Announcement

Collapse
No announcement yet.

‘আল কিতাব ওয়াস সুলতান – ইত্তিফাক ওয়া ইফতিরাক’ এর বঙ্গানুবাদ ।। কিতাবুল্লাহ ও হুকুমত: পারস্পরিক সঙ্গতি ও অসঙ্গতি ।। প্রথম খণ্ড ।। পার্ট-৪ ।। -শাইখ আইমান আয-যাওয়াহিরী হাফিযাহুল্লাহ

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • ‘আল কিতাব ওয়াস সুলতান – ইত্তিফাক ওয়া ইফতিরাক’ এর বঙ্গানুবাদ ।। কিতাবুল্লাহ ও হুকুমত: পারস্পরিক সঙ্গতি ও অসঙ্গতি ।। প্রথম খণ্ড ।। পার্ট-৪ ।। -শাইখ আইমান আয-যাওয়াহিরী হাফিযাহুল্লাহ

    কিতাবুল্লাহ ও হুকুমত:
    পারস্পরিক সঙ্গতি ও অসঙ্গতি


    রাজনৈতিক বিপর্যয় এবং মুসলমানদের ইতিহাসে এর প্রতিক্রিয়া সম্পর্কে কিছু পর্যবেক্ষণ ও ভাবনা

    (প্রথম খণ্ড)

    -শাইখ আইমান আয-যাওয়াহিরী হাফিযাহুল্লাহ


    মূল প্রকাশনায়:

    আস-সাহাব মিডিয়া (উপমহাদেশ)

    সফর ১৪৪৩ হিজরী মোতাবেক সেপ্টেম্বর ২০২১ ঈসায়ী




    দুটো সংশয় নিরসনঃ

    ইসলামী শরীয়ত পরিবর্তন করে মানব রচিত আইন-কানুন প্রতিস্থাপনকারী শাসকদের পক্ষে যারা কথা বলে, তারা বিভিন্ন কুযুক্তি হাজির করে থাকে। তন্মধ্যে দুটো নিম্নরূপ:
    প্রথম যুক্তিঃ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, আল্লাহর অবতীর্ণ বিধান ভিন্ন অন্য কোন বিধান দ্বারা বিচার-ফয়সালা করা এমন কুফুরি নয় যা মিল্লাতে ইসলাম থেকে বহিস্কৃত করে দেয়।
    আমি হযরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমার সে বর্ণনা তুলে ধরছি। এরপর আল্লাহর সাহায্য ও দয়ায় আমি দরবারী আলেমদের সংশয় নিরসনের প্রয়াস পাব ইনশা আল্লাহ!
    তাবারি রহিমাহুল্লাহ বলেনঃ
    ১২০৫৩- [বর্ণনা সূত্র উল্লেখ পূর্বক] ইবনে তাঊস তাঁর পিতা থেকে এবং তাঁর পিতা হযরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণনা করেন যে, {আর যারা আল্লাহর অবতীর্ণ বিধান দ্বারা বিচার করে না তারাই কাফের} ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন: এটা কুফরি। তবে আল্লাহর প্রতি, তাঁর ফেরেশতাদের প্রতি, তাঁর কিতাবসমূহের প্রতি এবং তাঁর রাসূলগণের প্রতি কুফরি নয়।
    ১২০৫৪- [বর্ণনা সূত্র উল্লেখ পূর্বক] তাউস থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এক ব্যক্তি ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমাকে {আর যারা আল্লাহর অবতীর্ণ বিধান দ্বারা বিচার করে না তারাই কাফের} এই আয়াত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে। কেউ যদি এ কাজ করে সে কি কাফের হয়ে যাবে? তখন ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেন, এ কাজ করলে সেটা তো অবশ্যই কুফরি। কিন্তু যে ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি এবং শেষ দিবস ইত্যাদির প্রতি কুফুরি করেছে তার মত নয়।
    ১২০৫৫- [বর্ণনা সূত্র উল্লেখ পূর্বক] তাউস থেকে বর্ণিত, ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমাকে এই আয়াত সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয় {আর যারা আল্লাহর অবতীর্ণ বিধান দিয়ে বিচার ফায়সালা করে না তারাই কাফির} তখন তিনি বলেনঃ এ কাজের দ্বারা কুফুরি হয়। বর্ণনাকারী ইবনে তাউস এরপর বলেন, কিন্তু এটা সে ব্যক্তির কুফরির মত নয়, যে আল্লাহর প্রতি, তাঁর ফেরেশতাদের প্রতি, তাঁর কিতাবসমূহের প্রতি এবং তাঁর রাসূলগণের প্রতি কুফরী করেছে।[1]
    ইমাম তাবারি রহিমাহুল্লাহ আরো বলেনঃ
    [বর্ণনা সূত্র উল্লেখ পূর্বক] আলী ইবনে আবু তালহা থেকে বর্ণিত তিনি ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণনা করেন, {আর যারা আল্লাহর অবতীর্ণ বিধান দিয়ে বিচার করে না তারাই কাফের} ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেনঃ আল্লাহর অবতীর্ণ বিধান কেউ যদি অস্বীকার করে তবে সে কুফুরি করল। আর কেউ যদি স্বীকার করে কিন্তু বিচার না করে তবে সে জালেম পাপীষ্ঠ।[2]
    ইবনে কাসির রহিমাহুল্লাহ বলেনঃ
    ইবনে আবি হাতেম বলেন, [বর্ণনা সূত্র উল্লেখ পূর্বক]: উপরোক্ত আয়াতের ব্যাপারে ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, এটা সেই কুফুরি নয়, যেটা তারা মনে করছে। ইমাম হাকেম মুস্তাদরাক হাকেম গ্রন্থে (২৩১৩) সুফিয়ান ইবনে উয়াইনাহ'র হাদিস থেকে এ উক্তিটি নকল করেছেন। অতঃপর তিনি বলেছেন, ইমাম বুখারী ও মুসলিমের শর্ত অনুযায়ী বর্ণনাটি সহীহ যদিও তারা বর্ণনাটি উল্লেখ করেননি।[3]

    আল্লাহর সাহায্য ও দয়ায় আমি এই সংশয় কয়েকভাবে নিরসন করতে চেষ্টা করবো, ইনশা আল্লাহ

    (১) সনদ ও সূত্রের দিক থেকে:

    ১.১) ইবনে তাউস তাঁর পিতা থেকে এবং পিতা ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে যে বর্ণনাটি এনেছেন, —আল্লাহ সর্বজ্ঞসেটাতে তো এটা স্পষ্ট যে, “এর দ্বারা কুফুরি হবে কিন্তু ওই ব্যক্তির মত নয়, যে আল্লাহর প্রতি, তাঁর ফেরেশতাদের প্রতি, তাঁর কিতাবসমূহের প্রতি এবং তাঁর রাসূলগণের প্রতি কুফরী করেছে”—বর্ণনার এ অংশটি ইবনে তাউসের বক্তব্যের অংশ। ইবনে তাবারী রহিমাহুল্লাহু তা‘আলা হাসান ইবনে ইয়াহিয়া থেকে যে বর্ণনাটি এনেছেন, সেখানে তো এই বিষয়টি স্পষ্ট দেয়া আছে।[4]

    ১.২) আলী ইবনে আবু তালহা রহমতুল্লাহি আলাইহি ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে যেই উক্তিটি বর্ণনা করেছেন, সেটার ব্যাপারে বলতে হয়, আলী ইবনে আবু তালহা ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে সরাসরি কখনোই বর্ণনা করেননি। যদি করে থাকেন তাহলে বুঝতে হবে, তার বর্ণনাটি মুরসাল। আর এ কারণেই তাঁর সনদে ত্রুটি রয়েছে, যেমনটি ওলামায়ে কেরাম বলেছেন। এছাড়াও তাঁর নির্ভরযোগ্যতা নিয়ে মতভেদ রয়েছে। আর কারো ব্যাপারে যদি আপত্তি ও নির্ভরযোগ্যতা দুটোই থেকে থাকে, সেক্ষেত্রে আপত্তির দাবিগুলোকে প্রাধান্য দেয়া হয়। সামনে এ বিষয়ে আলোচনা আসবে ইনশা আল্লাহ।
    ইবনে হাজার রহিমাহুল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ
    আলী ইবনে আবী তালহা। তাঁর আসল নাম হল সালিম ইবনে মাখারিক আল হাশেমী আবুল হাসান। তাঁর আদি বাসস্থান জাজিরাতুল আরব। পরবর্তীতে তিনি হিমস অভিমুখে চলে যান। তিনি ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণনা করেছেন যদিও সরাসরি তাঁর কাছ থেকে কোন হাদিস বা উক্তি শোনেননি। তাদের দুজনের মাঝে রয়েছেন মুজাহিদ, আবুল ওদদাক জবর ইবনে নওফ, রাশেদ ইবনে সাআদ আলমাকরাঈ এবং কাসিম ইবনে মুহাম্মাদ ইবনে আবু বকর প্রমুখ বর্ণনাকারী।
    ..............................

