কলজে নিংড়ানো রক্তে লেখা কথামালা
চতুর্মুখী ফেতনার দাবানলে জ্বলে পুড়ে ভস্ম মুসলিম উম্মাহকে যিনি পুনরুজ্জীবিত করবেন সেই বিশ্ব জগতের নিয়ন্তার জন্যই সকল প্রশংসা এবং কুফর শিরকে জর্জরিত উম্মাহকে সতর্ককারী মহামানব হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রতি দুরুদ ও সালাম।
উর্ধ্বাকাশে বিদ্যুৎ চমকানোর মতো আকস্মিক সম্প্রসারণজনিত কুফরের তীব্র নিনাদ ও বাজনাদের মোকাবিলায় দৃঢ়চেতা মরণজয়ী মুজাহিদদের প্রতি সালাম নিবেদনের মধ্য দিয়ে "কলজে নিংড়ানো রক্তে লেখা " আরম্ভ।
ইয়া উম্মাতা মুহাম্মদ !
একজন ক্লান্ত পথিকের হৃদয় বিগলিত অশ্রুরুদ্ধ কণ্ঠের কিছু ভাঙ্গা কথা কি শুনবে ! লৌকিকতা নয়, যে কথাগুলো উৎসারিত হৃদয়ের রক্তক্ষরণ থেকে । কপটতা নয়, যাতে রয়েছে একটি মর্মাহত হৃদয়ের প্রতিচ্ছবি। বাকপটুতা নয় , যার শব্দে শব্দে রয়েছে অস্পুট কান্নার নিরবধি সুর ।
ইয়া উম্মাতা মুহাম্মদ !
কথাগুলোর আকৃতি তৈরি করো; দেখতে পাবে তাজা রক্তের একটি স্রোত-ধারা অথবা চোখের নোনা জলের প্লাবন। শব্দাবলীর আয়নায় চোখ রাখো; দেখতে পাবে চোয়াল বেয়ে নেমে আসা অশ্রুধারা ভিজে আছে কিছু বক্ষ । বাক্যের বুকে কান পাতো ! অনুভব করতে পারবে কিছু জর্জরিত অন্তরের অব্যক্ত ব্যথা।
ইয়া উম্মাতা মুহাম্মদ !
কথাগুলোর বুক চিরে বাস্তব মানসিকতা অনুধাবনের একটু চেষ্টা করো, দেখো তাতে কোনো স্বার্থের গন্ধ পাও কি না । খুঁজে পাও কি না তাতে কোনো ষড়যন্ত্রের আঁশ ।
ইয়া উম্মাতা মুহাম্মদ !
কার ভয়ে আজ আমরা সত্যকে গ্রহণ করতে পারছিনা ? কোন অশুভ শক্তি আমাদের সত্য প্রকাশের মুখ তালা বদ্ধ করে দিয়েছে ?
আমেরিকা, ইসরাইল,রাশিয়া,চীন , ভারত যদি আমাদের দৃষ্টিতে বড় হয় , আমাদের আল্লাহ কি তার চেয়েও বড় নয় !
কুফরি শক্তিকে যদি অধিক ক্ষমতাবান মনে করি, তবে কি আমরা ভুলে গেছি যে আমাদের আল্লাহই একমাত্র 'কাদিরে মুতলাক' অসীম ক্ষমতাবান !
তাগুতের চোখ ফাঁকি দিয়ে কিছু করা সম্ভব নয় এই ধারনা কেন পোষণ করি, ভুলে গেছি কি ড আমাদের আল্লাহই একমাত্র ' আলিমুল গাইব' ।
ইয়া উম্মাতা মুহাম্মদ !
আল্লাহ কি তাঁর ঘর ধ্বংস করতে আসা হস্তিবাহিনীকে নিশ্চিহ্ন করে তার বড়ত্ব প্রকাশ করে দেখাননি ! আল্লাহ কি তিন শত তেরো জন দ্বারা এক হাজারের বাহিনীকে পরাজিত করে তার ক্ষমতা প্রকাশ করেননি !
আল্লাহ কি শয়তানের কূটকৌশল নস্যাৎ করে আবু জাহেলের ঘেরাও বাহিনী থেকে রাসূলে আরবী ( স.) কে উদ্ধার করে মদিনায় পৌঁছিয়ে তার কৌশলের শক্তি প্রকাশ করেননি!
ইয়া উম্মাতা মুহাম্মদ!
আমরা কি সেই নবীর উম্মত নই যিনি অসংখ্য দেবতার পূজারীদের সমাগমে দাঁড়িয়ে এক মাবুদের ইবাদতের দিকে আহ্বান করতে সামান্যতম দ্বিধা গ্রস্থ হননি!
