Announcement

Collapse
No announcement yet.

সেক্যুলার শিক্ষাব্যবস্থা ও ইসলামপন্থীগণ....

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • সেক্যুলার শিক্ষাব্যবস্থা ও ইসলামপন্থীগণ....

    ​​​​​
    ফ্যালাসি অফ জেনারালাইজেশন, এটি হচ্ছে একটি প্রবণতা। সহজভাবে বললে,
    "পছন্দসই কিছু তথ্যের ভিত্তিতে ঢালাও সিদ্ধান্ত পৌছে যাওয়া"-কে আমরা বলতে পারি Fallacy of Generalisation.
    .
    উদাহারণ উপলব্ধির চাবি। গ্রহণ করুনঃ-
    "ধরা যাক কেউ একজন প্রচুর মদ খায়, কিন্তু সে খুবই সুদর্শন। এথেকে সিদ্ধান্ত দেয়া যায়, যারা মদ খায় তারাই সুদর্শন হয়।"
    .
    শাহবাগী সেক্যুলারদের কারণে এজাতীয় আলোচনার সাথে আমরা সবাই কমবেশী এপ্রবণতার সাথে পরিচিত আছি।
    তবে বিশুদ্ধ নিয়তের অধিকারী দীনের ক্ষেত্রে আন্তরিক কারো থেকেও এমনটা হয়ে যেতে পারে অনিচ্ছাকৃতভাবে।
    এতে সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তির যোগ্যতা বা সম্মান আক্রান্ত হয়না। আল্লাহ তা আলা সুস্থির রাখুন।
    .
    অতঃপর,
    .
    আমাদের দেশের মতো ভূমি, যেখানে ইসলাম ও সেক্যুলার ব্যাবস্থার চূড়ান্ত ফয়সালা করে দেয়ার মতো সংঘাত চলমান না বা দৃশ্যমানও না, ইসলামপন্থীদের কমিউনিটিকেন্দ্রিক অবস্থানও অত্যন্ত দূর্বল বা নামেমাত্র এবং সর্বত্রই সেক্যুলারদের প্রাবল্য প্রকট;
    সেক্ষেত্রে সমাজের মূল স্রোত থেকে নিজেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করে ফেলাটা সাধারণ নীতি সাব্যস্ত করাটা বাস্তবতা ও দীনের চাহিদা নয়। এটা ঠিক।
    .
    কিন্তু, এটাও সঠিক অবস্থান নয় যে,
    ঢালাওভাবে সেক্যুলার শিক্ষাব্যবস্থা বা কর্মস্থল থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়াকে নেতিবাচকভাবে দেখা হবে,
    অথবা, ঢালাওভাবে এতে সংযুক্ত হওয়ার আহবান জানানো হবে।
    .
    বিশেষত, স্নাতক পর্যায়ে পড়াশোনার জন্য ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার বিষয়টি কখনই ঢালাও ভাবে উৎসাহিত করা সম্ভবত সংগত নয়।
    কারণ,
    .
    ক. সমাজের মূল স্রোত মানেই সেক্যুলার শিক্ষাব্যবস্থায় অংশগ্রহণ না। এখনো সমাজের পেশাজীবিদের সিংহভাগ স্নাতক বা স্নাতকোত্তর নন। নূন্যতম অর্থনৈতিক সচ্ছলতার জন্য দীর্ঘমেয়াদী সেক্যুলার শিক্ষা কখনই জরুরী না।
    .
    খ. বিদ্যমান সেক্যুলার শিক্ষাব্যবস্থার কোনো বিভাগেই এমন কোনো দূর্দান্ত জ্ঞান নেই, যা অর্জন করা ইসলামপন্থীদের জন্য জরুরী। প্রয়োজনীয় জ্ঞানের বিকল্প অর্জন যে সম্ভব, তার অন্যতম প্রমাণ শায়খ আবু খাব্বাব আল মিসরী বা ইব্রাহিম হাসান আল আসিরীর ল্যাবরেটরি।
    .
    গ. বিশেষায়িত বা দক্ষ জনবলের সংকট নিরসনে ইসলামপন্থীদের করণীয় হচ্ছে, ইতিমধ্যেই যারা এসব শিক্ষাঙ্গন বা কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করেছে তাদেরকে ইসলামের গন্ডির মধ্যে নিয়ে আসা।
