আলহামদুলিল্লাহ ওয়াস সলাতু ওয়াস সালামু আলা রসুলিল্লাহ
আম্মা বাদ!
و إنما نبلوکم بالشر والخیر فتنة و إلینا ترجعون
صدق الله العظیم
অনেক দ্বিধা-সংকোচ নিয়ে পোস্টটা লিখতে বসেছি।
আর দ্বিধা-সংকোচের কারণটা হল -যেহেতু আলহামদুলিল্লাহ এ বিষয়ে বড়রা আমাদের রাহনুমায়ী করেছেন, অনেক ভাইই কথা বলছেন এবং আলহামদুলিল্লাহ আমরা যথেষ্ট পরিমাণ পাথেয় ও দিকনির্দেশনা পেয়েছি তাই আদৌ আমাদের কথা বলার প্রয়োজন আছে কি না তা নিয়ে।তারপরো আসলে আমরা ভাইদের নির্দেশনা থেকে কি বুঝলাম,সে আলোকে কি ভাবলাম সেটা হয়তো শেয়ার করা যায়-আল্লাহর উপর ভরসা করে তাই লিখতে বসলাম, আল্লাহ যেন কবুল করেন ও বারাকাহ দান করেন, এবং এর মাঝে মন্দ অকল্যান যা থাকবে তা থেকে সবাইকে হেফাজত করেন।আমীন।
করোনা ভাইরাস আমাদের জন্য আল্লাহ তাবারকা ওয়া তায়ালার পক্ষ থেকে একটা সতর্কবার্তা এবং পরীক্ষা।
এটা আমাদের জন্য একটা বহুমাত্রিক পরীক্ষা এবং এই পরীক্ষার ভয়াবহতা, বার্তা এবং বহুমাত্রিকতা অনুধাবন করা খুব জরুরী।কারণ, একটা পরীক্ষায় কি কি সাবজেক্ট আছে-এটা না জানলে কোনো সাবজেক্ট মিস হয়ে যেতে পারে আর ফেইল করা লাগতে পারে।
একদিকে যেমন আমাদের ব্যাক্তিগত জীবনের দিকে নজর দেওয়া দরকার, পুরনো দিনের জীবনটাকে রিভিউ এবং রিভিশন করে দেখা দরকার, প্রয়োজন অনুযায়ী কারেকশন, নতুন করে প্রিপারেশন নেওয়া দরকার,
তেমনি এটা আমাদের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সংগঠনিক জীবনের জন্যও অনেক নতুন নতুন পরীক্ষার ক্ষেত্র তৈরী করে দিয়েছে।
ব্যাক্তিগত জীবনে ইবাদতে অনেক সময়ই রুহ থাকেনা, এখন এই বিপদের সময়ও কি তেমনই থেকে যাবে? অন্তঃসারশূন্য সলাত দিয়েই কি আমরা আল্লাহর কাছে বিপদ থেকে মুক্তি চাইবো?
অন্য সময়ে তাহাজ্জুদ পড়তে পারিনা,আফসোস হয় এখনও কেন পারিনা।এই কঠিন মুহূর্তে সমস্ত গুনাহ কি ছেড়ে দিয়েছি এবং সবসময়ের জন্য ছেড়ে দিয়েছি?
আমার আমল তানজিমের উপরও কি প্রভাব ফেলছে না? একটা জামাআর সদস্যদের ব্যাক্তিগত আমল যে জামাআর উপর প্রভাব ফেলে, পরোক্ষ এবং প্রত্যক্ষ প্রভাব,জাহেরী এবং বাতেনী প্রভাব তা তো প্রমাণিত।
আমার কারণে জামাআর ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে না তো?
আমাদের এই সময়ে আল্লাহর তাবারকা ওয়া তায়ালার দিকে রুজু করার ও ফিরে যাবার একটা বিশেষ কাইফিয়্যত থাকার কথা।পবিত্র কুরআনুল কারীমে যাকে ব্যাক্ত করা হয়েছে تضرع বলে।
فلولا إذ جاءهم بأسنا تضرعوا ....
