কেন আমি আল কায়েদায় অংশগ্রহণ করলাম
মূল
শায়খ আবু মুসআব মুহাম্মদ উমায়ের আল কালাবী আল আওলাকী রহ.
ভাষান্তর
আবু হামযা আল হিন্দী
১২. কারণ তারা সরকারী আলেম নামক পরিভাষাটিকে পুনরুজ্জীবিত করেছে।
খাইরুল কুরুন থেকেই এই পরিভাষাটি হকপন্থী আলেমদের মুখে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। আমাদের পূর্বসূরীগণ সরকারী আলেমদের থেকে সতর্ক থাকতেন এবং অন্যদের সতর্ক করতেন। কারণ তাদের রয়েছে অনিষ্টকর প্রভাব, তারা সত্যকে মিথ্যা ও মিথ্যাকে সত্য বানিয়ে দেয়। শাসকদের বক্রতাকে তারা শরীয়ত কর্তৃক বৈধতার প্রলেপ লাগিয়ে দেয় এবং সরকারের অপরাধ এমনকি তাদের কুফরীর ব্যাপারেও মৌনতা অবলম্বন করে । এইজন্যই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে শাসককে দরবারে যাবে সে ফেতনায় পড়বে । ( আবূ দাঊদ, আলবানী সহীহ বলেছেন।)
একটু চিন্তা করুন, পূর্ব যুগে তো এই পরিভাষা প্রচলিত ছিল এবং আলেমগণ সাধারণ মানুষকে তাদের থেকে সতর্ক করছেন। কিন্তু এখন যে ইসলামী দলগুলো আছে তাদের মুখ থেকে কেন আমরা এরূপ পরিভাষা শুনতে পাইনা? কেন তারা সরকারী আলেমদের ব্যাপারে সতর্ক করেন না? আর যদি কেউ সতর্ক করেও তাহলে অন্যরা তার সমালোচনা করতে থাকে। কারণ তা নাকি শাসকদের সাথে সালাফে ছালেহীনের মানহাজপরিপন্থী কাজ।
এর চেয়েও বেশি কষ্ট হয় এবং অন্তরে রক্তক্ষরণ হয় যখন তাদের কেউ কেউ- যারা অজ্ঞাতসারে মুরজিয়াদের আকীদার উপর রয়েছে- মানব রচিত সংবিধানের কুফরির কথা শুনে তখন তারা এটাকে অনৈক্যের কারণ মনে করে; যদিও তাদের একাংশ এটাকে কুফরি বলেই বিশ্বাস করে। আবার যখন কোন সরকারের বিরুদ্ধে আসল ফতোয়াটা প্রকাশ হতে দেখে তখন ক্রোধে ফেটে পড়ে। যেন এই ফতোয়ার কারণে ইসলামের অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে। এমন ব্যক্তিদের উদ্দেশ্যে বলবো, সরকারের জন্য এত মায়া কেন আপনাদের? ইসলাম প্রতিষ্ঠিত না হওয়ার কারণে তো এতটা ক্ষুব্ধ হন না??
প্রিয় পাঠকগণ, আপনাদের কি মনে হয় এই জামানায় সরকারী আলেম নেই? সরকারী আলেমদের ব্যাপারে চুপ থাকা এবং সতর্ক না করা কি সালাফে ছালেহীনের মানহাজ?
