মুরজিয়াদের মুখোশ উন্মোচন
—মিসওয়ার তাকী
এক.—মিসওয়ার তাকী
পুরো দুনিয়ায় শাসকের সুদৃষ্টি ও নিরাপত্তা অর্জনে তৎপর এই ফিরকাটি জামে, মাদখালি, রাসলানি হালাবী ইত্যাদি নামে পরিচিত।
উপমহাদেশে এই ফিরকাটি নিজেদের আহলে হাদিস বলে থাকে।
❝এসকল ইরজার সালাফিদের মূল অস্ত্রই হলো আহলুস সুন্নাহকে, বিশেষ করে মুজাহিদদের খারিজি আখ্যায়িত করা❞
আল-ইমাম শাইখ সুলাইমান বিন নাসির আল-উলওয়ান ফাক্কাল্লাহু আসরাহ বলেন—
“বর্তমান লোকদের স্বভাব হয়েছে যে ভিন্নমতপোষণকারীকে খারেজি বলে ঘায়েল করছে। যে ব্যক্তি আমর বিল মারুফ [সৎ কাজের আদেশ] নাহি আনিল মুনকার [অসৎ কাজের বাধাঁ] করতে গেলো ব্যাস সে খারেজি হয়ে গেলো। যে মুরতাদকে কাফের বললো সে খারেজি হয়ে গেলো। বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী বিকৃতিগ্রস্তদের যারা প্রকাশ করে দিলো খারেজি হয়ে গেলো। কেউ ইমান ভঙ্গের কারণসমূহ নিয়ে আলোচনা করছেন তো ব্যাস সে খারেজি আখ্যা পেরে যাচ্ছেন। ফলে অবস্থা এমন হয়েছে যে সাম্প্রদায়িক এমন একটি জাতিগোষ্ঠীর উদ্ভব হয়েছে যে তারা মুরতাদ ব্যভিচারীদের নিয়েও উচ্চবাচ্য করেনা পাছে বিকৃতিগ্রস্তরা না আবার তাদের খারেজী আখ্যা দিয়ে ফেলে।
মূলত সর্বযুগেই মুরজিয়াদের একটি গ্রুপ আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতের লোকদের সম্পর্কে বলেছে যে তারা খারেজি।
ইমাম আহমাদ বিন হাম্বাল রাহিঃ'কে অপবাদ দেয়া হয়েছে যে, তিনি খারেজি, এতে তার কোন ক্ষতি হয়নি, ইবনে তাইমিয়া রাহিঃ কে খারিজি আখ্যা দেয়া হয়েছে এতে তার কোন ক্ষতি হয়নি, ইবনু কাইয়্যিম রাহিঃ সম্পর্কে বলা হয়েছে তিনি নাকি খারেজি যেমনটি তিনি তার কাসিদায়ে নুনিয়া কবিতায় উল্লেখ করেছেন। আশ্চর্যের কথা হলো কোরআন ও সুন্নাহর অধীনতা যে গ্রহন করে তাকেই বলা হয় যে এমনটি করে তুমি খারেজি হয়ে যাচ্ছো। আসলে তারা শব্দ গ্রহন করেছে ঠিকই কিন্তু অর্থের দিশা লাভ করেনি।
আর এটা এই অলস অক্ষম মুরজিয়াদের একটি হাতিয়ার যা তাদের বিতর্কের শক্তি প্রকাশ করে।
যেমন কবি বলেনঃ
বিতর্কে তাদের কোন যুক্তি নেই,
দিশাহীন অনুসারী এই।
সে তার দলিল পাবে কোথায়,
তারা দলীলের আশ্রয় নেয়না।
অপারগ হয়ে তারা ক্ষমতার দাপটের আশ্রয় নেয়।
তারা দলিল দিয়ে বিতর্ক করার ক্ষমতা রাখেনা,
নতুবা তারা দলিল দিয়ে দলিল খন্ডন করেনা কেন? অবশেষে উপায়ন্তর না পেয়ে অস্থিরতা সৃষ্টি করে, লোকদেরকে দূরে সরানোর জন্য অপবাদ দেয়া,
বিদাতি আখ্যা দেয়া ও বিভ্রান্ত বলার জন্য বাধ্য হয়। কারণ কারো সম্পর্কে যখন লোকদের বলা হয় যে, অমুক খারেজি, তখন মানুষ তার কাজকে খারেজিদের কর্মকাণ্ড মনে করে তার থেকে সরে পরে!
