কিতাবুল্লাহ ও হুকুমত:
পারস্পরিক সঙ্গতি ও অসঙ্গতি
রাজনৈতিক বিপর্যয় এবং মুসলমানদের ইতিহাসে এর প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে কিছু পর্যবেক্ষণ ও ভাবনা
(প্রথম খণ্ড)
-শাইখ আইমান আয-যাওয়াহিরী হাফিযাহুল্লাহ
মূল প্রকাশনায়:
আস-সাহাব মিডিয়া (উপমহাদেশ)
সফর ১৪৪৩ হিজরী মোতাবেক সেপ্টেম্বর ২০২১ ঈসায়ী
কুরআনের এই অধ্যায়ের পাঠ যে পয়েন্টগুলো আমাদের সামনে তুলে ধরেছে:
প্রথমতঃ আল্লাহর পক্ষ থেকে যত ধর্ম এসেছে, সবকটি ধর্মে আবশ্যকীয়ভাবে আল্লাহর অবতীর্ণ বিধান দ্বারা বিচার ফায়সালা করবার অবধারিত বিধান ছিল। সব ধর্মে আল্লাহর শরীয়ত অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করার বাধ্যবাধকতা ছিল। আর এ বিষয়েকেই ঈমানের সঙ্গে কুফরির, ইসলামের সঙ্গে জাহিলিয়াতের এবং শরীয়তের ও প্রবৃত্তি অনুসরণের মধ্যকার পার্থক্যরেখা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। আল্লাহ তা‘আলা তাওরাত অবতীর্ণ করেছেন, যাতে ছিল হেদায়েত ও আলো।
{আল্লাহর আজ্ঞাবহ পয়গম্বর, দরবেশ ও আলেমরা এর মাধ্যমে ইহুদীদেরকে ফয়সালা দিতেন। কেননা, তাদেরকে এ খোদায়ী গ্রন্থের দেখাশোনা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল এবং তাঁরা এর রক্ষণাবেক্ষণে নিযুক্ত ছিলেন। ...}
আর তাদের নিকট তাওরাত ছিল। যাতে আল্লাহর বিধি-বিধান লিপিবদ্ধ ছিল।
{আমি এ গ্রন্থে তাদের প্রতি লিখে দিয়েছি যে, প্রাণের বিনিময়ে প্রাণ, চক্ষুর বিনিময়ে চক্ষু, নাকের বিনিময়ে নাক, কানের বিনিময়ে কান, দাঁতের বিনিময়ে দাঁত এবং যখমসমূহের বিনিময়ে সমান যখম। ...}
ইঞ্জিল গ্রন্থ আল্লাহ তা‘আলা ঈসা ইবনে মারিয়াম আলাইহিমাস সালামের উপর অবতীর্ণ করেছেন।
{এটি পূর্ববতী গ্রন্থ তাওরাতের সত্যায়ন করে পথ প্রদর্শন করে এবং এটি খোদাভীরুদের জন্যে হেদায়েত উপদেশ বাণী। ইঞ্জিলের অধিকারীদের উচিত, আল্লাহ তাতে যা অবতীর্ণ করেছেন। তদানুযায়ী ফয়সালা করা।...}
আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র কুরআনুল কারীম তাঁর রাসূল মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর সত্য গ্রন্থ হিসাবে অবতীর্ণ করেছেন। যা পূর্ববতী গ্রন্থসমূহের সত্যায়নকারী এবং সেগুলোর বিষয়বস্তুর রক্ষণাবেক্ষণকারী।
এই গ্রন্থ অবতীর্ণ করে আল্লাহ তা‘আলা রাসূলকে বলে দিয়েছেন:
{অতএব আপনি আল্লাহর বিধান দ্বারা মানুষের মাঝে ফায়সালা করুন! আর আপনার কাছে যে হক ও সত্য এসেছে, তা থেকে বিচ্যুত হয়ে মানুষের প্রবৃত্তির অনুসরণ করবেন না।} {আর যারা আল্লাহর অবতীর্ণ বিধান দ্বারা বিচার ফায়সালা করে না তারাই কাফের।} {.... তারাই জালেম} {... তারাই পাপীষ্ঠ ফাসিক} {তারা কি জাহিলিয়াতের বিচারপন্থা কামনা করে? বিশ্বাসী সম্প্রদায়ের জন্য আল্লাহ অপেক্ষা অধিক শ্রেষ্ঠ বিচারক আর কে রয়েছে?}
এভাবেই পূর্ববর্তী সকল ধর্মে এ বিষয়টি বুনিয়াদি গুরুত্ব পেয়েছে। ঈমানের সীমারেখা ও ইসলামের শর্ত —চাই সেটা শাসিত জনগণের জন্য হোক কিংবা শাসকদের জন্য, সব ধর্মেই স্পষ্ট করে দেয়া হয়েছে। বিচারকদের জন্য সীমারেখা হল, আল্লাহ তা‘আলা যে বিধান অবতীর্ণ করেছেন, তা দিয়ে বিচার ফায়সালা করা। আর শাসিত জনগণের জন্য সীমারেখা হল, শরীয়ত অনুযায়ী পরিচালিত বিচার ফায়সালা মেনে নেয়া এবং অন্য কোন শরীয়ত, বিচার পন্থা ও বিধি-বিধান কামনা না করা।
এই প্রসঙ্গটি খুবই স্পর্শকাতর। আর এভাবে এই আঙ্গিকে উক্ত মাসআলার ব্যাপারে এমন কিছু কারণে কঠোরতা করা হয়, যেগুলো একইভাবে ভয়াবহ ও স্পর্শকাতর। পাঠকবর্গ কি জানতে চান কি সেসব কারণ? এতক্ষণ পর্যন্ত উল্লেখিত কুরানিক প্রমাণপঞ্জীতে কিংবা এ বিষয়ে কুরআনের যত বর্ণনা রয়েছে সবগুলোর আলোকে আমরা সুস্পষ্টভাবে তা তুলে ধরতে চেষ্টা করব।
এ প্রসঙ্গে সর্বোচ্চ ও প্রধান শিক্ষা:
তা হলো, আল্লাহর উলুহিয়াত, রুবুবিয়াত এবং মানুষের ওপর তাঁর সর্বময় কর্তৃত্বের স্বীকারোক্তি কিংবা অস্বীকার। আর এখান থেকেই বিষয়টা হয় ঈমানের নয়তো কুফরের; হয় জাহিলিয়াতের নয়তো ইসলামের।
কুরআনের সর্বত্র এ বাস্তবতার উল্লেখ এসেছে।
• আল্লাহ তা'আলাই একমাত্র স্রষ্টা। তিনিই বিশ্বব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টি করেছেন। তিনি মানব জাতিকে সৃষ্টি করেছেন। মানবজাতির জন্য আসমান ও যমীনে যা কিছু রয়েছে, সবকিছু নিযুক্ত করে দিয়েছেন। আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তা‘আলা একাই সবকিছু সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টির কমবেশি কোন অংশে তাঁর কোন শরীক নেই।
• এমনিভাবে আল্লাহ তা‘আলা একমাত্র মালিক, যেহেতু সৃষ্টিকর্তা তিনিই। তিনি আসমান জমিন এবং এতদুভয়ের মাঝে যা কিছু রয়েছে সব কিছুর মালিক। অতএব, এককভাবে তিনি এসবের স্বত্বাধিকারী। তার কমবেশি কোন অংশে অন্য কারো অংশীদারিত্ব নেই।
• এমনিভাবে আল্লাহ তা‘আলাই একমাত্র রিজিকদাতা। তিনি ব্যতীত অন্য কেউ নিজের কিংবা অন্যদের রিজিকের ব্যবস্থা করতে সক্ষম নয়। অল্প হোক বেশি হোক তাঁর ইচ্ছা ছাড়া কিছুমাত্র ব্যবস্থা করতেও বান্দারা সক্ষম নয়।
• একমাত্র আল্লাহ তা‘আলাই সর্বময় কর্তৃত্বাধিকারী। জগতকে এবং মানব সম্প্রদায়কে তিনি যেভাবে ইচ্ছা পরিচালনা করবেন। কারণ তিনি সৃষ্টিকর্তা, মালিক এবং রিজিকদাতা। একমাত্র তিনিই সেই একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী, যা না থাকলে কেউ সৃষ্টি করতে পারে না, রিজিক দিতে পারে না এবং কোন উপকার বা ক্ষতি করতে পারে না। এতসব ক্ষমতা ও অবদানের দাবি এটাই যে, তিনি যেভাবে ইচ্ছা আমাদেরকে পরিচালনা করবেন। এই কর্তৃত্ব-ক্ষমতার ক্ষেত্রে আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তা'আলার সঙ্গে অন্য কোন অংশীদার নেই।
আল্লাহর এই বৈশিষ্ট্যগুলো তথা আল্লাহর উলুহিয়াত, সর্বময় মালিকানা ও কর্তৃত্ব মেনে নেয়া ঈমানেরই অংশ। এই বৈশিষ্ট্যগুলো স্বীকার করে নেয়ার পাশাপাশি এটাও নিশ্চিত করতে হবে যে, এগুলোতে আল্লাহর সঙ্গে অন্য কারো অংশীদারিত্ব নেই।
আর এই সমস্ত বৈশিষ্ট্যের দাবি অনুযায়ী আল্লাহর বিধি-বিধান পালন করা, তাঁর আনুগত্য করা এবং তাঁর সম্মুখে আত্মসমর্পণ করার নামই হলো ইসলাম। আবারো বলছি, আল্লাহর বৈশিষ্ট্যগুলো হলো: তার উলুহিয়্যাত, রুবুবিয়াত এবং সৃষ্টিকূল—যার মাঝে মানুষের জীবনযাপন ও জীবনব্যবস্থা শামিল—সবকিছুর উপর তাঁর একচ্ছত্র কর্তৃত্ব ও অধিকার। তাঁর একক সেই রাজত্ব ও শক্তিমত্তা স্বীকার করে নেওয়া; যা প্রতিফলিত হবে যেমনিভাবে মর্যাদার আয়নায়, তেমনিভাবে শরীয়ত প্রণয়নের অধিকারের আয়নায়।
অতএব, আল্লাহর শরীয়তের সামনে আত্মসমর্পণের অর্থ হলো, সবকিছুর আগে আল্লাহর উলুহিয়াত, রুবুবিয়াত, তাঁর কর্তৃত্ব ও রাজত্বাধিকার স্বীকার করে নেয়া। আর এ শরীয়তের সামনে আত্মসমর্পণ না করা এবং জীবনের যেকোনো অধ্যায়ে অন্য কোন শরীয়ত গ্রহণের অর্থ হল, সবকিছুর আগে আল্লাহর উলুহিয়্যাত, রুবুবিয়াত এবং তাঁর ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব মেনে নিতে অস্বীকার করা। এখন এই আত্মসমর্পণ কিংবা প্রত্যাখ্যান কথার মাধ্যমে হোক কিংবা শুধু কাজের মাধ্যমে হোক তাতে কিছু আসে যায় না। সবকটার বিধান সমান হবে। এ কারণেই এটা কুফরি বা ঈমান এবং জাহিলিয়াত বা ইসলামের বিষয়। এই বিষয়টা বোঝাতে গিয়েই দ্ব্যর্থহীনভাবে কুরআনে এসেছে— {আর যারা আল্লাহর নাযিলকৃত বিধান দিয়ে বিচার ফায়সালা করে না, তারাই কাফের... তারাই জালিম... তারাই পাপাচারী ও পাপীষ্ঠ}
এ প্রসঙ্গে দ্বিতীয় শিক্ষা:
তা হলো,মানুষ কর্তৃক প্রণীত এবং মানব রচিত সবরকম সংবিধান ও আইন-কানুন অপেক্ষা অকাট্য ও নিশ্চিতভাবে আল্লাহর শরীয়তের শ্রেষ্ঠত্বের ধারণা। আয়াতের শেষ অংশটি এদিকেই ইশারা করেছে— {বিশ্বাসী সম্প্রদায়ের জন্য আল্লাহ অপেক্ষা অধিক উত্তম ফয়সালাকারী আর কে রয়েছে?}
সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতিটি স্তরে ও সর্বাবস্থায় আল্লাহর শরীয়তের শ্রেষ্ঠত্বের এই নিরঙ্কুশ স্বীকারোক্তি কুফরি ও ঈমানের আলোচ্য প্রসঙ্গের অন্তর্ভুক্ত। কোন মানুষের পক্ষে এই দাবি করার অধিকার নেই যে, কোন কোন অবস্থায় এবং মানব সমাজের কোন কোন স্তরে মানব রচিত শরীয়ত আল্লাহর শরীয়তের চেয়ে অধিক শ্রেষ্ঠ কিংবা তার বরাবর হতে পারে। এমন দাবি কেউ করে থাকবে, আবার সেই সঙ্গে নিজেকে ঈমানদার ও মুসলমানদের অন্তর্ভুক্ত বলে দাবি করবে, তা কখনোই হতে পারে না। ..............................
(চলবে, ইন শা আল্লাহ)
পারস্পরিক সঙ্গতি ও অসঙ্গতি
রাজনৈতিক বিপর্যয় এবং মুসলমানদের ইতিহাসে এর প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে কিছু পর্যবেক্ষণ ও ভাবনা
(প্রথম খণ্ড)
-শাইখ আইমান আয-যাওয়াহিরী হাফিযাহুল্লাহ
মূল প্রকাশনায়:
আস-সাহাব মিডিয়া (উপমহাদেশ)
সফর ১৪৪৩ হিজরী মোতাবেক সেপ্টেম্বর ২০২১ ঈসায়ী
কুরআনের এই অধ্যায়ের পাঠ যে পয়েন্টগুলো আমাদের সামনে তুলে ধরেছে:
প্রথমতঃ আল্লাহর পক্ষ থেকে যত ধর্ম এসেছে, সবকটি ধর্মে আবশ্যকীয়ভাবে আল্লাহর অবতীর্ণ বিধান দ্বারা বিচার ফায়সালা করবার অবধারিত বিধান ছিল। সব ধর্মে আল্লাহর শরীয়ত অনুযায়ী জীবন পরিচালনা করার বাধ্যবাধকতা ছিল। আর এ বিষয়েকেই ঈমানের সঙ্গে কুফরির, ইসলামের সঙ্গে জাহিলিয়াতের এবং শরীয়তের ও প্রবৃত্তি অনুসরণের মধ্যকার পার্থক্যরেখা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছিল। আল্লাহ তা‘আলা তাওরাত অবতীর্ণ করেছেন, যাতে ছিল হেদায়েত ও আলো।
{আল্লাহর আজ্ঞাবহ পয়গম্বর, দরবেশ ও আলেমরা এর মাধ্যমে ইহুদীদেরকে ফয়সালা দিতেন। কেননা, তাদেরকে এ খোদায়ী গ্রন্থের দেখাশোনা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল এবং তাঁরা এর রক্ষণাবেক্ষণে নিযুক্ত ছিলেন। ...}
আর তাদের নিকট তাওরাত ছিল। যাতে আল্লাহর বিধি-বিধান লিপিবদ্ধ ছিল।
{আমি এ গ্রন্থে তাদের প্রতি লিখে দিয়েছি যে, প্রাণের বিনিময়ে প্রাণ, চক্ষুর বিনিময়ে চক্ষু, নাকের বিনিময়ে নাক, কানের বিনিময়ে কান, দাঁতের বিনিময়ে দাঁত এবং যখমসমূহের বিনিময়ে সমান যখম। ...}
ইঞ্জিল গ্রন্থ আল্লাহ তা‘আলা ঈসা ইবনে মারিয়াম আলাইহিমাস সালামের উপর অবতীর্ণ করেছেন।
{এটি পূর্ববতী গ্রন্থ তাওরাতের সত্যায়ন করে পথ প্রদর্শন করে এবং এটি খোদাভীরুদের জন্যে হেদায়েত উপদেশ বাণী। ইঞ্জিলের অধিকারীদের উচিত, আল্লাহ তাতে যা অবতীর্ণ করেছেন। তদানুযায়ী ফয়সালা করা।...}
আল্লাহ তা‘আলা পবিত্র কুরআনুল কারীম তাঁর রাসূল মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উপর সত্য গ্রন্থ হিসাবে অবতীর্ণ করেছেন। যা পূর্ববতী গ্রন্থসমূহের সত্যায়নকারী এবং সেগুলোর বিষয়বস্তুর রক্ষণাবেক্ষণকারী।
এই গ্রন্থ অবতীর্ণ করে আল্লাহ তা‘আলা রাসূলকে বলে দিয়েছেন:
{অতএব আপনি আল্লাহর বিধান দ্বারা মানুষের মাঝে ফায়সালা করুন! আর আপনার কাছে যে হক ও সত্য এসেছে, তা থেকে বিচ্যুত হয়ে মানুষের প্রবৃত্তির অনুসরণ করবেন না।} {আর যারা আল্লাহর অবতীর্ণ বিধান দ্বারা বিচার ফায়সালা করে না তারাই কাফের।} {.... তারাই জালেম} {... তারাই পাপীষ্ঠ ফাসিক} {তারা কি জাহিলিয়াতের বিচারপন্থা কামনা করে? বিশ্বাসী সম্প্রদায়ের জন্য আল্লাহ অপেক্ষা অধিক শ্রেষ্ঠ বিচারক আর কে রয়েছে?}
এভাবেই পূর্ববর্তী সকল ধর্মে এ বিষয়টি বুনিয়াদি গুরুত্ব পেয়েছে। ঈমানের সীমারেখা ও ইসলামের শর্ত —চাই সেটা শাসিত জনগণের জন্য হোক কিংবা শাসকদের জন্য, সব ধর্মেই স্পষ্ট করে দেয়া হয়েছে। বিচারকদের জন্য সীমারেখা হল, আল্লাহ তা‘আলা যে বিধান অবতীর্ণ করেছেন, তা দিয়ে বিচার ফায়সালা করা। আর শাসিত জনগণের জন্য সীমারেখা হল, শরীয়ত অনুযায়ী পরিচালিত বিচার ফায়সালা মেনে নেয়া এবং অন্য কোন শরীয়ত, বিচার পন্থা ও বিধি-বিধান কামনা না করা।
এই প্রসঙ্গটি খুবই স্পর্শকাতর। আর এভাবে এই আঙ্গিকে উক্ত মাসআলার ব্যাপারে এমন কিছু কারণে কঠোরতা করা হয়, যেগুলো একইভাবে ভয়াবহ ও স্পর্শকাতর। পাঠকবর্গ কি জানতে চান কি সেসব কারণ? এতক্ষণ পর্যন্ত উল্লেখিত কুরানিক প্রমাণপঞ্জীতে কিংবা এ বিষয়ে কুরআনের যত বর্ণনা রয়েছে সবগুলোর আলোকে আমরা সুস্পষ্টভাবে তা তুলে ধরতে চেষ্টা করব।
এ প্রসঙ্গে সর্বোচ্চ ও প্রধান শিক্ষা:
তা হলো, আল্লাহর উলুহিয়াত, রুবুবিয়াত এবং মানুষের ওপর তাঁর সর্বময় কর্তৃত্বের স্বীকারোক্তি কিংবা অস্বীকার। আর এখান থেকেই বিষয়টা হয় ঈমানের নয়তো কুফরের; হয় জাহিলিয়াতের নয়তো ইসলামের।
কুরআনের সর্বত্র এ বাস্তবতার উল্লেখ এসেছে।
• আল্লাহ তা'আলাই একমাত্র স্রষ্টা। তিনিই বিশ্বব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টি করেছেন। তিনি মানব জাতিকে সৃষ্টি করেছেন। মানবজাতির জন্য আসমান ও যমীনে যা কিছু রয়েছে, সবকিছু নিযুক্ত করে দিয়েছেন। আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তা‘আলা একাই সবকিছু সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টির কমবেশি কোন অংশে তাঁর কোন শরীক নেই।
• এমনিভাবে আল্লাহ তা‘আলা একমাত্র মালিক, যেহেতু সৃষ্টিকর্তা তিনিই। তিনি আসমান জমিন এবং এতদুভয়ের মাঝে যা কিছু রয়েছে সব কিছুর মালিক। অতএব, এককভাবে তিনি এসবের স্বত্বাধিকারী। তার কমবেশি কোন অংশে অন্য কারো অংশীদারিত্ব নেই।
• এমনিভাবে আল্লাহ তা‘আলাই একমাত্র রিজিকদাতা। তিনি ব্যতীত অন্য কেউ নিজের কিংবা অন্যদের রিজিকের ব্যবস্থা করতে সক্ষম নয়। অল্প হোক বেশি হোক তাঁর ইচ্ছা ছাড়া কিছুমাত্র ব্যবস্থা করতেও বান্দারা সক্ষম নয়।
