ওয়াল্লাহি আমরা আপনাকে ভালোবাসি!
-শাইখ তামিম আল-আদনানী হাফিজাহুল্লাহ
প্রিয় ভাই! আমরা আপনাকে ভালোবাসি একমাত্র আল্লাহর জন্যই আপনাকে ভালোবাসি। আরাম ও নিরাপত্তায় ঘেরা জীবন ও বিলাসী ক্যারিয়ারের সুখস্বপ্ন দুপায়ে মাড়িয়ে তাগুতের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে দাওয়াহর এই বিপদসষ্কুল পথে আমরা কেন এসেছি? ওয়াল্লাহি! আপনাদের ভালোবাসায় আমাদের এই কঠিন পথে নিয়ে এসেছে। আল্লাহর জন্য এই ভালোবাসার কত ফজিলত তা কেবল সেদিন আপনার বুঝে আসবে, যেদিন হাশরের ময়দানের ভয়াবহ উত্তাপে টগবগ করে ফুটবে মানুষের মগজ, ঘামের সাগরে হাবুড়ুবো খাবে গুনাহগার বনি আদম, যখন একটু ছায়ার জন্য মানুষ হাহাকার করবে। সেদিন আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ঘোষণা করবেন: أَيْنَ الْمُتَحَابُّوْنَ بِجَلَالِی اَلْيَوْمَ أُضِلُّهُمْ فِيْ ضِلِّيْ يَوْمَ لَاظِلَّءِالّا ظِلِّيْ
'আমার ইবাদত ও আজমতের জন্য যারা একে অপরকে ভালোবাসত তারা কোথায়? আজ তাদেরকে আমি আমার বিশেষ ছায়া প্রদান করব। আর আজ এমন এক দিন, যেদিন আমার ছায়া ছাড়া আর কারও ছায়া নেই।'(সহিহ মুসলিম:২৫৬৬)
প্রিয় ভাই! প্রায় বিভিন্ন শরয়ি কারণে আমাদেরকে অনেক মুমিন দায়ী ভাই কিংবা জামাতের ভুল বক্তব্য, ভুল আকিদা কিংবা ভুল কর্মপদ্ধতির খণ্ডন করতে হয়। কুরআন-সুন্নাহর আলোকে আমরা সুস্পষ্টভাবে বুঝিয়ে বলার চেষ্টা করি, আমার ভাই! আপনার এই বক্তব্য ভুল, আপনার এই আকিদা ভুল কিংবা আপনার এই মানহাজ এই কর্মপদ্ধতি রাসূলুল্লাহর মানহাজের বিপরীত। মুসলিম ভাই ও জামাত, বিশেষ করে দায়ি ভাইদের প্রতি এই নাসিহা ও কল্যাণ-কামনা আমাদের দায়িত্ব। মুমিন ভাইদের প্রতি এটি আমাদের ভালোবাসার প্রকাশ। যদিও এই খণ্ডন ও সমালোচনার কারণে অনেক অবুঝ ভাই মনে কষ্ট পেয়ে থাকেন।
প্রিয় ভাইয়েরা! আপনাদের সাময়িকভাবে খারাপ লাগলেও দ্বীনের এই ফরজ আমাদের আদায় করতেই হবে। কারণ { الدِّينُ النَّصِيحَةُ}'দ্বীন হলো পরস্পর কল্যাণকামিতার নাম।' (সহিহুল মুসলিম:৫৫) কিন্তু ভাই! আমাদের একটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে, কোনো দায়ি ইলাল্লাহ বা কোনো মুসলিম জামাতের সুনির্দিষ্ট কোনো ভ্রান্তি কিংবা পদস্খলনের খণ্ডন করা এবং সমালোচনা করার অর্থ এই নয় যে ওই দায়ি ভাই কিংবা ওই জামাতের সব কথা ও কাজকে আমরা ভ্রান্ত বলছি, কিংবা তাদের সকল অবদানকে অস্বীকার করছি অথবা তাদের মেহনতকে খাটো করে দেখছি। আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করুন।
সকল উলামায়ে রাব্বানি, দায়ি ইলাল্লাহ এবং মুসলিম জামাতকে আমাদের যথাযোগ্য সম্মান ও মর্যাদা দিতে হবে। দ্বীন ও উম্মাহর জন্য তাদের যে মেহনত তার কদর করতে হবে। আমাদের এই ভূমির অনেক মুসলিম ভাইয়ের একটি বড় সমস্যা হলো, কোনো দায়ি বা কোনো জামাতকে সমর্থন করলে তারা অনেক অন্ধ ভক্ত হয়ে ওঠেন। আমার শাইখ যা-ই বলেন যা-ই করেন সব সঠিক, আমাদের দল যা-ই বলে যা-ই করে সব সঠিক। তাই কুরআন-সুন্নাহর আলোকে কোনো সমালোচনা করা হলেও তারা না বুঝে খেপে যান।
