Announcement

Collapse
No announcement yet.

‘আল কিতাব ওয়াস সুলতান – ইত্তিফাক ওয়া ইফতিরাক’ এর বঙ্গানুবাদ ।। কিতাবুল্লাহ ও হুকুমত: পারস্পরিক সঙ্গতি ও অসঙ্গতি ।। প্রথম খণ্ড ।। পার্ট-১ ।। -শাইখ আইমান আয-যাওয়াহিরী হাফিযাহুল্লাহ

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • ‘আল কিতাব ওয়াস সুলতান – ইত্তিফাক ওয়া ইফতিরাক’ এর বঙ্গানুবাদ ।। কিতাবুল্লাহ ও হুকুমত: পারস্পরিক সঙ্গতি ও অসঙ্গতি ।। প্রথম খণ্ড ।। পার্ট-১ ।। -শাইখ আইমান আয-যাওয়াহিরী হাফিযাহুল্লাহ

    কিতাবুল্লাহ ও হুকুমত:
    পারস্পরিক সঙ্গতি ও অসঙ্গতি


    রাজনৈতিক বিপর্যয় এবং মুসলমানদের ইতিহাসে এর প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে কিছু পর্যবেক্ষণ ও ভাবনা

    (প্রথম খণ্ড)

    -শাইখ আইমান আয-যাওয়াহিরী হাফিযাহুল্লাহ


    মূল প্রকাশনায়:

    আস-সাহাব মিডিয়া (উপমহাদেশ)

    সফর ১৪৪৩ হিজরী মোতাবেক সেপ্টেম্বর ২০২১ ঈসায়ী


    প্রথম ভাগ:
    ইসলামী শরীয়তের আলোকে রাজনৈতিক ব্যবস্থা সম্পর্কে কিছু মৌলিক নীতি:




    *প্রথম অধ্যায়: শরীয়তের একক শাসন ক্ষমতা

    *দ্বিতীয় অধ্যায়: ঈমানী ভ্রাতৃত্ব; স্বাদেশিক বা জাতীয়তাবাদী সম্পর্কসূত্র নয়

    *তৃতীয় অধ্যায়: মুসলমানদের একক ভূখণ্ডের ধারণা

    *চতুর্থ অধ্যায়: সরকার ও জনগণের মধ্যকার সম্পর্কের মৌল ভিত্তি কোনটি?- অবশ্যপালনীয় পারস্পরিক চুক্তি নাকি সদুপদেশ ও কল্যাণকামিতা

    *পঞ্চম অধ্যায়: ক্ষমতা গ্রহণের পথ ও পন্থা

    ***
    প্রথম অধ্যায়:
    শরীয়তের একক শাসন ক্ষমতা




    ইসলামী শরীয়তের আলোকে শাসনতন্ত্র পরিচালনা ইসলামের রাজনৈতিক ধারণায় একটি মৌলিক বিষয়। এটি এতটাই জরুরি বিষয়; যা ব্যতিরেকে কোন রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে ইসলামিক ব্যবস্থা বলা যেতে পারে না।
    এই অধ্যায়ের আলোচনাকে আমি নিম্নোক্ত পরিচ্ছেদগুলোতে বিভক্ত করব:

    **প্রথম পরিচ্ছেদ: শাসন ক্ষমতার অধিকারী কে?

    **দ্বিতীয় পরিচ্ছেদ: একমাত্র আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তা'আলা কর্তৃক শাসনের অধিকার অবধারিতভাবে সংরক্ষিত থাকার ব্যাপারে শরীয়তের দলীল-প্রমাণসমূহের সংক্ষিপ্ত উপস্থাপন

    ***


    প্রথম পরিচ্ছেদ:

    শাসন ক্ষমতার অধিকারী কে?




    ১) এতে কোন সন্দেহ নেই যে, আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তা‘আলা শাসন ক্ষমতার একমাত্র অধিকারী হওয়ার বিষয়টি মেনে নেয়া ইসলামের মৌলিক আকিদাসমূহের অন্যতম। এ বিষয়ে কুরআনে কারিমের অনেক আয়াত রয়েছে। আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তায়ালা এরশাদ করেন

    ﴿إِنِ الْحُكْمُ إِلاَّ لِلّهِ أَمَرَ أَلاَّ تَعْبُدُواْ إِلاَّ إِيَّاهُ ذَلِكَ الدِّينُ الْقَيِّمُ وَلَـكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لاَ يَعْلَمُونَ﴾[1]

    তিনি আরো ইরশাদ করেন

    ﴿وَأَنزَلْنَا إِلَيْكَ الْكِتَابَ بِالْحَقِّ مُصَدِّقًا لِّمَا بَيْنَ يَدَيْهِ مِنَ الْكِتَابِ وَمُهَيْمِنًا عَلَيْهِ فَاحْكُم بَيْنَهُم بِمَا أَنزَلَ اللّهُ وَلاَ تَتَّبِعْ أَهْوَاءهُمْ عَمَّا جَاءكَ مِنَ الْحَقِّ لِكُلٍّ جَعَلْنَا مِنكُمْ شِرْعَةً وَمِنْهَاجًا وَلَوْ شَاء اللّهُ لَجَعَلَكُمْ أُمَّةً وَاحِدَةً وَلَـكِن لِّيَبْلُوَكُمْ فِي مَآ آتَاكُم فَاسْتَبِقُوا الخَيْرَاتِ إِلَى الله مَرْجِعُكُمْ جَمِيعًا فَيُنَبِّئُكُم بِمَا كُنتُمْ فِيهِ تَخْتَلِفُونَ {48} وَأَنِ احْكُم بَيْنَهُم بِمَآ أَنزَلَ اللّهُ وَلاَ تَتَّبِعْ أَهْوَاءهُمْ وَاحْذَرْهُمْ أَن يَفْتِنُوكَ عَن بَعْضِ مَا أَنزَلَ اللّهُ إِلَيْكَ فَإِن تَوَلَّوْاْ فَاعْلَمْ أَنَّمَا يُرِيدُ اللّهُ أَن يُصِيبَهُم بِبَعْضِ ذُنُوبِهِمْ وَإِنَّ كَثِيرًا مِّنَ النَّاسِ لَفَاسِقُونَ {49} أَفَحُكْمَ الْجَاهِلِيَّةِ يَبْغُونَ وَمَنْ أَحْسَنُ مِنَ اللّهِ حُكْمًا لِّقَوْمٍ يُوقِنُونَ﴾[2]