আমরা কি সেই নবীর উম্মত নই যিনি 'হুনাইন'র যুদ্ধে أنا النبي لا كذب * أنا ابن عبد المطلب বলে বীরদর্পে সামনে অগ্রসর হচ্ছিলেন!
আমরা কি সেই নবীর উম্মত নই যার তেইশ বছরের সাহসী পদক্ষেপের ফলে একটি প্রতিষ্ঠিত দ্বীন উপহার পেয়েছি!
আমরা কি সেই নবীর উম্মত নই যাঁর ঘোষণা হচ্ছে نصرت بالرعب مسيرة شهر
আমরা কি সেই নবীর উম্মত নই যিনি আমাদেরকে পুরো পৃথিবীময় ক্ষমতাবান হওয়ার সুসংবাদ শুনিয়েছেন!
ইয়া উম্মাতা মুহাম্মদ !
সেই নবীর সম্মান আজ যখন ভূলুণ্ঠিত, সেই নবীর দ্বীন যখন আজ পর্যুদস্ত, সেই নবীর উম্মত যখন আজ অধঃপতনের অতল গহ্বরে পতিত; হৃদয়ের কান দিয়ে একটু চেষ্টা করে দেখ তো নবীর ক্রন্দনধ্বনি শুনতে পাও কি না। একটু অনুভব করতে পার কি না রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নুরানি চেহারার বিষন্নতা ও পবিত্র অন্তরের ব্যথাহত ভাব।
ইয়া উম্মাতা মুহাম্মদ !
আমরা কি খোলাফায়ে রাশেদার উত্তরসূরী নই যাঁরা ইসলামের কর্তৃত্বকে পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে ব্যাপৃত করে আমাদেরকে দুনিয়ার মুনিবের আসনে বসিয়েছিলেন !
আমরা কি খালিদ বিন ওয়ালিদের ন্যায় বীর সাহাবিগনের সন্তান নই যাঁদের কোষমুক্ত তরবারির সামনে কিসরা - কায়সার মাথানত করতে বাধ্য হয়েছে এবং তাদেরকে গোলাম হিসেবে ব্যবহার করেছে !
আমাদের একজন খলিফা কি হারুনুর রশিদ নন ; রোমের সম্রাট নিকফুরকে লেখা যাঁর একটি চিঠি পুরো রোমে কম্পন সৃষ্টি করেছিল !
ইয়া উম্মাতা মুহাম্মদ!
আজ কেন সকল ভূখণ্ড প্রত্যেক দখলদারের লুন্ঠিত সম্পদে পরিণত হয়েছে ?
আজ কেন মুনিবরা (মুসলমানরা) গোলামে পরিণত হয়েছে আর গোলামরা মুনিবের আসনে? পরাধীনতার জীবনকেই কেনো শান্তির জীবন মনে করছো ? শত্রুর একটি সশব্দ উচ্চারণই কেনো আমাদের দেহমনে কম্পন তৈরি করে দেয়?
ইয়া উম্মাতা মুহাম্মদ !
আমাদের শিরা উপশিরায় কি সুলতান সালাহউদ্দিন আইয়ুবির রক্ত প্রবহমান নয়?
কেনো আজ আমাদের প্রথম কিবলা বায়তুল মাকদিস ইহুদিদের দখলে ?
কেনো বায়তুল মাকদিসের আর্তনাদে আমাদের রক্তে জিহাদী চেতনার তরঙ্গ উপচে পড়ে না?
ইয়া উম্মাতা মুহাম্মদ !
আমরা কি প্রসিদ্ধ জালেম হাজ্জাজ বিন ইউসুফ ও আব্বাসি খলিফা মু'তাসিমের চেয়েও বেশি পাষণ্ড হয়ে গেছি ? কাফেরদের হাতে বন্দী একজন অসহায় বোনের وا حجاجاه শোনার পর যদি কঠিন মনে প্রতিরোধের স্পৃহা জাগ্রত হয়ে থাকে, একজন নির্যাতিতা মুসলিম মায়ের وا معتصماه বলে চিৎকার করার সংবাদ শোনার পর যদি খলিফা মু'তাসিমের হৃদয় নাড়া দিয়ে থাকে ; আজ হাজারো-লাখো শিশুর গগনবিদারী চিৎকার,নির্যাতিতা মা বোনদের আর্তনাদ আমাদের অন্তরে সামান্যতম রেখাপাত করে না কেনো?
ইয়া উম্মাতা মুহাম্মদ!
