তানজিমুল কায়দার উপর এই বেইনসাফি অভিযোগ কেন?
সোস্যাল মিডিয়াতে একটি বিষয় এখন খুবই
তোলপাড়। আর সেটি হচ্ছে দাইশ কর্তৃক ইমারাতে ইসলামিয়াতে হামলা। এই দাইশের এসব কুকর্মের কারণে অনেকে একিউকেও দাইশের মানদণ্ডে মাপতে শুরু করছেন। তেমনই এক আহলুল ইলম একিউ ও দাইশকে গুলিয়ে ফেলে কিছু অসত্য ও অবাস্তব অভিযোগ তুলে ধরছেন।
তাই ভাবলাম মুহাতারামের কথার উপর কিছু মূল্যায়ন জরুরী যেন আমাদের ভাইয়েরা সংশয় মুক্ত থাকতে পারেন। তাই কিছু মূল্যায়ন।
মুহতারাম প্রথম যেই অভিযোগটি তুললেন—
❝যারা তা/ লি / বা/ন ও আই//S এবং A/কিউর তৎপরতাকে অভিন্ন বলে প্রচার করতো, এবং এখনো করে চলে; এরা কারা? আই/এস কিন্তু Aকিউর উদর থেকে জন্ম নেয়া। ব্যবধান কেবল সফটকোর ও হার্ডকোরের। এদের আচরণ ও নীতিআদর্শের সাথে তা/লি/বানের কোনো সম্পর্ক কি আছে? এর পরেও ওদের উগ্রনীতি ও খারেজি আদর্শের সমালোচনা করলে এদেশের কিছু লোক ক্ষেপে যায়। এরা কারা?❞
মূল্যায়নঃ
দাইশ'কে খারেজি আমরাও মনে করি, আপনারাও মনে করেন। দাইশ একিউরই একটি শাখা ছিলো এটার সাথেও আমরা একমত। কিন্তু একিউ ও দাইশের মাঝে পার্থক্যটা যা শুধু খাতা-কলম আর বক্তৃতায় সীমাবদ্ধ নয় বরং তৃণমূল পর্যায়ে মাঠেও প্রয়োগ হচ্ছে ও হয়েছে, আমি মনে করি এই বিষয়ে আপনার যথেষ্ট জ্ঞানের অভাব রয়েছে। একিউ ও দাইশের মানহাজগত বিরাট ব্যবধান থাকা সত্বেও আমি এটা বুঝিনা যে, কেন আপনারা দুই দলের মধ্যে ব্যবধান খুঁজেই পাননা?? আমি কিছু কথা তুলে ধরছি—
১। গনতান্ত্রিক ইসেলামপন্থি দলগুলোকে দাইশ তাকফির করে, কিন্তু একিউ করেনা।[১]
২। দাওলা সমর্থন না করলে কিংবা দাওলাহর বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরলে দাইশ তাকফির করে [২] কিন্তু পক্ষান্তরে একিউ এসব সম্পূর্ণ মুক্ত [৩]
৩। মসজিদ, বাজার, বাসস্ট্যান্ডে, এক কথায় মানুষের সমাগম রয়েছে এমন সব জায়গায় একিউর পক্ষ থেকে হামলা করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ, কেউ এমনটি করলে একিউ তার থেকে মুক্ত[৪] পক্ষান্তরে দাইশ এগুলোতে হামলা করা বৈধ বলে থাকে।
৪। দাওলা সমর্থন করেনা এমন যে কোন আলিমকে দাওলা হয়তো কাফির নয়তো পথভ্রষ্ট বলে থাকে। পক্ষান্তরে একিউ এমনটি কখনই করেনা [তাদের আকিদা মানহাজ পড়তে পারেন নেটে সার্চ করলেই পাওয়া যায়, তারপর কিছুদিন আগে মুফতি তাকী উসমানী হাফিঃ এর সাথে টিটিপির বৈঠকও এটাই প্রমাণ করে]