তারা আমাদের সম্পর্কে লোকদের ধারণা দেয় যে- তারা খারেজি! এখানে তাদের না কোন দ্বীন আছে,
না বিবেক আর না সততা।
মোট কথা তারা তাদের ইরজায়ী মিশন এভাবে বাস্তবয়ান করে যাচ্ছে।
সারকথা হলো- যারা ইমান ভঙ্গের কারণসমূহকে অস্বীকার [জুহুদ], হালাল জ্ঞান [ইস্তিহলাল], ও মিথ্যা প্রতিপন্ন [তাকজিব] শর্তের সাথে সীমিত করে দেয় তারাই মুরজিয়া। আর এটাই জাহমিয়া মুরজিয়াদের মাজহাব, আর তারা আহলুস সুন্নাহ ওয়াল জামাতকে খারেজি বলে থাকে।
এজন্য কার মধ্যে কী গুন আছে এটা নিশ্চিত হয়ে নিতে হবে। শুধুমাত্র বিদাতিদের অবব্যখ্যা ও বিকারগ্রস্ত লোকদের কথা গ্রহন করলেই হবেনা।”
দুই.
মুরজিয়াদের একটি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্মণ হলো তারা কারো থেকে সুস্পষ্ট কুফরি কাজ প্রকাশ পেলেই শর্ত জুড়ে দিবে “মন থেকে তো সে এটা করেনি” যদিও তার যুক্তির পক্ষে দাড় করানোর শরঈ কোন গ্রহনযোগ্য ফতওয়া সে পেশ করতে পারবেনা।
মুনাফিকরা যখন আল্লাহ তায়ালা ও রাসুলকে নিয়ে উপহাস করছিলো, তখন কোন সাহাবি তা শুনে ফেললে মুনাফিকরা বললো “আমরা তো মজা করছিলাম”।
আল্লাহ তায়ালাই তাদের কথাকে রদ্দ/খন্ডন করে আয়াত নাজিল লরে দিলেন-
❝বলো; তোমরা আল্লাহ তায়ালা ও তার রাসুল নিয়ে উপহাস করছো.? আর ওজর পেশ করিওনা কারণ তোমরা ইমান আনার পরে কুফরি করেছো❞ [সুরা তাওবা]
উক্ত ঘটনাটি সুস্পষ্ট প্রমাণ বহন করে “হৃদয় থেকে কুফর না করেও শুধু জবানে উপহাস করলেও ব্যক্তি কাফের হয়ে যায়, কারণ উক্ত আয়াতই বলছে তারা উপহাস করছিলো, আর তা জবান দিয়েই হচ্ছিলো। আর যে ব্যক্তি জবান দিয়েই কুফর ও শিরক করে তার অন্তর তো আরো জঘন্য।
যেমন নাজিল হয়েছে-
❝তাদের জবানেই বিদ্বেষ [পরিষ্কার] প্রকাশ পায় আর তাদের অন্তরে যা রয়েছে তাতো আরো জঘন্য❞ [নিসা]
অতএব কর্ম, কথা দ্বারাও ব্যক্তি কাফের হয়ে যায়। এক্ষেত্রে তার হৃদয়ের সাথেই ইমানকে সীমাবদ্ধ করে লুকোচুরি করাকে সালাফগন মুজিয়া বলোছেন।
তিন.
