For The Sake of Argument: সুলতানী শাসন!
____________
ইসলাম ও মুসলিমদের সম্মান ফিরিয়ে আনতে সর্বস্ব দিতে প্রস্তুত, এমন প্রত্যেক ব্যাক্তিই শরিয়াহর শাসন ফিরিয়ে আনার অপরিহার্যতার ব্যাপারে একমত।
ইসলামী শাসনের পুনঃপ্রতিষ্ঠা ব্যাতীত ব্যাক্তি পর্যায়েও স্বাধীনতা ও সম্মানের সাথে ইসলামী মূল্যবোধের পরিপূর্ণ প্রতিবিধান সম্ভব নয়, এবিষয়টি বোধগম্য বিধায়ই মুসলিম উম্মাহর সচেতন কোনো অংশই এক্ষেত্রে মতানৈক্য করেনি।
আকিদা সহিহকরণ বা নফসের পরিশুদ্ধির মাধ্যমে স্বতঃস্ফূর্তভাবে ইসলামী শাসন ফিরে আসবে, এমন স্থবির চিন্তার অনুগামী শ্রেণীর কথা অবশ্য আলাদা।
কিন্তু, আফসোসের বিষয়, ইসলামের কর্তৃত্বের জন্য অপেক্ষমান উম্মতের বড় একটি অংশ- প্রায়ই চকচকে যে কোনো কিছু প্রত্যক্ষ করলেই, তাকে স্বর্ণ সাব্যস্ত করতে তৎপর হয়।
তাই তাদের আশা-ভরসা এরদোগান, ইমরান খান, মুহাম্মাদ বিন সালমান, বিন জায়েদ প্রমুখ সেক্যুলার শাসকদের কেন্দ্র করে ঘুরতে থাকে; ঠিক যেমন, ইতিপূর্বে পূর্ববর্তী প্রজন্ম ঘুরেছেন নাজিমুদ্দিন আরবাকান, জিন্নাহ, আব্দুল আজিজ আলে সউদ বা বাদশাহ হুসাইনকে কেন্দ্র করে।
তাদের প্রত্যেকেই দীনকে পুজি করে ক্ষমতা চর্চা করেছে, এমন বক্তব্য থেকে বিরত থেকেই বলা যায়,
বাহ্যত তাদের শাসনব্যাবস্থা উম্মাহর মাঝে শরিয়াহর শাসনের কল্যাণ ফিরিয়ে আনতে তো পারেই নি, বরং বিপরীতটিই প্রতিষ্ঠা করেছেন।
ইতিহাস ও বাস্তবতা সাক্ষ্য দেয় যে, এসকল সেক্যুলার শাসকদের প্রত্যেকেই নিজ ভূমিতে সেক্যুলার শাসন চর্চা করেছেন এবং ইসলামের শত্রুদের বন্ধুরূপে গ্রহণ করেছেন।
এখন উত্তেজিত ও উৎসাহী ব্যাক্তিবর্গ যুক্তি উত্থাপন করতে পারেন,
তাদের পরিবর্তে অন্য শাসকরা আরো মন্দ হতে পারতো, কিংবা তাদের কেউ কেউ পূর্ববর্তী শাসকদের অনেক ইসলামবিরোধী কাজের সংস্কার করেছেন, ইসলাম ও মুসলিমদের পূর্বের তুলনায় স্বাধীনতা দিয়েছেন। উত্তরোত্তর তারা ইসলামের জন্য নানামুখী কল্যাণকর পদক্ষেপ নিচ্ছেন।
এক্ষেত্রে এরদোগান, ইমরান খানের আলোচনা সামনে চলে আসে।
জনপ্রিয় এই যুক্তির বিপরীতে জটিল আলোচনার মারপ্যাঁচে না গিয়ে, তর্কের খাতিরে এরদোগান বা ইমরান খানকে অপারগ ও চেষ্টারত 'মুসলিম শাসক' ধরে নেয়া যাক। অতঃপর বলতে হয়,
ক) 'মন্দের ভালো' কিংবা 'ধারাবাহিকভাবে ইসলামের উন্নতি সাধনে লিপ্ত' হওয়ার যুক্তি যথার্থ হলে, আনোয়ার সাদাতকেও উম্মাহর মহান বীর হিসেবে মেনে নিতে হয়।
কেননা, মিশরে ইসলামপন্থী ও মুসলিমদের উপর জামাল আব্দুন নাসের দমন-নিপীড়নের যে লৌহখাঁচা নির্মাণ করেছিল, তা আনোয়ার সাদাতের সময় অনেকটাই তুলে নেয়া হয়।
মুসলিমদের তুলনামূলক ধর্মীয় স্বাধীনতার পাশাপাশি, ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোও প্রকাশ্যে কার্যক্রম পরিচালনার সুযোগ পায়।
কিন্তু ক্যাম্প ডেভিড চুক্তির মাধ্যমে ইহুদিদের সাথে আঁতাতকারী, গাদ্দার আনোয়ার সাদাতকে বোধ করি কেউই উম্মাহর সুলতান আখ্যা দেয়নি, দিবেওনা।
একইভাবে, '৭০দশকব্যাপী ব্যাপক দমন-পীড়নের পর-
ইসলামপন্থীদের প্রতি আটরশীর মুরিদ, বিশ্ববেহায়াখ্যাত প্রেসিডেন্ট লেজেহুমু এরশাদের 'মহানুভবতা'ও মোটামুটি সবার জানা। তাহলে এবেচারার 'খেতাব' কোথায়?