    .
    পরিসংখ্যান ও অভিজ্ঞতার আলোকে দেখা যায়, দীনের খেদমতের নিয়তে সেক্যুলার শিক্ষার আত্মীকরণের হার অনুল্লেখযোগ্যই বটে; বিপরীতে সেক্যুলারদের মধ্যে আত্মিকভাবে সৎ ব্যাক্তিদের মাধ্যমে উদ্দিষ্ট "দীনের খেদমত" তুলনামূলক বেশী, দ্রুতগামী ও ব্যাপকই বটে।
    .
    ঘ. ইসলাম ও সেক্যুলারিজমের সংঘাতে ইসলামপন্থীদের সফলতা অর্জনে এখন বেশী প্রয়োজন তাওহিদ ও ইসলামের ইলমের সঠিক শিক্ষা ও প্রয়োগের উপলব্ধি, সুন্নাহর আলোকে ইতিহাস ও ভূরাজনীতির গভীর বা সাধারণ মানের জ্ঞান, পশ্চিমা সভ্যতার সমরনীতি ও রাজনৈতিক মূলনীতির জ্ঞান, ব্যাবস্থাপনা সংক্রান্ত জ্ঞান ইত্যাদি।
    .
    যদি এক্ষেত্রে সেক্যুলার শিক্ষাব্যবস্থা থেকে বিশেষায়িত ফায়দা হাসিল করতেই হয়, তাহলে তো অন্য কিছুর পরিবর্তে অগ্রাধিকার পাবে-
    দর্শন, নৃবিজ্ঞান, শান্তি ও সংঘর্ষ, ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ, ভূগোল বা আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ইত্যাদিতে অধ্যায়ন করা।
    .
    সেক্ষেত্রে অন্যদের চেয়ে এগিয়ে থাকার জায়গা তো আর থাকছে না। আর সাধারণত কোনো ছাত্র মেধাতালিকার শেষদিকে স্থান না পেলে এসব বিভাগ নিতে চায়না, এটাই বাস্তবতা।
    .
    .
    পাশাপাশি এসব নন-টেকনিক্যাল বিষয়ের শেষ ভরসা সাধারণত হয় বিভিন্ন এনজিও বা বিসিএস (যেখানে প্রবেশের মাঝে অকল্যাণ বেশী থাকাটা সুসাব্যস্ত বিধায়, শরঈ বৈধতা উলামারা দেননি। হ্যা, ইরজার ব্যাধিতে আক্রান্ত বা নফসের মাযহাবের মুকাল্লিদ হলে ভিন্ন কথা।)।
    .
    ঙ. এছাড়া ইউনিভার্সিটিগুলোর সাংস্কৃতিক মান অত্যন্ত নিম্ন মানের। স্বাভাবিক অবস্থা এটাই যে, এই ইউনিভার্সিটিগুলো এমন ব্যাক্তিত্ব গঠন করে যারা সাধারণত লৌকিকতাপ্রিয়, আত্মশ্লাঘায় আক্রান্ত, পরশ্রীকাতর ও আত্মকেন্দ্রিক।
    বিশেষ ব্যাতিক্রম থাকতে পারে, তবে তা একেবারেই নগণ্য।
    .
    শুধুমাত্র খানকা, চিল্লা বা মাদ্রাসায় কিছু সময় কাটিয়ে এই বিকারগ্রস্ত মানসিকতা পুরোপুরি ঝেড়ে ফেলা প্রায় অসম্ভব।
    যদি ইউনিভার্সিটি থেকে বেরিয়ে আসা র‍্যাডিকেল চিন্তাবিশিষ্ট ইসলামপন্থীদের পরিসংখ্যানও আমরা যাচাই।করি, ভয়াবহ চিত্র বেরিয়ে আসবে তাতে সন্দেহ নেই।
    .
    কিছুটা নিরাপত্তা বজায় রেখেও যদি বলি,
    সাধারণ দীনদারদের কথা যদি বাদও দেই, আমাদের বহুল পরিচিত ইসলামপন্থী বা অনলাইন এক্টিভিস্টদের অনেকের মাঝেও সন্তোষজনক ব্যাক্তিত্ব বা চারিত্রিক দৃঢ়তার সংকট রয়েছে; যার অন্যতম কারণ আমার অভিজ্ঞতায়, সেক্যুলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে দীর্ঘ সময় অতিবাহিত করা।
    .
    চ. সেক্যুলার দার্শনিক সলিমুল্লাহ খান সহজভাবে বুঝিয়েছেন,
    প্রচলিত সেক্যুলার শিক্ষাব্যবস্থার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, প্রজাতন্ত্রের খাদেম বের করে নিয়ে আসা। স্বাভাবিকভাবেই বুঝে আসে যে, ১ম থেকে ২২তম গ্রেডের জন্য প্রয়োজনীয় লাখ লাখ দক্ষ লোক শুধুমাত্র নিয়োগ পরীক্ষার মাধ্যমে বের করে নিয়ে আসা সম্ভব না।
    .
    শুধুমাত্র যদি প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তাদের (১ম-৯ম গ্রেড) চাহিদা পূরনের কথাও যদি ধরা হয়,
    মানসম্মত সরকারী গোলাম নিয়োগে প্রতিযোগিতামূলক প্রক্রিয়া অপরিহার্য বিধায়ই, শিক্ষার ব্যাপ্তি এত ব্যাপক করা। কেননা, নূন্যতম স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষা অর্জন ব্যাতীত বিসিএস/পিএসসির নিয়োগের আওতাধীন পরীক্ষার ইঁদুর দৌড়ে অংশই নেয়া সম্ভব না।
    .
    এছাড়াও, সেক্যুলার সিস্টেমের বৈধতা আদায়কারী সিভিল সোসাইটি বা বুদ্ধিজীবি সম্প্রদায় কিংবা অর্থনীতি সচল রাখতে টেকনিক্যাল পেশাজীবিরাও সক্রিয় ভূমিকা রেখে থাকে। তবে এক্ষেত্রে সরকারী চাকুরির চেয়ে কিছুটা প্রশস্ততা রয়েছে, এটাও ঠিক।
    .
    .
    আসলে এব্যাপারে আরো অনেক অনেক কথাই বলা সম্ভব। প্রয়োজনবোধে হয়তো কেউ করবেন আশা রাখি।
    .
    .
    মূল কথা হচ্ছে,
    .
    সাধারণভাবে বলা যায়,
    এখন পর্যন্ত যারা সেক্যুলার ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হননি এবং পারিবারিক চাপ উপেক্ষা করে বিরত থাকার সুযোগ আছে, তাদের জন্য এথেকে দূরে থাকাই ভালো।
    .
    অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির মেহনতের জন্য বহু সুযোগ এইচএসসি উত্তীর্ণদের জন্য রয়েছে। আর স্ট্যটাস মেইনটেইন এর চাহিদা তো কোনো আত্মমর্যাদাসম্পন্ন মুসলিমের বৈশিষ্ট্য হতে পারে না। তাই নয় কি!?
    .
    .
    আর বিশেষভাবে বলা যায়,
    উত্তম হলো দীনের ক্ষেত্রে আন্তরিক, দীন ও দুনিয়ার ব্যাপারে অবগত, কল্যাণকামী ও তাকওয়ার নিকটবর্তী ধীরস্থির কোনো দীনী মুরুব্বী/ভাইয়ের সাথে বিস্তারিত পরামর্শক্রমে সিদ্ধান্ত নেয়া, অগ্রসর হওয়া।
    কেননা দীন ও দুনিয়ার সামগ্রিক চাহিদার আলোকে ব্যাক্তিবিশেষে এক্ষেত্রে সিদ্ধান্তগ্রহণে তারতম্যের সু্যোগ রয়েছে। ওয়াল্লাহু আ'লাম।
    .
    .
    বাধ্য হয়ে যদি সেক্যুলার শিক্ষাব্যবস্থায় প্রবেশ যদি করাই লাগে, তা হবে অস্বস্তিবোধ ও বিব্রতবোধের সাথে; স্বতঃস্ফূ্র্ততা, আগ্রহ বা শ্রেষ্ঠত্বের অনূভূতির সাথে নয়।
    .
    اِنَّمَا حَرَّمَ عَلَیۡکُمُ الۡمَیۡتَۃَ وَ الدَّمَ وَ لَحۡمَ الۡخِنۡزِیۡرِ وَ مَاۤ اُہِلَّ بِہٖ لِغَیۡرِ اللّٰہِ ۚ فَمَنِ اضۡطُرَّ غَیۡرَ بَاغٍ وَّ لَا عَادٍ فَلَاۤ اِثۡمَ عَلَیۡہِ ؕ اِنَّ اللّٰہَ غَفُوۡرٌ رَّحِیۡمٌ ﴿۱۷۳﴾
    .
    "নিশ্চয় তিনি তোমাদের উপর হারাম করেছেন মৃত জন্তু, রক্ত, শূকরের গোশ্ত এবং যা গায়রুল্লাহর নামে যবেহ করা হয়েছে।
    সুতরাং যে বাধ্য হবে; অবাধ্য বা সীমালঙ্ঘনকারী না হয়ে, তাহলে তার কোন পাপ নেই। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।"