• একমাত্র আল্লাহ তা‘আলাই সর্বময় কর্তৃত্বাধিকারী। জগতকে এবং মানব সম্প্রদায়কে তিনি যেভাবে ইচ্ছা পরিচালনা করবেন। কারণ তিনি সৃষ্টিকর্তা, মালিক এবং রিজিকদাতা। একমাত্র তিনিই সেই একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী, যা না থাকলে কেউ সৃষ্টি করতে পারে না, রিজিক দিতে পারে না এবং কোন উপকার বা ক্ষতি করতে পারে না। এতসব ক্ষমতা ও অবদানের দাবি এটাই যে, তিনি যেভাবে ইচ্ছা আমাদেরকে পরিচালনা করবেন। এই কর্তৃত্ব-ক্ষমতার ক্ষেত্রে আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তা'আলার সঙ্গে অন্য কোন অংশীদার নেই।
আল্লাহর এই বৈশিষ্ট্যগুলো তথা আল্লাহর উলুহিয়াত, সর্বময় মালিকানা ও কর্তৃত্ব মেনে নেয়া ঈমানেরই অংশ। এই বৈশিষ্ট্যগুলো স্বীকার করে নেয়ার পাশাপাশি এটাও নিশ্চিত করতে হবে যে, এগুলোতে আল্লাহর সঙ্গে অন্য কারো অংশীদারিত্ব নেই।
আর এই সমস্ত বৈশিষ্ট্যের দাবি অনুযায়ী আল্লাহর বিধি-বিধান পালন করা, তাঁর আনুগত্য করা এবং তাঁর সম্মুখে আত্মসমর্পণ করার নামই হলো ইসলাম। আবারো বলছি, আল্লাহর বৈশিষ্ট্যগুলো হলো: তার উলুহিয়্যাত, রুবুবিয়াত এবং সৃষ্টিকূল—যার মাঝে মানুষের জীবনযাপন ও জীবনব্যবস্থা শামিল—সবকিছুর উপর তাঁর একচ্ছত্র কর্তৃত্ব ও অধিকার। তাঁর একক সেই রাজত্ব ও শক্তিমত্তা স্বীকার করে নেওয়া; যা প্রতিফলিত হবে যেমনিভাবে মর্যাদার আয়নায়, তেমনিভাবে শরীয়ত প্রণয়নের অধিকারের আয়নায়।
অতএব, আল্লাহর শরীয়তের সামনে আত্মসমর্পণের অর্থ হলো, সবকিছুর আগে আল্লাহর উলুহিয়াত, রুবুবিয়াত, তাঁর কর্তৃত্ব ও রাজত্বাধিকার স্বীকার করে নেয়া। আর এ শরীয়তের সামনে আত্মসমর্পণ না করা এবং জীবনের যেকোনো অধ্যায়ে অন্য কোন শরীয়ত গ্রহণের অর্থ হল, সবকিছুর আগে আল্লাহর উলুহিয়্যাত, রুবুবিয়াত এবং তাঁর ক্ষমতা ও কর্তৃত্ব মেনে নিতে অস্বীকার করা। এখন এই আত্মসমর্পণ কিংবা প্রত্যাখ্যান কথার মাধ্যমে হোক কিংবা শুধু কাজের মাধ্যমে হোক তাতে কিছু আসে যায় না। সবকটার বিধান সমান হবে। এ কারণেই এটা কুফরি বা ঈমান এবং জাহিলিয়াত বা ইসলামের বিষয়। এই বিষয়টা বোঝাতে গিয়েই দ্ব্যর্থহীনভাবে কুরআনে এসেছে— {আর যারা আল্লাহর নাযিলকৃত বিধান দিয়ে বিচার ফায়সালা করে না, তারাই কাফের... তারাই জালিম... তারাই পাপাচারী ও পাপীষ্ঠ}
এ প্রসঙ্গে দ্বিতীয় শিক্ষা:
তা হলো,মানুষ কর্তৃক প্রণীত এবং মানব রচিত সবরকম সংবিধান ও আইন-কানুন অপেক্ষা অকাট্য ও নিশ্চিতভাবে আল্লাহর শরীয়তের শ্রেষ্ঠত্বের ধারণা। আয়াতের শেষ অংশটি এদিকেই ইশারা করেছে— {বিশ্বাসী সম্প্রদায়ের জন্য আল্লাহ অপেক্ষা অধিক উত্তম ফয়সালাকারী আর কে রয়েছে?}
সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতিটি স্তরে ও সর্বাবস্থায় আল্লাহর শরীয়তের শ্রেষ্ঠত্বের এই নিরঙ্কুশ স্বীকারোক্তি কুফরি ও ঈমানের আলোচ্য প্রসঙ্গের অন্তর্ভুক্ত। কোন মানুষের পক্ষে এই দাবি করার অধিকার নেই যে, কোন কোন অবস্থায় এবং মানব সমাজের কোন কোন স্তরে মানব রচিত শরীয়ত আল্লাহর শরীয়তের চেয়ে অধিক শ্রেষ্ঠ কিংবা তার বরাবর হতে পারে। এমন দাবি কেউ করে থাকবে, আবার সেই সঙ্গে নিজেকে ঈমানদার ও মুসলমানদের অন্তর্ভুক্ত বলে দাবি করবে, তা কখনোই হতে পারে না।
আল্লাহর শরীয়তে রয়েছে মানব জীবনের পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। মানব জীবনের যত অধ্যায়, যত রকম অবস্থা, যত দিক ও সম্ভাবনা রয়েছে, সবগুলোর পরিচালনা, সংগঠন, শৃঙ্খলা দান এবং এগুলোর মধ্য দিয়ে উন্নয়ন অগ্ৰগতি নিশ্চিতের সামগ্রিক ফর্মুলা রয়েছে আল্লাহর শরীয়তের এই মানহাজে।
মানব সভ্যতার প্রকৃতি, মানবিক প্রয়োজন ও নানা সমস্যা-জটিলতা, মানুষের পারিপার্শ্বিকতা ও জীবন ঘনিষ্ঠ নানা পরিস্থিতি, মানব সমাজ পরিচালনার নীতিমালা এবং সেগুলোর তাৎপর্য, সব কিছুর ব্যাপারে চূড়ান্ত জ্ঞান ও ঐশী প্রজ্ঞার উপর প্রতিষ্ঠিত শরীয়তের এই মানহাজ। এ কারণেই জীবনঘনিষ্ঠ কোন সমস্যার সমাধানে ইসলাম প্রান্তিকতার শিকার হয়নি। মানব সভ্যতাকে ইসলাম যেই নীতিমালা দিয়েছে, সেগুলো কখনোই মানবিক স্বভাবজাত বিচিত্র প্রবণতা এবং আদিম নানা চরিত্র—কোনটার সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয়। সব কিছুর মাঝেই রয়েছে এক আশ্চর্য অলৌকিক শৃঙ্খলা, ভারসাম্য, পরিমিতি ও পরিমার্জনের ছোঁয়া। মানবিক মস্তিষ্ক ও বিবেচনাবোধ যা বাহ্যিক অবস্থার বাইরে খুব একটা কিছু সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে না, তার সঙ্গে আল্লাহর শরীয়তের মানহাজ কখনোই তুলনীয় হতে পারে না। মানুষ তো কেবল বাহ্যিক অবস্থা দেখতে পায় কিংবা বিশেষ সময়ে কোন বিধানের অন্তর্নিহিত সত্য প্রস্ফুটিত হয়ে গেলে তখন সেটা অনুধাবন করতে পারে। অন্যথায় অজ্ঞতার বহু ছাপ রেখে মানুষ যে মানহাজ প্রবর্তন করে, তা দেখা যায় মানুষেরই বিভিন্ন আদিম স্বভাব ও চরিত্রের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয়ে পড়ে আর সেই সাংঘর্ষিকতার নানা কুফল মানবসমাজকে আক্রান্ত করে।
আল্লাহর শরীয়তের মানহাজ হল নিরঙ্কুশ ইনসাফের উপর প্রতিষ্ঠিত। এর প্রথম কারণ হলো, আল্লাহ যথার্থরূপে জানেন, কোন পন্থায়, কোন পদ্ধতিতে এবং কোন পথে ইনসাফ ও ন্যায়নিষ্ঠা প্রতিষ্ঠিত হবে? দ্বিতীয়তঃ আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তা'আলা সকলের সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা। এ কারণে ইনসাফের নীতিমালা প্রবর্তনের অধিকার একমাত্র তাঁর। তাঁর মানহাজ ও শরীয়ত যেকোন প্রকার খামখেয়ালীপনা, প্রবৃত্তি ও দুর্বলতা থেকে পবিত্র। যেমনিভাবে তিনি নিজে প্রান্তিকতা, অজ্ঞতা ও ত্রুটি-বিচ্যুতি থেকে পবিত্র। মানব রচিত কোন নীতিমালা, রীতি সমষ্টি অথবা শরীয়ত ও মানহাজে এতগুলো বিষয়ের সম্মিলন সম্ভব নয়। কারণ মানুষের রয়েছে খেয়ালখুশি, প্রবৃত্তি, বিভিন্ন চাহিদা-আকাঙ্ক্ষা। মানুষ নানা ত্রুটি-বিচ্যুতি, দুর্বলতা ও প্রবৃত্তির চাহিদার সঙ্গে বসবাস করে। সে সঙ্গে মানুষের জ্ঞান পরিধি সীমিত। অজ্ঞতার বিরাট অংশ মানুষের মাঝে। এখন এতে কিছু যায় আসে না যে, কোন একটা সংবিধান, কোন নীতিমালা বা শরীয়ত রচনাকারী এককভাবে কোনো এক ব্যক্তি নাকি বিরাট একটা শ্রেণি, বিরাট জনগোষ্ঠী, বিশিষ্ট জ্ঞানী-গুণীদের কোন বোর্ড কিংবা গোটা একটা প্রজন্ম? যেকোনো অবস্থায় মানবিক দুর্বলতার উপস্থিতি থাকবেই।
..............................মানব সভ্যতার প্রকৃতি, মানবিক প্রয়োজন ও নানা সমস্যা-জটিলতা, মানুষের পারিপার্শ্বিকতা ও জীবন ঘনিষ্ঠ নানা পরিস্থিতি, মানব সমাজ পরিচালনার নীতিমালা এবং সেগুলোর তাৎপর্য, সব কিছুর ব্যাপারে চূড়ান্ত জ্ঞান ও ঐশী প্রজ্ঞার উপর প্রতিষ্ঠিত শরীয়তের এই মানহাজ। এ কারণেই জীবনঘনিষ্ঠ কোন সমস্যার সমাধানে ইসলাম প্রান্তিকতার শিকার হয়নি। মানব সভ্যতাকে ইসলাম যেই নীতিমালা দিয়েছে, সেগুলো কখনোই মানবিক স্বভাবজাত বিচিত্র প্রবণতা এবং আদিম নানা চরিত্র—কোনটার সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয়। সব কিছুর মাঝেই রয়েছে এক আশ্চর্য অলৌকিক শৃঙ্খলা, ভারসাম্য, পরিমিতি ও পরিমার্জনের ছোঁয়া। মানবিক মস্তিষ্ক ও বিবেচনাবোধ যা বাহ্যিক অবস্থার বাইরে খুব একটা কিছু সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারে না, তার সঙ্গে আল্লাহর শরীয়তের মানহাজ কখনোই তুলনীয় হতে পারে না। মানুষ তো কেবল বাহ্যিক অবস্থা দেখতে পায় কিংবা বিশেষ সময়ে কোন বিধানের অন্তর্নিহিত সত্য প্রস্ফুটিত হয়ে গেলে তখন সেটা অনুধাবন করতে পারে। অন্যথায় অজ্ঞতার বহু ছাপ রেখে মানুষ যে মানহাজ প্রবর্তন করে, তা দেখা যায় মানুষেরই বিভিন্ন আদিম স্বভাব ও চরিত্রের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয়ে পড়ে আর সেই সাংঘর্ষিকতার নানা কুফল মানবসমাজকে আক্রান্ত করে।
আল্লাহর শরীয়তের মানহাজ হল নিরঙ্কুশ ইনসাফের উপর প্রতিষ্ঠিত। এর প্রথম কারণ হলো, আল্লাহ যথার্থরূপে জানেন, কোন পন্থায়, কোন পদ্ধতিতে এবং কোন পথে ইনসাফ ও ন্যায়নিষ্ঠা প্রতিষ্ঠিত হবে? দ্বিতীয়তঃ আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তা'আলা সকলের সৃষ্টিকর্তা, পালনকর্তা। এ কারণে ইনসাফের নীতিমালা প্রবর্তনের অধিকার একমাত্র তাঁর। তাঁর মানহাজ ও শরীয়ত যেকোন প্রকার খামখেয়ালীপনা, প্রবৃত্তি ও দুর্বলতা থেকে পবিত্র। যেমনিভাবে তিনি নিজে প্রান্তিকতা, অজ্ঞতা ও ত্রুটি-বিচ্যুতি থেকে পবিত্র। মানব রচিত কোন নীতিমালা, রীতি সমষ্টি অথবা শরীয়ত ও মানহাজে এতগুলো বিষয়ের সম্মিলন সম্ভব নয়। কারণ মানুষের রয়েছে খেয়ালখুশি, প্রবৃত্তি, বিভিন্ন চাহিদা-আকাঙ্ক্ষা। মানুষ নানা ত্রুটি-বিচ্যুতি, দুর্বলতা ও প্রবৃত্তির চাহিদার সঙ্গে বসবাস করে। সে সঙ্গে মানুষের জ্ঞান পরিধি সীমিত। অজ্ঞতার বিরাট অংশ মানুষের মাঝে। এখন এতে কিছু যায় আসে না যে, কোন একটা সংবিধান, কোন নীতিমালা বা শরীয়ত রচনাকারী এককভাবে কোনো এক ব্যক্তি নাকি বিরাট একটা শ্রেণি, বিরাট জনগোষ্ঠী, বিশিষ্ট জ্ঞানী-গুণীদের কোন বোর্ড কিংবা গোটা একটা প্রজন্ম? যেকোনো অবস্থায় মানবিক দুর্বলতার উপস্থিতি থাকবেই।
আল্লাহর শরীয়ত ও মানহাজ গোটা বিশ্ব ব্রহ্মান্ডের নিয়ম-নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। কারণ এই শরীয়ত রচনাকারী মহাজগতের সৃষ্টিকর্তা। তিনি মানব সম্প্রদায়কে যেভাবে সৃষ্টি করেছেন, সেভাবেই অন্যান্য সৃষ্টিজগতকে সৃষ্টি করেছেন।
..............................অতঃপর এই শরীয়ত সম্পর্কে আরো বলতে গেলে... এটি এমন একটি একক মানহাজ, যা মেনে চললে মানব দাসত্ব থেকে মানব সমাজ মুক্তি পেতে পারে। ইসলামী মানহাজ ব্যতীত অন্য সকল মানহাজে মানব সম্প্রদায় স্বজাতি মানবগোষ্ঠীর অন্য একটি শ্রেণীর দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ। সেসব শরীয়তে মানুষ মানুষের এবাদত ও দাসত্ব করে। একমাত্র ইসলামী শরীয়তে মানুষকে আল্লাহর বান্দাদের দাসত্ব থেকে মুক্ত করে সরাসরি আল্লাহর দাসত্বে নিয়োজিত করা হয়। এক্ষেত্রে আল্লাহর সঙ্গে অন্য কারো অংশীদারিত্ব থাকে না।
আমরা আগেও বলেছি, উলুহিয়াতের অতি বিশেষ ও তাৎপর্যপূর্ণ অংশ হচ্ছে হাকিমিয়া। এখন মানব সম্প্রদায়ের কোন শ্রেণী যদি অন্যান্য মানুষের জন্য স্বতন্ত্ররূপে আইন প্রণয়ন করে, তখন এই বিশেষ শ্রেণীটি ওই মানুষগুলোর উপাস্যের আসন গ্রহণ করেছে বলে বিবেচিত হয়। উপাস্য হবার যত বৈশিষ্ট্য, সবগুলোই ঐ বিশেষ শ্রেণীটি নিজেদের জন্য সাব্যস্ত করে নেয়। এ অবস্থায় অন্যান্য মানুষ এই শ্রেণীর দাস বলে সাব্যস্ত হয়। আল্লাহর দাসত্বের বিপরীতে তারা যেন একশ্রেণীর মানুষের দাসত্ব গ্রহণ করে নেয়। আল্লাহর দ্বীনের বদলে তারা যেন এক শ্রেণীর মানুষের দ্বীন ও ধর্মে দীক্ষিত হয়ে যায়।
আর ইসলাম যেহেতু একমাত্র আল্লাহর শরীয়তকে পালনীয় বলে সাব্যস্ত করে, এ কারণে ইসলামে আল্লাহর মুষ্টিমেয় বান্দাদের দাসত্ব থেকে আল্লাহর সকল বান্দাকে মুক্ত করা হয়। মানব দাসত্বের শৃঙ্খল ছিন্ন করে আল্লাহর দাসত্বের মালা পরিয়ে দেয়া হয়। ইসলাম মানব সভ্যতার মুক্তির ঘোষণা। এই ঘোষণা মানব দাসত্ব থেকে মুক্তির ঘোষণা। শুধু তাই নয়, ইসলাম মানব সম্প্রদায়কে দাসত্ব থেকে মুক্তি দিয়ে যেন নতুন জন্ম উপহার দেয়। ইসলামের ছোঁয়ায় মানুষ নবজীবন লাভ করে। কারণ স্বজাতির দাসত্ব থেকে মুক্তি না পেলে মানুষের জীবনের কোন মূল্য থাকে না। মানুষ তখন মৃতপ্রায় থাকে। এই জীবনের সার্থকতা তখনই সাধিত হয়, যখন মানুষের স্রষ্টার সামনে সকল মানুষ সমান কাতারে দণ্ডায়মান হতে পারে।
কুরআনের উক্ত আয়াতগুলোতে যে শিক্ষা আমাদের জন্য রয়েছে, যে প্রসঙ্গটি আমাদের জন্য উত্থাপন করা হয়েছে, সেটি আকীদার সর্ববৃহৎ ও সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। এটি স্রষ্টা ও সৃষ্টির অধিকার বিভাজনের প্রশ্ন। উপাস্য ও উপাসক নির্ধারণের প্রশ্ন। এটি ন্যায়নিষ্ঠা ও মানব জীবনের লক্ষ্য নিরূপণের প্রশ্ন। এটি স্বাধীনতা ও সাম্যের প্রশ্ন। এটি মানবসমাজের মুক্তির প্রশ্ন। এটি মানব জীবনের সার্থকতার প্রশ্ন। আর এইসব কারণেই এটি কুফরি ও ঈমান এবং জাহিলিয়াত ও ইসলামের প্রশ্ন।
জাহিলিয়াত শুধু ইতিহাসের বিশেষ একটা সময়ের নাম নয়। যে কোনো ব্যবস্থা এবং যে কোন যুগে জাহিলিয়াতের উপাদান অস্তিত্ব লাভ করতে পারে। জাহিলিয়াতেরমূলকথা হলো, আল্লাহর মানহাজ ও জীবন বান্ধব শরীয়ত ছেড়ে প্রবৃত্তি ও খেয়াল-খুশিমতো জীবন পরিচালনার জন্য আইন-কানুন রচনা করা। এখন এই প্রবৃত্তি ও খেয়াল-খুশি এক ব্যক্তির হতে পারে, কোন জনগোষ্ঠীর হতে পারে, বিশিষ্ট জ্ঞানী-গুণী মহলের হতে পারে, আবার গোটা একটা প্রজন্মেরও হতে পারে। যত কিছুই হোক না কেন যতক্ষণ পর্যন্ত মূলভিত্তি আল্লাহর শরীয়ত না হবে, সবকিছুই জাহিলিয়াত বলে গণ্য হবে।
দেখা গেল এক ব্যক্তি কোন একটি জামাতের জন্য আইন প্রণয়ন করে। এখন এটাই জাহিলিয়াত। কারণ রচনাকারী ব্যক্তি নিজের খেয়াল-খুশি মতই আইন প্রণয়ন করেছে। তার ইচ্ছেটাই এখানে বিধি। এখন উপস্থাপনা শৈলীতে যত পার্থক্য থাকুক তাতে কিছু আসে যায় না!
এমনিভাবে একটা বিশেষ শ্রেণী অপর শ্রেণীগুলোর জন্য আইন রচনা করে। এটাই জাহিলিয়াত। কারণ রচনাকারী শ্রেণীর (কিংবা তাদের অধিকাংশের তথা পার্লামেন্টের অধিকাংশ সদস্যের) খেয়াল-খুশি ও স্বার্থ-চিন্তাটাই এখানে মুখ্য। এটাই নিয়ম, এটাই বিধি। এখন যেভাবে বলা হোক না কেন তাতে কিছু আসে যায় না!