উত্তর প্রত্যেক ন্যায়বিচারকেরই জানা আছে। তা হচ্ছে, এ জামানায় সরকারী আলেম আছে এবং তাদের থেকে সতর্ক করা সালাফে সালেহীনের মানহাজ ছিল। এ ব্যাপারে প্রসিদ্ধ তাবেঈ সুফিয়ান আস সাওরি রহ. এর কয়েকটি উদ্ধৃতি দিচ্ছি।
ইমাম যাহাবী বলেন, সুফিয়ান বলেন, তুমি যদি দেখ যে, কারী (আলেম) সরকারের কাছাকাছি থাকে তাহলে তুমি ধরে নেবে সে চোর। আর যদি দেখ, সে কোন ধনী ব্যক্তির কাছাকাছি থাকে তাহলে ধরে নেবে সে ধোঁকাবাজ। সুতরাং শয়তানের ধোঁকা থেকে সাবধান। শয়তান তোমাকে বিভিন্ন সূরতে ধোঁকা দিতে পারে। শয়তান তোমাকে বলবে, সরকারের সাথে সম্পর্ক গড়ে তুমি জুলুম দূর করবে এবং মাজলুমের প্রতিরক্ষা করবে। এটা ইবলিসের ধোঁকা মাত্র, কারীরা (আলেমরা) এটাকেই ঢাল বানিয়ে নিয়েছে। (দেখুন, আল কাওলুন নাফীস ফিত তাহযীরি আন খাদীআতি ইবলীস “মাসলাহাতুদ-দাওয়াহ”, পৃষ্ঠা : ৩০)
সুফিয়ান ইবনে আব্বাদ এক পত্রে নিজ শিষ্যের উদ্দেশ্যে লেখেন, আমিরদের থেকে দূরে থাকবে। তাদের কাছেও যাবে না। কোন কারণেই তাদের সাথে মিশবে না। তুমি যেন ধোঁকাগ্রস্ত না হও। শয়তান তোমাকে বলতে পারে, তুমি আমিরের কাছে মানুষের জন্য সুপারিশ করবে, মাজলুমের প্রতিরক্ষা করবে এবং আমিরের জুলুম বিদূরিত করবে। এটা শুধু ইবলিশের ধোঁকা; ফাসিক কারীরা (আলেমরা) এটাকে ঢাল বানিয়ে আমিরদের দরবারে আসা যাওয়া করে। ( দেখুন, প্রাগুক্ত )
প্রিয় পাঠক, আজ যদি সুফিয়ান সাওরী জীবিত থাকতেন তাহলে সেই সব আলেমদের ব্যাপারে কী বলতেন, যারা আমেরিকান মুসলিমদের জন্য আফগানিস্তানের অনুপ্রবেশকারী মার্কিন সেনাবাহিনীতে যোগদান বৈধ বলে ফতোয়া দিয়েছে? যে সকল আলেমরা ৯/১১ এ নিহত হওয়া লোকদের নির্দোষ দাবি করেছে এবং কেউ কেউ তাদের জন্য দান করার আহ্বান জানিয়েছে তাদের ব্যাপারে তিনি কী বলতেন? এমন আলেমদের ব্যাপারে সুফিয়ান সাওরী ও পূর্ববর্তী অন্যান্য ইমামগণ কী বলতেন যারা মৌনতা অবলম্বন করেছে এবং বর্তমানে জিহাদ ফরযে আইন বলে ফতোয়া দেয়নি তাদের ব্যাপারে তিনি কী বলতেন? তিনি কী বলতেন যদি দেখতেন, মার্কিন যুদ্ধবিমানগুলো উড়ে উড়ে মুসলিমদের হত্যা করছে, অতঃপর মুসলিমদের প্রহরায়ই আপন ঘাঁটিতে ফিরে যাচ্ছে? তিনি কী বলতেন যদি দেখতেন মার্কিন যুদ্ধজাহাজগুলো নির্বিঘ্নে আরবসাগর পারি দিয়ে মুসলমানদের হত্যা করার জন্য যাচ্ছে? তিনি কী বলতেন যদি দেখতেন মার্কিন সেনাবাহিনী লক্ষ লক্ষ মুসলিমদের হত্যা করছে আর আরবের শাসক ও মুসলমানরা তেল, খাদ্যসম্ভার ও মিডিয়া দিয়ে তাদের সাহায্য করছে এবং মুজাহিদদের বাধা প্রদান করছে?
তিনি কি তাদের কাফের ফতোয়া দিতেন না? সুফিয়ান সাওরী রহ. আমীরদের অপছন্দ করতেন, যদিও তারা শরীয়ত অনুযায়ী বিচারকার্য পরিচালনা করত এবং কুফরী রাষ্ট্রগুলো বিজয়ের জন্য সেনাবাহিনীও প্রেরণ করত। কেবল কিছু ক্ষেত্রে শরীয়তবিরুদ্ধ কাজ করতো। এ কারণে আবু সুফিয়ান তাদের থেকে দূরে থাকতেন। এমনকি তাদের থেকে দূরে থাকার জন্য তিনি আত্মগোপন করেছিলেন। কিছুদিন ইয়ামান বা মক্কা শরীফে, পরে বসরা নগরীতে আত্মগোপন করে থাকেন। গোপনে তিনি মুহাদ্দিসদের নিকট হাদীস বর্ণনা করতেন। আত্মগোপন করা অবস্থায়ই তিনি মৃত্যুবরণ করেন। হঠাৎ তাঁর মরদেহ মানুষের সামনে বের করে আনা হয় এবং জানাযা পড়া হয়।
সুফিয়ান সাওরী রহ. সম্পর্কে ইমাম আহমদ বলেন, তুমি কি জানো, ইমাম কে? ইমাম হলেন সুফিয়ান সাওরী, আমার হৃদয়ে তার চেয়ে অগ্রগামী কেউ হতে পারবেনা।
সুফিয়ান সাওরী বলেন, যখন দেখি কোন বিষয়ে কথা বলা আমার কর্তব্য অথচ সে বিষয়ে কথা বলতে পরি না। তখন আমার পেশাবের রাস্তা দিয়ে রক্ত নির্গত হয়।’ আজ যদি সুফিয়ান সাওরী ও তাঁর যুগের ইমামগণ জীবিত থাকতেন তাহলে তাঁরা আরবের তাগুত শাসকদের ব্যাপারে কী বলতেন যাদের সহযোগিতায় ইহুদী-খ্রিস্টানরা মুসলিম দেশগুলো দখল করছে?
