Announcement

Collapse
No announcement yet.

কাফেরদের সাথে অনির্দিষ্ট মেয়াদে সন্ধি-চুক্তির বিধান (তালেবানদের ব্যাপারে একটি সংশয়

Collapse
This is a sticky topic.
X
X
 
  • Filter
  • Time
  • Show
Clear All
new posts

  • কাফেরদের সাথে অনির্দিষ্ট মেয়াদে সন্ধি-চুক্তির বিধান (তালেবানদের ব্যাপারে একটি সংশয়


    কাফেরদের সাথে অনির্দিষ্ট মেয়াদে সন্ধি-চুক্তির বিধান (তালেবানদের ব্যাপারে একটি সংশয়ের জবাব)

    (কিছুদিন পূর্বে আমেরিকার সাথে তালেবানদের যে চুক্তি হয়েছে তা নিয়ে অনেকেই সংশয়ে ভুগছেন। কেউ কেউ দাওয়ায় প্রশ্নও করেছেন। সম্ভবত চুক্তিতে কোন মেয়াদ উল্লেখ না থাকায় তাদের নিকট এটা চিরস্থায়ী চুক্তি বলে মনে হয়েছে। কিন্তু আসলেই কি এটা চিরস্থায়ী চুক্তি, না কি অনির্দিষ্ট মেয়াদের চুক্তি? অনির্দিষ্ট মেয়াদে চুক্তি করা কি বৈধ? এ বিষয়গুলো সুষ্পষ্ট করার জন্যই এ প্রবন্ধের অবতারণা।)

    জুমহুর-সংখ্যাগরিষ্ঠ আলেমদের মতে কাফেরদের সাথে অনির্দিষ্ট মেয়াদে সন্ধি-চুক্তি করা জায়েয নেই। কিন্তু হানাফী মাযহাব অনুযায়ী কাফেরদের সাথে অনির্দিষ্ট মেয়াদে সন্ধি-চুক্তি করাও জায়েয। কেননা খোদ রাসূল রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালাম একাধিক গোত্রের সাথে সময় নির্ধারণ ব্যতীত সন্ধি করেছিলেন। হাদিসে এসেছে,

    عن زيد بن أثيع، قال: سألت عليا بأي شيء بعثت؟ قال: بأربع: لا يدخل الجنة إلا نفس مسلمة، ولا يطوف بالبيت عريان، ولا يجتمع المسلمون والمشركون بعد عامهم هذا، ومن كان بينه وبين النبي صلى الله عليه وسلم عهد فعهده إلى مدته، ومن لا مدة له فأربعة أشهر.. رواه الترمذي (871) وقال: حديث حسن صحيح

    ‘যায়েদ বিন উসাই রহ. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আলী রাযি. কে প্রশ্ন করলাম, (নবম হিজরিতে সূরা তাওবা অবতীর্ণ হওয়ার পর) কি কি বিষয় ঘোষণা করার জন্য আপনাকে (মক্কায়) পাঠানো হয়েছিল? তিনি বললেন, চারটি বিষয় (ঘোষণা করার জন্য)। মুসলিম ছাড়া আর কোন লোক জান্নাতে যাবে না; কোন লোক উলঙ্গ অবস্থায় বাইতুল্লাহ তাওয়াফ করতে পারবে না; এইখানে (কা'বা শরিফে) মুসলিম ও মুশরিকরা এই বছরের পর একত্র হতে পারবে না এবং যে সব লোকের সাথে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চুক্তি আছে সে সব লোকের চুক্তি নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত বলবৎ থাকবে, কিন্তু যে সব লোকের চুক্তিতে কোন মেয়াদের উল্লেখ নেই সে সব লোকের চুক্তির মেয়াদ (আজ হতে) চার মাস পর্যন্ত।’ ইমাম তিরমিযি রহ. হাদিসটিকে সহিহ বলেছেন। -জামে তিরমিযি: ৮৭১ হাদিসবিডি, লিংক: https://www.hadithbd.com/hadith/sear...1&WADbSearch1=