প্রিয় ভাই! যে কোনো দায়ি বা জামাতের মাঝে দুয়েকটি ভ্রান্তি থাকতে পারে। কুরআন-সুন্নাহর আলোকে যখনই কোনো ব্যক্তি বা দলের গোমরাহি তুলে ধরা হয়, মুসলিম ভাইদের উচিত তা বর্জন করা এবং অন্ধভক্তির কারণে ব্যক্তি বা জামাতের গোমরাহিকেও গ্রহণ করে না বসা। আল্লাহ তাআলা বলেন: فَإِن تَنَزَعْتُمْ فِي شَیْءٍ فَرُدُّوهُ إِلَی اللهِ وَالرَّسُولِ إِن كُنْتُمْ تُؤْمِنُونَ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْأَخِرِ ذَٰلِكَ خَيْرُ وَأَحسَنُ تَأْوِيلًا
'কোনো বিষয়ে মতভেদ ঘটলে তা উপস্থাপন কর আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নিকট। এটিই উত্তম ও পরিণামের বিচারে এটিই উৎকৃষ্ট।' (সূরা নিসা, ০৪:৫৯)
প্রিয় ভাইয়েরা! সহিহ আকিদা ও সুন্নাহর প্রচার-প্রসারে যেসব দায়ি ভাইয়েরা কাজ করছেন, দ্বীনি ইলমের চর্চা ও বিস্তারে যেসব উলামা-মাশায়েখ তাদের সবকিছু বিলিয়ে দিচ্ছেন, সাধারণ মানুষকে দ্বীনের পথে ডাকতে যারা সময় ও সম্পদ কুরবান করছেন তাদের এসব মেহনত ও অবদানের কদর আমাদের করতে হবে। তাঁদের মেহনতে শামিল হওয়া, তাঁদের সাহায্য করা এবং তাদের জন্য দোয়া করা আমাদের ইমানী দায়িত্ব। কিন্তু যখনই কোনো দায়ি ভাই বা দ্বীনি জামাতের মাঝে কোনো আকিদা বা আমলগত বিভ্রান্তি প্রকাশ পাবে, যখন তাদের দাওয়াহয় রাসূলুল্লাহর মানহাজের বিপরীত কোনো কিছুর অনুপ্রবেশ ঘটবে, তখন প্রতিটি বুঝমান মুমিনদের দায়িত্ব সাধারণ মানুষের সামনে ওই বিশেষ গোমরাহি ও ভুল মানহাজের বিষয়টি স্পষ্ট করা। যাতে তারা নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে তাওবা করে এবং সাধারণ মুসলিম ভাইয়েরা এই গোমরাহির ব্যাপারে সতর্ক হতে পারে।
যখন কোনো দায়ি ভাই বা দ্বীনি জামাত সহিহ আকিদার দাওয়াত দিতে গিয়ে মুসলিম সমাজে ইরজার বিস্তার ঘটায় কিংবা র*্যান্ড কর্পোরেশনের প্রস্তাবিত মডারেট ইসলামের দাওয়াত দেয়, তখন এই গোমরাহির বিরুদ্ধে মুখ খোলা মুমিনদের জন্য জরুরি হয়ে যায়। যদি কোনো মুসলিম জামাত সহিহ হাদিস ও সুন্নাহর প্রচার-প্রসার করতে গিয়ে সাধারণ মুসলিমদেরকে মুস্তাহাব বিষয় নিয়ে দলাদলিতে লাগিয়ে দেয় এবং ইদাদ ও জিহাদের মতো গুরুত্বপূর্ণ ফরজের ব্যাপারে নীরবতা পালন করে, তবে তাদের এই ভ্রান্ত কর্মপদ্ধতির খণ্ডন করা মুমিনদের জন্য জরুরি হয়ে যায়।
