ইসলামী কর্মকাণ্ডের সাথে সম্পৃক্ত অনেক দল ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধান ও আইন-কানুনের ধারা অনুযায়ী রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা নিয়ে দ্বন্দ্ব-সংঘাতে লিপ্ত হয়েছে, যার ফলে সর্বত্র দুর্যোগ ও ক্ষতিই হয়েছে। মরক্কো থেকে ইন্দোনেশিয়া ও মালয়েশিয়া পর্যন্ত এই ব্যর্থ পরীক্ষার ধ্বংসাবশেষ নিয়ে একটু বিবেচনা করুন! তাতে আপনি শুধুমাত্র ক্ষতি এবং ব্যর্থতাই পাবেন। পরামর্শদাতা ও সতর্ককারীগণ এর পরিণতি সম্পর্কে তাদেরকে অবহিত করেছেন। আর ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচনে অংশগ্রহণ এবং রাজনৈতিক কর্মকান্ডের অনুশীলনের ফলাফল হচ্ছে এর আইনে বিচার কামনা করা এবং শরীয়া আইনে বিচার পরিত্যাগ করা। তারা জবাবে বলেন: আমরা শরীয়া শাসনের অগ্রাধিকারকে প্রত্যাখ্যান করি না, কিন্তু কল্যাণ-অকল্যাণ, প্রয়োজনীয়তা এবং বিভিন্ন সংশয় আমাদেরকে এ পদ্ধতির প্রতি আমন্ত্রণ জানায়। মূলত: আমরা শরীয়ত বিরোধী শাসনব্যবস্থার মাধ্যমে শরীয়তের শাসনব্যবস্থা ফিরিয়ে আনতে চাই। তাদের অনেকেই এমন ফাতওয়াকে ভিত্তি বানিয়েছিলো, বাস্তবতার সাথে যার কোন সম্পর্ক নেই। বরং তা বাস্তবতা থেকে অন্ধ সাজার নামান্তর। এটা দুর্ভাগ্যজনক যে, যারা এই ফাতওয়া প্রদান করেছেন, তাদের অধিকাংশই এমন দেশে বসবাস করেন, যেখানে কোন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড নেই। আবার তাদের কতক তো আমেরিকান আইন-কানুন দ্বারা অধিকৃত রাষ্ট্রে বসবাস করে থাকেন। আর সেখানকার রাজনৈতিক কর্মকান্ড এসব রীতিনীতির ভিত্তিতে পরিচালিত হয়। তারা তো মুসলিম জাতি এবং নেতৃস্থানীয় বৈশ্বিক অপরাধীদের মাঝে বিদ্যমান দ্বন্দের প্রকৃতি সম্পর্কে অন্ধ সেজে থাকে এবং তারা গণতন্ত্রের প্রকৃতির ক্ষেত্রেও অন্ধ সেজে থাকছে। গণতন্ত্র মূলত সংখ্যাগরিষ্ঠতার নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা। বৈশ্বিক অপরাধীরা এটা চায় যে, এই গণতান্ত্রিক সংখ্যাগরিষ্ঠতা তাদের জন্য একচেটিয়া হয়ে যাক। পাশাপাশি তারা এ বিষয়টির উপর আরো জোর দেয় যে, এই উম্মাহ যেন তাদের ঘাতক, অপরাধী ও চোরদের অধীন হয়ে যায়। আর তারা অন্ধ সাজার ভান করে অথবা তারা আমাদের দেশের ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধানের অধীনে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনার নোংরা প্রকৃতি বুঝতে পারছে না। হাসান আল-বান্না রাহিমাহুল্লাহ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেয়ার পর হতে এই সকল ব্যর্থতা ও হতাশা প্রকাশ পাওয়ার পরও তাতে দুইবার পদস্খলনের শিকার হন। তথাপি তারা (সেক্যুলার দল) এখনও পর্যন্ত পুনরায় ব্যর্থতা ও তামাশার যুগ ফিরিয়ে আনার জন্য জোর চেষ্টা করে যাচ্ছে!!! অবশেষে হাসান আল-বান্না রাহিমাহুল্লাহও গণতন্ত্রের ব্যর্থতার স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। পাশাপাশি তিনি জাতিকে কুরআনের আলোকে শাসকদের সাথে যুদ্ধ করার আহ্বান জানিয়েছেন। যারা এখনও পর্যন্ত তার মতাদর্শের অন্তর্গত বলে দাবি করে থাকেন, তারাও আজ এই নর্দমার (গণতন্ত্রের) গভীরেই পরে রয়েছেন! আলজেরিয়া, মিশর, জর্ডান, ফিলিস্তিন, কুয়েত, প্রভৃতি দেশে তারা শুধুমাত্র পরাজয়, বিপর্যয় ও ফাটল ছাড়া অন্য কোন ফল লাভ করতে পারেনি। মুসলিম জাতি যদি এক ব্যক্তির ন্যায় জিহাদ ফী সাবিলিল্লাহর পথে সীসাঢালা