এরদোগান তুরস্কের, ইমরান খান পাকিস্তানের আর এরশাদ বাংলাদেশের- এটাই কি তবে এরশাদের সমস্যা!?!
খ) আমরা সবাই কমবেশী উমাইয়া বা আব্বাসি শাসনের ব্যাপারে অবগত আছি।
নিঃসন্দেহে, চলমান সেক্যুলার শাসন বা যে কোনোপ্রকার কুফরি শাসনের পরিবর্তে উমাইয়া বা আব্বাসিদের ইতিহাসের সবচেয়ে নিকৃস্ট শাসনও আমাদের নিকট অধিকতর পছন্দনীয়।
তবে লক্ষণীয়,
উমাইয়া শাসন সুপ্রতিষ্ঠিত হয় হুসাইন রাঃ ও আবদুল্লাহ ইবন জুবায়ের রাঃ কে অন্যায়ভাবে হত্যার পর।
এছাড়াও, এই শাসনের ভিত্তিরচনায় হাজ্জাজ বিন ইউসুফ যুদ্ধ ছাড়াই হত্যা করে লক্ষাধিক মানুষ! মর্মান্তিকভাবে নিহত হোন ইমাম সাঈদ ইবন জুবায়ের রহ.।
এশাসনের মাসলাহাতেই সিন্ধুবিজয়ী মহান বীর মুহাম্মাদ ইবন কাশিম রহ. মৃত্যুবরণ করেন কারাগারে। নফসে যাকিয়্যাহ ও তার ভাইকেও হতে হয় নিহত।
কারাগারে নিক্ষেপিত হোন ইমাম আবু হানিফা রহ.।
আবার, আব্বাসীয় শাসন প্রতিষ্ঠায় আবু মুসলিম খুরাসানি হত্যা করে ছয় লক্ষাধিক মুসলিম।
দামেস্কে প্রবেশের পর, আব্দুল্লাহ ইবন আলি আব্বাসি শাসনের প্রভাব বিস্তারে, উমাইয়া শাসনের সাথে সংশ্লিষ্ট নব্বই হাজার মুসলিমকে হত্যা করে। হিশাম ইবন আব্দিল মালিক ও তার স্ত্রীর লাশ কবর থেকে বের করে আনে।
আবদুল্লাহ ইবন আলি উমাইয়াদের বহু লাশ কবর থেকে উঠিয়ে চাবুকপেটা করে এবং পুড়িয়ে দেয়।
এছাড়াও, হতাহত দামেশকবাসীর উপর আবদুল্লাহ ইবন আলির দস্তরখান বিছিয়ে খাওয়াদাওয়া করার বর্ণনাও পাওয়া যায়!