এমনিভাবে বিভিন্ন অঞ্চলের জ্ঞানী-গুণী মহলের ভেতর থেকে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা অন্য সকলের জন্য আইন রচনা করে। অতএব এটাই জাহিলিয়াত। কারণ প্রবৃত্তির তাড়া খেয়ে ছুটে বেড়ানো মানুষ এবং অজ্ঞতার অন্ধকার থেকে কখনো মুক্ত না হতে পারা মানুষ যেটা চাইছে সেটাই আইন হয়ে যাচ্ছে। কিংবা জনমানুষের অধিকাংশ যেটা চাইছে সেটাই বৈধতা পেয়ে যাচ্ছে, সেটাই বিধি হয়ে দাঁড়াচ্ছে। অতএব, যেভাবেই বলা হোক না কেন এগুলো সবই জাহিলিয়াত।
এমনিভাবে বড় বড় জাতিগোষ্ঠীগুলো অন্যান্য জাতির জন্য নিয়ম নীতি প্রণয়ন করছে। তাই এটা জাহিলিয়াত। কারণ অনুসৃত জাতিগুলোর জাতীয় স্বার্থ ও ইচ্ছা-আকাঙ্ক্ষাই অন্য জাতিগোষ্ঠীর জন্য অবশ্যপালনীয় বিধান। জাতিসংঘের রায় ও অভিমতটাই একমাত্র মুখ্য। তাই বলার ক্ষেত্রে পার্থক্যে কিছু আসে যায় না।
এদিকে সকল ব্যক্তি, সর্বমহল এবং সকল জাতিগোষ্ঠী, এক কথায় বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডে যা কিছু রয়েছে, সবকিছুর স্রষ্টা আইন প্রণয়ন করেছেন। এটিই হচ্ছে আল্লাহর শরীয়ত। এখানে নেই কোন স্বজনপ্রীতি, আর কারো হিসেবেই নেই কোনো পক্ষপাতিত্ব। এখানে কোন ব্যক্তি, কোন জামাত, কোন রাষ্ট্র, কোন জাতিগোষ্ঠী কিংবা কোন যুগের কোন প্রজন্মের প্রতি নেই কোনো অন্যায় পক্ষপাতিত্ব। কারণ আল্লাহ তা‘আলা সকলেরই স্রষ্টা ও পালনকর্তা। সকলেই তো তাঁর দৃষ্টিতে সমান। এছাড়াও আল্লাহর শরীয়ত ইনসাফের ঘোষণাপত্র ও রক্ষাকবচ হবার কারণ হলো, আল্লাহ তা‘আলা সকলের প্রকৃতি ও কল্যাণ সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি জানেন। তাঁর কাছে রয়েছে চূড়ান্ত জ্ঞান। এ কারণেই কোন প্রকার প্রান্তিকতার শিকার না হয়ে, কোনরকম বাড়াবাড়ি কিংবা ছাড়াছাড়ি না করে সকলের স্বার্থ রক্ষা করা এবং প্রয়োজন পূরণ করা একমাত্র তাঁর পক্ষেই সম্ভব।
আল্লাহ ভিন্ন অন্য কেউ যদি মানুষের জন্য আইন প্রণয়ন করে, তখন যাদের জন্য প্রণয়ন করা হচ্ছে তারা হয়ে যায় আইন প্রণয়নকারী ব্যক্তির দাস ও গোলাম। এখন এতগুলো মানুষের মনিব ও বিধানদাতা কোন একজন ব্যক্তি হতে পারে, কোন একটি শ্রেণি হতে পারে, কোন একটা জাতিগোষ্ঠী হতে পারে অথবা বিশেষ বিশেষ জাতির কোন সংঘ হতে পারে।
আর আল্লাহ যখন মানুষের জন্য আইন প্রণয়ন করেন, তখন সকল মানুষ হতে পারে স্বাধীন। তিনি সকল মানুষকে এক কাতারে নিয়ে আসেন। তখন সকল মানুষই একমাত্র আল্লাহর কাছে মাথা নত করে। তারা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও এবাদত করে না। এ কারণেই মানব জীবনে এ বিষয়টা এতটা গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যমণ্ডিত। সেই সঙ্গে বিষয়টা খুবই স্পর্শকাতর। শুধু মানব জীবনে কেন, গোটা বিশ্ব ব্যবস্থায় এ বিষয়ের প্রভাব থাকে বর্তমান। {সত্য যদি তাদের প্রবৃত্তির অনুগামী হত, তাহলে আসমানসমূহ, জমিন এবং এতদুভয়ের মধ্যকার সবকিছু ধ্বংস হয়ে যেত।}
অতএব, আল্লাহর বিধান ভিন্ন অন্য কিছু দ্বারা যদি বিচার ফায়সালা করা হয়, তার অর্থ হলো, অনিষ্ট সাধন, বিশৃঙ্খলার বিস্তৃতি এবং সর্বশেষে ঈমানের গণ্ডি থেকে বহির্গমন। কুরআনের বর্ণনা আমাদেরকে এমনটাই বলছে—
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلرَّسُولُ لَا يَحْزُنكَ ٱلَّذِينَ يُسَٰرِعُونَ فِى ٱلْكُفْرِ مِنَ ٱلَّذِينَ قَالُوٓا۟ ءَامَنَّا بِأَفْوَٰهِهِمْ وَلَمْ تُؤْمِن قُلُوبُهُمْ وَمِنَ ٱلَّذِينَ هَادُوا۟ سَمَّٰعُونَ لِلْكَذِبِ سَمَّٰعُونَ لِقَوْمٍ ءَاخَرِينَ لَمْ يَأْتُوكَ يُحَرِّفُونَ ٱلْكَلِمَ مِنۢ بَعْدِ مَوَاضِعِهِۦ يَقُولُونَ إِنْ أُوتِيتُمْ هَٰذَا فَخُذُوهُ وَإِن لَّمْ تُؤْتَوْهُ فَٱحْذَرُوا۟ وَمَن يُرِدِ ٱللَّهُ فِتْنَتَهُۥ فَلَن تَمْلِكَ لَهُۥ مِنَ ٱللَّهِ شَيْـًٔا أُو۟لَٰٓئِكَ ٱلَّذِينَ لَمْ يُرِدِ ٱللَّهُ أَن يُطَهِّرَ قُلُوبَهُمْ لَهُمْ فِى ٱلدُّنْيَا خِزْىٌ وَلَهُمْ فِى ٱلْءَاخِرَةِ عَذَابٌ عَظِيمٌ * سَمَّٰعُونَ لِلْكَذِبِ أَكَّٰلُونَ لِلسُّحْتِ فَإِن جَآءُوكَ فَٱحْكُم بَيْنَهُمْ أَوْ أَعْرِضْ عَنْهُمْ وَإِن تُعْرِضْ عَنْهُمْ فَلَن يَضُرُّوكَ شَيْـًٔا وَإِنْ حَكَمْتَ فَٱحْكُم بَيْنَهُم بِٱلْقِسْطِ إِنَّ ٱللَّهَ يُحِبُّ ٱلْمُقْسِطِينَ * وَكَيْفَ يُحَكِّمُونَكَ وَعِندَهُمُ ٱلتَّوْرَىٰةُ فِيهَا حُكْمُ ٱللَّهِ ثُمَّ يَتَوَلَّوْنَ مِنۢ بَعْدِ ذَٰلِكَ وَمَآ أُو۟لَٰٓئِكَ بِٱلْمُؤْمِنِينَ﴾
অর্থঃ হে রসূল, তাদের জন্যে দুঃখ করবেন না, যারা দৌঁড়ে গিয়ে কুফরে পতিত হয়; যারা মুখে বলেঃ আমরা মুসলমান, অথচ তাদের অন্তর মুসলমান নয় এবং যারা ইহুদী; মিথ্যা বলার জন্যে তারা গুপ্তচর বৃত্তি করে। তারা অন্যদলের গুপ্তচর, যারা আপনার কাছে আসেনি। তারা বাক্যকে স্বস্থান থেকে পরিবর্তন করে। তারা বলেঃ যদি তোমরা এ নির্দেশ পাও, তবে কবুল করে নিও এবং যদি এ নির্দেশ না পাও, তবে বিরত থেকো। আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করতে চান, তার জন্যে আল্লাহর কাছে আপনি কিছু করতে পারবেন না। এরা এমনিই যে, আল্লাহ এদের অন্তরকে পবিত্র করতে চান না। তাদের জন্যে রয়েছে দুনিয়াতে লাঞ্ছনা এবং পরকালে বিরাট শাস্তি। এরা মিথ্যা বলার জন্যে গুপ্তচরবৃত্তি করে, হারাম ভক্ষণ করে। অতএব, তারা যদি আপনার কাছে আসে, তবে হয় তাদের মধ্যে ফয়সালা করে দিন, না হয় তাদের ব্যাপারে নির্লিপ্ত থাকুন। যদি তাদের থেকে নির্লিপ্ত থাকেন, তবে তাদের সাধ্য নেই যে, আপনার বিন্দুমাত্র ক্ষতি করতে পারে। যদি ফয়সালা করেন, তবে ন্যায়ভাবে ফয়সালা করুন। নিশ্চয় আল্লাহ সুবিচারকারীদেরকে ভালবাসেন। তারা আপনাকে কেমন করে বিচারক নিয়োগ করবে অথচ তাদের কাছে তওরাত রয়েছে। তাতে আল্লাহর নির্দেশ আছে। অতঃপর এরা পেছন দিকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। তারা কখনও বিশ্বাসী নয়। (সূরা আল মায়েদা: ৪১-৪৩)
..............................আমরা আগেও বলেছি, উলুহিয়াতের অতি বিশেষ ও তাৎপর্যপূর্ণ অংশ হচ্ছে হাকিমিয়া। এখন মানব সম্প্রদায়ের কোন শ্রেণী যদি অন্যান্য মানুষের জন্য স্বতন্ত্ররূপে আইন প্রণয়ন করে, তখন এই বিশেষ শ্রেণীটি ওই মানুষগুলোর উপাস্যের আসন গ্রহণ করেছে বলে বিবেচিত হয়। উপাস্য হবার যত বৈশিষ্ট্য, সবগুলোই ঐ বিশেষ শ্রেণীটি নিজেদের জন্য সাব্যস্ত করে নেয়। এ অবস্থায় অন্যান্য মানুষ এই শ্রেণীর দাস বলে সাব্যস্ত হয়। আল্লাহর দাসত্বের বিপরীতে তারা যেন একশ্রেণীর মানুষের দাসত্ব গ্রহণ করে নেয়। আল্লাহর দ্বীনের বদলে তারা যেন এক শ্রেণীর মানুষের দ্বীন ও ধর্মে দীক্ষিত হয়ে যায়।
আর ইসলাম যেহেতু একমাত্র আল্লাহর শরীয়তকে পালনীয় বলে সাব্যস্ত করে, এ কারণে ইসলামে আল্লাহর মুষ্টিমেয় বান্দাদের দাসত্ব থেকে আল্লাহর সকল বান্দাকে মুক্ত করা হয়। মানব দাসত্বের শৃঙ্খল ছিন্ন করে আল্লাহর দাসত্বের মালা পরিয়ে দেয়া হয়। ইসলাম মানব সভ্যতার মুক্তির ঘোষণা। এই ঘোষণা মানব দাসত্ব থেকে মুক্তির ঘোষণা। শুধু তাই নয়, ইসলাম মানব সম্প্রদায়কে দাসত্ব থেকে মুক্তি দিয়ে যেন নতুন জন্ম উপহার দেয়। ইসলামের ছোঁয়ায় মানুষ নবজীবন লাভ করে। কারণ স্বজাতির দাসত্ব থেকে মুক্তি না পেলে মানুষের জীবনের কোন মূল্য থাকে না। মানুষ তখন মৃতপ্রায় থাকে। এই জীবনের সার্থকতা তখনই সাধিত হয়, যখন মানুষের স্রষ্টার সামনে সকল মানুষ সমান কাতারে দণ্ডায়মান হতে পারে।
কুরআনের উক্ত আয়াতগুলোতে যে শিক্ষা আমাদের জন্য রয়েছে, যে প্রসঙ্গটি আমাদের জন্য উত্থাপন করা হয়েছে, সেটি আকীদার সর্ববৃহৎ ও সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। এটি স্রষ্টা ও সৃষ্টির অধিকার বিভাজনের প্রশ্ন। উপাস্য ও উপাসক নির্ধারণের প্রশ্ন। এটি ন্যায়নিষ্ঠা ও মানব জীবনের লক্ষ্য নিরূপণের প্রশ্ন। এটি স্বাধীনতা ও সাম্যের প্রশ্ন। এটি মানবসমাজের মুক্তির প্রশ্ন। এটি মানব জীবনের সার্থকতার প্রশ্ন। আর এইসব কারণেই এটি কুফরি ও ঈমান এবং জাহিলিয়াত ও ইসলামের প্রশ্ন।
জাহিলিয়াত শুধু ইতিহাসের বিশেষ একটা সময়ের নাম নয়। যে কোনো ব্যবস্থা এবং যে কোন যুগে জাহিলিয়াতের উপাদান অস্তিত্ব লাভ করতে পারে। জাহিলিয়াতেরমূলকথা হলো, আল্লাহর মানহাজ ও জীবন বান্ধব শরীয়ত ছেড়ে প্রবৃত্তি ও খেয়াল-খুশিমতো জীবন পরিচালনার জন্য আইন-কানুন রচনা করা। এখন এই প্রবৃত্তি ও খেয়াল-খুশি এক ব্যক্তির হতে পারে, কোন জনগোষ্ঠীর হতে পারে, বিশিষ্ট জ্ঞানী-গুণী মহলের হতে পারে, আবার গোটা একটা প্রজন্মেরও হতে পারে। যত কিছুই হোক না কেন যতক্ষণ পর্যন্ত মূলভিত্তি আল্লাহর শরীয়ত না হবে, সবকিছুই জাহিলিয়াত বলে গণ্য হবে।
দেখা গেল এক ব্যক্তি কোন একটি জামাতের জন্য আইন প্রণয়ন করে। এখন এটাই জাহিলিয়াত। কারণ রচনাকারী ব্যক্তি নিজের খেয়াল-খুশি মতই আইন প্রণয়ন করেছে। তার ইচ্ছেটাই এখানে বিধি। এখন উপস্থাপনা শৈলীতে যত পার্থক্য থাকুক তাতে কিছু আসে যায় না!
এমনিভাবে একটা বিশেষ শ্রেণী অপর শ্রেণীগুলোর জন্য আইন রচনা করে। এটাই জাহিলিয়াত। কারণ রচনাকারী শ্রেণীর (কিংবা তাদের অধিকাংশের তথা পার্লামেন্টের অধিকাংশ সদস্যের) খেয়াল-খুশি ও স্বার্থ-চিন্তাটাই এখানে মুখ্য। এটাই নিয়ম, এটাই বিধি। এখন যেভাবে বলা হোক না কেন তাতে কিছু আসে যায় না!
এমনিভাবে বিভিন্ন অঞ্চলের জ্ঞানী-গুণী মহলের ভেতর থেকে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা অন্য সকলের জন্য আইন রচনা করে। অতএব এটাই জাহিলিয়াত। কারণ প্রবৃত্তির তাড়া খেয়ে ছুটে বেড়ানো মানুষ এবং অজ্ঞতার অন্ধকার থেকে কখনো মুক্ত না হতে পারা মানুষ যেটা চাইছে সেটাই আইন হয়ে যাচ্ছে। কিংবা জনমানুষের অধিকাংশ যেটা চাইছে সেটাই বৈধতা পেয়ে যাচ্ছে, সেটাই বিধি হয়ে দাঁড়াচ্ছে। অতএব, যেভাবেই বলা হোক না কেন এগুলো সবই জাহিলিয়াত।
এমনিভাবে বড় বড় জাতিগোষ্ঠীগুলো অন্যান্য জাতির জন্য নিয়ম নীতি প্রণয়ন করছে। তাই এটা জাহিলিয়াত। কারণ অনুসৃত জাতিগুলোর জাতীয় স্বার্থ ও ইচ্ছা-আকাঙ্ক্ষাই অন্য জাতিগোষ্ঠীর জন্য অবশ্যপালনীয় বিধান। জাতিসংঘের রায় ও অভিমতটাই একমাত্র মুখ্য। তাই বলার ক্ষেত্রে পার্থক্যে কিছু আসে যায় না।
এদিকে সকল ব্যক্তি, সর্বমহল এবং সকল জাতিগোষ্ঠী, এক কথায় বিশ্ব ব্রহ্মাণ্ডে যা কিছু রয়েছে, সবকিছুর স্রষ্টা আইন প্রণয়ন করেছেন। এটিই হচ্ছে আল্লাহর শরীয়ত। এখানে নেই কোন স্বজনপ্রীতি, আর কারো হিসেবেই নেই কোনো পক্ষপাতিত্ব। এখানে কোন ব্যক্তি, কোন জামাত, কোন রাষ্ট্র, কোন জাতিগোষ্ঠী কিংবা কোন যুগের কোন প্রজন্মের প্রতি নেই কোনো অন্যায় পক্ষপাতিত্ব। কারণ আল্লাহ তা‘আলা সকলেরই স্রষ্টা ও পালনকর্তা। সকলেই তো তাঁর দৃষ্টিতে সমান। এছাড়াও আল্লাহর শরীয়ত ইনসাফের ঘোষণাপত্র ও রক্ষাকবচ হবার কারণ হলো, আল্লাহ তা‘আলা সকলের প্রকৃতি ও কল্যাণ সম্পর্কে সবচেয়ে বেশি জানেন। তাঁর কাছে রয়েছে চূড়ান্ত জ্ঞান। এ কারণেই কোন প্রকার প্রান্তিকতার শিকার না হয়ে, কোনরকম বাড়াবাড়ি কিংবা ছাড়াছাড়ি না করে সকলের স্বার্থ রক্ষা করা এবং প্রয়োজন পূরণ করা একমাত্র তাঁর পক্ষেই সম্ভব।
আল্লাহ ভিন্ন অন্য কেউ যদি মানুষের জন্য আইন প্রণয়ন করে, তখন যাদের জন্য প্রণয়ন করা হচ্ছে তারা হয়ে যায় আইন প্রণয়নকারী ব্যক্তির দাস ও গোলাম। এখন এতগুলো মানুষের মনিব ও বিধানদাতা কোন একজন ব্যক্তি হতে পারে, কোন একটি শ্রেণি হতে পারে, কোন একটা জাতিগোষ্ঠী হতে পারে অথবা বিশেষ বিশেষ জাতির কোন সংঘ হতে পারে।
আর আল্লাহ যখন মানুষের জন্য আইন প্রণয়ন করেন, তখন সকল মানুষ হতে পারে স্বাধীন। তিনি সকল মানুষকে এক কাতারে নিয়ে আসেন। তখন সকল মানুষই একমাত্র আল্লাহর কাছে মাথা নত করে। তারা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও এবাদত করে না। এ কারণেই মানব জীবনে এ বিষয়টা এতটা গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যমণ্ডিত। সেই সঙ্গে বিষয়টা খুবই স্পর্শকাতর। শুধু মানব জীবনে কেন, গোটা বিশ্ব ব্যবস্থায় এ বিষয়ের প্রভাব থাকে বর্তমান। {সত্য যদি তাদের প্রবৃত্তির অনুগামী হত, তাহলে আসমানসমূহ, জমিন এবং এতদুভয়ের মধ্যকার সবকিছু ধ্বংস হয়ে যেত।}
অতএব, আল্লাহর বিধান ভিন্ন অন্য কিছু দ্বারা যদি বিচার ফায়সালা করা হয়, তার অর্থ হলো, অনিষ্ট সাধন, বিশৃঙ্খলার বিস্তৃতি এবং সর্বশেষে ঈমানের গণ্ডি থেকে বহির্গমন। কুরআনের বর্ণনা আমাদেরকে এমনটাই বলছে—
﴿يَٰٓأَيُّهَا ٱلرَّسُولُ لَا يَحْزُنكَ ٱلَّذِينَ يُسَٰرِعُونَ فِى ٱلْكُفْرِ مِنَ ٱلَّذِينَ قَالُوٓا۟ ءَامَنَّا بِأَفْوَٰهِهِمْ وَلَمْ تُؤْمِن قُلُوبُهُمْ وَمِنَ ٱلَّذِينَ هَادُوا۟ سَمَّٰعُونَ لِلْكَذِبِ سَمَّٰعُونَ لِقَوْمٍ ءَاخَرِينَ لَمْ يَأْتُوكَ يُحَرِّفُونَ ٱلْكَلِمَ مِنۢ بَعْدِ مَوَاضِعِهِۦ يَقُولُونَ إِنْ أُوتِيتُمْ هَٰذَا فَخُذُوهُ وَإِن لَّمْ تُؤْتَوْهُ فَٱحْذَرُوا۟ وَمَن يُرِدِ ٱللَّهُ فِتْنَتَهُۥ فَلَن تَمْلِكَ لَهُۥ مِنَ ٱللَّهِ شَيْـًٔا أُو۟لَٰٓئِكَ ٱلَّذِينَ لَمْ يُرِدِ ٱللَّهُ أَن يُطَهِّرَ قُلُوبَهُمْ لَهُمْ فِى ٱلدُّنْيَا خِزْىٌ وَلَهُمْ فِى ٱلْءَاخِرَةِ عَذَابٌ عَظِيمٌ * سَمَّٰعُونَ لِلْكَذِبِ أَكَّٰلُونَ لِلسُّحْتِ فَإِن جَآءُوكَ فَٱحْكُم بَيْنَهُمْ أَوْ أَعْرِضْ عَنْهُمْ وَإِن تُعْرِضْ عَنْهُمْ فَلَن يَضُرُّوكَ شَيْـًٔا وَإِنْ حَكَمْتَ فَٱحْكُم بَيْنَهُم بِٱلْقِسْطِ إِنَّ ٱللَّهَ يُحِبُّ ٱلْمُقْسِطِينَ * وَكَيْفَ يُحَكِّمُونَكَ وَعِندَهُمُ ٱلتَّوْرَىٰةُ فِيهَا حُكْمُ ٱللَّهِ ثُمَّ يَتَوَلَّوْنَ مِنۢ بَعْدِ ذَٰلِكَ وَمَآ أُو۟لَٰٓئِكَ بِٱلْمُؤْمِنِينَ﴾
অর্থঃ হে রসূল, তাদের জন্যে দুঃখ করবেন না, যারা দৌঁড়ে গিয়ে কুফরে পতিত হয়; যারা মুখে বলেঃ আমরা মুসলমান, অথচ তাদের অন্তর মুসলমান নয় এবং যারা ইহুদী; মিথ্যা বলার জন্যে তারা গুপ্তচর বৃত্তি করে। তারা অন্যদলের গুপ্তচর, যারা আপনার কাছে আসেনি। তারা বাক্যকে স্বস্থান থেকে পরিবর্তন করে। তারা বলেঃ যদি তোমরা এ নির্দেশ পাও, তবে কবুল করে নিও এবং যদি এ নির্দেশ না পাও, তবে বিরত থেকো। আল্লাহ যাকে পথভ্রষ্ট করতে চান, তার জন্যে আল্লাহর কাছে আপনি কিছু করতে পারবেন না। এরা এমনিই যে, আল্লাহ এদের অন্তরকে পবিত্র করতে চান না। তাদের জন্যে রয়েছে দুনিয়াতে লাঞ্ছনা এবং পরকালে বিরাট শাস্তি। এরা মিথ্যা বলার জন্যে গুপ্তচরবৃত্তি করে, হারাম ভক্ষণ করে। অতএব, তারা যদি আপনার কাছে আসে, তবে হয় তাদের মধ্যে ফয়সালা করে দিন, না হয় তাদের ব্যাপারে নির্লিপ্ত থাকুন। যদি তাদের থেকে নির্লিপ্ত থাকেন, তবে তাদের সাধ্য নেই যে, আপনার বিন্দুমাত্র ক্ষতি করতে পারে। যদি ফয়সালা করেন, তবে ন্যায়ভাবে ফয়সালা করুন। নিশ্চয় আল্লাহ সুবিচারকারীদেরকে ভালবাসেন। তারা আপনাকে কেমন করে বিচারক নিয়োগ করবে অথচ তাদের কাছে তওরাত রয়েছে। তাতে আল্লাহর নির্দেশ আছে। অতঃপর এরা পেছন দিকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। তারা কখনও বিশ্বাসী নয়। (সূরা আল মায়েদা: ৪১-৪৩)
বর্ণিত আছে যে, উপরোক্ত আয়াতগুলো ইহুদিদের একটি সম্প্রদায়ের ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়েছে, যারা বিভিন্ন অপরাধে লিপ্ত হয়েছিল। অপরাধগুলো কি ধরনের সেগুলো নিয়ে বিভিন্ন বর্ণনা রয়েছে। কেউ বলেছে ব্যভিচার, কেউ বলেছে চুরি। যে ধরনের অপরাধই হোক না কেন তাওরাত গ্রন্থে সেই অপরাধের হদ (আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত দণ্ডবিধি) বর্ণিত ছিল। কিন্তু সেই ইহুদি সম্প্রদায় সম্মিলিতভাবে সেই বিধি পরিবর্তন করে ফেলেছিল। কারণ শুরুর দিকে তারা তাদের মাঝে যারা সম্ভ্রান্ত, তাদের মধ্যে সেই দণ্ড কার্যকর করতে চাচ্ছিল না। অতঃপর তারা সকলের ব্যাপারেই সেই শাস্তির বাধ্যবাধকতা উঠিয়ে দিলো। তার বদলে অপর কিছু শাস্তির আইন করল। শরীয়তের পরিভাষায় যেগুলোকে তাযীর বলে, সে ধরনের কিছু হস্তক্ষেপের-অবকাশ-যুক্ত শাস্তিবিধি তারা বানিয়ে নিল। (বর্তমান যুগে মুসলমান নামধারী অনেকেই তো এ কাজটা করে থাকে)। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যুগে যখন ইহুদীদের মাঝে ব্যভিচার অথবা চুরির অপরাধগুলো সংঘটিত হলো, তখন ইহুদিরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছ থেকে এ বিষয়ে ফতোয়া নেবার জন্য একমত হয়। তারা পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নেয়, যদি নবীজি তাদের তৈরি সহজ শাস্তির বিধি অনুযায়ী ফায়সালা দেন, তাহলে তারা তদনুযায়ী আমল করবে। এক্ষেত্রে নবীজির এই নির্দেশনা তাদের পক্ষে আল্লাহর দরবারে দলিল হয়ে যাবে। কারণ একজন রাসূল এই ফতোয়া দিয়েছেন। আর যদি তাওরাতে যেভাবে রয়েছে তদনুযায়ী নবীজি বিচার করেন, তখন তারা নবীর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবে না বলে স্থির করে।
যাই হোক, তারা কিছু লোক পাঠিয়ে নবীজির কাছে জিজ্ঞেস করালো। সেখান থেকেই কুরআনের এই ঘটনার সূত্রপাত যেখানে বলা হয়েছে—{যদি এই বিধান তোমাদেরকে দেয়া হয় তবে গ্রহণ করো আর যদি তা না দেয়া হয় তবে তার সিদ্ধান্ত এড়িয়ে চলো।} এভাবেই তারা আল্লাহর বিধানের গুরুত্ব হ্রাস করল। তাঁর নির্দেশকে অবহেলা করল। আল্লাহর সঙ্গে এবং তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে এভাবেই তারা এতটা বক্র আচরণ করল।
রসূলের তিরোধানের পর দীর্ঘ সময় অতিক্রান্ত হয়ে গেলে সর্বযুগেই আহলে কিতাবদের অভিন্ন অবস্থা লক্ষ্য করা যেত। তাদের অন্তর কঠোর হয়ে যেত। আকীদার উত্তাপ তাদের ভেতর থেকে হারিয়ে যেত। চেতনার তেজ কমে যেত। আকীদা, চেতনা ও দায়িত্ববোধ থেকে নিষ্কৃতি পাওয়াই তাদের পরম লক্ষ্য হয়ে দাঁড়াত। এতদুদ্দেশ্যে তারা বিভিন্ন উপায় খোঁজ করতে থাকতো। তারা বিভিন্ন মানুষের কাছে ফতোয়া নেবার জন্য ছুটে বেড়াত, এই আশায়- হয়তো তার কাছে নিস্কৃতির কোন একটা পথ পাওয়া যাবে। বর্তমান সময়ের মুসলিম নামধারী বহু মানুষের অবস্থা কি তাদের অনুরূপ নয় যারা নিজেদের মুখ দ্বারা বলে, আমরা ঈমান এনেছি কিন্তু তাদের অন্তরে ঈমান নেই?