    “সাঈদ ও মুকাতিল ইবনে হাইয়ান বলেন, غَیۡرَ بَاغٍ অর্থ হচ্ছে, তাকে হালাল মনে না করে।
    .
    ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণিত, "তা তৃপ্তি পরিমাণ খাবে না।"
    ইবনে আব্বাস থেকে আরো বর্ণিত আছে, " অর্থাৎ মৃত প্রাণীর প্রতি আগ্রহী হবে না এবং তা খাওয়ার ক্ষেত্রে সীমালঙ্ঘন করবে না।"
    .
    কাতাদা বলেছেন, "যেমন হালালকে অতিক্রম করে হারাম খেল, অথচ সে তা না করেও পারে।"
    .
    কুরতুবী রহ. فَمَنِ اضۡطُرَّ এর ব্যাখ্যায় মুজাহিদ রহ. থেকে বর্ণনা করেছেন, "তার ইচ্ছার বাইরে তাকে তা খেতে বাধ্য করা হয়েছে।”
    ______
    তাই এমনটা তো কাম্য নয় যে, আমরা সেক্যুলার শিক্ষাব্যবস্থায় প্রবেশের বিষয়টি মহিমান্বিত বা সৌন্দর্যমণ্ডিত করব, মানুষকে আগ্রহী করে তুলব, সাধারণ নিয়ম হিসেবে প্রচার করব।
    কেননা সেক্যুলার শিক্ষাব্যবস্থার মাঝে মুসলিমদের জন্য সম্ভাবনার চেয়ে আশংকাই বেশী।
    .
    যার ঈমান আর ব্যাক্তিত্বের জোর আছে সে দূরে থাকবে আর অন্যরা বাধ্য হয়ে প্রবেশ করলেও, সঠিক স্থানে পরামর্শক্রমে অনাগ্রহের সাথে, জরুরতের দিকে লক্ষ্য রেখেই প্রবেশ করবে।
    .
    আল্লাহই ভালো জানেন।
    .
    আরো বলা যায়,
    সাম্প্রতিক সময়ের কথা বাদ দিলে, ১৮ বছর বয়সের ব্যাক্তিদের কাছে পৌরুষ আশা করাটাই ছিল স্বাভাবিক। অধঃপতিত সমাজের স্বাভাবিক বাস্তবতা হিসেবে, সমাজে বালকরূপী পুরুষের সংখ্যাই বেশী, ঠিক।
    .
    কিন্তু এজন্য শরঈ ও দীনের দাবী খুব সম্ভব উল্টে যাবে না। যা শর্তযুক্ত, তা কিয়ামত পর্যন্ত শর্তযুক্তই থাকবে; অকাট্য বা ঢালাওভাবে গ্রহণযোগ্য হবে না।।
    .
    সমাজ বৈরী বা মানুষের ঈমান দূর্বল বিধায়, দাওয়াহর ক্ষেত্রে শৈথিল্যপরায়ণতা কেন প্রকাশ পাবে!?