উমাইয়্যা বা আব্বাসীয়দের এসকল অন্যায় সত্ত্বেও, মুসলিম উম্মাহ তাদের আনুগত্য মেনে নিয়েছিল।
কেননা, তারা শাসনব্যাবস্থায় শরিয়াহকে অপরিহার্য অনুষঙ্গ সাব্যস্ত করতো, জনসাধারণের প্রয়োজন পূরণ করতো এবং ইসলামের শত্রুদের ভীতসন্ত্রস্ত রাখতো।
ইসলামের প্রচার-প্রসারে তাদের অনবদ্য ভূমিকার ফলে তাদের আনুগত্য ও সহায়তায় উম্মাহ ভূমিকা রেখেছে। পাশাপাশি অন্যায় প্রকাশ পেলে, তাদের প্রকাশ্য-গোপন বিরোধিতাও জারি রেখেছে।
কিন্তু কোনো সুস্থ মস্তিষ্কের ব্যাক্তিও কি ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠার পথে উমাইয়্যা বা আব্বাসীদের অনুসরণের আহবান জানাবে!?!
কিংবা, কোনোপ্রকার ভূমিকা-উপসংহার বাদ দিয়ে ঢালাওভাবে উমাইয়্যা শাসন বা আব্বাসী শাসন প্রতিষ্ঠার আহবান জানাবে!?
অবশ্যই না।
যে কোনো আকলসম্পন্ন ও শরিয়াহর প্রাথমিক স্তরের জ্ঞান রাখা ব্যাক্তিও, নবী সাঃ ও খুলাফায়ে রাশেদার শাসন ফিরিয়ে আনার আহবান ও প্রচেষ্টাকেই নিজের কর্তব্য জ্ঞান করবে।
বুঝতে হবে,
কোনো জালিম বা পাপাচারী ইসলামী শাসক চেপে বসলে, তা মেনে নেয়া এক বিষয়; আর দাওয়াত ও মেহনতের ক্ষেত্রে, জালিম বা পাপাচারীর শাসনকে মহিমান্বিত করা বা এমন শাসকের গুণগান গাওয়া কোনোভাবেই ইসলামসম্মত হতে পারে না!
আর এমন দাওয়াহ ও দাঈ এসময়ে দীন ও উম্মাহর জন্য মারাত্মক ও আত্মঘাতী ফলাফল নিয়ে আসবে, এতেও সন্দেহ নেই!
যদি তর্কের খাতিরে এরদোগান বা ইমরান খানকে যুগের সুলতান মেনেও নেয়া হয়, তবুও-
এমন শাসক, শাসনব্যাবস্থা বা (গণতান্ত্রিকভাবে) ক্ষমতা অর্জনের প্রক্রিয়ার ভূয়সী ও উচ্ছসিত প্রশংসা করা মুলতঃ হাজ্জাজ বিন ইউসুফ বা আবু মুসলিম খুরাসানির অনুসরণকেই উম্মাহর মাঝে গ্রহণযোগ্য করে তোলে।
আর নিঃসন্দেহে বাস্তবতা হচ্ছে,
সিরিয়া ও সোমালিয়াতে কাফিরদের সাথে মিলে মুসলিম হত্যায় সরাসরি ভূমিকা রাখা, ইজরায়েলের ইহুদিদের বিমান পাঠিয়ে নিরাপত্তা প্রদান হাজ্জাজ বিন ইউসুফের কর্মকান্ডের চেয়েও মারাত্মক!
এবং,
পশ্চিমাদের সন্তুষ্টকরণে ওয়াজিরিস্তান, বেলুচিস্তানে পাইকারী হারে মুসলিমনিধন কিংবা উইঘুরে মুসলিম হত্যায় বৈধতা প্রদান- কোনো সন্দেহ ব্যাতিরেকেই আবু মুসলিম খুরাসানির কর্মকান্ডের চেয়েও মারাত্মক!