সূর্যগ্রহণ চন্দ্রগ্রহণের সময় রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাইফিয়্যত কেমন হতো? কেমন ছিল বদর যুদ্ধের সময় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের তাদররু ও রোনাজারী..
আমি কি চেষ্টা করছি কান্নাকাটি করতে, ইস্তেগফার করতে,ভীত হতে, অনুতপ্ত হতে নাকি আগের মতোই প্রতিদিন আল্লাহর কাছে দোয়া করার যে আমল সোটাও ভুলে যাচ্ছি বা সময় হচ্ছে না...ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন....اللهم إنی أعوذ بک من شر نفسی....
و أن أقترف علی نفسی سوءا أو أجره إلی مسلم...
পরীক্ষার একটা গুরুত্বপূর্ণ সাবজেক্ট হল-এখন অসহায় আল্লাহর বান্দাদের পাশে দাঁড়ানো।সবার জন্য পরীক্ষার সব সাবজেক্টের গুরুত্ব সময়ান থাকেনা।একেক কারণে একেকটা বিষয় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠতে পারে।ধরুন একজন উচ্চমাধ্যমিকে সায়েন্স নিয়ে পড়বে, মাধ্যমিকে তার ম্যাথ আর বিজ্ঞান পরীক্ষার মার্ক ইম্পর্টেন্ট একটা বিষয়।
করোনাভাইরাস সৃষ্ট পরীক্ষার এই সাবজেক্টটা আমাদের জন্য মুমিন হিসেবে, সকল মুমিন একটি দেহের অংশ হিসেবে এমনিতেই ইম্পর্টেন্ট-কিন্তু একজন মুজাহিদ হিসেবে একজন বিপ্লবী হিসেবে ব্যাপারটার গুরুত্ব আরো বহুগুণ বেড়ে গেছে।আমরা যারা খিলাফাহ প্রতিষ্ঠা করতে চাই পুরো উম্মাহর কল্যাণের জন্য, আমরা যারা সেই জামাআর সদস্য হিসেবে নিজেদের ভাবি-যারা আজিল্লাতিন আলাল মুমিনিন, আইজ্জাতিন আলাল কাফিরিন-আমাদের জানতে হবে এই মুমিনদের প্রতি কোমল কাফেরদের প্রতি কঠোর ইসলামের আর সব বিধানের মতোই আমলের বিষয়, শুধুই নিষ্ক্রিয় চেতনার নাম না।ওয়ালা-বারার বিশাল বিস্তৃত বহুমাত্রিক ক্ষেত্রে এর প্রকাশ ও প্রয়োগ ঘটে।
এখন এই পরিস্হিতিতে দেশের একটা বিশাল জনগোষ্ঠি বড় রকমের সমস্যায় আছে।শুধু গার্মেন্ট আর পরিবহণ শ্রমিকরাই কোটির মতো,এরা কিন্তু কাজ করে খায়, হাত পেতে অভ্যস্ত না।লকডাওন বাড়লে এরা ভয়াবহ পরিস্হিতির সম্মুখীন হবে।
আমাদের সঠিক কাজটা হবে যদি আমরা অসহায়দের সম্মান বজায় রেখে তাদের জন্য কিছু করতে পারি।
আমাদের বন্দী ও মাজলুম ভাই যারা আছেন তাদের দিকে আমাদের খেয়াল করতে হবে,আমরা যারা বুঝি আমরা যেন এ খাতে সাদাকা করি।আর সমাজের বহু মানুষের সাথে বহু আত্নীয়র সাথে আমরা সম্পৃক্ত-যারা এই বিষয়টা বুঝেনা।
কিন্তু তাদের অনেকেই আছে এখন দরিদ্র মানুষদেরকে সহয়তা করতে চায় বা উৎসাহ দিলে করবে কিন্তু অর্গানাইজ করার জন্য কেউ নেই।তাদের সবাইকে নিয়ে আমজনতার পাশে দাঁড়ানো যায়। আমরা সকলেই নিজ নিজ বিত্তবান আত্নীয় এবং সমাজের সক্ষম মানুষদেরকে নিয়ে উদ্যোগ নিতে পারি।আমাদের অনেক অভিভাবক আছেন যারা দুর্যোগ প্রস্তুতি হিসেবে যথেষ্ট পরিমাণ অর্থ ও খাদ্য রেখে দিয়েছেন,কেউ কেউ প্রয়োজনের বেশি।আসুন তাদেরকে প্রতিবেশির সাথে শেয়ার করতে উৎসাহিত করি।হাদীসের কথা স্মরণ করিয়ে দেই।
এটা কি আমাদের তানজিমি ব্যানারে এখন করা সম্ভব?