    হাদিসটি উল্লেখ করার পর হাফেয ইবনে হাজার রহ. বলেন,

    واستدل بهذا الكلام الأخير على أن قوله تعالى: ﴿فسيحوا في الأرض أربعة أشهر﴾ يختص بمن لم يكن له عهد مؤقت أو لم يكن له عهد أصلا، وأما من له عهد مؤقت فهو إلى مدته، فروى الطبري من طريق ابن إسحاق، قال: هم صنفان: صنف كان له عهد دون أربعة أشهر فأمهل إلى تمام أربعة أشهر، وصنف كانت له مدة عهده بغير أجل فقصرت على أربعة أشهر. (الفتح: 8/319)

    ‘(যে সব লোকের চুক্তিতে কোন মেয়াদের উল্লেখ নেই সে সব লোকের চুক্তির মেয়াদ আজ হতে চার মাস পর্যন্ত) এই শেষ বাক্যটি প্রমাণ করে আল্লাহ তায়ালার বাণী ‘(হে মুশরিকরা! আরবের) ভূমিতে চার মাস পর্যন্ত তোমাদের স্বাধীনভাবে বিচরণ করার অনুমতি রয়েছে’ (সূরা তাওবা: ২) ঐ ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য যাদের সাথে নির্দিষ্ট মেয়াদে কোন চুক্তি ছিল না, কিংবা তাদের সাথে কোন চুক্তিই ছিল না। আর যাদের সাথে নির্দিষ্ট মেয়াদে চুক্তি ছিল তাদের চুক্তি মেয়াদ পর্যন্ত বলবৎ থাকবে। তবারী রহ. ইবনে ইসহাক রহ. থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, যে সকল মুশকিরদের সাথে চুক্তি করা হয়েছিল তাদের দুটি দল ছিল। একদলের সাথে চুক্তির মেয়াদ পুরো হতে চার মাসেরও কম বাকী ছিল। তাদেরকে মেয়াদ বাড়িয়ে চারমাস পর্যন্ত সময় দেয়া হয়। অপর দলের সাথে চুক্তির কোন নির্দিষ্ট মেয়াদ ছিল না। তাদের জন্য চারমাসের মেয়াদ নির্ধারণ করে দেয়া হয়।’ -ফাতহুল বারী: ৮/৩১৯

    ইমাম ইবনে কাসীর রহ. বলেন,

    هذه الآية لذوي العهود المطلقة غير المؤقتة، أو من له عهد دون أربعة أشهر، فيكمل له أربعة أشهر، فأما من كان له عهد مؤقت فأجله إلى مدته، مهما كان، لقوله تعالى: ﴿فأتموا إليهم عهدهم إلى مدتهم إن الله يحب المتقين﴾ ولما في الحديث: «ومن كان بينه وبين رسول الله صلى الله عليه وسلم عهد فعهده إلى مدته». وهذا أحسن الأقوال وأقواها، وقد اختاره ابن جرير، رحمه الله، ورُوي عن الكلبي ومحمد بن كعب القرظي، وغير واحد. (تفسير ابن كثير: 4/102)

    ‘(উল্লিখিত আয়াতটি) ঐ মুশরিকদের জন্য যাদের সাথে অনির্দিষ্ট মেয়াদে চুক্তি ছিল কিংবা যাদের চুক্তির মেয়াদ পুরো হতে চার মাসেরও কম বাকী ছিল। তাদেরকে চারমাস পর্যন্ত সময় দেয়া হয়। পক্ষান্তরে যাদের সাথে নির্দিষ্ট মেয়াদে চুক্তি ছিল তাদের চুক্তি মেয়াদ শেষ হওয়া পর্যন্ত বলবৎ থাকবে, চাই মেয়াদ যতদিনই হোক। কেননা আল্লাহ তায়ালা (পরবর্তীতে) বলেছেন, ‘তবে যে মুশরিকদের সাথে তোমরা চুক্তি সম্পন্ন করেছো ও পরে তারা তোমাদের চুক্তি রক্ষায় কোনও ক্রুটি করেনি এবং তোমাদের বিরুদ্ধে কাউকে সহযোগিতাও করেনি, তাদের সাথে কৃত চুক্তির মেয়াদ পূর্ণ করবে। নিশ্চয়ই আল্লাহ সাবধানতা অবলম্বনকারীদের পছন্দ করেন।’ (সূরা তাওবা: ৪) এবং হাদিসে এসেছে, ‘যে সব লোকের সাথে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চুক্তি আছে সে সব লোকের চুক্তি নির্দিষ্ট মেয়াদ পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।’ এই মতটিই সবচেয়ে উত্তম ও শক্তিশালী। ইবনে জারীর তবারী রহ. এ মতটিই গ্রহণ করেছেন। কালবী রহ., মুহাম্মদ বিন কা’ব কুরাযী রাযি. প্রমুখ থেকে এ মতটি বর্ণিত হয়েছে।’ -তাফসীরে ইবনে কাসীর: ৪/১০২