    অতএব, যখন কোন সম্প্রদায়, কোন জাতি-গোষ্ঠী, কোন রাষ্ট্র, কোন সরকার অথবা কোন শাসনব্যবস্থা কিংবা যে কোন মতবাদ ইসলামিক হবার দাবী করা হবে, যেখানে ইসলামের বিধি-বিধান পালনের কথা বলা হবে, সেখানে একমাত্র আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তা‘আলাকে বিধানদাতা হিসেবে মেনে নেয়া অপরিহার্য।
    এখন যদি কোন দল বা জামাত নিজেকে মুসলিম বলে দাবি করে কিন্তু সে দলের অধীনে শাসকবর্গ, বিচারকবৃন্দ, চিন্তাবিদ মহল এবং দায়িত্বশীলেরা একমাত্র আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তা‘আলাকে বিধানদাতা হিসেবে মেনে না নেয়, নিজেদের মামলা-মোকদ্দমায় আল্লাহর শরীয়তকে বাস্তবায়ন না করে, তবে তাদের ব্যাপারে কুরআনের বিধান পুরোপুরি সুস্পষ্ট আর তা হলো, ঈমানের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই। আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তা‘আলা ইরশাদ করেন

    ﴿فَلاَ وَرَبِّكَ لاَ يُؤْمِنُونَ حَتَّىَ يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيْنَهُمْ ثُمَّ لاَ يَجِدُواْ فِي أَنفُسِهِمْ حَرَجًا مِّمَّا قَضَيْتَ وَيُسَلِّمُواْ تَسْلِيمًا ﴾[3]

    ২) ধর্মনিরপেক্ষ শাসকবর্গ এবং তাদের অধীন বিচারক মহল, বিধানসভার সদস্যবৃন্দ এবং চিন্তাবিদ ও বুদ্ধিজীবীরা বর্তমান যুগে মানুষের মাঝে বিচার ফায়সালার ক্ষেত্রে শরীয়তকে অকাট্য দলীল ও সর্বাধিক উপযুক্ত বিচারব্যবস্থা হিসেবে মেনে নিতে অস্বীকার করে। অথচ তাদের মাঝে অনেকেই এ কথা ভালোভাবে জানে যে, শরীয়ত আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ। তারা সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা করে, বিচার ফায়সালার ক্ষেত্রে সর্বাধিক উপযুক্ত ব্যবস্থা ও আদালত হল জনআকাঙ্ক্ষা, পার্লামেন্টের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের ভোট অথবা শাসকের নিজস্ব মতামত।
    এক্ষেত্রে আলোচ্য অবস্থাটি এখন এমন একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী শাসকের অবস্থায় গিয়ে পৌঁছাবার নয়, যে কিনা আল্লাহ কর্তৃক অবতীর্ণ শাসনব্যবস্থা থেকে সরে গেছে, প্রকাশ্যে মানব-রচিত বিধি-বিধানকে প্রতিস্থাপন করেছে, মানুষকে জোরপূর্বক সেই আইনের আলোকে বিচার ফায়সালা মেনে নিতে বাধ্য করেছে, এই মানব রচিত আইনকে আদালত, ন্যায়-ইনসাফ ও স্বাধীনতা বলে অভিহিত করেছে এবং প্রকাশ্যে ঘোষণা করেছেক্ষমতার উৎস একমাত্র জনগণ; অন্য কোন কিছু নয় বরং বর্তমান অবস্থাটা তো রীতিমত একটি মতবাদের রূপ পরিগ্রহ করেই আছে, এটা একটা স্বতন্ত্র ব্যবস্থা হিসেবে আগে থেকেই প্রতিষ্ঠিত এর সংবিধান রয়েছে, আইন-কানুন রয়েছে, সেই সংবিধান ও আইন কানুন প্রতিটি শাসক, বিচারক, বিচারপ্রার্থী, পার্লামেন্ট সদস্য, পুলিশ সদস্য ও জনপ্রতিনিধিসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে মেনে নিতে হচ্ছে। শরীয়তকে শাসনব্যবস্থা হিসেবে মেনে না নেয়া এবং শরীয়ত ভিন্ন অন্য পন্থা ও আইনের কাছে বিচার প্রার্থনা তাদের মৌলিক অবস্থান হয়ে দাঁড়িয়েছে। মানব রচিত সংবিধান ও ধর্মনিরপেক্ষ আইনের সম্মান রক্ষা এবং এর বিরোধী অন্য সব কিছুকে প্রতিরোধ করার শপথ গ্রহণ করতে হচ্ছে তাদেরকে।
    এটাতো এমন এক স্বতন্ত্র ব্যবস্থা; যেখানে শরীয়তের প্রতি কুফরি করা হচ্ছে, ইসলামী শরীয়তের আল্লাহপ্রদত্ত শাসন ক্ষমতা কেড়ে নেয়া হচ্ছে, ধর্মহীন সংবিধান ও আইন কানুনের সামনে মাথা নত করতে কেউ অস্বীকার করলে শাস্তি দেয়া হচ্ছে। এটা এমন এক মতবাদ; যা গোড়াতেই পুরোপুরি ইসলামের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। চিন্তার পটভূমি, সাংবিধানিক মূলনীতি, প্রণীত বিধি-বিধান, রাজনৈতিক গতি প্রকৃতি ও সামাজিক আচরণ বিধি সবকিছুতেই এই মতবাদ পুরোপুরিভাবে ইসলাম বিরোধী।

    ৩) এখানে আমি সংক্ষেপে ইসলামের সঙ্গে মানব রচিত মতবাদগুলোর কিছু গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য তুলে ধরতে চাই। এতে মুসলিম জনসাধারণের সামনে স্পষ্ট হয়ে যাবে, তাদের ক্ষমতাসীন দলগুলো ইসলাম থেকে কতটা বিচ্যুত, শাসকবর্গের গুণকীর্তন এবং তাদের পক্ষে সাফাই গাওয়া দরবারী আলেমরা নিজেরা কতটা বিভ্রান্ত আর অন্যদেরকে কতটা বিভ্রান্ত করে যাচ্ছে এমনিভাবে সরকারপন্থী কবি, লেখক, সাহিত্যিক ও বিভ্রান্তির বিস্তারকারী লোকগুলোর মুখোশের আড়ালে থাকা চেহারা কতটা কুৎসিত?! আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সাহায্যকারী!