আল্লাহর দ্বীন বাস্তবায়নের বদলে কৌশলে দ্বীন এড়িয়ে চলার জন্য এই মানুষগুলো কি ফতোয়া তালাশ করছে না? নিজেদের প্রবৃত্তি ও খেয়াল-খুশি অনুসরণের জন্য এরা কি আল্লাহর দ্বীনের মাঝে বিভিন্ন বিধান শিথিল করে দিচ্ছে না? যদি তারা বলে, আল্লাহর দ্বীন হল সত্যের বাণী উচ্চারণ করা এবং সত্যের দ্বারা ফয়সালা করা—তবে তাদেরকে কিছু বলার নেই। কিন্তু তারা তো বলে, যদি এমন এমন বিধান দেয়া হয়, তবে তোমরা গ্রহণ করো। আর যদি না দেয়া হয়, তবে এড়িয়ে চলো। বর্তমান সময়ে সেই অভিন্ন অবস্থাই তো বিরাজমান। হয়তোবা আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তা‘আলা এতটা বিস্তারিতভাবে বনী ইসরাইলের ঘটনা কুরআনে তুলে ধরেছেন এ উদ্দেশ্যে, মুসলমান প্রজন্মগুলো যেন এগুলো থেকে বিরত থাকে এবং পিচ্ছিল পথে তাদের পদস্খলনের ব্যাপারে সতর্ক থাকে।
..............................যাই হোক, তারা কিছু লোক পাঠিয়ে নবীজির কাছে জিজ্ঞেস করালো। সেখান থেকেই কুরআনের এই ঘটনার সূত্রপাত যেখানে বলা হয়েছে—{যদি এই বিধান তোমাদেরকে দেয়া হয় তবে গ্রহণ করো আর যদি তা না দেয়া হয় তবে তার সিদ্ধান্ত এড়িয়ে চলো।} এভাবেই তারা আল্লাহর বিধানের গুরুত্ব হ্রাস করল। তাঁর নির্দেশকে অবহেলা করল। আল্লাহর সঙ্গে এবং তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গে এভাবেই তারা এতটা বক্র আচরণ করল।
রসূলের তিরোধানের পর দীর্ঘ সময় অতিক্রান্ত হয়ে গেলে সর্বযুগেই আহলে কিতাবদের অভিন্ন অবস্থা লক্ষ্য করা যেত। তাদের অন্তর কঠোর হয়ে যেত। আকীদার উত্তাপ তাদের ভেতর থেকে হারিয়ে যেত। চেতনার তেজ কমে যেত। আকীদা, চেতনা ও দায়িত্ববোধ থেকে নিষ্কৃতি পাওয়াই তাদের পরম লক্ষ্য হয়ে দাঁড়াত। এতদুদ্দেশ্যে তারা বিভিন্ন উপায় খোঁজ করতে থাকতো। তারা বিভিন্ন মানুষের কাছে ফতোয়া নেবার জন্য ছুটে বেড়াত, এই আশায়- হয়তো তার কাছে নিস্কৃতির কোন একটা পথ পাওয়া যাবে। বর্তমান সময়ের মুসলিম নামধারী বহু মানুষের অবস্থা কি তাদের অনুরূপ নয় যারা নিজেদের মুখ দ্বারা বলে, আমরা ঈমান এনেছি কিন্তু তাদের অন্তরে ঈমান নেই?
আল্লাহর দ্বীন বাস্তবায়নের বদলে কৌশলে দ্বীন এড়িয়ে চলার জন্য এই মানুষগুলো কি ফতোয়া তালাশ করছে না? নিজেদের প্রবৃত্তি ও খেয়াল-খুশি অনুসরণের জন্য এরা কি আল্লাহর দ্বীনের মাঝে বিভিন্ন বিধান শিথিল করে দিচ্ছে না? যদি তারা বলে, আল্লাহর দ্বীন হল সত্যের বাণী উচ্চারণ করা এবং সত্যের দ্বারা ফয়সালা করা—তবে তাদেরকে কিছু বলার নেই। কিন্তু তারা তো বলে, যদি এমন এমন বিধান দেয়া হয়, তবে তোমরা গ্রহণ করো। আর যদি না দেয়া হয়, তবে এড়িয়ে চলো। বর্তমান সময়ে সেই অভিন্ন অবস্থাই তো বিরাজমান। হয়তোবা আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তা‘আলা এতটা বিস্তারিতভাবে বনী ইসরাইলের ঘটনা কুরআনে তুলে ধরেছেন এ উদ্দেশ্যে, মুসলমান প্রজন্মগুলো যেন এগুলো থেকে বিরত থাকে এবং পিচ্ছিল পথে তাদের পদস্খলনের ব্যাপারে সতর্ক থাকে।
উপরোক্ত আলোচনায় আমরা দেখতে পেয়েছি, নিজেদের জীবনে যেই মানুষগুলো আল্লাহর শরীয়তের বিধান মেনে নিতে এবং নিজেদের জীবনঘনিষ্ঠ সমস্যা সমাধানে শরিয়া কার্যকর করতে প্রস্তুত ছিল না, তাদের ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা কি বলেছেন? এখন আমাদেরকে বুঝতে হবে, আল্লাহর অবতীর্ণ বিধি-বিধান দ্বারা বিচার ফায়সালা না করে যারা অন্যদের জীবনঘনিষ্ঠ সমস্যার সমাধান দিতে যায়, তাদের ব্যাপারে আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তা'আলা কি ফায়সালা করেছেন? আল্লাহর পক্ষ থেকে যত ধর্ম এসেছে, সেগুলোর যেকোনোটিকে তার সংশ্লিষ্ট যুগে অবহেলা ও এড়িয়ে চলার ব্যাপারেই এই হুকুম প্রযোজ্য, যা আল্লাহ তা'আলা নির্দেশ করেছেন।
আসুন তাওরাত দিয়ে শুরু করা যাক। আমরা দেখব এ ব্যাপারে আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তা‘আলা কি বলেছেন।
﴿إِنَّآ أَنزَلْنَا ٱلتَّوْرَاةَ فِيهَا هُدًى وَنُورٌ يَحْكُمُ بِهَا ٱلنَّبِيُّونَ ٱلَّذِينَ أَسْلَمُوا۟ لِلَّذِينَ هَادُوا۟ وَٱلرَّبَّٰنِيُّونَ وَٱلْأَحْبَارُ بِمَا ٱسْتُحْفِظُوا۟ مِن كِتَٰبِ ٱللَّهِ وَكَانُوا۟ عَلَيْهِ شُهَدَآءَ فَلَا تَخْشَوُا۟ ٱلنَّاسَ وَٱخْشَوْنِ وَلَا تَشْتَرُوا۟ بِـَٔايَٰتِى ثَمَنًا قَلِيلًا وَمَن لَّمْ يَحْكُم بِمَآ أَنزَلَ ٱللَّهُ فَأُو۟لَٰٓئِكَ هُمُ ٱلْكَٰفِرُونَ * وَكَتَبْنَا عَلَيْهِمْ فِيهَآ أَنَّ ٱلنَّفْسَ بِٱلنَّفْسِ وَٱلْعَيْنَ بِٱلْعَيْنِ وَٱلْأَنفَ بِٱلْأَنفِ وَٱلْأُذُنَ بِٱلْأُذُنِ وَٱلسِّنَّ بِٱلسِّنِّ وَٱلْجُرُوحَ قِصَاصٌ فَمَن تَصَدَّقَ بِهِۦ فَهُوَ كَفَّارَةٌ لَّهُۥ وَمَن لَّمْ يَحْكُم بِمَآ أَنزَلَ ٱللَّهُ فَأُو۟لَٰٓئِكَ هُمُ ٱلظَّٰلِمُونَ﴾
অর্থঃ আমি তওরাত অবতীর্ণ করেছি। এতে হেদায়াত ও আলো রয়েছে। আল্লাহর আজ্ঞাবহ পয়গম্বর, দরবেশ ও আলেমরা এর মাধ্যমে ইহুদীদেরকে ফয়সালা দিতেন। কেননা, তাদেরকে এ খোদায়ী গ্রন্থের দেখাশোনা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল এবং তাঁরা এর রক্ষণাবেক্ষণে নিযুক্ত ছিলেন। অতএব, তোমরা মানুষকে ভয় করো না এবং আমাকে ভয় কর এবং আমার আয়াতসমূহের বিনিময়ে স্বল্পমূল্য গ্রহণ করো না, যেসব লোক আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, তদনুযায়ী ফায়সালা করে না, তারাই কাফের। আমি এ গ্রন্থে তাদের প্রতি লিখে দিয়েছি যে, প্রাণের বিনিময়ে প্রাণ, চক্ষুর বিনিময়ে চক্ষু, নাকের বিনিময়ে নাক, কানের বিনিময়ে কান, দাঁতের বিনিময়ে দাঁত এবং যখমসমূহের বিনিময়ে সমান যখম। অতঃপর যে ক্ষমা করে, সে গোনাহ থেকে পাক হয়ে যায়। যেসব লোক আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, তদনুযায়ী ফয়সালা করে না তারাই জালেম। (সূরা আল-মায়িদা: ৪৪, ৪৫)
কুরআনে বর্ণিত প্রতিটি ধর্ম আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে জীবনব্যবস্থা হিসেবে। এসেছে বাস্তব জীবনকে প্রভাবিত করতে। মানব জীবনকে পরিচালনা করা, সুশৃঙ্খল করা, দিকনির্দেশনা দেয়া এবং সর্বপ্রকার অনিষ্ট থেকে বাঁচিয়ে রাখার জন্যই কুরআনে বর্ণিত ধর্মগুলোর আবির্ভাব ঘটেছে। কেবল আকীদা-বিশ্বাস এবং মানুষের অন্তর্নিহিত কিছু মনোভাব পরিবর্তন করার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে কোন ধর্ম আসেনি। এমনিভাবে কেবল উপাসনালয় ও গির্জাগুলোতে চর্চা হবার জন্য কোন ধর্মের আবির্ভাব ঘটেনি।
এই উভয় বিষয় অর্থাৎ মানুষের আকীদা-বিশ্বাস পরিবর্তন এবং ইবাদতখানায় চর্চিত বিভিন্ন ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান যদিও মানব জীবনের জন্য, আত্মিক পরিশুদ্ধি অর্জনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয়, তথাপি এ বিষয়গুলো মানব জীবনকে পরিচালনা করা, সুশৃঙ্খল করা, দিকনির্দেশনা দেয়া এবং সর্বপ্রকার অনিষ্ট থেকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য ততক্ষণ পর্যন্ত যথেষ্ট হবে না, যতক্ষণ এতদুভয়ের ভিত্তিতে কোন ব্যবস্থা, মানহাজ, কর্মপন্থা ও শরীয়ত মানুষের বাস্তব জীবনে বাস্তবায়িত হবার শক্তি নিয়ে প্রতিষ্ঠিত না হবে। এর জন্য লাগবে এমন কর্তৃত্ব ও শাসনব্যবস্থা; যা মানুষকে এসব নিয়ম নীতি পালনে বাধ্য করবে, এগুলোর বিরোধিতার কারণে কৈফিয়ৎ তলব করবে এবং প্রয়োজনে শাস্তি প্রদান করতে সক্ষম থাকবে।
আর মানবজীবন ততক্ষণ পর্যন্ত শৃঙ্খলাবদ্ধভাবে চলতে পারে না, যতক্ষণ মানুষের আকীদা-বিশ্বাস, মূল্যবোধ ও চেতনা এবং তাদের পালনীয় বিধিবিধানগুলো একই উৎস থেকে নিঃসৃত না হয়। সেই কর্তৃত্ব বাঁধন মানুষের মনোজগতের গোপনীয়তা নিয়ন্ত্রণ করে যেমনিভাবে তার বাহ্যিক আচার-আচরণ ও চলাফেরা নিয়ন্ত্রণ করে। দায়িত্বে নিযুক্ত শাসক আল্লাহর শরীয়তের বিধি-বিধানের আলোকে ইহজগতে মানুষকে শাস্তি অথবা প্রতিদান দেয়, যেমনিভাবে আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তা‘আলা সেই একই শরীয়তের আলোকে আখেরাতের জীবনে মানুষকে পুরস্কার অথবা শাস্তি প্রদান করবেন।
কিন্তু কর্তৃত্ব যদি দ্বিমুখী হয়, বিধি-বিধান রচনার উৎস যদি বিভিন্ন হয়, মানুষের অন্তর্জগতে এবং চেতনা ও মানসিকতায় যদি আল্লাহর কর্তৃত্ব সাব্যস্ত থাকে, সেই সঙ্গে জাগতিক কার্যাবলী ও বিভিন্ন ব্যবস্থাপনায় যদি আল্লাহ ভিন্ন অন্য কারো কর্তৃত্ব থাকে; আখেরাতের প্রতিদানের ক্ষেত্রে কর্তৃত্ব যদি আল্লাহর হয়, দুনিয়ার শাস্তি ও পুরস্কারের ক্ষেত্রে কর্তৃত্ব যদি অন্য কারো হয়, তখনই দ্বিমুখী কর্তৃত্বের ঘূর্ণাবর্তে মানবজীবন ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। বিপরীতমুখী দুই মানহাজ এবং পরস্পর বিরোধী দুটো আদর্শের সংঘর্ষে মানব জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। আর তখনই সে সমস্ত অনিষ্ট দেখা দেয়, যেগুলোর কথা আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তা‘আলা বিভিন্ন প্রসঙ্গে কুরআনে উল্লেখ করেছেন— {যদি আসমানে জমিনে বহু উপাস্য হত আল্লাহ ছাড়া, আসমান ও জমিন ধ্বংস হয়ে যেত}, {সত্য যদি তাদের প্রবৃত্তির অনুগামী হতো তাহলে আসমান জমিন এবং এতদুভয়ের মধ্যকার সবকিছু ধ্বংস হয়ে যেত}, {এরপর আমি আপনাকে রেখেছি ধর্মের এক বিশেষ শরীয়তের উপর। অতএব, আপনি এর অনুসরণ করুন এবং অজ্ঞানদের খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করবেন না।}
..............................আসুন তাওরাত দিয়ে শুরু করা যাক। আমরা দেখব এ ব্যাপারে আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তা‘আলা কি বলেছেন।
﴿إِنَّآ أَنزَلْنَا ٱلتَّوْرَاةَ فِيهَا هُدًى وَنُورٌ يَحْكُمُ بِهَا ٱلنَّبِيُّونَ ٱلَّذِينَ أَسْلَمُوا۟ لِلَّذِينَ هَادُوا۟ وَٱلرَّبَّٰنِيُّونَ وَٱلْأَحْبَارُ بِمَا ٱسْتُحْفِظُوا۟ مِن كِتَٰبِ ٱللَّهِ وَكَانُوا۟ عَلَيْهِ شُهَدَآءَ فَلَا تَخْشَوُا۟ ٱلنَّاسَ وَٱخْشَوْنِ وَلَا تَشْتَرُوا۟ بِـَٔايَٰتِى ثَمَنًا قَلِيلًا وَمَن لَّمْ يَحْكُم بِمَآ أَنزَلَ ٱللَّهُ فَأُو۟لَٰٓئِكَ هُمُ ٱلْكَٰفِرُونَ * وَكَتَبْنَا عَلَيْهِمْ فِيهَآ أَنَّ ٱلنَّفْسَ بِٱلنَّفْسِ وَٱلْعَيْنَ بِٱلْعَيْنِ وَٱلْأَنفَ بِٱلْأَنفِ وَٱلْأُذُنَ بِٱلْأُذُنِ وَٱلسِّنَّ بِٱلسِّنِّ وَٱلْجُرُوحَ قِصَاصٌ فَمَن تَصَدَّقَ بِهِۦ فَهُوَ كَفَّارَةٌ لَّهُۥ وَمَن لَّمْ يَحْكُم بِمَآ أَنزَلَ ٱللَّهُ فَأُو۟لَٰٓئِكَ هُمُ ٱلظَّٰلِمُونَ﴾
অর্থঃ আমি তওরাত অবতীর্ণ করেছি। এতে হেদায়াত ও আলো রয়েছে। আল্লাহর আজ্ঞাবহ পয়গম্বর, দরবেশ ও আলেমরা এর মাধ্যমে ইহুদীদেরকে ফয়সালা দিতেন। কেননা, তাদেরকে এ খোদায়ী গ্রন্থের দেখাশোনা করার নির্দেশ দেয়া হয়েছিল এবং তাঁরা এর রক্ষণাবেক্ষণে নিযুক্ত ছিলেন। অতএব, তোমরা মানুষকে ভয় করো না এবং আমাকে ভয় কর এবং আমার আয়াতসমূহের বিনিময়ে স্বল্পমূল্য গ্রহণ করো না, যেসব লোক আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, তদনুযায়ী ফায়সালা করে না, তারাই কাফের। আমি এ গ্রন্থে তাদের প্রতি লিখে দিয়েছি যে, প্রাণের বিনিময়ে প্রাণ, চক্ষুর বিনিময়ে চক্ষু, নাকের বিনিময়ে নাক, কানের বিনিময়ে কান, দাঁতের বিনিময়ে দাঁত এবং যখমসমূহের বিনিময়ে সমান যখম। অতঃপর যে ক্ষমা করে, সে গোনাহ থেকে পাক হয়ে যায়। যেসব লোক আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, তদনুযায়ী ফয়সালা করে না তারাই জালেম। (সূরা আল-মায়িদা: ৪৪, ৪৫)
কুরআনে বর্ণিত প্রতিটি ধর্ম আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে জীবনব্যবস্থা হিসেবে। এসেছে বাস্তব জীবনকে প্রভাবিত করতে। মানব জীবনকে পরিচালনা করা, সুশৃঙ্খল করা, দিকনির্দেশনা দেয়া এবং সর্বপ্রকার অনিষ্ট থেকে বাঁচিয়ে রাখার জন্যই কুরআনে বর্ণিত ধর্মগুলোর আবির্ভাব ঘটেছে। কেবল আকীদা-বিশ্বাস এবং মানুষের অন্তর্নিহিত কিছু মনোভাব পরিবর্তন করার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে কোন ধর্ম আসেনি। এমনিভাবে কেবল উপাসনালয় ও গির্জাগুলোতে চর্চা হবার জন্য কোন ধর্মের আবির্ভাব ঘটেনি।