আকিদা বিষয়ে দেওবন্দের আকাবিরদের স্পষ্ট অবস্থানঃ-
দেওবন্দী [এখানে যদিও দেওবন্দী বলা হয়েছে, মূলত এটি আহলুস সুন্নাহরই একটি স্বীকৃত আকিদা। দেওবন্দের নাম বলার মূল কারণ হল নব্য দেওবন্দী কিছু মুরজিয়া আছে তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করা।] আলিমদের আকিদা অনুযায়ী: ❝জরুরিয়তে দ্বীন অস্বীকার করা, উপহাস করা কুফর এমনকি এতে বিতর্ক করাও কুফর বলেই বিবেচ্য❞
দেওবন্দীদের দৃষ্টিতে জরুরিয়ত দ্বীনের সংজ্ঞা ও ব্যখ্যাঃ
জরুরিয়াতে দীনের আলোচনাঃ শরিয়তের পরিভাষায় সেসব বিষয়কে জরুরিয়াতে দীন বলা হয়, যা মুহাম্মাদ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে মুতাওয়াতির পর্যায়ে বর্ণিত ও প্রমাণিত এবং সাধারণভাবে মুসলমানরা এসব বিষয়ে জ্ঞাত।
অর্থাৎ, ওই বিষয়ের জ্ঞান কেবল নবিগণের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়; বরং তা সাধারণ মানুষের জ্ঞানের আওতাভুক্ত।[শামি , ইমামাত অধ্যায়]
জরুরিয়াতে দীনের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে , আল্লাহকে এক জানা, তিনি সমগ্র বিশ্বজগতের স্রষ্টা এবং সকলের পালনকারী, কুরআন মাজিদ ও অন্যান্য আসমানি কিতাব আল্লাহর কালাম হওয়ার জ্ঞান ইত্যাদি।
তা ছাড়া সকল নবি আল্লাহর পক্ষ থেকে সত্য পয়গম্বর হিসেবে প্রেরিত হওয়া , জান্নাত ও জাহান্নাম সত্য মনে করা , নবিগণ থেকে সংঘটিত অলৌকিক ঘটনাবলি সত্য ও সঠিক- এ কথা দ্বিধাহীনভাবে মেনে নেওয়া এবং কুরআন-হাদিস দ্বারা যেসব বিষয় বা বস্তু নিশ্চিতভাবে হালাল অথবা হারাম বলা হয়েছে , সেসব বিষয় হালাল বা হারাম মনে করা।
যেমন : চুরি , ব্যভিচার , মা - মেয়ে - বোন ও পিতার স্ত্রীকে বিয়ে করা হারাম মনে করা। কেউ যদি উপরিউক্ত কোনো একটি কথা অমান্য ও অস্বীকার করে ; অথবা এতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ পোষণ করে , তাহলে সে ব্যক্তি কাফির হয়ে যাবে ।
ইমান ও ইসলামের জন্য যাবতীয় জরুরিয়াতে দীন মেনে চলা একান্ত আবশ্যক ।
যে ব্যক্তি সরকারের সব আইনকানুন মেনে চলে , সে - ই সরকারের বিশ্বস্ত ।
কেউ সরকারের ৯৯ টি নির্দেশ মেনে চলে ; কিন্তু একটি নির্দেশের ব্যাপারে যদি বলে , এ নির্দেশ আমার নিকট গ্রহণযোগ্য নয় এবং এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন সংশয় ও সন্দেহ পোষণ করে এমনসব ব্যাখ্যা - বিশ্লেষণ করতে শুরু করে , যা সরকার ও শাসকদের ন্যায়বিচারের ধারেকাছেও আসে না , তাহলে এমন ব্যক্তিকে সরকারের অনুগত না বলে বিদ্রোহী বলাই সংগত।
দেওবন্দীদের দৃষ্টিতে জরুরিয়ত দ্বীনের অস্বীকার করা, হাসিঠাট্টা ও এতে বিতর্ক লিপ্ত হওয়া হুকুমঃ
জরুরিয়াতে দীন ও অকাট্য বিষয়ে বিতর্কে লিপ্ত হওয়া কুফরঃ জরুরিয়াতে দীন ও অকাট্যভাবে সাব্যস্ত ইসলামি অনুশাসনের কোনো একটি বিধান অস্বীকার করা যেমন কুফর , তেমনই এসব বিষয়ে বিতর্কে লিপ্ত হওয়াও কুফর ।
কেননা , নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত বিষয়সমূহে বিতর্ক ও সংশয় প্রকাশ করা অস্বীকৃতির নামান্তর ।
সালাত ও রোজার ফরজিয়াত অস্বীকার করা যেমন কুফর , তেমনই সালাত রোজা ও জাকাতের নির্দেশ সম্পর্কে কোনো কুতর্কে লিপ্ত হওয়াও কুফর । যে ক্ষেত্রে কোনো সন্দেহ দেখা দেয় , কেবল সে ক্ষেত্রেই বিতর্ক বা পর্যালোচনা প্রযোজ্য । যেসব বিষয় অকাট্য প্রমাণিত ও স্পষ্ট , সেসব বিষয়ে বিতর্ক শুধু অস্বীকারই নয় ; বরং ঠাট্টা - পরিহাসের নামান্তর । [মূল কথা শেষ]
সারকথা!
