তালেবানরা কি আসলেই মাজারপূজারী?
ইদানীং একটি ছবি নজরে পড়লো, যাতে কিছু তালেবান নেতৃবৃন্দ উযবেকিস্তানে অবস্থিত ইমাম বুখারীর মাজার যিয়ারতে গিয়ে মাজারের সামনে দাড়িয়ে হাত তুলে দোয়া করছেন। এ ছবির মাধ্যমে কেউ কেউ মুযাফফর বিন মুহসিনের সেই কুখ্যাত উক্তির স্বপক্ষে দলিল দেয়ার চেষ্টা করেছে যে, তালেবানরা নাকি মাজারপূজারী, একারণেই নাকি তারা বৌদ্ধমূর্তি ভাঙ্গলেও মাজার ভাঙেনি।
কিন্তু আসলেই কি তালেবানরা মাজারপূজারী?
উত্তর: মাজারপূজা হলো, মাজারে সেজদা করা কিংবা মাজারস্থ মৃতব্যক্তির নিকট প্রার্থনা করা। কিন্তু যদি কেউ মাজারে গিয়ে আল্লাহ তায়ালার কাছে দোয়া করে তাহলে এখানে শিরকের কি হলো? খোদ রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও কবরের কাছে হাত তুলে দোয়া করেছেন। সহিহ মুসলিমের হাদিসে এসেছে,
عن عائشة قالت: ألا أحدثكم عني وعن رسول الله صلى الله عليه وسلم قلنا: بلى، قال: قالت: لما كانت ليلتي التي كان النبي صلى الله عليه وسلم فيها عندي، انقلب فوضع رداءه، وخلع نعليه، فوضعهما عند رجليه، وبسط طرف إزاره على فراشه، فاضطجع، فلم يلبث إلا ريثما ظن أن قد رقدت، فأخذ رداءه رويدا، وانتعل رويدا، وفتح الباب فخرج، ثم أجافه رويدا، فجعلت درعي في رأسي، واختمرت، وتقنعت إزاري، ثم انطلقت على إثره، حتى جاء البقيع فقام، فأطال القيام، ثم رفع يديه ثلاث مرات .... صحيح مسلم (974)
‘আয়েশা রাযি. বলেন, আমি কি তোমাদেরকে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও আমার কথা শুনাবো না? আমরা বললাম, হ্যাঁ, নিশ্চয়ই বর্ণনা করুন। রাবী বলেন, তিনি বললেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমার পালার যে রাতে আমার কাছে ছিলেন, সে রাতে তিনি বাইরে থেকে এসে তার ‘রিদা’ (গায়ের উপরের অংশের চাঁদর) ও জুতা খুলে ফেললেন এবং জুতা দুটি তার পায়ের দিকে রেখে ‘ইযারের’ (গায়ের নিচের অংশের চাঁদর) এক কিনারা বিছানার উপর বিছিয়ে দিলেন এবং শুয়ে পড়লেন। তিনি এতটুকু সময় অপেক্ষা করেন যতটুকু সময়ে তিনি আমার ঘুমিয়ে পড়ার ধারণা করলেন। তারপর অতি সন্তর্পণে চাদর নিলেন, জুতা পরলেন ও দরজা খুলে বেরিয়ে গেলেন। তারপর সাবধানে দরজা বন্ধ করে চলে গেলেন। আমিও আমার ওড়না মাথায় দিলাম, জামা পরে নিলাম এবং ইযার বেঁধে নিলাম। তারপর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর পিছনে পিছনে রওনা হলাম। তিনি বাকীউল গারকদ (কবরস্থানে) পৌঁছে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলেন। তিনবার হাত উঠিয়ে (দোয়া করলেন)। তারপর ফিরে আসতে লাগলেন, ……………….। –সহিহ মুসলিম: ৯৭৪
হাদিসের ব্যাখ্যায় ইমাম নববী রহ. বলেন,
فيه استحباب إطالة الدعاء وتكريره ورفع اليدين فيه وفيه أن دعاء القائم أكمل من دعاء الجالس في القبور. شرح النووي على مسلم (7/43)