    মওসূয়্যাহ ফিকহিয়্যাহয় বলা হয়েছে,

    وذهب الحنفية إلى أن عقد الموادعة يصح أن يكون مطلقا عن المدة ، ويصح أن يكون مؤقتا بمدة معينة الموسوعة الفقهية الكويتية (42/ 212)

    ‘হানাফীদের মতে নির্দিষ্ট ও অনির্দিষ্ট উভয় মেয়াদেই সন্ধি-চুক্তি করা জায়েয।’ -মওসূয়্যাহ: ৪২/২১২

    এক্ষেত্রে জুমহুরের পক্ষ হতে হানাফীদের উপর আপত্তি তোলা হয় যে, অনির্দিষ্ট মেয়াদে সন্ধি করা হলে তো চিরস্থায়ীভাবে জিহাদের পথ বন্ধ হয়ে যাবে। যতদিন পর্যন্ত কাফেররা নিজেরা আগে বেড়ে আমাদের সাথে কৃত সন্ধি ভঙ্গ না করবে ততদিন আমাদের শক্তি থাকলেও হাত গুটিয়ে বসে থাকতে হবে। অথচ ইসলামে সন্ধির উদ্দেশ্য তো হলো জিহাদের জন্য প্রস্তুতিগ্রহণ। চিরতরে জিহাদ বন্ধ করে দেয়া নয়। এজন্যই শুধুমাত্র দুর্বলতার সময়েই সন্ধি করা জায়েয, শক্তি থাকার সময়ে সন্ধি করা জায়েয নেই। ইমাম কাসানী রহ. বলেন,

    وشرطها الضرورة، وهي ضرورة استعداد القتال، بأن كان بالمسلمين ضعف، وبالكفرة قوة المجاوزة إلى قوم آخرين، فلا تجوز عند عدم الضرورة؛ لأن الموادعة ترك القتال المفروض، فلا يجوز إلا في حال يقع وسيلة إلى القتال؛ لأنها حينئذ تكون قتالا معنى قال الله - تبارك وتعالى - {فلا تهنوا وتدعوا إلى السلم وأنتم الأعلون والله معكم} .وعند تحقق الضرورة لا بأس به؛ لقول الله - تبارك وتعالى - {وإن جنحوا للسلم فاجنح لها وتوكل على الله} وقد روي أن رسول الله - صلى الله عليه وسلم - وادع أهل مكة عام الحديبية على أن توضع الحرب عشر سنين ..........

    ‘সন্ধি-চুক্তি জায়েয হওয়ার শর্ত হলো, যুদ্ধের জন্য প্রস্তুতি নেয়ার প্রয়োজন। অর্থাৎ যখন মুসলমানরা কাফেরদের তুলনায় দুর্বল হবে তখন তাদের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণের প্রয়োজনে কাফেরদের সাথে যুদ্ধ বন্ধের সন্ধি করা জায়েয হবে। (পক্ষান্তরে যখন মুসলমানদের জিহাদ করার মতো যথেষ্ট শক্তি থাকবে তখন এ প্রয়োজন না থাকার কারণে সন্ধি করা জায়েয হবে না)। কেননা সন্ধির মাধ্যমে যুদ্ধ বন্ধ হয়ে যায়, যা আমাদের উপর ফরয। সুতরাং সন্ধি তখনই বৈধ হবে যখন তা যুদ্ধের মাধ্যম (অর্থাৎ প্রস্তুতির কারণ) হবে। কেননা তখন তা যুদ্ধের হুকুমেই হবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘তোমরা হীনবল হয়ে সন্ধির প্রস্তাব দিয়ো না, এমতাবস্থায় যে তোমরা শক্তিশালী। নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের সাথে রয়েছেন। (সূরা মুহাম্মদ: ৩৫) আর যখন সন্ধির প্রয়োজন দেখা দিবে তখন তাতে কোন সমস্যা নেই। আল্লাহ তায়ালা বলেন, ‘যদি তারা সন্ধির দিকে ঝুঁকে পড়ে তবে তোমরাও সে দিকে ঝুঁকে পড়বে এবং আল্লাহর উপর নির্ভর করবে।’ (সূরা আনফাল: ৬১) হাদিসে এসেছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাফেরদের সাথে দশবছর যুদ্ধবিরতির চুক্তি করেছিলেন। -বাদায়েউস সানায়ে: ৭/১০৮

