Announcement

Collapse
No announcement yet.

ভ্যানগার্ডঃ উপায়, উপকরণ, উদ্দেশ্য!

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • ভ্যানগার্ডঃ উপায়, উপকরণ, উদ্দেশ্য!

    ভ্যানগার্ডঃ কি, কেন ও কারা!



    وَلۡتَکُنۡ مِّنۡکُمۡ اُمَّۃٌ یَّدۡعُوۡنَ اِلَی الۡخَیۡرِ وَ یَاۡمُرُوۡنَ بِالۡمَعۡرُوۡفِ وَ یَنۡہَوۡنَ عَنِ الۡمُنۡکَرِ ؕ وَ اُولٰٓئِکَ ہُمُ الۡمُفۡلِحُوۡنَ

    ২য় বিশ্বযুদ্ধের বিজয়ী শক্তি 'বিগ ফাইভ' (আমেরিকা, রাশিয়া, চীন, ফ্রান্স ও ইংল্যান্ড) তথা নিরাপত্তা পরিষদ নের্তৃত্বাধীন বৈশ্বিক সংগঠন 'জাতিসংঘ' নিয়ন্ত্রিত বিশ্বব্যাবস্থা কায়েম হওয়ার পাশাপাশি, ইসলামপন্থীদের মাঝে নানামুখী দ্বিধাবিভক্তির দরুন- মুসলিম উম্মাহর মাঝে শাসন ও রাজনৈতিক দৃস্টিভঙ্গিতে, পশ্চিমা মানসিকতার প্রভাব ব্যাপকতা লাভ করে।

    যার ফলে, সমাজ ও রাস্ট্রে শরিয়াহর কর্তৃত্ব ফিরিয়ে আনার প্রশ্নে, একটি সুনির্দিষ্ট উত্তর সবাই গ্রহণ করে নিয়েছে।
    সাধারণ লোক, তালিবে ইলম থেকে নিয়ে উলামায়ে কেরাম, ইসলামপন্থী নের্তৃবৃন্দ্ব ও সংগঠনসমূহের এক বড় অংশ এচিন্তাধারায় আচ্ছন্ন!

    আর তা হচ্ছে,
    উম্মাহর বৃহত্তর অংশ সক্রিয় ও স্বতঃস্ফূর্তভাবে ইসলাম পুনঃপ্রতিষ্ঠার আন্দোলনে এগিয়ে না আসলে, ইসলামের বিজয় অসম্ভব!

    অথচ, এচিন্তাধারা উম্মাহর শ্রেষ্ঠ ব্যাক্তিবর্গকে স্থবিরতায় আটকে রেখেছে।

    আল্লাহর রাসুল (সা.) এর জীবনেও আমরা দেখি যে, তিনি সা. প্রায় বিশ বছরের মেহনতে এমন ১৪০০ ব্যাক্তি প্রস্তুতেই অধিকতর মনোযোগ দিয়েছেন, যারা পরবর্তীতে ইসলামের আমানত বহন করে গোটা দুনিয়াতে মাত্র ৮০ বছরের মাথায় পৌছে দিতে সক্ষম হয়েছেন।

    যখন অগ্রবর্তী ব্যাক্তিদের জামাত সংগ্রাম আর সফলতার অভিমুখ ও ক্ষেত্র প্রস্তুত করে ফেলে, তখন জাতি স্বয়ংক্রিয়ভাবেই তাদের পেছনে একতাবদ্ধ হয়ে যায়।

    তাই উম্মাহ সেক্যুলার শাসকদের শোষণ ও ক্রোধ উদ্রেককারী ঘটনাপ্রবাহের প্রতিক্রিয়ায়, নিজে নিজেই বিজয় এনে দেবে এমন চিন্তা বাস্তবসম্মত নয়।

    আবু হুরাইরা রাঃ সূরা নাসর তিলাওয়াত করে বলেন, “সেই সত্তার কসম! যার হাতে আমার প্রাণ! আজ মানুষ যেভাবেই হক বের হয়ে যাচ্ছে যেভাবে মক্কা বিজয়ের পর দলে দলে ইসলামে প্রবেশ করেছিল।”

    আমরা দেখতে পাই, তানজীমসমূহ, রাজনীতিবিদ ও তাত্ত্বিকগণ উম্মাহকে ব্যাপকভাবে নিজ নিজ কর্মসূচীতে সম্পৃক্ত করে ‘নিরাপদ আন্দোলন’ বা 'সহজ জিহাদ' এর পথ ধরে বিজয় ও শরিয়াহ প্রতিষ্ঠার কথা বলে থাকেন।

    বাস্তবে এই চিন্তাধারার কোন ফলাফল কি দেখতে পাই?
    তারা কি আদৌ তাদের লক্ষ্যে পৌঁছাতে পেরেছে?
    তারা কি নিরাপদে নিজেদের গন্তব্যে পৌঁছাতে পেরেছে?

    উম্মাহর সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশের উপর নির্ভরশীল হওয়ার বিষয়টি আমাদের দ্বীন, উলামায়ে কেরাম এবং মুসলিমদের ভুমিগুলোকে লাঞ্ছিত আর অপমানিত করেছে।

    উম্মাহর সংখ্যাগরিষ্ঠের উপর নির্ভরতা সেক্যুলার ক্ষমতাশীল জল্লাদদের উল্লাসিত করেছে।

    উম্মাহর সংখ্যাগরিষ্ঠদের উপর নির্ভরতার এই মানহাজ, অধিকাংশ ইসলামপন্থী নেতা ও দলকে কাঙ্ক্ষিত সফলতা এনে দিতে পারেনি।

    আর যে বা যারাই ই উম্মাহর সংখ্যাগরিষ্ঠের উপর নির্ভর করে কর্মসূচী সাজিয়েছে ব্যর্থতা ছাড়া তারা কিছুই অর্জন করেনি। উম্মাহর সংখ্যাগরিষ্ঠদের উপর নির্ভরশীল জিহাদীদের অবস্থা তো আরও ভয়াবহ।
    তাদের অনেককেই জীবনের মূল অংশ কাটিয়ে দিতে হয়েছে কারাগারে।

    লক্ষ্যণীয়,
    আমরা উম্মাহর প্রতি লক্ষ্য রাখব; আমাদের দাওয়াতি, সামরিক ও রাজনৈতিক কর্মসূচীর সিংহভাগই হবে উম্মাহকেন্দ্রিক।
    কিন্তু উম্মাহর উপর নির্ভরতা, উম্মাহর মাঝে দ্রবীভূত হয়ে যাওয়া আমাদের আন্দোলনকে ফলপ্রসূ করবে না।