    ওয়াল্লাহু আ'লাম।

  • #2
    উদাহারণ উপলব্ধির চাবি।
    উপলব্ধি করতে পারা আল্লাহ সুবহানু ওয়া তায়ালার পক্ষ থেকে অনেক বড় একটি নিয়ামত ।
    উপলব্ধি করতে পারা অনেক বড় একটি গুণ ।
    উপলব্ধি করতে পারলে সহজে সমন্বয় করা সম্ভব হয় ।
    উপলব্ধির মাধ্যমে হৃদয়পটে দৃশ্যয়িত করা যায় ।
    উপলব্ধি চিন্তা জগতের বিসৃতি ঘটায়
    হে পরাক্রমশালী শক্তিধর! কৃপণতা আর কাপুরুষতা থেকে আশ্রয় চাই সর্বক্ষণ।

    Comment


    • #3
      Originally posted by আফ্রিদি View Post

      উপলব্ধি করতে পারা আল্লাহ সুবহানু ওয়া তায়ালার পক্ষ থেকে অনেক বড় একটি নিয়ামত ।
      উপলব্ধি করতে পারা অনেক বড় একটি গুণ ।
      উপলব্ধি করতে পারলে সহজে সমন্বয় করা সম্ভব হয় ।
      উপলব্ধির মাধ্যমে হৃদয়পটে দৃশ্যয়িত করা যায় ।
      উপলব্ধি চিন্তা জগতের বিসৃতি ঘটায়
      জ্বী ভাইজান ঠিক বলছেন।
      আল্লাহ আমাদের উপলব্ধি করার তৌফিক দান করুন। আ-মীন

      Comment


      • #4
        এ বিষয়েটা আমার মনেও এসেছিল। মনে হয়েছিলো যে, ছেলেকে কোথায় পড়াবো - মাদ্রাসায়, না স্কুলে। স্বাভাবিকভাবে মাদ্রাসায় দেওয়ার কথা। কিন্তু তাহলে এ জাতীয় চিন্তা কেন আমার মাথায় আসলো!

        এর একটা কারণ হিসেবে আমি যেটা উপলব্ধি করেছি সেটা হলো - আমি মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের একটা বিশাল অংশকে হীনমন্যতায় ভুগতে দেখেছি। যেটা শায়খ আবুল হাসান আলী নদভী (রহঃ) তার লেখনী ও বক্তৃতায় স্বীকার করেছেন। আর নিজেকে শ্রেষ্ঠ দাবি করলেই মানুষের অন্তরে শ্রেষ্ঠত্বের আসনে আসীন হওয়া যায় না। বেশিরভাগ মাদ্রাসাগুলোতে আরবি কিংবা বাংলা কোনটাই মানসম্পন্নভাবে পড়ানো হয় না। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লামের ব্যাপারে বলা হয়েছে, তিনি সর্বাধিক বিশুদ্ধভাষী ছিলেন। অনেকে রাসূলের পবিত্র জীবনী সমন্ধেও মোটাদাগে কয়েকটা কথা ছাড়া তেমন কিছুই বলতে পারে না। ফিতনা আসলে সর্বত্রই ছড়িয়ে পড়েছে। এসব কারনে আসলে দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে গিয়েছি।

