Announcement

Collapse
No announcement yet.

ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ না বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ?

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ না বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ?

    ১৯৭১ এর ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ মূলত বলা হয় ৩রা-১৬ই ডিসেম্বরের মধ্যকার যুদ্ধকে।
    .
    পাকিস্তানের একগুয়ে ও মূর্খ রাস্ট্রপ্রধান ইয়াহিয়া খান যখন ইতিমধ্যেই পূর্ব বাংলার যুদ্ধে পর্যুদস্ত, তখন সে ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে।
    এবং সামরিক ও রাজনৈতিক ময়দানের ফয়সালা ভারতের নের্তৃত্বাধীন মিত্রবাহিনীর পক্ষে যায়।

    উল্লেখ্য, ডিসেম্বরের আগ অবধি প্রথাগত যুদ্ধ শুরুই হয়নি। পাকিস্তানী জেনারেলদের অদ্ভুত পলিসির ফলে ভারত সরাসরি পূর্ব বাংলার মাটিতে সরাসরি পাকিস্তানের সাথে যুদ্ধে জড়ায়।
    .
    পাকিস্তানের মাথামোটা, ক্রুদ্ধ শাসক জেনারেল ইয়াহিয়া ২রা আগস্ট তারিখে বিবিসির সঙ্গে এক সাক্ষাতকারে বলেন,
    "পূর্ব পাকিস্তান ৯ ভারতের সীমান্ত বরাবর লড়াই (মূলত পূর্ব বাংলার জনগণের সাথে জান্তার সংঘর্ষ) অব্যাহত থাকলে, তা ভয়াবহ যুদ্ধে পরিণত হতে পারে।

    ১১ই আগস্ট সিবিএসকে বললেন,
    "দুটো দেশই এখন যুদ্ধের খুব কাছাকাছি এসে পড়েছে। আমি হুশিয়ার করে দিতে চাই যে, পাকিস্তানকে রক্ষার জন্য আমরা যুদ্ধ করবাে।'

    ১লা সেপ্টেম্বর প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া প্যারিসের প্রখ্যাত ‘লা-ফিগারাে' পত্রিকায় এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে বলেন,

    "অনেক ধৈর্য সহকারে আমি সব কিছু লক্ষ্য করছি। আমি সমস্ত বিশ্বকে এ মর্মে হুশিয়ার করে দিতে চাই, ভারত যদি মনে করে থাকে যে, বিনা যুদ্ধে তারা আমার এক বিন্দু জমি দখল করতে পারবে, তবে তারা মারাত্মক ভুল করছে। এর অর্থই হৰে সর্বাত্মক যুদ্ধ- অবশ্য আমি যুদ্ধকে ঘৃণা করি। কিন্তু আমার মাতৃভূমি রক্ষার জন্য এ ব্যাপারে আমি পিছপা হবাে না।"
    .
    ২৫ই নভেম্বর আমেরিকান সংবাদ সংস্থা এসোসিয়েটেড প্রেসের সাথে সাক্ষাৎকারে ইয়াহিয়া খান বললেন,
    "আর দশ দিনের মধ্যে আমি এই রাওয়ালপিন্ডিতে নাও থাকতে পারি। আমি তখন যুদ্ধে লিপ্ত থাকব।"
    .
    জেনারেল ইয়াহিয়া তাঁর কথা রেখেছিলেন। ১৯৭১ সালের ৩রা ডিসেম্বর সন্ধ্যা ৬টার দিকে পাকিস্তান বিমানবাহিনী ভারতের অমৃতসর, পাঠানকোট, শ্রীনগর, অবন্তিপুর উত্তরলাই, যােধপুর, আম্বালা ও আগ্রার এয়ারফিল্ডগুলােতে বােমা বর্ষণ করে।
    .
    এবং এর প্রতিক্রিয়ায় ভারত সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে পরলে পাকিস্তানী বাহিনী শোচনীয়ভাবে মাত্র ১৩দিনের মাথায় পরাজিত হয়।
    .
    অর্থাৎ, ১৯৭১ এর এপ্রিল থেকে ডিসেম্বর সংঘটিত যুদ্ধকে বাংলাদেশ-পাকিস্তান যুদ্ধ বলা হয় এবং ৩রা ডিসেম্বর থেকে ১৬ই ডিসেম্বরের যুদ্ধকে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধ বলা হয়।
    .
    .
    আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হচ্ছে, পাকিস্তান সেনাবাহিনী নিজ থেকেই ভারতের কাছে আত্মসমর্পনের শর্ত প্রদান করে। মুজিবনগর সরকারের অধীন মুক্তিবাহিনীর কাছে তারা আত্মসমর্পণ করতে রাজি ছিল না।
    .
    এমনকি ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান জগজিৎ সিং অরোরার নামের আগের ভারত-বাংলাদেশের জয়েন্ট কমাণ্ডার কথাটিও মেনে নিতে জেনারেল রাও ফরমান আলি আপত্তি তুলে বলে, "আমরা তো শুধু ভারতের কাছে আত্মসমর্পণ করছি!"
    _______
    বাস্তব কথা হচ্ছে, পার্শ্ববর্তী দেশের ভূমিকে ব্যবহার করে বা তার সাহায্য নিয়ে গৃহযুদ্ধ পরিচালনা একটি সুসাব্যস্ত বিষয়।
    ৯০ দশকে সোভিয়েত বিরোধী আফগান যুদ্ধে পাকিস্তান ও পেশোয়ারের ভূমিকা আমাদের সবার জানা।
    .

