"গণতন্ত্র শুরা ব্যাবস্থার অস্থায়ী বিকল্প হতে পারে।"
.
একটি প্রচলিত কথা। একটি জনপ্রিয়, নিস্ক্রিয়তামুখী ওজর। এবং একটি অজ্ঞতাপ্রসূত, কাল্পনিক বক্তব্য।
.
সম্প্রতি এদেশের ফিকহি খেদমতের পাশাপাশি ফিকরি উন্নতির আহবায়ক একজন অনলাইন এক্টিভিস্টের লেখায়ও এমনটা দেখে অবাক হলাম। উক্ত লেখকের ফিকরি তারাক্কির ব্যাপারে এঘরানার অনেকের মুগ্ধতার কথা জেনেছিলাম।
.
কিন্তু বাস্তবতা এটাই, মানুষের প্রশংসা ও নিন্দা উভয়ই সাধারণত অতিরঞ্জিত। অতঃপর,
.
এমন বক্তব্যের সাধারণ কারণ হিসেবে বলা হয়,
"মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাস্ট্রের অধিকাংশ জনগণের নির্বাচিত নের্তৃস্থানীয় প্রতিনিধিরা সংসদে জমা হয় এবং পরামর্শ ও আলোচনা সাপেক্ষে অধ্যাদেশ ও আইনের মাধ্যমে রাস্ট্র পরিচালনা করে। - তাই এমনটা 'শুরা'র মতই বলা যায়।"
.
.
প্রথমত, গণতন্ত্র বলতে মূলত বোঝানো হয় সাংবিধানিক গণতন্ত্র (Constitutional Democracy) কে। এটি এমন এক ব্যবস্থা, যা কি না শাসনকাঠামোকে ধরে রাখে। আর তা হচ্ছে, সেক্যুলার রাস্ট্র।
.
পপুলিস্ট, ডানপন্থী বা ইসলামপন্থীরা যদিও নিজেদের সেক্যুলার দাবী করে না, তথাপি রাস্ট্রীয় ক্ষমতায় তারা এই কাঠামো তথা সাংবিধানিক কাঠামোর বাইরে যেতে সক্ষম না।
.
আশ্চর্য! উপকরণ তো উদ্দেশ্য হতে পারে না! মাশোয়ারা করা হলেই কি সেটা শুরা হবে!? মাশোয়ারা যদি দীনের মাসলাহাতে না হয়ে সেক্যুলার শাসনের শক্তিশালীকরণে ব্যয় হয়, সেটা কি করে "শুরা" হতে পারে!?
.
তাহলে বিয়ের দরকার কী? যিনার মাধ্যমেই তো প্রয়োজন পূরণ ও সন্তান উৎপাদন সম্ভব। ক্রিটিক্যালি চিন্তা করতে গিয়ে সরল চিন্তা ভুলে যাওয়াটাই কেমন যেন এখন সবচেয়ে বড় বিপদে পরিণত হয়েছে। আল্লাহর কাছেই আশ্রয়।
.
কে না জানে, সেক্যুলারিজমের ভিত্তির উপর রচিত সংবিধানকে কেন্দ্রে রেখেই সংসদ আবর্তিত হয়।
যার ফলে প্রকারান্তরে ডানপন্থী ও ইসলামপন্থীরা আসলেও, তারা সেক্যুলার ব্যবস্থাকে কেবল শক্তিশালী করার কাজেই নিজেদের মেধা, শ্রম ও সময় ব্যয় করেন, করবেন।
.
দিন শেষে ফলাফলের ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত আসে, আভ্যন্তরীণ জগতের রুহানী ঢেউ বা অতিবিশ্লেষণের মাধ্যমে প্রাপ্ত কোনো মাসলাহা আসলে ধর্তব্য হয় না।
.
