কেন আমি আল কায়েদায় অংশগ্রহণ করলাম
মূল
শায়খ আবু মুসআব মুহাম্মদ উমায়ের আল কালাবী আল আওলাকী রহ.
ভাষান্তর
আবু হামযা আল হিন্দী
৭. কারণ তারা বিজয় অর্জনের জন্য শরয়ী নির্দেশনা ও জাগতিক উপায়-উপকরণ দুটোই গ্রহণ করেছে
আল্লাহর যমীন থেকে ঔপনিবেশিক ও মুরতাদদের বিতাড়িত করে আল্লাহর বিধি-বিধান বাস্তবায়িত করে বিজয় অর্জন এবং যে উদ্দেশ্যে কোরআন নাজিল হয়েছে সে উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের জন্য যেমনি শরয়ী নির্দেশনার অনুসরণ করতে হবে তেমনি জাগতিক নীতিমালাও অবলম্বন করতে হবে। সুতরাং দলীল-প্রমাণের যেমন প্রয়োজন রয়েছে তেমনি তীর-তরবারিরও সমান গুরুত্ব রয়েছে। তাদের শরয়ী নির্দেশনার অনুসরণ: জিহাদ সম্বন্ধে শরীয়তের পূর্ণ জ্ঞান নিয়েই তারা ময়দানে নেমেছে। তারা জানে জিহাদ কখন বৈধ, জিহাদের ফজিলত কী, মানুষের অন্তরে জিহাদের প্রতি ভালোবাসার বীজ বপনের গুরুত্ব কতটুকু তারা এসব বিষয় সম্বন্ধে জ্ঞান লাভ করেই এই কঠিন সময়েও আল্লাহর আদেশ পালনার্থে জিহাদে বেরিয়েছে। জিহাদে বের হওয়াই তাদের প্রধান কর্তব্য। কারণ মহান আল্লাহই তাদেরকে বের হতে উদ্বুদ্ধ করছেন। আল্লাহ বলেন,
مالكماذاقيللكمانفروافيسبيلاللهاثاقلتمالىالارضارضيتمبالحياةالدنيامنالخرةفمامتاعالحياهالدنيافيالاخرهالاغرور
হে মুমিনগণ, তোমাদের কী হল, যখন তোমাদেরকে আল্লাহর পথে অভিযানে বের হতে বলা হয় তখন তোমরা ভারাক্রান্ত হয়ে জমিনের প্রতি ঝুঁকে পড়? তোমরা কি আখেরাতের পরিবর্তে পার্থিব জীবন নিয়ে সন্তুষ্ট হয়ে গেছ? আখেরাতের তুলনায় পার্থিব জীবনের ভোগের উপকরণ অতি সামান্য। (তাওবা, আয়াত: ৩৮) তাই আমরা দেখতে পাই যে, তাদের বিচারক ও দায়িত্বশীলগণ স্বশরীরে জিহাদে অংশগ্রহণ করেন। আর এটা তো স্বতঃসিদ্ধ যে, যে ব্যক্তি কার্যত জিহাদে অংশগ্রহণ করে জিহাদী মাসায়েল সংক্রান্ত এমন অনেক বিষয় সম্বন্ধে তার সুস্পষ্ট ধারণা থাকে, যা জিহাদ না করা অনেক আলেমেরও জানা থাকে না। আমি শুনেছি ইবনে উসাইমীন রহ. অনেক জিহাদী মাসআলায় শায়েখ উসামা রহ. এর শরণাপন্ন হয়েছেন এবং তাঁর থেকে উপকৃত হয়েছেন। অথচ এ দু’জনের ইলমের মাঝে কত বিস্তর ব্যবধান তা সবারই জানা। অনেক আলেম আমাকে জানিয়েছেন যে, তারা জিহাদের পথে আসার পর আল্লাহ তাদের এমন ইলম ও জ্ঞান দান করেছেন যা তাদের পূর্বে ছিল না। এ পথে আসার পর এমন অনেক মাসআলা তাদের নিকট স্পষ্ট হয়েছে যা তাদের নিকট পূর্বে অস্পষ্ট ছিল। সুতরাং বলাই বাহুল্য, জিহাদের বিধি-বিধানের ক্ষেত্রে মুজাহিদগণই সঠিক সিদ্ধান্ত দিতে পারেন। হ্যাঁ, কখনো ভুল হয়ে যেতে পারে। এটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। কতিপয় সাহাবীরও