ইসলাম, ঈমান ও ইহসান
ইসলামের স্তরঃ তিনটি
==============
১। ইসলাম,
২। ঈমান, ও
৩। ইহসান
================================================== ======
সহিহ মুসলিম: বই ১: কিতাবুল ঈমান অধ্যায়: হাদিস ৪, হাদিস ৬
যুহায়র ইবন হারব (র)……আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ তোমরা আমাকে প্রশ্ন কর। সাহাবা কিরাম তার কাছে প্রশ্ন করতে ভয় পেলেন। (রাবী বলেন) তারপর একজন লোক এলেন এবং তাঁর কাছে বসে বললেনঃ হে আল্লাহর রাসুল! ইসলাম কী? রাসুল (সাঃ) বললেনঃ ইসলাম হলো, আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করবে না, নামায কায়েম করবে, যাকাত দিবে, রামাযানের রোযা পালন করবে। আগন্তুক বললেন, আপনি ঠিকই বলেছেন। তারপর বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! ঈমান কী? রাসুল (সাঃ) বললেনঃ আল্লাহর প্রতি, তাঁর ফেরেশতাদের প্রতি, তাঁর কিতাবসমূহের প্রতি, তাঁর সঙ্গে সাক্ষাতের প্রতি, উখানের বিষয়ে এবং পুরোপুরি তাকদীরে ঈমান রাখবে। আগন্তুক বললেন, আপনি ঠিকই বলেছেন। তারপর বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! ইহসান কী? রাসুল (সাঃ) বললেনঃ আল্লাহকে এমনভাবে ভয় করবে, যেন তাঁকে দেখছ, যদি তাকে নাও দেখ; তাহলে ধারণা করবে যে তোমাকে দেখছেন। আগন্তুক বললেন, আপনি যথার্থ বলেছেন। তারপর বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! কিয়ামত কখন ঘটবে? রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বললেনঃ এ বিষয়ে যাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছে সে ব্যক্তি প্রশ্লকারীর চাইতে অধিক অবহিত নয়। তবে আমি কিয়ামতের কিছু আলামত বর্ণনা করছি। যখন দেখবে, দাসী তার মুনিবকে জম্ন দেবে, এটা কিয়ামতের একটি আলামত। আর যখন দেখবে নগ্নপদ, বস্ত্রহীন, বধির ও মূকেরা দেশের শাসক হয়েছে, এটিও কিয়ামতের একটি আলামত। আর যখন দেখবে, মেষপালক বিরাট বিরাট অট্টালিকার প্রতিযোগিতায় গর্বিত, এটিও কিয়ামতের একটি আলামত। পাঁচটি অদৃশ্য বিষয়ে আল্লাহ ব্যতীত কেউ কিছু জানে না। তারপর (তিনি কুরআনুল করীম-এর আয়াত) তিলাওয়াত করলেনঃ নিশ্চয়ই আল্লাহ, তাঁর কাছে রয়েছে কিয়ামতের মতের জ্ঞান। তিনি নাযিল করেন বৃষ্টি এবং তিনি জানেন, যা রয়েছে মাতৃগর্ভ জানে না কেউ, কি কামাই করবে সে আগামীকাল। আর জানে না কেউ, কোন মাটিতে (দেশে) সে মারা যাবে, নিশ্চয়ই আল্লাহ সব জানেন, সব খবর রাখেন। (সূরা লুকমানঃ ৩৪) তারপর আগন্তুক উঠে চলে গেলেন। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) সাহাবীদের বললেনঃ তাঁকে আমার কাছে ফিরিয়ে আন। তাঁকে তালাশ করা হলো, কিন্তু তাঁকে পাওয়া গেল না। তারপর রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বললেনঃ ইনি জিবরাঈল (আঃ) তোমরা প্রশ্ন না করায়, তিনি চাইলেন যেন তোমরা দীন সমন্ধে জ্ঞান লাভ কর।
ইসলাম
১। ইসলামের রুকণঃ ৫টি
================
ক। কালিমা/শাহাদাহ, খ। স্বলাত, গ। যাকাত, ঘ। হাজ্জ ও ঙ। সওম
সহিহ মুসলিম: বই ১: কিতাবুল ঈমান অধ্যায়: হাদিস ৪, হাদিস ৬
যুহায়র ইবন হারব (র)……আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ তোমরা আমাকে প্রশ্ন কর। সাহাবা কিরাম তার কাছে প্রশ্ন করতে ভয় পেলেন। (রাবী বলেন) তারপর একজন লোক এলেন এবং তাঁর কাছে বসে বললেনঃ হে আল্লাহর রাসুল! ইসলাম কী? রাসুল (সাঃ) বললেনঃ ইসলাম হলো, আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করবে না, নামায কায়েম করবে, যাকাত দিবে, রামাযানের রোযা পালন করবে। আগন্তুক বললেন, আপনি ঠিকই বলেছেন। --------------------------------------------------------------- তারপর আগন্তুক উঠে চলে গেলেন। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) সাহাবীদের বললেনঃ তাঁকে আমার কাছে ফিরিয়ে আন। তাঁকে তালাশ করা হলো, কিন্তু তাঁকে পাওয়া গেল না। তারপর রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বললেনঃ ইনি জিবরাঈল (আঃ) তোমরা প্রশ্ন না করায়, তিনি চাইলেন যেন তোমরা দীন সমন্ধে জ্ঞান লাভ কর। (হাদিছের অংশ বিশেষ)
সহিহ বুখারী: খন্ড ১: বই ২: ঈমান অধ্যায়: হাদিস ৭
উবায়দুল্লাহ্ ইব্ন মূসা (রা)........... ইব্ন ‘উমর (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সা) ইরশাদ করেন, ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি।
১। আল্লাহ্ ছাড়া ইলাহ্ নেই এবং নিশ্চয় মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ্র রাসূল-এ কথার সাক্ষ্য দান
২। সালাত কায়েম করা
৩। যাকাত দেওয়া
৪। হজ্জ করা এবং
৫। রমদান এর সিয়াম পালন করা
সহিহ মুসলিম: বই ১: কিতাবুল ঈমান অধ্যায়: হাদিস ৯
আমর ইবন মুহাম্মাদ ইবন বুকায়র আল নাকিদ (র)…আনাস ইবন মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন। আনাস ইবন মালিক (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-কে কোন বিষয়ে প্রশ্ন করার ব্যাপারে আমাদের নিষেধ করা হয়েছিল। তাই আমরা চাইতাম যে, গ্রাম থেকে কোন বুদ্ধিমান ব্যক্তি এসে তাঁকে প্রশ্ন করুক আর আমরা তা শুনি। তারপর একদিন গ্রাম থেকে এক ব্যক্তি এসে রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-কে বলল, হে মুহাম্মাদ! আমাদের কাছে আপনার দুত এসে বলেছে, আপনি দাবি করেছেন যে, আল্লাহ আপনাকে রাসুল হিসাবে পাঠিয়েছেন। রাসুল (সাঃ) বললেনঃ সত্যই বলেছে। আগন্তুক বলল, আসমান কে সৃষ্টি করেছেন? তিনি বললেনঃ আল্লাহ। আগন্তুক বলল, যমীন কে সৃষ্টি করেছেন? রাসুল (সাঃ) বললেনঃ আল্লাহ। আগন্তুক বলল, এসব পর্বতমালা কে স্থাপন করেছেন এবং এর মধ্যে যা কিছু আছে তা কে সৃষ্টি করেছেন? রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বললেনঃ আল্লাহ। আগন্তুক বলল, কসম সেই সত্তার! যিনি আসমান ও যমীন সৃষ্টি করেছেন এবং এসব পর্বতমালা স্হাপন করেছেন। আল্লাহই আপনাকে রাসুলরুপে পাঠিয়েছেন? রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বললেনঃ হ্যা। আগন্তুক বলল, আপনার দূত বলে যে, আমাদের উপর দিনে ও রাতে পাচ ওয়াক্ত নামায ফরয। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বললেনঃ সত্যই বলেছে। আগন্তুক বলল, যিনি আপনাকে রাসুলরুপে পাঠিয়েছেন তাঁর কসম, আল্লাহ-ই কি আপনাকে এর নির্দেশ দিয়েছেন? রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বললেনঃ হ্যা। আগন্তুক বলল, আপনার দূত বলে যে, আমাদের উপর আমাদের মালের যাকাত দেওয়া ফরয। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বললেনঃ ঠিকই বলেছো আগন্তুক বলল, যিনি আপনাকে রাসুলরুপে পাঠিয়েছেন, তাঁর কসম, আল্লাহ-ই কি আপনাকে এর নির্দেশ দিয়েছেন? রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বললেনঃ হ্যা। আগন্তুক বলল, আপনার দূত বলে যে, প্রতি বছর রমযান মাসের রোযা পালন করা আমাদের উপর ফরয। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, সত্যই বলেছে। আগন্তুক বলল, যিনি আপনাকে রাসুল হিসেবে পাঠিয়েছেন, তার কসম, আল্লাহ-ই কি আপনাকে এর নির্দেশ দিয়েছেন? রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বললেনঃ হ্যা। আগন্তুক বলল, আপনার দূত বলে যে, আমাদের মধ্যে যে বায়তুল্লায় যেতে সক্ষম তার উপর হজ্জ ফরয। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বললেনঃ সত্যি বলেছে। রাবী বলেন যে, তারপর আগন্তুক চলে যেতে যেতে বলল, যিনি আপনাকে সত্যসহ প্রেরণ করেছেন তার কসম, আমি এর অতিরিক্তও করব না এবং এর কমও করব না। এ কথা শুনে নবী করীম (সাঃ) বললেন, লোকটি সত্য বলে থাকলে অবশ্যই সে জান্নাতে যাবে।
সহিহ মুসলিম: বই ১: কিতাবুল ঈমান অধ্যায়: হাদিস ১৮, হাদিস ১৯, হাদিস ২০, হাদিস ২১
মুহাম্মদ ইবন আবদুল্লাহ ইবন নু’মায়র আল হামদানী (র)……ইবন উমর (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন। নবী করীম (সাঃ) বলেছেন, ইসলামের বুনিয়াদ পাচটি বিষয়ের উপর প্রতিষ্ঠিত। আল্লাহকে এক বলে বিশ্বাস করা, নামায কায়েম করা, যাকাত দেয়া, রামাযানের রোযা পালন করা এবং হজ্জ করা। এক ব্যক্তি (এ ক্রম পাচটিকে) বলল, হজ্জ করা ও রামাযানের রোযা পালন করা। রাবী বললেন, না রামাযানের রোযা পালন করা ও হজ্জ করা এভাবে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) থেকে শুনেছি।
---------------------------------------------------------------
ক। কালিমা/শাহাদাহ/লা ইলাহা ইল্লালাহ মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ এর শর্তঃ ৭টি
=========================
লা ইলাহা ইল্লালাহ আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হওয়ার জন্য আল-কুরআনে ও সুন্নাহতে বর্ণিত শর্তসমূহ নিম্নরূপ
a) ইলম/জ্ঞান
b) ইয়াক্বিন/দৃঢ় বিশ্বাস
c) ইখলাস/ নিখাদচিত্তার প্রমাণ
d) সিদক্/ সত্যবাদিতা
e) হুব/ ভালবাসা
f) আসলাম/আত্নসমর্পণ
g) কবুল/ মেনে নেয়া
বিস্তারিতঃ
শাহাদাহর সাতটি শর্ত
===========
নামাযের মত তাওহীদেরও অনেকগুলো শর্ত আছে। নামায সহীহ হওয়ার শর্তাবলীর মধ্যে যদি যে কোনো একটি শর্ত যেমন অজু করা বা কেবলামুখী হওয়া ইত্যাদি না পাওয়া যায় তাহলে নামায বাতিল বলে গণ্য হবে। তেমনি শাহাদাহ্ সাতটি শর্ত সম্বলিত, যা পরিপূর্ণভাবে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রয়োগের পর আমাদের মাঝে ইসলামের প্রথম স্তম্ভ (ঈমান) স্থাপিত হওয়ার দাবী করতে পারব। এ সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করা এবং এর শর্তগুলো পূরণ করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য ওয়াযিব।
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) কে এক ব্যক্তি প্রশ্ন করেছিলেনঃ- ইহা কি সত্য যে, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এবং মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর সাক্ষ্যদানই বেহেস্তে প্রবেশের চাবিকাঠি? তিনি বললেন হ্যাঁ ঠিক। তবে প্রত্যেক চাবিতেই কিছু দাঁত থাকে এবং দাঁত ব্যতীত কাংখিত দরজাটি খোলা সম্ভব নয়। অনুরূপভাবে কালেমারও সাতটি দাঁত রয়েছে এবং আমাদের জীবনে এর যে কোন একটির অভাব ঈমানের দাবীকে পরিপূর্ণ করে না এবং এর ফলে শাহাদাহ অকার্যকর (বাতিল) হয়ে পড়ে।
প্রথম শর্ত: ইলম বা জ্ঞান
আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন, "তুমি জেনে রাখো, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ (আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই)।" (মুহাম্মদ:১৯) [তাওহীদের] এলেম বা জ্ঞানকে বান্দার ইসলাম কবুলের প্রথম শর্ত নিধারণ করা হয়েছে।
কালেমার শব্দসমূহের জ্ঞান অর্জন: কালেমা দু'টি অর্থপূর্ণ বাক্যের সমষ্টি আল্লাহ ব্যতীত ইবাদতের যোগ্য কোন ইলাহ্ (রব) নেই। এবং হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) আল্লাহ প্রেরিত সর্বশেষ নবী ও রাসূল। কালেমার প্রথম অংশকে "তাওহীদ" ও দ্বিতীয় অংশকে "রিসালাত" বলা হয় উভয় অংশে বিশ্বাস রাখা অপরিহার্য।
তাওহীদের নিন্মোক্ত বিষয়সমূহ জানতে ও মানতে হবে:
(১) আল্লাহই একমাত্র রব। তিনিই একমাত্র সৃষ্টিকর্তা, একমাত্র অনন্তকাল থাকবেন। তিনি একমাত্র অদৃশ্য ও ভবিষ্যতের ব্যাপারে জ্ঞান রাখেন (আলেমুল গায়েব) । তিনিই একমাত্র রিযিকদাতা ও নিরাপত্তাদানকারী। তিনিই জীবন-মৃত্যুর মালিক। তিনিই মাতৃগর্ভে শিশুর প্রকৃতি সম্পর্কে অবহিত। তিনিই জানেন কখন বৃষ্টি হবে। তিনিই জানেন মানুষ আগামীকাল কি উপার্জন করবে। তিনিই সবার মৃত্যুর সময় ও স্থান নির্ধারণকারী। আল্লাহর এই গুণাগুণসমূহ সামগ্রিকভাবে 'তাওহীদ আল-রুবুবিয়াহর' অন্তর্গত।
যদি কেউ এই ধারনা পোষণ করে যে আমেরিকা বা জাতিসংঘ (ইউ, এন) তার নিরাপত্তা বিধান করবে অথবা তার ব্যবসা বা তার মনিব বা সরকার তাকে রিযিক দিবে, জ্যোতিষ বা ভাগ্যগণনাকারী তার ভবিষ্যত বলে দিবে; তাহলে সে “তাওহীদ আর রুবুবিয়াহকে” অস্বীকার করল।
(২) একমাত্র আল্লাহ সুবহানাহু তা'য়ালা ব্যতীত অন্য কারো ইবাদত করা (হুকুমের অনুসরণ) যাবে না। সকল ইবাদত (যেমন নামায, রোযা, কোরবানী বা ত্যাগ) কেবলমাত্র আল্লাহরই প্রাপ্য। যদি কেউ কোন পূণ্যবান মৃত ব্যক্তি বা কবরের (মাজার) কাছে অথবা কোন ধর্মীয় নেতার (পীর, ফকির) কাছে তার মনের আকাঙ্খা পুরণের জন্য প্রার্থনা করে এবং তাদের নিকট সওয়াবের উদ্দেশ্যে দান করে তবে সে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ অস্বীকার করলো। যা একটি প্রকাশ্য কুফুরী এবং 'তাওহীদ আল উলুহিয়ার' পরিপন্থী। অন্য কথায়, ব্যক্তিজীবন, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র ও পৃথিবী একমাত্র কুরআন ও সুনড়বাহর আলোকে পরিচালিত হতে হবে। যদি আমরা মনে করি যে, আল্লাহর আইন (শরীয়াহ) যা রাসূল (সাঃ) ও খিলাফায়ে রাশেদার দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তা সেকেলে, অপ্রয়োজনীয়, নিকৃষ্ট এবং আল্লাহর আইনের (শরীয়াহ) তুলনায় ব্রিটিশ বা আমেরিকান আইন বা অন্য যে কোন মতাদর্শ বা জীবনব্যবস্থা (যেমন-গণতন্ত্র, রাজতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, একনায়কতন্ত্র, পুঁজিবাদ, ধর্মনিরপেক্ষবাদ ইত্যাদি) এগুলির যে কোনটি যদি বর্তমান প্রেক্ষাপটে অধিকতর গ্রহণযোগ্য বলে মনে হয় তাহলে এই ধারণা পোষণকারী ব্যক্তির লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’র ঘোষণা কার্যকর হবে না।
(৩) আমরা জানি যে, আল্লাহর নিরানব্বইটি সুন্দর নাম রয়েছে যার প্রত্যেকটি পৃথক পৃথকভাবে আল্লাহর গুণ-সমূহকে প্রকাশ করে। এই গুণবাচক নামসমূহের প্রত্যেকটির উপর ঈমান আনা ফরয। এই নামসমূহের উপর বিশ্বাস স্থাপনই 'তাওহীদ আল-আসমা আল সিফাত'।
সুতরাং আমরা যদি তাওহীদ রুবুবিয়াহ ও তাওহিদ উলুহিয়্যাহ এর মাঝে পার্থক্য বুঝতে চাই তাহলে এই উদাহরণটি বোঝার চেষ্টা করি,
আল্লাহ ছাড়া আর কোন আইন্ দাতা বা বিধান দাতা নেই এটি হল তাওহীদ আর রুবুবিয়্যাহ এর অংশ, আর আল্লাহর আইন ছাড়া আর কোন আইন দিয়ে বিচার করা যাবে না এটি হল তাওহীদ আল উলুহিয়্যাহ্ এর অংশ। সুতরাং তাওহীদ আর রুবুবিয়্যাহ আল্লাহর সাথে সম্পর্কিত আর তাওহীদ আল উলুহিয়্যাহ বান্দার আনুগত্য ও কাজের সাথে সম্পর্কিত।
প্রত্যেককেই রিসালাত সংক্রান্ত নিন্মোক্ত বিষয়সমূহ মানতে হবে:
• (১) আমাদেরকে অবশ্যই মানতে হবে যে, মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ (সাঃ) আল্লাহ পাক প্রেরিত সর্বশেষ নবী ও রাসূল এবং তাঁর প্রতি সর্বশেষ আসমানী কিতাব কুরআন নাযিল করা হয়েছে।
• (২) সাইয়্যেদুল মুরসালীন রাসূল (সাঃ) এর প্রত্যেকটি কথা, কাজ ও মৌনসম্মতিকে সুন্নাহ বলে যা আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কর্তৃক অনুমোদিত। "সে [মুহাম্মদ (সাঃ)] মনের ইচ্ছায় বলে না। কোরআন অহী, যা প্রত্যাদেশ হয়।" (আন-নাজম: ৩-৪) সুতরাং প্রত্যেক মুসলমানকে রাসূল (সাঃ)-এর সুন্নাত অবশ্যই অনুসরণ করতে হবে।
• (৩) আমাদেরকে এই বিষয়টি মানতে হবে যে, আল্লাহর রাসূল (সাঃ) বিশ্বজগতের সর্বোৎকৃষ্ট গুণাবলী সম্পন্ন এবং সর্বশ্রেষ্ঠ মানব।
• (৪) আমাদেরকে অবশ্যই রাসূল (সাঃ)-কে সবকিছু (ব্যক্তি ও বস্তু) অপেক্ষা বেশি ভালবাসতে হবে। আল্লাহর রাসূল (সাঃ) বলেছেন, তোমাদের মধ্যে কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত মু'মিন হতে পারবে না যতক্ষণ না তোমরা তোমাদের পিতা, তোমাদের সন্তান এবং সমগ্র মানবকুল অপেক্ষা আমাকে বেশী ভাল না বাসবে। [সহীহ্ আল বুখারী/সহীহ্ মুসলিম]
দ্বিতীয় শর্ত: (আল-ইয়াক্বীন) নিশ্চিতভাবে বিশ্বাস স্থাপন
আমাদেরকে অবশ্যই শাহাদার প্রথম শর্তের [তাওহীদ ও রিসালাত] উপর দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতে হবে। আল্লাহর অস্তিত্ব, আল্লাহর রাসূল (সাঃ), ফেরেশতা, আসমানী কিতাবসমূহ, বিচার দিবস, তাকদীর, জান্নাত, জাহান্নাম ইত্যাদির ব্যাপারেও কোনরূপ সন্দেহ পোষণ করার অবকাশ নেই। আল্লাহ সুবহানাহু তায়া'লা ও রাসূল (সাঃ)-এর বক্তব্যের বিরুদ্ধাচারণ করা যাবে না। 'যে আল্লাহ ফেরেশতা, কিতাবসমূহ, রাসূলগণ ও পরকালকে অবিশ্বাস করে সে মারাত্মকভাবে পথভ্রষ্ট হয়ে যাবে।' (নিসাঃ ১৩৬)
