Announcement

Collapse
No announcement yet.

কল্পনা ও বাস্তবতার সংঘাত || [পরিমার্জিত সংস্করণ]

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • কল্পনা ও বাস্তবতার সংঘাত || [পরিমার্জিত সংস্করণ]

    (কিছু প্রয়োজনীয় সংযোজনী ও সম্পাদনাসহ পোস্ট করা হলো। পূর্বে করা পোস্টটি এডিট করা সম্ভব না হওয়ায় আলাদাভাবে পোস্ট করা হলো।)


    মানুষের জীবনে এমন কিছু প্রতিবন্ধকতা রয়েছে যা উৎকৃষ্ট আকাঙ্ক্ষাসমৃদ্ধ শ্রেষ্ঠ অন্তরসমূহকেও, ফলপ্রসূ কাজে অংশগ্রহণে এবং আবশ্যকীয় কর্তব্য পালনে বাঁধা দেয়।
    এসকল বাঁধায় আটকে পড়া ব্যাক্তিবর্গ নানামুখী মূলনীতি আর নিজস্ব চিন্তাভাবনার পরস্পরবিরোধী প্রতিযোগিতার মাঝে দিনাতিপাত করে।

    যদিও,
    জাঁকজমকপূর্ণ সভা-সেমিনারের জৌলুসপূর্ণ আলোচনা এবং কাগজের পাতায় যা লেখা থাকে, তার সৌন্দর্য মানুষ খুব সহজেই অনুভব করে;

    কিন্তু যখনই ব্যাক্তি তাত্ত্বিক আলোচনা ও সুসজ্জিত চিন্তাভাবনার গণ্ডি থেকে বের হয়ে, বাস্তবতা ও প্রয়োগক্ষেত্রের সম্মুখীন হয়, তখন এক বড় ধাক্কা খায়।

    তারা ব্যর্থ হয় চাকচিক্যময় চিন্তাচেতনাকে বাস্তবতার সাথে সমন্বয় করতে। ফলশ্রুতিতে তারা ক্ষতিগ্রস্থ হয় এবং অধিকাংশ ক্ষেত্রে নিন্দিত হয়।

    উদাহরণত, যখন কোনো আলেম বিবাহিত ব্যাক্তির যিনার হদ নিয়ে শরিয়তের শ্রেষ্ঠত্ব ও হিকমতের আলোচনাকরতঃ বলেন যে, ‘একজন পুরুষ ও মহিলাকে (যিনার অভিযুক্ত) শক্ত করে বেঁধে জনসম্মুখে উপস্থিত করা হলো। তারপর পাথর জড়ো করা হলো। অতঃপর মানুষজন যিনাকারীদের প্রতি এই পাথরগুলো ছুড়তে লাগল তাদের নিহত হওয়া অবধি।’

    এ বাস্তবতার একদিকে রয়েছে তীব্র অনুভূতি এবং অপরদিকে রয়েছে মানুষের উপর এর প্রভাব।

    যখন আপনি এই দৃশ্যটি নিয়ে চিন্তা করবেন তখন পূর্বেকার প্রফুল্লতা ও আনন্দের স্থলে জায়গা করে নিবে অপরাধীর প্রতি সহানুভূতি।

    অপরাধীর কান্না, অঝোর ধারায় অশ্রুবর্ষণকারী অবস্থায় তার সন্তানকে আটকে রাখার দৃশ্য অস্থির করে তুলবে আপনার অন্তরকে।

    সন্দেহ নেই, এ জাতীয় দৃশ্যকে সামনে রেখে যে কোনো আলেমের পক্ষে শরীয়তের মহত্ব ও হিকমতকে ফুটিয়ে তোলা কষ্টসাধ্য হবে। উক্ত আলেম নিজেই হয়তো রক্ত দেখে মূর্ছা যাবে।

    হয়তো রজমকৃত ব্যাক্তির ভূপাতিত মৃতদেহ দেখে মুহতারাম শায়খ উর্ধ্বশ্বাসে দৌড়ে পালাবে। কেননা, চমকপ্রদ কল্পনা আর বাস্তবতার মাঝে রয়েছে বিশাল ফারাক।

    একইভাবে, মানুষ জিহাদ নিয়ে কথা বলে যেহেতু জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ্‌ অত্যন্ত শ্রুতিমধুর একটি শব্দ।
    কিন্তু বাস্তব জিহাদ, জিহাদের প্রতিটি ঘটনাপ্রবাহ কিন্তু সুখকর নয়। জিহাদ কোনো ঝংকার তোলা বক্তৃতা বা সুন্দর সুন্দর কথার নাম নয়। জিহাদ মানেই কেবল গনীমত কিংবা বন্দীলাভ নয়।
    আর জিহাদ কোনো অনলবর্ষী বক্তার বক্তৃতাও নয়।