    ক) প্রথমে আমাদেরকে অবশ্যই এ বিষয়টি স্পষ্ট করতে হবে যে, মুসলিম দেশগুলোর বর্তমান ক্ষমতাসীন দল ও সরকার তাদের মূল্যবোধ, সংবিধান ও আইন-কানুন পশ্চিমা ধ্যান-ধারণার আলোকে রচনা করেছে। এ কারণেই ক্ষমতা ও বিধান প্রণয়নের উৎস তারা মনে করেন জনগণকে। এটা এমন এক ধারণা, যা গোড়াতেই ইসলামী আকীদার সঙ্গে পুরোপুরি সাংঘর্ষিক।

    খ) পশ্চিমা ধাঁচের রাজনৈতিক দল ও সংগঠনগুলো স্বাদেশিক ও জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্র গঠনের ধারণার উপর অবিচল। এই ধারণা মতে কেবল স্বজাতির উন্নয়নকল্পে নজর দেয়া হবে এবং নিজ দেশের জনগণের সর্বোচ্চ উন্নতি, অগ্রগতি, স্বার্থ রক্ষা ও কল্যাণ সাধন করাই প্রধান লক্ষ্য বলে বিবেচিত। সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রের অধিকাংশ ভোটার তাদের ভোটের মাধ্যমে যা নির্ধারণ করবে, এর বাইরে অন্য কোন চিন্তা, ধারণা, মূল্যবোধ, আকিদা-বিশ্বাস ও নৈতিক কাঠামো গ্রহণযোগ্য নয় জাতীয়তাবাদী এই মতবাদে। আর এর পরিণতি হচ্ছে, সংখ্যাগরিষ্ঠের ইচ্ছার অভিব্যক্তি ছাড়া কোন বিষয় হালাল বা হারাম হবার, বৈধ বা নিষিদ্ধ হবার, শর্তযুক্ত বা শর্তহীন হবার এবং অনুমোদিত বা অনুনোমোদিত হবার কোনো সুযোগ নেই। এই মতবাদে মানুষের মাঝে পার্থক্যের একমাত্র মাপকাঠি হলো- ভৌগলিক জাতি রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্বন্ধ।

    গ) এটা এমন এক রাজনৈতিক ব্যবস্থা, যা গোড়াতেই ইসলামী রাজনৈতিক ব্যবস্থার পুরোপুরি বিরোধী। ইসলামী রাজনৈতিক ব্যবস্থা মৌলিক কিছু ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত:

    [১] তাওহীদের আকিদা তথা একত্বের বিশ্বাস:

    ﴿وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِي كُلِّ أُمَّةٍ رَّسُولًا أَنِ اعْبُدُواْ اللّهَ وَاجْتَنِبُواْ الطَّاغُوتَ فَمِنْهُم مَّنْ هَدَى اللّهُ وَمِنْهُم مَّنْ حَقَّتْ عَلَيْهِ الضَّلالَةُ فَسِيرُواْ فِي الأَرْضِ فَانظُرُواْ كَيْفَ كَانَ عَاقِبَةُ الْمُكَذِّبِينَ﴾[4]

    [২] মানব দাসত্ব থেকে মানব সম্প্রদায়ের মুক্তির ধারণা। আরও ব্যাপক করে বললেআল্লাহ সুবহানাহুওয়া তা‘আলা ভিন্ন সৃষ্টিজগতের যেকোন কিছুর দাসত্ব থেকে মুক্তির ধারণা। কুরআনে কারীম হুদ আলাইহিস সালাম সম্পর্কে বলছে

    ﴿قَالَ إِنِّي أُشْهِدُ اللّهِ وَاشْهَدُواْ أَنِّي بَرِيءٌ مِّمَّا تُشْرِكُونَ {54} مِن دُونِهِ فَكِيدُونِي جَمِيعًا ثُمَّ لاَ تُنظِرُونِ {55} إِنِّي تَوَكَّلْتُ عَلَى اللّهِ رَبِّي وَرَبِّكُم مَّا مِن دَآبَّةٍ إِلاَّ هُوَ آخِذٌ بِنَاصِيَتِهَا إِنَّ رَبِّي عَلَى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيمٍ﴾[5]

    ইব্রাহিম আলাইহিস সালাম সম্পর্কে কুরআন বলছে

    ﴿قَدْ كَانَتْ لَكُمْ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ فِي إِبْرَاهِيمَ وَالَّذِينَ مَعَهُ إِذْ قَالُوا لِقَوْمِهِمْ إِنَّا بُرَءاءُ مِنكُمْ وَمِمَّا تَعْبُدُونَ مِن دُونِ اللَّهِ كَفَرْنَا بِكُمْ وَبَدَا بَيْنَنَا وَبَيْنَكُمُ الْعَدَاوَةُ وَالْبَغْضَاء أَبَدًا حَتَّى تُؤْمِنُوا بِاللَّهِ وَحْدَهُ﴾[6]

    [৩] একমাত্র আল্লাহর দাসত্ব আঁকড়ে ধরার মৌলিক ধারণা। এই ধারণার অধীনে আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তা'আলার প্রতি পূর্ণ ভালোবাসা এবং তাঁর কাছে পুরোপুরি নতি স্বীকার করাও অন্তর্ভুক্ত:

    ﴿وَمِنَ النَّاسِ مَن يَتَّخِذُ مِن دُونِ اللّهِ أَندَادًا يُحِبُّونَهُمْ كَحُبِّ اللّهِ وَالَّذِينَ آمَنُواْ أَشَدُّ حُبًّا لِّلّهِ...﴾[7]