    বরং, এরকম আন্দোলন এক পর্যায়ে মানুষের রুটি-রুজির খোরাক মেটানোর আন্দোলন হয়ে যায়।
    আমাদের সংগ্রাম তো রুটি-রুজির জন্য নয়, যদিও তা আমাদের মৌলিক উদ্দেশ্য হাসিলের মাধ্যমে পূরণ হয়ে যাবে।
    বরং, আমাদের আন্দোলন হচ্ছে জমীনে ইসলামের কর্তৃত্ব ফিরিয়ে আনার আন্দোলন।

    আলোচনা থেকে এমনটা বোঝার কারণ নেই যে, উম্মাহকে তাকফীর করা হচ্ছে বা উম্মাহকে পরিত্যাগ করার কথা বলা হচ্ছে। বরং, এখানে বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে সঠিক কর্মসূচীর দিকে আহবান করা হচ্ছে।

    দশকের পর দশক সেক্যুলার শাসকদের প্রতারণা ও নোংরামির শিকার উম্মাহ কার্যকর কোন পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে নিজ সভ্যতা সংস্কৃতি প্রতিরক্ষায় সক্ষমতা দেখাতে পারেনি।
    সেক্যুলার বুদ্ধিজীবি, তোতাপাখিসদৃশ মিডিয়া আর দরবারী আলেমরা দ্বীন ও বাস্তবতা পাল্টে দিতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করেছে। ফলে, উম্মাহর আকিদায় ব্যাপকভাবে প্রবেশ করেছে ইরজা ও শৈথিল্যপরায়নতার জীবাণু।
    সামগ্রিকভাবে মুসলিমরা মানসিকভাবে পরাজিত। সবরকমের বিপদ তাদেরকে আষ্টেপৃষ্ঠে ঘিরে ধরেছে ।

    সাম্প্রতিক সময়ে আমরা মিশর, তিউনিসিয়া ও অন্যান্য মুসলিম দেশসমূহে লাখ লাখ মানুষকে আন্দোলন করতে দেখেছি। আমরা দেখেছি উৎসাহী মানুষের ভিড়।
    দেখেছি মানুষের রাস্তায় নামা, ভাঙচুর, আস্ফালন আর অগ্নিসংযোগ। এসবের চালিকাশক্তি ছিল ক্ষুধা, রুটি বা বৈষয়িক কোন দুর্যোগ।

    আন্দোলনরত এক ব্যক্তি যখন নিজ গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয় তখন কেউ তাকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেনি। উম্মাহ অত্যাচারী শাসকের পতনের জন্য একত্রিত হয়েছিল, বিক্ষোভ করেছিল।
    ফলাফল ছিল এই যে, উম্মাহর এই আন্দোলন এক সেক্যুলার শাসককে অপসারণ করে তার স্থলে আরেক সেক্যুলার শাসককে বসায়। প্রতিটি ক্ষেত্রেই উম্মাহর অর্জন ছিল শুধুমাত্র চেহারায় পরিবর্তন ঘটানো। তারা প্রতারণার শিকার হওয়া থেকে নিজেদের রক্ষা করতে পারেনি।

    এর অন্যতম কারণ জনগণের এই বিশাল অংশটিকে নের্তৃত্ব দেয়ার উপযোগী সংগঠন বা ভ্যানগার্ড তথা অগ্রবর্তী বাহিনীর অনুপস্থিতি। যার ফলে, আন্দোলনসমূহের অভিমুখ নিয়ন্ত্রণ করছিল একই আদর্শের ভিন্ন চেহারার অন্য কোনো সেক্যুলার।

    শাসকগোষ্ঠী আন্দোলন প্রতিহত করার জন্য বিভিন্ন মিথ্যা প্রতিশ্রুতি দিতে থাকে। ফলে জনগণ আন্দোলনের লক্ষ্য-উদ্দেশ্যের ব্যাপারে অমনোযোগী হয়ে পরে। কেননা, সেক্যুলার শাসনব্যবস্থার অধীনে জনগণ নিজ মানোন্নয়নে সক্ষম ছিল না।

    আরব বসন্তের সময় ইখওয়ানুল মুসলিমিনকে মধ্যমপন্থী সাব্যস্ত করা হয়েছিল। তারাও মিশরে জনগণের উপর ভর করে ক্ষমতা পাকাপোক্ত করতে ছেয়েছিল।
    এবং, তারা এটি ভেবেও নিয়েছিল যে, তাদের উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন হতে চলেছে। যখন জনগনের দুনিয়াবি চাহিদা পরিপূর্ণ হলো না, তাদের গণতান্ত্রিক নেতাদের পাশাপাশি কর্মীদেরকেও ঢালাওভাবে জেলে পাঠানো হলো, পরক্ষনেই পরিস্থিতি পাল্টে গেল। উম্মাহর সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশ তাদের অভিশাপ দিতে লাগলো। এমন কি কেউ কেউ নের্তৃবৃন্দের মুখে জুতা নিক্ষেপও করে।

    একারণে ধোঁয়াশাপূর্ণ স্লোগানের আশ্রয়ে জনগণকে সন্তুষ্ট করার মাধ্যমে পরিচালিত আন্দোলনসমূহ যেন প্রকৃত ইসলামপন্থীদের মৌলিক প্রচেষ্টা না হয়।

    জনচাহিদাকে উপেক্ষা করা উচিৎ নয়, তবে জনচাহিদার লেজুড়বৃত্তি নিঃসন্দেহে আন্দোলনকে ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষেপ করবে!
    তাদের জন্য অবশ্যক প্রতিটি সুযোগকে নিজেদের অনুকূলে নিয়ে আসার, তবে তা যেন তাদের প্রতারিত না করে।


    জাতির মুজাহিদদের জন্য সমীচীন নয় যে, তারা জনগণের মাঝে দ্রবীভূত হবে। যদিও এই দ্রবীভূত হওয়াটা রাজনীতিবিদ আর তাত্ত্বিকদের খুবই পছন্দনীয়।

    আরবের মাঝে যখন নবী (সাঃ) এর আবির্ভাব ঘটে তখন তিনি (সাঃ) ছিলেন সকল মানুষের মাঝে স্বর্ণতূল্য। তিনি ছিলেন মানুষের মাঝে সর্বোত্তম ও সবচেয়ে পবিত্র। তিনি ছিলেন আনুপম চরিত্রের অধিকারী এবং সর্বাধিক সম্মানিত।
    এতদসত্ত্বেও, মক্কা বিজয়ের আগ পর্যন্ত অল্প কিছু মানুষই তার অনুসরণ করেছিল।