    বরঞ্চ, জিহাদের মাঝে রয়েছে প্রিয় ব্যাক্তির মৃত্যু, বন্ধুর আহত হওয়ার দৃশ্য, মাথার ঠিক উপর দিয়ে শেল উড়ে যাওয়া, ধনসম্পদ হারিয়ে ফেলা এবং প্রায়ই কোনো সাহায্যকারী না থাকা।

    বরং অন্যভাবে বলতে গেলে, জিহাদের মাঝে রয়েছে সর্বপ্রকারের ভয়ংকর সব কষ্ট।

    জিহাদের ময়দানে সৈন্যসমাবেশ ঘটে। মানুষের মাঝে ঝগড়া-বিবাদ হয়ে থাকে। এ তাকে মারে, সে তাকে ধরে, ও ঝগড়া করে ইত্যাদি ইত্যাদি।

    সর্বোপরি জিহাদ হলো গণআন্দোলন। স্বাভাবিকভাবেই তাই এর মাঝেও রয়েছে ভুলভ্রান্তি, ইজতিহাদ, অপব্যাখ্যা ইত্যাদি। কখনো বিষয়গুলো সুখকর হয়, কখনো হয়না। এখানেও রয়েছে নির্দিষ্ট কিছু সীমাবদ্ধতা; সুখকর কল্পনা ও বাস্তবতার মধ্যকার এক বিরাট ব্যাবধান।

    আমরা যদি ইসলামী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে মানুষের কাল্পনিক ধ্যানধারণা ও চিন্তাচেতনার দিকে তাকাই তাহলে দেখতে পাব যে,

    অধিকাংশ মানুষ স্বপ্নের জগতে বসবাস করছে। তাদের দৃষ্টিভঙ্গী বাস্তবতা থেকে বহু দূরে। তাদের এই স্বপ্নের জগতে রয়েছে মনোরম দৃশ্যাবলী, অভিবাদন জানানোর জন্য গালিচা, মনোমুগ্ধকর রঙিন সব দৃশ্যকল্প আর সর্বদা বৃষ্টি বর্ষণকারী সুবিশাল এক আকাশ ইত্যাদি।

    আর শত্রুরা যেন সদাসর্বদা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে আছে এই ভেবে যে, যুদ্ধের ময়দানে ফেরেশতাগণ সার্বক্ষণিক আমাদের সাথে থেকে যুদ্ধ করে।

    তারা ভাবতে ভালোবাসে যে, ইসলামী রাষ্ট্রে থাকবে না দারিদ্র্য আর অসুস্থতা। তারা যা চাইবে তার সবই তাদের সামনেই থাকবে। কিন্তু যদি আমরা নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর রাষ্ট্রের দিকে তাকাই তাহলে তা জান্নাততূল্য দেখতে পাব কি?

    বরঞ্চ, আমরা দেখতে পাব যে, মদিনার ইসলামী রাষ্ট্রে সাহাবাদের (রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহুম) যন্ত্রণা-দুর্ভোগ মক্কার চাইতেও অনেক ক্ষেত্রে বেশি ছিল। খন্দকের যুদ্ধের ভয়ংকর পরিস্থিতির সম্মুখীন কি সাহাবায়ে কেরামকে মক্কাতে হতে হয়েছিল?

    আল্লাহ্‌ তা’আলা বলেন,
    اِذۡ جَآءُوۡکُمۡ مِّنۡ فَوۡقِکُمۡ وَ مِنۡ اَسۡفَلَ مِنۡکُمۡ وَ اِذۡ زَاغَتِ الۡاَبۡصَارُ وَ بَلَغَتِ الۡقُلُوۡبُ الۡحَنَاجِرَ وَ تَظُنُّوۡنَ بِاللّٰہِ الظُّنُوۡنَا
    ہُنَالِکَ ابۡتُلِیَ الۡمُؤۡمِنُوۡنَ وَ زُلۡزِلُوۡا زِلۡزَالًا شَدِیۡدًا
    “যখন তারা তোমাদের কাছে উপর-নিচ থেকে আসছিল তখন তোমাদের চোখ বিস্ফোরিত হচ্ছিল, প্রাণ কণ্ঠাগত হচ্ছিল।
    আর তোমরা আল্লাহ্‌র ব্যাপারে বিরূপ ধারণা করছিলে। তখন মুমিনদেরকে পরীক্ষা করা হয়েছিল এবং তারা প্রকম্পিত হয়েছিল”।
    (সূরা আহযাব, ৩৩:১০-১১)