    ﴿قُلْ إِنَّنِي هَدَانِي رَبِّي إِلَى صِرَاطٍ مُّسْتَقِيمٍ دِينًا قِيَمًا مِّلَّةَ إِبْرَاهِيمَ حَنِيفًا وَمَا كَانَ مِنَ الْمُشْرِكِينَ {161} قُلْ إِنَّ صَلاَتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ {162} لاَ شَرِيكَ لَهُ وَبِذَلِكَ أُمِرْتُ وَأَنَاْ أَوَّلُ الْمُسْلِمِينَ {163} قُلْ أَغَيْرَ اللّهِ أَبْغِي رَبًّا وَهُوَ رَبُّ كُلِّ شَيْءٍ وَلاَ تَكْسِبُ كُلُّ نَفْسٍ إِلاَّ عَلَيْهَا وَلاَ تَزِرُ وَازِرَةٌ وِزْرَ أُخْرَى ثُمَّ إِلَى رَبِّكُم مَّرْجِعُكُمْ فَيُنَبِّئُكُم بِمَا كُنتُمْ فِيهِ تَخْتَلِفُونَ﴾[8]

    [৪] আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তা‘আলা আদম আলাইহিস সালাম এবং তাঁর বংশধরদেরকে পৃথিবীতে খলিফা নিযুক্ত করেছেন এই মৌলিক ধারণা ও বিশ্বাস:

    ﴿وَإِذْ قَالَ رَبُّكَ لِلْمَلاَئِكَةِ إِنِّي جَاعِلٌ فِي الأَرْضِ خَلِيفَةً...﴾[9]

    ﴿يَا دَاوُودُ إِنَّا جَعَلْنَاكَ خَلِيفَةً فِي الْأَرْضِ فَاحْكُم بَيْنَ النَّاسِ بِالْحَقِّ وَلَا تَتَّبِعِ الْهَوَى فَيُضِلَّكَ عَن سَبِيلِ اللَّهِ...﴾[10]

    [৫] মানুষকে কেবলমাত্র তার রবের এবাদতের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে, এই বিশ্বাস:

    ﴿وَمَا خَلَقْتُ الْجِنَّ وَالْإِنسَ إِلَّا لِيَعْبُدُونِ﴾[11]

    [৬] এ জীবনে মানুষের সর্বোচ্চ লক্ষ্য হওয়া উচিত- নিজের সৃষ্টিকর্তার সন্তুষ্টি ও পরকালীন জীবনের সফলতা অর্জন, এই আকিদা ও বিশ্বাস:

    ﴿ كُلُّ نَفْسٍ ذَآئِقَةُ الْمَوْتِ وَإِنَّمَا تُوَفَّوْنَ أُجُورَكُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فَمَن زُحْزِحَ عَنِ النَّارِ وَأُدْخِلَ الْجَنَّةَ فَقَدْ فَازَ وَما الْحَيَاةُ الدُّنْيَا إِلاَّ مَتَاعُ الْغُرُورِ﴾[12]

    [৭] আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তা‘আলা নিজের বান্দাদের গতি প্রকৃতি, ওঠাবসা চলাফেরা, মনের সংগোপনে সঞ্চারিত ধ্যান-ধারণা ও ইচ্ছা-অনিচ্ছা, সবকিছু প্রত্যক্ষ ও পর্যবেক্ষণ করছেনএই ধারণা ও বিশ্বাস:

    ﴿وَلَقَدْ خَلَقْنَا الْإِنسَانَ وَنَعْلَمُ مَا تُوَسْوِسُ بِهِ نَفْسُهُ وَنَحْنُ أَقْرَبُ إِلَيْهِ مِنْ حَبْلِ الْوَرِيدِ {16} إِذْ يَتَلَقَّى الْمُتَلَقِّيَانِ عَنِ الْيَمِينِ وَعَنِ الشِّمَالِ قَعِيدٌ {17} مَا يَلْفِظُ مِن قَوْلٍ إِلَّا لَدَيْهِ رَقِيبٌ عَتِيدٌ﴾[13]

    এ কারণেই কোন ব্যক্তি বা কোন সৃষ্টি যদি মানুষের চোখের অন্তরালে চলে যায়, সৃষ্টিজগতের চোখ ফাঁকি দিয়ে যদি বিচার থেকে বেঁচে যায়, তবুও সে আল্লাহর জ্ঞানের অগোচরে কিছুতেই যেতে পারে না। কখনো সে আল্লাহর শক্তির বলয় অতিক্রম করতে পারে না। যদি মানুষের বিচার থেকে কেউ বেঁচেও যায়, তবুও সে আল্লাহর শাস্তি এবং দুনিয়া ও আখেরাতে তাঁর নির্ধারিত ফয়সালা থেকে পালাতে পারে না।

    ﴿وَقُلِ اعْمَلُواْ فَسَيَرَى اللّهُ عَمَلَكُمْ وَرَسُولُهُ وَالْمُؤْمِنُونَ وَسَتُرَدُّونَ إِلَى عَالِمِ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ فَيُنَبِّئُكُم بِمَا كُنتُمْ تَعْمَلُونَ﴾[14]

    [৮] এই মনোভাব ও মূল্যবোধ যে, মুসলিম উম্মাহ বার্তাবাহী ও সাক্ষ্যদানকারী উম্মাহ।

    ﴿وَكَذَلِكَ جَعَلْنَاكُمْ أُمَّةً وَسَطًا لِّتَكُونُواْ شُهَدَاء عَلَى النَّاسِ وَيَكُونَ الرَّسُولُ عَلَيْكُمْ شَهِيدًا﴾[15]

    তাই এই উম্মতের দায়িত্ব হচ্ছে

    [৮.১] সৃষ্টিকর্তার পয়গাম মানব সম্প্রদায়ের কাছে পৌঁছে দেয়া, তাঁর শাসন প্রতিষ্ঠা করার জন্য জিহাদ করা, ফিতনা সম্পূর্ণরূপে নির্মূল হয়ে সর্বময় শাসন ক্ষমতার অধিকারী একমাত্র আল্লাহ, এই আদর্শ প্রতিষ্ঠিত হবার আগ পর্যন্ত কিতাল চালিয়ে যাওয়া:

    ﴿وَقَاتِلُوهُمْ حَتَّى لاَ تَكُونَ فِتْنَةٌ وَيَكُونَ الدِّينُ كُلُّهُ لِلّه...[16]

