Announcement

Collapse
No announcement yet.

বিপ্লব আসবেই | মুজাফফার আজাজ |

Collapse
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • বিপ্লব আসবেই | মুজাফফার আজাজ |



    সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান এক বড় প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন "আমি বিপ্লব দিখতে পাচ্ছি। কেবল প্রশ্ন এটা যে তা ব্যালটে আসবে নাকি রক্তাক্ত পথে আসবে?"
    .
    যদি এই প্রশ্ন ইমরান খান না করে মরহুম সাইয়্যেদ মুনাওয়ার হুসাইন করতেন তাহলে এই প্রশ্নে বড় তুফান শুরু হয়ে যেতো। তার কাছ থেকে ক্ষমা দাবি করা হতো, তাকে গাদ্দার ফতওয়া দিয়ে দেয়া হতো। 'রাস্ট্রের দুশমন' তকমা লাগিয়ে দেয়া হতো (অথবা এই ট্যাগগুলো যারা দেয়, তাদের মর্জি মাফিক কোনো একটা ট্যাগ দিয়ে দিতো)।
    .
    কিন্তু যেহেতু এই প্রশ্ন কোনো ইসলামী দলের পক্ষ থেকে আসেনি, এজন্য তাকে জঙ্গি-সন্ত্রাসীও বলা হবেনা। তালেবানের বা আল কায়েদার সাথেও সম্পৃক্ত করা হবে না।
    .
    কিন্তু প্রশ্নটা গুরুত্বপূর্ণ! পাকিস্তানের জন্মই হয়েছিলো একটি বিপ্লবের স্বপ্নরূপে, যা পরবর্তীতে বাস্তব রাষ্ট্রের রূপ নিয়েছিলো। স্বপ্ন এটাই ছিলো যে- একটা রাষ্ট্র হবে যেখানে মুসলমানরা ইসলাম মোতাবেক জীবন যাপন করবে এবং তারা সারা দুনিয়ার জন্য দৃষ্টান্ত হবে। কিন্তু এটাও একটা বাস্তবতা যে- শাসকগোষ্ঠী ও তাদের পরিচালকরা (পাকিস্তানী আমলা ও সেনাবাহিনী) একদিনের জন্যও পাকিস্থানে ফাস্ট ইসলাম কায়েম হতে দেয়নি। এর নাম "ইসলামী প্রজাতন্ত্র" কিন্তু এখানে ইসলামী হুকুমত, আইনকানুন প্রতিষ্ঠিত নেই।
    .
    করাচী থেকে খাইবার বা গওদীর থেকে কাশ্মীর পর্যন্ত যে কোনো মুসলমানকে প্রশ্ন করা হোক- "রাস্ট্রে কোন শাসনব্যবস্থা চাও?" তাহলে তারা জবাব দিবে ইসলামী শাসনব্যবস্থা। তাহলে এই নিজাম কেন প্রতিষ্ঠিত হয় না? বাঁধাটা কোথায়? কোন রাস্তায় এটা আটকে যায়? চলুন বাস্তবতাটা একটু ভেবে দেখি!
    .
    পাকিস্তানের স্লোগান থেকে শুরু করা যাক, যেখানে বলা হয়েছে পাকিস্তানের উদ্দেশ্য কি? - লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ!
    .
    আসলে প্রথম আক্রমন তো এই ভিত্তির উপরই করা হয়েছে।
    পাকিস্থানকে ইসলামের জন্যই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বানানো হলো! যখন প্রথমেই ইসলামের মুলনীতির উপর আক্রমন করে অস্পষ্টতা সৃষ্টি করে দিলো; এরপরই দ্বিতীয় আক্রমনটা এই কথিত গণতন্ত্রের উপর করা হলো।
    .