প্রিয় ভাই, কতিপয় আলেম লাঞ্ছনাকর ফতোয়া প্রদান করেছে। কিন্তু তারাই আজ সম্মানের পাত্র। এরা যদি সুফিয়ান সাওরীর যুগে থাকত তাহলে মুসলমানগণ তাদেরকে ‘দরবারী আলেম’ বলতে দ্বিধাবোধ করত না।
বর্তমানে আল কায়েদা এ পরিভাষাটিকে পুনরুজ্জীবিত করছে এবং এক্ষেত্রে তারাই অগ্রগামী। বিরোধীরা কখনো আপত্তি করে যে, আল কায়েদা আলেমদের নিন্দা করে। তাদের জবাবে আমরা বলবো, উলামায়ে রব্বানী বা হক্বপন্থী আলেমগণ আল কায়েদার কাছে সম্মানের পাত্র। কিন্তু তাদের কাছে দরবারী আলেমদের কোনই সম্মান নেই। সুতরাং যারা আমেরিকার স্বার্থে কথা বলে, মুজাহিদদের আকীদায় আঘাত করে এবং তাদেরকে খাওয়ারিজ ও ভ্রান্ত দল বলে অভিহিত করে তাদের সম্মান করতে আমরা বাধ্যও নই, আদিষ্টও নই এবং একারণে আমরা নিন্দিত হবো না। তবে কখনো কখনো হকপন্থী আলেমদের মুখ থেকে এমন কিছু কথা বের হয় যা মুজাহিদদের আঘাত করে এবং যাতে শত্রুদের স্বার্থ হাসিল হয়। কিন্তু একারণে আমরা তাদের দরবারী আলেম বলবো না।
এ যুগে যারা জিহাদের পথে চলছে তাদের মধ্যে এ পরিভাষাটি পুনরুজ্জীবিত করার ক্ষেত্রে আল কায়েদাই বেশি অগ্রগামী। এ পরিভাষাটি পুনরুজ্জীবিত করা আমাদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। কারণ এ পরিভাষাটির বিলুপ্তি সালাফে সালেহীনের মানহাজপরিপন্থী এবং এতে উম্মাহ ধোঁকাগ্রস্ত হবে। তাছাড়া উম্মাহর শত্রুরাও এ থেকে উপকৃত হবে। তাই এ পরিভাষাটির পুনরুজ্জীবন উম্মাহর জন্য অত্যন্ত জরুরী। এ পরিভাষাটি পুনরুজ্জীবিত করা উম্মাহ জন্য কল্যাণকামিতার নামও বটে। কারণ এটা দীনের বিষয়। সুতরাং আমাদের ভেবে দেখতে হবে আমরা কার থেকে দীন নিচ্ছি!
দরবারী আলেমদের কারণে অনেক কল্যাণের দ্বার বন্ধ হয়ে গেছে। সবচে’ উত্তম কল্যাণের দ্বার জিহাদও তাদের কারণেই বন্ধ হয়েছে। অথচ জিহাদ অনেক ক্ষেত্র যথেষ্ট ফলপ্রসূ ইবাদত। শায়খুল ইসলাম বলেন,
ومن كان كثير الذنوب فأعظم دوائه الجهاد في سبيل الله.
