Announcement

Collapse
No announcement yet.

কমিন্টার্ন ও গ্লোবাল ইসলামী ফ্রন্ট!

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • কমিন্টার্ন ও গ্লোবাল ইসলামী ফ্রন্ট!


    ১৯১৭তে লেনিনের বলশেভিক পার্টির নের্তৃত্বে সংঘটিত অক্টোবর বিপ্লবের পর, বিশ্বে প্রথম কমিউনিস্ট রাস্ট্র প্রতিষ্ঠা লাভ করে।
    .
    কমিউনিস্ট আন্দোলন মূলত একটি আন্তর্জাতিক আন্দোলন বিধায়, দুনিয়াব্যাপী কমিউনিস্ট রাস্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ক্ষমতা সুসংহত হওয়ার পরপরই লেনিন-ট্রটস্কি গং "কমিন্টার্ন" বা "কমিউনিস্ট ইন্টারন্যাশনাল" গঠন করে।
    .
    পরবর্তীতে, জোসেফ স্টালিন কাঠামো ও উদ্দেশ্য বজায় রেখেই, কমিন্টার্নকে বিলুপ্ত করে গঠন করে "কমিনফর্ম"।
    .
    দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর দুনিয়ার আরেক পরাশক্তি আমেরিকার আধিপত্যের বিরুদ্ধে কমিউনিস্ট সোভিয়েত ইউনিয়নের নের্তৃত্বাধীন দুনিয়ার বিভিন্ন রাস্ট্রে কমিউনিস্ট বিপ্লব সংঘটিত হতে থাকে।
    .
    কিউবা, এংগোলা, ভিয়েতনাম, কোরিয়া, লাওস, কম্বোডিয়া, ইথিওপিয়া, নিকারাগুয়া, পেরু, আফগানিস্তান সহ বিভিন্ন রাস্ট্রে কমিউনিস্টদের লাল পতাকা উড্ডীন হয়।
    .
    কিভাবে সোভিয়েত ইউনিয়ন কেন্দ্র থেকে দূরের বিভিন্ন দেশে বিপ্লবী চিন্তা-চেতনা ও ক্ষমতার সমীকরণ নিয়ন্ত্রণ করতো সেদিকে লক্ষ্য করলে দেখা যায়,
    প্রত্যেকটি কমিউনিস্ট বিপ্লব তিনটি ধাপ পাড়ি দেয়:
    .
    #প্রথম ধাপ,
    বিভিন্ন রাষ্ট্রের উদ্যমী, ত্যাগী মানসিকতাসম্পন্ন যুবক ও শিক্ষিত শ্রেণিকে রাশিয়ার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহে অন্তর্ভুক্ত করা। যার ফলে একটিভ একটি শিক্ষিত বিপ্লবি দল তৈরি হয়ে যেত।
    আমাদের দেশের মণি সিংহ, মুজাফফর আহমাদ, মুহাম্মাদ ফরহাদ প্রমুখরা ছিল উপমহাদেশ তথা বাংলাদেশে কমিউনিস্ট আন্দোলনের পথিকৃৎ; যারা নিয়মিতই তরবিয়তি সফরে মস্কো অবস্থান করতো। এবং এখনো আমাদের দেশের ক্ষমতার বলয়ে তাদের উত্তরসূরী মেনন, রনো বা ইনুরা গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে।
    .
    #দ্বিতীয় ধাপ, উল্লেখিত দলকে নিজ রাষ্ট্রে পাঠিয়ে দেওয়া হতাে, যেখানে তারা বিপ্লবের পরিবেশ তৈরি করত। তারা নিজেদের দেশে শ্রমিক, মেহনতি ও শিক্ষিত শ্রেণিকে সংগঠিত করে রাষ্ট্রের মধ্যে ছড়িয়ে দিত এবং
    i) বেসামরিক বিদ্রোহীদের বিপ্লবী আন্দোলন সৃষ্টি করতো বা সামরিক অভ্যুথান ঘটাতো।
    কিংবা,
    ii) দীর্ঘমেয়াদি সামরিক গেরিলা কার্যক্রমের মাধ্যমে এই আন্দোলনকে শক্তিশালী করতো।
    .
    #তৃতীয় ধাপ, প্রশাসন দখল করে সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা।।
    .
    ______
    ১৯৯২ এ সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের সাথে সাথে কমিউনিস্ট আন্দোলন ও বিপ্লবের ধ্যানধারণা বাস্তব দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়ে ইতিহাসের পাতায় স্থান করে নিয়েছে।
    .
    কিন্তু, সোভিয়েত পতনের পর ইসলামের আরেক শত্রু আমেরিকার পতন বাকি রয়ে যায়।
    .
    এক্ষেত্রে আমাদের দূরদর্শী নের্তৃবৃন্দ্ব আমেরিকা ও সোভিয়েত নামক দুই কুকুরের লড়াই থেকে ভারসাম্যহীন সংঘর্ষের সমীকরণ মেলাতে আগ্রহী হোন।
    .
    কেননা, প্রায় ৪০ বছর ধরে চলে আসা স্নায়ুযুদ্ধের ফলে কোনো রাস্ট্রই, বিশেষত মুসলিমপ্রধাণ রাস্ট্রগুলো নিজস্ব শক্তিতে চলতে অপারগ ছিল। যার প্রমাণ মেলে, আরব ও এশিয়ার মুসলিমপ্রধাণ রাস্ট্রগুলোর সোভিয়েতপন্থী শাসকদের রাতারাতি আমেরিকার বশ্যতা স্বীকার করে নেয়ার মাধ্যমে।
    .
    ইতিহাস ও বিশ্বব্যবস্থার পাশাপাশি, শরীয়া ও বাস্তবতার গভীর জ্ঞান ও উপলব্ধি অর্জনকারী এযুগের প্রকৃত নের্তৃবৃন্দ্ব বুঝতে পারেন,