    এই দৃশ্যপটকে বর্তমান সময়ে উলামা-মাশায়েখ আর রাজনৈতিক দল কর্তৃক চিত্রিত ইসলামী রাষ্ট্রের মিলিয়ে দেখুন।
    তারা এমন রাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি দেন যাতে কোনো দুঃখ-কষ্ট থাকবে না; অস্তিত্ব থাকবে না কোনো ভয়ভীতির। প্রত্যেক মানুষের জন্য থাকবে বাসস্থান, প্রতিটি পেটের জন্য থাকবে খাদ্য।

    আর মানুষ তাদের এই স্বপ্ন বা প্রতিশ্রুত রাষ্ট্রের জন্যই বিভিন্ন কর্মসূচী, আন্দোলন বা সংগঠনের/তানজীমের সাথে সম্পৃক্ত হয়।

    এসকল কল্পিত প্রতিশ্রুতির ভিত্তিতেই মানুষ আমাদের জামাতের নিকটবর্তী হয়। কেননা তাদের মস্তিস্কে একথা ঘুরপাক খাচ্ছে যে, আমরা অন্যান্য জামাতের তুলনায় তাদেরকে অধিকতর দুনিয়াবী নিয়ামতের নিরাপত্তা দিব।

    কিন্তু, নিশ্চয়ই খুলাফায়ে রাশিদিনের তিনজনই হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। আর তারা নিজেদের হত্যার পরিকল্পনার ব্যাপারে অবগত থাকা সত্ত্বেও, কোনো মানুষের সহায়তা নেন নি।

    উমার (রাঃ) সালাতুল ফজরের সময় মুসলিম উম্মাহর উলামা-মাশায়েখ, সেনানায়ক ও নের্তৃবৃন্দের উপস্থিতিতেই আল্লাহ্‌র দুশমন আবু লুলুর হাতে শহীদ হোন।

    উসমান (রাঃ) কিছু বিদ্রোহীর হাতে নিহত হোন। তারা মদীনায় প্রভাব বিস্তার করার পর উসমান (রাঃ) এর গৃহাভ্যন্তরে প্রবেশ করে।

    শহরের প্রাণকেন্দ্রে তারা সিয়ামরত উসমান রাঃ কে স্বগৃহে হত্যা করে ফেলে, অজস্র মানুষের উপস্থিতি সত্ত্বেও।

    আলী ইবন আবী তালিব (রাঃ) মসজিদে দাড়িয়ে ফজরের সময় মানুষদের সলাতের জন্য ডাকছিলেন। তার চারপাশে একদল লোকও ছিল। এমতাবস্থায় ইবন মুলজিম খারেজী তরবারী দ্বারা আলী রাঃ এর মাথায় আঘাত হানে।

    এটা ছিল খেলাফাতে রাশেদার যুগ। আর পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহ তো অনেকেরই জানা আছে।

    হাজ্জাজ বিন ইউসুফ আর আবু মুসলিম খুরাসানির তান্ডবের আলোচনা মুসলিমমাত্রই জানা আছে যে, কিভাবে উমাইয়া আর আব্বাসি শাসন প্রতিষ্ঠাকল্পে তরবারী আর বজ্রমুষ্ঠির ব্যবহার তারা করেছিল।

    যারা বাস্তবতাবিবর্জিত ইসলামী বিশ্ব নিয়ে অলীক স্বপ্ন দেখছে তারা গোলকধাঁধার মাঝে ঘুরপাক খাচ্ছে।
    তারা কল্পনার জগতে বসবাস করছে, যা কি না তাদের পিছিয়ে পড়ার কারণ হচ্ছে। তাদের কল্পনায় যা আছে তারা তা বাস্তবায়নে সক্ষম নয়।
    কেননা, এজাতীয় চিন্তাধারা কাগজ-কলম আর কল্পনাতেই কেবল সম্ভব। এজাতীয় চিন্তাভাবনা আদৌ ইসলাম নয়।

    বরং, ইসলাম হলো মানুষের জীবন-সংগ্রামের নাম। যে সংগ্রামের মাঝে মানবীয় ত্রুটি-বিচ্যুতি, শুদ্ধ-অশুদ্ধ সবই বিদ্যমান। এই সংগ্রামী জীবনের ধারাবাহিকতাই সঠিক বিষয়গুলিকে সহায়তা ও শক্তিশালী করে আর ভুলত্রুটিকে শুধরে দেয়।