যখন কোনো দায়ি বা জামাত দাওয়াহর নববি মানহাজ থেকে বিচ্যুত হয়ে তাওহিদের খণ্ডিত দাওয়াত প্রদান করে এবং গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার মতো রাষ্ট্রীয় কুফর ও শিরকের ব্যাপারে জঘন্য নীরবতা পালন করে এবং যারা এই শিরক ও কুফরের বিরুদ্ধে সোচ্চার তাদেরকে জঙ্গী আর খারেজি বলে, তাদের এই গোমরাহির মুখোশ উন্মোচন করা মুমিনের ওপর ফরজ হয়ে যায়। যারা আল্লাহ ও তার রাসূলের বিরুদ্ধে চব্বিশ ঘণ্টা লড়াইরত মুরতাদ শাসকগোষ্ঠীর আনুগত্যের সবক দিয়ে সুদভিত্তিক অর্থব্যবস্থাকে নীরব সমর্থন প্রদান করে, কুফুরি সংবিধান ও তাগুতি রাষ্ট্রব্যবস্থার আনুগত্য স্বীকার করে নেয়, তাদের বিরুদ্ধে কোনো মুমিনের কণ্ঠ নীরব থাকতে পারে না।
যারা ইলমচর্চার নামে তাত্ত্বিক ইসলামের দাওয়াত দেয়, তালিম-তাআল্লুমকে ইকামতে দ্বীন তথা ইদাদ ও জিহাদের ফরজ আদায়ের পথে প্রতিবন্ধক হিসেবে দাঁড় করিয়ে দেয় এবং যারা দ্বীনকে কতিপয় ব্যক্তিগত ইবাদত ও পারিবারিক আচার-অনুষ্ঠানের মধ্যে সীমাবদ্ধ করে দিয়ে মুসলিম-সমাজে খিস্টীয় যাজকতন্ত্রের আমদানি করছে, তাদের গোমরাহি তুলো ধরা সময়ের অনিবার্য দাবি। যারা তাজকিয়া ও আত্মশুদ্ধির নামে মুসলিম মন-মানসে খানকাহভিত্তিক সন্ন্যাসবাদ ও বৈরাগ্যবাদের রোগ-জীবাণু ছড়ায় এবং সমাজ ও জাতীয় জীবনে দ্বীনের চাহিদা ও দাবি থেকে মুরিদদের নজর ফিরিয়ে রাখে, তাদের ভ্রান্তি থেকে সাধারণ মুসলিমদের সর্তক করা অতীব জরুরি।
যারা দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য রাসূলুল্লাহর অনুসৃত দাওয়াহ, ইদাদ ও জিহাদের আসমানি মানহাজ বাদ দিয়ে আব্রাহাম লিংকনের শিরকি গণতন্ত্রের মানহাজ গ্রহণ করেছে এবং যুগ যুগ ধরে ভ্রান্ত পথে মুসলিমদের শক্তি ও উদ্যমের নির্মম অপচয় করছে, জিহাদের বিকৃত ব্যাখ্যা দিয়ে অবুঝ জনগণের ইমানি আবেগ নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে তাদের গোমরাহি তুলে ধরা প্রতিটি মুসলমানের দ্বীনি দায়িত্ব।
প্রিয় ভাই! আশা করি বোঝাতে পেরেছি আমাদের বক্তব্য কোনো বিশেষ ব্যক্তি বা দলের বিরুদ্ধে নয়: বরং প্রতিটি দায়ি ইলাল্লাহ, প্রতিটি দ্বীনি জামাত আর আমাদের দ্বীনের দুর্গ এই মাদরাসাগুলো এই সবকিছু দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য একেকটি মৌলিক উপাদান। এসব উপাদান বাদ দিয়ে আমরা এই ভূমিতে দ্বীনের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পারব না। আমাদের সংগ্রাম কেবল ব্যক্তি, দল বা প্রতিষ্ঠানের নির্দিষ্ট গোমরাহি ও ভ্রষ্টতার বিরুদ্ধে। আমাদের এই বিরোধিতা কেবল দ্বীনি দায়িত্বের খাতিরে। যতদিন তারা এই ভ্রান্তি থেকে ফিরে না আসে আমাদের এই নাসিহাহ অব্যাহত রাখতে হবে
ভাই! আপনি কি জানেন, এই কথাগুলো আপনাকে আমরা কেন বলছি? এই কথাগুলো আমাদের এই জন্য বলতে হচ্ছে- অনেক ভাই বলে থাকেন, আমি অমুক শাইখের মাধ্যমে হেদায়াত পেয়েছি, আপনারা কেন তাদের বিরুদ্ধে বলছেন? অমুক দায়ির মাধ্যমে সহিহ আকিদার প্রচার-প্রসার হয়েছে, আপনারা কেন তার বিরুদ্ধে বলছেন? অমুক জামাতের মাধ্যমে আমি ইলম শিখেছি, আপনারা কেন তাদের পিছু লেগেছেন?