মোটকথা, গণতন্ত্রকে যারা কেবল সরকার পরিবর্তন প্রক্রিয়া মনে করেন, তারা এক্ষেত্রে প্রাথমিক পর্যায়ের জ্ঞান রাখেন, এটাও বলাটা কঠিন।
আর যারা একথাটি জেনেশুনে বলেন, তারা হয় প্রতারণার শিকার বা প্রতারণার বাহক।
.
.
দ্বিতীয়ত, কোনো রাস্ট্রই, বিশেষত তৃতীয় বিশ্বের রাস্ট্রগুলো আসলে গণতান্ত্রিক না। অর্থাৎ, ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত সংসদের মাধ্যমে জনগণের ইচ্ছার পূর্ণ প্রতিফলন কখনোই এসব রাস্ট্রে আসলে সম্ভব না।
.
.
যেমন, চলমান রাস্ট্রীয় কাঠামোর মূল অংশ ধরা যায়-
ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলীয় রাজনৈতিক দলসমূহ, আমলাতন্ত্র বা সিভিল সার্ভিস (যার রয়েছে বহুমুখী স্বার্থ ও শাখাপ্রশাখা), সামরিক বাহিনী ও বিচার বিভাগ।
.
ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল বা বিরোধী দল চাইলেও শাসনযন্ত্রের উঠানামায় অন্যতম নিয়ন্ত্রক বাকি অংশগুলোকে উপেক্ষা করতে পারে না। বরং, অধিকাংশ পলিসি নির্ধারণেই তাদের স্বার্থ ও উদ্দেশ্যকে সমুন্নত ও অক্ষুণ্ণ রেখেই সিদ্ধান্ত নিতে হয়।
.
যেমন,
'৭১ এর পর এ মুজিব সরকার, ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা ও ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও, ব্রিটিশ উপনিবেশিক ধারায় গড়ে ওঠা নিপীড়নমূলক আমলাতন্ত্রিক কাঠামোর কোনো পরিবর্তন আনতে পারেনি।
যদিও, আওয়ামী লীগের পাকিস্তান আমলে রাজনৈতিক কর্মসূচীর অন্যতম ছিল, ব্রিটিশ আদলে গড়ে ওঠা উন্নাসিক আমলাতন্ত্রের পরিবর্তন ঘটানো!
.
এছাড়াও, '৯৬ এ প্রথম জাতীয় নির্বাচনে বিজয়ী বিএনপিকে পুনরায় নির্বাচন দিতে বাধ্য করা হয়।
এর পেছনে অন্যতম ভূমিকা রাখে 'জনতার মঞ্চ'কে কেন্দ্র করে, ডাকসাইটের আমলা নেতা, প্রাক্তন সচিব মহিউদ্দিন খান আলমগীদের নের্তৃত্বে সচিবালয়ের বড় একটি অংশের বিদ্রোহাত্মক অবস্থান!
.
আর অজস্র সেনা অভ্যুথানের সাক্ষী বাংলাদেশীদেরকে সেনাবাহিনীর প্রভাব ও দাপটের কথা খুব বেশি কিছু বলার নেই।
.
পাশাপাশি ২০১৭ তে এস কে সিনহার জুডিশিয়াল ক্যুয়ের
ব্যার্থ প্রচেষ্টাও আমাদের প্রত্যক্ষ করার সুযোগ হয়েছে।
.
.
এখন লক্ষণীয়,
শাসনযন্ত্রের প্রধাণতম নিয়ামক যে আমলাতন্ত্র, বিচার বিভাগ আর সেনাবাহিনী (যাকে ডিপ স্টেইট বলা যায়) তো জনগণের ভোটে নির্বাচিত না!
জেনে রাখা ভালো, সহকারী সচিব থেকে নূন্যতম প্রভাবসম্পন্ন অতিরিক্ত সচিব বা সচিব হতে ৩০ বছর লেগে যায়।
সহকারী জজ বা দক্ষ আইনজীবি থেকে সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি হতেও ২৫-৩০ বছর লেগে যায়।
সেকেন্ড লেফট্যনেন্ট থেকে নূন্যতম প্রভাবসম্পন্ন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হতেও লাগে প্রায় ৩০ বছরের কাছাকাছি।
.