    ইসলামী বিশ্বে যেমন আদল-ইনসাফ থাকে, তেমনই থাকতে পারে জুলুমের অমানিশাও। এতে সত্যের যেমন উপস্থিতি রয়েছে, তেমনই রয়েছে মিথ্যাও। ইসলামী সমাজে প্রত্যেকেরই নিজ নিজ একটা অবস্থান রয়েছে।

    ইসলাম ভুলের অস্তিত্বকে স্বীকার করে, সৃষ্টির মাঝে ভুল থাকাকে অনর্থক মনে করে না। ভুলের অস্তিত্ব রয়েছে বলেই আল্লাহ তা’আলা হুদুদ ও শাস্তি নাযিল করেছেন। নাযিল করেছেন আহকাম।

    আল্লাহ তা আলা বলেন,
    اِنَّاۤ اَنۡزَلۡنَاۤ اِلَیۡکَ الۡکِتٰبَ بِالۡحَقِّ لِتَحۡکُمَ بَیۡنَ النَّاسِ بِمَاۤ اَرٰىکَ اللّٰہُ ؕ وَ لَا تَکُنۡ لِّلۡخَآئِنِیۡنَ خَصِیۡمًا
    "আমি তো আপনার প্রতি সত্যসহ কিতাব নাযিল করেছি যাতে আপনি আল্লাহ আপনাকে যা জানিয়েছেন সে অনুযায়ী মানুষের মধ্যে বিচার-মীমাংসা করতে পারেন। আর আপনি বিশ্বাসভঙ্গকারীদের সমর্থনে তর্ক করবেন না।"
    (সূরা নিসা, ৪ঃ১০৭)

    আল্লাহ্‌ সুবহানাহু ওয়া তা’আলার অলঙ্ঘনীয় বাণী প্রতিটি মুসলিম, মুওয়াহহিদ ও মুজাহিদ সমাজের জন্য। এই চিরন্তন বাণী কোনো কাফির-মুশরিকের জন্য নয়।

    ইসলামের ইমাম ও অনুসরণীয় হওয়া সত্ত্বেও, ফিতনার সময়ে আলী (রা.) এর সাথে আয়িশা রাঃ ও মুআবিয়া রাঃ এর মাঝে দ্বন্দ্ব হয়েছিল।

    যদি আমরা বাস্তবতা অনুসন্ধানের চেষ্টা করি এবং গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করি, তবে এমন বিষয়াদির উপস্থিতি দেখতে পাই যা শিশুকে বৃদ্ধ বানিয়ে ছাড়ে। অথচ তা ছিল খাইরুল কুরুন তথা সর্বোত্তম প্রজন্মের সময় সংঘটিত।

    উদাহরণত,
    ১) খারেজিদের ফিতনা। চার হাজার খাওয়ারিজ আলী রাঃ এর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার সংকল্প করে।

    আলী রাঃ তাদের কাছে প্রস্তাব পাঠান, “এসো আমাদের এবং তোমাদের প্রতিপক্ষ মুআবিয়া রাঃ কে প্রতিহত করি।”
    তারা তা প্রত্যাখ্যান করে এবং আলী(রাঃ)কে তাকফির করে এবং তাঁকে তাওবা করতে বলে।

    এতেই তারা ক্ষান্ত থাকেনি। আব্দুল্লাহ্‌ ইবন খাব্বাব ইবনুল আরাত রাঃ ও উনার গর্ভবতী স্ত্রীকে নির্মমভাবে শহীদ করে দেয়।

    অতঃপর নাহরাওয়ানের ভূমিতে আলী রাঃ যুদ্ধাহত চারশত খারেজী ব্যতীত বাকি সকল খাওয়ারিজকে হত্যা করেন।

    ২) জামাল যুদ্ধ। যা সংঘটিত হয়েছিল বসরার উপকণ্ঠে। উমর ইবন শাইবার রেওয়ায়েত অনুযায়ী এ যুদ্ধটি সংঘটিত হয়েছিল মুসলিমদের দুই গোষ্ঠীর মধ্যে।
    বরং বলা চলে দুই গোত্রের মাঝে (অর্থাৎ, যুদ্ধদলের এক গোত্র অপর দলের নিজ গোত্রের বিরুদ্ধেই। যেমন, আলী রা. পক্ষের মুদার গোত্রীয়রা আয়িশা রা. এর পক্ষের মুদার গোত্রীয়দের বিরুদ্ধে…)।