এই উভয় বিষয় অর্থাৎ মানুষের আকীদা-বিশ্বাস পরিবর্তন এবং ইবাদতখানায় চর্চিত বিভিন্ন ধর্মীয় আচার অনুষ্ঠান যদিও মানব জীবনের জন্য, আত্মিক পরিশুদ্ধি অর্জনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয়, তথাপি এ বিষয়গুলো মানব জীবনকে পরিচালনা করা, সুশৃঙ্খল করা, দিকনির্দেশনা দেয়া এবং সর্বপ্রকার অনিষ্ট থেকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য ততক্ষণ পর্যন্ত যথেষ্ট হবে না, যতক্ষণ এতদুভয়ের ভিত্তিতে কোন ব্যবস্থা, মানহাজ, কর্মপন্থা ও শরীয়ত মানুষের বাস্তব জীবনে বাস্তবায়িত হবার শক্তি নিয়ে প্রতিষ্ঠিত না হবে। এর জন্য লাগবে এমন কর্তৃত্ব ও শাসনব্যবস্থা; যা মানুষকে এসব নিয়ম নীতি পালনে বাধ্য করবে, এগুলোর বিরোধিতার কারণে কৈফিয়ৎ তলব করবে এবং প্রয়োজনে শাস্তি প্রদান করতে সক্ষম থাকবে।
আর মানবজীবন ততক্ষণ পর্যন্ত শৃঙ্খলাবদ্ধভাবে চলতে পারে না, যতক্ষণ মানুষের আকীদা-বিশ্বাস, মূল্যবোধ ও চেতনা এবং তাদের পালনীয় বিধিবিধানগুলো একই উৎস থেকে নিঃসৃত না হয়। সেই কর্তৃত্ব বাঁধন মানুষের মনোজগতের গোপনীয়তা নিয়ন্ত্রণ করে যেমনিভাবে তার বাহ্যিক আচার-আচরণ ও চলাফেরা নিয়ন্ত্রণ করে। দায়িত্বে নিযুক্ত শাসক আল্লাহর শরীয়তের বিধি-বিধানের আলোকে ইহজগতে মানুষকে শাস্তি অথবা প্রতিদান দেয়, যেমনিভাবে আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তা‘আলা সেই একই শরীয়তের আলোকে আখেরাতের জীবনে মানুষকে পুরস্কার অথবা শাস্তি প্রদান করবেন।
কিন্তু কর্তৃত্ব যদি দ্বিমুখী হয়, বিধি-বিধান রচনার উৎস যদি বিভিন্ন হয়, মানুষের অন্তর্জগতে এবং চেতনা ও মানসিকতায় যদি আল্লাহর কর্তৃত্ব সাব্যস্ত থাকে, সেই সঙ্গে জাগতিক কার্যাবলী ও বিভিন্ন ব্যবস্থাপনায় যদি আল্লাহ ভিন্ন অন্য কারো কর্তৃত্ব থাকে; আখেরাতের প্রতিদানের ক্ষেত্রে কর্তৃত্ব যদি আল্লাহর হয়, দুনিয়ার শাস্তি ও পুরস্কারের ক্ষেত্রে কর্তৃত্ব যদি অন্য কারো হয়, তখনই দ্বিমুখী কর্তৃত্বের ঘূর্ণাবর্তে মানবজীবন ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। বিপরীতমুখী দুই মানহাজ এবং পরস্পর বিরোধী দুটো আদর্শের সংঘর্ষে মানব জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। আর তখনই সে সমস্ত অনিষ্ট দেখা দেয়, যেগুলোর কথা আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তা‘আলা বিভিন্ন প্রসঙ্গে কুরআনে উল্লেখ করেছেন— {যদি আসমানে জমিনে বহু উপাস্য হত আল্লাহ ছাড়া, আসমান ও জমিন ধ্বংস হয়ে যেত}, {সত্য যদি তাদের প্রবৃত্তির অনুগামী হতো তাহলে আসমান জমিন এবং এতদুভয়ের মধ্যকার সবকিছু ধ্বংস হয়ে যেত}, {এরপর আমি আপনাকে রেখেছি ধর্মের এক বিশেষ শরীয়তের উপর। অতএব, আপনি এর অনুসরণ করুন এবং অজ্ঞানদের খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করবেন না।}
{নিশ্চয়ই আমি তাওরাত নাযিল করেছি তাতে রয়েছে হেদায়েত এবং আলো—আল কুরআন}
...............আল্লাহ তা‘আলা তাওরাত অবতীর্ণ করেছেন। তা শুধু এ জন্য নয় যে, তাওরাত মনোজগতের জন্য হেদায়েত ও আলোকমালা হবে এবং কেবল আকীদা ও ইবাদতপন্থা বর্ণনাকারী হবে। যদিও এ বিষয়গুলো সেখানে রয়েছে, কিন্তু তার পাশাপাশি তাওরাত অবতীর্ণ করার পেছনে আরও উদ্দেশ্য এই যে, এই গ্রন্থ অনুযায়ী যেন বাস্তব জীবনের সব সমস্যা সমাধান করা হয় এবং এর আলোকে আল্লাহর মানহাজ অনুসারে যেন ইহুদি সম্প্রদায়ের দুনিয়ার জীবন আলোকময় ও সুশৃঙ্খল-সুবিন্যস্ত হয়ে ওঠে।
হাদিসের মাঝে তাওরাত সম্পর্কে কি এসেছে, সেই আলোচনায় যাবার আগে আমরা দেখব, সময় ও কাল নির্বিশেষে আল্লাহর কিতাব হেফাজতের দায়িত্ব যাদেরকে দেয়া হয়েছে— যার ধারাবাহিকতায় বর্তমান সময়ে মুসলিম উম্মাহ কুরআন হেফাজতের এবং তদনুযায়ী বিচার ফয়সালা করার ব্যাপারে আদিষ্ট—তাদের জন্য উপরোক্ত আয়াতগুলোতে কি ধরনের শিক্ষা রয়েছে? মানুষের প্রবৃত্তি, কামনা-বাসনা, গোয়ার্তুমি ইত্যাদির কারণে কখনো আল্লাহর শরীয়ত যেভাবে প্রত্যাখ্যানের শিকার হয়ে থাকে, তাদের সে জাতীয় আচরণের কারণে কি ধরনের পরিণতির কথা আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন?
চলুন দেখে আসা যাক...{ অতএব, তোমরা মানুষকে ভয় করো না এবং আমাকে ভয় কর এবং আমার আয়াত সমূহের বিনিময়ে স্বল্পমূল্য গ্রহণ করো না, যেসব লোক আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, তদনুযায়ী ফায়সালা করে না, তারাই কাফের। (সূরা আল-মায়িদা: ৪৪)}
আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তা‘আলা ভালো করেই জানতেন, প্রতিটা যুগে প্রত্যেকটা প্রজন্মের কাছে আল্লাহর বিধান দ্বারা বিচার ফয়সালা করার বিষয়টি বিরোধিতা ও প্রত্যাখ্যানের শিকার হবে। কিছু মানুষ অবশ্যই এগুলো নিয়ে আপত্তি করবে। সে মানুষগুলো আন্তরিকভাবে কখনোই আল্লাহর বিধান মেনে নিতে পারবে না। আল্লাহর শরীয়তের সামনে তারা কিছুতেই আত্মসমর্পণ করতে চাইবে না। দাম্ভিক, অহংকারী, সীমালংঘনকারী, কর্তৃত্বশালী গোষ্ঠী আল্লাহর শরীয়তের বিরুদ্ধে মাঠে নেমে যাবে। তো এদের সঙ্গে করণীয় হলো, তারা যে উলুহিয়াতের দাবি করছে সে দাবি পরিত্যাগ করতে তাদেরকে বাধ্য করা, তাদের দাম্ভিকতার আলখেল্লা ছিন্ন করা, একমাত্র আল্লাহর জন্য উলুহিয়াত সাব্যস্ত করা, বিধান রচনা, সংবিধান প্রণয়ন এবং নিজেদের খেয়ালখুশি মতো, আল্লাহর অনুমতির তোয়াক্কা না করে মানুষকে বিচার ফায়সালা প্রদানের যে অন্যায় অধিকার তারা চর্চা করছে, জোরপূর্বক তাদের থেকে সে অধিকার ছিনিয়ে নেয়া।
• এমনিভাবে আল্লাহ তা'আলা জানতেন, লোভ-লালসা, জুলুম-অত্যাচার, ঘুষ-উৎকোচ, সুযোগ-সুবিধা এবং বৈষয়িক স্বার্থের গোলামেরা আল্লাহর শরীয়তের বিরোধিতায় লিপ্ত হবে। কারণ তারা ভাল করেই জানে, আল্লাহর ইনসাফপূর্ণ শরীয়তে তাদের জুলুম ও অন্যায় ব্যক্তিস্বার্থের কোন স্থান নেই। তেমনিভাবে কামনা বাসনার লালনকারী, প্রবৃত্তির অনুগামী, খেয়ালখুশির অনুসারী, পাপীষ্ঠ ও পাপাচারী এবং পদস্খলনের শিকার লোকেরা আল্লাহর শরীয়তের বিরোধিতা করবে। কারণ তারা ভাল করেই জানে আল্লাহর দ্বীন তাদের কর্মকাণ্ডের অপবিত্রতা নিজের মাঝে ধারণ করবে না; বরং তাদের শাস্তির ব্যবস্থা করবে। তেমনিভাবে বিভিন্ন সুবিধাবাদী মহল থেকে আল্লাহর দ্বীন বিরোধিতার শিকার হবে। সেই মহলের মানুষগুলো চাইবে না, তাদের অন্যায় ব্যক্তিস্বার্থ লঙ্ঘিত হয়ে পৃথিবীর বুকে সুখ-শান্তি, ন্যায়-নিষ্ঠা ও কল্যাণ বিরাজমান থাকুক।
• আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তা‘আলা উক্ত আয়াতগুলো নাযিলের প্রেক্ষাপটে ভালো করেই জানতেন, বিভিন্ন মহল থেকে তার শরীয়ত বিরোধিতার শিকার হবে। আর যেহেতু শরীয়ত হেফাজতের দায়িত্বে নিযুক্ত মহলের কর্তব্য হলো, এ বিরোধিতার মুখোমুখি হলে তা প্রতিরোধের চেষ্টা করা, এ পথের সংগ্রামে টিকে থেকে নিজেদের প্রাণ ও সম্পদ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ত্যাগ স্বীকার করা, এ কারণেই আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তা‘আলা তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলছেন, {অতএব, তোমরা মানুষকে ভয় করো না এবং আমাকে ভয় কর}
..............................হাদিসের মাঝে তাওরাত সম্পর্কে কি এসেছে, সেই আলোচনায় যাবার আগে আমরা দেখব, সময় ও কাল নির্বিশেষে আল্লাহর কিতাব হেফাজতের দায়িত্ব যাদেরকে দেয়া হয়েছে— যার ধারাবাহিকতায় বর্তমান সময়ে মুসলিম উম্মাহ কুরআন হেফাজতের এবং তদনুযায়ী বিচার ফয়সালা করার ব্যাপারে আদিষ্ট—তাদের জন্য উপরোক্ত আয়াতগুলোতে কি ধরনের শিক্ষা রয়েছে? মানুষের প্রবৃত্তি, কামনা-বাসনা, গোয়ার্তুমি ইত্যাদির কারণে কখনো আল্লাহর শরীয়ত যেভাবে প্রত্যাখ্যানের শিকার হয়ে থাকে, তাদের সে জাতীয় আচরণের কারণে কি ধরনের পরিণতির কথা আল্লাহ তা‘আলা বলেছেন?
চলুন দেখে আসা যাক...{ অতএব, তোমরা মানুষকে ভয় করো না এবং আমাকে ভয় কর এবং আমার আয়াত সমূহের বিনিময়ে স্বল্পমূল্য গ্রহণ করো না, যেসব লোক আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, তদনুযায়ী ফায়সালা করে না, তারাই কাফের। (সূরা আল-মায়িদা: ৪৪)}
আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তা‘আলা ভালো করেই জানতেন, প্রতিটা যুগে প্রত্যেকটা প্রজন্মের কাছে আল্লাহর বিধান দ্বারা বিচার ফয়সালা করার বিষয়টি বিরোধিতা ও প্রত্যাখ্যানের শিকার হবে। কিছু মানুষ অবশ্যই এগুলো নিয়ে আপত্তি করবে। সে মানুষগুলো আন্তরিকভাবে কখনোই আল্লাহর বিধান মেনে নিতে পারবে না। আল্লাহর শরীয়তের সামনে তারা কিছুতেই আত্মসমর্পণ করতে চাইবে না। দাম্ভিক, অহংকারী, সীমালংঘনকারী, কর্তৃত্বশালী গোষ্ঠী আল্লাহর শরীয়তের বিরুদ্ধে মাঠে নেমে যাবে। তো এদের সঙ্গে করণীয় হলো, তারা যে উলুহিয়াতের দাবি করছে সে দাবি পরিত্যাগ করতে তাদেরকে বাধ্য করা, তাদের দাম্ভিকতার আলখেল্লা ছিন্ন করা, একমাত্র আল্লাহর জন্য উলুহিয়াত সাব্যস্ত করা, বিধান রচনা, সংবিধান প্রণয়ন এবং নিজেদের খেয়ালখুশি মতো, আল্লাহর অনুমতির তোয়াক্কা না করে মানুষকে বিচার ফায়সালা প্রদানের যে অন্যায় অধিকার তারা চর্চা করছে, জোরপূর্বক তাদের থেকে সে অধিকার ছিনিয়ে নেয়া।
• এমনিভাবে আল্লাহ তা'আলা জানতেন, লোভ-লালসা, জুলুম-অত্যাচার, ঘুষ-উৎকোচ, সুযোগ-সুবিধা এবং বৈষয়িক স্বার্থের গোলামেরা আল্লাহর শরীয়তের বিরোধিতায় লিপ্ত হবে। কারণ তারা ভাল করেই জানে, আল্লাহর ইনসাফপূর্ণ শরীয়তে তাদের জুলুম ও অন্যায় ব্যক্তিস্বার্থের কোন স্থান নেই। তেমনিভাবে কামনা বাসনার লালনকারী, প্রবৃত্তির অনুগামী, খেয়ালখুশির অনুসারী, পাপীষ্ঠ ও পাপাচারী এবং পদস্খলনের শিকার লোকেরা আল্লাহর শরীয়তের বিরোধিতা করবে। কারণ তারা ভাল করেই জানে আল্লাহর দ্বীন তাদের কর্মকাণ্ডের অপবিত্রতা নিজের মাঝে ধারণ করবে না; বরং তাদের শাস্তির ব্যবস্থা করবে। তেমনিভাবে বিভিন্ন সুবিধাবাদী মহল থেকে আল্লাহর দ্বীন বিরোধিতার শিকার হবে। সেই মহলের মানুষগুলো চাইবে না, তাদের অন্যায় ব্যক্তিস্বার্থ লঙ্ঘিত হয়ে পৃথিবীর বুকে সুখ-শান্তি, ন্যায়-নিষ্ঠা ও কল্যাণ বিরাজমান থাকুক।
• আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তা‘আলা উক্ত আয়াতগুলো নাযিলের প্রেক্ষাপটে ভালো করেই জানতেন, বিভিন্ন মহল থেকে তার শরীয়ত বিরোধিতার শিকার হবে। আর যেহেতু শরীয়ত হেফাজতের দায়িত্বে নিযুক্ত মহলের কর্তব্য হলো, এ বিরোধিতার মুখোমুখি হলে তা প্রতিরোধের চেষ্টা করা, এ পথের সংগ্রামে টিকে থেকে নিজেদের প্রাণ ও সম্পদ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ত্যাগ স্বীকার করা, এ কারণেই আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তা‘আলা তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলছেন, {অতএব, তোমরা মানুষকে ভয় করো না এবং আমাকে ভয় কর}
• এরপর আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তা‘আলা ভালো করেই জানতেন, দায়িত্বে নিযুক্ত মহলের যাদেরকে দুরাচারীদের বিপক্ষে সাক্ষী বানানো হয়েছে, তাদের মাঝে কাউকে কাউকে জাগতিক লোভ-লালসা জাপ্টে ধরবে।
...............তাই তিনি হুঁশিয়ার করে দিয়ে বলেছেন, {এবং আমার আয়াতসমূহের বিনিময়ে স্বল্পমূল্য গ্রহণ করো না}।
আল্লাহর আয়াতসমূহের বিনিময়ে স্বল্পমূল্য গ্রহণের প্রক্রিয়া হল, বিধান বর্ণনা না করে নীরব থাকা, আল্লাহর বিধান পুরোপুরি বিকৃত করে ফেলা অথবা অর্ধসত্য মিলিয়ে ফতোয়া দেয়া।
এসব কাজের বিনিময়ে যে মূল্যই গ্রহণ করা হোক না কেন প্রকৃতপক্ষে তা নিতান্তই স্বল্প। যদি গোটা দুনিয়ার মালিকানা দিয়ে দেওয়া হয়, তবুও সেটা স্বল্প। সেখানে কিছু বেতন, কিছু চাকরি, কিছু উপাধি এবং ছোটখাটো কিছু সুযোগ-সুবিধা গ্রহণের বিনিময়ে কেমন করে আল্লাহর দ্বীন বিক্রি করে দেয়া যায়? কেমন করে ঈমান ও এক্বীনের বিনিময়ে জাহান্নাম ক্রয় করে নেয়া যায়?!