    [৮.২] আল্লাহর অবতীর্ণ শরীয়ত ক্ষমতার একমাত্র উৎস, এই মতাদর্শের ভিত্তিতে রাষ্ট্র ক্ষমতা পরিচালনা করা, আদল ইনসাফ প্রতিষ্ঠা, শুরার ক্ষমতায়ন এবং আমর বিল মা'রূফ ও নাহি আনিল মুনকারের দায়িত্ব পালনের মধ্য দিয়ে সৃষ্টিকর্তার শতভাগ এবাদত নিশ্চিত করা:

    ﴿الَّذِينَ إِن مَّكَّنَّاهُمْ فِي الْأَرْضِ أَقَامُوا الصَّلَاةَ وَآتَوُا الزَّكَاةَ وَأَمَرُوا بِالْمَعْرُوفِ وَنَهَوْا عَنِ الْمُنكَرِ وَلِلَّهِ عَاقِبَةُ الْأُمُورِ﴾[17]

    [৮.৩] এই মূল্যবোধ সদা জাগ্রত রাখা যে, কুরআনের ঘোষণার মাধ্যমে যদিও একথা নিশ্চিত, আল্লাহর শরীয়তের পাবন্দি করা এবং তদনুযায়ী জগতের সর্বস্তর পরিচালনা করা জাগতিক বরকত, সুখ-শান্তি ও সফলতার কারণ যেমন এরশাদ হয়েছে

    ﴿وَلَوْ أَنَّ أَهْلَ الْقُرَى آمَنُواْ وَاتَّقَواْ لَفَتَحْنَا عَلَيْهِم بَرَكَاتٍ مِّنَ السَّمَاء وَالأَرْضِ﴾[18]

    তথাপি মুসলিম উম্মাহ আল্লাহর শরীয়ত অনুযায়ী রাষ্ট্র পরিচালনা করবে, মৌলিকভাবে সৃষ্টিকর্তার সন্তুষ্টি অর্জনের দায়িত্বশীলতা ও চেতনা থেকে। কারণ মানব সম্প্রদায় এবাদতের জন্যে আদিষ্ট।

    ﴿وَعَدَ اللَّهُ الَّذِينَ آمَنُوا مِنكُمْ وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ لَيَسْتَخْلِفَنَّهُم فِي الْأَرْضِ كَمَا اسْتَخْلَفَ الَّذِينَ مِن قَبْلِهِمْ وَلَيُمَكِّنَنَّ لَهُمْ دِينَهُمُ الَّذِي ارْتَضَى لَهُمْ وَلَيُبَدِّلَنَّهُم مِّن بَعْدِ خَوْفِهِمْ أَمْنًا يَعْبُدُونَنِي لَا يُشْرِكُونَ بِي شَيْئًا وَمَن كَفَرَ بَعْدَ ذَلِكَ فَأُوْلَئِكَ هُمُ الْفَاسِقُونَ﴾[19]

    ﴿إِنِ الْحُكْمُ إِلاَّ لِلّهِ أَمَرَ أَلاَّ تَعْبُدُواْ إِلاَّ إِيَّاهُ ذَلِكَ الدِّينُ الْقَيِّمُ وَلَـكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لاَ يَعْلَمُونَ﴾[20]

    [৯] এসব কিছুর প্রতি লক্ষ্য রেখে খিলাফত রাষ্ট্র ব্যবস্থায় ইসলামের রাজনৈতিক রূপরেখা মানব সভ্যতার জন্য এরূপ উপমা পেশ করবে যে,

    [৯.১] এই ব্যবস্থায় কোন প্রকার জাতীয়তাবাদী সম্পর্কসূত্র ও ভৌগলিক সীমারেখার ধারণা মৌলিকভাবে বিবেচ্য হতে পারবে না। সকল মুমিন মুসলমান একই ভাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ থাকবে। হুকুমতের দৃষ্টিতে সকলেই সমান হবে।

    ﴿وَإِنَّ هَذِهِ أُمَّتُكُمْ أُمَّةً وَاحِدَةً وَأَنَا رَبُّكُمْ فَاتَّقُونِ﴾[21]

    [৯.২] মানুষের মাঝে শ্রেণীবিভাগ ও পার্থক্যের মাপকাঠি হবে ঈমান তাকওয়া ও নেক আমল।

    ﴿إِنَّ أَكْرَمَكُمْ عِندَ اللَّهِ أَتْقَاكُمْ﴾[22]

    কোন প্রকার স্বাদেশিক সম্পর্কের সূত্র অথবা রাষ্ট্র নামক মূর্তির মাধ্যমে পরিচয়ের সূত্র উত্তম অনুত্তম নিরূপণের মাপকাঠি হতে পারে না।

    [৯.৩] সর্বোচ্চ বিচারের ক্ষমতা সংরক্ষিত থাকবে আল্লাহর অবতীর্ণ শরীয়ত কর্তৃক; সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট দানকারীর ইচ্ছা-অনিচ্ছা নয়।

    ﴿وَأَنِ احْكُم بَيْنَهُم بِمَآ أَنزَلَ اللّهُ وَلاَ تَتَّبِعْ أَهْوَاءهُمْ﴾[23]

    [৯.৪] এমনিভাবে মুসলিম উম্মাহর জানা থাকতে হবে, পশ্চিমা রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গিগুলো বিভিন্ন স্বৈরাচারী শাসক গোষ্ঠী, তাদের সহযোগী ও কোলাবোরেটর শ্রেণী এবং তাদের তল্পিবাহকদের সঙ্গে বঞ্চিত নিপীড়িত বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর স্বাধীনতা যুদ্ধ ও মুক্তির সংগ্রাম, যাজকতন্ত্র ও গির্জার শাসনামলের অযৌক্তিক ধ্যান ধারণা, দলীল-প্রমাণহীন তথ্য-উপাত্ত, মানব স্বভাবের কাছে অরুচিকর ঘৃণিত বিভিন্ন আচার ব্যবহার ও কুপ্রথা ইত্যাদির সঙ্গে পশ্চিমা বিশ্বের জ্ঞানী-গুণী, সমকালীন গবেষক ও দার্শনিকদের পৃথিবীর ভেতরের বাইরের ও মহাজগতের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে মতের অমিল, ধর্মীয় যাজকদের পবিত্র ধর্মগ্রন্থগুলোতে ঐতিহাসিক সনদ ও সূত্র বিহীন নানা বর্ণনার সঙ্গে প্রগতিশীলদের মতামতের সাংঘর্ষিকতা ইত্যাকার দ্বন্দ্ব ও বিরোধের পটভূমিতে সৃষ্ট।