ভাই! নিঃসন্দেহে এসব দায়ি ইলাল্লাহ ও দ্বীনি জামাতগুলো আমাদের সম্পদ। তাদের সবাইকে আমরা ভালোবাসি, শ্রদ্ধা করি। কিন্তু তাদের হাত ধরে আপনি হেদায়ত পেয়েছেন বলে আপনি তাদের বিশুদ্ধ কথার পাশাপাশি তাদের গোমরাহিগুলোও গ্রহণ করবেন, এই অনুমতি আপনাকে শরিয়াহ দেয় না। তাদের কাছ থেকে আপনি সুন্নত ও বিদআতের পরিচয় পেয়েছেন বলে আপনি তাদের ভ্রান্তিগুলোকে গ্রহণ করবেন এই সুযোগ ইসলামে নেই। দ্বীন প্রচারে তাদের অবদান আছে বলে, তাদের কোনো গোমরাহির বিরোধিতা করা যাবে না, এটা কীভাবে হতে পারে?
প্রিয় ভাই! দায়ি হিসেবে আমরা নিজেরাও এই মূলনীতির অন্তর্ভুক্ত। কোনো দায়ি বা জামাতের এই নীতির বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই।
প্রিয় ভাই! কোনো বিশেষ দায়ি বা কোনো জামাতের মাঝে গোমরাহি থাকতে পারে, কিন্তু তার মানে এই নয় যে তারা কাফেরদের মতোই মুসলমানদের শত্রু। যতক্ষণ কোনো ভাই ইসলামের গণ্ডির ভেতরে থাকবে, তার যত ভ্রান্তিই থাকুক না কেন সে আমাদের বন্ধু। আমরা তাকে নাসিহাহ করেই যাব। ভ্রান্তির মাত্রার বিচারে মুসলিম ভাইদের সঙ্গে বিরোধিতারও বিভিন্ন স্তর আছে। এই বিষয়গুলো নিয়ে আমরা "মারাতিবুল ওয়ালা ওয়ালা-বারা' "শত্রুতা-মিত্রতার স্তর " শিরনামে আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ..... মুসলমানদের শত্রুকরা তাদের পরিচয় "সাবধান দ্বীনের ব্যাপারে আপনি প্রতারিত হচ্ছেন না তো?" এই শিরনামে একটি মজলিসে আমরা আলোচনা করেছি আপনাদের সেই আলোচনাটি শুনার আহ্বান করছি যাতে আপনারা শত্রু চিন্তে ভুল না করেন।
প্রিয় ভাই! যখন কোনো বিশেষ দায়ি বা বিশেষ জামাত সামগ্রিকভাবে গোমরাহিতে ভরে যায় তখন আমরা তাদের বিরুদ্ধে সরাসরি কথা বলি এবং জনগণকে তাদের ব্যাপারে সুস্পষ্টভাবে সর্তক করি। দাওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই আমাদের নববি মানহাজ গ্রহণ করতে হবে। দাওয়াহর ব্যাপারে কোনো ধরনের লুকোচরি, তাগুত সরকারের শিরক ও কুফরের সঙ্গে কোনো ধরনের আপোস, তাওহিদের আংশিক ও খণ্ডিত চিত্রায়ন, দ্বীনের খণ্ডিত সংস্কার প্রচেষ্টা, দ্বীনের কোনো আহকামকে গোপন করা ইত্যাদির মতো গোমরাহি থেকে আমরা আল্লাহর কাছে পানাহ চাই। দোয়া করি, আল্লাহ মুসলিম ভাইদের মাঝে ভালোবাসা ও সম্প্রীতির বন্ধন তৈরি করে দিন এবং ফুরুয়ি ইখতিলাফের উর্ধ্বে উঠে কাফেরদের মোকাবিলায় ইস্পাত কঠিন প্রাচীরের মতো দাঁড়িয়ে যাওয়ার তাওফিক দিন আমীন, ইয়া রাব্বাল আলামিন।
-শাইখ তামিম আল-আদনানী হাফিজাহুল্লাহ