কেউ অনেক বেশি গুনাহ করে ফেললে তার সর্বোত্তম প্রতিষেধক ও কাফফরা হল জিহাদ করা। (আল ফাতাওয়া, ২৮/৪২১)
দরবারী আলেমরা অনেক সময় এমন বিষয়ের বৈধতার ফতোয়া দেয় যা বাস্তবে আল্লাহর ক্রোধ ও অসন্তুষ্টির কারণ হয়। অথচ কুরআন-সুন্নাহয় এ ব্যাপারে কঠোর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কিন্তু তারা তাদের ইলম অনুযায়ী আমল করে না। যে আলেম নিজ ইলম অনুযায়ী আমল করে না আল্লাহ পবিত্র কুরআনে তার জন্য সবচে’ নিকৃষ্ট উপমা পেশ করেছেন। আল্লাহ বলেন,
অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন,
আমি ইচ্ছা করলে এর দ্বারা তাকে উচ্চ মর্যাদা দান করতাম। কিন্তু সে দুনিয়ার প্রতি ঝুঁকে পড়ে ও তাঁর প্রবৃত্তির অনুসরণ করে। তার অবস্থা কুকুরের ন্যায়; তার উপর বোঝা চাপালে সে হাঁপাতে থাকে, বোঝা না চাপালেও সে হাঁপায়। যে সম্প্রদায় আমার নিদর্শনকে প্রত্যাখ্যান করে তাদের অবস্থাও এরূপ। তুমি বৃত্তান্ত বিবৃত কর যাতে তারা চিন্তা করে। (সূরা আ’রাফ, আয়াত ১৭৫ও ১৭৬)
কেউ ইলম গোপন করলে সে ব্যাপারে রয়েছে কঠিন হুঁশিয়ারি। আল্লাহ বলেন,
সুতরাং আপনার কি মনে হয়, আমাদের পূর্বসূরীগণ এমন কিছু মানুষ থেকে সতর্ক থেকেছেন যাদের অস্তিত্ব ছিলো না বলে ধারণা করা হয়? আপরার কি মনে হয় আল্লাহ এমন কিছু মানুষকে লা’নত করেছেন যাদের অস্তিত্বকেই আজ অস্বীকার করা হচ্ছে? বস্তুত অবশ্যই তাদের অস্তিত্ব আছে। কারো যদি মনে হয় যে, বাস্তবে তাদের অস্তিত্ব নেই, তবে সে যেন নিজের আকল ও বুদ্ধিকেই এজন্য ত্রুটিযুক্ত মনে করে এবং মুজাহিদদের এই বলে অপবাদ না দেয় যে, তারা আলেমদের নিন্দা করে। হ্যাঁ, জিহাদের সাথে সম্পৃক্ত কতিপয় লোক কখনো আলেমদের সাথে মন্দ আচরণ করে। কিন্তু এ কারণে সকল মুজাহিদের উপর দায় চাপানো ও অপবাদ দেয়া যাবে না। কারণ প্রত্যেক দলেই কিছু উচ্ছৃঙ্খল মানুষ থাকে।
পরবর্তী পর্বগুলোও শীঘ্রই দেয়া হবে ইনশাআল্লাহ…. আপনার নেক দুআয় ভুলবেন না…
মূল
শায়খ আবু মুসআব মুহাম্মদ উমায়ের আল কালাবী আল আওলাকী রহ.
ভাষান্তর
আবু হামযা আল হিন্দী
১২. কারণ তারা সরকারী আলেম নামক পরিভাষাটিকে পুনরুজ্জীবিত করেছে।
খাইরুল কুরুন থেকেই এই পরিভাষাটি হকপন্থী আলেমদের মুখে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। আমাদের পূর্বসূরীগণ সরকারী আলেমদের থেকে সতর্ক থাকতেন এবং অন্যদের সতর্ক করতেন। কারণ তাদের রয়েছে অনিষ্টকর প্রভাব, তারা সত্যকে মিথ্যা ও মিথ্যাকে সত্য বানিয়ে দেয়। শাসকদের বক্রতাকে তারা শরীয়ত কর্তৃক বৈধতার প্রলেপ লাগিয়ে দেয় এবং সরকারের অপরাধ এমনকি তাদের কুফরীর ব্যাপারেও মৌনতা অবলম্বন করে । এইজন্যই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে শাসককে দরবারে যাবে সে ফেতনায় পড়বে । ( আবূ দাঊদ, আলবানী সহীহ বলেছেন।)
একটু চিন্তা করুন, পূর্ব যুগে তো এই পরিভাষা প্রচলিত ছিল এবং আলেমগণ সাধারণ মানুষকে তাদের থেকে সতর্ক করছেন। কিন্তু এখন যে ইসলামী দলগুলো আছে তাদের মুখ থেকে কেন আমরা এরূপ পরিভাষা শুনতে পাইনা? কেন তারা সরকারী আলেমদের ব্যাপারে সতর্ক করেন না? আর যদি কেউ সতর্ক করেও তাহলে অন্যরা তার সমালোচনা করতে থাকে। কারণ তা নাকি শাসকদের সাথে সালাফে ছালেহীনের মানহাজপরিপন্থী কাজ।
এর চেয়েও বেশি কষ্ট হয় এবং অন্তরে রক্তক্ষরণ হয় যখন তাদের কেউ কেউ- যারা অজ্ঞাতসারে মুরজিয়াদের আকীদার উপর রয়েছে- মানব রচিত সংবিধানের কুফরির কথা শুনে তখন তারা এটাকে অনৈক্যের কারণ মনে করে; যদিও তাদের একাংশ এটাকে কুফরি বলেই বিশ্বাস করে। আবার যখন কোন সরকারের বিরুদ্ধে আসল ফতোয়াটা প্রকাশ হতে দেখে তখন ক্রোধে ফেটে পড়ে। যেন এই ফতোয়ার কারণে ইসলামের অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে। এমন ব্যক্তিদের উদ্দেশ্যে বলবো, সরকারের জন্য এত মায়া কেন আপনাদের? ইসলাম প্রতিষ্ঠিত না হওয়ার কারণে তো এতটা ক্ষুব্ধ হন না??