আর শেষ কথা হচ্ছে,
নববী মানহাজের শাসনের পরিবর্তে হাজ্জাজি শাসনে সন্তুষ্ট, বিমুগ্ধ দাঈ ও ইসলামপন্থীদের হাতে সমর্পিত হওয়া বা তাদের অন্ধানুকরণের বিপদও আশা করি সহজেই বোধগম্য,
তাই বিজ্ঞ ডক্টর সাহেবের দিকনির্দেশনা ও পরামর্শ বিবেচনায় নেয়া কাম্য যিনি বলেছেন-
"আমরা খুলাফায়ে রাশেদার আদলে হুকুমত চাই। কারণ, খুলাফায়ে রাশেদার উপর সন্তুষ্ট থেকে রাসুল সা. দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন। আমরা হাজ্জাজ বিন ইউসুফ ও আবু মুসলিম খুরাসানীকে আদর্শরূপে গ্রহণ করতে চাই না।"
____________
ইসলাম ও মুসলিমদের সম্মান ফিরিয়ে আনতে সর্বস্ব দিতে প্রস্তুত, এমন প্রত্যেক ব্যাক্তিই শরিয়াহর শাসন ফিরিয়ে আনার অপরিহার্যতার ব্যাপারে একমত।
ইসলামী শাসনের পুনঃপ্রতিষ্ঠা ব্যাতীত ব্যাক্তি পর্যায়েও স্বাধীনতা ও সম্মানের সাথে ইসলামী মূল্যবোধের পরিপূর্ণ প্রতিবিধান সম্ভব নয়, এবিষয়টি বোধগম্য বিধায়ই মুসলিম উম্মাহর সচেতন কোনো অংশই এক্ষেত্রে মতানৈক্য করেনি।
আকিদা সহিহকরণ বা নফসের পরিশুদ্ধির মাধ্যমে স্বতঃস্ফূর্তভাবে ইসলামী শাসন ফিরে আসবে, এমন স্থবির চিন্তার অনুগামী শ্রেণীর কথা অবশ্য আলাদা।
কিন্তু, আফসোসের বিষয়, ইসলামের কর্তৃত্বের জন্য অপেক্ষমান উম্মতের বড় একটি অংশ- প্রায়ই চকচকে যে কোনো কিছু প্রত্যক্ষ করলেই, তাকে স্বর্ণ সাব্যস্ত করতে তৎপর হয়।
তাই তাদের আশা-ভরসা এরদোগান, ইমরান খান, মুহাম্মাদ বিন সালমান, বিন জায়েদ প্রমুখ সেক্যুলার শাসকদের কেন্দ্র করে ঘুরতে থাকে; ঠিক যেমন, ইতিপূর্বে পূর্ববর্তী প্রজন্ম ঘুরেছেন নাজিমুদ্দিন আরবাকান, জিন্নাহ, আব্দুল আজিজ আলে সউদ বা বাদশাহ হুসাইনকে কেন্দ্র করে।
তাদের প্রত্যেকেই দীনকে পুজি করে ক্ষমতা চর্চা করেছে, এমন বক্তব্য থেকে বিরত থেকেই বলা যায়,
বাহ্যত তাদের শাসনব্যাবস্থা উম্মাহর মাঝে শরিয়াহর শাসনের কল্যাণ ফিরিয়ে আনতে তো পারেই নি, বরং বিপরীতটিই প্রতিষ্ঠা করেছেন।
ইতিহাস ও বাস্তবতা সাক্ষ্য দেয় যে, এসকল সেক্যুলার শাসকদের প্রত্যেকেই নিজ ভূমিতে সেক্যুলার শাসন চর্চা করেছেন এবং ইসলামের শত্রুদের বন্ধুরূপে গ্রহণ করেছেন।
এখন উত্তেজিত ও উৎসাহী ব্যাক্তিবর্গ যুক্তি উত্থাপন করতে পারেন,
তাদের পরিবর্তে অন্য শাসকরা আরো মন্দ হতে পারতো, কিংবা তাদের কেউ কেউ পূর্ববর্তী শাসকদের অনেক ইসলামবিরোধী কাজের সংস্কার করেছেন, ইসলাম ও মুসলিমদের পূর্বের তুলনায় স্বাধীনতা দিয়েছেন। উত্তরোত্তর তারা ইসলামের জন্য নানামুখী কল্যাণকর পদক্ষেপ নিচ্ছেন।
এক্ষেত্রে এরদোগান, ইমরান খানের আলোচনা সামনে চলে আসে।
জনপ্রিয় এই যুক্তির বিপরীতে জটিল আলোচনার মারপ্যাঁচে না গিয়ে, তর্কের খাতিরে এরদোগান বা ইমরান খানকে অপারগ ও চেষ্টারত 'মুসলিম শাসক' ধরে নেয়া যাক। অতঃপর বলতে হয়,
ক) 'মন্দের ভালো' কিংবা 'ধারাবাহিকভাবে ইসলামের উন্নতি সাধনে লিপ্ত' হওয়ার যুক্তি যথার্থ হলে, আনোয়ার সাদাতকেও উম্মাহর মহান বীর হিসেবে মেনে নিতে হয়।
কেননা, মিশরে ইসলামপন্থী ও মুসলিমদের উপর জামাল আব্দুন নাসের দমন-নিপীড়নের যে লৌহখাঁচা নির্মাণ করেছিল, তা আনোয়ার সাদাতের সময় অনেকটাই তুলে নেয়া হয়।
মুসলিমদের তুলনামূলক ধর্মীয় স্বাধীনতার পাশাপাশি, ইসলামপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোও প্রকাশ্যে কার্যক্রম পরিচালনার সুযোগ পায়।
কিন্তু ক্যাম্প ডেভিড চুক্তির মাধ্যমে ইহুদিদের সাথে আঁতাতকারী, গাদ্দার আনোয়ার সাদাতকে বোধ করি কেউই উম্মাহর সুলতান আখ্যা দেয়নি, দিবেওনা।
একইভাবে, '৭০দশকব্যাপী ব্যাপক দমন-পীড়নের পর-
ইসলামপন্থীদের প্রতি আটরশীর মুরিদ, বিশ্ববেহায়াখ্যাত প্রেসিডেন্ট লেজেহুমু এরশাদের 'মহানুভবতা'ও মোটামুটি সবার জানা। তাহলে এবেচারার 'খেতাব' কোথায়?
