কিছুদিন যাবত তীব্র যন্ত্রণা তৈরী হয়েছে মনের ভেতর।একটা সময় টেলিগ্রাম নিষিদ্ধ হওয়ার আগেই টেলিগ্রাম ছেড়ে দিয়েছিলাম শামের কিছু গ্রুপের কাদা ছোড়াছোড়ির কিছু চিত্র দেখে।
লকডাওনের সময়টা কাজে লাগানোর জন্য শামের ঘটনাগুলো পেছন ফিরে দেখছিলাম-এবার হল সমাধান খোঁজার নিয়তে।শায়খদের লেখাগুলো পড়ছিলাম এবার।শামের হালত দেখে যন্ত্রণাকাতর হয়েছি এই কয়দিন।
এর মধ্যে কিছু ভাইয়ের কাছ থেকে ফেসবুকের এই দুঃসংবাদ শুনতে পেয়ে আরো মর্মাহত হয়ে গেলাম।
গত কয়েকদিনের মানসিক চাপ অস্হিরতায় কিছু কাজও ক্ষতিগ্রস্হ হয়েছে।
আল্লাহ রহম করুন শায়খ আবু মুসআব আজ যারকাভীকে-যিনি বলেছিলেন "আল্লাহর রাস্তায় বের হওয়া একজন বিদআতীর পদদ্বয় আমার কাছে বসে থাকা সহীহ আক্বীদার লোকদের চেয়ে উত্তম"
এই কথার মধ্যে ওয়াল্লাহি ফিকির করার মতো অনেক কিছু আছে।
ইসবাত-তাবীল-তাফবীজ বা(আশআরী-মাতুরিদী-সালাফি) ঘরানার আক্বীদা নিয়ে ইখতিলাফ আগেও ছিল, এখনও আছে।এই ইখতিলাফ কি মিটে যাওয়া সম্ভব? উত্তর হল- না।কেউ মিটাতে পারেন নি,ইমাম ইবনে তাইমিয়া রহঃ দশ খন্ডের বই লিখেছেন কিন্তু এতে সবাই ইসবাত মাজহাব গ্রহণ করেনি।ইমাম ইজ্জুদ্দীন ইবনু আব্দিস সালাম আশআরীদের পক্ষে লিখেছেন-কিন্তু এতে সবাই আশআরী হয়ে যায়নি।
(তারা উভয়েই মুজাহিদ,সম্মানিত,ইতিহাসের মোড় পরিবর্তন করে দেওয়া দুটি ঐতিহাসিক যুদ্ধের নায়ক)
এই ইখতিলাফের ক্ষেত্রে আমাদের কর্মপন্হা কী হবে?
এটাই কি আমরা আমাদের ওয়ালা-বারার ভিত্তি বানিয়ে নিব?নাউজুবিল্লাহ।
এর ভিত্তিতেই দলাদলি সৃষ্ট করব আর গালাগালি করে যাব?
সাহাবায়ে কেরামের মূল ফোকাস কি তাওহিদের মৌলিক বিষয়গুলো ছিল নাকি ইস্তিওয়া আলাল আরশ ছিল?
ইমাম ইবনে তাইমিয়ার চেয়ে বড় ইছবাতপন্হী কে ছিল? তিনি কি আশআরী সুলতানের নেতৃত্বে জিহাদ করেন নি,?
ইমাম ইবনে কুদামা তাফবীজের অনুসারী।তিনি কি আশআরী সুলতান সালাহুদ্দীন আইয়ুবীর নেতৃত্বে জিহাদ করেন নি?
এমনকি ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল কি মুতাজিলী মুতাসিমের বিজয় সংবাদ শুনে নিজের উপর সমস্ত জুলুম ক্ষমা করে দেননি?
ইবনে হাজার আসক্বলানী আর বদরুদ্দিন আইনী রহঃ দের চেয়ে বড় আশআরী কে ছিল?
কিন্তু তারাই কি ইমাম ইবনে তাইমিয়ার বিরুদ্ধে গলাগালি ও তাকফিরের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেননি?(যখন আব্দুল আজীজ আল বুখারী রহঃ এসব করেছিলেন ইবনে তাইমিয়ার রহঃ বিরুদ্ধে)
ইবনে হাজার আসক্বালানী কি ইবনে তাইমিয়া রহঃ কে শাইখুল ইসলাম বলে সম্বোধন করেন না?
