দ্বীনের খন্ডিত চর্চাঃ ঈমান- বিধ্বংসী ভয়াবহ এক ফিতনা!
-শায়েখ তামিম আল-আদনানী হাফিযাহুল্লাহ
প্রিয় ভাই ও বোনেরা! আকিদা বিষয়ক আলোচনার পূর্বে আমরা আরো কয়েকটি মারাত্মক ফিতনার ব্যাপারে আপনাদের সর্তক করতে চাই যেগুলো থেকে আপনাদের দ্বীন ও ঈমানকে হিফাজত করা অতিব জরুরী গত মজলিসে আমরা 'ফুরুয়ী ও শাখাগত মাসায়েল নিয়ে দলাদলির ফিতনা' সম্পর্কে আপনাদের সামনে আলোচনা করেছিলাম। আজ আমরা কথা বলব "দ্বীনের খন্ডিত চর্চার ফিতনা নিয়ে আমরা আশা করব আপনারা দিলের কান দিয়ে শুনবেন এবং অনুধাবন করার চেষ্টা করবেন।
প্রিয় ভাই! দ্বীনের খণ্ডিত চর্চা মানে আকিদা ও আমলে আংশিক দ্বীন পালন করা এবং এই আংশিক দ্বীনকেই পরিপূর্ণ দ্বীন মনে করা। অথচ খন্ডিত দ্বীন আসলে কোনো দ্বীনই নই। দ্বীনের কোনো অংশকে ছাঁটাই করে ফেললে তা আর দ্বীন থাকে না। ইসলামে কিছু আকিদাকে ও কিছু আহকামকে বাদ দিয়ে দিলে, সেই ইসলাম আর ইসলাম থাকে না। ইসলামে প্রবেশ করতে হলে পরিপূর্নভাবে প্রবেশ করতে হবে। কেউ যদি ইসলামের কিছু আকিদা ও আহকামকে গ্রহণ করে, আর কিছু সজ্ঞানে বাদ দিয়ে দেয়, তবে সে আর যা-ই হোক মুসলিম হতে পারে না। আল্লাহ রব্বুল আলামিন পবিত্র কালামে মাজিদে ইরশাদ করছেন,
يَٓاَيُّهَا الَّذِينَ ءَامَنُوا اُدْخُلُوافيِ الِّسلْمِ كَآفَّة وَلَاتَتَّبِعُوا خُطُوَٰتِ الَّيْطَٰنِۚ إِنَّهُ لَكُمْ عَدُوُّمُّبِين
'হে মুমিনগণ! তোমরা পরিপূর্নভাবে ইসলামে প্রবেশ করো এবং শয়তানের পদাষ্ক অনুসরণ করো না। নিশ্চয় সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।' (সূরা বাকারা, ২:২০৮)
অন্য আয়াতে আল্লাহ তা'য়ালা আরো ইরশাদ করেছেন,
أَفَتُؤْمِنُونَ بِبَعْضِ الْكِتَبِ وَتَكْفُرُونَ بِبَعْضِۚ فَمَاجَزَآءُ مَن يَفْعَلُ ذَلِكَ مِنكُمْ إِلَّاخِزیُ فیِ الْحَيٰوةِ الدُّنْيَاۖ وَيَوْمَ الْقِيَٰمَةِ يُرَدُّونَ إِلیٰٓ أَشَدِّ الْعَذَابِ
"তবে কি তোমরা কিতাবের কিছু অংশে বিশ্বাস কর এবং কিছু অংশকে প্রত্যাখ্যান কর? সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা এরূপ করে তাদের একমাত্র প্রতিফল পার্থিব জীবনে লাঞ্ছনা এবং কিয়ামতের দিন তারা কঠিনতম শাস্তির দিকে নিক্ষিপ্ত হবে। ' (সূরা বাকারা, ২৮৫)