    বিংশ শতাব্দীর তিরিশের দশকে জেনারেল ফ্রাংকের ফ্রাসিজমের বিপক্ষে স্প্যানিশ বিপ্লবের সময় বহু বিপ্লবীকে ফ্রান্সে আশ্রয় গ্রহণ করতে হয়। প্রায় চার যুগ পরে, এরা দেশে প্রত্যাবর্তন করে।

    দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় হিটলারের নাজি জার্মানি ফ্রান্সকে পদানত করে। অতঃপর, জেনারেল দ্য গলের নেতৃত্বে ইংল্যান্ডের মাটিতে প্রবাসী সরকার গঠিত হয়েছিল।
    ১৯৪৫ সালে তারা বিজয়ী অবস্থায় দেশে প্রত্যাবর্তন করে।
    .
    দক্ষিণ ভিয়েতনামে আমেরিকার সমর্থক শিখন্ডি সরকার গঠিত হলে আবার দক্ষিণাঞ্চলে যুদ্ধ শুরু হয়। উত্তর ভিয়েতনাম প্রকাশ্যেই দক্ষিণ ভিয়েতনামি বিপ্লবীদের আশ্রয়দান ছাড়াও পূর্ণভাবে মদদ জোগায়।
    ফলে সত্তর দশকের প্রথমার্ধে তৎকালান সায়গন সরকার পাঁচ লাখ মার্কিনি সৈন্যের সমর্থনপুষ্ট হওয়া সত্ত্বেও নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়।
    .
    আবার কম্বোডিয়ায় সংস্কারপন্থী নীতির সমর্থক ক্ষমতাসীন প্রিন্স নরােদম সিহানুকের জাতীয়তাবাদী সরকারকে উৎখাত করার লক্ষ্যে মার্কিনি সামাজ্যবাদ জেনারেল লননলকে অকুণ্ঠ সমর্থন দিলে সেখানে এক রক্তাক্ত যুদ্ধ শুরু হয়।
    এদিকে চীনা সমর্থনপুষ্ট খেমাররুজ পার্টি নির্বাসিত প্রিন্স নরােদম সিহানুককে রাষ্ট্রপ্রধান ঘােষণা করে ক্ষমতা দখল করে নেয় খেমাররুজ নেতা পলপট।
    .
    .
    সুতরাং, দেশের পূর্বাংশে অতিরিক্ত সৈন্য মোতায়েনের ঝক্কি থেকে বাঁচতে এবং পূর্ব বাংলার ভূমি, সম্পদকে লুটপাটের নিয়তে ভারতের প্রত্যক্ষ সহায়তাই ছিল স্বাভাবিক।
    .
    তাই ক্ষমতালোভী প্রবাসী মুজিবনগর সরকারের তত্ত্বাবধানে পরিচালিত যুদ্ধের ফলাফল হিসেবে, বর্বর ইয়াহিয়া খানের নের্তৃত্বাধীন আগ্রাসী ও অপরাধী পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর পরাজয় ছিল সময়সাপেক্ষ বাস্তবতা।
    .
    আমাদের মূলত ভাবা উচিৎ কেন ইসলামের নামে অস্তিত্ব লাভকারী সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিমের দেশে ইসলামপন্থীদের রাজনৈতিক দেউলিয়াত্বের পরিচয় প্রকাশ পেল।
