম্বন করবে সে অপরিচিত নয়; যদিও ইসলামের জন্য তার অনেক খেদমত রয়েছে। কেননা মুজাহিদগণই ‘যারা হাতে জ্বলন্ত অঙ্গার রাখবে’ এই হাদিসের যোগ্যপাত্র।
প্রিয় ভাই, আপনি একটু ইনসাফের দৃষ্টিতে বর্তমান বিশ্বের ইসলামী দলগুলোর প্রতি লক্ষ্য করুন। অবশ্যই আপনি উপলব্ধি করতে পারবেন, কারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নির্দেশিত এই গুণটির অধিক নিকটবর্তী। একটু ভেবে দেখুন। এই হাদীসটিও ‘অপরিচিতি’র হাদীসের সমার্থক।
মুজাহিদগণের শত্রুরা অধিক শক্তিশালী, কিন্তু তাদের সাহায্যকারী খুবই অল্প। ইহুদী-খ্রিস্টান, তাগুত ও তাদের দোসররা এবং সরকারী আলেমরা তাদের শত্রু। কিছু ভুল ইজতিহাদের ক্ষেত্রে কতিপয় সত্যপন্থী আলেমের রুঢ় আচরণ থেকেও তারা নিরাপদ থাকে নি। তাদের সঙ্গ দিয়েছে কেবল কতিপয় হক্কপন্থী আলেম এবং ‘দীনে ফিতরত’ ধারণকারী কতিপয় মুমিন বান্দা। কিন্তু অধিকাংশ মুমিনরাই মুজাহিদদের দিকে নিন্দনীয় দৃষ্টিতে তাকায়, তাদের প্রতি মন্দ ধারণা পোষণ করে। এটা হয়েছে ইহুদী-খ্রিস্টান ও দরবারী আলেমদের অনুগামী ভ্রান্ত মিডিয়ার মিথ্যা প্রচারণার কারণে। মিথ্যাবাদী মিডিয়াগুলো মুজাহিদদের নামে এমন কত মিথ্যা রিপোর্ট করেছে যা থেকে তারা সম্পূর্ণ মুক্ত ও নির্দোষ! তারা মুজাহিদদের বিজয়গুলো এবং কাফেরদের পরাজয়গুলো কত লুকিয়ছে! তাদের এই মিথ্যা প্রচারণা কতিপয় সত্যপন্থীকেও ধোঁকা দিয়েছে। (এই বিষয়টি স্বতন্ত্র আলোচনার দাবী রাখে। এটা আলোচনার উপযুক্ত জায়গা নয়।)
প্রিয় ভাই, আপনি ঐ মুজাহিদের প্রতি লক্ষ্য করুন, যে নিজের জান-মাল আল্লাহর রাস্তায় বিসর্জন দিয়েছে এবং আল্লহর মর্যাদার বিষয়সমূহ সম্মানহানী হতে দেখে সে আল্লাহর জন্য দাঁড়িয়ে গেছে, আল্লাহর জন্য নিজের জীবনের নযরানা মেনেছে, দুনয়িার ভোগসামগ্রী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে, ফলে তার ভাগ্যে জুটেছে শান্তির পর ভয়, সচ্ছলতার পর দারিদ্র্য, আল্লাহর ভূমিতে শান্তিপূর্ণ বিচরণের পর বয়কট। এতদ্*সত্ত্বেও তার প্রতি অপবাদের অন্ত নেই! তার প্রতি অপবাদ আরোপ করা হয় যে, তার আকীদা সংশয়পূর্ণ, সে হিকমাহ বুঝে না এবং সে উম্মাহর ক্ষতি ডেকে আনছে। স্বীয় দীনকে মজবুতভাবে আঁকড়ে ধরার কারণে সে কি অন্যদের তুলনায় অধিক কষ্টের সাথে হাতে জ্বলন্ত অঙ্গার ধারণ করে আছে না?? আল্লাহ বলেন,