৫। মানব রচিত বিধান প্রণয়নকারী শাসককে কাফের না বলাতে অন্যান্য আলিম,দাইদেরকে দাইশ তাকফির করে, একিউ করেনা। [যেমন দাইশ তা লি বা ন'কে যতগুলো কারনে তাকফির করে এটি তার মধ্যে অন্যতম] এরকম চাইলে আরো অনেক পার্থক্য দেখানো যাবে।
এইতো গেলো দাইশ ও একিউর মধ্যকার পার্থক্য। এবার আসি একিউ ও ইমারাতের মধ্যকার মিগুলো কী কী? একিউ সালাফি ভিত্তিক সংগঠন, কিন্ত তাদের সাথে রয়েছে ইমারাতের গভীর সম্পর্ক।
১। শাইখ ও সা মা বি ন লা দে ন রাহিঃ কে আশ্রয়
দেয়া।
২। টিটিপির সাথে ইমারাতের সম্পর্ক [যা এখন সবাইই জানে]
৩। ২০ বছররে খোরাসান জিহাদে এরকম একটি রিপোর্টও ভূপৃষ্ঠের কেউ দেখাতে পারবেনা যে, একিউ ইমারার কাউকে আহত করেছে আর বা ইমারাতের কোন সৈন্য একিউর কাউকে আঘাত করেছে। পক্ষান্তরে দাইশ এর মাসআলা সম্পূর্ণই ভিন্ন। কারণ ইমারাত ও একিউ উভয়ই দাইশ হত্যা করে।
৪। [সত্য জানা নেই] বাইডেন যে বললো শাইখ জাওয়াহীরী হাফিঃ এর শাহাদাতের কথা যদি তা সত্যই হয় তাহলেও তা কাবুলেই হলো। যা স্পষ্ট প্রমাণ করে শাইখকে ইমারাত সহোযোগিতা করার বিষয়। অতএব ইমারাতে ইসলামিয়্যাহ থেকে যেই সালাফিদের বিরোধিতা করা হয়েছে সেটা যে, শুধুমাত্র দাইশদের কারণে তাও স্পষ্ট। কারণ ইমারাতেই সালাফি একটি বড় দল ইমারাতের হাতে বায়াত দিয়েছেন[৫]
আশাকরি আপনার [মুহতারামের] দৃষ্টি প্রসারিত হতে এতটুকুই যথেষ্ট হবে।
মুহতারাম আবারও বললেন—
❝বরাবরই স্টেটহীন জাযাবরী জি/হা দী তৎপরতার প্রতি জমহূর ফুকাহায়ে কেরাম ভিন্নমত পোষণ করে আসছেন। জি//হা/ দ হবে স্টেটভিত্তিক আমীরের নেতৃত্বে। হবে নিয়মতান্ত্রিক উদ্দেশ্যমূলকভাবে। তা//লি/বানের প্রতি বরাবরই সমর্থন ছিল উলামায়ে কেরাম এজন্য, তারা প্রথম থেকেই সুস্পষ্ট কুফফার ও তাদের দোসরদের বিরুদ্ধে নিয়মতান্ত্রিক লড়াই করে আসছে, নিজেদের নিয়ন্ত্রিত ভূমি থেকে। ভূমিহীন ভাসমান অবস্থান থেকে উদ্দেশ্যহীনভাবে নয়। আল্লাহর ফযলে এখন তারা স্বীকৃত রাষ্ট্রশক্তি। কিন্তু তাদেরকে পূর্ণ অসহযোগিতা করছে ভূমিহীন খারেজী সালাফীরা।❞
#মূল্যায়নঃ
কী আশ্চর্য এক বিরোধিতা আপনার কাল্পনিক "কথিত জমহুরগন করে গেলেন"
১। রাশিয়ার বিরুদ্ধে মুজাহিদদের লড়াই কোন স্টেটের অধীনে ছিলো..???
২। আমীরুল মুমিনিন মো ল্লা ও ম র রাহিঃ এর তা লে বা ন প্রতিষ্ঠা এরপর প্রায় দুই বছর লড়াই চালিয়ে ১৯৯৬ সালে ইমারাহ প্রতিষ্ঠা। এই ১৯৯৬ সালে ইমারাহ প্রতিষ্ঠার আগপর্যন্ত তা লে বা নে র জিহাদের হুকুম কী, তারা কোন স্টেটের অধীনে ছিলো ??