    [৯.৫] সর্বোপরি বর্তমান পশ্চিমা চিন্তা ধারার মাঝে গির্জা যুগের কালো ইতিহাস ও অমানবিক ধর্মীয় মূল্যবোধের প্রতি ঘৃণা ও বিতৃষ্ণা সত্ত্বেও ইসলাম, মুসলমান ও মুসলিম শাসনের সঙ্গে তাদের ঐতিহাসিক বিরোধ ও সংঘাতের জাতীয় উত্তরাধিকারের স্রোত প্রবাহিত। বস্তুত এটা সমকালীন পশ্চিমা দৃষ্টিভঙ্গির এক শক্ত পরস্পরবিরোধী অবস্থান। পশ্চিমারা একদিকে নিজেদের গির্জা যুগের কালো ইতিহাস ও বিকৃত ধর্মীয় মূল্যবোধের প্রতি বীতশ্রদ্ধ অপরদিকে ক্রুসেডের ইতিহাসের প্রতি তারা সহানুভূতিশীল।
    এ কারণেই সমকালীন পশ্চিমা দৃষ্টিভঙ্গি গির্জার একাধিপত্যের প্রতি, আর এরই ধারাবাহিকতায় ধর্ম, ধর্মীয় বিষয় এবং ধর্ম সংশ্লিষ্ট সব কিছুর প্রতি ঘৃণা পোষণ করে। এই ঘৃণার পুরোভাগে রয়েছে ইসলাম ও মুসলমানদের প্রতি তাদের শত্রুতা ও বিদ্বেষ। এ কারণে একদিকে পশ্চিমা বিশ্ব তাদের মধ্যযুগীয় বর্বরতার ইতিহাস থেকে পলায়ন করে অপরদিকে মুসলিম দেশগুলো দখল করে মুসলমানদেরকে পরাজিত করার জন্য ক্রুসেডীয় উন্মাদনায় ঔপনিবেশিক আগ্রাসনের মধ্য দিয়ে মুসলিম উম্মাহর প্রতি তাদের শত্রুতার ধারা অব্যাহত রাখে।

    [৯.৬] পক্ষান্তরে মুসলিম উম্মাহর ইতিহাসের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই, তাওহীদের দাওয়াত ও একত্ববাদের আহ্বান, জালেম স্বৈরাচারী ও নিপীড়ক শাসকদের মসনদ ধুলিস্যাৎ করার লক্ষ্যে জিহাদ, ইসলাম ও ইসলামী শরীয়তের প্রচার-প্রসার; যে শরীয়ত মানবিক বিবেক ও বুদ্ধির অনুকূল, হৃদয় ও মনে যা প্রশান্তির ছোঁয়া দানকারী, জ্ঞান-বিজ্ঞান চর্চার প্রতি যেখানে উৎসাহিত করা হয়েছে, জ্ঞানী-গুণীদেরকে যেখানে কদর ও সমাদর করার কথা বলা হয়েছে, এই সবকিছুর সমন্বয়ে একটি স্বর্ণালী অতীতের উত্তরাধিকারী বর্তমান মুসলিম উম্মাহ।
    এ কারণেই তো বর্তমান যুগে মুসলমানরা তাদের গৌরবময় অতীত ফিরিয়ে আনার জন্য এবং পূর্ব যুগের সোনালী প্রভাত ও কিরণমালা দিয়ে গোটা জগতকে অপূর্ব সাজে আবারো সাজানোর জন্য আকুল হয়ে আছে। একই সময়ে পশ্চিমা বিশ্বের জনমানুষ ও চিন্তাশীল বুদ্ধিজীবী সহ সকল শ্রেণীর লোকেরা তাদের ইতিহাস থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। তারা সেই ইতিহাসকে অন্ধকারাচ্ছন্ন মধ্যযুগীয় ইতিহাস বলে আখ্যা দিচ্ছে।


    ***

    (চলবে, ইন শা আল্লাহ)

    [1] অর্থ: আল্লাহ ছাড়া কারও বিধান দেবার ক্ষমতা নেই। তিনি আদেশ দিয়েছেন যে, তিনি ব্যতীত অন্য কারও এবাদত করো না। এটাই সরল পথ। কিন্তু অধিকাংশ লোক তা জানে না। (সূরা ইউসুফ: ৪০)

    [2] অর্থঃ আমি আপনার প্রতি অবতীর্ণ করেছি সত্যগ্রন্থ, যা পূর্ববতী গ্রন্থ সমূহের সত্যায়নকারী এবং সেগুলোর বিষয়বস্তুর রক্ষণাবেক্ষণকারী। অতএব, আপনি তাদের পারস্পারিক ব্যাপারাদিতে আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, তদনুযায়ী ফয়সালা করুন এবং আপনার কাছে যে সৎপথ এসেছে, তা ছেড়ে তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করবেন না। আমি তোমাদের প্রত্যেককে একটি আইন ও পথ দিয়েছি। যদি আল্লাহ চাইতেন, তবে তোমাদের সবাইকে এক উম্মত করে দিতেন, কিন্তু এরূপ করেননি-যাতে তোমাদেরকে যে ধর্ম দিয়েছেন, তাতে তোমাদের পরীক্ষা নেন। অতএব, দৌঁড়ে কল্যাণকর বিষয়াদি অর্জন কর। তোমাদের সবাইকে আল্লাহর কাছে প্রত্যাবর্তন করতে হবে। অতঃপর তিনি অবহিত করবেন সে বিষয়, যাতে তোমরা মতবিরোধ করতে। আর আমি আদেশ করছি যে, আপনি তাদের পারস্পরিক ব্যাপারাদিতে আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তদনুযায়ী ফয়সালা করুন; তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করবেন না এবং তাদের থেকে সতর্ক থাকুন-যেন তারা আপনাকে এমন কোন নির্দেশ থেকে বিচ্যুত না করে, যা আল্লাহ আপনার প্রতি নাযিল করেছেন। অনন্তর যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে জেনে নিন, আল্লাহ তাদেরকে তাদের গোনাহের কিছু শাস্তি দিতেই চেয়েছেন। মানুষের মধ্যে অনেকেই নাফরমান। তারা কি জাহেলিয়াত আমলের ফয়সালা কামনা করে? আল্লাহ অপেক্ষা বিশ্বাসীদের জন্যে উত্তম ফয়সালাকারী কে? (সূরা আল-মায়িদা: ৪৮-৫০)