আমাদেরকে আবু বকর (রাঃ)-এর ন্যায় ঈমান আনতে হবে যেরূপ তিনি 'ইস্রা' ও 'মিরাজের' ব্যাপারে ঈমান এনেছিলেন। একদা আবু জেহেল তাঁকে জিজ্ঞাসা করেছিল যে কেউ যদি তোমাকে এরূপ বলে যে, সে একরাতে মাসজিদুল আকসা, সাত আসমান, বেহেস্ত, দোযখ পরিভ্রমণ শেষে আবার ঐ রাতেই মক্কায় ফিরে এসেছে তবে তুমি কি তার কথা বিশ্বাস করবে? আবু বকর (রাঃ) জবাব দিলেন অবশ্যই নয়। তখন আবু জেহেল বলল যদি তোমার বন্ধু মুহাম্মদ (সাঃ) এইরূপ কথা বলে? এর জবাবে আবু বকর (রাঃ) বললেন যদি আল্লাহর রাসূল (সাঃ) এইরূপ কথা বলে থাকেন তবে ইহা অবশ্যই সত্য এবং নির্দ্বিধায় বিশ্বাস করি। এই ঘটনার পর আল্লাহর রাসূল (সাঃ) তাকে আল-সিদ্দিক (বিশ্বাসী) উপাধিতে ভুষিত করেন। আবু বকর সিদ্দিক (রাঃ) ছিলেন সন্দেহের বেড়াজাল থেকে মুক্ত এবং এভাবেই আমাদের দ্বিতীয় শর্ত পূরণ করতে হলে এরূপ বিশ্বাসী হতে হবে।
"প্রকৃতপক্ষে মু'মিন তো তারাই যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান এনেছে, অতঃপর কোন সন্দেহ করে না এবং নিজেদের জীবন ও সম্পদ দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করে। শুধুমাত্র তারাই (ঈমানের দাবীতে) সত্যবাদী।" (আল-হুজরাত: ১৫)
তৃতীয় শর্তঃ (আল-কবুল) প্রকাশ্যে এবং গোপনে ঈমানের স্বীকৃতি
আমাদের অবশ্যই তাওহীদ ও রিসালাতের (শর্ত ০১) ব্যাপারে অন্তরে দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে এবং যে কোন প্রেক্ষাপটের মোকাবেলায় মৌখিক স্বীকৃতি দান ও বাহ্যিকভাবে মেনে নিতে হবে। কেবলমাত্র অন্তরে বিশ্বাস স্থাপনই যে যথেষ্ট নয় এবং মৌখিক ও বাহ্যিক স্বীকৃতিও প্রয়োজনীয়তা আবশ্যক তা আবু তালেবের জীবনী থেকে জানা যায়। যিনি (আবু তালেব) অনেক প্রতিকুলতার মধ্যেও রাসূল (সাঃ) কে সাহায্য করেছিলেন এবং তাঁর নবুওয়াতের ব্যাপারেও বিশ্বাসী ছিলেন। কিন্তু মৃত্যুশয্যায় শায়িত অবস্থায় কোরাইশ নেতাদের সম্মুখে 'কালেমা শাহাদার' মৌখিক স্বীকৃতি দিতে ব্যর্থ হওয়ায় শেষ বিচারের দিনে তাকে (আবু তালেব) জাহান্নামের উত্তপ্ত জুতা পরানো হবে।
আল-কবুল বা গ্রহণ হচ্ছে প্রত্যাখ্যানের বিপরীত এবং কুরআনে গ্রহণের প্রমাণ হচ্ছে আল্লাহর (তায়ালা) এই কথা: "সত্যিই তাদেরকে যখন বলা হত: "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ (আল্লাহ ছাড়া ইবাদতের যোগ্য আর কোন ইলাহ নেই।)" তখন এরা অহংকারে ফেটে পড়ত। বলতঃ "আমরা এক বিকৃত মস্তিষ্ক কবির কথায় নিজেদের মাবুদদের ত্যাগ করব।" (আস-সাফফাত ৩৫-৩৬)
চতুর্থ শর্ত: (আল-ইনকিয়াদ বা আত্মসমর্পণ) কুরআন ও সুন্নাহর নিকট পরিপূর্ণ আত্মসমর্পণ
আমাদেরকে অবশ্যই কুরআন ও সু্ন্নাহর কাছে পরিপূর্ণভাবে আত্মসমর্পণ করতে হবে। কিছু আয়াত মানা এবং বাকী আয়াত অমান্য করা যাবে না। অন্যথায় আমাদের ভাগ্যেও তাই ঘটবে যা ইয়াহুদীদের হবে। যারা এরূপ করত এ সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন।
"তবে কি তোমরা কিতাবের কিয়দংশ বিশ্বাস কর এবং কিয়দংশ অবিশ্বাস কর। যারা এরূপ করে, পার্থিব জীবনে দুর্গতি ছাড়া তাদের আর কোন পথ নেই। কিয়ামতের দিন তাদের কঠোরতম শাস্তির দিকে পৌঁছে দেয়া হবে।" (আল বাকারাহ্: ৮৫)
একটি হাদীসে বর্ণিত আছে, রাসূল (সাঃ) বলেছেন: "তোমাদের মধ্যে কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত মু'মিন হতে পারে না যতক্ষণ পর্যন্ত না সে তার নিজের কামনাবাসনাকে আমার আনীত শিক্ষার দিকে ফিরিয়ে দেয়।" [সহীহ আল বুখারী]
কুরআন থেকে আত্মসমর্পণের পক্ষে প্রমাণ এই কথা: "ফিরে এস (অনুতপ্ত হয়ে) তোমাদের রবের দিকে এবং আত্মসমর্পণ কর তার ইচ্ছার কাছে।" (আয-যুমার: ৫৪)
পঞ্চম শর্ত: সত্যবাদীতা বা আল-সিদক
সেই সত্য যা মিথ্যা বা মুনাফেকী কোনটাই অনুমোদন করে না। এই সত্যের প্রমাণ হচ্ছে আল্লাহ তায়ালার বাণী: "আলিফ লাম মীম। লোকেরা কি এই মনে করে নিয়েছে যে, "আমরা ঈমান এনেছি" এইটুকু বললেই তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হবে? আর তাদের পরীক্ষা করা হবে না? অথচ আমরা তো এদের পূর্বে অতিক্রান্ত সকল লোককেই পরীক্ষা করেছি। আল্লাহকে তো অবশ্যই দেখে নিতে হবে কে সত্যবাদী আর কে মিথ্যাবাদী।"(আন-কাবুত: ১,২,৩)
যে ব্যক্তি এ কলেমা শুধু মুখে উচ্চারণ করবে কিন্তু এ কলেমা দ্বারা যা বুঝানো হয় তা যদি অন্তরে অস্বীকার করে তবে সে নাজাত [মুক্তি] লাভ করতে পারবেনা, যেমনটি আল্লাহর বর্ণনা অনুযায়ী মুনাফিকরা লাভ করতে পারবেনা।
"আপনার কাছে মুনাফিকরা যখন আসে তখন বলেঃ আমরা স্বাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি অবশ্যই আল্লাহর রাসূল। আল্লাহ জানেন যে, আপনি অবশ্যই আল্লাহর রাসূল। আর আল্লাহ স্বাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, মুনাফিকরা অবশ্যই মিথ্যাবাদী।" (মুনাফিকুন: ১)
আল্লাহ তায়ালা অন্য আয়াতে তাদেরকে মিথ্যাবাদী বলে বর্ণনা করেছেনঃ
"আর মানুষের মধ্যে এমন কিছু লোক রয়েছে যারা বলে আমরা আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ঈমান এনেছি, অথচ প্রকৃতপক্ষে তারা ঈমানদার নয়।" (আল-বাকারাহ: ৮)
ষষ্ঠ শর্ত: আল-ইখলাস বা অন্তরে একাগ্রতা
নিষ্ঠাপূর্ণ ইবাদত কেবলমাত্র আল্লাহর জন্য। প্রতি নামাযে আমরা সূরা ফাতিহার এই কথারই স্বীকৃত দেই যে, "আমরা একমাত্র আপনারই ইবাদত করি এবং আপনার কাছে সাহায্য চাই।" [আল ফাতিহা: ০৪] এই আয়াত থেকে বুঝা যায় যে, আমরা শুধুমাত্র আল্লাহর ইবাদতই করি না সাথে সাথে তাঁর উপর পূর্ণ তাওক্কুল (ভরসা) করি। নিয়তের বিশুদ্ধতা (ইখলাস আল নিয়্যাহ) ইবাদত কবুলের জন্য অপরিহার্য। একটি হাদীসে আছে যে, "বিচার দিবসে তিন ব্যক্তিকে জাহান্নামের দিকে নিয়ে যাওয়া হবে। তাদের একজন হবে আলেম, একজন দানশীল ও একজন শহীদ। তারা জাহান্নামবাসী হবে এই কারণে যে, তাদের কর্মকান্ড আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার উদ্দেশ্য ছিল না বরং তা ছিল লোক দেখান (রিয়া)।" সুতরাং আমাদের ইবাদতসমূহ রিয়ামুক্ত করতে হবে কারণ রিয়াকারীর আমল বরবাদ হয়ে যাবে।
সপ্তম শর্ত: (আল-মুহাব্বাত)
আল্লাহর জন্যই ভালবাসা এবং আল্লাহর জন্যই ঘৃণা করা। (আল ওয়ালা এবং ওয়াল বারা): আমাদের যে কোন ব্যক্তি বা বস্তুকে আল্লাহর জন্য ভালবাসতে হবে এবং তাঁর জন্যই ঘৃণা করতে হবে। ইব্রাহিম (আঃ)-এর ঘটনা এর (আল ওয়ালা এবং আল বারা) উৎকৃষ্ট উদাহরণ। তিনি তাঁর পিতা আযরের মিথ্যা প্রভুদের অস্বীকার করে বলেছিলেন "তোমার ও আমার বিরোধ কিয়ামত পর্যন্ত টিকে থাকবে।" সুতরাং মু'মিনকে অবশ্যই হক (সত্য) ভালবাসতে হবে এবং বাতিল (মিথ্যা) ঘৃণা করতে হবে। একটি হাদীসে বর্ণিত আছে যে, “বিচার দিবসে সাত ব্যক্তি আল্লাহর আরশের ছায়া লাভ করবে, যেদিন আল্লাহর আরশের ছায়া ব্যতিত অন্য কোন ছায়া থাকবে না। তাদের একজন হল সেই ব্যক্তি যে আল্লাহর জন্য কারো সঙ্গে মিলিত হত এবং আল্লাহর জন্য বিচ্ছিন্ন হত।" [সহীহ আল বুখারী]
সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ)-দের জীবনী থেকেও হকের প্রতি ভালবাসা এবং বাতিলের প্রতি ঘৃণার ভুরিভুরি উদাহরণ পাওয়া যায়। যুদ্ধের ময়দানে নিঃর্দ্বিধায় কাফের পিতা বা পুত্রকে হত্যা করে অনেক সাহাবী এর যথাযথ দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন কারণ তাঁরা কেবলমাত্র আল্লাহর জন্যই কাউকে ভালবাসতেন বা ঘৃণা করতেন।
"মানব জাতির মধ্যে এমন কিছু লোক আছে যারা আল্লাহ ছাড়া অপর (শক্তি) কে আল্লাহর প্রতিদ্বন্দ্বী ও সমতুল্যরূপে গ্রহণ করে এবং তাকে এরূপ ভালবাসে যেরূপ ভালবাসা উচিত একমাত্র আল্লাহকে। অথচ প্রকৃত ঈমানদার লোকগণ আল্লাহকে সর্বাপেক্ষা অধিক ভালবাসে।" (আল-বাকারাহ: ১৬৫)
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, "আল্লাহর রাসূল (সাঃ) বলেছেন: যারই নিম্নলিখিত তিনটি গুণ থাকবে সেই ঈমানের মাধূর্য লাভ করবে: (১) তার কাছে আল্লাহ ও তার রাসূল অন্য যে কোন কিছুর তুলনায় অধিক প্রিয় হবে। (২) আল্লাহর উদ্দেশ্যে ছাড়া কোন উদ্দেশ্যে কোন ব্যক্তিকে ভাল না বাসবে। (যখন কাউকে ভালবাসবে একমাত্র আল্লাহর জন্যই ভালবাসবে) (৩) অবিশ্বাসের (কুফর) দিকে প্রত্যাবর্তনকে ঘৃণা করবে, কেননা আল্লাহ তাকে এ থেকে রক্ষা করেছে এবং সে দোজখের আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়া ঘৃণা করে।" [মুসলিম]
মুসলমান হওয়ার জন্য উপরোক্ত সাতটি শর্ত প্রত্যেককে নিজের জীবনে কার্যকর করতে হবে।
--------------------------------------------------------
কালিমা/শাহাদাহ/লা ইলাহা ইল্লালাহ মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ দুটি ভাগ
i) লা ইলাহা ইল্লালাহ
ii) মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ
তাওহীদের তথা লা ইলাহা ইল্লালাহ’র মৌলিক উপাদান বা রুকণঃ ২টি
============================
i) ইমানবিল্লাহ/ আল্লাহর প্রতি ঈমান ও
ii) কুফর বিত তাগুত/ তাগুতের বিরদ্ধাচারন/ অস্বীকার করা
-----------------------------------------------------------
ii) কুফর বিত তাগুত/ তাগুতের বিরদ্ধাচারণ/ অস্বীকার করাঃ -
=====================================
মহান আল্লাহ বান্দার উপর ফরয করেছেন যেন একমাত্র তাঁরই ইবাদত করা হয়, এবং এটাই হলো সেই তাওহীদ যা ছিল সকল নবীগণের (عليهم السلام) দাওয়াতের মূল বিষয়।
যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ
“আমার ইবাদত করার জন্যই আমি জিন ও মানব জাতি সৃষ্টি করেছি।” (সূরা যারিয়াত: ৫৬)
আর “লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ” হলো পবিত্র কালিমা তাওহীদ যার উপর ভিত্তি করে টিকে থাকে দ্বীন ইসলাম। একথা জানা প্রয়োজন যে, আল্লাহ তাআলা মানব জাতির উপর সর্বপ্রথম যা ফরয করেছেন তা হচ্ছে তাগুতের সাথে কুফরী এবং আল্লাহর উপর ঈমান।
অর্থাৎ,
“লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ” এর রুকন বা ভিত্তি দু’টো:
১। কুফর বিত্* তাগুত
২। ঈমান বিল্লাহ
আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِي كُلِّ أُمَّةٍ رَّسُولاً أَنِ اعْبُدُواْ اللّهَ وَاجْتَنِبُواْ الطَّاغُوتَ
“আমি প্রত্যেক উম্মতের মধ্যেই রাসূল প্রেরণ করেছি এই মর্মে যে, তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো এবং তাগুতকে বর্জন করো।” (সূরা নাহল: ৩৬)
وَالَّذِينَ اجْتَنَبُوا الطَّاغُوتَ أَن يَعْبُدُوهَا وَأَنَابُوا إِلَى اللَّهِ لَهُمُ الْبُشْرَى فَبَشِّرْ عِبَادِ
“যারা তাগুতের পূজা-অর্চনা থেকে দূরে থাকে এবং আল্লাহ অভিমুখী হয়, তাদের জন্যে রয়েছে সুসংবাদ। অতএব, সুসংবাদ দিন আমার বান্দাদেরকে।” (সূরা যুমার: ১৭)
فَمَنْ يَكْفُرْ بِالطَّاغُوتِ وَيُؤْمِن بِاللّهِ فَقَدِ اسْتَمْسَكَ بِالْعُرْوَةِ الْوُثْقَىَ لاَ انفِصَامَ لَهَا وَاللّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ
“সুতরাং যে তাগুতের সাথে কুফরী করে এবং আল্লাহর উপর ঈমান আনে সে এমন মজবুত রজ্জুকে ধারণ করতে সক্ষম হয়েছে যার কোন বিভক্তি বা চিড় নেই, আর আল্লাহ সর্ব শ্রোতা ও সর্ব জ্ঞানী।” (সূরা বাকারা: ২৫৬)
اللّهُ وَلِيُّ الَّذِينَ آمَنُواْ يُخْرِجُهُم مِّنَ الظُّلُمَاتِ إِلَى النُّوُرِ وَالَّذِينَ كَفَرُواْ أَوْلِيَآؤُهُمُ الطَّاغُوتُ يُخْرِجُونَهُم مِّنَ النُّورِ إِلَى الظُّلُمَاتِ أُوْلَـئِكَ أَصْحَابُ النَّارِ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ
“যারা ঈমান এনেছে, আল্লাহ তাদের অভিভাবক। তাদেরকে তিনি বের করে আনেন অন্ধকার থেকে আলোর দিকে। আর যারা কুফরী করে তাদের অভিভাবক হচ্ছে তাগুত। তারা তাদেরকে আলো থেকে বের করে অন্ধকারের দিকে নিয়ে যায়। এরাই হলো দোযখের অধিবাসী, চিরকাল তারা সেখানেই থাকবে।” (সূরা বাকারা: ২৫৭)
أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِينَ أُوتُواْ نَصِيبًا مِّنَ الْكِتَابِ يُؤْمِنُونَ بِالْجِبْتِ وَالطَّاغُوتِ وَيَقُولُونَ لِلَّذِينَ كَفَرُواْ هَؤُلاء أَهْدَى مِنَ الَّذِينَ آمَنُواْ سَبِيلاً
“তুমি কি তাদেরকে দেখনি, যারা কিতাবের কিছু অংশ প্রাপ্ত হয়েছে, যারা মান্য করে জিবত ও তাগুতকে এবং কাফেরদেরকে বলে যে, এরা মুসলমানদের তুলনায় অধিকতর সরল সঠিক পথে রয়েছে।” (সূরা নিসা: ৫১)
أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِينَ يَزْعُمُونَ أَنَّهُمْ آمَنُواْ بِمَا أُنزِلَ إِلَيْكَ وَمَا أُنزِلَ مِن قَبْلِكَ يُرِيدُونَ أَن يَتَحَاكَمُواْ إِلَى الطَّاغُوتِ وَقَدْ أُمِرُواْ أَن يَكْفُرُواْ بِهِ وَيُرِيدُ الشَّيْطَانُ أَن يُضِلَّهُمْ ضَلاَلاً بَعِيدًا
“আপনি কি তাদেরকে দেখেননি, যারা দাবী করে যে, আপনার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে এবং আপনার পূর্বে যা অবতীর্ণ হয়েছে হয়েছে সে বিষয়ের উপর তারা ঈমান এনেছে। তারা বিরোধীয় বিষয়কে তাগুতের দিকে নিয়ে যেতে চায়, অথচ তাদের প্রতি নির্দেশ দেয়া হয়েছে, তারা যেন তাকে অস্বীকার করে। পক্ষান্তরে শয়তান তাদেরকে প্রতারিত করে পথভ্রষ্ট করে ফেলতে চায়।” (সূরা নিসা: ৬০)
الَّذِينَ آمَنُواْ يُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِ اللّهِ وَالَّذِينَ كَفَرُواْ يُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِ الطَّاغُوتِ فَقَاتِلُواْ أَوْلِيَاء الشَّيْطَانِ إِنَّ كَيْدَ الشَّيْطَانِ كَانَ ضَعِيفًا
“যারা ঈমানদার তারা যে জিহাদ করে আল্লাহর রাহেই। পক্ষান্তরে যারা কাফের তারা লড়াই করে তাগুতের পক্ষে। সুতরাং তোমরা জিহাদ করতে থাকো শয়তানের পক্ষাবলম্বনকারীদের বিরুদ্ধে, (দেখবে) শয়তানের চক্রান্ত একান্তই দুর্বল।” (সূরা নিসা: ৭৬)
তাগুতের সাথে কুফরীর ধরন হলো:
“লা ইলাহা”—“নেই কোন ইলাহ” বাক্যটি নেতিবাচক; অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া অন্য সবকিছুর উপাসনা (ইবাদত) বাতিল বলে বিশ্বাস করা, তা ত্যাগ করা, ঘৃণা ও অপছন্দ করা, এবং যারা তা (আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনকিছুর উপাসনা) করবে তাদের অস্বীকার করা, তাদের সাথে শত্রুতা পোষণ করা।
আল্লামা ইদরিস কান্ধলবি আল হানাফী (رحيمه الله) বলেন, “হযরত (صلي الله عليه و سلم) এর কুফর ও শিরক বিরোধী প্রকাশ্য ঘোষনা এবং মূর্তি ও মূর্তিপূজার বিরুদ্ধে ঘৃণার দরুন তাঁর ও তাঁর সাহাবাদের (رضي الله عنهم) তীব্র শত্রুতা ও বিরোধীতার মুখে অটল থাকা এ বিষয়েরই প্রকাশ্য প্রমাণ যে, ঈমান এবং ইসলামের জন্য কেবল অন্তরে সত্যায়ন অথবা মৌখিক স্বীকৃতিই যথেষ্ট নয়, বরং কুফর ও কাফের এবং শিরকের বৈশিষ্ট্য ও আনুষঙ্গিকতার বিরোধীতাও জরুরি এবং সেগুলো অপছন্দ করাও অত্যাবশ্যক।” (সিরাতে মুস্তফা সাঃ, ১/১৫৫)
তিনি (رحيمه الله) আরও বলেন, “মহান পয়গম্বর (عليهم السلام) গণের সুন্নাহ তথা আদর্শ তো এটাই যে, যেভাবে তাঁরা বিশ্বজাহানের প্রতিপালক আল্লাহর প্রতি ইমান ও সত্যায়নের আহবান জানান, ঠিক তেমনিভাবে কুফর, শিরক ও তাগুতকেও মিথ্যা প্রতিপন্ন করা ও অস্বীকারের আহবান জানান।” (সিরাতে মুস্তফা সাঃ, ১/১৫৬)
আর আল্লাহর উপর ঈমানের অর্থ হলো:
দ্বিতীয় রুকন ‘ইল্লাল্লাহ’ হলো ইতিবাচক। অর্থাৎ শিরকমুক্ত শুধুমাত্র এক আল্লাহর ইবাদত প্রতিষ্ঠার অংগীকার।
আল্লাহ তাআলাই কেবলমাত্র হক উপাস্য ও ইলাহ, অন্য কেউ নয়—একথা বিশ্বাস করা, আর সবরকম ইবাদতকে নিষ্ঠার সাথে আল্লাহর জন্যই নির্দিষ্ট করা যাতে এর কোন অংশ অন্য কোন উপাস্যের জন্য নির্দিষ্ট না হয়; আর মুখলিস বা নিষ্ঠাবানদের ভালবাসা, তাদের সাথে আনুগত্যের সম্পর্ক স্থাপন করা, মুশরিকদের ঘৃণা ও অপছন্দ করা, তাদের সাথে শত্রুতা করা।
আর এটাই হলো ইবরাহীম (عليه السلام) এর প্রতিষ্ঠিত দ্বীন বা মিল্লাত, যে ব্যক্তি এর থেকে বিমুখ হবে সে তো স্বয়ং নিজেকেই বোকা বানাবে, আর এটাই হলো সে আদর্শ (أسوة) যার কথা আল্লাহ তাআলা তাঁর বাণীতে বলেছেন:
قَدْ كَانَتْ لَكُمْ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ فِي إِبْرَاهِيمَ وَالَّذِينَ مَعَهُ إِذْ قَالُوا لِقَوْمِهِمْ إِنَّا بُرَاء مِنكُمْ وَمِمَّا تَعْبُدُونَ مِن دُونِ اللَّهِ كَفَرْنَا بِكُمْ وَبَدَا بَيْنَنَا وَبَيْنَكُمُ الْعَدَاوَةُ وَالْبَغْضَاء أَبَدًا حَتَّى تُؤْمِنُوا بِاللَّهِ وَحْدَهُ
“তোমাদের জন্যে ইব্রাহীম ও তাঁর সঙ্গীগণের মধ্যে চমৎকার আদর্শ রয়েছে। তাঁরা তাদের সম্প্রদায়কে বলেছিলেন: তোমাদের সাথে এবং তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যার ইবাদত করো, তার সাথে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই। আমরা তোমাদের মানি না। তোমাদের ও আমাদের মধ্যে চিরশত্রুতা বজায় থাকবে যতক্ষণ পর্যন্ত না তোমরা এক আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করো।” (সূরা মুমতাহিনা: ৪)
তাগুত এর আভিধানিক সংজ্ঞা:
তাগুত শব্দের অর্থ হচ্ছে সীমালংঘনকারী, আল্লাহদ্রোহী, বিপথে পরিচালনাকারী। তাগুত শব্দটি আরবী (তুগইয়ান) শব্দ থেকে উৎসারিত, যার অর্থ সীমালংঘন করা, বাড়াবাড়ি করা, স্বেচ্ছাচারিতা।
তাগুত শব্দের শর‘য়ী সংজ্ঞা:
#উমর (رضي الله عنه) বলেন, “জিবত শব্দের অর্থ হচ্ছে যাদু এবং তাগুত শব্দের অর্থ হচ্ছে শয়তান।” (তাফসীরে ইবন কাসির-২/৪৪৪, সূরা নিসা: ৫১ এর তাফসীর, তাফসীরে মা‘আরিফুল কুরআন: ২/৪১৩)
#জাবির (رضي الله عنه) তাগুত সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হয়ে বলেন, “তারা ছিলো যাদুকর এবং তাদের কাছে শয়তান আসতো।” (তাফসীরে ইবন কাসির-২/৪৪৪, সূরা নিসা: ৫১ এর তাফসীর)
#মুজাহিদ (رحيمه الله) বলেন, “তারা হচ্ছে মানুষরূপী শয়তান। তাদের কাছে মানুষ তাদের বিবাদ নিয়ে উপস্থিত হয় এবং তাদেরকে বিচারক মেনে নেয়।” (তাফসীরে ইবন কাসির-২/৪৪৪, সূরা নিসা: ৫১ এর তাফসীর)
#ইমাম মালেক (رحيمه الله) তাগুতের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছেন: “আল্লাহ তাআলাকে বাদ দিয়ে যার ইবাদত করা হয়, এমন প্রত্যেক জিনিসকেই তাগুত বলা হয়।” (ফতহুল ক্বাদীর, আল্লামা শওক্বানী)
#ইমাম ইবনে জারির তাবারি আশ-শাফেয়ী (رحيمه الله) বলেন, “আমাদের মতে সঠিক মত হলো, আল্লাহর উপর সীমালংঘনকারী মাত্রই তাগুত বলে চিহ্নিত, যার অধীনস্থ ব্যক্তিরা চাপের মুখে বা তাকে তোষামোদ করার জন্য বা তার আনুগত্য প্রকাশ করার জন্য তার ইবাদত করে। এ (তাগুত) উপাস্যটি মানুষ কিংবা শয়তান কিংবা মূর্তি কিংবা প্রতিমা অথবা অন্য যেকোন কিছুর হতে পারে।” (তাফসীর আত্* তাবারি, ইসলামি ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, ৫ম খন্ড, সূরা বাকারা: ২৫৬ নং আয়াতের তাফসীর)
#ইমাম ইবন জারির তাবারি আশ-শাফেয়ী (رحيمه الله) বলেন, “ঐ সকল আল্লাহদ্রোহী যারা আল্লাহর নাফরমানী করে সীমালংঘন করেছে এবং মানুষ যাদের আনুগত্য করে। সে মানুষ, জ্বিন, শয়তান, প্রতিমা বা অন্য কিছুও হতে পারে।” (তাফসীর আত্* তাবারি: ৩/২১)
#ইমাম নববী আশ-শাফেয়ী (رحيمه الله) বলেন, “আল্লাহ ছাড়া যাদের ইবাদাত করা হয় তারাই তাগুত। এটাই লাইস, আবু উবাইদা, কেসায়ি এবং বেশীরভাগ আরবী ভাষাবিদদের অভিমত।” (শরহে মুসলিম: ৩/১৮)
#ইমাম কুরতুবি আল-মালেকী (رحيمه الله) বলেন, “তাগুত হচ্ছে গণক, যাদুকর, শয়তান এবং পথভ্রষ্ট সকল নেতা।” (আল-জামে লি আহকামিল কুরআন: ৩/২৮২)
#ইমাম ইবনে তাইমিয়া আল-হাম্বলী (رحيمه الله) বলেন, “আল্লাহ ছাড়া যাদের ইবাদাত করা হয় তারাই তাগুত, যদি তারা তাদের এই ইবাদতে অসন্তুষ্ট না হয়। এ কারণেই আল্লাহর রাসূল মুহাম্মাদ (صلي الله عليه و سلم) মূর্তিকে তাগুত বলেছেন।” (মাজমাআতুল ফাতাওয়া: ২৮/২০০)
#ইমাম ইবনে তাইমিয়া আল-হাম্বলী (رحيمه الله) বলেন, “আল্লাহর কিতাব ছাড়া যার কাছে বিচার ফায়সালা চাওয়া হয়, তাকেই তাগুত নামে আখ্যায়িত করা হয়।” (মাজমাআতুল ফাতাওয়া: ৭০১/৭৮)
#ইমাম ইবনে কাসীর আশ-শাফেয়ী (رحيمه الله) বলেন, “হযরত উমরের (رضي الله عنه) তাগুতের অর্থ শয়তান নেয়া যথার্থই হয়েছে। কেননা সমস্ত খারাপ কাজই এর অন্তর্ভুক্ত রয়েছে যেগুলো অজ্ঞতার যুগের লোকদের মাঝে বিদ্যমান ছিল। যেমন প্রতিমার পূজা, তাদের কাছে অভাব-অভিযোগ পেশ করা এবং বিপদের সময় তাদের কাছে সাহায্য চাওয়া ইত্যাদি।” (তাফসীর ইবনে কাসির ১/৭১৪, সূরা বাকারা: ২৫৬ এর তাফসীর)
#ইমাম ইবনে কাসীর আশ-শাফেয়ী (رحيمه الله) বলেন, “এ আয়াত প্রত্যেক ঐ ব্যক্তির দুর্নাম ও নিন্দা করছে, যে কিতাব ও সুন্নাহকে ছেড়ে অন্য কোন বাতিলের দিকে স্বীয় ফায়সালা নিয়ে যায়। এখানে এটাই হচ্ছে তাগুতের ভাবার্থ।” (তাফসীর ইবনে কাসির ২/৪৬৩, নিসা: ৬০ এর তাফসীর)
#ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম আল-হাম্বলী (رحيمه الله) বলেন, “তাগুত হচ্ছে এমন যে কেউ যার প্রতি বান্দা (আবদ) সীমালংঘন করে, সেটা কাউকে ইবাদত করা (মা’বুদিন) বা অনুসরণ করা (মাতবুইন) বা মান্য করা (মুতাইন) যাই হোক না কেন।” (ই’লামুল মুওয়াক্কিইন)
#ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম আল-হাম্বলী (رحيمه الله) বলেন, “তাগুত হচ্ছে ঐ সকল মা’বুদ, নেতা, মুরব্বি যাদের আনুগত্য করতে গিয়ে সীমালঙ্ঘন করা হয়। আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলকে বাদ দিয়ে যাদের কাছে বিচার ফায়সালা চাওয়া হয়, অথবা আল্লাহর পরিবর্তে যাদের ইবাদাত করা হয়, অথবা আল্লাহর পক্ষ থেকে কোন দলিল-প্রমাণ ছাড়া যাদের আনুগত্য করা হয় এরাই হলো পৃথিবীর বড় বড় তাগুত। তুমি যদি এই তাগুতগুলো এবং মানুষের অবস্থার প্রতি লক্ষ্য করো তবে বেশীরভাগ মানুষকেই পাবে যারা আল্লাহর ইবাদতের পরিবর্তে তাগুতের ইবাদত করে। আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের কাছে বিচার-ফায়সালা চাওয়ার পরিবর্তে তাগুতের কাছে বিচার-ফায়সালা নিয়ে যায়। আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের আনুগত্য করার পরিবর্তে তাগুতের আনুগত্য করে।” (ই’লামুল মুওয়াক্কিইন: ১/৫০)
#ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম আল-হাম্বলী (رحيمه الله) তাগুতকে ৫ টি শ্রেণীতে ভাগ করেছেন,
১. শাইতন বা শয়তান
২. যার ইবাদত/উপাসনা/পূজা করা হয় এবং সে এটি নিয়ে সন্তুষ্ট।
৩. যে অপরকে তার ইবাদাত/উপাসনা/পূজা করতে আহবান করে বা ডাকে।
৪. যে গায়েব বা অদৃশ্য-এর জ্ঞান জানার দাবি করে।
৫. যে আল্লাহ্* যা নাযিল করেছেন তা ব্যতীত অন্য কিছু দিয়ে শাসন করে। (মাদারিজুস-সালিকিন )
#শাইখুল ইসলাম মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহ্হাব আল-হাম্বলী (رحيمه الله) বলেন, “তাগুত হচ্ছে ঐ সকল মা’বুদ, নেতা, মুরব্বি, আল্লাহর পরিবর্তে যাদের আনুগত্য করা হয় এবং তারা এতে সন্তুষ্ট থাকে।” (মাজমাআতুত-তাওহীদ: ৯)
শাইখুল ইসলাম মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহ্হাব আল-হাম্বলী (رحيمه الله) তাগুতকে ৫ টি শ্রেণীতে ভাগ করেছেন, কিন্তু ৫ম ভাগটিতে পার্থক্য রয়েছে,
১. শাইতন বা শয়তান
২. যে আল্লাহ্* যা নাযিল করেছেন তা ব্যতীত অপর কিছু দিয়ে বিচার করে।
৩. যে আল্লাহ্*র পাশাপাশি গইব বা অদৃশ্যের জ্ঞানের দাবি করে।
৪. যার ‘ইবাদাত/উপাসনা/পূজা করা হয় এবং সে এটি নিয়ে সন্তুষ্ট থাকে।
৫. সেই অত্যাচারী বিচারক, যে আল্লাহ্*র বিচারে পরিবর্তন করে। (আদ-দারার আস-সুন্নিয়্যাহ, ভলিউম: ০১, পৃষ্ঠা: ১০৯-১১০)
#আল্লামা শাব্বির আহমাদ উসমানি আল-হানাফী (رحيمه الله) বলেন, “হযরত শাহ সাহেব [মাওলানা শাহ আব্দুল কাদির দেহলাবি আল-হানাফী (رحيمه الله)] বলেন, ‘তাগুত হচ্ছে তারা, যারা ভিত্তিহীনভাবে নের্তৃত্বের দাবি করে। প্রতিমা, শয়তান, স্বেচ্ছাচারী শাসক সবই এর অন্তর্ভুক্ত।’” (তাফসীরে উসমানিঃ২/৫৪৫)
#মুফতি মুহাম্মাদ শফি আল-হানাফী (رحيمه الله) বলেন, “তাগুত শব্দের অর্থ ঔদ্ধত্য প্রকাশকারী। আর প্রচলিত অর্থে ‘তাগুত’ বলা হয় শয়তানকে। এ আয়াতে বিরোধীয় বিষয়টিকে কা‘ব ইবনে আশরাফের কাছে নিয়ে যাওয়াকে শয়তানের কাছে নিয়ে যাওয়া সাব্যস্ত করা হয়েছে। তা হয় এই কারণে যে, কা‘ব নিজেই ছিল শয়তান কিংবা এই কারণে যে, শরীয়তের ফায়সালা বর্জন করে শরীয়তবিরোধী মীমাংসার দিকে ধাবিত হওয়া, শয়তানেরই শিক্ষা হতে পারে। বস্তুত যে লোক সেই শিক্ষার অনুসরণ করেছে, শয়তানের কাছেই সে যেন নিজের মোকাদ্দমা নিয়ে গেছে।” (তাফসীরে মা‘আরিফুল কুরআন: ২/৪৩৯-৪৪০)
উস্তাদ সাইয়্যেদ কুতুব শহীদ আশ-শাফেয়ী (رحيمه الله) বলেন, “তাগুত বলতে সেইসব ব্যক্তি ও ব্যবস্থাকে বোঝায় যেগুলো ঐশী দ্বীন এবং নৈতিক, সামাজিক ও আইন-শৃঙ্খলাকে অবমাননা করে এবং আল্লাহ নির্দেশিত বা তাঁর দেয়া দিক-নির্দেশনা থেকে উদ্ভূত নয় এমন সব মূল্যবোধ ও রীতিনীতির ভিত্তিতে জীবনব্যবস্থা পরিচালনা করে।” (তাফসীরে ফী যিলালিল কোরআন)
উস্তাদ সাইয়্যেদ কুতুব শহীদ আশ-শাফেয়ী (رحيمه الله) বলেন, “যারা সত্যকে অমান্য করে, ইবাদতের ক্ষেত্রে আল্লাহর দেয়া সীমারেখা অতিক্রম করে, আল্লাহর দেয়া শরীয়তের কোন তোয়াক্কা করে না, ইসলামি আক্বীদাহ-বিশ্বাসের কোন গুরুত্ব রাখে না, যারা ইবাদতের ক্ষেত্রে আল্লাহর নির্ধারিত পদ্ধতি বাদ দিয়ে অথবা আল্লাহর পক্ষ থেকে অনুমোদন ছাড়া ইবাদতের পদ্ধতি তৈরি করে, যারা বিশেষ প্রকার ধ্যান করা অথবা বিশেষ ভঙ্গিমা অথবা কোন ইবাদতের বিশেষ আদব তৈরি করে তারা সকলেই তাগুত। এমনিভাবে যারা বিশেষ কোন ব্যক্তির অন্ধ অনুকরণে জনসাধারণকে বাধ্য করে তারাও তাগুত।” (তাফসীরে ফী যিলালিল কোরআন: ১/২৯২)
#শাইখ মুহাম্মাদ আমিন শানকিত্বি আল-মালেকী (رحيمه الله) বলেন, “আল্লাহ ছাড়া যাদের ইবাদাত করা হয় তারাই তাগুত। আর এই গাইরুল্লাহর ইবাদতের বড় অংশটাই হচ্ছে শয়তানের জন্য। কেননা শয়তানের আহবানে সাড়া দিয়ে কোন গাইরুল্লাহর ইবাদাত করা পরোক্ষভাবে শয়তানেরই ইবাদতের শামিল। এ কারণেই আল্লাহ তাআলা বলেন: ‘হে বনী আদম! আমি কি তোমাদের বলে রাখিনি যে শয়তানের ইবাদাত করোনা?’ (সূরা ইয়াসিন: ৬০)” (তাফসীরে আদওয়াউল বয়ান: ১/২২৮)
#মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক আল-হানাফী (دابت بركته) বলেন, “‘তাগূতের অর্থ আল্লাহর ঐ বিদ্রোহী বান্দা, যে আল্লাহর মোকাবেলায় নিজেকে বিধানদাতা মনে করে এবং মানুষের উপর তা কার্যকর করতে চায়। প্রকৃতপক্ষে কোন তাগুত ব্যক্তি বা দলের বানানো আইন-কানুন হচ্ছে সত্য দ্বীন ইসলামের বিপরীতে বিভিন্ন ‘ধর্ম’, যা থেকে সম্পর্কচ্ছেদ করা ছাড়া ঈমান সাব্যস্ত হয়না। আল্লাহর বিরুদ্ধে কিংবা আল্লাহর উপাসনার পাশাপাশি তাগুতের উপাসনা বা আনুগত্য করা কিংবা তা বৈধ মনে করা, তদ্রুপ আল্লাহর দ্বীনের মোকাবেলায় বা তার সাথে তাগূতের আইন-কানুন গ্রহণ করা বা গ্রহণ করাকে বৈধ মনে করা সরাসরি কুফর ও শিরক। তাগূত ও তার বিধি-বিধান থেকে সম্পর্কচ্ছেদ ছাড়া ঈমানের দাবি নিফাক ও মুনাফিকী।” (ঈমান সবার আগে-৩, মাসিক আল-কাউসার মে-২০১৩)
#মাওলানা মুহাম্মাদ মাসঊদ আযহার আল-হানাফী (دابت بركته) বলেন,
১। ইসলাম বিরোধী প্রত্যেক শক্তির নামই তাগুত।
২। তাছাড়া, তাগুত হলো সেইসব ব্যক্তি যারা মানুষকে সত্য দ্বীন থেকে বিপথগামী করে-হোক সে মানুষ অথবা জ্বীন।
৩। যারা ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে-সেই ধরনের প্রত্যেক ব্যক্তিই তাগুত।
৪। তাগুত হলো সেইসব সিস্টেম বা পদ্ধতি যার ছত্রছায়ায় কুচক্রী মানুষগুলো একত্রিত হয়ে ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে ষরযন্ত্রে লিপ্ত থাকে অথবা যুদ্ধ করে।
৫। আরো, তাগুত হচ্ছে সেইসব প্রতিষ্ঠানের নাম যেখানে সত্য দ্বীন বিরোধী নিত্য-নতুন বিভাগ ও ফিরকার উদ্ভব ঘটে।
৬। শয়তান এবং মিথ্যা উপাস্যগুলোকে (হোক মানুষ অথবা জ্বিন) তাগুতের প্রধান অর্থ বুঝালেও, এর পাশাপাশি তাগুত হচ্ছে পৃথিবীর সেইসকল ক্ষমতাসীন মানুষ যারা তাদের সমস্ত বাতিল শক্তির মাধ্যমে ইসলামের অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করে, ইসলামি শরীয়তের আইনের বাস্তবায়নকে রুদ্ধ করে এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে কাফেরদের সাহায্য করে। (আল্লাহই ভালো জানেন) (ফাতহুল জাওয়াদ ফী মা’আরিফ আয়াতুল জিহাদ, পৃ: ৩৭৫-৩৭৬)
মনে রাখা দরকার কোন মানুষ তাগুতের উপর কুফরী ছাড়া ইমানদার হতে পারেনা।
মহান আল্লাহ বলেন:
فَمَنْ يَكْفُرْ بِالطَّاغُوتِ وَيُؤْمِن بِاللّهِ فَقَدِ اسْتَمْسَكَ بِالْعُرْوَةِ الْوُثْقَىَ لاَ انفِصَامَ لَهَا وَاللّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ
“সুতরাং যে তাগুতের সাথে কুফরী করে এবং আল্লাহর উপর ঈমান আনে সে এমন মজবুত রজ্জুকে ধারণ করতে সক্ষম হয়েছে যার কোন বিভক্তি বা চিড় নেই, আর আল্লাহ সর্ব শ্রোতা ও সর্ব জ্ঞানী।” (সূরা বাকারা: ২৫৬)
এ আয়াতের পূর্বাংশে আল্লাহ বলেছেন, “বিচার-বুদ্ধিসম্পন্ন পথ, ভ্রান্ত-পথ থেকে স্পষ্ট হয়েছে।” “বিচার-বুদ্ধি সম্পন্ন পথ” বলতে রাসূল (صلي الله عليه و سلم) এর দ্বীনকে, আর “ভ্রান্ত-পথ” বলতে আবু জাহলের দ্বীনকে বুঝানো হয়েছে, আর এর পরবর্তী আয়াতের মজবুত রশি বা রজ্জু দ্বারা “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” (আল্লাহ ছাড়া কোন হক উপাস্য নেই) এর সাক্ষ্য প্রদানকে বুঝিয়েছেন।
“লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ”-এই কালিমা কিছু জিনিসকে নিষেধ করে, এবং কিছু বস্তুকে সাব্যস্ত করে; সকল প্রকার ইবাদতকে আল্লাহর ছাড়া অন্যের জন্য নির্ধারিত হওয়াকে নিষেধ করে। শুধুমাত্র লা-শরীক আল্লাহর জন্য সকল প্রকার ইবাদতকে নির্দিষ্ট করে।
প্রধান প্রধান তাগুত
আর এ তাগুত -এর সংখ্যা অত্যধিক; তবে প্রধান-প্রধান তাগুত হলো পাঁচটি:
এক: শয়তান:
যে আল্লাহর ইবাদত থেকে মানুষকে অন্য কিছুর ইবাদতের দিকে আহবান করে।
এর প্রমাণ আল্লাহর বাণী: “হে আদম-সন্তান, আমি কি তোমাদের থেকে শয়তানের ইবাদত না করার অঙ্গিকার নিই নি? নিশ্চয়ই সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।” [সূরা ইয়াসিন: ৬০]
দুই: আল্লাহর আইন (হুকুম) পরিবর্তনকারী অত্যাচারী শাসক:
এর প্রমাণ আল্লাহ তা‘আলার বাণী: “আপনি কি তাদের দেখেন নি যারা মনে করে আপনার কাছে এবং আপনার পূর্ববর্তীদের কাছে যা অবতীর্ণ হয়েছে তার উপর ঈমান এনেছে, তারা তাগুতকে বিচারক হিসাবে পেতে আকাঙ্ক্ষা করে অথচ তাদেরকে এর (তাগুতের) সাথে কুফরির নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। আর শয়তান তাদেরকে সহজ সরল পথ থেকে অনেক দুর নিয়ে যেতে চায়।” [সূরা আন্নিসাঃ ৬০]
তিন: আল্লাহ কর্তৃক অবতীর্ণ (আইনের) হুকুমের বিপরীত হুকুম প্রদানকারী:
আল্লাহ তা‘আলা বলেন: “আর যারা আল্লাহর অবতীর্ণ আইন অনুসারে বিচার করে না তারা কাফের।” [সূরা আল মায়েদা: ৪৪]
চার: আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন গায়েবের খবর রাখার দাবিদার:
আল্লাহ তা‘আলা বলেন: “তিনি গায়েবের জ্ঞানে জ্ঞানী, সুতরাং তার অদৃশ্য জ্ঞানকে কারও জন্য প্রকাশ করেন না, তবে যে রাসূল এর ব্যাপারে তিনি সন্তুষ্ট তিনি তাকে তার সম্মুখ ও পশ্চাৎ থেকে হিফাজত করেন।” [সূরা আল-জিন: ২৬, ২৭]
অন্য আয়াতে বলেন: “আর তার কাছেই সমস্ত অদৃষ্ট বস্তুর চাবিকাঠি, এগুলো তিনি ছাড়া আর কেউ জানে না, তিনি জানেন যা ডাঙ্গায় আছে আর যা সমুদ্রে আছে। যে কোন (গাছের) পাতাই পতিত হয় তিনি তা জানেন, জমিনের অন্ধকারের কোন শস্য বা কোন শুষ্ক বা আর্দ্র বস্তু সবই এক প্রকাশ্য গ্রন্থে সন্নিবেশিত আছে।” [সূরা আল-আন‘আম: ৫৯]
পাঁচ: আল্লাহ ছাড়া যার ইবাদত করা হয় এবং সে এই ইবাদতে সম্পূর্ণ সন্তুষ্ট:
আল্লাহ তা‘আলা বলেন: “আর তাদের থেকে যে বলবে- আল্লাহ ব্যতীত আমি উপাস্য, তাকে আমি জাহান্নাম দ্বারা পরিণাম ফল প্রদান করব, এভাবেই আমি অত্যাচারীদের পরিণাম ফল প্রদান করে থাকি”। [সূরা আল-আন্বিয়াঃ ২৯]
মনে রাখা দরকার কোন মানুষ তাগুতের উপর কুফরি ছাড়া ইমানদার হতে পারেনা, আল্লাহ বলেন:
“সুতরাং যে তাগুতের সাথে কুফরি করে এবং আল্লাহর উপর ঈমান আনে সে এমন মজবুত রজ্জুকে ধারণ করতে সক্ষম হয়েছে যার কোন বিভক্তি বা চিড় নেই, আর আল্লাহ সর্ব শ্রোতা ও সর্ব জ্ঞানী।” [সূরা আল-বাকারা: ২৫৬]
এ আয়াতের পূর্বাংশে আল্লাহ বলেছেন যে, “বিচার-বুদ্ধিসম্পন্ন পথ, ভ্রষ্ট-পথ থেকে স্পষ্ট হয়েছে”। ‘বিচার-বুদ্ধি সম্পন্ন পথ’ বলতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর দীনকে, আর ‘ভ্রান্ত-পথ’ বলতে আবু জাহলের দীন, আর এর পরবর্তী আয়াতের ‘মজবুত রশি বা রজ্জু’ দ্বারা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ (বা আল্লাহ ছাড়া হক কোন উপাস্য নেই) এ সাক্ষ্য প্রদানকে বুঝিয়েছেন।
ঈমান
====
২। ঈমান এর শাখা ৭০টিরও বেশী;
i) সর্বপ্রথমঃ লা ইলাহা ইল্লালাহ ও সর্বশেষঃ কষ্টদায়ক বস্তু রাস্তা থেকে সরিয়ে দেয়া
সহিহ মুসলিম: বই ১: কিতাবুল ঈমান অধ্যায়: হাদিস ৫৫
উবায়দুল্লাহ ইবন সাঈদ ও আবদ ইবন হুমায়দ (র)……আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, নবী করীম (সাঃ) বলেন, ঈমানের শাখা সত্তরটিরও কিছু বেশি। আর লজ্জা-শরম ঈমানের একটি শাখা।
সহিহ মুসলিম: বই ১: কিতাবুল ঈমান অধ্যায়: হাদিস ৫৬
যুহায়র ইবন হারব (র)……আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ঈমানের শাখা সত্তরটিরও কিছু বেশি ।অথবা ষাটটিরও কিছু বেশি। এর সর্বোচ্চ শাখা হচ্ছে “আল্লাহ ব্যাতিত ইলাহ নেই” এ কথা স্বীকার করা, আর এর সর্বনিম্ন শাখা হচ্ছে-; রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু অপসারণ করা। আর লজ্জা ঈমানের বিশিষ্ট একটি শাখা।
সহিহ বুখারী: খন্ড ১: বই ২: ঈমান অধ্যায়: হাদিস ৮
আবদুল্লাহ্ ইব্ন জু’ফী (র)........ আবূ হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ (সা) ইরশাদ করেন, ঈমানের শাখা রয়েছে ষাটের কিছু বেশি। আর লজ্জা ঈমানের একটি শাখা।