আমাদের সন্তানের কান্নায় পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তের নিষ্পাপ মুসলিম শিশুদের কান্না অনুভব করা দরকার, আমাদের মা বোনদের মলিন চেহারায় বিভিন্ন ভূখণ্ডের মাযলুমা মুসলিম মা বোনদের মুখাবয়বের বিষণ্ণতা অনুধাবন করা দরকার , বাতাসে কান পেতে থাকলে শুনতে পাব ; কতো অসহায় আমাদের নাম ধরে ধরে ه فلاناه وا فلانا وا বলে বলে হাহাকার করছে!
ইয়া উম্মাতা মুহাম্মদ !
এখনো কি ভাববার সময় আছে ? পাকিস্তানের ব্লাক ওয়াটার, আবূ গারিব কারাগার , গুয়ান্তানামোবে , ফিলিস্তিনের হত্যাযজ্ঞ, সিরিয়ার আর্তনাদ ,আরাকান-কাশ্মীর, দিল্লির গণহত্যা, বাংলাদেশের শাপলা চত্বর - ভোলায় নবীপ্রেমিকদের প্রতি নির্মম নির্যাতনের ইতিহাস ইত্যাদি আমাদের সামনে ঘটে যাওয়ার পরেও নতুন কোন দৃষ্টান্ত দেখার প্রয়োজন এখনো বাকি আছে কি?
ইয়া উম্মাতা মুহাম্মদ!
দ্বীন প্রতিষ্ঠার ভার আমাদেরকেই নিতে হবে। কুরআন হাদিসের মশাল জ্বেলে আমাদেরকেই সামনে এগুতে হবে। পিচ্ছিল পথের অগ্রপথিক আমাদেরকেই হতে হবে । তারেক বিন যিয়াদ, সালাহউদ্দিন আইয়ুবি ও মুহাম্মদ বিন কাসিমের ভূমিকা পালন করতে হবে। সাইয়্যেদ আহমদ শহীদ ও ইসমাইল শহীদ সহ অন্যান্য বীর সেনানীদের পদাঙ্ক অনুসরণ করতে হবে।
দ্বীন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে রক্ত পিচ্ছিল পথে চলার জন্য আমাদের কেউ সাহায্য করবে না। বর্তমান জামানার যারা আমাদের মুক্তাদা, যাদেরকে আমরা পীর আউলিয়া, শায়েখ- মাশায়েখ ও দ্বীনের দায়ী মনে করি , তারা শতদা বিভক্ত উনারা নিজের মনগড়া ও বানানো মাসালাহাত নিয়ে কাফিরের অধিনস্তা মেনে নিয়েছেন। মওতের ভয় ও মালের মোহাব্বত পেয়ে বসেছে। কুফুরি সংবিধানের নিচে মাথা নত করাকে হেকমত আর মাসলেহাত মনে করেছেন । জেল জুলুমের ভয়ে হক কথা বলার পরিবর্তে ইহুদি নাসারাদের সুরে সুর মেলাচ্ছেন। কুরআন হাদিসের বিরুদ্ধে ফতোয়া দিতেও কুণ্ঠাবোধ করেন না । কুরআনের স্পষ্ট আয়াতের বিরোধীতা করেও নিজেকে বড় একটা কিছু মনে করছেন।
ইয়া উম্মাতা মুহাম্মদ !