    [3] অর্থঃ অতএব, তোমার পালনকর্তার কসম, সে লোক ঈমানদার হবে না, যতক্ষণ না তাদের মধ্যে সৃষ্ট বিবাদের ব্যাপারে তোমাকে ন্যায়বিচারক বলে মনে না করে। অতঃপর তোমার মীমাংসার ব্যাপারে নিজের মনে কোন রকম সংকীর্ণতা পাবে না এবং তা হৃষ্টচিত্তে কবুল করে নেবে। (সূরা আন নিসা: ৬৫)

    [4] অর্থঃ আমি প্রত্যেক উম্মতের মধ্যেই রাসূল প্রেরণ করেছি এই মর্মে যে, তোমরা আল্লাহর এবাদত কর এবং তাগুত থেকে নিরাপদ থাক। অতঃপর তাদের মধ্যে কিছু সংখ্যককে আল্লাহ হেদায়েত করেছেন এবং কিছু সংখ্যকের জন্যে বিপথগামিতা অবধারিত হয়ে গেল। সুতরাং তোমরা পৃথিবীতে ভ্রমণ কর এবং দেখ মিথ্যারোপকারীদের কিরূপ পরিণতি হয়েছে। (সূরা আন নাহল: ৩৬)

    [5] অর্থঃ হুদ বললেন- আমি আল্লাহকে সাক্ষী করেছি আর তোমাও সাক্ষী থাক যে, আমার কোন সম্পর্ক নাই তাঁদের সাথে যাদেরকে তোমরা শরিক করছ; তাকে ছাড়া, তোমরা সবাই মিলে আমার অনিষ্ট করার প্রয়াস চালাও, অতঃপর আমাকে কোন অবকাশ দিও না। আমি আল্লাহর উপর নিশ্চিত ভরসা করেছি, যিনি আমার এবং তোমাদের পরওয়ারদেগার। পৃথিবীর বুকে বিচরণকারী এমন কোন প্রাণী নাই, যা তাঁর র্পূণ আয়ত্তাধীন নয়। আমার পালকর্তা সরল পথে সন্দেহ নেই। (সূরা হুদ: ৫৪-৫৬)

    [6] অর্থঃ তোমাদের জন্যে ইব্রাহীম ও তাঁর সঙ্গীগণের মধ্যে চমৎকার আদর্শ রয়েছে। তারা তাদের সম্প্রদায়কে বলেছিলঃ তোমাদের সাথে এবং তোমরা আল্লাহর পরিবর্তে যার এবাদত কর, তার সাথে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই। আমরা তোমাদের মানি না। তোমরা এক আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন না করলে তোমাদের মধ্যে ও আমাদের মধ্যে চির শত্রুতা থাকবে। (সূরা আল মুমতাহিনা: ০৪)

    [7] অর্থঃ আর কোন লোক এমনও রয়েছে যারা অন্যান্যকে আল্লাহর সমকক্ষ সাব্যস্ত করে এবং তাদের প্রতি তেমনি ভালবাসা পোষণ করে, যেমন আল্লাহর প্রতি ভালবাসা হয়ে থাকে। কিন্তু যারা আল্লাহর প্রতি ঈমানদার তাদের ভালবাসা ওদের তুলনায় বহুগুণ বেশী। ... (সূরা আল বাকারা: ১৬৫)

    [8] অর্থঃ আপনি বলুনঃ আমার নামায, আমার কুরবানি এবং আমার জীবন ও মরণ বিশ্ব-প্রতিপালক আল্লাহরই জন্যে। তাঁর কোন অংশীদার নেই। আমি তাই আদিষ্ট হয়েছি এবং আমি প্রথম আনুগত্যশীল। আপনি বলুনঃ আমি কি আল্লাহ ব্যতীত অন্য প্রতিপালক খুঁজবো, অথচ তিনিই সবকিছুর প্রতিপালক? যে ব্যক্তি কোন গোনাহ করে, তা তারই দায়িত্বে থাকে। কেউ অপরের বোঝা বহন করবে না। অতঃপর তোমাদেরকে সবাইকে প্রতিপালকের কাছে প্রত্যাবর্তন করতে হবে। অনন্তর তিনি তোমাদেরকে বলে দিবেন, যেসব বিষয়ে তোমরা বিরোধ করতে। (সূরা আল আনআম: ১৬২-১৬৪)

    [9] অর্থঃ আর তোমার পালনকর্তা যখন ফেরেশতাদিগকে বললেনঃ আমি পৃথিবীতে একজন প্রতিনিধি বানাতে যাচ্ছি... (সূরা আল বাকারা: ৩০)

    [10] অর্থঃ হে দাউদ! আমি তোমাকে পৃথিবীতে প্রতিনিধি করেছি, অতএব, তুমি মানুষের মাঝে ন্যায়সঙ্গতভাবে রাজত্ব কর এবং খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করো না। তা তোমাকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করে দেবে...। (সূরা সোয়াদ: ২৬)

    [11] অর্থঃ আমার এবাদত করার জন্যই আমি মানব ও জিন জাতি সৃষ্টি করেছি। (সূরা আয-যারিয়াত: ৫৬)

    [12] অর্থঃ প্রত্যেক প্রাণীকে আস্বাদন করতে হবে মৃত্যু। আর তোমরা কিয়ামতের দিন পরিপূর্ণ বদলা প্রাপ্ত হবে। তারপর যাকে দোযখ থেকে দূরে রাখা হবে এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে, তার কার্যসিদ্ধি ঘটবে। আর পার্থিব জীবন ধোঁকা ছাড়া অন্য কোন সম্পদ নয়। (সূরা আল ইমরান: ১৮৫)