আহলুল জিম্মা সম্প্রদায়ের শরীয়তসিদ্ধ নিরাপত্তা ব্যাহত করে তাদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করার চাইতে উপরোক্ত খেয়ানত কম জঘন্য নয়। সম্পদের আমানতে অবহেলা করার চেয়ে হালকা ওজনের নয় উপরোক্ত কাজগুলো। সাক্ষী কর্তৃক সাক্ষ্য বিকৃত করার চেয়ে হালকা নয় আল্লাহর বিধান নিয়ে এই সওদা। এই মানুষগুলো আল্লাহর দ্বীনের ধারক বাহক উপাধি ধারণ করে খেয়ানত করে, আমানত রক্ষায় অবহেলা করে এমনকি তা পুরোপুরি বিকৃত করে দেয়। আল্লাহর বিধান দিয়ে বিচার-ফয়সালা করা না হলে তারা নীরব থাকে। কিতাবের বক্তব্যকে বিকৃত অর্থে ব্যবহার করে। কর্তৃত্ব ও বিত্তশালীদের খেয়াল-খুশিমতো তারা আল্লাহর কিতাবকে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করে এবং নিজেদের ব্যক্তি স্বার্থ উদ্ধার করে। তাই এতোটা জোরালোভাবে তাগিদ যুক্ত করে এরশাদ হয়েছে—
{আর যারা আল্লাহর বিধান দিয়ে বিচার ফায়সালা করে না, তারা কাফের}।
আরবি ব্যাকরণে শর্তবাচক বাক্যে যেহেতু ব্যাপকতার অর্থ থাকে, উক্ত আয়াতে তেমন বাক্য ব্যবহার করে ঠিক সেই ব্যাপকতা নির্দেশ করা হয়েছে। অর্থাৎ যারাই বর্ণিত কাজ করবে, তারাই শর্তের জবাবে উল্লেখিত বিধানের আওতাভুক্ত হবে। এ ব্যাপকতা নির্দেশ করে স্থান কাল পাত্র বিশেষের সঙ্গে এই বিধান সংযুক্ত হবার যত সংশয় থাকতে পারে, সবই দূর করে দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ যে কোন প্রজন্মে যে কোন জাতিগোষ্ঠীর ভেতর যে সমস্ত লোক আল্লাহর বিধান দিয়ে বিচার ফয়সালা করবে না, তারাই আয়াতে বর্ণিত কুফরীর বিধানের আওতাভুক্ত হবে।
..............................আল্লাহর আয়াতসমূহের বিনিময়ে স্বল্পমূল্য গ্রহণের প্রক্রিয়া হল, বিধান বর্ণনা না করে নীরব থাকা, আল্লাহর বিধান পুরোপুরি বিকৃত করে ফেলা অথবা অর্ধসত্য মিলিয়ে ফতোয়া দেয়া।
এসব কাজের বিনিময়ে যে মূল্যই গ্রহণ করা হোক না কেন প্রকৃতপক্ষে তা নিতান্তই স্বল্প। যদি গোটা দুনিয়ার মালিকানা দিয়ে দেওয়া হয়, তবুও সেটা স্বল্প। সেখানে কিছু বেতন, কিছু চাকরি, কিছু উপাধি এবং ছোটখাটো কিছু সুযোগ-সুবিধা গ্রহণের বিনিময়ে কেমন করে আল্লাহর দ্বীন বিক্রি করে দেয়া যায়? কেমন করে ঈমান ও এক্বীনের বিনিময়ে জাহান্নাম ক্রয় করে নেয়া যায়?!
আহলুল জিম্মা সম্প্রদায়ের শরীয়তসিদ্ধ নিরাপত্তা ব্যাহত করে তাদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করার চাইতে উপরোক্ত খেয়ানত কম জঘন্য নয়। সম্পদের আমানতে অবহেলা করার চেয়ে হালকা ওজনের নয় উপরোক্ত কাজগুলো। সাক্ষী কর্তৃক সাক্ষ্য বিকৃত করার চেয়ে হালকা নয় আল্লাহর বিধান নিয়ে এই সওদা। এই মানুষগুলো আল্লাহর দ্বীনের ধারক বাহক উপাধি ধারণ করে খেয়ানত করে, আমানত রক্ষায় অবহেলা করে এমনকি তা পুরোপুরি বিকৃত করে দেয়। আল্লাহর বিধান দিয়ে বিচার-ফয়সালা করা না হলে তারা নীরব থাকে। কিতাবের বক্তব্যকে বিকৃত অর্থে ব্যবহার করে। কর্তৃত্ব ও বিত্তশালীদের খেয়াল-খুশিমতো তারা আল্লাহর কিতাবকে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করে এবং নিজেদের ব্যক্তি স্বার্থ উদ্ধার করে। তাই এতোটা জোরালোভাবে তাগিদ যুক্ত করে এরশাদ হয়েছে—
{আর যারা আল্লাহর বিধান দিয়ে বিচার ফায়সালা করে না, তারা কাফের}।
আরবি ব্যাকরণে শর্তবাচক বাক্যে যেহেতু ব্যাপকতার অর্থ থাকে, উক্ত আয়াতে তেমন বাক্য ব্যবহার করে ঠিক সেই ব্যাপকতা নির্দেশ করা হয়েছে। অর্থাৎ যারাই বর্ণিত কাজ করবে, তারাই শর্তের জবাবে উল্লেখিত বিধানের আওতাভুক্ত হবে। এ ব্যাপকতা নির্দেশ করে স্থান কাল পাত্র বিশেষের সঙ্গে এই বিধান সংযুক্ত হবার যত সংশয় থাকতে পারে, সবই দূর করে দেয়া হয়েছে। অর্থাৎ যে কোন প্রজন্মে যে কোন জাতিগোষ্ঠীর ভেতর যে সমস্ত লোক আল্লাহর বিধান দিয়ে বিচার ফয়সালা করবে না, তারাই আয়াতে বর্ণিত কুফরীর বিধানের আওতাভুক্ত হবে।
কুরআনী শরীয়তের একটি অংশ হয়ে যাওয়া তাওরাতের শরীয়তের উপরোক্ত বিধানটি উল্লেখ করার পর এর বিরোধিতাকারীদের ব্যাপারে ব্যাপকভাবে আরো একটি হুকুম দেয়া হচ্ছে আরো কিছু পরেই—
{আল্লাহর অবতীর্ণ বিধান দ্বারা বিচার ফায়সালা করে না তারাই জালেম}।
বর্ণনাভঙ্গি ব্যাপকতা নির্দেশ করছে। এখানে হুকুমকে বিশেষায়িত করার মত কোন উপাদান নেই। কিন্তু এখানে যেহেতু নতুন একটি চরিত্রের কথা বলা হল তথা জালিম হওয়া, এটা পূর্বের হুকুমকে বিশেষায়িত করবে না বরং এটা নতুন চরিত্র।
এখানে ব্যাপারটা এমন নয় যে, বিচার ফয়সালা না করার কারণে কাফের হয়ে যাওয়ার যে হুকুম পূর্বে বলা হয়েছিল, এখানে নতুন চরিত্র উল্লেখের দ্বারা সেই হুকুম পরিবর্তন করে বোঝানো হচ্ছে, কিছু মানুষ কাফের নয় বরং জালেম হবে। এরকমটা বুঝে থাকলে ভুল হবে। বরং এখানে জালেম হবার কথা উল্লেখ করে বোঝানো হচ্ছে, আল্লাহর অবতীর্ণ বিধান দ্বারা বিচার ফয়সালা পরিত্যাগকারী ব্যক্তি যেমনিভাবে কাফের হবে, তেমনিভাবে জালেমও হবে।
আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তা'আলার উলুহিয়াত তথা ইবাদতের উপাস্য হওয়া এবং বিধান দেবার অধিকার প্রত্যাখ্যান করার কারণে সে ব্যক্তি কাফের হবে। আল্লাহর একক অধিকারে সে ব্যক্তি হস্তক্ষেপ করার কারণে এবং নিজে বিধানদাতা দাবি করার কারণে কাফের হবে। সেই সঙ্গে মানুষকে আল্লাহর শরীয়ত ভিন্ন নিজের তৈরি শরীয়ত মানতে বাধ্য করার কারণে সে ব্যক্তি জালেম হবে। কারণ আল্লাহর শরীয়ত জনমানুষের অবস্থা ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত করে এবং যাবতীয় সমস্যা ও জটিলতা বিদূরিত করার মাধ্যমে মানুষের ইহ জাগতিক অবস্থাদি পরিশুদ্ধ করে। কিন্তু তার নিজের তৈরী শরীয়ত কখনোই তা করতে পারে না, তা তো হয় জুলুম সর্বস্ব। এছাড়াও জালেম হবার কারণ হল, নিজেকে ধ্বংসের মুখে ফেলে দিয়ে, নিজেকে কুফরীর শাস্তি পাবার যোগ্য সাব্যস্ত করে এবং নিজের জীবন সহ জনমানুষের জীবন দুর্বিষহ করার বন্দোবস্ত করে, সে ব্যক্তি নিজের উপর জুলুম করেছে।
যেহেতু আয়াতের মূল কর্তৃকারক ও মুখ্য কাজ অভিন্ন, তথা আল্লাহর বিধান দিয়ে বিচার ফয়সালা না করা—আর এই কাজের পরিণতি হিসেবে দু'ধরনের হুকুম দেয়া হয়েছে; প্রথমে বলা হয়েছে কাফের হয়ে যাবে, দ্বিতীয়ত বলা হয়েছে জালেম হয়ে যাবে, তাই দ্বিতীয় পরিণতির চরিত্রটি প্রথম চরিত্রের সঙ্গে যুক্ত হবে। আর উভয় চরিত্র একসঙ্গে কর্তৃকারক ও শর্ত বাচক বাক্যের সঙ্গে যুক্ত হবে।
অতঃপর তাওরাতের পরে অবতীর্ণ গ্রন্থের ব্যাপারে যারা অভিন্ন আচরণ করবে তাদের সম্পর্কে কুরআনিক বর্ণনা তেমনি ব্যাপক অর্থবোধক হুকুম দিয়ে যাচ্ছে এভাবে—
وَقَفَّيْنَا عَلَىٰ آثَارِهِم بِعِيسَى ابْنِ مَرْيَمَ مُصَدِّقًا لِّمَا بَيْنَ يَدَيْهِ مِنَ التَّوْرَاةِ ۖ وَآتَيْنَاهُ الْإِنجِيلَ فِيهِ هُدًى وَنُورٌ وَمُصَدِّقًا لِّمَا بَيْنَ يَدَيْهِ مِنَ التَّوْرَاةِ وَهُدًى وَمَوْعِظَةً لِّلْمُتَّقِينَ ﴿٤٦﴾ وَلْيَحْكُمْ أَهْلُ الْإِنجِيلِ بِمَا أَنزَلَ اللَّهُ فِيهِ ۚ وَمَن لَّمْ يَحْكُم بِمَا أَنزَلَ اللَّهُ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الْفَاسِقُونَ ﴿٤٧﴾
অর্থঃ আমি তাদের পেছনে মরিয়ম তনয় ঈসাকে প্রেরণ করেছি। তিনি পূর্ববর্তী গ্রন্থ তওরাতের সত্যায়নকারী ছিলেন। আমি তাঁকে ইঞ্জিল প্রদান করেছি। এতে হেদায়াত ও আলো রয়েছে। এটি পূর্ববতী গ্রন্থ তওরাতের সত্যায়ন করে পথ প্রদর্শন করে এবং এটি খোদাভীরুদের জন্যে হেদায়েত উপদেশ বাণী। ইঞ্জিলের অধিকারীদের উচিত, আল্লাহ তাতে যা অবতীর্ণ করেছেন। তদানুযায়ী ফয়সালা করা। যারা আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, তদনুযায়ী ফয়সালা করে না, তারাই পাপাচারী। (সূরা আল মায়েদা: ৪৬-৪৭)
..............................{আল্লাহর অবতীর্ণ বিধান দ্বারা বিচার ফায়সালা করে না তারাই জালেম}।
বর্ণনাভঙ্গি ব্যাপকতা নির্দেশ করছে। এখানে হুকুমকে বিশেষায়িত করার মত কোন উপাদান নেই। কিন্তু এখানে যেহেতু নতুন একটি চরিত্রের কথা বলা হল তথা জালিম হওয়া, এটা পূর্বের হুকুমকে বিশেষায়িত করবে না বরং এটা নতুন চরিত্র।
এখানে ব্যাপারটা এমন নয় যে, বিচার ফয়সালা না করার কারণে কাফের হয়ে যাওয়ার যে হুকুম পূর্বে বলা হয়েছিল, এখানে নতুন চরিত্র উল্লেখের দ্বারা সেই হুকুম পরিবর্তন করে বোঝানো হচ্ছে, কিছু মানুষ কাফের নয় বরং জালেম হবে। এরকমটা বুঝে থাকলে ভুল হবে। বরং এখানে জালেম হবার কথা উল্লেখ করে বোঝানো হচ্ছে, আল্লাহর অবতীর্ণ বিধান দ্বারা বিচার ফয়সালা পরিত্যাগকারী ব্যক্তি যেমনিভাবে কাফের হবে, তেমনিভাবে জালেমও হবে।
আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তা'আলার উলুহিয়াত তথা ইবাদতের উপাস্য হওয়া এবং বিধান দেবার অধিকার প্রত্যাখ্যান করার কারণে সে ব্যক্তি কাফের হবে। আল্লাহর একক অধিকারে সে ব্যক্তি হস্তক্ষেপ করার কারণে এবং নিজে বিধানদাতা দাবি করার কারণে কাফের হবে। সেই সঙ্গে মানুষকে আল্লাহর শরীয়ত ভিন্ন নিজের তৈরি শরীয়ত মানতে বাধ্য করার কারণে সে ব্যক্তি জালেম হবে। কারণ আল্লাহর শরীয়ত জনমানুষের অবস্থা ইতিবাচকভাবে প্রভাবিত করে এবং যাবতীয় সমস্যা ও জটিলতা বিদূরিত করার মাধ্যমে মানুষের ইহ জাগতিক অবস্থাদি পরিশুদ্ধ করে। কিন্তু তার নিজের তৈরী শরীয়ত কখনোই তা করতে পারে না, তা তো হয় জুলুম সর্বস্ব। এছাড়াও জালেম হবার কারণ হল, নিজেকে ধ্বংসের মুখে ফেলে দিয়ে, নিজেকে কুফরীর শাস্তি পাবার যোগ্য সাব্যস্ত করে এবং নিজের জীবন সহ জনমানুষের জীবন দুর্বিষহ করার বন্দোবস্ত করে, সে ব্যক্তি নিজের উপর জুলুম করেছে।
যেহেতু আয়াতের মূল কর্তৃকারক ও মুখ্য কাজ অভিন্ন, তথা আল্লাহর বিধান দিয়ে বিচার ফয়সালা না করা—আর এই কাজের পরিণতি হিসেবে দু'ধরনের হুকুম দেয়া হয়েছে; প্রথমে বলা হয়েছে কাফের হয়ে যাবে, দ্বিতীয়ত বলা হয়েছে জালেম হয়ে যাবে, তাই দ্বিতীয় পরিণতির চরিত্রটি প্রথম চরিত্রের সঙ্গে যুক্ত হবে। আর উভয় চরিত্র একসঙ্গে কর্তৃকারক ও শর্ত বাচক বাক্যের সঙ্গে যুক্ত হবে।
অতঃপর তাওরাতের পরে অবতীর্ণ গ্রন্থের ব্যাপারে যারা অভিন্ন আচরণ করবে তাদের সম্পর্কে কুরআনিক বর্ণনা তেমনি ব্যাপক অর্থবোধক হুকুম দিয়ে যাচ্ছে এভাবে—
وَقَفَّيْنَا عَلَىٰ آثَارِهِم بِعِيسَى ابْنِ مَرْيَمَ مُصَدِّقًا لِّمَا بَيْنَ يَدَيْهِ مِنَ التَّوْرَاةِ ۖ وَآتَيْنَاهُ الْإِنجِيلَ فِيهِ هُدًى وَنُورٌ وَمُصَدِّقًا لِّمَا بَيْنَ يَدَيْهِ مِنَ التَّوْرَاةِ وَهُدًى وَمَوْعِظَةً لِّلْمُتَّقِينَ ﴿٤٦﴾ وَلْيَحْكُمْ أَهْلُ الْإِنجِيلِ بِمَا أَنزَلَ اللَّهُ فِيهِ ۚ وَمَن لَّمْ يَحْكُم بِمَا أَنزَلَ اللَّهُ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الْفَاسِقُونَ ﴿٤٧﴾
অর্থঃ আমি তাদের পেছনে মরিয়ম তনয় ঈসাকে প্রেরণ করেছি। তিনি পূর্ববর্তী গ্রন্থ তওরাতের সত্যায়নকারী ছিলেন। আমি তাঁকে ইঞ্জিল প্রদান করেছি। এতে হেদায়াত ও আলো রয়েছে। এটি পূর্ববতী গ্রন্থ তওরাতের সত্যায়ন করে পথ প্রদর্শন করে এবং এটি খোদাভীরুদের জন্যে হেদায়েত উপদেশ বাণী। ইঞ্জিলের অধিকারীদের উচিত, আল্লাহ তাতে যা অবতীর্ণ করেছেন। তদানুযায়ী ফয়সালা করা। যারা আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, তদনুযায়ী ফয়সালা করে না, তারাই পাপাচারী। (সূরা আল মায়েদা: ৪৬-৪৭)
এখানেও আয়াতের মূল টেক্সট ব্যাপকতা নির্দেশ করছে এবং তা মূল শর্ত ছাড়া আনুষঙ্গিক শর্তাদি থেকে মুক্ত। আর পাপিষ্ট হওয়ার চরিত্রটি সংযুক্ত হবে ইতিপূর্বে উল্লেখিত দুই চরিত্রের সঙ্গে তথা কাফের হওয়া এবং জালেম হওয়া। এমন নয়, পাপীষ্ঠ হওয়ার কথা বলে পূর্বোক্ত দুই চরিত্র থেকে ভিন্ন নতুন একটি চরিত্র ও অবস্থা নির্দেশ করা হচ্ছে। এমনটা বোঝানো হচ্ছে না যে, কিছু মানুষ আল্লাহর বিধান দ্বারা বিচার ফায়সালা পরিত্যাগ করার দ্বারা কাফের ও জালিম নয় বরং পাপাচারী হবে। এই চরিত্রত্রয় একই সঙ্গে ঐ সকল মানুষের সঙ্গে সংযুক্ত হবে যারা আল্লাহর বিধান দিয়ে বিচার ফায়সালা করে না, চাই তারা যেকোন প্রজন্মের হোক না কেন, যেকোন জাতিগোষ্ঠীর এবং যেকোন যুগের হোক না কেন।
আল্লাহর উলুহিয়াত অস্বীকার তথা তাঁর শরীয়তের সামনে আত্মসমর্পণ না করার কারণে ব্যক্তি কাফের হবে। আল্লাহর শরীয়ত ভিন্ন অন্য শরীয়ত জনমানুষকে মানতে বাধ্য করা এবং তাদের জীবনকে দুর্বিষহ করে ফেলার কারণে ব্যক্তি জালেম হবে। আর আল্লাহর মানহাজ থেকে বেরিয়ে যাওয়া এবং অন্যায়ের পথ অনুসরণ করার কারণে পাপাচারী হবে। এই সকল কাজ একই সঙ্গে ওই ব্যক্তির মাঝে পাওয়া যায়, যে আল্লাহর বিধান দিয়ে বিচার ফায়সালা করে না। মূল অন্যায়কারী সেই কর্তার কর্মকাণ্ডের মাঝে সবগুলো অপরাধ শামিল। সন্দেহাতীতভাবে সবকিছুই তার মধ্যে পাওয়া যায়।
পূর্ব যুগের দুই কিতাবের ব্যাপারে বলার পর সর্বশেষ রাসূলের গ্রন্থের আলোচনা আসছে। সর্বশেষে সেই শরীয়তের প্রসঙ্গ আনা হচ্ছে, যা ইসলাম নামে আমাদের কাছে পরিচিত। এই সেই ইসলাম যা আল্লাহর দ্বীনের চূড়ান্তরূপ হিসেবে আমাদের কাছে এসেছে। এটি গোটা মানবজাতির জন্য শরীয়ত ও সংবিধান হিসেবে অপরিবর্তনীয় রূপ নিয়ে আবির্ভূত হয়েছে।
..............................আল্লাহর উলুহিয়াত অস্বীকার তথা তাঁর শরীয়তের সামনে আত্মসমর্পণ না করার কারণে ব্যক্তি কাফের হবে। আল্লাহর শরীয়ত ভিন্ন অন্য শরীয়ত জনমানুষকে মানতে বাধ্য করা এবং তাদের জীবনকে দুর্বিষহ করে ফেলার কারণে ব্যক্তি জালেম হবে। আর আল্লাহর মানহাজ থেকে বেরিয়ে যাওয়া এবং অন্যায়ের পথ অনুসরণ করার কারণে পাপাচারী হবে। এই সকল কাজ একই সঙ্গে ওই ব্যক্তির মাঝে পাওয়া যায়, যে আল্লাহর বিধান দিয়ে বিচার ফায়সালা করে না। মূল অন্যায়কারী সেই কর্তার কর্মকাণ্ডের মাঝে সবগুলো অপরাধ শামিল। সন্দেহাতীতভাবে সবকিছুই তার মধ্যে পাওয়া যায়।
পূর্ব যুগের দুই কিতাবের ব্যাপারে বলার পর সর্বশেষ রাসূলের গ্রন্থের আলোচনা আসছে। সর্বশেষে সেই শরীয়তের প্রসঙ্গ আনা হচ্ছে, যা ইসলাম নামে আমাদের কাছে পরিচিত। এই সেই ইসলাম যা আল্লাহর দ্বীনের চূড়ান্তরূপ হিসেবে আমাদের কাছে এসেছে। এটি গোটা মানবজাতির জন্য শরীয়ত ও সংবিধান হিসেবে অপরিবর্তনীয় রূপ নিয়ে আবির্ভূত হয়েছে।
এরশাদ হচ্ছে —
﴿وَأَنزَلْنَآ إِلَيْكَ ٱلْكِتَٰبَ بِٱلْحَقِّ مُصَدِّقًا لِّمَا بَيْنَ يَدَيْهِ مِنَ ٱلْكِتَٰبِ وَمُهَيْمِنًا عَلَيْهِ فَٱحْكُم بَيْنَهُم بِمَآ أَنزَلَ ٱللَّهُ وَلَا تَتَّبِعْ أَهْوَآءَهُمْ عَمَّا جَآءَكَ مِنَ ٱلْحَقِّ لِكُلٍّ جَعَلْنَا مِنكُمْ شِرْعَةً وَمِنْهَاجًا وَلَوْ شَآءَ ٱللَّهُ لَجَعَلَكُمْ أُمَّةً وَٰحِدَةً وَلَٰكِن لِّيَبْلُوَكُمْ فِى مَآ ءَاتَىٰكُمْ فَٱسْتَبِقُوا۟ ٱلْخَيْرَٰتِ إِلَى ٱللَّهِ مَرْجِعُكُمْ جَمِيعًا فَيُنَبِّئُكُم بِمَا كُنتُمْ فِيهِ تَخْتَلِفُونَ * وَأَنِ ٱحْكُم بَيْنَهُم بِمَآ أَنزَلَ ٱللَّهُ وَلَا تَتَّبِعْ أَهْوَآءَهُمْ وَٱحْذَرْهُمْ أَن يَفْتِنُوكَ عَنۢ بَعْضِ مَآ أَنزَلَ ٱللَّهُ إِلَيْكَ فَإِن تَوَلَّوْا۟ فَٱعْلَمْ أَنَّمَا يُرِيدُ ٱللَّهُ أَن يُصِيبَهُم بِبَعْضِ ذُنُوبِهِمْ وَإِنَّ كَثِيرًا مِّنَ ٱلنَّاسِ لَفَٰسِقُونَ * أَفَحُكْمَ ٱلْجَٰهِلِيَّةِ يَبْغُونَ وَمَنْ أَحْسَنُ مِنَ ٱللَّهِ حُكْمًا لِّقَوْمٍ يُوقِنُونَ﴾
অর্থঃ আমি আপনার প্রতি অবতীর্ণ করেছি সত্যগ্রন্থ, যা পূর্ববতী গ্রন্থসমূহের সত্যায়নকারী এবং সেগুলোর বিষয়বস্তুর রক্ষণাবেক্ষণকারী। অতএব, আপনি তাদের পারস্পারিক ব্যাপারাদিতে আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, তদনুযায়ী ফয়সালা করুন এবং আপনার কাছে যে সৎপথ এসেছে, তা ছেড়ে তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করবেন না। আমি তোমাদের প্রত্যেককে একটি আইন ও পথ দিয়েছি। যদি আল্লাহ চাইতেন, তবে তোমাদের সবাইকে এক উম্মত করে দিতেন, কিন্তু এরূপ করেননি-যাতে তোমাদেরকে যে ধর্ম দিয়েছেন, তাতে তোমাদের পরীক্ষা নেন। অতএব, দৌঁড়ে কল্যাণকর বিষয়াদি অর্জন কর। তোমাদের সবাইকে আল্লাহর কাছে প্রত্যাবর্তন করতে হবে। অতঃপর তিনি অবহিত করবেন সে বিষয়, যাতে তোমরা মতবিরোধ করতে। আর আমি আদেশ করছি যে, আপনি তাদের পারস্পরিক ব্যাপারাদিতে আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তদনুযায়ী ফয়সালা করুন; তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করবেন না এবং তাদের থেকে সতর্ক থাকুন-যেন তারা আপনাকে এমন কোন নির্দেশ থেকে বিচ্যুত না করে, যা আল্লাহ আপনার প্রতি নাযিল করেছেন। অনন্তর যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে জেনে নিন, আল্লাহ তাদেরকে তাদের গোনাহের কিছু শাস্তি দিতেই চেয়েছেন। মানুষের মধ্যে অনেকেই নাফরমান। তারা কি জাহেলিয়াত আমলের ফয়সালা কামনা করে? আল্লাহ অপেক্ষা বিশ্বাসীদের জন্যে উত্তম ফয়সালাকারী কে রয়েছে? (সূরা আল মায়িদা: ৪৮-৫০)
এ সমস্ত আয়াত সামনে রেখে মানুষের কি করা উচিত?! আয়াতের এই যে বর্ণনাভঙ্গি, দ্ব্যর্থহীন উপস্থাপনা শৈলী, বিশেষ পরিস্থিতি ও সময়ে আল্লাহর শরীয়াতের অতি সামান্য অংশ হলেও পরিত্যাগ করার পক্ষে বৈধতার যে সংশয়গুলো অন্তরে উপস্থিত হয়, সেগুলো বিনাশকারী আয়াতের যেই জোরালো ভঙ্গিমা ও হুঁশিয়ারি, এসব কিছু নিয়ে মানুষকে চিন্তা করতে হবে।
তখন মানুষ আশ্চর্য হয়ে যাবে এই বাস্তবতা অবলোকন করে যে, ইসলামের দাবিদার কোন মুসলমানের পক্ষে বিশেষ পরিস্থিতি ও প্রেক্ষাপটের অজুহাতে কেমন করে আল্লাহর গোটা শরীয়ত পরিত্যাগ করা সম্ভব হতে পারে?! আল্লাহর শরীয়তকে পুরোপুরিভাবে প্রত্যাখ্যান করার পর কেমন করে কেউ নিজে মুসলমান হবার দাবির ওপর অটল থাকতে পারে! বিস্ময়ের ব্যাপার যে, ইসলামের মালা গলা থেকে খুলে ফেলার পরেও এবং আল্লাহর গোটা শরীয়ত থেকে নিজেকে মুক্ত করে নেবার পরেও কেমন করে লোকজন নিজেদেরকে মুসলমান বলে অভিহিত করতে পারে! তারা তো আল্লাহর উলুহিয়াত স্বীকারই করে না। কারণ আল্লাহর শরীয়ত মেনে না নিলে তো আল্লাহর উলুহিয়াত প্রত্যাখ্যান করাই হয়ে থাকে। জীবন ও জগতের সর্বস্তরে, সার্বিক পর্যায়ে আল্লাহর শরীয়তের কার্যকারিতা ও সামগ্রিকতা অস্বীকারের দ্বারা তো কুফুরি অনায়াসেই নিশ্চিত হয়ে যায়। সার্বিক পরিস্থিতি ও প্রেক্ষাপটে আল্লাহর শরীয়ত বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয়তা স্বীকার না করলে মানুষ কেমন করে মুসলমান থাকে?!