মুজাহিদগণ এখন পরীক্ষার সম্মুখীন। সন্দেহ নেই, সত্যাশ্রয়ীরা অবশ্যই পরীক্ষার সম্মুখীন হবে। কেননা সর্বত্রই ইহুদি-খ্রিস্টান ও তাদের মুনাফিক দোসরদের কর্তৃত্ব চলছে এবং তারা মুসলিম দেশগুলো শাসন করছে। সুতরাং হলফ করেই বলা যায় যে, একজন সত্যাশ্রয়ী কখনো পরীক্ষার সম্মুখীন না হয়ে থাকতে পারে না। কারণ কাফেরদের প্রাধান্য বিস্তারের সময় যে ব্যক্তিই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শের উপর অটল থাকার ইচ্ছা পোষণ করবে অবশ্যই সে কাফেরদের থেকে কঠোর নির্যাতনের শিকার হবে। তো এমন পরীক্ষার সম্মুখীন না হয়েও ‘সাহায্যপ্রাপ্ত দলে’র অন্তর্ভুক্তির দাবীকারীকে আমি বলবো, হয়ত আপনি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শের উপর থাকবেন, তখন অবশ্যই আপনাকে কাফিরদের নির্যাতনের শিকার হতে হবে; নয়ত (রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়ে) পরীক্ষার সম্মুখীন না হয়ে শান্তিতে জীবন যাপন করবেন। সুতরাং আপনি আপনার অনুসৃত পথ ও পন্থাটাকে আরেকবার দেখে নিন এবং নিজেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করুন। যে কোন দল যদি তার যাত্রাপথে বাঁধা বা পরীক্ষার সম্মুখীন না হয় তাহলে অবশ্যই তাদের নিজেদের কর্মপদ্ধতিটা পুনরায় যাচাই করে দেখা উচিৎ। সায়্যিদ কুতুব রহ. এ উপদেশই দিয়ে গেছেন।
৫. কারণ তারা মিল্লাতে ইবরাহীমের অনুসরণে অগ্রগামী
প্রিয় ভাই, আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে মিল্লাতে ইবরাহীমের অনুসরণের আদেশ দিয়ে বলেন,
সুতরাং যে ব্যক্তিই মিল্লাতে ইবরাহীম থেকে বিমুখ হবে এবং মিল্লাতে ইবরাহীমের বিরোধিতা করবে সেই নির্বোধ সাব্যস্ত হবে। প্রকৃত মুমিন তো সর্বাবস্থায় শরীয়তের অনুসারী হবে। শরীয়ত যদি তার জ্ঞানবিরোধী হয় তবে তার জ্ঞানই অভিযুক্ত হবে। তো আমরা কোন প্রকার কদাকার যুক্তি এবং বুদ্ধিহীন বিবেকের আশ্রয় না নিয়ে নির্দ্বিধায় বলতে পারি যে, আল কায়েদা মিল্লাতে ইবরাহীমের অনুসরণের ক্ষেত্রে অগ্রগামী। মিল্লাতে ইবরাহীম সম্বন্ধে বিস্তারিত আলোচনার পর আপনিই বাস্তবতার সাথে মিলিয়ে আমার কথার সত্যতা উপলব্ধি করতে পারবেন।
আল্লাহর একটি বাণীর প্রতি লক্ষ করুন,
উক্ত আয়াতে ইবরাহীম আলাইহিস সালামের যে আদর্শের প্রতি আলোকপাত করা হয়েছে তা হল, দু্র্বল অবস্থাতেও কাফের-মুশরিক ও তাদের উপাসনা থেকে সম্পর্কচ্ছেদ করা এবং তাদের সাথে সম্পর্কহীনতার ঘোষণা দেয়া। কতিপয় আলেম বলেন, এটাই হল মা‘বুদ বা উপাস্যের পূর্বে ‘আবেদ’ তথা উপাসনাকারীদের থেকে সম্পর্কচ্ছেদ। কারণ মানুষ কখনো বাতিল উপাস্যের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করে, কিন্তু ব্যক্তিগত স্বার্থ বা অন্য কোন অজুহাতে উপাসনাকারীদের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করে না। এমন করলে সে পরিপূর্ণ মিল্লাতে ইবরাহীমের অনুসারী হবে না; যতক্ষণ না উপাসনাকারীদের থেকেও সম্পর্কচ্ছেদ করে। লক্ষ্যণীয় বিষয় হল, তাঁরা শুধু সম্পর্কহীনতার ঘোষণা দিয়েই ক্ষান্ত থাকেন নি, বরং এটাও বলে দিলেন যে, “كَفَرْنَا بِكُمْ” (আমরা তোমাদের মানি না) যাতে আল্লাহর বন্ধু ও শত্রুদের মাঝে পার্থক্যটা পরিপূর্ণভাবে স্পষ্ট হয়ে যায়। তারপরের আয়াতে ‘শত্রুতা’কে ‘বিদ্বেষের পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে। কারণ শত্রুতাটা প্রকাশ্যে হয়ে থাকে আর বিদ্বেষ অন্তরে লুক্কায়িত থাকে। তাছাড়া তাদের সাথে শত্রুতাটা ততক্ষণ পর্যন্ত বলবৎ থাকবে যতক্ষণ না তারা এক আল্লাহর প্রতি ঈমান আনে। হে ভাই, এবার আপনিই চিন্তা করে দেখুন, আল কায়েদা এই আদর্শকে কতটা দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরেছে।
পরবর্তী পর্বগুলোও শীঘ্রই দেয়া হবে ইনশা্*আল্লাহ.. আপনাদের নেক দোআয় ভুলবেন না...
মূল
শায়খ আবু মুসআব মুহাম্মদ উমায়ের আল কালাবী আল আওলাকী রহ.
ভাষান্তর
আবু হামযা আল হিন্দী
৪. কারণ তারা গুরাবা; ইসলামের অজ্ঞাত অপরিচিতি রক্ষক
আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
إن الإسلام بدأ غريباً وسيعود غريباً فطوبى للغرباء
ইসলাম অপরিচিত অবস্থায় বিকাশ লাভ করেছে, অচিরেই আবার অপরিচিত হয়ে যাবে; সুসংবাদ গুরাবাদের (অপরিচিতদের) জন্য! (ইবনে মাজাহ, আলবানী হাদীসটিকে সহীহ বলেছেন) এই হাদীসটি বর্ণনা করছে যে, আহলে হক্ব বা সত্যপন্থীরা অপরিচিত থাকবে। এই বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই যে, যে ব্যক্তি নিজ আকীদা ও জিহাদের কারণে মৃত্যুভয়ে জীবন কাটায় সে-ই প্রকৃত অপরিচিত অবস্থায় জীবনাতিপাত করে। সে-ই অপরিচিত অবস্থায় জীবনাতিপাত করে, কারণ মানুষ তাকে অপবাদ দেয় যে, তার আকীদা সংশয়পূর্ণ। সে অপরিচিত থাকে, কারণ সে সাহায্যকারীর স্বল্পতার কালেও সত্যের উপর থাকতে চায়; সে-ই প্রকৃত গরীব তথা অপরিচিত। সে জীবন যাপন করে শংকিত অবস্থায়, তার মোবাইল ফোনটিও গোয়েন্দার মতো তার যাবতীয় অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে। সে তার গাড়ি মাইন বোমার দ্বারা বিস্ফোরিত হওয়ার শংকায় থাকে। সে স্বাধীনভাবে শহরের বিভিন্ন স্থানে যেতে পারে না, কারণ প্রশাসন তার জন্য ওত পেতে থাকে। নিজ গোত্রের অধিকাংশই তার শত্রু হয়ে যায়, বরং তার পরিবার