প্রিয় পাঠকগণ, আপনাদের কি মনে হয় এই জামানায় সরকারী আলেম নেই? সরকারী আলেমদের ব্যাপারে চুপ থাকা এবং সতর্ক না করা কি সালাফে ছালেহীনের মানহাজ?
উত্তর প্রত্যেক ন্যায়বিচারকেরই জানা আছে। তা হচ্ছে, এ জামানায় সরকারী আলেম আছে এবং তাদের থেকে সতর্ক করা সালাফে সালেহীনের মানহাজ ছিল। এ ব্যাপারে প্রসিদ্ধ তাবেঈ সুফিয়ান আস সাওরি রহ. এর কয়েকটি উদ্ধৃতি দিচ্ছি।
ইমাম যাহাবী বলেন, সুফিয়ান বলেন, তুমি যদি দেখ যে, কারী (আলেম) সরকারের কাছাকাছি থাকে তাহলে তুমি ধরে নেবে সে চোর। আর যদি দেখ, সে কোন ধনী ব্যক্তির কাছাকাছি থাকে তাহলে ধরে নেবে সে ধোঁকাবাজ। সুতরাং শয়তানের ধোঁকা থেকে সাবধান। শয়তান তোমাকে বিভিন্ন সূরতে ধোঁকা দিতে পারে। শয়তান তোমাকে বলবে, সরকারের সাথে সম্পর্ক গড়ে তুমি জুলুম দূর করবে এবং মাজলুমের প্রতিরক্ষা করবে। এটা ইবলিসের ধোঁকা মাত্র, কারীরা (আলেমরা) এটাকেই ঢাল বানিয়ে নিয়েছে। (দেখুন, আল কাওলুন নাফীস ফিত তাহযীরি আন খাদীআতি ইবলীস “মাসলাহাতুদ-দাওয়াহ”, পৃষ্ঠা : ৩০)
সুফিয়ান ইবনে আব্বাদ এক পত্রে নিজ শিষ্যের উদ্দেশ্যে লেখেন, আমিরদের থেকে দূরে থাকবে। তাদের কাছেও যাবে না। কোন কারণেই তাদের সাথে মিশবে না। তুমি যেন ধোঁকাগ্রস্ত না হও। শয়তান তোমাকে বলতে পারে, তুমি আমিরের কাছে মানুষের জন্য সুপারিশ করবে, মাজলুমের প্রতিরক্ষা করবে এবং আমিরের জুলুম বিদূরিত করবে। এটা শুধু ইবলিশের ধোঁকা; ফাসিক কারীরা (আলেমরা) এটাকে ঢাল বানিয়ে আমিরদের দরবারে আসা যাওয়া করে। ( দেখুন, প্রাগুক্ত )
প্রিয় পাঠক, আজ যদি সুফিয়ান সাওরী জীবিত থাকতেন তাহলে সেই সব আলেমদের ব্যাপারে কী বলতেন, যারা আমেরিকান মুসলিমদের জন্য আফগানিস্তানের অনুপ্রবেশকারী মার্কিন সেনাবাহিনীতে যোগদান বৈধ বলে ফতোয়া দিয়েছে? যে সকল আলেমরা ৯/১১ এ নিহত হওয়া লোকদের নির্দোষ দাবি করেছে এবং কেউ কেউ তাদের জন্য দান করার আহ্বান জানিয়েছে তাদের ব্যাপারে তিনি কী বলতেন? এমন আলেমদের ব্যাপারে সুফিয়ান সাওরী ও পূর্ববর্তী অন্যান্য ইমামগণ কী বলতেন যারা মৌনতা অবলম্বন করেছে এবং বর্তমানে জিহাদ ফরযে আইন বলে ফতোয়া দেয়নি তাদের ব্যাপারে তিনি কী বলতেন? তিনি কী বলতেন যদি দেখতেন, মার্কিন যুদ্ধবিমানগুলো উড়ে উড়ে মুসলিমদের হত্যা করছে, অতঃপর মুসলিমদের প্রহরায়ই আপন ঘাঁটিতে ফিরে যাচ্ছে? তিনি কী বলতেন যদি দেখতেন মার্কিন যুদ্ধজাহাজগুলো নির্বিঘ্নে আরবসাগর পারি দিয়ে মুসলমানদের হত্যা করার জন্য যাচ্ছে? তিনি কী বলতেন যদি দেখতেন মার্কিন সেনাবাহিনী লক্ষ লক্ষ মুসলিমদের হত্যা করছে আর আরবের শাসক ও মুসলমানরা তেল, খাদ্যসম্ভার ও মিডিয়া দিয়ে তাদের সাহায্য করছে এবং মুজাহিদদের বাধা প্রদান করছে?