    আহমদ থেকে মাইমুনী বর্ণনা করেনঃ তাঁর বহু বর্ণনা আপত্তিকর। তিনি হিমসের অধিবাসী ছিলেন।
    আবু দাউদ থেকে আজুররী বর্ণনা করেনঃ ইনশা আল্লাহ, তাঁর হাদিস বর্ণনা সঠিক। কিন্তু তার দৃষ্টিভঙ্গিতে কিছু সমস্যা ছিল। বিদ্রোহাত্মক মনোভাব ছিল তাঁর। হাজ্জাজ ইবনে মুহাম্মাদ তাকে দেখেছেন।
    আর ইমাম নাসায়ী বলেনঃ তাঁর বর্ণনায় কোন অসুবিধা নেই।
    দুহাইম বলেনঃ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে তিনি তাফসির শোনেননি।
    সালেহ ইবনে মোহাম্মদ বলেনঃ কুফাবাসী ও সিরিয়াবাসীদের ছাড়াও আরো কতক বর্ণনাকারী তাঁর থেকে বর্ণনা নিয়েছেন।
    ইয়াকুব ইবনে সুফিয়ান বলেনঃ হাদিস বর্ণনায় তিনি দুর্বল ছিলেন। তাকে নিয়ে আপত্তি রয়েছে। তাঁর চিন্তা-ভাবনা তেমন প্রশংসনীয় নয়।
    অন্যত্র তিনি বলেনঃ তিনি সিরিয়াবাসী ছিলেন। তাকে পুরোপুরি পরিত্যাগ করাও যায় না, আবার দলিল হিসেবে তাঁর বর্ণনা নেওয়াও যায় না।
    আর ইবনে হিব্বান নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারীদের মাঝে তাকে গণনা করেছেন। তিনি বলেছেনঃ তিনি ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণনা করেছেন, যদিও তাকে দেখেননি।
    ...................

    আজালী‌ তাকে নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারী হিসেবে সাব্যস্ত করেছেন।[5]
    আর আবুল হাজ্জাজ আলমিযযী রহিমাহুল্লাহ বলেনঃ
    ইয়াকুব ইবনে ইসহাক ইবনে মাহমুদ বলেন, সালেহ ইবনে মুহাম্মদ জিজ্ঞাসিত হন আলী ইবনে আবু তালহার ব্যাপারে যে, তিনি কার কাছ থেকে তাফসীর শুনেছেন? তখন তিনি জবাবে বলেনঃ কারো কাছ থেকে শোনেননি।[6]

    ১.৩) আর যে উক্তিটি হিশাম ইবনে হুজাইর, তাউস সূত্রে ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে উক্ত আয়াতের ব্যাপারে বর্ণনা করেছেন, যেখানে তিনি বলেন, এটা তেমন কুফুরি নয় যা তারা মনে করছেএই বর্ণনাটি ইমাম হাকেম মুস্তাদরাক হাকেম গ্রন্থে সংকলন করেছেন [7] তো এই বর্ণনার ব্যাপারে বলব, হিশাম ইবনে হুজাইরকে কেউ কেউ নির্ভরযোগ্য বলেছেন, আবার কেউ কেউ তাকে নিয়ে আপত্তি করেছেন।
    তাঁর ব্যাপারে আবুল হাজ্জাজ আলমিযযী রহিমাহুল্লাহ বলেনঃ
    ইবনে শুবরুমা বলেন, মক্কায় তাঁর মত দ্বিতীয়জন ছিল না। আর আব্দুল্লাহ ইবনে আহমদ ইবনে হাম্বল বলেন, আমি আমার পিতাকে তাঁর ব্যাপারে জিজ্ঞেস করি তখন তিনি বলেন, তিনি অতোটা নির্ভরযোগ্য নন। তখন আমি বললাম, তবে তিনি কি দুর্বল? জবাবে পিতা বললেন, তিনি তাও নন। তিনি বলেন, আর আমি ইয়াহিয়া ইবনে মাঈনকে তাঁর ব্যাপারে জিজ্ঞেস করি। তখন তিনি তাকে খুবই দুর্বল সাব্যস্ত করেন। ইসহাক ইবনে মানসুর বর্ণনা করেন ইয়াহিয়া ইবনে মাঈন সূত্রেঃ ভাল মানুষ ছিলেন তিনি। আজালী বলেনঃ নির্ভরযোগ্য, সুন্নাহর অনুসারী ব্যক্তি ছিলেন। আবু হাতেম বলেনঃ তাঁর হাদিস লেখা হতো। আলী ইবনে আল মাদীনী বলেনঃ আমি ইয়াহিয়া ইবনে সাঈদের কাছে বর্ণনা পাঠ করছিলাম। ইবনে জুরাইজ আমাদের কাছে বর্ণনা করেন হিশাম ইবনে হুজাইর সূত্রে... তখন ইয়াহিয়া ইবনে সাঈদ বলেনঃ আমি তাকে পরিত্যাগ করার উপযুক্ত মনে করিতখন আমি বললামঃ আমি কি তার হাদিস প্রত্যাখ্যান করবো? জবাবে তিনি বললেনঃ জি হ্যাঁ। আর আবূ ওবায়েদ আল-আজুররী বলেনঃ আমি আবু দাউদকে বলতে শুনেছি, হিশাম ইবনে হুজাইর মক্কায় হদ তথা দণ্ডপ্রাপ্ত হয়েছিলেন। আমি বললাম কিসের কারণে? তখন তিনি বললেনঃ মক্কাবাসী যে কারণে শাস্তি পেয়ে থাকে সে কারণেই। ইবনে হিব্বান তাকে নির্ভরযোগ্য বর্ণনাকারীদের তালিকায় এনেছেন। ইমাম বুখারী মুসলিম এবং নাসাঈ তাঁর বর্ণনা নিয়েছেন।”[8]
    ইবনে হাজার রহিমাহুল্লাহ তা‘আলা বলেনঃ
    “হিশাম ইবনে হুজাইর আলমাক্কী আজালী ও ইবনে সাআদ তাকে নির্ভরযোগ্য সাব্যস্ত করেছেন। আর ইবনে ইয়াহিয়া আলকাত্তান ও ইয়াহিয়া ইবনে মাঈন তাকে দুর্বল বলেছেন। আর ইমাম আহমদ বলেনঃ তিনি অতটা নির্ভরযোগ্য নয়। আবু জাফর দুর্বল বর্ণনাকারীদের মাঝে তাকে গণ্য করেছেন। তিনি সুফিয়ান ইবনে উয়াইনা থেকে একথা নকল করেন যে, তাঁর থেকে সে হাদিস আমরা গ্রহণ করব, যা অন্যের কাছে পাবো। আবু হাতেম বলেনঃ তাঁর হাদিস লেখা হতো। আমি বলব, বুখারীতে কেবল তাঁর সেই হাদীসটি রয়েছে, যেটি বর্ণনা করা হয়েছে তাউস সূত্রে আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে। সে হাদিসে সোলায়মান ইবনে দাউদ আলাইহিমাস সালাম বলেনঃ রাতে আমি নব্বইজন স্ত্রীর কাছে যাবো -আল হাদিস। হলফের কাফফারা অধ্যায়ে ইমাম বুখারী নিজ বর্ণনা সূত্রে হাদীসটি এনেছেন। আর বিবাহ অধ্যায়ে আব্দুল্লাহ ইবনে তাউস এবং তাঁর কর্তৃক তাঁর পিতা সূত্রে হাদীসটি এনেছেন[9]
    আমি (শাইখ আইমান হাফিযাহুল্লাহ) বলবঃ ইমাম মুসলিম রহিমাহুল্লাহর সহীহ মুসলিমে আরো দুটো হাদিস রয়েছেঃ ইনশা আল্লাহ বলার পরিচ্ছেদে আল্লাহর নবী সুলাইমান আলাইহিস সালামের স্ত্রী গমনের হাদিস। ইমাম মুসলিম রহিমাহুল্লাহু তা‘আলা এই হাদিসটি চারটি স্বতন্ত্র বর্ণনাসূত্রে এনেছেন। তন্মধ্যে একটি হিশাম ইবনে হুজাইর সূত্রে রয়েছে। অপর হাদীসটি হল, হাসান ইবনে মুসলিম কর্তৃক ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা সূত্রে ওমরার ব্যাপারে।

    সার কথা: আমরা বুঝতে পারি, শায়খাইন রহিমাহুল্লাহুমাহু তা‘আলা (ইমাম বুখারী ও মুসলিম) তাঁর হাদীস কেবল তখনই এনেছেন, যখন অন্য কারো কাছে তাঁর মুতাবি (অনুরূপ হাদিস) পেয়েছেন। সুফিয়ান ইবনে উয়াইনাহ্ রহিমাহুল্লাহু তা'আলা এমনটাই বলেছেন[10]

    খোলাসা কথা: হিশাম ইবনে হুজাইরকে নিয়ে ওলামায়ে কেরামের একদল আপত্তি করেছেন‌, অপর একদল তাকে নির্ভরযোগ্য বলেছেন। আর উসুলুল হাদিস শাস্ত্রের একটি প্রসিদ্ধ নিয়ম হলো, নির্ভরযোগ্যতার দাবির ওপর প্রাধান্য দেয়া হয় আপত্তির দাবিকে[11]