দিন বদলের মিছিলের সাথে ক্রমশই বাড়ছে আযাদীপ্রিয় জাতির মশালবাহীদের ভিড়। যমানার বুক চিরে বিশ্বের খিত্তায় খিত্তায় জেগে উঠছে শতবছর ধরে নির্যাতিত মুসলিমদের জিহাদী স্পৃহা । মজলুম জাতির নওজোয়ানরা খুঁজে ফিরছে নিজেদের হারানো ঐতিহ্য । দুনিয়া জুড়ে বাতিলের সামনে সিনা টান করে দাড়াচ্ছে মুহাম্মদী সিংহ-শাবকরা । ইসলামী বিশ্বে বয়ে যাচ্ছে বিপ্লবের ঝড়ো সমীকরণ। উত্তপ্ত হচ্ছে জিহাদের ময়দান। নওজোয়ানরা সেজেগুজে দৌড়ে যাচ্ছে হুরদের দিকে। মায়েরা জোয়ান ছেলেদেরকে কোরবানি দিচ্ছে আল্লাহর নামে। লেখা হচ্ছে বাহাদুরী আর বীরত্বের নতুন ইতিহাস। দিক - দিগন্ত থেকে পঙ্গপালের মতো বদলা নিতে ছুটে চলছে জিহাদের সর্গ রাজ্য আফগান , সিরিয়া, ইরাক সহ মজলুম খিত্তাগুলোতে ।এমনকি বাংলার অলিতে গলিতেও বীর মুজাহিদরা জেগে উঠেছে আলহামদুলিল্লাহ।
অতএব,
তোমরা তোমাদের ঈমানী শক্তিতে বলীয়ান হয়ে সাহসী পদক্ষেপে অগ্রসর হও ; দেখো আল্লাহ জাল্লা শানুহু এখনো অসীম ক্ষমতায় মহীয়ান। তাঁর কৌশল এখনো শক্তিশালী। তিনি এখনো মুজাহিদদের ক্ষুদ্র কাফেলা দিয়ে তাগুতের বৃহৎ শক্তিকে পরাভূত করেন।
হে উম্মাহ ,
একটু সাহসী হও ! একটু বীরত্বের পরিচয় দাও ! একটু নিজেদের আত্মমর্যাদার ব্যাপারে সচেতন হও ! তোমাদের পূর্বসূরিদের ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনার জন্য একটু চেষ্টা করো ! সর্বোপরি কুরআন সুন্নাহ ও ফিকহে ইসলামির আলোকে তোমরা তোমাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব বুঝে নাও ; দেখতে পাবে তোমরা ছাগলের পালে লালিত হওয়া সিংহ শাবকের দল । দেখো তোমাদের মাঝে লুকিয়ে আছে শার্দুলতা ; শিয়াল পরিচয়ে বেঁচে থাকা তোমাদের জন্য বেমানান।
তোমরা বনি ইসরাইলের ন্যায় মুক্তির পয়গাম দাতাকে অশুভ মনে করো না । সাহাবায়ে কেরাম কে বাদ দিয়ে বনি ইসরাইল কে আদর্শ হিসেবে গ্রহণ করো না ।
যে তোমাদের পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙ্গে আযাদির রাস্তা দেখিয়ে দিচ্ছে তাকে স্বার্থপর মনে করো না । যে তোমাদের কে তোমাদের পরিচয় মনে করিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে চলছে তাকে পর ভেব না । যে তোমাদের কে ঈমান ও কুফরের ব্যাপারে সচেতন করে তোলার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে , তার সঙ্গে কোন শত্রুতা পোষণ করো না ।
যে পথিক গরিব মুসাফিরের জীবন বেঁচে নিয়েও তোমাদের কে তাগুতের অপ্রকৌশল ও ষড়যন্ত্রের ব্যাপারে সতর্ক করে চলছে, তাকে প্রতিহত করতে আটঘাট বেঁধে নেমে পড়ি না । যে ইহুদিদের চক্ষুশূল তাকেই ইহুদি - খৃস্টানের দালাল অপবাদ দিয়ে গালিগালাজ করো না।
পরিশেষে,
আমার কলজে নিংড়ানো রক্তে লেখা কথামালার ইতি এখানেই টানছি।
আশাকরি তোমরা শব্দের সিক্ত দেহাবয়বে বিচরণ করে অনুভব করতে পারবে ; নয়নবারিতে ভিজে আছে কাগজগুলো, টপ টপ করে ঝরে পড়া অশ্রুজলে ঝাপসা হয়ে আছে অক্ষরগুলো।
এটিও আশাকরি যে ,এ অশ্রু অক্ষমতা ও অসহায়ত্বের হবে না ; বরং এ অশ্রু হবে বিধ্বংসী বিস্ফোরকের ফিউজতুল্য । এ অশ্রুতে থাকবে না মৃত্যুর শীতলতা ; বরং এ তপ্ত অশ্রুতে থাকবে অগ্নিকুণ্ডের বিভীষিকা।
অশ্রুবিন্দুর এক ফোঁটা মসজিদে আকসার নামে , যা ছিল সর্বোচ্চ সম্মানিত বান্দাগণের সিজদাবনত হওয়ার স্হান ।আরেক ফোঁটা সোনালী গম্বুজ - Dome of the Rock ( ডোম অব দ্য রক ) - এর ওই সোনালী মুক্তার নামে , যার আশপাশে পবিত্র মহামানবেরা সারিবদ্ধ হয়ে দাজ্জালি ফৌজের বিরুদ্ধে ত্যাগের বীরত্ব গাঁথা রচনা করবেন ।
হে আল্লাহ!
আমাদের সিদ্দিকগণের অন্তর্ভুক্ত করুন ا
আমাদের শুহাদাদের অন্তর্ভুক্ত করুন।
আমাদেরকে আপনার পথে অটল থাকার তাওফিক দান করুন।
*************
Comment