খিলাফত ব্যবস্থার পতনের পর সময় যতই গড়িয়েছে দ্বীন চর্চার এই ভয়াবহ ঈমান বিধ্বংসী ফিতনা মুসলিমদের মাঝে ততই ব্যপক আকার ধারণ করেছে, কারণ শরিয়া শাসন না থাকার কারণে ইসলামের এক বিরাট অংশের উপর আমল করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। মুফাক্কির ইসলাম "সাইয়িদ আবুল হাসান আলি নদবি রহিমাহুল্লাহ ' বেশ স্পষ্ট ভাষায় বিয়টি বুঝিয়েছেন তিনি বলেন...... "অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হলো, শরয়ি শাসন ছাড়া পূর্ণ শরিয়ার ওপর আমল করা সম্ভব নয়। ইসলামি জীবনব্যবস্থার একটি স্বতন্ত্র অংশ এমন রয়েছে, যার ওপর আমল করতে হলে ইসলামি রাষ্ট্রব্যবস্থার বিকল্প নেই। ইসলামি শাসনব্যবস্থার অনুপস্থিতিতে কুরআনের একটি বড় অংশ আমলের উপযুক্ততা হারায়। খোদ ইসলামের সুরক্ষাও শক্তি ছাড়া অসম্ভব। উদাহরণ স্বরূপ ইসলামের অর্থব্যবস্থা, ইসলামি আইন ও বিচারব্যবস্থা এর কোনটাই ইসলামি শাসন ছাড়া বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। তাই কুরআন শক্তি সঞ্চয় ও বিজয় অর্জনের ওপর খুব গুরুত্বারোপ করেছে। এই জন্য ইসলামি খিলাফাহ অত্যন্ত পবিত্র ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সাহাবারা খিলাফাহকে রাসুলুল্লাহর দাফন-কাফনের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ মনে করেছেন। অনেক স্বল্পবৃদ্ধির লোক এই বিষয়টি অনুধাবন করতে পারে না। এই খেলাফতের হেফাজতের জন্য ইমাম হুসাইন রাদিঅাল্লাহু আনহু কুরবানি পেশ করেছেন, যাতে খেলাফতের উদ্দেশ্য ব্যর্থ না হয়ে যায়, অযোগ্য লোকের হাতে খেলাফত চলে না যায়।" (তারিখে দাওয়াত ওয়া আজিমত: ৬ষ্ঠ খণ্ড, ৫৭,৫৮ পৃষ্ঠা)
প্রিয় ভাই! একটু খিয়াল করলে আপনি বুঝতে পারবেন কিভাবে উম্মাহ নিজের অজান্তেই খন্ডিত ইসলাম চর্চায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছে, ইসলামের পরিপূর্ণরূপ আমলের অঙ্গন থেকে বটেই তাদের চিন্তার অঙ্গন থেকে বিদায় নিয়েছে, এমনকি তারা অনেক মৌলিক আকিদা পর্যন্ত ভুলে বসেছে যেমন, 'তাওহীদুল হাকিমিয়্যাহ' আল্লাহ ছাড়া বিধান দেওয়ার কারো অধিকার নেই। আল্লাহর দেয়া জীবন বিধান কুরআন, মুসলিমদের একমাত্র সংবিধান কুরআন ব্যথিত মানব রচিত যে কোনো সংবিধান দিয়ে দেশ শাসন করা, ফয়সালা করা কিংবা কুরআন ছাড়া অন্যকোনো সংবিধানের কাছে বিচার নিয়ে যাওয়া এটা যে কুফরি এই মৌলিক আকিদাও অনেক মুসলিম আজ ভুলে বসেছে "নাউজু বিল্লাহি মিন জালিক!
কি আশ্চর্য ব্যাপার যারা দ্বীনের দাওয়াত দিচ্ছেন তারাও এই দ্বীনের মৌলিক আকিদার কথা জনগণকে বলছেননা। যারা তাওহিদের দাওয়াত দিচ্ছেন তারা তাওহীদুল উলুহিয়্যাহর গুরুত্বপূর্ণ অংশ তাওহীদুল হাকীমিয়্যাহকে কেন জনগণের কাজ থেকে লুকিয়ে রাখছেন তাওহিদের এই খন্ডিত দাওয়াত দেওয়া কিভাবে জায়েজ হতে পারে?