তাহলে বিভিন্ন সেক্যুলার সরকারের অধীনে অনুগত এসব কর্মকর্তাদের রাতারাতি অনুগত বানানোর প্রক্রিয়াটাও কী হবে সেটাও জানা দরকার।
যেহেতু গণতন্ত্রপন্থীরা আকস্মিক আঘাত বা পদচ্যুত করার নীতিতে যেতে পারবেন না, সেক্ষেত্রে এময়দানে তাদের কোনোদিনও সফলতা অর্জন আসলে সম্ভব না।
.
কিভাবে শুধুমাত্র পার্লামেন্টে অধ্যাদেশ আর আইন পাশ করে, যুগের পর যুগ সেক্যুলার আইনকানুনের মাধ্যমে মাত্রাতিরিক্ত বেতন-ভাতা আর ওয়ারেন্ট অফ প্রিসেডেন্সির আলোকে অধীনস্হদের চাটুকারিতা আর বিলাস-ব্যাসন উপভোগকারীদের বিরুদ্ধে গিয়ে র্যাডিকেল পরিবর্তন আনা সম্ভব!!?
.
তুরস্ক, সামরিক অভ্যুথানের অজুহাতে ৩০০০০ সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারী পদচ্যুত করেও আজো শরিয়া বাস্তবায়নে সক্ষম হলো না। ইরান বিপ্লবের পর পূর্বের প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের গণহত্যার পরও সম্পূর্ণ শরঈ মূল্যবোধ (তাদের নিজস্ব ব্যাখ্যা মোতাবেকই) অনুসরণ করতে সক্ষম হলো না, তাহলে এদেশীয়দের ভবিষ্যৎ কি তা সহজেই অনুমেয়।
.
জামাতে ইসলামী এই ডিপ স্টেইটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের কিছু চেষ্টা করেছে। জিজ্ঞাসা করে দেখা যেতে পারে, তাদের হাস্যকর ফলাফলের ব্যাপারে।
.
.
সামান্য কিছু ব্যাক্তির স্বার্থ আর মতের কাছে কুক্ষিগত এই শাসনব্যাবস্থাকে আসলে ডেমোক্রেসি বাহ্যত বলা বলেও, বাস্তবে একে বলা হয় অলিগার্কি।
.
.
এখন, যারা বলে যে,
ভোটের মাধ্যমে সংসদে গেলে পরিবর্তন সম্ভব তারা এতে সক্ষম হবে না, যতক্ষণ না তারা আমলাতন্ত্র ও সেনাবাহিনীর মধ্যেও 'গণতান্ত্রিক' প্রক্রিয়ায় সেনাবাহিনী ও আমলাতন্ত্রে প্রভাব বিস্তার না করতে পারে।
.
এমনকি সংরক্ষিত মহিলা আসনসহ ৩৩০টি আসনও ইসলামপন্থীরা অর্জন করলেও, আমাদের রাস্ট্রব্যাবস্থার ব্যাপক কোনো পরিবর্তন সম্ভব না।
.
তাই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে "শুরা" সাব্যস্ত করা বুদ্ধিজীবী ও বিশ্লেষকদের প্রতি নিবেদন,
শরঈ পর্যালোচনা, সমালোচনা যদি আপনাদের নিকট অতিসরল, গৎবাঁধা ও 'ক্রিটিক্যালি থিংকিং'মুক্ত মনে হয়; তাহলে অন্তত বাস্তবতার আলোকে হলেও, চিন্তা-গবেষণাপূর্বক "শুরা" নামক ইসলামী পরিভাষাকে বিকৃত না করার পরামর্শ থাকলো।
.