উত্তর হচ্ছে - না।
তা হলে কি ব্যাক্তিগতভাবেও আমরা করবো না?
উত্তর হলো-অবশ্যই করতে হবে।
যদি আসলেই মুমিন ভাইদের এই কষ্ট দেখে আমাদের হৃদয় বেদনার্ত না হয় তাহলে নিজেকে নিয়ে আরো ফিকির করতে হবে,আমি সত্যিই তায়েফায়ে মানসুরার চেতনায় উজ্জীবিত কি না।
যদি ব্যাক্তি উদ্যোগে করি তাহলে কি তানজিমের লাভ আছে?
উত্তর হল-যদি শরীয়ার মানশা এটা হয় তাহলে তানজিমের লাভ না থাকলেও করতে হবে, কিন্তু মনে রাখতে হবে এটা ব্যাক্তিগত উদ্যোগে করলেও তানজিমের অবশ্যই লাভ আছে।এমনকি আমি ব্যাক্তিগত নফল আদায় করলেও অথবা খুব গোপনে ব্যাক্তিগত গুনাহ করলেও আমার নেক আমল আল্লাহর ইচ্ছায় ভালো প্রভাব ফেলতে পারে আর বদ আমল তানজিমের উপরও খারাপ প্রভাব সৃষ্টি করবে।
আমরা মানুষের একটু পাশে দাঁড়িয়ে যদি তাদের কে এই বিপদের মন নরম করা মুহূর্তে তাওহিদের কথা শোনাই,মুমিনদের জন্য বিপদের পুরষ্কারের আশ্বাসবাণী শোনাই,সান্ত্বনা ও অভয়ের বাণী শোনাই, তাওবা ও সতর্কতবাণী শেনাই আল্লাহর ইচ্ছায় তা দাওয়ার ময়দানে অত্যাধিক প্রভাব ফেলতে পারে।
ইউসুফ আলাইহিস সালামের সীরাতে নিশ্চয় আমাদের জন্য শিক্ষা রয়েছে-দুর্ভিক্ষের মূহুর্তে তাঁর পদক্ষেপগুলোতে দ্বীন কায়েমের কাফেলার প্রতিটি ভাইয়ের জন্য আদর্শ রয়েছে।
ম্যানেজমেন্ট অভ স্যাভেজারী বা বিপ্লবের রূপরেখার মতো কালজয়ী বইগুলো বইয়ের থিওরীগুলো তখনই সফল হবে যখন আমরা থিওরীকে বাস্তবে প্রতিফলন করতে শিখবো,অনুশীলন করার চেষ্টা করবো।আল্লাহ না করুন, যদি আমরা এতটাই "ব্যাস্ত" থাকি যে শায়খরা লিখছেন, ভাইয়েরা দিচ্ছেন,কিন্তু আমরা পড়ারও সময় পাচ্ছি না..ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।
শিক্ষিত শ্রেণীকে পুজিবাদের নগ্ন বিভৎস চিত্র চোখে আঙুল দিয়ে দেখানোর সময়টা এখনই, আর আমজনতাকে তাত্ত্বিক কথাবার্তা বোঝানো না গেলেও; বাস্তবতা এবং বর্তমান সরকার ও (মানবরচিত) সরকারব্যাবস্হার ভয়াবহ ব্যার্থতা সহজ ভাষায় বোঝানো সম্ভব।
