আমাদের জন্য অন্ধভক্তি এবং অন্ধ বিদ্বেষ থেকে বাঁচার কৌশলী উপায়:
ফেতনায় জরাজীর্ণ এই সমাজে আল্লাহর তৌফিকে আমরা যারা জিহাদের প্রয়োজনীয়তা এবং তাওহীদের মর্ম বুঝতে পেরেছি এবং যারা বুঝতে পারে নাই—সবারই বিভিন্ন রকম সীমাবদ্ধতা রয়েছে দ্বীনের মেহনত করার ক্ষেত্রে। আমরা আমাদের সত্য বিচ্যুত বড়দের জামাতের বিভিন্ন রকম সমালোচনা করে থাকি। মানুষকে গোমরাহী থেকে বাঁচানোর জন্য নিশ্চয়ই এর প্রয়োজন রয়েছে।
মাঝখানে একটা কথা বলে নেই। অনেক সময় সমালোচনা করতে গিয়ে বড়দেরকে যে গালিগালাজ করা হয়ে থাকে, সে গালিগালাজের দায় অন্ধভক্তদের উপরও বর্তায়। অকারণে গালিগালাজ আমি কখনোই পছন্দ করিনা। একটা মানুষের জাগতিক সম্মানকে মূল্যায়ন করা অবশ্যই শালীনতার শামিল। তারপরও মাঝে মাঝে গালিগালাজ করা হয়ে যায় অন্ধ ভক্তদের কারণে। প্রথমে যখন শালীন ভাষায় কোন জামাতের গোমরাহীর বিভিন্ন দিক তুলে ধরা হয়, তখন অন্ধ ভক্তরা বলে ওঠে—"তারা এত বড় বড় আলেম তারা কি কম বুঝেন?" ব্যাস…তখনই মুখে এসে যায়, "তারাতো পথভ্রষ্ট গোমরা"।
আরেকটা বিষয় হচ্ছে, একেকটা ঘরানা নিজেরাই একমাত্র আহলে হক হওয়ার যে দাবি করে, তার হয়তো চার পয়সা মূল্য আল্লাহর কাছে নেই। কওমি ঘরানার লোকেরা আহলে হাদিসদের কারো থেকে তাওহীদের বিষয়ে সামান্য পান থেকে চুন খসলে যেভাবে অ্যাটাক করেন, নিজেদের ঘরানার কেউ একই কাজ করলে কিংবা তার চাইতে জঘন্য কাজ করলে সে ভাবে অ্যাটাক করেন না বা করার সাহস পান না। একই কথা অন্যান্য ঘরানার ক্ষেত্রেও। নিজ ঘরানার প্রতি একটা আলাদা টান কেন জানি অধিকাংশই কাটিয়ে উঠতে পারে না। ব্যতিক্রম অবশ্যই রয়েছে।
তো বলছিলাম, এভাবেই অভ্যন্তরীণ কোন্দল এবং মুসলমানদের মাঝে পারস্পরিক কাঁদা ছোড়াছুড়ি ও রেষারেষির পথ দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। ফলে পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। জনসাধারণ বিভ্রান্ত হচ্ছে। দাওয়াতের ক্ষেত্র সঙ্কুচিত হচ্ছে। এগুলো অবশ্যই দুঃখজনক।
প্রায়ই দেখা যায়, মূল বিষয় বাদ দিয়ে এমন এমন বিষয় তুলে এনে বিভিন্ন জনের সমালোচনা করা হচ্ছে, যা সমালোচনার কোন কারণ হতেই পারে না। শেষমেষ দেখা যাচ্ছে, আমার অনুসরণীয় কারো থেকেই সেই কারণটা প্রকাশ পাচ্ছে। তখন প্রতিপক্ষের কাছে আমাকে লজ্জিত হতে হচ্ছে।
তো আসলে এসব থেকে উত্তরণের কি উপায়?