‘এই হাদিস প্রমাণ করে দীর্ঘক্ষণ ও বারবার দোয়া করা এবং দোয়ার সময় হাত উত্তোলন করা মুস্তাহাব। এবং এটাও প্রমাণ করে যে, কবরের কাছে দাঁড়িয়ে দোয়া করা বসে দোয়া করার চেয়ে উত্তম।’ -শরহু সহিহি মুসলিম: ৭/৪৩
অপর হাদিসে এসেছে,
عن عائشة، أنها قالت: خرج رسول الله صلى الله عليه وسلم ذات ليلة، فأرسلت بريرة في أثره، لتنظر أين ذهب، قالت: فسلك نحو بقيع الغرقد، فوقف في أدنى البقيع، ثم رفع يديه، ثم انصرف، فرجعت إلي بريرة، فأخبرتني، فلما أصبحت سألته، فقلت: يا رسول الله، أين خرجت الليلة؟ قال: " بعثت إلى أهل البقيع لأصلي عليهم». رواه أحمد (24612) وقال الشيخ شعيب الأرنوؤط في تعليقه على مسند أحمد: (41/160) : إسناده محتمل للتحسين، أم علقمة بن أبي علقمة: -وهي مرجانة- روى عنها اثنان، أحدهما ابنها، وذكرها ابن حبان في "الثقات" وقال العجلي: مدنية تابعية ثقة. وبقية رجال الإسناد ثقات رجال الشيخين. غير عبد العزيز بن محمد: وهو الدراوردي، فقد أخرج له البخاري مقرونا أو تعليقا، واحتج به الباقون، وهو حسن الحديث، وقد توبع
‘আয়েশা রাযি. বলেন, এক রাত্রে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দাঁড়িয়ে তার কাপড় পরিধান করলেন, এরপর বের হয়ে গেলেন। তখন আমি আমার বাদী ‘বারীরা’কে তার পেছনে পেছনে যেতে আদেশ দিলাম, তিনি কোথায় যান তা দেখার জন্য। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ‘বাকীউল গরকাদে’র দিকে গেলেন এবং তার নিকটে গিয়ে দাঁড়ালেন, এরপর হাত তুলে (দোয়া করে) ফিরে আসলেন। বারীরা (রাসূলের পূর্বেই) ফিরে এসে আমাকে সব অবগত করল। সকালবেলা আমি নবীজিকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, আমি ‘বাকী’তে অবস্থানরত (মৃতদের) প্রতি প্রেরিত হয়েছিলাম, তাদের জন্য দোয়া করার উদ্দেশ্য।’ -মুসনাদে আহমদ: ২৪৬১২; শায়েখ শুয়াইব আরনাউত হাদিসটিকে হাসান বলেছেন।
হাদিসের ব্যাখ্যায় ইমাম আবুল ওয়ালিদ বাজী বলেন,
وفي هذا إتيان القبور والدعاء لأهلها عندها (المنتقى شرح الموطإ 2/ 34
এ হাদিস হতে কবর যিয়ারত করা ও কবরের নিকট দাড়িয়ে কবরস্থ ব্যক্তিদের জন্য দোয়া করার প্রমাণ মিলে। –আলমুনতাকা: ৩৪/২
আর তালেবানদের নেতৃস্থানীয় লোক তো দূরের কথা সাধারণ কোন তালেবানও কবরে সেজদা করে কিংবা কবরস্থ মৃত ব্যক্তির নিকট সাহায্য চায়- এরকম কোন দলিল কি মুযাফফর সাহেবের কাছে আছে? মূর্খ আফগান জনগণ মাজারে সেজদা করলে তার দোষ কি তালেবানদের ঘাড়ে চাপানো যাবে? আর মাজার না ভাঙ্গাই কি মাজারপূজারী হওয়ার দলিল? আপনাদের নেতা মুহাম্মদ বিন সালমান ও অন্যান্য আরব শাসকরা তো তথাকথিত ‘বিলাদুত তাওহিদ’ সহ জাযিরাতুল আরবের পবিত্র ভূমিতে মন্দির নির্মাণের অনুমতি দিচ্ছে? মার্কেটে মূর্তি বিক্রির অনুমতি দিচ্ছে, মূর্তি ভঙ্গকারীকে গ্রেফতার করছে, তাহলে কি তাদেরকে মূর্তিপূজারী বলা যাবে? এমন ডাবলষ্ট্যান্ডার্ড আর কত দিন?