থেকেও কখনো শত্রুতার রোষানল নিক্ষিপ্ত হয় তার প্রতি। তার প্রতি অপবাদ আরোপ করা হয় যে, তার আকীদা সত্য থেকে বিচ্যুত বা সে শান্তি বিনষ্টকারী এবং অনিষ্টের দ্বার উন্মোচনকারী; কিংবা বলা হয় যে, সে পরিকল্পনাহীন কর্মে লিপ্ত। এজাতীয় আরো কত নিন্দাবাক্য তেড়ে আসে তার প্রতি তার ইয়ত্তা নেই! এ ব্যক্তিকেই যে ‘অপরিচিত বা গরীব’ বলা যায় এব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু যে ব্যক্তি ইহুদী, খ্রিস্টান ও তাগুতদের জুলুমের ব্যাপারে মৌনতা অবলম্বন করে তাগুতদের সম্বন্ধে বলে, ‘এরা আমাদের শরীয়ত কর্তৃক নির্ধারিত আমীর বা ‘ওলাতুল উমূর’ যাদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা হারাম।’ এবং কোনদিন সে আল্লাহর রাস্তায় কাটায় নি, তাগুতদের অনিষ্ট থেকে সে সম্পূর্ণ নিরাপদে থাকে; যেথায় ইচ্ছে স্বাচ্ছন্দ্যে ঘুরে বেড়ায় এবং কখনো অর্থনৈতিক সংকটেও পড়েও না- এমন ব্যক্তির ক্ষেত্রে কখনো রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নির্দেশিত ‘গরীব বা অপরিচিত’ গুণটি প্রযোজ্য হবে না। কিভাবে আমরা এমন ব্যক্তিকে ‘অপরিচিত’ বলতে পারি, অথচ সে ‘অপরিচিতি’র কোন স্তরই অতিক্রম করে নি; বরং সে কখনো তাগুত কর্তৃক সম্মনিত হয় এবং তার জন্য এমন কিছু বিষয় খুব সহজেই প্রস্তুত থাকে যা অন্যদের জন্য থাকে না। কতিপয় দায়ীর অবস্থা এমন যে, তার জীবন যাপনের যাবতীয় উপকরণ তার জন্য সদা প্রস্তুত থাকে, তার জন্য উত্তম গাড়ির ব্যবস্থা থাকে; তাকে কোন কষ্টের শিকার হতে হয় না, তার জেলে যাওয়ার ভয় থাকে না, গোয়েন্দার নজরে পড়ার আশংকা থাকে না। অথচ একই সময়ে অন্যরা এসকল ভোগসমগ্রী থেকে বঞ্চিত, মাতাপিতা, স্ত্রী-সন্তান, স্বদেশভূমি ও স্বাচ্ছন্দময় জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন শুধু এই ইসলামের কারণেই। সুতরাং কত পার্থক্য এ দুই ব্যক্তির মাঝে! কত ব্যবধান এ দুই ব্যক্তির ইসলাম অনুসরণের মাঝে!
এটা কোন বাড়াবাড়ি বা উগ্রতা নয়, বরং আমরা বলতে চাচ্ছি আমরা এমন যামানায় আছি যখন ইহুদী ও খ্রিস্টানেরা ইসলামী দেশগুলোর উপর আক্রমণ করছে আর তাগুতরা পেট্রোল, খাদ্যদ্রব্য, গোয়েন্দা বিভাগ দিয়ে তাদের সহযোগিতা করছে, তাদের জন্য আকাশপথ, স্থলপথ ও সমুদ্রপথ খুলে দিয়েছে এবং মুজাহিদদেরকে তাদের সাথে যুদ্ধ করতে বাঁধা দিচ্ছে। আমরা এমন এক যামানায় আছি যখন তারা আল্লাহর শরীয়তকে মানবরচিত কুফরী আইন দ্বারা পরিবর্তন করে ফেলেছে। সুতরাং যে ব্যক্তি এসব বিষয়কে প্রত্যাখ্যান করে তাগুতের বিরোধিতা করবে সে-ই অপরিচিতির জীবন যাপন করবে। আর যে কাফেরদের সঙ্গ দিয়ে তাদের স্বার্থ রক্ষার জন্য কাজ করবে কিংবা মৌনতা অবলম্বন করবে সে অপরিচিত নয়; যদিও ইসলামের জন্য তার অনেক খেদমত রয়েছে। কেননা মুজাহিদগণই ‘যারা হাতে জ্বলন্ত অঙ্গার রাখবে’ এই হাদিসের যোগ্যপাত্র।
