আকিদা সিরিজ- ১ম পর্ব- ইমানের পরিচয় ও রুকন
শাইখ তামিম আল-আদনানী হাফিজাহুল্লাহ
আরবি (العقيدة) শব্দটির আভিধানিক অর্থ বিশ্বাস। আর আকিদা বলতে আমরা সাধারণত বুঝি এমন কিছু বিষয়কে যেগুলোর ওপর সংশয়হীনভাবে বিশ্বাস স্থাপন করা মুসলিমদের জন্য অতীব জরুরি। ইসলামি আকিদাকে আমরা ইমানও বলে থাকি। আজকের মজলিসে আমরা আলোচনা করব, ইমানের পরিচয় ও তার রুকনসমূহ নিয়ে।
ইমানের পরিচয়
প্রথমে আমাদের জানতে হবে ইমান কী? সহিহ মুসলিমে এসেছে, একবার হজরত জিবরাঈল আলাইহিস সালাম, রাসুলুল্লাহ ﷺকে জিজ্ঞেস করেন أَخْبِرْنِي عَنِ الْإِيمَانِ) ইমান কী? রাসুলুল্লাহ ﷺউত্তর দেন:
{{أَنْ تُؤْمِنَ بِاللهِ٭ وَمَلَا ئِكَتِهِ ٭ وَكُتُبِهِ ٭ وَرُسُلِهِ٭ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ٭ وَتُؤْمِنَ بِالْقَدَرِ خَيْرِهِ وَشَرِّهِ}}
"তুমি আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে, তারঁ ফেরেশতাগণ, তাঁর কিতাবসমূহ এবং তাঁর রাসূলগণের প্রতি ইমান আনবে এবং তাকদিরের ভালো-মন্দের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে।" (সহিহ মুসলিম: ৮)
এই হাদিসে আমরা স্বয়ং রাসুলুল্লাহﷺমের পবিত্র জবান থেকে ইমানের পরিচয় জানলাম। এবার আমরা জানব ইমানের রুকন সম্পর্কে।
আরকানুল ইমান:
রুকন আরবি শব্দ। এর অর্থ হলো মূল অংশ বা উপাদান। রুকন শব্দের বহুবচন হলো আরকান। যেসব মূল উপাদান দিয়ে ইমান গঠিত হয় সেগুলোকে আরবিতে আরকানুল ইমান বলা হয়। হাদিসে বর্ণিত এই সংজ্ঞা থেকে আমাদের সামনে ইমানের রুকনসমূহও স্পষ্ট হয়ে গেল। এখানে আমরা মোট ছয়টি রুকন পেলাম।
(الإيمان با للّٰه) আল্লাহ তাআলার প্রতি ইমান আনা
(الإ يمان بالمالإئكة) ফেরেশতাগণের প্রতি ইমান আনা।
(الإيمان بالكُتب) কিতাবসমূহের প্রতি ইমান আনা।
(الإيمان بالرسل) রাসূলগণের প্রতি ইমান আনা।
(الإيمان باليوم اﻵخرة) কিয়ামতের দিনের ওপর ইমান আনা।
(الإيمان بالقدر) তাকদিরের প্রতি ইমান আনা।
(الإيمان با للَّه) আল্লাহ তাআলার প্রতি ইমান আনা :
প্রথমে কথা বলব,(الإيمان با للّه) বা "আল্লাহর তাআলার প্রতি ইমান আনা নিয়ে। (الإيمان با للّه) এর অপর নাম হলো তাওহিদ। এই রুকনটি আসলে তাওহিদ নামেই আমাদের কাছে প্রসিদ্ধ। তাওহিদ বলতে আমরা সাধারণত বুঝি আল্লাহকে একক ও অদ্বাতীয় মনে করা, যেমনটি সূরা ইখলাস থেকে আমরা জানতে পারি।
قُلْ هُوَ اللَّـهُ أَحَدٌ٭ اللَّـهُ الصَّمَدُ٭ لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ٭ وَلَمْ يَكُن لَّهُ كُفُوًا أَحَدٌ
"বলুন, "তিনিই আল্লাহ, এক - অদ্বিতীয়। আল্লাহ কারও মুখাপেক্ষী নন। (সকলেই তাঁর মুখাপেক্ষী)। তিনি কাওকে জন্ম দেননি এবং তাকেও জন্ম দেয়া হয়নি। তাঁর সমতুল্য কেউ নেই।
তাওহিদের পরিচয় দিতে গিয়ে উলামায়ে কেরাম বলেন:
إِفْرَادُاللهِ٭ سُبْحَانَهُ٭ بِمَا يَخْتَصُّ بِهِ مِنَ الرُّبُوْبِيَّةِ والْأُلُوْهِيَّةِ وَالْأَسْمَاءِ والصِّفَاتِ
"রব হওয়ার ক্ষেত্রে, উপাস্য হওয়ার ক্ষেত্রে এবং নাম ও গুণাবলির ক্ষেত্রে আল্লাহ তাআলাকে এককও অদ্বিতীয় বলে বিশ্বাস করাকে তাওহিদ বলে।" সহজ ভাষায় বললে, আল্লাহ রাব্বুল আলমিনকেই একমাত্র রব ও প্রভু বলে বিশ্বাস করা, কেবল তাঁকেই ইবাদতের মালিক মনে করা এবং নাম ও গুণাবলির বিচারে তাঁকে একক ও অদ্বিতীয় বলে বিশ্বাস করাকেই তাওহিদ বলে। {তাওহিদের প্রকার নিয়ে আগামী মজলিসে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ। }
(الإيمان بالملائكة) ফেরেশতাগণের প্রতি ইমান আনা:
ইমানের দ্বিতীয় রুকন হলো ফেরেশতাগণের প্রতি ইমান আনা। আল্লাহ তাআলা ফেরেশতাদের নুর দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। তাঁরা আল্লাহর সম্মানিত বান্দা। তাঁরা সব সময় আল্লাহর ইবাদতে নিয়োজিত থাকেন। এক মুহূর্তের জন্যও তাঁরা আল্লাহর আনুগত্যে অবহেলা করেন না। তাঁরা সব সময় আল্লাহর ভয়ে ভীত থাকেন। মানুষের মতো তাঁদের ইচ্ছাশক্তি নেই। আল্লাহর আদেশের বাইরে কিছু করার ক্ষমতা তাদের দেয়া হয়নি। আমরা তাদের সম্মান করি, তাদের ভালোবাসি।
(الإيمان بالكتب) কিতাবসমূহের প্রতি ইমান আনা:
ইমানের তৃতীয় রুকন হলো, কিতাবসমূহেরর প্রতি ইমান আনা। এই রুকনের মূল কথা হলো, আমরা আল্লাহর নাজিলকৃত সকল কিতাবের ওপর ইমান আনি, যেগুলো হজরত জিবরাইল আলাইহিস সালামের মাধ্যেমে যুগে যুগে বিভিন্ন নবি-রাসূলের কাছে পাঠানো হয়েছে। তাঁর মধ্যে রয়েছে বড় বড় চারটি কিতাব- তাওরাত, যাবুর, ইনজিল, ও কুরআন মাজিদ। এছাড়াও রয়েছে অনেক সহিফা। আমরা বিশ্বাস করি, কুরআনুল কারিম আল্লাহর সর্বশেষ কিতাব। এর মাধ্যমে পূর্ববর্তী সকল কিতাবকে মানসুখ ও রহিত করা হয়েছে।
(الإيمان بالرُسُل) রাসুলগণের প্রতি ইমান আনা:
ইমানের চতুর্থ রুকন হলো, রাসুলগণের প্রতি ইমান আনা। এই রুকনের সারমর্ম হলো, মানবজাতির হিদায়াতের জন্য আল্লাহ তাআলা যুগ যুগ যত নবি-রাসুল প্রেরণ করেছেন আমরা তাদের সকলের ওপর ইমান আনি। তাদের অল্প কয়েকজনের নাম কুরআন-সুন্নাহয় এসেছে। সবল নবি-রাসুল নিষ্পাপ। তাঁরা উম্মাতের শ্রেষ্ঠতম মানুষ। আমরা তাদের সবাইকে সম্মান ও শ্রদ্ধা করি। তাঁরা সবাই আপন আপন উম্মতকে আল্লাহর দিকে আহ্বান করেছেন। তাঁরা আল্লাহর পক্ষ থেকে যেসব মুজিযা দেখিয়েছেন সবগুলো হক। আর সর্বশেষ চূড়ান্ত নবি হলেন বিশ্বনবি হজরত মুহাম্মদ মুস্তফাﷺতাঁর পরে আর কোনো নবি নেই। তাঁর শরিয়তই কিয়ামত পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।
(الإيمان باليوم اﻵخرة) কিয়ামতের দিনের ওপর ইমান আনা:
ইমানের পঞ্চম রুকন হলো, কিয়ামতের দিনের ওপর ইমান আনা। কুরআন-সুন্নাহয় কবর, কিয়ামত, হাশর, মিজান, পুলসিরাত ও জান্নাত-জাহান্নাম সম্পর্কে যা বলা হয়েছে আমরা তার ওপর ইমান আনি। আমরা বিশ্বাস করি, মৃত্যুর পর কবরে সুওয়াল-জওয়াব হবে: নেককাররা কবরে নিয়ামতপ্রাপ্ত হবেন আর বদকাররা কবরে শাস্তি পাবে। একদিন পুরো বিশ্বজগৎ ধ্বংস হয়ে যাবে। সকল মানুষ কবর থেকে পুনরায় উত্থিত হবে। সবাই আপন আমলের হিসাব দেয়ার জন্য হাশরের ময়দানে জড়ো হবে। পুলসিরাত পাড়ি দিয়ে মুমিনরা চির সুখময় জান্নাতের অধিবাসী হবে আর কাফেররা চিরদিনের জন্য জাহান্নামে চলে যাবে।
(الإيمان بالقدر) তাকদিরের ওপর ইমান আনা:
ইমানের ষষ্ঠ রুকন হলো, তাকদিরের প্রতি ইমান আনা। এই রুকনের সারমর্ম হলো, আমরা তাকদিরের ভালো-মন্দ বিশ্বাস করি। আল্লাহ তাআলা আমাদের সৃষ্টির বহু পূর্বেই আমাদের তাকদির লিখে রেখেছেন। আমাদের জন্ম কবে হবে, মৃত্যু কোথায় হবে, আমরা কী করব, কী খাব, কোথায় যাব, পৃথিবীতে কখন কোথায় কী ঘটবে সব আল্লাহ রাব্বুল আলামিন জানেন। তাকদিরের বাইরে কিছুই হয় না।
প্রিয় ভাইয়েরা! আমরা আজ সংক্ষেপে ইমানের পরিচয় তুলে ধরলাম। আরকানুল ইমান নিয়েও সংক্ষেপে আলোচনা হলো। ইমানের ছয়টি রুকন নিয়ে আমরা সামনের মজলিসগুলোতে বিস্তারিত আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের সবাইকে এই আকিদা সিরিজ থেকে উপকৃত হওয়ার তাওফিক দিন। আমিন ইয়া রাব্বাল আলামিন।
আকিদা সিরিজ: ১ম পর্ব PDF লিংক।
শাইখ তামিম আল-আদনানী হাফিজাহুল্লাহ
আরবি (العقيدة) শব্দটির আভিধানিক অর্থ বিশ্বাস। আর আকিদা বলতে আমরা সাধারণত বুঝি এমন কিছু বিষয়কে যেগুলোর ওপর সংশয়হীনভাবে বিশ্বাস স্থাপন করা মুসলিমদের জন্য অতীব জরুরি। ইসলামি আকিদাকে আমরা ইমানও বলে থাকি। আজকের মজলিসে আমরা আলোচনা করব, ইমানের পরিচয় ও তার রুকনসমূহ নিয়ে।
ইমানের পরিচয়
প্রথমে আমাদের জানতে হবে ইমান কী? সহিহ মুসলিমে এসেছে, একবার হজরত জিবরাঈল আলাইহিস সালাম, রাসুলুল্লাহ ﷺকে জিজ্ঞেস করেন أَخْبِرْنِي عَنِ الْإِيمَانِ) ইমান কী? রাসুলুল্লাহ ﷺউত্তর দেন:
{{أَنْ تُؤْمِنَ بِاللهِ٭ وَمَلَا ئِكَتِهِ ٭ وَكُتُبِهِ ٭ وَرُسُلِهِ٭ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ٭ وَتُؤْمِنَ بِالْقَدَرِ خَيْرِهِ وَشَرِّهِ}}
"তুমি আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে, তারঁ ফেরেশতাগণ, তাঁর কিতাবসমূহ এবং তাঁর রাসূলগণের প্রতি ইমান আনবে এবং তাকদিরের ভালো-মন্দের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করবে।" (সহিহ মুসলিম: ৮)
এই হাদিসে আমরা স্বয়ং রাসুলুল্লাহﷺমের পবিত্র জবান থেকে ইমানের পরিচয় জানলাম। এবার আমরা জানব ইমানের রুকন সম্পর্কে।
আরকানুল ইমান:
রুকন আরবি শব্দ। এর অর্থ হলো মূল অংশ বা উপাদান। রুকন শব্দের বহুবচন হলো আরকান। যেসব মূল উপাদান দিয়ে ইমান গঠিত হয় সেগুলোকে আরবিতে আরকানুল ইমান বলা হয়। হাদিসে বর্ণিত এই সংজ্ঞা থেকে আমাদের সামনে ইমানের রুকনসমূহও স্পষ্ট হয়ে গেল। এখানে আমরা মোট ছয়টি রুকন পেলাম।
(الإيمان با للّٰه) আল্লাহ তাআলার প্রতি ইমান আনা
(الإ يمان بالمالإئكة) ফেরেশতাগণের প্রতি ইমান আনা।
(الإيمان بالكُتب) কিতাবসমূহের প্রতি ইমান আনা।
(الإيمان بالرسل) রাসূলগণের প্রতি ইমান আনা।
(الإيمان باليوم اﻵخرة) কিয়ামতের দিনের ওপর ইমান আনা।
(الإيمان بالقدر) তাকদিরের প্রতি ইমান আনা।
(الإيمان با للَّه) আল্লাহ তাআলার প্রতি ইমান আনা :
প্রথমে কথা বলব,(الإيمان با للّه) বা "আল্লাহর তাআলার প্রতি ইমান আনা নিয়ে। (الإيمان با للّه) এর অপর নাম হলো তাওহিদ। এই রুকনটি আসলে তাওহিদ নামেই আমাদের কাছে প্রসিদ্ধ। তাওহিদ বলতে আমরা সাধারণত বুঝি আল্লাহকে একক ও অদ্বাতীয় মনে করা, যেমনটি সূরা ইখলাস থেকে আমরা জানতে পারি।
قُلْ هُوَ اللَّـهُ أَحَدٌ٭ اللَّـهُ الصَّمَدُ٭ لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ٭ وَلَمْ يَكُن لَّهُ كُفُوًا أَحَدٌ
"বলুন, "তিনিই আল্লাহ, এক - অদ্বিতীয়। আল্লাহ কারও মুখাপেক্ষী নন। (সকলেই তাঁর মুখাপেক্ষী)। তিনি কাওকে জন্ম দেননি এবং তাকেও জন্ম দেয়া হয়নি। তাঁর সমতুল্য কেউ নেই।
তাওহিদের পরিচয় দিতে গিয়ে উলামায়ে কেরাম বলেন:
إِفْرَادُاللهِ٭ سُبْحَانَهُ٭ بِمَا يَخْتَصُّ بِهِ مِنَ الرُّبُوْبِيَّةِ والْأُلُوْهِيَّةِ وَالْأَسْمَاءِ والصِّفَاتِ
"রব হওয়ার ক্ষেত্রে, উপাস্য হওয়ার ক্ষেত্রে এবং নাম ও গুণাবলির ক্ষেত্রে আল্লাহ তাআলাকে এককও অদ্বিতীয় বলে বিশ্বাস করাকে তাওহিদ বলে।" সহজ ভাষায় বললে, আল্লাহ রাব্বুল আলমিনকেই একমাত্র রব ও প্রভু বলে বিশ্বাস করা, কেবল তাঁকেই ইবাদতের মালিক মনে করা এবং নাম ও গুণাবলির বিচারে তাঁকে একক ও অদ্বিতীয় বলে বিশ্বাস করাকেই তাওহিদ বলে। {তাওহিদের প্রকার নিয়ে আগামী মজলিসে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ। }
(الإيمان بالملائكة) ফেরেশতাগণের প্রতি ইমান আনা:
ইমানের দ্বিতীয় রুকন হলো ফেরেশতাগণের প্রতি ইমান আনা। আল্লাহ তাআলা ফেরেশতাদের নুর দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। তাঁরা আল্লাহর সম্মানিত বান্দা। তাঁরা সব সময় আল্লাহর ইবাদতে নিয়োজিত থাকেন। এক মুহূর্তের জন্যও তাঁরা আল্লাহর আনুগত্যে অবহেলা করেন না। তাঁরা সব সময় আল্লাহর ভয়ে ভীত থাকেন। মানুষের মতো তাঁদের ইচ্ছাশক্তি নেই। আল্লাহর আদেশের বাইরে কিছু করার ক্ষমতা তাদের দেয়া হয়নি। আমরা তাদের সম্মান করি, তাদের ভালোবাসি।
(الإيمان بالكتب) কিতাবসমূহের প্রতি ইমান আনা:
ইমানের তৃতীয় রুকন হলো, কিতাবসমূহেরর প্রতি ইমান আনা। এই রুকনের মূল কথা হলো, আমরা আল্লাহর নাজিলকৃত সকল কিতাবের ওপর ইমান আনি, যেগুলো হজরত জিবরাইল আলাইহিস সালামের মাধ্যেমে যুগে যুগে বিভিন্ন নবি-রাসূলের কাছে পাঠানো হয়েছে। তাঁর মধ্যে রয়েছে বড় বড় চারটি কিতাব- তাওরাত, যাবুর, ইনজিল, ও কুরআন মাজিদ। এছাড়াও রয়েছে অনেক সহিফা। আমরা বিশ্বাস করি, কুরআনুল কারিম আল্লাহর সর্বশেষ কিতাব। এর মাধ্যমে পূর্ববর্তী সকল কিতাবকে মানসুখ ও রহিত করা হয়েছে।
(الإيمان بالرُسُل) রাসুলগণের প্রতি ইমান আনা:
ইমানের চতুর্থ রুকন হলো, রাসুলগণের প্রতি ইমান আনা। এই রুকনের সারমর্ম হলো, মানবজাতির হিদায়াতের জন্য আল্লাহ তাআলা যুগ যুগ যত নবি-রাসুল প্রেরণ করেছেন আমরা তাদের সকলের ওপর ইমান আনি। তাদের অল্প কয়েকজনের নাম কুরআন-সুন্নাহয় এসেছে। সবল নবি-রাসুল নিষ্পাপ। তাঁরা উম্মাতের শ্রেষ্ঠতম মানুষ। আমরা তাদের সবাইকে সম্মান ও শ্রদ্ধা করি। তাঁরা সবাই আপন আপন উম্মতকে আল্লাহর দিকে আহ্বান করেছেন। তাঁরা আল্লাহর পক্ষ থেকে যেসব মুজিযা দেখিয়েছেন সবগুলো হক। আর সর্বশেষ চূড়ান্ত নবি হলেন বিশ্বনবি হজরত মুহাম্মদ মুস্তফাﷺতাঁর পরে আর কোনো নবি নেই। তাঁর শরিয়তই কিয়ামত পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।
(الإيمان باليوم اﻵخرة) কিয়ামতের দিনের ওপর ইমান আনা:
ইমানের পঞ্চম রুকন হলো, কিয়ামতের দিনের ওপর ইমান আনা। কুরআন-সুন্নাহয় কবর, কিয়ামত, হাশর, মিজান, পুলসিরাত ও জান্নাত-জাহান্নাম সম্পর্কে যা বলা হয়েছে আমরা তার ওপর ইমান আনি। আমরা বিশ্বাস করি, মৃত্যুর পর কবরে সুওয়াল-জওয়াব হবে: নেককাররা কবরে নিয়ামতপ্রাপ্ত হবেন আর বদকাররা কবরে শাস্তি পাবে। একদিন পুরো বিশ্বজগৎ ধ্বংস হয়ে যাবে। সকল মানুষ কবর থেকে পুনরায় উত্থিত হবে। সবাই আপন আমলের হিসাব দেয়ার জন্য হাশরের ময়দানে জড়ো হবে। পুলসিরাত পাড়ি দিয়ে মুমিনরা চির সুখময় জান্নাতের অধিবাসী হবে আর কাফেররা চিরদিনের জন্য জাহান্নামে চলে যাবে।
(الإيمان بالقدر) তাকদিরের ওপর ইমান আনা:
ইমানের ষষ্ঠ রুকন হলো, তাকদিরের প্রতি ইমান আনা। এই রুকনের সারমর্ম হলো, আমরা তাকদিরের ভালো-মন্দ বিশ্বাস করি। আল্লাহ তাআলা আমাদের সৃষ্টির বহু পূর্বেই আমাদের তাকদির লিখে রেখেছেন। আমাদের জন্ম কবে হবে, মৃত্যু কোথায় হবে, আমরা কী করব, কী খাব, কোথায় যাব, পৃথিবীতে কখন কোথায় কী ঘটবে সব আল্লাহ রাব্বুল আলামিন জানেন। তাকদিরের বাইরে কিছুই হয় না।
প্রিয় ভাইয়েরা! আমরা আজ সংক্ষেপে ইমানের পরিচয় তুলে ধরলাম। আরকানুল ইমান নিয়েও সংক্ষেপে আলোচনা হলো। ইমানের ছয়টি রুকন নিয়ে আমরা সামনের মজলিসগুলোতে বিস্তারিত আলোচনা করব ইনশাআল্লাহ। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের সবাইকে এই আকিদা সিরিজ থেকে উপকৃত হওয়ার তাওফিক দিন। আমিন ইয়া রাব্বাল আলামিন।
আকিদা সিরিজ: ১ম পর্ব PDF লিংক।
Comment