অবশ্য, এখানে তিনটি বিষয় লক্ষণীয়:
এক. কবর যিয়ারতে গিয়ে মূলত দোয়া করা হবে কবরস্থ ব্যক্তির জন্য। অবশ্য কবরস্থ ব্যক্তির পাশাপাশি নিজের জন্য দোয়া করাও নিসন্দেহে বৈধ। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীদেরকে শিখিয়েছেন, তারা যেন কবর যিয়ারতে গিয়ে এ দোয়া পড়ে,
السلام عليكم أهل الديار من المؤمنين والمسلمين، وإنا، إن شاء الله للاحقون، أسأل الله لنا ولكم العافية
`আসসালামু আলাইকুম। কবরবাসী মুমিন ও মুলমানদের উপর সালাম বর্ষিত হউক। ইনশাআল্লাহ আমরাও তোমাদের সাথে মিলিত হব। আমাদের এবং তোমাদের সবার জন্য আল্লাহর নিকট শান্তি ও নিরাপত্তা প্রার্থনা করছি।‘ -সহিহ মুসলিম: ৯৭৪
কিন্তু কেউ কেউ মনে করে, নেককার ব্যক্তির কবরে গিয়ে দোয়া করা হলে তা বেশি কবুল হবে। অথচ কুরআন-সুন্নাহয় এর কোন ভিত্তি নেই এবং নিজের প্রয়োজন পূরণের উদ্দেশ্যে কবর বা মাজারে গিয়ে দোয়া করার কোন দৃষ্টান্তও সাহাবা-তাবেয়ীদের থেকে পাওয়া যায় না। তাই তা একটি বিদয়াত ও গর্হিত কাজ, যদিও দোয়া আল্লাহ তায়ালার কাছেই করা হোক না কেন। (দেখুন, মাজমুউল ফাতাওয়া: ২৭/১৬৫)
দুই: আলেমগণ বলেছেন, কবর যিয়ারতে হাত তুলে দোয়া করতে চাইলে কবরকে সামনে রেখে দোয়া করবে না। বরং কবরকে পাশে বা পেছনে দিয়ে কেবলামুখী হয়ে দোয়া করবে। এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট কোন হাদিস নেই। মূলত আলেমগণ ইজতেহাদ ও কিয়াসের ভিত্তিতে এ শর্ত করেছেন। কারণ হাদিসে কবরের দিকে ফিরে নামায পড়তে নিষেধ করা হয়েছে, এতে শিরকের পথ খোলে। (সহিহ মুসলিম: ৯৭২) বর্তমান প্রজন্ম কোন নেককার বুযুর্গের কবরের দিকে ফিরে নামায পড়লে পরবর্তী প্রজন্ম মনে করবে তারা কবরস্থ বুযুর্গেরই ইবাদত করছে। পৃথিবীতে সর্বপ্রথম শিরকের সূচনা এভাবেই ঘটেছিল। (সহিহ বুখারী: ৪৯২০) তাই শিরকের পথ বন্ধ করার জন্য কবরের দিকে ফিরে নামায পড়তে নিষেধ করা হয়েছে। তো তেমনিভাবে কবরের দিকে মুখ করে দোয়া করা হলেও কেউ মনে করতে পারে, কবরস্থ নেককার ব্যক্তির নিকট প্রার্থনা করা হচ্ছে। এতে শিরকের দুয়ার খুলবে। কিন্তু যদি কবরকে পাশে বা পেছনে রেখে কেবলামুখী হয়ে দোয়া করা হয়, তাহলে আশা করা যায়, কোন পাগলও মনে করবে না যে, বুযুর্গের কবরকে পাশে বা পেছনে দিয়ে বুযুর্গের নিকটই সাহায্য কামনা করা হচ্ছে। (দেখুন, ইকতিযাউস সিরাতিল মুস্তাকিম, ইবনে তাইমিয়াহ, ২/২৩৯)