    তবে এ আপত্তি জুমহুরের মাযহাবের ভিত্তিতেই হতে পারে। হানাফী মাযহাব অনুযায়ী এ আপত্তি হয় না। কেননা হানাফী মাযহাব অনুযায়ী সন্ধি-চুক্তি হলো এমন চুক্তি যা যেকোনো সময় শেষ করে দেয়া জায়েয়। চাই চুক্তির মেয়াদ পূর্ণ হোক বা না হোক। তাই ইমামুল মুসলিমিন যখন মনে করবেন এখন কাফেরদের সাথে যুদ্ধ করার মতো পর্যাপ্ত শক্তি অর্জন হয়ে গেছে তখনই তিনি কাফেরদের জানিয়ে দিয়ে দিবেন যে, এখন থেকে তোমাদের সাথে আমাদের কোন সন্ধি নেই। অবশ্য তাদের সাথে যুদ্ধ শুরু করার পূর্বে তাদেরকে কিছুদিন সময় দেয়া হবে যেন তারা নিজেদের সব অঞ্চলে সন্ধি শেষ হয়ে যাওয়ার সংবাদ পৌঁছাতে পারে এবং সন্ধির পূর্বে তারা যেভাবে আত্মরক্ষার জন্য সতর্ক ছিল সেভাবেই সতর্ক হয়ে যেতে পারেন। এই ঘোষণা দেয়ার উদ্দেশ্যে হলো তাদের সাথে গাদ্দারী থেকে বেঁচে থাকা। নতুবা সন্ধির কারণে যদি কাফেররা অপ্রস্তুত অবস্থায় থাকে আর মুসলমানরা তাদের সাথে যুদ্ধ শুরু করে তবে তা প্রতারণা হয়ে যাবে। আর জুমহুরের মতে সন্ধি শেষ করার জন্য কাফেরদের পক্ষ হতে সন্ধিভঙ্গের আশংকা হওয়া শর্ত। সুতরাং জুমহুরের মতে যদি কাফেররা সন্ধিভঙ্গ না করে এবং তাদের ব্যাপারে সন্ধিভঙ্গের আশংকাও না হয় তাহলে মুসলমানরা সন্ধির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে সন্ধি শেষ করে যুদ্ধ করতে পারবে না। (মওসূয়্যাহ ফিকহিয়্যাহ: ২০/১৮৯; মাবসুত: ১০/৮৬; বাদায়ে: ৭/১০৯)

    জুমহুর নিম্নোক্ত আয়াতটি দিয়ে দলিল দেন,

    وَإِمَّا تَخَافَنَّ مِنْ قَوْمٍ خِيَانَةً فَانْبِذْ إِلَيْهِمْ عَلَى سَوَاءٍ إِنَّ اللَّهَ لَا يُحِبُّ الْخَائِنِينَ

    ‘তোমরা যদি কোনও সম্প্রদায়ের পক্ষ হতে বিশ্বাসঘাতকতার আশঙ্কা করো, তবে তুমিও সে চুক্তি সোজা তাদের দিকে ছুঁড়ে মারো। স্মরণ রেখ, আল্লাহ বিশ্বাস ভঙ্গকারীদেরকে পছন্দ করেন না। -সূরা আনফাল: ৫৮

    হানাফীদের পক্ষ হতে এর জবাবে বলা হয়, যেহেতু আল্লাহ তায়ালা পরিষ্কার বলে দিয়েছেন, কাফের-মুশরিকদের অভ্যাসই হলো সুযোগ পেলে সন্ধি ভঙ্গ করা, (সূরা তাওবা: ৭-১০) তাই তাদের পক্ষ হতে সন্ধি ভঙ্গের ভয় সবসময়ই বিদ্যমান। সুতরাং ‘তোমরা যদি কোনও সম্প্রদায়ের পক্ষ হতে বিশ্বাসঘাতকতার আশঙ্কা করো’এই বাক্যটি সন্ধি শেষ করে দেয়ার শর্ত হিসেবে বলা হয়নি। বরং এর মাধ্যমে একটি বাস্তবতাকেই ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। যাকে আরবি পরিভাষায় ‘কয়দে ইত্তেফাকী’বলা হয়। ইমাম ইবনুল হুমাম রহ. এর বক্তব্য দেখুন,