একটি প্রচলিত কথা। একটি জনপ্রিয়, নিস্ক্রিয়তামুখী ওজর। এবং একটি অজ্ঞতাপ্রসূত, কাল্পনিক বক্তব্য।
.
সম্প্রতি এদেশের ফিকহি খেদমতের পাশাপাশি ফিকরি উন্নতির আহবায়ক একজন অনলাইন এক্টিভিস্টের লেখায়ও এমনটা দেখে অবাক হলাম। উক্ত লেখকের ফিকরি তারাক্কির ব্যাপারে এঘরানার অনেকের মুগ্ধতার কথা জেনেছিলাম।
.
কিন্তু বাস্তবতা এটাই, মানুষের প্রশংসা ও নিন্দা উভয়ই সাধারণত অতিরঞ্জিত। অতঃপর,
.
এমন বক্তব্যের সাধারণ কারণ হিসেবে বলা হয়,
"মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাস্ট্রের অধিকাংশ জনগণের নির্বাচিত নের্তৃস্থানীয় প্রতিনিধিরা সংসদে জমা হয় এবং পরামর্শ ও আলোচনা সাপেক্ষে অধ্যাদেশ ও আইনের মাধ্যমে রাস্ট্র পরিচালনা করে। - তাই এমনটা 'শুরা'র মতই বলা যায়।"
.
.
প্রথমত, গণতন্ত্র বলতে মূলত বোঝানো হয় সাংবিধানিক গণতন্ত্র (Constitutional Democracy) কে। এটি এমন এক ব্যবস্থা, যা কি না শাসনকাঠামোকে ধরে রাখে। আর তা হচ্ছে, সেক্যুলার রাস্ট্র।
.
পপুলিস্ট, ডানপন্থী বা ইসলামপন্থীরা যদিও নিজেদের সেক্যুলার দাবী করে না, তথাপি রাস্ট্রীয় ক্ষমতায় তারা এই কাঠামো তথা সাংবিধানিক কাঠামোর বাইরে যেতে সক্ষম না।
.
আশ্চর্য! উপকরণ তো উদ্দেশ্য হতে পারে না! মাশোয়ারা করা হলেই কি সেটা শুরা হবে!? মাশোয়ারা যদি দীনের মাসলাহাতে না হয়ে সেক্যুলার শাসনের শক্তিশালীকরণে ব্যয় হয়, সেটা কি করে "শুরা" হতে পারে!?
.
তাহলে বিয়ের দরকার কী? যিনার মাধ্যমেই তো প্রয়োজন পূরণ ও সন্তান উৎপাদন সম্ভব। ক্রিটিক্যালি চিন্তা করতে গিয়ে সরল চিন্তা ভুলে যাওয়াটাই কেমন যেন এখন সবচেয়ে বড় বিপদে পরিণত হয়েছে। আল্লাহর কাছেই আশ্রয়।
.
কে না জানে, সেক্যুলারিজমের ভিত্তির উপর রচিত সংবিধানকে কেন্দ্রে রেখেই সংসদ আবর্তিত হয়।
যার ফলে প্রকারান্তরে ডানপন্থী ও ইসলামপন্থীরা আসলেও, তারা সেক্যুলার ব্যবস্থাকে কেবল শক্তিশালী করার কাজেই নিজেদের মেধা, শ্রম ও সময় ব্যয় করেন, করবেন।
.
দিন শেষে ফলাফলের ভিত্তিতেই সিদ্ধান্ত আসে, আভ্যন্তরীণ জগতের রুহানী ঢেউ বা অতিবিশ্লেষণের মাধ্যমে প্রাপ্ত কোনো মাসলাহা আসলে ধর্তব্য হয় না।
.
মোটকথা, গণতন্ত্রকে যারা কেবল সরকার পরিবর্তন প্রক্রিয়া মনে করেন, তারা এক্ষেত্রে প্রাথমিক পর্যায়ের জ্ঞান রাখেন, এটাও বলাটা কঠিন।
আর যারা একথাটি জেনেশুনে বলেন, তারা হয় প্রতারণার শিকার বা প্রতারণার বাহক।
.