    কেননা এবাস্তবতাও পরিকল্পনাগ্রহনকারীরা জানতো যে- পাকিস্তানের বেশিরগভাগ জনতাই এই দেশে ইসলামই চায়। একারনেই গণতন্ত্রের মাধ্যমেও ইসলামের আসার পথ আটকে দেয়া হলো। সুতরাং মুসলিম লীগকে পাক্কা সেক্যুলার পার্টি বানিয়ে, ইসলাম চায় এমন ব্যক্তিদের সামনের সারিতে পুতুলের ন্যায় দাড় করিয়ে দিলো।
    যখন তারা আর রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রন করতে পারলো না, তখন আইয়ুব খান লাঠির মাধ্যমে ক্ষমতায় আসলো আর জরুরী অবস্থার ছদ্মবেশে ১১ বছর পার করে দিলো।
    আইয়ুব খানের আমলে ইসলাম প্রতিষ্ঠার পরিবর্তে উন্নতিতে লেগে গেলো।
    .
    যখন তার বিদায় হলো, ততদিনে জুলফিকার আলী ভূট্টো তৈরি হয়েই ছিলো। সে ক্ষমতায় এসে আরো বেশি অস্পষ্টতা তৈরি করার জন্য "ইসলাম আমাদের দ্বীন, সমাজতন্ত্র আমাদের অর্থনীতি" শীর্ষক বিচিত্র স্লোগান দিতে শুরু করলো। এটাই পাকিস্তানে প্রথম সুপরিকল্পিত ও প্রকাশ্য আক্রমন ছিলো- ইসলামের শাসনব্যবস্থা ও জীবনব্যবস্থার মাঝে বিভক্তির উদ্দেশ্যে।
    .
    অথচ ইসলামী নেজামের মধ্যে অর্থনৈতিক, সামাজিক রাজনৈতিক, ব্যবসায়িক, আভ্যন্তরীণ ও পররাষ্ট্র বিষয়ক সম্পর্ক, সৈন্যবাহিনী, আদালতসহ সকল বিষয়ই অন্তর্ভুক্ত। কিন্তু ভুট্টোর আমলেই শক্তির উৎস হিসেবে আল্লাহকে বাদ দিয়ে জনগনকে ভিত্তি করা হলো এবং অর্থনীতিকে সমাজতান্ত্রিক করে দেয়া হলো। এবং আজ পর্যন্ত ভূট্টোর এই স্লোগানই জীবিত রয়ে গেছে।
    জনতার বিপ্লবী এই চেতনাকে এ ভুমিতে এভাবেই কবরচাপা দেয়া হয়।
    .
    তবে, পাকিস্তানের ইসলামী চেতনার উপর সবচেয়ে নিকৃষ্ট এবং বড় আক্রমণ করা হয় জেনারেল জিয়াউল হকের আমলে। তার ১১ বছর শাসনকালে ইসলামের মোড়কে অনৈসলামিক কর্মকাণ্ড ব্যাপকভাবে সম্পাদিত হয়েছিলো।
    .
    পার্লামেন্টের নাম রাখা হয়েছিল মজলিসে শুরা, অথচ বিচার ফয়সালা কুর'আন সুন্নাহ মোতাবেক করা হতো না। জাতিকে নিজামে মোস্তফা (সা.) প্রতিষ্ঠা করার স্বপ্ন দেখাতে থেকে ঠিকই, কিন্তু নবীর ঝান্ডা উত্তোলনকারীদের প্রথমে দুইভাগে এবং পরবর্তীতে কয়েকভাগে বিভক্ত করে দেয়া হলো। প্রত্যেক ইসলামী জামাতে সন্দেহ তৈরি করে দেয়া হলো।
    .
    অতঃপর বেনজীর, নওয়াজ শরীফ। এরপর আবার বেনজির, আবার নওয়াজ শরীফ নিয়ে আসা হলো।
    নওয়াজ শরীফ ইসলামের ভোটও নিতে লাগল আবার সুদি রাষ্ট্রব্যবস্থার অধিকারের জন্য আদালতেও দাড়াতে লাগল। এই দুইজনের কারবারে মানুষও প্রচন্ড অসন্তুষ্ট হয়ে যায় এবং সম্ভাবনা ছিলো যে তারা ইসলামী দলগুলোর প্রতি ঝুঁকে যাবে এবং কোনো ইনকিলাব চলে আসবে! এটা ব্যালটেও চলে আসতে পারতো অথবা রক্তাক্ত পথে।
    .