অনেকদিন থেকে মাথায় একটা চিন্তা ঘুরছিল। আমি সেটা খুব একটা সাজাতে পারিনি। তবে চিন্তাটুকু সবার সঙ্গে শেয়ার করা সমীচীন মনে হল।
এই যে আমরা যারা তানজিমের কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়েছি, আমরা সবাই কি সবকিছু প্রকাশ্যে করছি? নিশ্চয়ই না। কারণ হলো, পারিপার্শ্বিক সীমাবদ্ধতা। তো এই সীমাবদ্ধতা সব দলেরই রয়েছে। তাহলে কি তাদের গোমরাহীর কথা মানুষকে তুলে ধরা আমরা বন্ধ করে দেবো? কখনোই নয়। বরং মানুষকে সচেতন করার জন্য কাজ অবশ্যই চালিয়ে যেতে হবে। কিন্তু সেটা করতে গিয়ে আমাদের আচরণ উচ্চারণ কেমন হবে? এটা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ একটা প্রশ্ন।
তো যে বিষয়টা সামনে রেখে আমরা একজনের সমালোচনা করবো, তা হল—আমাদেরকে ধরে নিতে হবে, আমার সমালোচনার পাত্র যে ব্যক্তি, তিনি অবশ্যই গোপন কোন কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত। তিনি মনে মনে মুজাহিদদেরকে ভালবাসেন এবং তাদের জন্য বিভিন্ন রকম কাজ করেন। কিন্তু সেটা তারা গোপনে করেন।
এটা যখন ধরে নিলাম, এখন তিনি যে ঘরানারই হন না কেন আমাদের মনে তাঁর প্রতি একটা সহানুভূতি জন্মাবে। আর এই সহানুভূতিটাই হচ্ছে ইসলামের সীসাঢালা ভ্রাতৃত্ব।
এ অবস্থায় সকল মুসলমান আমার কাছে সমান হয়ে গেল। এবার সমালোচনার পালা। এখন ওই ব্যক্তির প্রকাশ্য কার্যকলাপের মধ্যে যেটা কুফরি, সেটাকে অবশ্যই কুফরি বলে প্রচার করতে হবে। যেটা গোমরাহী সেটা অবশ্যই গোমরাহী বলে প্রচার করতে হবে। কিন্তু সেই প্রচারকার্য সম্পাদন করতে গিয়ে এই অবস্থায় আমার দ্বারা এমন আচরণ উচ্চারণ প্রকাশ পাবে না যা তার ভক্তকূলকে অন্যায়ভাবে আঘাত করতে পারে। আর এমনটা ধরে নেয়াতে আমরা নিজেরাও যাদের অনুসরণের দাবী করে থাকি, তারাও যেহেতু ফেতনা থেকে মুক্ত নন জীবিত থাকা পর্যন্ত, তাই কখনো তাদের থেকে কোনো বিচ্যুতি ঘটে গেলে সেটা বর্জন করতেও আমাদের বাঁধবে না।
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি দেখতে পাচ্ছি, রজব তাইয়্যেব এরদোগানের সিরিয়া সংক্রান্ত সিদ্ধান্তের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করার কারণে অনেকেই অনেকের প্রতি অপবাদ ছুঁড়ে দিচ্ছে।
আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, এদেশীয় দাওলা সমর্থকদের সঙ্গে আমাদের আচরণ কি হবে?
কোন সন্দেহ নেই দাওলার অপরাধের ফিরিস্তি অনেক দীর্ঘ। কিন্তু তাই বলে তাদের সবকিছুই কি অপরাধ? তাদের শরীয়ত সম্মত কোন কাজের সমর্থন করা হলে একজন কি খারিজি হয়ে যাবে?এত সামান্য কারণে মুসলিম ভ্রাতৃত্বের বন্ধন আমরা ছিন্ন করতে পারিনা। আমাদের তাঞ্জিম নিশ্চয়ই এই শিক্ষা আমাদেরকে দেয়নি।
এ বিষয়ে সংক্ষেপে দুটো কথা বলি। প্রথমত, খারিজীরা দলগতভাবে কাফের হওয়ার পক্ষে আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামাআতের সর্বসম্মত বক্তব্য নেই। দ্বিতীয়তঃ বাংলাদেশে যারা সমর্থক রয়েছেন, তারা খারেজীদের খারিজি কার্যকলাপের সঙ্গে একমত, এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই। হতে পারে কিছু কিছু কাজের প্রতি সমর্থন রয়েছে। কিন্তু সেসব কারণে তারাও খারিজি হয়ে যাবে এমনটা নয়।
এ দুটো বিষয় সামনে রেখে দাওলার একজন এদেশীয় সমর্থককে তাগুতদের হাতে ধরিয়ে দেয়া—অন্যদের কথা বলতে পারবোনা—আমি নিজের জন্য কুফরি মনে করি। উপরন্তু তা যদি হয় তাওহীদের কথা বলার কারণে। আল্লাহ আমাকে হেফাজত করুন!
একই কথা অন্যান্য ইসলামী দলগুলোর ক্ষেত্রেও। যদিও সেগুলো পথভ্রষ্ট কিন্তু জামাতে ইসলামী, চরমোনাই ইত্যাদি দলগুলোর নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে তাগুত গোষ্ঠীকে সাহায্য করা আমি আমার ঈমানের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ মনে করি।
অনেকগুলো অগোছালো কথা বললাম। তাহকীক করে কোন ভুলত্রুটি পেলে ধরিয়ে দেয়ার অনুরোধ রইল। এটা তেমন তাত্ত্বিক আলোচনা না; জাস্ট কিছু চিন্তা শেয়ার করা, তাই প্রতি কথার সঙ্গে রেফারেন্স দেয়ার প্রয়োজন অনুভব করলাম না। কারো কোনো বিষয়ে সংশয় পূর্ণ মনে হলে তাহকীক করে জানাবেন ইনশাআল্লাহ!
Comment