তালেবানদের ছবিতে দেখা গেছে তারা কবরকে সামনে রেখেই হাত তুলে দোয়া করছেন। তো এটা তাদের ভুল। সম্ভবত তারা এ বিষয়টি জানেন না। নতুবা এটা তো হানাফি মাযহাবেরও মাসয়ালা, যে মাযহাব তারা কঠোরভাবে মেনে চলেন। (দেখুন, মাসিক আলকাউসার, লিংক: https://www.alkawsar.com/bn/qa/answers/detail/1013/) সুতরাং যদি তারা এটা জানতেন তাহলে নিশ্চয়ই তারা এমনটা করতেন না। আসলে আমাদের জন্য শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কামরা/সভাকক্ষে বসে ধূমায়িত চা-কপির পেয়ালা সামনে নিয়ে সহিহ আকীদা ও ইলম চর্চা যতটা সহজ, প্রায় অর্ধশতাব্দী যাবত একাধিক পরাশক্তির সাথে যুদ্ধরত আফগান-তালেবানদের জন্য তা ততটাই কঠিন। আর যুদ্ধ কবলিত একটি দেশে যুদ্ধের ব্যস্ততা ও নিরাপত্তার ঘাটতির কারণে পরস্পর সাক্ষাৎ ও ইলমী আলোচনাও কঠিন। তাই আলকায়েদার মুজাহিদগণও এসব বিষয়ে তাদের সাথে তেমন আলোচনার সুযোগ পাচ্ছেন না। তারপরও আলহামদুলিল্লাহ, তালেবানরা এখন তাদের নিয়ন্ত্রিত এলাকায় মাদ্রাসা চালু করছে, ইলমের চর্চা বৃদ্ধি করছে। ইনশাআল্লাহ, যখন ইমারতে ইসলামী পূর্ণ বিজয় লাভ করবে তখন ব্যাপকভাবে ইলমচর্চা শুরু হবে এবং আফগানে অবস্থানরত আরব মুহাজির ও মুজাহিদগণ তাদের এসব মাসায়েল বুঝানোর সুযোগ পাবেন। এর মাধ্যমে এসব বিষয়ে তাদের আমল আরো বেশি শরিয়তসম্মত হবে ইনশাআল্লাহ।
আর যদি মেনে নেই, তালেবানরা এ মাসয়ালা জেনেও ইচ্ছে করেই কবরকে সামনে রেখে দোয়া করেছেন, তবেও তা বেশি থেকে বেশি মাকরুহে তাহরিমি বা নাজায়েয হবে? শিরক তো দূরের কথা তা হারামও বলা যায় না। কারণ আমরা আগেও বলেছি, কবরের দিকে ফিরে দোয়া করা যাবে না- এ বিষয়ে সুস্পষ্ট কোন হাদিস নেই। এটা কিয়াসী মাসয়ালা। আর আহলে হাদিস ভাইয়েরা যেহেতু কিয়াস মানেন না, তারা কিয়াসকে শয়তানী যুক্তি বলেন, তাহলে তো তাদের নিকট এটা নাজায়েযও হওয়ার কথা না। পারলে এ বিষয়ে তারা তাদের শর্ত অনুযায়ী ‘সহিহ সরিহ মারফু মুত্তাসিল’ (সহিহ সুস্পষ্ট নিরবচ্ছিন্ন সূত্রে বর্ণিত রাসূলের হাদিস) দেখাক?