    আরবের অথিকাংশই নবীজীর (সাঃ) দ্বীনের অনুসরণ থেকে বিরত ছিল। বরং যারা তার (সাঃ) অনুসরণকারীদের বিরুদ্ধে এমন কোন অত্যাচার নেই, যা করা হয়নি। এমনকি অগ্রগামী মুসলিমরা নিজ দেশ থেকে হিজরত করতে বাধ্য হয়।

    আল্লাহ্ প্রদত্ত সাহায্য ও বিজয় প্রত্যক্ষ করার আগ পর্যন্ত, আরবরা দলে দলে ইসলামে প্রবেশ করেনি। এমনকি পূর্বে বিরোধিতাকারী নের্তৃস্থানীয়রাও দলে দলে ইসলামে প্রবেশ করে।

    আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা ক্ষমতা, শক্তি ও বিজয়ের মাধ্যমে মানুষকে একত্রিত করেন, যা শুধুমাত্র দলীল আদিল্লা দ্বারা সম্ভব না। সুস্পষ্ট বিজয়ের ফলাফলস্বরূপ আরবের অধিকাংশ লোক পরাজিত ধর্মপরিত্যাগ করে বিজয়ী দ্বীন ইসলাম গ্রহন করে।

    আমরা এও দেখতে পাই যে, মক্কা বিজয়ের কিছুদিন পর সংঘটিত হুনাইনের যুদ্ধে উম্মাহর নতুন সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশটি কেবলমাত্র ইসলামের সুনির্বাচিত ও অগ্রগামী অংশের সাথে কেবল তাল মিলিয়ে চলার দ্বারা উপকৃত হয়নি। বরং, তারা পালিয়েছিল।
    শেষ অবধি কেবল বাইয়াতে রিদ্বওয়ানে অংশগ্রহণকারীগণই অগ্রবর্তী সাহাবাদের বাহিনীই দৃঢ় ছিলেন। যারা ছিলেন উম্মাহর সুনির্বাচিত ও অগ্রগামী অংশ।

    বেশী দিন যায়নি, রাসূল (সাঃ) এর ওফাতের পরপরই এই অধিকাংশ নওমুসলিমরা ইসলাম থেকে পালিয়ে যায়। আরবের লোকদের ব্যাপকভাবে দ্বীনত্যাগের উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবেলায় এগিয়ে আসেন আবু বকর রাঃ নের্তৃত্বাধীন উম্মাহর সুনির্বাচিত ও অগ্রগামী মুসলিমদের অংশটি।
    অবশেষে তরবারির মাধ্যমে যখন মুরতাদদের প্রভাব বিনস্ট হলো, তখন লোকজন পরাজিত হয়ে নতুন করে ইসলামে প্রবেশ করলো।

    এমন উদ্যমী ও অগ্রবর্তী ব্যক্তিবর্গ সব কালেই সবখানেই কিছু না কিছু থাকেন, যারা দ্বীনের প্রকৃত অভিযাত্রী। এরাই দ্বীনের আমানত ও মুল্যবোধ বহন করেন।

    এই মহান ব্যাক্তিদের ব্যপারে আল্লাহর নবী ﷺ প্রশংসা করেছেন।

    যেমন সহিহ বুখারীতে আছে, আব্দুল্লাহ ইবনে উমার রাঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
    আমি রাসুলুল্লাহ ﷺ কে একথা বলতে শুনেছি যে,
    "মানুষ একশত উটের ন্যায়। তবে তার মাঝে সওয়ারী হিসেবে একটি ও খুঁজে পাবে না।"

    ইমাম ইবন বাত্তাল রঃ বলেন,
    "মানুষের সংখ্যা অনেক। তবে পছন্দসই মানুষের সংখ্যা খুবই কম।"

    ইমাম আহমদ রঃ এর যমানার লোকেরা দ্বীনের অনেক নিকটবর্তী ছিল। এবং তাদের সময়টা রাসুলুল্লাহর (সা) যমানার খুব কাছাকাছি ছিল। এবং তাদের মাঝে যথেষ্ট উলামায়ে কেরামও ছিল।
    এবং ইমাম আহমদ রঃ যখন মৃত্যু বরণ করেন, তখন তার জানাযায় লাখ লাখ লোক অংশগ্রহণ করেছিলো।

    অথচ যখন তাকে শাসকগোষ্ঠী জেলে পুরে নির্মম অত্যাচার চালিয়েছিলো তখন এ লোকগুলো কোথায় ছিল?

    এ বিশাল সংখ্যক লোকগুলো তখন ইমাম আহমদ রঃ ও অন্যান্য হক্কানি উলামায়ে কেরামদের পরিত্যাগ করেছিলো। ফলে বিদআতি শাসকগোষ্ঠী তাদেরকে বন্দী করে নির্যাতন করে এবং কাউকে কাউকে হত্যাও করে।

    আমরা কি তাহলে এটা বলব যে, তিনি জনবিচ্ছিন্ন ছিলেন?

    অথচ, বাস্তবতা হলো- তিনি ছিলেন অনুপম চরিত্রের অধিকারী। স্বীয় যমানায় তিনি ছিলেন অতুলনীয় ব্যক্তিত্বের অধিকারী।

    যাই হোক। আবারো বলছি,
    জননির্ভর জাতীয় আন্দোলনের শেষ পরিণতি হয় মিশর, তিউনিসিয়ার গণ-আন্দোলনের ন্যায় হবে। কিংবা হবে শাপলা চত্বরের অবস্থানকারীদের ন্যায়। যারা প্রতিরোধ পরিত্যাগ করে, নিজেদের অবস্থান নিয়ে সন্তুষ্ট হয়ে গেছে।

    হ্যাঁ সঠিক কথা হলো, এখনো পর্যন্ত হকপন্থী ইসলামপন্থীরা পতনমুখী সমাজের মাঝে দ্রবীভূত হয়ে যায়নি।

    বরং, গোটা দুনিয়ার বিভিন্ন প্রান্তে মুজাহিদরা বিভিন্ন ময়দানে সমাজকে স্থিতিশীল ও পরিশুদ্ধ করতে চেষ্টা করে যাচ্ছেন। মুজাহিদরাই হচ্ছেন এই জামানার প্রভাবশালী, অগ্রবর্তী ব্যক্তিবর্গ বা ভ্যানগার্ড; যারা নিজেদের কাধে উম্মাহর দায়িত্ব বহন করে চলেছেন।

    এই পথ অত্যন্ত দীর্ঘ ও ধীর গতির, যাতে দোষের কিছু নেই। অথচ, নির্বোধেরা এটাকে দোষনীয় মনে করে।