    জামাল যুদ্ধ ছিল একই জাতিগোষ্ঠী, দ্বীন ও রীতিনীতির অনুসারীদের মধ্যকার এক যুদ্ধ, ভাইয়ে-ভাইয়ে যুদ্ধ।

    এ যুদ্ধে তালহা রাঃ ও যুবায়ের রাঃ শহীদ হোন, যারা ছিলেন জান্নাতের সুসংবাদপ্রাপ্ত আশারায়ে মুবাশশারার অন্তর্ভুক্ত।

    ৩) সিফফিনের যুদ্ধ। সন্ধির প্রতি উৎসাহিত করা সত্ত্বেও, এ যুদ্ধটি সংঘটিত হয় আলী রাঃ ও মুআবিয়া রাঃ এর মাঝে।

    এযুদ্ধে নিহত মুসলিমদের সংখ্যা এত বেশি ছিল যে,
    মানুষ বলছিল শামবাসী (যারা ছিল মুআবিয়া রাঃ এর অধীন) ধ্বংসের পর কে শামের সীমান্তের নিরাপত্তা দিবে? ইরাকবাসী (যারা ছিল আলী রাঃ এর অধীন) ধ্বংসের পর কে ইরাকের সীমান্তের নিরাপত্তা দিবে? নারী-শিশুদেরই বা কী হবে?

    দুর্বল এক রেওয়ায়েতে এ যুদ্ধে ভয়ানক হত্যাকাণ্ডের কথা উল্লেখ রয়েছে। যাই হোক, এতে কোনো সন্দেহ নেই এটি একটি বড় যুদ্ধ ছিল।

    ৪) ইসলাম গ্রহণের পর কিছু লোকের পুনরায় খ্রিস্টধর্মে ফিরে যাওয়া।

    এমনকি তারা একথা পর্যন্ত বলতে থাকে,
    "আমরা যে ধর্ম (অর্থাৎ খ্রিস্টধর্ম) ত্যাগ করেছি তা ইসলাম অপেক্ষা উত্তম। অযথা রক্তপাত, মুসাফিরদের ভীতসন্ত্রস্তকরণ এবং ধনসম্পদের লুটপাট থেকে ইসলাম নিরাপত্তা দিতে পারে না।" (তাবারী)

    অতঃপর,
    আলী রাঃ রিদ্দাহর শাস্তিস্বরূপ তাদের সকলকে হত্যা করেন।

    আরো মনে করিয়ে দিতে চাই,
    নিশ্চয়ই তিন শহীদ খলিফার কেউই কাফিরের হাতে নিহত হোন নি। বরং মুসলিম নামধারী পাপিষ্ঠ বিদআতীদের হাতে নিহত হয়েছেন।
    উমার রাঃ এর হত্যাকারী আবু লু’লু সম্পর্কে কাতাদা রহঃ এর অভিমত হলো– "সে মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নয়, যদিও তাকে মুশরিকদের দিকে সম্বোধন করা হয়।"

    উসমান রাঃ এর হত্যাকারী বিদ্রোহীরা মুসলিমই ছিল। যাদের কেউ কেউ পরবর্তীতে আলী রাঃ এর বাহিনীর সেনানায়কও হয়েছিল।

    আর, আলী রাঃ এর হত্যাকারী ইবন মুলযিম ছিল খারেজী।

    বিষয়াদি এখানেই থেমে থাকেনি। অতঃপর হুসাইন রাঃ এর শাহদাত, আব্দুল্লাহ্‌ ইবন যুবাইরের যুদ্ধ, হাররার ঘটনা ইত্যাদি একের পর এক সংঘটিত হয়; যার তালিকা অনেক লম্বা।

    আর, উত্থান-পতন আর ভালো-মন্দের উঠানামার এই তীব্রতাই মানবজীবনের বাস্তবতা। তাই কোনো বুদ্ধিমান ব্যাক্তির জন্য সংগত নয় এবিষয়গুলো ভুলে থাকা এবং কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি হওয়ার প্রস্তুতি না নিয়ে, হাল ছেড়ে দেয়া।

    মানুষ মনে করে একজন মুসলিমের জীবন জুড়ে থাকবে শুধু রাতের সালাত, দিনের সিয়াম, ক্ষমা, দানশীলতা প্রভৃতি। সর্বোপরি সর্বপ্রকার কল্যাণের সমাবেশ।