    স্থানীয়ভাবে দালাল শাসকগোষ্ঠীকে অপসারণ বা সেক্যুলার শাসনব্যবস্থাকে ইসলামী শাসন দ্বারা প্রতিস্থাপন সম্ভব নয়, যতক্ষণ না আমেরিকা ও তার মিত্ররা তাদের উচ্ছিষ্টভোগী শাসকদের পরিত্যাগ করে। এই চিন্তার যথার্থতা সম্প্রতি প্রমাণিত হয়েছে আ ফ গা নি স্তা নে।
    .
    আর এক্ষেত্রে বৈশ্বিক মোড়লদের মদদপুষ্ট শক্তিশালী ও প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামোর বিরুদ্ধে বিচ্ছিন ও দূর্বল গোষ্ঠীর কর্মসূচীর ক্ষেত্রে কমিন্টার্নের সামরিক ও রাজনৈতিক কৌশল যথেষ্ট কার্যকর ছিল এবিষয়টিও কেন্দ্রীয় নের্তৃত্ব অনুভব করেন।
    .
    .
    আমেরিকা ও তার মিত্রদের মুসলিমদের ভূমিতে নাক গলানো বাদ দিয়ে নিজ খোলসে ফিরে যেতে বাধ্য করার উদ্দেশ্যেই,
    আমাদের ইমামগণ মুসলিম ভূমিগুলোতে আমেরিকার বৈশ্বিক আধিপত্য বিনস্টকরণের মাধ্যম হিসেবে, অনেকটা কমিন্টার্ন এর আদলেই (উপরোল্লিখিত তিন ধাপকে অবলম্বন করেই),
    বিশ্বব্যাপী "গ্লোবাল ইসলামী ফ্রন্ট" তথা "কায়েদাতুল জিহাদ" এর দাওয়াহ ও সাংগঠনিক কাঠামোকে ছড়িয়ে দেন, যার বাস্তবতা ও ফলাফল আমাদের সামনেই রয়েছে।
    .
    এই ঐতিহাসিক ও বরকতপূর্ণ প্রক্রিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ্যে আসে ১৯৯৮ সালে "গ্লোবাল ইসলামিক ফ্রন্ট" বা "বৈশ্বিক ইসলামী ফ্রন্ট" ব্যানারে; যা পরবর্তীতে আরো বিকশিত ও ব্যাপৃত হয়ে আজকের "কায়েদাতুল জিহাদ" এর অধীনে বর্তমান অবস্থায় এসেছে।
    .
    অতিরঞ্জন ব্যাতীরেকে বলা যায়,
    কোনো রাস্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা ছাড়াই, এফ-১৬, ড্রোন বা আকস্মিক রেইডের আতংক ও অনিরাপত্তাবোধের মাঝেই গোটা দুনিয়াতে পশ্চিমা আধিপত্যের ভিত নড়িয়ে দিয়ে নিজ অবস্থান করে নেয়া আমাদের নেতা, উলামা ও ভাইয়েরা, ইসলামের বিজয় ও প্রভাব ফিরিয়ে এনে পুনরায় এক অসাধারণ ইতিহাস রচনা করেছেন
    !
    .
    তাই সকল মুসলিমপ্রধাণ ভূখন্ডের, বিশেষত আমাদের ভূমির জ্ঞানী, সক্ষম, আন্তরিক ও আগ্রহী মুসলিম ভাইদের উচিৎ -
    ক) স্থানীয়ভাবে গ্লোবাল মানহাজের অনুগামী সংগঠনসমূহের সাথে জুড়ে যাওয়া বা তাদের শক্তিশালী করা।
    অথবা,
    খ) কেন্দ্রীয় নের্তৃত্বের ভূমিতে সফর করে তাত্ত্বিক ও প্রায়োগিক তরবিয়ত হাসিল করা।
    .
    কেননা, শরিয়ার আলোকে তো বটেই; এমনকি সাইকস-পিকট চুক্তি তথা দাওলাতুল উসমানিয়ার পতনের পর থেকে নতুন কাঠামোতে পরিচালিত বিশ্বব্যবস্থার অধীন রাস্ট্রসমূহের উথান-পতনের ইতিহাসও সাক্ষ্য দেয়,
    এপথই মূলত ইসলামের বিজয় ও সমৃদ্ধির পথ!!
    .
    পাশাপাশি এবিষয়টি উম্মাহর নিকট স্পস্ট থাকা প্রয়োজন যে,
    পশ্চিমাদের দুনিয়াবি কৌশল ও সমরবিদ্যা যা মুসলিমদের কল্যাণে আসে এবং একই সাথে শরীয়ার সাথে সাংঘর্ষিক নয়, তা গ্রহণে আমাদের উলামায়ে কেরাম বাধা দেন না; বরং ক্ষেত্রবিশেষে তা অপরিহার্যই সাব্যস্ত করেন।
    .
    .
    সাইয়িদ কুতুব রহ. বলেছেন,
    “রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আকিদা ও ইসলামি মানহাজের ব্যাপারে সাহাবায়ে কেরামের সাথে যে পরিমাণ কঠোরতা করেছেন; ঠিক সেরকম স্বাধীনতা দিয়েছেন অভিজ্ঞতা অর্জন, জ্ঞানবিজ্ঞান অর্জন ও চিন্তার স্বাধীনতার ক্ষেত্রে, যাতে এসব লোক কৃষি ও সামরিক কর্মকাণ্ডে নিজেদের রায় ও অভিজ্ঞতা দ্বারা সুফল ভোগ করতে পারে। কেননা, এসব বিষয়ের সাথে আকিদার সম্পর্ক নেই। এগুলো দ্বারা সমাজ উন্নয়নে ভূমিকা রাখা যায়।
    .
    বিশ্বাস ও বস্তুগত বিষয়াদির মাঝে পার্থক্য স্পষ্ট। জীবনের মানহাজ ও পন্থা এক জিনিস, বিশুদ্ধ পরীক্ষামূলক এবং প্রায়োগিক বিজ্ঞান অন্য জিনিস। আল্লাহর দেওয়া পদ্ধতি অনুযায়ী জীবন যাপন করার জন্য ইসলাম এসেছে।
    সেই ইসলাম মস্তিষ্ককে জ্ঞানের পথ ধরে শরীয়াহ অনুমোদিত সৃজনশীলতাকে কাজে লাগানোর অনুমতি দেয়।”
    (ফি যিলালিল কুরআন, ৪/২০-২১)