এরদোগান তুরস্কের, ইমরান খান পাকিস্তানের আর এরশাদ বাংলাদেশের- এটাই কি তবে এরশাদের সমস্যা!?!
খ) আমরা সবাই কমবেশী উমাইয়া বা আব্বাসি শাসনের ব্যাপারে অবগত আছি।
নিঃসন্দেহে, চলমান সেক্যুলার শাসন বা যে কোনোপ্রকার কুফরি শাসনের পরিবর্তে উমাইয়া বা আব্বাসিদের ইতিহাসের সবচেয়ে নিকৃস্ট শাসনও আমাদের নিকট অধিকতর পছন্দনীয়।
তবে লক্ষণীয়,
উমাইয়া শাসন সুপ্রতিষ্ঠিত হয় হুসাইন রাঃ ও আবদুল্লাহ ইবন জুবায়ের রাঃ কে অন্যায়ভাবে হত্যার পর।
এছাড়াও, এই শাসনের ভিত্তিরচনায় হাজ্জাজ বিন ইউসুফ যুদ্ধ ছাড়াই হত্যা করে লক্ষাধিক মানুষ! মর্মান্তিকভাবে নিহত হোন ইমাম সাঈদ ইবন জুবায়ের রহ.।
এশাসনের মাসলাহাতেই সিন্ধুবিজয়ী মহান বীর মুহাম্মাদ ইবন কাশিম রহ. মৃত্যুবরণ করেন কারাগারে। নফসে যাকিয়্যাহ ও তার ভাইকেও হতে হয় নিহত।
কারাগারে নিক্ষেপিত হোন ইমাম আবু হানিফা রহ.।
আবার, আব্বাসীয় শাসন প্রতিষ্ঠায় আবু মুসলিম খুরাসানি হত্যা করে ছয় লক্ষাধিক মুসলিম।
দামেস্কে প্রবেশের পর, আব্দুল্লাহ ইবন আলি আব্বাসি শাসনের প্রভাব বিস্তারে, উমাইয়া শাসনের সাথে সংশ্লিষ্ট নব্বই হাজার মুসলিমকে হত্যা করে। হিশাম ইবন আব্দিল মালিক ও তার স্ত্রীর লাশ কবর থেকে বের করে আনে।
আবদুল্লাহ ইবন আলি উমাইয়াদের বহু লাশ কবর থেকে উঠিয়ে চাবুকপেটা করে এবং পুড়িয়ে দেয়।
এছাড়াও, হতাহত দামেশকবাসীর উপর আবদুল্লাহ ইবন আলির দস্তরখান বিছিয়ে খাওয়াদাওয়া করার বর্ণনাও পাওয়া যায়!