প্রিয় ভাই! আমরা আপনাকে ভালোবাসি একমাত্র আল্লাহর জন্যই আপনাকে ভালোবাসি। আরাম ও নিরাপত্তায় ঘেরা জীবন ও বিলাসী ক্যারিয়ারের সুখস্বপ্ন দুপায়ে মাড়িয়ে তাগুতের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে দাওয়াহর এই বিপদসষ্কুল পথে আমরা কেন এসেছি? ওয়াল্লাহি! আপনাদের ভালোবাসায় আমাদের এই কঠিন পথে নিয়ে এসেছে। আল্লাহর জন্য এই ভালোবাসার কত ফজিলত তা কেবল সেদিন আপনার বুঝে আসবে, যেদিন হাশরের ময়দানের ভয়াবহ উত্তাপে টগবগ করে ফুটবে মানুষের মগজ, ঘামের সাগরে হাবুড়ুবো খাবে গুনাহগার বনি আদম, যখন একটু ছায়ার জন্য মানুষ হাহাকার করবে। সেদিন আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ঘোষণা করবেন: أَيْنَ الْمُتَحَابُّوْنَ بِجَلَالِی اَلْيَوْمَ أُضِلُّهُمْ فِيْ ضِلِّيْ يَوْمَ لَاظِلَّءِالّا ظِلِّيْ
'আমার ইবাদত ও আজমতের জন্য যারা একে অপরকে ভালোবাসত তারা কোথায়? আজ তাদেরকে আমি আমার বিশেষ ছায়া প্রদান করব। আর আজ এমন এক দিন, যেদিন আমার ছায়া ছাড়া আর কারও ছায়া নেই।'(সহিহ মুসলিম:২৫৬৬)
প্রিয় ভাই! প্রায় বিভিন্ন শরয়ি কারণে আমাদেরকে অনেক মুমিন দায়ী ভাই কিংবা জামাতের ভুল বক্তব্য, ভুল আকিদা কিংবা ভুল কর্মপদ্ধতির খণ্ডন করতে হয়। কুরআন-সুন্নাহর আলোকে আমরা সুস্পষ্টভাবে বুঝিয়ে বলার চেষ্টা করি, আমার ভাই! আপনার এই বক্তব্য ভুল, আপনার এই আকিদা ভুল কিংবা আপনার এই মানহাজ এই কর্মপদ্ধতি রাসূলুল্লাহর মানহাজের বিপরীত। মুসলিম ভাই ও জামাত, বিশেষ করে দায়ি ভাইদের প্রতি এই নাসিহা ও কল্যাণ-কামনা আমাদের দায়িত্ব। মুমিন ভাইদের প্রতি এটি আমাদের ভালোবাসার প্রকাশ। যদিও এই খণ্ডন ও সমালোচনার কারণে অনেক অবুঝ ভাই মনে কষ্ট পেয়ে থাকেন।
প্রিয় ভাইয়েরা! আপনাদের সাময়িকভাবে খারাপ লাগলেও দ্বীনের এই ফরজ আমাদের আদায় করতেই হবে। কারণ { الدِّينُ النَّصِيحَةُ}'দ্বীন হলো পরস্পর কল্যাণকামিতার নাম।' (সহিহুল মুসলিম:৫৫) কিন্তু ভাই! আমাদের একটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে, কোনো দায়ি ইলাল্লাহ বা কোনো মুসলিম জামাতের সুনির্দিষ্ট কোনো ভ্রান্তি কিংবা পদস্খলনের খণ্ডন করা এবং সমালোচনা করার অর্থ এই নয় যে ওই দায়ি ভাই কিংবা ওই জামাতের সব কথা ও কাজকে আমরা ভ্রান্ত বলছি, কিংবা তাদের সকল অবদানকে অস্বীকার করছি অথবা তাদের মেহনতকে খাটো করে দেখছি। আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করুন।
সকল উলামায়ে রাব্বানি, দায়ি ইলাল্লাহ এবং মুসলিম জামাতকে আমাদের যথাযোগ্য সম্মান ও মর্যাদা দিতে হবে। দ্বীন ও উম্মাহর জন্য তাদের যে মেহনত তার কদর করতে হবে। আমাদের এই ভূমির অনেক মুসলিম ভাইয়ের একটি বড় সমস্যা হলো, কোনো দায়ি বা কোনো জামাতকে সমর্থন করলে তারা অনেক অন্ধ ভক্ত হয়ে ওঠেন। আমার শাইখ যা-ই বলেন যা-ই করেন সব সঠিক, আমাদের দল যা-ই বলে যা-ই করে সব সঠিক। তাই কুরআন-সুন্নাহর আলোকে কোনো সমালোচনা করা হলেও তারা না বুঝে খেপে যান।