    (২) আর যদি আমরা ধরেও নিই, ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে সবগুলো বর্ণনা বিশুদ্ধ সূত্রে এসেছে, তথাপি এগুলোর দ্বারা দলিল দেয়া যায় না। কারণ সাহাবীর বক্তব্য মৌলিক বিশুদ্ধ কোন মূলনীতির বিপক্ষে দলিল হতে পারে না। আমাদী রহিমাহুল্লাহ বলেনঃ
    দ্বিতীয় প্রকার হলো সাহাবীর মাযহাব। এখানে দুটো মাসআলা রয়েছে। প্রথম মাসআলা হল, এ বিষয়ে সকলেই একমত, ইজতিহাদী মাসআলা-মাসায়েলের ক্ষেত্রে কোন সাহাবীর মাযহাব মুজতাহিদ অন্যান্য সাহাবীদের বিপক্ষে দলিল হতে পারে না। এখন সেই প্রথম সাহাবী খলিফা হন, বিচারক হন অথবা মুফতি হন। তবে তাবেঈদের এবং তাদের পরবর্তীদের বিপক্ষে দলিল হতে পারে কি-না এ নিয়ে মতভেদ রয়েছে। আশায়েরা, মুতাজিলা, ইমাম শাফেঈর এক বক্তব্য অনুযায়ী, ইমাম আহমদ বিন হাম্বলের এক বর্ণনা অনুযায়ী এবং ইমাম কারখীর মত, অন্যদের বিপক্ষেও তা দলিল হতে পারবে না। আর ইমাম মালেক ইবনে আনাস, ইমাম রাযী, হানাফী ইমামদের ভেতর ইমাম বারযাঈ, ইমাম শাফেঈর অপর বক্তব্য অনুযায়ী এবং ইমাম আহমদ বিন হাম্বলের দ্বিতীয় বর্ণনা অনুযায়ী তা এমন দলিল হতে পারবে, যা কিয়াসের উপর প্রাধান্য পাবে। আর একদল আলেম বলেছেন, যদি সেই ফতোয়া কিয়াসের বিরোধী হয়, তাহলে হুজ্জত বা দলিল হবে অন্যথায় নয়। আরেক দল বলেছেন, আবু বকর এবং ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুমা ছাড়া অন্য কোন সাহাবীর বক্তব্য দলিল হবে না। তবে সবচেয়ে পছন্দনীয় মত হল, কারো বক্তব্যই দলিল হবে না[12]

    (৩) আর যদি আমরা এটাও ধরে নিই, ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত উক্তিগুলো বর্ণনা সূত্রের দিক থেকে বিশুদ্ধ এবং সাহাবীদের বক্তব্য দলিল হবার যোগ্য, তখন বলতে হবে, ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে যা বর্ণিত হয়েছে ঢালাওভাবে তা গৃহীত হবে না। কারণ তাঁর কিছু কিছু বর্ণনা এসেছে কোন প্রকার ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ ছাড়া। আবার কিছু কিছু বর্ণনা এসেছে কিছুটা বিস্তারিতভাবে। ইবনে তাউস তাঁর পিতা সূত্রে যে বর্ণনাটি নিয়েছেন, সেখানে ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেনঃ এর দ্বারা কুফরি হবে। অতঃপর ইবনে তাউস বলেছেনঃ তবে তা ঐ ব্যক্তির মত নয়, যে আল্লাহর প্রতি, তাঁর ফেরেশতাদের প্রতি তাঁর কিতাবসমূহের প্রতি এবং তাঁর রাসূলগণের প্রতি কুফরী করেছে।
    ইবনে তাউসের অপর বর্ণনায় এসেছে, ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা বলেছেনঃ “কেউ এ কাজ করলে কুফরি হবেতবে ওই ব্যক্তির মত নয়, যে আল্লাহর প্রতি এবং শেষ দিবস ইত্যাদির প্রতি কুফরী করেছে।”
    আলী ইবনে আবু তালহা কর্তৃক ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা সূত্রে তৃতীয় বর্ণনায় এসেছে, ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা উক্ত আয়াতের ব্যাপারে বলেছেনঃ “আল্লাহর অবতীর্ণ বিধান যে অস্বীকার করবে তার কুফুরি হবে। আর যে ব্যক্তি তা স্বীকার করবে; কিন্তু বিচার করবে না, সে জালিম পাপিষ্ঠ বলে গণ্য হবে[13]
    এ কারণে বিস্তারিত আকারে যে বর্ণনাগুলো এসেছে সেগুলো গ্রহণ করাই উত্তম। ইবনে জারীর, ইবনুল কাইয়্যিম, শাইখ মুহাম্মদ ইব্রাহিম রহিমাহুমুল্লাহু তা‘আলাতারা সবাই এমনটাই বলেছেন।
    ইবনে জারীর রহিমাহুল্লাহু তা'আলা বলেনঃ উপরোক্ত বক্তব্যগুলোর মাঝে সবচেয়ে সঠিক বলে আমার মনে হয়েছে ওই বক্তব্যটি যেখানে বলা হয়েছে, আয়াতগুলো অবতীর্ণ হয়েছে আহলে কিতাব কাফেরদের ব্যাপারে। কারণ এই আয়াতগুলোর আগে পরে আরও যত আয়াত রয়েছে সবগুলোই তাদেরকে কেন্দ্র করে অবতীর্ণ হয়েছে এবং সেটা স্পষ্টভাবেই বোঝা যায়। যেহেতু মাঝের আয়াতগুলো তাদের আলোচনা প্রসঙ্গে এসেছে, তাই এগুলো তাদের ব্যাপারে হওয়াটাই অধিক যুক্তিযুক্ত।
    এখন যদি কেউ বলে, আল্লাহ তা‘আলা তো ব্যাপক অর্থ নির্দেশ করে এমন সকলের ব্যাপার এই আয়াত নাযিল করেছেন যারা আল্লাহর অবতীর্ণ বিধান দ্বারা বিচার ফায়সালা করে না। তাহলে আপনারা কিভাবে সম্প্রদায় বিশেষের সঙ্গে আয়াতটি সম্বন্ধিত করে ফেললেন? এর জবাবে বলা হবে, আল্লাহ তা‘আলা ব্যাপক অর্থ নির্দেশ করে এই আয়াত নাযিল করেছেন তবে সেটা এমন সম্প্রদায়ের আলোচনার মধ্য দিয়ে এনেছেন, যারা আল্লাহর গ্রন্থে বর্ণিত বিচার-ফয়সালার নীতি অস্বীকারকারী ছিল। অতএব, আয়াতে তাদের ব্যাপারে জানানো হয়েছে যে, এই পন্থায় আল্লাহর বিধান পরিত্যাগ করার কারণে তারা কাফের হয়ে গিয়েছে।
    এখন একই পন্থায় যারা আল্লাহর অবতীর্ণ বিধান দ্বারা বিচার-ফয়সালা পরিত্যাগ করবে এবং এগুলো বাস্তবায়নে অস্বীকৃতি জানাবে তারা সরাসরি আল্লাহর প্রতি কুফরিকারী সাব্যস্ত হবে। ইবনে আব্বাস এমনটাই বলতে চেয়েছেন। কারণ কেউ যখন জানতে পারল, আল্লাহ তা'আলা কোন বিধান তাঁর গ্রন্থে অবতীর্ণ করেছেন, তথাপি সে তা অস্বীকার করল, সে কেমন যেন নবী আবির্ভাবের বিষয়টি জানার পর সরাসরি নবীকেই অস্বীকার করল[14]
    আল্লামা মুহাম্মদ ইবনে ইব্রাহিম রহিমাহুল্লাহু তা‘আলা বলেনঃ ইহুদিরা যদি নবীজির কাছে আসে তাহলে তাদের বিবাদ মীমাংসা করে দেয়ার ব্যাপারে অথবা তাদেরকে এড়িয়ে যাবার ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ইচ্ছাধীকার দিয়েছেন। {অতএব যদি তারা আপনার কাছে আসে তবে আপনি তাদের মাঝে ফয়সালা করতে পারেন অথবা তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারেন। আর যদি আপনি তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নেন, তবে তারা আপনার কোনই ক্ষতি করতে পারবে না। আর যদি আপনি তাদের মাঝে বিচার করতে চান, তবে ইনসাফের সঙ্গে তাদের মাঝে বিচার করুন। নিশ্চয়ই আল্লাহ ইনছাফকারীদেরকে ভালোবাসেন।} কুরআনের মূল বক্তব্যে قسط শব্দের অর্থ হলো ইনসাফ। আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের বিচার নীতি ছাড়া অন্য কোন কিছুই ইনসাফ হতে পারে না। আর যা কিছু এর বিপরীত, সেগুলোই জুলুম, অত্যাচার, বিভ্রান্তি, কুফুরি ও পাপাচার। তাইতো এরপরই আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেছেন{আর যারা আল্লাহর অবতীর্ণ বিধান দ্বারা বিচার ফায়সালা করে না তারাই কাফের... তারাই জালেম... তারাই পাপাচারী পাপীষ্ঠ}
    প্রিয় পাঠক! লক্ষ্য করুন আল্লাহর অবতীর্ণ বিধান বাদ দিয়ে অন্য আইন দ্বারা বিচার ফায়সালাকারীদের ব্যাপারে আল্লাহ তা‘আলা কেমন করে কুফুরী, জুলুম ও পাপাচার লিপ্ততার কথা বলছেন। আর এটা অসম্ভব যে, আল্লাহর বিধান বাদ দিয়ে বিচার ফায়সালাকারীদের কাউকে আল্লাহ কাফের বলবেন আর সে ব্যক্তি কাফের হবে না। এমন ব্যক্তি নিঃশর্তভাবে কাফের হবে। সর্বপ্রকার কুফরি তার মধ্যে সাব্যস্ত হবে। চাই সেটা কার্যগত কুফুরি হোক অথবা আকীদাগত। ইবনে তাউস প্রমুখ বর্ণনাকারীদের সূত্রে এই আয়াতের তাফসীরে ইবনে আব্বাস থেকে যা বর্ণিত হয়েছে, তা দ্বারা বোঝা যায়, আল্লাহর বিধান বাদ দিয়ে ফয়সালাকারী শাসক এমন আকীদাগত কুফরীতে লিপ্ত ধরা হবে, যা মিল্লাতে ইসলাম থেকে বহিস্কৃত করে দেয় কিংবা এমন কার্যগত কুফরীতে লিপ্ত ধরা হবে, যা বহিস্কৃত করে না।
    এবার আসি আকীদাগত কুফরীর প্রকারভেদ প্রসঙ্গে