    এমনকি সাধারণ মানুষের কল্পনার ক্যানভাসে থাকে, প্রত্যেক 'মুসলিম মানেই আল্লাহ্‌র ওলী' হওয়ার চিত্র। এমনটা কেবল কল্পনাতেই সম্ভব, বাস্তবে যার কোনো ভিত্তি নেই। এব্যাপারে ইবন কুতাইবার ‘আল-মাআরিফ’ দেখুন।

    জেনে রাখুন,
    ওলী, একজন মাটির তৈরী মানুষ।
    মুজাহিদ, একজন একজন মাটির তৈরী মানুষ।

    প্রকৃতপক্ষে ইসলাম ও মুসলিমদের সম্পর্কে অতিমানবীয় ও বাস্তবতাবিবর্জিত ধারণা দানকারী চলচ্চিত্র নির্মাণ করা, জিন ও ফেরেশতাদের নিয়ে বানানো ছবি থেকেও অধিকতর অবমাননাকর।

    তাই এজাতীয় কল্পনাবিলাসী ব্যাক্তিদের ব্যাপারে আমরা বলব যে, তারা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়াদি ছেড়ে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র বিষয়ে মশগুল হয়ে আছে।

    তাদের এই অতিসংবেদনশীলতা তাদেরকে ভুলভ্রান্তির ডাস্টবিনে নিক্ষেপ করেছে এবং আল্লাহ্‌র অনুগ্রহ, কল্যাণ ও নিয়ামত উপলব্ধি করা থেকে দূরে ঠেলে দিয়েছে। কেননা তারা স্বাভাবজাত বা ছোটখাটো বিচ্যুতিকে স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করতে পারে না, ফলে তুচ্ছাতিতুচ্ছ বিষয় নিয়ে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়ে।

    এটাও বুঝতে হবে যে,
    নিশ্চয়ই দাওয়াহ ও জিহাদের সমন্বয়ে সুসংগঠিত ইসলামী আন্দোলন আদতে এক গণআন্দোলন, যাতে বিভিন্ন স্বভাব-প্রকৃতির মানুষ শামিল হয়। আর আন্দোলনের বিভিন্ন মাত্রার চাহিদাপূরণে এমনটা নেতিবাচক কিছু নয়।

    যার দায়িত্ব অস্ত্র নিয়ে বেরিয়ে পড়া হবে, তার জন্য অস্ত্রের মোকাবিলা অস্ত্র দিয়েই করতে হবে।

    অগ্নিঝরা বক্তৃতা কিংবা ক্ষুরধার লেখনী দ্বারা শত্রুর বুলেটকে প্রতিহত করা নিশ্চয়ই তার কাজ নয়। বরং, তার কাজ হলো স্বীয় জীবনকে বারুদের উত্তাপ আস্বাদন করানো। আর এটাই আল্লাহ্‌ তা’আলার অমোঘ নীতি।

    তাই যে এই রাস্তায় পা রাখবে তার লক্ষ্য হবে, আল্লাহ্‌র জমিনে দাওয়াহ ও জিহাদের মাধ্যমে আল্লাহর দ্বীন পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা। যারা স্বীয় জীবনকে আল্লাহ্‌র পথে ওয়াকফ করে দিবে, তাগুতের দম্ভ চূর্ণ করে ইনসাফ ফিরিয়ে আনতে।

    এই কণ্টকাকীর্ণ পথের পথিকের মাঝে ত্রুটিবিচ্যুতি বিদ্যমান থাকতেই পারে। তবে এটা ঠিক, সেই আরামপ্রিয় ব্যাক্তি ভুলের ঊর্ধ্বে থাকতে পারে, যে কি না নিষ্ক্রিয়তাকে বেছে নিয়ে নিজেকে এপথের কাঠিন্যের সম্মুখীন হওয়া থেকে বাঁচিয়ে রেখেছে।

    তাই,
    সমালোচনা কিংবা অভিযোগ করার পূর্বে থামুন ও চিন্তা করুন। লোকজন আমাকে জটিলতা ও কঠিন অবস্থায় ফেলেছে এমন কথা বলা থেকে বিরত থাকুন। আপনাকে কেউ কোনো কিছুতে জড়ায়নি।

    আমরা আপনাকে নিশ্চয়তা দেই না যে, আন্দোলনের পথে আসার ফলে আপনাকে পদ-পদবী বা মন্ত্রিত্ব দেয়া হবে। আমরা আপনাকে একথাও বলি না যে, আপনার সাথে (সাহায্যের জন্য) মালাইকাগণ যুদ্ধ করবেন।