----------------------------------------------------------
ইবনে হিব্বান (রঃ) কর্তৃক বর্ণিত ঈমানের শাখাগুলো হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী সহীহ বুখারীর ভাষ্যগ্রন্থ ফতহুল বারীতে সংক্ষিপ্তভাবে বর্ণনা করেছেন। এই শাখাগুলো তিন প্রকার। যথা:
(১) এমন কিছু শাখা আছে যা অন্তরের সাথে সম্পৃক্ত।
(২) কতিপয় শাখা জবানের সাথে সম্পৃক্ত এবং
(৩) এমন কতিপয় শাখা রয়েছে, শরীরের সাথে সম্পৃক্ত।
প্রথমতঃ অন্তরের কাজসমূহ
নিয়ত ও বিশ্বাস হচ্ছে অন্তরের কাজ। ঈমানের যেসমস্ত শাখা অন্তরের সাথে সম্পৃক্ত তার সংখ্যা ২৪টি। নিম্নে তা বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হল।
(১) আল্লাহর প্রতি ঈমান। আল্লাহর যাত (স্বত্তা), সিফাত (গুণাবলী) এবং একত্ববাদের প্রতি ঈমান আনয়নও আল্লাহর প্রতি ঈমানের অন্তর্ভূক্ত। তবে স্মরণ রাখা জরুরী যে, আল্লাহ্ স্বীয় সত্বা ও গুণাবলী কোন সৃষ্টির মত নয়। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
لَيْسَ كَمِثْلِهِ شَيْءٌ وَ هُوَ السَّميْعُ الْبَصِيْر
“কোন কিছুই তাঁর অনুরূপ নয়। তিনি শুনেন এবং দেখেন”। (সূরা শুরাঃ ১১)
(২) এই বিশ্বাস করা যে আল্লাহ্ ব্যতীত অন্যান্য সকল বস্তুই ধ্বংসশীল।
(৩) এমনিভাবে আল্লাহর ফেরেশতা
(৪) আসমানী কিতাব
(৫) নবী-রাসূল
(৬) তাকদীরের ভালমন্দ এবং
(৭) আখেরাতের প্রতি ঈমান। কবরের প্রশ্নোত্তর, পুনরুত্থান, হিসাব, আমলনামা প্রদান, মীযান (দাঁড়িপাল্লা), পুলসিরাত, জান্নাত এবং জাহান্নামের প্রতি ঈমান আনয়ন করাও অন্তরের কাজ সমূহের অন্তর্ভূক্ত।
(৮) আল্লাহকে ভালবাসা, আল্লাহর জন্যেই কাউকে ভালবাসা, আল্লাহর জন্যেই কাউকে ঘৃণা করা,
(৯) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে ভালবাসা ও তাঁকে সম্মান করাও অন্তরের কাজ। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর উপর দরূদ পাঠ ও তাঁকে ভালবাসা ও সম্মান প্রদর্শন তার অন্তর্ভূক্ত।
(১০) তাঁর সুন্নাতের অনুসরণ করা
(১১) একনিষ্ঠতার সাথে আল্লাহর এবাদত করা আবশ্যক-এর প্রতি ঈমান আনয়নও অন্তরের কাজের অন্তর্ভূক্ত। রিয়া তথা লোক দেখানো আমল ও মুনাফেকী পরিহার করাও এর অন্তর্ভূক্ত।
(১২) তাওবা করা
(১৩) আল্লাহকে ভয় করা
(১৪) আল্লাহর রহমতের আশা রাখা
(১৫) আল্লাহর নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করা
(১৬) ওয়াদা অঙ্গিকার পূর্ণ করা
(১৭) ধৈর্য ধারণ করা
(১৮) তাকদীরের লিখনের উপর সন্তুষ্ট থাকা
(১৯) আল্লাহর উপর ভরসা করা
(২০) বিনয়-নম্রতা প্রদর্শ করা, বড়কে সম্মান করা ও ছোটকে স্নেহ করাও এর অন্তর্ভূক্ত
(২১) অহঙ্কার ও তাকাব্বরী বর্জন করা
(২২) হিংসা বর্জন করা
(২৩) কাউকে ঘৃণা না করা এবং
(২৪) ক্রোধ বর্জন করা।
দ্বিতীয়তঃ জবানের কাজসমূহ তথা জবান দ্বারা উচ্চারিত শব্দ ও বাক্যসমূহ
ঈমানের শাখাসমূহের মধ্যে থেকে যেগুলোর সম্পর্ক জবানের সাথে তার সংখ্যা হল সাতটি। যথা:
(১) তাওহীদের বাক্য অর্থাৎ মুখে লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ্ উচ্চারণ করা
(২) কুরআন তেলাওয়াত করা
(৩) ইলম শিক্ষা করা
(৪) অপরকে ইলম শিক্ষা দেয়া
(৫) দু’আ করা
(৬) যিকির করা এবং ক্ষমা প্রার্থনা করাও এর অন্তর্ভূক্ত
(৭) অযথা কথা-বার্তা থেকে বিরত থাকা।
তৃতীয়তঃ শরীরের কাজসমূহ
ঈমানের শাখাসমূহের মধ্যে থেকে যেগুলোর সম্পর্ক শরীরের সাথে, তার সংখ্যা হল ৩৮টি। এ শাখাগুলো আবার তিন ভাগে বিভক্ত। যথা:
(ক) কতিপয় শাখা ব্যক্তি বিশেষের সাথে সম্পৃক্ত। এগুলোর সংখ্যা পনেরটি। যথা:
(১) বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীণ পবিত্রতা অর্জন করা
(২) মিসকীন ও অসহায়কে খাদ্য দান করা
(৩) মেহমানের সম্মান করা
(৪) ফরজ রোজা পালন করা
(৫) নফল রোযা পালন করা
(৬) ইতেকাফ করা
(৭) লাইলাতুল কদর অন্বেষণ করা
(৮) হজ্জ পালন করা
(৯) উমরা পালন করা
(১০) কাবা ঘরের তাওয়াফ করা
(১১) দ্বীন ও ঈমান নিয়ে টিকে থাকার জন্যে দেশ ত্যাগ
(১২) দ্বীন ও ঈমান বাঁচানোর জন্যে কাফের রাষ্ট্র ত্যাগ করে ইসলামী রাজ্যে চলে যাওয়া
(১৩) মানত পূর্ণ করা
(১৪) ঈমান বৃদ্ধির চেষ্টা করা ও
(১৫) কাফ্ফারা আদায় করা।
(খ) কতিপয় শাখা আছে, যা ব্যক্তির সাথে সংশ্লিষ্টদের সাথে সম্পৃক্ত। এগুলোর সংখ্যা মোট ৬টি। যথা:
(১) বিবাহের মাধ্যমে চরিত্র পবিত্র রাখা
(৬) পরিবারের ভরণ-পোষণের ব্যবস্থা করা
(৩) পিতা-মাতার সেবা করা,তাদের অবাধ্য না হওয়া
(৪) সন্তান প্রতিপালন করা
(৫) আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা
(৬) মনিবের প্রতি অনুগত থাকা ও অধীনস্তদের সাথে নরম ব্যবহার করা।
(গ) এমন কতিপয় শাখা রয়েছে, যা সকল মুসলমানের সাথে সম্পৃক্ত। এগুলোর সংখ্যা হচ্ছে ১৭টি। যথা:
(১) ইনসাফের সাথে রাষ্ট্র পরিচালনা করা
(২) মুসলিম জামাআতের অনুসরণ করা,
(৩) শাসকদের আনুগত্য করা
(৪) মানুষের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ মিটিয়ে দেয়া। বিশৃংঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করাও এর অন্তর্ভূক্ত
(৫) সৎকাজে পরস্পর সহযোগিতা করা, সৎকাজের আদেশ দেয়া এবং অসৎকাজের নিষেধ করাও এর অন্তর্ভূক্ত
(৬) দণ্ডবিধি কায়েম করা
(৭) আল্লাহর রাস্তায় জেহাদ করা ও ইসলামী রাষ্ট্রের সীমানা পাহারা দেয়াও জেহাদের অন্তর্ভূক্ত
(৮) আমানত আদায় করা এবং গণীমতের মালের পাঁচভাগের একভাগ আদায় করাও এর অন্তর্ভূক্ত
(৯) ঋণ পরিশোধ করা
(১০) প্রতিবেশীর সম্মান করা
(১১) মানুষের সাথে ভাল ব্যবহার করা
(১২) হালালভাবে সম্পদ উপার্জন করা এবং বৈধ পন্থায় তা খরচ করা এবং অপচয় না করা
(১৩) সালামের উত্তর দেয়া
(১৪) হাঁচি দানকারীর উত্তর প্রদান করা
(১৫) মানুষের ক্ষতি করা থেকে বিরত থাকা
(১৬) খেলা-তামাশা থেকে বিরত থাকা ও
(১৭) রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক জিনিষ সরিয়ে দেয়া।
এই হল ঈমানের ৬৯টি শাখা। কতিপয় শাখাকে অন্য শাখার সাথে একত্রিত গণনা না করে আলাদাভাবে হিসাব করলে ৭৭টি হবে। আল্লাহই ভাল জানেন।
----------------------------------------------------
ii) ঈমান এর রুকণঃ ৬টি
==============
a) আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস
b) মালাইকা/ ফেরেশতাদের প্রতি বিশ্বাস
c) নবী ও রাসূলগণের প্রতি বিশ্বাস
d) কিতাবের প্রতি বিশ্বাস
e) আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস
f) তাকদিরের প্রতি বিশ্বাস
সহিহ মুসলিম: বই ১: কিতাবুল ঈমান অধ্যায়: হাদিস ৪, হাদিস ৬
যুহায়র ইবন হারব (র)……আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ তোমরা আমাকে প্রশ্ন কর । সাহাবা কিরাম তার কাছে প্রশ্ন করতে ভয় পেলেন। (রাবী বলেন) তারপর একজন লোক এলেন এবং তাঁর কাছে বসে বললেনঃ ----------------------------------------------------- হে আল্লাহর রাসুল! ঈমান কী? রাসুল (সাঃ) বললেনঃ আল্লাহর প্রতি, তাঁর ফেরেশতাদের প্রতি, তাঁর কিতাবসমূহের প্রতি, তাঁর সঙ্গে সাক্ষাতের প্রতি, উখানের বিষয়ে এবং পুরোপুরি তাকদীরে ঈমান রাখবে। আগন্তুক বললেন, আপনি ঠিকই বলেছেন। --------------------------------------------------------------- তারপর আগন্তুক উঠে চলে গেলেন। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) সাহাবীদের বললেনঃ তাঁকে আমার কাছে ফিরিয়ে আন। তাঁকে তালাশ করা হলো, কিন্তু তাঁকে পাওয়া গেল না। তারপর রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বললেনঃ ইনি জিবরাঈল (আঃ) তোমরা প্রশ্ন না করায়, তিনি চাইলেন যেন তোমরা দীন সমন্ধে জ্ঞান লাভ কর। (হাদিছের অংশ বিশেষ)
----------------------------------------------------
iii) ঈমান এর শর্ত ৩টি
==============
a) মুখে স্বীকার
b) অন্তরে বিশ্বাস
c) তা অনুযায়ী আমল
-------------------------------------------
ইহসান
=====
৩। ইহসানঃ এটি হচ্ছে ইসলামের তিন স্তরের মধ্যে সর্বোচ্চ স্তর।
সহিহ মুসলিম: বই ১: কিতাবুল ঈমান অধ্যায়: হাদিস ৪, হাদিস ৬
যুহায়র ইবন হারব (র)……আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ তোমরা আমাকে প্রশ্ন কর । সাহাবা কিরাম তার কাছে প্রশ্ন করতে ভয় পেলেন। (রাবী বলেন) তারপর একজন লোক এলেন এবং তাঁর কাছে বসে বললেনঃ------------------------------------------------------------- হে আল্লাহর রাসুল! ইহসান কী? রাসুল (সাঃ) বললেনঃ আল্লাহকে এমনভাবে ভয় করবে, যেন তাঁকে দেখছ, যদি তাকে নাও দেখ; তাহলে ধারণা করবে যে তোমাকে দেখছেন। আগন্তুক বললেন, আপনি যথার্থ বলেছেন। --------------------------------------------------------------- তারপর আগন্তুক উঠে চলে গেলেন। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) সাহাবীদের বললেনঃ তাঁকে আমার কাছে ফিরিয়ে আন। তাঁকে তালাশ করা হলো, কিন্তু তাঁকে পাওয়া গেল না। তারপর রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বললেনঃ ইনি জিবরাঈল (আঃ) তোমরা প্রশ্ন না করায়, তিনি চাইলেন যেন তোমরা দীন সমন্ধে জ্ঞান লাভ কর। (হাদিছের অংশ বিশেষ)
ঈমান/ইসলামচ্যুত বা ভঙ্গ বা কাফির হওয়ার অন্যতম ১০টি কারণঃ
স্কলাররা ধর্মত্যাগের ব্যাপারে আলোচনা করতে গিয়ে বলেন, একজন মুসলিম ইসলাম থেকে বিচ্যুত হয় এমন কোন কাজ করলে যা ইসলামবিরোধী। ইসলামকে অকার্যকর করে দেয় এমন কোন কাজ একজন ব্যাক্তিকে ইসলামের সীমা থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। (ইসলামের সত্যতার অকাট্য প্রমাণ উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও এবং তাকে পুন:পুন: স্পষ্টভাবে বুঝানো সত্যেও) একজন ব্যক্তি যদি ইসলামচ্যুত তথা মূর্তাদ হয়ে যায় তবে ইসলামী রাষ্ট্রের অধীনে তার শাস্তি হল মৃত্যুদ্ন্ড এবং তার সম্পদ সিজ করে নেয়া । এর মধ্যে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ এবং কমন বিষয় হল দশটি যা মুহামাদ্দ বিন সুলেয়মান আত-তামীমীর লেখা বই নাওয়াক্বিদুল ইসলামে উল্লেখ করা হয়েছে ও অন্যান্য স্কলার দ্বারা বর্ণিত হয়েছে। এখানে সংক্ষিপ্তভাবে এ বিষয় গুলো পেশ করা হল এই আশায় যে আপনারা ইসলামচ্যুতির ভয় থেকে নিরাপদ থাকতে পারবেন।
শাইখ আব্দুল আজীজ ইবন আবদুল্লাহ ইবনে বা’য (রহ) বলেন: আল্লাহ সকল মানুষকে ইসলামে প্রবেশ করে এর সাথে লেগে থাকতে বলেছেন এবং ইসলামের বিপরীত যে কোন কিছু থেকে সতর্ক থাকতে বলেছেন। তিনি তার নবী মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে পাঠিয়েছেন মানুষকে ইসলামের পথে ডাকার জন্য। তিনি বলেন যে যারা নবীর অণুসরন করবে তারা সুপথ প্রাপ্ত হবে এবং যারা তার থেকে দূরে সরে যাবে তারা বিপথগামী হবে। কোরআনের বহু আয়াতে তিনি ধর্মত্যাগের ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়েছেন এবং সতর্ক করেছেন সকল প্রকার শির্ক ও কুফরি থেকে।
১- শিরক তথা আল্লাহর সাথে তাঁর ইবাদাতে অন্য কাউকে অংশীদার বানানো।
“নিশ্চয় আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেন না, যে তাঁর সাথে কাউকে শরীক করে। এছাড়া যাকে ইচ্ছা, ক্ষমা করেন। যে আল্লাহর সাথে শরীক করে সে সুদূর ভ্রান্তিতে পতিত হয়”। (আন-নিসা’ ৪:১১৬)
“নিশ্চয় যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে অংশীদার স্থির করে, আল্লাহ তার জন্যে জান্নাত হারাম করে দেন। এবং তার বাসস্থান হয় জাহান্নাম। অত্যাচারীদের কোন সাহায্যকারী নেই”। (মা’য়িদাহ ৫: ৭২)
এর মধ্যে আছে মৃতদের কাছে, জ্বীনদের কাছে বা কবরে প্রার্থনা করা, তাদের সাহায্য খোজা, তাদেরকে উদ্দেশ্য করে মানত করা ও কোরবানী করা।
২- যারা আল্লাহ ও তার মধ্যে যোগাযোগের মধ্যস্থতাকারী (intermediary) রুপে কাউকে বা কোন জিনিসকে বেছে নেয়, তাদেরকে যোগাযোগের মাধ্যম হতে বলে এবং তাদের উপরেই তার আস্থা স্থাপন করে (অর্থাৎ সরাসরি আল্লাহর কাছে চায় না এবং নিজের ঐকান্তিকতার উপর আস্থা স্হাপন করে না) তাদের ব্যাপারে আলেমদের ঐক্যমত হল এই যে, এরা কাফের।
৩- যারা অংশীদারস্থাপনকারীদের (মুশরিকুন) অস্বীকারকারী (কাফির) মনে করে না, অথবা তাদের কুফরী সন্মন্ধে সন্দেহ পোষন করে অথবা তাদের পদ্ধতিকেও সঠিক মনে করে তারা কাফির।
৪- যারা মনে করে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর প্রশিক্ষন ছাড়া অন্য কিছু বেশী পূর্নাঙ্গ, অথবা তাঁর নিয়মকানুনের চেয়ে অন্য কোন নিয়মকানুন উত্তম - তারা কাফির।
৫- যারা নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আনীত বিধানের কোন একটি অংশকে ঘৃণা করে, যদিও বা বাধ্য হয়ে সে তা পালন করছে, সে কাফির। কেননা আল্লাহ বলেন:
“এটা এজন্যে যে, আল্লাহ যা নাযিল করেছেন, তারা তা পছন্দ করে না। অতএব, আল্লাহ তাদের কর্ম ব্যর্থ করে দিবেন” (মুহাম্মাদ ৪৭: ৯)
৬- নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রচারিত ধর্মের যে কোন বিষয় নিয়ে কেউ যদি মজা করে, অথবা পুরস্কার ও শাস্তি সম্পর্কিত যে কোন বক্তব্য নিয়ে টিটকারী দেয় বা দুষ্টুমি করে, সে কাফির।
এর প্রমাণ হল নিচের আয়াতটি:
“আর যদি তুমি তাদের কাছে জিজ্ঞেস কর, তবে তারা বলবে, আমরা তো কথার কথা বলছিলাম এবং কৌতুক করছিলাম। আপনি বলুন, তোমরা কি আল্লাহর সাথে, তাঁর হুকুম আহকামের সাথে এবং তাঁর রসূলের সাথে ঠাট্টা করছিলে? ছলনা কর না, তোমরা যে কাফের হয়ে গেছ ঈমান প্রকাশ করার পর। তোমাদের মধ্যে কোন কোন লোককে যদি আমি ক্ষমা করে দেইও, তবে অবশ্য কিছু লোককে আযাবও দেব। কারণ, তারা ছিল গোনাহগার” (আত তাওবাহ ৯:৬৫-৬৬)
৭- যাদুবিদ্যা – একজন ব্যক্তিকে আরেকজনের বিরুদ্ধে লাগিয়ে দেয়ার জন্য বা একজন ব্যক্তির সাথে অন্য ব্যক্তির ভালোবাসা সৃষ্টির জন্য যাদু করা এর মধ্যে অন্তর্ভূক্ত। যে ব্যক্তি এগুলো করবে বা এগুলোর সমর্থন করবে সে কাফির। কেননা:
“তারা ঐ শাস্ত্রের অনুসরণ করল, যা সুলায়মানের রাজত্ব কালে শয়তানরা আবৃত্তি করত। সুলায়মান কুফর করেনি; শয়তানরাই কুফর করেছিল। তারা মানুষকে জাদুবিদ্যা এবং বাবেল শহরে হারুত ও মারুত দুই ফেরেশতার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছিল, তা শিক্ষা দিত। তারা উভয়ই একথা না বলে কাউকে শিক্ষা দিত না যে, আমরা পরীক্ষার জন্য; কাজেই তুমি কাফের হয়ো না”। (বাকারাহ ২: ১০২)
৮- মুশরিকদের সমর্থন দেয়া এবং মুসলিমদের বিরুদ্ধে তাদেরকে সহযোগিতা করা।
এর প্রমাণ হল এ আয়াতটি যেখানে আল্লাহ বলেন: “হে মুমিণগণ! তোমরা ইহুদী ও খ্রীষ্টানদেরকে বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করো না। তারা একে অপরের বন্ধু। তোমাদের মধ্যে যে তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ জালেমদেরকে পথ প্রদর্শন করেন না” (মা’য়িদাহ ৫:৫১)
৯- যারা বিশ্বাস করে যে কিছু ব্যক্তিদের মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর আইনের বাইরে কাজ করার অনুমতি আছে যেমন অনুমতি ছিল মুসা (আ) এর আইনের বাইরে খিযির (আ) এর কাজ করার, তারা কাফির। কেননা আল্লাহ বলেন: “যে লোক ইসলাম ছাড়া অন্য কোন ধর্ম তালাশ করে, কস্মিণকালেও তা গ্রহণ করা হবে না এবং আখেরাতে সে ক্ষতি গ্রস্ত” । (ইমরান ৩: ৮৫)
১০- আল্লাহর মনোনীত ধর্ম থেকে দূরে সরে যাওয়া বা মুখ ফিরিয়ে নেয়া, এটাকে না শেখা এবং এর অনুসারে জীবন যাপন না করা। এর প্রমান হল: “যে ব্যক্তিকে তার পালনকর্তার আয়াতসমূহ দ্বারা উপদেশ দান করা হয়, অতঃপর সে তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তার চেয়ে যালেম আর কে? আমি অপরাধীদেরকে শাস্তি দেব” (সেজদাহ ৩২:২২)
এ সকল কর্মকান্ড একজন ব্যক্তির জীবনে ইসলামকে অকার্যকর করে দেয় তা সে কৌতুক করেই থাকুক বা নিষ্ঠাবান হয়েই করুক বা হোক সে ধর্মভীরু। যদি তাকে বাধ্য না করা হয়ে থাকে সে ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে যাবে। উপরের প্রত্যেকটি অত্যন্ত সাঙ্ঘাতিক এবং এ ধরণের ঘটনা অনেক হয়ে থাকে। মুসলিমদের এ ব্যাপারে সচেতন থাকা এবং এই অপরাধগুলোর মধ্যে জড়িয়ে পড়ার ভয়ে ভীত থাকা উচিৎ। আল্লাহর কাছে আমরা এ বিষয়গুলো থেকে নিরাপদে থাকার জন্য সাহায্য প্রার্থনা করি এবং সাহায্য প্রার্থনা করি তার ক্রোধ ও কঠিন শাস্তি থেকে। মুহাম্মদ (সা) ও তার পরিবারের উপর এবং তার সহযোগীদের উপর আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক।
তথ্যসূত্র: http://www.islam-qa.com/en/ref/31807
-----------------------------------------------------
এছাড়া আরো দেখুন
--------------
১ম অংশ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত ও বাতিল ফিরকাহ পরিচিতি মুরজিয়া, খাওয়ারিজ, জাহমীয়াহ, মুতাযিলা