    প্রথমতঃ আল্লাহর অবতীর্ণ বিধান পরিত্যাগকারী বিচারক আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিচার নীতির সর্বাধিক উপযুক্ততা অস্বীকার করবে। ইবনে জারির ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমার যে বর্ণনাটি পছন্দ করেছেন, সেখানে একথাই এসেছে যে, শরীয়াহ যে বিচার নীতি আল্লাহ অবতীর্ণ করেছেন, সরাসরি তা অস্বীকার করা কুফরি। বস্তুত এ বিষয়ে কুফরি হওয়ার ব্যাপারে ওলামায়ে কেরামের মাঝে কোনো মতভেদ নেই। কারণ শরীয়তের সর্বজনবিদিত স্বতঃসিদ্ধ একটি মূলনীতি হলো, উসূলে দ্বীনের কোন একটি অথবা প্রকৃত অর্থেই উম্মাহর মাঝে সর্বজনবিদিত ও সর্বজনস্বীকৃত কোন শাখাগত বিষয় অথবা অকাট্যভাবে প্রমাণিত রাসূল কর্তৃক আনীত বিষয়াদির কোন একটি অক্ষর যদি কেউ স্বীকার করে, তবে সে মিল্লাতে ইসলাম থেকে বহিস্কৃত হয়ে কাফের হয়ে যাবে।

    দ্বিতীয়ঃ আল্লাহর অবতীর্ণ বিধান পরিত্যাগকারী শাসক আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিচারনীতি ইনসাফের উপযুক্ত হবার বিষয়টি অস্বীকার করবে না বটে; কিন্তু রসূল ভিন্ন অন্য কারো বিচার নীতি তদাপেক্ষা শ্রেষ্ঠ বলে মনে করবে।
    ...................

    কোন সন্দেহ নেই যে, এটাও কুফরি। কারণ এ ব্যক্তি সৃষ্টিকুলের প্রবর্তিত বিধি-বিধান যা আবর্জনাযুক্ত মস্তিষ্ক ও ময়লাযুক্ত ধ্যান-ধারণা থেকে সৃষ্ট, সেগুলোকে প্রজ্ঞাময় মহান আল্লাহর বিচার নীতির ওপর প্রাধান্য দিচ্ছে।
    ...................

    তৃতীয়ঃ অন্য কারো বিচার নীতিকে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল অপেক্ষা অধিক শ্রেষ্ঠ বিশ্বাস করবে না বটে; কিন্তু সমপর্যায়ের মনে করবে। এটাও পূর্বোক্ত প্রকারদ্বয়ের সঙ্গে যুক্ত হবে। অতএব, এর দ্বারা ব্যক্তি এমন কুফরীতে লিপ্ত ধরা হবে, যা মিল্লাতে ইসলাম থেকে বহিস্কৃত করে দেয়। কারণ এ ব্যক্তি স্রষ্টা ও সৃষ্টিকে একই সমতলে নিয়ে এসেছে।
    ...................

    চতুর্থঃ আল্লাহর অবতীর্ণ বিধান পরিত্যাগকারী বিচারকের বিচার নীতি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিচার নীতির সমপর্যায়ের বলে বিশ্বাস করবে নাতদাপেক্ষা শ্রেষ্ঠ বলা তো দূরে থাকুককিন্তু আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিচারনীতিবিরোধী আইন বাস্তবায়নযোগ্য ও বৈধ মনে করবে।
    এটাও তৃতীয় প্রকারের মতো। কারণ এই ব্যক্তি সুস্পষ্টভাবে শরীয়তের দ্ব্যর্থহীন মূল বক্তব্যে যে বিষয় হারাম বলে প্রমাণিত, তা জায়েয বলে বিশ্বাস করছে।

    পঞ্চমঃ এ প্রকার শরীয়তের ব্যাপারে গোঁয়ার্তুমির সর্বাধিক সুস্পষ্ট, ন্যক্কারজনক ও জঘন্য প্রকার।
    ...................

    শরিয়া আদালত ও বিচারব্যবস্থার সঙ্গে সর্বাঙ্গিক অন্যায় সাদৃশ্যের কারণে এই ব্যাপারটা আরও ভয়াবহ।
    ...................

    শরিয়া বিচারব্যবস্থার বিভিন্ন উৎস ও ভিত্তি রয়েছে। সেই মূল ভিত্তি হলো কিতাবুল্লাহ, সুন্নাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। আর মানব রচিত এই বিচার ব্যবস্থা ও আদালতগুলোও বিভিন্ন উৎস থেকে নিঃসৃত। আর সেই উৎসগুলো হলো বিভিন্ন শরীয়ত ও মতবাদ।
    ...................

    এই আদালতগুলো বহু ইসলামী রাষ্ট্রে পরিচালিত হচ্ছে।
    ...................

    এগুলোতে কর্মরত বিচারকেরা মানুষদের মাঝে কিতাব সুন্নাহর বিচারব্যবস্থা বিরোধী মানব রচিত আইন-কানুন দ্বারা বিচার ফায়সালা করছে, মানুষকে সেগুলো মানতে বাধ্য করছে, সেগুলোর ব্যাপারে বৈধতা দিচ্ছে। এর চেয়ে বড় কুফরি আর কি হতে পারে?
    ...................

    জ্ঞানী মহলের উচিত, এগুলোর সঙ্গে পুরোপুরি সম্পর্ক ছিন্ন করা। কারণ এই ব্যবস্থার দ্বারা জনমানুষকে নিজেদের দাস বানিয়ে রাখা হয়। নিজেদের খেয়াল-খুশি, নিজস্ব ইচ্ছা-অনিচ্ছা, ভুল-ভ্রান্তি এবং ত্রুটি-বিচ্যুতির দ্বারা মানুষের বিবাদ মীমাংসা ও দ্বন্দ্ব নিরসনের চেষ্টা করা হয়। আর আল্লাহর সুস্পষ্ট বাণী দ্বারা এই কাজ যে কুফরি, তা তো আছেই। {আর যারা আল্লাহর অবতীর্ণ বিধান দ্বারা বিচার ফায়সালা করে না তারাই কাফের}

    ষষ্ঠ: সমাজের নেতৃবৃন্দ, গোত্রপতি এবং নগর গ্রামের হর্তাকর্তারা নিজেদের পিতৃ-পুরুষের ঐতিহ্যবাহী নানা আচার প্রথা দ্বারা যে বিচারের কাজগুলো করে থাকে।
    ...................

    এবার আসি দ্বিতীয় প্রকারে। আল্লাহর বিধান পরিত্যাগকারী বিচারকের কুফরীর দ্বিতীয় এই প্রকারটি মিল্লাতে ইসলাম থেকে বহিস্কৃত করে দেয় না।

    পূর্বে আমরা দেখেছি আল্লাহর বিধান পরিত্যাগকারী বিচারকের কুফরি প্রসঙ্গে আসা আয়াতের ব্যাখ্যায় ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা এমন এক প্রকার কুফরীর কথা বলেছেন, যাকে বলা হয় ছোট কুফুরি। আরবিতে একে বলা হয়কুফর দুনা কুফর। অপর এক বর্ণনায় তিনি বলেছেনতারা যেই কুফুরি মনে করছে এটা সেই কুফরি নয়। তো ছোট এই কুফরীর ব্যাখ্যা হল, কোন বিচারক নিজের প্রবৃত্তি ও লোভ লালসার কারণে আল্লাহর বিধান নির্দিষ্ট কোনো মামলায় এড়িয়ে যাবে। তবে সেই সঙ্গে তার বিশ্বাস স্থির থাকবে যে, আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের বিচার ফয়সালাটাই আসল। এই অপরাধের কারণে যেই কুফুরি হবে, সেটা যদিও মিল্লাতে ইসলাম থেকে বহিস্কৃত করে দেবে না, কিন্তু এটা সবচেয়ে বড় কবিরা গুনাহগুলোর অন্যতম। ব্যভিচার, মদ্যপান, চুরি, মিথ্যা সাক্ষী প্রভৃতি যে কবিরা গুনাহগুলো রয়েছে, এগুলোর চেয়েও জঘন্য হল আমাদের আলোচ্য এই অপরাধ। এর দ্বারা বোঝা যায়, এটা সাধারণ কবিরা গুনাহগুলোর মত নয়। কারণ যেই অপরাধকে আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তা‘আলা তাঁর গ্রন্থে কুফরি বলে আখ্যায়িত করেছেন, সেটা এমন গুনাহ অপেক্ষা অধিক জঘন্য হবে; যেটা কুফুরি বলে আখ্যা পায় নি।”[15]