তো ভুল হয়েছে। তাদের জাগতিক নীতিমালা অবলম্বন: যে কোন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা কিংবা কোন দেশে ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার জন্য শক্তি প্রদর্শন ও লড়াই-মোকাবেলার বিকল্প নেই। এমনকি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রগুলোও সর্বগ্রাসী যুদ্ধের মাধ্যমেই প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। এই যে শক্তি অর্জন ও প্রদর্শন, যুদ্ধ জিহাদ- রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য এটাই জগতের নিয়ম। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামও এই পদ্ধতিই অবলম্বন করেছিলেন। তিনি সশস্ত্র আনসার ও মুহাজিরদের নিয়ে মদীনায় ইসলামী রাষ্ট্র কায়েম করেছিলেন। অথচ হাত গুটিয়ে রাখা কতিপয় দল সশস্ত্র সহযোগী ও সদস্য সংগ্রহ করা থেকে দূরে থাকে। কারণ এর দ্বারা তাগুত গোষ্ঠী তাদের উপর চড়াও হবে, যার কারণে _তাদের ধারণামতে_ তাদের দাওয়াহ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তারা অন্য কোন দেশে বা নিরপদে জিহাদী প্রশিক্ষণ গ্রহণ করা যায় এমন কোন পাহাড়ে হিজরত করা থেকে দূরে থাকে, যাতে তারা এই অভিযোগে অভিযুক্ত না হয় যে, তারা তাগুতের রাষ্ট্র ধ্বংসের চেষ্টায় লিপ্ত! তাদের হিজরত পরিত্যাগের আরেক কারণ হল তারা দেশকে দায়ীমুক্ত রাখতে চায় না। অথচ তারা এর দ্বারা মক্কী জীবনের শরয়ী নীতির বিরোধিতা করেছে, একই সাথে জাগতিক নীতিরও বিরুদ্ধাচরণ করেছে। (বিস্তারিত, ইদারাতুত তাওয়াহ্*হুশ, পৃ. ৯৪) সুতরাং যে ব্যক্তি শুধু ইলম ও তাযকিয়া নিয়ে ব্যস্ত থাকে অথচ বিজয় অর্জনের আশা করে, তার পক্ষে তা কখনই সম্ভব হবে না। কারণ সে শরীয়ত ও জগতের নিয়ম লঙ্ঘন করেছে অর্থাৎ ই‘দাদ ও যুদ্ধ-বিগ্রহের নীতি বর্জন করেছে। এমনিভাবে যারা ভোটাভুটির মাধ্যমে ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে চায়, তারাও এতে কিছুতেই সফল হতে পারবে না। বাস্তবতাই এর জ্বলন্ত প্রমাণ। তাছাড়া এটা জগতের নীতিরও বিপরীত। তাহলে কেন আমরা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের স্পষ্ট নির্দেশনা তথা জিহাদ ছেড়ে দেব?! কেউ বলতে পারে, ‘আমরা দুর্বল বিধায় জিহাদ ছেড়ে দিব।’ আমরা বলব, দুর্বলতা কখনো নববী চিকিৎসা ছেড়ে দেয়াকে বৈধতা দিতে পারে না। বরং আমাদের দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠার পদ্ধতি খুঁজে বের করতে হবে। জিহাদ ছাড়া আমরা শক্তিশালীও হতে পারব না, বিজয়ও অর্জন করতে পারব না। সুতরাং যে কোরআন-সুন্নাহ যথাযথ অনুসরণ করতে চায় তার জন্য এই দুটো বিষয় অপরিহার্য: দলিল-প্রমাণের জ্ঞান এবং তীর-তলোয়ার; পথ প্রদর্শনকারী কিতাব এবং সাহায্যকারী তরবারি। এরপর দায়িত্ব আল্লাহর- وكفىبربكهادياونصيرا