    তবে মুজাহিদীনরা মনে করেন যেহেতু উম্মাহর উপর জগদ্দল পাথরের ন্যায় তাগুত শাসকগোষ্ঠী চেপে বসেছে এবং সমস্ত সিস্টেমকে তারা কব্জা করে রেখেছে, তাই যথাযোগ্য সামরিক ও রাজনৈতিক পদ্ধতিতে তাদের অপসারণ যুক্তিযুক্ত।

    দেরীতে হলেও পরিচ্ছন্ন লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারা, ভ্রান্ত গন্তব্যে চলা এবং লক্ষ্যে পৌঁছতে ব্যর্থতা থেকে উত্তম।

    এপথের পথিকগণ একথা ভেবে সান্ত্বনা লাভ করেন এবং ধৈর্য ধারণ করেন যে, কিয়ামতের দিন এমন নবী আসবেন যার সাথে একজন অথবা দুই জন অনুসারী থাকবে। আবার এমন নবী ও আসবেন যার সাথে কেউ থাকবে না।

    অধিকাংশ আন্দোলন কর্মী, তাত্ত্বিক, নির্বাচিত প্রতিনিধি এবং সমাজের অধিকাংশ লোকদের এবিষয়ে কোনো মাথাব্যাথাই নেই।

    এমন কি কিছু জিহাদের আহবানকারী জামাত ও ব্যাক্তিও খুঁজে পাওয়া যাবে, যারা এই নস্ট সমাজের মাঝে দ্রবীভূত হয়ে গেছে।

    মানুষের অবস্থা বর্ণনা করে, এমন আয়াতগুলো সম্পর্কে অধিকাংশ মানুষই অমনোযোগী।
    যেমন আল্লাহ সুবঃ বলেন

    {ولكنّ أكثر الناس لا يعلمون}

    {قل الحمد لله بل أكثرهم لا يعقلون}

    {ولكن أكثر الناس لا يشكرون}
    ....


    কিছু কিছু মানুষ কি এটাই চায় যে, জাতির সকলেই আত্মপূজারী ও নির্বোধদের মাঝে বিলীন হয়ে যাক?

    বরং তাদের চাওয়া উচিৎ,
    উম্মাহর উত্তম ও অগ্রবর্তী অংশ যেন সমাজকে শরীয়াহ, সঠিক ইলম ও পরিপক্ক আকল অনুযায়ী পরিচালনা করেন।

    দুঃখজনক বাস্তবতা হচ্ছে, সমাজের মাঝে বিলীন হয়ে যাওয়ার কথা বলা লোকের অভাব নেই।

    এ লোকগুলো কি কাছে এটাই প্রত্যাশা করে যে, সকলেই বিভ্রান্তির শিকার সাধারণ মানুষ এবং নস্ট সমাজের মাঝে বিলীন হয়ে যাক?

    তারা কি এটাই চাচ্ছে যে, বিশাল সংখ্যা দেখে মোহাবিষ্ট হয়ে এক পর্যায়ে সবাই গণতন্ত্র নামক আধুনিক শিরকে লিপ্ত হোক।

    বরং, আবশ্যক তো হলো,
    জনসাধারণকে সব রকমের পদস্খলন থেকে রক্ষা করা এবং সাধ্যমত জাতিকে বিশুদ্ধ মানহাজের আলোকে পরিচালিত আন্দোলনে শরীক করা; যার ফলে একসময় তারা তাদের সুনির্বাচিত ও অগ্রগামী লোকদেরকে জাতিকে নের্তৃত্বদানের গৌরবময় মহান কাজে শরীক করবে।

    (২)

    ইসলামের উত্থানের জন্য বিশুদ্ধ ইসলামী মানহাজের অনুসারী, রাজনৈতিক-সামরিক প্রজ্ঞা ও দক্ষতাসম্পন্ন অগ্রগামী বা ভ্যানগার্ড বাহিনীর অপরিহার্যতা যদি বোধগম্য হয়; তাহলে একই সাথে এই প্রশ্নও আসে যে, কীভাবে এই অগ্রবর্তী অংশটি অস্তিত্বলাভ করে এবং উম্মাহর মাঝে আত্মপ্রকাশ করে!?
    কিংবা জাতির মাঝে এমন কোনো অংশ থেকে থাকলে, তা চিহ্নিত করাই বা হবে কিভাবে?

    কেননা, ইসলামী দলগুলোর সবকটিই তো নিজেদেরকে শরঈ ও বাস্তবতার আলোকে উম্মাহকে নিজের দিকে আহবান করে থাকে। তাহলে কারা জাতির ক্রান্তিলগ্নে সঠিক পথ প্রদর্শনে সক্ষম!?

    শুধু শরঈ আলোচনার পাশাপাশি বাস্তবতা ও ইতিহাসের আলোকেই বা কিভাবে সঠিক ভ্যানগার্ড বাহিনীকে চেনা যাবে!?

    ইতিহাসের দিকে সাধারণ দৃষ্টিপাত করলে দেখা যায়,
    ইউরোপে শুরু হওয়া দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ধারাবাহিকতায় নিস্তেজ হয়ে পড়া ইউরোপীয় শক্তিগুলো নিজ উপনিবেশগুলোতে ক্রমাগত আক্রমণের শিকার হতে থাকে।

    আফ্রিকা ও এশিয়ার যেসব দেশে ব্রিটিশ, ডাচ বা ফ্রেঞ্চ উপনিবেশ ছিল, সেসব দেশে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আগে-পরে ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে সশস্ত্র লড়াই হয়। শেষ পর্যন্ত পালিয়ে যায় পশ্চিমা বানরের পাল!

    আর এই সশস্ত্র বিপ্লবগুলোতে নের্তৃত্ব দিয়েছেন ওইসব সূক্ষদর্শী রাজনীতিবিদগণ, যাদের সমরবিদ্যায় প্রভুত জ্ঞান ছিল। এমন নের্তৃত্বকে ‘পলিটিকো-মিলিটারি’ নের্তৃত্ব বলা হয়।

    ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে ব্রিটিশ উপনিবেশবাদ বিদায় নিলেও, আমাদের দেশের সেক্যুলার শাসনতন্ত্রের দিকে নজর দিলে দেখা যায়,
    রাজনৈতিক, প্রশাসনিক ও সামরিক কাঠামো পুরোদস্তুর পূর্ববর্তী ঔপনিবেশিক আদলেই রয়ে গেছে।