    কিন্তু ইসলামকে এই রাষ্ট্রে প্রতিষ্ঠিত হওয়া থেকে বাঁধাদানকারীরা (সামরিক বাহিনী, আমলাতন্ত্র ও সেক্যুলার এলিটরা) সবার মাঝে এ দুই গ্রুপকে চোর বলে আলোড়ন তুলে দিলো এবং বিপ্লবের (পরিবর্তনের) স্লোগান তুলে দিলো। এরপর দুজনকেই ব্যর্থ প্রমান করে, তৃতীয় শক্তিকে নিয়ে আসার প্রয়োজনীয়তা মানুষকে গেলাতে লাগল।
    .
    কিন্তু এই তৃতীয় শক্তিকে নিয়ে আসা পরিবর্তন বা বিপ্লবের জন্য ছিলো না। বরং তা ছিলো ইসলাম ও ইনকিলাবের রাস্তা বন্ধ করার জন্যই।
    অতঃপর এই দুই দলের লোকদের একত্র করে পরিবর্তনের দাবিদার নতুন পার্টির (ইমরান খানের তেহরিকে ইনসাফ) মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করে দেওয়া হলো। পুরনো বোতলে বাজারে আসলো নতুন মদ।
    নতুন রুপে নতুন চেহারা তো আসলো, কিন্তু মূল অংশ ঐ পুরনো ধোকাবাজদের দ্বারাই ভরপূর ছিলো।
    .
    অবস্থার দাবীতে এখন নতুন করে মদিনা রাষ্ট্রের স্লোগান লাগানো শুরু হলো। কেননা স্লোগান দেয়া ব্যক্তিদের খুব ভালোভাবেই জানা ছিলো যে- যা কিছুই হোক না কেন পাকিস্তানের আমজনতা ইসলামই চায়। তা ব্যালটের মাধ্যমেই হোক অথবা রক্তাক্ত পথেই আসুক।
    .
    কিছু ব্যক্তি (সেনাবাহিনী, আমলাতন্ত্র ও সেক্যুলার এলিট) ধারাবাহিকভাবে, সুপরিকল্পিতভাবে ইসলাম প্রতিষ্ঠার রাস্তা বন্ধ করে রেখেছে। এদের এটাও ভালোভাবে জানা আছে, এটা কোনো ফরিয়াদ নয় যে- দেশের বেশিরভাগ মানুষই যে নিজাম চায়, তা প্রতিষ্ঠায় সকল বাধা ভেঙ্গে দিয়ে সামনের দিকে এগোতে থাকে।
    এবং নিশ্চিতভাবেই কোনো প্রতিবন্ধকতা এই ইনকিলাব আটকাতে পারে না। এই ইনকিলাবই পাকিস্তানের নিয়তি।
    .
    ইনকিলাব বা বিপ্লব হলো তা ই- যেখানে সবকিছুকেই পরিবর্তন করে দেয়া হবে, বিদ্যমান কোনো ব্যবস্থারই প্রয়োজনীয়তা থাকবে না। কোনো মুখাপেক্ষিতা রাখা হবে না। কারন ইসলামী বিপ্লব সম্পূর্ন নতুন ধারার নিজাম নিয়ে আসে। এর কোনো অনুসরন বা মুখাপেক্ষিতার দরকার হয় না। আর ইসলামী বিপ্লবের একটি বিশেষত্ব এই যে- একে যতই চাপ দিয়ে রাখার চেষ্টা করা হয়, তা ততই শক্তিশালী ও আলোকিত হয়ে সামনে এগোতে থাকে।
    .
    সুনিশ্চিতভাবেই, ইনকিলাব তো আসবেই। যদিও ইতিপূর্বে নতুন নতুন নাম ও রূপ নিয়ে কত কিছুই তো এসে কেবল নামই পরিবর্তন করে গেছে। কত রূপে ইসলামের দাবিদাররা এসেছে মুসলমানদের নাম ধারন করে, সোসালিজমের নামে। উজ্জ্বল ও আলোকিত ইসলামের নামে। রাজনীতি ছাড়া চমৎকার ইসলামের নামে। আর সবশেষ আসলো ইমরান খানের 'মদিনা রাষ্ট্র' স্লোগানের সাথে। এর প্রত্যেকটিই ব্যর্থ। ব্যর্থই হয়ে থাকবে। কিন্তু বিপ্লব এরপরও আসবে।