দেওবন্দীদের আকিদা হলো যদি কারো থেকে জরুরিয়ত দ্বীনের বিষয়ে অস্বীকার, বিতর্কে লিপ্ত কিংবা উপহাস অথবা সন্দেহ প্রকাশ পায়, তাহলে উক্ত ব্যক্তি নিশ্চিত কুফরে আকবার করলো। [মাওয়ানি ও হুজ্জত কায়েমের বিষয়ে নিশ্চিত হলে তাকে তাকফির করা হবে]
প্রিয় পাঠক/পাঠিকা! আপনারাই নিজ দৃষ্টি দিয়ে বলুন তো, চলমান সময়ের শাসকগন কি মদের বৈধতা, সুদের বৈধতা, জিনার বৈধতা দিয়ে “জরুরিয়তে দ্বীনের বিষয়ে অস্বীকারকারী হয়নি? তাদের কাছে যখন শরীয়াহ পেশ করা হয় তখন তারা সংবিধানের অজুহাত দেখিয়ে তা প্রত্যাখ্যান করে বসে তাকি জরুরিয়ত দ্বীনের অস্বীকার নয়???
তাহলে এ যুগে দেওবন্দী দাবি করেই কেন আকাবিরে দেওবন্দের আকিদা থেকে তারা বিচ্যুত..?
দুঃখজনক হলেও একটি তিক্ত সত্য কথা হলো "দেওবন্দ" নমক এই ইলমি স্পটেও এখন ব্যপকভাবে "ইরজা" প্রবেশ করেছে। সুস্পষ্ট কুফর ও শিরক প্রকাশ পেলেও তারা "অন্তর থেকে তো করেনি" এমন যুক্তির আলোকে ব্যক্তির কুফর তো ঢেকে রাখেই পাশাপাশি তা নিয়ে আলোচনা না করার মাধ্যমে সেই কুফরি কাজটির এক প্রকার বৈধতাই দিয়ে দিচ্ছে [আল-আয়াজু বিল্লাহ)
দৃষ্টি আকর্ষনঃ এটি দেওবন্দী একজন প্রসিদ্ধ আলিমে দ্বীন শাইখ আল্লামা ইদরিস কান্ধলবী রাহিঃ এর আকিদা বিষয়ক আলোচনার সংকলন যা মুফতি আলী হাসান ওসামা হাফিঃ বাংলায় বই আকারে লিপিবদ্ধ করে জমা করেছেন “ইসলামি আকিদা” নামে। আর একটি গুরুত্বপূর্ণ কথা হলো শাইখুল হাদিস, ওস্তাদে মুহতারাম হাফিজ জুমাইদ বাবুনগরী রাহিঃ এই কিতাবে অভিমত দিয়েছেন। আলোচ্য বিষয়ে কিছু অংশ উক্ত কিতাবের প্রথম খন্ডের ১১৪ নং পৃষ্ঠা থেকে সংগৃহীত।
চার.
আমার বুখারীর শাইখের দৃষ্টিতে মানব রচিত আইনঃ
ঢাকার বুকে ঐতিহ্যবাহী এক মাদ্রাসার সনামধন্য সিনিয়র মুরুব্বি প্রসিদ্ধ বিজ্ঞ বিচক্ষণ সত্যবাদী ও মুখলিস আলিমে দ্বীন, যার কাছে আমি তখন বুখারী ১ম খন্ড পড়ি। তিনি আমাকে প্রচুর ভালোবাসতেন মুহাব্বত করতেন।
তাঁকে আমি নিজে জিজ্ঞেস করলাম ওস্তাদজী একটি কথা বলার ছিলো।
বললেন বল বল!!