    তাই, বিশুদ্ধ আকিদা-মানহাজের উপর সুপ্রতিষ্ঠিত "পলিটিকো-মিলিটারি" নের্তৃত্বের অধীনে গঠিত অগ্রগামী বা ভ্যানগার্ড বাহিনী ব্যাতীত, ব্রিটিশ উত্তরাধিকারে প্রাপ্ত সেক্যুলার শাসনের বিরুদ্ধে সাফল্যের আশা করা, ইতিহাস ও বাস্তবতার আলোকে সঠিক নয়।

    আর এমন নের্তৃত্ব, বাহিনী ও আন্দোলনের বাস্তবতায় রূপ দিতে অপরিহার্য হচ্ছে যথাযোগ্য তরবিয়ত।

    বিশুদ্ধ আকিদা-মানহাজের সংকটের পাশাপাশি সঠিক আত্মিক, সামরিক, রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক তরবিয়তের অভাবেই যুগের পর যুগ আন্তরিক চেষ্টা ও কুরবানী সত্ত্বেও,
    হাসান আল বান্না, আবুল আলা মওদুদি বা তাকিউদ্দিন নাবহানিদের দ্বারা শুরু হওয়া আন্দোলনগুলো জাতিকে নের্তৃত্ব দিতে ও সংগঠিত করতে ব্যার্থ হয়েছে।

    ডক্টর আইমান আল মিসরি বলেন,
    ইসলামী আন্দোলনের জন্য এমন একটি ময়দান (বা বাস্তবতা) প্রয়োজন, যেটা তার জন্য ইনকিউবেটর হিসাবে কাজ করবে, যেখান থেকে অঙ্কুরিত বীজ বেড়ে উঠে। সেখান থেকে তারা সামরিক, রাজনৈতিক, সাংগঠনিক ও কর্মগত অভিজ্ঞতা অর্জন করবে।”



    শায়খ আবদুল্লাহ আজ্জাম রহঃ বলেন,
    “তারা আন্দোলনের পথে দীর্ঘ দুর্ভোগের তিক্ততা এবং বিশাল ত্যাগ অতিক্রম করার মাধ্যমে নিজেদের হৃদয়কে স্বচ্ছ করে তুলবে, ফলে তারা দুনিয়ার নিম্ন বাস্তবতা থেকে উর্ধ্বে উঠে যাবে এবং তাদের মন—মানসিকতা সামান্য টাকা—পয়সা, সাময়িক স্বার্থ ও তুচ্ছ ভোগ—সামগ্রীর বাক—বিতণ্ডা থেকে উঁচু হয়ে যাবে এবং হিংসা—বিদ্বেষ দূর হয়ে যাবে।

    তা আত্মাকে পরিস্কার করে দিবে এবং কাফেলাকে নিচু অবস্থান থেকে উচ্চতর অবস্থার দিকে পরিচালিত করবে, যারা দুর্গন্ধময় জাতিয়তাবাদ ও স্বার্থান্বেষী লড়াই থেকে অনেক দূরে থাকবে।

    দীর্ঘ পথ অতিক্রম করার মাধ্যমে নের্তৃত্ব গড়ে উঠে, এর ত্যাগ ও কুরবানির মাধ্যমে যোগ্যতা বিকশিত হয় এবং পুরুষরা তাদের বীরত্ব ও বাহাদুরি প্রকাশ করতে পারে।

    আবু বকর, ওমর, উসমান, আলী। রাদিয়াল্লাহু আনহুম। তারা তো এই মহান কর্ম ও সুউচ্চ কুরবানির মাধ্যমেই প্রকাশিত হয়েছিলেন।

    একারণেই উম্মত আবু বকরকে খলিফা মনোনয়নের ব্যাপারে একমত হয়ে গিয়েছিল।
    এর জন্য নির্বাচনী প্রচারণার প্রয়োজন হয়নি। ফলে আল্লাহর রাসূলের আত্মা সর্বোচ্চ বন্ধুর পানে জান্নাতের উদ্দেশ্যে উড়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সকলের চোখগুলো মাঠে অনুসন্ধানে নেমে গেল। তখন তারা আবু বকর থেকে শ্রেষ্ঠ কাউকে পেল না।

    যে উম্মত চড়া মূল্য ব্যয় করে পাকা ফল কুড়ায়, তাদের জন্য তাদের রক্ত—ঘামে কুড়ানো ফসলের ব্যাপারে অবহেলা করা সহজ নয়।


    পক্ষান্তরে যারা (পশ্চিমা) দূতাবাসগুলোর পর্দার আড়ালে তৈরী (গণতান্ত্রিক বা সামরিক) বিপ্লবের প্রথম বক্তব্যের মাধ্যমে মানুষের অন্তরে আসন গেড়ে বসে, তাদের জন্য যেকোন বিষয়েই শৈথিল্য করা সহজ।

    যে বিনাযুদ্ধে দেশ অধিকার করে নেয়, তার জন্য দেশ সমর্পণ করে দেওয়াও সহজ।

    আর দীর্ঘ আন্দোলনের মাধ্যমে ধীরে ধীরে প্রকাশ লাভ করা সেরা ব্যক্তিদের নেতৃত্বে পরিচালিত উম্মাহর পক্ষে তাদের নের্তৃত্বের ব্যাপারে শৈথিল্য করা বা তাকে বিপর্যস্ত করার ষড়যন্ত্র করা সহজ নয়। আর তাদের শত্রুদের পক্ষেও তাদেরকে তাদের বাহাদুরদের গতিবিধি সম্পর্কে সন্দেহে ফেলা সহজ নয়।

    দীর্ঘ আন্দোলন তাদের জাতির প্রতিটি সদস্যের মাঝে এই উপলব্ধি সৃষ্টি করে যে, তারা মূল্য আদায় করেছে এবং ইসলামী সমাজ গঠনের জন্য কুরবানিতে অংশগ্রহণ করেছে। ফলে তারা এই নবজন্মা সমাজের প্রহরী ও নিরাপত্তাকর্মী হয়ে যায়, যার প্রসববেদনা সমস্ত উম্মাহকেই সহ্য করতে হয়েছে।

    যে কোন ইসলামী সমাজের জন্মের জন্যই প্রসব বেদনা আবশ্যক। আর যেকোন প্রসবকার্যের জন্য কষ্ট-পরিশ্রম আবশ্যক। আর যেকোন পরিশ্রমের জন্য ব্যথা—বেদনা আবশ্যক।”


    তিনি আরো বলেন:

    “আমরা যদি কাবুল থেকে আল কুদসের দিকে চলার ইচ্ছা রাখি, তাহলে এ পথটি হল ইসলামী দাওয়াতের পথ, যা যুবকদেরকে প্রতিরোধের জন্য এবং আকিদার জন্য লড়াই করার চেতনায় গড়ে তুলবে, তখনই তারা বিজয় লাভ করবে।
    এটা ছাড়া আমরা পানিতে চাষাবাদ করব, শূণ্যে বীজ বপন করব। তখন ব্যর্থতার পর ব্যর্থতাই আসবে। আর বিষয়টা যতক্ষণ শুধু ঘোষণা, স্লোগান, প্রবন্ধ—নিবন্ধ ও মুখরোচক কথার মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে, ততক্ষণ অবধি তার গন্তব্যে পৌছতে পারবে না।”

    (৩)

    জাতি নিজ থেকেই বিজয় ইসলামপন্থীদের হাতে উঠিয়ে দেবে, এমন বিপজ্জনক চিন্তা থেকে বেরিয়ে এসে ইসলামপন্থীদের উপলব্ধি করা প্রয়োজন যে,
    ইসলামী আন্দোলন ও সংগ্রামের নের্তৃত্ব, দিকনির্দেশনা ও প্রতিরক্ষার কাজ সফলভাবে সম্পাদনে সর্বাগ্রে প্রয়োজন- বিশুদ্ধ আকিদা-মানহাজ, শক্তিশালী ঈমান, সামরিক ও রাজনৈতিক প্রজ্ঞায় সুসজ্জিত এক সংগঠিত গোষ্ঠী।

    প্রতিকূল পরিবেশেও এমন সংগঠিত দল প্রস্তুতের দৃস্টান্ত রয়েছে নবীজীর সিরাতে।
    আমরা দেখি যে, রাসুল সা. দারে আরকামে গোপনে দীর্ঘদিন পর্যন্ত অগ্রগামী সাহাবীদের তরবিয়তের মাধ্যমে পরবর্তী সময়ের সংগ্রামী জীবনের জন্য প্রস্তুত করেছেন, যা মক্কা বিজয়ের আগ অবধি চলমান ছিল।

    ইসলামী বিপ্লব সাধনের জন্য তাই প্রয়োজন ইসলামী আকিদা ও বিশুদ্ধ মানহাজে সুসজ্জিত ইসলামপন্থীদের অগ্রবর্তী সংগঠন।

    আর,
    বর্তমান প্রেক্ষাপটেও মুসলিম উম্মাহর অগ্রগামী একটি অংশ কোনো রাস্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা ব্যাতিত সম্পূর্ণ শূণ্য থেকে প্রতিরোধ গড়ে তোলার মাধ্যমে ইসলামের সম্মান পুনরুদ্ধারের চেস্টা করছে।
    এই দৃঢ়পদ শ্রেণীটির নের্তৃত্ব দিয়ে আসছে সম্মানিত ও প্রজ্ঞাবান ডক্টর সাহেবের জামাআত।

    কোনো প্রকার রাস্ট্রীয় সহায়তা ব্যাতিরেকে কোনো জাতিকে পূর্বের জাহেলি শাসন থেকে মুক্ত করতে ইসলামপন্থীদের জন্য জরুরী যে,
    তারা শরঈ মূলনীতির আলোকে, ফলপ্রসূ রাজনৈতিক ও সামরিক উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে দাওয়াহ, সংগঠন, তরবিয়ত, প্রস্তুতিগ্রহণ ও পর্যায়ক্রমিক নানামুখী প্রয়োজনীয় কর্মসূচী গ্রহণ করবে।
    যার ফলে পূর্ববর্তী শাসন দুর্বল হবে এবং ক্ষমতার কেন্দ্রে ইসলামপন্থীরা নিজেদেরকে প্রতিস্থাপনে সক্ষম হবে।


    ইতিহাসে এই মানহাজের বাস্তবতা পাওয়া যায়, মুরাবিতি, মুওয়াহহিদি সাম্রাজ্য, উসমানি সাম্রাজ্যের দৃস্টান্ত থেকে।

    তুলনামূলক দূর্বল কোনো শক্তির জন্য,
    দাওয়াহ > সংগঠন> প্রস্তুতি ও তরবিয়ত > তীব্র সামরিক, রাজনৈতিক পদক্ষেপ > তামকিন- এই ধারাবাহিকতাই হচ্ছে বাস্তবসম্মত, বিশুদ্ধ ও সুসাব্যস্ত মানহাজ।
    আর আন্দোলনের প্রত্যেক স্তরেই আবশ্যক ঈমান, তাওয়াক্কুল, ইস্তি'আনা, মুহাসাবা, সবর ও অধ্যবসায়।

    নির্মোহ দৃস্টিতে খেয়াল করলে দেখা যাবে, সফল রাজনৈতিক আন্দোলন পরিচালনা ও সংগঠনে, নূন্যতম সংখ্যক সদস্যের একটি অগ্রবর্তী বাহিনী (ভ্যানগার্ড পার্টি) থাকে, যারা উম্মাহর দিকনির্দেশনা ও নের্তৃত্বের জিম্মা গ্রহণ করে।

    জাতির এই অগ্রবর্তী অংশটির শরঈ ইলম, তাকওয়া, তাওয়াক্কুল, সাংগঠনিক দক্ষতা ও এক্টিভিজমের যোগ্যতার পাশাপাশি থাকতে হয় ধীশক্তি ও যথাযথ সামরিক-রাজনৈতিক জ্ঞান।

    এর ফলে ক্রমপরিবর্তনশীল বাস্তবতার আলোকে দ্রুত বা প্রয়োজনীয় সমস্যা/পরিস্থিতি চিহ্নিতকরত, তদানুযায়ী সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব হয়।
    ​​​​
    দুঃখজনক বাস্তবতা হচ্ছে আমাদের পূর্বের ও সমসাময়িক ইসলামী সংগঠনগুলোতে এসমস্যাটি প্রকটাকারেই দেখা যায়। পূর্ব অভিজ্ঞতায় এটাই প্রতীয়মান হয় যে,
    আগেরজন যা বলেছেন, পরের জন তার সবই সঠিক মনে করেছেন।

    কিন্তু পূর্বসূরীর চিন্তাধারার সমস্যাগুলো চিহ্নিত করার মত মেধা, প্রজ্ঞা, ইচ্ছা কোনটাই সাধারণত এর ফলে উত্তরসূরীর মাঝে থাকে না।
    তাই দেখা যায় নীতিনিষ্ঠ শিষ্যের মত সারা জীবন পূর্বসূরীদের দেখানো পথে চলতে চেষ্টা করা হয়।

    ব্যক্তি বা জামাতের সততা, নিষ্ঠা এবং তার বিশ্বাসের প্রতি আন্তরিকতা প্রশ্নাতীত থাকলেও, বাস্তবতা উপেক্ষা করা উচিত নয়।