প্রিয় ভাই, আপনি একটু ইনসাফের দৃষ্টিতে বর্তমান বিশ্বের ইসলামী দলগুলোর প্রতি লক্ষ্য করুন। অবশ্যই আপনি উপলব্ধি করতে পারবেন, কারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নির্দেশিত এই গুণটির অধিক নিকটবর্তী। একটু ভেবে দেখুন। এই হাদীসটিও ‘অপরিচিতি’র হাদীসের সমার্থক।
মুজাহিদগণের শত্রুরা অধিক শক্তিশালী, কিন্তু তাদের সাহায্যকারী খুবই অল্প। ইহুদী-খ্রিস্টান, তাগুত ও তাদের দোসররা এবং সরকারী আলেমরা তাদের শত্রু। কিছু ভুল ইজতিহাদের ক্ষেত্রে কতিপয় সত্যপন্থী আলেমের রুঢ় আচরণ থেকেও তারা নিরাপদ থাকে নি। তাদের সঙ্গ দিয়েছে কেবল কতিপয় হক্কপন্থী আলেম এবং ‘দীনে ফিতরত’ ধারণকারী কতিপয় মুমিন বান্দা। কিন্তু অধিকাংশ মুমিনরাই মুজাহিদদের দিকে নিন্দনীয় দৃষ্টিতে তাকায়, তাদের প্রতি মন্দ ধারণা পোষণ করে। এটা হয়েছে ইহুদী-খ্রিস্টান ও দরবারী আলেমদের অনুগামী ভ্রান্ত মিডিয়ার মিথ্যা প্রচারণার কারণে। মিথ্যাবাদী মিডিয়াগুলো মুজাহিদদের নামে এমন কত মিথ্যা রিপোর্ট করেছে যা থেকে তারা সম্পূর্ণ মুক্ত ও নির্দোষ! তারা মুজাহিদদের বিজয়গুলো এবং কাফেরদের পরাজয়গুলো কত লুকিয়ছে! তাদের এই মিথ্যা প্রচারণা কতিপয় সত্যপন্থীকেও ধোঁকা দিয়েছে। (এই বিষয়টি স্বতন্ত্র আলোচনার দাবী রাখে। এটা আলোচনার উপযুক্ত জায়গা নয়।)
প্রিয় ভাই, আপনি ঐ মুজাহিদের প্রতি লক্ষ্য করুন, যে নিজের জান-মাল আল্লাহর রাস্তায় বিসর্জন দিয়েছে এবং আল্লহর মর্যাদার বিষয়সমূহ সম্মানহানী হতে দেখে সে আল্লাহর জন্য দাঁড়িয়ে গেছে, আল্লাহর জন্য নিজের জীবনের নযরানা মেনেছে, দুনয়িার ভোগসামগ্রী থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে, ফলে তার ভাগ্যে জুটেছে শান্তির পর ভয়, সচ্ছলতার পর দারিদ্র্য, আল্লাহর ভূমিতে শান্তিপূর্ণ বিচরণের পর বয়কট। এতদ্*সত্ত্বেও তার প্রতি অপবাদের অন্ত নেই! তার প্রতি অপবাদ আরোপ করা হয় যে, তার আকীদা সংশয়পূর্ণ, সে হিকমাহ বুঝে না এবং সে উম্মাহর ক্ষতি ডেকে আনছে। স্বীয় দীনকে মজবুতভাবে আঁকড়ে ধরার কারণে সে কি অন্যদের তুলনায় অধিক কষ্টের সাথে হাতে জ্বলন্ত অঙ্গার ধারণ করে আছে না?? আল্লাহ বলেন,