তাহলে এই মাসআলার ইখতেলাফের ক্ষেত্রে সালাফের কর্মপন্হা সুস্পষ্টভাবে আমাদের সামনে আছে,তবু কেন আমরা বুঝছিনা..
তারা এটাকে ফুরুয়ী ইখতিলাফ হিসেবে দেখেছেন, উসুলী ইখতিলাফ না।আক্বীদার মধ্যেও অনেক শাখাগত মাসআলা আছে,যার মধ্যে এটাও একটা।
আমার এ কথাটা অনেক ভাই নাও মানতে পারেন।যদি তাদের কাছে এটাকে খুব গুরুত্বপূর্ণ ইখতিলাফ বলে মনে হয়,ফুরুয়ী মানতে রাজি না হন, অপরপক্ষকে আপনার বিদআতপন্হী মনে হয়,তাহলে আপনার সাথে শায়খ আবু মুসআব আয য়ারকাভী রহঃ এর উক্তি আছে।পূর্বোক্ত ইমামদের কর্মপন্হা আছে।আল্লাহর ওয়াস্তে বুঝতে চেষ্টা করুন।
আপনি সালাফী হলেও আপনার কোন আশআরী ভাই জিহাদে আসলে তাকে জায়গা করে দিন, ভালোবাসুন, তাকে বিদআতী মনে হলে মনের কথা মনেই রাখুন।
ঠিক আশআরী ভাইয়ের প্রতিও একই নসীহা।একই কথা মাযহাবী লা মাযহাবী নিয়েও।
দাওয়াহ ইলাল্লাহ ফোরাম যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে -ফোরামে এসব আলোচনার সুযোগ না দেওয়া-নিঃসন্দেহে এটাই সুন্নাহর অধিক নিকটবর্তী ইনশাআল্লাহ।সাহাবায়ে কেরাম না এগুলো নিয়ে আলোচনা করেছেন,আর না বই-পত্র লেখালেখি,মুনাজারা খন্ডন ইত্যাদী করেছেন।
আপনার কাছে যদি মনে হয় এ বিষয়ে মুখ খোলা আপনার শরয়ী দায়িত্ব-কথা বলতেই হবে-আমার মনে হয় ভুল করছেন,একবার এখানে ঢুকলে আর বের হতে পারবেন না,আপনি যতই ভালো মুনাজির আর মুসান্নিফ হন-যা ছিল তাই থাকবে,কখনোই্ উম্মাহ এক মাজহাবে পরিণত হবেনা।তারপরও যদি আপনার কথা বলতেই হয়-জিহাদী আইডির বাইরে, জিহাদী ময়দান ও তানজিমের বাইরে,ভাইদের জমায়েতের বাইরে ভিন্ন মাজহুল আইডিতে মাজহুল নামে বললেও আপনার দায়িত্ব তো আদায় হয়ে যাবে,তাইনা.?
উম্মাহর অল্প কয়টা মানুষ তাওহিদের ছায়াতলে আমলে নেমেছে,তাদেরকেই কেন দুই ভাগে ভাগ করতে হবে.?
পরস্পর গালাগালিতে লিপ্ত করে দিতে হবে?
জটিল আলোচনা আরবীতেও করা যায়-কেন জেনারেল পাঠকদের বা সাধারণ তালিবুল ইলমদের আক্বীদা শুদ্ধ করার নামে হয়রান করে দিতে হবে?মনের ভেতর হাজারো সংশয় সৃষ্টি করতে হবে?
কমেন্টকারী ভাইদের বুঝতে হবে মুখ খারাপ করে তারা উম্মাহর কতটুকু উপকার করছেন।আবার পোস্টদাতা ভাইকেও বুঝতে হবে যে-তারা আদাবুল ইখতিলাফ ঠিক রেখে কথ বললেও ভক্তবৃন্দ সকল সীমা ছাড়িয়ে যাবে।এবং সালাফি জিহাদী শায়খের ভক্ত সেজে যাবে জিহাদবিরোধী মাদখালীরাও আবার আশআরী শায়খের ভক্ত সেজে যাবে জিহাদবিরোধী মাজহাবীরাও
দিনশেষে লাভবান হবে সুযোগসন্ধানীরা আর ক্ষতিগ্রস্হ হবে উম্মাহ!!