তিনি কি তাদের কাফের ফতোয়া দিতেন না? সুফিয়ান সাওরী রহ. আমীরদের অপছন্দ করতেন, যদিও তারা শরীয়ত অনুযায়ী বিচারকার্য পরিচালনা করত এবং কুফরী রাষ্ট্রগুলো বিজয়ের জন্য সেনাবাহিনীও প্রেরণ করত। কেবল কিছু ক্ষেত্রে শরীয়তবিরুদ্ধ কাজ করতো। এ কারণে আবু সুফিয়ান তাদের থেকে দূরে থাকতেন। এমনকি তাদের থেকে দূরে থাকার জন্য তিনি আত্মগোপন করেছিলেন। কিছুদিন ইয়ামান বা মক্কা শরীফে, পরে বসরা নগরীতে আত্মগোপন করে থাকেন। গোপনে তিনি মুহাদ্দিসদের নিকট হাদীস বর্ণনা করতেন। আত্মগোপন করা অবস্থায়ই তিনি মৃত্যুবরণ করেন। হঠাৎ তাঁর মরদেহ মানুষের সামনে বের করে আনা হয় এবং জানাযা পড়া হয়।
সুফিয়ান সাওরী রহ. সম্পর্কে ইমাম আহমদ বলেন, তুমি কি জানো, ইমাম কে? ইমাম হলেন সুফিয়ান সাওরী, আমার হৃদয়ে তার চেয়ে অগ্রগামী কেউ হতে পারবেনা।
সুফিয়ান সাওরী বলেন, যখন দেখি কোন বিষয়ে কথা বলা আমার কর্তব্য অথচ সে বিষয়ে কথা বলতে পরি না। তখন আমার পেশাবের রাস্তা দিয়ে রক্ত নির্গত হয়।’ আজ যদি সুফিয়ান সাওরী ও তাঁর যুগের ইমামগণ জীবিত থাকতেন তাহলে তাঁরা আরবের তাগুত শাসকদের ব্যাপারে কী বলতেন যাদের সহযোগিতায় ইহুদী-খ্রিস্টানরা মুসলিম দেশগুলো দখল করছে?