.
দ্বিতীয়ত, কোনো রাস্ট্রই, বিশেষত তৃতীয় বিশ্বের রাস্ট্রগুলো আসলে গণতান্ত্রিক না। অর্থাৎ, ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত সংসদের মাধ্যমে জনগণের ইচ্ছার পূর্ণ প্রতিফলন কখনোই এসব রাস্ট্রে আসলে সম্ভব না।
.
.
যেমন, চলমান রাস্ট্রীয় কাঠামোর মূল অংশ ধরা যায়-
ক্ষমতাসীন ও বিরোধী দলীয় রাজনৈতিক দলসমূহ, আমলাতন্ত্র বা সিভিল সার্ভিস (যার রয়েছে বহুমুখী স্বার্থ ও শাখাপ্রশাখা), সামরিক বাহিনী ও বিচার বিভাগ।
.
ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল বা বিরোধী দল চাইলেও শাসনযন্ত্রের উঠানামায় অন্যতম নিয়ন্ত্রক বাকি অংশগুলোকে উপেক্ষা করতে পারে না। বরং, অধিকাংশ পলিসি নির্ধারণেই তাদের স্বার্থ ও উদ্দেশ্যকে সমুন্নত ও অক্ষুণ্ণ রেখেই সিদ্ধান্ত নিতে হয়।
.
যেমন,
'৭১ এর পর এ মুজিব সরকার, ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা ও ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও, ব্রিটিশ উপনিবেশিক ধারায় গড়ে ওঠা নিপীড়নমূলক আমলাতন্ত্রিক কাঠামোর কোনো পরিবর্তন আনতে পারেনি।
যদিও, আওয়ামী লীগের পাকিস্তান আমলে রাজনৈতিক কর্মসূচীর অন্যতম ছিল, ব্রিটিশ আদলে গড়ে ওঠা উন্নাসিক আমলাতন্ত্রের পরিবর্তন ঘটানো!
.
এছাড়াও, '৯৬ এ প্রথম জাতীয় নির্বাচনে বিজয়ী বিএনপিকে পুনরায় নির্বাচন দিতে বাধ্য করা হয়।
এর পেছনে অন্যতম ভূমিকা রাখে 'জনতার মঞ্চ'কে কেন্দ্র করে, ডাকসাইটের আমলা নেতা, প্রাক্তন সচিব মহিউদ্দিন খান আলমগীদের নের্তৃত্বে সচিবালয়ের বড় একটি অংশের বিদ্রোহাত্মক অবস্থান!
.
আর অজস্র সেনা অভ্যুথানের সাক্ষী বাংলাদেশীদেরকে সেনাবাহিনীর প্রভাব ও দাপটের কথা খুব বেশি কিছু বলার নেই।
.
পাশাপাশি ২০১৭ তে এস কে সিনহার জুডিশিয়াল ক্যুয়ের
ব্যার্থ প্রচেষ্টাও আমাদের প্রত্যক্ষ করার সুযোগ হয়েছে।
.
.
এখন লক্ষণীয়,
শাসনযন্ত্রের প্রধাণতম নিয়ামক যে আমলাতন্ত্র, বিচার বিভাগ আর সেনাবাহিনী (যাকে ডিপ স্টেইট বলা যায়) তো জনগণের ভোটে নির্বাচিত না!
জেনে রাখা ভালো, সহকারী সচিব থেকে নূন্যতম প্রভাবসম্পন্ন অতিরিক্ত সচিব বা সচিব হতে ৩০ বছর লেগে যায়।
সহকারী জজ বা দক্ষ আইনজীবি থেকে সুপ্রীম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি হতেও ২৫-৩০ বছর লেগে যায়।
সেকেন্ড লেফট্যনেন্ট থেকে নূন্যতম প্রভাবসম্পন্ন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হতেও লাগে প্রায় ৩০ বছরের কাছাকাছি।
.