    আমরা একথারও জামিনদার নই যে, আসমান হতে ছয় ডানাবিশিষ্ট ফেরেশতা এসে কে কাফির আর কে মুমিন তা আপনার জন্য চিহ্নিত করে দিবে। আবার আমরা একথাও বলি না যে, যুদ্ধক্ষেত্রে সেনাপতি হিসেবে থাকবেন একজন নবী, যার উপর ওহী নাযিল হবে।

    আমরা আজকে আপনার সামনে একটি বিষয় উপস্থাপন করি, যা থেকে প্রয়োজনের তাগিদে হয়তো পরদিনই ফিরে আসি। আর এটাই হচ্ছে বাস্তবতা।

    ইসলামী আন্দোলনের ময়দানে অতি সংবেদনশীলতা বা মাত্রাতিরিক্ত আবেগের কোনো স্থান নেই।

    আমরা যা দেখি তাই বলি, আমরা শুধু তারই সাক্ষ্য দেই যা আমরা জানি। আর আমরা অদৃশ্যের সংবাদের সংরক্ষকই নই।

    আপনি যদি কল্পনার ভেলায় চড়ে চাঁদে অবতরণের স্বপ্ন দেখেন, স্বভাবিকভাবেই আপনি ব্যর্থ হবেন।

    অধিকাংশ মানুষ শান্তি ও নিরাপত্তার মসৃণ সড়কে চলতে ভালোবাসে। তারা চড়ুই পাখির ন্যায় স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বাসায় বসে খাওয়া-দাওয়া করে এবং সুমিষ্ট পানীয় পান করে।

    কাঁচঘেরা বাড়িতে বসে জীবনকে পর্যবেক্ষণ করতে থাকে। অথচ, এখন প্রতিরোধের সময়, বসে থাকার সময় না। যখন কেউ নীরবে সময় কাটায় তখন তারা উপদেশের ফুলঝুড়ি নিয়ে উপস্থিত হয়। তারা স্বীয় জিহ্বাকে প্রসারিত করে বাকস্ফুরণ ঘটায়- “আমরা আশা করি…, আমরা সতর্ক করি…” ইত্যাদি ইত্যাদি।


    আল্লাহ তা আলা বলেন,
    فَاِذَا ذَہَبَ الۡخَوۡفُ سَلَقُوۡکُمۡ بِاَلۡسِنَۃٍ حِدَادٍ اَشِحَّۃً عَلَی الۡخَیۡرِ
    “… যখন বিপদ কেটে যায় তখন তারা ধনসম্পদের লালসায় বাকচাতুরীতে লিপ্ত হয়”।
    (সূরা আহযাব, ৩৩:১৯)

    পেছনে পড়ে থাকা নিষ্ক্রিয় লোকজনের অধিকাংশই খেলতামাশায় মত্ত। অথচ তারাই আবার জোরগলায় ময়দানের নের্তৃবৃন্দের ব্যাপারে ক্ষমতালোভী হওয়ার অভিযোগ আরোপ করে।

    নিশ্চয়ই আল্লাহ্‌ তা’আলা সাক্ষী আছেন যে, এই মহান নেতৃবর্গই রক্ত প্রবাহিত করছে এবং রক্তের মাঝে লুটোপুটি খাচ্ছে।

    স্মর্তব্য যে, আন্দোলনের পথ তো এমনই যে- হয় তা ইনসাফ ফিরিয়ে দিবে কিংবা সংঘাতের তীব্রতা বাড়িয়ে দিবে।

    দাওয়াহ, জিহাদ ও কিতাল সম্পর্কে আমি বলব, আশাবাদী ও উদ্যমী হোন। নিজের মাঝে হিম্মতের সঞ্চার ঘটান।

    আব্দুল্লাহ্‌ আজ্জাম, উমার আব্দুর রহমান, আনওয়ার শাবান ইউসুফ আল উয়াইরী, তালাল কাসেমী, ইয়াহিয়া আইয়্যাশ বা আব্দুল্লাহ্‌ আহমাদরা আপনাদের থেকে বেশী দূরে নয়।
    তাদেরকে জানুন এবং ইচ্ছা, সংকল্প ও চেষ্টার ক্ষেত্রে তাদের অনুসরণ করুন।

    হে আল্লাহ্‌র বান্দা, অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত হিসেবে তাঁরা আপনার জন্য যথেষ্ট। তাঁরা তো এযমানারই সিংহপুরুষ।

    তাই, আক্ষেপ, অভিযোগ আর সংবেদনশীলতার আশ্রয়ার্থী না হয়ে, ইসলাম পুনঃপ্রতিষ্ঠার সংগ্রামে যথাসম্ভব শামিল হওয়াই হবে সকল আগ্রহী, আন্তরিক ও সচেতন মুসলিমদের দায়িত্ব!