..............................﴿وَأَنزَلْنَآ إِلَيْكَ ٱلْكِتَٰبَ بِٱلْحَقِّ مُصَدِّقًا لِّمَا بَيْنَ يَدَيْهِ مِنَ ٱلْكِتَٰبِ وَمُهَيْمِنًا عَلَيْهِ فَٱحْكُم بَيْنَهُم بِمَآ أَنزَلَ ٱللَّهُ وَلَا تَتَّبِعْ أَهْوَآءَهُمْ عَمَّا جَآءَكَ مِنَ ٱلْحَقِّ لِكُلٍّ جَعَلْنَا مِنكُمْ شِرْعَةً وَمِنْهَاجًا وَلَوْ شَآءَ ٱللَّهُ لَجَعَلَكُمْ أُمَّةً وَٰحِدَةً وَلَٰكِن لِّيَبْلُوَكُمْ فِى مَآ ءَاتَىٰكُمْ فَٱسْتَبِقُوا۟ ٱلْخَيْرَٰتِ إِلَى ٱللَّهِ مَرْجِعُكُمْ جَمِيعًا فَيُنَبِّئُكُم بِمَا كُنتُمْ فِيهِ تَخْتَلِفُونَ * وَأَنِ ٱحْكُم بَيْنَهُم بِمَآ أَنزَلَ ٱللَّهُ وَلَا تَتَّبِعْ أَهْوَآءَهُمْ وَٱحْذَرْهُمْ أَن يَفْتِنُوكَ عَنۢ بَعْضِ مَآ أَنزَلَ ٱللَّهُ إِلَيْكَ فَإِن تَوَلَّوْا۟ فَٱعْلَمْ أَنَّمَا يُرِيدُ ٱللَّهُ أَن يُصِيبَهُم بِبَعْضِ ذُنُوبِهِمْ وَإِنَّ كَثِيرًا مِّنَ ٱلنَّاسِ لَفَٰسِقُونَ * أَفَحُكْمَ ٱلْجَٰهِلِيَّةِ يَبْغُونَ وَمَنْ أَحْسَنُ مِنَ ٱللَّهِ حُكْمًا لِّقَوْمٍ يُوقِنُونَ﴾
অর্থঃ আমি আপনার প্রতি অবতীর্ণ করেছি সত্যগ্রন্থ, যা পূর্ববতী গ্রন্থসমূহের সত্যায়নকারী এবং সেগুলোর বিষয়বস্তুর রক্ষণাবেক্ষণকারী। অতএব, আপনি তাদের পারস্পারিক ব্যাপারাদিতে আল্লাহ যা অবতীর্ণ করেছেন, তদনুযায়ী ফয়সালা করুন এবং আপনার কাছে যে সৎপথ এসেছে, তা ছেড়ে তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করবেন না। আমি তোমাদের প্রত্যেককে একটি আইন ও পথ দিয়েছি। যদি আল্লাহ চাইতেন, তবে তোমাদের সবাইকে এক উম্মত করে দিতেন, কিন্তু এরূপ করেননি-যাতে তোমাদেরকে যে ধর্ম দিয়েছেন, তাতে তোমাদের পরীক্ষা নেন। অতএব, দৌঁড়ে কল্যাণকর বিষয়াদি অর্জন কর। তোমাদের সবাইকে আল্লাহর কাছে প্রত্যাবর্তন করতে হবে। অতঃপর তিনি অবহিত করবেন সে বিষয়, যাতে তোমরা মতবিরোধ করতে। আর আমি আদেশ করছি যে, আপনি তাদের পারস্পরিক ব্যাপারাদিতে আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তদনুযায়ী ফয়সালা করুন; তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করবেন না এবং তাদের থেকে সতর্ক থাকুন-যেন তারা আপনাকে এমন কোন নির্দেশ থেকে বিচ্যুত না করে, যা আল্লাহ আপনার প্রতি নাযিল করেছেন। অনন্তর যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে জেনে নিন, আল্লাহ তাদেরকে তাদের গোনাহের কিছু শাস্তি দিতেই চেয়েছেন। মানুষের মধ্যে অনেকেই নাফরমান। তারা কি জাহেলিয়াত আমলের ফয়সালা কামনা করে? আল্লাহ অপেক্ষা বিশ্বাসীদের জন্যে উত্তম ফয়সালাকারী কে রয়েছে? (সূরা আল মায়িদা: ৪৮-৫০)
এ সমস্ত আয়াত সামনে রেখে মানুষের কি করা উচিত?! আয়াতের এই যে বর্ণনাভঙ্গি, দ্ব্যর্থহীন উপস্থাপনা শৈলী, বিশেষ পরিস্থিতি ও সময়ে আল্লাহর শরীয়াতের অতি সামান্য অংশ হলেও পরিত্যাগ করার পক্ষে বৈধতার যে সংশয়গুলো অন্তরে উপস্থিত হয়, সেগুলো বিনাশকারী আয়াতের যেই জোরালো ভঙ্গিমা ও হুঁশিয়ারি, এসব কিছু নিয়ে মানুষকে চিন্তা করতে হবে।
তখন মানুষ আশ্চর্য হয়ে যাবে এই বাস্তবতা অবলোকন করে যে, ইসলামের দাবিদার কোন মুসলমানের পক্ষে বিশেষ পরিস্থিতি ও প্রেক্ষাপটের অজুহাতে কেমন করে আল্লাহর গোটা শরীয়ত পরিত্যাগ করা সম্ভব হতে পারে?! আল্লাহর শরীয়তকে পুরোপুরিভাবে প্রত্যাখ্যান করার পর কেমন করে কেউ নিজে মুসলমান হবার দাবির ওপর অটল থাকতে পারে! বিস্ময়ের ব্যাপার যে, ইসলামের মালা গলা থেকে খুলে ফেলার পরেও এবং আল্লাহর গোটা শরীয়ত থেকে নিজেকে মুক্ত করে নেবার পরেও কেমন করে লোকজন নিজেদেরকে মুসলমান বলে অভিহিত করতে পারে! তারা তো আল্লাহর উলুহিয়াত স্বীকারই করে না। কারণ আল্লাহর শরীয়ত মেনে না নিলে তো আল্লাহর উলুহিয়াত প্রত্যাখ্যান করাই হয়ে থাকে। জীবন ও জগতের সর্বস্তরে, সার্বিক পর্যায়ে আল্লাহর শরীয়তের কার্যকারিতা ও সামগ্রিকতা অস্বীকারের দ্বারা তো কুফুরি অনায়াসেই নিশ্চিত হয়ে যায়। সার্বিক পরিস্থিতি ও প্রেক্ষাপটে আল্লাহর শরীয়ত বাস্তবায়নের প্রয়োজনীয়তা স্বীকার না করলে মানুষ কেমন করে মুসলমান থাকে?!
فَاحْكُم بَيْنَهُم بِمَا أَنزَلَ اللَّهُ ۖ وَلَا تَتَّبِعْ أَهْوَاءَهُمْ عَمَّا جَاءَكَ مِنَ الْحَقِّ ..
এখানে বলা হয়েছে {অতএব আপনি আল্লাহর অবতীর্ণ বিধান দ্বারা তাদের মাঝে বিচার ফায়সালা করুন! আপনার কাছে যেই হক এসেছে, তা থেকে বিচ্যুত হয়ে আপনি তাদের খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করবেন না!}
এ নির্দেশ সর্বপ্রথম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি। কারণ আহলে-কিতাবরা তাঁর কাছে বিচার নিয়ে এসেছিল। এরই পরিপ্রেক্ষিতে উক্ত আয়াত অবতীর্ণ হয়। কিন্তু এককভাবে এই প্রেক্ষাপটের সঙ্গে উক্ত আয়াত বিশেষায়িত নয়। এই আয়াতের হুকুম স্থান ও কাল নির্বিশেষে প্রযোজ্য। যতদিন পর্যন্ত নতুন কোন রাসূল না আসবে, নতুন কোন রাসূলের রিসালাত প্রমাণিত না হবে, এই হুকুম প্রযোজ্য হবে। অতএব আমরা বুঝতে পারি, কেয়ামত দিবসের আগ পর্যন্ত এই হুকুম পরিবর্তিত করার আর কোনো সুযোগ নেই।
..............................এখানে বলা হয়েছে {অতএব আপনি আল্লাহর অবতীর্ণ বিধান দ্বারা তাদের মাঝে বিচার ফায়সালা করুন! আপনার কাছে যেই হক এসেছে, তা থেকে বিচ্যুত হয়ে আপনি তাদের খেয়াল-খুশীর অনুসরণ করবেন না!}
এ নির্দেশ সর্বপ্রথম রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের প্রতি। কারণ আহলে-কিতাবরা তাঁর কাছে বিচার নিয়ে এসেছিল। এরই পরিপ্রেক্ষিতে উক্ত আয়াত অবতীর্ণ হয়। কিন্তু এককভাবে এই প্রেক্ষাপটের সঙ্গে উক্ত আয়াত বিশেষায়িত নয়। এই আয়াতের হুকুম স্থান ও কাল নির্বিশেষে প্রযোজ্য। যতদিন পর্যন্ত নতুন কোন রাসূল না আসবে, নতুন কোন রাসূলের রিসালাত প্রমাণিত না হবে, এই হুকুম প্রযোজ্য হবে। অতএব আমরা বুঝতে পারি, কেয়ামত দিবসের আগ পর্যন্ত এই হুকুম পরিবর্তিত করার আর কোনো সুযোগ নেই।
আর আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তা‘আলা জানতেন, মানুষ বিভিন্ন রকমের ওজর-আপত্তি দেখাবে। বিচারকেরা বিচারপ্রার্থীদের প্রবৃত্তি ও খেয়াল-খুশীর অনুসরণের এবং আল্লাহর অবতীর্ণ বিধান এড়িয়ে চলার জন্য বৈধতার বিভিন্ন উপায় খুঁজে বের করবে। ছোট থেকে ছোট কুরআনিক বিধান না এড়িয়ে আল্লাহর গোটা শরীয়ত দ্বারা বিচার ফয়সালা করার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে অন্তরে যত রকমের সংশয় সন্দেহ উঁকি দিতে পারে, বিশেষ পরিস্থিতি ও প্রেক্ষাপটে আল্লাহর বিধান থেকে বিচ্যুত হবার যত অজুহাত থাকতে পারে, উপরোক্ত আয়াতগুলোতে সবগুলোর ব্যাপারে আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তা‘আলা তাঁর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন। এই হুঁশিয়ারি একাধিকবার তিনি এনেছেন। বিচারপ্রার্থীদের খেয়াল-খুশীর অনুসরণ, নবীকে আল্লাহর নাযিলকৃত বিধি-বিধান থেকে বিচ্যুত ও ফেতনাযুক্ত করবার জন্য তাদের সকল প্রচেষ্টা সহ সবকিছুই তিনি তুলে ধরে সতর্ক করে দিয়েছেন।
আল্লাহর শরীয়ত এড়িয়ে চলার পক্ষে মনের মাঝে যে কৌশল-চিন্তা এবং সংশয়-সন্দেহগুলো আসতে পারে তন্মধ্যে প্রথমটা হল, বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী, নানা অঞ্চলের অধিবাসী, বিভিন্ন মত ও পথের মানুষকে একই প্লাটফর্মে একত্রিত করার এবং সকলের মনোতুষ্টি অর্জনের সুপ্ত মানবিক আকাঙ্ক্ষা। কারণ কখনো মানুষের চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে বিশেষ কাজ শরীয়তের বিধি-বিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয়ে যাবে স্বভাবতই। আবার শরীয়তের মৌলিক বিষয়াবলীর অন্তর্ভুক্ত নয় এবং তুলনামূলক কম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়—এমন অজুহাতেও অনেক সময় ইসলামের বিধি-বিধানে শিথিলতা করা হবে!
অথচ বর্ণিত হয়েছে, ইহুদীরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে প্রস্তাব করেছিল, রজম তথা ব্যভিচারের শাস্তি হিসেবে প্রস্তরাঘাতে হত্যাদণ্ড সহ তাওরাতের কিছু নির্দিষ্ট বিধানে শিথিলতার পক্ষে নবীজি যদি তাদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হন, তাহলে তারা নবীজীর প্রতি ঈমান আনবে। আয়াতে আল্লাহর পক্ষ থেকে যে সতর্কবাণী ও হুঁশিয়ারি এসেছে, তা বিশেষভাবে ইহুদিদের এই প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতেই। কিন্তু এটি সুস্পষ্ট যে, এই আয়াতের হুকুম নির্দিষ্ট ঘটনা, প্রেক্ষাপট ও প্রস্তাবের সঙ্গে প্রযোজ্য নয়। এমন প্রস্তাবের ঘটনা নানা সময়ে নানাভাবে ঘটতে পারে। এই শরীয়তের ধারক বাহকেরা সর্বাবস্থায় এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হবে। এ কারণেই আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তা‘আলা জোরালোভাবে এ বিষয়টি আমাদের কাছে তুলে ধরেছেন এবং বিশেষ পরিস্থিতি ও প্রেক্ষাপটের অজুহাতে শরীয়তের বিধানাবলীর ক্ষেত্রে শিথিলতা করার সমস্ত অজুহাতের পথ বন্ধ করে দিয়েছেন। মানুষের মনোজগতে প্রভাব বিস্তারের নামে তাদের খেয়াল-খুশীর অনুসরণের মানবিক আকাঙ্ক্ষা অন্তর থেকে ঝেড়ে ফেলতে বলেছেন। তাইতো তিনি আপন নবীকে বলেছেন, যার সারাংশ হল—আল্লাহ তা‘আলা চাইলে সকল মানুষকে একই আদর্শের অনুগামী বানাতে পারতেন। কিন্তু তিনি নানা পথ ও মতের অনুসারী বানিয়েছেন। তিনি আপন শরীয়ত ও ধর্মের ব্যাপারে পরীক্ষা করার জন্যেই মানুষকে বিভক্ত করেছেন।
..............................আল্লাহর শরীয়ত এড়িয়ে চলার পক্ষে মনের মাঝে যে কৌশল-চিন্তা এবং সংশয়-সন্দেহগুলো আসতে পারে তন্মধ্যে প্রথমটা হল, বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠী, নানা অঞ্চলের অধিবাসী, বিভিন্ন মত ও পথের মানুষকে একই প্লাটফর্মে একত্রিত করার এবং সকলের মনোতুষ্টি অর্জনের সুপ্ত মানবিক আকাঙ্ক্ষা। কারণ কখনো মানুষের চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে বিশেষ কাজ শরীয়তের বিধি-বিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয়ে যাবে স্বভাবতই। আবার শরীয়তের মৌলিক বিষয়াবলীর অন্তর্ভুক্ত নয় এবং তুলনামূলক কম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়—এমন অজুহাতেও অনেক সময় ইসলামের বিধি-বিধানে শিথিলতা করা হবে!