২য় অংশ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত ও বাতিল ফিরকাহ পরিচিতি (মুরজিয়া, খাওয়ারিজ, জাহমীয়াহ, মুতাযিলা)
দশটি ঈমান ভঙ্গকারি (নাওয়াকিদুল ঈমান/ইসলাম) বিষয় - ভৈরব প্রোগ্রাম (বুধবার, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১১)
https://www.youtube.com/watch?v=swzH...ri1fKy&index=3
ইসলামের স্তরঃ তিনটি
==============
১। ইসলাম,
২। ঈমান, ও
৩। ইহসান
================================================== ======
সহিহ মুসলিম: বই ১: কিতাবুল ঈমান অধ্যায়: হাদিস ৪, হাদিস ৬
যুহায়র ইবন হারব (র)……আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ তোমরা আমাকে প্রশ্ন কর। সাহাবা কিরাম তার কাছে প্রশ্ন করতে ভয় পেলেন। (রাবী বলেন) তারপর একজন লোক এলেন এবং তাঁর কাছে বসে বললেনঃ হে আল্লাহর রাসুল! ইসলাম কী? রাসুল (সাঃ) বললেনঃ ইসলাম হলো, আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করবে না, নামায কায়েম করবে, যাকাত দিবে, রামাযানের রোযা পালন করবে। আগন্তুক বললেন, আপনি ঠিকই বলেছেন। তারপর বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! ঈমান কী? রাসুল (সাঃ) বললেনঃ আল্লাহর প্রতি, তাঁর ফেরেশতাদের প্রতি, তাঁর কিতাবসমূহের প্রতি, তাঁর সঙ্গে সাক্ষাতের প্রতি, উখানের বিষয়ে এবং পুরোপুরি তাকদীরে ঈমান রাখবে। আগন্তুক বললেন, আপনি ঠিকই বলেছেন। তারপর বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! ইহসান কী? রাসুল (সাঃ) বললেনঃ আল্লাহকে এমনভাবে ভয় করবে, যেন তাঁকে দেখছ, যদি তাকে নাও দেখ; তাহলে ধারণা করবে যে তোমাকে দেখছেন। আগন্তুক বললেন, আপনি যথার্থ বলেছেন। তারপর বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! কিয়ামত কখন ঘটবে? রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বললেনঃ এ বিষয়ে যাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছে সে ব্যক্তি প্রশ্লকারীর চাইতে অধিক অবহিত নয়। তবে আমি কিয়ামতের কিছু আলামত বর্ণনা করছি। যখন দেখবে, দাসী তার মুনিবকে জম্ন দেবে, এটা কিয়ামতের একটি আলামত। আর যখন দেখবে নগ্নপদ, বস্ত্রহীন, বধির ও মূকেরা দেশের শাসক হয়েছে, এটিও কিয়ামতের একটি আলামত। আর যখন দেখবে, মেষপালক বিরাট বিরাট অট্টালিকার প্রতিযোগিতায় গর্বিত, এটিও কিয়ামতের একটি আলামত। পাঁচটি অদৃশ্য বিষয়ে আল্লাহ ব্যতীত কেউ কিছু জানে না। তারপর (তিনি কুরআনুল করীম-এর আয়াত) তিলাওয়াত করলেনঃ নিশ্চয়ই আল্লাহ, তাঁর কাছে রয়েছে কিয়ামতের মতের জ্ঞান। তিনি নাযিল করেন বৃষ্টি এবং তিনি জানেন, যা রয়েছে মাতৃগর্ভ জানে না কেউ, কি কামাই করবে সে আগামীকাল। আর জানে না কেউ, কোন মাটিতে (দেশে) সে মারা যাবে, নিশ্চয়ই আল্লাহ সব জানেন, সব খবর রাখেন। (সূরা লুকমানঃ ৩৪) তারপর আগন্তুক উঠে চলে গেলেন। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) সাহাবীদের বললেনঃ তাঁকে আমার কাছে ফিরিয়ে আন। তাঁকে তালাশ করা হলো, কিন্তু তাঁকে পাওয়া গেল না। তারপর রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বললেনঃ ইনি জিবরাঈল (আঃ) তোমরা প্রশ্ন না করায়, তিনি চাইলেন যেন তোমরা দীন সমন্ধে জ্ঞান লাভ কর।
ইসলাম
১। ইসলামের রুকণঃ ৫টি
================
ক। কালিমা/শাহাদাহ, খ। স্বলাত, গ। যাকাত, ঘ। হাজ্জ ও ঙ। সওম
সহিহ মুসলিম: বই ১: কিতাবুল ঈমান অধ্যায়: হাদিস ৪, হাদিস ৬
যুহায়র ইবন হারব (র)……আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ তোমরা আমাকে প্রশ্ন কর। সাহাবা কিরাম তার কাছে প্রশ্ন করতে ভয় পেলেন। (রাবী বলেন) তারপর একজন লোক এলেন এবং তাঁর কাছে বসে বললেনঃ হে আল্লাহর রাসুল! ইসলাম কী? রাসুল (সাঃ) বললেনঃ ইসলাম হলো, আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করবে না, নামায কায়েম করবে, যাকাত দিবে, রামাযানের রোযা পালন করবে। আগন্তুক বললেন, আপনি ঠিকই বলেছেন। --------------------------------------------------------------- তারপর আগন্তুক উঠে চলে গেলেন। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) সাহাবীদের বললেনঃ তাঁকে আমার কাছে ফিরিয়ে আন। তাঁকে তালাশ করা হলো, কিন্তু তাঁকে পাওয়া গেল না। তারপর রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বললেনঃ ইনি জিবরাঈল (আঃ) তোমরা প্রশ্ন না করায়, তিনি চাইলেন যেন তোমরা দীন সমন্ধে জ্ঞান লাভ কর। (হাদিছের অংশ বিশেষ)
সহিহ বুখারী: খন্ড ১: বই ২: ঈমান অধ্যায়: হাদিস ৭
উবায়দুল্লাহ্ ইব্ন মূসা (রা)........... ইব্ন ‘উমর (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ (সা) ইরশাদ করেন, ইসলামের ভিত্তি পাঁচটি।
১। আল্লাহ্ ছাড়া ইলাহ্ নেই এবং নিশ্চয় মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহ্র রাসূল-এ কথার সাক্ষ্য দান
২। সালাত কায়েম করা
৩। যাকাত দেওয়া
৪। হজ্জ করা এবং
৫। রমদান এর সিয়াম পালন করা
সহিহ মুসলিম: বই ১: কিতাবুল ঈমান অধ্যায়: হাদিস ৯
আমর ইবন মুহাম্মাদ ইবন বুকায়র আল নাকিদ (র)…আনাস ইবন মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন। আনাস ইবন মালিক (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-কে কোন বিষয়ে প্রশ্ন করার ব্যাপারে আমাদের নিষেধ করা হয়েছিল। তাই আমরা চাইতাম যে, গ্রাম থেকে কোন বুদ্ধিমান ব্যক্তি এসে তাঁকে প্রশ্ন করুক আর আমরা তা শুনি। তারপর একদিন গ্রাম থেকে এক ব্যক্তি এসে রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-কে বলল, হে মুহাম্মাদ! আমাদের কাছে আপনার দুত এসে বলেছে, আপনি দাবি করেছেন যে, আল্লাহ আপনাকে রাসুল হিসাবে পাঠিয়েছেন। রাসুল (সাঃ) বললেনঃ সত্যই বলেছে। আগন্তুক বলল, আসমান কে সৃষ্টি করেছেন? তিনি বললেনঃ আল্লাহ। আগন্তুক বলল, যমীন কে সৃষ্টি করেছেন? রাসুল (সাঃ) বললেনঃ আল্লাহ। আগন্তুক বলল, এসব পর্বতমালা কে স্থাপন করেছেন এবং এর মধ্যে যা কিছু আছে তা কে সৃষ্টি করেছেন? রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বললেনঃ আল্লাহ। আগন্তুক বলল, কসম সেই সত্তার! যিনি আসমান ও যমীন সৃষ্টি করেছেন এবং এসব পর্বতমালা স্হাপন করেছেন। আল্লাহই আপনাকে রাসুলরুপে পাঠিয়েছেন? রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বললেনঃ হ্যা। আগন্তুক বলল, আপনার দূত বলে যে, আমাদের উপর দিনে ও রাতে পাচ ওয়াক্ত নামায ফরয। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বললেনঃ সত্যই বলেছে। আগন্তুক বলল, যিনি আপনাকে রাসুলরুপে পাঠিয়েছেন তাঁর কসম, আল্লাহ-ই কি আপনাকে এর নির্দেশ দিয়েছেন? রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বললেনঃ হ্যা। আগন্তুক বলল, আপনার দূত বলে যে, আমাদের উপর আমাদের মালের যাকাত দেওয়া ফরয। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বললেনঃ ঠিকই বলেছো আগন্তুক বলল, যিনি আপনাকে রাসুলরুপে পাঠিয়েছেন, তাঁর কসম, আল্লাহ-ই কি আপনাকে এর নির্দেশ দিয়েছেন? রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বললেনঃ হ্যা। আগন্তুক বলল, আপনার দূত বলে যে, প্রতি বছর রমযান মাসের রোযা পালন করা আমাদের উপর ফরয। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বললেন, সত্যই বলেছে। আগন্তুক বলল, যিনি আপনাকে রাসুল হিসেবে পাঠিয়েছেন, তার কসম, আল্লাহ-ই কি আপনাকে এর নির্দেশ দিয়েছেন? রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বললেনঃ হ্যা। আগন্তুক বলল, আপনার দূত বলে যে, আমাদের মধ্যে যে বায়তুল্লায় যেতে সক্ষম তার উপর হজ্জ ফরয। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বললেনঃ সত্যি বলেছে। রাবী বলেন যে, তারপর আগন্তুক চলে যেতে যেতে বলল, যিনি আপনাকে সত্যসহ প্রেরণ করেছেন তার কসম, আমি এর অতিরিক্তও করব না এবং এর কমও করব না। এ কথা শুনে নবী করীম (সাঃ) বললেন, লোকটি সত্য বলে থাকলে অবশ্যই সে জান্নাতে যাবে।
সহিহ মুসলিম: বই ১: কিতাবুল ঈমান অধ্যায়: হাদিস ১৮, হাদিস ১৯, হাদিস ২০, হাদিস ২১
মুহাম্মদ ইবন আবদুল্লাহ ইবন নু’মায়র আল হামদানী (র)……ইবন উমর (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন। নবী করীম (সাঃ) বলেছেন, ইসলামের বুনিয়াদ পাচটি বিষয়ের উপর প্রতিষ্ঠিত। আল্লাহকে এক বলে বিশ্বাস করা, নামায কায়েম করা, যাকাত দেয়া, রামাযানের রোযা পালন করা এবং হজ্জ করা। এক ব্যক্তি (এ ক্রম পাচটিকে) বলল, হজ্জ করা ও রামাযানের রোযা পালন করা। রাবী বললেন, না রামাযানের রোযা পালন করা ও হজ্জ করা এভাবে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) থেকে শুনেছি।
---------------------------------------------------------------
ক। কালিমা/শাহাদাহ/লা ইলাহা ইল্লালাহ মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ এর শর্তঃ ৭টি
=========================
লা ইলাহা ইল্লালাহ আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য হওয়ার জন্য আল-কুরআনে ও সুন্নাহতে বর্ণিত শর্তসমূহ নিম্নরূপ
a) ইলম/জ্ঞান
b) ইয়াক্বিন/দৃঢ় বিশ্বাস
c) ইখলাস/ নিখাদচিত্তার প্রমাণ
d) সিদক্/ সত্যবাদিতা
e) হুব/ ভালবাসা
f) আসলাম/আত্নসমর্পণ
g) কবুল/ মেনে নেয়া
বিস্তারিতঃ
শাহাদাহর সাতটি শর্ত
===========
নামাযের মত তাওহীদেরও অনেকগুলো শর্ত আছে। নামায সহীহ হওয়ার শর্তাবলীর মধ্যে যদি যে কোনো একটি শর্ত যেমন অজু করা বা কেবলামুখী হওয়া ইত্যাদি না পাওয়া যায় তাহলে নামায বাতিল বলে গণ্য হবে। তেমনি শাহাদাহ্ সাতটি শর্ত সম্বলিত, যা পরিপূর্ণভাবে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রয়োগের পর আমাদের মাঝে ইসলামের প্রথম স্তম্ভ (ঈমান) স্থাপিত হওয়ার দাবী করতে পারব। এ সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করা এবং এর শর্তগুলো পূরণ করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য ওয়াযিব।
আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) কে এক ব্যক্তি প্রশ্ন করেছিলেনঃ- ইহা কি সত্য যে, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এবং মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর সাক্ষ্যদানই বেহেস্তে প্রবেশের চাবিকাঠি? তিনি বললেন হ্যাঁ ঠিক। তবে প্রত্যেক চাবিতেই কিছু দাঁত থাকে এবং দাঁত ব্যতীত কাংখিত দরজাটি খোলা সম্ভব নয়। অনুরূপভাবে কালেমারও সাতটি দাঁত রয়েছে এবং আমাদের জীবনে এর যে কোন একটির অভাব ঈমানের দাবীকে পরিপূর্ণ করে না এবং এর ফলে শাহাদাহ অকার্যকর (বাতিল) হয়ে পড়ে।
প্রথম শর্ত: ইলম বা জ্ঞান
আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন, "তুমি জেনে রাখো, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ (আল্লাহ ছাড়া কোনো ইলাহ নেই)।" (মুহাম্মদ:১৯) [তাওহীদের] এলেম বা জ্ঞানকে বান্দার ইসলাম কবুলের প্রথম শর্ত নিধারণ করা হয়েছে।
কালেমার শব্দসমূহের জ্ঞান অর্জন: কালেমা দু'টি অর্থপূর্ণ বাক্যের সমষ্টি আল্লাহ ব্যতীত ইবাদতের যোগ্য কোন ইলাহ্ (রব) নেই। এবং হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) আল্লাহ প্রেরিত সর্বশেষ নবী ও রাসূল। কালেমার প্রথম অংশকে "তাওহীদ" ও দ্বিতীয় অংশকে "রিসালাত" বলা হয় উভয় অংশে বিশ্বাস রাখা অপরিহার্য।
তাওহীদের নিন্মোক্ত বিষয়সমূহ জানতে ও মানতে হবে:
(১) আল্লাহই একমাত্র রব। তিনিই একমাত্র সৃষ্টিকর্তা, একমাত্র অনন্তকাল থাকবেন। তিনি একমাত্র অদৃশ্য ও ভবিষ্যতের ব্যাপারে জ্ঞান রাখেন (আলেমুল গায়েব) । তিনিই একমাত্র রিযিকদাতা ও নিরাপত্তাদানকারী। তিনিই জীবন-মৃত্যুর মালিক। তিনিই মাতৃগর্ভে শিশুর প্রকৃতি সম্পর্কে অবহিত। তিনিই জানেন কখন বৃষ্টি হবে। তিনিই জানেন মানুষ আগামীকাল কি উপার্জন করবে। তিনিই সবার মৃত্যুর সময় ও স্থান নির্ধারণকারী। আল্লাহর এই গুণাগুণসমূহ সামগ্রিকভাবে 'তাওহীদ আল-রুবুবিয়াহর' অন্তর্গত।
যদি কেউ এই ধারনা পোষণ করে যে আমেরিকা বা জাতিসংঘ (ইউ, এন) তার নিরাপত্তা বিধান করবে অথবা তার ব্যবসা বা তার মনিব বা সরকার তাকে রিযিক দিবে, জ্যোতিষ বা ভাগ্যগণনাকারী তার ভবিষ্যত বলে দিবে; তাহলে সে “তাওহীদ আর রুবুবিয়াহকে” অস্বীকার করল।
(২) একমাত্র আল্লাহ সুবহানাহু তা'য়ালা ব্যতীত অন্য কারো ইবাদত করা (হুকুমের অনুসরণ) যাবে না। সকল ইবাদত (যেমন নামায, রোযা, কোরবানী বা ত্যাগ) কেবলমাত্র আল্লাহরই প্রাপ্য। যদি কেউ কোন পূণ্যবান মৃত ব্যক্তি বা কবরের (মাজার) কাছে অথবা কোন ধর্মীয় নেতার (পীর, ফকির) কাছে তার মনের আকাঙ্খা পুরণের জন্য প্রার্থনা করে এবং তাদের নিকট সওয়াবের উদ্দেশ্যে দান করে তবে সে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ অস্বীকার করলো। যা একটি প্রকাশ্য কুফুরী এবং 'তাওহীদ আল উলুহিয়ার' পরিপন্থী। অন্য কথায়, ব্যক্তিজীবন, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র ও পৃথিবী একমাত্র কুরআন ও সুনড়বাহর আলোকে পরিচালিত হতে হবে। যদি আমরা মনে করি যে, আল্লাহর আইন (শরীয়াহ) যা রাসূল (সাঃ) ও খিলাফায়ে রাশেদার দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল তা সেকেলে, অপ্রয়োজনীয়, নিকৃষ্ট এবং আল্লাহর আইনের (শরীয়াহ) তুলনায় ব্রিটিশ বা আমেরিকান আইন বা অন্য যে কোন মতাদর্শ বা জীবনব্যবস্থা (যেমন-গণতন্ত্র, রাজতন্ত্র, সমাজতন্ত্র, একনায়কতন্ত্র, পুঁজিবাদ, ধর্মনিরপেক্ষবাদ ইত্যাদি) এগুলির যে কোনটি যদি বর্তমান প্রেক্ষাপটে অধিকতর গ্রহণযোগ্য বলে মনে হয় তাহলে এই ধারণা পোষণকারী ব্যক্তির লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’র ঘোষণা কার্যকর হবে না।
(৩) আমরা জানি যে, আল্লাহর নিরানব্বইটি সুন্দর নাম রয়েছে যার প্রত্যেকটি পৃথক পৃথকভাবে আল্লাহর গুণ-সমূহকে প্রকাশ করে। এই গুণবাচক নামসমূহের প্রত্যেকটির উপর ঈমান আনা ফরয। এই নামসমূহের উপর বিশ্বাস স্থাপনই 'তাওহীদ আল-আসমা আল সিফাত'।
সুতরাং আমরা যদি তাওহীদ রুবুবিয়াহ ও তাওহিদ উলুহিয়্যাহ এর মাঝে পার্থক্য বুঝতে চাই তাহলে এই উদাহরণটি বোঝার চেষ্টা করি,
আল্লাহ ছাড়া আর কোন আইন্ দাতা বা বিধান দাতা নেই এটি হল তাওহীদ আর রুবুবিয়্যাহ এর অংশ, আর আল্লাহর আইন ছাড়া আর কোন আইন দিয়ে বিচার করা যাবে না এটি হল তাওহীদ আল উলুহিয়্যাহ্ এর অংশ। সুতরাং তাওহীদ আর রুবুবিয়্যাহ আল্লাহর সাথে সম্পর্কিত আর তাওহীদ আল উলুহিয়্যাহ বান্দার আনুগত্য ও কাজের সাথে সম্পর্কিত।
প্রত্যেককেই রিসালাত সংক্রান্ত নিন্মোক্ত বিষয়সমূহ মানতে হবে:
• (১) আমাদেরকে অবশ্যই মানতে হবে যে, মুহাম্মদ ইবনে আবদুল্লাহ (সাঃ) আল্লাহ পাক প্রেরিত সর্বশেষ নবী ও রাসূল এবং তাঁর প্রতি সর্বশেষ আসমানী কিতাব কুরআন নাযিল করা হয়েছে।
• (২) সাইয়্যেদুল মুরসালীন রাসূল (সাঃ) এর প্রত্যেকটি কথা, কাজ ও মৌনসম্মতিকে সুন্নাহ বলে যা আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কর্তৃক অনুমোদিত। "সে [মুহাম্মদ (সাঃ)] মনের ইচ্ছায় বলে না। কোরআন অহী, যা প্রত্যাদেশ হয়।" (আন-নাজম: ৩-৪) সুতরাং প্রত্যেক মুসলমানকে রাসূল (সাঃ)-এর সুন্নাত অবশ্যই অনুসরণ করতে হবে।
• (৩) আমাদেরকে এই বিষয়টি মানতে হবে যে, আল্লাহর রাসূল (সাঃ) বিশ্বজগতের সর্বোৎকৃষ্ট গুণাবলী সম্পন্ন এবং সর্বশ্রেষ্ঠ মানব।
• (৪) আমাদেরকে অবশ্যই রাসূল (সাঃ)-কে সবকিছু (ব্যক্তি ও বস্তু) অপেক্ষা বেশি ভালবাসতে হবে। আল্লাহর রাসূল (সাঃ) বলেছেন, তোমাদের মধ্যে কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত মু'মিন হতে পারবে না যতক্ষণ না তোমরা তোমাদের পিতা, তোমাদের সন্তান এবং সমগ্র মানবকুল অপেক্ষা আমাকে বেশী ভাল না বাসবে। [সহীহ্ আল বুখারী/সহীহ্ মুসলিম]
দ্বিতীয় শর্ত: (আল-ইয়াক্বীন) নিশ্চিতভাবে বিশ্বাস স্থাপন
আমাদেরকে অবশ্যই শাহাদার প্রথম শর্তের [তাওহীদ ও রিসালাত] উপর দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতে হবে। আল্লাহর অস্তিত্ব, আল্লাহর রাসূল (সাঃ), ফেরেশতা, আসমানী কিতাবসমূহ, বিচার দিবস, তাকদীর, জান্নাত, জাহান্নাম ইত্যাদির ব্যাপারেও কোনরূপ সন্দেহ পোষণ করার অবকাশ নেই। আল্লাহ সুবহানাহু তায়া'লা ও রাসূল (সাঃ)-এর বক্তব্যের বিরুদ্ধাচারণ করা যাবে না। 'যে আল্লাহ ফেরেশতা, কিতাবসমূহ, রাসূলগণ ও পরকালকে অবিশ্বাস করে সে মারাত্মকভাবে পথভ্রষ্ট হয়ে যাবে।' (নিসাঃ ১৩৬)