আপনি সালাফি হলে বলতে পারেন-ইমাম ইবনে তাইমিয়া তো অনেক কিছু করেছেন,সালাফি মাজহাব প্রতিষ্ঠার জন্য।তাহলে শুনে রাখুন-তিনি আশআরী সুলতানের সাথে মিলে জিহাদও করেছেন।আশআরী হলে ইবনে হাজার আসকালানীর উদাহরণ দিতে পারেন-তাহলে শুনে রাখুন তিনি ইবনে তাইমিয়ার উপর তারাহহুম করেছেন তার কিতাবের বহু স্হানে।
এর চেয়েও বড় কথা হল তখন একজন ইমাম ছিলেন,সুলতান ছিলেন-নাসিরুদ্দিন ইবনে ক্বলাউন রহঃ ছিলেন, বা সাইফুদ্দীন কুতয ছিলেন-যার পতাকায় সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল।আজকে খিলাফাহবিহীন সময়ে আপনার কারণে যদি এ ভূমির সালাফি ব্যানারে এক তানজিম হয়,আশআরী ব্যানারে আরেকটা,মাতুরিদী ব্যানারে, এরপর প্রতি শায়খকে কেন্দ্র করে একটা করে তানজিম তৈরী হয়,এরপর অবস্হা হয় শামের মতো পরস্পর - সেই বিচ্ছিন্নতা, ঐক্যনষ্ট,ও অন্যায় রক্তপ্রবাহের দায় কি আপনি নিবেন ভাই্?
বুকে হাত দিয়ে বলুন ভাই,-আল্লাহর সামনে আপনাকে আমাকে সবাইকে দাঁড়াতে হবে...
বরং এ দেশের জনগণের সহ্যক্ষমতা শামের জনগণের ১০০ ভাগের ১০ ভাগও হবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ।
যে ভূমিগুলোই এ ধরনের পরিস্হিতিতে পড়েছে-(ইরাক,শাম-আলজেরিয়া)সেখানে তাওহিদ ও জিহাদের পুনর্জাগরণ যে কতটা কষ্টকর তা যদি ভাইয়েরা বুঝতেন!!
যদি শুধু একটা পক্ষকেই আপনি সাথে নিতে চান জিহাদের ময়দানে-তাহলে তাওহিদবাদী মুজাহিদ সালাফি ভাইয়েদেরকে কি মতিউর রহমান মাদানীর দলে যোগ দিবে আর মুজাহিদ আশআরী ভইেরা কি ফরিদুদ্দীন মাসুদের দলে যোগ দিবে?
নাকি প্রত্যেকে নিজ নিজ পতাকা নিয়ে আলাদা আলাদা দল তৈরী করবে? এর কোনটাই তো কাম্য নয়, তাইনা.?
হক্ব কথাটা বলাটা দায়িত্ব,কিন্তু নির্দিষ্ট উসলুব বা শব্দ ব্যবহার করাটা দায়িত্ব না।ঠিক নির্দিষ্ট কোন মাজহাব মাসলাক কে এ্যাটাক করে কথা বলতে হবে, এবং মাসলাক হিসেবে পরিচিতি পাওয়া কোন শব্দকে উচ্চারণ করে ওইটা প্রতিষ্ঠা করার কথা বলতে হবে-এ মানসিকতা পরিহার করা উচিত।দাওয়ার ক্ষেত্রে হিকমাহ অবলম্বন করা উচিত।ফিকহুদ্দাওয়ার ইলম অর্জন করা উচিত।
দায়ী ভাইয়ের উপর এ ইলম অর্জন করা কি জরুরী নয় কোন দাওয়ার কারণে,কোন উসলুবের কারণে উম্মাহ ক্ষতিগ্রস্হ হবে? লাভের চেয়ে ক্ষতি বেশি হবে?
আপনি আশআরী হলে কি শায়খ খালিদ আর রাশিদ, শায়খ নাসির আল ফাহাদ,শায়খ জসিমু্দ্দীন রহমানীকে ভালোবাসবেন না?
আর সালাফী হলে কি মান্তেক ফালসাফা ইলমে কালামের দরস দেওয়া রশীদ আহমাদ গাঙ্গুহী,কাসেম নানুতবী, আব্দুল হক তুর্কিস্তানীকে ভালোবাসবেন না?উমর মুখতার বা সাইয়েদ কুতুব কে ভালোবাসবেন না?
শায়খ উসামা রহঃ শায়খ আইমান জাওয়াহিরী হাফিজাহুল্লাহ কি উসমানী খিলাফাহকে স্বীকার করেন না?