    আমাদের আলোচ্য আয়াতগুলোর তাফসীরে ইবনে কাইয়্যিম রহিমাহুল্লাহ বলেনঃ
    বিশুদ্ধ বক্তব্য হল, আল্লাহর অবতীর্ণ বিধান পরিত্যাগ করে বিচার-ফয়সালা করার দ্বারা ছোট-বড় দুই ধরনের কুফরিই হতে পারে। শাসকের অবস্থাভেদে এই পরিবর্তন হবে। অতএব, যদি কোন শাসক নির্দিষ্ট ঘটনায় আল্লাহর অবতীর্ণ বিধান কার্যকর করা আবশ্যক বলে বিশ্বাস করে, কিন্তু গুনাহ হিসেবে তা পালনে বিরত থাকে; তবে সে স্বীকার করে, এ কাজের কারণে সে শাস্তির উপযুক্ত হবে, তবে এটা ছোট কুফরি। আর যদি সে বিশ্বাস করে, আল্লাহর বিধান কার্যকর করা আবশ্যক নয় বরং এক্ষেত্রে সে যা ইচ্ছা তাই করতে পারবে, এমতাবস্থায় যদিও সে জানে, এটি আল্লাহ তা‘আলার হুকুম ও বিচার নীতি, তবুও তার এহেন কর্মকাণ্ড বড় কুফরি হবে। আর যদি সে না জানে বরং অজ্ঞতার কারণে ভুল করে, সে ক্ষেত্রে যারা ভুলক্রমে কিছু করে ফেলে তাদের হুকুম প্রযোজ্য হবে[16]

    আমি বলব, ধর্মনিরপেক্ষ এই সরকারগুলো তাদের সংবিধানের মাধ্যমে সুস্পষ্টভাবে ঘোষণা করছে যে, ক্ষমতার উৎস একমাত্র জনগণ; তারা জানাচ্ছে, মানব রচিত তাদের ওই সংবিধান আইন প্রণয়নের একমাত্র উৎস, এ সংবিধানের বিরোধিতা করার বৈধতা নেই; তারা আরও দাবি করছে, আদালতগুলোতে সংবিধানের অধীনে রচিত আইনের আলোকে বিচার ফয়সালা করতে হবে, অন্য কোন আইন দ্বারা বিচার করা যাবে না, বিচারের পর কেবল সেই রায়গুলো টিকবে, যেগুলো সংবিধানের অধীনে রচিত আইনের আলোকে গ্রহণ করা হয়েছে, আর ধর্মনিরপেক্ষ বিচারকের এই অধিকার থাকবে না যে, সে সাংবিধানিক আইনের বিরোধিতা করে শরীয়তের দ্বারা ফায়সালা করবে সংবিধানের আলোকে আইনানুগ রায় বাতিল বলতে সমর্থ হবে না কোন বিচারক আর যদি এমন কাজ করে ফেলে, তবে তার পদ বাতিল হয়ে যাবে। এইমাত্র যা কিছু বলা হয়েছে, সবগুলোই সেই অবস্থার কথা যখন এ সমস্ত বিচারক ভালো করেই জানে, তারা যা কিছু বলছে এবং করছে, সবকিছুই ইসলামী আকীদা ও শরীয়তের বিপরীত।

    (৪) এমনকি আমরা যদি ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমার বর্ণনাগুলো বিশুদ্ধ বলে ধরেও নিই, তথাপি এগুলো সমকালীন মুরজিয়া গোষ্ঠীর মাযহাবের পক্ষে দলিল হবার জন্য যথেষ্ট নয় যারা দাবি করে, আল্লাহর অবতীর্ণ বিধান দিয়ে যে ব্যক্তি বিচার-ফয়সালা করবে না, সে কাফির নয়। এমনকি যদি আল্লাহর বিধান পরিত্যাগকারীরা রাষ্ট্রের সমস্ত আইন-কানুন সেক্যুলার গোষ্ঠী ও খ্রিস্টানদের আইন-কানুন দিয়ে পাল্টেও ফেলে, যদি তারা শরীয়তের শাসনতন্ত্র হওয়ার একক অধিকার অস্বীকার করে, ক্ষমতার উৎস একমাত্র শরীয়ত বাদ দিয়ে যদি তারা জনগণকে, কোন দলকে, সংখ্যাগরিষ্ঠ জনমানুষের আকাঙ্ক্ষাকে অথবা ব্যক্তিগত খেয়াল-খুশি ও প্রবৃত্তিকে ক্ষমতা ও আইনের উৎস মনে করে, তবুও কাফের হবে না। এমনই জঘন্য দাবি সমকালীন মুরজিয়া গোষ্ঠীর।
    আর সাহাবীর বক্তব্য সাধারণ অবস্থাতেই যখন দলিল হতে পারে না, এখন যদি তার বিপক্ষে অন্যান্য সাহাবী রাযিয়াল্লাহু আনহুম আজমাইনের বক্তব্য পাওয়া যায়, তবে তো তা আরো নিশ্চিতভাবে কিছুতেই দলিল হতে পারে না।
    আর আমরা জানি হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব এবং হযরত ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহুমা থেকে বর্ণিত আছে যে, তারা জোরালোভাবে এমন ব্যক্তির কুফরীর কথা উল্লেখ করেছেন, যারা আল্লাহর অবতীর্ণ বিধান দ্বারা বিচার ফায়সালা করে না।

    ৪.১) হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত উক্তিসমূহঃ

    ৪.১.১) [বর্ণনা সূত্র উল্লেখ পূর্বক] বর্ণনাকারী মাসরুক বলেন, আমি হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বলি, হে আমীরুল মুমিনীন! বিচারের ক্ষেত্রে উৎকোচ গ্রহণ করা কি সাধারণ ঘুষের অন্তর্ভুক্ত? তখন তিনি জবাবে বলেনঃ না, এটা হলো কুফরি। সাধারণ ঘুষ তো হলো, শাসকের সঙ্গে কোন ব্যক্তির ভালো সম্পর্ক থাকবে এবং উচ্চ মহলে সে বিশেষভাবে মর্যাদাশালী থাকবে। এমতাবস্থায় শাসকের কাছে অপর কোন ব্যক্তির প্রয়োজন দেখা দিলে প্রথম ব্যক্তি প্রয়োজন তাড়িত ব্যক্তির কাজ সমাধা করে দেবে না, যতক্ষণ তাকে হাদিয়া দেয়া না হয়।”[17]

    ৪.১.২) আসলাম ইবনে সাহল আল ওয়াসেতী রহিমাহুল্লাহু তা‘আলা বিশর ইবনে মুহাম্মাদ ইবনে আবান ইবনে মুসলিমের জীবনীতে উল্লেখ করেনঃ [বর্ণনা সূত্র উল্লেখ পূর্বক] মাসরুক থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি হযরত ওমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বলি, বিচারের ক্ষেত্রে উৎকোচ গ্রহণ করাটাই কি ঘুষ? তখন তিনি জবাবে বলেনঃ না, বরং তা তো কুফুরি। ঘুষ হলো শাসকের কাছে কোন ব্যক্তির বিশেষ মর্যাদা থাকবে, আর অপর কোন ব্যক্তি শাসকের কাছে প্রয়োজন পূরণ করতে যাবে; তখন দ্বিতীয় ব্যক্তি প্রথমজনকে হাদিয়া ও উপহার প্রদান করবে, যেন তার প্রয়োজন পূরণ করে দেয়[18]
    আমি (শাইখ আইমান হাফিযাহুল্লাহ) বলবঃ উপরোক্ত দুটি উক্তির বর্ণনাসূত্রে আবান ইবনে আবি আইয়াশকে নিয়ে আপত্তি রয়েছে[19]

    ৪.২) হযরত ইবনে মাসউদ রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত উক্তিসমূহঃ

    ৪.২.১) হাইসামী রহিমাহুল্লাহু তা'আলা বলেনঃ মাসরুক থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন আমি আবদুল্লাহর কাছে বসা ছিলাম। তখন এক ব্যক্তি তাঁকে জিজ্ঞেস করল, ঘুষ কি জিনিস? বিচারের ক্ষেত্রে উৎকোচ গ্রহণ করাই কি ঘুষ? তখন তিনি জবাবে বলেনঃ এটা তো কুফরি। অতঃপর তিনিই পাঠ করেনঃ وَمَن لَّمْ يَحْكُم بِمَآ أَنزَلَ ٱللَّهُ فَأُو۟لَٰٓئِكَ هُمُ ٱلْكَٰفِرُونَ {আর যারা আল্লাহর অবতীর্ণ বিধান দ্বারা বিচার ফায়সালা করে না তারাই কাফের} আবু ইয়ালা উক্তিটি বর্ণনা করেছেন। তাঁর শাইখ মুহাম্মদ ইবনে উসমান ইবনে ওমরকে আমি চিনতে পারিনি [20]
    হযরত ইবনে মাসউদ রাদিআল্লাহু আনহু থেকে আরো বর্ণিত, বিচারের ক্ষেত্রে উৎকোচ গ্রহণ করা কুফরি। আজকাল মানুষজন এটাকে সাধারণ ঘুষ বলে মনে করে। ইমাম তাবারানী আল-মু'জামুল কাবির গ্রন্থে উক্তিটি বর্ণনা করেছেন। উক্তির বর্ণনা সূত্রে যারা রয়েছেন, তারা সকলেই সহীহ হাদীসের বর্ণনাকারী[21]