এটাও বিপ্লবীদের জন্য একটা পরীক্ষার ক্ষেত্র তৈরী করেছে,যখন পুজিবাদ মানুষকে এই ভয়াবহ বিপদে ফেলল, কোটির কাছাকাছি মানুষ এবং বিশ্বব্যাপী আরো বেশি মানুষ এই যে মহাবিপর্যয়ে পড়ল,এরপরও সরকার প্যাকেজ দিচ্ছে পুজিবাদীদের জন্য,মানুষের খাদ্য সরবরাহের জন্য না!!!, আইএমএফ, এডিবি চড়া সুদে ঋণ দেওয়ার একটা সুযোগ পেয়ে মহাখুশিতে বগল বাজাচ্ছে - আমরা কি শিক্ষিত ও আপামর শ্রেণীর কাছে এখন ইসলামের সৌন্দর্য আর সেকুলারিজম গণতন্ত্র পুজিবাদের অসারতা শিক্ষিত ও আপামর মানুষের সামনে তুলে ধরতে পারবো?
ইলম এবং দাওয়ার ক্ষেত্রে এটাও একটা পরীক্ষাক্ষেত্র।
উপরন্তু, একজন বিপ্লবী তার নিজস্ব সমাজে আগন্তক কেউ নন,অপরিচিত কেউ নন, উম্মাহ থেকে জনবিচ্ছিন্ন কেউ নন।(বিশেষ সেক্টরের বিশেষ ভইদের কথা ভিন্ন) বরং তিনি উম্মার সুখে সুখে সুখী, উম্মাহর ব্যাথায় বেদনার্ত, আর ১০ জন থেকে তাকে যেটা আলাদা করে তা হচ্ছে-সবাই যখন হা হুতাশ করে তখন তিনি উদ্যোগ নেন,কাজ করেন,উম্মাহর পাশে দাঁড়ান,দাওয়ার প্রতিটি সুযোগকে কাজে লাগান।আবারে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি-لقد کان فی یوسف و إخوته أیات للساٸلین......
আসলে অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর অাহ্বান ইতিমধ্যেই শায়খ তামিম আল আদনানী হাফিজাহুল্লাহ আমাদের সবাইকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন।এ জন্য আমি এত দীর্ঘ পোস্ট দিতে ভীষন সংকোচবোধ করছি-তবু দিলাম-কারণ আম আহ্বান আর সুনির্দিষ্ট কথাবার্তার কিছু পার্থক্য আছে।শায়খের চ্যানেলের কোনো আহ্বানের ব্যাপারে আমরা এমন মনে না করি-যে এটা জনগণের জন্য,আমাদের জন্য না।
এবং যেন না ভাবি যে রিসেন্ট একটা ইস্যু এসেছে বলে শায়খ সেটাকে আলোচনায় এনেছেন-মাআাজাল্লাহ,এমনটা কখনোই না।
লকডাওনের সময়টা কিভাবে আমরা কাটাবো সেটাও একটা গুরুত্বপূর্ণ টপিক,ইতিমধ্যেই আমরা দিকনির্দেশনা পেয়ে গেছি আলহামদুলিল্লাহ।সে অনুযায়ী আমল করি, আর এ সময়ের মধ্যে শায়খদের অসাধারণ যেসব বই আছে -সেগুলোকে ফোরামে অনুবাদ, রিভিউ ও আলোচনায় নিয়ে আসার আহ্বান করছি।
আল্লাহ আমাকে এবং সকল ভাইকে তাঁর পছন্দনীয় নিয়ত, কথা,কাজ এবং আমলের তাওফিক দান করুন।আমীন।
আম্মা বাদ!
