Announcement

Collapse
No announcement yet.

'ইসলামে সহাবস্থানের মূল্যায়ন' - একটি অভিমত।

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • 'ইসলামে সহাবস্থানের মূল্যায়ন' - একটি অভিমত।


    গত শতক এমন কিছু হয়েছে ঘটনার সাক্ষী হয়েছে যা বিশ্বব্যবস্থাকে আমূল পরিবর্তন করেছে। যেমন, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, খিলাফতের পতন, রাশিয়ান জিহাদ, টুইন টাওয়ার হামলা এবং গ্লোবাল জিহাদের সূচনা। কিন্তু, বিশ্বব্যবস্থার উপর সবচেয়ে বেশি যে ইস্যুটি প্রভাব বিস্তার করেছে তা হচ্ছে, লিবারেল ডেমোক্রেট (উদার গনতান্ত্রিক) মতবাদ। এই লিবারেল ডেমোক্রেট এটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে, কাফের-মুসলিম-মুশরিকের সহঅবস্থানের সম্ভভ্যতা প্রচার করা। তাই উদার গণতন্ত্রের মানসিকতা পোষণকারীদের পক্ষ থেকে বারবার একটি প্রশ্ন উপস্থাপিত হচ্ছে।


    প্রশ্নটি হচ্ছে, বর্তমান বিশ্বায়নের যুগে আমাদের পক্ষে শান্তিপূর্ণভাবে সহাবস্থান করা এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উপকারিতা যার অগ্রগতির ধারা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে, তা ভোগ করা কি সম্ভব? নাকি ধর্ম সংস্কৃতি ও সভ্যতার পার্থক্যে নিজেদের মাঝে দ্বন্দ্ব, সংঘাত বা যুদ্ধ চলমান থাকা অপরিহার্য?

    পশ্চিমা বুদ্ধিজীবীরা বা বিশেষজ্ঞরাও এই প্রশ্নটিই নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন। কিন্তু তারা কোনোভাবেই উত্তরের ব্যাপারে বাকি বিশ্বের সাথে একমত হতে পারছেনা। সহাবস্থান সংক্রান্ত পশ্চিমাদের দুইটি দৃষ্টিকোণ রয়েছে।

    এক, সারাবিশ্ব পশ্চিমা রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পুঁজিবাদের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে এবং এই ব্যবস্থাগুলো সারাবিশ্বে গ্রহণযোগ্যতার সাথে সাথে পশ্চিমা ব্যতীত অন্য সকল নীতি, মতবাদ ও মূল্যবোধের অবসান ঘটবে। আর এভাবে বিশ্বায়নে সহাবস্থান তৈরি হবে।

    দুই, বিভিন্ন সংস্কৃতি ও সভ্যতার মধ্যে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান তখনই সম্ভব যখন সকলে পশ্চিমাদের ধর্মনিরপেক্ষ বহুদলীয় গণতন্ত্র গ্রহণ করবে।

    অন্যদিকে পশ্চিমাদের এই দৃষ্টিকোণে বিপরীতে যেসকল দৃষ্টিভঙ্গি প্রচলিত রয়েছে তার মধ্যে একটি হলো, পশ্চিমা সভ্যতার নৈতিকতার সংজ্ঞা, রীতি-নীতি ও মূল্যবোধের কারণে অন্যান্য সভ্যতার সাথে তাদের সংঘাত অপরিহার্য।

    আরেকটি মত হলো, সংঘাত পশ্চিমা সভ্যতা ও সংস্কৃতির মধ্যে বিদ্যমান তাই তাদের পক্ষে অন্য সভ্যতার সাথে সহাবস্থান অসম্ভব নয়।

    তাই আমাদের আলোচনার মূল প্রশ্ন হচ্ছে, সহাবস্থানের মতো গুরুত্বপূর্ণ এবং জরুরী বিষয় ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি কি? এই প্রশ্নের উত্তর বুঝতে হলে আমাদের বিশ্বায়নের প্রকৃত বাস্তবতা অনুধাবন করতে হবে, তা না হলে এর উত্তর তাত্ত্বিক জ্ঞান ব্যতীত আমাদের কোনো সুফল প্রদান করতে পারবেনা।

    এই প্রশ্নের সংক্ষিপ্ত উত্তর হচ্ছে, ইসলামী দৃষ্টিকোণ শান্তিপূর্ণ অবস্থানের পক্ষে। কিন্তু শান্তিপূর্ণ বসবাসের জন্য কখনো কখনো যুদ্ধের পূর্ণ প্রস্তুতি ও সামর্থ্য অর্জন করা অপরিহার্য।