বললাম এক আলেম বললেন যে—
❝বিবাহিতের জিনার শাস্তি তো রজম [প্রস্তারাঘাতে হত্যা] কিন্তু সরকার যদি তাকে ফাঁসি দেয় জিনার শাস্তি সরূপ তাহলেই তা হদ হিসেবে যথেষ্ট হবে❞
হুজুর রাগ হলেন। বললেন এটা ১০০ পার্সেন্ট মিথ্যা ও ভুল ফতওয়া।
তখন হুজুর আমাদের ক্লাসে বলেেন—
“জিনার শাস্তির কাইফিয়্যাত বা পদ্ধতি শরীয়াহ কর্তৃক নির্ধারিত, এখানে কমানো বাড়ানোর অধিকার চর্চা করার অর্থ হলো হুকমে তাশরীয়ী এর মধ্যে নিজের অধিকার খাটানো যার কুফর হওয়া মুতাওয়াতির সূত্রে প্রমাণিত। যদি কেউ রজম [পথর আঘাতে হত্যা] এর বিকল্প হিসেবে ফাঁসি গ্রহন করা হয় তাহলে তা সুস্পষ্ট কুফর হবে”
বিঃদ্রঃ তিনি কয়েকটি মাদ্রাসার মুরুব্বি, তিনি প্রবীণ মুফতি ও একজন মুহাক্কিক আলেম। সুতরাং তার তাহকিক সহজেই গ্রহন করা যায়।
পাঁচ.
যারা গনতন্ত্রকে কুফর বলবেনা তারা হয়তো কাফের নয়তো পথভ্রষ্ট অথবা জাহিল কিংবা পাগল।
মতবাদ কিংবা মতাদর্শ কখন কুফর হয়?
যদি কোন মতবাদের মধ্যে ২০'টি মূলনীতি থাকে। আর এর মধ্যে একটি অথবা দুইটি কিংবা ততোধিক মূলনীতি যদি স্পষ্ট কুফর থাকে তাহলে কি সেই মতবাদটি কুফরি মতবাদ হয়না..??
অবশ্যই তা কুফরি মতবাদ বলেই বিবেচ্য। কারণ ইমান ও কুফর কখনো একই পাত্রে থাকেনা। আসলে আমাদের সমস্যা কোথায় সেটা আল্লাহই ভালো জানেন, আমরাও বুঝিনা।
কুফরি ধর্মগুলো কুফরি কেন?
যদি কোন মতবাদের মধ্যে ১/২ বা ততোধিক মূলনীতি কুফরি থাকার পরও সেই মতবাদকে কুফর না বলি তাহলে পৃথিবীতে কোন কুফরি মতবাদই থাকবোনা।
কারণ ইহুদি, খৃষ্টান, সনাতন, বৌদ্ধ সকল ধর্মই আপনি এনালাইস করুন। দেখবেন এই সকল ধর্মের ভেতরের সকল মূলনীতিইই কুফর নয়। বরং কিছু কিছু ইসলামের সাথেও মিলে যায়। যেমন ভালো আচারণ, সত্য বলা, সাহায্য করা, কারো ক্ষতি না করা। এই ভালো কাজগুলো প্রতিটি ধর্মেই রয়েছে। তবুও আমরা সেই ধর্মগুলোকে কুফর ও শিরকি ধর্ম বলি।
এর কারণ কি এটা যে, সেই ধর্মের সকল কাজই কুফরি?? নাকি এটা যে সেই ধর্মের মধ্যে কুফর আছে চাই তা কম হোক বা বেশি।
জ্ঞাতব্যঃ একটি কথা স্মরণ রাখবেন কুফর থাকাবস্থায় কখনো ইমান বিদ্যমান থাকেনা। বিষয়টি এরকম নয় যে, ইমান থাকলে কুফর দূর হয়ে যায় বরং বিষয়টি হলো কুফর বিলুপ্ত করেই ইমানকে রাখতে হয়। এমনকি ইমান থাকাবস্থায়ও যদি কুফর ঘটে যায় তাহলেও তখন ইমানটা আস্তে করে চলে যায়।