    ৪.২.২) হাইসামী রহিমাহুল্লাহু তা'আলা বলেনঃ আল্লাহ তা‘আলার উক্তি{এবং তারা ঘুষ (সুহ্ত) খাওয়ার কারণে..} হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তাঁকে এই ঘুষ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হয়। তখন তিনি বলেন, এটাই তো উৎকোচ বা ঘুষ। তখন বলা হয়: বিচার ফায়সালা ক্ষেত্রেও কি এটা এমনি সাধারণ? তখন তিনি বলেন: ওটা তো কুফরি। ইমাম তাবারানী শুরাইক কর্তৃক সুররি কর্তৃক আবুয যুহা সূত্রে উক্তিটি বর্ণনা করেছেন। সুররী কে, তা আমি এখনো জানতে পারিনি। তবে বর্ণনা সূত্রের বাকিরা সকলেই নির্ভরযোগ্য।
    আমি (শাইখ আইমান হাফিযাহুল্লাহ) বলবঃ ইমাম তাবারানী রহিমাহুল্লাহু তা‘আলা কর্তৃক রচিত আল মুজামুল কাবির গ্রন্থে আমি উক্তিটি পেয়েছি। (হাদিস নং ৯০৯৮) বর্ণনা সূত্রে রয়েছেন শুরাইক, তিনি সুদদী থেকে তিনি আবুয যুহা থেকে, তিনি মাসরুক থেকে, তিনি আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণনা করেছেন[22]

    ৪.২.৩) ইবনে জারীর তাবারী রহিমাহুল্লাহ বলেনঃ আলকামা এবং মাসরুক থেকে বর্ণিত, তারা উভয়ে ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহুকে উৎকোচ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করেন। তখন তিনি বলেন, এটা ঘুষের অন্তর্ভুক্ত। বর্ণনাকারী বলেনঃ তখন তারা উভয়ে জিজ্ঞেস করলেনঃ বিচারের ক্ষেত্রেও কি? তিনি জবাবে বলেনঃ সেটা তো কুফরি।
    অতঃপর তিনি এই আয়াত তেলাওয়াত করেনঃ {আর যারা আল্লাহর অবতীর্ণ বিধান দ্বারা বিচার ফায়সালা করে না তারাই কাফির}[23]

    আমি (শাইখ আইমান হাফিযাহুল্লাহ) বলবঃ এই বর্ণনা সূত্রে যারা রয়েছেন, তারা সকলেই আল্লাহর রহমতে নির্ভরযোগ্য[24]

    ৪.২.৪) ইবনে জারীর তাবারী রহিমাহুল্লাহু তা‘আলা বলেনঃ “[বর্ণনা সূত্র উল্লেখ পূর্বক] মাসরুক থেকে বর্ণিত, আমি ইবনে মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহুকে ঘুষ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করি। শাসনের ক্ষেত্রে উৎকোচ গ্রহণ করা কি একই? তখন তিনি জবাবে বলেনঃ না তা নয়। যে ব্যক্তি আল্লাহর অবতীর্ণ বিধান দ্বারা বিচার-ফয়সালা করবে না সে কাফির। যে ব্যক্তি আল্লাহর অবতীর্ণ বিধান দ্বারা বিচার-ফয়সালা করবে না সে জালিম। যে ব্যক্তি আল্লাহর অবতীর্ণ বিধান দ্বারা বিচার-ফয়সালা করবে না সে পাপাচারী। ঘুষ গ্রহণ করার অর্থ তো হলো, কোন প্রয়োজন পূরণে ব্যক্তি আপনার কাছে সাহায্য চাইবে। তখন আপনি তাকে সাহায্য করবেন। এর জন্য সে আপনাকে যে উপহার দেবে তা গ্রহণ করাকেই ঘুষ বলে[25]

    ৪.২.৫) আবু বকর জাসসাস রহিমাহুল্লাহু তা‘আলা বলেনঃ মাসরুক থেকে বর্ণিত, আমি আব্দুল্লাহকে শাসনের ক্ষেত্রে জুলুমের ব্যাপারে জিজ্ঞেস করি। তখন তিনি জবাবে বলেনঃ সেটা হল কুফরি। আর আমি তাকে উৎকোচ গ্রহণ করার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করি। তখন তিনি বলেন, তা হলো ঘুষ[26]

    দ্বিতীয় সংশয় হলোঃ

    আল্লাহর অবতীর্ণ বিধিবিধান পরিত্যাগকারী শাসকবর্গের সহযোগী সমকালীন মুরজিয়া গোষ্ঠীর মাঝে কেউ কেউ হযরত বারা ইবনে আযেব রাদিআল্লাহু তা'আলা আনহুর একটি বর্ণনা দ্বারা সংশয় তৈরি করে। তারা বলতে চায় আয়াতগুলো মুসলমানদের ব্যাপারে অবতীর্ণ হয়নি।
    ইমাম মুসলিম রহিমাহুল্লাহু তা'আলা বলেনঃ
    "عن البراء بن عازب قال: مر على النبي صلى الله عليه وسلم بيهودي محممًا مجلودًا، فدعاهم صلى الله عليه وسلم فقال: "هكذا تجدون حد الزاني في كتابكم؟" قالوا: نعم، فدعا رجلًا من علمائهم، فقال: "أنشدك بالله الذي أنزل التوراة على موسى أهكذا تجدون حد الزاني في كتابكم؟" قال: لا، ولولا أنك نشدتني بهذا لم أخبرك، نجده الرجم، ولكنه كثر في أشرافنا، فكنا إذا أخذنا الشريف تركناه، وإذا أخذنا الضعيف، أقمنا عليه الحد، قلنا: تعالوا، فلنجتمع على شيء، نقيمه على الشريف والوضيع. فجعلنا التحميم والجلد مكان الرجم. فقال رسول الله صلى الله عليه وسلم: "اللهم إني أول من أحيا أمرك إذ أماتوه"، فأمر به فرجم فأنزل الله عز وجل ﴿يا أيها الرسول لا يحزنك الذين يسارعون في الكفر﴾ إلى قوله ﴿إن أوتيتم هذا فخذوه﴾ يقول ائتوا محمدًا صلى الله عليه وسلم فإن أمركم بالتحميم والجلد فخذوه، وإن أفتاكم بالرجم فاحذروا. فأنزل الله تعالى: ﴿ومن لم يحكم بما أنزل الله فأولئك هم الكافرون﴾ ﴿ومن لم يحكم بما أنزل الله فأولئك هم الظالمون﴾ ﴿ومن لم يحكم بما أنزل الله فأولئك هم الفاسقون﴾ في الكفار كلها"
    হযরত বারা ইবনে আযেব রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পাশ দিয়ে এক ইয়াহুদীকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, যার মাথা মুণ্ডন করে কালি মাখিয়ে দেয়া হয়েছিল এবং চাবুক মারা হয়েছিল। তখন নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাদেরকে ডেকে পাঠান। অতঃপর বলেনঃ তোমাদের কিতাবে ব্যভিচারের শাস্তি এমনটাই রয়েছে? তখন তারা বলে: জি, হ্যাঁ। তখন নবীজি তাদের একজন আলেমকে ডাকেন। অতঃপর বলেনঃ আমি ঐ আল্লাহর দোহাই দিয়ে তোমাকে জিজ্ঞেস করছি; যিনি মুসার ওপর তাওরাত নাযিল করেছেন, তোমাদের কিতাবে ব্যভিচারের শাস্তি তোমরা এমনটাই পেয়েছো? তখন সে বলে: না। আপনি যদি এভাবে আল্লাহর দোহাই দিয়ে আমাকে জিজ্ঞেস না করতেন, তাহলে আমি কখনই আপনাকে বলতাম না। আমরা শাস্তি হিসেবে যা পেয়েছি তা হলো, প্রস্তরাঘাতে হত্যাদণ্ড। কিন্তু এই ব্যভিচার আমাদের সম্ভ্রান্ত লোকদের মাঝে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। তখন অবস্থা এমন দাঁড়ায়, আমরা যদি সম্ভ্রান্ত কোনো লোককে শাস্তি দিতে যেতাম, তখন আমরা প্রস্তরাঘাতে শাস্তি এড়িয়ে যেতাম। আর যদি কোন দুর্বল লোকের শাস্তি দিতে যেতাম, তবে তাকে ঠিকই সেই শাস্তি দিতাম। তখন আমরা একে অপরকে বললাম, আসো! আমরা এমন একটা বিষয়ে একমত হই, এমন একটা শাস্তি আমরা স্থির করি, যা সম্ভ্রান্ত ও নিচু শ্রেণীর লোক সকলকেই দেয়া যায়। আমরা প্রস্তরাঘাতে হত্যার স্থলে কালি মাখিয়ে বেত্রাঘাত করার শাস্তি স্থির করি। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ হে আল্লাহ! আমি প্রথম ব্যক্তি যিনি তোমার বিধান পুনর্জীবিত করেছে, যখন তারা তোমার বিধান পদদলিত করে দিয়েছে তখন নবীজি ইহুদি সে ব্যক্তির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত প্রদান করেন ফলে তার ওপর রজম কার্যকর করা হয়। তখন আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তা‘আলা নাযিল করেনঃ {হে রাসূল! যারা কুফরীর দিকে গতিশীলতার সঙ্গে ধাবমান, তাদের ব্যাপার যেন আপনাকে দুঃখিত না করে।.... যদি তোমাদের পছন্দসই বিধান দেয় তবে তোমরা তা গ্রহণ করো} অর্থাৎ তারা একে অপরকে বলছিল, তোমরা মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে যাও। যদি তিনি মাথা মুণ্ডন করে কালি মাখিয়ে দেয়া এবং বেত্রাঘাত করার শাস্তি প্রদান করেন, তবে তোমরা তাঁর বিচার গ্রহণ করো। আর যদি তিনি তোমাদেরকে রজমের ফতোয়া দেন, তবে তোমরা এড়িয়ে যাও। তখন আল্লাহ সুবহানাহুওয়া তা‘আলা নাজিল করেন ‌—{আর যারা আল্লাহর অবতীর্ণ বিধান দ্বারা বিচার ফায়সালা করে না তারাই কাফের... তারাই জালেম... তারাই পাপীষ্ঠ} তারাই পাপিষ্ট অর্থাৎ সমস্ত কাফের গোষ্ঠীর মাঝে তারা অধিক পাপাচারী[27]