তোমার প্রতিপালক পথপ্রদর্শন ও সাহায্যের জন্য যথেষ্ট। (ফুরকান, ৩১)
৮. কারণ ইসলামী দলগুলোর মধ্যে ইহুদী-খ্রিস্টান ও মুনাফিকদের পক্ষ থেকে তারাই সবচেয়ে বেশি আক্রোশ ও ঘৃণার শিকার।
আমি নিজেকে প্রশ্ন করলাম : কোন দলটিকে ইহুদী-খ্রিস্টানরা সবচেয়ে বেশি অপছন্দ করে?আমার মনে হল, ন্যায়সঙ্গত উত্তর এটাই যে, সেই দলটি হল আল কায়েদা। প্রত্যেক সঠিক বোধসম্পন্ন ইনসাফকরী ব্যক্তি এই উত্তরই দিবে বলে আমার বিশ্বাস।তারপর নিজেকে আবার প্রশ্ন করলাম : কেন তারা ইহুদী-খ্রিস্টানদের কাছে এতটা অপছন্দনীয়?আমার মন বললো, কারণ তারা সত্যের উপর প্রতিষ্ঠিত; কারণ তারা সীমালঙ্ঘনকারী কাফেরদের বিরুদ্ধে কঠোরতার ক্ষেত্রে শরীয়তের আদেশ যথাযথ পালন করেছে। আল্লাহ কাফরেদের ব্যাপারে নবীকে আদেশ দিচ্ছেন-
ياأيهاالنبيجاهدالكفاروالمنافقينواغلظعليهم
‘হে নবী আপনি কাফের ও মুনাফিকদের সাথে জিহাদ করুন এবং তাদের প্রতি কঠোরতা প্রদর্শন করুন।’ (তাওবা, ৭৩) সুতরাং যে এই বিধান পুরোপুরি পালন করবে, কোন প্রকার শিথিলতা প্রদর্শন করবে না, কাফেরদের সাথে দরদাম করবেনা এবং কোন আকীদার ক্ষেত্রে নমনীয় হবে না, সে অবশ্যই তাগুতের গলার কাঁটায় পরিণত হবে এবং তারা তার প্রতি প্রচণ্ড আক্রোশ ও ঘৃণা পোষণ করবে। অপরদিকে যারা গণতন্ত্রের পথে চলবে এবং নিজ আকীদায় কিছুটা শিথিলতা করবে- যেমন কেউ আল ওয়ালা ওয়াল বারা-এর কতিপয় বিষয়ে শিথিলতার আশ্রয় নিল (যেমন কেউ প্রকাশ্য মুনাফিকের নিফাক জানা সত্ত্বেও তাকে নিজ ভাই ও বন্ধু বলে মেনে নিল কেবল রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের জন্য, শরীয়তের দলিল সমূহের প্রতি ভ্রুক্ষেপও করলো না-) এভাবে যারা কাফেরদের সাথে নমনীয় ও কোমল আচরণ করবে কাফেররাও তাদের প্রতি নমনীয় হবে, কোমল আচরণ করবে- এটাই স্বাভাবিক।আল্লাহ বলেন, ودوالوتدهنفيدهنون
ঈমানী দায়িত্ববোধে একটু চিন্তা করুন- আমি কথাগুলো বলব ঐ সকল মুসলিমদের উদ্দেশ্যে যারা ইসলামী দলগুলোর মধ্যে আল কায়েদাকে সবচেয়ে বেশি অপছন্দ করে। সাধারণ মুসলমান, ধর্ম সম্পর্কে কিছু জানেন এমন মুসলমান, তালিবে ইলম এবং যেসব আলেম আল কায়েদা সম্বন্ধে মন্দ ধারণা পুষে রেখেছেন তাদের সকলকেই আমি কথাটা বলব। কথাটা হলো- আপনারা কিন্তু এক্ষেত্রে আমেরিকা ও তার সহযোগীদের সঙ্গ দিয়েছেন এবং পরোক্ষভাবে তাদের সাথে একাত্মতা ঘোষণা করেছেন। আমেরিকা যেমন অন্যান্য ইসলামী দলের তুলনায় আল কায়েদাকে বেশি অপছন্দ করে আপনারাও তেমন অন্যান্য ইসলামী দলগুলোর তুলনায় আল কায়েদাকে বেশি অপছন্দ করেন। বিষয়টা কি কখনো চিন্তা করে দেখেছেন?