তিন: আমরা মাজার ভাঙ্গার বিরোধিতা করছি না? সহিহ মুসলিমের হাদিসে এসেছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলী রাযি. কে মূর্তি ভাঙ্গার ও উঁচু কবর ভেঙ্গে মাটির সাথে মিশিয়ে সমান করে দেয়ার আদেশ দিয়ে পাঠিয়েছিলেন। কিন্তু এ নির্দেশ তো ছিল মক্কা বিজয়ের মাধ্যমে আরব ভূমিতে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের তামকীন লাভ করার পর। (দেখুন: -নাসায়ী, আসসুনানুল কুবরা, ১১৪৮৩ মাজমাউয যাওয়ায়েদ, ১০২৫৫ তবাকাতু ইবনি সা’দ, ১/২৪৩; ২/১১০-১১২; ৪/১৮১ ৭/৩৪২ যাদুল মাআদ, ইবনুল কাইয়িম, ৩/৫২৩) তামকীন বা ক্ষমতা লাভের পূর্বে মাজার ভাঙ্গা হলে হিতে বিপরীত হতে পারে। মূর্খ জনসাধারণ এতে বিরূপ হয়ে মুজাহিদদের বিপক্ষে চলে যেতে পারে। এ কারণেই তো রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যুদ্ধ চলমান অবস্থায় চোরের হাত কাটতে নিষেধ করেছেন, যেন সে এতে ক্ষিপ্ত হয়ে শত্রুবাহিনীতে যোগ না দেয়। বুসর বিন আরতাত বলেন,
سمعت النبي صلى الله عليه وسلم يقول: لا تقطع الأيدي في الغزو. رواه الترمذي (1450) وأبو داود (4408) وقال الشيخ شعيب في تعليقه على سنن أبي داود (6/458) : إسناده صحيح، فقد قال ابن عدي في "الكامل" في ترجمة بسر بن أبي أرطاة -ويقال في اسمه: ابن أرطاة-: لا أرى بإسناده بأسا. قلنا: ونقل المناوي عن الذهبي أنه قال تعقيبا على قول ابن معين عن بسر بأنه كان رجل سوء: الحديث جيد لا يرد بمثل هذا، وقال ابن حجر في "الإصابة" 1/ 289 عن إسناد هذا الحديث: إسناد مصري قوي.
‘আমি রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে হাত কাটা হবে না।’ (হাফেয যাহাবী, হাফেয ইবনে হাজার ও শায়েখ শুয়াইব আরনাউত হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন। দেখুন, জামে তিরমিযি, ১৪৫০; সুনানে আবু দাউদ: ৪৪০৮; বাংলা হাদিস লিংক: https://www.hadithbd.com/hadith/sear...=1&WADbSearch1 আলমুগনী, ইমাম ইবনে কুদামা: ৯/৩০৯)
দেখুন, আইসিস পূর্ণ তামকীন লাভের পূর্বেই শিয়াদের মাজার ভেঙ্গে ওদেরকে হত্যা করে ক্ষেপিয়ে তুলেছিল। যার ফলে সাধারণ শিয়ারাও আমেরিকা ও সরকারী বাহিনীর সাথে আইসিসের বিপক্ষে যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়। তাদের পরাজয়ের পর এখন ইরাক সরকার আরব আমিরাতের সহযোগিতায় সেসব মাজার পুনরায় নির্মাণ করছে। তো কি লাভ হলো?