    এই সংশয় নিরসন করতে গিয়ে বলব, অন্যান্য সাহাবী থেকে বিভিন্ন বর্ণনায় রয়েছে মুসলমানরা এই আয়াতে বর্ণিত বিধানের আওতাভুক্ত হবে।

    ১) হযরত হুযাইফা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত হয়েছে-

    ১.১) তাবারি রহিমাহুল্লাহু তা'আলা বলেনঃ {আর যারা আল্লাহর বিধান দ্বারা বিচার ফায়সালা করে না তারাই কাফের} এই আয়াতের ব্যাখ্যায় হযরত হুযাইফা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, “যদি তোমাদের জন্য থাকে সকল সুযোগ সুবিধা আর তাদের জন্য হয় সবরকম সীমাবদ্ধতা, তবে কেমন করে বনী ইসরাঈল তোমাদের ভাই হয়! তোমরা তো জুতার ফিতার মতো ছোট ছোট সবকিছুতে তাদেরকে অনুসরণ করবে

    ১.২) তাবারি রহিমাহুল্লাহু তা'আলা আরও বলেনঃ [বর্ণনা সূত্র উল্লেখ পূর্বক] হুযাইফাকে বলা হয়ঃ {আর যারা আল্লাহর অবতীর্ণ বিধান দ্বারা বিচার ফায়সালা করে না তারাই কাফের}
    অতঃপর তিনি পূর্বের মত [বর্ণনা সূত্র উল্লেখ সহকারে] আরো একটি হাদিস বর্ণনা করেন যেখানে তিনি বলেনঃ এক ব্যক্তি আলোচ্য আয়াতগুলোর ব্যাপারে হযরত হুযাইফাকে জিজ্ঞেস করে। বলা হয়, এই আয়াতগুলো তো বনী-ইসরাঈলের ব্যাপারে। তখন হযরত হুযাইফা বলেনঃ যদি তাদের জন্য থাকে সকল সীমাবদ্ধতা আর তোমাদের জন্য থাকে সকল সুযোগ-সুবিধা, তবে কেমন করে তারা তোমাদের ভাই হয়? না, তা কখনই নয়। তোমরা তো জুতার ফিতার মতো ছোট ছোট বিষয়ে তাদের পদাঙ্ক অনুসরণ করবে[28]

    ২) আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিআল্লাহু আনহু থেকেও এমন ভাষ্য বর্ণিত রয়েছে।
    তাবারি রহিমাহুল্লাহু তা'আলা বলেনঃ [বর্ণনার সূত্র উল্লেখ পূর্বক] ইবনে মাসউদ রাদিআল্লাহু আনহুকে উৎকোচের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করা হয়। তখন তিনি বলেনঃ এটাই হলো সেই ঘুষ বা উৎকোচ, যার কথা কুরআনে এসেছে। জিজ্ঞাসাকারীরা তখন বলেনঃ বিচারের ক্ষেত্রেও কি এই ঘুষ বা উৎকোচের এই হুকুম? তিনি বলেন সেটা তো কুফরি। অতঃপর তিনি আয়াত তেলাওয়াত করেন {আর যারা আল্লাহর অবতীর্ণ বিধান দ্বারা বিচার ফায়সালা করে না তারাই কাফের}।”[29]


    *****


    (চলবে, ইন শা আল্লাহ)
    [1] তাফসীরে তাবারী: ১০/৩৫৫-৩৫৬

    [2] তাফসীরে তাবারী: ১০/৩৫৭

    [3] তাফসীরে ইবনে কাসীর: ৩/১০৯

    [4] আরো দ্রষ্টব্য: তাফসীরে ইবনে কাসীর: ৩/১০৮, ইমাম মারুযী রচিত তাযীমু ক্বাদরিস সালাহ্: ২/৫২১

    [5] তাহযীবুত্ তাহযীব: ৭/৩৩৯

    [6] তাহজিব আল কামাল: (২০/৪৯০), আরো দ্রষ্টব্য: আল্ মুগনী ফিযযুআফা: (২/৪৫০), মিযানুল ইতিদাল: (৫/১৬৩), আল্ কাশিফ: (২/৪১), জামিউত্ তাহসীল: (১/২৪০), তুহফাতুত তাহসীল ফি যিকরি রুওয়াতিল মারাসীল: (১/২৩৪), উক্বাইলী রচিত আযযুআফা আলকাবীর: (৩/৩৪), তাক্বরীবুত তাহযীব: (১/৪০২), রিজালু সহীহি মুসলিম: (২/৫৬), তারিখু বাগদাদ: (১১/৪২৮), বাহরুদ্দাম: (১/৩০৪), আলমারাসীল লিবনি আবী হাতেম: (১/১৪০), তুহফাতুত তালিব: (১/৩৮০)

    [7] আল মুসতাদরাক আলাস সাহীহাইন: ২/৩৪২

    [8] তাহযীবুল কামাল: ৩০/১৭৯, ১৮০

    [9] মুকাদ্দামাতু ফাতহিল বারী: (আপত্তি রয়েছে এমন বর্ণনাকারীদের নাম প্রসঙ্গে নবম পরিচ্ছেদ) হারফুল হা - حرف الهاء -হিশাম ইবনে হুজাইর: (১/৪৪৭, ৪৪৮)

    [10] আরও দ্রষ্টব্য : যাদুল মাআদ: (২/১৩৭), আলজারহু ওয়াত্তাদীল: (৬/২৫৯), (৯/৫৩), যিকরু আসমায়ি মান তুকুল্লিমা ফীহি: (১/১৮৭), মীযানুল ইতিদাল: (৭/৭৭), আলকাশিফ: (২/৩৩৫), মারিফাতুস সিক্বাহ: (২/৩২৭), আসসীক্বাত: (৭/৫৬৭), ইবনুল জাওযী রচিত আযযুআফা ওয়াল মাতরুকীন: (৩/১৭৪), লিসানুল মীযান: (৭/৪১৭), তাহযীবুত তাহযীব: (৮/৯২), (১১/৩২), তাক্বরীবুত তাহযীব: (১/৫৭২), আলকামিল ফী যুআফায়ির রিজালঃ (৫/১১৯), (৭/১১১), জামিউত তাহসীল: (১/৫৮), উক্বাইলী রচিত আয-যুআফাউল কাবীর: (৪/৩৩৭), আততাদীল ওয়াত তাজরীহ: (৩/১১৬৯), আততাবাক্বাতুল কুবরা: (৫/৪৮৪), (১/৩৮৫), (১/৪০১, ৪০২), (৩/৩০), হাজ্জাতুল বিদা': (১/৪৪২)

    [11] নুখবাতুল ফিকর: (১/২৩২), আল্ কিফাইয়া ফী ইলমির রিওয়াইয়া: (১/১০৫), আলইহকাম লিল আমাদী: (২/৯৯)

    [12] আলইহকাম লিল আমাদী: (৪/১৫৫)

    [13] তাফসীরুত তাবারী: ১০/৩৫৭

    [14] তাফসীরুত তাবারী: ১০/৩৫৮

    [15] রিসালাতু তাহকীমিল কাওয়ানীন: ১৩-২১

    [16] মাদারিজুস সালেকীন: ১/৩৩৬, ৩৩৭

    [17] ইমাম জাসসাস রচিত আহকামুল কুরআন: ৪/৮৫

    [18] তারিখে ওয়াসেত্ব: ১/১৮১

    [19] বুখারী রচিত আততারীখুল কাবীর: (১/৪৫৪), বুখারী রচিত আততারীখুস সাগীর: (২/৫৩), ইমাম নাসাঈ রচিত আযযুআফা ওয়াল মাতরুকীন: (১/১৪), আল মুক্বতানা ফী সারদিল কুনা: (১/৭৭), আহওয়ালুর রিজাল: (১/১০৩), হুলইয়াতুল আউলিয়া: (৭/১৫০), আল-জারহু ওয়াত তাদীল: (১/৭৭)

    [20] মুসনাদু আবী ইয়ালা: (৯/১৭৩, ১৭৪), সুনানুল বাইহাক্বী আল-কুবরা: (১০/১৩৯)