অথচ বর্ণিত হয়েছে, ইহুদীরা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে প্রস্তাব করেছিল, রজম তথা ব্যভিচারের শাস্তি হিসেবে প্রস্তরাঘাতে হত্যাদণ্ড সহ তাওরাতের কিছু নির্দিষ্ট বিধানে শিথিলতার পক্ষে নবীজি যদি তাদের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হন, তাহলে তারা নবীজীর প্রতি ঈমান আনবে। আয়াতে আল্লাহর পক্ষ থেকে যে সতর্কবাণী ও হুঁশিয়ারি এসেছে, তা বিশেষভাবে ইহুদিদের এই প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতেই। কিন্তু এটি সুস্পষ্ট যে, এই আয়াতের হুকুম নির্দিষ্ট ঘটনা, প্রেক্ষাপট ও প্রস্তাবের সঙ্গে প্রযোজ্য নয়। এমন প্রস্তাবের ঘটনা নানা সময়ে নানাভাবে ঘটতে পারে। এই শরীয়তের ধারক বাহকেরা সর্বাবস্থায় এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হবে। এ কারণেই আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তা‘আলা জোরালোভাবে এ বিষয়টি আমাদের কাছে তুলে ধরেছেন এবং বিশেষ পরিস্থিতি ও প্রেক্ষাপটের অজুহাতে শরীয়তের বিধানাবলীর ক্ষেত্রে শিথিলতা করার সমস্ত অজুহাতের পথ বন্ধ করে দিয়েছেন। মানুষের মনোজগতে প্রভাব বিস্তারের নামে তাদের খেয়াল-খুশীর অনুসরণের মানবিক আকাঙ্ক্ষা অন্তর থেকে ঝেড়ে ফেলতে বলেছেন। তাইতো তিনি আপন নবীকে বলেছেন, যার সারাংশ হল—আল্লাহ তা‘আলা চাইলে সকল মানুষকে একই আদর্শের অনুগামী বানাতে পারতেন। কিন্তু তিনি নানা পথ ও মতের অনুসারী বানিয়েছেন। তিনি আপন শরীয়ত ও ধর্মের ব্যাপারে পরীক্ষা করার জন্যেই মানুষকে বিভক্ত করেছেন।
এভাবেই আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তা‘আলা শয়তানের কুমন্ত্রণার সকল পথ বন্ধ করে দিয়েছেন। বিশেষ করে শয়তানের এই প্রণোদনা যে, মানুষের মনোজগতে প্রভাব সৃষ্টির জন্য এবং তাদেরকে একই সারিতে নিয়ে আসার জন্য আল্লাহর শরীয়তের কিছু কিছু অংশে শিথিলতা করা উচিত। আল্লাহ তা‘আলা দেখিয়ে দিয়েছেন, সকল মানুষের আকাঙ্ক্ষা এবং তথাকথিত ঐক্য রক্ষার বিপরীতে শরীয়তের ধারক-বাহকদের কি করতে হবে?!
..............................অতঃপর আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তা‘আলা মানবজাতিকে দুই সারিতে বিভক্ত করে দেখাচ্ছেন। একসারির লোকেরা আল্লাহর বিধান কামনা করে অপর সারিতে থাকা লোকেরা জাহিলিয়াতের বিধান। এই দুই কাতার ছাড়া তৃতীয় কোনো কাতার নেই।
....................তিনি এরশাদ করেছেন—
﴿أَفَحُكْمَ ٱلْجَٰهِلِيَّةِ يَبْغُونَ وَمَنْ أَحْسَنُ مِنَ ٱللَّهِ حُكْمًا لِّقَوْمٍ يُوقِنُونَ﴾
{তবে কি তারা জাহিলিয়াতের বিধান কামনা করে? বিশ্বাসী সম্প্রদায়ের জন্য আল্লাহ অপেক্ষা অধিক শ্রেষ্ঠ বিচারক আর কে রয়েছে?}
কুরআনের এই মূল বক্তব্যের দ্বারা জাহেলিয়াতের রূপরেখা নির্ধারিত হয়ে যায়। কুরআনে কারীমে আল্লাহর বর্ণনা অনুযায়ী জাহিলিয়াত হল, মানুষের জন্য মানুষ কর্তৃক বিধান প্রদান। কারণ এর অর্থ হল, মানব সমাজের এক শ্রেণীর প্রতি অন্য শ্রেণীর দাসত্ব।
..............................﴿أَفَحُكْمَ ٱلْجَٰهِلِيَّةِ يَبْغُونَ وَمَنْ أَحْسَنُ مِنَ ٱللَّهِ حُكْمًا لِّقَوْمٍ يُوقِنُونَ﴾
{তবে কি তারা জাহিলিয়াতের বিধান কামনা করে? বিশ্বাসী সম্প্রদায়ের জন্য আল্লাহ অপেক্ষা অধিক শ্রেষ্ঠ বিচারক আর কে রয়েছে?}
কুরআনের এই মূল বক্তব্যের দ্বারা জাহেলিয়াতের রূপরেখা নির্ধারিত হয়ে যায়। কুরআনে কারীমে আল্লাহর বর্ণনা অনুযায়ী জাহিলিয়াত হল, মানুষের জন্য মানুষ কর্তৃক বিধান প্রদান। কারণ এর অর্থ হল, মানব সমাজের এক শ্রেণীর প্রতি অন্য শ্রেণীর দাসত্ব।
এই মূল বক্তব্যের আলোকে জাহিলিয়াত শুধুমাত্র ইতিহাসের নির্দিষ্ট একটি সময়-চরিত্র নয়। বরং যেকোনো কালে এই চরিত্র পাওয়া যেতে পারে। অতীতে পাওয়া গিয়েছে বর্তমানেও পাওয়া যাচ্ছে এবং ভবিষ্যতেও পাওয়া যেতে পারে। জাহিলিয়াতের মূল বৈশিষ্ট্য হলো, ইসলামের বিরোধিতা ও সাংঘর্ষিকতা।
স্থান ও কাল নির্বিশেষে মানবসমাজ হয় আল্লাহর শরীয়ত দ্বারা বিচার-ফয়সালা করবে; এক্ষেত্রে মুষ্টিমেয় শ্রেণীর ফেতনা ও বিরোধিতা তাদের রোধ করতে হবে, নয়তো জীবন ও জগতের যেকোন স্তরে আল্লাহর শরীয়তবিরোধী মানব রচিত শরীয়ত দ্বারা তারা বিচার-ফয়সালা করবে। প্রথমটি যদি হয় তবে তাদেরকে আল্লাহর শরীয়ত পুরোপুরিভাবে মেনে নিতে এবং হৃষ্টচিত্তে কবুল করতে হবে। তবেই তারা আল্লাহর দ্বীনের অনুসারী বলে গণ্য হবে। আর দ্বিতীয়টা যদি হয়, তবে তারা জাহিলিয়াতের অনুসারী বলে গণ্য হবে। তারা সেই ধর্মের অনুসারী বিবেচিত হবে, যে ধর্ম স্বজাতীয় মনিবেরা তাদের জন্য প্রবর্তন করেছে। আল্লাহর শরীয়তের বিরোধিতা কোন একটা ক্ষেত্রে যদি এভাবে পাওয়া যায়, তবেই আল্লাহর দ্বীনের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক পুরোপুরি শেষ হয়ে যাবে। কারণ আল্লাহর শরীয়তের বিচার যে চায় না সে জাহেলিয়াতের বিচার ছাড়া আর কি চাইবে? আল্লাহর শরীয়ত যে ব্যক্তি প্রত্যাখ্যান করে, সে জাহেলিয়াতের শরীয়ত কামনা করবে এটাই তো স্বাভাবিক।
দুই দলের মাঝে এটাই হল পার্থক্যরেখা। পথের এই মোড়ে দাঁড়িয়ে মানুষকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, সে কোন পথ অবলম্বন করবে?
আয়াতের মাঝে অতঃপর আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তা‘আলা ঐ সমস্ত লোকদের ব্যাপারে প্রত্যাখ্যানমূলক প্রশ্ন ছুঁড়ে দিচ্ছেন, যারা জাহিলিয়াতের বিধান কামনা করে। অতঃপর আল্লাহর বিচার ফায়সালার শ্রেষ্ঠত্বব্যঞ্জক অপর একটি প্রশ্ন তিনি তুলে ধরছেন।
প্রথম প্রশ্ন হল:—{তবে কি তারা জাহেলিয়াতের বিধান কামনা করে?!} আর দ্বিতীয় প্রশ্ন হল:—{বিশ্বাসী সম্প্রদায়ের জন্য আল্লাহ অপেক্ষা অধিক শ্রেষ্ঠ বিচারক আর কে রয়েছে?!}
..............................স্থান ও কাল নির্বিশেষে মানবসমাজ হয় আল্লাহর শরীয়ত দ্বারা বিচার-ফয়সালা করবে; এক্ষেত্রে মুষ্টিমেয় শ্রেণীর ফেতনা ও বিরোধিতা তাদের রোধ করতে হবে, নয়তো জীবন ও জগতের যেকোন স্তরে আল্লাহর শরীয়তবিরোধী মানব রচিত শরীয়ত দ্বারা তারা বিচার-ফয়সালা করবে। প্রথমটি যদি হয় তবে তাদেরকে আল্লাহর শরীয়ত পুরোপুরিভাবে মেনে নিতে এবং হৃষ্টচিত্তে কবুল করতে হবে। তবেই তারা আল্লাহর দ্বীনের অনুসারী বলে গণ্য হবে। আর দ্বিতীয়টা যদি হয়, তবে তারা জাহিলিয়াতের অনুসারী বলে গণ্য হবে। তারা সেই ধর্মের অনুসারী বিবেচিত হবে, যে ধর্ম স্বজাতীয় মনিবেরা তাদের জন্য প্রবর্তন করেছে। আল্লাহর শরীয়তের বিরোধিতা কোন একটা ক্ষেত্রে যদি এভাবে পাওয়া যায়, তবেই আল্লাহর দ্বীনের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক পুরোপুরি শেষ হয়ে যাবে। কারণ আল্লাহর শরীয়তের বিচার যে চায় না সে জাহেলিয়াতের বিচার ছাড়া আর কি চাইবে? আল্লাহর শরীয়ত যে ব্যক্তি প্রত্যাখ্যান করে, সে জাহেলিয়াতের শরীয়ত কামনা করবে এটাই তো স্বাভাবিক।
দুই দলের মাঝে এটাই হল পার্থক্যরেখা। পথের এই মোড়ে দাঁড়িয়ে মানুষকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে, সে কোন পথ অবলম্বন করবে?
আয়াতের মাঝে অতঃপর আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তা‘আলা ঐ সমস্ত লোকদের ব্যাপারে প্রত্যাখ্যানমূলক প্রশ্ন ছুঁড়ে দিচ্ছেন, যারা জাহিলিয়াতের বিধান কামনা করে। অতঃপর আল্লাহর বিচার ফায়সালার শ্রেষ্ঠত্বব্যঞ্জক অপর একটি প্রশ্ন তিনি তুলে ধরছেন।
প্রথম প্রশ্ন হল:—{তবে কি তারা জাহেলিয়াতের বিধান কামনা করে?!} আর দ্বিতীয় প্রশ্ন হল:—{বিশ্বাসী সম্প্রদায়ের জন্য আল্লাহ অপেক্ষা অধিক শ্রেষ্ঠ বিচারক আর কে রয়েছে?!}
আমরা বুঝতে পারলাম মানবজাতিকে পথের এই মোড়ে এসে অবশ্যই থমকে দাঁড়াতে হবে। এই দুই পথের কোন একটা তাকে অবশ্যই গ্রহণ করতে হবে। এছাড়া তৃতীয় কোনো পথ অবলম্বনের সুযোগ নেই। আর এ নিয়ে ঝগড়া বিবাদ করেও কোন লাভ নেই। হয় ইসলাম নয়তো জাহিলিয়াত। হয় ঈমান নয়তো কুফরি। হয়তো আল্লাহর বিধান নয়তো জাহিলিয়াতের বিধান।[1]
উপরোক্ত আয়াত-
﴿أَفَحُكْمَ ٱلْجَٰهِلِيَّةِ يَبْغُونَ وَمَنْ أَحْسَنُ مِنَ ٱللَّهِ حُكْمًا لِّقَوْمٍ يُوقِنُونَ﴾[2]
তথা {তবে কি তারা জাহিলিয়াতের বিধান কামনা করে? বিশ্বাসী সম্প্রদায়ের জন্য আল্লাহ অপেক্ষা অধিক শ্রেষ্ঠ বিচারক আর কে রয়েছে?}-এর তাফসীরে ইবনে কাসীর রহিমাহুল্লাহ বলেন:
“আল্লাহ তা‘আলা এমন ব্যক্তির ব্যাপারে অসন্তুষ্টি জানাচ্ছেন, যে কিনা সকল কল্যাণের সম্মেলনস্থল, সকল অনিষ্ট রোধকারী আল্লাহর শাশ্বত বিধান থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। এর পরিবর্তে সে ব্যক্তি বিভিন্ন পরিভাষা, খেয়াল-খুশি এবং আল্লাহর শরীয়তের সঙ্গে সম্বন্ধযুক্ত নয় মানব রচিত এমন বিধি-বিধানের প্রতি মনোনিবেশ করে। এটা ঠিক জাহিলিয়াত আমলের লোকদের মতো যারা বিভিন্ন বিভ্রান্তি ও অজ্ঞতার দ্বারা বিচার ফায়সালা করত। নিজেদের খেয়াল-খুশি ও প্রবৃত্তির অনুসরণের মধ্য দিয়ে বিচার ফায়সালা করত। এমনিভাবে তাতারীরা তাদের নেতা চেঙ্গিস খান কর্তৃক রচিত ইয়াসিক সংবিধানের ধারা অনুসরণ করে তাদের রাজনীতি পরিচালিত করত। তাদের সেই সংবিধান গ্রন্থাকারে রচিত হয়েছিল ইহুদিবাদ, খ্রিস্টধর্ম, ইসলাম সহ আরও বিভিন্ন ধর্ম ও মতবাদ থেকে কিছু কিছু চয়ন করে। সে সঙ্গে সে সংবিধানে অনেক বিধান এমন ছিল যেগুলো সে তার নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি ও মতামতের ভিত্তিতে রচনা করেছিল। তখন এইসব বিধান তার বংশধরদের মাঝে অনুসরণীয় শরীয়তের রূপ পরিগ্রহ করে। তারা এই সংবিধানকে আল্লাহর কিতাব এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহ্'র ওপর প্রাধান্য দিতে থাকে।
এখন এই ধরনের কাজ যে ব্যক্তি করবে সে কাফের। আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের বিধানে ফিরে আসার আগ পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়া ওয়াজিব। অতএব, ছোট-বড় কোন স্তরে আল্লাহর শরীয়ত ভিন্ন অন্য কোন সংবিধান বা মতবাদের অনুসরণ করা যাবে না।”[3]
শাইখ আল্লামা মুহাম্মদ ইবনে ইব্রাহিম আলে শাইখ রহিমাহুল্লাহ বলেন:
“সুস্পষ্ট বড় কুফরির মধ্য থেকে একটা হল, রুহুল আমীন জিবরাঈল আলাইহিস সালাম মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অন্তরে যে ওহী নিয়ে এসেছেন, জগৎবাসীর মাঝে বিচার ফয়সালা করার জন্য বিশুদ্ধ আরবী ভাষায় যে ওহী অবতীর্ণ হয়েছে, কোন অভিশপ্ত আইনি ব্যবস্থাকে সেই ওহী ভিত্তিক আইনের স্থলে স্থাপন করা।”
অতঃপর শাইখ রহিমাহুল্লাহ মানব রচিত আইন-কানুন দ্বারা বিচার ফায়সালাকারী এবং সে পথে আহ্বানকারীদেরকে খণ্ডন করে বলেন:
“এ জাতীয় লোকদের ব্যাপারে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে, জাহিলিয়াতের বিধি-বিধানের ব্যাপারে তাদের আকাঙ্ক্ষা নিশ্চিত করে এবং আল্লাহ অপেক্ষা অধিক শ্রেষ্ঠ বিচারক আর কেউ হতে পারে না এ বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে ব্যক্ত করে আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন— {তবে কি তারা জাহিলিয়াতের বিচার কামনা করে? আর বিশ্বাসী সম্প্রদায়ের জন্য আল্লাহ অপেক্ষা অধিক শ্রেষ্ঠ ফয়সালাকারী আর কে রয়েছে?!}
প্রিয় পাঠক! এই আয়াতে কারীমা নিয়ে একটু চিন্তা করুন। লক্ষ্য করুন কিভাবে বলা হলো, বিচার ফায়সালা ও বিধিবিধানের কেবল দুটো স্বরূপ রয়েছে। কেউ যদি আল্লাহর বিধি-বিধান মেনে না নেয় তবে জাহেলিয়াতের বিধি-বিধান ছাড়া তার সামনে তৃতীয় কোনো পথ থাকে না।”[4]
*****উপরোক্ত আয়াত-
﴿أَفَحُكْمَ ٱلْجَٰهِلِيَّةِ يَبْغُونَ وَمَنْ أَحْسَنُ مِنَ ٱللَّهِ حُكْمًا لِّقَوْمٍ يُوقِنُونَ﴾[2]
তথা {তবে কি তারা জাহিলিয়াতের বিধান কামনা করে? বিশ্বাসী সম্প্রদায়ের জন্য আল্লাহ অপেক্ষা অধিক শ্রেষ্ঠ বিচারক আর কে রয়েছে?}-এর তাফসীরে ইবনে কাসীর রহিমাহুল্লাহ বলেন:
“আল্লাহ তা‘আলা এমন ব্যক্তির ব্যাপারে অসন্তুষ্টি জানাচ্ছেন, যে কিনা সকল কল্যাণের সম্মেলনস্থল, সকল অনিষ্ট রোধকারী আল্লাহর শাশ্বত বিধান থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়। এর পরিবর্তে সে ব্যক্তি বিভিন্ন পরিভাষা, খেয়াল-খুশি এবং আল্লাহর শরীয়তের সঙ্গে সম্বন্ধযুক্ত নয় মানব রচিত এমন বিধি-বিধানের প্রতি মনোনিবেশ করে। এটা ঠিক জাহিলিয়াত আমলের লোকদের মতো যারা বিভিন্ন বিভ্রান্তি ও অজ্ঞতার দ্বারা বিচার ফায়সালা করত। নিজেদের খেয়াল-খুশি ও প্রবৃত্তির অনুসরণের মধ্য দিয়ে বিচার ফায়সালা করত। এমনিভাবে তাতারীরা তাদের নেতা চেঙ্গিস খান কর্তৃক রচিত ইয়াসিক সংবিধানের ধারা অনুসরণ করে তাদের রাজনীতি পরিচালিত করত। তাদের সেই সংবিধান গ্রন্থাকারে রচিত হয়েছিল ইহুদিবাদ, খ্রিস্টধর্ম, ইসলাম সহ আরও বিভিন্ন ধর্ম ও মতবাদ থেকে কিছু কিছু চয়ন করে। সে সঙ্গে সে সংবিধানে অনেক বিধান এমন ছিল যেগুলো সে তার নিজস্ব দৃষ্টিভঙ্গি ও মতামতের ভিত্তিতে রচনা করেছিল। তখন এইসব বিধান তার বংশধরদের মাঝে অনুসরণীয় শরীয়তের রূপ পরিগ্রহ করে। তারা এই সংবিধানকে আল্লাহর কিতাব এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সুন্নাহ্'র ওপর প্রাধান্য দিতে থাকে।
এখন এই ধরনের কাজ যে ব্যক্তি করবে সে কাফের। আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের বিধানে ফিরে আসার আগ পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়া ওয়াজিব। অতএব, ছোট-বড় কোন স্তরে আল্লাহর শরীয়ত ভিন্ন অন্য কোন সংবিধান বা মতবাদের অনুসরণ করা যাবে না।”[3]
শাইখ আল্লামা মুহাম্মদ ইবনে ইব্রাহিম আলে শাইখ রহিমাহুল্লাহ বলেন:
“সুস্পষ্ট বড় কুফরির মধ্য থেকে একটা হল, রুহুল আমীন জিবরাঈল আলাইহিস সালাম মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অন্তরে যে ওহী নিয়ে এসেছেন, জগৎবাসীর মাঝে বিচার ফয়সালা করার জন্য বিশুদ্ধ আরবী ভাষায় যে ওহী অবতীর্ণ হয়েছে, কোন অভিশপ্ত আইনি ব্যবস্থাকে সেই ওহী ভিত্তিক আইনের স্থলে স্থাপন করা।”
অতঃপর শাইখ রহিমাহুল্লাহ মানব রচিত আইন-কানুন দ্বারা বিচার ফায়সালাকারী এবং সে পথে আহ্বানকারীদেরকে খণ্ডন করে বলেন:
“এ জাতীয় লোকদের ব্যাপারে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করে, জাহিলিয়াতের বিধি-বিধানের ব্যাপারে তাদের আকাঙ্ক্ষা নিশ্চিত করে এবং আল্লাহ অপেক্ষা অধিক শ্রেষ্ঠ বিচারক আর কেউ হতে পারে না এ বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে ব্যক্ত করে আল্লাহ তা'আলা ইরশাদ করেন— {তবে কি তারা জাহিলিয়াতের বিচার কামনা করে? আর বিশ্বাসী সম্প্রদায়ের জন্য আল্লাহ অপেক্ষা অধিক শ্রেষ্ঠ ফয়সালাকারী আর কে রয়েছে?!}
প্রিয় পাঠক! এই আয়াতে কারীমা নিয়ে একটু চিন্তা করুন। লক্ষ্য করুন কিভাবে বলা হলো, বিচার ফায়সালা ও বিধিবিধানের কেবল দুটো স্বরূপ রয়েছে। কেউ যদি আল্লাহর বিধি-বিধান মেনে না নেয় তবে জাহেলিয়াতের বিধি-বিধান ছাড়া তার সামনে তৃতীয় কোনো পথ থাকে না।”[4]
(চলবে, ইন শা আল্লাহ)
Comment