আমাদের মনে রাখতে হবে-ফুরুয়ী বিষয়ে বিরোধী হওয়ার কারণে বা বিদআতপন্হী হওয়ার কারণে তাকে আহলুস সুন্নাহ থেকে বের করে দল সৃষ্টি করার মতবাদ সর্বপ্রথম মাদখালীরা উদ্ভাবন করেছে আমাদের জানা মতে।আল্লাহর ওয়াস্তে আহলুস সুন্নাহর অনুসারী হোন, মাদখালীদের না।
এরপর আবার ইনসাফের প্রসঙ্গও আছে।আশআরীদেরকে মুতাজিলা এবং জাহমিয়্যাহ বলে গালি দেওয়া কোন ইনসাফ?মুতাদিল আহলে ইলম কি ইবনে হাজার আসকালানী আর জাহম বিন সাফওয়ানকে এক মনে করতে পারে?
আবার সালাফি বা ইসবাতপন্হীকে মুজাসসিমা এবং মুশাব্বিহা বলে গালি দেওয়া কোন ইনসাফ? ইনসাফ আছে এমন কেউ কি ইবনে তাইমিয়া রহঃ আর মুজাসসিমাদেরকে এক করে ফেলতে পারে?
দাওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের সামনে আলহামদুলিল্লাহ অনেক উত্তম দৃষ্টান্ত আছে।ড.ইয়াদ আল কুনাইবী আছেন,শায়খ খালেদ আর রাশিদ আছেন।দেখুন তারা কি নিয়ে কথা বলেন।তাদের দাওয়ার ফোকাস কি হয়।........মানহাজের কোনো কোনো ভাইও ফেসবুকে লিখেন,যার লেখায় সব মহলেই একটা সার্া জাগে,কিন্তু তার লেখা থেকে এসব সমস্যা সৃষ্টি হতে দেখিনা আলহামদুলিল্লাহ।আল্লাহ ভাইকে অটল রাখুন।
ব্যাক্তিগত জীবনে আমার নিজেরও এ বিষয়ে একটা মাজহাবের প্রতি দুর্বলতা আছে।কারণ জিহাদ ও তাওহিদ বোঝার আগে দুর্ঘটনাক্রমে সিফাতের মাসআলা নিয়ে বিস্তর ঘাটাঘাটি করেছিলাম।এবং এ বিষয়ে নিজ মাজহাবকে প্রতিষ্ঠা করাকে জীবনের লক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করেছিলাম।আল্লাহর কত অপার অনুগ্রহ তিনি আমাকে ফিরিয়ে এনেছেন-এখন কারে সামনে আমি আমার মাজহাবটাও প্রকাশ করতে রাজি নই।আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে শেষ করতে পারবো না,মূল্যবান জীবনটা কি নিয়ে ব্যায় করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম!!যা নিয়ে সাহাবীরা কোন কথাই বলেন নি!!!বিষয়টাকে ফুরুয়ী বলেই মনে করি।সালাফি হয়ে থাকলেও নিজেকে ইজ্জুদ্দীন ইবনু আব্দিস সালামের পায়ের ধুলার সমানও মনে করিনা,আর মাতুরিদি হয়ে থাকলে নিজেকে ইমাম ইবনে তাইমিয়ার পায়ের ধুলার সমানও মনে করিনা।
এবং দিনশেষে এ বিষয়ে নীরবতা অবলম্বনকেই সুন্নাহর অধিক নিকটবর্তী ও ফিতনা থেকে মুক্তির পথ মনে করি।যারা গভীর গভীর তাফসিলগুলো জনসাধারণের সামনে উন্মুক্ত করেন তাদের পথকে ভুল মনে করি, এটা কোনভাবেই ওয়ালা-বারার ভিত্তি হতে পরেনা বলে বিশ্বাস করি।সেক্যুলারিজমের বিরোধিতা,আর সিফাতের কোন একটা মাজহাবের বিরোধিতা-দুটোকে সমান ফোকাস করা,সমান গুরুত্বপূর্ণ মনে করাকে সমর্থন করিনা।একইভাবে বারবার এ আলোচনা তুলে দিয়ে বিব্রতকর পরিস্হিতি তৈরী করাকেও না।আর এ নিয়ে দলাদলি ও গালাগালিকে হারাম মনে করি।এবং জানি এটা নিয়ে গভীরে গেলে আর কূল-কিনারা নাই।