কখনো কি নিজেদের প্রশ্ন করেছেন, আমেরিকা আপনাদের শত্রু হওয়া সত্ত্বেও এ ক্ষেত্রে কিভাবে তাদের সাথে একমত হয়ে গেলেন? কখনো কি ঠাণ্ডা মাথায় সত্যানুসন্ধিত্সা নিয়ে চিন্তা করেছেন, আল কায়েদার কোন বিষয়টা আপনারা অপছন্দ করছেন? আল কায়েদা কি এমন কোন নীতির উপর চলছে যা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের আদর্শের বিপরীত? আল্লাহর অশেষ কৃপায় অবশ্যই আপনারা তা পাবেন না। তারা যাবতীয় মাসআলায় আহলে সুন্নাতের মানহাজেরই অনুসরণ করছে। রাষ্ট্রীয় আইনে যারা আল্লাহর বিধান অনুযায়ী ফায়সালা করে না, আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের বিশ্বাসমতে তারা কাফের, যারা মুসলিমদের বিরুদ্ধে কাফেরদের সহযোগিতা করে আহলে সুন্নাতের নিকট তারাও কাফের- এসব মাসআলায় আল কায়েদা সম্পূর্ণ আহলে সুন্নাতের মানহাজেরই অনুসরণ করেছে। আচ্ছা, আপনাদের কতিপয় কেন কাফেরদের সংবাদমাধ্যমগুলোর প্রতি আস্থা রাখে এবং মুজাহিদের সংবাদ মাধ্যমগুলোর প্রতি আস্থা রাখে না? কেন তারা মুজাহিদদের অডিও-ভিডিও ও তাদের খবরাখবর প্রচারের ঘোরবিরোধী? আচ্ছা, বলুন তো আমেরিকারা যদি জানতে পারে যে, আপনি মুজাহিদের খবরাখবর প্রচারে বাধা দিচ্ছেন তবে - নিজেকে একটু প্রশ্ন করুন- এ কাজটি কি তাদের উৎফুল্ল করবে নাকি না? আপনি আরেকবার কল্পনা করুন সেসকল মুসলিমদেরকে যারা তাদের সন্তান, পিতামাতা ও স্ত্রীদের হারিয়েছে_যারা ‘ওয়া-মু’তাসামাহ’ বলে মুসলিমদের কাছে ফরিয়াদ করছিল_যখন তারা জানতে পারবে যে, আপনি মুজাহিদদের সংবাদ প্রচারে বাধা দিচ্ছেন তবে তারা কি এতে উৎফুল্ল হবে?? উত্তরটা সুবিচারকারী নিষ্ঠাবান ব্যক্তির কাছেই আছে। কিন্তু সুবিচার কোথায়? সুবিচার পাওয়া তো বড় কঠিন। কবি বলেন- ‘আমি আমার জাতিকে দেখেছি তারা একে অপরকে হত্যা করছে। কোন সালাহুদ্দিনের আহ্বান আর শোনা যায় না! তাই আমি কোন দিকে না তাকিয়ে এবং হতাশা প্রকাশ না করে আমার পথে চলেছি। আমার মন আমার বালিশ ও শয্যা ত্যাগ করেছে। আমার রূহ এসে গেছে আমার হাতের মুঠোয়। আমি আমার কামান বহন করে বেড়াই। যুদ্ধের সময় আমি আনন্দচিত্তে গেয়ে বেড়াই- আমি কখনো নম্র হবো না, ফাঁসি, হত্যা কিংবা দেশান্তর করে আমার দৃঢ় ইচ্ছা ও সংকল্পকে দমিয়ে রাখা সম্ভব নয়।’ বিচারের নির্দিষ্ট সময় আল্লাহই জানেন। তখন তাদের প্রতিটি কথা ও কাজের হিসাব নেওয়া হবে। আল্লাহ বলেন
وبدالهممناللهمالميكونوايحتسبون
তখন তাদের এমন বিষয় প্রকাশ পেয়ে যাবে যা তারা কল্পনাও করত না। (সূরা যুমার, আয়াত : ৪৭)৯. কারণ আল্লাহর জন্য ভ্রাতৃত্ব বন্ধন ও ইসলামী ভ্রাতৃত্বের প্রতি তারা অত্যন্ত গুরুত্বারোপ করে।
আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পবিত্র জীবনী অধ্যয়ন করে যে সত্যটি উপলব্ধি করতে পেরেছি তা হলো, সাহাবাগণ কেবল আল্লাহর জন্য পরস্পর ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে ভ্রাতৃত্ববোধের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত উপস্থাপনের পরই রাসুলুল্লাহকে জিহাদের বিধান দেয়া হয়েছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম মদীনায় হিজরতের পর তার প্রথমিক কাজগুলোর অন্যতম ছিল- মুহাজির ও আনসারদের মাঝে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন সৃষ্টি করা। শায়খ মুবারকপুরী রহ. বলেন, মদীনায় আগমনের পর আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যেমন সমবেতস্থলরূপে মসজিদ নির্মাণ করেছেন তেমনি আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ও চমৎকার কাজ করেছেন যা ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লিখিত আছে : তা ছিলো আনাস ইবনে মালিক রা. এর গৃহে মুহাজির ও আনসারদের ভ্রাতৃত্ববন্ধনে আবদ্ধ করা। তারা ছিলেন নব্বই জন; অর্ধেক মুহাজির ও অর্ধেক আনসার। পরস্পর সহযোগিতার প্রতিশ্রুতিতে তিনি তাদের ভ্রাতৃত্ববন্ধনে আবদ্ধ করেছেন।এমনকি বদর যুদ্ধের আগ পর্যন্ত আত্মীয় না হওয়া সত্ত্বেও একজন আরেকজনের থেকে মীরাস পেত। কিন্তু নিম্নোক্ত আয়াত যখন নাযিল হল তখন ভ্রাতৃসূত্রে মীরাস লাভের বিষয়টিকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হল। আয়াত-
وأولوالأرحامبعضهمأولىببعضفيكتاباللهمنالمؤمنينوالمهاجرين
আল্লাহর বিধান অনুসারে মুমিন ও মুহাজিরগণ অপেক্ষা যারা আত্মীয় তারা পরস্পরের নিকটতর। –(আররহীকুল মাখতূম, পৃ. ১৪৪) আবু হুরায়রা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আনসারগণ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বললেন, ‘আমাদের এবং আমাদের মুহাজির ভাইদের মাঝে খেজুর বাগান ভাগ করে দিন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, না। তখন তারা (মুহাজিরদেরকে) বললেন, আপনারা আমাদের বাগানে কাজ করুন; আমরা আপনাদেরকে ফলে অংশীদার করবো। তারা বললেন, আমরা শুনলাম এবং মানলাম।আল্লাহর জন্য ভ্রাতৃত্ববন্ধন ও ইসলামী ভ্রাতৃত্ববোধের দৃষ্টিকোণ থেকে যখন আমি ইসলামী দলগুলোর প্রতি দৃষ্টিপাত করলাম তখন এক্ষেত্রে সর্বশ্রেষ্ঠ দুটি দল পেলাম- তাবলীগ জামাত ও আল কায়েদা। যখন এই দুটির মধ্যে তুলনামূলক বিশ্লেষণ করলাম তখন আল কায়েদাকেই আমার শ্রেষ্ঠ মনে হল। কারণ তারা রণক্ষেত্রে যুদ্ধের ময়দানে আত্মোৎসর্গের জন্য সদা প্রস্তুত থাকে। অন্য ভাইয়ের জন্য নিজের জান কুরবান করে দেয় এবং