و إنما نبلوکم بالشر والخیر فتنة و إلینا ترجعون
صدق الله العظیم
অনেক দ্বিধা-সংকোচ নিয়ে পোস্টটা লিখতে বসেছি।
আর দ্বিধা-সংকোচের কারণটা হল -যেহেতু আলহামদুলিল্লাহ এ বিষয়ে বড়রা আমাদের রাহনুমায়ী করেছেন, অনেক ভাইই কথা বলছেন এবং আলহামদুলিল্লাহ আমরা যথেষ্ট পরিমাণ পাথেয় ও দিকনির্দেশনা পেয়েছি তাই আদৌ আমাদের কথা বলার প্রয়োজন আছে কি না তা নিয়ে।তারপরো আসলে আমরা ভাইদের নির্দেশনা থেকে কি বুঝলাম,সে আলোকে কি ভাবলাম সেটা হয়তো শেয়ার করা যায়-আল্লাহর উপর ভরসা করে তাই লিখতে বসলাম, আল্লাহ যেন কবুল করেন ও বারাকাহ দান করেন, এবং এর মাঝে মন্দ অকল্যান যা থাকবে তা থেকে সবাইকে হেফাজত করেন।আমীন।
করোনা ভাইরাস আমাদের জন্য আল্লাহ তাবারকা ওয়া তায়ালার পক্ষ থেকে একটা সতর্কবার্তা এবং পরীক্ষা।
এটা আমাদের জন্য একটা বহুমাত্রিক পরীক্ষা এবং এই পরীক্ষার ভয়াবহতা, বার্তা এবং বহুমাত্রিকতা অনুধাবন করা খুব জরুরী।কারণ, একটা পরীক্ষায় কি কি সাবজেক্ট আছে-এটা না জানলে কোনো সাবজেক্ট মিস হয়ে যেতে পারে আর ফেইল করা লাগতে পারে।
একদিকে যেমন আমাদের ব্যাক্তিগত জীবনের দিকে নজর দেওয়া দরকার, পুরনো দিনের জীবনটাকে রিভিউ এবং রিভিশন করে দেখা দরকার, প্রয়োজন অনুযায়ী কারেকশন, নতুন করে প্রিপারেশন নেওয়া দরকার,
তেমনি এটা আমাদের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সংগঠনিক জীবনের জন্যও অনেক নতুন নতুন পরীক্ষার ক্ষেত্র তৈরী করে দিয়েছে।
ব্যাক্তিগত জীবনে ইবাদতে অনেক সময়ই রুহ থাকেনা, এখন এই বিপদের সময়ও কি তেমনই থেকে যাবে? অন্তঃসারশূন্য সলাত দিয়েই কি আমরা আল্লাহর কাছে বিপদ থেকে মুক্তি চাইবো?
অন্য সময়ে তাহাজ্জুদ পড়তে পারিনা,আফসোস হয় এখনও কেন পারিনা।এই কঠিন মুহূর্তে সমস্ত গুনাহ কি ছেড়ে দিয়েছি এবং সবসময়ের জন্য ছেড়ে দিয়েছি?
আমার আমল তানজিমের উপরও কি প্রভাব ফেলছে না? একটা জামাআর সদস্যদের ব্যাক্তিগত আমল যে জামাআর উপর প্রভাব ফেলে, পরোক্ষ এবং প্রত্যক্ষ প্রভাব,জাহেরী এবং বাতেনী প্রভাব তা তো প্রমাণিত।
আমার কারণে জামাআর ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে না তো?
আমাদের এই সময়ে আল্লাহর তাবারকা ওয়া তায়ালার দিকে রুজু করার ও ফিরে যাবার একটা বিশেষ কাইফিয়্যত থাকার কথা।পবিত্র কুরআনুল কারীমে যাকে ব্যাক্ত করা হয়েছে تضرع বলে।
فلولا إذ جاءهم بأسنا تضرعوا ....