আয় আল্লাহ আপনি আমার আগের ভুলগুলো সব ক্ষমা কর দিন।সামনে পদস্খলন থেকে বাঁচিয়ে রাখুন।আয় আল্লাহ! আমাদেরকে লা ইলাহা ইল্লাল্লার উপর ঐক্যবদ্ধ করুন,একে নিয়েই জীবন যাপন আর এর উপরই শাহাদাত নসীব করুন।
আমীন ইয়া রব্বাল আলামীন।
লকডাওনের সময়টা কাজে লাগানোর জন্য শামের ঘটনাগুলো পেছন ফিরে দেখছিলাম-এবার হল সমাধান খোঁজার নিয়তে।শায়খদের লেখাগুলো পড়ছিলাম এবার।শামের হালত দেখে যন্ত্রণাকাতর হয়েছি এই কয়দিন।
এর মধ্যে কিছু ভাইয়ের কাছ থেকে ফেসবুকের এই দুঃসংবাদ শুনতে পেয়ে আরো মর্মাহত হয়ে গেলাম।
গত কয়েকদিনের মানসিক চাপ অস্হিরতায় কিছু কাজও ক্ষতিগ্রস্হ হয়েছে।
আল্লাহ রহম করুন শায়খ আবু মুসআব আজ যারকাভীকে-যিনি বলেছিলেন "আল্লাহর রাস্তায় বের হওয়া একজন বিদআতীর পদদ্বয় আমার কাছে বসে থাকা সহীহ আক্বীদার লোকদের চেয়ে উত্তম"
এই কথার মধ্যে ওয়াল্লাহি ফিকির করার মতো অনেক কিছু আছে।
ইসবাত-তাবীল-তাফবীজ বা(আশআরী-মাতুরিদী-সালাফি) ঘরানার আক্বীদা নিয়ে ইখতিলাফ আগেও ছিল, এখনও আছে।এই ইখতিলাফ কি মিটে যাওয়া সম্ভব? উত্তর হল- না।কেউ মিটাতে পারেন নি,ইমাম ইবনে তাইমিয়া রহঃ দশ খন্ডের বই লিখেছেন কিন্তু এতে সবাই ইসবাত মাজহাব গ্রহণ করেনি।ইমাম ইজ্জুদ্দীন ইবনু আব্দিস সালাম আশআরীদের পক্ষে লিখেছেন-কিন্তু এতে সবাই আশআরী হয়ে যায়নি।
(তারা উভয়েই মুজাহিদ,সম্মানিত,ইতিহাসের মোড় পরিবর্তন করে দেওয়া দুটি ঐতিহাসিক যুদ্ধের নায়ক)
এই ইখতিলাফের ক্ষেত্রে আমাদের কর্মপন্হা কী হবে?
এটাই কি আমরা আমাদের ওয়ালা-বারার ভিত্তি বানিয়ে নিব?নাউজুবিল্লাহ।
এর ভিত্তিতেই দলাদলি সৃষ্ট করব আর গালাগালি করে যাব?
সাহাবায়ে কেরামের মূল ফোকাস কি তাওহিদের মৌলিক বিষয়গুলো ছিল নাকি ইস্তিওয়া আলাল আরশ ছিল?
ইমাম ইবনে তাইমিয়ার চেয়ে বড় ইছবাতপন্হী কে ছিল? তিনি কি আশআরী সুলতানের নেতৃত্বে জিহাদ করেন নি,?
ইমাম ইবনে কুদামা তাফবীজের অনুসারী।তিনি কি আশআরী সুলতান সালাহুদ্দীন আইয়ুবীর নেতৃত্বে জিহাদ করেন নি?
এমনকি ইমাম আহমাদ বিন হাম্বল কি মুতাজিলী মুতাসিমের বিজয় সংবাদ শুনে নিজের উপর সমস্ত জুলুম ক্ষমা করে দেননি?
ইবনে হাজার আসক্বলানী আর বদরুদ্দিন আইনী রহঃ দের চেয়ে বড় আশআরী কে ছিল?
কিন্তু তারাই কি ইমাম ইবনে তাইমিয়ার বিরুদ্ধে গলাগালি ও তাকফিরের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেননি?(যখন আব্দুল আজীজ আল বুখারী রহঃ এসব করেছিলেন ইবনে তাইমিয়ার রহঃ বিরুদ্ধে)
ইবনে হাজার আসক্বালানী কি ইবনে তাইমিয়া রহঃ কে শাইখুল ইসলাম বলে সম্বোধন করেন না?
তাহলে এই মাসআলার ইখতেলাফের ক্ষেত্রে সালাফের কর্মপন্হা সুস্পষ্টভাবে আমাদের সামনে আছে,তবু কেন আমরা বুঝছিনা..