প্রিয় ভাই! যে কোনো দায়ি বা জামাতের মাঝে দুয়েকটি ভ্রান্তি থাকতে পারে। কুরআন-সুন্নাহর আলোকে যখনই কোনো ব্যক্তি বা দলের গোমরাহি তুলে ধরা হয়, মুসলিম ভাইদের উচিত তা বর্জন করা এবং অন্ধভক্তির কারণে ব্যক্তি বা জামাতের গোমরাহিকেও গ্রহণ করে না বসা। আল্লাহ তাআলা বলেন: فَإِن تَنَزَعْتُمْ فِي شَیْءٍ فَرُدُّوهُ إِلَی اللهِ وَالرَّسُولِ إِن كُنْتُمْ تُؤْمِنُونَ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْأَخِرِ ذَٰلِكَ خَيْرُ وَأَحسَنُ تَأْوِيلًا
'কোনো বিষয়ে মতভেদ ঘটলে তা উপস্থাপন কর আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নিকট। এটিই উত্তম ও পরিণামের বিচারে এটিই উৎকৃষ্ট।' (সূরা নিসা, ০৪:৫৯)
প্রিয় ভাইয়েরা! সহিহ আকিদা ও সুন্নাহর প্রচার-প্রসারে যেসব দায়ি ভাইয়েরা কাজ করছেন, দ্বীনি ইলমের চর্চা ও বিস্তারে যেসব উলামা-মাশায়েখ তাদের সবকিছু বিলিয়ে দিচ্ছেন, সাধারণ মানুষকে দ্বীনের পথে ডাকতে যারা সময় ও সম্পদ কুরবান করছেন তাদের এসব মেহনত ও অবদানের কদর আমাদের করতে হবে। তাঁদের মেহনতে শামিল হওয়া, তাঁদের সাহায্য করা এবং তাদের জন্য দোয়া করা আমাদের ইমানী দায়িত্ব। কিন্তু যখনই কোনো দায়ি ভাই বা দ্বীনি জামাতের মাঝে কোনো আকিদা বা আমলগত বিভ্রান্তি প্রকাশ পাবে, যখন তাদের দাওয়াহয় রাসূলুল্লাহর মানহাজের বিপরীত কোনো কিছুর অনুপ্রবেশ ঘটবে, তখন প্রতিটি বুঝমান মুমিনদের দায়িত্ব সাধারণ মানুষের সামনে ওই বিশেষ গোমরাহি ও ভুল মানহাজের বিষয়টি স্পষ্ট করা। যাতে তারা নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে তাওবা করে এবং সাধারণ মুসলিম ভাইয়েরা এই গোমরাহির ব্যাপারে সতর্ক হতে পারে।
যখন কোনো দায়ি ভাই বা দ্বীনি জামাত সহিহ আকিদার দাওয়াত দিতে গিয়ে মুসলিম সমাজে ইরজার বিস্তার ঘটায় কিংবা র*্যান্ড কর্পোরেশনের প্রস্তাবিত মডারেট ইসলামের দাওয়াত দেয়, তখন এই গোমরাহির বিরুদ্ধে মুখ খোলা মুমিনদের জন্য জরুরি হয়ে যায়। যদি কোনো মুসলিম জামাত সহিহ হাদিস ও সুন্নাহর প্রচার-প্রসার করতে গিয়ে সাধারণ মুসলিমদেরকে মুস্তাহাব বিষয় নিয়ে দলাদলিতে লাগিয়ে দেয় এবং ইদাদ ও জিহাদের মতো গুরুত্বপূর্ণ ফরজের ব্যাপারে নীরবতা পালন করে, তবে তাদের এই ভ্রান্ত কর্মপদ্ধতির খণ্ডন করা মুমিনদের জন্য জরুরি হয়ে যায়।