আমাদেরকে আবু বকর (রাঃ)-এর ন্যায় ঈমান আনতে হবে যেরূপ তিনি 'ইস্রা' ও 'মিরাজের' ব্যাপারে ঈমান এনেছিলেন। একদা আবু জেহেল তাঁকে জিজ্ঞাসা করেছিল যে কেউ যদি তোমাকে এরূপ বলে যে, সে একরাতে মাসজিদুল আকসা, সাত আসমান, বেহেস্ত, দোযখ পরিভ্রমণ শেষে আবার ঐ রাতেই মক্কায় ফিরে এসেছে তবে তুমি কি তার কথা বিশ্বাস করবে? আবু বকর (রাঃ) জবাব দিলেন অবশ্যই নয়। তখন আবু জেহেল বলল যদি তোমার বন্ধু মুহাম্মদ (সাঃ) এইরূপ কথা বলে? এর জবাবে আবু বকর (রাঃ) বললেন যদি আল্লাহর রাসূল (সাঃ) এইরূপ কথা বলে থাকেন তবে ইহা অবশ্যই সত্য এবং নির্দ্বিধায় বিশ্বাস করি। এই ঘটনার পর আল্লাহর রাসূল (সাঃ) তাকে আল-সিদ্দিক (বিশ্বাসী) উপাধিতে ভুষিত করেন। আবু বকর সিদ্দিক (রাঃ) ছিলেন সন্দেহের বেড়াজাল থেকে মুক্ত এবং এভাবেই আমাদের দ্বিতীয় শর্ত পূরণ করতে হলে এরূপ বিশ্বাসী হতে হবে।
"প্রকৃতপক্ষে মু'মিন তো তারাই যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি ঈমান এনেছে, অতঃপর কোন সন্দেহ করে না এবং নিজেদের জীবন ও সম্পদ দিয়ে আল্লাহর পথে জিহাদ করে। শুধুমাত্র তারাই (ঈমানের দাবীতে) সত্যবাদী।" (আল-হুজরাত: ১৫)
তৃতীয় শর্তঃ (আল-কবুল) প্রকাশ্যে এবং গোপনে ঈমানের স্বীকৃতি
আমাদের অবশ্যই তাওহীদ ও রিসালাতের (শর্ত ০১) ব্যাপারে অন্তরে দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন করতে হবে এবং যে কোন প্রেক্ষাপটের মোকাবেলায় মৌখিক স্বীকৃতি দান ও বাহ্যিকভাবে মেনে নিতে হবে। কেবলমাত্র অন্তরে বিশ্বাস স্থাপনই যে যথেষ্ট নয় এবং মৌখিক ও বাহ্যিক স্বীকৃতিও প্রয়োজনীয়তা আবশ্যক তা আবু তালেবের জীবনী থেকে জানা যায়। যিনি (আবু তালেব) অনেক প্রতিকুলতার মধ্যেও রাসূল (সাঃ) কে সাহায্য করেছিলেন এবং তাঁর নবুওয়াতের ব্যাপারেও বিশ্বাসী ছিলেন। কিন্তু মৃত্যুশয্যায় শায়িত অবস্থায় কোরাইশ নেতাদের সম্মুখে 'কালেমা শাহাদার' মৌখিক স্বীকৃতি দিতে ব্যর্থ হওয়ায় শেষ বিচারের দিনে তাকে (আবু তালেব) জাহান্নামের উত্তপ্ত জুতা পরানো হবে।
আল-কবুল বা গ্রহণ হচ্ছে প্রত্যাখ্যানের বিপরীত এবং কুরআনে গ্রহণের প্রমাণ হচ্ছে আল্লাহর (তায়ালা) এই কথা: "সত্যিই তাদেরকে যখন বলা হত: "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ (আল্লাহ ছাড়া ইবাদতের যোগ্য আর কোন ইলাহ নেই।)" তখন এরা অহংকারে ফেটে পড়ত। বলতঃ "আমরা এক বিকৃত মস্তিষ্ক কবির কথায় নিজেদের মাবুদদের ত্যাগ করব।" (আস-সাফফাত ৩৫-৩৬)
চতুর্থ শর্ত: (আল-ইনকিয়াদ বা আত্মসমর্পণ) কুরআন ও সুন্নাহর নিকট পরিপূর্ণ আত্মসমর্পণ
আমাদেরকে অবশ্যই কুরআন ও সু্ন্নাহর কাছে পরিপূর্ণভাবে আত্মসমর্পণ করতে হবে। কিছু আয়াত মানা এবং বাকী আয়াত অমান্য করা যাবে না। অন্যথায় আমাদের ভাগ্যেও তাই ঘটবে যা ইয়াহুদীদের হবে। যারা এরূপ করত এ সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন।
"তবে কি তোমরা কিতাবের কিয়দংশ বিশ্বাস কর এবং কিয়দংশ অবিশ্বাস কর। যারা এরূপ করে, পার্থিব জীবনে দুর্গতি ছাড়া তাদের আর কোন পথ নেই। কিয়ামতের দিন তাদের কঠোরতম শাস্তির দিকে পৌঁছে দেয়া হবে।" (আল বাকারাহ্: ৮৫)
একটি হাদীসে বর্ণিত আছে, রাসূল (সাঃ) বলেছেন: "তোমাদের মধ্যে কেউ ততক্ষণ পর্যন্ত মু'মিন হতে পারে না যতক্ষণ পর্যন্ত না সে তার নিজের কামনাবাসনাকে আমার আনীত শিক্ষার দিকে ফিরিয়ে দেয়।" [সহীহ আল বুখারী]
কুরআন থেকে আত্মসমর্পণের পক্ষে প্রমাণ এই কথা: "ফিরে এস (অনুতপ্ত হয়ে) তোমাদের রবের দিকে এবং আত্মসমর্পণ কর তার ইচ্ছার কাছে।" (আয-যুমার: ৫৪)
পঞ্চম শর্ত: সত্যবাদীতা বা আল-সিদক
সেই সত্য যা মিথ্যা বা মুনাফেকী কোনটাই অনুমোদন করে না। এই সত্যের প্রমাণ হচ্ছে আল্লাহ তায়ালার বাণী: "আলিফ লাম মীম। লোকেরা কি এই মনে করে নিয়েছে যে, "আমরা ঈমান এনেছি" এইটুকু বললেই তাদেরকে ছেড়ে দেয়া হবে? আর তাদের পরীক্ষা করা হবে না? অথচ আমরা তো এদের পূর্বে অতিক্রান্ত সকল লোককেই পরীক্ষা করেছি। আল্লাহকে তো অবশ্যই দেখে নিতে হবে কে সত্যবাদী আর কে মিথ্যাবাদী।"(আন-কাবুত: ১,২,৩)
যে ব্যক্তি এ কলেমা শুধু মুখে উচ্চারণ করবে কিন্তু এ কলেমা দ্বারা যা বুঝানো হয় তা যদি অন্তরে অস্বীকার করে তবে সে নাজাত [মুক্তি] লাভ করতে পারবেনা, যেমনটি আল্লাহর বর্ণনা অনুযায়ী মুনাফিকরা লাভ করতে পারবেনা।
"আপনার কাছে মুনাফিকরা যখন আসে তখন বলেঃ আমরা স্বাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আপনি অবশ্যই আল্লাহর রাসূল। আল্লাহ জানেন যে, আপনি অবশ্যই আল্লাহর রাসূল। আর আল্লাহ স্বাক্ষ্য দিচ্ছেন যে, মুনাফিকরা অবশ্যই মিথ্যাবাদী।" (মুনাফিকুন: ১)
আল্লাহ তায়ালা অন্য আয়াতে তাদেরকে মিথ্যাবাদী বলে বর্ণনা করেছেনঃ
"আর মানুষের মধ্যে এমন কিছু লোক রয়েছে যারা বলে আমরা আল্লাহ ও পরকালের প্রতি ঈমান এনেছি, অথচ প্রকৃতপক্ষে তারা ঈমানদার নয়।" (আল-বাকারাহ: ৮)
ষষ্ঠ শর্ত: আল-ইখলাস বা অন্তরে একাগ্রতা
নিষ্ঠাপূর্ণ ইবাদত কেবলমাত্র আল্লাহর জন্য। প্রতি নামাযে আমরা সূরা ফাতিহার এই কথারই স্বীকৃত দেই যে, "আমরা একমাত্র আপনারই ইবাদত করি এবং আপনার কাছে সাহায্য চাই।" [আল ফাতিহা: ০৪] এই আয়াত থেকে বুঝা যায় যে, আমরা শুধুমাত্র আল্লাহর ইবাদতই করি না সাথে সাথে তাঁর উপর পূর্ণ তাওক্কুল (ভরসা) করি। নিয়তের বিশুদ্ধতা (ইখলাস আল নিয়্যাহ) ইবাদত কবুলের জন্য অপরিহার্য। একটি হাদীসে আছে যে, "বিচার দিবসে তিন ব্যক্তিকে জাহান্নামের দিকে নিয়ে যাওয়া হবে। তাদের একজন হবে আলেম, একজন দানশীল ও একজন শহীদ। তারা জাহান্নামবাসী হবে এই কারণে যে, তাদের কর্মকান্ড আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার উদ্দেশ্য ছিল না বরং তা ছিল লোক দেখান (রিয়া)।" সুতরাং আমাদের ইবাদতসমূহ রিয়ামুক্ত করতে হবে কারণ রিয়াকারীর আমল বরবাদ হয়ে যাবে।
সপ্তম শর্ত: (আল-মুহাব্বাত)
আল্লাহর জন্যই ভালবাসা এবং আল্লাহর জন্যই ঘৃণা করা। (আল ওয়ালা এবং ওয়াল বারা): আমাদের যে কোন ব্যক্তি বা বস্তুকে আল্লাহর জন্য ভালবাসতে হবে এবং তাঁর জন্যই ঘৃণা করতে হবে। ইব্রাহিম (আঃ)-এর ঘটনা এর (আল ওয়ালা এবং আল বারা) উৎকৃষ্ট উদাহরণ। তিনি তাঁর পিতা আযরের মিথ্যা প্রভুদের অস্বীকার করে বলেছিলেন "তোমার ও আমার বিরোধ কিয়ামত পর্যন্ত টিকে থাকবে।" সুতরাং মু'মিনকে অবশ্যই হক (সত্য) ভালবাসতে হবে এবং বাতিল (মিথ্যা) ঘৃণা করতে হবে। একটি হাদীসে বর্ণিত আছে যে, “বিচার দিবসে সাত ব্যক্তি আল্লাহর আরশের ছায়া লাভ করবে, যেদিন আল্লাহর আরশের ছায়া ব্যতিত অন্য কোন ছায়া থাকবে না। তাদের একজন হল সেই ব্যক্তি যে আল্লাহর জন্য কারো সঙ্গে মিলিত হত এবং আল্লাহর জন্য বিচ্ছিন্ন হত।" [সহীহ আল বুখারী]
সাহাবায়ে কেরাম (রাঃ)-দের জীবনী থেকেও হকের প্রতি ভালবাসা এবং বাতিলের প্রতি ঘৃণার ভুরিভুরি উদাহরণ পাওয়া যায়। যুদ্ধের ময়দানে নিঃর্দ্বিধায় কাফের পিতা বা পুত্রকে হত্যা করে অনেক সাহাবী এর যথাযথ দৃষ্টান্ত রেখে গেছেন কারণ তাঁরা কেবলমাত্র আল্লাহর জন্যই কাউকে ভালবাসতেন বা ঘৃণা করতেন।
"মানব জাতির মধ্যে এমন কিছু লোক আছে যারা আল্লাহ ছাড়া অপর (শক্তি) কে আল্লাহর প্রতিদ্বন্দ্বী ও সমতুল্যরূপে গ্রহণ করে এবং তাকে এরূপ ভালবাসে যেরূপ ভালবাসা উচিত একমাত্র আল্লাহকে। অথচ প্রকৃত ঈমানদার লোকগণ আল্লাহকে সর্বাপেক্ষা অধিক ভালবাসে।" (আল-বাকারাহ: ১৬৫)
আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে যে, "আল্লাহর রাসূল (সাঃ) বলেছেন: যারই নিম্নলিখিত তিনটি গুণ থাকবে সেই ঈমানের মাধূর্য লাভ করবে: (১) তার কাছে আল্লাহ ও তার রাসূল অন্য যে কোন কিছুর তুলনায় অধিক প্রিয় হবে। (২) আল্লাহর উদ্দেশ্যে ছাড়া কোন উদ্দেশ্যে কোন ব্যক্তিকে ভাল না বাসবে। (যখন কাউকে ভালবাসবে একমাত্র আল্লাহর জন্যই ভালবাসবে) (৩) অবিশ্বাসের (কুফর) দিকে প্রত্যাবর্তনকে ঘৃণা করবে, কেননা আল্লাহ তাকে এ থেকে রক্ষা করেছে এবং সে দোজখের আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়া ঘৃণা করে।" [মুসলিম]
মুসলমান হওয়ার জন্য উপরোক্ত সাতটি শর্ত প্রত্যেককে নিজের জীবনে কার্যকর করতে হবে।
--------------------------------------------------------
কালিমা/শাহাদাহ/লা ইলাহা ইল্লালাহ মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ দুটি ভাগ
i) লা ইলাহা ইল্লালাহ
ii) মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ
তাওহীদের তথা লা ইলাহা ইল্লালাহ’র মৌলিক উপাদান বা রুকণঃ ২টি
============================
i) ইমানবিল্লাহ/ আল্লাহর প্রতি ঈমান ও
ii) কুফর বিত তাগুত/ তাগুতের বিরদ্ধাচারন/ অস্বীকার করা
-----------------------------------------------------------
ii) কুফর বিত তাগুত/ তাগুতের বিরদ্ধাচারণ/ অস্বীকার করাঃ -
=====================================
মহান আল্লাহ বান্দার উপর ফরয করেছেন যেন একমাত্র তাঁরই ইবাদত করা হয়, এবং এটাই হলো সেই তাওহীদ যা ছিল সকল নবীগণের (عليهم السلام) দাওয়াতের মূল বিষয়।
যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ
“আমার ইবাদত করার জন্যই আমি জিন ও মানব জাতি সৃষ্টি করেছি।” (সূরা যারিয়াত: ৫৬)
আর “লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ” হলো পবিত্র কালিমা তাওহীদ যার উপর ভিত্তি করে টিকে থাকে দ্বীন ইসলাম। একথা জানা প্রয়োজন যে, আল্লাহ তাআলা মানব জাতির উপর সর্বপ্রথম যা ফরয করেছেন তা হচ্ছে তাগুতের সাথে কুফরী এবং আল্লাহর উপর ঈমান।
অর্থাৎ,
“লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ” এর রুকন বা ভিত্তি দু’টো:
১। কুফর বিত্* তাগুত
২। ঈমান বিল্লাহ
আল্লাহ তাআলা বলেন:
وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِي كُلِّ أُمَّةٍ رَّسُولاً أَنِ اعْبُدُواْ اللّهَ وَاجْتَنِبُواْ الطَّاغُوتَ
“আমি প্রত্যেক উম্মতের মধ্যেই রাসূল প্রেরণ করেছি এই মর্মে যে, তোমরা আল্লাহর ইবাদত করো এবং তাগুতকে বর্জন করো।” (সূরা নাহল: ৩৬)
وَالَّذِينَ اجْتَنَبُوا الطَّاغُوتَ أَن يَعْبُدُوهَا وَأَنَابُوا إِلَى اللَّهِ لَهُمُ الْبُشْرَى فَبَشِّرْ عِبَادِ
“যারা তাগুতের পূজা-অর্চনা থেকে দূরে থাকে এবং আল্লাহ অভিমুখী হয়, তাদের জন্যে রয়েছে সুসংবাদ। অতএব, সুসংবাদ দিন আমার বান্দাদেরকে।” (সূরা যুমার: ১৭)
فَمَنْ يَكْفُرْ بِالطَّاغُوتِ وَيُؤْمِن بِاللّهِ فَقَدِ اسْتَمْسَكَ بِالْعُرْوَةِ الْوُثْقَىَ لاَ انفِصَامَ لَهَا وَاللّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ
“সুতরাং যে তাগুতের সাথে কুফরী করে এবং আল্লাহর উপর ঈমান আনে সে এমন মজবুত রজ্জুকে ধারণ করতে সক্ষম হয়েছে যার কোন বিভক্তি বা চিড় নেই, আর আল্লাহ সর্ব শ্রোতা ও সর্ব জ্ঞানী।” (সূরা বাকারা: ২৫৬)
اللّهُ وَلِيُّ الَّذِينَ آمَنُواْ يُخْرِجُهُم مِّنَ الظُّلُمَاتِ إِلَى النُّوُرِ وَالَّذِينَ كَفَرُواْ أَوْلِيَآؤُهُمُ الطَّاغُوتُ يُخْرِجُونَهُم مِّنَ النُّورِ إِلَى الظُّلُمَاتِ أُوْلَـئِكَ أَصْحَابُ النَّارِ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ
“যারা ঈমান এনেছে, আল্লাহ তাদের অভিভাবক। তাদেরকে তিনি বের করে আনেন অন্ধকার থেকে আলোর দিকে। আর যারা কুফরী করে তাদের অভিভাবক হচ্ছে তাগুত। তারা তাদেরকে আলো থেকে বের করে অন্ধকারের দিকে নিয়ে যায়। এরাই হলো দোযখের অধিবাসী, চিরকাল তারা সেখানেই থাকবে।” (সূরা বাকারা: ২৫৭)
أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِينَ أُوتُواْ نَصِيبًا مِّنَ الْكِتَابِ يُؤْمِنُونَ بِالْجِبْتِ وَالطَّاغُوتِ وَيَقُولُونَ لِلَّذِينَ كَفَرُواْ هَؤُلاء أَهْدَى مِنَ الَّذِينَ آمَنُواْ سَبِيلاً
“তুমি কি তাদেরকে দেখনি, যারা কিতাবের কিছু অংশ প্রাপ্ত হয়েছে, যারা মান্য করে জিবত ও তাগুতকে এবং কাফেরদেরকে বলে যে, এরা মুসলমানদের তুলনায় অধিকতর সরল সঠিক পথে রয়েছে।” (সূরা নিসা: ৫১)
أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِينَ يَزْعُمُونَ أَنَّهُمْ آمَنُواْ بِمَا أُنزِلَ إِلَيْكَ وَمَا أُنزِلَ مِن قَبْلِكَ يُرِيدُونَ أَن يَتَحَاكَمُواْ إِلَى الطَّاغُوتِ وَقَدْ أُمِرُواْ أَن يَكْفُرُواْ بِهِ وَيُرِيدُ الشَّيْطَانُ أَن يُضِلَّهُمْ ضَلاَلاً بَعِيدًا
“আপনি কি তাদেরকে দেখেননি, যারা দাবী করে যে, আপনার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে এবং আপনার পূর্বে যা অবতীর্ণ হয়েছে হয়েছে সে বিষয়ের উপর তারা ঈমান এনেছে। তারা বিরোধীয় বিষয়কে তাগুতের দিকে নিয়ে যেতে চায়, অথচ তাদের প্রতি নির্দেশ দেয়া হয়েছে, তারা যেন তাকে অস্বীকার করে। পক্ষান্তরে শয়তান তাদেরকে প্রতারিত করে পথভ্রষ্ট করে ফেলতে চায়।” (সূরা নিসা: ৬০)
الَّذِينَ آمَنُواْ يُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِ اللّهِ وَالَّذِينَ كَفَرُواْ يُقَاتِلُونَ فِي سَبِيلِ الطَّاغُوتِ فَقَاتِلُواْ أَوْلِيَاء الشَّيْطَانِ إِنَّ كَيْدَ الشَّيْطَانِ كَانَ ضَعِيفًا
“যারা ঈমানদার তারা যে জিহাদ করে আল্লাহর রাহেই। পক্ষান্তরে যারা কাফের তারা লড়াই করে তাগুতের পক্ষে। সুতরাং তোমরা জিহাদ করতে থাকো শয়তানের পক্ষাবলম্বনকারীদের বিরুদ্ধে, (দেখবে) শয়তানের চক্রান্ত একান্তই দুর্বল।” (সূরা নিসা: ৭৬)
তাগুতের সাথে কুফরীর ধরন হলো:
“লা ইলাহা”—“নেই কোন ইলাহ” বাক্যটি নেতিবাচক; অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া অন্য সবকিছুর উপাসনা (ইবাদত) বাতিল বলে বিশ্বাস করা, তা ত্যাগ করা, ঘৃণা ও অপছন্দ করা, এবং যারা তা (আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনকিছুর উপাসনা) করবে তাদের অস্বীকার করা, তাদের সাথে শত্রুতা পোষণ করা।
আল্লামা ইদরিস কান্ধলবি আল হানাফী (رحيمه الله) বলেন, “হযরত (صلي الله عليه و سلم) এর কুফর ও শিরক বিরোধী প্রকাশ্য ঘোষনা এবং মূর্তি ও মূর্তিপূজার বিরুদ্ধে ঘৃণার দরুন তাঁর ও তাঁর সাহাবাদের (رضي الله عنهم) তীব্র শত্রুতা ও বিরোধীতার মুখে অটল থাকা এ বিষয়েরই প্রকাশ্য প্রমাণ যে, ঈমান এবং ইসলামের জন্য কেবল অন্তরে সত্যায়ন অথবা মৌখিক স্বীকৃতিই যথেষ্ট নয়, বরং কুফর ও কাফের এবং শিরকের বৈশিষ্ট্য ও আনুষঙ্গিকতার বিরোধীতাও জরুরি এবং সেগুলো অপছন্দ করাও অত্যাবশ্যক।” (সিরাতে মুস্তফা সাঃ, ১/১৫৫)
তিনি (رحيمه الله) আরও বলেন, “মহান পয়গম্বর (عليهم السلام) গণের সুন্নাহ তথা আদর্শ তো এটাই যে, যেভাবে তাঁরা বিশ্বজাহানের প্রতিপালক আল্লাহর প্রতি ইমান ও সত্যায়নের আহবান জানান, ঠিক তেমনিভাবে কুফর, শিরক ও তাগুতকেও মিথ্যা প্রতিপন্ন করা ও অস্বীকারের আহবান জানান।” (সিরাতে মুস্তফা সাঃ, ১/১৫৬)
আর আল্লাহর উপর ঈমানের অর্থ হলো:
দ্বিতীয় রুকন ‘ইল্লাল্লাহ’ হলো ইতিবাচক। অর্থাৎ শিরকমুক্ত শুধুমাত্র এক আল্লাহর ইবাদত প্রতিষ্ঠার অংগীকার।
আল্লাহ তাআলাই কেবলমাত্র হক উপাস্য ও ইলাহ, অন্য কেউ নয়—একথা বিশ্বাস করা, আর সবরকম ইবাদতকে নিষ্ঠার সাথে আল্লাহর জন্যই নির্দিষ্ট করা যাতে এর কোন অংশ অন্য কোন উপাস্যের জন্য নির্দিষ্ট না হয়; আর মুখলিস বা নিষ্ঠাবানদের ভালবাসা, তাদের সাথে আনুগত্যের সম্পর্ক স্থাপন করা, মুশরিকদের ঘৃণা ও অপছন্দ করা, তাদের সাথে শত্রুতা করা।
আর এটাই হলো ইবরাহীম (عليه السلام) এর প্রতিষ্ঠিত দ্বীন বা মিল্লাত, যে ব্যক্তি এর থেকে বিমুখ হবে সে তো স্বয়ং নিজেকেই বোকা বানাবে, আর এটাই হলো সে আদর্শ (أسوة) যার কথা আল্লাহ তাআলা তাঁর বাণীতে বলেছেন:
قَدْ كَانَتْ لَكُمْ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ فِي إِبْرَاهِيمَ وَالَّذِينَ مَعَهُ إِذْ قَالُوا لِقَوْمِهِمْ إِنَّا بُرَاء مِنكُمْ وَمِمَّا تَعْبُدُونَ مِن دُونِ اللَّهِ كَفَرْنَا بِكُمْ وَبَدَا بَيْنَنَا وَبَيْنَكُمُ الْعَدَاوَةُ وَالْبَغْضَاء أَبَدًا حَتَّى تُؤْمِنُوا بِاللَّهِ وَحْدَهُ
“তোমাদের জন্যে ইব্রাহীম ও তাঁর সঙ্গীগণের মধ্যে চমৎকার আদর্শ রয়েছে। তাঁরা তাদের সম্প্রদায়কে বলেছিলেন: তোমাদের সাথে এবং তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যার ইবাদত করো, তার সাথে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই। আমরা তোমাদের মানি না। তোমাদের ও আমাদের মধ্যে চিরশত্রুতা বজায় থাকবে যতক্ষণ পর্যন্ত না তোমরা এক আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করো।” (সূরা মুমতাহিনা: ৪)
তাগুত এর আভিধানিক সংজ্ঞা:
তাগুত শব্দের অর্থ হচ্ছে সীমালংঘনকারী, আল্লাহদ্রোহী, বিপথে পরিচালনাকারী। তাগুত শব্দটি আরবী (তুগইয়ান) শব্দ থেকে উৎসারিত, যার অর্থ সীমালংঘন করা, বাড়াবাড়ি করা, স্বেচ্ছাচারিতা।
তাগুত শব্দের শর‘য়ী সংজ্ঞা:
#উমর (رضي الله عنه) বলেন, “জিবত শব্দের অর্থ হচ্ছে যাদু এবং তাগুত শব্দের অর্থ হচ্ছে শয়তান।” (তাফসীরে ইবন কাসির-২/৪৪৪, সূরা নিসা: ৫১ এর তাফসীর, তাফসীরে মা‘আরিফুল কুরআন: ২/৪১৩)
#জাবির (رضي الله عنه) তাগুত সম্পর্কে জিজ্ঞাসিত হয়ে বলেন, “তারা ছিলো যাদুকর এবং তাদের কাছে শয়তান আসতো।” (তাফসীরে ইবন কাসির-২/৪৪৪, সূরা নিসা: ৫১ এর তাফসীর)
#মুজাহিদ (رحيمه الله) বলেন, “তারা হচ্ছে মানুষরূপী শয়তান। তাদের কাছে মানুষ তাদের বিবাদ নিয়ে উপস্থিত হয় এবং তাদেরকে বিচারক মেনে নেয়।” (তাফসীরে ইবন কাসির-২/৪৪৪, সূরা নিসা: ৫১ এর তাফসীর)
#ইমাম মালেক (رحيمه الله) তাগুতের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেছেন: “আল্লাহ তাআলাকে বাদ দিয়ে যার ইবাদত করা হয়, এমন প্রত্যেক জিনিসকেই তাগুত বলা হয়।” (ফতহুল ক্বাদীর, আল্লামা শওক্বানী)
#ইমাম ইবনে জারির তাবারি আশ-শাফেয়ী (رحيمه الله) বলেন, “আমাদের মতে সঠিক মত হলো, আল্লাহর উপর সীমালংঘনকারী মাত্রই তাগুত বলে চিহ্নিত, যার অধীনস্থ ব্যক্তিরা চাপের মুখে বা তাকে তোষামোদ করার জন্য বা তার আনুগত্য প্রকাশ করার জন্য তার ইবাদত করে। এ (তাগুত) উপাস্যটি মানুষ কিংবা শয়তান কিংবা মূর্তি কিংবা প্রতিমা অথবা অন্য যেকোন কিছুর হতে পারে।” (তাফসীর আত্* তাবারি, ইসলামি ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, ৫ম খন্ড, সূরা বাকারা: ২৫৬ নং আয়াতের তাফসীর)
#ইমাম ইবন জারির তাবারি আশ-শাফেয়ী (رحيمه الله) বলেন, “ঐ সকল আল্লাহদ্রোহী যারা আল্লাহর নাফরমানী করে সীমালংঘন করেছে এবং মানুষ যাদের আনুগত্য করে। সে মানুষ, জ্বিন, শয়তান, প্রতিমা বা অন্য কিছুও হতে পারে।” (তাফসীর আত্* তাবারি: ৩/২১)
#ইমাম নববী আশ-শাফেয়ী (رحيمه الله) বলেন, “আল্লাহ ছাড়া যাদের ইবাদাত করা হয় তারাই তাগুত। এটাই লাইস, আবু উবাইদা, কেসায়ি এবং বেশীরভাগ আরবী ভাষাবিদদের অভিমত।” (শরহে মুসলিম: ৩/১৮)
#ইমাম কুরতুবি আল-মালেকী (رحيمه الله) বলেন, “তাগুত হচ্ছে গণক, যাদুকর, শয়তান এবং পথভ্রষ্ট সকল নেতা।” (আল-জামে লি আহকামিল কুরআন: ৩/২৮২)
#ইমাম ইবনে তাইমিয়া আল-হাম্বলী (رحيمه الله) বলেন, “আল্লাহ ছাড়া যাদের ইবাদাত করা হয় তারাই তাগুত, যদি তারা তাদের এই ইবাদতে অসন্তুষ্ট না হয়। এ কারণেই আল্লাহর রাসূল মুহাম্মাদ (صلي الله عليه و سلم) মূর্তিকে তাগুত বলেছেন।” (মাজমাআতুল ফাতাওয়া: ২৮/২০০)
#ইমাম ইবনে তাইমিয়া আল-হাম্বলী (رحيمه الله) বলেন, “আল্লাহর কিতাব ছাড়া যার কাছে বিচার ফায়সালা চাওয়া হয়, তাকেই তাগুত নামে আখ্যায়িত করা হয়।” (মাজমাআতুল ফাতাওয়া: ৭০১/৭৮)
#ইমাম ইবনে কাসীর আশ-শাফেয়ী (رحيمه الله) বলেন, “হযরত উমরের (رضي الله عنه) তাগুতের অর্থ শয়তান নেয়া যথার্থই হয়েছে। কেননা সমস্ত খারাপ কাজই এর অন্তর্ভুক্ত রয়েছে যেগুলো অজ্ঞতার যুগের লোকদের মাঝে বিদ্যমান ছিল। যেমন প্রতিমার পূজা, তাদের কাছে অভাব-অভিযোগ পেশ করা এবং বিপদের সময় তাদের কাছে সাহায্য চাওয়া ইত্যাদি।” (তাফসীর ইবনে কাসির ১/৭১৪, সূরা বাকারা: ২৫৬ এর তাফসীর)
#ইমাম ইবনে কাসীর আশ-শাফেয়ী (رحيمه الله) বলেন, “এ আয়াত প্রত্যেক ঐ ব্যক্তির দুর্নাম ও নিন্দা করছে, যে কিতাব ও সুন্নাহকে ছেড়ে অন্য কোন বাতিলের দিকে স্বীয় ফায়সালা নিয়ে যায়। এখানে এটাই হচ্ছে তাগুতের ভাবার্থ।” (তাফসীর ইবনে কাসির ২/৪৬৩, নিসা: ৬০ এর তাফসীর)
#ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম আল-হাম্বলী (رحيمه الله) বলেন, “তাগুত হচ্ছে এমন যে কেউ যার প্রতি বান্দা (আবদ) সীমালংঘন করে, সেটা কাউকে ইবাদত করা (মা’বুদিন) বা অনুসরণ করা (মাতবুইন) বা মান্য করা (মুতাইন) যাই হোক না কেন।” (ই’লামুল মুওয়াক্কিইন)
#ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম আল-হাম্বলী (رحيمه الله) বলেন, “তাগুত হচ্ছে ঐ সকল মা’বুদ, নেতা, মুরব্বি যাদের আনুগত্য করতে গিয়ে সীমালঙ্ঘন করা হয়। আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলকে বাদ দিয়ে যাদের কাছে বিচার ফায়সালা চাওয়া হয়, অথবা আল্লাহর পরিবর্তে যাদের ইবাদাত করা হয়, অথবা আল্লাহর পক্ষ থেকে কোন দলিল-প্রমাণ ছাড়া যাদের আনুগত্য করা হয় এরাই হলো পৃথিবীর বড় বড় তাগুত। তুমি যদি এই তাগুতগুলো এবং মানুষের অবস্থার প্রতি লক্ষ্য করো তবে বেশীরভাগ মানুষকেই পাবে যারা আল্লাহর ইবাদতের পরিবর্তে তাগুতের ইবাদত করে। আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের কাছে বিচার-ফায়সালা চাওয়ার পরিবর্তে তাগুতের কাছে বিচার-ফায়সালা নিয়ে যায়। আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের আনুগত্য করার পরিবর্তে তাগুতের আনুগত্য করে।” (ই’লামুল মুওয়াক্কিইন: ১/৫০)
#ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম আল-হাম্বলী (رحيمه الله) তাগুতকে ৫ টি শ্রেণীতে ভাগ করেছেন,
১. শাইতন বা শয়তান
২. যার ইবাদত/উপাসনা/পূজা করা হয় এবং সে এটি নিয়ে সন্তুষ্ট।
৩. যে অপরকে তার ইবাদাত/উপাসনা/পূজা করতে আহবান করে বা ডাকে।
৪. যে গায়েব বা অদৃশ্য-এর জ্ঞান জানার দাবি করে।
৫. যে আল্লাহ্* যা নাযিল করেছেন তা ব্যতীত অন্য কিছু দিয়ে শাসন করে। (মাদারিজুস-সালিকিন )
#শাইখুল ইসলাম মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহ্হাব আল-হাম্বলী (رحيمه الله) বলেন, “তাগুত হচ্ছে ঐ সকল মা’বুদ, নেতা, মুরব্বি, আল্লাহর পরিবর্তে যাদের আনুগত্য করা হয় এবং তারা এতে সন্তুষ্ট থাকে।” (মাজমাআতুত-তাওহীদ: ৯)
শাইখুল ইসলাম মুহাম্মাদ বিন আব্দুল ওয়াহ্হাব আল-হাম্বলী (رحيمه الله) তাগুতকে ৫ টি শ্রেণীতে ভাগ করেছেন, কিন্তু ৫ম ভাগটিতে পার্থক্য রয়েছে,
১. শাইতন বা শয়তান
২. যে আল্লাহ্* যা নাযিল করেছেন তা ব্যতীত অপর কিছু দিয়ে বিচার করে।
৩. যে আল্লাহ্*র পাশাপাশি গইব বা অদৃশ্যের জ্ঞানের দাবি করে।
৪. যার ‘ইবাদাত/উপাসনা/পূজা করা হয় এবং সে এটি নিয়ে সন্তুষ্ট থাকে।
৫. সেই অত্যাচারী বিচারক, যে আল্লাহ্*র বিচারে পরিবর্তন করে। (আদ-দারার আস-সুন্নিয়্যাহ, ভলিউম: ০১, পৃষ্ঠা: ১০৯-১১০)
#আল্লামা শাব্বির আহমাদ উসমানি আল-হানাফী (رحيمه الله) বলেন, “হযরত শাহ সাহেব [মাওলানা শাহ আব্দুল কাদির দেহলাবি আল-হানাফী (رحيمه الله)] বলেন, ‘তাগুত হচ্ছে তারা, যারা ভিত্তিহীনভাবে নের্তৃত্বের দাবি করে। প্রতিমা, শয়তান, স্বেচ্ছাচারী শাসক সবই এর অন্তর্ভুক্ত।’” (তাফসীরে উসমানিঃ২/৫৪৫)
#মুফতি মুহাম্মাদ শফি আল-হানাফী (رحيمه الله) বলেন, “তাগুত শব্দের অর্থ ঔদ্ধত্য প্রকাশকারী। আর প্রচলিত অর্থে ‘তাগুত’ বলা হয় শয়তানকে। এ আয়াতে বিরোধীয় বিষয়টিকে কা‘ব ইবনে আশরাফের কাছে নিয়ে যাওয়াকে শয়তানের কাছে নিয়ে যাওয়া সাব্যস্ত করা হয়েছে। তা হয় এই কারণে যে, কা‘ব নিজেই ছিল শয়তান কিংবা এই কারণে যে, শরীয়তের ফায়সালা বর্জন করে শরীয়তবিরোধী মীমাংসার দিকে ধাবিত হওয়া, শয়তানেরই শিক্ষা হতে পারে। বস্তুত যে লোক সেই শিক্ষার অনুসরণ করেছে, শয়তানের কাছেই সে যেন নিজের মোকাদ্দমা নিয়ে গেছে।” (তাফসীরে মা‘আরিফুল কুরআন: ২/৪৩৯-৪৪০)
উস্তাদ সাইয়্যেদ কুতুব শহীদ আশ-শাফেয়ী (رحيمه الله) বলেন, “তাগুত বলতে সেইসব ব্যক্তি ও ব্যবস্থাকে বোঝায় যেগুলো ঐশী দ্বীন এবং নৈতিক, সামাজিক ও আইন-শৃঙ্খলাকে অবমাননা করে এবং আল্লাহ নির্দেশিত বা তাঁর দেয়া দিক-নির্দেশনা থেকে উদ্ভূত নয় এমন সব মূল্যবোধ ও রীতিনীতির ভিত্তিতে জীবনব্যবস্থা পরিচালনা করে।” (তাফসীরে ফী যিলালিল কোরআন)
উস্তাদ সাইয়্যেদ কুতুব শহীদ আশ-শাফেয়ী (رحيمه الله) বলেন, “যারা সত্যকে অমান্য করে, ইবাদতের ক্ষেত্রে আল্লাহর দেয়া সীমারেখা অতিক্রম করে, আল্লাহর দেয়া শরীয়তের কোন তোয়াক্কা করে না, ইসলামি আক্বীদাহ-বিশ্বাসের কোন গুরুত্ব রাখে না, যারা ইবাদতের ক্ষেত্রে আল্লাহর নির্ধারিত পদ্ধতি বাদ দিয়ে অথবা আল্লাহর পক্ষ থেকে অনুমোদন ছাড়া ইবাদতের পদ্ধতি তৈরি করে, যারা বিশেষ প্রকার ধ্যান করা অথবা বিশেষ ভঙ্গিমা অথবা কোন ইবাদতের বিশেষ আদব তৈরি করে তারা সকলেই তাগুত। এমনিভাবে যারা বিশেষ কোন ব্যক্তির অন্ধ অনুকরণে জনসাধারণকে বাধ্য করে তারাও তাগুত।” (তাফসীরে ফী যিলালিল কোরআন: ১/২৯২)
#শাইখ মুহাম্মাদ আমিন শানকিত্বি আল-মালেকী (رحيمه الله) বলেন, “আল্লাহ ছাড়া যাদের ইবাদাত করা হয় তারাই তাগুত। আর এই গাইরুল্লাহর ইবাদতের বড় অংশটাই হচ্ছে শয়তানের জন্য। কেননা শয়তানের আহবানে সাড়া দিয়ে কোন গাইরুল্লাহর ইবাদাত করা পরোক্ষভাবে শয়তানেরই ইবাদতের শামিল। এ কারণেই আল্লাহ তাআলা বলেন: ‘হে বনী আদম! আমি কি তোমাদের বলে রাখিনি যে শয়তানের ইবাদাত করোনা?’ (সূরা ইয়াসিন: ৬০)” (তাফসীরে আদওয়াউল বয়ান: ১/২২৮)
#মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুল মালেক আল-হানাফী (دابت بركته) বলেন, “‘তাগূতের অর্থ আল্লাহর ঐ বিদ্রোহী বান্দা, যে আল্লাহর মোকাবেলায় নিজেকে বিধানদাতা মনে করে এবং মানুষের উপর তা কার্যকর করতে চায়। প্রকৃতপক্ষে কোন তাগুত ব্যক্তি বা দলের বানানো আইন-কানুন হচ্ছে সত্য দ্বীন ইসলামের বিপরীতে বিভিন্ন ‘ধর্ম’, যা থেকে সম্পর্কচ্ছেদ করা ছাড়া ঈমান সাব্যস্ত হয়না। আল্লাহর বিরুদ্ধে কিংবা আল্লাহর উপাসনার পাশাপাশি তাগুতের উপাসনা বা আনুগত্য করা কিংবা তা বৈধ মনে করা, তদ্রুপ আল্লাহর দ্বীনের মোকাবেলায় বা তার সাথে তাগূতের আইন-কানুন গ্রহণ করা বা গ্রহণ করাকে বৈধ মনে করা সরাসরি কুফর ও শিরক। তাগূত ও তার বিধি-বিধান থেকে সম্পর্কচ্ছেদ ছাড়া ঈমানের দাবি নিফাক ও মুনাফিকী।” (ঈমান সবার আগে-৩, মাসিক আল-কাউসার মে-২০১৩)
#মাওলানা মুহাম্মাদ মাসঊদ আযহার আল-হানাফী (دابت بركته) বলেন,
১। ইসলাম বিরোধী প্রত্যেক শক্তির নামই তাগুত।
২। তাছাড়া, তাগুত হলো সেইসব ব্যক্তি যারা মানুষকে সত্য দ্বীন থেকে বিপথগামী করে-হোক সে মানুষ অথবা জ্বীন।
৩। যারা ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে-সেই ধরনের প্রত্যেক ব্যক্তিই তাগুত।
৪। তাগুত হলো সেইসব সিস্টেম বা পদ্ধতি যার ছত্রছায়ায় কুচক্রী মানুষগুলো একত্রিত হয়ে ইসলাম ও মুসলমানদের বিরুদ্ধে ষরযন্ত্রে লিপ্ত থাকে অথবা যুদ্ধ করে।
৫। আরো, তাগুত হচ্ছে সেইসব প্রতিষ্ঠানের নাম যেখানে সত্য দ্বীন বিরোধী নিত্য-নতুন বিভাগ ও ফিরকার উদ্ভব ঘটে।
৬। শয়তান এবং মিথ্যা উপাস্যগুলোকে (হোক মানুষ অথবা জ্বিন) তাগুতের প্রধান অর্থ বুঝালেও, এর পাশাপাশি তাগুত হচ্ছে পৃথিবীর সেইসকল ক্ষমতাসীন মানুষ যারা তাদের সমস্ত বাতিল শক্তির মাধ্যমে ইসলামের অগ্রযাত্রাকে ব্যাহত করে, ইসলামি শরীয়তের আইনের বাস্তবায়নকে রুদ্ধ করে এবং মুসলমানদের বিরুদ্ধে কাফেরদের সাহায্য করে। (আল্লাহই ভালো জানেন) (ফাতহুল জাওয়াদ ফী মা’আরিফ আয়াতুল জিহাদ, পৃ: ৩৭৫-৩৭৬)
মনে রাখা দরকার কোন মানুষ তাগুতের উপর কুফরী ছাড়া ইমানদার হতে পারেনা।
মহান আল্লাহ বলেন:
فَمَنْ يَكْفُرْ بِالطَّاغُوتِ وَيُؤْمِن بِاللّهِ فَقَدِ اسْتَمْسَكَ بِالْعُرْوَةِ الْوُثْقَىَ لاَ انفِصَامَ لَهَا وَاللّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ
“সুতরাং যে তাগুতের সাথে কুফরী করে এবং আল্লাহর উপর ঈমান আনে সে এমন মজবুত রজ্জুকে ধারণ করতে সক্ষম হয়েছে যার কোন বিভক্তি বা চিড় নেই, আর আল্লাহ সর্ব শ্রোতা ও সর্ব জ্ঞানী।” (সূরা বাকারা: ২৫৬)
এ আয়াতের পূর্বাংশে আল্লাহ বলেছেন, “বিচার-বুদ্ধিসম্পন্ন পথ, ভ্রান্ত-পথ থেকে স্পষ্ট হয়েছে।” “বিচার-বুদ্ধি সম্পন্ন পথ” বলতে রাসূল (صلي الله عليه و سلم) এর দ্বীনকে, আর “ভ্রান্ত-পথ” বলতে আবু জাহলের দ্বীনকে বুঝানো হয়েছে, আর এর পরবর্তী আয়াতের মজবুত রশি বা রজ্জু দ্বারা “লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ” (আল্লাহ ছাড়া কোন হক উপাস্য নেই) এর সাক্ষ্য প্রদানকে বুঝিয়েছেন।
“লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ”-এই কালিমা কিছু জিনিসকে নিষেধ করে, এবং কিছু বস্তুকে সাব্যস্ত করে; সকল প্রকার ইবাদতকে আল্লাহর ছাড়া অন্যের জন্য নির্ধারিত হওয়াকে নিষেধ করে। শুধুমাত্র লা-শরীক আল্লাহর জন্য সকল প্রকার ইবাদতকে নির্দিষ্ট করে।
প্রধান প্রধান তাগুত
আর এ তাগুত -এর সংখ্যা অত্যধিক; তবে প্রধান-প্রধান তাগুত হলো পাঁচটি:
এক: শয়তান:
যে আল্লাহর ইবাদত থেকে মানুষকে অন্য কিছুর ইবাদতের দিকে আহবান করে।
এর প্রমাণ আল্লাহর বাণী: “হে আদম-সন্তান, আমি কি তোমাদের থেকে শয়তানের ইবাদত না করার অঙ্গিকার নিই নি? নিশ্চয়ই সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।” [সূরা ইয়াসিন: ৬০]
দুই: আল্লাহর আইন (হুকুম) পরিবর্তনকারী অত্যাচারী শাসক:
এর প্রমাণ আল্লাহ তা‘আলার বাণী: “আপনি কি তাদের দেখেন নি যারা মনে করে আপনার কাছে এবং আপনার পূর্ববর্তীদের কাছে যা অবতীর্ণ হয়েছে তার উপর ঈমান এনেছে, তারা তাগুতকে বিচারক হিসাবে পেতে আকাঙ্ক্ষা করে অথচ তাদেরকে এর (তাগুতের) সাথে কুফরির নির্দেশ দেয়া হয়েছিল। আর শয়তান তাদেরকে সহজ সরল পথ থেকে অনেক দুর নিয়ে যেতে চায়।” [সূরা আন্নিসাঃ ৬০]
তিন: আল্লাহ কর্তৃক অবতীর্ণ (আইনের) হুকুমের বিপরীত হুকুম প্রদানকারী:
আল্লাহ তা‘আলা বলেন: “আর যারা আল্লাহর অবতীর্ণ আইন অনুসারে বিচার করে না তারা কাফের।” [সূরা আল মায়েদা: ৪৪]
চার: আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন গায়েবের খবর রাখার দাবিদার:
আল্লাহ তা‘আলা বলেন: “তিনি গায়েবের জ্ঞানে জ্ঞানী, সুতরাং তার অদৃশ্য জ্ঞানকে কারও জন্য প্রকাশ করেন না, তবে যে রাসূল এর ব্যাপারে তিনি সন্তুষ্ট তিনি তাকে তার সম্মুখ ও পশ্চাৎ থেকে হিফাজত করেন।” [সূরা আল-জিন: ২৬, ২৭]
অন্য আয়াতে বলেন: “আর তার কাছেই সমস্ত অদৃষ্ট বস্তুর চাবিকাঠি, এগুলো তিনি ছাড়া আর কেউ জানে না, তিনি জানেন যা ডাঙ্গায় আছে আর যা সমুদ্রে আছে। যে কোন (গাছের) পাতাই পতিত হয় তিনি তা জানেন, জমিনের অন্ধকারের কোন শস্য বা কোন শুষ্ক বা আর্দ্র বস্তু সবই এক প্রকাশ্য গ্রন্থে সন্নিবেশিত আছে।” [সূরা আল-আন‘আম: ৫৯]
পাঁচ: আল্লাহ ছাড়া যার ইবাদত করা হয় এবং সে এই ইবাদতে সম্পূর্ণ সন্তুষ্ট:
আল্লাহ তা‘আলা বলেন: “আর তাদের থেকে যে বলবে- আল্লাহ ব্যতীত আমি উপাস্য, তাকে আমি জাহান্নাম দ্বারা পরিণাম ফল প্রদান করব, এভাবেই আমি অত্যাচারীদের পরিণাম ফল প্রদান করে থাকি”। [সূরা আল-আন্বিয়াঃ ২৯]
মনে রাখা দরকার কোন মানুষ তাগুতের উপর কুফরি ছাড়া ইমানদার হতে পারেনা, আল্লাহ বলেন:
“সুতরাং যে তাগুতের সাথে কুফরি করে এবং আল্লাহর উপর ঈমান আনে সে এমন মজবুত রজ্জুকে ধারণ করতে সক্ষম হয়েছে যার কোন বিভক্তি বা চিড় নেই, আর আল্লাহ সর্ব শ্রোতা ও সর্ব জ্ঞানী।” [সূরা আল-বাকারা: ২৫৬]
এ আয়াতের পূর্বাংশে আল্লাহ বলেছেন যে, “বিচার-বুদ্ধিসম্পন্ন পথ, ভ্রষ্ট-পথ থেকে স্পষ্ট হয়েছে”। ‘বিচার-বুদ্ধি সম্পন্ন পথ’ বলতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর দীনকে, আর ‘ভ্রান্ত-পথ’ বলতে আবু জাহলের দীন, আর এর পরবর্তী আয়াতের ‘মজবুত রশি বা রজ্জু’ দ্বারা লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ (বা আল্লাহ ছাড়া হক কোন উপাস্য নেই) এ সাক্ষ্য প্রদানকে বুঝিয়েছেন।
ঈমান
====
২। ঈমান এর শাখা ৭০টিরও বেশী;
i) সর্বপ্রথমঃ লা ইলাহা ইল্লালাহ ও সর্বশেষঃ কষ্টদায়ক বস্তু রাস্তা থেকে সরিয়ে দেয়া
সহিহ মুসলিম: বই ১: কিতাবুল ঈমান অধ্যায়: হাদিস ৫৫
উবায়দুল্লাহ ইবন সাঈদ ও আবদ ইবন হুমায়দ (র)……আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, নবী করীম (সাঃ) বলেন, ঈমানের শাখা সত্তরটিরও কিছু বেশি। আর লজ্জা-শরম ঈমানের একটি শাখা।
সহিহ মুসলিম: বই ১: কিতাবুল ঈমান অধ্যায়: হাদিস ৫৬
যুহায়র ইবন হারব (র)……আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ঈমানের শাখা সত্তরটিরও কিছু বেশি ।অথবা ষাটটিরও কিছু বেশি। এর সর্বোচ্চ শাখা হচ্ছে “আল্লাহ ব্যাতিত ইলাহ নেই” এ কথা স্বীকার করা, আর এর সর্বনিম্ন শাখা হচ্ছে-; রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু অপসারণ করা। আর লজ্জা ঈমানের বিশিষ্ট একটি শাখা।
সহিহ বুখারী: খন্ড ১: বই ২: ঈমান অধ্যায়: হাদিস ৮
আবদুল্লাহ্ ইব্ন জু’ফী (র)........ আবূ হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্ (সা) ইরশাদ করেন, ঈমানের শাখা রয়েছে ষাটের কিছু বেশি। আর লজ্জা ঈমানের একটি শাখা।
----------------------------------------------------------
ইবনে হিব্বান (রঃ) কর্তৃক বর্ণিত ঈমানের শাখাগুলো হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী সহীহ বুখারীর ভাষ্যগ্রন্থ ফতহুল বারীতে সংক্ষিপ্তভাবে বর্ণনা করেছেন। এই শাখাগুলো তিন প্রকার। যথা:
(১) এমন কিছু শাখা আছে যা অন্তরের সাথে সম্পৃক্ত।
(২) কতিপয় শাখা জবানের সাথে সম্পৃক্ত এবং
(৩) এমন কতিপয় শাখা রয়েছে, শরীরের সাথে সম্পৃক্ত।
প্রথমতঃ অন্তরের কাজসমূহ
নিয়ত ও বিশ্বাস হচ্ছে অন্তরের কাজ। ঈমানের যেসমস্ত শাখা অন্তরের সাথে সম্পৃক্ত তার সংখ্যা ২৪টি। নিম্নে তা বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হল।
(১) আল্লাহর প্রতি ঈমান। আল্লাহর যাত (স্বত্তা), সিফাত (গুণাবলী) এবং একত্ববাদের প্রতি ঈমান আনয়নও আল্লাহর প্রতি ঈমানের অন্তর্ভূক্ত। তবে স্মরণ রাখা জরুরী যে, আল্লাহ্ স্বীয় সত্বা ও গুণাবলী কোন সৃষ্টির মত নয়। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
لَيْسَ كَمِثْلِهِ شَيْءٌ وَ هُوَ السَّميْعُ الْبَصِيْر
“কোন কিছুই তাঁর অনুরূপ নয়। তিনি শুনেন এবং দেখেন”। (সূরা শুরাঃ ১১)
(২) এই বিশ্বাস করা যে আল্লাহ্ ব্যতীত অন্যান্য সকল বস্তুই ধ্বংসশীল।
(৩) এমনিভাবে আল্লাহর ফেরেশতা
(৪) আসমানী কিতাব
(৫) নবী-রাসূল
(৬) তাকদীরের ভালমন্দ এবং
(৭) আখেরাতের প্রতি ঈমান। কবরের প্রশ্নোত্তর, পুনরুত্থান, হিসাব, আমলনামা প্রদান, মীযান (দাঁড়িপাল্লা), পুলসিরাত, জান্নাত এবং জাহান্নামের প্রতি ঈমান আনয়ন করাও অন্তরের কাজ সমূহের অন্তর্ভূক্ত।
(৮) আল্লাহকে ভালবাসা, আল্লাহর জন্যেই কাউকে ভালবাসা, আল্লাহর জন্যেই কাউকে ঘৃণা করা,
(৯) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে ভালবাসা ও তাঁকে সম্মান করাও অন্তরের কাজ। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামএর উপর দরূদ পাঠ ও তাঁকে ভালবাসা ও সম্মান প্রদর্শন তার অন্তর্ভূক্ত।
(১০) তাঁর সুন্নাতের অনুসরণ করা
(১১) একনিষ্ঠতার সাথে আল্লাহর এবাদত করা আবশ্যক-এর প্রতি ঈমান আনয়নও অন্তরের কাজের অন্তর্ভূক্ত। রিয়া তথা লোক দেখানো আমল ও মুনাফেকী পরিহার করাও এর অন্তর্ভূক্ত।
(১২) তাওবা করা
(১৩) আল্লাহকে ভয় করা
(১৪) আল্লাহর রহমতের আশা রাখা
(১৫) আল্লাহর নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করা
(১৬) ওয়াদা অঙ্গিকার পূর্ণ করা
(১৭) ধৈর্য ধারণ করা
(১৮) তাকদীরের লিখনের উপর সন্তুষ্ট থাকা
(১৯) আল্লাহর উপর ভরসা করা
(২০) বিনয়-নম্রতা প্রদর্শ করা, বড়কে সম্মান করা ও ছোটকে স্নেহ করাও এর অন্তর্ভূক্ত
(২১) অহঙ্কার ও তাকাব্বরী বর্জন করা
(২২) হিংসা বর্জন করা
(২৩) কাউকে ঘৃণা না করা এবং
(২৪) ক্রোধ বর্জন করা।
দ্বিতীয়তঃ জবানের কাজসমূহ তথা জবান দ্বারা উচ্চারিত শব্দ ও বাক্যসমূহ
ঈমানের শাখাসমূহের মধ্যে থেকে যেগুলোর সম্পর্ক জবানের সাথে তার সংখ্যা হল সাতটি। যথা:
(১) তাওহীদের বাক্য অর্থাৎ মুখে লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ্ উচ্চারণ করা
(২) কুরআন তেলাওয়াত করা
(৩) ইলম শিক্ষা করা
(৪) অপরকে ইলম শিক্ষা দেয়া
(৫) দু’আ করা
(৬) যিকির করা এবং ক্ষমা প্রার্থনা করাও এর অন্তর্ভূক্ত
(৭) অযথা কথা-বার্তা থেকে বিরত থাকা।
তৃতীয়তঃ শরীরের কাজসমূহ
ঈমানের শাখাসমূহের মধ্যে থেকে যেগুলোর সম্পর্ক শরীরের সাথে, তার সংখ্যা হল ৩৮টি। এ শাখাগুলো আবার তিন ভাগে বিভক্ত। যথা:
(ক) কতিপয় শাখা ব্যক্তি বিশেষের সাথে সম্পৃক্ত। এগুলোর সংখ্যা পনেরটি। যথা:
(১) বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীণ পবিত্রতা অর্জন করা
(২) মিসকীন ও অসহায়কে খাদ্য দান করা
(৩) মেহমানের সম্মান করা
(৪) ফরজ রোজা পালন করা
(৫) নফল রোযা পালন করা
(৬) ইতেকাফ করা
(৭) লাইলাতুল কদর অন্বেষণ করা
(৮) হজ্জ পালন করা
(৯) উমরা পালন করা
(১০) কাবা ঘরের তাওয়াফ করা
(১১) দ্বীন ও ঈমান নিয়ে টিকে থাকার জন্যে দেশ ত্যাগ
(১২) দ্বীন ও ঈমান বাঁচানোর জন্যে কাফের রাষ্ট্র ত্যাগ করে ইসলামী রাজ্যে চলে যাওয়া
(১৩) মানত পূর্ণ করা
(১৪) ঈমান বৃদ্ধির চেষ্টা করা ও
(১৫) কাফ্ফারা আদায় করা।
(খ) কতিপয় শাখা আছে, যা ব্যক্তির সাথে সংশ্লিষ্টদের সাথে সম্পৃক্ত। এগুলোর সংখ্যা মোট ৬টি। যথা:
(১) বিবাহের মাধ্যমে চরিত্র পবিত্র রাখা
(৬) পরিবারের ভরণ-পোষণের ব্যবস্থা করা
(৩) পিতা-মাতার সেবা করা,তাদের অবাধ্য না হওয়া
(৪) সন্তান প্রতিপালন করা
(৫) আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখা
(৬) মনিবের প্রতি অনুগত থাকা ও অধীনস্তদের সাথে নরম ব্যবহার করা।
(গ) এমন কতিপয় শাখা রয়েছে, যা সকল মুসলমানের সাথে সম্পৃক্ত। এগুলোর সংখ্যা হচ্ছে ১৭টি। যথা:
(১) ইনসাফের সাথে রাষ্ট্র পরিচালনা করা
(২) মুসলিম জামাআতের অনুসরণ করা,
(৩) শাসকদের আনুগত্য করা
(৪) মানুষের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ মিটিয়ে দেয়া। বিশৃংঙ্খলা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করাও এর অন্তর্ভূক্ত
(৫) সৎকাজে পরস্পর সহযোগিতা করা, সৎকাজের আদেশ দেয়া এবং অসৎকাজের নিষেধ করাও এর অন্তর্ভূক্ত
(৬) দণ্ডবিধি কায়েম করা
(৭) আল্লাহর রাস্তায় জেহাদ করা ও ইসলামী রাষ্ট্রের সীমানা পাহারা দেয়াও জেহাদের অন্তর্ভূক্ত
(৮) আমানত আদায় করা এবং গণীমতের মালের পাঁচভাগের একভাগ আদায় করাও এর অন্তর্ভূক্ত
(৯) ঋণ পরিশোধ করা
(১০) প্রতিবেশীর সম্মান করা
(১১) মানুষের সাথে ভাল ব্যবহার করা
(১২) হালালভাবে সম্পদ উপার্জন করা এবং বৈধ পন্থায় তা খরচ করা এবং অপচয় না করা
(১৩) সালামের উত্তর দেয়া
(১৪) হাঁচি দানকারীর উত্তর প্রদান করা
(১৫) মানুষের ক্ষতি করা থেকে বিরত থাকা
(১৬) খেলা-তামাশা থেকে বিরত থাকা ও
(১৭) রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক জিনিষ সরিয়ে দেয়া।
এই হল ঈমানের ৬৯টি শাখা। কতিপয় শাখাকে অন্য শাখার সাথে একত্রিত গণনা না করে আলাদাভাবে হিসাব করলে ৭৭টি হবে। আল্লাহই ভাল জানেন।
----------------------------------------------------
ii) ঈমান এর রুকণঃ ৬টি
==============
a) আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস
b) মালাইকা/ ফেরেশতাদের প্রতি বিশ্বাস
c) নবী ও রাসূলগণের প্রতি বিশ্বাস
d) কিতাবের প্রতি বিশ্বাস
e) আখিরাতের প্রতি বিশ্বাস
f) তাকদিরের প্রতি বিশ্বাস
সহিহ মুসলিম: বই ১: কিতাবুল ঈমান অধ্যায়: হাদিস ৪, হাদিস ৬
যুহায়র ইবন হারব (র)……আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ তোমরা আমাকে প্রশ্ন কর । সাহাবা কিরাম তার কাছে প্রশ্ন করতে ভয় পেলেন। (রাবী বলেন) তারপর একজন লোক এলেন এবং তাঁর কাছে বসে বললেনঃ ----------------------------------------------------- হে আল্লাহর রাসুল! ঈমান কী? রাসুল (সাঃ) বললেনঃ আল্লাহর প্রতি, তাঁর ফেরেশতাদের প্রতি, তাঁর কিতাবসমূহের প্রতি, তাঁর সঙ্গে সাক্ষাতের প্রতি, উখানের বিষয়ে এবং পুরোপুরি তাকদীরে ঈমান রাখবে। আগন্তুক বললেন, আপনি ঠিকই বলেছেন। --------------------------------------------------------------- তারপর আগন্তুক উঠে চলে গেলেন। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) সাহাবীদের বললেনঃ তাঁকে আমার কাছে ফিরিয়ে আন। তাঁকে তালাশ করা হলো, কিন্তু তাঁকে পাওয়া গেল না। তারপর রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বললেনঃ ইনি জিবরাঈল (আঃ) তোমরা প্রশ্ন না করায়, তিনি চাইলেন যেন তোমরা দীন সমন্ধে জ্ঞান লাভ কর। (হাদিছের অংশ বিশেষ)
----------------------------------------------------
iii) ঈমান এর শর্ত ৩টি
==============
a) মুখে স্বীকার
b) অন্তরে বিশ্বাস
c) তা অনুযায়ী আমল
-------------------------------------------
ইহসান
=====
৩। ইহসানঃ এটি হচ্ছে ইসলামের তিন স্তরের মধ্যে সর্বোচ্চ স্তর।
সহিহ মুসলিম: বই ১: কিতাবুল ঈমান অধ্যায়: হাদিস ৪, হাদিস ৬
যুহায়র ইবন হারব (র)……আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেনঃ তোমরা আমাকে প্রশ্ন কর । সাহাবা কিরাম তার কাছে প্রশ্ন করতে ভয় পেলেন। (রাবী বলেন) তারপর একজন লোক এলেন এবং তাঁর কাছে বসে বললেনঃ------------------------------------------------------------- হে আল্লাহর রাসুল! ইহসান কী? রাসুল (সাঃ) বললেনঃ আল্লাহকে এমনভাবে ভয় করবে, যেন তাঁকে দেখছ, যদি তাকে নাও দেখ; তাহলে ধারণা করবে যে তোমাকে দেখছেন। আগন্তুক বললেন, আপনি যথার্থ বলেছেন। --------------------------------------------------------------- তারপর আগন্তুক উঠে চলে গেলেন। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) সাহাবীদের বললেনঃ তাঁকে আমার কাছে ফিরিয়ে আন। তাঁকে তালাশ করা হলো, কিন্তু তাঁকে পাওয়া গেল না। তারপর রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বললেনঃ ইনি জিবরাঈল (আঃ) তোমরা প্রশ্ন না করায়, তিনি চাইলেন যেন তোমরা দীন সমন্ধে জ্ঞান লাভ কর। (হাদিছের অংশ বিশেষ)
ঈমান/ইসলামচ্যুত বা ভঙ্গ বা কাফির হওয়ার অন্যতম ১০টি কারণঃ
স্কলাররা ধর্মত্যাগের ব্যাপারে আলোচনা করতে গিয়ে বলেন, একজন মুসলিম ইসলাম থেকে বিচ্যুত হয় এমন কোন কাজ করলে যা ইসলামবিরোধী। ইসলামকে অকার্যকর করে দেয় এমন কোন কাজ একজন ব্যাক্তিকে ইসলামের সীমা থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। (ইসলামের সত্যতার অকাট্য প্রমাণ উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও এবং তাকে পুন:পুন: স্পষ্টভাবে বুঝানো সত্যেও) একজন ব্যক্তি যদি ইসলামচ্যুত তথা মূর্তাদ হয়ে যায় তবে ইসলামী রাষ্ট্রের অধীনে তার শাস্তি হল মৃত্যুদ্ন্ড এবং তার সম্পদ সিজ করে নেয়া । এর মধ্যে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ এবং কমন বিষয় হল দশটি যা মুহামাদ্দ বিন সুলেয়মান আত-তামীমীর লেখা বই নাওয়াক্বিদুল ইসলামে উল্লেখ করা হয়েছে ও অন্যান্য স্কলার দ্বারা বর্ণিত হয়েছে। এখানে সংক্ষিপ্তভাবে এ বিষয় গুলো পেশ করা হল এই আশায় যে আপনারা ইসলামচ্যুতির ভয় থেকে নিরাপদ থাকতে পারবেন।
শাইখ আব্দুল আজীজ ইবন আবদুল্লাহ ইবনে বা’য (রহ) বলেন: আল্লাহ সকল মানুষকে ইসলামে প্রবেশ করে এর সাথে লেগে থাকতে বলেছেন এবং ইসলামের বিপরীত যে কোন কিছু থেকে সতর্ক থাকতে বলেছেন। তিনি তার নবী মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে পাঠিয়েছেন মানুষকে ইসলামের পথে ডাকার জন্য। তিনি বলেন যে যারা নবীর অণুসরন করবে তারা সুপথ প্রাপ্ত হবে এবং যারা তার থেকে দূরে সরে যাবে তারা বিপথগামী হবে। কোরআনের বহু আয়াতে তিনি ধর্মত্যাগের ব্যাপারে সতর্ক করে দিয়েছেন এবং সতর্ক করেছেন সকল প্রকার শির্ক ও কুফরি থেকে।
১- শিরক তথা আল্লাহর সাথে তাঁর ইবাদাতে অন্য কাউকে অংশীদার বানানো।
“নিশ্চয় আল্লাহ তাকে ক্ষমা করেন না, যে তাঁর সাথে কাউকে শরীক করে। এছাড়া যাকে ইচ্ছা, ক্ষমা করেন। যে আল্লাহর সাথে শরীক করে সে সুদূর ভ্রান্তিতে পতিত হয়”। (আন-নিসা’ ৪:১১৬)
“নিশ্চয় যে ব্যক্তি আল্লাহর সাথে অংশীদার স্থির করে, আল্লাহ তার জন্যে জান্নাত হারাম করে দেন। এবং তার বাসস্থান হয় জাহান্নাম। অত্যাচারীদের কোন সাহায্যকারী নেই”। (মা’য়িদাহ ৫: ৭২)
এর মধ্যে আছে মৃতদের কাছে, জ্বীনদের কাছে বা কবরে প্রার্থনা করা, তাদের সাহায্য খোজা, তাদেরকে উদ্দেশ্য করে মানত করা ও কোরবানী করা।
২- যারা আল্লাহ ও তার মধ্যে যোগাযোগের মধ্যস্থতাকারী (intermediary) রুপে কাউকে বা কোন জিনিসকে বেছে নেয়, তাদেরকে যোগাযোগের মাধ্যম হতে বলে এবং তাদের উপরেই তার আস্থা স্থাপন করে (অর্থাৎ সরাসরি আল্লাহর কাছে চায় না এবং নিজের ঐকান্তিকতার উপর আস্থা স্হাপন করে না) তাদের ব্যাপারে আলেমদের ঐক্যমত হল এই যে, এরা কাফের।
৩- যারা অংশীদারস্থাপনকারীদের (মুশরিকুন) অস্বীকারকারী (কাফির) মনে করে না, অথবা তাদের কুফরী সন্মন্ধে সন্দেহ পোষন করে অথবা তাদের পদ্ধতিকেও সঠিক মনে করে তারা কাফির।
৪- যারা মনে করে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর প্রশিক্ষন ছাড়া অন্য কিছু বেশী পূর্নাঙ্গ, অথবা তাঁর নিয়মকানুনের চেয়ে অন্য কোন নিয়মকানুন উত্তম - তারা কাফির।
৫- যারা নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আনীত বিধানের কোন একটি অংশকে ঘৃণা করে, যদিও বা বাধ্য হয়ে সে তা পালন করছে, সে কাফির। কেননা আল্লাহ বলেন:
“এটা এজন্যে যে, আল্লাহ যা নাযিল করেছেন, তারা তা পছন্দ করে না। অতএব, আল্লাহ তাদের কর্ম ব্যর্থ করে দিবেন” (মুহাম্মাদ ৪৭: ৯)
৬- নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) প্রচারিত ধর্মের যে কোন বিষয় নিয়ে কেউ যদি মজা করে, অথবা পুরস্কার ও শাস্তি সম্পর্কিত যে কোন বক্তব্য নিয়ে টিটকারী দেয় বা দুষ্টুমি করে, সে কাফির।
এর প্রমাণ হল নিচের আয়াতটি:
“আর যদি তুমি তাদের কাছে জিজ্ঞেস কর, তবে তারা বলবে, আমরা তো কথার কথা বলছিলাম এবং কৌতুক করছিলাম। আপনি বলুন, তোমরা কি আল্লাহর সাথে, তাঁর হুকুম আহকামের সাথে এবং তাঁর রসূলের সাথে ঠাট্টা করছিলে? ছলনা কর না, তোমরা যে কাফের হয়ে গেছ ঈমান প্রকাশ করার পর। তোমাদের মধ্যে কোন কোন লোককে যদি আমি ক্ষমা করে দেইও, তবে অবশ্য কিছু লোককে আযাবও দেব। কারণ, তারা ছিল গোনাহগার” (আত তাওবাহ ৯:৬৫-৬৬)
৭- যাদুবিদ্যা – একজন ব্যক্তিকে আরেকজনের বিরুদ্ধে লাগিয়ে দেয়ার জন্য বা একজন ব্যক্তির সাথে অন্য ব্যক্তির ভালোবাসা সৃষ্টির জন্য যাদু করা এর মধ্যে অন্তর্ভূক্ত। যে ব্যক্তি এগুলো করবে বা এগুলোর সমর্থন করবে সে কাফির। কেননা:
“তারা ঐ শাস্ত্রের অনুসরণ করল, যা সুলায়মানের রাজত্ব কালে শয়তানরা আবৃত্তি করত। সুলায়মান কুফর করেনি; শয়তানরাই কুফর করেছিল। তারা মানুষকে জাদুবিদ্যা এবং বাবেল শহরে হারুত ও মারুত দুই ফেরেশতার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছিল, তা শিক্ষা দিত। তারা উভয়ই একথা না বলে কাউকে শিক্ষা দিত না যে, আমরা পরীক্ষার জন্য; কাজেই তুমি কাফের হয়ো না”। (বাকারাহ ২: ১০২)
৮- মুশরিকদের সমর্থন দেয়া এবং মুসলিমদের বিরুদ্ধে তাদেরকে সহযোগিতা করা।
এর প্রমাণ হল এ আয়াতটি যেখানে আল্লাহ বলেন: “হে মুমিণগণ! তোমরা ইহুদী ও খ্রীষ্টানদেরকে বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করো না। তারা একে অপরের বন্ধু। তোমাদের মধ্যে যে তাদের সাথে বন্ধুত্ব করবে, সে তাদেরই অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ জালেমদেরকে পথ প্রদর্শন করেন না” (মা’য়িদাহ ৫:৫১)
৯- যারা বিশ্বাস করে যে কিছু ব্যক্তিদের মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর আইনের বাইরে কাজ করার অনুমতি আছে যেমন অনুমতি ছিল মুসা (আ) এর আইনের বাইরে খিযির (আ) এর কাজ করার, তারা কাফির। কেননা আল্লাহ বলেন: “যে লোক ইসলাম ছাড়া অন্য কোন ধর্ম তালাশ করে, কস্মিণকালেও তা গ্রহণ করা হবে না এবং আখেরাতে সে ক্ষতি গ্রস্ত” । (ইমরান ৩: ৮৫)
১০- আল্লাহর মনোনীত ধর্ম থেকে দূরে সরে যাওয়া বা মুখ ফিরিয়ে নেয়া, এটাকে না শেখা এবং এর অনুসারে জীবন যাপন না করা। এর প্রমান হল: “যে ব্যক্তিকে তার পালনকর্তার আয়াতসমূহ দ্বারা উপদেশ দান করা হয়, অতঃপর সে তা থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, তার চেয়ে যালেম আর কে? আমি অপরাধীদেরকে শাস্তি দেব” (সেজদাহ ৩২:২২)
এ সকল কর্মকান্ড একজন ব্যক্তির জীবনে ইসলামকে অকার্যকর করে দেয় তা সে কৌতুক করেই থাকুক বা নিষ্ঠাবান হয়েই করুক বা হোক সে ধর্মভীরু। যদি তাকে বাধ্য না করা হয়ে থাকে সে ইসলাম থেকে খারিজ হয়ে যাবে। উপরের প্রত্যেকটি অত্যন্ত সাঙ্ঘাতিক এবং এ ধরণের ঘটনা অনেক হয়ে থাকে। মুসলিমদের এ ব্যাপারে সচেতন থাকা এবং এই অপরাধগুলোর মধ্যে জড়িয়ে পড়ার ভয়ে ভীত থাকা উচিৎ। আল্লাহর কাছে আমরা এ বিষয়গুলো থেকে নিরাপদে থাকার জন্য সাহায্য প্রার্থনা করি এবং সাহায্য প্রার্থনা করি তার ক্রোধ ও কঠিন শাস্তি থেকে। মুহাম্মদ (সা) ও তার পরিবারের উপর এবং তার সহযোগীদের উপর আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক।
তথ্যসূত্র: http://www.islam-qa.com/en/ref/31807
-----------------------------------------------------
এছাড়া আরো দেখুন
--------------
১ম অংশ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত ও বাতিল ফিরকাহ পরিচিতি মুরজিয়া, খাওয়ারিজ, জাহমীয়াহ, মুতাযিলা
২য় অংশ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাত ও বাতিল ফিরকাহ পরিচিতি (মুরজিয়া, খাওয়ারিজ, জাহমীয়াহ, মুতাযিলা)
দশটি ঈমান ভঙ্গকারি (নাওয়াকিদুল ঈমান/ইসলাম) বিষয় - ভৈরব প্রোগ্রাম (বুধবার, ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১১)
https://www.youtube.com/watch?v=swzH...ri1fKy&index=3
Comment