মাজারে সিজদা করা যেমন শিরক, নিজেদের মনগড়া আঈন দিয়ে বিচার করা তো, আরো বড় শিরক। তাগুতের কাছে বিচার নিয়ে যাওয়া তো, আরো মারাত্মক শিরক ব্যক্তির শিরক নিয়ে এত হৈ চৈ কিন্তু রাষ্ট্রের শিরক নিয়ে কেন এই জঘন্য নিরবতা। যেই শিরকে লিপ্ত হচ্ছে লক্ষ্য লক্ষ্য অবুঝ মুসলিম। কেন পরিপূর্ণ তাওহিদের দাওয়াত জনগণের কাছে পৌঁছানো হচ্ছেনা? জনগণকে দেওয়া হচ্ছেনা। অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলতে হয় অনেক অবুঝ ভাই তো, কেবল তাওহীদুর রুবুবিয়্যাহকেই কালিমায়ে তাওহীদের উদ্দ্যেশ্য বলে প্রচার করেছেন 'নাউজু বিল্লাহি মিন জালিক! আল্লাহ তা'য়ালা আমাদের হিফাজত করুন, আল্লাহ আমাদের হিদায়েত দিন।
এভাবে উম্মাহ আরো একটি ভুলে যাওয়া আকিদা হল "আল-ওয়ালা ওয়াল-বারা" এই আকিদা ভুলে যাওয়ার মারাত্মক ফলাফল আজ আমরা নিজেরাই দেখতে পাচ্ছি, এই আকিদার বিস্তৃতির কারণে আলেম সমাজের একটি বিভ্রান্ত অংশকে দেখা যাচ্ছে তাগুত সরকারের সঙ্গে মাখামাখি করতে, এই আকিদার বিস্তৃতির কারনেই মুসলিমরা কাফেরদের বিরোধিতার চেয়ে বিরুদ্ধমতের আপন মুসলিম ভাইদের বিরুদ্ধেই জান-মাল কুরবান করেছে। টঙ্গির ময়দানে তাবলিগের ভাইদের মারামারি এবং হানাফি-সালাফি ধন্দে মসজিদ ভাঙ্গাভাঙ্গি। এই আকিদায় "ওয়ালা-বার" ভুলে যাওয়ার দুঃখজনক ফলাফল আল্লাহ আমাদের মুসিবত থেকে হিফাজত করুন। ইনশাআল্লাহ আমরা আকিদা সিরিজে এসব ভুলে যাওয়া আকিদা নিয়ে আলোচনা করব।
প্রিয় ভাই! এতো গেল আকিদার কথা এভাবে ইসলামি অর্থনীতি, ইসলামি বিচারব্যবস্থার কাথাও মুসলিমরা আজ ভুলে বসেছে। সবচেয়ে বড় দুঃখের কথা হল ইসলামি রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার একমাত্র পথ ই'দাদ ও জিহাদের ফরজের কথা উচ্চারণ করাও আজ অপরাধ হয়ে দাঁড়িয়েছে, আল্লাহ আমাদের হিফাজত করুন। সুদভিত্তিক এই অর্থব্যবস্থা যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট বিদ্রোহ, এই কথা আমরা ওলামা ও দা'য়ীরা জনগণকে খোলামেলা কেন বলছিনা? কেন এই কথা স্পষ্ট ভাবে বলে দেওয়া হচ্ছেনা এইদেশের শাসকগোষ্ঠি চব্বিশ ঘণ্টা আল্লাহ ও তাঁর রানূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত। এই দেশের বিচারব্যবস্থা সম্পূর্ণ কুফুরি, ইসলামে হুদুদ-কিসাস কোনো কিছুরিই ধারধারছেনা এই তাগুত শাসকগোষ্ঠি। বরং এই মুর্তাদরা ইসলামের হুদুদ-কিসাসকে মধ্যেযোগিয় বরবর আঈন বলে উপহাস করছে নাউজু বিল্লাহি মিন জালিক!
এই কুফরি রাষ্ট্রব্যবস্থার বিরুদ্ধে আমাদের সংগঠিত হতে হবে। এই ফেরাউনি শাসনব্যবস্থাকে সমূলে উৎখাত করার জন্য আমাদের বুদ্ধিবৃদ্ধিক ও সামরিক প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে এই কথাগুলো গোপন করার কি দলিল কি অজুহাত আছে আমাদের আছে হাশরের দিন আমরা আল্লাহর দরবারে কি জবাব দিব?