প্রাচীরের ন্যায় দাঁড়িয়ে যেতো, তাহলে এই বাতিল ধর্মনিরপেক্ষ সিস্টেম প্রত্যাখ্যাত হতো। তদ্রুপ যদি শরীয়তের শাসনব্যবস্থার উপর জোর প্রদান করতো এবং তাকে তাদের সর্বোচ্চ প্রত্যাবর্তনস্থল হিসাবে গ্রহণ করে নিতো, তাহলে যে কোন রাজনৈতিক কর্মকান্ডে প্রবেশের পূর্বেই প্রথমে সিদ্ধান্ত নিয়ে নিতো। যদি মুসলিম জাতি এই বিষয়ের (জিহাদ ফী সাবিলিল্লাহর) উপর একত্রিত হতে পারতো, তাহলে নিজেরাই নিজেদেরকে সেই বিশাল দুর্যোগ থেকে রক্ষা করতে পারতো, যা জান-মাল ও জীবনের ক্ষেত্রে ভয়াবহ রক্তপাত ঘটায়। কিন্তু আফসোস! মুসলিম জাতি সঠিকপথ ভুলে গেলো এবং তারা ক্ষতির গোলক ধাঁধাকেই অগ্রাধিকার দিলো। আমাদের মধ্যে কে ভুলে যাবে মিশরের সংবিধানে ‘শরীয়ার বিধানগুলি অবশ্যই আইনের উৎস হতে হবে’ মর্মে স্বীকৃতির ক্ষেত্রে মুসলিম ব্রাদারহুডের নিষেধাজ্ঞার উপর জোরালো চাপ দেওয়ার কথা, যা তারা ধর্মনিরপেক্ষতাবাদী, খ্রিস্টান এবং বাতিলদের সঙ্গে সামঞ্জস্যের স্বার্থে করেছিলো। আজ কে আছে যে, এই পরাজিত মানসিকতার তিক্ত ফল স্বচক্ষে প্রত্যক্ষ করছে না?! আজ কে এমন রয়েছে যে, উলামায়ে কেরামের মাধ্যমে পোক্ত হওয়া পাকিস্তানের প্রতারণাপূর্ণ সংবিধানের এমন বড় দুর্যোগ লক্ষ্য করছেন না? আর তা ইংরেজ রাজনীতিকদের দ্বারা উপস্থাপিত হয়েছিলো। তাছাড়া আমি এ বিষয়টির প্রতি ‘প্রভাত ও প্রদীপ’ নামক বার্তায় ইঙ্গিত করেছিলাম। হে মুসলিম উম্মাহ! যথেষ্ট ক্ষতি সাধিত হয়েছে, যথেষ্ট হার হয়েছে, এবং শরীয়া শাসনের যথেষ্ট বিকৃতি ঘটেছে। আজ সময় এসেছে তাওহীদের উপর ঐক্যবদ্ধ হয়ে এক কাতারে দাঁড়াবার। বিশেষতঃ ‘আল-হাকিমিয়্যাহ’ এর আক্বীদার উপর এবং তা পরিত্যাগ না করার প্রতি আমি জোর দিচ্ছি। আর এর পথ হিসাবে আমরা ‘দাওয়াহ ও জিহাদ’ এর ময়দানকেই গ্রহণ করি। আমরা মুসলিম, ইসলাম নিয়েই বাঁচি, ইসলামের জন্য, এর আক্বীদাহ এর জন্য এবং এর বিধান বাস্তবায়নের জন্যই মৃত্যু বরণ করি। হে মুসলিম উম্মাহ! বৈশ্বিক অপরাধীদের অপরাধ-প্রতারণার অধীনস্ত হওয়ার ফলে ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধানের অধীনে বাতিল নির্বাচন এবং রাজনীতির গহ্বরে প্রবেশের জন্য আপনি যে ত্যাগ করে থাকেন তার তুলনায় জিহাদ ফী সাবিলিল্লাহ ও শরীয়তের শাসন প্রতিষ্ঠার রাস্তায় আপনার জান-মাল এর কুরবানি, গ্রেফতারী-শাস্তি ইত্যাদি সবই মহত্ত্বর এবং মহিমান্বিত। বরং আফসোস! আমার কাছে এটিও কম মনে হচ্ছে। হে মুসলিম উম্মাহ! চেতনা ও খাহেশাতের এ লড়াইয়ে আমাদের নফসের উপর জয় লাভ করতে হবে। আমদের বুঝতে হবে যে, দাওয়াত ও জিহাদের এ অভিযান শরীয়া প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যেই, শাসন কর্তৃত্ব বাগানোর জন্য শরীয়তের বিরোধিতা করবেন না, শরীয়তকে শুধুমাত্র তথ্যসূত্র হিসাবে সমুন্নত দেখাবেন না! এর নেতৃত্বের জন্যে প্রয়োজন এমন উপযুক্ত নেতা ও সৈনিকের, কোন সংশয় যাদেরকে ধোকায় ফেলবে না, প্রবৃত্তির চাহিদা যাদেরকে কর্মবিমুখ করতে পারবে না। যারা উচ্চমান-নিম্নমান সকল বস্তুই আল্লাহর রাস্তায় বিলিয়ে দিবে। আমি কি পৌছে দিয়েছি? হে আল্লাহ আপনি সাক্ষী থাকুন।
وآخر دعوانا أن الحمد لله رب العالمين، وصلى الله على سيدنا محمد وآله وصحبه وسلم. والسلام عليكم ورحمة الله وبركاته
وآخر دعوانا أن الحمد لله رب العالمين، وصلى الله على سيدنا محمد وآله وصحبه وسلم. والسلام عليكم ورحمة الله وبركاته
Comment