    কেননা, প্রত্যেকেই স্বীয় প্রচেষ্টা ও আত্মত্যাগ অনুযায়ী আল্লাহর কাছ থেকে লাভ করবে যথার্থ মূল্যায়ন।

    وَّ یُؤۡتِ کُلَّ ذِیۡ فَضۡلٍ فَضۡلَہٗ
    "এবং প্রত্যেক আনুগত্যশীলকে তাঁর আনুগত্য মুতাবিক দান করবেন।"
    (সূরা হুদ, ১১ঃ১৩)

    (শায়খ আবু কাতাদা আল ফিলিস্তিনির প্রবন্ধের ছায়াবলম্বনে)

  • #2
    মাশা আল্লাহ অনেক অনেক উপকারী পোষ্ট। আল্লাহ তা'আলা পোষ্ট কারী ভাইকে উত্তম প্রতিদান দান করুন। সাথে আমাদের সবাইকেও।
    পাঠক বৃন্দের প্রতি অনুরুধ আমরা যেন প্রবন্ধটি বার বার পড়ি এবং বাস্তবতা বুঝার চেষ্টা করি।
    বাস্তবতা বুঝতে মাঠের মেহনতের কোন বিকল্প নেই

    Comment


    • #3
      স্মর্তব্য যে, আন্দোলনের পথ তো এমনই যে- হয় তা ইনসাফ ফিরিয়ে দিবে কিংবা সংঘাতের তীব্রতা বাড়িয়ে দিবে।

      দাওয়াহ, জিহাদ ও কিতাল সম্পর্কে আমি বলব, আশাবাদী ও উদ্যমী হোন। নিজের মাঝে হিম্মতের সঞ্চার ঘটান।
      _______


      যত দ্রুত আমরা আমাদের উদাসী কল্পনা ও তিক্ত বাস্তবতার মাঝে পার্থক্য করতে পারব ততই মঙ্গল।
      হে পরাক্রমশালী শক্তিধর! কৃপণতা আর কাপুরুষতা থেকে আশ্রয় চাই সর্বক্ষণ।

      Comment


      • #4
        ইসলামী আন্দোলনের ময়দানে অতি সংবেদনশীলতা বা মাত্রাতিরিক্ত আবেগের কোনো স্থান নেই।
        “ধৈর্যশীল সতর্ক ব্যক্তিরাই লড়াইয়ের জন্য উপযুক্ত।”-শাইখ উসামা বিন লাদেন রহ.

        Comment


        • #5
          মা-শা-আল্লাহ্। আল্লাহ্ আপনাকে জাযায়ে খায়ের দান করুন। আপনার ছায়াকে আমাদের উপর দীর্ঘায়িত করুন এবং উম্মাহর মাঝে আপনাদের মত আরো ব্যক্তিবর্গের সৃষ্টি করুন।

          অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় স্পষ্ট করলেন। আপনার লেখনীগুলো পড়লে চিন্তাভাবনা পরিশুদ্ধ হয়, আলহামদুলিল্লাহ্। সবাইকে পড়ার অনুরোধ করছি।সকলের নিকট দোয়াপ্রার্থী আল্লাহ্ যেন আমাকে আপনাদের সহযাত্রী বানান।

          Comment


          • #6
            Originally posted by Munshi Abdur Rahman View Post
            ইসলামী আন্দোলনের ময়দানে অতি সংবেদনশীলতা বা মাত্রাতিরিক্ত আবেগের কোনো স্থান নেই।
            আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে বিষয়টি ভালোভাবে বোঝার তাওফিক দান করুন। আমিন!

            Comment


            • #7
              দুনিয়া তো পরীক্ষা ক্ষেত্র। প্রকৃত শান্তি বা শাস্তি তো আখিরাতে।
              আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে বাস্তবতা বুঝে গোটা জীবনকে দ্বীনের পথে চালিত করার তৌফিক দান করুন। আমিন

              Comment


              • #8
                ইনশা আল্লাহ
                [ভাই, ফোরামের ‍রুলস পড়ে নিলে ভাল হয়। আর আমরা আপনাকে মানসম্মত কমেন্ট করার প্রতি উৎসাহিত করছি। এক শব্দের কমেন্ট পরিহারযোগ্য।-মডারেটর]
                Last edited by Munshi Abdur Rahman; 06-13-2023, 06:36 PM.

                Comment

                Working...
                X