তারা এটাকে ফুরুয়ী ইখতিলাফ হিসেবে দেখেছেন, উসুলী ইখতিলাফ না।আক্বীদার মধ্যেও অনেক শাখাগত মাসআলা আছে,যার মধ্যে এটাও একটা।
আমার এ কথাটা অনেক ভাই নাও মানতে পারেন।যদি তাদের কাছে এটাকে খুব গুরুত্বপূর্ণ ইখতিলাফ বলে মনে হয়,ফুরুয়ী মানতে রাজি না হন, অপরপক্ষকে আপনার বিদআতপন্হী মনে হয়,তাহলে আপনার সাথে শায়খ আবু মুসআব আয য়ারকাভী রহঃ এর উক্তি আছে।পূর্বোক্ত ইমামদের কর্মপন্হা আছে।আল্লাহর ওয়াস্তে বুঝতে চেষ্টা করুন।
আপনি সালাফী হলেও আপনার কোন আশআরী ভাই জিহাদে আসলে তাকে জায়গা করে দিন, ভালোবাসুন, তাকে বিদআতী মনে হলে মনের কথা মনেই রাখুন।
ঠিক আশআরী ভাইয়ের প্রতিও একই নসীহা।একই কথা মাযহাবী লা মাযহাবী নিয়েও।
দাওয়াহ ইলাল্লাহ ফোরাম যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে -ফোরামে এসব আলোচনার সুযোগ না দেওয়া-নিঃসন্দেহে এটাই সুন্নাহর অধিক নিকটবর্তী ইনশাআল্লাহ।সাহাবায়ে কেরাম না এগুলো নিয়ে আলোচনা করেছেন,আর না বই-পত্র লেখালেখি,মুনাজারা খন্ডন ইত্যাদী করেছেন।
আপনার কাছে যদি মনে হয় এ বিষয়ে মুখ খোলা আপনার শরয়ী দায়িত্ব-কথা বলতেই হবে-আমার মনে হয় ভুল করছেন,একবার এখানে ঢুকলে আর বের হতে পারবেন না,আপনি যতই ভালো মুনাজির আর মুসান্নিফ হন-যা ছিল তাই থাকবে,কখনোই্ উম্মাহ এক মাজহাবে পরিণত হবেনা।তারপরও যদি আপনার কথা বলতেই হয়-জিহাদী আইডির বাইরে, জিহাদী ময়দান ও তানজিমের বাইরে,ভাইদের জমায়েতের বাইরে ভিন্ন মাজহুল আইডিতে মাজহুল নামে বললেও আপনার দায়িত্ব তো আদায় হয়ে যাবে,তাইনা.?
উম্মাহর অল্প কয়টা মানুষ তাওহিদের ছায়াতলে আমলে নেমেছে,তাদেরকেই কেন দুই ভাগে ভাগ করতে হবে.?
পরস্পর গালাগালিতে লিপ্ত করে দিতে হবে?
জটিল আলোচনা আরবীতেও করা যায়-কেন জেনারেল পাঠকদের বা সাধারণ তালিবুল ইলমদের আক্বীদা শুদ্ধ করার নামে হয়রান করে দিতে হবে?মনের ভেতর হাজারো সংশয় সৃষ্টি করতে হবে?
কমেন্টকারী ভাইদের বুঝতে হবে মুখ খারাপ করে তারা উম্মাহর কতটুকু উপকার করছেন।আবার পোস্টদাতা ভাইকেও বুঝতে হবে যে-তারা আদাবুল ইখতিলাফ ঠিক রেখে কথ বললেও ভক্তবৃন্দ সকল সীমা ছাড়িয়ে যাবে।এবং সালাফি জিহাদী শায়খের ভক্ত সেজে যাবে জিহাদবিরোধী মাদখালীরাও আবার আশআরী শায়খের ভক্ত সেজে যাবে জিহাদবিরোধী মাজহাবীরাও
দিনশেষে লাভবান হবে সুযোগসন্ধানীরা আর ক্ষতিগ্রস্হ হবে উম্মাহ!!