তাই ইমান যদি স্ট্রং রাখাতে হয় এরজন্য একটি মাত্রই করনীয় আর তা হলো কুফর বিলুপ্ত ও মুক্ত হওয়া। আল্লাহ তায়ালা শিরক ও কুফর পছন্দ করেননা, সেখানে এরকম নয় যে, একটি বা দুটি কুফর হলে
ক্ষমা। বরং সত্যি কথা হলো সারাটি জীবনের নেক কাজ একটি মাত্র কুফর বা শিরকের কারণেই সমূলে বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
কারণ কুফরির কারণে ব্যক্তি ইমানের গণ্ডি থেকেই বেড়িয়ে যায়। অতএব এটা সহজেই অনুমেয় যে, কোন মতাদর্শের মধ্যে এক বা একাধিক কুফর থাকলে সেটা স্পষ্টই কুফরি মতবাদই হয়ে যায়।
আর প্রতিটি মুসলিমের জন্যই ফরজ হয়ে যায় সেই কুফরি মতাদর্শকে বয়কট করা।
গনতন্ত্র কি কুফর নয়..??
আসলে গনতন্ত্র নিয়ে জ্ঞান না রাখা ব্যক্তিই একমাত্র এর প্রশ্ন করতে পারে, আর জওয়াবটি শুধুমাত্র তাদের জন্যই প্রযোজ্য।
☞ গনতন্ত্র সকল ধর্মকে সমান চোখে দেখে [এক্ষেত্রে ইসলাম ও কুফরি ধর্মকে সমমান দেয়া হয়]।
☞ গনতন্ত্রের অন্তরঙ্গ একটি সেকুলারিজম [ধর্মহীনতা] যা সকলের আদর্শ হিসেবে গনতন্ত্র দিয়ে থাকে।
☞ রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে জনগনকে বিধান প্রণয়নের পূর্ণ অধিকার দেয়া।
☞ কোরআনি বিধান সামনে (আমরা এটাও কুফর বলি যে, “শরীয়াহ কায়েমের জন্য প্রথমে তা পার্লামেন্টে পেশ করে সেখান থেকে পাশ করাতে হবে”) পেশ করা হলে অন্যকে এই অধিকার দেয়া যে সে এই কোরআনী আইনের বিরোধিতা করতে অধিকার রাখে।
☞ বাক স্বাধীনতার অধিকার নিশ্চিতের শ্লোগান দিয়ে আল্লাহ তায়ালা ও নবী মুহাম্মদ ﷺ এবং ইসলাম নিয়ে কটুক্তি করার পূর্ণ অধিকার বাস্তবায়ন।
☞ কোরআনে অকাট্য যে কোন বিধানের উপর অধিকাংশ মানুষের মতকে প্রাধান্য দেয়া এমনকি তারা কাফির ও মুশরিক হলেও।
গনতন্ত্রের স্টেপগুলো বিশ্লেষণ করলে আরো বহু শরীয়াহর সাথে সাংঘর্ষিক কুফর ও শিরকি বিষয় অবশ্যই সামনে আসবে, বুঝার জন্য আমি মনে করি কতটুকুতেই যথেষ্ট।
গনতন্ত্রের প্রশ্নে আমরা এতটুকুই বলবো যা মুফতি মানসুরুল হক হাফিঃ তার লিখিত ইকমালুস সুন্নাহ গ্রন্থে বলেছেন— “গনতন্ত্র স্পষ্ট কুফরিতন্ত্র। এই ব্যপারে সন্দেহ করার সুযোগ নেই। যারা সন্দেহ করবে, তাদের ইমান অবশ্যই ঝুঁকিপূর্ণ”
আল্লাহ তায়ালা সহীহ্ বুঝ দান করুন আমীন।
Comment