নির্দ্বিধায় নিজেকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেয়। কখনো দেখা যায়, সেনাপতি তার সেনাদের লুকিয়ে যেতে আদেশ করেন এবং তিনি নিজে তাদের জন্য ঢাল হয়ে যান এবং তাদেরকে রক্ষা করার জন্য চেষ্টা করতে থাকেন; অবশেষে তিনি শহীদ হন আর তার সেনারা বেঁচে যায়। আবার কখনো কমান্ডার সেনাদের লুকিয়ে পড়তে আদেশ দিয়ে নিজেকে যখন মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিচ্ছেন, ঠিক তখনই কতিপয় সেনা তার আদেশ লঙ্ঘন করে তার পাশে এসে মৃত্যুর কাফেলায় অংশগ্রহণ করে। এটা তারা করে অবাধ্যতার কারণে নয় বরং আত্মোৎসর্গের চেতনায়। সুবহানাল্লাহ! এগুলো এমন ঘটনা যা উম্মাহর ইতিহাসে কেবল বিশেষ মুজাহিদ বান্দাদের মাঝেই খুঁজে পাওয়া যায়। ইতিপূর্বে আমি কতিপয় ইসলামী দলের সাথে ওঠাবসা করেছি। কিন্তু ইসলামী ভ্রাতৃত্ববন্ধনের ক্ষেত্রে আল কায়েদার মতো এতটা গুরুত্ব অন্য কোথাও পাইনি। আমি দীর্ঘদনি ইলমী মারকাযে থেকেছি। সেখানে কল্যাণ ও ইলমের বারিধারা থাকলেও সুবিচারকারী ব্যক্তি মাত্রই বুঝতে পারবেন, ইসলামী ভ্রাতৃত্ববোধের ক্ষেত্রে অনেক তালিবে ইলমের মাঝেই রয়েছে দুর্বলতা। যখন আমরা সীরাত পড়ি এবং অনেক তালিবুল ইলমের অবস্থা দেখি তখন সত্যিই আমাদের মাঝে সুদীর্ঘ ব্যবধান দেখতে পাই। আমি কয়েক বছর যাবৎ এ শূন্যতাটাই অনুভব করছিলাম। অতঃপর যখন আল কায়েদার সাথে যোগাযোগ আরম্ভ করলাম তখন দেখতে পেলাম তারা অন্যদের থেকে অনেক ব্যতিক্রম। তারা একে অপরকে অনেক সম্মান ও মহব্বত করে। জিহাদের শিক্ষাকে যিন্দা করা ও জিহাদের প্রতি বিদ্বেষ না রাখার শর্তে তারা অন্যদেরও ভালোবাসে। জেনে রেখ হে বিজয়াকাঙ্ক্ষী ব্যক্তি, যে দল ইসলামী ভ্রাতৃত্বের প্রতি গুরুত্বারোপ করে না সে দল কোনদিনই বিজয় অর্জন করতে পারবে না। কারণ এটা মুহাম্মদ সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর সাহাবাগণের আদর্শের বিপরীত। রাসূল সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুদ্ধ শুরুর পূর্বে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনকে কতটা গুরুত্ব দিয়েছিলেন আমরা পূর্বে আলোচনা করেছি। এটাই ছিলো তাদের আদর্শ। তাহলে এমন দল কীভবে বিজয়ের আশা করে যারা পরস্পরে কৃচ্ছতা করে, এক ভাই অপর ভাইকে প্রাধান্য দেয় না এবং তারা একে অপরের অনেক কাছে থাকা সত্ত্বেও মাসের পর মাস কেউ কারো সাথে দেখা করে না? একটি ঘটনা : আমি একবার ইয়ামানের এক শায়খের নিকট ইলম অন্বেষণের জন্য যাচ্ছিলাম, পথিমধ্যে আদনের কিছু ছাত্রের সাথে আমার সাক্ষাত হল। তারাও শায়খের কাছে যাচ্ছিল। সেখানে যেই গাড়িটি ছাত্রদের আনা-নেওয়া করতো তার মালিক ছিলো ঐ শায়খের বড় ছাত্রদের একজন, এমনকি কখনো শায়খ না থাকলে