৩। ছাড়ুন সে কথা। إذا هبت ريح الإيمان নামক গ্রন্থে সাইয়েদ আহমাদ ইবনু ইরফান [সাইয়্যেদ আহমাদ বেরেলভী রাহিঃ] এর জীবনির উপর যেই কালজয়ী গ্রহন্থ রচনা করেছেন, সেখানেও রয়েছে সাইয়েদ আহমাদ রাহিঃ জিহাদ করেছেন দাওয়াহ দিয়েছেন এরপরে গিয়ে তিনি একটি অর্জিত ভূখন্ডে শারীয়াহ [হুদুদ-কিসাস ইত্যাদি] কায়েম করেন যারপর তাকে আমীরুল মুমিনিন ঘোষণা করা হয়। কথা হলো এই স্টেট গঠনের আগে তার দাওয়াহ ও জিহাদের বিষয়ে আপনার বক্তব্যে উঠে আসা কথিত ❝জমহুরের অবস্থান কী?❞
৪। আর ভূমিহীন খারিজি বলে কী একিউ'কেই সম্বোধন করেছেন?? তাহলে আপনার জন্য দুঃখের সংবাদ হলো মালি [যেখানে ফ্রান্স সৈন্য প্রত্যাহারের ঘোষনা দিয়েছে] আইভরিকোষ্ট, বোর্কনাফিসো, নাইজেরিয়া, সোমালিয়া সহ বিভিন্ন জায়গায় আপনি একটু নজর বুলিয়ে দেখবেন আশাকরি ঘুম ভেঙ্গে যাবে। ভূমিহীন ভাসমান বলে কাদের কটাক্ষ করছেন আল্লাহই ভালো জানেন।
৫। আর তা লে বা নে র প্রতি অবশ্যই ওলামাগনের সমর্থন ছিলো। কিন্তু আপনি যেভাবে ব্যপকহারে বলছেন সেভাবে ছিলোইনা। কারণ পাকিস্তানের সম্মানিত আলিম মুহতারাম শাইখ রাফি ওসমানী সাহেবও বলেছিলেন "ইয়ে তো তা লে বা ন নেহি হ্যায় বলকে জালিমান হ্যায়" তা ছাড়া যাত্রাবাড়ী, ফরীদাবাদ, ইবরাহিমিয়্যা, আশরাফিয়া, রাব্বানীয়া, জামিউল উলুম, বসুন্ধরা সহ ঐতিহ্যবাহী মাদ্রাসায় দারসে বসে বসে "কথিত জমহুর" সাহেবগনের বক্তব্য এই তো বছর তিনেক আগে কী ছিলো তার জলন্ত প্রমাণ আমি নিজেই। শাইখে যাত্রাবাড়ী তো আমেরিকার সকল জুলুমের দায়ভার তা লি বা নের উপর চাপিয়েই দিয়েছিলেন [বুখারীর দারসে]।
আর আজকে তাদের বিজয় হয়েছে আলহামদুলিল্লাহ। হ্যাঁ এখন তো আগের বিরোধিতায় লিপ্ত ব্যক্তিরাও প্রশংসায় পঞ্চমুখ। তাতে সমস্যা নেই, কিন্তু সমস্যা হলো এটা বলা যে, আমিও এর সমর্থনকারী ছিলাম যদিও বাস্তবতা তার বিপরীতে ছিলো।
এরপর মুহতারাম এক পর্যায়ে বললেন—
❝আমাদের মধ্যে যারা এতদুভয়ের মাঝে তফাৎ করতে পারে না, অথবা পারলেও প্রকাশ নাকরে গোঁজামিল দিয়ে তরুণদের বিভ্রান্ত করে; তাদের প্রতি খুব রাগ হয়। আফসোস লাগে উগ্র সালাফী দা/য়ে/শের এ উগ্র খারেজী তৎপরতায় সমর্থন করে দেওবন্দী পরিচয়ের কিছু লোক। জি//হা দের মত একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজের নাম ভাঙ্গিয়ে এবং তার জযবা ও ইচ্ছাকে ব্যবহার করে তরুণদের মিসগাইড করছে ওরা; এবং দেওবন্দের ঘরে সালাফিয়াত ও খারেজিয়াত চালান করছে। আর বলছে এসব নাকি আসল দেওবন্দিয়াত!❞
মূল্যায়নঃ
১। যখন দাইশের স্বর্ণযুগ তখন কিছু আলিম দাইশকে সমর্থনকারী থাকলেও এখন তাদের অবস্থা দাইশ থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন [এর জলন্ত প্রমাণ আমি নিজেই, কারণ আমি নিজের দায়িত্ব বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ নিয়ে অবস্থান যাচাই করার চেষ্টা করেছি]
২। কিন্তু বর্তমানে দাইশের সমর্থন করে কেউইই দেওবন্দিয়্যাত প্রচার করছেননা [আমার যত দূর তাহকীকে রয়েছে]। হ্যাঁ আসলি দেওবন্দী প্রচারকারীগন তানজিমুল কায়দার সমর্থনকারী এটা আমি স্বীকার করতে বাধ্য।
পাকিস্তানের টিটিপিই এর প্রমাণ। যারা মুফতি তাকী উসমানী হাফিঃ এর সামনেই এর খোলাসা করেছেন আমি মনে করি এখানে তা রিপিট না করে সেগুলো হল করাই যথেষ্ট।
৩। হাকিকতে সালাফিরা কী পথভ্রষ্ট আর আহলুস সুন্নাহ থেকে খারিজ.???