    .
    গত ৪৫ বছর ধরে আফগানিস্তানে গোটা দুনিয়া ইসলামের রাস্তা তো বন্ধ করতে চেয়েছিলো। দুনিয়ার সকল নতুন-পুরাতন গোলা-বারুদ, অস্ত্র-সৈন্য একত্র হয়েছিলো। ব্যালটের ইনকিলাবের সুযোগও তো ওখানে ছিলো না, ইসলামের শাসন রক্তাক্ত পথ ধরেই এসেছে। যত লোক ৪৫ বছরে আফগানিস্থানের মাটিতে মৃত্যুবরণ করার ছিলো ঠিক তত লোকই মারা গেছে। একজনও কম বা একজনও বেশি মরেনি।
    যদি ব্যালটের মাধম্যেও কিছু হতে হতো, তবুও ঠিক এতগুলো লোকই নিহত হতো, যত লোক এই ভুমিতে এখন যুদ্ধে নিহত হয়েছে। তারা কোনো না কোনো ভাবে নিজেদের মৃত্যুর স্থানে চলে আসতই।
    এটা বিশ্বাস করা তো মুসলমানদের ঈমানের অংশ। নয় কি?
    .
    সুতরাং তবে ভয় কিসের? জেগে উঠো! কোমর বেধে বেড়িয়ে পড় দৃঢ় কদমে। কেন ভয় পাও? বের হও। এরপর দেখো আল্লাহ কি করেন?
    .
    এই বিপ্লব তো আসবেই! হাজারও প্রতিবন্ধকতাও যদি তৈরি করে রাখা হয় এর পথে, তবুও বিপ্লব আসবেই।
    কিন্তু যে বা যারা বাধা হয়ে দাড়াচ্ছে সে বুঝে নিক যে সে কি করছে?
    .
    যে ব্যক্তি এই ইনকিলাবের পথে হাটবে সে সম্মানিত হবে। যে এই রাস্তায় অটল থাকবে সে হবে কামিয়াব, যে লক্ষ্যে পৌছে যাবে সেও কামিয়াব হবে, যে পৌছাবে না সেও।
    .
    একই সাথে যে বাঁধা হয়ে দাঁড়াবে সেও হয়তো দুনিয়াতে কামিয়াব হতে পারে; কিন্তু আসল প্রশ্ন হবে, সে কোন কাফেলায় ছিলো?
    .
    এই ইনকিলাবের রাস্তা আটকানো যাবে না।
    এটা আসবে। অবশ্যই আসবে।
    আজকের লোকেরা যদি না থাকে, কালকের যারা আসবে তারা হলেও ইনকিলাব দেখবে আর জাতি উপকৃত হবে।
    .
    ইমরান খান সাহেব হোন বা অন্য কেউ। তারা যেন মিথ্যা ইনকিলাবের স্বপ্ন দেখানো ছেড়ে দেন।
    যে ইনকিলাব আসবে, ওটা তার নিজের রাস্তা নিজেই বানিয়ে নিবে।
    .
    ('জাসারাত' পত্রিকার কলামিস্ট মুজাফফার আজাজের লিখিত প্রবন্ধ। পাকিস্তানের উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে লিখিত চমৎকার এই প্রবন্ধটি বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও সমান প্রাসঙ্গিক।

    -সংগৃহীত
    Last edited by tahsin muhammad; 11-08-2022, 06:48 PM.
    হে মু'মিনগণ! তোমরা আল্লাহর সাহায্যকারী হও।

  • #2
    আল্লাহুম্মা ইন্নী আস-আলুকাল আফিয়াহ্। হে আল্লাহ, আপনার নিকট আমি নিরাপত্তা ও সুস্থতা কামনা করছি। আমীন।

    Comment


    • #3
      আর তোমরা হতাশ হয়োনা এবং দুঃখ করো না, তোমরাই জয়ী হবে, যদি তোমরা মুমিন হও। আলে ইমরান [৩:১৩৯]

      Comment

      Working...
      X