    ইসলাম যে সকল মূল্যবোধ বা গুণাবলী অর্জন করতে আদেশ দেয় সাধারণভাবে তার পৃথিবীর সকল মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য।। যেমনঃ আধ্যাত্মিক সুস্থতা; মানসিক ভারসাম্যতা; মানুষের জীবন, সম্পদ ও সম্মানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকা ইত্যাদি। যুক্তির দিক দিয়ে বিবেচনা করলে এই সকল মূল্যবোধের ভিত্তিতে সমাজ গড়তে হলে স্বাভাবিকভাবে যুদ্ধ বা সংঘাতের উপর শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান এবং সহযোগিতা প্রাধান্য পাবে।

    শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের পক্ষে কিছু যুক্তিঃ

    এক, একজন অমুসলিমের প্রতি একজন মুসলিমের সবচেয়ে বড় এহসান হলো তাকে ইসলামের দাওয়াত দেওয়া এবং তাকে তার আসল ফিতরাতের সাথে পরিচয় করানো। কিন্তু এটি করার সময় দা'ঈীদের অনেক বিষয় মনে রাখতে হয়। অনেক নীতিমালা মেনে চলতে হয়। যার মধ্যে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, 'ঈমান অন্তরের সাথে সম্পৃক্ত তাই কাউকে তা মেনে নিতে বাধ্য করা যাবে না।'

    আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ'লা বলেছেন;
    اُدۡعُ اِلٰی سَبِیۡلِ رَبِّکَ بِالۡحِکۡمَۃِ وَ الۡمَوۡعِظَۃِ الۡحَسَنَۃِ وَ جَادِلۡہُمۡ بِالَّتِیۡ ہِیَ اَحۡسَنُ ...
    অর্থঃ আপনি মানুষকে দা’ওয়াত দিন আপনার রবের পথে হিকমত ও সদুপদেশ দ্বারা এবং তাদের সাথে তর্ক করবেন উত্তম পন্থায়। ... [সূরা নাহলঃ ১২৫]
    শান্তিপূর্ণ অবস্থান ছাড়া কি এটা সম্ভব? কখনোই না।

    দুই, পৃথিবীতে যে পরিমাণ ধ্বংসাত্মক অস্ত্র রয়েছে এবং সেই সকল অস্ত্র দ্বারা কি পরিমান ক্ষতি সাধন হতে পারে তা আমাদের নিকট ধারণাতীত। এই সকল ধ্বংসাত্মক অস্ত্রের ব্যবহার রোধ ও যুদ্ধ সংঘাত এড়ানোর জন্য সকল প্রকার অন্যায় অবিচার ও আগ্রাসনের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে এবং সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আর সেই ক্ষেত্রে মুসলমানদের একটি ভূমিকা পালন করতে পারে। কারণ, ইসলামী মূল্যবোধ ও শিক্ষা মুসলমানদের সে যোগ্যতা প্রদান করেছে। আর ইসলামের মূল শিক্ষায় হচ্ছে, হকের দাওয়াত ও সমাজের ন্যায়পরায়ণতা প্রতিষ্ঠা করা এবং নৈতিক মূল্যবোধের সাথে আপোষ না করা।

    তিন, ইসলামের ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সন্ধি হচ্ছে হুদাবিয়ার সন্ধি। মহানবী সালাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন তখন উপস্থিত সাহাবাদের সংখ্যা ছিল ১৪০০। কিন্তু মাত্র ২১ মাস পরে রাসুল্লাহ সালাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মক্কা বিজয় করেন তখন তার সাথে উপস্থিত সাহাবাদের সংখ্যা ১০,০০০। হুদায়বিয়ার চুক্তির পর কুরাইশরা ইসলামের দাওয়াতের পথে বাধা দেওয়া থেকে যখন বিরত ছিল এবং যখন মুসলিম ও মুশরিকদের মধ্যে শান্তিপূর্ণ অবস্থানে বিরাজ করছিল এই সময় প্রায় ৮,৬০০ জন ইসলাম গ্রহণ করেন। কিন্তু, খেয়াল রাখতে হবে, এই শান্তিপূর্ণ পরিবেশের সূচনায় হয়েছিল একাধিক জিহাদ ও কিতালের মাধ্যমে।

    ঠিক, সেভাবে বর্তমান সময়ে যদি দাওয়াত ও কিতাল একসাথে চলতে থাকে তাহলে পশ্চিমা এবং অন্যান্য রাষ্ট্রের ইসলামের প্রচার ও প্রসার বৃদ্ধি পাবে এবং ইসলাম গ্রহণের হারও বৃদ্ধি পাবে। পশ্চিমারা অনুধাবন করতে শুরু করেছে যে বিজ্ঞান, প্রযুক্তি ও বস্তুবাদ যতই গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয় হোক না কেন তা কখনো ধর্মকে প্রতিস্থাপন করতে পারবে না।

    "শান্তির জন্য শক্তি" - মতবাদের ব্যাখ্যাঃ

    শান্তিবাদী হওয়ার ক্ষেত্রে ইসলাম খুবই বাস্তববাদী ধর্ম। আমাদের অনুধাবন করতে হবে যে, অন্যদের সাথে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করতে চাওয়া এক বিষয়; আর অন্যদের আপনার প্রতি এমন মনোভাব তৈরি করা এইটা অন্য একটি বিষয়।