        তাদেরকে দেখেছি, তারা সমাজ থেকে অনেক দূরে। যেটা কখনই কাম্য নয় বিশেষত তাদের জন্য যাদের ঘাড়ে ন্যস্ত হয়েছে উম্মাহর সংশোধন ও প্রশিক্ষণের দায়িত্ব । সমাজের নিকটবর্তী হওয়া বলতে আমি এটা বুঝাচ্ছি না যে, আক্বীদা-বিশ্বাসে, পোশাকে-আশাকে সমাজের সাথে মিলেমিশে একাকার হয়ে যাওয়া, যেমনটা ইদানীং অনেকের মাঝে দেখা যাচ্ছে। বরং পারষ্পরিক সম্পর্ক ও সৌহার্দ্যের ভিত্তিতে পারষ্পরিক ভুল বুঝাবুঝি দূর করা যা কাফেরা তাদের মিডিয়া নামক যাদুকরের মাধ্যমে সৃষ্টি করে রেখেছে।

        উম্মাহর জন্য প্রত্যেক ক্ষেত্রে সফল দ্বীনদার ও একনিষ্ঠ ব্যক্তিদের দরকার। দরকার বিচক্ষণ ও বিদগ্ধ উলামাদের যাদের থাকবে শরিয়ত ও বাস্তবতার গভীর উপলব্ধি এবং আল্লাহর উপর ভরসার ক্ষেত্রে যারা হবেন অন্যদের নিকট দৃষ্টান্ত। যারা হবেন মায়ের মত মমতাময়ী এবং মুহাম্মাদে আরাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওসাল্লামের পদাংক অনুসারী, যার নিকট একজন আরব বেদুঈনও অকপটে যেকোন প্রশ্ন করতে পারে। যার ব্যাপারে দুশমনও বিশ্বস্ততার সনদ দিয়ে থাকে। যার ভালোবাসায় শত-সহস্র মাইল দূরে থেকেও হৃদয় সমূহ ঈমানের আলোতে উদ্ভাসিত হয়।

        উলামাদের জনবিচ্ছিন্ন হওয়া কোনভাবেই কাম্য নয়, বিশেষভাবে সৎ, নির্ভিক, যোগ্য ও দ্বীনের প্রতি যারা ভালোবাসা পোষণ করে তাদের থেকে। আর আন্দোলনের শুরু থেকেই একদম বিশুদ্ধ আক্বীদা ও মানহাজের লোকদের আলাদা করে ফেলা আমার মতে যুক্তিযুক্ত না।
        শুরুতে সবাইকে নিয়ে কাজ করতে হবে। অর্থাৎ যে আমার পক্ষে একটা ঢিল ছুড়বে আমি তাকেও আমার সাথে নিবো। একটা সময় কেবল কুরবানির মাধ্যমে আমাদের নিজেদেরকে একমাত্র কার্যকর শক্তি হিসেবে জনগণের সামনে প্রমাণ করতে হবে।

        যেন সোনা যেভাবে খাঁটি করা হয় সেভাবে। প্রথমে সবকিছুকে একসাথে আগুনে দেওয়া হয়। তারপর সেখান থেকে খাঁটি সোনা আলাদা করা হয়। ঠিক সেভাবে আমরা প্রথমে সবাইকে বাতিলের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অবতীর্ণ করতে চাই। তারপর নিজেদেরকে আলাদা করতে চাই।

        বাংলার জমিনে যারা নিজেদের বাতিলের বিরুদ্ধে কার্যকর শক্তি হিসেবে প্রমাণ করেছে তাদের অধিকাংশই সাধারণত জাগতিক জ্ঞানের পাশাপাশি দ্বীনের জ্ঞানও লাভ করেছেন তা যতটুকুই হোক।