প্রিয় ভাই, কতিপয় আলেম লাঞ্ছনাকর ফতোয়া প্রদান করেছে। কিন্তু তারাই আজ সম্মানের পাত্র। এরা যদি সুফিয়ান সাওরীর যুগে থাকত তাহলে মুসলমানগণ তাদেরকে ‘দরবারী আলেম’ বলতে দ্বিধাবোধ করত না।
বর্তমানে আল কায়েদা এ পরিভাষাটিকে পুনরুজ্জীবিত করছে এবং এক্ষেত্রে তারাই অগ্রগামী। বিরোধীরা কখনো আপত্তি করে যে, আল কায়েদা আলেমদের নিন্দা করে। তাদের জবাবে আমরা বলবো, উলামায়ে রব্বানী বা হক্বপন্থী আলেমগণ আল কায়েদার কাছে সম্মানের পাত্র। কিন্তু তাদের কাছে দরবারী আলেমদের কোনই সম্মান নেই। সুতরাং যারা আমেরিকার স্বার্থে কথা বলে, মুজাহিদদের আকীদায় আঘাত করে এবং তাদেরকে খাওয়ারিজ ও ভ্রান্ত দল বলে অভিহিত করে তাদের সম্মান করতে আমরা বাধ্যও নই, আদিষ্টও নই এবং একারণে আমরা নিন্দিত হবো না। তবে কখনো কখনো হকপন্থী আলেমদের মুখ থেকে এমন কিছু কথা বের হয় যা মুজাহিদদের আঘাত করে এবং যাতে শত্রুদের স্বার্থ হাসিল হয়। কিন্তু একারণে আমরা তাদের দরবারী আলেম বলবো না।
এ যুগে যারা জিহাদের পথে চলছে তাদের মধ্যে এ পরিভাষাটি পুনরুজ্জীবিত করার ক্ষেত্রে আল কায়েদাই বেশি অগ্রগামী। এ পরিভাষাটি পুনরুজ্জীবিত করা আমাদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। কারণ এ পরিভাষাটির বিলুপ্তি সালাফে সালেহীনের মানহাজপরিপন্থী এবং এতে উম্মাহ ধোঁকাগ্রস্ত হবে। তাছাড়া উম্মাহর শত্রুরাও এ থেকে উপকৃত হবে। তাই এ পরিভাষাটির পুনরুজ্জীবন উম্মাহর জন্য অত্যন্ত জরুরী। এ পরিভাষাটি পুনরুজ্জীবিত করা উম্মাহ জন্য কল্যাণকামিতার নামও বটে। কারণ এটা দীনের বিষয়। সুতরাং আমাদের ভেবে দেখতে হবে আমরা কার থেকে দীন নিচ্ছি!
দরবারী আলেমদের কারণে অনেক কল্যাণের দ্বার বন্ধ হয়ে গেছে। সবচে’ উত্তম কল্যাণের দ্বার জিহাদও তাদের কারণেই বন্ধ হয়েছে। অথচ জিহাদ অনেক ক্ষেত্র যথেষ্ট ফলপ্রসূ ইবাদত। শায়খুল ইসলাম বলেন,
ومن كان كثير الذنوب فأعظم دوائه الجهاد في سبيل الله.
কেউ অনেক বেশি গুনাহ করে ফেললে তার সর্বোত্তম প্রতিষেধক ও কাফফরা হল জিহাদ করা। (আল ফাতাওয়া, ২৮/৪২১)
দরবারী আলেমরা অনেক সময় এমন বিষয়ের বৈধতার ফতোয়া দেয় যা বাস্তবে আল্লাহর ক্রোধ ও অসন্তুষ্টির কারণ হয়। অথচ কুরআন-সুন্নাহয় এ ব্যাপারে কঠোর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কিন্তু তারা তাদের ইলম অনুযায়ী আমল করে না। যে আলেম নিজ ইলম অনুযায়ী আমল করে না আল্লাহ পবিত্র কুরআনে তার জন্য সবচে’ নিকৃষ্ট উপমা পেশ করেছেন। আল্লাহ বলেন,
مَثَلُ الَّذِينَ حُمِّلُوا التَّوْرَاةَ ثُمَّ لَمْ يَحْمِلُوهَا كَمَثَلِ الْحِمَارِ يَحْمِلُ أَسْفَارًا بِئْسَ مَثَلُ الْقَوْمِ الَّذِينَ كَذَّبُوا بِآَيَاتِ اللَّهِ وَاللَّهُ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الظَّالِمِينَ.
যাদেরকে তাওরাতের দায়িত্বভার অর্পণ করা হয়েছিল, কিন্তু তারা তা গ্রহণ করে নি (অর্থাৎ তার অনুসরণ করে নি) তাদের দৃষ্টান্ত হল পুস্তক বহনকারী গাধা! যারা আল্লাহর আয়াত সমূহকে অস্বীকার করে তাদের দৃষ্টান্ত কত*ই না মন্দ! আল্লাহ জালেম সম্প্রদায়কে সৎ পথে পরিচালিত করেন না। (সূরা জুমআ’, আয়াত : ৫)অন্য আয়াতে আল্লাহ তাআলা বলেন,
وَاتْلُ عَلَيْهِمْ نَبَأَ الَّذِي آَتَيْنَاهُ آَيَاتِنَا فَانْسَلَخَ مِنْهَا فَأَتْبَعَهُ الشَّيْطَانُ فَكَانَ مِنَ الْغَاوِينَ،وَلَوْ شِئْنَا لَرَفَعْنَاهُ بِهَا وَلَكِنَّهُ أَخْلَدَ إِلَى الْأَرْضِ وَاتَّبَعَ هَوَاهُ فَمَثَلُهُ كَمَثَلِ الْكَلْبِ إِنْ تَحْمِلْ عَلَيْهِ يَلْهَثْ أَوْ تَتْرُكْهُ يَلْهَثْ ذَلِكَ مَثَلُ الْقَوْمِ الَّذِينَ كَذَّبُوا بِآَيَاتِنَا فَاقْصُصِ الْقَصَصَ لَعَلَّهُمْ يَتَفَكَّرُونَ.