প্রিয় ভাই! রাসূলﷺযখন মক্কায় ইসলামের দাওয়াত শুরু করে ছিলেন তিনি কি আকিদার কোনো অংশকে লুকিয়ে রেখেছিলেন? তিনি কি খণ্ডিত ইসলামের দাওয়াত দিয়েছিলেন? তিনি কি তাওহিদের কোনো অংশ গোপন করেছিলেন? তিনি জাহেলিয়াতের কোনো শয়তানির বিরুদ্ধে নীরবতা পালন করেছিলেন? সুবাহানাল্লাহ! এই খণ্ডিত ইসলামের দাওয়াত দেওয়ার শিক্ষা আমরা কোথায় পেলাম!!! রাসূল ﷺযখন মক্কায় লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্ এর দাওয়াত দিতে শুরু করলেন মক্কার তাগুত নেতৃবৃন্দের মসনদ থরথর করে কেঁপে উঠল তারা বুঝতে পারল তাওহিদের এই দাওয়াত তাদের জাহেলি সমাজব্যবস্থার গোড়ায় প্রবলভাবে আঘাত হেনেছে অচিরেই এই দাওয়াত তাদের কুফরি সমাজব্যবস্থকে সমূলে উৎখাত করে ছাড়বে ফলে মক্কার তাগুত শাসকগোষ্ঠি এই দাওয়াতের বিরুদ্ধে কোমর বেঁধে নেমে পড়ল তারা রাসূলﷺ এবং সাহাবিদের উপর অকাট্য নির্যাতন শুরু করল এবং কী অনেক সাহাবিকে শহিদ পর্যন্ত করে দিল।
কিন্তু কি আশ্চর্য এক দিকে আমাদের লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এর দাওয়াত চলছে অপর দিকে তাগুতি রাষ্ট্রব্যবস্থা খুশমেজাজে বহল তবিয়তে চলছে বরং দিন দিন আরো সংঘত ও শক্তিাশালী হচ্ছে, এবং কী আমাদের লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এর দাওয়াতকে ক্ষুদ তাগুতরাও সমাদর করছে কোথাও রীতিমত সাহায্য করছে। একটু চিন্তা করে দেখুন আমাদের লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এর দাওয়াত আমেরিকা ও ইজরাইলে কিভাবে চলে রাসূলুল্লাহ এর দাওয়াতের সঙ্গে আমাদের দাওয়াতের কি পার্থক্য?
প্রিয় ভাই! এখানে মূল পার্থক্য হল আমরা খন্ডিত ইসলামের দাওয়াত দিচ্ছি, আমরা খন্ডিত তাওহিদের দাওয়াত দিচ্ছি আমাদের দাওয়াত সেই দাওয়াত নয় যে রাসূলﷺদিয়ে ছিলেন। নইলে যেখানে তাওহিদের দাওয়াত চলে সেখানে শিরক কিভাবে বহল তবিয়তে থাকতে পারে।
মনে রাখবেন! বিশুদ্ধ তাওহিদের দাওয়াত দেওয়া মাত্রই শিরিকি রাষ্ট্রব্যবস্থায় কাঁপন ধরবে, বিশুদ্ধ তাওহিদের দাওয়াত কখনো শিরকি ও কুফরি রাষ্ট্রব্যবস্থারর সম্মতি ও পৃষ্ঠপোষকতায় চলতে পারেনা, তাওহিদ ও শিরকের এই সংঘাত অনিবার্য।
প্রিয় ভাই! যে দাওয়াত রাসূলুল্লাহর সুন্নাহ অনুযায়ী দেওয়া হয়না সেই দাওয়াত কল্যাণের পরিবর্তে গোমরাহি ডেকে আনবে।
প্রিয় ভাই! আলোচনা আর দীর্ঘ করতে চাই না। খন্ডিত ইসলাম চর্চার এই ফিতনা সম্পর্কে আমরা সংক্ষেপে ইশারা করলাম। আশাকরি আপনারা বিষয়টি অনুধাবন করার চেষ্টা করবেন আমরা আপনাদের চিন্তায় শত্রুটুকু ধরিয়ে দিলাম মাত্র, আপনারা বিষয়টি নিয়ে আরো গভীরভাবে চিন্তা করবেন দ্বীনের খন্ডিত চর্চার এই ফিতনা থেকে আল্লাহ আমাদের হিফাজত করুন।