  • #2
    একমাত্র গভীর শরয়ী বুঝের মাধ্যমেই প্রতিটি কর্মের বিশুদ্ধতা ও ফলাফল নির্ণয় করা সম্ভব হয়। বাস্তব জীবনের অভিজ্ঞতা থেকে এই বুঝটা এসেছে যে, চিন্তার স্বাধীনতা ও সৃজনশীলতা প্রয়োগ(মোটকথা যেকোনো পদক্ষেপ) এর পূর্বে শরয়ী ইলম অর্জন করা আবশ্যক। অধিকাংশ মুসলিম ভাই-বোনদের মেধা ও মেহনত উভয়ই থাকা সত্ত্বেও শরয়ী বুঝের ঘাটতির ফলে তারা বিভিন্ন ভ্রান্তিতে লিপ্ত। ফলে উপকারের স্থলে উল্টো ফিতনা ছড়ায়। আল্লাহ আপনার লেখনীতে বারাকাহ দান করুন।

    Comment


    • #3
      আসসালামুয়ালাইকুম প্রিয় মুহতারাম দ্বীনি ভাই আপনার এই লেখাগুলকে কিতাব আকারে প্রকাশ করুন ইনশাআল্লাহ, আমারা এতে উপকৃত হব, আল্লাহর সুবহানাহু ওয়া তায়ালা এর উপর তাওয়াক্কুল করে শুরু করে দিন ।

      Comment

      Working...
      X