أَحَسِبَ النَّاسُ أَنْ يُتْرَكُوا أَنْ يَقُولُوا آمَنَّا وَهُمْ لَا يُفْتَنُونَ
‘মানুষ কি মনে করেছে যে, ‘ঈমান এনেছি’ একথা বলার কারণেই তাদের ছেড়ে দেয়া হবে এবং তাদেরে পরীক্ষা করা হবে না?’ ( সূরা আনকাবুত, আয়াত: ২)মুজাহিদগণ এখন পরীক্ষার সম্মুখীন। সন্দেহ নেই, সত্যাশ্রয়ীরা অবশ্যই পরীক্ষার সম্মুখীন হবে। কেননা সর্বত্রই ইহুদি-খ্রিস্টান ও তাদের মুনাফিক দোসরদের কর্তৃত্ব চলছে এবং তারা মুসলিম দেশগুলো শাসন করছে। সুতরাং হলফ করেই বলা যায় যে, একজন সত্যাশ্রয়ী কখনো পরীক্ষার সম্মুখীন না হয়ে থাকতে পারে না। কারণ কাফেরদের প্রাধান্য বিস্তারের সময় যে ব্যক্তিই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শের উপর অটল থাকার ইচ্ছা পোষণ করবে অবশ্যই সে কাফেরদের থেকে কঠোর নির্যাতনের শিকার হবে। তো এমন পরীক্ষার সম্মুখীন না হয়েও ‘সাহায্যপ্রাপ্ত দলে’র অন্তর্ভুক্তির দাবীকারীকে আমি বলবো, হয়ত আপনি মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শের উপর থাকবেন, তখন অবশ্যই আপনাকে কাফিরদের নির্যাতনের শিকার হতে হবে; নয়ত (রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আদর্শ থেকে বিচ্যুত হয়ে) পরীক্ষার সম্মুখীন না হয়ে শান্তিতে জীবন যাপন করবেন। সুতরাং আপনি আপনার অনুসৃত পথ ও পন্থাটাকে আরেকবার দেখে নিন এবং নিজেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করুন। যে কোন দল যদি তার যাত্রাপথে বাঁধা বা পরীক্ষার সম্মুখীন না হয় তাহলে অবশ্যই তাদের নিজেদের কর্মপদ্ধতিটা পুনরায় যাচাই করে দেখা উচিৎ। সায়্যিদ কুতুব রহ. এ উপদেশই দিয়ে গেছেন।
৫. কারণ তারা মিল্লাতে ইবরাহীমের অনুসরণে অগ্রগামী
প্রিয় ভাই, আল্লাহ তাআলা আমাদেরকে মিল্লাতে ইবরাহীমের অনুসরণের আদেশ দিয়ে বলেন,
وَمَنْ يَرْغَبُ عَنْ مِلَّةِ إِبْرَاهِيمَ إِلَّا مَنْ سَفِهَ نَفْسَهُ
‘কে মিল্লাতে ইবরাহীম থেকে বিমুখ হতে পারে নির্বোধ ছাড়া?’ (বাকারা, আয়াত ১৩০)সুতরাং যে ব্যক্তিই মিল্লাতে ইবরাহীম থেকে বিমুখ হবে এবং মিল্লাতে ইবরাহীমের বিরোধিতা করবে সেই নির্বোধ সাব্যস্ত হবে। প্রকৃত মুমিন তো সর্বাবস্থায় শরীয়তের অনুসারী হবে। শরীয়ত যদি তার জ্ঞানবিরোধী হয় তবে তার জ্ঞানই অভিযুক্ত হবে। তো আমরা কোন প্রকার কদাকার যুক্তি এবং বুদ্ধিহীন বিবেকের আশ্রয় না নিয়ে নির্দ্বিধায় বলতে পারি যে, আল কায়েদা মিল্লাতে ইবরাহীমের অনুসরণের ক্ষেত্রে অগ্রগামী। মিল্লাতে ইবরাহীম সম্বন্ধে বিস্তারিত আলোচনার পর আপনিই বাস্তবতার সাথে মিলিয়ে আমার কথার সত্যতা উপলব্ধি করতে পারবেন।