    সামগ্রিকভাবে প্রত্যেক সংস্কৃতি তার বিরোধী সংস্কৃতি থেকে মূল্যবোধ, রীতি-নীতি, নৈতিকতা এই সকল বিষয়ে শক্তিশালী হতে চায়। তারা তাদের সংস্কৃতি, মূল্যবোধ, মতবাদ সংরক্ষণ এবং বিরোধী সংস্কৃতিকে অধীনত করার জন্য প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ গ্রহণে সচেষ্ট।


    হান্টিংটন তার বিখ্যাত প্রবন্ধ "ক্ল্যাশ অফ সিভিলাইজেশন" এ উল্লেখ করেছেন যে, "পশ্চিম বর্তমানে অন্য যে কোন সভ্যতার চেয়ে ক্ষমতার এক অভূতপূর্ব শীর্ষতায় অবস্থান করছে। জাপান ব্যাতিত তাদের কোন অর্থনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা নেয়। তারা আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি জাপানের অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠানের উপর আধিপত্য বিস্তার করছে।"

    এই প্রবন্ধের অন্যত্র বলা হয়েছে, স্নায়ুযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে অস্ত্র নিয়ন্ত্রণের প্রাথমিক উদ্দেশ্য ছিল অ-পশ্চিমা সমাজের সামরিক ক্ষমতার উন্নয়ন রোধ করা যা পশ্চিমা স্বার্থকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে। পশ্চিমারা আন্তর্জাতিক চুক্তি ও অর্থনৈতিক বয়কটের মাধ্যমে অস্ত্র ও অস্ত্র প্রযুক্তি হস্তান্তর ব্যবস্থাকে নিয়ন্ত্রণ করছে।

    তাই, শরিয়তে মুসলমানদের বস্তুগতভাবে শক্তিশালী হতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যাতে যারা মুসলমানদের আগ্রাসন চালাতে চায় বা যাদের ব্যবহার করে ইসলামবিরোধী পরাশক্তিরা মুসলমানদের ওপর চাপ প্রয়োগ করতে চায় তাদের প্রতিরোধ ও প্রতিহত করা যায়। মনে রাখতে হবে যে, "বস্তুগত শক্তি অর্জন আধ্যাত্মিকতা বিকাশের কারণ; এর পরিপন্থী কোনো বিষয় নয়।" তাই, এই বিষয়টি আমাদের কাছে স্পষ্ট থাকা উচিত কিতাল বা জিহাদ সহবস্থানের পরিপন্থী নয়, বরং সহবস্থানের পথকে আরো সুগম করে।


  • #2
    "শান্তির জন্য শক্তি"

    কিতাল বা জিহাদ সহাবস্থানের পরিপন্থী নয়, বরং সহাবস্থানের পথকে আরো সুগম করে।
    মা-শা-আল্লাহ!!!! আল্লাহ, ভাইয়ের কলমকে আরো শাণিত করুন..আমীন..

    Last edited by ইবনুস সাবীল; 01-31-2022, 08:54 AM.
    মিডিয়ার সাফল্য অনেকাংশেই তার প্রচারণার উপর নির্ভরশীল।

    Comment


    • #3
      আল্লাহ যেমন আকাশ জমিন পাহাড় পর্বত এবং অগনিত নেয়ামত রাজি সৃষ্টি করেছেন বান্দাকে শান্তি দেওয়ার জন্য তেমনি ইসলামকেও আল্লাহ বান্দাদের উপহার দিয়েছেন বান্দাদেরকে শান্তি দেবার জন্য ।তবে শান্তির জন্য আবশ্যক হল হঠকারিতা প্রতিরোধ করা আর এই হঠকারিতা প্রতিরোধ ব্যতিত শান্তি প্রতিস্থাপন সম্ভব নয় আর এই জন্য ইসলাম অবস্থা ভেদে জিহাদের আদেশ দিয়েছেন বিভিন্ন ধরনের শাস্তির বিধান এবং জিজিয়ার বিধান আরোপ করে দিয়েছেন এসবের একমাত্র মূল কারণ হল হঠকারিতা প্রতিরোধ করা যেটি শান্তি স্থাপনে প্রধান প্রতিবন্ধকতার কারণ এবং সহাবাস্থানের প্রতিকুল পরিবেশ তৈরি করা।

      Comment


      • #4
        সুতরাং ইসলামকে মানলে শান্তি স্থাপন এবং সহাবাস্থান স্থাপন সম্ভব হবে অন্যথায় নয়।

        Comment


        • #5

          ​​​​​​মা শা আল্লাহ। সুন্দর লিখেছেন ভাই।

          Comment

          Working...
          X