    দুঃখজনক বাস্তবতা হলো, বাস্তব ময়দানে সফল হবার জন্য এসব গুণাবলীই শেষ কথা নয়। জামাত হিসেবে তো বটেই, এমনকি আদর্শের পতাকাবাহী হিসেবেও অনেকে তাই সফল হতে পারেননি।

    আমরা ভুলে যাই, ইতিহাসের ট্র্যাজেডি হলো ইতিহাস ব্যর্থ মানুষদের মনে রাখে না।

    ব্যাক্তি পর্যায়ে কবুলিয়াত অর্জনের চেষ্টা আর জাতির জিম্মাদারি আদায়ের মাঝে রয়েছে বহুমুখী ও ব্যাপক ব্যবধান।

    আল্লাহর সাহায্যে বর্তমানে অগ্রগামী ইসলামপন্থীদের মাঝে যোগ্য ব্যাক্তি অপ্রতুল হলেও, অল্প কিছু ব্যাক্তির মাধ্যমেই যে ইতিহাসের মানচিত্র পালটে দেয়া সম্ভব তা ইতিমধ্যেই প্রমাণিত হয়েছে আলহামদুলিল্লাহ।

    আরো প্রমাণ হয়েছে, আমাদের পথ কস্টকর আর দীর্ঘ হলেও- তা বোধগম্য, সরল ও সাবলীল।

    বাস্তবিক দক্ষতা ও সক্ষমতা অর্জনের ঝক্কি এড়াতে কিংবা নিজের অক্ষমতা ও অলসতা গোপন করতে, তাওয়াক্কুল, গায়েবি নুসরত আর আসন্ন বিজয়ের গালভরা বুলি দিয়ে সাময়িক ফায়দা অর্জন করা গেলেও, এজাতীয় বুদ্ধিবৃত্তিক অসততা আখেরে কেবল আফসোসই টেনে আনবে; অতীত অন্তত আমাদের এশিক্ষাই দেয়।
    আর এমন চিন্তাধারা আদতে আল্লাহর রাসুল সাঃ এর ২৩ বছরব্যাপী সুপরিকল্পিত ও সূক্ষ্ম জীবনযাত্রাকে তাচ্ছিল্য করারই নামান্তর!

    শায়খ আবু বকর নাজি রহঃ'র বক্তব্য মাথায় রাখা প্রয়োজন, যিনি বলেছেন, "আমাদের সূফী দরবেশ ও তোতাপাখির প্রয়োজন নেই।"

    গুরুত্ব বিবেচনায় পুনরাবৃত্তি করতে হচ্ছে যে,
    আমাদের জন্য আবশ্যক হলো উম্মাহকে সব রকমের পদস্খলন থেকে রক্ষা করা এবং সাধ্যমত তাদেরকে বিশুদ্ধ মানহাজের আলোকে পরিচালিত আন্দোলনের অনুগামী করা।
    যার ফলে তারা তাদের সুনির্বাচিত ও অগ্রগামী লোকদেরকে উম্মাহর নের্তৃত্বদানের গৌরবময় মহান কাজে শরীক করবে।

    পাশাপাশি, ইসলামপন্থীদের জন্য আরো আবশ্যক যে, তারা হয় অগ্রবর্তী শ্রেণীকে চিহ্নিত ও মজবুত করবেন, জাতিকে সচেতন করে তুলবেন, অথবা সরাসরি অগ্রবর্তী শ্রেণীতে অন্তর্ভুক্তির প্রস্তুতি গ্রহণ করবেন বা চেষ্টা করবেন।

    কেননা, বিশুদ্ধ মানহাজের আলোকে, আমানতদার ও সুযোগ্য 'পলিটিকো-মিলিটারি' নের্তৃত্বের দেখানো পথ ও পন্থার উপর সকলের মেহনতকে একত্রিত করার মাধ্যমেই কেবল জাতি ব্যাপকভাবে উপকৃত হতে পারে।

    সর্বোপরি সবারই স্মরণে থাকা কাম্য, দেরীতে হলেও পরিচ্ছন্ন লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারা, ভ্রান্ত গন্তব্যে চলা এবং লক্ষ্যে পৌঁছতে ব্যর্থতা থেকে উত্তম।

    আল্লাহ তা আলা আমাদের বিষয়টি বোঝার তাওফিক দিন। আমিন।
    _______
    *ইসলামপন্থা= ইসলামের আদর্শিক, রাজনৈতিক প্রভাব ও শাসন জাতির মাঝে ফিরিয়ে আনার উদ্দেশ্যে অনুসৃত কর্মপন্থা।

    আল্লাহ তা আলা আমাদের বিষয়টি বোঝার তাওফিক দিন। আমিন।

    والله غالب على أمره ولكن أكثر الناس لا يعلمون

  • #2
    سُبْحَانَ اللّٰهِ
    এক কথায় সম্পূর্ণ লিখাটিই অসাধারণ হয়েছে। আর লিখাটির মাঝখানে মাঝখানে অনেকগুলো কথা অনেক অনেক সুন্দর। যা এক ভিন্ন অনুভূতির সৃষ্টি করে। অনেক কিছু নতুন শিখলাম। মনে হচ্ছে চিন্তা করার পরিধি বৃদ্ধি পেয়েছে। আমি লিখাটি একবার পড়েছি আরও বেশ কয়েকবার পড়বো বলে নিয়ত করে রেখেছি।

    আপনি এই বিষয়গুলো নিয়ে পড়াশোনা করেছেন, চিন্তা-ফিকির করেছেন, এক একটা বর্ণ টাইপ করে করে এত বড় এক লিখনির পদার্পণ করেছেন ও আমাদেরকে উপকৃত করেছেন। এই লিখার পিছনে আরও কত শ্রম ও মেহনত করেছেন তা তো আল্লাহ তায়ালাই উত্তম জানেন। আল্লাহু আকবার। আল্লাহ তায়ালা আপনাকে দিয়ে কত উত্তম কাজ করাচ্ছেন! সত্যিই আমার প্রচন্ড ইর্ষা হচ্ছে। সেই সাথে আপনার ইলমের প্রতিও আমার মারাত্মক লোভ হচ্ছে।