তাদেরকে ঐ ব্যক্তির বৃত্তান্ত পড়ে শোনাও যাকে আমি নিদর্শন দান করেছিলাম। অতঃপর সে তা বর্জন করে, পরে শয়তান তার পেছনে লাগে আর সে বিপথগামীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়। আমি ইচ্ছা করলে এর দ্বারা তাকে উচ্চ মর্যাদা দান করতাম। কিন্তু সে দুনিয়ার প্রতি ঝুঁকে পড়ে ও তাঁর প্রবৃত্তির অনুসরণ করে। তার অবস্থা কুকুরের ন্যায়; তার উপর বোঝা চাপালে সে হাঁপাতে থাকে, বোঝা না চাপালেও সে হাঁপায়। যে সম্প্রদায় আমার নিদর্শনকে প্রত্যাখ্যান করে তাদের অবস্থাও এরূপ। তুমি বৃত্তান্ত বিবৃত কর যাতে তারা চিন্তা করে। (সূরা আ’রাফ, আয়াত ১৭৫ও ১৭৬)
কেউ ইলম গোপন করলে সে ব্যাপারে রয়েছে কঠিন হুঁশিয়ারি। আল্লাহ বলেন,
إِنَّ الَّذِينَ يَكْتُمُونَ مَا أَنْزَلْنَا مِنَ الْبَيِّنَاتِ وَالْهُدَى مِنْ بَعْدِ مَا بَيَّنَّاهُ لِلنَّاسِ فِي الْكِتَابِ أُولَئِكَ يَلْعَنُهُمُ اللَّهُ وَيَلْعَنُهُمُ اللَّاعِنُونَ، إِلَّا الَّذِينَ تَابُوا وَأَصْلَحُوا وَبَيَّنُوا فَأُولَئِكَ أَتُوبُ عَلَيْهِمْ وَأَنَا التَّوَّابُ الرَّحِيمُ.
নিশ্চয়ই আমি যেসব স্পষ্ট নিদর্শন ও পথনির্দেশ অবতীর্ণ করেছি মানুষের জন্য। কিতাবে তা স্পষ্টভাবে ব্যক্ত করার পরও যারা তা গোপন করে আল্লাহ তাদের লা’নত দেন এবং অভিশাপকারীগণও তাদের অভিসম্পাত করে। কিন্তু যারা তওবা করে এবং নিজেদের সংশোধন করে আর সত্যকে সুস্পষ্টভাবে ব্যক্ত করে, এরাই তারা যাদের তওবা আমি কবূল করি। আমি অতিশয় তওবাগ্রহণকারী, দয়ালু। (সূরা বাকারা, আয়াত : ১৫৯-১৬০)সুতরাং আপনার কি মনে হয়, আমাদের পূর্বসূরীগণ এমন কিছু মানুষ থেকে সতর্ক থেকেছেন যাদের অস্তিত্ব ছিলো না বলে ধারণা করা হয়? আপরার কি মনে হয় আল্লাহ এমন কিছু মানুষকে লা’নত করেছেন যাদের অস্তিত্বকেই আজ অস্বীকার করা হচ্ছে? বস্তুত অবশ্যই তাদের অস্তিত্ব আছে। কারো যদি মনে হয় যে, বাস্তবে তাদের অস্তিত্ব নেই, তবে সে যেন নিজের আকল ও বুদ্ধিকেই এজন্য ত্রুটিযুক্ত মনে করে এবং মুজাহিদদের এই বলে অপবাদ না দেয় যে, তারা আলেমদের নিন্দা করে। হ্যাঁ, জিহাদের সাথে সম্পৃক্ত কতিপয় লোক কখনো আলেমদের সাথে মন্দ আচরণ করে। কিন্তু এ কারণে সকল মুজাহিদের উপর দায় চাপানো ও অপবাদ দেয়া যাবে না। কারণ প্রত্যেক দলেই কিছু উচ্ছৃঙ্খল মানুষ থাকে।
পরবর্তী পর্বগুলোও শীঘ্রই দেয়া হবে ইনশাআল্লাহ…. আপনার নেক দুআয় ভুলবেন না…