আমাদের দায়িত্ব হবে আকিদা বিশ্বাসে পরিপূর্ণ ইসলামকে ধরাণ করা এবং বাস্তব জীবনে সাধ্যমত ইসলামের আহকামগুলো বাস্তবায়ন করা এবং দীর্ঘ মেয়াদে আল্লাহর জমিনে আল্লাহর আইন বাস্তবায়নের জন্য দাওয়া, ই'দাদের কার্যকম অব্যাহত রাখা। আল্লাহ তা'য়ালা আমাদের সবাইকে বুঝার ও আমল করার তাওফিক দিন আমীন, ইয়া রব্বাল আলামিন।
-শায়েখ তামিম আল-আদনানী হাফিযাহুল্লাহ
প্রিয় ভাই ও বোনেরা! আকিদা বিষয়ক আলোচনার পূর্বে আমরা আরো কয়েকটি মারাত্মক ফিতনার ব্যাপারে আপনাদের সর্তক করতে চাই যেগুলো থেকে আপনাদের দ্বীন ও ঈমানকে হিফাজত করা অতিব জরুরী গত মজলিসে আমরা 'ফুরুয়ী ও শাখাগত মাসায়েল নিয়ে দলাদলির ফিতনা' সম্পর্কে আপনাদের সামনে আলোচনা করেছিলাম। আজ আমরা কথা বলব "দ্বীনের খন্ডিত চর্চার ফিতনা নিয়ে আমরা আশা করব আপনারা দিলের কান দিয়ে শুনবেন এবং অনুধাবন করার চেষ্টা করবেন।
প্রিয় ভাই! দ্বীনের খণ্ডিত চর্চা মানে আকিদা ও আমলে আংশিক দ্বীন পালন করা এবং এই আংশিক দ্বীনকেই পরিপূর্ণ দ্বীন মনে করা। অথচ খন্ডিত দ্বীন আসলে কোনো দ্বীনই নই। দ্বীনের কোনো অংশকে ছাঁটাই করে ফেললে তা আর দ্বীন থাকে না। ইসলামে কিছু আকিদাকে ও কিছু আহকামকে বাদ দিয়ে দিলে, সেই ইসলাম আর ইসলাম থাকে না। ইসলামে প্রবেশ করতে হলে পরিপূর্নভাবে প্রবেশ করতে হবে। কেউ যদি ইসলামের কিছু আকিদা ও আহকামকে গ্রহণ করে, আর কিছু সজ্ঞানে বাদ দিয়ে দেয়, তবে সে আর যা-ই হোক মুসলিম হতে পারে না। আল্লাহ রব্বুল আলামিন পবিত্র কালামে মাজিদে ইরশাদ করছেন,
يَٓاَيُّهَا الَّذِينَ ءَامَنُوا اُدْخُلُوافيِ الِّسلْمِ كَآفَّة وَلَاتَتَّبِعُوا خُطُوَٰتِ الَّيْطَٰنِۚ إِنَّهُ لَكُمْ عَدُوُّمُّبِين
'হে মুমিনগণ! তোমরা পরিপূর্নভাবে ইসলামে প্রবেশ করো এবং শয়তানের পদাষ্ক অনুসরণ করো না। নিশ্চয় সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু।' (সূরা বাকারা, ২:২০৮)
অন্য আয়াতে আল্লাহ তা'য়ালা আরো ইরশাদ করেছেন,
أَفَتُؤْمِنُونَ بِبَعْضِ الْكِتَبِ وَتَكْفُرُونَ بِبَعْضِۚ فَمَاجَزَآءُ مَن يَفْعَلُ ذَلِكَ مِنكُمْ إِلَّاخِزیُ فیِ الْحَيٰوةِ الدُّنْيَاۖ وَيَوْمَ الْقِيَٰمَةِ يُرَدُّونَ إِلیٰٓ أَشَدِّ الْعَذَابِ
"তবে কি তোমরা কিতাবের কিছু অংশে বিশ্বাস কর এবং কিছু অংশকে প্রত্যাখ্যান কর? সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা এরূপ করে তাদের একমাত্র প্রতিফল পার্থিব জীবনে লাঞ্ছনা এবং কিয়ামতের দিন তারা কঠিনতম শাস্তির দিকে নিক্ষিপ্ত হবে। ' (সূরা বাকারা, ২৮৫)