সূর্যগ্রহণ চন্দ্রগ্রহণের সময় রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাইফিয়্যত কেমন হতো? কেমন ছিল বদর যুদ্ধের সময় রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের তাদররু ও রোনাজারী..
আমি কি চেষ্টা করছি কান্নাকাটি করতে, ইস্তেগফার করতে,ভীত হতে, অনুতপ্ত হতে নাকি আগের মতোই প্রতিদিন আল্লাহর কাছে দোয়া করার যে আমল সোটাও ভুলে যাচ্ছি বা সময় হচ্ছে না...ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন....اللهم إنی أعوذ بک من شر نفسی....
و أن أقترف علی نفسی سوءا أو أجره إلی مسلم...
পরীক্ষার একটা গুরুত্বপূর্ণ সাবজেক্ট হল-এখন অসহায় আল্লাহর বান্দাদের পাশে দাঁড়ানো।সবার জন্য পরীক্ষার সব সাবজেক্টের গুরুত্ব সময়ান থাকেনা।একেক কারণে একেকটা বিষয় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠতে পারে।ধরুন একজন উচ্চমাধ্যমিকে সায়েন্স নিয়ে পড়বে, মাধ্যমিকে তার ম্যাথ আর বিজ্ঞান পরীক্ষার মার্ক ইম্পর্টেন্ট একটা বিষয়।
করোনাভাইরাস সৃষ্ট পরীক্ষার এই সাবজেক্টটা আমাদের জন্য মুমিন হিসেবে, সকল মুমিন একটি দেহের অংশ হিসেবে এমনিতেই ইম্পর্টেন্ট-কিন্তু একজন মুজাহিদ হিসেবে একজন বিপ্লবী হিসেবে ব্যাপারটার গুরুত্ব আরো বহুগুণ বেড়ে গেছে।আমরা যারা খিলাফাহ প্রতিষ্ঠা করতে চাই পুরো উম্মাহর কল্যাণের জন্য, আমরা যারা সেই জামাআর সদস্য হিসেবে নিজেদের ভাবি-যারা আজিল্লাতিন আলাল মুমিনিন, আইজ্জাতিন আলাল কাফিরিন-আমাদের জানতে হবে এই মুমিনদের প্রতি কোমল কাফেরদের প্রতি কঠোর ইসলামের আর সব বিধানের মতোই আমলের বিষয়, শুধুই নিষ্ক্রিয় চেতনার নাম না।ওয়ালা-বারার বিশাল বিস্তৃত বহুমাত্রিক ক্ষেত্রে এর প্রকাশ ও প্রয়োগ ঘটে।
এখন এই পরিস্হিতিতে দেশের একটা বিশাল জনগোষ্ঠি বড় রকমের সমস্যায় আছে।শুধু গার্মেন্ট আর পরিবহণ শ্রমিকরাই কোটির মতো,এরা কিন্তু কাজ করে খায়, হাত পেতে অভ্যস্ত না।লকডাওন বাড়লে এরা ভয়াবহ পরিস্হিতির সম্মুখীন হবে।
আমাদের সঠিক কাজটা হবে যদি আমরা অসহায়দের সম্মান বজায় রেখে তাদের জন্য কিছু করতে পারি।
আমাদের বন্দী ও মাজলুম ভাই যারা আছেন তাদের দিকে আমাদের খেয়াল করতে হবে,আমরা যারা বুঝি আমরা যেন এ খাতে সাদাকা করি।আর সমাজের বহু মানুষের সাথে বহু আত্নীয়র সাথে আমরা সম্পৃক্ত-যারা এই বিষয়টা বুঝেনা।
কিন্তু তাদের অনেকেই আছে এখন দরিদ্র মানুষদেরকে সহয়তা করতে চায় বা উৎসাহ দিলে করবে কিন্তু অর্গানাইজ করার জন্য কেউ নেই।তাদের সবাইকে নিয়ে আমজনতার পাশে দাঁড়ানো যায়। আমরা সকলেই নিজ নিজ বিত্তবান আত্নীয় এবং সমাজের সক্ষম মানুষদেরকে নিয়ে উদ্যোগ নিতে পারি।আমাদের অনেক অভিভাবক আছেন যারা দুর্যোগ প্রস্তুতি হিসেবে যথেষ্ট পরিমাণ অর্থ ও খাদ্য রেখে দিয়েছেন,কেউ কেউ প্রয়োজনের বেশি।আসুন তাদেরকে প্রতিবেশির সাথে শেয়ার করতে উৎসাহিত করি।হাদীসের কথা স্মরণ করিয়ে দেই।
এটা কি আমাদের তানজিমি ব্যানারে এখন করা সম্ভব?