    .
    স্মর্তব্য রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়াদের একদম প্রথম সারিতে স্থান করে নিয়েছিল আত্মতুষ্টিতে ভোগা জামাতে ইসলামী ও নেজামে ইসলামী।
    .
    পাশাপাশি স্রোতের প্রবাহে খড়কুটোর মতো ভেসে বেড়ানো দেওবন্দি ঘরানার ইসলামপন্থীদের একটি বড় অংশ, জাতীয় পর্যায়ের ঘটনাপ্রবাহে হতবুদ্ধি থেকে ফলাফল নিজেদের করে নেয়ার ক্ষেত্রেও অপারগ হয়,যার ধারাবাহিকতা আজো চলমান।
    .
    আজ হাস্যকরভাবে তাদের সংশোধনবাদী ইতিহাসের দ্বারস্থ হয়ে "আমরাও ছিলাম" অবস্থান প্রমাণ করতে হয়।
    .
    কেন আমাদের উলামায়ে কেরাম ও ইসলামপন্থীগণ ভারতের তাবেদার শেখ মুজিব ও আওয়ামীলীগের অবস্থান ও পরিকল্পনা বুঝতে ব্যার্থ হলো!?
    কেন তারা পাকিস্তানের সামরিক জান্তার শাসনের বিরুদ্ধে ভূমিকা না রেখে বরং একে প্রত্যক্ষ বা নিরব সমর্থনই দিয়ে আসলো দীর্ঘ অনেকগুলো বছর!!?
    .
    বাস্তবতার সঠিক বুঝের অভাব আর চিন্তাগত বিচ্যুতির ফলে পরের প্রজন্মকে হাহাকারের মাঝে ফেলে যাওয়ার দায় এড়ানো যায় কি!?
    .
    একইভাবে ৫০বছর পরের সেই গলদ মানহাজই আকড়ে ধরা ইসলামপন্থীদের অবস্থা কি মধ্যযুগের ইউরোপীয় ক্যাথলিক পাদ্রীদের মতই না!? যারা কি না বারবার ধাক্কা খাওয়া সত্ত্বেও সঠিক অবস্থান তুলে ধরতে ব্যার্থ হয়ে, নিজেদের দীন ও আদর্শের ভিত্তি নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে ভূমিকা রেখেছিল!!
    .
    আমরা দেখতে পাই, আজো ইসলামপন্থীদের আকিদাগত, চিন্তাগত ও প্রায়োগিক অক্ষমতা প্রকাশ পেয়েই যাচ্ছে কেবল।
    .
    .
    তো এই হচ্ছে 'বিজয় দিবসের' বার্তা!

    ​​​​​​

  • #2

    জাযাকাল্লাহু খাইরান

    ভাই এরকম নির্ভরযোগ্য কোন ইতিহাসের বই আছে?

    Comment


    • #3
      রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে বড় কোন জ্ঞানী এবং খোদাভীরু পৃথীবিতে নেই। তাই তার দেখান পথই কেবল আমাদের আদর্শ।

      Comment

      Working...
      X