আপনি সালাফি হলে বলতে পারেন-ইমাম ইবনে তাইমিয়া তো অনেক কিছু করেছেন,সালাফি মাজহাব প্রতিষ্ঠার জন্য।তাহলে শুনে রাখুন-তিনি আশআরী সুলতানের সাথে মিলে জিহাদও করেছেন।আশআরী হলে ইবনে হাজার আসকালানীর উদাহরণ দিতে পারেন-তাহলে শুনে রাখুন তিনি ইবনে তাইমিয়ার উপর তারাহহুম করেছেন তার কিতাবের বহু স্হানে।
এর চেয়েও বড় কথা হল তখন একজন ইমাম ছিলেন,সুলতান ছিলেন-নাসিরুদ্দিন ইবনে ক্বলাউন রহঃ ছিলেন, বা সাইফুদ্দীন কুতয ছিলেন-যার পতাকায় সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল।আজকে খিলাফাহবিহীন সময়ে আপনার কারণে যদি এ ভূমির সালাফি ব্যানারে এক তানজিম হয়,আশআরী ব্যানারে আরেকটা,মাতুরিদী ব্যানারে, এরপর প্রতি শায়খকে কেন্দ্র করে একটা করে তানজিম তৈরী হয়,এরপর অবস্হা হয় শামের মতো পরস্পর - সেই বিচ্ছিন্নতা, ঐক্যনষ্ট,ও অন্যায় রক্তপ্রবাহের দায় কি আপনি নিবেন ভাই্?
বুকে হাত দিয়ে বলুন ভাই,-আল্লাহর সামনে আপনাকে আমাকে সবাইকে দাঁড়াতে হবে...
বরং এ দেশের জনগণের সহ্যক্ষমতা শামের জনগণের ১০০ ভাগের ১০ ভাগও হবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ।
যে ভূমিগুলোই এ ধরনের পরিস্হিতিতে পড়েছে-(ইরাক,শাম-আলজেরিয়া)সেখানে তাওহিদ ও জিহাদের পুনর্জাগরণ যে কতটা কষ্টকর তা যদি ভাইয়েরা বুঝতেন!!
যদি শুধু একটা পক্ষকেই আপনি সাথে নিতে চান জিহাদের ময়দানে-তাহলে তাওহিদবাদী মুজাহিদ সালাফি ভাইয়েদেরকে কি মতিউর রহমান মাদানীর দলে যোগ দিবে আর মুজাহিদ আশআরী ভইেরা কি ফরিদুদ্দীন মাসুদের দলে যোগ দিবে?
নাকি প্রত্যেকে নিজ নিজ পতাকা নিয়ে আলাদা আলাদা দল তৈরী করবে? এর কোনটাই তো কাম্য নয়, তাইনা.?
হক্ব কথাটা বলাটা দায়িত্ব,কিন্তু নির্দিষ্ট উসলুব বা শব্দ ব্যবহার করাটা দায়িত্ব না।ঠিক নির্দিষ্ট কোন মাজহাব মাসলাক কে এ্যাটাক করে কথা বলতে হবে, এবং মাসলাক হিসেবে পরিচিতি পাওয়া কোন শব্দকে উচ্চারণ করে ওইটা প্রতিষ্ঠা করার কথা বলতে হবে-এ মানসিকতা পরিহার করা উচিত।দাওয়ার ক্ষেত্রে হিকমাহ অবলম্বন করা উচিত।ফিকহুদ্দাওয়ার ইলম অর্জন করা উচিত।
দায়ী ভাইয়ের উপর এ ইলম অর্জন করা কি জরুরী নয় কোন দাওয়ার কারণে,কোন উসলুবের কারণে উম্মাহ ক্ষতিগ্রস্হ হবে? লাভের চেয়ে ক্ষতি বেশি হবে?
আপনি আশআরী হলে কি শায়খ খালিদ আর রাশিদ, শায়খ নাসির আল ফাহাদ,শায়খ জসিমু্দ্দীন রহমানীকে ভালোবাসবেন না?
আর সালাফী হলে কি মান্তেক ফালসাফা ইলমে কালামের দরস দেওয়া রশীদ আহমাদ গাঙ্গুহী,কাসেম নানুতবী, আব্দুল হক তুর্কিস্তানীকে ভালোবাসবেন না?উমর মুখতার বা সাইয়েদ কুতুব কে ভালোবাসবেন না?
শায়খ উসামা রহঃ শায়খ আইমান জাওয়াহিরী হাফিজাহুল্লাহ কি উসমানী খিলাফাহকে স্বীকার করেন না?
আমাদের মনে রাখতে হবে-ফুরুয়ী বিষয়ে বিরোধী হওয়ার কারণে বা বিদআতপন্হী হওয়ার কারণে তাকে আহলুস সুন্নাহ থেকে বের করে দল সৃষ্টি করার মতবাদ সর্বপ্রথম মাদখালীরা উদ্ভাবন করেছে আমাদের জানা মতে।আল্লাহর ওয়াস্তে আহলুস সুন্নাহর অনুসারী হোন, মাদখালীদের না।
এরপর আবার ইনসাফের প্রসঙ্গও আছে।আশআরীদেরকে মুতাজিলা এবং জাহমিয়্যাহ বলে গালি দেওয়া কোন ইনসাফ?মুতাদিল আহলে ইলম কি ইবনে হাজার আসকালানী আর জাহম বিন সাফওয়ানকে এক মনে করতে পারে?