উত্তর হচ্ছে - না।
তা হলে কি ব্যাক্তিগতভাবেও আমরা করবো না?
উত্তর হলো-অবশ্যই করতে হবে।
যদি আসলেই মুমিন ভাইদের এই কষ্ট দেখে আমাদের হৃদয় বেদনার্ত না হয় তাহলে নিজেকে নিয়ে আরো ফিকির করতে হবে,আমি সত্যিই তায়েফায়ে মানসুরার চেতনায় উজ্জীবিত কি না।
যদি ব্যাক্তি উদ্যোগে করি তাহলে কি তানজিমের লাভ আছে?
উত্তর হল-যদি শরীয়ার মানশা এটা হয় তাহলে তানজিমের লাভ না থাকলেও করতে হবে, কিন্তু মনে রাখতে হবে এটা ব্যাক্তিগত উদ্যোগে করলেও তানজিমের অবশ্যই লাভ আছে।এমনকি আমি ব্যাক্তিগত নফল আদায় করলেও অথবা খুব গোপনে ব্যাক্তিগত গুনাহ করলেও আমার নেক আমল আল্লাহর ইচ্ছায় ভালো প্রভাব ফেলতে পারে আর বদ আমল তানজিমের উপরও খারাপ প্রভাব সৃষ্টি করবে।
আমরা মানুষের একটু পাশে দাঁড়িয়ে যদি তাদের কে এই বিপদের মন নরম করা মুহূর্তে তাওহিদের কথা শোনাই,মুমিনদের জন্য বিপদের পুরষ্কারের আশ্বাসবাণী শোনাই,সান্ত্বনা ও অভয়ের বাণী শোনাই, তাওবা ও সতর্কতবাণী শেনাই আল্লাহর ইচ্ছায় তা দাওয়ার ময়দানে অত্যাধিক প্রভাব ফেলতে পারে।
ইউসুফ আলাইহিস সালামের সীরাতে নিশ্চয় আমাদের জন্য শিক্ষা রয়েছে-দুর্ভিক্ষের মূহুর্তে তাঁর পদক্ষেপগুলোতে দ্বীন কায়েমের কাফেলার প্রতিটি ভাইয়ের জন্য আদর্শ রয়েছে।
ম্যানেজমেন্ট অভ স্যাভেজারী বা বিপ্লবের রূপরেখার মতো কালজয়ী বইগুলো বইয়ের থিওরীগুলো তখনই সফল হবে যখন আমরা থিওরীকে বাস্তবে প্রতিফলন করতে শিখবো,অনুশীলন করার চেষ্টা করবো।আল্লাহ না করুন, যদি আমরা এতটাই "ব্যাস্ত" থাকি যে শায়খরা লিখছেন, ভাইয়েরা দিচ্ছেন,কিন্তু আমরা পড়ারও সময় পাচ্ছি না..ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।
শিক্ষিত শ্রেণীকে পুজিবাদের নগ্ন বিভৎস চিত্র চোখে আঙুল দিয়ে দেখানোর সময়টা এখনই, আর আমজনতাকে তাত্ত্বিক কথাবার্তা বোঝানো না গেলেও; বাস্তবতা এবং বর্তমান সরকার ও (মানবরচিত) সরকারব্যাবস্হার ভয়াবহ ব্যার্থতা সহজ ভাষায় বোঝানো সম্ভব।