আল্লাহর একটি বাণীর প্রতি লক্ষ করুন,
قَدْ كَانَتْ لَكُمْ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ فِي إِبْرَاهِيمَ وَالَّذِينَ مَعَهُ إِذْ قَالُوا لِقَوْمِهِمْ إِنَّا بُرَآءُ مِنْكُمْ وَمِمَّا تَعْبُدُونَ مِنْ دُونِ اللَّهِ كَفَرْنَا بِكُمْ وَبَدَا بَيْنَنَا وَبَيْنَكُمُ الْعَدَاوَةُ وَالْبَغْضَاءُ أَبَدًا حَتَّى تُؤْمِنُوا بِاللَّهِ وَحْدَهُ
অবশ্যই তোমাদের জন্য ইবরাহীম এবং যারা তার সাথে ঈমান এনেছে তাদের মাঝে উত্তম আদর্শ রয়েছে; যখন তারা নিজ সম্প্রদায়ের উদ্দেশ্যে বলেছিল, তোমাদের সঙ্গে এবং তোমরা আল্লাহ ছাড়া যাদের ইবাদত কর তাদের সাথে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই। আমরা তোমাদের মানি না। আমাদের ও তোমাদের মধ্যে চিরকালের জন্য শত্রুতা ও বিদ্বেষ সৃষ্টি হল; যদি না তোমরা এক আল্লাহর প্রতি ঈমান আন। (মুমতাহিনা, আয়াত : ৪)উক্ত আয়াতে ইবরাহীম আলাইহিস সালামের যে আদর্শের প্রতি আলোকপাত করা হয়েছে তা হল, দু্র্বল অবস্থাতেও কাফের-মুশরিক ও তাদের উপাসনা থেকে সম্পর্কচ্ছেদ করা এবং তাদের সাথে সম্পর্কহীনতার ঘোষণা দেয়া। কতিপয় আলেম বলেন, এটাই হল মা‘বুদ বা উপাস্যের পূর্বে ‘আবেদ’ তথা উপাসনাকারীদের থেকে সম্পর্কচ্ছেদ। কারণ মানুষ কখনো বাতিল উপাস্যের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করে, কিন্তু ব্যক্তিগত স্বার্থ বা অন্য কোন অজুহাতে উপাসনাকারীদের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করে না। এমন করলে সে পরিপূর্ণ মিল্লাতে ইবরাহীমের অনুসারী হবে না; যতক্ষণ না উপাসনাকারীদের থেকেও সম্পর্কচ্ছেদ করে। লক্ষ্যণীয় বিষয় হল, তাঁরা শুধু সম্পর্কহীনতার ঘোষণা দিয়েই ক্ষান্ত থাকেন নি, বরং এটাও বলে দিলেন যে, “كَفَرْنَا بِكُمْ” (আমরা তোমাদের মানি না) যাতে আল্লাহর বন্ধু ও শত্রুদের মাঝে পার্থক্যটা পরিপূর্ণভাবে স্পষ্ট হয়ে যায়। তারপরের আয়াতে ‘শত্রুতা’কে ‘বিদ্বেষের পূর্বে উল্লেখ করা হয়েছে। কারণ শত্রুতাটা প্রকাশ্যে হয়ে থাকে আর বিদ্বেষ অন্তরে লুক্কায়িত থাকে। তাছাড়া তাদের সাথে শত্রুতাটা ততক্ষণ পর্যন্ত বলবৎ থাকবে যতক্ষণ না তারা এক আল্লাহর প্রতি ঈমান আনে। হে ভাই, এবার আপনিই চিন্তা করে দেখুন, আল কায়েদা এই আদর্শকে কতটা দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরেছে।
পরবর্তী পর্বগুলোও শীঘ্রই দেয়া হবে ইনশা্*আল্লাহ.. আপনাদের নেক দোআয় ভুলবেন না...
Comment