    আরও অনেক কিছু লিখার মন চাচ্ছিল, কিন্তু আমি সজিয়ে-গুছিয়ে লিখতে পারি কম। তাই অগুছানো কথাগুলো না হয় থেকেই গেল, হয়তবা জান্নাতে কোন এক গাছের নিচে যার পাশ দিয়ে নহর প্রবাহিত, মৃদু হাওয়া, পাখিদের কিচিরমিচিরে শেয়ার করব আপনাদের সাথে
    অনেকের চিন্তা করার গুণ থাকে। আবার অনেকের তার চিন্তাগুলোকে মুখে বলে প্রকাশ করার গুণ থাকে। আবার অনেকের সেই চিন্তা-সেই মুখের কথাগুলোকে লিখার মাধ্যমে প্রকাশ করার গুণ থাকে। সবুহানাল্লাহ আল্লাহ তায়ালা আপনাকে অনেকগুলো গুণ দিয়েছেন। ভাবতেই অবাক লাগছে, এত এত গুণে গুণান্বিত লোকগুলো আমার মুসলিম ভাই। এই ফোরামের বেশ কয়েকজন ভাই তো আমার হৃদয়ের বড় একটা জায়গা দখল করে নিয়েছেন। তাদের মধ্যে প্রথমেই থাকবে Munshi Abdur Rahman ভাই, তারপর s_forayeji ভাই, ইলম ও জিহাদ ভাই আর এবার তো Hasan Abdus Salam ভাইআপনিও জায়গা দখল করে নিয়েছেন আমার হৃদয়ে। আর মিডিয়ার ভাইয়েদের কথা মনে হলে তো হৃদয় ও দেমাগ দুটুই আন্দোলিত হয়। সত্যতিই এ এক অন্য রকম অনুভূতি। আমরা পৃথিবীতে কখনও একে অপরকে দেখেনি কিন্তু তারপরও কি এক টান, কি এক ভালবাসা। সুবহানাল্লাহ।

    সীমাহীন অভিরাম ভালবাসা হে আমার ভাই তোমাদের জন্য .....................

    হে আল্লাহ! আপনি আমাদেরকে অলস, উদাসীন ও দুনিয়া লোভী বানায়েন না। আপনি আমাদেরকে অগ্রগামী কম সংখ্যক লোকদের মধ্যে শামিল করুন ও দৃঢ়পদ রাখুন। আপনি আমাদের সবাইকে একই দেহের অংশ করে রাখুন। আমীন ইয়া রব্বাল আলামীন।
    হে পরাক্রমশালী শক্তিধর! কৃপণতা আর কাপুরুষতা থেকে আশ্রয় চাই সর্বক্ষণ।

    Comment


    • #3
      মাশা আল্লাহ, আল্লাহ তায়ালা কলমে আরো জোর দান করেন এবং উম্মতের খেদমতে কবুল করেন। আমীন।

      Comment


      • #4
        আম-খাস সকল মুসলিম ভাই ও বোনের জন্য এই প্রবন্ধটি নিঃসন্দেহে উপকারী হবে, ইন শা আল্লাহ। যারা এখনো পড়েননি, খুব দ্রুত পড়ে নিন।
        সুপ্রিয় ভিজিটর ভাই-বোনদের কাছে বিনীত নিবেদন এই যে, লেখাটি গভীর মনোযোগ দিয়ে বারবার পড়বেন এবং নিজের করণীয় সম্পর্কে সচেতন হবেন ইন শা আল্লাহ।
        আল্লাহ এই প্রবন্ধটিকে কবুল ও মাকবুল করুন! এর ফায়েদাকে ব্যাপক থেকে ব্যাপকতর করুন! আমীন।
        “ধৈর্যশীল সতর্ক ব্যক্তিরাই লড়াইয়ের জন্য উপযুক্ত।”-শাইখ উসামা বিন লাদেন রহ.

        Comment


        • #5
          মা শা আল্লাহ উস্তাদ এমন লেখা আরো চাই

          Comment


          • #6
            সুবহানাল্লাহি ওয়াবিহামদিহি
            চমৎকার একটা আর্টিকেল পেলাম
            কমেন্ট করে ফোরামের মেইন পেইজে আনার চেষ্টা করছি যাতে সবাই উপকৃত হতে পারে
            মোডারেটর ভাইয়েরা মেহেরবানি করে এপ্রুভ করে দিয়েন,
            জাযাকাল্লাহ খাইরান

            Comment


            • #7
              মাশাআল্লাহ, আল্লাহ্‌ লিখকের ইলমে এবং হায়াতে বারাকাহ দিন

              Comment


              • #8
                বেশ উপকারী আলোচনা মাশাআল্লাহ!

                Comment


                • #9
                  আসসালামু আলাইকুম
                  """"এপথের পথিকগণ একথা ভেবে সান্ত্বনা লাভ করেন এবং ধৈর্য ধারণ করেন যে, কিয়ামতের দিন এমন নবী আসবেন যার সাথে একজন অথবা দুই জন অনুসারী থাকবে। আবার এমন নবী ও আসবেন যার সাথে কেউ থাকবে না।"""

                  এই লাইনটা বুঝলাম না।

                  Comment


                  • #10
                    Originally posted by ইবনে আদম View Post
                    আসসালামু আলাইকুম
                    """"এপথের পথিকগণ একথা ভেবে সান্ত্বনা লাভ করেন এবং ধৈর্য ধারণ করেন যে, কিয়ামতের দিন এমন নবী আসবেন যার সাথে একজন অথবা দুই জন অনুসারী থাকবে। আবার এমন নবী ও আসবেন যার সাথে কেউ থাকবে না।"""

                    এই লাইনটা বুঝলাম না।
                    ওয়ালাইকুম আসসালাম
                    আমার ধারণা এটা এই পথের বাস্তবতা বুঝাতে বলা হয়েছে,
                    অর্থাৎ, কেউ সাথে আসুক বা না আসুক, তাতে এই পথের পথিকের আজর নষ্ট হবে না
                    এই পথের পথিক বিফল হবে না, যদিওবা পুরো দুনিয়ায় সে একাকী হয়।

                    Comment


                    • #11
                      আল্লাহ্‌ তাআলা আমাদের এই শতাব্দীর দ্বীনের ভ্যানগার্ড হওয়ার তাওফিক দিন, আমীন

                      Comment


                      • #12
                        মাশাআল্লাহ, ভাই চমৎকার একটি প্রবন্ধ লিখেছেন। আমি এটি আরো কয়েকবার পড়ার ইচ্ছা পোষণ করছি এবং প্রয়োজন হলে এ বিষয়ে একটি পর্যালেচনাও লিখতে চাচ্ছি ইনশাআল্লাহ। দুয়ার দরখাস্ত।

                        Comment


                        • #13
                          Originally posted by Sabbir Ahmed View Post
                          আল্লাহ্‌ তাআলা আমাদের এই শতাব্দীর দ্বীনের ভ্যানগার্ড হওয়ার তাওফিক দিন, আমীন
                          আমীন ইয়া রব্ব

                          Comment

                          Working...
                          X