সেই তাঁর স্থলাভিষিক্ত হত। আদন থেকে আসা ছাত্ররা তাদের বই ও আসবাবপত্র ঐ ছাত্রের গাড়িতে উঠাল। তারপর সে তাদের সাথে ভাড়ার ব্যাপারে কথা বলল। তাদের কাছে ভাড়া কিছুটা কম ছিল। তাই বড় ছাত্রটি তাদেরকে তার গাড়িতে উঠাতে অস্বীকৃতি জানাল। তখন তারা বাধ্য হয়ে তাদের কিতাবাদী ও আসবাবপত্র তার গাড়ি থেকে নামিয়ে অন্য গাড়ির খোঁজ করতে লাগল। পাঠক, আপনিই তার এই আচরণের প্রতি লক্ষ্য করুন! এটা যদি হঠাৎ ঘটে যাওয়া ব্যতিক্রম কোন ঘটনা হত তাহলে আমি তা উল্লেখ করতাম না। কিন্তু বাস্তবতা হল এমন ঘটনা অহরহ ঘটছে। কারণ ভ্রাতৃত্বটা তাদের কাছে খুবই সাধারণ বিষয় এবং তাদের নিকট এর গুরুত্বও কম। আবার এর মানে এই নয় যে, তাদের মাঝে ভ্রাতৃত্ববোধ মোটেই নেই। কিন্তু আমি বলতে চাচ্ছি, একটি জিহাদী দল ভ্রাতৃত্ব বন্ধনের ক্ষেত্রে অন্যান্য দল থেকে অনেক বেশি গুরুত্ব দেয়। এর কারণ আল্লাহ তাদের এর উপর আমল করার তৌফিক দান করেন। কারণ এ পথে সাধারণত সাহসীরাই বিচরণ করে। আর সাহসীরা মহৎ গুণের অধিকারী হয়। তাছাড়া মুজাহিদরা যখনই শত্রুদের থেকে শঙ্কিত হয় তখনই তাদের মাঝে মুহাব্বত ও ভালোবাসা বৃদ্ধি পায়, একে অন্যকে প্রধান্য দেয়ার আগ্রহ পয়দা হয়। আশ্চর্য পরবির্তন : আমি এবং আরো কয়েকজন যুবক একটি দলের সাথে যুক্ত ছিলাম। তারপর আল্লাহ আমাদের মুজাহিদের সাথে যুক্ত হওয়ার তৌফিক দান করলেন। তখন আমাদের অবস্থা পুরো পরিবর্তন হয়ে গেল। আমাদের মধ্যে সম্পর্ক ছিল দুর্বল, পরে তা বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্যকে অগ্রাধিকার দেয়ার গুণটি আমাদের মাঝে ছিলই না, পরে আমরা অগ্রাধিকারে অভ্যস্ত হয়েছি। আমাদের মাঝে খুব কম যোগাযোগ হত, পরে তা নিয়মিত হতে লাগল। দেখুন, ব্যক্তি একই, কিন্তু কী পরিবর্তন! এসবই সম্ভব হয়েছে আল কায়েদায় যুক্ত হওয়ার কল্যাণে। আল কায়েদা এই ভ্রাতৃত্ব বন্ধনের প্রতি অনেক গুরুত্ব দিয়েছে। তাই আমি আল কায়েদাকে সবচে’ বেশি ভালোবেসেছি। তাদের মত মুহাব্বত কাউকেই করি নি। আর আমি এমন কোন মানুষ পাই নি যে আমাকে তাদের মতো ভালোবেসেছে। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, যখন কেউ তার ভাইকে ভালোবাসে তখন সে যেন তাকে তা জানিয়ে দেয়। আমি আমার ভাইদের ভালোবাসার কথা জানিয়ে দিলাম। এখানে আমি আরো একটি কথা বলতে চাই - বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের মুসলিমদের অবস্থা নিয়ে আল কায়েদার উদ্বেগ ও উত্কণ্ঠা থেকেই বোঝা যায় তারা ইসলামী ভ্রাতৃত্বের প্রতি কতটা শ্রদ্ধাবান এবং তারা তা কতটা গুরুত্বের সাথে গ্রহণ করে।
পরবর্তী পর্বগুলোও শীঘ্রই দেয়া হবে ইনশাআল্লাহ…. আপনার নেক দুআয় ভুলবেন না….
Comment