তাহলে বিভিন্ন সেক্যুলার সরকারের অধীনে অনুগত এসব কর্মকর্তাদের রাতারাতি অনুগত বানানোর প্রক্রিয়াটাও কী হবে সেটাও জানা দরকার।
যেহেতু গণতন্ত্রপন্থীরা আকস্মিক আঘাত বা পদচ্যুত করার নীতিতে যেতে পারবেন না, সেক্ষেত্রে এময়দানে তাদের কোনোদিনও সফলতা অর্জন আসলে সম্ভব না।
.
কিভাবে শুধুমাত্র পার্লামেন্টে অধ্যাদেশ আর আইন পাশ করে, যুগের পর যুগ সেক্যুলার আইনকানুনের মাধ্যমে মাত্রাতিরিক্ত বেতন-ভাতা আর ওয়ারেন্ট অফ প্রিসেডেন্সির আলোকে অধীনস্হদের চাটুকারিতা আর বিলাস-ব্যাসন উপভোগকারীদের বিরুদ্ধে গিয়ে র্যাডিকেল পরিবর্তন আনা সম্ভব!!?
.
তুরস্ক, সামরিক অভ্যুথানের অজুহাতে ৩০০০০ সরকারী কর্মকর্তা-কর্মচারী পদচ্যুত করেও আজো শরিয়া বাস্তবায়নে সক্ষম হলো না। ইরান বিপ্লবের পর পূর্বের প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের গণহত্যার পরও সম্পূর্ণ শরঈ মূল্যবোধ (তাদের নিজস্ব ব্যাখ্যা মোতাবেকই) অনুসরণ করতে সক্ষম হলো না, তাহলে এদেশীয়দের ভবিষ্যৎ কি তা সহজেই অনুমেয়।
.
জামাতে ইসলামী এই ডিপ স্টেইটে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জনের কিছু চেষ্টা করেছে। জিজ্ঞাসা করে দেখা যেতে পারে, তাদের হাস্যকর ফলাফলের ব্যাপারে।
.
.
সামান্য কিছু ব্যাক্তির স্বার্থ আর মতের কাছে কুক্ষিগত এই শাসনব্যাবস্থাকে আসলে ডেমোক্রেসি বাহ্যত বলা বলেও, বাস্তবে একে বলা হয় অলিগার্কি।
.
.
এখন, যারা বলে যে,
ভোটের মাধ্যমে সংসদে গেলে পরিবর্তন সম্ভব তারা এতে সক্ষম হবে না, যতক্ষণ না তারা আমলাতন্ত্র ও সেনাবাহিনীর মধ্যেও 'গণতান্ত্রিক' প্রক্রিয়ায় সেনাবাহিনী ও আমলাতন্ত্রে প্রভাব বিস্তার না করতে পারে।
.
এমনকি সংরক্ষিত মহিলা আসনসহ ৩৩০টি আসনও ইসলামপন্থীরা অর্জন করলেও, আমাদের রাস্ট্রব্যাবস্থার ব্যাপক কোনো পরিবর্তন সম্ভব না।
.
তাই গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে "শুরা" সাব্যস্ত করা বুদ্ধিজীবী ও বিশ্লেষকদের প্রতি নিবেদন,
শরঈ পর্যালোচনা, সমালোচনা যদি আপনাদের নিকট অতিসরল, গৎবাঁধা ও 'ক্রিটিক্যালি থিংকিং'মুক্ত মনে হয়; তাহলে অন্তত বাস্তবতার আলোকে হলেও, চিন্তা-গবেষণাপূর্বক "শুরা" নামক ইসলামী পরিভাষাকে বিকৃত না করার পরামর্শ থাকলো।
Comment