যখন কোনো দায়ি বা জামাত দাওয়াহর নববি মানহাজ থেকে বিচ্যুত হয়ে তাওহিদের খণ্ডিত দাওয়াত প্রদান করে এবং গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার মতো রাষ্ট্রীয় কুফর ও শিরকের ব্যাপারে জঘন্য নীরবতা পালন করে এবং যারা এই শিরক ও কুফরের বিরুদ্ধে সোচ্চার তাদেরকে জঙ্গী আর খারেজি বলে, তাদের এই গোমরাহির মুখোশ উন্মোচন করা মুমিনের ওপর ফরজ হয়ে যায়। যারা আল্লাহ ও তার রাসূলের বিরুদ্ধে চব্বিশ ঘণ্টা লড়াইরত মুরতাদ শাসকগোষ্ঠীর আনুগত্যের সবক দিয়ে সুদভিত্তিক অর্থব্যবস্থাকে নীরব সমর্থন প্রদান করে, কুফুরি সংবিধান ও তাগুতি রাষ্ট্রব্যবস্থার আনুগত্য স্বীকার করে নেয়, তাদের বিরুদ্ধে কোনো মুমিনের কণ্ঠ নীরব থাকতে পারে না।
যারা ইলমচর্চার নামে তাত্ত্বিক ইসলামের দাওয়াত দেয়, তালিম-তাআল্লুমকে ইকামতে দ্বীন তথা ইদাদ ও জিহাদের ফরজ আদায়ের পথে প্রতিবন্ধক হিসেবে দাঁড় করিয়ে দেয় এবং যারা দ্বীনকে কতিপয় ব্যক্তিগত ইবাদত ও পারিবারিক আচার-অনুষ্ঠানের মধ্যে সীমাবদ্ধ করে দিয়ে মুসলিম-সমাজে খিস্টীয় যাজকতন্ত্রের আমদানি করছে, তাদের গোমরাহি তুলো ধরা সময়ের অনিবার্য দাবি। যারা তাজকিয়া ও আত্মশুদ্ধির নামে মুসলিম মন-মানসে খানকাহভিত্তিক সন্ন্যাসবাদ ও বৈরাগ্যবাদের রোগ-জীবাণু ছড়ায় এবং সমাজ ও জাতীয় জীবনে দ্বীনের চাহিদা ও দাবি থেকে মুরিদদের নজর ফিরিয়ে রাখে, তাদের ভ্রান্তি থেকে সাধারণ মুসলিমদের সর্তক করা অতীব জরুরি।
যারা দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য রাসূলুল্লাহর অনুসৃত দাওয়াহ, ইদাদ ও জিহাদের আসমানি মানহাজ বাদ দিয়ে আব্রাহাম লিংকনের শিরকি গণতন্ত্রের মানহাজ গ্রহণ করেছে এবং যুগ যুগ ধরে ভ্রান্ত পথে মুসলিমদের শক্তি ও উদ্যমের নির্মম অপচয় করছে, জিহাদের বিকৃত ব্যাখ্যা দিয়ে অবুঝ জনগণের ইমানি আবেগ নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে তাদের গোমরাহি তুলে ধরা প্রতিটি মুসলমানের দ্বীনি দায়িত্ব।
প্রিয় ভাই! আশা করি বোঝাতে পেরেছি আমাদের বক্তব্য কোনো বিশেষ ব্যক্তি বা দলের বিরুদ্ধে নয়: বরং প্রতিটি দায়ি ইলাল্লাহ, প্রতিটি দ্বীনি জামাত আর আমাদের দ্বীনের দুর্গ এই মাদরাসাগুলো এই সবকিছু দ্বীন প্রতিষ্ঠার জন্য একেকটি মৌলিক উপাদান। এসব উপাদান বাদ দিয়ে আমরা এই ভূমিতে দ্বীনের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পারব না। আমাদের সংগ্রাম কেবল ব্যক্তি, দল বা প্রতিষ্ঠানের নির্দিষ্ট গোমরাহি ও ভ্রষ্টতার বিরুদ্ধে। আমাদের এই বিরোধিতা কেবল দ্বীনি দায়িত্বের খাতিরে। যতদিন তারা এই ভ্রান্তি থেকে ফিরে না আসে আমাদের এই নাসিহাহ অব্যাহত রাখতে হবে
ভাই! আপনি কি জানেন, এই কথাগুলো আপনাকে আমরা কেন বলছি? এই কথাগুলো আমাদের এই জন্য বলতে হচ্ছে- অনেক ভাই বলে থাকেন, আমি অমুক শাইখের মাধ্যমে হেদায়াত পেয়েছি, আপনারা কেন তাদের বিরুদ্ধে বলছেন? অমুক দায়ির মাধ্যমে সহিহ আকিদার প্রচার-প্রসার হয়েছে, আপনারা কেন তার বিরুদ্ধে বলছেন? অমুক জামাতের মাধ্যমে আমি ইলম শিখেছি, আপনারা কেন তাদের পিছু লেগেছেন?