খিলাফত ব্যবস্থার পতনের পর সময় যতই গড়িয়েছে দ্বীন চর্চার এই ভয়াবহ ঈমান বিধ্বংসী ফিতনা মুসলিমদের মাঝে ততই ব্যপক আকার ধারণ করেছে, কারণ শরিয়া শাসন না থাকার কারণে ইসলামের এক বিরাট অংশের উপর আমল করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে। মুফাক্কির ইসলাম "সাইয়িদ আবুল হাসান আলি নদবি রহিমাহুল্লাহ ' বেশ স্পষ্ট ভাষায় বিয়টি বুঝিয়েছেন তিনি বলেন...... "অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হলো, শরয়ি শাসন ছাড়া পূর্ণ শরিয়ার ওপর আমল করা সম্ভব নয়। ইসলামি জীবনব্যবস্থার একটি স্বতন্ত্র অংশ এমন রয়েছে, যার ওপর আমল করতে হলে ইসলামি রাষ্ট্রব্যবস্থার বিকল্প নেই। ইসলামি শাসনব্যবস্থার অনুপস্থিতিতে কুরআনের একটি বড় অংশ আমলের উপযুক্ততা হারায়। খোদ ইসলামের সুরক্ষাও শক্তি ছাড়া অসম্ভব। উদাহরণ স্বরূপ ইসলামের অর্থব্যবস্থা, ইসলামি আইন ও বিচারব্যবস্থা এর কোনটাই ইসলামি শাসন ছাড়া বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। তাই কুরআন শক্তি সঞ্চয় ও বিজয় অর্জনের ওপর খুব গুরুত্বারোপ করেছে। এই জন্য ইসলামি খিলাফাহ অত্যন্ত পবিত্র ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সাহাবারা খিলাফাহকে রাসুলুল্লাহর দাফন-কাফনের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ মনে করেছেন। অনেক স্বল্পবৃদ্ধির লোক এই বিষয়টি অনুধাবন করতে পারে না। এই খেলাফতের হেফাজতের জন্য ইমাম হুসাইন রাদিঅাল্লাহু আনহু কুরবানি পেশ করেছেন, যাতে খেলাফতের উদ্দেশ্য ব্যর্থ না হয়ে যায়, অযোগ্য লোকের হাতে খেলাফত চলে না যায়।" (তারিখে দাওয়াত ওয়া আজিমত: ৬ষ্ঠ খণ্ড, ৫৭,৫৮ পৃষ্ঠা)
প্রিয় ভাই! একটু খিয়াল করলে আপনি বুঝতে পারবেন কিভাবে উম্মাহ নিজের অজান্তেই খন্ডিত ইসলাম চর্চায় ব্যস্ত হয়ে পড়েছে, ইসলামের পরিপূর্ণরূপ আমলের অঙ্গন থেকে বটেই তাদের চিন্তার অঙ্গন থেকে বিদায় নিয়েছে, এমনকি তারা অনেক মৌলিক আকিদা পর্যন্ত ভুলে বসেছে যেমন, 'তাওহীদুল হাকিমিয়্যাহ' আল্লাহ ছাড়া বিধান দেওয়ার কারো অধিকার নেই। আল্লাহর দেয়া জীবন বিধান কুরআন, মুসলিমদের একমাত্র সংবিধান কুরআন ব্যথিত মানব রচিত যে কোনো সংবিধান দিয়ে দেশ শাসন করা, ফয়সালা করা কিংবা কুরআন ছাড়া অন্যকোনো সংবিধানের কাছে বিচার নিয়ে যাওয়া এটা যে কুফরি এই মৌলিক আকিদাও অনেক মুসলিম আজ ভুলে বসেছে "নাউজু বিল্লাহি মিন জালিক!
কি আশ্চর্য ব্যাপার যারা দ্বীনের দাওয়াত দিচ্ছেন তারাও এই দ্বীনের মৌলিক আকিদার কথা জনগণকে বলছেননা। যারা তাওহিদের দাওয়াত দিচ্ছেন তারা তাওহীদুল উলুহিয়্যাহর গুরুত্বপূর্ণ অংশ তাওহীদুল হাকীমিয়্যাহকে কেন জনগণের কাজ থেকে লুকিয়ে রাখছেন তাওহিদের এই খন্ডিত দাওয়াত দেওয়া কিভাবে জায়েজ হতে পারে?