        সাহাবীরা জাহিলিয়াতও দেখেছেন, সেই সাথে ইসলামের স্বর্ণযুগও দেখেছেন। তাই তারা বাতিলের বিরুদ্ধে কার্যকর শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিলেন। আমার কথা দ্বারা কেউ এটা বুঝবেন না যে, আমি বলছি যারা জাহেলিয়াত দেখেননি তারা জাহেলিয়াতে চলে যান। বরং জাহেলিয়াতকে নির্মুল করতে দরকার জাহেলিয়াতের সত্যিকারের উপলব্ধি। জাহেলিয়াতের ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু কোথায় তা জেনে সজোরে সেখানে আঘাত করা। বর্তমানে জাহেলিয়াত হয়ত রুপ পাল্টিয়েছে, কিন্তু আপনি চিন্তা করলেই অতীতের জাহেলিয়াতের সাথে মিল খুঁজে পাবেন। তেমনিভাবে আশা করা যায়, আপনার সমাধানের রুপ ভিন্ন হলেও মূলনীতি একই থাকবে। এজন্য দরকার গভীর মনোনিবেশ ও অধ্যয়ন। বিভিন্ন সমাধান নিয়ে চিন্তা করা।

        আপনি যদি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়তে চান তাহলে আপনার জানা উচিৎ সেনাবাহিনীর ইন্টারনাল স্ট্রাকচার এবং পলিসি সমূহ। এই ব্যাপারে সেই আপনাকে ভালো ধারণা দিতে পারে যে আগে সেনাবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ কোন পদে ছিলেন।

        তাই দরকার উভয় জ্ঞানে নিজেদের সমৃদ্ধ করার। যদি তা না হয়, তাহলে অন্তত সেক্যুলার শিক্ষা ব্যবস্থার স্বরুপ উন্মোচন করে কীভাবে তার ক্ষতি থেকে বেঁচে থেকে উপকারী দিকগুলো অর্জন করা যায় এ ব্যাপারে নির্দেশনা প্রদান করা। সাথে সাথে সেক্যুলার শিক্ষাব্যবস্থায় অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা কীভাবে দ্বীনের মৌলিক বিষয়ের জ্ঞান অর্জন করতে পারে সে ব্যাপারেও নির্দেশনা প্রদান করা।

        শরিয়তে কখনো কখনো শিথিলতা থাকে যেটা পরিস্থিতি বিবেচনায় গ্রহনযোগ্য, বরং অনেক ক্ষেত্রে সফলতার জন্য অপরিহার্য। তাই শরিয়তের জ্ঞান নেতৃত্বের জন্য অপরিহার্য। না হয় সে হটকারি সিদ্ধান্তের দিকে ধাবিত হবে প্রতিটি ক্ষেত্রে। এজাতীয় ব্যক্তি যদি নেতৃত্বের আসনে থাকে তাহলে আরো বিপদ! সম্মানের কারণে অধীনস্থদের চুপ থেকে আনুগত্য করে যাওয়ার সম্ভাবনাও একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

        আর যিনি শুধু বাস্তবতাই বুঝার চেষ্টা করে তথাপি শরিয়তের সুগভীর জ্ঞান রাখে না, তিনি বাস্তবতার দোহাই দিতে শরিয়তকে তাগুতের বেদীতে বলি দিবেন- আশংকাও একেবারে অমূলক নয়।

        এটা একান্তভাবেই আমার ব্যক্তিগত উপলব্ধি। তাই ভাইয়েরা নিজেদের মতামতগুলো শেয়ার করবেন, ইনশাআল্লাহ্।



        Comment


        • #5
          মাদ্রাসার শিক্ষার ক্ষেত্রে হীনমন্যতার প্রধান কারণ হল রাষ্ট্র যন্ত্র যেভাবে স্যাকুলার শিক্ষা ব্যবস্থার মূল্যায়ন করছে সেভাবে মাদ্রাসার শিক্ষা ব্যবস্থার মূল্যায়ন করছেনা।এটি প্রতিরোধে করনীয় হল ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা যা ইসলামী শিক্ষার মূল্যায়ন করবে। এবং আরবিতে একটি প্রবাদ রয়েছে تعرف الأشياء بأضدادها অর্থ প্রত্যেক বস্তুকে তার বিপরীত বস্তুর মাধ্যমে ভালোভাবে জানা যায় এবং যেকোন কাজে বা পরিকল্পনয় সফল হতে হলে তা সম্পর্কে পূর্নাঙ্গ জ্ঞান থাকতে হয় অন্যথায় সফলতা অর্জন সম্ভব নয়।ا

          Comment

          Working...
          X