    [21] মাজমাউয যাওয়ায়েদ: (৪/১৯৯, ২০০), আল মুজামুল কাবীর: (৯/২২৬), সুনানে সায়ীদ ইবনে মানসূর: (খণ্ড নং: ০৪)

    [22] মাজমাউয যাওয়ায়েদ: (৭/১৫), আলমুজামুল কাবীর: (৯/২২৫)

    [23] তাফসীরুত তাবারী: (১০/৩৫৭, ৩১৯৩২২), আল মুজামুল কাবীর: (৯/২২৬)

    [24] ইয়াক্বুব ইবনে ইব্রাহীমের জীবনী দ্রষ্টব্য : ইবনে আবী হাতেম রচিত আলজারহু ওয়াত তাদীল: (৯/২০২), সিয়ারু আ'লামিন নুবালা: (১২/১৪১)
    হুশাইম ইবনে বাশিরের জীবনী দ্রষ্টব্য : আল কুনা ওয়াল আসমা: (১/৭৫৯), বুখারী রচিত আত-তারিখুল কাবীর: (১/৩১১), (৮/২৪২), আল-জারহু ওয়াত-তাদীল: (১/১৫৫), (৯/১১৫), তাযকিরাতুল হুফফায: (১/২৪৮), (১/২৪৯).
    আবদুল মালেক ইবনে আবী সুলায়মানের জীবনী দ্রষ্টব্য : তাযকিরাতুল হুফফায: (১/১৫৫)
    সালামা ইবনে কুহাইল-এর জীবনী দ্রষ্টব্য : ইমাম বুখারী রচিত আত তারীখুল কাবীর: (৪/৭৪), আল-জারহু ওয়াত তাদীল: (১/১৪৩), (৪/১৭০)
    আলকামা ইবনে কায়সের জীবনী দ্রষ্টব্য : হুলইয়াতুল আউলিয়া: (২/৯৮), (২/৯৯),
    মাসরুক্ব ইবনুল আজদা'র জীবনী দ্রষ্টব্য : বুখারী রচিত আত তারীখুল কাবীর: (৮/৩৫), আলজারহু ওয়াত তাদীল: (৮/৩৯৬)

    [25] তাফসীরুত তাবারী: (১০/৩২২৩২৪), জাসসাস রচিত আহকামুল ক্বুরআন: (৪/৮৪), সুনানু সাঈদ ইবনে মানসূর: (খণ্ড নং: ০৪), সুনানুল বাইহাক্বী আলকুবরা: (১০/১৩৯), শুআবুল ঈমান: (৪/৩৯০)

    [26] আবূ বকর আলজাসসাস রহিমাহুল্লাহু তাআলা রচিত আহকামুল কুরআন: (৪/৮৪, ৮৫), সুনানুল বাইহাক্বী আলকুবরা: (১০/১৩৯)

    [27] সহীহু মুসলিম, কিতাবুল হুদূদ, বাবু রাজমিল ইয়াহূদি আহলিয যিম্মাহ্ ফিয যিনা: হাদীস নং: ১৭০০ (২/৮১২, ৮১৩)

    [28] তাফসিরে তাবারী: (১০/৩৪৯, ৩৫০)

    [29] তাফসিরে তাবারী: (১০/৩২১)



    Last edited by Munshi Abdur Rahman; 05-12-2022, 12:16 PM.
    “ধৈর্যশীল সতর্ক ব্যক্তিরাই লড়াইয়ের জন্য উপযুক্ত।”-শাইখ উসামা বিন লাদেন রহ.

  • #2
    ‘আল কিতাব ওয়াস সুলতান – ইত্তিফাক ওয়া ইফতিরাক’ এর বঙ্গানুবাদ ।। কিতাবুল্লাহ ও হুকুমত: পারস্পরিক সঙ্গতি ও অসঙ্গতি ।। প্রথম খণ্ড ।। ভূমিকা পর্ব ।। -শাইখ আইমান আয-যাওয়াহিরী হাফিযাহুল্লাহ

    https://82.221.139.217/forum/%E0%A6%...A6%BE%E0%A6%B9

    ‘আল কিতাব ওয়াস সুলতান – ইত্তিফাক ওয়া ইফতিরাক’ এর বঙ্গানুবাদ ।। কিতাবুল্লাহ ও হুকুমত: পারস্পরিক সঙ্গতি ও অসঙ্গতি ।। প্রথম খণ্ড ।। পার্ট-১ ।। -শাইখ আইমান আয-যাওয়াহিরী হাফিযাহুল্লাহ


    https://82.221.139.217/forum/%E0%A6%...A6%BE%E0%A6%B9

    ‘আল কিতাব ওয়াস সুলতান – ইত্তিফাক ওয়া ইফতিরাক’ এর বঙ্গানুবাদ ।। কিতাবুল্লাহ ও হুকুমত: পারস্পরিক সঙ্গতি ও অসঙ্গতি ।। প্রথম খণ্ড ।। পার্ট-২ ।। -শাইখ আইমান আয-যাওয়াহিরী হাফিযাহুল্লাহ

    https://82.221.139.217/forum/%E0%A6%...A6%BE%E0%A6%B9

    ‘আল কিতাব ওয়াস সুলতান – ইত্তিফাক ওয়া ইফতিরাক’ এর বঙ্গানুবাদ ।। কিতাবুল্লাহ ও হুকুমত: পারস্পরিক সঙ্গতি ও অসঙ্গতি ।। প্রথম খণ্ড ।। পার্ট-৩ ।। -শাইখ আইমান আয-যাওয়াহিরী হাফিযাহুল্লাহ

    https://82.221.139.217/forum/%E0%A6%...A6%BE%E0%A6%B9
    “ধৈর্যশীল সতর্ক ব্যক্তিরাই লড়াইয়ের জন্য উপযুক্ত।”-শাইখ উসামা বিন লাদেন রহ.

    Comment


    • #3
      প্রিয় দ্বীনি ভাইয়েরা এই কিতাবটি দ্রুত পুরোটা অনুবাদ করে pdf আঁকারে প্রকাশ করলে ভালো হয়

      Comment


      • #4
        এবং মানুষ যদি সকল ক্ষমতার উৎস হয়ে থাকে তাহলে মৃত্যুর মাধ্যমে তাদের ক্ষমতার বিলুপ্তি ঘটে কেন মূলত মানুষ অন্যের ক্ষমতায় ক্ষমতাবান। তারা ক্ষমতার উৎস নয় । তাহলেতো বলতে হয় পৃথিবীতে যা রয়েছে সব কিছুই ক্ষমতার উৎস।নায়ূজু বিল্লাহ । কারণ পৃথিবীতে সব কিছুরই কোন না কোন গুন বা কোন ক্ষমতা রয়েছে।আর মানুষ হল কুপ্রবৃত্তির অনুসরী তারা কিভাবে নিজেদের জন্য আইন প্রণয়ন করবে। বিভিন্ন দন্ডবিধি হল মানুষকে শাস্তি দেবার জন্য । আর মানুষ শাস্তি থেকে পালাতে চায় এটা মানুষের সৃষ্টিগত স্বাভাব।তাই নিজেদের উপর নিজেরা কখনোই কঠোরতা আরোপ করতে চাইবে না । তাই তারা নিজেরা নিজেদের বিরুদ্ধে আইন প্রনয়ন করলে এতে অনেক ছাড় এবং হেরফের থেকে যাবে ফলে এতে বিচার কার্যের উদ্যেশ্য ব্যহত হবে ।আর আল্লাহর আইনের সমপর্যায়ের বা শ্রেষ্ঠ আইন রচনার দাবি করা অতিব মিথ্যাচার । কারণ এতে হয়ত বাড়াবাড়ি হবে বা ছাড়াছাড়ি হবে এবং মানুষের স্রষ্টা হল এক আল্লাহ তায়ালা । এবং তিনি তাদেরকে তার নিজস্ব সিস্টেমে তৈরি করেছেন এবং একটি নির্দিষ্ট সিস্টেমে তৈরি করেছেন তাই তাদের সমস্যা সমাধান সম্পর্কে তিনিই সবচাইতে ভালো জানেন কারণ মানুষের মাঝে তৈরি সিস্টেম হল একমাত্র আল্লাহর তৈরি। এবং আমরা জানি কোন নির্দিষ্ট একটি সিস্টেম নিয়ন্ত্রণ করতে বা এর সমাধান খুঁজতে একটিমাত্র প্রক্রিয়া অবলম্বন করতে হয় এর বাহিরে অন্য প্রক্রিয়া খুজা বা অবলম্বন করা সিস্টেমের জন্য ক্ষতিকর হয়ে থাকে ।তাই আল্লাহর তৈরি সিস্টেমের জন্য আল্লাহর তৈরি সমাধান ব্যতিত অন্য কোন সমাধান খুজা হবে ক্ষতির কারণ এবং অন্যকোন উত্তম সমাধান খুজাতো হবে বড় অজ্ঞতার পরিচয়।
        পৃথিবীর রঙ্গে রঙ্গিন না হয়ে পৃথিবীকে আখেরাতের রঙ্গে রাঙ্গাই।

        Comment


        • #5
          জি মুহতারাম, সঠিক।
          আর পুরো বইটি একসঙ্গে পেলে আমরা খুবই উপক্রিত হব ইনশাআল্লাহ্‌...

          Comment

          Working...
          X