উমাইয়্যা বা আব্বাসীয়দের এসকল অন্যায় সত্ত্বেও, মুসলিম উম্মাহ তাদের আনুগত্য মেনে নিয়েছিল।
কেননা, তারা শাসনব্যাবস্থায় শরিয়াহকে অপরিহার্য অনুষঙ্গ সাব্যস্ত করতো, জনসাধারণের প্রয়োজন পূরণ করতো এবং ইসলামের শত্রুদের ভীতসন্ত্রস্ত রাখতো।
ইসলামের প্রচার-প্রসারে তাদের অনবদ্য ভূমিকার ফলে তাদের আনুগত্য ও সহায়তায় উম্মাহ ভূমিকা রেখেছে। পাশাপাশি অন্যায় প্রকাশ পেলে, তাদের প্রকাশ্য-গোপন বিরোধিতাও জারি রেখেছে।
কিন্তু কোনো সুস্থ মস্তিষ্কের ব্যাক্তিও কি ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠার পথে উমাইয়্যা বা আব্বাসীদের অনুসরণের আহবান জানাবে!?!
কিংবা, কোনোপ্রকার ভূমিকা-উপসংহার বাদ দিয়ে ঢালাওভাবে উমাইয়্যা শাসন বা আব্বাসী শাসন প্রতিষ্ঠার আহবান জানাবে!?
অবশ্যই না।
যে কোনো আকলসম্পন্ন ও শরিয়াহর প্রাথমিক স্তরের জ্ঞান রাখা ব্যাক্তিও, নবী সাঃ ও খুলাফায়ে রাশেদার শাসন ফিরিয়ে আনার আহবান ও প্রচেষ্টাকেই নিজের কর্তব্য জ্ঞান করবে।
বুঝতে হবে,
কোনো জালিম বা পাপাচারী ইসলামী শাসক চেপে বসলে, তা মেনে নেয়া এক বিষয়; আর দাওয়াত ও মেহনতের ক্ষেত্রে, জালিম বা পাপাচারীর শাসনকে মহিমান্বিত করা বা এমন শাসকের গুণগান গাওয়া কোনোভাবেই ইসলামসম্মত হতে পারে না!
আর এমন দাওয়াহ ও দাঈ এসময়ে দীন ও উম্মাহর জন্য মারাত্মক ও আত্মঘাতী ফলাফল নিয়ে আসবে, এতেও সন্দেহ নেই!
যদি তর্কের খাতিরে এরদোগান বা ইমরান খানকে যুগের সুলতান মেনেও নেয়া হয়, তবুও-
এমন শাসক, শাসনব্যাবস্থা বা (গণতান্ত্রিকভাবে) ক্ষমতা অর্জনের প্রক্রিয়ার ভূয়সী ও উচ্ছসিত প্রশংসা করা মুলতঃ হাজ্জাজ বিন ইউসুফ বা আবু মুসলিম খুরাসানির অনুসরণকেই উম্মাহর মাঝে গ্রহণযোগ্য করে তোলে।
আর নিঃসন্দেহে বাস্তবতা হচ্ছে,
সিরিয়া ও সোমালিয়াতে কাফিরদের সাথে মিলে মুসলিম হত্যায় সরাসরি ভূমিকা রাখা, ইজরায়েলের ইহুদিদের বিমান পাঠিয়ে নিরাপত্তা প্রদান হাজ্জাজ বিন ইউসুফের কর্মকান্ডের চেয়েও মারাত্মক!
এবং,
পশ্চিমাদের সন্তুষ্টকরণে ওয়াজিরিস্তান, বেলুচিস্তানে পাইকারী হারে মুসলিমনিধন কিংবা উইঘুরে মুসলিম হত্যায় বৈধতা প্রদান- কোনো সন্দেহ ব্যাতিরেকেই আবু মুসলিম খুরাসানির কর্মকান্ডের চেয়েও মারাত্মক!
আর শেষ কথা হচ্ছে,
নববী মানহাজের শাসনের পরিবর্তে হাজ্জাজি শাসনে সন্তুষ্ট, বিমুগ্ধ দাঈ ও ইসলামপন্থীদের হাতে সমর্পিত হওয়া বা তাদের অন্ধানুকরণের বিপদও আশা করি সহজেই বোধগম্য,
তাই বিজ্ঞ ডক্টর সাহেবের দিকনির্দেশনা ও পরামর্শ বিবেচনায় নেয়া কাম্য যিনি বলেছেন-
"আমরা খুলাফায়ে রাশেদার আদলে হুকুমত চাই। কারণ, খুলাফায়ে রাশেদার উপর সন্তুষ্ট থেকে রাসুল সা. দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন। আমরা হাজ্জাজ বিন ইউসুফ ও আবু মুসলিম খুরাসানীকে আদর্শরূপে গ্রহণ করতে চাই না।"
Comment