    [13] অর্থঃ আমি মানুষ সৃষ্টি করেছি এবং তার মন নিভৃতে যে কুচিন্তা করে, সে সম্বন্ধেও আমি অবগত আছি। আমি তার গ্রীবাস্থিত ধমনী থেকেও অধিক নিকটবর্তী। যখন দুই ফেরেশতা ডানে ও বামে বসে তার আমল গ্রহণ করে। সে যে কথাই উচ্চারণ করে, তাই গ্রহণ করার জন্যে তার কাছে সদা প্রস্তুত প্রহরী রয়েছে। (সূরা ক্বাফ: ১৬-১৮)

    [14] অর্থঃ আর তুমি বলে দাও, তোমরা আমল করে যাও, তার পরবর্তীতে আল্লাহ দেখবেন তোমাদের কাজ এবং দেখবেন রসূল ও মুসলমানগণ। তাছাড়া তোমরা শীঘ্রই প্রত্যাবর্তিত হবে তাঁর সান্নিধ্যে যিনি গোপন ও প্রকাশ্য বিষয়ে অবগত। তারপর তিনি জানিয়ে দেবেন তোমাদেরকে যা করতে। (সূরা আত তাওবা: ১০৫)

    [15] অর্থঃ এমনিভাবে আমি তোমাদেরকে মধ্যপন্থী সম্প্রদায় করেছি, যাতে করে তোমরা সাক্ষ্যদাতা হও মানবমন্ডলীর জন্যে এবং যাতে রসূল সাক্ষ্যদাতা হন তোমাদের জন্য। (সূরা আল বাকারা: ১৪৩)

    [16] অর্থঃ আর তাদের সাথে যুদ্ধ করতে থাক যতক্ষণ না ভ্রান্তি শেষ হয়ে যায়; এবং আল্লাহর সমস্ত হুকুম প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়। তারপর যদি তারা বিরত হয়ে যায়, তবে আল্লাহ তাদের কার্যকলাপ লক্ষ্য করেন। (সূরা আল আনফাল: ৩৯)

    [17] অর্থঃ তারা এমন লোক যাদেরকে আমি পৃথিবীতে শক্তি-সামর্থ দান করলে তারা নামায কায়েম করবে, যাকাত দেবে এবং সৎকাজে আদেশ ও অসৎকাজে নিষেধ করবে। প্রত্যেক কর্মের পরিণাম আল্লাহর এখতিয়ারভুক্ত। (সূরা আল-হজ্ব: ৪১)

    [18] অর্থঃ আর যদি সে জনপদের অধিবাসীরা ঈমান আনত এবং পরহেযগারী অবলম্বন করত, তবে আমি তাদের প্রতি আসমানী ও পার্থিব নেয়ামতসমূহ উম্মুক্ত করে দিতাম। কিন্তু তারা মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে। সুতরাং আমি তাদেরকে পাকড়াও করেছি তাদের কৃতকর্মের বদলাতে। (সূরা আল আরাফ: ৯৬)

    [19] অর্থঃ তোমাদের মধ্যে যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে, আল্লাহ তাদেরকে ওয়াদা দিয়েছেন যে, তাদেরকে অবশ্যই পৃথিবীতে শাসনকর্তৃত্ব দান করবেন। যেমন তিনি শাসন কর্তৃত্ব দান করেছেন তাদের পূর্ববতীদেরকে এবং তিনি অবশ্যই সুদৃঢ় করবেন তাদের ধর্মকে, যা তিনি তাদের জন্যে পছন্দ করেছেন এবং তাদের ভয়-ভীতির পরিবর্তে অবশ্যই তাদেরকে শান্তি দান করবেন। তারা আমার এবাদত করবে এবং আমার সাথে কাউকে শরীক করবে না। এরপর যারা অকৃতজ্ঞ হবে, তারাই অবাধ্য। (সূরা আন নূর: ৫৫)

    [20] অর্থঃ আল্লাহ ছাড়া কারও বিধান দেবার ক্ষমতা নেই। তিনি আদেশ দিয়েছেন যে, তিনি ব্যতীত অন্য কারও এবাদত করো না। এটাই সরল পথ। কিন্তু অধিকাংশ লোক তা জানে না। (সূরা ইউসুফ: ৪০)

    [21] অর্থঃ আপনাদের এই উম্মত সব তো একই ধর্মের অনুসারী এবং আমি আপনাদের পালনকর্তা; অতএব আমাকে ভয় করুন। (সূরা আল মুমিনুন:৫২)

    [22] অর্থঃ নিশ্চয় আল্লাহর কাছে সে-ই সর্বাধিক সম্ভ্রান্ত যে সর্বাধিক পরহেযগার। (সূরা আল হুজুরাত: ১৩)

    [23] অর্থঃ আর আমি আদেশ করছি যে, আপনি তাদের পারস্পরিক ব্যাপারাদিতে আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তদনুযায়ী ফয়সালা করুন; তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করবেন না (সূরা আল মায়েদা: ৪৯)

    Last edited by Munshi Abdur Rahman; 03-27-2022, 04:42 PM.
    “ধৈর্যশীল সতর্ক ব্যক্তিরাই লড়াইয়ের জন্য উপযুক্ত।”-শাইখ উসামা বিন লাদেন রহ.

  • #2
    ‘আল কিতাব ওয়াস সুলতান – ইত্তিফাক ওয়া ইফতিরাক’ এর বঙ্গানুবাদ ।। কিতাবুল্লাহ ও হুকুমত: পারস্পরিক সঙ্গতি ও অসঙ্গতি ।। প্রথম খণ্ড ।। ভূমিকা পর্ব ।। -শাইখ আইমান আয-যাওয়াহিরী হাফিযাহুল্লাহ

    https://82.221.139.217/forum/%E0%A6%...A6%BE%E0%A6%B9
    “ধৈর্যশীল সতর্ক ব্যক্তিরাই লড়াইয়ের জন্য উপযুক্ত।”-শাইখ উসামা বিন লাদেন রহ.

    Comment

    Working...
    X