মাজারে সিজদা করা যেমন শিরক, নিজেদের মনগড়া আঈন দিয়ে বিচার করা তো, আরো বড় শিরক। তাগুতের কাছে বিচার নিয়ে যাওয়া তো, আরো মারাত্মক শিরক ব্যক্তির শিরক নিয়ে এত হৈ চৈ কিন্তু রাষ্ট্রের শিরক নিয়ে কেন এই জঘন্য নিরবতা। যেই শিরকে লিপ্ত হচ্ছে লক্ষ্য লক্ষ্য অবুঝ মুসলিম। কেন পরিপূর্ণ তাওহিদের দাওয়াত জনগণের কাছে পৌঁছানো হচ্ছেনা? জনগণকে দেওয়া হচ্ছেনা। অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলতে হয় অনেক অবুঝ ভাই তো, কেবল তাওহীদুর রুবুবিয়্যাহকেই কালিমায়ে তাওহীদের উদ্দ্যেশ্য বলে প্রচার করেছেন 'নাউজু বিল্লাহি মিন জালিক! আল্লাহ তা'য়ালা আমাদের হিফাজত করুন, আল্লাহ আমাদের হিদায়েত দিন।
এভাবে উম্মাহ আরো একটি ভুলে যাওয়া আকিদা হল "আল-ওয়ালা ওয়াল-বারা" এই আকিদা ভুলে যাওয়ার মারাত্মক ফলাফল আজ আমরা নিজেরাই দেখতে পাচ্ছি, এই আকিদার বিস্তৃতির কারণে আলেম সমাজের একটি বিভ্রান্ত অংশকে দেখা যাচ্ছে তাগুত সরকারের সঙ্গে মাখামাখি করতে, এই আকিদার বিস্তৃতির কারনেই মুসলিমরা কাফেরদের বিরোধিতার চেয়ে বিরুদ্ধমতের আপন মুসলিম ভাইদের বিরুদ্ধেই জান-মাল কুরবান করেছে। টঙ্গির ময়দানে তাবলিগের ভাইদের মারামারি এবং হানাফি-সালাফি ধন্দে মসজিদ ভাঙ্গাভাঙ্গি। এই আকিদায় "ওয়ালা-বার" ভুলে যাওয়ার দুঃখজনক ফলাফল আল্লাহ আমাদের মুসিবত থেকে হিফাজত করুন। ইনশাআল্লাহ আমরা আকিদা সিরিজে এসব ভুলে যাওয়া আকিদা নিয়ে আলোচনা করব।
প্রিয় ভাই! এতো গেল আকিদার কথা এভাবে ইসলামি অর্থনীতি, ইসলামি বিচারব্যবস্থার কাথাও মুসলিমরা আজ ভুলে বসেছে। সবচেয়ে বড় দুঃখের কথা হল ইসলামি রাষ্ট্রব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার একমাত্র পথ ই'দাদ ও জিহাদের ফরজের কথা উচ্চারণ করাও আজ অপরাধ হয়ে দাঁড়িয়েছে, আল্লাহ আমাদের হিফাজত করুন। সুদভিত্তিক এই অর্থব্যবস্থা যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধে সুস্পষ্ট বিদ্রোহ, এই কথা আমরা ওলামা ও দা'য়ীরা জনগণকে খোলামেলা কেন বলছিনা? কেন এই কথা স্পষ্ট ভাবে বলে দেওয়া হচ্ছেনা এইদেশের শাসকগোষ্ঠি চব্বিশ ঘণ্টা আল্লাহ ও তাঁর রানূলের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত। এই দেশের বিচারব্যবস্থা সম্পূর্ণ কুফুরি, ইসলামে হুদুদ-কিসাস কোনো কিছুরিই ধারধারছেনা এই তাগুত শাসকগোষ্ঠি। বরং এই মুর্তাদরা ইসলামের হুদুদ-কিসাসকে মধ্যেযোগিয় বরবর আঈন বলে উপহাস করছে নাউজু বিল্লাহি মিন জালিক!
এই কুফরি রাষ্ট্রব্যবস্থার বিরুদ্ধে আমাদের সংগঠিত হতে হবে। এই ফেরাউনি শাসনব্যবস্থাকে সমূলে উৎখাত করার জন্য আমাদের বুদ্ধিবৃদ্ধিক ও সামরিক প্রস্তুতি গ্রহণ করতে হবে এই কথাগুলো গোপন করার কি দলিল কি অজুহাত আছে আমাদের আছে হাশরের দিন আমরা আল্লাহর দরবারে কি জবাব দিব?