ভাই! নিঃসন্দেহে এসব দায়ি ইলাল্লাহ ও দ্বীনি জামাতগুলো আমাদের সম্পদ। তাদের সবাইকে আমরা ভালোবাসি, শ্রদ্ধা করি। কিন্তু তাদের হাত ধরে আপনি হেদায়ত পেয়েছেন বলে আপনি তাদের বিশুদ্ধ কথার পাশাপাশি তাদের গোমরাহিগুলোও গ্রহণ করবেন, এই অনুমতি আপনাকে শরিয়াহ দেয় না। তাদের কাছ থেকে আপনি সুন্নত ও বিদআতের পরিচয় পেয়েছেন বলে আপনি তাদের ভ্রান্তিগুলোকে গ্রহণ করবেন এই সুযোগ ইসলামে নেই। দ্বীন প্রচারে তাদের অবদান আছে বলে, তাদের কোনো গোমরাহির বিরোধিতা করা যাবে না, এটা কীভাবে হতে পারে?
প্রিয় ভাই! দায়ি হিসেবে আমরা নিজেরাও এই মূলনীতির অন্তর্ভুক্ত। কোনো দায়ি বা জামাতের এই নীতির বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই।
প্রিয় ভাই! কোনো বিশেষ দায়ি বা কোনো জামাতের মাঝে গোমরাহি থাকতে পারে, কিন্তু তার মানে এই নয় যে তারা কাফেরদের মতোই মুসলমানদের শত্রু। যতক্ষণ কোনো ভাই ইসলামের গণ্ডির ভেতরে থাকবে, তার যত ভ্রান্তিই থাকুক না কেন সে আমাদের বন্ধু। আমরা তাকে নাসিহাহ করেই যাব। ভ্রান্তির মাত্রার বিচারে মুসলিম ভাইদের সঙ্গে বিরোধিতারও বিভিন্ন স্তর আছে। এই বিষয়গুলো নিয়ে আমরা "মারাতিবুল ওয়ালা ওয়ালা-বারা' "শত্রুতা-মিত্রতার স্তর " শিরনামে আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ..... মুসলমানদের শত্রুকরা তাদের পরিচয় "সাবধান দ্বীনের ব্যাপারে আপনি প্রতারিত হচ্ছেন না তো?" এই শিরনামে একটি মজলিসে আমরা আলোচনা করেছি আপনাদের সেই আলোচনাটি শুনার আহ্বান করছি যাতে আপনারা শত্রু চিন্তে ভুল না করেন।
প্রিয় ভাই! যখন কোনো বিশেষ দায়ি বা বিশেষ জামাত সামগ্রিকভাবে গোমরাহিতে ভরে যায় তখন আমরা তাদের বিরুদ্ধে সরাসরি কথা বলি এবং জনগণকে তাদের ব্যাপারে সুস্পষ্টভাবে সর্তক করি। দাওয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই আমাদের নববি মানহাজ গ্রহণ করতে হবে। দাওয়াহর ব্যাপারে কোনো ধরনের লুকোচরি, তাগুত সরকারের শিরক ও কুফরের সঙ্গে কোনো ধরনের আপোস, তাওহিদের আংশিক ও খণ্ডিত চিত্রায়ন, দ্বীনের খণ্ডিত সংস্কার প্রচেষ্টা, দ্বীনের কোনো আহকামকে গোপন করা ইত্যাদির মতো গোমরাহি থেকে আমরা আল্লাহর কাছে পানাহ চাই। দোয়া করি, আল্লাহ মুসলিম ভাইদের মাঝে ভালোবাসা ও সম্প্রীতির বন্ধন তৈরি করে দিন এবং ফুরুয়ি ইখতিলাফের উর্ধ্বে উঠে কাফেরদের মোকাবিলায় ইস্পাত কঠিন প্রাচীরের মতো দাঁড়িয়ে যাওয়ার তাওফিক দিন আমীন, ইয়া রাব্বাল আলামিন।