এটাও বিপ্লবীদের জন্য একটা পরীক্ষার ক্ষেত্র তৈরী করেছে,যখন পুজিবাদ মানুষকে এই ভয়াবহ বিপদে ফেলল, কোটির কাছাকাছি মানুষ এবং বিশ্বব্যাপী আরো বেশি মানুষ এই যে মহাবিপর্যয়ে পড়ল,এরপরও সরকার প্যাকেজ দিচ্ছে পুজিবাদীদের জন্য,মানুষের খাদ্য সরবরাহের জন্য না!!!, আইএমএফ, এডিবি চড়া সুদে ঋণ দেওয়ার একটা সুযোগ পেয়ে মহাখুশিতে বগল বাজাচ্ছে - আমরা কি শিক্ষিত ও আপামর শ্রেণীর কাছে এখন ইসলামের সৌন্দর্য আর সেকুলারিজম গণতন্ত্র পুজিবাদের অসারতা শিক্ষিত ও আপামর মানুষের সামনে তুলে ধরতে পারবো?
ইলম এবং দাওয়ার ক্ষেত্রে এটাও একটা পরীক্ষাক্ষেত্র।
উপরন্তু, একজন বিপ্লবী তার নিজস্ব সমাজে আগন্তক কেউ নন,অপরিচিত কেউ নন, উম্মাহ থেকে জনবিচ্ছিন্ন কেউ নন।(বিশেষ সেক্টরের বিশেষ ভইদের কথা ভিন্ন) বরং তিনি উম্মার সুখে সুখে সুখী, উম্মাহর ব্যাথায় বেদনার্ত, আর ১০ জন থেকে তাকে যেটা আলাদা করে তা হচ্ছে-সবাই যখন হা হুতাশ করে তখন তিনি উদ্যোগ নেন,কাজ করেন,উম্মাহর পাশে দাঁড়ান,দাওয়ার প্রতিটি সুযোগকে কাজে লাগান।আবারে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছি-لقد کان فی یوسف و إخوته أیات للساٸلین......
আসলে অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়ানোর অাহ্বান ইতিমধ্যেই শায়খ তামিম আল আদনানী হাফিজাহুল্লাহ আমাদের সবাইকে স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন।এ জন্য আমি এত দীর্ঘ পোস্ট দিতে ভীষন সংকোচবোধ করছি-তবু দিলাম-কারণ আম আহ্বান আর সুনির্দিষ্ট কথাবার্তার কিছু পার্থক্য আছে।শায়খের চ্যানেলের কোনো আহ্বানের ব্যাপারে আমরা এমন মনে না করি-যে এটা জনগণের জন্য,আমাদের জন্য না।
এবং যেন না ভাবি যে রিসেন্ট একটা ইস্যু এসেছে বলে শায়খ সেটাকে আলোচনায় এনেছেন-মাআাজাল্লাহ,এমনটা কখনোই না।
লকডাওনের সময়টা কিভাবে আমরা কাটাবো সেটাও একটা গুরুত্বপূর্ণ টপিক,ইতিমধ্যেই আমরা দিকনির্দেশনা পেয়ে গেছি আলহামদুলিল্লাহ।সে অনুযায়ী আমল করি, আর এ সময়ের মধ্যে শায়খদের অসাধারণ যেসব বই আছে -সেগুলোকে ফোরামে অনুবাদ, রিভিউ ও আলোচনায় নিয়ে আসার আহ্বান করছি।
আল্লাহ আমাকে এবং সকল ভাইকে তাঁর পছন্দনীয় নিয়ত, কথা,কাজ এবং আমলের তাওফিক দান করুন।আমীন।
Comment