এসব কথা বললে, আইসিসের ভাইয়েরা বলেন, আমরা নাকি হিকমত-মাসলাহাতের নামে শরিয়তের বিধান ছেড়ে চাচ্ছি? যেন হেকমত-মাসলাহাত বলতে শরিয়তে কিছুই নেই। আসলে এখানে দুটি বিষয়,
ক. হেকমত-মাসলাহাতের নামে শরিয়তের বিধান একেবারেই বাদ দেয়া। তা বাস্তবায়নের জন্য কোন ব্যবস্থা বা পদ্ধতি অবলম্বন না করা কিংবা এমন অকার্যকর কোন পদ্ধতি অবলম্বন করা যা দ্বারা কখনোই শরিয়তের বিধান বাস্তবায়ন করা যাবে না। যেমন, গণতন্ত্রের মাধ্যমে ইসলাম কায়েম, শাসকদের দাওয়াত দিয়ে ভালো বানিয়ে তাদের মাধ্যমে ইসলাম কায়েমের চেষ্টা ইত্যাদি। অথচ গণতন্ত্রের মাধ্যমে ইসলাম কায়েমের চেষ্টা শরিয়ত সমর্থন করে না। তাছাড়া গত পঞ্চাশ বছরে মিসর, ফিলিস্তিন, তুরস্ক, ঘানা, তিউনিসিয়া, আলজেরিয়া, পাকিস্তান সহ যতদেশে যতবারই ইসলামী দল ক্ষমতায় গিয়েছে তাদের দ্বারা কখনো ইসলাম কায়েম হয়নি, কখনো হবেও না। দাওয়াতের মাধ্যমে যদি সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণও ভালো হয়ে যায় এবং তারা ইসলামী হুকুমত চায়ও কিন্তু তাগুতরা যখন ইসলাম কায়েমে বাধা দিবে তখন শক্তি ব্যতীত তাদেরকে কিভাবে হটানো যাবে?
খ. শরিয়তের বিধান কায়েমের জন্য কার্যকর পদ্ধতি ও প্রস্তুতি গ্রহণ করা, যেন প্রস্তুতির পর উপযুক্ত সময়ে শরিয়তের বিধান কায়েম করা যায়। যেমন কোন ব্যক্তি বা দল ইসলামী হুকুমত কায়েম করতে চাইলে প্রথম দিনই যদি তারা অস্ত্র নিয়ে নেমে যায়, তাহলে নির্ঘাত তারা শেষ হয়ে যাবে। তাই তাদের কর্তব্য হলো, প্রথমে দাওয়াত দিয়ে একটি শক্তিশালী বাহিনী তৈরি করা, যাদের সহযোগিতায় তাগুতকে হটানো যাবে। দেখুন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কিন্তু মক্কায় দাওয়াতের প্রথম দিনই তরবারী নিয়ে নেমে যাননি। বরং তিনি দাওয়াত দিয়ে দিয়ে একটি উপযুক্ত বাহিনী তৈরি করেছেন। এরপর তাদের নিয়ে মদিনায় জিহাদ শুরু করেছেন। তেমনিভাবে শক্তি অর্জন হওয়ার পূর্বে মুনাফিকদের ব্যাপারেও আল্লাহ তায়ালার নির্দেশে তিনি নম্রতা অবলম্বন করেছেন। কিন্তু পরবর্তীতে ইসলাম শক্তিশালী হওয়ার পর আল্লাহ তায়ালা তাকে মুনাফিকদের সাথেও কঠোরতা করার নির্দেশ দেন।
তো এটা হলো আল্লাহ তায়ালার নির্দেশ বাস্তবায়নের হেকমতসম্মত পন্থা। তাই মাজার ভাঙ্গার জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। যদি পূর্ণ তামকীন হয়ে যায়, তখন মাজার ভাঙ্গতে তো কোন সমস্যা নেই। কারণ জনগণ তাতে ক্ষিপ্ত হলেও কোন ক্ষতি করতে পারবে না। আর যদি পূর্ণ তামকীন অর্জন না হয় তাহলে প্রথমে জনগণের মধ্যে দাওয়াতি প্রচারণা চালিয়ে তাদেরকে শরিয়তের নির্দেশ বুঝিয়ে, এরপর মাজার ভাঙ্গা হলে তখন বিরূপ প্রতিক্রিয়ার আশংকা থাকবে না। আল্লাহ আমাদের বুঝার তাওফিক দান করুন।
Comment