আমি কওমি ও দেওবন্দী ঘরানার একজন কট্টরপন্থী দেওবন্দি হিসেবেই এতদিন সহকর্মীদের থেকে ট্যাগ পেয়ে আসছি। তা সত্যেও আমি বলছি একমাত্র দেওবন্দীরাই হক নয় বরং এর বাইরে যারা আছেন তারাও হক হওয়ার অধিকার রাখে। আমাদের পূর্বসূরিরা হকের উপরে থাকতে শিখিয়েছেন কিন্তু এটা শিখাননি যে, একমাত্র দেওবন্দীরাই হক বাকি সব বাতিল বিশেষ করে সালাফি মানেই বাতিল।
তাই দেওবন্দি ঘরানার মধ্যে আহলুস সুন্নাহর চর্চা হওয়া কোন মূল্যেই দুশনীয় নয় এটা দেওবন্দী মানহাজ পরিপন্থীও নয়।
এরপর মুহতারাম সতর্ক করে বললেন—
❝জি/হা/দপ্রিয় ভাইয়েরা সাবধান! আমাদের সামনে এসময়ে আদর্শ হিসাবে আছে তা/লি/বান। অভিভাবক হিসাবে আছেন আমাদের আকাবির ও উলামায়ে কেরাম। উগ্র সালাফী খারেজীদের থেকে জি/হা/শিখতে হবে না। তা/ লি/বানরা এদেশের মুসলমানদের মন ও মেজাযের সবচে বেশি কাছের। তারা আকিদায় মাতুরীদী, মাযহাবে হানাফী, মাসলাকে দেওবন্দী, মেযাজে সুফী! এদেশের মাটি ও মানুষ এবং আপনাদের মন ও মানসের তারা অনেক নিকটবর্তী।❞
মূল্যায়নঃ
যদি তালিবান আদর্শই হয় তাহলে তো আপনার জন্য আবশ্যক হয়ে যাবে একিউকে আশ্রয় দেয়া, একিউ প্রধানের রক্ষায় রাষ্ট্র বিসর্জন দেয়া এমনকি ওলামাগনের একদল মুফতি তাকী উসমানী হাফি এর নেতৃত্বে এসে আপনাকে যদি বলে একিউ প্রধানকে কাফেরদের হাতে তুলে দিবেন তখন আপনার জন্য বলা আবশ্যক হলো- "জিহাদ করতে আসা কোন ব্যক্তিকে কাফেরদের হাতে আমি তুলে দিবোনা" আর সম্মানিত উলামাগন কি আমাকে কোরআন ও সুন্নাহ থেকে এই মর্মে কোন রেফারেন্স দিতে পারবেন যে, কাফেরদের হাতে মুসলিমকে তুলে দেয়া বৈধ??
পারবেন কী যেই তা লে বা ন'কে আদর্শ মানার কথা বলছেন সেই তা লি বা নি নেতার মত এই অবস্থা গ্রহন করতে??
আল্লাহ তায়ালা আমাদের সুবুদ্ধি দান করুন।
টিকাঃ
১। দেখুন দাইশের প্রকাশিত ম্যাগাজিন "দাবিক" খুব সম্ভব ১৪তম সংখ্যা। তা ছাড়াও একিউর সাথে দাইশের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিরোধ। দাইশ তো হামাস,ইখওয়ান, জামাত, চরমোনাই'কে কাফের বলে। কিন্ত একিউ তা মনে করেনা, মসজিদে ইবনু তাইমিয়্যাহতে [ফিলিস্তিন] ২০০৯ সালে ঘটানো হামাসের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের পরও একিউ না করেছে তাকফির আর না করেছে লড়াই। যুদ্ধের অনুমতি চাইলে একিউ সিনিয়র মুফতি নিষেধ করেন আর বলেন তারা আমাদের ভাই তবে তারা ভুল পথে আছে আমরা তাদেরকে নাসিহা করি।
২। দেখুন দাইশ মুখপাত্র আবু মুহাম্মদ আদনানীর বক্তব্য “আল্লাহর দিকে আহ্বানকারীর ডাকে সাড়া দিন” আরো পড়ুন তাদের সাবেক পত্রিকা “আর-রুমিয়্যাহ”
৩। সিরিয়াতে এইচ টিএসের বিরুদ্ধে এবং সোমালিয়া-পাকিস্থান, নাইজেরিয়া, সিরিয়া সহ বিভিন্ন জায়গায় দাইশের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরা তবুও তাকফির না করা
৪। একিউর সিনিয়র মুফতি ও সর্বোচ্চ সেন্ট্রালের নেতৃত্ব শাইখ আতিয়্যাহতুল্লাহ আল-লীবী রাহিঃ এর বার্তা “মুসলিম রক্তের পবিত্রতা”
৫। আমরা একঃ তালেবান ও সালাফি উলামা https://www.darulilm.org/2021/10/27/taliban-salafi/
Comment