প্রিয় ভাই! রাসূলﷺযখন মক্কায় ইসলামের দাওয়াত শুরু করে ছিলেন তিনি কি আকিদার কোনো অংশকে লুকিয়ে রেখেছিলেন? তিনি কি খণ্ডিত ইসলামের দাওয়াত দিয়েছিলেন? তিনি কি তাওহিদের কোনো অংশ গোপন করেছিলেন? তিনি জাহেলিয়াতের কোনো শয়তানির বিরুদ্ধে নীরবতা পালন করেছিলেন? সুবাহানাল্লাহ! এই খণ্ডিত ইসলামের দাওয়াত দেওয়ার শিক্ষা আমরা কোথায় পেলাম!!! রাসূল ﷺযখন মক্কায় লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্ এর দাওয়াত দিতে শুরু করলেন মক্কার তাগুত নেতৃবৃন্দের মসনদ থরথর করে কেঁপে উঠল তারা বুঝতে পারল তাওহিদের এই দাওয়াত তাদের জাহেলি সমাজব্যবস্থার গোড়ায় প্রবলভাবে আঘাত হেনেছে অচিরেই এই দাওয়াত তাদের কুফরি সমাজব্যবস্থকে সমূলে উৎখাত করে ছাড়বে ফলে মক্কার তাগুত শাসকগোষ্ঠি এই দাওয়াতের বিরুদ্ধে কোমর বেঁধে নেমে পড়ল তারা রাসূলﷺ এবং সাহাবিদের উপর অকাট্য নির্যাতন শুরু করল এবং কী অনেক সাহাবিকে শহিদ পর্যন্ত করে দিল।
কিন্তু কি আশ্চর্য এক দিকে আমাদের লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এর দাওয়াত চলছে অপর দিকে তাগুতি রাষ্ট্রব্যবস্থা খুশমেজাজে বহল তবিয়তে চলছে বরং দিন দিন আরো সংঘত ও শক্তিাশালী হচ্ছে, এবং কী আমাদের লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এর দাওয়াতকে ক্ষুদ তাগুতরাও সমাদর করছে কোথাও রীতিমত সাহায্য করছে। একটু চিন্তা করে দেখুন আমাদের লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এর দাওয়াত আমেরিকা ও ইজরাইলে কিভাবে চলে রাসূলুল্লাহ এর দাওয়াতের সঙ্গে আমাদের দাওয়াতের কি পার্থক্য?
প্রিয় ভাই! এখানে মূল পার্থক্য হল আমরা খন্ডিত ইসলামের দাওয়াত দিচ্ছি, আমরা খন্ডিত তাওহিদের দাওয়াত দিচ্ছি আমাদের দাওয়াত সেই দাওয়াত নয় যে রাসূলﷺদিয়ে ছিলেন। নইলে যেখানে তাওহিদের দাওয়াত চলে সেখানে শিরক কিভাবে বহল তবিয়তে থাকতে পারে।
মনে রাখবেন! বিশুদ্ধ তাওহিদের দাওয়াত দেওয়া মাত্রই শিরিকি রাষ্ট্রব্যবস্থায় কাঁপন ধরবে, বিশুদ্ধ তাওহিদের দাওয়াত কখনো শিরকি ও কুফরি রাষ্ট্রব্যবস্থারর সম্মতি ও পৃষ্ঠপোষকতায় চলতে পারেনা, তাওহিদ ও শিরকের এই সংঘাত অনিবার্য।
প্রিয় ভাই! যে দাওয়াত রাসূলুল্লাহর সুন্নাহ অনুযায়ী দেওয়া হয়না সেই দাওয়াত কল্যাণের পরিবর্তে গোমরাহি ডেকে আনবে।
প্রিয় ভাই! আলোচনা আর দীর্ঘ করতে চাই না। খন্ডিত ইসলাম চর্চার এই ফিতনা সম্পর্কে আমরা সংক্ষেপে ইশারা করলাম। আশাকরি আপনারা বিষয়টি অনুধাবন করার চেষ্টা করবেন আমরা আপনাদের চিন্তায় শত্রুটুকু ধরিয়ে দিলাম মাত্র, আপনারা বিষয়টি নিয়ে আরো গভীরভাবে চিন্তা করবেন দ্বীনের খন্ডিত চর্চার এই ফিতনা থেকে আল্লাহ আমাদের হিফাজত করুন।
আমাদের দায়িত্ব হবে আকিদা বিশ্বাসে পরিপূর্ণ ইসলামকে ধরাণ করা এবং বাস্তব জীবনে সাধ্যমত ইসলামের আহকামগুলো বাস্তবায়ন করা এবং দীর্ঘ মেয়াদে আল্লাহর জমিনে আল্লাহর আইন বাস্তবায়নের জন্য দাওয়া, ই'দাদের কার্যকম অব্যাহত রাখা। আল্লাহ তা'য়ালা আমাদের সবাইকে বুঝার ও আমল করার তাওফিক দিন আমীন, ইয়া রব্বাল আলামিন।
Comment