    وإن صالحهم مدة ثم رأى أن نقض الصلح أنفع نبذ إليهم) أي ألقى إليهم عهدهم وذلك بأن يعلمهم أنه رجع عما كان وقع، قال تعالى {وإما تخافن من قوم خيانة فانبذ إليهم على سواء} [الأنفال: 58] أي على سواء منكم ومنهم في العلم بذلك، لكن ظاهر الآية أنه مقيد بخوف الخيانة، وهو مثل {إن علمتم فيهم خيرا} [النور: 33] في الكتابة، ولعل خوف الخيانة لازم للعلم بكفرهم وكونهم حربا علينا. والإجماع على أنه لا يتقيد بخطور الخوف؛ لأن المهادنة في الأول ما صحت إلا لأنها أنفع فلما تبدل الحال عاد إلى المنع (فتح القدير للكمال ابن الهمام 5/ 457)

    আর অনির্দিষ্ট মেয়াদের চুক্তি যে চিরস্থায়ী হয় না, তা যেকোন সময় ভঙ্গ করা জায়েয, এ ব্যাপারে হানাফীদের দলিল হলো জামে তিরমিযির উপরোক্ত হাদিস ও তার ব্যাখ্যায় আলেমদের বক্তব্য। কেননা যাদের সাথে অনির্দিষ্ট মেয়াদে চুক্তি হয়েছিল তাদেরকে চার মাসের সময় বেঁধে দেয়া হয়েছিল এবং বলা হয়েছিল চার মাস পর তাদেরকে যেখানে পাওয়া যাবে হত্যা করা হবে। (সূরা তাওবা: ৫) এক্ষেত্রে তাদের থেকে সন্ধি ভঙ্গের আশংকা প্রকাশ পাওয়া গেছে কি না? এ বিষয়ে কোন ভ্রুক্ষেপই করা হয়নি। সুতরাং এ থেকে সুস্পষ্টরূপে বুঝে আসে, যে সকল কাফেরদের সাথে অনির্দিষ্ট মেয়াদে চুক্তি করা হয়, তাদের থেকে চুক্তি ভঙ্গের আশংকা থাক বা না থাক, উভয় অবস্থায়ই তাদেরকে চুক্তি শেষ হওয়ার বিষয়টি জানিয়ে দিলে এবং এই ঘোষণার পর তাদেরকে কিছুদিন সময় দিলে, এরপর তাদের সাথে যুদ্ধ করতে কোন সমস্যা নেই।

    আশা করি উপরোক্ত আলোচনা হতে সুস্পষ্ট হলো কাফেরদের সাথে অনির্দিষ্ট মেয়াদে চুক্তি করা জায়েয এবং হানাফী মাযহাব মতে অনির্দিষ্ট মেয়াদে চুক্তি করা আর চিরস্থায়ী চুক্তি করা এক জিনিষ নয়। আর তালেবানরা যেহেতু হানাফী মাযহাবের অনুসারী, তাই তারা নিজেদের মাযহাব অনুযায়ী অনির্দিষ্ট মেয়াদে চুক্তি করতেই পারেন। বিশেষকরে যেহেতু অনির্দিষ্ট মেয়াদে চুক্তি করার স্বপক্ষে সহিহ হাদিসও রয়েছে। তাই এ নিয়ে তাদের উপর আপত্তির কোন সুযোগ নেই।