আবার সালাফি বা ইসবাতপন্হীকে মুজাসসিমা এবং মুশাব্বিহা বলে গালি দেওয়া কোন ইনসাফ? ইনসাফ আছে এমন কেউ কি ইবনে তাইমিয়া রহঃ আর মুজাসসিমাদেরকে এক করে ফেলতে পারে?
দাওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের সামনে আলহামদুলিল্লাহ অনেক উত্তম দৃষ্টান্ত আছে।ড.ইয়াদ আল কুনাইবী আছেন,শায়খ খালেদ আর রাশিদ আছেন।দেখুন তারা কি নিয়ে কথা বলেন।তাদের দাওয়ার ফোকাস কি হয়।........মানহাজের কোনো কোনো ভাইও ফেসবুকে লিখেন,যার লেখায় সব মহলেই একটা সার্া জাগে,কিন্তু তার লেখা থেকে এসব সমস্যা সৃষ্টি হতে দেখিনা আলহামদুলিল্লাহ।আল্লাহ ভাইকে অটল রাখুন।
ব্যাক্তিগত জীবনে আমার নিজেরও এ বিষয়ে একটা মাজহাবের প্রতি দুর্বলতা আছে।কারণ জিহাদ ও তাওহিদ বোঝার আগে দুর্ঘটনাক্রমে সিফাতের মাসআলা নিয়ে বিস্তর ঘাটাঘাটি করেছিলাম।এবং এ বিষয়ে নিজ মাজহাবকে প্রতিষ্ঠা করাকে জীবনের লক্ষ্য হিসেবে গ্রহণ করেছিলাম।আল্লাহর কত অপার অনুগ্রহ তিনি আমাকে ফিরিয়ে এনেছেন-এখন কারে সামনে আমি আমার মাজহাবটাও প্রকাশ করতে রাজি নই।আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে শেষ করতে পারবো না,মূল্যবান জীবনটা কি নিয়ে ব্যায় করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম!!যা নিয়ে সাহাবীরা কোন কথাই বলেন নি!!!বিষয়টাকে ফুরুয়ী বলেই মনে করি।সালাফি হয়ে থাকলেও নিজেকে ইজ্জুদ্দীন ইবনু আব্দিস সালামের পায়ের ধুলার সমানও মনে করিনা,আর মাতুরিদি হয়ে থাকলে নিজেকে ইমাম ইবনে তাইমিয়ার পায়ের ধুলার সমানও মনে করিনা।
এবং দিনশেষে এ বিষয়ে নীরবতা অবলম্বনকেই সুন্নাহর অধিক নিকটবর্তী ও ফিতনা থেকে মুক্তির পথ মনে করি।যারা গভীর গভীর তাফসিলগুলো জনসাধারণের সামনে উন্মুক্ত করেন তাদের পথকে ভুল মনে করি, এটা কোনভাবেই ওয়ালা-বারার ভিত্তি হতে পরেনা বলে বিশ্বাস করি।সেক্যুলারিজমের বিরোধিতা,আর সিফাতের কোন একটা মাজহাবের বিরোধিতা-দুটোকে সমান ফোকাস করা,সমান গুরুত্বপূর্ণ মনে করাকে সমর্থন করিনা।একইভাবে বারবার এ আলোচনা তুলে দিয়ে বিব্রতকর পরিস্হিতি তৈরী করাকেও না।আর এ নিয়ে দলাদলি ও গালাগালিকে হারাম মনে করি।এবং জানি এটা নিয়ে গভীরে গেলে আর কূল-কিনারা নাই।
আয় আল্লাহ আপনি আমার আগের ভুলগুলো সব ক্ষমা কর দিন।সামনে পদস্খলন থেকে বাঁচিয়ে রাখুন।আয় আল্লাহ! আমাদেরকে লা ইলাহা ইল্লাল্লার উপর ঐক্যবদ্ধ করুন,একে নিয়েই জীবন যাপন আর এর উপরই শাহাদাত নসীব করুন।
আমীন ইয়া রব্বাল আলামীন।
Comment