    পরিশেষে বলবো, আমাদের অবস্থা যেন এমন না হয় যে, পান থেকে চুন খসলেই আমরা জিহাদি সংগঠনের বিপক্ষে আপত্তি শুরু করবো। কেননা জিহাদি তানযীম ও তাদের উমারাগণ ফেরেশতাদের মত মাসুম নন। তাদের দ্বারা এমন কোন কিছু প্রকাশ পেতেই পারে যা শরিয়তের খেলাফ (কমপক্ষে আমাদের দৃষ্টিতে)। তখন তাদেরকে নসীহত করা যাবে। কিন্তু তাই বলে তাদের সমালোচনা করা হলে কিংবা তাদের থেকে সম্পর্কচ্ছেদ করা হলে আমরা কখনোই কোন জামাতের সাথে মিলে জিহাদ করতে পারবো না। বরং আমাদের অবস্থা হবে সেই সব আরব মুজাহিদদের মতো যারা শায়েখ উসামা ও শায়েখ আইমান প্রমুখকে তাকফীর করে জিহাদ হতে ফিরে গিয়েছিল কিংবা সেই সব আইএস সদস্যদের মতো যারা বাগদাদী ও আদনানীকেও তাকফীর করেছিল। সুতরাং আমাদের এক্ষেত্রে লক্ষ্য করতে হবে তারা যে ভুল করছেন তা কি জিহাদের মৌলিক উদ্দেশ্যের পরিপন্থী কি না? যদি তা জিহাদের মৌলিক উদ্দেশ্যের পরিপন্থী না হয় তবে যথাসম্ভব ছাড় দিতে হবে। কিন্তু কোন তানযীমের ভুল যদি জিহাদের মৌলিক উদ্দেশ্যের পরিপন্থী হয়, যেমন কোন দল শরিয়ত প্রতিষ্ঠার পরিবর্তে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানায়, কিংবা কোন দল সাধারণ মুসলিমদের নিরাপত্তা দানের পরিবর্তে তাদেরকে হত্যা করা শুরু করে, কাফেরদের সাথে যুদ্ধ না করে মুজাহিদদের সাথেই যুদ্ধ করে তখন সে দল পরিত্যাগ করা ওয়াজিব হবে। আল্লামা আনোয়ার শাহ কাশ্মীরি রহ. কতই না সুন্দর বলেছেন,
    نعم إذا رأوا منه كفرا بواحا لا يبقى فيه تأويل، فحينئذ يجب عليهم أن يخلعوا ربقته عن أعناقهم، فإن حق الله أوكد. ثم هل من طاقة البشر أن لا يختار إلا حقا في جميع الأبواب، فإذا تعذر أخذ الحق في جميع الأبواب - وإن أمكن ذهنا - لا بد أن يحد له حد، وهو الإغماض في الفروع، فإذا وصل الأمر إلى الأصول حرم السكوت، ووجب الخلع. وهو معنى قوله: «وإن أمر عليكم عبد حبشي». فافهم. (فيض الباري: 6 : 459 ط. دار الكتب العلمية: 1426 هـ).

    “হাঁ, প্রজারা যদি শাসক থেকে কোন সুস্পষ্ট কুফর দেখতে পায়, যাতে তাবীলের কোন অবকাশ থাকে না, তখন তাদের উপর আবশ্যক হবে তার থেকে আনুগত্যের হাত গুটিয়ে নেয়া। ..... কেননা মানুষের জন্য (মানবীয় দুর্বলতাবশত) সবক্ষেত্রে হক অবলম্বন করা সম্ভব হয় না, তাই শাসকের ছোট-খাট বিচ্যুতির ক্ষেত্রে তার বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করা যাবে না, কিন্তু যখন শাসকের বিচ্যুতি ইসলামের মৌলিক বিষয়ের সাথে সাংঘর্ষিক হবে তখন চুপ থাকা হারাম হবে, এবং তাকে অপসারণ করা ফরজ হবে। এটাই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বাণী, “যদিও তোমাদের উপর কোন হাবশিকে আমীর নিযুক্ত করা হয় যে তোমাদের আল্লাহর কিতাব অনুযায়ী পরিচালনা করে তাহলে তোমরা তার আনুগত্য করো” এর অন্তর্নিহিত অর্থ।” -ফয়যুল বারী, ৬/৪৫৯
    الجهاد محك الإيمان

    জিহাদ ইমানের কষ্টিপাথর

  • #2
    হে আল্লাহ্! আমাদের হক পন্থি আলিম গণ আমাদের চোখের মণি,
    আপনি শায়েখ দের হেফাযত করুন, সর্বদা সুস্থ ও নিরাপদ রাখুন,
    এবং আমাদের সকল কে জান্নাতে একত্রিত করুন, আমীন।

    Comment


    • #3
      মাশাআল্লাহ, খুব সুন্দর হয়েছে। জাযাকাল্লাহ
      ‘যার গুনাহ অনেক বেশি তার সর্বোত্তম চিকিৎসা হল জিহাদ’-শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ.

      Comment

      Working...
      X